What do you think?
Rate this book


197 pages, Hardcover
First published January 1, 1984

" যদি কোনো পল্লী বালিকার হাতে কখনও মৃৎপুত্তলি দেখতে পান, লক্ষ্য করে দেখবেন, ঐ পুত্তলিতে লীলাবতীকে পাওয়া যায় কি না- আর যদি যায়, তাহলে বুঝবেন, ওই শুধু মৃৎপুত্তলিই নয়, বহু শতাব্দী পূর্বের শ্যামাঙ্গ নামক এক হতভাগ্য মৃৎশিল্পীর মূর্ত ভালোবাসাও৷ "
রক্তপাত, লাঞ্চনা, অপমান ইত্যাদি আমরা পূর্বেও দেখেছি, এখনও দেখছি। অন্ধের কি বা রাত্রি, কি বা দিন। তখন ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়রা নির্যাতন করতো, এখন যবনেরা করবে-একই ব্যাপার।
গৌড়ের ইতিহাস, গৌড়ের ইতিবৃত্ত, ওপর ওপর অতিক্রম করেছিলাম ছোটোবেলায়, ইতিহাস বইয়ের পাতার দ্রুত সঞ্চারণে। সেই থেকে মনের ধুসর প্রকোষ্ঠে কেবল থেকে গেছে কিছু শব্দ- সেন বংশ, বল্লাল সেন, লক্ষন সেন, মাৎস্যানায়, আর কোথাও পড়া এই তথ্য যে ষোলোজন যবন ঘোড়সাওয়ারীকে দেখে, খাওয়া ফেলে খিড়কী পথে লক্ষণ সেনের পালিয়ে বাচা!
ছোটোবেলার ইতিহাস বইতে ঐতিহাসিকরা আসলে যে কথাটা মুখ ফুটে বলেন নি, সেটি হল লক্ষন সেন আদতে ছিলেন অপদার্থ। আর দুনিয়ার ইতিহাসে শুধু বাংলার শেষ রাজা লক্ষন সেনই নন, তার মত আরও ভুরি ভুরি অপদার্থ রাজা-বাদশাহ আছেন, যেমন, ভারতের শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ্ যারা একধারে পিতৃপুরুষের অর্জিত সম্পত্তি পেয়ে, বিলাস-ব্যাসনে, রমণী আর রমনীয় সকল নেশায় ডুবে থেকেছেন, আর অন্যধারে সাধারন প্রজারা জীবন দিয়ে দাম চুকিয়েছে সেই রাজকীয় অপদার্থতার! এই উপন্যাসে লক্ষণ সেনের আরেকটু বর্ননা থাকলে ভাল হত কিন্তু লেখক আবার নামকরনেই বলে রেখেছেন যে এ কাহিনী রাজা-রাজড়ার নয়, এ কাহিনী আম-জনতার, প্রাকৃতজনের। ফলে লেখক কে কিছু মাত্র অনুযোগ করা চলে না।
আসলে প্রদোষে প্রাকৃতজন নিয়ে কোন দ্বিরুক্তি বা পুনরক্তির অবকাশ নেই, কারন গৌড়ের নারীরা আমায় এমনিই বাক্রুদ্ধ করে রেখেছে তাদের মায়াজাল দিয়ে! ওহো হো, মায়াবতী, লীলাবতী, ছায়াবতী, বিভাবতীরা কালের স্রোতে তোমরা কোথায় হারিয়ে গেলে? আমার যে রাজ-ঐশ্বর্য্য চাই না, শুধু তোমাদের মত একটি ভালবাসার নারী চাই। হায়, ঈশ্বর, এক লীলাবতীর অপেক্ষায় অপেক্ষায় যে জীবনটা আমার বৃথা চলে যায়!
যাই হোক, জীবনে লীলাবতীদের নিদারুন অনুপস্থিতি ছাড়া, পাঠ-শেষে নির্বাক মনে ক্ষোভ আর একটি ছিল যে লেখক কি শ্যামাঙ্গ কে কি বাচাতে পারতেন না? কিন্তু শেষে দেখি লেখক স্বয়ংই স্বীকার করেছেন যে শ্যামাঙ্গ বা বসন্তদাসের বেচে থাকা আর না থাকায় ইতিহাসের গতি বিশেষ পালটায় না। আর সত্যিই তো আর পাঁচজন প্রজার থেকে শ্যামাঙ্গ বা বসন্তদাস এর ভাগ্য খুব একটা আলাদা হওয়ার কথাও তো না! ফলে শ্যামাঙ্গ বা বসন্তদাস যে শেষ পর্যন্ত কোন যুগ-নায়কের আসনে বসেন নি, তাতে আসলে লেখকের পরিমিতি বোধই প্রকাশ পেয়েছে।
এই অসামান্য উপন্যাসটি সার্থক অর্থেই বাংলা ভাষার এক অবিস্মরনীয় সৃষ্টি। লেখক ও তার লেখনীকে এই পাঠকের আভূমি-নত কুর্নিস। আর সেই সাথে দুষ্ট-লোকের নজর এড়িয়ে লেখকের পায়ে আমার পাঁচটি স্বর্ন-মুদ্রার উপঢৌকন।