Abdullah Abu Sayeed (Bengali: আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ; born 25 July 1939) is a Bangladeshi writer, television presenter, organizer and activist. He is currently the Chairman of Bishwa Sahitya Kendra, a non-profit organization that promotes the study of literature, reading habits and progressive ideas.
Early life:
Sayeed was born in 1939 in Calcutta. His father was Azimuddin Ahmed, a teacher of both English and Bengali literature.He was also a playwright. Sayeed passed SSC exam from Pabna Zilla School in 1955 and HSC exam from Profollo Chandra College in 1957. He later earned the degree of BA and MA in Bengali from the University of Dhaka in 1960 and 1961 respectively.
Career:
Sayeed was a professor of Bengali language in Dhaka College.In mid-1970s he started presenting Shaptabarna (Seven Colors), a multidimensional TV show in Bangladesh Television. In 1978, he founded the Bishwa Sahitya Kendra.
AWARDS:
Sayeed was given the 97th Ramon Magsaysay Award in Journalism, Literature, and Creative Communication Arts for "cultivating in the youth of Bangladesh a love for literature and its humanizing values through exposure to the great books of Bengal and the world".
Bangla Academy Award (2011) for his essays. Ekushey Padak (2005) Mahbub Ullah Trust Award (1998) National TV award (1977)
"কোনো সমাজে যখন কোনো পালাবদলের সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন তা প্রথম ধরা পড়ে সেই সমাজের অনুভূতিশীল শিল্পীদের স্পর্শকাতর হৃদয়ের এ্যানটেনায়। এর অভিঘাতে তাদের চেতনাজগতের কাঁটা কেবলই নড়ে উঠতে থাকে। তাঁরাই ঐ পরিবর্তনের আঁচ অনুভব করেন সবচেয়ে আগে, ঐ ব্যাপারে সজাগ হন। এইজন্যে শেলী কবিদের নাম দিয়েছিলেন দ্রষ্টা। এঁরা সেই মানুষ যাঁরা মানুষের পৃথিবীর আবহাওয়ার যে-কোনো পরিবর্তনকে অন্য যে-কোনো মানুষের চেয়ে আগাম টের পান; যখন অন্যেরা সুখের ঘুমে আচ্ছন্ন তখন সকালবেলার ঘুমভাঙা পাখির মতো গান গেয়ে নতুন দিনের খবরটি তাদের কানে পৌঁছে দেন"।
ষাটের দশকের কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের স্মৃতিচারণা । সেটা কেমন হতে পারে, না পড়লেও মনে হয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন , যারা নানান সূত্রে সায়ীদ স্যার সম্পর্কে কিছুটা অবগত।
বাড়তি পাওনা ওই সময়ের সেরা কবিদের অসামান্য কবিতার উল্লেখ ।
কবি - সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথা পড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ভালোবাসার সাম্পান বইখানা মূলত ষাট - সত্তরের দশকের কবি - সাহিত্যিকদের নিয়ে লেখকের স্মৃতিকথার সংকলন। সেই সময়ের বিভিন্ন সাহিত্যিকদের সাথে লেখকের প্রাসঙ্গিক স্মৃতিকথা বইয়ের পাতায় পাতায় উঠে এলেও বইয়ের সিংহভাগ অংশ জুড়ে ছিলো লেখকের সম্পাদনায় টানা দশ বছর ধরে প্রকাশিত লিটল ম্যাগ্যাজিন কন্ঠস্বর নিয়ে স্মৃতিচারন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের আপন আপন ভংগীতে লেখার ধরনটা বেশ ভালো লাগে। ৩১৫ পৃষ্ঠার এই বইখানা পড়ে বেশ আরাম পেয়েছি তাই।
কবি সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথা পড়লে একটু অবাক হই। সে পঞ্চাশ ষাট সত্তর বছর আগের চিঠি চালাচালির যুগেও তাঁরা কী পরিমাণ যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারতেন! আরও দেখি পরিচিত পরিচিত নামগুলো সরব মুখ হয়ে একই বা কাছে পিঠের আড্ডায় সদস্য ছিলো। আমার মনে যদিও খানিক সন্দেহ যে, বড় বড় কবি সাহিত্যিকরা আসলেই ওরকম কানেক্টেড ছিলেন নাকি স্রেফ পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া নামগুলোই আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা লিখতে বসলে মনে আসে। ওরকম বিখ্যাত না হলে আমার এ সন্দেহের অবসান ঘটবে না, আর সে আশা বাতুলতা। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মলয় রায়চৌধুরীদের হাংরি জেনারেশনের দেখাদেখি ষাটের পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম নিয়েছিলো স্যাড জেনারেশন। এই স্যাড জেনারেশনের আবির্ভাব ষাটের দশকে। আইয়ুবের সাঁড়াশি শাসন, মুরুব্বিদের দ্বিমুখীচারিতা দেখতে দেখতে এদের জন্ম। আজ এই দু হাজার আঠারো সালের শেষে যখন বাংলাদেশের বড় বড় সাহিত্যিকদের নামের দিকে তাকাই, বাংলা সাহিত্যকে যারা ঋগ্ধ করেছে সেই তালিকার দিকে যখন তাকাই, দেখতে পাই ষাটের অনেকগুলো নাম --- রফিক আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হুমায়ুন কবির, আবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণ। সেই খ্যাপা তরুণদের অন্যতম আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর ‘ভালোবাসার সাম্পানে’ তুলেছেন ষাটের সেই তরুণদের কথা, তাঁদের সাহিত্যচিন্তা, মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া জীবনের কথা। আর অবশ্যই লিটলম্যাগ ‘কণ্ঠস্বর’ এর কথা। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বেশ কয়েকটি স্মৃতিকথা লিখেছেন, সব কয়টাই বিষয় ভিত্তিক। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নিয়ে, শিক্ষক জীবন নিয়ে, ষাটের সাহিত্যিকদের নিয়ে। মুশকিল হলো বিষয়ের বাইরে কিছুই বলেন না তিনি। ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ পড়েছি, সেখানে কণ্ঠস্বরের কথা একবার কী দুবার এসেছে মনে করতে পারছি না। এটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য নাকি দুর্বলতা ঠিক করতে পারছি না। বোহেমিয়ান ছন্নছাড়া রফিক আজাদ, লেখায় পারিপাটি আবদুল মান্নান সৈয়দ, স্বপ্নবাজ আবুল হাসান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, কণ্ঠস্বর সম্পাদক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদদের কথা এসেছে, সবচেয়ে বেশী এসেছে ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকাটির কথা। কেননা এই শিল্পীরা একসময় পরিচিতই ছিলেন কণ্ঠস্বরগোষ্ঠী হিসেবে। একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করে যাওয়ার কাজটা যে কতটা দুরূহ কাজগুলোর একটি, আর এর পেছনে ব্যয়িত যে কত প্রকার অর্থ ও শ্রম, অনাকাঙ্খিত দূর্যোগ সবই ফুটিয়েন তুলেছেন স্বভাবসুলভ গোছানো ভঙ্গিতে। স্রেফ সহযাত্রীদের প্রথম যৌবনের পদযাত্রার ধ্বনিই নয়, বিদায়ের সুরও তুলে রেখেছেন। তবে বইটি প্রকাশ হবার পর নিবে গেছে আরও কয়েকটি দেউটি। কণ্ঠস্বরগোষ্ঠী হিসেবে পরিগণিত হন না এমন অনেকের কথাই এসেছে অবধারিত ভাবে। চুপচাপ কেবল পড়ে গেছি। আর মনে মনে উত্তর খুঁজে গেছি সে প্রশ্নের যেটা জেগে আছে মনে বেশ কয়েকদিন ধরেই, আমাদের দশকের চাহিদা মেটাবে কারা? সময়ের চাহিদা মেটাতে সময়ই এগিয়ে নিয়ে আসবে কাউকে কাউকে, সে জানি । কিন্তু সমবয়সীদের বিশাল ভীড়ে মাথা উঁচিয়ে আগ বাড়িয়ে দেখতে চাচ্ছি তাদের।
চায়ের দোকানে ওরা কারা বসে আছে? -ওরা বসে আছে শাসসুর হাফিজুর। ওরা বলো দেখি ঠিক কোন দশকের? -ওরা পঞ্চাশ, ওরা সব পঞ্চাশ। চায়ের দোকানে ওরা কারা আড্ডায়? -ওরা বসে আছে সিকদার অরুণাভ। গল্প করছে ওরা কোন দশকের? -চেনো না ওদের? ওরা ষাট দশকের। চায়ের দোকাকে আড্ডা দিচ্ছে কারা? -ঐ বসে আছে আবিদ শিহাব ও যে। ওদের দশক জানা আছে তোমাদের ? -কেন জানবো না, ওরা সব সত্তর। চায়ের দোকানে আড্ডা পেটায় কারা? -কাজল রিফাত বসে আছে ওরা ঐ। ওদের সময় কোন্ কালে চিহ্নিত? -আশির দশকে বেরিয়ে এসেছে ওরা। চায়ের দোকানে ঐ যে ওখানে কারা? -তপন অরুণ আড্ডা মারছে খুব। ওদের বলবে ঠিক কোন্ দশকের? -ওরা নব্বই, ওরা সব নব্বই।
অমিত ছন্দে মনটা নেচে উঠে একটা ভালো বই পড়লে। ভাষায়, সুরে সুললিত হয়ে গদ্যও হতে পারে কবিতা। আর সেইরকম কোন লেখার ফাঁকে ফাঁকে সত্যিকার কবিতা গুঁজে দেয়া থাকলে আর কি লাগে? বইটা লিখিত হয়েছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জবানিতে, তাঁর স্মৃতিকথা 'কণ্ঠস্বর' পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালীন সময়ের। কলকাতার অনেক বিখ্যাত লেখকদের এই ধরনের বই পড়ার সৌভাগ্য খানিক হয়েছে। যেমন, সাগরময় ঘোষের 'সম্পাদকের বৈঠকে', কিংবা বুদ্ধদেব বসু-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মজৈবনিক লেখাগুলোতে তাঁদের সম্পাদক-জীবনের সরস গল্প উঠে এসেছে। কিন্তু আমাদের ষাট-সত্তরের দশকের কবি-লেখকদের নিয়ে সায়ীদ স্যারের লেখা যে এমন চমৎকার বই সেটা আমার একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। পড়ে অনেক দিনের বন্ধ একটা জানালা যেন খুলে গেল। 'কণ্ঠস্বর' এর জীবনী যেন আকণ্ঠ ডুবিয়ে রেখেছিল আমায়। এমনিতেই সায়ীদ স্যারের লেখা আমার খুব পছন্দের, তাঁর লেখা প্রবন্ধগুলোও একটানে পড়ে ফেলা যায়। আর এটা তে ছিল নানান কিছু, নানান অভিজ্ঞতা, দুঃখের স্মৃতির সাথে সাথে একগাদা সোনার কবিতা। আবদুল মান্নান সৈয়দ, নির্মলেন্দু গুণ, হূমায়ুন কবীর, আবুল হাসান, আবুল কাসেম ফজলুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তো আছেনই, শেষে মুখ দেখিয়ে গেলেন ফরহাদ মাজহার, আবিদ আজাদ, দাউদ হায়দার ইত্যাদি অনেকেই। সায়��দ স্যারের সাইকেল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটা করে বিজ্ঞাপনের পেছনে ছুটে বেড়ানো, সকলের মধুর অত্যাচার হাসিমুখে সহ্য করা দেখে বোঝাই গেছে পত্রিকার পেছনে সবচাইতে বেশি নিবেদিত ছিলেন সায়ীদ স্যার নিজেই। পড়তে পড়তে দু একবার কয়েকটা মতামত যে ভালো লাগেনি তা নয়। বিশেষত সমকামিতা নিয়ে স্যারের ভাবনাটা ভালো লাগেনি। কিন্তু বইটা যেন একটা আলোর দুয়ার খুলে দিয়েছিল। একরাশ সূর্যরশ্মি এসে ঘরে ঢুকে পড়ল বইখানা দিয়ে। আমাদের দেশের অমিত প্রতিভাবান অনেক কবি-সাহিত্যিকদের শুরুর দিকে প্ল্যাটফর্ম করে দেয়া 'কণ্ঠস্বর' পত্রিকা এবং তার সম্পাদকের কাহিনী তাই পড়ে বিমুগ্ধই হলাম।
বই: ভালোবাসার সাম্পান লেখক: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ধরন: সাহিত্যিক, শিল্প ও সংগীত ব্যক্তিত্ব, স্মৃতিকথা প্রকাশক: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ মূল্য: ৫৭৫ টাকা।
১.
“রাজপ্রাসাদের ভোগলিপ্সা ছেড়ে পুরো সাধুসন্ত বনে যাওয়া, যেমন রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি কবি বনে যাওয়া - আমার ধারনা মোটামুটি তেমনি। জাহিদুল হক তাই করেছিল। ও ছিল ফেনীর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। সব ছেড়েছুড়ে হয়ে গেল পুরোদস্তুর কবি।
খুব সম্ভবত ১৯৮২-৮৩-র দিকের একটা দিনের কথা মনে পড়ে। শেরাটন হোটেলে একবার জাহিদকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ খানের সাথে। হাবিবুল্লাহ খান একে মন্ত্রী, তায় ছ-ফুট দীর্ঘ, বলিষ্ঠ, সুদর্শন মানুষ। জাহিদ দেখতে মিষ্টি, কিন্তু তার তুলনায় ছোটখাটো। দুজনে দাড়িয়ে আছে মুখোমুখি। আমি জাহিদকে হাবিবুল্লাহ খানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম: ইনি হাবিবুল্লাহ খান, শিল্পমন্ত্রী। হাবিবুল্লাহ খানের হাত চেয়ে ধরে মাথা পেছন দিকে কাত করে জাহিদ বলল: "আই অ্যাম জাহিদুল হক, দ্য পোয়েট।"
*** *** ***
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর "ভালোবাসার সাম্পান" এমন সব টুকরো টুকরো গল্প, ষাট-সত্তরের দশকের খ্যাপাটে সব কবি সাহিত্যিকের কথা, তাদের ক্রমশ বড় বড় সাহিত্যিক হয়ে ওঠার মানচিত্র। সাথে আছে অবশ্যই লিটলম্যাগ‘কণ্ঠস্বর’ নিয়ে বিস্তারিত গল্প। ভালোবাসার সাম্পান শূরুই সেই "কণ্ঠস্বর" নিয়ে।
২.
কবি-সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথা মানেই সেই পথ ধরে উঠে আসে অন্যসব কবি-সাহিত্যিকদের গল্প। "ভালোবাসার সাম্পান"ও এর ব্যতিক্রম না। আব্দুল মান্নান সৈয়দ এর 'সবুজ প্রিজমের" মেটাফোরিক্যাল উপস্থাপনের মতোই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের "ভালোবাসার সাম্পান"। পড়তে খুব জটিল বা রূপকের আশ্রয়ের কিছু না বরং সহজ, সরল ও বোধগম্য ভাষার এক বই। একটা দুর্দান্ত স্মৃতিচারন। ঠিক প্রিজমের মতোই যা কিনা আপনাকে প্রতি পৃষ্ঠার পরতে পরতে দেবে হরেক রকম আলো।
বিষয় ভিত্তিক স্মৃতিচারণা মোটাদাগে ধরা যায় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বৈশিষ্ঠ্য। "ভালোবাসার সাম্পান" ও তাই। পুরো বইয়ে তার স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে মূলত সেই সময়ের কবি-সাহিত্যিকদের কথা, কন্ঠস্বর লিটলম্যাগ পত্রিকার পেছনে নানা রকম সুখ-দুঃখ, স্ট্রাগলের গল্প। আছে অনেক সাহিত্যেকের টুকরো টুকরো মজার কাহিনি। শুরুতে যেমন আছে বড় বড় কবি সাহিত্যিকদের তারুণ্যের কথা,তাদের মুখরিত কন্ঠস্বরে কথা - তেমনি শেষটায় তাদের অনেকের কন্ঠস্বর মিলিয়ে যাবারও কথা উঠে এসেছে বইয়ে। এই বিদায়গুলো একটা আলোকিত বইয়ের মাঝে কিছুটা বিষাদগ্রস্থও আবহ লেপ্টে দিয়েছে।
উদীয়মান তরুণ কবি, হুল্লোড়বাজ, আর উদাসীন কবি-সাহিত্যিকদের জানা-অজানা গল্পগুলো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে "ভালোবাসার সাম্পানে"। এই স্মৃতিচারণ পড়লে মনে হবে কোন সাহিত্যিকের বয়ানে না, বরং অসামান্য হৃদয়বান একজন মানুষ কন্ঠস্বরে বলা হচ্ছে কথাগুলো। একি সাথে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার তৎকালীন সামাজিক পরিবর্তনের দিকেও আলোকপাত করেছেন প্রচ্ছন্নভাবে।
তিরিশ বা চল্লিশের দশকের সাহিত্যের প্রতি একটা প্রচন্ড ভালোলাগা থাকলেও পরবর্তীতে পঞ্চাশের শেষ দিকে বা ষাটের শুরুতে তখনকার কবি সাহিত্যিকদের পাশ্চাত্য সাহিত্যের অবক্ষয়ী মূল্যবোধে নিমগ্ন হওয়ার গল্প বা লিখিত দলিল ভালোবাসার সাম্পান। সেই সময়ের সকল তরুন কবি ও গল্পকার এবং প্রাবন্ধিকদের নতুন ভাবনার স্বাক্ষর এই বই। তাদের যাত্রার গল্প। এখনকার মূল লেখক হয়ে ওঠার নানা অলি-গলির বর্ননা। যার কান্ডারী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আবদুল মান্নান সৈয়দ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, রফিক আজাদ থেকে শুরু করে আবদুল হাফিজ, আবুল কাসেম ফজলুল হক, আসাদ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, দাউদ হায়দার, ইকবাল আজিজ, শিহাব সরকার, জাহিদুল হক, অসীম সাহা, রবীন সমাদ্দার, সনৎকুমার সাহা আরো অজস্র বিখ্যাত নাম - তাদের তারুন্য, তাদের সাহিত্যের গলিতে বেড়ে ওঠা, রূপান্তর, মৃত্যু এবং সকলের কণ্ঠস্বরগোষ্ঠী হয়ে চলার গল্পগুলো বলে গেছে "ভালোবাসার সাম্পান"।
৩.
ষাটের দশকের তরুন লেখক, কবিদের সাহিত্যযাত্রা এবং "কন্ঠস্বর" লিটলম্যাগ একি সূত্রে গাঁথা। যার পিছনে সবচেয়ে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন লেখক নিজে। একটা পত্রিকা সৃষ্টি, তার বেড়ে ওঠা, বিজ্ঞাপনের পিছনে ছুঁটে চলা অক্লান্তভাবে, দুরূহ কাজগুলো হাসিমুখে করে গেছেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার।
"নিজেদের চিহ্নিত করতে নিজেদের আলাদা জামা বানিয়ে নিতে হবে আমাদের। সে জন্যে চাই আলাদা আলাদ পত্রিকা।" এবং এর হাত ধরেই শুরু বক্তব্য, কন্ঠস্বর, এবং আরো বেশ কিছু নাম। প্রথমে কবিতা পত্রিকার নাম হিসেবে ঠিক ছিল "কন্ঠস্বর"। সাথে প্রবন্ধ ও গল্প পত্রিকার জন্যেও আলাদা আলাদা নাম বরাদ্দ ছিল।
কন্ঠস্বর বের হয় ১৯৬৫ সনে। তবে তরুন লেখকদের না পেয়ে কালবেলা পড়ে যায় বিপাকে। কালবেলায় ছিল সেবাব্রত চৌধুরী, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, হায়াৎ মাহমুদ, হুমায়ূন চৌধুরী এবং আরো অনেকে। সেখানে কন্ঠস্বরে ছিল অশোক সৈয়দ(আবদুল মান্নান সৈয়দ), আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, রফিক আজাদ থেকে শুরু করে নির্মলেন্দু গুণ(আরো অনেক পরে যোগ দেয়), আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, আবদুল হাফিজ, আবুল কাসেম ফজলুল হক, আসাদ চৌধুরী।
কন্ঠস্বর এর ৪টা সংখ্যা বের হয়ে যাবার পরে যোগ দেন নির্মলেন্দু গুন। তার পরে ৬৭ এর দিকে স্রোতের মতো আসতে থাকে সবাই। কন্ঠস্বর যেন এক মোহনা। সব নদী যেমন মোহনায় এসে মিশে। হুমায়ূন কবির আর আবুল হাসান এলো বরিশাল থেকে, টাঙ্গাইল থেকে এলো সাযযাদ কাদির, নোয়াখালি থেকে ফরহাদ মজহার, মহাদেব সাহা রাজাশাহী থেকে, কক্সবাজার থেকে মুহম্মদ নূরুল হুদা.এমন আরো অনেকে যোগ দেন।
শুরুতে একদম সাথে ছিল আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (সম্পাদক), আবদুল মান্নান সৈয়দ, রফিক আজাদ, সিকদার আমিনুল হক, ইউসুফ পাশা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং আরো অনেকে। এরা সকলেই তখন কেউ ঢাকা কলেজের, কেউ বিশ্বাবদ্যালয়ের, কেউ জগন্নাথ এর ছাত্র। একমাত্র বড় ছিলো ২য় কি তয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
ষাটের দশকে সেই সাহিত্য আন্দোলন, তার প্রকাশ, বিকাশ এবং বিস্তার - আপনাকে একটা সাহিত্যের পালাবদলের মানচিত্র চোখের সামনে এনে দিবে।। আমাদের যে মূল ধারার লেখক, কবি এবং সাহিত্যিক- তাদের শক্তিমার লেখক হিসেবে বেড়ে ওঠা, তারে প্রকাশ এবং সাহিত্যের যে পালাবদল- কণ্ঠস্বরের হাত ধরে।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এঁকে দেন প্রচ্ছদ। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী কোনপ্রকার সম্মানী নেননি এর জন্যে। এই নিয়েও মজার সব স্মৃতিচারণ পাবেন "ভালোবাসার সাম্পান" বইয়ে।
৪.
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের লেখা সুখপাঠ্য। তার গদ্যেও আলাদা রকমের একটা সুরেলা টোন থাকে। তরতর করে পড়ে ফেলা যায় ক্লান্তিহীনভাবে। সামগ্রিক দিক হতে বিচার করলে "ভালোবাসার সাম্পান" বইয়ের স্মৃতিচানণগুলো একদিকে যেমন সহজ-সরল, অন্যদিকে গভীর ও ব্যাপক। যে "কন্ঠস্বর" সেই সময়ে এবং তার পরবর্তী সময়েও সাহিত্যের নতুন ধারা ও উৎকর্ষের উচ্চতর একটা জায়গা তৈরী করেছে - সেই সব গল্প আমাদের অনেকেরই অজানা। এবং জানা জরুরী। বোঝা জরুরী। তার থেকে বেশি জরুরী আত্মস্থ করা।
“ভালোবাসার সাম্পান” একজন সৃষ্টিশীল মানুষের সহজ কথাগুলোই বলা হয়তো, ত��ে পাঠক খুব সহজেই টের পাবেন তার অসাধারণত্বের রূপ।"ভালোবাসার সাম্পনা" আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের এক অলৌকিক জলযান পাঠকের জন্যে।