Ahmed Sofa (Bangla: আহমদ ছফা) was a well-known Bangladeshi philosopher, poet, novelist, writer, critic, translator. Sofa was renowned for his intellectual righteousness as well as his holistic approach to the understanding of social dynamics and international politics. His career as a writer began in the 1960s. He never married. On 28 July 2001, Ahmed Sofa died in a hospital in Dhaka. He was buried in Martyred Intellectuals' Graveyard.
Sofa helped establishing Bangladesh Lekhak Shibir (Bangladesh Writers' Camp) in 1970 to organize liberal writers in order to further the cause of the progressive movement.
Ahmed Sofa's outspoken personality and bold self-expression brought him into the limelight. He was never seen hankering after fame in a trivial sense. His fictions were often based on his personal experience. He protested social injustice and tried to portray the hopes and dreams of common people through his writing. Sofa always handled his novels with meticulous thought and planning. The trend of telling mere stories in novels never attracted him; he was innovative in both form and content.
পড়ছিলাম, ভাবছিলাম আর হো হো করে হাসছিলাম! আহমদ ছফা কি যে একখান লিখে গেছেন! 😂 বই না বারুদ!
বি.দ্র. ভিসি বেচারা যেই গ্যাঁড়াকলে পড়েছিলেন, এরপর থেকে যখনই শুনি কোন ইউনিভার্সিটিতে ভিসি বিরোধী আন্দোলন চলছে আমার এই ভদ্রলোকটির কথা মনে পড়ে যায় আর আমি হেসে ফেলি। আহারে বেচারারা! 😛
অতি সুখাদ্য। অনেকদিন পর অন্যরকম টেস্ট পেলাম। এটি যদিও হাস্য-রসাত্মক আবহে রচিত। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করলে বলতেই হয় যে,লেখক এই উপন্যাসের মাধ্যমে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন,বাঙালি জাতির সকল সংগ্রাম ও গৌরবের লীলাভূমিটি কিভাবে দুর্নীতি ও বিপথগামী রাজনীতির কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে। তাছাড়া আমার ধারণা,লেখক এ কালজয়ী উপন্যাসের মাধ্যমে সাবধান করেছেন,জাতির মেরুদণ্ড ও জাতির ভবিষ্যৎ-উভয়েরই এক বিশাল অংশ যেভাবে ভ্রষ্ট পথে এগিয়ে চলেছেন,তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। প্রচলিত ধারার কাহিনী হতে সরে এসে ব্যতিক্রমধর্মী অথচ বাস্তববাদী উপন্যাস রচনার একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন হল এই উপন্যাসিকাটি।
প্রধান চরিত্র মিয়া মুহম্মদ আবু জুনায়েদ। যিনি কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক হতে ঘটনাচক্রে উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন অনেকটা আশাতীত ভাবেই। ব্যক্তিগত ভাবে অতি নির্ভেজাল ও সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত আবু জুনায়েদ সাহেবের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান হওয়ার জন্য যে দৃঢ় মানসিকতা ও নেতৃত্বগুণ প্রয়োজন তা কখনোই ছিল না। এমনকি কারো সাতে-পাঁচে না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল রাজত্বে তাঁর কোনই শত্রু-মিত্র ছিল না।
গল্পের আরেকটি অন্যতম প্রধান চরিত্র,আবু জুনায়েদ সাহেবের স্ত্রী নুরুন্নাহার বানু। যিনি নিজেও স্বামীর আকস্মিক অভাবিত এই পদন্নোতিতে অনেকটা আকাশ হতে পড়েন। দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিক অনেক অনটন ও কষ্টে যাপন করে এই পর্যায়ে এসে হঠাৎ-ই এমন সম্মান ও প্রাচু্র্য্যের জীবন পাওয়া সত্ত্বেও নুরুন্নাহার বানু তার দৃষ্টিকটু অমার্জিত আচরণগুলো পরিত্যাগ করতে অসমর্থিত হন। পাড়া-মহল্লার ঝগড়াটে মহিলাদের ন্যায় দজ্জাল স্বভাব ও স্বামীকে নিজের ইচ্ছাধীন ভাবে আদেশ-নিষেধের ঘেরাটোপে রেখে নিজে মিথ্যা প্রভুত্বের অর্থহীন আনন্দ লাভ করা নুরুন্নাহার বানুর চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনযুদ্ধের নামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কতটা সর্বাঙ্গীন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে,তা সাধারণ পাঠকের ধারণা জগতে আশ্রয় লাভ করে এই উপন্যাসের সার্থক ভাবে অঙ্গিত বিভিন্ন পার্শ্ব-চরিত্রের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতি ও নিজেদের নানা সুযোগ-সুবিধা লাভের নামে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে কিভাবে শিক্ষার মূল কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত বিঘ্ন ঘটিয়ে চলেছেন,তা গল্পের প্রতিটি অধ্যায়ে লেখক ব্যঙ্গ-রসাত্মক ঘটনাবলীর ছলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন।
সর্বশেষ কথা বন্ধু জেরিনের মতো। পারলে সত্যিই একটা না একটা অ্যাওয়ার্ড লেখককে দিয়ে দিতাম।
কখনো কখনো একটি বইই যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায় লেখক কে অমরতা প্রদান করতে। এটি সেরকম একটি বই। আহমেদ ছফা যদিও বইটি লিখেছেন ১৯৯৪-৯৫ সালে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে বইটি আগামী দিন গুলোতেও একই ভাবে প্রাসঙ্গিক থাকবে। এবইটি যদিও এপার বঙ্গে তেমন পঠীত নয় কিন্তু বইটি পড়লে এটাই মনে হয় যে শুধু ঢাকা নয়, এটা যাদবপুর, কলকাতা ও আর সব ইউনিভার্সিটির সাধারন 'গোপন দলিল'। শুধু 'গাভী-বৃতান্ত' থেকে 'গাভী' টা বাদ রাখলে এটাই এখন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নিযুক্তির অন্তর্বতী বৃতান্ত। শিক্ষকরাও 'শিক্ষা'র অংশটুকু বাদ রেখে বাদানুবাদে বেশী আগ্রহী। ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী লাভ করতে গিয়ে এত নোংরামো দেখছি যে এখন ইতর জন ও ভদ্র জনের ফারাক করতে গেলে ক্যালকুলেটর এ হিসেব কষতে হয়। শিক্ষিত লোকের নোংরামো-ইতরামো বড় বেশী মর্মদায়ক। পরিশেষে জানাই, এ বইতে আমি একমাত্র দুঃখ বোধ করেছি গাভীটির কথা ভেবে। বেচারী। বাকীদের গো-চোনা, গোময়, গো-দুগ্ধ ইত্যাদি পঞ্চগব্য খাওয়ালেও তাদের অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব, উহারা উচ্ছন্নে যাউক।
"বটবৃক্ষের তলে গেলাম ছায়া পাইবার আশে পত্র ছেদি রৌদ্র পড়ে আমার আপন কর্মদোষে নদীর ধারে বইস্যা রইলাম নৌকা পাইবার আশে আমারে দেখিয়া নৌকা দূরে দূরে ভাসে।"
🔸🔸🔸
আহমদ ছফার বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধ আমাকে বরাবরই আকর্ষণ করে। এবারেও ব্যতিক্রম না। এত ঝরঝরে জলের মতো ভাষায় কীভাবে যে অভ্যন্তরীণ বিষয় তুলে ধরেন, শৈল্পিক রচনা অবশ্যই।
রূপক এই উপন্যাসের চুম্বক অংশটিই হলো গাভিটি। হো হো করে হাসতে হাসতে কীভাবে যেন কান্নায় পরিণত হয়ে গেল হাসিটা শেষে... কী নিখুঁত! কী নিখুঁত লেখা।
বইটি এত আগের বলে মনেই হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে যে বিতর্ক, তাতে মনে হয় এই উপন্যাস চিরন্তন উপন্যাস।
অবশেষে ২০২১ সালের প্রথম বই হিসেবে শেষ করলাম আহমদ ছফার বিখ্যাত স্যাটায়ারিকের উপন্যাস, গাভী বিত্তান্ত। এডমিশন সিজন চলছে, এই একটা বই পড়েই বোধ হয় সন্তুষ্ট থাকতে হবে!
গাভী বিত্তান্ত বইটার অনেক প্রশংসা শুনেছি আগে। তবে, সেসব প্রশংসা দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই বইটা শুরু করি। আমি ক্ষুদ্র পাঠক, জীবনে মোটে ক’খানা বই পড়েছি; সেই কারণেই হয়, শুরুর দিকে আহমদ ছফার লেখনীর ধাঁচ খুব একটা আহামরি কিছু মনে হয় নি। মনে হয়েছে, এসব তো ফেসবুকীয় লেখকের লেখনী!
পরে আস্তে আস্তে যখন তাঁর লেখার ন্যরেটিভটার সাথে খাপ খাওয়াতে শুরু করলাম, তখন আস্তে আস্তে মজাটা পাওয়া শুরু করলাম। লেখকের satirical punch-lineগুলো যত ধরতে পারছিলাম, ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। সত্যিই স্বীকার করতে হয়, এমন বই আগে পড়িনি। বইয়ের কাহিনী গড়ায়, একজন শান্তশিষ্ট গড়পড়তা শিক্ষকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়াকে কেন্দ্র করে। উপাচার্য সাহেব একটি গাভী পুষতে চান, সেই থেকেই বইটির নামকরণ। তাঁকে গাভী ক্রয় করাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসঙ্গতিপূর্ণ সংস্কৃতিকে লেখক যেভাবে দুই মলাটের ভেতর বন্দি করেছেন, সেটা সত্যিই দুষ্কর! অবশ্য একদম সবই যে একদম তাঁর লেখায় চলে এসেছে, ব্যপারটা এমন নয়। কিন্তু এমন ভঙ্গিতে তিনি সবকিছু উপস্থাপন করেছেন; যা বইটাকে বাংলা সাহিত্যের আর দশটা বই থেকে আলাদা করবে! বর্তমানের সার্টিফিকেটধারী মুর্খসমাজের মানুষের বিভিন্ন আচরণ যদি ব্যাখ্যা করে যদি একটা রিসার্চ পেপার বের হয়, তাহলে এই বই থেকে বিভিন্ন রেফারেন্স নেয়া যেতেই পারে!
বইটার রচনাভঙ্গি বেশ সাবলীল এবং সুখপাঠ্য। তবে, উপন্যাসের অনেক গুণই হয়ত এখানে অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত করবেন অনেকেই। তবে আমার মনে হয়, সংজ্ঞানুসারে সার্থক উপন্যাস হোক বা না হোক, আহমদ ছফা যে উদ্দেশ্যে বইটি লিখেছেন, যা বোঝাতে চেয়ে��েন, পাঠকেরা তা ধরতে পেরেছে!
বইটা আমি অডিওবুক শুনেছি। তাই বানান বা অন্য কোনো গুণ সম্পর্কে আলোচনা করা গেল না। বইটার ন্যারেটিভটা আসলে অডিওবুক শোনার জন্য উপযুক্ত! তাই, কাগজের বইয়ের চেয়ে অডিওবুকের বইটার মাহাত্ম্য খুব একটা কমে নি!
আরেকটা কথা না বললেই নয়! বইটা শেষ করে আমি কিছু মানুষের রিভিউ পড়ছিলাম। অনেকেই বলেছেন, আহমদ ছফা এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অসঙ্গতি নিয়ে ব্যাঙ্গ করে দারুণ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন! আমার তা মনে হয় না! বইটা লেখার পেছনে সাহস যতটা দায়ী, তার থেকে বেশী দায়ী আমার মনে হয় আহমদ ছফার দৃষ্টিভঙ্গি। বর্তমান সমাজে যেসব টপিক নিয়ে কথাই বলা যায় না, ’ধর্ম, নাস্তিকতা, ছাত্র রাজনীতি’ এইসব বিষয়ে উনার বর্ণনাভঙ্গিটা একটু লক্ষ্য করলেই সেটা টের পাবেন। তিনি চাইলেই একজন নাস্তিককে উগ্রবাদী বা অতি ভালো মানুষ, কিংবা একজন ইসলামী লেবাসধারীকে উগ্রবাদী, বা অতি ভালোমানুষ – এরকম পরিচয় দিতে পারতেন, পক্ষপাতিত্ব করতে পারতেন, এবং এতে দোষের কিছু ছিল না, যেহেতু এটা ফিকশন। তিনি কিন্তু সেটা করেন নি। ইভেন, একটা ভুল মানুষের ভুল মতবাদকেও তিনি সেই ভুল মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যঙ্গ করেছেন। সঠিকটা কি, সেটা আর বলেন নি। সেটা পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এই ধরণের মানসিকতার কারণেই আহমদ ছফা আমার প্রিয় লেখকদের তালিকায় জায়গা করে নিলেন।
হা হা হা! এটাকে আমি উপন্যাস মানতে নারাজ। ইহা একখানা খাসা ডকুহিস্টোরি অব প্রাচ্য গব্যরথবিশ্ববিদ্যালয় অব 'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশ' (ড. আজিম গুরুচন্ডালী দোষ ধরে দিবেন, প্লিজ) নাহ! ব্যাপারটা বেশি কঠোর আর জেনারেলাইজড হয়ে গেলো। বরং বলা যেতে পারে, ইহা গণবিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির স্মারক।
এক কথায় মাস্টারপিস। স্যাট্যায়ার টি আহমেদ ছফা এত দারুন ভাবে লিখেছেন যেন কোনো শিল্পীর চিত্রকর্ম। প্রতিটা এঙ্গেল থেকে যে রি প্রেজেন্টস করছে গভীরতম কোনো বিষয়!
অসাধারন সারকাজম, স্যাটায়ার। আহমেদ ছফা আমার খুবই অপ্রিয় লেখক!!!টাশকি খাবার দরকার নাই ওনার একটা বইয়ের ১০পেজের মত পড়েছিলাম যখন ক্লাস ৫-৬ এ পড়ি, সেইসময়ে অপছন্দ করাটা খুবই স্বাভাবিক । অসম্ভব শক্তিমান লেখক, এবং বাস্তব ঘটনাগুলোকে যেভাবে তুলে ধরছেন সেটা অসাধারন।
এর আগে আমহেদ ছফার 'অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী' -- এই বইটা আমি কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম, আমার কাছে বইটা খুবই ভাল লেগেছিল। অনেক সুন্দর একটা বই। আহমেদ ছফার লেখা ২য় কোন বই গতকাল শেষ করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য উপাচার্য্য পদে নিযুক্ত আবু জুনায়েদের জীবন কাহিনী নিয়ে মূলত বইটা। গোবেচারা টাইপ একটা মানুষ কিভাবে সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে উঠে এবং তাকে ঘিরে থাকা মানুষদের কার্যক্রম বইটাতে উঠে আসে। বৃহৎ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে জুনায়েদ সাহেব নানাবিধ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এর কোনটা ছিল পরম আনন্দের, আবার কোনটা ছিল বিষাদের। ছোত বয়স থেকে তার একটা গাভী লালনপালনের যে ইচ্ছে ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজাদার এবং মিয়া মুহাম্মদ আবু জুনায়েদের স্ত্রীর পূর্বপরিচিত তবারক আলী পূরণ করে দেওয়ার পরে এই উপন্যাসে নতুন মাত্রা যোগ পায়। এদিকে জুনায়েদ সাহেবের স্ত্রী গাভীটাকে মনে করতে থাকেন তার 'সতীন' বা 'শত্রু' । তিনি ষড়যন্ত্র করতে থাকেন, কিভাবে গাভীটাকে হত্যা করা যায়। অবশেষে বিষ খাইয়ে যখন গাভীটাকে হত্যা করা হলো, জুনায়েদ সাহেব বাকরোধ হয়ে পরেন। কিন্তু একই সময়ে উনি আমেরিকায় বক্তৃতা দেয়ার জন্যে দারুণ একটা অফার পান এবং স্ত্রীকে তা বলতে গেলে তার স্ত্রী সরল স্বীকারোত্তিতে বলে দেয়, সেইই খুন করে গাভীটাকে, উপন্যাসের শেষে ঠিক কি হলো, তা আমার কাছে অস্পষ্ট। লেখক আসলে পাঠকদের কি বুঝাতে চেয়েছেন, শেষে এসে তা বোধগম্য হয় নাই ... কিন্তু তবুও সব মিলিয়ে বইটা পড়তে মন্দ লাগে নাই।
This entire review has been hidden because of spoilers.
স্যাটায়ার এর আড়ালে লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থকর প্রতিযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। বর্তমান সময়ে এ অবস্থা আরো ব্যাপক আকার ধারন করেছে। মানুষকে তা লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আহমেদ ছফা আমার পছন্দের লেখকদের মধ্যে একজন। উনার প্রতিটি লেখার গভীরতা ব্যাপক। এই বইও তার ব্যতিক্রম নয়।
ব্যাঙ্গাত্মক উপন্যাস, আমাদের সমাজের মেধা খরচ হচ্ছে কোনো মেধাবিহীন কাজে। আবার সমাজপ্রক্রিয়ার দোষেই হোক, আমাদের গুণের চেতনার অভাবেই হোক আমাদের যাচাই বা বিচারে সঠিক সিদ্ধান্ত আসছে না। দায়িত্বের সাথে দায় ও শখের বিভেদরেখা থাকছে না, থাকলেও দায়িত্বের দায়কে ঢেকে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকতার পেছনের ভুল বাঁচিয়ে রাখে অকর্ম্মণ্যতাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়প্রধানদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় ভুলতে তাদের নিজেদের শখ ও জীবনযাপনই যথেষ্ট। এই হেলাকে নিয়মিত রস ও পুষ্টি দিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁদের সহকর্মীরাও সেই একই কূয়াগামী।
আহমদ ছফার স্যাটায়ার মাস্টারপিস এই বইটির ঠিক কিভাবে রিভিউ দেয়া যায় তা আমার জানা নেই। আমি আহমদ ছফাকে সাহিত্যিক নয় বরং প্রাবন্ধিক হিসেবেই ভাল মনে করি। তাকে বুদ্ধিজীবি বলার একটি কারণ এমন হতে পারে যে- যে কথা কেউ বলতে চায় না তার সময়ে সে কথাগুলো বলার ঠেকা যেন তিনি নিজের কাধে নিয়ে নিয়েছিলেন।
গাভী বৃত্তান্ত বইয়ের কথা বিভিন্ন গুণিজনদের মুখে এত শুনেছি এবং বাসায় আহমদ ছফা সমগ্র কেনাও রয়েছে,তবু কেন যেন এর আগে বইটি পড়া হয়ে ওঠেনি। এতদিনে বইটি শুনে শেষ করা গেল। বইটি শোনা শুরু করার পর থেকে আমি ৩ বারে বইটি শোনা শেষ করেছি এবং ট্রাস্ট মি, এই শোনার মাঝে ব্রেক নিতে আমার একদমই ইচ্ছা করেনি। হাহাহা, এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম আর কি।
প্রধান চরিত্র আপাত দৃষ্টিতে গোবেচারা ধরনের এক্সিডেন্টালি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বনে যাওয়া আবু জুনায়েদের ক্যারিয়ারের উত্থান পতন এবং তার তালে তালে ব্যক্তিগত জীবনের নানা পট পরিবর্তনের কাহিনী নিয়েই এই বইটি রচিত। আবু জুনায়েদের উত্থানের গল্প যেন সরল অংকের তৈলাক্ত বাশ বেয়ে বানরের উপরে ওঠার গল্পের মতই স্টাগলে পরিপূর্ণ। পুরো গল্পে তার স্ট্রাগলের বর্ণনার যে আখ্যান তিনি দিয়েছেন, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে বইটিকে মাস্টারপিস না বলে উপায় কি। পাওয়ার পলিটিক্সের সিড়ি বেয়ে ওঠার ধাপগুলো এত চমতকার করে আর কেউ বর্ণনা করতে পারতো কিনা সন্দেহ। এ যেন ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নিচে রেখে পুরো সমাজ এবং চরিত্রগুলোর সামাজিক-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলোর ব্যাঙ্গাত্মক বিশ্লেষন। এ গল্প এমন এক গল্প- যাতে প্রধান কোন চরিত্রই সাধু নয়, সবাই কোন না কোন ত্রুটিতে পরিপূর্ণ। রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতার এক চরম বিদ্রুপাত্মক প্রকাশ ঘটেছে বইটিতে। বাংলা স্যাটায়ারের মানদন্ড ঠিক করতে গাভী বৃত্তান্ত যেন মাপকাঠি হিসেবে একেবারে স্ট্যান্ডার্ড।
আমাদের আশেপাশের শিক্ষিত সমাজকে বুঝতে হলে,আহমদ ছফার লেখনি দক্ষতা বুঝতে হলে এ বইটি মাস্ট রিড। একেবারে নিখাদ ৫ তারা। ভবিষ্যতে আবারো পড়া হবে।
আমার ছোট্ট জীবনে বইয়ের পাতায় পড়া কিংবা পর্দায় দেখা যত নেগেটিভ ক্যারেক্টার আছে তাদের মধ্যে শীর্ষে থাকবে নুরুন্নাহার বানু। এই বিষাক্ত ক্যারেক্টারের কথা কতদিনে ভুলতে পারবো জানিনা তবে জীবনের কঠিনতম সময়েও যেন তার মত না হয়ে যাই খোদা!
৫ তারার বেশী দেওয়া যায় না তাই ৫ :) এতো প্রাসঙ্গিক এখনো... বিশেষত যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চেনেন তারা সব মিলিয়ে ফেলতে পারবেন.... পড়ে ব্যাপক বিনোদন পাবেন এবং তারপ চে বেশী পাবেন তৃপ্তি.... সাহস করে এমন সব লেখা লিখবার ক্ষমতা সবাই রাখেন না... আহমেদ ছফা সেই অতি বিরলদের এক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়াতে খুব ভালোই রিলেট করতে পেরেছি ঘটনার সাথে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবই হচ্ছে শুধু শিক্ষাটা ছাড়া। ব্যঙ্গাত্মক ন্যারেটিভ এবং গল্পের এপ্রোচ অসাধারণ লেগেছে। যাদের নিয়ে লেখা তারা অবশ্য গন্ডারের চামড়াওয়ালা।
আহমেদ ছফার খুব বেশী বই আমি পড়িনি। “গাভী বিত্তান্ত” উনার ৪র্থ উপন্যাস যা আমি পড়ে শেষ করলাম একদম এক নিঃশ্বাসে। খুবই সহজ সরল ভাষায় লেখা গভীর এনালজিকাল একটা বই। বই টা কে যদি একটা বৃত্ত হিসাবে কল্পনা করি তাহলে তার কেন্দ্রে আছে একটা গাভী। তার সবচেয়ে কাছের গ্রহ, গাভীর মালিক বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য আবু জুনায়েদ। তারপর ক্রমাননয়ে ঘুর্নায়মান অন্যান্য চরিত্র যেমন আবু জুনায়েদ এর স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার বানু, আছেন অত্যন্ত প্রভাবশালি ঠিকাদার শেখ তবারক আলী। এছাড়া আরো কিছু পার্শ চরিত্র যেমন “রসায়ন” বিভাগের সুন্দরী শিক্ষিকা দিলরুবা খানম, মাওলানা আবু তাহের, তবারক আলীর জামাতা, বুয়েটপাস সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আবেদ হোসেন, আবু জুনায়েদ এর মেয়ে দিলু এবং রেবা। এই চরিত্র রা বিভিন্ন সময়ে বই এর পাতায় এসেছেন, তাদের ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু আহমেদ ছফার লেখনির অন্যতম শক্তিশালী গুন হল তিনি এসব চরিত্র কে কখনোই মূল কাহিনী এবং মূল চরিত্র দের কে ছাপিয়ে উঠতে দ্যান নি।
গাভী বিত্তান্ত শুরু করার কিছুক্ষন এর মধ্যেই বোঝা যায় এটা কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে লেখা। যদিও যে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা ভাবলেই এই কাহিনী কে সুন্দর ফিট করে দেয়া যায়। ছফা এই লেখা লিখেছিলেন ডিসেম্বর ১৯৯৪ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫ এর মধ্যে। অর্থাৎ মাত্র দুই মাস এ ছফা লিখেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে, বিশেষত বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রচিত বাংলা ভাষার সবচেয়ে শক্তিশালী উপন্যাস হিসেবে গণ্য গাভী বিত্তান্ত যা কিনা এই ২০২৩ সালে এসেও বাস্তবার সাথে মিলে যায় হুবহু।
আমি মনে করি “আচরণ, বিচরণ ও বচন”––এই তিন ঠিক না হলে তাকে আমরা শিক্ষক বলতে পারি না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন শিক্ষকদের একটা বড় অংশের বিচরণই রাজনীতির মাঠে। অনেক শিক্ষকের আচরণ দলীয় ক্যাডারের মতো। অনেকের বচন পাড়ার মাস্তানের মতো। আমার কথা গুলো লিখতে অনেক গুলো শব্দ ব্যয় হয়ে গেলো কিন্তু আহমদ ছফা তার কালজয়ী লেখনি কি অনায়াসে এই কথাটাই বুঝিয়ে দিলেন এই লাইন গুলো দিয়ে “
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টির ছিল গৌরবময় অতীত। অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গোটা দেশের আত্মার সঙ্গে তুলনা করে গর্ববোধ করতেন। অতীতের গরিমার ভার বইবার ক্ষমতা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই।’’
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আবু জুনায়েদ নামে এক অথর্ব লোকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়ে ওঠার ট্রাজেডি বর্ণনা করতে গিয়ে ছফা লিখছেন,, “সকলের দৃষ্টির অজান্তে [বিশ্ববিদ্যালয়টিতে] একের অধিক হনন কারখানা বসেছে, কারা এন্তেজাম করে বসিয়েছেন সকলে বিশদ জানে। কিন্তু কেউ প্রকাশ করে না। ফুটন্ত গোলাপের মত তাজা টগবগে তরুণেরা শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর হনন কারখানার ধারে কাছে বাস করতে করতে নিজেরাই বুঝতে পারেন না কখন যে তারা হনন কারখানার কারিগরদের ইয়ার দোস্তে পরিণত হয়েছেন। তাই জাতির বিবেক বলে মহান শিক্ষকদের কারো কারো মুখমণ্ডলের জলছবিতে খুনি খুনি ভাটা যদি জেগে থাকে তাতে আঁতকে ওঠার কোনো কারণ নেই। “
হুমায়ুন আজাদবলে গেছেন, ‘শিক্ষকের জীবনের থেকে চোর, চোরাচালানি, দারোগার জীবন অনেক আকর্ষণীয়। এ সমাজ শিক্ষক চায় না। চোর-চোরাচালানি-দারোগা চায়।’ ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হয়তো বুঝে গেছেন যে, শিক্ষক হয়ে বেঁচে থেকে খুব বেশি লাভ নেই। তাই তারা অন্যের লেখা চুরি করে হোক আর সহকর্মীর নাক ফাটিয়েই হোক কিংবা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি–এমন একটি জীবন তারা নিশ্চিত করতে চান, যেখানে অর্থ, সম্মান এবং ক্ষমতা সবই আছে।
বই এর রিভিউ তে কাহিনী সংক্ষেপ বলাটা আমি ঠিক মনে করি না। শুধু বই এরই এক লাইন দিয়ে কাহিনী সম্পর্কে একটি ধারনা পাওয়া যায়। ছফা লিখেছেন, “দিনে দিনে গোয়ালঘরটাই বিশ্ববিদ্যালয় এর হৃদপিন্ড হয়ে উঠলো”। উৎসাহী পাঠক এই রিভিউ পড়ে বইটিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হা হুতাশ করা একটি বই ভেবে ভুল করতে পারেন। কিন্তু সেরকম ভাবলে এই বই এর নির্যাস যে তা ছাড়িয়ে অবসেশন, নেপোটিজম, ডিক্টেটরশিপ এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারেন । বইটার টাইমলাইন নিয়ে অল্প কিছু রিসার্চ করতে গিয়ে দুটো মজার তথ্য পেলাম
১) ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন জৈবরসায়নের অধ্যাপক আবদুল মান্নান। ছাত্রদের গোলাগুলির মাঝখানে পড়লে ‘বিশেষ যোগ্যতায়’ নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের গর্ভবতী গাভিটি নিহত হয়
২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর গৃহীত 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বাতিল করে পুনরায় নেওয়ার দাবিতে আমরণ অনশন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। আখতার হোসেন নামের ওই ছাত্র ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের জিয়া হলের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভার্স্কযের পাদদেশে মঙ্গলবার সাড়ে ১২টা থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। আমরণ অনশনকারী প্রতিবাদ জানাতে আহমদ ছফার গাভী বিত্তান্ত বইটি পড়েছিলেন। যে ছবি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এ ছাপা হয়। পরবর্তীতে ফলাফল বাতিলকৃত এবং ১৬ই নভেম্বর ভর্তিপরীক্ষা পুনরায় গৃহীত হয়।
আহমদ ছফা (১৯৪৩-২০০১) বাংলাদেশের অন্যতম সেরা লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তাঁর প্রতিটি লেখায় দেশ, জাতি ও সমাজ নিয়ে চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। “গাভী বিত্তান্ত” উপন্যাসটিও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্যঙ্গাত্মকধর্মী এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। উপন্যাসটিতে লেখক দেশের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে গোটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।
#কাহিনী_সংক্ষেপঃ হুট করেই মিয়া মুহম্মদ আবু জুনায়েদ নামের একজন নিরীহ ও গোবেচারা ধরনের অধ্যাপক দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে গেলেন। এতে অন্যান্যরা যতটা বিস্মিত হয়েছেন, আবু জুনায়েদ নিজে তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছেন। আবু জুনায়েদের স্ত্রী নুরুন্নাহার বানু বলে বেড়াতে লাগলেন, স্ত্রী-ভাগ্যেই তিনি আজ উপাচার্য। তবে এই অসম্ভবকে যিনি সম্ভব করেছেন, তিনি নুরুন্নাহার বানু নন; দিলরুবা খানম নামের আবু জুনায়েদের একজন সুন্দরী সহকর্মী। দিলরুবা খানমের ছিলো পুরুষদের আকর্ষণ করার অসাধারণ ক্ষমতা। অনেকেই মনে করেন সেই ক্ষমতা দিয়ে তিনি আবু জুনায়েদকে উপাচার্য বানিয়েছেন।
যা হোক, উপাচার্য হওয়ার পর আবু জুনায়েদের ভাগ্য এবং জীবনযাপন পুরোপুরি বদলে গেলো। প্রাসাদসম বাড়ি, চাকর, মালি, সুযোগ-সুবিধা কোন কিছুর অভাব ছিলো না তার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতি, দুর্নীতি, উপর মহলের চাপ সামাল দিতে গিয়ে তিনি বুঝলেন, উপাচার্যের দায়িত্ব পালন মোটেও সহজ নয়। তার সাথে যুক্ত হয় স্ত্রী এবং মেয়ের উদ্ধত আচরণ।
এমতাবস্থায় আবু জুনায়েদের সাথে পরিচয় হয় তার শ্বশুরবাড়ির দুঃসম্পর্কীয় আত্মীয় তবারক আলীর সাথে। তবারক আলী পেশায় ছিলেন একজন কন্ট্রাক্টর। ঘটনাক্রমে তার কাছ থেকে আবু জুনায়েদ একটি গাভী উপহার পান, যা তার অনেকদিনের সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো। এই গাভীটিই পুরো উপন্যাসের মূল চালিকাশক্তি।
গাভীর জন্য আবু জুনায়েদ গোয়ালঘর তৈরি করেন। নিজে হাতে গাভীকে খাওয়ানো, যত্ন করা- তার দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে গেলো। অফিস শেষে বাসায় ফিরে প্রথমেই তিনি গোয়ালঘরে গাভীটিকে দেখতে যান। ধীরে ধীরে অনেক শিক্ষকই গোয়ালঘরে গাভী দেখতে আসেন। ক্রমে সেই গোয়ালঘরই হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্র! এভাবেই উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে যায়।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে বিদ্যা-বুদ্ধির চর্চা হবে, গবেষণা হবে- এটাই কাম্য। কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে কি? ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি, রাজনীতি, দুর্নীতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিত্যকার ঘটনা। আহমদ ছফা তাঁর "গাভী বিত্তান্ত" উপন্যাসে ঠিক এ বিষয়গুলোকেই হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে এনেছেন।
উপন্যাসে দেখানো হয়েছে তথাকথিত দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই কিভাবে অন্যায়ভাবে সুযোগ-সুবিধা কিংবা পদোন্নতি পেতে চায়। ছাত্র রাজনীতির নোংরা দিকটিও উঠে এসেছে উপন্যাসে। ছাত্রদের চালে কাঁকড় কিংবা ছাত্রী হলে কারেন্ট চলে যাওয়ার মত ঘটনায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে মিছিল হয়, ভাংচুর হয়।
অন্যদিকে, উপন্যাসে লেখক মানুষের মাঝের দ্বৈত সত্তাকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। উপাচার্য আবু জুনায়েদ, তবারক আলীর কাছ থেকে গরু উপহার নিয়ে নিজেকে সান্তনা দিচ্ছেন এই বলে যে- তিনি উৎকোচ নেননি, তাকে উপহার দেয়া হয়েছে। আবার ব্যাপারটি লোক জানাজানি হবার ভয়ও তার মনে আছে। এরকম সুবিধাবাদী মনমানসিকতা আমাদের সমাজে অপ্রতুল নয়।
বিশ্ব সাহিত্যে স্যাটেয়ার কিংবা ব্যাঙ্গাত্মক সাহিত্যের অসংখ্য নিদর্শন থাকলেও বাংলা সাহিত্যে সে তুলনায় ব্যাঙ্গাত্মক রচনা নেই বললেই চলে। পূর্বে আবুল মনসুর আহমদের লেখায় কিছু স্যাটেয়ার পেয়েছিলাম। অনেকদিন পর আবার স্যটেয়ার পেলাম "গাভী বিত্তান্ত" উপন্যাসটিতে। উপন্যাসটি আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে লেখা হলেও, বর্তমান সময়েও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখার সাহস খুব কম লেখকের আছে। আহমদ ছফা এ জায়গাটিতে অনন্য। "যদ্যপি আমার গুরু", "ওঙ্কার" পড়ে তাঁর ভক্ত হয়েছিলাম। "গাভী বিত্তান্ত" পড়ে আহমদ ছফার প্রতি ভালোলাগা আরো বেড়ে গেলো। যারা পড়েননি, তাদেরকে পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
বইটি হচ্ছে স্যাটায়রধর্মী একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি সেই সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক, শিক্ষার্থী– শিক্ষার্থী সম্পর্ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রভৃতি ফুটে উঠেছে। উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্র হচ্ছে আবু জুনায়েদ এবং তার স্ত্রী নুরন্নাহার বেগমকে নিয়ে। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে আবু জুনায়েদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে। কাহিনী আর্বতে দেখতে পাই,শিক্ষক হিসেবে আবু জুনায়েদ ছিলেন গোবেচারা ধরনের মানুষ। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিপার্টমেন্ট বা ডিপার্টমেন্টের বাইরে তার সঙ্গে কারো বিশেষ বন্ধুত্ব ছিলনা। আর আবু জুনায়েদ স্বভাবের দিক দিয়ে এত নিরীহ ছিলেন যে তার সঙ্গে শত্রুতা করলে অনেকে মনে করতেন, শত্রুতা করার ক্ষমতাটি বাজে কাজ খরচ করা হবে। আরও দেখতে পাই শিক্ষকেদের চরম অবক্ষয়,অতীতের গৌরব গরিমার ভার বইবার ক্ষমতা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই।সাম্প্রতিককালে নানা রোগ ব্যাধি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কাবু করে ফেলেছে। মাছের পচন যেমন মস্তক থেকে শুরু হয়, তেমনি যাবতীয় অসুখের জীবানু শিক্ষকদের চিন্তা চেতনায় সুন্দরভাবে স্থাপন করে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বরজারি,ধনুষ্টংকার নানা রকমের হিস্টিরিয়া হত্যাকার নিত্যনৈমিতিক ব্যাধিগুলো শিক্ষকদের ঘায়েল করেছে সবচাইতে বেশি। এখানে শিক্ষক সমাজ বলতে কিছু নেই আছে হলুদ, ডোরাকাটা,বেগুনি এসব দল। পরিশেষে বলতে হয়,আহমদ ছফার মতো লেখকের দ্বারাই সম্ভব এতে সুন্দর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সমস্যা গুলো তুলে ধরা। একটি বিশ্ব বিদ্যালয় যার কিনা রয়েছে গৌরবময় অতীত তার সম্পর্কে জানা প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের উচিত বলে আমি মনে করি। তাই বইটি পড়ার জন্য সবার প্রতি আমার অনুরোধ।
অনেকদিন পর এই রকম একটা বাস্তবধর্মী উপন্যাস পেলাম। আমাদের দেশীয় সাহিত্য অঙ্গনে এইরকম লেখার বড় অভাব। ছফা সাহেব তাঁর শক্তিশালী লেখনী ও গতিময়, প্রাণোচ্ছল বর্ণনার জন্য আমাদের মধ্যে অমর হয়ে রবেন। হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আমাদের দেশীয় সাহিত্তে যারা নিজেদের মতো করে লেখার বলয় করে নিয়েছেন , তাদের মধ্যে আহমদ ছফা অগ্রণী।
মিয়া মুহম্মদ আবু জুনায়েদ বেশ গোবেচারা ধরণের ভার্সিটি শিক্ষক। তিনি কার সাথেও নেই, কার পাচেও নেই। নিজের স্বরচিত জগত নিয়ে যখন তিনি বেশ সুখি জীবনযাপন করছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর দলাদলির চোটে কখন তিনি ভিসি হয়েগেছেন- সে ব্যাপারে তিনিও বেশ সন্ধিহান । উপাচার্য ভবনে আগমনের পর থেকে বহু রসালো গল্পে-আখ্যানে ঘটনা প্রবাহ এগোতে থাকে । গাভী পাল্বার শখ থেকে তিনি তাঁর ভবনে গাভী পাল্বার ব্যবস্থা করেন। গাভী আসে, থাকে, তারপর কিছু একটা হয়। যা হয় তা বললে আর পড়ার মানে থাকে না। আরএকটা জিনিস না বললেই নয় , ভিসি মহোদয়ের স্ত্রী নুরুন্নাহার বানু যে কি পরিমাণ অহংকারী, আর তাঁর কাজ কারবার দেখে যে কি রকম একটা ফিলিংস হয় তা না পড়লে বলার মতো নয়। কথায় কথায় খোঁটা শোনানো থেকে হাপুস হুপুস করে কাঁদা কিছুই করতে তাঁর বাকি নাই।
বিশ্ববিদ্যালয় এর কিছু গোপন দিকের বাস্তব অংশ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বাকিটা পড়েই বোঝা ভাল। :)
দুর্দান্ত স্যাটায়ার! ছফা এদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দর্মহলের খবর তুলে ধরেছেন কোনরকম রাখঢাক ছাড়াই। উনার সেন্স অব হিউমার অতুলনীয়! ১৯৯৫ সালে লেখা হলেও দুঃখজনকভাবে এখনো সমান প্রাসংগিক। এ উপন্যাস এ সশব্দে কিংবা নীরবে হাসার মত ঘটনা আছে কিছুক্ষণ পরপরই।।কিন্তু এর সাথে এক ধরনের গাঢ় বিষণ্ণতাও কাজ করে। মনে হয় জ্ঞানদানের মহৎ সেবায় নিয়োজিত এত উচ্চশিক্ষিত মানুষদের যদি এই অবস্থা হয়, তাইলে এই শিক্ষার মূল্যটা কী?এত শত পাপ-পংকিলতার মাঝে ওই গাভীটাকেই মনে হয় শুভ্রতা আর বিশুদ্ধতার প্রতীক। কিন্তু হায়! তার উৎস নিয়েও যে আছে বড়সর এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন! এ এক নিষ্ঠুর পরিহাস।
বই ঠিক স্যাটায়ার,না সামাজিক অসঙ্গতি বুঝানোর জন্য কিছু একটা না নিছক রম্য,সেটা বুঝে উঠার আগেই দেখি পুরো বই পড়ে শেষ করে ফেলেছি।শুধু এই চমৎকার ১টি ঘন্টার জন্যই তো একটা বইকে ৫ তারা দিয়ে দেওয়া যায়।
আশ্চর্য চমৎকার লেখকের রসবোধ! একটা নিতান্তই সাদাসিধে (?) গাভীর 'বিত্তান্তের' আড়ালে চোখে আঙ্গুল দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন রাজনীতি, নানা অসঙ্গতি। ছাত্রদের, আবার শিক্ষকদেরও। অথচ কী সহজ, সাবলীল উপস্থাপন!
ন্যারেশন চমৎকার, পুরো গল্প বলার ঢং ব্যাপক উপভোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যাটফর্মে লেখা বলে অনেক বেশি রিলেট করতে পেরেছি সবকিছু, একারণে সম্ভবত বেশি ভাল্লাগসে। স্যাটায়ার হিসেবে দশে আট, গল্পের উপস্থাপন এবং কাহিনী বিবর্তনের জন্য দশে নয়। সমাপিকা বড্ড তাড়াহুড়ো করে টানা হয়েছে বলে মনে হয়েছে, তাই এখানে দশে ছয়, আরেকটু ভালো সমাপ্তি হতে পারতো, গল্পের দাবিটাই মনে হয়েছে এরকম, আরো চমৎকার কিছু যে অপেক্ষা করছে।