Jump to ratings and reviews
Rate this book

তেইশ নম্বর তৈলচিত্র

Rate this book
‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস। ১৯৬০ সালে পদক্ষেপ নামক এক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় উপন্যাসটি প্রথম ছাপা হয়। পরবর্তীকালে নওরোজ কিতাবিস্তান উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশ করে। এ পর্যন্ত মুক্তধারাসহ অন্যান্য প্রকাশক কর্তৃক বহুবার মুদ্রিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে বইটি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়। সুভাষ দত্ত পরিচালিত এই ছায়াছবিটির শিরোনাম ছিল ‘বসুন্ধরা’। সিনেমাটি সাতটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বুলগেরীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে ‘পোত্রেৎ দুবাতসাৎ ত্রি’ শিরোনামে।

80 pages, Hardcover

First published January 1, 1960

17 people are currently reading
417 people want to read

About the author

Alauddin Al-Azad

12 books14 followers
Alauddin Al-Azad (Bangla: আলাউদ্দিন আল আজাদ) was a modern Bangladeshi author, novelist, and poet. He was a student of Bangla literature in Dhaka University. He received his PhD from London University in 1970 for his work 'Iswar Gupter Jeebon o Kabita' (ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা).

Azad was born in Dhaka. He was a professor of Bangla literature. Also he was a first secretary of Bangladesh High Commission in Moskow.

He was honored with Bangla Academy Award (1965), UNESCO Award (1965), National Film Award (1977) and Ekushey Padak (1986).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
108 (19%)
4 stars
185 (33%)
3 stars
170 (30%)
2 stars
59 (10%)
1 star
34 (6%)
Displaying 1 - 30 of 91 reviews
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
June 15, 2016
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ তেইশ নম্বর তৈলচিত্র - আলাউদ্দিন আল আজাদ

এই বইয়ের কাহিনী নির্যাস বেশ সংক্ষিপ্তই। শিল্পী জাহেদ করাচীর এক আর্ট এক্সজিবিশানে অংশগ্রহন করেছিল যেখানে তারই আঁকা তৈলচিত্র ‘মাদার আর্থ’ বা ‘বসুন্ধরা’ প্রথম পুরষ্কারটি অর্জন করে। কিন্তু এই ছবি, শিশু কোলে এক বিভোর মাতৃমূর্তির এই ছবির অনুপ্রেরনা যে আরেক ‘ছবি’! সে ‘ছবি’ এক রক্ত মাংসের মানুষী, জাহেদের সহধর্মিনী। শিল্পী জাহেদের জীবনে ছবির প্রবেশ ও তার অনুষঙ্গ ধরে অন্যান্য কাহিনী নিয়েই এই উপন্যাস।


উপন্যাসে লেখকের ভাষার ব্যাবহার ভাল, প্রকৃতি বর্ননায় তিনি বিশেষ পারঙ্গম কিন্তু দুঃখের কথা কোন বর্ননাই কোন আশ্চর্য হয়ে ধরা দেয় না, কোন কথোপকথন চাবুকের মত আছড়ে পড়ে না পাঠকের মনে। উপন্যাসের এই নির্লিপ্ততার কারন লেখকের কোন প্রকার ছক ভাঙতে চাওয়ার অনীহায়; লেখকের তথা জাহেদের সর্বদা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অনুশাসনের গন্ডির মধ্যে থাকতে চাওয়ার প্রবল আপ্রান প্রয়াসে! এই রচনায় সচেতন ভাবেই হোক বা অবচেতন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েই হোক, পুরুষ-তান্ত্রিকতার ছায়া পড়েছে সর্বত্র।


যে সব দন্দ্ব-মূলক ভাবনা এই পাঠ থেকে মনে উঠে এল, তাদের মধ্যে প্রথমটি হল শিল্পীর আত্মপ্রকৃতি সম্বন্ধীয়। শিল্পীরা কেমন হন? শিল্পী মানেই কি উদ্দাম, বেপরোয়া জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে; মুজতবা, মুজিব, আমেদ ও রায়হানের মত? না কি শিল্পী মানেই ছেড়া শার্টে, অ-ছাটা চুলে, নোংরা জামা-কাপড়ে আবৃত কেউ হবেন, ছবির দাদা জামিলের মত? প্রকৃত শিল্পী কি আদপেই ধোপদুরস্ত, ভদ্র আময়িক হতে পারেন না! প্রথমটি নিশ্চিত ভাবে শিল্পীদের চারিত্রিক ও দ্বিতীয়টি শিল্পীদের আর্থিক ভাবে ‘ক্লাসিফায়েড’ করার আমাদের চিরকালীন পদ্ধতি। বিশেষত দ্বিতীয়টি, সফল এবং বিফল শিল্পীদের এই যে চিত্রায়ন পদ্ধতি, এটা আমরা বারংবার দেখে আসছি, প্রায় সকল ভাষার সাহিত্যেই! এখন তো মনেই হয় যে প্রকৃত শিল্পী কমার্শিয়াল শিল্প করেন না; অপরপক্ষে একজন ধোপদুরস্ত সফল শিল্পী নিশ্চই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা প্রতিক্রিয়াশীল, বুর্জোয়া, কমার্শিয়াল শিল্পী! এই মনে হওয়ার মানে, কিছু জীবিকার সাথে অবচেতনেই আমরা কিছু কিছু ছবি জড়িয়ে নিয়েছি এবং আমরা সেই ক্লিশে থেকে বেরতে পারছি না।


দ্বিতীয় ভাবনাটি লেখক তথা শিল্পী জাহেদের চেতনে-অবচেতনে পুরুষ-তান্ত্রিক সমাজের প্রভাব সম্মন্ধীয় যেটি বারবার তার ছাপ রেখেছে এই উপন্যাসে। জাহিদের সাথে প্রথম পরিচয়ে ছবি ধরা দেয় এক লাজুক, নতমুখী ও মিতভাষী মেয়ের রূপে। ছবির এই সমস্ত গুণ এবং অবশ্যই ছবির নিটোল শরীর, নিশ্চিতভাবে একজন পুরুষের কাছে লোভনীয় এবং স্বাভাবিক ভাবেই জাহেদ ছবির প্রেমে পড়তে দেরী করে না! সত্যি কথা বলতে, পুরুষ এমন নম্র মেয়েকেই কিন্তু পচ্ছন্দ করে; আমরা খুব কম পুরুষই আছি যারা কোন তেজী, স্পষ্টভাষী মেয়েকে পচ্ছন্দ করি! কিন্তু কেন? কারন কি এই যে আমরা, পুরুষেরা, নারীকে চেয়েছি আমাদের পাশে নয়, চেয়েছি আমাদের ঘরের কোনে, চেয়েছি আমাদের শুভ্র বিছানায়, নারীকে চেয়েছি আমাদের খাচায় আটকা পোষা ময়না পাখির রূপে! হাজার হোক সহিংস বাঘিনীর চেয়ে নম্র বিড়ালিনী পুষতেই তো বেশী আনন্দ! আমার মতে, মেয়েদের উপর সার্বিক ভাবে এই অতীব কোমল হওয়ার দায় সেই দিন থেকে বর্তায় যেদিন গোষ্ঠীযুদ্ধের ফল স্বরূপ মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল বর্তমান এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। শিল্পী জাহেদ তো এই পিতৃতন্ত্রেরই উৎপন্ন ফসল, তাই স্বাভাবিক ভাবেই তার চরিত্র কোন অংশেই ব্যাতক্রমী নয়।


পিতৃতান্ত্রিক সমাজ-শিক্ষার এক নিষ্করুন উদাহরন প্রকাশিত হয় জাহেদের একপেশে ইচ্ছের মধ্যে দিয়ে যখন জাহেদ বিনা অনুমতিতে ছবি কে জড়িয়ে ধরে! এমন কি জাহেদ ছবির নিটোল শরীর দেখে, তার উন্নত স্তন যুগল দেখে মনে করে যে নারী শরীরকে “নিপীড়িত লুন্ঠন করাই প্রত্যেক পুরুষের ধর্ম!” এমন কি বাসর রাতেও জাহেদ মনে করে যে স্ত্রীর সম্মতি নয়, তার দৈহিক ‘বাধা’ কে জয় করাই পুরুষের কাজ! তাই যদি হয় তবে তাহলে জাহেদের ধর্ম ওই পুরুষ, যে অতীতে ছবিকে ধর্ষন করেছিল তার চেয়ে আলাদা কিসে? এমন কি মুজতবা যে প্রেমের আশ্বাস দিয়ে তিনা নামক মেয়েটিকে ভোগ করেছল তারই বা ধর্ম কিসে আলাদা? এরা সকলেই তো মনে করেছে যে নারীকে লুন্ঠন করাই পুরুষের চরম পালনীয় ধর্ম!


আর, ঠিক এই প্রশ্নেই লেখক এক দারুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন, তিনি জাহেদ কে আলাদা করার চেষ্টা করেছেন অন্যদিক দিয়ে। হ্যা, বিয়ে নামক একটি সামাজিক প্রাতষ্ঠানিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে! স্যুট-টাই পরিহিত জনৈক ধর্ষক মার্চেন্ট, মুজতবা এবং জাহেদ, এরা সকলেই নারীকে ভোগ করতে চেয়েছে কিন্তু শুধু শেষোক্ত জনই তার নারীকে বিবাহ করেছে। যেন বিয়ে করলেই একজন পুরুষ তার নারী-ভোগের ইচ্ছেটাকে একটি সম্মান জনক রূপ দিয়ে ফেলতে পারবে! যেন বিবাহিতা হওয়াটাই একজন নারীর পক্ষে হাসিল করা সর্বোচ্চ সামাজিক সম্মান! আদতে এই ভাবনার ফলশ্রুতি হিসেবেই নারীর বেচে থাকার উপায় হয়ে দাঁড়ায় মাত্র দুটি; হয়, নারী তুমি আমার বিবাহিতা হও, না হলে তুমি রাধারানির মত বেশ্যা হও! এখন নিঃসন্দেহে, যেহেতু নারীর কাছে বিবাহিতা হওয়ার মধ্যে সম্মান অনেক বেশী, এই সুযোগে বিবাহ নামক রীতির মধ্যে দিয়ে নারীর সম্মান, তার ইচ্ছে-অনিচ্ছের প্রসঙ্গটিকে বিলকুল ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগও পুরুষের বেশী। আমাদের সমাজে বিবাহ যে নারী-সম্মানের পরাকাষ্ঠা, তার বাস্তবিক উদাহরন দেখা যায় হামেশাই, যখন আদালতে বিচারক ধর্ষকদের প্রস্তাব দেন ধর্ষিতাকে বিয়ে করার। তবে হ্যা, এই বইতে পুরুষ কে নারী লুন্ঠনের অনুমতি দিয়েও লেখক শেষ পর্যন্ত তাকে হুশিয়ারিও দিয়েছেন। শেষে দেখিয়েছেন যে নম্র কোমল নারীকে দলিত করলে মুজতবার মত পরিনতিও হতে পারে! অতএব সাধু সাবধান!


যাই হোক, জাহেদের এই অসাধারণ পুরুষালি মানসিকতার উদাহরন ছড়িয়ে আছে সমস্ত বই জুড়ে। ছবি কে বিয়ে করে তাকে নারীত্বের সর্বোচ্চ শিখরে উন্নিত করা, অভিজ্ঞ ডাক্তারের মত ছবির শরীর দেখেই তার অতীত বুঝে ফেলা, সেই অতীত কে আবার ‘ক্ষমা-ঘেন্না’ করে দেওয়া, শেষে ছবিকে মাতৃত্ব দিয়ে নারীত্বের একমাত্র অভিষ্ঠা পূরনে ব্রতী হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন কি এই উপন্যাসের নাম-স্বরূপ ‘তেইশ নম্বরের তৈলচিত্র’ও কিন্তু আসলে আখেরে উদযাপন করছে এই মাতৃত্বের ছবিই, অন্য ভাষায় যা আসলে পুরুষের বংশ-বিস্তারের ছবি। জাহেদের পাশাপাশি, ছবিও কিন্তু অপরপক্ষে লেখকের হাত ধরে এই আদর্শ নারীর নাম-ভূমিকায় দারুন অভিনয় করেছে। স্বামীকে ভালবাসাই যে নারীর সবচেয়ে বড় কাজ, সন্তান ধারনেই যে নারীর জীবনের সকল মোক্ষ হাসিল, এসব উদাহরন ছবি ভয়ঙ্কর সুপষ্ট ভাবে পাঠক-পাঠিকাদের সামনে তুলে ধরেছে! স্বাভাবিক ভাবেই, নারীর এমন নিটোল, কোমল, শান্ত অবয়ব (যা পুরুষ কে হয়ত তার অবচেতনে মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়) আর কেউ না হোক, একজন পুরুষ পাঠককে খুশী করবেই করবে।


আমি, তাই, একজন পুরুষ হিসেবে এই উপন্যাস পড়ে বেশ আনন্দই পেয়েছি কিন্তু আমি, মানুষ হিসেবে, এই বই পড়ে শুধু যে ভীষণ হতাশ তাইই নয়, আমি বেশ দুর্ভাবনায়ও পড়েছি। নারীকে আমি কি চোখে দেখি? আমি কি মানুষ, না কি নিছকই পুরুষ?


শেষ কথাঃ বর্তমান এই উপন্যাস দেখা যাচ্ছে মাঘ, ১৪০০ বঙ্গাব্দে দশম বার মুদ্রায়িত হচ্ছে! খুব কাটতি এই বইয়ের নিশ্চই। এই বইয়ের সুত্রে আমার আরেকটি দারুন (!!) বইয়ের কথা মনে পড়ছে, সেটিও বহুবার মুদ্রিত হয়েছে! সেটি হল কাসেম বিন আবু বকরের বিখ্যাত ‘ফুটন্ত গোলাপ’, আমি যার ১০ পৃষ্ঠা পড়েই ক্ষান্ত দিয়েছিলাম! পিতৃতন্ত্রের মন্ত্র আওড়ানো এই বই গুলি যখন এই শতাব্দিতেও রমরমিয়ে চলছে, তখন বুঝতে হবে নারীর প্রতি আমাদের, পুরুষের এই ক্ষমা-মিশ্রিত, উচ্চাসীন, ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আসলে কিছুই পরিবর্তন হয় নি। মানুষ, আদতে যে গুহাবাসী জানোয়ার ছিল, এখনও তাই আছে, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।


Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
February 3, 2023
অনেক সময় অনেক বিখ্যাত বইয়ের রস ঠিকমতো আস্বাদন করতে পারি না আমি। আর এটা আমার অনেকটা ঠিক মুদ্রাদোষের মতো। অনেক বিখ্যাত বই শুধু এই মুদ্রাদোষের খপ্পরে পড়ে লো রেটিং এর তাকে হাসফাস করতাছে। বই ভালো লাগা আমার কাছে অনেক সময় স্থান, কাল, মানসিক পরিস্থিতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। সম্ভবত এই বইটার সৌভাগ্যকাল চলতেছে এখন।

শুধু এটুকু বলব সাধুসুলভ একমুখী পুণ্য ভাবনায় শিল্পী হওয়া সমাজ বাস্তবতা নয়। তাই এ উপন্যাসকে যদি ভাবতে হয়, তাহলে ব্যক্তি জাহেদের পরিবর্তে সেখানে নায়ক শিল্পী হিসেবে আমাদেরকে ভাবতে হবে। তবে হ্যাঁ লেখকের প্রথম বই হিসেবে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও আমি ব্যক্তিগতভাবে ৫ তাঁরা দিতে ভীষণভাবে ইচ্ছুক।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,959 followers
July 4, 2014
১৯৬০ সালে লেখা একটা উপন্যাস। যদিও বেশ নামকরা , তবুও তেমন কিছু আশা করি নি। আর আমার ক্ষেত্রে যে জিনিসটা হরদম হয় তা হল অপ্রত্যাশিত ভাবেই অনেক বই ভালো লেগে যায়। ৮৪ পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস। কিন্তু সত্যি বলি?? এই টুকু জমিনেই লেখক তার সমস্ত ভাবনা সফল ভাবে উজাড় করে দিয়েছেন।
কাহিনী সংক্ষেপ? একজন শিল্পী - যার আকা ছবি exhibition এ প্রথম পুরষ্কার জিতেছে। সেই ছবিটা আকার পেছনের গল্প। কিন্তু শিল্পী মানুষ-তার গল্পটাও তো হবে শৈল্পীক -তাই না? পেছনের গল্পটা একদম আগাগোড়া রোমান্সে মোড়ানো একটা স্মৃতিচারণ । সেই স্মৃতিচারণে আছে বন্ধুত্ব , প্রেম আছে সমাজের ভয়াল দর্শন। সত্যিই উপভোগ্য একটি বই।
আর বই এর কয়েক পাতা পর পরই এমন সব লাইন-একবার না বার বার পড়তে ইচ্ছে করে লাইন গুলো। অন্নেক দেরী করে পড়লাম , কিন্তু কথায় আছে না?? বেটার লেট দ্যান নেভার!! হাতে কয়েক ঘন্টা সময় থাকলে বসে যান। খারাপ সময় কাটবে না। :)
Profile Image for Zuberino.
429 reviews81 followers
November 3, 2018
এই বইটি যে প্রকৃতই বিভেদ সৃষ্টি করে, বিভিন্ন পাঠকের রেটিং দেখলেই তা বোঝা যায়। এমনকি আমার প্রিয় কিছু পাঠকও এই বইকে একবাক্যে (মানে এক তারায়) বাতিল করে দিয়েছেন। তবুও আমি যথাসম্ভব নিরপেক্ষ মনেই বইটা পড়ার চেষ্টা করলাম। ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতটুকু বুঝলাম, মনে হলো বইটি পুরোপুরি নির্গুণ নয়। ভালোমন্দ মিলিয়েই তেইশ নম্বর তৈলচিত্র, আর কিছু হোক না হোক, সমসাময়িক আরেক নন্দিত উপন্যাস (শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি) পড়ে যেই চরম বিষম খেয়েছিলাম, সেই একই গহবরে যে পুনরায় পতিত হইনি, তাতেই আমি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ।

প্রথমেই দোষগুলি। অনেক জায়গাতেই সংলাপ অত্যন্ত নাটুকে টাইপের, বিশেষ করে ছবি আর জাহিদের ডায়লগ কোন কোন ক্ষেত্রে প্রায় পাঠের অযোগ্য। বাস্তবজীবনে মানুষ এইভাবে কখনো কথা বলে না, পঞ্চাশের দশকেও বলতো কি না সন্দেহ। বইটি যে জীবনঘনিষ্ঠতার দাবি করে, তা কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন হয় এইসব অবাস্তব অতিন্যাকা সংলাপের কারণে।

তবে বইয়ের আরো বড় যে ত্রুটি, এবং যেটা প্রায় সব পাঠকই ইঙ্গিত করেছেন, তা হলো বইয়ের চরম রক্ষণশীল এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল জেন্ডার পলিটিক্স। সমাজের অগ্রণী পথিক হলেন শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। সেই শ্রেণীর সদস্য হিসেবে জাহিদের মতো এতো সংকীর্ণ মনোভাবের একজন "শিল্পী"-কে মেনে নেয়া কঠিনই বটে। ষাট বছর আগের সমাজের বীক্ষণ বলেও যদি মেনে নেই, তবু এই ধরণের প্রতিক্রিয়াশীলতার দায় থেকে লেখককে (নিদেনপক্ষে জাহিদকে) মুক্তি দেয়া যায় না। "ভাগ্যবতী মেয়েরা স্বামীর আগে মরে এবং স্বামীর কোলে মাথা রেখে মরে।" এই লাইন কেবল বেহেশতি জেওরেই মানায়, আধুনিক নভেলের আধুনিক নায়ক-নায়িকাদের মুখে না। লেখক সম্পর্কে পড়েছি তিনি তরুণ বয়সে মার্ক্সবাদী দর্শনে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। প্রগতিশীল বামচিন্তা থেকে তিনি যে নারীপুরুষের সম্পর্ক বিষয়ে গঠনমূলক কিছুই শেখেননি, সেটা মনে হলে কি খুব ভুল হবে?

আরেকটি বিষয় খেয়াল করলাম। আজাদের কোন মূল্যায়নেই এরশাদশাহীর সাথে ওর মাখামাখির তেমন উল্লেখ পাওয়া যায় না। অথচ সেই আমলে তিনি এরশাদের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ছিলেন, প্রায়ই বিটিভিতে আসতেন, এবং আশির দশকের সাদাকালো পর্দায় তার গালভাঙ্গা তপস্বীর মতো মুখ অনেকেই দেখে থাকবেন। স্বৈরাচারী আমলে ভাড়াখাটা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খুব বেশি দৃশ্যমান ছিলেন সৈয়দ আলী আহসান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, ফজল শাহাবুদ্দিনের মতো কয়েকজন। এই স্খলনের ইতিহাসও মনে করি আজাদ-মূল্যায়নে মনে রাখা প্রয়োজন।

*

এই তো বাজে দিকগুলো। তবে ভালোগুলোও আসুক। মনস্তত্বের প্রতি আজাদের যে আগ্রহ ছিল, তা পরিস্ফুট। মূল চরিত্রের অন্তর্জীবন বা ইন্টেরিয়র লাইফের সূক্ষ্ম বাঁক আর মোচড়, জাহিদের ব্যক্তিগত মনোলোগ তিনি যেভাবে চিত্রায়ন করেছেন শাণিত শৈল্পিক গদ্যে, তার তারিফ না করে উপায় নেই। সুলেখার আমি বরাবরই ফ্যান, আজাদের গদ্য প্রায় প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই আমাকে আকর্ষণ করেছে। বাংলা ভাষার শক্তিমত্তার পরিচয় তিনি এখানে দিয়েছেন, ভাষার উপর অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ দেখিয়েছেন, সর্বোপরি মনে হয়েছে যে আধুনিকতার সাথে বোঝাপড়া করতে ব্যর্থ হয়ে আমরা যেভাবে ইংরেজি আর ইংরেজি পরিভাষার প্রতি করুণ আত্মসমর্পণ করেছি, আজাদের মতো গদ্যকার আমাদের দেখিয়ে দেন যে বিকল্প পন্থাও ছিল, আধুনিকতার রীতিনীতি - সেটা মানসপ্রকৃতি থেকে শুরু করে রাজনীতি অর্থনীতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি পর্যন্ত - আসলেই বাংলার ভাষার অধীনস্থ করে ফেলা যেতো, আরেকটু বেশি সদিচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে, আমাদের মধ্যে আলস্য আর পরাধীনতার মনোভাব আরেকটু কম হলে। কিন্তু বলে কি লাভ, এখন তো মনে হয় ভাষা-গোলামীর গাড়ি আমাদের অনেক আগেই ছেড়ে গেছে।

আর যেটা ভালো লেগেছে, সেটা পঞ্চাশের ঢাকার চিত্র, তার একটি অংশ অর্থাৎ বোহেমিয়ান শিল্পীজীবনের স্বার্থক প্রতিচ্ছবি। আমরা বড়ো হয়েছি তারও দুই যুগ পরে, ঢাকাকে চিনতে বুঝতে যত সময় খরচ করেছি, তার চেয়ে ঢের বেশি সময়ই এখন কেটে গেছে বিদেশ বিভুঁইয়ে। তবুও হারানো ঢাকাকে নিয়ে আবেশ কাটে না, হোক পরিতোষের তুলিতে কুড়ির দশকের জিন্দাবাহার অথবা তাসনীম হোসেনের আশির দশকের স্মৃতির শহর। আজাদ সেই সময়ের শিল্পীসমাজের বেশ কজনারই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এবং তাদের জীবনধারার কিছুটা হলেও ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন। আক্ষেপ যে এই বই অবলম্বনে নির্মিত সুভাষ দত্তের বসুন্ধরা ছবিটি একদমই পাওয়া যায় না, না হলে সাতাত্তরের চলচ্চিত্রের সাথে গল্পের সময়কাল আর আমাদের বর্তমানকেও মিলিয়ে নেয়া যেতো।

পুনশ্চ - গল্পের শেষ দিকে বন্ধুর সাথে পার্বত্যে চলে যায় জাহিদ। কর্ণফুলী নদীর নিসর্গ আর চন্দ্রঘোনার মনোরম বিবরণ আছে, সেখানকার কাগজকলের উল্লেখও আছে। আমার বড়ো ফুফা (আজ কুড়ি বছরের বেশি তিনি মৃত) চন্দ্রঘোনা পেপারমিলে কাজ করেছিলেন বহু বছর, সম্ভবত সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। আমার শৈশবের আবছা একটি স্��ৃতি, ফুফার তদারকিতে আমরা সবাই মিলে পেপারমিল সফরে বেরিয়েছি, বিশাল উঁচু সব ঘর, মস্ত বড়ো মেশিন - কাঠ থেকে মন্ড, আর মন্ড থেকে কাগজ বানাতে দেখে বিস্মিত মুগ্ধ পাঁচ বছরের আমি। বোধ হয় তার আরো দশ বছর পর বাপের টানাটানিতে চন্দ্রঘোনা গিয়েছিলাম শেষবার, কিন্তু ঢাকা ছেড়ে জঙ্গলে ঈদ কাটাতে বেজায় অনিচ্ছা ছিল, টিনেজ অনীহার কারণে সেই ভ্রমণ উপভোগও করিনি, কিছু মনেও নেই। সেবারই শেষ গিয়েছিলাম, ফুফা সপরিবারে ঢাকা স্থানান্তর হন তার কিছুদিন পরেই। আজাদ/জাহিদের পায়ে পায়ে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আবার চলে গেলাম সেই স্বপ্নরাজ্যে।
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
January 13, 2016
এই বইটা এত নাম করা কেন? কারণটা কি? মাথায় ঢুকলো না!
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
August 15, 2017
একটু বেশি সিনেমাটিক হয়ে গেলো না??

লেখনী বড্ড দুর্বল। ভিতরে গিয়ে দাগ কাটেনা। আর এমন একজন শিল্পী চরিত্রকে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে যেই শিল্পী মেয়েদের এখনও মেয়েমানুষ ভাবতেই ভালবাসে! ভাবে মেয়েদের অফিস আদালতে মানায় না, তাদের প্রকৃত স্থান রসুইঘরে। একজন শিল্পীর পক্ষে এমন নিচুমনের ভাবনা শোভা পায়না।

এই বই কেন এতো বিখ্যাত?? আগে ভাবতাম "মেমসাহেব" এর মতো ওভাররেটেড বই বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নাই। আমার ভাবনা ভুল ছিল।
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews65 followers
October 30, 2021
চমৎকার লেগেছে আমার,তাই দুই দুইবার পড়লাম। জাহেদ,ছবি আর স্নিগ্ধ প্রেম।😍
Profile Image for হাবিবুর রুহিন.
32 reviews4 followers
March 6, 2021
বইয়ের শুরুর দিকেই লেখক বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিদের সম্পর্কে বলেন, “ বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ঘর তােলার জন্যই বুনিয়াদের বিরুদ্ধে যাদের অভিযােগ। এরাও বিদ্রোহী। আর সে শুধু ভেতরে নয় বাইরেও। পােশাক-আশাক কেমন খাপছাড়া, তেরপালের মতাে মােটা নীলচে কাপড়ের আটসাঁটো প্যান্ট আর গায়ে হাল্কা সবুজ রঙের জ্যাকেট। জুতােগুলাে অর্ডার দিয়ে তৈরি করা অদ্ভুত সাইজ, বাজারে যার প্রচলন নেই । মাথার চুল কাটে না কখনাে, চুলে তেল দেয় না তাই কুঁকড়ে কুঁকড়ে ফুলে ফুলে থাকে। ছ'মাস দাড়ি রাখে, আর ছ'মাস গোফ। দাড়ি যতদিন থাকে গোঁফ প্রায় প্রতিদিন পালিশ করে কামায় এবং গোঁফের কালে দাড়িরও সেই অবস্থা ওদের অলিখিত রীতিতে গালে চড় দেওয়া মানে ভালােবাসা, হাউমাউ করে কেদে ওঠা মানে হাসা। কোনাে কারণে কেউ হাসলে অন্যজনে মুখ চেপে ধরে তার- এ নাকি কান্না এবং কান্না জিনিশটা সহ্যের অতীত। নারীর সঙ্গে পুরুষের কি ধরনের সম্পর্ক হবে, সে সম্পর্কে তাদের মতামত অদ্ভুত বটে কিন্তু নিঃসন্দেহে অভিনব। আসলে সমাজ ও সভ্যতা ছেড়াকোটের মতােই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে, কাজেই এর মূল্যবােধের কোন অর্থ নেই । শিল্পে ও জীবনাচরণে কিম্ভুতকিমাকার হওয়াটাই যুগের দাবি এবং এখানেই বিদ্রোহ।” এরপরেই তিনি তথাকথিত বুদ্ধিজীবী থেকে উপন্যাসের নায়ককে পরতে পরতে আলাদা করে উপস্থাপন করেন৷ প্রাঞ্জল ভাষায় গল্পের বর্ণনা বেশ চমৎকার। সংলাপে নাটকীয়তার আধিক্যের কারণে বর্তমান সময়ের পাঠকের কাছে কিছুটা বিরক্ত লাগা স্বাভাবিক৷ তবুও উপন্যাসের সৃজনে অর্থাৎ গঠনে-বুননে-উপমায় দারুণভাবে সফল বলা যেতেই পারে৷ উপন্যাসের শুরুর কয়েক পাতা পড়লে আসলে এটা কী ধরণের উপন্যাস সেটা ঠাওর করা পাঠকের জন্য কষ্টসাধ্য প্রায়৷ মনেহতে পারে, প্রেমকে উপজীব্য করে এক বাউন্ডুলে আর্টিস্টের চোখ দিয়ে চিত্রিত হবে পঞ্চাশের দশকের সমাজ, সংসার, বুদ্ধিজীবীদের জীবন৷ কিন্তু আদতে এ এক আগাগোড়া প্রেমের উপন্যাস৷ প্রদর্শনীতে যাওয়া ২৩ নাম্বার চিত্রটি যার নাম ‘মাদার আর্থ’ সেটার পিছনের গল্প নিয়েই এই উপন্যাস৷

একটা লেখা কখন মানুষের হৃদয়ঙ্গম হয়? যখন লেখাটা সমাজের দর্পণ কিংবা মাহাত্ম্য বর্ণনা করে কিংবা মানুষকে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন বা প্রতিষ্টা করে৷ কিন্তু গল্পের নায়ক এখানে একাই সর্বোত্তম, সর্বেসর্বা। নারী জাতিকে ঘরকুণে, ঘরের আসবাব হিসেবে দেখানোর বাহিরে আর কিছুই দেখাতে পারেননি৷ এবং প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন নারীকে ঘরেই বেশি মানায়। নায়কের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, নারীর চাকরীর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবার যেমন প্রয়োজন আছে তারচেয়েও ধ্রুব সত্য ঘরের বউ হয়ে রান্না করা। গল্পের সব চেয়ে খারাপ অংশ হচ্ছে জোরপূর্বক একজন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সেটাকে প্রেমের আবেগ বলে প্রতিষ্ঠা করা। এধরণের লেখা সমাজে ভয়াবহ রকমের প্রভাব বিস্তার করে, কিছু অংশের মানুষ ধরেই নেয় এটাও প্রেম প্রকাশের একটি মাধ্যম৷ নারীর অবমাননা, নারীকে পুতুল বই অন্যকিছু না হিসেবে দেখানো এই বইয়ের সবচেয়ে দুর্বল দিক৷

শেষে বলতে ইচ্ছে হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোনো মহলকে খুশি করতে লেখা হয়েছে এই উপন্যাস নয়তো লেখক উদ্দেশ্যহীনভাবেই সেই মানসিকতা পোষণ করেন৷
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
June 3, 2020
একশব্দে বলতে গেলে 'মিডিয়োকোর'।
অথচ শুরুটা দারুণ ছিল। ভেবেছিলাম অসাধারণ কিছু পেতে যাচ্ছি। কিন্তু জমলো না শেষমেষ। আবেগী কথোপকথনের অংশগুলো বিরক্তই লেগেছে।
Profile Image for Ashkin Ayub.
464 reviews228 followers
July 22, 2016
তেইশ নম্বর তৈলচিত্র পাঠ প্রতিক্রিয়া:

এক কথায় - বঙ্গীয় সভ্যতায় আবাহমান বাংলার মেডেল পাওয়া ভদ্র শিল্পীর বোহেমিয়ান ছায়ার সহিহ সোনালী জীবন!

সুধী পাঠক, একটু বোঝার চেষ্টা করেন। আমাদের প্রধান নায়ক থুক্কু ক্যারেক্টার জাহেদ, প্রচলিত চারুকলার ‘বখাটে’ ট্যাগওলা ছেলে ছিলো না। লুকিয়ে চুকিয়ে একটু-আকটু পানাহার করলেও ভায়া কিন্তু অশ্লীল মুজতবা'র মত না। ;) সচেতন পাঠক ব্যাপারটা একটু খেয়াল কইরেন।
তারপর সেই ১৯৬০ সালের সোসাইটিতে এত গুণে গুণান্বিত জাহেদ এর ক্যারেক্টার হিট খাওয়াই তো ভবিতব্য! তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শিল্পী শব্দটাই যেখানে ট্যাবু, সেখানে জাহেদের মত একজন ভদ্র শিল্পী যে কিনা এক্সিবিশনে প্রথম পুরষ্কার পাইছে! তার উপর যারে পছন্দ করছে তারেই বিয়া করসে। লেবেলটা দেখেছন?! এইসব কারনে জাহেদ হিট না মানে তেইশ নম্বর তৈলচিত্র হিট। শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দিন আল আজাদ, হি ওয়াজ অ্যাহেড অব টাইম, বে। আপ্নারা যারা বই বুঝেন নাই, রেটিং কম দিলেন, পরে কিন্তু কট খায়ে যাবেন। হু নোজ?! -_-



বি.দ্র: প্রত্যেক ঔপন্যাসিক জীবনের কাছাকাছি যেতে চেষ্টা করে মাত্র। যে উপন্যাস জীবনের যতোটা কাছে যেতে পারে, আমার কাছে সে উপন্যাস ততো বেশি জীবন্ত। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র আমার কাছে জীবন্ত না। ধন্যবাদ।
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
November 30, 2014
কেমনে বিখ্যাত হইলো এই কিতাব... ?! মাথায় কুলায় নাই রে মনা ...
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews287 followers
December 11, 2024
পুরো ব‌ইটিই মূলত জাহেদ একজন শিল্পী হয়েও "শিল্পে ও জীবনাচরণে কিম্ভূতকিমাকার হ‌ওয়াটাই যুগের দাবি এবং এখানেই বিদ্রোহ। বিকৃতি ব্যাপক বলেই আকৃতির কোনো প্রয়োজন নেই" ধারণা থেকে বের হয়ে "তাঁদের মতো মহান শিল্পী আমি হতে চাই না। সব মানবের শিরোমণি যারা তারা আমার নমস্য কিন্তু একজনের ছোট্ট হৃদয়ের সবটুকু অধিকার করে বেঁচে থাকাই আমার লক্ষ্য। … এটাই আমার বিদ্রোহ, এট���ই আমার বিপ্লব" পর্যায়ে আসার পেছনের ভালোবাসাময় কাহিনি।

ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে গল্প বলাটা সুন্দর হয়েছে, পড়তে খারাপ লাগেনি।
Profile Image for Wasee.
Author 49 books785 followers
May 13, 2016
একটি ছবির একজিবিশন থেকে কাহিনীর সূত্রপাত। শুরুতে ভেবেছিলাম, ষাটের দশকের প্রেক্ষাপটে তরুণ চিত্রশিল্পীদের স্বপ্নময় বোহেমিয়ান জীবনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গল্পের গাথুনি। সামাজিক অবস্থান,যৌনতা,মূল্যবোধ - গল্পের আড়ালে সবকিছুই ফুটে উঠছিল। কিছুদূর এগোনোর পর বোঝা গেল, প্রেমকাহিনীর দিকে গড়াচ্ছে। কিছুটা নিরাশ হয়েছি, অস্বীকার করব না। তবে এত আগের লেখায়একট এধরনের আধুনিক বাহুল্যবর্জিত বর্ণনাভংি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় অদ্ভুত সুন্দর আর একদম জীবন্ত অনুভূতির বিব্রিতি দেখে থমকে যেতে হয়েছে। খুব বেশি ভাল না লাগলেও একটা ব্যপারে একমত, 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' কে আর যাই হোক - ওভার রেটেড বলা যাবেনা একেবারেই :)
Profile Image for Abhishek Saha Joy.
191 reviews56 followers
June 22, 2020
চিত্রশিল্পী জাহেদের আঁকা তেইশ নম্বর ওয়েলপেন্টিং 'বসুন্ধরা' আর্ট কম্পিটিশনে ফার্স্ট হয়েছে।তারই পরিপ্রেক্ষিতে জাহেদের অবচেতন মনে উঠে আসে তার শিল্পীসত্তা,তার জীবনের প্রেম,তার জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে স্মৃতিকথা।একসময় দ্বন্দ্ব এসে উপস্থিত হয় তার পেশাগত উৎকর্ষের সাথে ভালোবাসার।দ্বন্ধে জয়ী হবে কে?
উপন্যাসের শুরুটা অসাধারণ।একজন শিল্পীর জীবনের খামখেয়ালিপনা,মনের বিচিত্র খেয়ালের পরিচয় পাওয়া যায়।কিন্তু পরবর্তীতে শিল্পীর জীবনের প্রেমের অংশটাই বড় হয়ে উঠতে দেখা যায়।প্রেমের সংলাপ অনেকাংশেই ন্যাকা লেগেছে।কিন্তু ন্যাকামি ছাড়া প্রেম কবে হয়েছে বলুন?
বই পড়ে কেমন লেগেছে সেটা রেটিংয়েই প্রকাশিত।হয়তো তিন তারা দেয়াই উচিত ছিলো কিন্তু ওইযে আনন্দ পেয়েছি সেজন্যে এক তারা বেশিই দিলাম!
Profile Image for Chiro Pipashito T H.
317 reviews2 followers
January 18, 2017
If there is a reader who believes the ultimate goal of a woman is being a mother, then he/she will appreciate this book. As I do not believe bearing children can be any goal let alone the ultimate goal for any human being, I found this book just awful. The write probably forgot that not only women, a cow, a kangaroo, a zebra, a cat, a gorilla- all mammals give birth.
Profile Image for Shaila Shaznin.
65 reviews8 followers
April 21, 2025
প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত এক ছবির কাহিনী বর্ণনা করেছেন শিল্পী। তাতে উঠে এসেছে বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসা আর সমাজের কিছু কালো অধ্যায়। জীবনে খ্যাতি অর্জনের চেয়ে বোধ হয় কাছের কিছু মানুষকে নিয়ে সুখী থাকাটাই বড়। আর এই ভালো থাকার জন্য ভালোবাসার মানুষের জীবনের খারাপ দিকগুলো বা খারাপ অধ্যায়গুলো ভুলে গিয়ে ভুলিয়ে দেয়াই উত্তম। সর্বসুখী বলে বোধ হয় কিছু হয় না, মেনে নিয়ে মানিয়ে নিয়েই হয়তো সুখী হতে হয়।
Profile Image for Tozammel Shishir.
66 reviews3 followers
April 25, 2023
এই বই বিখ্যাত হবার কোনো কারণ বহু অনুসন্ধানেও পাইলাম না।উইয়ার্ড😐
Profile Image for Salman Titas.
Author 8 books48 followers
June 11, 2017
আরেকটি বই। আগের মতো মন্তব্য আজও লিখতে বেশ ইচ্ছে করছে না। বইটি নিয়ে ভালোমন্দ কিছু বলার আছে, আশা করি এর মন্তব্য লিখতে খুব বেশী দেরি করবো না।
Profile Image for Maroof Ahmed Shuvo.
33 reviews3 followers
January 30, 2020
পুরোনো জীবনযাত্রা, প্রেম আর শৈল্পিক মনোচেতনার ধাঁচ পাবেন এই বইটায়। প্রচুর বাস্তব লুকায়িত পুরো বইজুড়ে। ভালোই লাগবে আশা করি। তবে ভাষাশৈলি নতুনদের একটু কঠিন হতে পারে। ধীরে, সুস্থে পড়লে ভালোই লাহবে। <3
Profile Image for Nasrin Shila.
266 reviews88 followers
April 2, 2022
গল্পটা কেমন যেন সরলরেখায় চলেছে। এত সুনাম শুনেছি বইয়ের যে আরও কিছু আশা করছিলাম।
Profile Image for Nazmush  Shakib.
35 reviews9 followers
May 26, 2020
এক চিত্রকরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ভিন্নধর্মী বিপ্লবীর গল্প...যে বিপ্লব সার্থকতা পায় গৃহকোণে, আপনজনের কাছে। পড়তেই হবে এমন অসাধারণ বই এটা না...তবে পড়া যায়, পড়ে বেশ খানিকটা ভাবনা চিন্তা করা যায় আর শিল্পীর ভাবনা জগতে কিছুটা সময়ের জন্যে ডুবে থাকা যায় - এই বা মন্দ কি?
Profile Image for Nahar Trina.
Author 13 books60 followers
June 15, 2016
"স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার ? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো ! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য ।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক ! ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চারকোটি পরিবার ।"

১৯৫২'এর ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা এই অসাধারণ কবিতার জনক আলাদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস '২৩ নম্বর তৈলচিত্র'। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। পরবর্তীতে(১৯৭৭ সালে) উপন্যাসটি অবলম্বনে তৈরি হয় 'বসুন্ধরা' নামের চলচ্চিত্র। পরিচালক সুভাষ দত্তের পরিচালনার মুন্সীয়ানায় এটি উপন্যাসকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল বলে সুধীজনেরা বলে থাকেন। যেহেতু 'বসুন্ধরা' আমার দেখবার সুযোগ ঘটেনি তাই এটি কতটা অতিরঞ্জিত সেটা বলতে না পারলেও এটা সরাসরিই বলা যায় আলাদ্দিন আল আজাদের এই উপন্যাসটিকে ঘিরে যতটা আশা পাখা মেলেছিল ঠিক ততটা যেন ওড়া হয়ে উঠলো না! এটি হয়ত বা পাঠক হিসেবে আমার ব্যর্থতা।
এত সাদামাটা একটি উপন্যাসকে ঘিরে আমি অনেক সাহিত্য আলোচনায় এত শুনেছিলাম যে এটা নিয়ে আমার আকাশ সমান আশা জন্ম নিয়েছিল। লেখকের অনেক ভালোবাসার প্রথম উপন্যাসটির প্রতি সম্মানজ্ঞাপন পূর্বক বলি,দারুণ ভাবে না হলেও আমি কিছুটা হতাশই!

বাস্তব জীবনে মানুষ এতটা ক্ষমাশীল হতে পারেন কিনা জানা নেই। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র চিত্রশিল্পী জাহেদের ছবি'র অতীত জীবনের প্রতি ক্ষর্মাহ হতে পারার মহত্ত্বটা তাই এই উপন্যাসকে উতরে দেয় তিনতারার তালিকায়! কবিতায় যিনি এতটা দ্রোহ ছড়িয়েছেন '২৩ নম্বর তৈলচিত্রে' আর স্ফূরণ দেখিনা। হয়ত তাঁর অন্যান্য সৃষ্টি রয়েছে তার চ্ছ্বটা। আলাদ্দিন আল আজাদের(উপন্যাস/গল্���) এটিই আমার প্রথম পাঠ। আশা করবো তাঁর বাকিসব রচনার সাথে পরিচিত হয়ে আজকের এই হতাশার কথা ভুলে যেতে পারবো। যে সব পাঠকের এখনো এটি পড়া হয়ে ওঠেনি, তাদের প্রতি বিনীত নিবেনদন; পরের মুখে ঝাল খেয়ে উহঃ আহঃ করবার চেয়ে বরং নিজেই পড়ে দেখুন না! বলা তো যায় না আপনার/আপনাদের হয়ত এর সাদামাটা ভাবটির জন্যই ভালো লেগে যাবে। শুভকামনা।
Profile Image for Moheul Mithu.
Author 20 books63 followers
June 8, 2015
বইটার রেটিং এত কম কেন হল বুঝলাম না। অনেক আগে পড়া কিছু ভালো লাগার অনুভূতিগুলো এখনও মনে আছে। বইটা পড়ার পর আমার মনে হচ্ছিল, "শেষ হল কেন?" আবার পড়ার আগে বইয়ের নামও শুনেছি অনেকবার, এই ধরনার উপন্যাস আমি তেমন একটা পড়ি না, কিন্তু লোক্মুখে শুনেই পড়ার আগ্রহ জন্মেছিল। পড়ার পর তো আমিই টাসকি!
লেখকের বলের ধরন আপনাকে বই ছাড়তে দেবে না। শেষ পর্যন্ত আটকে রাখবে, অবশ্য শেষ হওয়ার পরেও আটকে রাখবে। ফেলুদা এই টাইপের বইরে বলেন, আনপুটডাউনেবল। মানে একবার শুরু করলে শেষ না হয়া পর্যন্ত শান্তি নাই।
বইটা পড়ার পর এমন কিছু অনুভুতির সাথে পরিচয় হবে যেগুলো অনেকবার অনুভব করেছেন কিন্তু সেগুলোকে লেখকের মত করে বুঝতে পারেননি। অনেকটা হুমায়ুন আহমেদ স্টাইল। ব্যাপারটা অনেকটা-
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিসের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।

বইয়ে এরকম অনেক শিশিরবিন্দুর দেখা পাবেন আর এটাই বইয়ের সবচেয়ে ভালো দিক।
Profile Image for Ahmed Aziz.
381 reviews69 followers
March 21, 2020
করাচীর চিত্রপ্রদর্শনীতে প্রথম পুরষ্কার পাওয়া তৈলচিত্রের শিল্পির জীবনের গল্প। গড়পড়তা প্রেমের উপন্যাস। বেশ প্রেমটেম করে বিয়ে ঠিক হওয়া টাইপ অবস্থায় এসেও অবলীলায় নায়িকা "বুন্ধত্বের অপমান করা" টাইপ কথা বলে নায়ককে ফ্রেন্ডজোনড করার চেষ্টা চালালো। আবার নায়কের লুইচ্চা বন্ধু চোখের নিমিষে পাহাড়ে সমতলে মেয়ে পটিয়ে বেড়ায়। গত ৬০ বছরে দুনিয়াতে আসলে কিছুই চেঞ্জ হয়নি।
Profile Image for Nakib Hasan.
53 reviews1 follower
September 21, 2016
"..তাঁদের মতো মহান শিল্পী আমি হতে চাই না। সব মানবের শিরোমণি যাঁরা তাঁরা আমার নমস্য কিন্তু একজনের ছোট্ট হৃদয়ের সবটুকু অধিকার করে বেঁচে থাকাই আমার লক্ষ্য।..."

একটি ছবি আঁকার পেছনের গল্প। সাথে জীবনেরও..
Profile Image for Koushik Ahammed.
150 reviews12 followers
June 13, 2020
বই পড়ে শেষ করলাম। ভালো লাগলো। কিন্তু খুব বেশি কিছু বুঝতে পারি নি।
মানব মনের বিভিন্ন জটিল অলিগলিতে ঘুরপাক খেয়ে গল্প এগিয়েছে বলেই হয়তো ভালো লাগা টুকু থাকলেও বোধগম্য হয় নি লেখক আসলে কী বুঝাতে চেয়েছে।
Profile Image for Mashiur Rahman Rayeed.
17 reviews4 followers
December 13, 2024
দ্বিতীয় বারের মত পড়লাম। প্রথম বার যখন পড়েছিলাম তখন কী বুঝেছিলাম বা আদৌ কিছু বুঝেছিলাম কি না মনে নেই। সম্প্রতি কিছু রিভিউ দেখলাম - অনেকেরই ভাল লাগেনি। সেটার কারণই আবিষ্কার করতে গিয়ে আবার পড়লাম।

জাহেদ করাচিতে একটা আর্ট এক্সিবিশনে পুরস্কার পেয়েছে। সেই শিল্পের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে উঠে এসেছে তার পুরনো জীবনের কথা, তার প্রেমের কথা, তার ভালোবাসার কথা, শিল্পের কথা। সেই সব ঘুরে গল্প আবার এসে মিশেছে শিল্পের কাঁধে।

দেখেছিলাম অনেকের অভিযোগ আছে নাটকীয় ডায়লগ নিয়ে। আমার মনে হয়েছে লেখক কথোপকথন নাটকীয়ই করতে চেয়েছেন, যেমনটি আগে আরো অনেকে করেছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও পাওয়া যায় এমন নাটকীয় ডায়লগ। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটাতে চেয়েছেন। সেখানে ইউরোপীয় সাহিত্যের ধাঁচ প্রবল। লেখক একাধিক স্থানে কামুর এ্যাবসার্ডিটির কথা বলতে চেয়েছেন। শিল্পীর ছন্নছাড়া জীবনের সাথে এ্যাবসার্ডিটির ধারণাটি বোধহয় খুব সুন্দর খাপ খায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইটি তা থাকেনি। শুধুমাত্র চরিত্রের প্রয়োজনে ধারণাটি এনেছেন এমনও হতে পারে। এবারও বুঝতে পেরেছি কিনা জানিনা তবে ‘ভাল না লাগা’দের দলে যে আমি নেই সেটা স্পষ্ট।
Profile Image for Chayan Biswas.
35 reviews13 followers
August 22, 2019
বইঃ তেইশ নম্বর তৈলচিত্র
লেখকঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ
পৃষ্টাঃ ৮৫

‘যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালমন্দ মিলায়ে সকলি-তারই পূজায় বলি হবার ইচ্ছেটা শুধু শেষের কবিতার লাবণ্যের নয় এটা আকাঙ্খিত জনের কাছে নরনারী মাত্রেরই দাবী’। আর এই সত্যেই নির্মিত হয়েছে "তেইশ নম্বর তৈলচিত্রের" জাহেদ আর ছবির প্রেম আখ্যান।

"তেইশ নম্বর তৈলচিত্র" উপন্যাস সম্পর্কে কবি নিজেই বলেছেন- "তেইশ নম্বর তৈলচিত্র আমার প্রথম উপন্যাস। যে কোনো লেখক শিল্পীর প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে তার যে অনুরাগ ও দূর্বলতা এই লেখাটিও আমার হৃদয়ে তেমনি মিঠেকড়া, কাটাগুল্মময় কখনোবা স্বপ্নের মায়াবৃক্ষ"।

উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬০ পদক্ষেপ নামের একটি অনিয়মিত কাগজের ঈদসংখ্যায়। এত বছর পর উপন্যাসটির আবেদন কমেনি এতটুকু। আলাউদ্দিন আল আজাদ তার প্রথম উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিকদের কাতারে খুব সহজেই নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। "তেইশ নম্বর তৈলচিত্র" বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য সার্থক উপন্যাস।

করাচি শহরে অনুষ্ঠিত একটি আর্ট এক্সিবিশন। বিভিন্ন শিল্প সমঝদারদের পদচারণায় মুখরিত এলাকা। সেখানে সব ছবির মাঝে প্রথম স্থানে এসেছে ২৩ নম্বর এর ছবিটি। নাম তার " মাদার আর্থ " বা "বসুন্ধরা"। শিল্পী বাংলাদেশের এক তরুণ আর্টিস্ট জাহেদ। পুরোনাম জাহেদুল ইসলাম। "তেইশ নম্বর তৈলচিত্র" হচ্ছে এই ২৩ নম্বর বসুন্ধরা ছবির জন্মের পেছনের ইতিহাস। এখন পেছনের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে উপন্যাসের কথক জাহিদের মূলকাহিনীতে যে কাহিনীকে লেখক দাড় করিয়েছেন "তেইশ নম্বর তৈলচিত্র" উপন্যাস হিসেবে। তাহলে ফিরে যাই পিছনের ইতিহাসে -

কাহিনী সংক্ষেপঃ রঙ কিনতে গিয়ে জামিলের সাথে পরিচয় হয় মূখ্য চরিত্র জাহেদের । জামিল জাহেদকে নিয়ে আসে তার বাসার স্টুডিওতে । জামিলের ছোট বোন ছবির সাথেও পরিচয় হয় জাহেদের, সেই পরিচয় ধাবিত হয় পরিণয়ের দিকে । ছবির পোট্রেট করতে গিয়ে ছবির চোখে জাহেদ দেখে তার জীবন অন্বেষনের পথ। ছবির সাথে বিয়ের পর হটাৎ করেই জাহেদের কাছে উন্মোচিত হয় এক অনাকঙ্খিত সত্য? এই সত্যটি তাদের সম্পর্ককে বিপর্যয়ের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেয়? কি ছিল সেই অনাকাঙ্খিত সত্য? কিন্তু জাহেদ সে বিপর্যয় রুখে দিয়ে প্রেমকে আরো মহিমান্বিত করেছে তার শক্তিশালী শিল্পীসত্তার সহায়তায়।

কাহিনী শুনে মনে করবেন না কোনো লুতুপুতো প্রেম কাহিনী। তাদের প্রেম কাহিনী ছিল এমন- " কথক জাহেদ ছবিকে বলছে- ভালবাসি তোমায় ছবি আমি। সে কি মুখের ভাষায় বলতে হবে? সাক্ষী এই সন্ধ্যা, সাক্ষী এই নীল আকাশ, তোমার মাথার রজনীগন্ধা। তোমাকে বুকে পেয়ে আমার জীবন ধন্য হলো"। কি রকম ভালবাসতে পারলে এমন ভাবে বলা যায় পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন। ছবিও গভীর ভালবাসায় বলে, জাহেদই তার জীবনের প্রথম প্রেম এবং তার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য।

জাহেদ যখন ছবির জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত সত্য জানতে পারে তখন জাহেদ অনুভব করে দুর্ঘটনার কবলে ছবি ছিল নিতান্তই অসহায়, তাই সেটি উপেক্ষা করাই শ্রেয়। জাহেদের ভাষ্যে- "আমি সামান্য আঘাত করলেই এখন সে মুষড়ে পড়বে এবং তাতে আমার মনের ঝাল মিটবে, কিন্তু ঐটুকুই, আর কোনো লাভ নেই। অপরপক্ষে ইচ্ছে করলে আমি এখন ওকে আরো মঞ্জরিত করে তুলতে পারি, করতে পারি আরো সার্থক ও সুন্দর। তার জন্য প্রয়োজন প্রেম ও ক্ষমা"। সংকীর্ণতার বদলে মহত্ত্ব দেখিয়ে সব ঘটনাকে জাহেদ সহজভাবে গ্রহণ করে এবং ভালবেসে আবার ছবিকে আগলে ধরে। তার কাছে মনে হয়, ছবির আর তার ভালবাসাই তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য।

পাঠ-পর্যালোচনাঃ মূলত, প্রেমের উত্থান এবং প্রেমকে লালন করার তীব্র সৌন্দর্যের বর্ণনার মাধ্যমে উপন্যাসটির সূচনা ঘটে।

উপন্যাসের নায়ক জাহেদ একজন চিত্রশিল্পী । একজন শিল্পীমত্রই তার গভীর দর্শন ও জীবনবোধের সাহায্যে আবিষ্কার করতে চায় মানবীয় আবেগের স্বরূপটিকে। শিল্পী জাহেদও তার ব্যতিক্রম নয় । জাহেদ তার নিজের মধ্যে নানা কারণে সৃষ্ট টান-পোড়ন আর ছবির প্রতি দুনির্বার ভালবাসাকে যে জীবনদর্শনের সহায়তায় বিচার করেছে সেটিই মূলভিত্তি হিসেবে ধরে রেখেছে সমগ্র উপন্যাসকে । জাহেদের ভাবনাগুলো তাই তাবৎ শিল্পীসত্তার সার্বজনীন প্রতিচ্ছবি হিসেবে উঠে এসছে এ উপন্যাসে। জাহেদের নিগূঢ়ভাবে জীবন পর্যবেক্ষন করতে চেয়েছে সবসময় । যেমন-
১। ‘জীবন বারবার নিজেকে আমার কাছে অনাবৃত করেছে, এটাই আশ্চর্য……। সেখানে আসল রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিনেতা অভিনেত্রী ,কোন প্রসাধন নেই আবরণ নেই । বাইরে যাদের চেনা যায় না,সেখানে তারাই নিজ বেশে প্রতিষ্ঠিত’।
২। জীবনটা নাতিদীর্ঘ উত্তেজনা মাত্র সেনসেসন। প্রতিমুহূর্তে সেই সেনসেসন লাভ করাই প্রধান কাজ। সে যেভাবেই হোক।
৩। জীবন পদার্থটা আশ্চর্যজনক স্থিতিস্থাপক। যেকোনো অবস্থার সঙ্গে নিজকে খাপ খাইয়ে নিতে পারদর্শী। যে যতই নিষ্ঠুর হোক না কিংবা অনাত্মীয় সে খোলস ছাড়ে খোলস বদলায়- নতুন নতুন আচ্ছাদনে হয় চকচকে বিচিত্রিত। আবার চরম ভাগ্যের সময়েও হারিয়ে যায় না। মরতে মরতে বাঁচে। ধুঁকতে ধুঁকতে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সরাসরি। সে মরে না কারন বেঁচে থাকাই তার ধর্ম।
৪। দারিদ্রকে ঘৃনা করি কিন্তু অন্যের দারিদ্র্য মোচনের ক্ষমতাও নেই। এক পয়সা দু পয়সা দান করে সে অসম্ভব বটে। সমাজের কাঠামোটাকেই পাল্টে দিয়ে দারিদ্রের অবসান ঘটানোই আমার সংকল্প। সে জন্য ভিক্ষুককে ভিক্ষে কখনো দেইনে।
৫। আনন্দের সত্য কোথায় নিহিত? সেকি মাংসপ্রিয়তায় অথবা কল্পনায়? নগ্নতায় একটা আদিম পবিত্রতা আছে কিন্তু নগ্নতা যেখানে সভ্যতারই বিকৃতি সেখানে তার রুপ বিকারগ্রস্থ নয় কি?
৬। পুরুষের সংস্পর্শে না এলে নারী যেমন পূর্ন হয় না, আবার নারী সংস্পর্শহীনতায় পুরুষও থাকে অপূর্ন। গাছের মত পাশাপাশি না বাড়লে উভয়ের খর্বতা অবশ্যম্ভাবী।
এ রকম আরও অনেক কথা উপন্যাসে কথক শিল্পী জাহেদ বলেছেন যা পাঠকদের চিন্তার খোরাক জোগাবে।

জাহেদ চরিত্র একটু ব্যতিক্রম ধরনের। আর্টিস্ট বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে পরিচিত এক চিত্র। বেপরোয়া ও উগ্র জীবন যাপনে অভ্যস্ত, পরনে ছেঁড়া শার্ট, নোংরা প্যান্ট, উশকোখুসকো চুলের কোন এক মানব মূর্তি। কিন্তু জাহেদ এর ব্যতিক্রম। যেখানে তার বন্ধুমহলের মুজিব, আমেদ, রায়হান এবং মুজতবা ঠিক প্রচলিত আদর্শে দীক্ষিত, সেখানে সম্পূর্ণ আলাদা চিন্তার জাহেদ চরিত্র। লেখক এর ভাষায় " শিল্পে ও জীবনবোধে যেখানে কিম্ভুতকিমাকার হওয়াটাই যুগের দাবি ", তার মাঝে জাহেদের এহেন অবয়বের পরিণতি কী? সে কি পারবে একজন যথার্থ শিল্পী হতে ?” ।

সবকিছু ছাঁপিয়ে জাহিদ হতে পেরেছিল একজন যর্থাথ শিল্পী হতে। ভালবাসার মানুষ ছবি এর প্রতি তীব্র ভালবাসার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে জাহেদ বিখ্যাত হয়েছে। তাদের প্রেম ছিল নিঃষ্পাপ। শক্তিশালী শিল্পী সত্তার সহায়তায় সে অর্জন করেছে ভালবাসা আর অর্জন করেছে সম্মান।
সবশেষে জাহেদর বলা একটা কথা দিয়ে ইতি টানছি- " বড় প্রেম শুধু স্বার্থপর নয় উদারও বটে"।

হ্যাপি রিডিং ♥♥♥
পৃথিবী হোক বইময় ♥♥♥
Displaying 1 - 30 of 91 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.