Jump to ratings and reviews
Rate this book

আবুল হাসান রচনাসমগ্র

Rate this book

326 pages, Hardcover

First published February 1, 1994

2 people are currently reading
105 people want to read

About the author

Abul Hasan

23 books30 followers
কবি আবুল হাসান ছিলেন ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশের প্রধান কবিদের একজন।

১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার বর্ণিগ্রামে তাঁর জন্ম। এটি ছিল তাঁর মাতুলালয়। পৈতৃক নিবাস ছিল পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে। বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। নাম আলতাফ হোসেন মিয়া। আবুল হাসানের প্রকৃত নাম ছিল আবুল হোসেন মিয়া। কিন্তু আবুল হাসান নামেই তিনি লেখালেখি করতেন, আর এ নামেই স্মরণীয় হয়ে আছেন।

আবুল হাসান এসএসসি পাস করেন ১৯৬৩ সালে ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে। তারপর বরিশালের বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজিতে অনার্স পড়ছেন আর পাশাপাশি চলছে কবিতা লেখা, সাহিত্যসংগ্রাম।

এ সময়ই তাঁর সাহিত্য-চেতনা ও রাজনৈতিক-চেতনা বিকশিত হয়ে ওঠে। গণমানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেন তিনি। ছাত্র হিসেবে ছিলেন মেধাবী। কিন্তু অনার্স পরীক্ষা দেননি। ১৯৬৯ সালে যোগ দিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা বিভাগে। সাংবাদিকতায় মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ছিলেন গণবাংলা (১৯৭২-৭৩) এবং দৈনিক জনপদের (১৯৭৩-৭৪) সহকারী সম্পাদক। মাত্র ২২ বছর বয়স থেকেই তিনি ছিলেন খ্যাতিমান কবি, ঢাকা শহরের আলোচিত তরুণ। ব্যক্তিজীবনেও স্বকীয়তায় ভাস্বর প্রেম, দ্রোহ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে। ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ রাজা যায় রাজা আসে, ১৯৭৪-এ যে তুমি হরণ করো এবং ১৯৭৫-এ সব শেষে পৃথক পালঙ্ক

কবিতায় বলিষ্ঠ মানুষটি শারীরিকভাবে ছিলেন কিছুটা দুর্বল। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল তাঁর। অসুস্থতা তাঁকে ক্রমেই নিয়ে যেতে থাকে মৃত্যুর দিকে। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর কবিতা ও ভালোবাসা ছেড়ে তাঁর যাত্রা অনন্তলোকের দিকে।

তাঁর কাব্যনাট্য ওরা কয়েকজন (১৯৮৮) এবং আবুল হাসান গল্প সংগ্রহ (১৯৯০) প্রকাশিত হয়েছে মৃত্যুর অনেক পর। কবিতার জন্য তিনি মরণোত্তর বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৫) এবং একুশে পদক (১৯৮২) পেয়েছেন। আবুল হাসানের কবিতা আধুনিক বাংলা কবিতায় নিয়ে এসেছিল নতুন সড়ক, নতুন আবহ। আধুনিক নাগরিক, মানুষের নিঃসঙ্গতা, যন্ত্রণা, মৃত্যু চেতনা, বিচ্ছিন্নতা তাঁর কলমে পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

কবি আবুল হাসান অনেক অবিস্মরণীয় কবিতার জনক। তিনি আজও জনপ্রিয়, বহুল পঠিত।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
36 (72%)
4 stars
13 (26%)
3 stars
0 (0%)
2 stars
0 (0%)
1 star
1 (2%)
Displaying 1 - 11 of 11 reviews
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
July 10, 2021
১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া কবি আবুল হাসান গুণে গুণে বেঁচে ছিলেন ঠিক ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। যতটুকু বয়স হলে জীবন সম্পর্কে একটা পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায় ঠিক ততটুকু সময়ই বেঁচে ছিলেন, না বেশি না কম। যার ফলে তার কবিতায় দেখা যায় যুবকদের কোনো বৃদ্ধ নয়। কিছু কবিতা যেন আগ্রহ নিয়ে বলে, "ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও!" বেশিরভাগ কবিতায় দেখা যায় প্রেম, নাগরিক কোলাহল, বিদ্রোহ, বিচ্ছিন্নতা, মৃত্যুর আভাস, বিষণ্নতা আর নিঃসঙ্গতা। আর দেখা যায় আধুনিক নাগরিকতা-
“একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে কিশোর চেনেনা কেন ঘাসফুল? ঘাস কেন সবুজের বদলে হলুদ?
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে নয়টি অমল হাঁস থেঁতলে যায় ট্রাকের চাকায়?
ভালোবাসা, কেবলি...কেবল একটা
বাজেয়াপ্ত শব্দের তালিকা হয়?
একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও
নইলে মানুষের দরোজায় টোকা দিলে কেন আজ দরোজা খোলে না?"

কবি জন্মেছিলেন দুর্বল হৃৎযন্ত্র নিয়ে তাই বোধহয় বয়ে যাওয়া সময়কে এতটা দীর্ঘ মনে করেছেন।
"এতটা বয়স চলে গেলো,
তবু কী আশ্চর্য আজো কি জানলাম,
চড়ইয়ের ঠোঁটে কেন এত তৃষ্ণা?
খড়ের আত্নায় কেন এত অগ্নি, এতটা দহন?
গোলাপ নিজেই কেন এত কীট, এত মলিনতা নিয়ে তবুও গোলাপ?"
(মে,১৯৭৩)
কিংবা হতেও পারে ২৬ বছর খুউউব-ই দীর্ঘ সময়, অনুভবে সময়ের ভিন্নতা অপরিহার্য, নইলে সবাই-ই যে এক হয়ে দাঁড়ায়!

আবুল হাসান রচনা সমগ্রতে আছে কবির গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত সকল কবিতা; আছে একটি কাব্যনাট্য: ওরা কয়েকজন যেখানে এক নিঃসঙ্গ প্রেমিক যুবকের দেখা মেলে। আর আছে ৯টি ছোটগল্প; বিষণ্নতা আর নিঃসঙ্গতা যাদের প্রাণ।



গতবছরের এমন দিনেই গুডরিডসে খুব ঘুরে বেড়াতাম, প্রায় সারাদিন। নানা জনরার বইয়ের রিভিউ পড়তাম। হঠাৎ একদিন একটা রিভিউয়ের প্রথম লাইনে খুব করে চোখ পড়লো, অতএব মনে ধরলো। মনে হলো কোনো কবিতার লাইন পড়লাম। নিতান্তই অলস দুপুরের আবিষ্কার, কাজেই একটু কপি করে পেস্ট করে যে গুগল মামার থেকে শিউর হবো আসলেই কোনো কবিতার লাইন কিনা! তা আর হয়ে উঠলো না। মন প্রবোধ দিল- কবিতার লাইন হলে একদিন সারপ্রাইজ হিসেবেই পাওয়া যাক। এই তো ক'মাস আগে আমার প্রাণ পাখি হওয়ার জোগাড় ঠিক তখনই পেলাম সেই লাইন। কবিতার নাম পাখি হয়ে যায় প্রাণ। মানুষ তার চিবুকের কাছে ভীষণ অচেনা ও একা। প্রবল সত্যি কথা, এ কথার ধার আছে। বলা হয় টিন এজ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়। অথচ এই সময় কখন কিভাবে ব্যস্ততার মাঝে কেটে যায়,তার খবরই পাওয়া যায় না। ভয়ানক হচ্ছে আফটার টিন। সে বড় ভয়ানক, হাজার ভীড়ের মাঝে একা হয়ে যাওয়াটা- সেই জুটি বাঁধা বউটির দুপুর বেলাকার নিঃসঙ্গতার মতো ভয়ঙ্কর। দুপুরের আহার শেষে ঘরের বাকি সবার মতো যখন স্বামীটিও নিদ্রা যায়, থালাবাসন মেজে উদাস দাওয়ায় বসে থাকা বউটির মতো নিঃসঙ্গ আর কে আছে! মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ আর খুউউব একা!
"অবশেষে জেনেছি মানুষ একা
মানুষ তার চিবুকের কাছে ভীষণ অচেনা ও একা।"


~১০ জুলাই, ২০২১
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
April 9, 2025
মায়াবী করুণ পাথর হয়ে লাবণ্য ধারণ করেন তিনি । লালন করেন পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো টলমলে চোখ ।
সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে,
উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র, মায়াবী করুণ


অক্ষরপুঞ্জ পাশাপাশি সাজিয়ে অস্বীকৃতি জানান অনিচ্ছুক দাস হতে । তার অবোধ বোধের কাছে এসে হেরে যায় পৃথিবীর গতি ও প্রকৃতি । তিনি আবুল হাসান, বাংলা কবিতার এক মর্মাহত অঝর নাম, মাত্র আটাশ বছর বয়সে যার জীবন প্রদীপ নিভে যায় ।
অবোধ আমার সব বোধের কাছে এসে
হেরে গেছে পৃথিবীর গতি ও প্রকৃতি


অনেকে তাকে প্রেমিক বা কিশোর কবি বলে সম্বোধন করেন । কিন্তু জীবন চর্চায় তার নির্মলাবেগ ধর্তব্যে নিলে এই সমাজের পদে পদে যে বিপত্তি ও অনিয়ম, তা যেন ধরা পড়ে ।
তিনি স্বীকৃতি চান শ্যামা মেয়ের, যে দোরের গোড়ায় একলা দাঁড়িয়ে থাকে মর্মব্যাথা নিয়ে । হৃদসচেতন একজন মর্ত্যের মানুষের প্রাণ কি করে পাখি হয়ে যায় তার চেয়ে আর কে ভালো জানবেন?
ঐ যে কাদের শ্যামলা মেয়ে মৌন হাতের মর্মব্যথায়
দাঁড়িয়ে আছে দোরের গোড়ায়
অই মেয়েটির স্বীকৃতি চাই,
স্বীকৃতি দে


নিঃসঙ্গতা তার হাতিয়ার, বেদনা বোনের মত আপন । গোলাপের নিচে নিহত কিশোরের বেদনা সংগোপনে লুকিয়ে, নিজের পায়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাননি বলে অভিমানে চক্ষু উপড়ে চড়াইয়ের মত মানুষের পাশে ঝরিয়ে গেছেন শুভ্র পালক ।
হে কবি কিশোর
আমারও অনেক স্বপ্ন শহীদ হয়েছে জীবনে কাঁটার আঘাত সয়েছি আমিও ।
হৃদয়ে লুকানো লোহার আয়না ঘুরিয়ে সেখানে নিজেকে দেখেছি
পান্ডুর খুবই নিঃস্ব একাকী!
আমার পায়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাইনি অভিমানে আমি
অভিমানে তাই
চক্ষু উপড়ে চড়াইয়ের মতো মানুষের পাশে ঝরিয়েছি শাদা শুভ্র পালক!


সমাজের শ্রেণী শোষণে পিড়ীত অথচ অবিচল আপোষহীন কন্ঠ । পৃথিবীর নিয়মের তোয়াক্কা করে বলেন- ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্য পাখি বসাতে পারবো না

শিল্পসহবাসে দীর্ঘকাল পরিব্যাপ্ত রাতের শেষে আয় করেন অলৌকিক রূপোর টাকা । শিল্প দেদার খরচ করেন কিন্তু ফুরোয় না; কখনো ধানক্ষেত, কখনো হলুদ পাখি, কখনো বা মেঘ হয়ে ধরা দেয় তাকে । উচাটন অন্ধ সভ্যদের মাড়িয়ে চলা পথের ধারে আত্মাভিমানী কবি হয়ে ওঠেন সকল প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী । তবু একটি নারীর উড়াল কন্ঠ বুকের ভেতর খুঁড়তে খুঁড়তে মন্ত্রণা দেয় প্রত্যাশা ও স্থিতির ।


মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ, কিছু অগ্রন্থিত কবিতা ও গল্প রেখে যান । প্রচন্ড ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও মর্মস্পর্শী কবিতাগুলো তাই যুগ যুগ আবেদেন ধরে রাখে ।
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,357 followers
July 17, 2016
কৈশোরে একদিন এক আনকোরা আত্মীয়বাড়িতে নেমতন্ন। ভোজে অনাসক্তি, ভীড়ে অনাগ্রহ। তবু গোমড়া মুখে যেতেই হয়। খুঁজেপেতে মেলেন আনিসুল হক। খেলো উপন্যাসের এক কোণে চোখে পড়ে তিনটে লাইন—
'ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক সহে যাও…'
বাড়ি ফিরে টুকে রাখা ডাইরিতে, তারপর ভুলেও যাওয়া।

বছর তিনেক পরে সদলবলে সেন্টমার্টিন। মান্ধাতার আমলের বাতাসে ওড়া রুগ্ন গাঙচিল। সক্কালে খালি পায়ে ঝিনুক কুড়াতে গিয়ে দুম করে মনে পড়া সেই শেষ লাইনটা—–
..বুকেতে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

তদ্দিনে পড়া হয়েছে 'নিঃসঙ্গতা'। ততদিনে না চাইলেও আমার মাথায় বেশ খানিকটা জায়গা করে নিয়েছেন আবুল হাসান, এক পাথর, যে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আদ্র মায়াবি করুণ।
যে কবি বিষাদের বেহালায় প্রশ্ন রাখেন, শোকের উচ্চারণে শোনান তিনি যুগলসন্ধি—‘যা কিছু আমার মনে নেই, তাই হলো সুখ!’
আজ অবধি অনিচ্ছাসুত্রে নিম্নমানের মানুষের তকমা জড়িয়ে চিলেকোঠার আকাশ দেখবার মুহূর্তে বারবার ছুঁয়ে যান আবুল হাসান…

ইদানিং তীব্র নস্টালজিয়ায় ভুগি। তবু পথের পাশে, জলের ছায়ায়, রৌদ্রে আমার কিংবা আমাদের আর ফেরা হয় না।
হায়, অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর ধরেছে নিটোল দিন, নিটোল দুপুর, সেখানে গেলেও আমার, আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!
Profile Image for Harun Ahmed.
1,650 reviews418 followers
August 24, 2022
"এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া।"
Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
December 28, 2023
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও মর্মস্পর্শী এই কবিতাগুলি বেশ কিছুদিন ধরে পড়তেছি। এখনো শেষ করিনি পুরো বই। কিছু কিছু কবিতা বারবার পড়ে যাচ্ছি। আবুল হাসানের লেখার ঝুলিতে কবিতা ছাড়াও আছে একটি কাব্যনাট্য ও গুটিকয়েক ছোটগল্প। কবিতার মতো ছোটগল্প গুলোও ভীষণ সুন্দর। নিঃসঙ্গতা আর বিষন্নতায় মোড়ানো প্রতিটা গল্প। লেখক কিংবা কথক হিসেবে নিজেকে ইমাজিন করার যে ব্যাপার, কবি আবুল হাসানের কবিতায় তা ভীষণভাবে প্রকট। বটবৃক্ষের মতো একা লোক কিংবা যুদ্ধ, হানাহানি, সংঘাত, রক্তপাত থামানোর জন্য সুধীজনদের কাছে আর্তি করা হতাশ মানুষ - সবার সাথে নিবিড়ভাবে একাত্মবোধ করি।

অবোধ আমার সব বোধের কাছে এসে
হেরে গেছে পৃথিবীর গতি ও প্রকৃতি।
Profile Image for Sharmin Sultana  Shamoly.
89 reviews23 followers
November 12, 2025
কবি আবুল হাসানের নাম শুনলেই চোখে ভাসে ক্ষণজন্মা, রোগাক্রান্ত কিন্তু কাব্যপ্রতিভায় উদ্ভাসিত এক মুখ বসন্ত রাতের নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে। কবিতার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বোহেমিয়ান জীবন আর বন্ধু জুটেছিল নির্মলেন্দু গুণ। শারীরিক অসুস্থতা, আর্থিক অনটনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত হয়নি। জীবিকার প্রয়োজনে চাকরি নিয়েছিলেন পত্রিকা অফিসে।
হয়তো নিজের কথা ভেবেই কবিতায় লিখেছিলেন।
"ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেপ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্য পাখি বসাতে পারবো না !"

মাত্র ২৯ বছর বয়সী জীবন তার এটুকু সময়েই তিনি লিখেছেন অসাধারণ কিছু কবিতা, কয়েকটা গল্প এবং একটি কাব্যনাট্য। তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল৷ বাকি কবিতাগুলো অগ্রন্থিত কবিতা হিসেবে প্রকাশিত হয়৷ তাঁর প্রথম কাব্য "রাজা আসে রাজা যায়" প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন,
" আমার মা
আমার মাতৃভূমির মতোই অসহায়।"

ঢাকায় আসার পর বাড়ির সাথে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে এসেছিল। তাঁর বাবা ঢাকায় এসেছিলেন হাসানের খোঁজে। কবি তার তাঁর কবিতায় বাবাকে এঁকেছেন "চামেলি হাতে নিম্নমানের মানুষ"।
"আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারী লোক,পুলিশ বিভাগে চাকরি কোরেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিলনা ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো,হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেরার মতোন তিনি
আস্তে কেন চাকরবাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?"
কবিতাটা এতো সুন্দর, এতো মর্মভেদী, মায়াময়।

আবুল হাসানের জীবনে আরেক ইতিহাস হলেন সুরাইয়া খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা সুরাইয়া খানমের সাথে প্রেম ছিল আবুল হাসানের। কতশত হৃদয়কে তছনছ করে বিদুষী সুরাইয়াকে জয় করেছিলেন আবুল হাসান। এই হৃদয় ভাঙাদের দলে আহমদ ছফাও ছিলেন। সুরাইয়া খানমও কবিতা লিখতেন,
"লং ডিসট্যান্স রানার আমি
সদা সর্বদা ফ্রন্টিয়ার পেরিয়ে যাই
যত বেড়াজাল আচার বিচার নিষেধ শাসন
দমন ও ত্রাস - পেরিয়ে যাই। অতিক্রম করে যাই ঘৃণা।"

আবুল হাসানের কবিতা আর জীবন দেখলে মনে হয়, তিনি কবিতা লিখতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাঁর কবিতার খাতা ফুরালেই তিনি চলে গেছেন জীবন নদীর ওপারে। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক কবি। আবুল হাসানের কবিতায় ছেলেবেলার সেই প্রকৃতি, গ্রামের নৈসর্গিকতা যেমন এসেছে তেমনি এসেছে নাগরিক জীবনের নানা অনুসঙ্গ৷ তার প্রথম দিকের কবিতায় জীবনানন্দসহ আরো অনেক কবির ছায়া পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে তিনি হয়েছিলেন নিজস্ব স্বতন্ত্রতায় উজ্জ্বল নক্ষত্র। ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ, হতাশা, নিঃসঙ্গতা তাঁকে দিয়েছিল কবিতার ছন্দময় ভাষা।
" থাকুক দু’চোখে দুর্ভিক্ষের দাহ,
ঝরুক আবার আন্ধার আঁধিঁব্যাধি
আমাদের প্রেম না পেলো, কবির ভাষা
কাব্যচূড়ায় আমরা তো বাঁধি বাসা।"

বাংলাদেশে একাত্তর এসেছিল মুক্তির বার্তা নিয়ে। লক্ষ প্রাণ জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কিন্তু আবেগতাড়িত কবি আবুল হাসান স্বাধীনতার পর দেখলেন স্বজন, বন্ধু, শিক্ষক হারানোর শূন্যতা। কবিতায় উগরে দিলেন বেদনার ঝর্ণা ধারা।
"উদিত দুঃখের দেশ, হে কবিতা, হে দুধভাত তুমি ফিরে এসো।
মানুষের লোকালয়ে ললিতলোভনকান্তি কবিদের মতো
তুমি বেঁচে থাকো
তুমি ফের ঘুরে ঘুরে ডাকো সুসময়।
রমণীর বুকের স্তনে আজ শিশুদের দুধ নেই প্রেমিক পুরুষ তাই
দুধ আনতে গেছে দূর বনে।
শিমুল ফুলের কাছে শিশির আনতে গেছে সমস্ত সকাল
সূর্যের ভিতরে আজ সকালের আলো নেই সব্যসাচীরা তাই
চলে গেছে, এখন অকাল
কাঠুরের মতো শুধু কাঠ কাটে ফল পাড়ে আর শুধু খায়।"

আবুল হাসানের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবিতা সম্ভবত "ঝিনুক নীরবে সহো" আর "নিঃসঙ্গতা"।

"ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো,
ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!" (ঝিনুক নীরবে সহো)

"অতটুকু চায়নি বালিকা !
অত শোভা, অত স্বাধীনতা !
চেয়েছিলো আরো কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক !
অতটুকু চায়নি বালিকা !
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম !
চেয়েছিলো আরো কিছু কম !
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী ।" (নিঃসঙ্গতা)

এছাড়া আবুল হাসানের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে আছে, পাখি হয়ে যায় প্রাণ, জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন, তোমার চিবুক ছোঁবো কালিমা ছোঁবো না, গোলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশোর, যুগলসন্ধি, জ্যোৎস্নায় তুমি কথা বলছো না কেন ইত্যাদি।

আবুল হাসানের লেখা প্রথম তিনটি কাব্যগ্রন্থ ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পর ১৯৯৪ সালে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে কবির সমস্ত, কবিতা, গল্প, কাব্যনাট্য "আবুল হাসান রচনা সমগ্র" নামে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন শামসুর রাহমান।

বই: আবুল হাসান রচনাসমগ্র
প্রকাশনী : বিদ্যা প্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা
Profile Image for Rony Rahman.
71 reviews7 followers
December 18, 2024
আবুল হাসানের গল্পসমগ্র ও কাব্যনাট্য আগে পড়া হয়ে ওঠেনি। তার কবিতা বরাবরই সুখপাঠ্য তাই একের অধিকবার পড়তে কখনো দ্বিধা করিনি।।
তবে আবুল হাসান একজন জন্মকবি। যে তার গল্পেও বুনে রাখে কবিতার বীজ। সে-সকল গল্প ও চরিত্রে বারবার কবিতারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
Profile Image for Muhammad  Mehedi Hasan.
19 reviews11 followers
April 5, 2020
আবুল হাসানের অভ্যুদয় দেশবিভাগোত্তর ঢাকায়, ষাটের দশকে, আর লীন হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। মাত্র উনত্রিশ বছরের আয়ুষ্কালে হা��ানের অনেক বাসনা অচরিতার্থ থেকে গেছে, সন্দেহ নেই অনেক কবিতা অলিখিত; কিন্তু তারপরেও যে কবিতা রেখে গেছেন আবুল হাসান, তারই বিচার করতে হবে আমাদের, তারই বিবেচনার মধ্য দিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে কবিতায় কতখানি মনঃপ্রাণ সঁপেছিলেন হাসান, প্রকৃতার্থে সর্বস্ব সমর্পণ করেছিলেন, তাঁর বাস্তবতাও যেন ঢুকে গিয়েছিল মেঘের ভিতরে।

আবুল হাসানের প্রথম কবিতাগ্রন্থের নাম 'রাজা যায় রাজা আসে'। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছোটগল্প থেকে নেয়া। প্রথম কবিতার নাম 'আবুল হাসান'। এই কবিতার মধ্যে হাসানের নিজস্ব অন্তরাত্মার ছাঁচ ধরা পড়েছে। একটি অপার্থিব রোমান্টিকতা নিজের নামের ছয়টি অক্ষর ঘিরে মুঞ্জরিত। পাথর? নাকি উপগ্রহ? নাকি রাজা? কান্না ভেজা চোখ? নাকি যুদ্ধ? দীর্ঘশ্বাস?一 পুরো কবিতাটি যেন তার নয়.. যেন অচেনা কারো কোনো উক্তি। কিংবা তাঁরই মৃত্যুত্তর কোনো উচ্চারণ। যেন এই কবিতাটি ইশারা দিচ্ছে আবুল হাসানের অকালমৃত্যুর। কবিতাটি একটি ভবিষ্যদ্বাণীর স্থাপনার মতো মনে হয়। এই বইয়ের কিছু কবিতা আমার মুখস্থ, অন্তস্থ। 'চামেলী হাতে নিম্নমানের মানুষ' কবির পিতার একটি করুণ প্রতিকৃতি। 'মাতৃভাষা' কবিতায় প্রমাণ করেছেন কবি যে ক্ষুধাই মানুষের মাতৃভাষা। হাসান যখন সমাজচেতন বা রাজনীতিচেতন কবিতা লিখেছেন, তখনো তার ওপর এমন আবছা আবরণ পড়ে থাকে, যে, তা নেপথ্য কন্ঠের মতো মনে হয়। যেমন:-

'তবে কি আমার ভাই আজ
ঐ স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?'
(উচ্চারণগুলি শোকের)

যেমন: স্বয়ং রাজনীতি নিয়েই যে কবিতা, 'অসভ্য দর্শন,' সেখানে রাজনীতিকে তিনি চিহ্নিত করেছেন 'তীব্র এক বেদেনীর সাপ-খেলা' বলে। হাসানকে, শেষ বিশ্লেষণে রাজনীতিসচেতন হলেও রাজনীতিবিরোধী বলেই মনে হয়।

কবি জসীমউদদীন ও কবি পাবলো নেরুদাকে দুটি কবিতা উৎসর্গ করেছিলেন আবুল হাসান। সাধারণ মানুষের কথা বললেও হাসান জসীমউদদীনের মতো 'পল্লীকবি' নন, নন পাবলো নেরুদার মতো বিপ্লবী। সাধারণ মানুষের জন্যে বেদনার বহিঃপ্রকাশ আছে হাসানের কবিতায়। আবার নাগরিক কবি বলতে যা বোঝায়, যেমন ধরা যাক শহীদ কাদরী বা শামসুর রাহমান, তা-ও নন হাসান। তাঁর কবিতায় পুরো বাংলাদেশ ব্যাপ্ত হয়ে আছে। হাসানের কবিতায় কখনোই বৈপ্লবিকতা নেই। মানুষ ও প্রকৃতির এমন একটি প্রবহমান মিশ্রণ-চিত্রণ আছে হাসানের কবিতায়, যা তাঁরই নিজস্ব সীলমোহর অঙ্কিত। হয়তো তাঁর কবিতায় কিছু অপব্যয় আছে, কিছু তাৎক্ষণিকতা; কিন্তু যত তাঁর মৃত্যু কাছিয়ে আসছিলো তত দানা বাঁধছিল তাঁর কবিতা। সম্ভবত সুধীন্দ্রনাথ দত্তের একটি চিঠিতে পড়েছিলাম, মৃত্যু যত নিকটবর্তী হয়, তত যেন সমস্ত জীবনচিত্র এক-লহমায় পুঞ্জিভূত হয়ে ওঠে। হাসানের সর্বশেষ কবিতাগুলোয় ঘটেছিল সেই ঘনীভবন, রসায়ন, আসঞ্জন- সেই বাস্তব ও কল্পনার অপরূপ সহবাস, সেই আনন্দ ও যাতনার সঙ্গম, সেই সজ্ঞান অভিজ্ঞতা আর শব্দ-ছন্দের রতিক্রীড়া, জোৎস্না, যৌবন, ভালবাসার একত্রমিলন। হাসানের কবিতায় পালিশ নেই, হৃদয়বত্তা তার মূলধন। কোথায় যেন বাউলের টান আছে তার কবিতায়। যেন তার সব উচ্চারণ কিরকম বেদনাহত। আবুল হাসানের একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা গোলাপের নিচে নিহত হে কবিকিশোর।

গোলাপের নিচে নিহত ঐ কবিকিশোর কি আবুল হাসান নিজেই?
Profile Image for Pathok Bolchi.
97 reviews5 followers
February 7, 2023
কবি আবুল হাসানের লেখার প্রতি আমার আমার আগ্রহ জন্মেছিল আনিসুল হক ভাইয়ের উপন্যাস ' আমারও একটা প্রেম কাহিনি আছে' পড়ে। তার কয়েকটি কবিতার পঙক্তি তিনি উপন্যাসের প্রত্যেক ঘটনার বিরতির পর শুরুতে যুক্ত করে আবুল হাসানের লেখার প্রতি আমার ক্ষুধার্ত পাঠক হৃদয়কে আরও জাগিয়ে তোলেন। তখন থেকে আমি ইন্টারনেটে যেখানে যতটুকু পাই সব ভোজনরসিকের মত মজা করে খেয়ে তৃপ্তির আস্বাদ নেই তবুও মনে হয় কী যেন বাকি রয়ে গেছে,,,,,
সেই থেকে আমি আবুল হাসানের প্রেমে পড়লাম তার কবিতার ভাষা এত ঝকঝকে এত সাবলীল যে সকালের কুসুম-গরম রোদের মত প্রত্যক তরুণ কবি ও প্রেমিকদের হৃদয়কে নির্মল করে।

তার সবথেকে উপলব্ধিময় কবিতার লাইন মনে হয় এটা-
"অবশেষে জেনেছি মানুষ একা!
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা!
দৃশ্যের বিপরীতে সে পারে নাএকাত্না হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনদিন।"

এই চিরসত্যকে মানুষ সবসময় ইন্দ্রিয়লব্ধ করতে পারে না যতক্ষণ না সে নিজে সম্মুখস্থ হয়। আবুল হাসানের এই কথাও প্রিয় কবি জীবনানন্দের বিখ্যাত কবিতা 'বোধ' এর সাথে দারুণ সাংঘর্ষিক
" জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মতো হ’য়ে—
সন্তানের জন্ম দিতে-দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়,
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয়
যাহাদের; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজখেতে আসিতেছে চ’লে
জন্ম দেবে—জন্ম দেবে ব’লে;
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি? তাহদের মন
আমার মনের মতো না কি?
—তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী।"

আমি কবিতা পড়লে একরকম সেই কবি ই হয়ে যায়। মনে হয়, আমি জীবনানন্দের একাকী,আবুল হাসানের নিঃসঙ্গতা, নজরুলের প্রত্যাখিত নার্গিস/ফজিলাতুন্নেছা র গোপন দুঃখ,,,,,,,, আমি কবির দুঃখ পড়ি। মনে হয় সব দুঃখই আমার। যেহেতু দুঃখ আমার ঈশ্বর,,,,

আবুল হাসান মাত্র ২৯ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর
মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ক্ষীণায়ু জন
কীটস্ এবং সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথা। তাঁর কবিজীবন দীর্ঘ নয়। তাঁর সংক্ষিপ্ত কাব্যচর্চা আমাদের উপহার দিয়েছে ‘রাজা যায় রাজা আসে', ‘যে তুমি হরণ করো এবং ‘পৃথক পালঙ্ক’-এর মতো তিনটি উজ্জ্বল কাব্যগ্রন্থ। তাছাড়া তাঁর অগ্রন্থিত কবিতার সংখ্যাও কম নয়। প্রকাশিত, অপ্রকাশিত সকল কবিতা এই কাব্যগ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া তার একমাত্র কাব্যনাটক ও ছোটগল্পগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি যতটা কবি ঠিক ততটা তিনি একজন দারুণ ছোটগল্পকার। এত সহজ মেঘের মত ঝকঝকে ভাবে আমার পড়া ছোটগল্পকার আমার মন রবীন্দ্রনাথ ও সৈয়দ মুজতবা আলীর পর আর কেউ ছুঁয়ে যায় নি। বিশেষ করে আবুল হাসানের 'তরু' গল্পটি এত শান্তির এত তৃপ্তির যে পড়তে গিয়ে অনুভূতি গুলো আরও বেশি উদ্দীপ্ত আরও বেশি ব্যথিত আরও বেশি ফুল হয়ে সৌন্দর্যের শোভা বর্ধন করেছে। কবি যে প্রিয়র বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন,
'তুমি এত অমায়িক সুন্দর
আমার শব্দেরাও মুগ্ধ হয়ে তোমায় দেখে'

আবুল হাসান কে পড়তে গিয়ে মনে হলো আমি বোধ হয় তার লেখার সুখ্যাতি তেমন ভাবে করতে পারব না যেমন ভাবে করা উচিত,,,,,

তাই তো ভূমিকায় কবি শামসুর রাহমান যথার্থ ই বলেছেন - "আবুল হাসান মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কবি, কবি ছাড়া আর কিছুই নন। তাঁর প্রতিটি নিঃশ্বাসে বয়ে গেছে কবিতা। তাঁর এলোমেলো জীবনের ছাপ পড়েছে তার কবিতাতেও। এই এলোমেলোমি তাঁর কবিতার দুর্বলতা এবং শক্তি। আবুল হাসানের কবিতার আপাত-অসংলগ্নতা এমনই হৃদয়গ্রাহী যে পাঠক অভিভূত হয়ে পড়েন। তাই, তরুণ কবিদের কাছে তিনি এত প্রিয়। যখন কোনো কোনো তরুণ কবির রচনায় আবুল হাসানের পংক্তিমালার ছায়া দেখতে পাই, তখন বিস্মিত হই না। তিনি যৌবনের বিষন্নতা, নৈঃসঙ্গ্য এবং দীর্ঘশ্বাসের কবি। তাঁর শিল্প-সৌন্দর্য বোধ যেমন তীক্ষ্ণ তেমনি তীব্র মানুষের প্রতি তাঁর মমতা, জীবনের প্রতি ভালোবাসা। "

কবি-সমালোচক আবু হেনা মোস্তফা কামালও পূর্ণাঙ্গ মন্তব্য করেছেন , “চূড়ান্ত ব্যবচ্ছেদ করলে তাঁর (আবুল হাসানের) ভেতরে মায়া ও মমতা, মানুষের জন্যে দুঃখবোধ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না।”

একজন সত্যিকারের কবিই তো যীশু খৃষ্টের মতো সকল মানুষের হয়ে দুঃখ পান। আবুল হাসান তাঁর একটি কবিতায় বলেছেন,
"শিল্প তো নিরাশ্রয় করে না।
কাউকে দুঃখ দেয় না।"
সেই একই কবিতায় তিনি লেখেন,
"শিল্প তো স্বাতীর বুকে মানবিক হৃৎপিণ্ড,
তাই আমি তার হৃৎপিণ্ডে যাই চিরকাল রক্তে আমি
শান্তি আর শিল্পের মানুষ।"

- আকাশ
7 reviews43 followers
Read
November 6, 2015
এরপর থেকে সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চেয়েছি
Profile Image for Zahedul Islam.
28 reviews54 followers
April 29, 2018
'সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে...
...
Displaying 1 - 11 of 11 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.