Jump to ratings and reviews
Rate this book

লোটাকম্বল ##1-2

লোটাকম্বল

Rate this book
লোটাকম্বল দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় পাঠকবর্গ এক ভিন্নতর স্বাদের লেখায় আপ্লুত হয়েছিলেন। অজস্র পত্রে তাঁরা সেই আনন্দজ্ঞাপন করেছিলেন। প্রথম পর্ব শেষ হবার পর অসংখ্য অনুরোধ এসেছিল অনুরূপ একটি দ্বিতীয় পর্ব অবিলম্বে শুরু করার। কেন লোটাকম্বল এত জনপ্রিয় হয়েছিল! কীসের গুণে? নিছক হাস্যরস অথবা অন্য কিছু? বাংলাসাহিত্যে হাসির গল্প অনেক লেখা হয়েছে। হাসির উপন্যাস একটি কি দুটি। তা-ও সীমিত পৃষ্ঠাসংখ্যায়। সুবৃহৎ একটি হাসির উপন্যাস দীর্ঘধারাবাহিকতায় প্রকাশের অনন্য দৃষ্টান্ত পাঠক-অভিনন্দনের অন্যতম কারণ হলেও, ভাল-লাগার আসল রহস্য হল, লোটাকম্বল মূল্যবোধের উপন্যাস, মানুষের অন্তর্মনের আধ্যাত্মিক সংকটের উপন্যাস। ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাড়িয়ে নিঃসঙ্গ এক প্রৌঢ়, হিমালয়ের মতো যাঁর ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব যাঁর আদর্শ নিষ্ঠা, আপাত কঠোর যেন প্রুসিয়ান জেনারাল অথচ ভেতরে ভেতরে কুসুম-কোমল। আর সেই মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান, মাঝে দুই পুরুষের ব্যবধান।পূর্বপুরুষ উত্তরপুরুষে সঞ্চারিত করতে চায় জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ আর মূল্যবোধ। মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে চায়। সেইশিক্ষা শুধু উপদেশের আকারে আসেনা, আসে ‘আপনি আচরিধর্ম’-এর পথ বেয়ে।দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির ঠোকাঠুকির মধ্যে আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধমাতামহ। আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলে যিনি খুঁজে পেতে চান সেই চির-চাওয়া পরম পুরুষটিকে। সঞ্জীবের সার্থক সৃষ্টি এই দীর্ঘকাহিনী। হাসি, হিউমার, ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-সুখের টানাপোড়েনে তৈরি শাশ্বত জীবনবেদ।

860 pages, Hardcover

First published January 1, 2009

66 people are currently reading
989 people want to read

About the author

Sanjib Chattopadhyay

266 books141 followers
Sanjib Chattopadhyay (Bengali: সঞ্জীব চট্ট্যোপাধ্যায়) (born February 28, 1936 in Kolkata) is a Bengali novelist and writer of short stories. His style is characterised by use of short satirical sentences mixed with very lively language.

Childhood and education:
Sanjib Chattopadhyay spent his childhood in the hilly terrain of Chota Nagpur Plateau under the care of his father after his mother died when he was five. They relocated to Calcutta and he was admitted to Victoria Institution school which he joined at grade seven. He later went to Scottish Church College, Calcutta where he studied chemistry.

Work:
The subjects of his fiction are mostly families living in Calcutta city. Within the confines of these homes, he challenges the moral values of the fast-changing middle class of the city. Chattopadhyay frequently uses old men as his protagonists. These aged characters create the spiritual and philosophical edge found in his novels Lotakambal (The Blanket and Quilt) and Shakha Prasakha (Branches). His most famous novella Swetpatharer tebil (The Ivory Table) is an example of his characteristic style of story-telling which mixes tension, dilemma, curiosity, pity, humor, and satire. He has written fiction for children and continues to write for magazines and newspapers. Chattopdhyay current writing is related to Ramkrishna Paramhansa, Sarada Devi and Swami Vivekananda. Some of his major works apart from the above mentioned are:
পরমপদকমলে (At His Divine Feet)
ক্যান্সার (Cancer)
দুটি চেয়ার (Two Chairs)
রসেবশে
রাখিস মা রসেবশে
বেশ আছি রসেবশে
তুমি আর আমি (You And I)
একে একে (One By One)
কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই (Calcutta Is In Calcutta)
Apart from that his notable juvenile literature includes রুকু-সুকু, বড়মামা-মেজমামা series which are fun-filled and analyse various philosophical aspects of life through the eyes of children.

Awards:
Chattopadhyay is the recipient of the Ananda Puraskar in 1981 and the Sahitya Academy Award for his book শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন in 2018.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
180 (46%)
4 stars
110 (28%)
3 stars
58 (15%)
2 stars
24 (6%)
1 star
14 (3%)
Displaying 1 - 30 of 56 reviews
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews288 followers
March 9, 2025
নোনাধরা, পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের মতো নীরব এক পুরী– নীরব, কারণ এই ভগ্নপুরীর সমস্ত মানব-আলোই নিভে গেছে। কেবল টিমটিম করে দুটো সলতে জ্বলছে; পিন্টু ও পিন্টুর পিতা হরিশঙ্কর। ন্যায়বান পিতা, গায়ক মাতুল আর আধ্যাত্মবাদী মাতামহে ঘিরে থাকা পিন্টুকে আমরা প্রথম দেখি। ধীরে ধীরে পিন্টুর বয়ানে তার যাপনধারা ও পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে জ্ঞাত হতে হতে আরো এক দিক আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়। এই জীবনটা আসলে কী? সংসার কী? কীভাবে জীবনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যায়? আদৌ করা যায়?? ব‌ইয়ে ব্যবহার করা বিভিন্ন কোটেশন, কবিতার লাইন এই ব‌ইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়।


প্রথম খণ্ড– এই পর্বটা আমাকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছে। হাস্যরসের সাথে সাথে আমার মনে হচ্ছিল, একটা উঠতি অপরিপক্ক ছেলের মানসিকতা, তার চিন্তাধারা কীভাবে-কেমন করে-কোনভাবে প্রবাহিত হয়, তা বেশ ভালোই জানতে পারছি। এরকম কোনোকিছু পড়া একেবারেই নতুন আমার কাছে; যার জন্য খুব মজা লাগছিল। দেখতে চাচ্ছিলাম, বাবার তুখোড় ব্যক্তিত্ব আর আদর্শবোধ কীভাবে ছেলের মাঝে সঞ্চারিত হয়। পিন্টু চরিত্রটাকে লেখক এমনভাবে দেখিয়েছেন, বর্তমান সব কিশোর ও কৈশোর-পরবর্তী সময়ের পুরুষমনের নৈতিকতা ও অনৈতিকতার দোলাচল অতি স্পষ্ট।

দ্বিতীয় খণ্ড– বেশিরভাগ ব‌ইয়ের‌ই প্রথম অংশের পর দ্বিতীয়, তৃতীয় এই জিনিসগুলো আমার আর ভালো লাগে না। মনে হয়, হুদাই প্রথমের ভালো জিনিসটাকে উল্টা আরো নিচে নামাল। লোটাকম্বল দ্বিতীয় পর্বটাও সেরকম। প্রথম পর্বে এই গল্প শেষ করে দিলে খুব একটা খারাপ দেখাত না। কিন্তু তাতে অবশ্য পিন্টুর যুবককালের বিকশিত প্রোজ্জ্বল (!) ব্যক্তিত্ব দেখতে পেতাম না। শুধু হরিশঙ্কর আর পিন্টু‌ই ভালো চলত। মাঝখানে এক ছোটদাদু এসে সব গুবলেট করে দিলেন। এত গাঁজাখুরি পড়তে বিরক্ত বোধ হচ্ছিল। আর একটা জিনিসে বিরক্ত লাগছিল, পিন্টুর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্য সে না-হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অতি আকর্ষণ বোধ করছিল।‌ কিন্তু তার আশেপাশে আসা সব মেয়েই তাকে দেখামাত্রই অমন 'প্রেমে পড়-পড়' হয় কেন? কিশোরী, যুবতী, সধবা, বিধবা সবাইই যেন পিন্টু-প্রেমে মাতাল হয়ে আছে! এ কি একটু বেশি বেশি হয়ে গেল না?


প্রথম খণ্ডের মুগ্ধতার জন্য রেটিং কমাতে পারলাম না।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
July 12, 2018
অনেক দিন আগে মজার একটা খেলা চলছিল ফেসবুকে। নিজের পড়া সেরা দশটি বইয়ের নাম উল্লেখ করতে হবে। অনেকের লিস্ট নিয়ে রিসার্চ করে যে কয়টি বইয়ের নাম উদ্ধার করেছিলাম তাদের মধ্যে লোটাকম্বলের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। অনেক গড়িমসি করে বইটি হাতে নিয়েছিলাম। তাও প্রায় বছর খানেক আগের কথা। পড়তে গিয়ে দেখি আর পড়া আর আগায় না। বিরক্ত হয়ে শেষমেশ ফেলে রেখে দিলাম এই বই। তারও অনেক পরের কথা। অখণ্ড অবসর পেয়ে একদিন এই স্বাস্থ্যবান পুস্তকখানা পড়েই ফেললাম।

শুনেছিলাম, এই বইয়ে সুক্ষ্ণ রসের কোনো অভাব নেই। আমার রসবোধ বোধহয় উচ্চমার্গীয় কিছু না। তাই আমার পক্ষে এই বইয়ের রস আস্বাদন করা সম্ভব হয়নি। বরং পিন্টু নামক চরিত্রের প্রতি চরম বিরক্তির উদ্রেক ঘটেছে। খেলারাম খেলে যা গল্পের বাবর আর লোটাকম্বল গল্পের পিন্টু বাংলাসাহিত্যে আমার পাওয়া অতি বিরক্তিকর দুই চরিত্র। বইয়ের পাতা থেকে তুলে এনে এই দুই চরিত্রকে চপেটাঘাত করতে পারলে কিছুটা শান্তি পেতাম। সেটা তো আর সম্ভব না। রেটিং কম দিয়ে যদি কিছুটা ক্ষোভ মিটে!
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,356 followers
September 30, 2016
আমার পড়া সেরা বিশটা উপন্যাসের তালিকায় কখনোই লোটাকম্বল ঢুকবে না। সেরা চল্লিশেও সম্ভবত নয়। অধ্যায়গুলোতে অনেক অংশ-ই আছে রীতিমতো ভাবিয়ে তুলবার মতো, সেটা মানি। তবে কনক, মুকু থেকে শুরু করে যাবতীয় নারী চরিত্রের অপ্রয়োজনীয় রগরগে শারিরীক বর্ণনা পড়তে পড়তে একসময় মেজাজ চরম খারাপ হয়ে যায়।

পাঁচে টেনেটুনে তিন। নাকি আরো কমাবো?
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
January 9, 2023
❝উপন্যাসটি প্রকৃতপক্ষে হাসি, হিউমার, ঘাত-প্রতিঘাত, সুখ দুঃখের টানাপোড়েনের এক শ্বাশত জীবনবেদ। ভেঙ্গে যাওয়া যৌথ পরিবারের এক নিঃসঙ্গ প্রৌঢ় উপন্যাসটির সম্পদ। হিমালয়ের মতো যার ব্যক্তিত্ব। যার আদর্শ, মোরালিটি, এথিকস যেভাবেই বলা হোক না কেনো অসম্ভব সুদৃঢ়। বাইরে কঠোর হলেও যে মানুষটির অন্তর আসলে কুসুমের মতো কোমল। তার মা হারা যুবক সন্তানের মধ্যে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ আর মূল্যবোধ সঞ্চারিত করতে চান। দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর ঠোকাঠুকির ভেতর আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধ মাতামহ। এই দৃড়চেতা সন্তানের পিতার শ্বশুড়। তিনি আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলে খুজে পেতে চান চিরচাওয়া পরমপুরুষ টিকে। ব্যঞ্জনামুখর এই উপন্যাসে সুবিশাল ক্যানভাসে, বিশাল কলেরবে বান্ধবী মুকু, সংগীত সাধক শ্যালক বা মাতুলের মতো অজস্র বিষ্ময়কর চরিত্রের দেখা মেলে। লেখকের "লোটাকম্বল" অগণিত চরিত্রের বহুবর্ণরঞ্জিত এক বিরাট ক্যানভাস। যে ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে আমার মন ছুটে যেতে চেয়েছে জীবনবৃত্ত ভেঙ্গে উত্তরণের পথে৷ উপলব্ধি আসে- বৈরাগ্য অপ্রতিদ্বন্দী।❞


প্রত্যকে টা অধ্যায় যেনো জীবনের একেকটি অধ্যায়। আর সেই অনুযায়ী নামকরণ। আমি এর আগে এত সুন্দর ভাবার্থবোধক অধ্যায়ের নাম আর কোথাও পাইনি। “Every man is a volume, if you know how to read him”  উইলিয়াম এলারী চ্যানিং-এর বাণী। যা আবার অধ্যায়ের ও নাম! প্রকৃতপক্ষে লেখক মানুষের ভেতরকার গল্পগুলোকে পড়ে গেছেন সাবলীলভাবে। সেগুলোকেই রূপ দিয়েছেন তার উপন্যাসে।


আমি মনে করি, জীবনে চলার পথে আমাদের চারপাশে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলা একেকটি ভ্রাম্যমাণ উপন্যাস। ছোটবেলা থেকে বড় হবার পথে ধীরে ধীরে মানুষ বিভিন্ন অবস্থার মুখোমুখি হয়। সে মাঝে মাঝে আনন্দে আত্মহারা হয়, আবার কখনো একরাশ বেদনা এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দুঃখের ভেলায়। কখনো প্রচণ্ড আবেগ তাকে ঘিরে থাকে, আবার কখনো থাকে হতাশার ছেলেখেলা। জীবন চলতে থাকে তার নিজস্ব গতিতে। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে একসময় আমরা পা দিই যৌবনে। জীবনের নতুন উপাদান যোগ দেয় আমাদের সাথে। একই সাথে বাড়ে আকাঙ্ক্ষা এবং দায়িত্ববোধ। জীবনের এই অংশে এসেই আমাদের একা একা সিদ্ধান্ত নিতে শিখতে হয়। জীবন প্রবলভাবেই হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে সে সময়। আবার ঠিক তার পাশ দিয়েই সমান্তরালভাবে চলতে থাকে সমাজের বাঁধা-ধরা রীতিনীতি। দিনশেষে আমরা একইসাথে সমাজের নির্দিষ্ট বা তথাকথিত গণ্ডির মধ্যে বেঁধে ফেলতে চাই নিজেকে, আবার অপরপৃষ্ঠে সাড়া দিতে চাই জীবনের ডাকে। হতে চাই চরম শুদ্ধ, আবার অন্যদিকে লোভ-লালসাও জড়িয়ে থাকে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে। লেখক ঠিক এই চিত্রটিই ফুটিয়ে তুলেছেন এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।


সাধারণ একটা গল্পই লেখকের বর্ণনাগুণে, তাঁর স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মিশ্রনে তীব্র শ্লেষ আর ব্যঙ্গ ঢেলে হয়ে ওঠে অসাধারণ। এখানে তিনি জী��নদর্শণের গল্প বলেছেন। মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বনের কথা বলেছেন। বলেছেন সমাজচেতনার কথা। তুলে এনেছেন সমাজের ভালোমন্দ সকল শ্রেনীর মানুষে��� কথা। আরো বলেছেন নৈতিক জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তা; পাতায় পাতায় দিয়েছেন কবি-সাহিত্যিকদের উদ্ধৃতি। উপন্যাসের চরিত্রগুলো কথায় কথায় টেনে আনছে প্রবাদ-উদ্ধৃতি-গল্প! এ যেন এক উপন্যাসের ভেতরে ছোট ছোট অনেকগুলো গল্প। কিন্তু, মজার ব্যাপার হলো এতোকিছুর পরেও একে অতীব জ্ঞানের কচকচানি মনে হয় না। অদ্ভুত এক আবেশ জড়িয়ে থাকে।


লেখকের অদৃষ্টবাদী চিন্তা-চেতনার প্রভাব চোখে লাগার মতো। ছোটদাদুর চরিত্রটিকে ও বেশ আরোপিত মনে হয়। যাই হোক, সব কিছুর পরেও বাংলা ভাষায় এটি একটি অবশ্যপাঠ্য উপন্যাস। যিনি এখনো পড়েন নি, তিনি জানতেই পারবেন না, তিনি কী মিস করে চলেছেন।


উপন্যাসের প্রকাশকাল আশির দশকের মাঝামাঝি। পড়বার সময় উপন্যাসের কলকাতার ট্রাম, রাস্তা-ঘাট, অফিসের বর্ণনা পড়ে আমার মনে হয়েছে উপন্যাস টি পঞ্চাশ-ষাট দশকের কথা বলছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপন্যাসের ভাষা ছিল একেবারেই সহজ এবং প্রাঞ্জল। যেকোনো বয়সের এবং মানের পাঠকের জন্যই উপন্যাসটি সহজপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে বলে বোধ করি। কেননা উপন্যাসটিতে গল্প বলার ধরন এতোটাই প্রাঞ্জল যে কথাগুলোর গভীর থেকে পাঠককে অর্থ খুঁজে বের করতে হবে না। সাধারণভাবে পড়ার মধ্য দিয়েই উপন্যাসের আলোকপাতের বিষয়বস্তু পাঠকের সামনে প্রতীয়মান হবে। উপন্যাসটি পাঠের মাধ্যমে সাহিত্য জগতের একটি অমৃতরস পান করতে পারবেন পাঠক।


সাধারণত সমকালীন উপন্যাসগুলোতে আমরা দেখতে পাই, উপন্যাসে পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন দিকসমূহ উঠে আসে। সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বন্ধন, প্রেম-ভালবাসা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সুখ-দুঃখসহ দৈনন্দিন সমাজ জীবনের জটিলতাসমূহ প্রকাশ পায়। এই উপন্যাসেও এরকম কাহিনী ঘটতে দেখা যায় শুরু থেকেই। উপন্যাসের মূল চরিত্র পিন্টুর পারিবারিক অবস্থান, বজ্রকঠিন পিতার সাথে পুত্রের সম্পর্ক, প্রতিবেশীর সাথে পিন্টুর সম্পর্ক, মুকুর সাথে তার রসায়ন, পিন্টুর বাবার নিরুদ্দেশের পথে যাত্রার পর তার পরবর্তী জীবন এবং তার বসতবাড়িটিকে ঘিরে তৈরিকৃত নানান জটিলতা এবং অন্যান্য ঘটনা স্পষ্টভাবে সমকালীন উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য বহন করে চলে।


উপন্যাসে আলোচনা করার মতো একটি ইশ্যু বারবার এসেছে। পিন্টুর মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এবং তা থেকে প্রতিকারের উপায়। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে দুর্বল চরিত্রের অধিকারী ছিল পিন্টু নিজেই। সময়ের সাথে সাথে তার মানসিক পরিবর্তন ঘটেছে এবং পরিস্থিতি দ্বারা পিন্টু বারবার প্রভাবিত হয়েছে। অন্যদিকে তার পিতা হরিশঙ্কর ঠিক যেন তার বিপরীত। উপরে উপরে তিনি বজ্রের মতো কঠিন, আবার ভেতরে সদ্য ফোটা দূর্বার চাইতেও কোমল। তিনি মনে করেন যুক্তিই প্রথম এবং শেষ কথা। প্রচণ্ড বাস্তববাদী এই চরিত্রটি সকল নৈতিক গুণের অধিকারী। একদিকে যেমন সকল নৈতিক গুণের সমাহার, ঠিক তার সাথে রয়েছে বলিষ্ঠ কণ্ঠ এবং সর্বদা সত্যের পথের নিয়তযাত্রী হবার এক দৃঢ় অঙ্গীকার। চরিত্রটিকে লেখক বানিয়েছেন ‘মহাপুরুষ’। এই মহাপুরুষকে যখন সবাই বাহবা দেন ঠিক তার উল্টো পিঠেই পিন্টু হয় অবহেলিত। কেননা তার বাবার গুণের প্রায় কিছুই পায়নি সে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে বারবার নিজেকে  আবিষ্কার করে সে, আবার বাবার মতো আদর্শবানও হতে চায়। এই দুয়ের গ্যাঁড়াকলে পড়ে একে-একে ধরা পড়ে পিন্টুর নানান মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। কেন পিন্টু বারবার ধরা দেয় সস্তা বিনোদনের কাছে? কেন সাময়িক সুখের আশায় সে হারায় নিজের ব্যক্তিত্বকে? আসলে এগুলোকে সমস্যাও ঠিক বলা চলে না। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছে উঠতি অধিকাংশ তরুণের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বা চাহিদা। উপন্যাসের স্বাভাবিক গতির মধ্যেই চলেছে এসকল সমস্যা বা প্রবৃত্তির কারণসমূহের ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার সমাধান কিংবা প্রতিকারের চেষ্টা। অনেকের অভিযোগ এই উপন্যাস নিয়ে- নারীদেহের বর্ণনা, নারীকে অব্জেক্টিফাই করা, নারী নিয়ে পিন্টুর চিন্তাভাবনা ও কাজকর্ম। কিন্তু আমি মনে করি, আপনাকে বুঝতে হবে, পিন্টু বর্ণনা করছে উত্তম পুরুষে। যখন সে উত্তম পুরুষে বলবে তখন অবশ্যই তার নিজের মতগুলো শোনা যাবে সবকিছু ছাপিয়ে। আর পিন্টু বড় হয়েছে শুধু তার এক বাবার কাছে। মায়ের চেহারা হয়তো ছবি না দেখলে ভালোমতো মনে করতে পারে না। সে যেভাবে বেড়ে উঠেছে, একা একা, বিপরীত লিঙ্গ বা নারী সঙ্গ ব্যতীত, সে এক টা বয়স পর্যন্ত মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয় পেতো, কখনো মেশে নি মেয়েদের সাথে- সেইরকম একটি চরিত্র অনেকটা পিন্টুর মতোই হবে। একটা বয়সে পৃথিবীর প্রত্যেকটি ছেলের মাঝে কিছু ডার্ক ফ্যান্টাসী আসে বিপরীত লিঙ্গকে নিয়ে। বয়সঃকালের দোষ বলা যেতে পারে। তার সেই হযবরল অবস্থা যদি জাজ করেন, তাহলে বলতে হয় জীবনের অনেক কুৎসিত দিকগুলো আপনি হয়তো দেখেন নাই। আপনি চিরায়ত ক্লাসিক উপন্যাসগুলোর বিভিন চরিত্রের পদস্থলন এবং কন্টিনিউয়াস পরকিয়া মেনে নিতে পারছেন স্বাভাবিকভাবে কিন্তু একটা ছেলের বয়সঃকালের দোষ, চিন্তাভাবনাগুলোকে মেনে নিতে পারছেন না - এমন টা হলে সেটা হিপোক্রেসির সামিল। আমি পিন্টুর অসামাঞ্জস্যতাগুলো জাস্টিফাই করছিনা। আমি উপিন্যাসটিকে জাস্টিফাই করছি।


পিন্টুর মধ্যে থাকা এই সমস্যাগুলো বর্তমান প্রজন্মের অনেকের মধ্যে দেখা দেয়। উপন্যাসে লেখক সমাধানের উপায় খোঁজার চেষ্টা করেছেন দুটি দিক থেকে। একটি হচ্ছে বিজ্ঞানভিত্তিক, অন্যটি হচ্ছে ধর্মীয় দৃষ্টি। বিজ্ঞানের দিক থেকে তিনি চিরচারিত বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যবহার করলেও ধর্মীয় দৃষ্টির দিক থেকে তিনি ছিলেন আরও অনেক আধুনিক। তিনি ধর্মীয় অনুশাসনের পরিবর্তে আধ্যাত্মিকতার সুফল প্রয়োগ করবার চেষ্টা করেছেন উপন্যাসে। একইসাথে যুক্তিনির্ভর, ধর্মে অবিশ্বাসী পিন্টুর পিতা হরিশঙ্কর এবং ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাসী, আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন পিন্টুর মাতামহ রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় পাশাপাশি চলেছেন উপন্যাসের অনেকটা জুড়ে। মাঝে মাতুল জয়নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে সঙ্গীতের আবেদনও প্রকাশ করা হয় উপন্যাসে। হতাশাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে খুঁজে সঙ্গীতের ভেতরে আর তারই প্রতিচ্ছবি যেন দেখা যায় জয়নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে।


উপন্যাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক বলে গেছেন আরও অজস্র ছোট গল্প। যেসব গল্পে কখনো উঠে এসেছে দারিদ্রতা, কখনো নির্মমতা আবার কখনো এসেছে সামাজের উঁচু-নিচু শ্রেণীর কথা। গল্পচ্ছলে তিনি বর্ণনা করেছেন সামাজিক জীবনের বিভিন্ন সংকট। এসকল জটিল পরিস্থিতি ব্যাখ্যার মাধ্যমে উঠে এসেছে নৈতিক জীবন-যাপনের প্রয়োজনীয়তা। এসেছে সমাজের গভীর মূল্যবোধের কথা যা উপন্যাসে লেখক বারবার প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। এভাবে বারবার ধাক্কা দিয়েছেন আমার মনে। চেষ্টা করেছেন পাঠককে সচেতন করে তুলবার। পাঠকের চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে পিন্টুর পিঠে ভর করে নৈতিক মূল্যবোধের বাণীও আওড়িয়েছেন বারংবার। যুক্তি এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যা উভয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং উপন্যাস শেষে সফলও হয়েছেন বলে বোধ করি।


সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘লোটাকম্বল’ এর প্রজ্ঞাবান একটি চরিত্র হরিশঙ্কর। তার দেয়া সুখের সংজ্ঞা দিয়েই শেষ করছি লোটাকম্বলের আখ্যায়িকা।



❝‘সুখে বাঁচার কায়দাটা কী?’
‘দুঃখটাকে মেনে নেয়ার মানসিক প্রস্তুতি। রিক্ততার মধ্যে পূর্ণতার অনুভূতি’।❞


উপন্যাসের অধ্যায়গুলোর নাম ও উক্তির মাঝে আমার প্রিয়তম একটা উপরে ইতিমধ্যে ব্যবহার করেছি। বাকীগুলোর মধ্যে যেগুলো উল্লেখ না করলেই নয়_


❝সামনে যদি যাবি ওরে, থাক না পেছন- পিছে পড়ে ❞

❝There are only three things to be done with a woman. You can love her, suffer for her, or turn her into literature❞-. Lawrence Durell

❝নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায়না জানিতে হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।❞- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

❝There is no path in the sky and a monk must find the inner path❞

❝One Life, one death, one heaven, one hell, one immortality and one annihilation.❞

❝I shall go to her but she shall not return to me❞

❝দুয়ার খুলে থাকি বসে আসবে তুমি ফিরে। প্রদীপটিকে জ্বালিয়ে রাখি তোমার পথের ধারে।❞

❝The man that runs away, Lives to die another day❞

❝Is man one of God's blunders or is God one of man's blunder?❞


❝The time which steals our years away shall steal our pleasure too. The memory of the past will stay and half of our joys renew.❞
Profile Image for Nishat Monsur.
191 reviews18 followers
June 30, 2023
লোটাকম্বল পড়তে চাইছি তাও বেশ অনেক বছর আগে থেকে। তবে সত্যি সত্যি পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম এ বস্তু পড়ার মন আমার একবারে ঠিক হয়ে ওঠেনি তখন। জীবনে আমি অসময়ে বই কম পড়িনি, যেটি যখন পড়ার কথা ছিল তখন পড়া হয়নি। এই বইটি মনে হলো ঠিক সময়েই পড়া হয়েছে।

বিভিন্ন রিভিউতে পড়লাম অনেকেই এটাকে একটি দীর্ঘ পরিসরের হাসির উপন্যাস বলেছেন। আমার অবশ্য তা মনে হয় না। লেখার ভঙ্গি হালকা হলেই যে সেটি হাসির উপন্যাস হবে, এমন মতের সাথে আমার দ্বিমত আছে।

বাঙালির কাছে যেকোনো গল্প বেচতে হলে তাতে অবশ্যই একটি দেবতা থাকতে হবে, এই ফরমুলা আমি এখন জেনে গিয়েছি। লোটাকম্বলেই সঞ্জীব যেমন বলেছেন, "একটা মাছি তৈরি করার ক্ষমতা নেই, ডজন ডজন দেবতা তৈরি করে বসে আছে।" দেবতুল্য কাউকে বানাতেই হবে, নয়ত কেউ প্রোটাগনিস্ট হয়ে উঠতে পারবে না। লোটাকম্বলে সেই চরিত্রটি অবশ্যই হরিশঙ্কর। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখন আর এরকম চরিত্র ভালোবাসতে পারি না। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতেই ভালো লাগে, মানুষের খুঁত থাকবেই। মানুষকে দেবতা করে তোলার এই প্রয়াস আমার পছন্দ নয় তেমন আর।

আরেকটি বিষয়ে বেশ অস্বস্তি হয়েছে পড়তে গিয়ে, তা হলো লেখার ভঙ্গি। ফার্স্ট পারসন স্টোরিটেলিং এ বরাবরই আশেপাশের কথা চলে আসার সম্ভাবনা থাকে, এই বইটি যদিও শুধু পিন্টুকে ফার্স্ট পারসনে দেখাচ্ছে, তবু পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে বারবার, লিনিয়ারিটি থাকছে না একদমই। এক কথা বলতে গিয়ে বারবার অন্য কথায় চলে যাওয়া বেশ ডিস্ট্র্যাক্টিং লাগে ব্যক্তিগতভাবে।

অন্যান্য অনেক পাঠকের মতো আমারও নারী চরিত্রগুলোর প্রতি কথকের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে গা গুলিয়েছে। একদম শেষের দিকে গিয়ে বিষ্টুদার বউ আর বিমলা ছাড়া আর কোনো ছোট-বড় নারী চরিত্র বোধহয় পেলাম না যার প্রতি এই ধরণের বর্ণনা আসেনি। কী ভয়াবহ ব্যাপার! চারিদিক কি আসলে এরকম পুরুষেই ভরা? এভাবেই ভাবে? শুধু সাহসে কুলোয় না বা সংস্কারে আটকায় বলে কিছু করে না? এত সহজে এরা প্রেমে পড়ে যেতে পারে মুহূর্তে মুহূর্তে? ভালোবাসি বলতে পারে? বুঝি না।

প্রথম খন্ডটা ভালো লেগেছিল বেশ এতসবের মধ্যেও। দ্বিতীয় খন্ডে এসে সবকিছু বড্ড বেশি আধ্যাত্মিক হয়ে উঠল আমার রুচির অনুপাতে। যা যা উল্লেখ করলাম অস্বস্তিদায়ক ব্যাপার হিসেবে, সবকিছুই বোধহয় বেশি বেশি হয়েছে এই দ্বিতীয় খন্ডে। সব মিলিয়ে লোটাকম্বল, এত আদৃত, জননন্দিত বই আমার কাছে তিন তারা পেলো। কে জানে, প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল না হলে মানুষ বোধহয় বিচারের কালে একটু বেশি রুঢ় হয়!
Profile Image for Mosharraf Hossain.
Author 3 books57 followers
November 2, 2015
হরিশঙ্কর; জমিদারীর ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে আদর্শবান আপাত কঠোর এক প্রৌঢ় পুরুষ, পাহাড় সদৃশ ব্যক্তিত্ব নিয়ে একাকী লড়াই করে যাওয়া এক আদর্শবান জীবন যোদ্ধা। বজ্রের মতো কঠিন কিন্তু কুসুমের মতো কোমল এই সংগ্রামী পুরুষের দেব দেবীতে বিশ্বাস না থাকলেও ধারণ করে আছেন দেবচরিত্র। জীবন সম্পর্কে তার দর্শন হচ্ছে জন্মের দরজা দিয়ে স্টেজে ঢুকেছি মৃত্যুর দরজা দিয়ে নাচতে নাচতে বের হয়ে যাবো, যতদিন শক্তি আছে ততদিন অভিনয় করবো আর এই অভিনয় করতে হবে আদর্শ আর চরিত্রের সম্মিলিত স্রোতধারায়। নিষ্ঠুরতা, দয়া, মায়া, জ্ঞান আর আদর্শের মিশেলে এক সাধক পুরুষের উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই হরিশঙ্কর।

সেই মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান পলাশ চট্টোপাধ্যায় বা পিন্টু। দৃষ্টিভঙ্গির যোজন যোজন দূরত্বে থেকেও পূর্বপুরুষ উত্তর পুরুষে সঞ্চারিত করতে চায় জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী আর মূল্যবোধ। দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে তাল মিলিয়ে মধ্যখানে আরেক পুরুষ; বৃদ্ধ মাতামহ রাজনারায়ন। শীব ঠাকুরের মতো অল্পতেই তুষ্ট আধ্যাত্মিক এই সাধক আধ্যাত্মিকতার বাতিটি তুলেই খুঁজে পেতে চান চির-চাওয়া পরমপুরুষটিকে।

আত্মজীবনীর মতো করে প্রথম পুরুষে লিখা এই জীবনকেন্দ্রীক উপন্যাসের প্রধান চরিত্র পিন্টু। আহারে অনাহার, শ্রমে বিশ্রাম, চিন্তায় নিশ্চিন্তা, দর্শনে অদর্শন, ভাবে বিভাব, এক শাপভ্রষ্ট মহাপুরুষ, দয়া করে এক পাটকাঠি সদৃশ দেহাধারে যিনি ধরা পড়েছেন। কামিনী কাঞ্চনের দাসত্ব, অস্থিমজ্জার দাবি সব পাশ কাটিয়ে অনন্তের মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য মাঝে মাঝে অন্তর্গত রক্তের মাঝে টান অনুভব করলেও ঘর ছেড়ে আর বের হওয়া হয় না। একদিকে প্রচণ্ড ভোগী, অন্যদিকে সাংঘাতিক ত্যাগী; একি সঙ্গে জ্ঞানী আবার নির্বোধ; একদিকে লম্পট অন্যদিকে সন্ন্যাসী অনেক টা চাঁদের মতো, পনের দিন অন্ধকার, পনের দিন আলো।

এর মাঝেই আছেন মাতুল জয়নারায়ন মুখোপাধ্যায়। অসাধারণ প্রতিভাধর একি সাথে জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা এক সংগীতজ্ঞ। যেকোন মুহূর্তে দেখে বোঝা মুশকিল সংসারে প্রবেশ করছেন নাকি সংসার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। জয়নারায়নের দুইটা গ আছে গান আর গোঁ, দুইটা র আছে রাগ আর রসনা, দুইটা ল আছে লোভ আর লোকভয়, দুইটা ভ আছে ভালবাসা আর ভাবনা। সুরের মূর্ছনা তার কণ্ঠে খেলে মিছরির দানার মতো, তার আবেগী সুর হচ্ছে বরফে জমানো মধুর মত মিঠে। মীড়, মূর্ছনা, গমক, চক্রধা, তান দিয়ে যেমন ইমন ফুটিয়ে তোলেন তেমনি সুরের আরোহণ, অবরোহণ, বাদী, সমবাদী দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন ঠুংরি। উদারা, মুদারা তারায় অনায়াসে বিচরণকারী জয়নারায়ন যখন চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করেন তখন নির্বাপিত হেমকুন্ডে আঘাত করলে তার স্ফুলিঙ্গ যেমন উড়তে থাকে, তেমনি কণা কণা সুর সারা ঘরে আলপিনের ফলার মতো ছুটতে শুরু করে ইস্পাতের ফলার মতো।

আছেন ঝানু উকিল মেসোমশাই, হরিশঙ্করের সাথে মাঝে মাজেই যার অহং এর লড়াই বেঁধে যায়। দশাসই চেহারার মেসো ঘুমানোর সময় ঘোরতর আক্রোশে দাঁতে দাঁত চেপে নাক দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করতে থাকেন আর নিজের শব্দে নিজেই চমকে উঠে কে কে বলে হাঁক ছাড়েন।

শ্বশুর-জামাই সম্পর্কঃ
দুই পুরুষের মাঝে মানসিক সেতু বন্ধনের কাজটা নীরবে করে গেছেন মাতামহ রাজ নারায়ণ, মেয়ের জামাইয়ের সাথে তার বন্ধুর মতো সম্পর্ক। কখনো কখনো হরিশঙ্কর শ্বশুরকে বিদ্রূপ করে বলে, “এতো কম বুদ্ধি নিয়ে বেঁচে থাকা যায়! দুনিয়ার সব ধেড়ে ধেড়ে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী লোপাট হয়ে গেল, ধূর্ত শৃগাল কিন্তু ঠিকই আছে” কিংবা “আপনার তো মুখের ফিল্টার নষ্ট হয়ে গেছে, আপনার এখন কথা না বলাই ভালো”... তেমনি রাজনারায়ন ও তার মেয়ে জামাইকে ছেড়ে না দিয়ে বিদ্রূপ করে “তুমি তো শুধু হরি নও, হরি আর শঙ্কর মিলে পাটিসাপটা হয়ে আছে। রেগে গেছ তো, তাই বুদ্ধি বৈকল্য হয়েছে”

প্রেম, প্রীতি, ভালবাসাঃ
জীবনের পথ পরিক্রমাতেই পিন্টুর জীবনে আসে প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, সৌন্দর্য দেখার চোখ, নৃত্য, গীত, নিষিদ্ধ সম্পর্ক, ছোট খাট পাপ, একটু পদস্খলন, অপরাধী বিবেক, আসক্তি, অনাসক্তি। একের পর এক আসে নারী চরিত্র। আসে মহীশুরের টানা টানা চোখ, পাঞ্জাবের খাড়া নাক, কুল আপেলের রঙে রাঙানো গাল নিয়ে, সন্ধীপুজোর মুহূর্তে ধূপধুনোর ধোঁয়ার পাতলা আবরণের আড়ালে দেবী দুর্গার মতো দেখতে কনক। ঝকঝকে শরীর, ঝকঝকে মুখ, সুস্থ, সবল চোখা তলোয��ারের মতো ধারালো সুরঞ্জনা। আসে অপর্ণা যাকে দেখামাত্র মনে হয় পাখি নেই তবু পাখি ডাকছে, প্রতিটি পদক্ষেপে মোলায়েম ছন্দ তুলে ছুটে বেড়ানো নিটোল পায়ের স্পর্শে রোমাঞ্চিত হচ্ছে সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ। হাসি দেখে মনে হয় মানুষের মুখে দেবতা হেসে বেড়াচ্ছে। আসে তপ্ত কাঞ্চনের মত গাত্র বর্ণের মুকুলিকা বা মুকু। পদ্মের মতো মুখশ্রী, চোখ দুটি গভীর সরোবরের মতো, নাকের পাশে উৎসব রাতের চুমকির মতো ঝিলিক মেরে উঠা নাকছাবি। চারিত্রিক দৃঢ়তায় পিন্টুর যোজন যোজন দূরত্বের মুকুকে বলা যেতে পারে হরিশঙ্করের ফিমেল ভার্সন। রক্তমাংসের শরীরের লাবণ্য ভেদ করে ক্রমেই বের হয়ে এসেছে নারীর সুষমা আর দৃঢ়তার পৌরুষযোগে অনবগুণ্ঠিতা এক রমণী। একি ভাবে ছায়া, মায়া, কায়া, জবা, উষা, টিপ, কাকিমা সহ অর্ধডজন নারী চরিত্রের আগমন, কারো আগমন মুহূর্তের জন্য আবার কারো আগমন চিরদিনের জন্য।

সার সংক্ষেপঃ
স্বভাবজাত ভীতু প্রকৃতির পিন্টু চায় বন্ধু দীনুর মত ডাকাবুকো কিংবা সুখেনের মত পাড়া কাঁপানো প্রেমিক হতে, কিন্তু পারে না। মনের একাংশ চায় সাধু সংসর্গে থাকতে আর অদৃষ্ট বারে বারে তাকে সরিয়ে নিয়ে যায় আরো দূরে। এ যেন পিন্টুর ভেতর দিয়ে ঐ বয়সের সকল কিশোর এবং যুবকের মনস্তত্ত্বকেই তুলে ধরা হচ্ছে। লোটাকম্বল সাধারণ ভাবে একটি হাসির উপন্যাস হলেও এই উপন্যাস হল একটি মূল্যবোধের উপন্যাস, মানুষের অর্ন্তমনের আধ্যাত্মিক সঙ্কটের উপন্যাস। রঙ্গে ব্যঙ্গে, বিরহ মিলনে প্রেম-শ্রেয়ের ঐকতানে লোটা কম্বল নান্দনিক নবরসে তরঙ্গায়িত এক মূর্ছনা।

ভাল না লাগাঃ
উপন্যাসের একেবারে শেষের দিকে আসেন ছোট দাদু। আধ্যাতিক এক জন মানুষ যার রয়েছে যে কোন বিরূপ পরিস্থিতিতে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়ায় মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবার ক্ষমতা। কখনো কখনো মনে হবে চরিত্রটাকে জোর করে উপন্যাসে আনা হয়েছে আর এই চরিত্রটার ছায়ায় আড়াল করে ফেলা হয়েছে হরিশঙ্কর এবং পিন্টুকে।

ভাল লাগাঃ
তীব্র ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস, শব্দের অসামান্য ব্যবহার। প্রতিটা শব্দের আলাদা রকমের ওজন আছে। রমণী, অবলা, অঙ্গনা, স্ত্রীলোক আর ললনা; সবগুলো একি শব্দের বিভিন্ন সমার্থক শব্দ হলেও একেকটা শব্দ উচ্চারণ করার সময় আমরা একেক রকম ওজন অনুভব করি। লোটা কম্বল শব্দের ওজনে অনেক ওজনদার একটা উপন্যাস। Power of Words এ মুগ্ধ হতে চাইলে লোটা কম্বল পড়তেই হবে।

প্রিয় চরিত্রঃ
হরিশঙ্কর
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
October 13, 2023
শেষ পর্যন্ত কেমন লাগে পড়ে দেখার মত রুচি বা ধৈর্য কোনটাই হচ্ছে না। Done at 36% >_<
Profile Image for Bayazid Khan.
14 reviews8 followers
July 12, 2018
সবচেয়ে দীর্ঘদিন সময় নিয়ে পড়া একটি উপন্যাস! ফেব্রুয়ারি মাসে হাতে নিয়েছিলাম। নানান কারনে বইটা ২৬০ পৃষ্টা পড়েছিলাম প্রায় একমাস সময় নিয়ে। তারপর কয়েকমাস পরে গত মে মাসে বাকি ৬০০ পেজ শেষ করেছিলাম দুদিনে। লোটাকম্বলকে একটি উপন্যাস বললে ভুল বলা হবে! লেখক সঞ্জিব বাবু প্রকৃতপক্ষেই পড়তে পেরেছেন মানুষের ভেতরকার গল্পগুলোকে। যার রূপ দিয়েছেন তার গল্প-উপন্যাসে। জীবনে চলার পথে আমাদের চারপাশ দিয়ে চলে যাওয়া প্রতিটি মানুষই একেকটি ভ্রাম্যমাণ গল্প কিংবা উপন্যাস। সেই সব মানুষের জীবনবোধ নিয়েই লেখা হয়েছে লোটাকম্বল।

সঞ্জীব চট্টপাধ্যায়ের উপন্যাস "লোটা কম্বল" এর প্রজ্ঞাবান একটি চরিত্র হরিশংকর। ভেঙে যাওয়া যৌথ পরিবারের পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে স্ত্রী হারা নিঃসঙ্গ এক পৌঢ়, হিমালয়ের মত যাঁর ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব যাঁর আদর্শনিষ্ঠা, আপাত কঠোর যার নিয়মনীতি। অথচ ভেতরে ভেতরে কুসুম কোমল। বাইরে থেকে অত্যন্ত কঠোর আর ভেতরে কোমল একটি হৃদয়ের মালিক।

মানুষটির একমাত্র মাতৃহারা যুবক সন্তান, যাকে তিনি মানুষের মত মানুষ করে তুলতে চান। এই দুই পুরুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গির ঠোকাঠুকির মধ্যে আর এক পুরুষ। তিনি বৃদ্ধ মাতামহ। মাতামহ রাজনারায়ন মুখোপাধ্যায় একজন কঠোর ঈশ্বরবিশ্বাসী মানুষ। ভাগ্যের লিখনের উপর সবকিছু সঁপে দিয়ে চলতে চান। আর হরিশংকর যিনি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী একজন মানুষ। কর্মফল ছাড়া আর কিছুই বিশ্বাস করেন না, এমনকি ঈশ্বরকে ও নন।

"লোটাকম্বল" উপন্যাসটিকে বিশ্লেষন করলে দেখা যায় এটি একধরনের পারিবারিক, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। যা উপন্যাসের শুরু থেকেই দৃশ্যমান। সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বন্ধন, প্রেম-ভালবাসা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সুখ-দুঃখসহ দৈনন্দিন সমাজ জীবনের জটিলতাসমূহ প্রকাশ পেয়েছে উপন্যাসটিতে।

পিতা পুত্রের এ অাখ্যানে, পিতা হরিশংকর চান ছেলে তার কঠোর শাসন মেনে চলুক। তার কঠোর আইন ছেলেকে বৈরাগ্যের দিকে ধাবিত করে। কিন্তু সংসারের প্রতি জাগতিক চাহিদার প্রতি টান পিছু ছাড়তে পারেনা। উঠতি বয়সের টান তাঁকে লোভ-লালসার দিকে, রিপু তাড়নার দিকে টেনে নিতে চায়। তারই পথ ধরে তার জীবনে একের পর এক আসে ছায়া, মায়া, কণক, উষা, অপর্ণা, সুরঞ্জনা, মুকুল সহ আরো অর্ধডজন নারী চরিত্র। কারো সাথে তার এক পলকের সম্পর্ক আর কারো সাথে সারা জীবনের।

মাতুল জয়নারায়ন মুখোপাধ্যায়। অসাধারণ প্রতিভাধর সংগীতজ্ঞ। সংসারে থেকে ও সংসারবিরাগী মানুষ। যিনি ভাগ্নেকে প্রতি মূহুর্তে সংগীতের মাঝে ডুবিয়ে দিতে চান। কণ্ঠের অক্ষমতায় পিণ্টু সেটিও ঠিকমত পারেনা।
এমনি করেই নানান ঘাত-প্রতিঘাতে এগিয়ে যায় জীবন। ভাল-মন্দে নানামুখী অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় পিন্টুর জীবন।

নানান চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে এগিয়ে যায় জীবন , আমাদের যেমন তেমনি পিন্টুরও। যে ছেলে অলিগলি পেরিয়ে একদিন অবশেষে যে সন্ন্যাসী হতে ছেয়েছিল, মনের একাংশ চেয়েছিল সাধু সংসর্গে থাকতে আর অদৃষ্ট বারে বারে তাকে সরিয়ে নিয়ে যায় আরো দূরে। এ যেন পিন্টুর ভেতর দিয়ে ঐ বয়সের আমার নিজের মনস্তত্ত্বকেই তুলে ধরা হয়েছে!

সেই যুবক পরবর্তীতে খুঁজে পায় তার সত্যিকারের বেঁচে থাকার উপলক্ষ। অবশেষে, মুকুলিকাই (মুকু) হয়ে ওঠে তার ঠিকানা। মুকুর মাঝেই সে খুঁজে পায় জীবনের আস্বাদ, খুঁজে পায় নিজের ঠিকানা!

আমরা যদি উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গভীরভাবে বিশ্লেষন করি। দেখা যাবে সবগুলো চরিত্রের মধ্যে পিন্টু চরিত্রটি সবচেয়ে দূর্বল। পিতা হরিশংকর যেখানে ব্রজ্রের মতো কঠিন, পর্বতের মতো অটল। আবার ভেতরে গোলাপের পাপড়ির মতোই কোমল। প্রচণ্ড বাস্তববাদী এই চরিত্রটি সকল নৈতিক গুণের অধিকারী। তিনি মনে করেন যুক্তিই প্রথম এবং শেষ কথা। একদিকে যেমন সকল নৈতিক গুণের সমাহার, ঠিক তার সাথে রয়েছে বলিষ্ঠ কণ্ঠ এবং সর্বদা সত্যের পথের নিয়তযাত্রী হবার এক দৃঢ় অঙ্গীকার। সবকিছু মিলিয়ে উপন্যাসে হরিশঙ্করকে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বানিয়েছেন ‘মহাপুরুষ’।

অন্যদিকে পিতার বিপরীত চরিত্রের অধিকারী। পিন্টু চরিত্রটি বর্তমান সময়ের আমাদের মতোই যুবকদের ছায়াচিত্র মনে হয়! সময়ের সাথে তার বারবার মানসিক পরিবর্তনের সাথে হয়েছে প্রভাবিত। বারবার ধরা দেয় স্বস্তা বিনোদনের কাছে। নারীর কাছে। হারিয়ে ফেলে নিজের ব্যক্তিত্বকে। যেখানে মহাপুরুষকে লোকে বাহবা দেন। সেখানে পিন্টু হয় অবহেলিত। বারবার মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। সে দিক দিয়ে স্বার্থক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস এটি।

উপন্যাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলে গেছেন আরও কতগুলো ছোট ছোট গল্প। যেসব গল্পে কখনো উঠে এসেছে দারিদ্রতা, কখনো নির্মমতা আবার কখনো এসেছে সামাজের উঁচু-নিচু শ্রেণীর কথা। গল্পচ্ছলে তিনি বর্ণনা করেছেন সামাজিক জীবনের বিভিন্ন সংকটময় দিকও। এসকল জটিল পরিস্থিতি ব্যাখ্যার মাধ্যমে উঠে এসেছে নৈতিক জীবন-যাপনের প্রয়োজনীয়তা। এসেছে সমাজের গভীর মূল্যবোধের কথা যা উপন্যাসে লেখক বারবার ���্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। এনেছেন বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের বাণী-উদ্ধৃতি। এভাবেই বারবার ধাক্কা দিয়েছেন পাঠকমনে।

এটি মুলত একটি দীর্ঘ হাসির উপন্যাস।
প্রকৃতপক্ষে হাসি, হিউমার, ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-সুখের টানাপোড়েনে এক শাশ্বত জীবনভেদ। সুবৃহৎ এই ব্যাঞ্জণমুখোর উপন্যাসে বিস্ময়কর অনেকগুলো চরিত্রের দেখা পাওয়া যায়। অগণিত চরিত্রের বহুবর্ণরঞ্জিত এক বিরাট ক্যানভাস। "লোটাকম্বল" সাধারণ ভাবে একটি হাসির উপন্যাস হলেও এই উপন্যাস ভাল লাগার মূল কারণ হল এটি একটি মূল্যবোধের উপন্যাস। মানুষের অর্ন্তমনের আধ্যাত্মিক সঙ্কটের উপন্যাস। হাসির ছলে জীবনদর্শনের বহিঃপ্রকাশের এক সুন্দর উদাহরণ বইটি!
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews26 followers
April 6, 2023
মানবজীবন বহমান। এই জীবন উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে ভেঙেচুরে এগিয়ে যায়। জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির খাতা অনেকেরই দেখা যায় শূন্য। আবার কেউ কেউ খাতাটাকে রঙিন করতে পারেন। তবে খাতাটা ভরাট হতে না পারার কারণেই জীবন এত বৈচিত্র‍্যময়। 'লোটাকম্বল' এমনই এক জীবনের খেরোখাতা, যার পরতে পরতে উঠে এসেছে ব্যক্তি দর্শনের পাঠ; উঠে এসেছে জীবনের ঘুলঘুপচি থেকে তুলে আনা নানাবিধ চিন্তাধারার দর্শন।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র পিতা-পুত্র। হরিশঙ্করের একমাত্র পুত্র পিন্টু। মায়ের মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। পুরনো এক বাড়িতে বসবাস তাদের। একসময় ঠাটবাট বজায় রেখে চললেও এখন আর তেমন অবস্থা নেই। তবে আভিজাত্যের ছাপ দেখা যায় চলনে-বলনে। অসুস্থ হলে ওষুধ খাওয়া কিংবা রোগ নির্ণয়ে বংশগতির প্রবাহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি করে পিন্টুর ঠাকুরদা ও বাবা। পিন্টুদের বাড়িতে খুব একটা মানুষ অতিথি হিসেবে আসেনা। একদিন উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো মেজ জ্যাঠাইমার বোনের স্বামী উনার দুই মেয়েসমেত পিন্টুদের বাড়িতে আসেন। জানান যে উনারা মাসখানেক এই বাড়িতে থাকবেন। তবে কিনা পিন্টুদের বাড়িতে লোকজন কম হওয়াতে ,অনেকটা গা ছাড়া ভাব করে পিন্টু তাদের থাকতে দেন। অফিস থেকে ফিরে হরিশঙ্কর অতিথিদের দেখে বেশ খুশিই হোন।

মেসোমশাইয়ের দুই মেয়ে। কনক ও মুকু। এদের মধ্যে মুকু ছোট এবং কনক বড়। একইবাড়িতে তিনবেলা যাদের সাথে দেখা হচ্ছে কিংবা কথাবার্তা হচ্ছে তাতে করে ভাব জমে যাওয়াই স্বাভাবিক। দুই বোনের সাথে পিন্টুরও ভাব জমে যায়। তবে পিন্টুর কাছে তারা বন্ধুরূপেই থাকে। নারীসঙ্গ পিন্টুর কাছে নতুন নয়। কিন্তু প্রেম-বিয়ের প্রতি তার বৈরাগ্য রয়েছে। তার মনে হয় বিয়ে করা কোনো কাজের মধ্যে পড়েনা। শুধুশুধু নিজের জীবনকে নষ্ট করা। তাই বাবার অনেক যুক্তি সত্ত্বেও বিয়ের ব্যাপারে তাকে রাজি করানো যায়না।

হরিশঙ্কর সবসময় চেয়েছেন নিজের জীবনের দর্শনগুলো পিন্টুর মধ্যে প্রোথিত করতে। তবে তিনি সফল হতে পারেন নি। পিন্টু পুরোপুরি বিপরীত চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের চিন্তা-ভাবনাগুলো প্রকাশ করে। পিতা-পুত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমরা গল্প থেকে গল্পে প্রবাহিত কথামালার সাক্ষী হই। সমাজের সবার চিন্তাধারার সাথে পিন্টুর মিল না থাকলেও সে অস্বস্তি বোধ করেনা। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে প্রশ্নকারী যখন তাকে 'তুমি' সম্বোধন করেন; তখন প্রশ্নকারীকে দুই কথা শোনাতে দ্বিধা হয়না পিন্টুর।

বিস্তৃত এই বইটির কাহিনী এক জায়গায় শুরু হয়েছে তো শেষ হয়েছে বহুদূর গিয়ে। কারণ লেখক গল্পের ভেতরেও গল্প বলেছেন। ঘটনাপ্রসঙ্গে ব্যক্তি দর্শনের বিষয়কে হাজির করেছেন চরিত্রগুলোর যুক্তিকে দৃঢ়ভাবে দাঁড় করানোর জন্য। পিন্টুর মনস্তাত্বিক সমস্যাগুলো অর্থাৎ সমাজভাবনা যে ভিন্ন রকমের সেই বিষয়টি লেখক দেখিয়েছেন এবং সমস্যা প্রতিকারের পথগুলোকেও এঁকেছেন সুনিপুণ হাতে। এত বড় বই হওয়া সত্ত্বেও বিরক্তি ভাব আসেনি। কারণ এই বইটার প্রতিটি অধ্যায়ই পাঠককে নতুন কিছু শেখাতে চাইবে। বাড়তি পাওনা হিসেবে বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়কে সুন্দর সব নামাঙ্কিত করেছেন লেখক। আমার মতে বইটা সময় নিয়ে পড়া উচিত। এতে করে বুঝতে সুবিধা হবে এবং বিরক্তিভাব আসবেনা। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,740 reviews355 followers
February 17, 2025
এই উপন্যাস আক্ষরিক অর্থেই বাংলা সাহিত্যের এক মাইলফলক। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের এই অনন্য সৃষ্টি শুধু একটি নিছক ভ্রমণকাহিনি নয়, বরং মধ্যবয়সী এক বাঙালি পুরুষের আত্মজিজ্ঞাসার এক নিখুঁত দলিল। লেখকের সরস ভাষা, ব্যঙ্গ, আর গভীর জীবনবোধ উপন্যাসটিকে স্মরণীয় করে তুলেছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র অমলেন্দু চৌধুরী, যিনি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কাশ্মীর ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু এ ভ্রমণ নিছক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নয়, বরং এটি এক আত্মঅন্বেষণের যাত্রা। তিনি এক সাধুর সঙ্গ পান, যিনি তাকে জীবনের প্রকৃত অর্থ নিয়ে ভাবতে শেখান। এই যাত্রার মাঝে তিনি তাঁর অতীত, পরিবার, এবং নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করতে শুরু করেন। উপন্যাসটি দেখায়, কীভাবে একজন ব্যক্তি কর্মজীবন শেষে জীবনের প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টা করে। অমলেন্দু চৌধুরীর একাকীত্ববোধ এবং আত্মজিজ্ঞাসা উপন্যাসের মূল চালিকা শক্তি। লেখকের দ্বারা চিত্রিত কাশ্মীরের সৌন্দর্য কেবলই ভৌগোলিক বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় -- এটি চরিত্রের মানসিক পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। সঞ্জীব বাবুর অনন্য ব্যঙ্গাত্মক ও মজাদার লেখনশৈলী উপন্যাসকে আনন্দদায়ক করেছে। গল্পকথনের ভাষা সহজ, প্রাঞ্জল, এবং হাস্যরসে ভরপুর। তাঁর লেখার মাঝে গভীর জীবনদর্শন লুকিয়ে থাকে, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। মধ্যবয়সী এক পুরুষের আত্ম-অনুসন্ধানের এই গল্প, যে-কোনো বয়সের পাঠকের জন্য উপভোগ্য, বিশেষত তাদের জন্য, যারা জীবন ও সম্পর্কের গভীরতা উপলব্ধি করতে চান। বইটি পড়তে পড়তে কখনো হাসি পায়, কখনো গভীর চিন্তায় ডুবে যেতে হয়। লেখকের ভাষার খেলায় পাঠক মুগ্ধ হয়, আবার জীবনবোধের গভীরতায় বিস্মিত হয়। হাস্যরসের মোড়কে ঢাকা এই আত্মজিজ্ঞাসার কাহিনি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য রচনা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। পড়ুন। অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন।
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews350 followers
January 2, 2024
বইটার গল্পের একটা সুন্দর ব্যাপার, টেনে পড়ে যাওয়ার তাড়া নাই, আবার পড়তে ইচ্ছে হলে নিয়ে বসে থাকতে পারবেন। রোজকার ঘটনা, কলকাতায় পারিবারিক এক বনেদী বাড়িতে বাপ-ছেলের সংসার, তাতে ঘটনাক্রমে আসা-যাওয়া ঘটে কাছের মানুষদের।

পড়তে গিয়ে আমার মনে পড়ছিল আমাদের আগের বাসার কথা। প্রতি তলায় একটা করে পরিবার থাকার বাড়ি। গ্রাম থেকে আত্মীয় এলেই আমার বাসায় উঠতো। বড় দুই বোনের নিজ নিজ পরীক্ষার সময় মাসখানেক আমাদের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের বান্ধবীরা। ছোট থেকে আমার বড় হওয়া অনেকাংশেই এমন এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে।

যারা এই দীর্ঘ উপন্যাস পড়েছেন, অনেকের কাছেই ক্ষণিকের হাস্যরস মনে রয়ে গেছে, কারো কাছে জীবনযাত্রা। কিন্তু পুরো কাহিনীর ব্যাপ্তিজুড়ে একটা জীবনদর্শন বিছিয়ে দিয়েছেন লেখক। সংসারে বৈরাগ্যের স্থান, এবং স্পিরিচুয়ালিটি।

এই দুই অবিবাহিত পুরুষের সংসা���ে বড় হয়েছে আমাদের নায়ক, পিন্টু। লেট নাইন্টিজে, তথাপি রক্ষণশীল পরিবারে জন্মানো ও বড় হওয়া ছেলেরা পিন্টুর সাথে রিলেট করতে পারবেন। কৈশোরে পা দেওয়ার পর, রোজকার দিনযাপনে কোনো নারী চরিত্রের উপস্থিতি মানেই একটা আলোড়ন। এবং অনভ্যস্তততা। লেখক সেখানটায় পিন্টুর মনস্তত্ত্ব অকপট ব্যাখ্যা করেছেন, তার চরিত্র বিকাশ ঘটিয়েছেন ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে। আমার মনে হয়েছে এই অংশটুকু বাংলা ভাষায় YA জনরার ভালো উদাহরণ হতে পারে।

১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত উপন্যাসের অনেক কথা সেকেলে মনে হবে স্বাভাবিকভাবে। তদুপরি, উপন্যাসটা ওই সময়কার শহুরে বাঙ্গালী জীবনের চমৎকার পর্যবেক্ষণ।

শেষ করে একদিন ধরে কেবল মনে হচ্ছিল, "আর বাকি রইলো না? কী পড়ব এখন!"
Profile Image for Nill Niti.
4 reviews
July 29, 2021
হরিশঙ্কর চরিত্রটার জন্য হলে একবার পড়া দরকার।তারমত powerful চরিত্র বাংলা সাতিত্যে খুব কম আছে.....
Profile Image for Mohaiminul Islam.
12 reviews3 followers
March 20, 2021
আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিঃ

কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কায় ক্লাস বর্জন করা হলো মার্চের ১৪ তারিখে। বুঝে গেলাম, অন্তত সপ্তাদুয়েকের ছুটি মিলবে। আমার হাতে তখন ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ছাড়া কোন বই নেই। পরদিন ১৫ তারিখ ফিরদৌসের সাথে গেলাম নীলক্ষেত।

লম্বা ছুটি উপলক্ষে কিনতে হবে মোটা বই। অনেকদিন থেকেই "লোটাকম্বল" পড়ার ইচ্ছে ছিল। সাইজও মোটাসোটা, কিনে ফেললাম। আরেকটা বই খুঁজছিলাম। পাওয়া গেল না।

দুপুর নাগাদ ফিরে লাঞ্চের পর বসে পড়লাম। ভাবলাম সপ্তাখানেকের ছুটি দিলে আর বাড়ি যাব না। সব রুমমেট চলে যাবে, একা একা সারাদিন এই বই পড়া যাবে।

তারপর বুঝলাম ছুটি লম্বা হবে। পরদিন ভোরে দুটো টি-শার্ট, দুটো প্যান্ট আর "লোটাকম্বল" ব্যাগে ভরে ছুটলাম বাড়ির পথে।

সেই "লোটাকম্বল" শেষ হলো পরশু! আর সেই ছুটি, পুরো বছরই চলবে! কিছুদূর পড়ার পর একটা লম্বা বিরতি ছিল, তারপর কয়েকদিন আগে আবার ধরলাম। একেবারে বইয়ের মতো বই একটা!

সচরাচর বই পড়লে কি মুভি দেখলে সেগুলোর রিভিউ খুব কম দিই। কিন্তু এই বইটার একটা ছোট্ট রিভিউ দিয়ে রাখি।

সত্যি সত্যি মনে হচ্ছিল, নিজের যৎসামান্য সম্বল লোটাকম্বল নিয়ে হরিশঙ্করের সাথে ভ্রমণে বেরিয়েছি! কোন কাহিনীর বই না, একেকটা মানুষের জীবনের গল্প ধরে এনে ছাপার অক্ষরে বসিয়ে দিয়েছেন যেন! নিখাদ দর্শন, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব, প্রেম, আদর্শ, কর্ম - কী নেই! প্রথম খণ্ডটা একটু ধীর গতির, কিন্তু পরের খণ্ডে কাহিনী এগিয়েছে তরতর করে।

প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে পলাশের মিল পেয়েছি। শুধু আমার সাথে কেন, যেকোন বাঙালি যুবকের গল্পই লিখেছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। ভালো আর মন্দের দোলাচালে, প্রেম আর শরীরের মাঝখানে, আদর্শ আর প্রবৃত্তির দ্বন্দে দোদুল্যমান যৌবনের গল্প। হরিশঙ্করের সলিড আদর্শ বারবার কাছে টেনেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিনীবনে পাওয়া এক বোটানির শিক্ষকের সাথে মিলে যায়! মুকুর মত একই সাথে স্নেহশীল আর প্রেমময় মনের মেলবন্ধন সচরাচর চোখে পড়ে না। অন্য সবগুলো চরিত্রই বলিষ্ঠ।

মূলত একটা মধ্যবিত্ত জীবনের আদর্শের গল্প, ঘাত-প্রতিঘাতের গল্পগুলো কী সুন্দর হিউমারের মধ্যে বেঁধে ফেলেছেন লেখক! আছে কনফুশিয়াসের দর্শন থেকে শুরু করে বেদ, গীতা, কোরান, বাইবেল, সাধনা, যোগ, তিব্বতীয় দর্শন - সবকিছু। কতো সরল কথাও এত আকর্ষণীয় করে, ভাবাই যায় না!সব মিলিয়ে প্রায় নয়শ পাতার দারুণ একটা বই।

প্রথমত, যে মানুষটা পড়ার পরামর্শ দিয়েছিল, তাকে অনেক ধন্যবাদ। দ্বিতীয়ত, এদিককার বিদ্যুতের লোকদের ধন্যবাদ! লোডশেডিং না থাকলে এই বইটা শুরু করাই হয়ত হতো না! অন্তত এই বিষাক্ত সময়ে ফেইসবুক থেকে কিছু সময় বাইরে ছিলাম।

এর আগে প্রিয় কয়েকটা বইয়ের নাম হিসেবে সবার আগে মাথায় আসতো শীর্ষেন্দুর বইগুলোর নাম। এখন "দূরবীন", "যাও পাখি" র নাম বলার সময় আরেকবার ভাবতে হবে বৈ কি!



Profile Image for Monami Arani.
42 reviews8 followers
June 16, 2021
লেখার ধরন একটু অন্যরকম হওয়ায় শুরুতে বইটা চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিছুদূর পড়ার পর ভালোই লেগেছে। প্রথম খণ্ড বেশ ভালোই বলা যায়। ব্যঙ্গ বিদ্রুপাত্মক ভাবেও যে জীবনের নানা অধ্যায় চমৎকারভাবে তুলে ধরা যায় তার ই বহিঃপ্রকাশ এই উপন্যাস।
প্রথম খণ্ডের ভাল লাগা দ্বিতীয় খণ্ডের মাঝামাঝি এসে শেষ হয়ে গিয়েছে৷ দ্বিতীয় খণ্ডের মাঝামাঝি এসে মনে হচ্ছিলো লেখক হঠাৎ আর কি লিখবে তার খেই হারিয়ে ফেলেছে। অপ্রাসঙ্গিক বিষয় ও হঠাৎ নতুন মানুষের অবতারণা করে ঝপ করেই যেন কোনোভাবে শেষ করে দিল। সেজন্যেই অখণ্ড বই পড়ায় আমার রেটিং কমে গেছে।
এই বইয়ের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল জীবনের সবদিকের একটা হাস্যরসাত্মক মানে বের করা বা নতুন কোনো উদ্দীপনায় সমস্যা কাটিয়ে উঠা, মন খারাপ বা কোনোকিছু ঠিকভাবে হচ্ছেনা তো দারুণ একটা গানের আসর বসিয়ে সেই অবস্থার উন্নতি করে ফেলা।
আর সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হল প্রতিটা মেয়ে চরিত্রকে কামনা আর ভোগের দৃষ্টিতে দেখা বা সেইরকমভাবে উপস্থাপন বা বর্ণনা করা, হোক সে সদ্য কৈশোরে পড়া কিশোরী বা হোক সে মধ্যবয়স্কা বা বৃদ্ধা। সব মেয়ে চরিত্রকে এভাবে দেখা বা দেখানো আমার একদমই ভাল লাগেনি। আসলেই কি সব ছেলেরা সব বয়সী মেয়েদের এইভাবে ভাবে? এই ব্যাপারটা না থাকলে এই উপন্যাস আরও বেশি উপভোগ্য হত আমার জন্য।
Profile Image for Farhana Lüba.
216 reviews16 followers
October 29, 2022
পড়ে শেষ করলাম "লোটাকম্বল"। কেমন একটা অম্লমধুর সম্পর্ক ছিলো বইটার সাথে এদ্দিন। এখন শেষ হওয়াতেও একইরকম বোধ হচ্ছে। অম্ল, কারণ পড়া শেষ। মধুর, কারণ কী অসাধারণ সময়ই না কেটেছে বইটা পড়তে গিয়ে!
অবশ্যই, অবশ্যই সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ছিলেন হরিশঙ্কর। কী অসাধারণ একটি চরিত্র! মনে রাখার মত। আমার মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদ যে মহাপুরুষ, মহাপুরুষ করতেন, হরিশঙ্কর হলেন সেই মহাপুরুষ। হ্যাঁ, তার সংসার ছিলো, ছেলে আছে, কিন্তু তারপরেও ইনার আদর্শ থেকে কেউ তাকে টলাতে পারে নি। অসাধারণ, অসাধারণ একটা চরিত্র। কার যেন রিভিউ দেখলাম, হরিশঙ্করের কথা জানার জন্য হলেও এই বইটা একবার পড়া উচিত। তিনি যথার্থ লিখেছেন।
দ্বিতীয় প্রিয় চরিত্র ছিলেন মাতামহ। তিনি আরেক অসাধারণ চরিত্র। সেন্স অফ হিউমার অনন্য। পিন্টুর প্রতি উনার স্নেহের কোনো তুলনা হয় না। তার সাথে হরিশঙ্করের বাকবিতণ্ডা অনেক মিস করেছি দ্বিতীয় খণ্ডে।
পিন্টুকে কেমন লেগেছে, আসলে বুঝিয়ে বলা সম্ভব না। মেয়ে মানুষ দেখলেই এই ছেলে ছোঁক-ছোঁক করে। এই ব্যাপারটা অসহ্য লেগেছে। নাহ, মনে হয় অনেকখানিই অসহ্য লেগেছে ছেলেটাকে। But do I hate him? I don't think so.
তুলসী বাদে আর কোনো নারী চরিত্রকেই আমার ভালো লাগে নি। হয়তো লেখক নারীজাতিকে কামভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখলে দু-একজনকে ভালো লাগতো। কিন্তু সব মেয়েই পিন্টুর গায়ে ঢলে পড়ছে—ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লেগেছে। আমার মনে হয় তুলসীকে আমার এইজন্যই ভালো লেগেছে, কারণ মা বলে পিন্টু অন্তত ইনার প্রতি লালসা নিয়ে তা���ায় নি।
এক্ষেত্রে বলে রাখি, আমার কাছে বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডটা কম ভালো লাগার কারণ হলো হরিশঙ্করের অনুপস্থিতি, অনেক উটকো মহিলা চরিত্রের উপস্থিতি, আর নারীদেহের প্রতি পিন্টুর লোভ।
I will definitely miss this book. I was on an amazing journey, and I reached the port. It's really hard to say goodbye, but I guess I'll have to.
এবং আবারো ধন্যবাদ দেবাকে, এই ইন্টারেস্টিং বইটা আমাকে উপহার দেয়ার জন্য।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Fahad Ahammed.
386 reviews44 followers
February 16, 2021
তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক হাস্যরস ফুটিয়ে তুলতে শব্দের যেই খেলা দেখিয়েছেন লেখক তা যে কারুর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, তবে হাস্যরসের পাশাপাশি ওনি চিন্তা করার মতো বেশ কিছু উপকরণ খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।

শুধু পড়লাম গল্প টা জানলাম এবং ভুলে গেলাম ঐ ধরনের বই থেকে অবশ্যই এই ধরনের বইকে ইকটু আলাদা কদর করা যায় কারণ গল্প টা তো জানা হলো, পড়ার সময় উপভোগ করলাম পাশাপাশি উপরি পাওনা হলো বই থেকে নিজের জন্য কিছু নেয়া যায়।

কিছু কিছু অংশে আংশিক প্রাপ্তবয়স্ক বর্ণনা ছিল, বাদবাকি অংশগুলো ভালো লেগেছে।
Profile Image for NMA Zami.
26 reviews2 followers
July 26, 2021
উঠতি বয়সে যখন পড়েছি, সেরা একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে তখন। পড়ার সময় কখোনো হয়েছি প্রেমিক, কখোনো হয়েছি অভিমানী, কখোনো বা এক আত্নমগ্ন যুবক, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরেছি, ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে হয়েছি, কখোনো পুত্র, কখোনো নাতি, কখোনো বন্ধু, কখোনো বিদ্রোহী, কমর্জীবি... কি হইনি।
একটা বই আপনাকে শেখাবে নিজের সাথে কথা বলা ভ্যালিড, মানুষকে ভালোবাসা অসম্ভব সুন্দর, জীবন আপনাকে মুখোমুখি দাড় করাবে সবগুলি অনুভূতির সামনে।

এইসব মিলে বইটি হয়ে উঠবে আপনার গল্প।
Profile Image for Ahsan Tahsin.
6 reviews
Read
September 20, 2021
কামনা, ষড়রিপুর অন্যতম। একে বশ করতে পারলে যেমন জীবন সহজ হয়ে যায় তেমনি এর বশীভূত হয়ে গেলে জীবনের মানেই বদলে যায়। ব্যাপারটা প্রাকৃতিক;দমন করা কষ্টকর হলেও সম্ভব। আর এর কারণে দোটানার যে মনস্তাত্তিক লড়াই সেটা মানবজীবনে আবহমান। তবে একবার কামনার উর্ধ্বে উঠতে পারলে ঐশ্বরিক পঞ্চত্বপ্রাপ্তি সম্ভব।
মোটামুটি আমার বোধ অনুযায়ী এই হচ্ছে লেখকের দর্শন। এই দর্শনকে লেখক যেভাবে তার দুর্দান্ত লেখনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত করেছেন তা এককথায় অসাধারণ। উপন্যাসটিতে চরিত্রগুলোর গাঁথুনী এবং একের উপর অন্য চরিত্রের প্রভাব বিস্তার একে পূর্ণতা দিয়েছে।
Profile Image for Farhana Sufi.
495 reviews
February 1, 2020
২.৫/৫

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এর উপন্যাস হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম তার রম্য-ধারাতেই এই উপন্যাসটি। প্রথম পর্বের প্রথম অর্ধেকে সেই সুর ছিলোও। একজন অপদার্থ (যে এখনো কোন রকমের পদার্থই হয়ে ওঠেনি) পুত্র ও একজন অত্যন্ত সফল পদার্থের পিতা এই কাহিনির কেন্দ্র। পিতা চাইছেন মাতৃহীনা অপদার্থটিকে পদার্থ করে গড়ে তুলতে, ওদিকে ছেলের মন উড়ু উড়ু, সব নারীকেই ভালো লাগছে, সন্ন্যাস নেবার জন্যে হন্যে হয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পত্রিকায় দীর্ঘ সময় ধরে কিস্তিতে প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর সমস্যা হলো ২০০-৩০০ পৃষ্ঠার পরে গতি হারিয়ে, ঘুরপাক খেয়ে, ৩০০ পৃষ্ঠা ধরে গঠিত চরিত্ররা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভণ্ডুল করে, কাহিনির ধারাবাহিকতা ভুলে কাহিনি ঝুলে পড়ে, এই বইয়ের প্রথম পর্বেই সেই দশা। দ্বিতীয় পর্বের অবস্থা আরও করুণ। দ্বিতীয় পর্বের মতো অসংলগ্ন, inconsistent জিনিস বহুদিন সচেতনভাবে পড়ি নাই!

প্রথম পর্বের শেষে পিতা নিরুদ্দেশ হলেন, পরের পর্ব দশ বছর পরে লিখতে গেলেও কাহিনি যেহেতু বিরতিহীনই রেখেছেন লেখক, তা রাতারাতি সেই পিতাকে রিটায়ার্ড বানিয়ে দিলে মুশকিল! যে বাড়িতে পিতা-পুত্র নিজেদের রান্না করছে বলেই পুরো ১ম পর্ব ঘ্যানঘ্যান হলো, সেখানে রাত পোহাতেই কাজের মানুষ এনে হাজির করলেও মুশকিল। আরও বড় মুশকিল একেক চরিত্রকে একেক সময়ে একেক খাতে বইয়ে দিতে থাকলে, পাঠক হিসেবে আমি তো বই একবারেই পড়বো ভেবেছিলাম তা প্রথম পর্বের দুরম্য কিন্তু হরিশঙ্করের প্রতি অনুগত চরিত্রের অক্ষয়বাবুকে হুট করে খামখেয়ালি স্বতন্ত্র বানানবেন, হরিশঙ্করের ছাত্রজীবনের বন্ধু অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ এমডিকে বেশ গা ছেড়ে দেয়া বানাবেন, মুর্হুমুহু নতুন চরিত্রের আদান প্রদান করবেন, প্রতি ১০০ পাতা পরপর আগে কোন এক ১০০ পাতা জুড়ে নির্মিত চরিত্ররা পাল্টি খেতে থাকবে - এরকম inconsistent বই পড়তে হলে ভাই আমার মতো পাঠক তার প্রশংসা করতে পারবে না। যখন কোন চরিত্রকে মাথায় তোলার দরকার হচ্ছে প্রশংসার বান ডাকছে, পর মুহূর্তেই ছেলেকে শিক্ষা দিতে সেসব চরিত্রেরা অধঃপতনের শেষসীমায়, আবার উল্টোভাবে অধঃপতিত চরিত্ররা উঠে যাচ্ছে চারিত্রিক মহিমার তুঙ্গে, ১৮০ ডিগ্রি টার্ন।

লেখার স্টাইলেও দুই খণ্ডে পার্থক্য এসেছে, সেটাও দীর্ঘ মাসিক লেখা লিখতে গিয়ে লেখকের মনোযোগের অভাবে মনে হয়েছে, ইচ্ছা করেই এমন স্টাইলে লেখা তা মনে হয়নি। প্রথম খণ্ডে পিতা, মাতুল শব্দ ছাড়া কথা নাই, ২য় খণ্ডে ছেলের বর্ণনায় পিতা প্রায় সবসময়েই হরিশঙ্কর, ১ম খণ্ডের "অক্ষয়বাবু" ২য় খণ্ডে কাকা হয়ে যাচ্ছেন। অক্ষয়বাবুর বয়সও পাল্টে পিতার কাছে চলে যাচ্ছে, মহা ঝামেলা!

কাহিনিতে তেমন নতুন কিছু নাই। চর্বিত মধ্যবিত্তের নীতি আর সন্ন্যাসালাপ ছাড়া। ২য় খণ্ড পড়তে গিয়ে জ্ঞানের কপচানিতে ভেসে যেতে যেতে তাড়াতাড়ি নিম্নমানের জিনিস (যেমন কমিক্স, মার্ডারমিস্ট্রি) খড়কুটো ধরে রক্ষা পেলাম।

দুই বইয়ের গড় করলে এর রেটিং দাঁড়ায় আড়াই।
ভবিষ্যতে আমি পশ্চিমবাংলার মাসিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে বের হওয়া উপন্যাস ছোঁব না, নিজের কাছে সেই প্রতিজ্ঞা করতে চাই, এমন জিনিস আমার কাপের চা না।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
June 17, 2025
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় একজন জনপ্রিয় বাঙালি লেখক। তিনি বেশ কিছু উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
তাঁর সবথেকে বিখ্যাত উপন্যাস " লোটাকম্বল"। এটি দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ১৯৮১ সালে আনন্দ পুরস্কার পান।
২০১৮ সালে "শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন" ছোটগল্পের কারণে, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান
তাঁর রচনায় হাস্যরসের সাথে তীব্র শ্লেষ ও ব্যঙ্গ মেশানো থাকে।

পিতা হরিসঙ্কর এর একমাত্র পুত্র পলাশ। যার ডাক নাম পিন্টু। পিন্টু খুব ছোট বেলাতেই তার মা কে হারায়।

কলকাতাতে তাদের বিরাট এক পুরনো বাড়ী, যেখানে পিতাপুত্র ছাড়া আর কেউ বাস করেন না। প্রদীপের শেষ সলতের মত পিন্টু বংশের ধারা বয়ে চলেছে।

অনেকের মতে এদের বাড়ীটায় একটা কালো ছায়া আছে তাই তো একের পর এক মৃত্যু। ভুতুড়ে এই বাড়ীতেই পিতার বলিষ্ট ব্যক্তিত্বের ছায়াতে বেড়ে উঠলেও পিতার সব গুন পায় নি পিন্টু।
বিয়ের সাত বছরে স্ত্রী কে হারিয়েও দ্বিতীয় বার বিয়ে করেননি, একা হাতে ছেলেকে বড় করে তুলেছেন ত্যাগ করেছেন নিজের জীবনের সকল ��ুখ ও স্বাচ্ছন্দ।
পিন্টু পিতার চরিত্রের সব টুকু না পেলেও পিতার আর্দশকে সামনে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন জীবনের পথে।

একই সাথে সিদ্ধপুরুষ মাতামহের স্নেহের ছায়ায় থেকেছেন পিন্টু, পেয়েছেন পিতামহের চরিত্রের গুনাবলী।

তার পরও পিন্টু নিজেকে মনের গতিতে মাঝে মাঝে চালিত হয়েছেন।

পিন্টু একই সাথে একজন ভোগী ও যোগী পুরুষ। নিজেকে হাজার চেষ্টা করেও ভোগের জগত থেকে সরিয়ে রাখতে পারেন না।

এর পরেও সে পিতা ও মাতামহের গুনবলীর অধিকারী।

"লোটাকম্বল " একটি হাস্য রসের উপন্যাস তবে একই সাথে আছে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-সুখের ধারাহিকতায় জীবনের চিত্র। জীবনের চরম প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার পথের নির্দশনও দেখানো হয়েছে।
হাসি ঠাট্টার মাঝে জীবনের দর্শন ও সংসার জীবনের জটিল ও কুটিল দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। চমৎকার সুন্দর একটা বই।
Profile Image for Dhiresh Daga.
10 reviews
August 3, 2020
বই - লোটাকম্বল
লেখক - সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
রেটিং:
প্রথম খন্ড - ৪.৫ / ৫
দ্বিতীয় খন্ড - ১.৫ / ৫

লোটাকম্বল এর ব্যাপারে কোনো আলোচনা করলে প্রথমেই যে কথাটা উঠে আসে তা হলো এর দুই খন্ডের মধ্যে বিশাল মানগত পার্থক্য. প্রথম খন্ডটি একটি সুন্দর ফুরফুরে লেখা যাতে কৌতুক ও দর্শন মিলে এক সুন্দর সংমিশ্রণ তৈরী করেছে. এটি পড়তে পড়তে লেখকের তৈরী জগতে হারিয়ে যেতে হয়. প্রতিটি চরিত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আকর্ষক. হরিশঙ্কর ও রাজনারায়ণ এর চরিত্র এবং পলাশ এর ওপর তাদের চরিত্রের ছায়া কে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক. গল্পটা মধুর রসে পরিপূর্ণ এবং আপনাকে বেঁধে রাখবে. কিন্তু আফসোস, দ্বিতীয় খন্ডে লেখক সেই কৌতুক বোধ প্রায় পুরোটাই হারিয়ে ফেলেছেন, যার ফলে বিভিন্ন চরিত্র কে নিজের চরিত্রবিরোধী কাজ করতে হয়েছে.
প্রথম খন্ডে আমরা জানতে পারি হরিশঙ্কর কে এক কঠোর আদর্শবাদী পরম ব্যক্তিত্ববান পুরুষ হিসেবে, কিন্তু দ্বিতীয় খন্ডে সেই হরিশংকরই হয়ে উঠেছেন এক তথাকথিত "adrenaline junkie" যিনি অকারণে বন্যাতে ডুবতে চান, জঙ্গলে ডাকাতের হাথে পড়তে চান, বাসে উঠে লোকের সাথে ঝগড়া বাধান. ছোটদাদু কে পরিচয় দেওয়া হয়েছে পরম সিদ্ধিপ্রাপ্ত সাধক বলে, কিন্তু তিনি আবার যখন তখন যাকে তাকে তাদের জীবনের গোপন কথা প্রকাশ করে শার্লক হোমস মার্কা বাহাদুরি কুড়োন. অক্ষয় কাকাবাবুকে একবার বলা হয়েছে "crude" আবার পরের পৃষ্ঠাতেই তাকে দেখানো হয়েছে এক সদাচারী দূরদ্রষ্টা হিসেবে. মেনি বাবু কে সুবিধে মতো কখনো সাত্ত্বিক, কখনো পলাশের মামার গুরু ও কখনো লম্পট হিসেবে দেখানো হয়েছে - পাঠক শেষ অবধি ধরতে পারবে না মেনি বাবুর আসল চরিত্র কি. অপর্ণার বাবার পরিচয় দেওয়া হয়েছে হরিশঙ্কর এর পরম বন্ধু হিসেবে যিনি নিজের মেয়ের সাথে পলাশের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু হরিশঙ্কর গৃহত্যাগী হলে তিনি একবারও পলাশের খোঁজখবর পর্যন্ত নিলেন না. পলাশ কে প্রথম থেকেই দেখানো হয়েছে অত্যন্ত ভীরু, কাপুরুষ এবং ব্যক্তিত্বহীন, কিন্তু পুরো বইটাতে প্রায় সব মেয়ে চরিত্র সময়ে অসময়ে তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে. প্রথম খন্ডে পলাশ নিজেরে বাবাকে সম্বোধন করে পিতা বলে, মামা কে বলে মাতুল. কিন্তু এই পলাশই দ্বিতীয় খন্ডে তাদের কে সম্বোধন করে নাম ধরে - পিতা হয়ে যান হরিশঙ্কর, মাতুল হয়ে যান জয়নারায়ণ. তবে আমার নিজের সবচেয়ে বিরক্তিকর লেগেছে মুকুর চরিত্র. হরিশঙ্কর এর অনুপস্থিতিতে মুকু কে প্রস্তুত করা হয়েছে পলাশ এর মোরাল ভয়েস হিসেবে. কিন্তু প্রেয়সী আর পিতার শাসন কখনো এক হতে পারে না. পলাশ এর প্রেয়সী কে দিয়ে তার পিতার জায়গা ভরানোর চেষ্টা করতে গিয়ে শেষে এক জঘন্য জগাখিচুড়ি অবস্থা হয়েছে. পলাশ এর প্রত্যেক কথাতেই মুকুর শাসন কখন যেন লাঞ্ছনার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে. আর সেটাই হয়েছে সবচেয়ে অবাস্তব. এক কিশোরী তার প্রেমিককে সদুপদেশ নিশ্চয় দিতে পারে কিন্তু কথায় কথায় তিরস্কার করা কি শোভা পায়? এটাই প্রশ্ন থেকে যায় লেখকের কাছে.

লোটাকম্বল এর ব্যাপারে প্রায়ই খুব স্ট্রং ওপিনিয়ন পাওয়া যায় - কেউ বলে জীবনদর্শন, কেউ বলে 'over-hyped', কেউ বলে প্রেম রসে পূর্ণ আর কেউ বলে পর্ণোগ্রাফি. তবে আমার মনে হলো যে লোটাকম্বল কে একটা বই হিসেবে বিবেচনা করা ভুল - এর প্রথম খন্ডকে লেখক গড়েছেন নিজের প্রাণের ভালোবাসা দিয়ে, ঘুলে দিয়েছেন নিজের হৃদয়ের সুক্ষ অনুভূতি. আর দ্বিতীয় খন্ড যেন ওনাকে লিখতে হয়েছে বাধ্য হয়ে নিতান্তই দায়সারা ভাবে - হয়তো সংসারের চাপে বা টাকাপয়সার অভাবে.
March 24, 2018
লোটাকম্বল আলোচনা:
লোটাকম্বল পড়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে । পড়া শেষ করার সাথে সাথেই সাধারণত প্রতিক্রিয়া লিখতে বসিনা কারণ তাতে একটা মোহাচ্ছন্ন ভালোলাগার ভাব থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সর্বাধিক বিখ্যাত লেখা বলা হয়ে থাকে এই লোটাকম্বলকে যা আবার দুইটি খন্ডে উপলব্ধ । বর্তমানে অখন্ড সংস্করণ পাওয়া যায় । বড় বড় লেখকদের লেখার সমালোচনা করা আমার পক্ষে অনুচিত ও অসঙ্গত । তাই রিভিউ না বলে আলোচনা বলছি ।
গল্পের ছাঁদটি খুব সহজ সরল । একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাড়িতে পিতা হরিশঙ্কর আর পুত্র পিন্টুর দৈনিক জীবন কাহিনী । জীবনের বিভিন্ন ওঠা পড়ার সাথে সাথে যুগপত্‍ আগমন
গমন হতেই থাকে বিভিন্ন রঙবেরঙ চরিত্রের (এমনকী বলাইবাবুরও !) । পিন্টু যেন একটু একটু করে চিনতে থাকে বিভিন্ন শেডে আঁকা এই দুনিয়াকে । জীবনে অনিবার্য যৌন খিদেতে জ্বলতেও থাকে আবার এসবকে পাপ মনে করে আফশোষ করতেও থাকে । সন্ন্যাসের মাধ্যমেই সকল মোহমায়া থেকে মুক্তি চাওয়া এই ছেলে আবার পারেও না মেয়েদের মুখ বুক পায়ের দিকে চাওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে । শেষে কী হয় তার পরিনতি , জানতে গেলে একটু ডুব দিয়েই দেখুন ।
প্রথমার্ধটি নির্মেদ আর ঘটনাবহুল হওয়াতে বেশ দ্রুততার সাথে পড়া যায় । পড়তেও কোথাও ক্লান্তিবোধ হয় না । সময় কোনদিক দিয়ে বয়ে যায় বোঝাই যায় না । সন্জীব বাবুর লিখনী চিরদিনই স্বতস্ফূর্ত , উইটি । সাথে বাড়তি মাত্রা দেয় এলিয়ট ,বায়রন ,শেক্সপীয়র , টেনিসন ,রবীন্দ্রনাথের লেখার বিভিন্ন উক্তি ধরে প্রতি অধ্যায়ের শিরোনাম দেওয়া । কথায় কথায় কান্ট , হেগেল , স্পিনোজীয় দর্শন অনেকের মনে চাপ দিতে পারে ,কিন্তু সবই ঘটনাপ্রবাহের সাথে সাথে নিজে নিজেই যেন চলে আসে । তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধটি বেশী উত্তেজক ও ঘটনাবহুল মনে হলেও হরিশঙ্করদের বাঁকুড়া আর পুরুলিয়া অভিযানের ব্যাপারটি অতিরিক্ত লাগে । মুকুর সাহসী বুদ্ধিমতী আর বলিষ্ঠ চরিত্র খুব সুন্দর লাগে । যোগ্য মাত্রা দেয় হরিশঙ্করের ঋজু কঠোর ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তিত্ব ।যুক্তিবাদের দিনে অলৌকিকতার বাহুল্য নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে ।সব মিলে লোটাকম্বল হল জীবন । এক বয়ে চলা জীবনপ্রবাহের সত্‍ বর্ণনা ।
Profile Image for Gunjan Guha.
Author 2 books1 follower
March 10, 2013
Could have been much better. The story is dragged too long over 850 pages, where it could have been summed up in 450-500 pages. This is a letdown, since the actual underlying story is good. Again, since this novel has been publicized as the author's autobiography, so much of supernatural events in the storyline ain't believable. The other main problem is that the author tends to get so spiritual and religious every now and then, the reader loses interest and gets off-track from the main storyline. Also, it's kind of irritating that the author gets sexually aroused by every single female character (of any age!!!!) described in the story. Moreover, the mysteries incorporated in the story that actually get you intrigued never get solved till the end!!! With that, I come to my biggest problem with the story: most of the characters are ill-defined. I mean, it's fine to show different shades in a character, but you can't really grasp characters which resonate so widely between good & evil/moral & amoral without any proper logic or consistency. It just feels like that the author was in mood to draw someone in good light one day, and wanted to make him a villain in his next writing session, while turning him good again in the next!!! A one-time read for me.
Profile Image for Nakib Hasan.
53 reviews1 follower
December 30, 2016
প্রায় সাতমাসে বইটা শেষ করলাম। মাঝে ছয়মাসেরও বেশি সময় পড়েই ছিলো।
সবমিলিয়ে বলতে গেলে দুই খন্ডের মধ্যে বেশ অনেকটা পার্থক্য রয়েছে। প্রথম খন্ডের কাহিনী, হিউমার, দর্শন আর গতি তিনটাই ছিলো অসাধারণ। দ্বিতীয় খন্ডে এসে কাহিনী আর গতি দুটোই ঝুলে পড়েছে। তাছাড়া অলৌকিকতার ছড়াছড়ি আর শাস্ত্রীয় কচকচানি ভালো লাগে নি।

তবে বইটাতে বাঁধিয়ে রাখার মতো অন্তত কয়েক'শ কোটেশন আছে। আছে হরিশংকরের মতো অসাধারণ এক চরিত্র। ফিনিশিংটাও ভালো লেগেছে। এরকম ঢাউস একটা বইয়ের শেষটা ভালো না হলে আরো দুয়েকটা তারা কমিয়ে দিতাম.. :3
Profile Image for শুভ.
109 reviews4 followers
October 11, 2021
আমি ১১০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়েছি৷ শুরুতে বেশ ভালোই ছিল। কেমন যেন শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার ফিলিং পাচ্ছিলাম। কিন্ত এরপর আস্তে আস্তে বোরিং হতে শুরু করল। তালগোল কথাবার্তা। জোর করে পড়েও মনোযোগ ধরে রাখতে পারছিলাম না৷ কনকের পরিবারের বর্ণনা থেকে কেমন যেন একটা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের মত ফিল হতে লাগলো। সবচেয়ে বিরক্ত লেগেছে নারীদেহের বর্ণনা। কিছু কিছু মন্তব্য খুবই explicit. গল্পের প্রয়োজনে এসব ব্যাপার আনা যেতে পারে, কিন্ত এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ভাবে আনা হয়েছে। পুরোটা পড়ার ধৈর্য পেলাম না৷ এই উপন্যাস হয়তো তার সমসাময়িকে প্রাসঙ্গিক ছিল৷ কিন্ত কালজয়ী হওয়ার মত না।
1 review
September 15, 2022
ছেলেবেলায় মা মারা গেছে এমন একটি ছেলে আর আদর্শবান বাবার জীবনের আখ্যানে আপনাকে স্বাগত। আপনি এমন এক পিন্টু কে পাবেন যে সাধক জীবনের নিবৃত্তি আর আন্ডা বাচ্চা নিয়ে চলা আটপৌরে জীবনের প্রবৃত্তির দোলাচলে রয়েছে।
সূক্ষ্মরূচি হরিশংকর, মাতামহের ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদ করে সাধকোচিত দেহত্যাগ, আর ছোটদাদুর পুরো চরিত্র আমাকে অভিভূত করেছে।
মুকু, সুরঞ্জনা, নির্মলানন্দজী, মাতামহ, জয়নারায়ন, জবা, হিমালয় থেকে আসা মৌনী সন্ন্যাসী, হরিশংকর, তন্ত্র সাধক অথরবাবা, সহ অন্যান্য চরিত্রদের কারো না কারোর সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পেলে আশ্চর্য হবেন না। লেখকের জীবনবোধ বড়ই গভীর ।
Profile Image for Sabbir Vai.
3 reviews11 followers
April 5, 2016
This book is an autobiography in disguise. The story telling is fluid, rich and magnetic. Sanjib has his own way of narrating things which I found completely different from those of his contemporaries. The read will always give you a certain kick.

And in this book in particular Sanjib probably displayed his best. Quite a big volume this book is which although didn't make me think to stop reading for a moment. A masterpiece in my opinion.
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
542 reviews
October 1, 2022
অনেক দিন নিয়ে পড়লাম।পুরোটা সময় জুড়েই মনে হয়েছে এই বইটা যত বেশি সময় নিয়ে পড়া যাবে ততো বেশি করে উপভোগ করা সম্ভব হবে।
প্রথম পর্ব নিয়ে বলার কিছু নেই।অসাধারণ।অতি উপভোগ্য।
তবে দ্বিতীয় পর্বের অনেকটা সময় জুড়ে মনে হয়েছে কিছুটা তার ছিড়ে গেছে।লেখক চাইলে দ্বিতীয় পর্বটা আরো ভালো করে লিখতে পারতেন।
বই জুড়ে বহু কবিতা,গানের খণ্ডাংশ আছে।এটা বেশ ভালো লেগেছিল।
সব মিলিয়ে উপভোগ্য একখানা বিশালাকার উপন্যাস
Profile Image for Ivey Rashid.
42 reviews29 followers
September 24, 2018
লে হালুয়া! এই বইয়ের সব চরিত্রই কেমনে এতো ভালো উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গাইতে পারে! সবারই কেন খালি উদাস উদাস সন্ন্যাসী ভাব! হরিশংকর বাদে মোটামুটি সব চরিত্রই বিভিন্ন সময়ে কম বেশি বিরক্তির উদ্রেক করে, কিন্তু সারাক্ষণই প্রচন্ড বিরক্তিকর চরিত্র হলো বইয়ের মূল চরিত্র। এত ভন্ড চরিত্র আর কখনো পড়েছি বলে মনে করতে পারতেসি না। হাতের কাছে পেলে ঠাস ঠাস করে কিছু চড় মারতে পারলে মনে হয় একটু ভালো লাগত!
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
January 11, 2014
অনেক মজার এবং ভাবিয়ে তুলার মতো একটা বই...
দারুণ লেগেছিল পড়তে ^_^
বিশাল ছিলো বইটা, যদিও পড়তে বেশ লেগেছিল... :)
Displaying 1 - 30 of 56 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.