দিয়েগো, ডুডু, কবীর আর জ্যাকসন নঙ্গী হাই-এর হয়ে খেলতে নামবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রবিন মেমোরয়ালের বিরুদ্ধে। ওদের স্কুল জীবনের এটাই শেষ বছর। অস্থায়ী গেমস টিচার পুরুকেও চাকরি পাকা করতে হলে জেতাতে হবে এই ম্যাচ। পুরুর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত টাপুর চায় প্রতিশোধ। রবিন-এর রুদ্র তাকে সাহায্য করছে। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর উপন্যাসে একাকার হয়ে গেছে প্রাক-কৈশোর, ফুটবল আর জীবনের অপরূপ রোমাঞ্চ।
এই গল্প চার বন্ধুর – দিয়েগো, ডূডূ, কবীর আর জ্যাকসনের। নঙ্গী হাই-এর হয়ে ওরা টমাস চ্যালেঞ্জ কাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টে খেলবে চির প্রতিদ্বন্দ্বী রবিন মেমোরিয়ালের বিরুদ্ধে। দিয়েগো সবচেয়ে ভাল ফুটবলার হলেও প্রথম ম্যাচে নঙ্গী হাই হেরেছে ওর জন্যেই। এই গল্প চোট পেয়ে খেলা ছেড়ে দেওয়া পুরুরও। পুরু নঙ্গী হাই-এর অস্থায়ী গেমস টিচার, রবিন মেমোরিয়ালকে হারালে তবেই তার চাকরি পাকা হবে। ওদিকে পুরুর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত টাপুর নিতে চায় প্রতিশোধ। একটা ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে বদলে যেতে থাকে প্রত্যেকের জীবন। কে জিতবে?
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
'পাতাঝরা মরশুমে, আমরা বৈশাখী হাওয়া। জীবন যুদ্ধের শেষে, বিজয়ী ক্লান্ত বেশে, আমরা সেই এক নিমেষে সিংহাসন ছেড়ে যাওয়া...'
একদা স্টেজে উঠে সুমন বলেছিলেন যে এই গানটি যারা না শুনে থাকবেন, তাদের চুল পড়ে যাবে সুমনেরই মতন। তাদের দাত নড়বে, কান কটকট করবে, অনেক কিছু হয়ে-টয়ে যাবে, আরকি!
সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের রেশ টেনে, একটি গল্প বলেছিলেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। পাতাঝরার কোন বেরঙ মরশুমে, বৈশাখের তপ্ত আগুনে, জ্বালিয়েছিলেন কিছু কিশোর-কিশোরীদের বোকা অস্তিত্ব। অবশ্য এখানে কাঙ্খিত সিংহাসন ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এরা শেষ অবধি লড়ে যায়। এদের বয়সটাই এমন। ক্ষণিকের ব্যথায়, এরা উসুল করে জন্মের সুখ।
বইটা পড়ে যতটা আনন্দ পাবো ভেবেছিলাম ততটা পেলাম না। দোষটা আমারই। বরাবরই কোনো আশা না রেখে, লেখকের বই পড়ে থাকি। কখনো ভালো লাগে, কখনো লাগে না। এবারে বোধ হয়, কিছুটা ভালো রিভিউয়ের চটকে ফেঁসে গিয়েছিলাম। অবশ্য, তাই বলে এমনটাও ভাববার কোনো কারণ নেই যে উপন্যাসটি মার্কামারা লেভেলের খারাপ। কেবল, লেখকের প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হওয়ার ছাপ এর গোটা শরীরে মজুদ। কিঞ্চিৎ পলিশের অভাব। কতকটা অগোছালো সবটা।
তবে, মফস্বলের পটভূমিতে এসব গল্প খেলে ভালো। বাটানগর সমন্ধে লেখকের প্রভূত জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হচ্ছিলাম। পাতা উল্টে ফ্ল্যাপে দেখি ওনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এখানেই। নঙ্গী হাই-এর প্রাক্তন ছাত্র স্মরণজিৎ চক্রবর্তী, নিজের স্কুল-লাইফের হলদে স্মৃতির সমন্বয়ে বলেছেন প্রেম, বন্ধুত্ব ও ফুটবলের গল্প। কপাল ভালো, গল্পটা ভালোই বলেন তিনি। এই ক্ষেত্রে উনি অপরিহার্য। অজস্র গ্যাঁড়াকলের মাঝেও ওনার মিঠে, সহজ গদ্যশৈলী নিয়ে কমপ্লেন করা যায় না কখনোই।
তবে বাধ সাধে, এতগুলো চরিত্র। মেরেকেটে আড়াইশো পাতার একটি উপন্যাসে এতগুলো 'মেইন ক্যারেকটার' নিয়ে জাস্ট সামলাতে পারেননি লেখক। দিয়েগোর মতন এত গুরুত্বপূর্ন চরিত্রটিকে স্রেফ ভুলে মেরে দিয়েছেন বইজুড়ে। ওদিকে শিমুল ও আমনের একটি বাড়তি ট্র্যাক দিয়ে মেদ বাড়িয়েছেন গল্পের। পুরুর চরিত্রটি যতটা বিকশিত হতে পারত, তার সিকিভাগও হয়নি। কাকে কখন স্পটলাইট ছেড়ে দিতে হবে সেটাই তো এসব উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। এ জিনিস লেখক তার অন্যান্য উপন্যাসে অনেক পরিণত ভাবে করে থাকেন। ২০০৭-এর নার্ভাস স্মরণজিৎ, শেষমেশ করতে পারেননি।
তবে বলতে ক্ষতি নেই, খারাপের মাঝেই ভালো লাগাগুলো জেগে থাকে এক ঝাঁক তারার মতন। তাই বোধহয়, মন ভালো করে দেয় ডুডু ও সায়েকাদের মিষ্টি ছেলেমানুষী। স্কুল মাঠে খেলার রেশ মনে করায়, হারিয়ে যাওয়া সব হাসিহাসি বিকেলের কথা। ক্লাইম্যাক্সটা সত্যিই অসাধারন লিখেছেন লেখক। ওটা না পড়লে সবটাই মিস। দিনের শেষে, সব খেলার সেরা, বাঙালির...
যাক গে, ছেলেমানুষ সব। স্কুল-টিউশনের ফাঁকে প্রেম নিয়ে হা-পিত্যেশ করাতেই যত বাহাদুরি। বলাই বাহুল্য, বইতে পাবেন আদিরসাত্মক 'খিল্লি'র বাড়বাড়ন্ত। তাই, এ জিনিসে গভীরতা খোঁজা বাতুলতা। ভালুক জ্বরের চটজলদি ঘোরে এই প্রেমের তাপমাত্রা বেড়ে যায় অহরহ। বাবা-মায়ের পিটুনি কি টেস্টের ফালতু স্কোর। ঘাম দিয়ে প্রেম ছাড়েনা কিছুতেই। বয়সটাই যে এরকম। লেখক চেয়েছেন সেই বয়সটিকে আঁকড়ে ধরতে। সেই সেলফোনবিহীন যুগের টুকরো কটা ছবি। যেন হেমন্তের সকালের এক চিলতে সতেজ রোদ্দুর। ও জিনিস, হাতের মুঠোয় ধরা যায় না বটে। তবে মন জানে, সবই আছে। অ্যালবাম কোণে, সোয়েটার-শালে। রোদের রঙটা একটু সেপিয়া, এই যা।
গান দিয়ে শুরু করেছিলাম। তাই গান দিয়েই শেষ করি। আলেক্সা দেবী, প্লিজ প্লে 'বন্ধু চল' বাই অনুপম রায়। জানি, একটু ক্লিশেড্, তবুও...
বঙ্গদেশীয় জনপ্রিয় সাহিত্য সম্পর্কে নেতিবাচক একটা ধারনা প্রচলিত আছে।প্রেমসর্বস্ব, মেলোড্রামায় ভরপুর, মধ্যবিত্ত জীবনকে পুঁজি করে গড়ে ওঠা এ ধারার প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের পেছনে এইসব বইয়ের লেখকরা অনেকাংশে দায়ী।লেখায় বৈচিত্র্য নেই( ঘুরেফিরে একই কাহিনি), অতি আবেগের আতিশয্য আর সস্তা রোমান্টিকতা আছে। অনেকের লেখায় মধ্যবিত্তদের মহান দেখানোর প্রচেষ্টা তো আছেই। পড়তে গেলে মনে হয় লেখক এসব বই লেখার পেছনে দুই চার দিনের বেশি সময় খরচ করেননি।ইমদাদুল হক মিলন ২০০৫ সালে নিজেই স্বীকার করেছিলেন, তার কষ্ট করে লেখা বই কেউ পড়ে না।পড়ে সেসব বই যা লিখতে গেলে মাথা ঘামাতে হয় না।একটানা ২/৩ দিনে লিখে ফেললেই হয়!! এদের লেখা পড়ে জাকির তালুকদারসহ অনেকেরই ধারনা পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় সব লেখকও বুঝি বাংলাভাষার এই শ্রেণির জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মতো চতুর্থ শ্রেণির লেখা লেখেন!! অথচ ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়।তারা প্লট ও চরিত্র নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও পরিশ্রম করেন। অনেকের লেখায় গভীরতা কম থাকলেও টানটান উত্তেজনা পাওয়া যায় কাহিনিতে। আর কিছু না হোক, বই পড়ার সময়টুকু খুব আনন্দে কাটে। পূর্ববর্তী ধারনার বশবর্তী হয়ে স্মরণজিতের লেখা পড়ি নাই এযাবৎ। "পাতাঝরার মরশুমে" পড়ে অবাক ও পুলকিত হলাম। ঝরঝরে ও মেদহীন লেখা।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের আগ্রহ জিইয়ে থাকে। টিনেজ চরিত্রদের মুখে খিস্তিখেউড়ের স্বাভাবিক ব্যবহার ভালো লেগেছে। চরিত্রগুলোর জীবনে প্রেমের আধিক্য পছন্দ হয়নি;লেখকের অন্তর্দৃষ্টি তার চরিত্রদের আবেগের চেয়ে খুব একটা ওপরে উঠতে পারেনি। তবে বলতেই হবে, একটা নিটোল গল্প উপহার দিয়েছেন স্মরণজিৎ। ক্লাইম্যাক্স তো জম্পেশ! নির্ধারিত পাঠকগোষ্ঠীর কেন এই বই এতো পছন্দের বুঝতে পারলাম। কারণ তারা নিজেদের খুঁজে পেয়েছে গল্পে। (১৯ জুলাই, ২০২২)
স্মরণজিতের লেখা পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল তবে রেডিও মির্চির সুবাদে অডিও বুক হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি নাগাল পেয়ে গেলাম। কিছু লেখার আগে অবশ্য কনফেস করে নিতে হবে যে টিনেজ লাভ নিয়ে সিনেমা-নাটক হলে উৎসাহ পাই তবে বই হলে পড়ার উৎসাহ জাগে না। স্বাভাবিকভাবে শোনারও নয়। অনেকেরই হয়তো এই ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' আছে! বলতে বাকি নেই শহরতলির একগাদা কলেজ পড়ুয়াদের প্রেম, বন্ধুত্ব, এসব সম্পর্কিত এসময়ের অপরাপর প্রবলেম নিয়ে গল্পটা। একটা নয় একাধিক গল্প তবে সবই একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট ঘিরে। গল্প ও চরিত্রগুলো নিয়ে বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। স্বাভাবিক বিষয়গুলোই বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। চরিত্র ও ঘটনাগুলো বেশ ভালোভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। কাহিনী ক্লাইম্যাক্সের দিকে যত এগোই তত বেশি ভালো লাগতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই ভালো লাগাটা ধরে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু ফুটবল টুর্নামেন্ট যদি না থেকে ফ্লাট প্রেমের হতো তাহলে বিরক্ত হতাম। যাহোক সত্যিই যদি এধরনের কাহিনীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই পড়তে পারেন।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী তো হাজার ভোল্টের শক দিয়ে ছাড়লেন!
এত ভালো র��টিং থাকলে প্রত্যাশা এমনিতেই বেশি থাকে। আর লেখকের নাম এত শুনেছি যে প্রথমবার ঊনার বই পড়তে গিয়ে আমার এক্সপেক্টেশন লেভেল একটু বেশি রকমেরই হাই ছিল। কিন্তু বইটা এতো ভালো যে আকাশচুম্বী এক্সপেক্টেশন থাকলেও হতাশ হওয়া যায় না।
আমি আসলে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি নিজে টিনএজার, এবং টিনএজারদের নিয়ে বেশ কিছু ইয়াং এডাল্ট রোম-কোম শ্রেণীয় লেখা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে, কিন্তু কোন লেখাকেই এভাবে নিজের স্কুল লাইফের সঙ্গে মেলাতে পারি নি(আসলে বিদেশি লেখায় বাংলাদেশের শিক্ষাজীবন খোঁজাও হয়ত উচিত নয়)। ছোট্ট মফস্বল শহরটাকে আমার নিজের শহরের প্রতিচ্ছবিই মনে হচ্ছিল। আর দানিয়েল, জ্যাকসন, ডুডুদের কথা কি বলব? আমি নিজে বয়েজ স্কুলে পড়েছি বলেই হয়ত নিজেকে ওদের জায়গায় দেখতে পাচ্ছিলাম। মেয়েদের নিয়ে ওদের এই ডেস্পারেশন বুঝে ওঠা খুব একটা কঠিন নয়।
আমার পক্ষে বইটাকে পাঁচে পাঁচ দেওয়াও কম মনে হচ্ছে। আগেও বলেছি, এর আগে কোন বইই এভাবে নিজের বর্তমান এই মধুর সময়টার সঙ্গে মেলাতে পারিনি। এখন নিজের সকল বই পড়ুয়া বন্ধুদের ঘাড় ধরে বইটা পড়ার কথা বলে বলব~''শালারা কিসব হাবিজাবি পড়তেস? এই বইটা পড়। লেখক নাম-টাম চেঞ্জ করে আমাদের গল্পটা বাজারে ছেড়ে দিছে।''
বইটা পড়া না থাকলে এখুনি পড়ুন। HIGHLY RECOMMENDAD
আচ্ছা বলুন তো একজন অবিবাহিত মেয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে তার translation কি হবে?
বলুন বলুন,কি পারছেন না তো?উত্তরটা হলো missunderstanding চমকে গেলেন!এ কেমন উঃ!আহা প্রশ্নটা যদি মনোময়বাবু থুক্কু জ্যাকসনের বানানো হয় তার লাগসহ জবাব তো এটাই হওয়া উচিত:-P
লোকে বলে, বাংলায় নাকি খুন খারাবি ছাড়া ভালো থ্রিলার হয় না, আমিও তাই মানি থুড়ি কালকে পর্যন্ত অন্তত মানতাম কিন্তু ঐ যে স্মরণজিৎ বাবু সব আবার গোলমেলে করে দিল,রাত বারোটায় শুরু করে ভোর পাঁচটা পনেরো পর্যন্ত দুচোখের পাতা এক করতে দেয়নি বইয়ের প্রতে্যকটা পাতা।
দিয়েগো,ডুডু,কবীর,টাপুর,সায়েকা,কুশ,পুরু,জ্যাকসন,শিমুল,আমান, তিমির,রুদ্র,রোহিনী রাকা,রুপাই,মেঘা এরা সবাই যে কখন আমাকে নিজের বাসা থেকে বাটানগর,নঙ্গী হাই স্কুল,রবিন মেমোরিয়ালে চোখের পলকে টুপ করে নিয়ে গিয়েছিল,আর সেই যাত্রায় যে আমার রাত শেষ হয়ে গেছে টের পাইনি একবারও।
স্মরণজিৎ কে সামনে পেলে নিশ্চয় বলবো"এরপর কি হলো তা আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন স্মরণদা! বারবার আমাকে শব্দজালে ফেলে কি সুন্দর তার মায়ায় বেঁধে ফেলেন অনায়াসে,এযেন এক অদ্ভুত অদৃশ্য গাঁটছড়া,দেখা যায় না, ছেঁড়া যায় না, উপেক্ষা তো আর বহুদূরের ব্যাপার.শুধু সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করতে হয় পাতাঝরার মরশুমের কলকাকলি"
কলকাতা শহর থেকে অদূরে অবস্থিত এক মফস্বলের চার কিশোর ও এক বেকার তরুণের আখ্যান পাতাঝরার মরশুমে। মূলত প্রতিপক্ষ স্কুলের সাথে দুটো ফুটবল ম্যাচ নিয়েই গড়ে উঠেছে পুরো উপন্যাসের পটভূমি। এর ফাঁকে ফাঁকে বলা হয়েছে চার কিশোর ও বেকার তরুণের প্রেম-বিরহ ও নিত্য জীবনের গল্প। অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মফস্বলের আবহ। সময়কাল ২০০৫/০৬ সালের দিককার। কিশোর বয়সের পোলাপাইনের কাজকর্মের নস্টালজিয়া ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। বইয়ের সব চরিত্রের মধ্যে জ্যাকসন চরিত্রটা মজাদার। বেশ কয়েকবার হেসে উঠেছি এই চরিত্রের কাজকর্মে। খালি চোখে দেখলে উপন্যাসটা বেশ সাধারণ। কিন্তু এই সাধারণ কাহিনী-ই অসাধারণ হয়ে উঠেছে লেখকের লেখনশৈলীর কারণে। লেখকের গল্প বলার স্টাইলটা দারুণ। চোখের সামনে ভেসে উঠে কাহিনী, আরামে পড়া যায় একটানা। মফস্বলের কৈশোরের নস্টালজিয়ায় ভুগতে চাইলে বইটা তুলে নিতে পারেন।
কলকাতার কাছেই ছোট্ট একটা শহর। নামে শহর হলেও শহরের চাকচিক্য আর আধুনিকতা এখনও সেভাবে ছুঁয়ে যায়নি বাটানগরকে। ছোটখাটো মফস্বলটাইপ এলাকা। নিস্তরঙ্গ এ এলাকায় ইদানিং খুব জোর উত্তেজনা চলছে, টমাস চ্যালেঞ্জ কাপ বলে কথা!
এই বাটা নগরে দু'টো স্কুল, নঙ্গী বয়েজ হাইস্কুল আর রবিন মেমোরিয়াল। পরপর দুই বছর কাপ জিতেছে নঙ্গী হাই। এ বছর আর দুইটা ম্যাচ বাকি, হোম আর আ্যওয়ে। নঙ্গী জিততে পারলে কাপটা চিরজীবনের জন্য ওদের হয়ে যাবে। রবিন মেমোরিয়ালই বা ছেড়ে কথা কইবে কেন? হাই ভোল্টেজ এ ম্যাচ নিয়ে চাপা উত্তেজনাটা টের পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে কান পাতলেই।
তার আগে গল্পের চরিত্রদের নিয়ে একটু ধারণা দিয়ে রাখি। নঙ্গী বয়েজ হাই স্কুলের টুয়েলভ ক্লাসের ছাত্র এরা। স্কুলকে কিছু দিতে পারার এটাই সর্বশেষ সুযোগ। কাজেই, মরিয়া সবাই। এদেরই একজন বেঁটেখাটো, ঝাঁকড়া চুলো একটা ছেলে, নাম দয়ারাম আঙরে হলেও বিশেষ ফুটবল প্রতিভার কারণে এলাকার পরিচিত দিয়াগো নামে। এখন এটাই ওর নাম। দলে আরও আছে গোলকীপার কবির। শান্ত-শিষ্ট নির্বিরোধী একটা ছেলে। আছে ডুডু-বেশ ভালো খেললেও কিছুটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন। গন্ধ বা চিহ্ন-এসব খুব মেনে চলে। আর আছে জ্যাকসন। দিয়াগোর মতো এটাও ওর বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া নাম। ফুটবলটা যেমন-তেমন খেললেও আচার-আচরণে পুরোপুরি পাগলা দাশু টাইপ। (জ্যাকসনরে আমার সবচেয়ে বেশি ভাল্লাগসে বোধহয় এই কারণেই 😂 পুরো বই জুড়ে যে টাইপ নাটক সে করছে!) নঙ্গী হাই-এর এরাই মূল প্লেয়ার। অপরদিকে রবিন মেমোরিয়ালের মারকুটে, ডাকসাইটে টাইপ ছেলে রুদ্র। ওদের দলে সে ছাড়া বলার মতো আর কোন প্লেয়ার নেই। মোটামুটি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ভাগ্য-দুর্ভাগ্যকে সঙ্গে নিয়েই এতো দূর এসেছে তারা।
রণাঙ্গণের সব ক্ষুদে সৈনিকের চলছে কৈশোর কাল। একটু করে বড় বড় হয়ে যাওয়া, মেয়েদের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ, পৃথিবীর সবকিছুকে তুচ্ছভাবার একটা মানসিকতা। ছোট্ট খেলোয়াড়দের জীবনে আসে প্রেম। আসে নানান জটিলতা। কারও বা পারিবারিক, কারও বা মানসিক। মোটকথা, বয়োসন্ধিকালের যতো ঝুটঝামেলা আর কী! খেলা ছাড়াও রয়েছে আরেকটা জগৎ। যে জগতে টাপুর, শিমুল কিংবা রুপাই বা সায়েকারা হয়ে উঠে অনন্য। শুধু স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় পাশ করা নয়, ফুটবলের পাশাপাশি দিতে হচ্ছে আরও নানান পরীক্ষাও৷ পাশ করতে পারবে তো? ফেল মারতে হবে না তো আবার?
সবকিছুর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেল পুরু। রবিন মেমোরিয়ালের প্রাক্তন ছাত্র, ভাগ্যের ফেরে না হতে পারা এক ফুটবলার।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর মাথানষ্ট করা একটা উপন্যাস। থ্রিলার বই পড়তে থাকার সময়ে মানুষজন যখন হাইলি রেকমেন্ড করে বইটা সাজেস্ট করতে থাকে তখন কিছুটা ত্যক্তবিরক্ত হয়েই বইটা পড়া শুরু করি। বিলিভ মি! ২৩৬ পৃষ্ঠার বইটা কখন, কিভাবে শেষ করলাম টের পর্যন্ত পাইনি। লেখক ভদ্রলোকের সবচেয়ে বড় গুণ বোধহয় অসম্ভব সুন্দর বর্ণনাভঙ্গি, আর সবকিছু এতোটাই জীবন্ত! মনে হবে শান্তশিষ্ট মফস্বল এলাকা বাটানগরে আমি নিজেই বাস করছি। এইতো আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছে জ্যাকসন, দিয়াগোরা। ওই তো শান্তশিষ্ট পুরু হেঁটে যাচ্ছে তার পাহাড়সমান ব্যক্তিত্ব নিয়ে কিংবা মেঘাদির নাচের স্কুলের সামন��� ডুডু কিংবা কবীরের আনাগোনা কিংবা দম আটকে দেয়া টাইপ সুন্দরী টাপুরের পিছনে ঘুরতে থাকা রোমিওর দল। আবার কোন কোন পাঠকের যদি মনে হয়, ধুরু! কিসের বাটানগর কিসের দিয়াগো এগ্লাতো আমার জীবনের ঘটনাই বলতেসে :v তাহলেও বিশেষ একটা দোষ দেয়া যায় না লেখককে।
এক দল ছেলেপেলের মধ্যে হতে যাওয়া রুদ্ধশ্বাস একটা ম্যাচ, প্রেম, ষড়যন্ত্র, হাসি-আনন্দ আর গুচ্ছের টেনশন নিয়ে এক টুকরো কৈশোরকাল নিয়ে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর উপন্যাস-'পাতাঝড়ার মরশুমে।'
আহা! সারা শহর চষে বেড়িয়ে বাবুই পাখির নিজের বাসায় ফিরে শান্তির ঘুম দেওয়ার মতোই অনুভব হলো। স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এমন দারুণ লিখেন। একদম হালকা হয়ে গেলাম!
৪ কিশোর আর এক তরুণ, কৈশোরের প্রেম-বিরহ, ফুটবল, নস্টালজিয়া-এই ৩ এর মিশেল, ২টা স্কুল, কলকাতার অদূরে ১বাটানগর,
এই সব মিলিয়ে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী বানিয়ে ফেলেছেন দুর্দান্ত এক উপন্যাস। রিভিউ পড়েন আর না পড়েন চমৎকার একটা গল্পের অভিজ্ঞতা চাইলে অবশ্যই পড়ে ফেলুন ‘পাতাঝরার মরশুমে’।
ফুটবলে বাটানগরে সেরা হচ্ছে নঙ্গী হাই স্কুল। টমাস চ্যালেঞ্জ কাপে তাদের প্রতিদ্বন্দী রবিন মেমোরিয়ালকে পরপর দুবার হারিয়ে তারা স্বপ্ন দেখছে আর একবার জয়ের। এবারে জিতলেই কাপটা চিরদিনের জন্য হয়ে যাবে তাদের। আর সেই জেতার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাটানগরের টুয়েলভ ক্লাসের দয়ারাম আংরে ওরফে দিয়েগো, ডুডু, কবির আর জ্যাকসন। তবে পড়াশোনাসহ সবকিছু মিলিয়ে একটা এলিট শ্রেণীতে অবস্থান করা রবিন মেমোরিয়ালসের রুদ্র সেটা হতে দেবে না। তার জন্য যে মূল্যই তাকে চুকাতে হোক না কেন, জিততে তাকে হবেই।
এটুকু শুনলে বইটাকে মতি নন্দীর ‘স্টপার’-টাইপ কিছু মনে হলেও হতে পারে, তবে উপন্যাসটা আসলে তা না। বইয়ের একটা স্ট্রীম ফুটবল হলেও এটা স্পোর্টস ফিকশন না। ফুটবলকে কেন্দ্রে রাখলেও লেখক আমাদের ফুটবলের মাঠ থেকে নিয়ে গেছেন বাটানগরে। তার চমৎকার বর্ণনায় আপনি গল্পটা শুধু পড়বেন না, নিজেই স্বশরীরে চলে যাবেন বাটানগরে। ৪ কিশোরের জীবনে উঁকি দেয়া প্রেম, বিরহ, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার কৈশোরে। গল্পের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে পুরু। বেকার তরুণ যার জীবনে ভালোবাসার চাহিদা থাকলেও এখন শুধু একটাই চাহিদা, চাকরী। একসময় ভালো ফুটবল খেললেও ভাগ্যের ফেরে সেটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে। ভাগ্যক্রমে নঙ্গী হাই স্কুলের গেমস টিচারের চাকরীটা তার হয়। তবে পারমানেন্ট হবে তখনই যখন সে রবিনের সাথে নঙ্গীকে জেতাতে পারবে। ওদিকে টাপুর নামের ক্লাস ইলেভেনে পড়া সেরা সুন্দরী মেয়েটাও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে যায় এই ফুটবলের সাথে। আর জড়িয়ে যায় শিমুল, সায়েকাসহ অনেকে। শেষমেষ কী হয় সেটা বই পড়ে নাহয় জানবেন।
আগেই বলেছি, আপাতদৃষ্টিতে বইটাকে স্পোর্টস ফিকশন মনে হলেও আদতে একদমই তা না। বইটা বেসিক্যালি ইয়ং অ্যাডাল্ট জনরার বই যেটা পাঠককে নিয়ে যায় নস্টালজিয়াতে। জায়গার বর্ণনা, খাবারের বর্ণনা, মাঠের বর্ণনা, পাড়ার বর্ণনা; সব মিলিয়ে একদম চোখের সামনে এসে পড়বে বাটানগর। পাঠক নিজেকে খুঁজে পাবে বইয়ের পাতায় পাতায়। সেই সাথে চরিত্র নির্মাণে দুর্দান্ত দক্ষতা দেখিয়েছেন লেখক। বিশেষ করে টাপুর চরিত্রটা। একই সাথে জটিল ও ভালোবাসা যায় এমন। এ ছাড়াও যতগুলা চরিত্র আছে, কৈশোরে, বয়ঃসন্ধিকালে একদম যেমনটা অনুভব করেছি আমরা, ঠিক সেরকম চরিত্রগুলো। চরিত্রগুলোর কোনো না কোনো একটাতে নিজেকে বসিয়ে নিতে পারবেন পাঠক, অন্তত আমার তো তাই মনে হয়। বইটা পড়তে পড়তে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম ২৩৮ পেজের বইটা কখন যে শেষ হয়ে গেল একদম টেরই পাইনি।
তবে আমি এ বইতে যে চরিত্রটার প্রেমে পড়েছি সেটা হচ্ছে, জ্যাকসন। সবসময় ফান করা ছেলেটাকে কেউ কখনো সিরিয়াসলি নেয়নি। আসলে নেয়ার মতো কোনো সিচ্যুয়েশনও সে তৈরী করেনি। এই জ্যাকসন টাইপের চরিত্র আমাদের সকলের সার্কেলের মাঝেই আছে। জ্যাকসনদের দেখা যায় কিন্তু তাদের ভেতর প্রবেশ করা যায় না, ছোঁয়া গেলেও স্পর্শ করার অনুভূতি পাওয়া যায় না। আমি সারাজীবন ‘জ্যাকসন’ হতে চেয়েছিলাম।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই রকম গতি ধরে রাখা, একদমই কোনো প্লটহোল ছাড়া এ বইটা, সকলের জন্য রেকমেন্ডেড। এ বইকে আপনি রোমান্টিক হিসেবে মার্ক করতে পারবেন, ড্রামা হিসেবে মার্ক করতে পারবেন, স্পোর্টস হিসেবেও মার্ক করতে পারবেন। তবে যেটা ভেবেই পড়েন আর কোনো কিছু না ভেবেও যদি পড়েন, বই আপনার ভালো না লাগার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস। স্মরণজিৎ চক্রবর্তী একেবারে মুগ্ধ করে দিলেন।
টিনেজারদের কথা এতো বাস্তবধর্মীভাবে লেখা যেন মনে হয় লেখকই টিনেজার।
ডোডো, দিয়াগো, কবীর, জ্যাকশন, পুরু, তিতলি আর রুদ্রদের গল্প এটি। নাকি বলব দুটো স্কুলের ফুটবল খেলার গল্প। কিংবা যে বয়সে সর্বস্ব পণ রেখে প্রেমে পড়া যায় সেই বয়সটারই গল্প "পাতাঝরার মরশুমে"।
"সারামাঠ আবার পুরনো দিনের মতে চিৎকার করছে, দিয়াগো দিয়াগো, সাদা-কালো জার্সি পরে বেটে ছেলেটার সেদিকে খেয়াল নেই,ও দৌড়ে চলেছে। ততক্ষণে রবিন মেমোরিয়ালের গোলকিপার গোলের মুখ ছোট করার জন্য এগিয়ে এসেছে। সেটা দেখে ছুটন্ত বলের লতায় আলতো করে বাঁ পায়ে মারল দিয়াগো। মেরে আর সেদিকে তাকালো না। কিন্তু ডুডু দেখলো, সারা মাঠ দেখল,সাদা-কালো বলটা গোলকিপার কে এড়িয়ে উঁচু হয়ে রামধনুর মত বেঁকে দ্বিতীয় পোস্টের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে গেলো। ১-০ নঙ্গী হাই স্কুল।"
কি এক মূহুর্তের জন্য মনে হইছিলো ১৮ই ডিসেম্বর ২২ রাত টাই চলে গেছি। তাই না?
"পাতাঝরার মরশুমে" বইয়ের নাম টাই মনে হয় বিষাদ, বিষণ্ণতা কিংবা বিচ্ছেদ। শীতে শেষ বিকেলের কুয়াশায় ঘেরা কোন স্মৃতি? কিন্তু এইটা ত কখনো ভেবে দেখিনা পাতাঝরার সাথেই যে নতুনের সূচনা শুরু। আর এই সূচনা নিয়ে আসে বসন্তের হাওয়া তাই ত? লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তি তেমনই ঝরাপাতার সূচনা নিয়ে লিখেছেন বইটা।
দিয়েগো ( দয়ারাম আংরে যে কিনা দারুণ ফুটবল খেলে, বাটান নগরের মারাদোনা) , ডুডু (দেবপ্রস্থ ব্যানার্জি যে সামান্য কুসংস্কার মেনে চলে তবে শেষ শান্ত স্বভাবের), কবীর ( দারুণ আত্মবিশ্বাসী,ফুটবলটাকে ভালোবাসে নঙ্গীর গোলকিপার বলে কথা), জ্যাকসন( মনোময় যার হারে-মজ্জায় ফাইজলামি, দুষ্টামি কোথায় কি বলে ফেলে তার ঠিক নেই) ।
গল্পটা মূলত এদের কে ঘিরেই। এরা ভারতবর্ষের ছোট মফস্বল বাটান নগরে বেরে ওঠা টিনেজার। নঙ্গী হাই-র হয়ে খেলতে নামবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রবিন মেমোরিয়ালের বিরুদ্ধে। ওদের স্কুল জীবনের এটাই শেষ বছর। অস্থায়ী গেমস টিচার পুরুকেও চাকরি পাকা করতে হলে জেতাতে হবে এই ম্যাচ। পুরুর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত টাপুর চায় প্রতিশোধ। রবিন-র রুদ্র তাকে সাহায্য করছে।....... একটা ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে বদলে যেতে থাকে প্রত্যেকের জীবন। কে জিতবে?"
গল্পটা যেহেতু একদল কিশোরদের নিয়ে, সেখানে বসন্তের হাওয়ায় গা ভাসাবে না তা কি করে হয়? কিশোর উন্মাদনা,অনবদ্য প্রেম, প্রতিহিংসাপরায়নতা সব মিলিয়েই ঘরে উঠেছে গল্পের মোড়।
পুরু নঙ্গীর হাই স্কুলের নতুন কোচ, তাকে নিয়ে দুই এক লাইন না বললেই নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে নিরবে সয়ে যাওয়া এক ছেলে, একটা এক্সিডেন্টে বদলে যায় ফুটবল কেরিয়ার। হঠাৎই বন্ধু কুশের মাধ্যমে এসে যায় একটা চাকরির সুযোগ। তাকে হতে হবে নঙ্গী হাই-র অস্থায়ী গেমস টিচার। যদি সে টমাস চ্যালেঞ্জ কাপ জেতাতে পারে তবেই তার চাকরি পাকা হবে। শুরু হয় পুরুর নিজেকে প্রমাণের লড়াই। তবুও এস কিছুর মাঝেই কোথায় যেনো হারাতে হয় পুরুর কারো অপেক্ষায় কি?-"তোমারে কি আর কোন ও কালেই দেখিতে পাইব না? তুমি কি আমারে ক্রমশই ভুলিয়া যাইবে?"
কিন্তু এই প্রতিটা চরিত্ররই দ্বিতীয় সত্তা রয়েছে, কেউ একা নয়। দিয়াগো দূর থেক�� রুপাইকে দেখলেই শরীর অসার হয়ে আসে, ডুডু ও সায়কার চোখের মুক্ত খুঁজো , অন্য দিকে কবির ধর্মে বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে পেতে চায় টাপুর কে। কিন্তু টাপুর তার সর্বস্ব দিয়ে চায় পুরকে। এদিকে জ্যাকসন আর মুখে প্রিন্ট মিসটেক নিয়ে আছে বড় দ্বিধায়। তাদের রাইভেল দলের প্রতিপক্ষ রুদ্র একের পর এক ছক একে যাচ্ছে নঙ্গী হাইকে হারানোর জন্য।এদের প্রত্যেকের জীবনে কোন না কোন জটিলতার ছায়া। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো আবেগের বেড়াজালে জর্জরিত যা কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তবে সবকিছুকে উপেক্ষা করেও একটা জিনিস তাদের সকলকে এক সুতোয় বেঁধে রাখে যা তা হল ফুটবল। এই একটা শব্দই যেন তাদের সকলের প্রাণ। টমাস চ্যালেঞ্জ কাপ দখলের লড়াইয়ে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নঙ্গী হাই এবং রবিন মেমোরিয়াল। উভয় পক্ষই ম্যাচ জিততে মরিয়া! কে জিতবে?
দিন শেষে কে জিতবে? রুদ্র, টাপুরের ষড়যন্ত্র? নাকি ড দিয়েগোর বাঁ পায়ের জাদু, ডুডুর শট, জ্যাকসনের চোখ বন্ধ করে মারা শট আর কবীরের গোল বাঁচানোর অসাধারণ দক্ষতা কি নঙ্গী হাইকে তৃতীয় বারের মত জিতিয়ে দেবে টমাস চ্যালেঞ্জ কাপ? বইয়ের মূল চরিত্ররা ছাড়াও এখানে আছে টাপুর, শিমুল, সায়েকা, পরী, মেঘাদি, কুশ, নারুকাকা, রাধাকাকু সহ আরো অনেকের উপস্থিতি জানান দেয় উপন্যাসের স্বার্থকতা। বইয়ের প্রতিটি লাইন বুঝিয়ে দেয় প্রতিশ্রুতি শব্দের মানে আর বোঝায় সংঘবদ্ধতার মানে, বন্ধুত্বের মানে, কঠিন সময়ে শেষ অবধি টিকে থাকার লড়াই।
লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তির সাথে পরিচায় আমার তার লিখা "কম্পাস" বইয়ের সাথে। সাধারণ গল্পকে কি করে অসাধারণ করা যায় লেখক তার লিখার ধরনে বুঝিয়েছেন। বইটা আমার কাছে এত এত ভাল্লাগছে যে কি বলব!
"পাতাঝরার মরশুম শেষ হয়ে এল প্রায়। বসন্ত আসছে। এই লেবু রঙের চাঁদ, এই সারি সারি গুলমোহর, দু-একটা ফুলের ঝাপটা........ সমস্তকে সাক্ষী করে, হাজার হাজার মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে, বসন্ত ফিরে আসছে আবার। বসন্ত ফিরে আসে বারবার।" এভাবেই প্রতি পাতাঝরার মরশুম শেষে বন্ধুত্ব, প্রেম আর প্রতিশ্রুতি যাক মিলেমিশে আর শহরে বসন্ত ফিরে আসুক প্রতিবার...
অনেকগুলো চরিত্র, গল্প এগিয়ে চলে দুটো স্কুলের মধ্যকার ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে। সাথে চলে বয়ঃসন্ধিতে পা দেয়া ছেলেমেয়েগুলোর আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা বোধ, পারিবারিক স্ট্রাগল এসবকিছু। বইটা বেশ সহজ, সুন্দর। ভার লাগলো।
কোন কিছু না ভেবেই বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। বাচ্চাপোলাপানের জন্য বেশ ভাল বই। যদিও এক জায়গায় রগরগে যৌন দৃশ্যের রসালো বর্ননা আছে। এছাড়া বাকি সবই কিশোরদের জন্য পারফেক্ট। গল্পটা ফুটবল খেলাকে ঘিরে। বাটা নগরে দুই স্কুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা টমাস কাপকে ঘিরে। যে শেষ ম্যাচ জিততে পারবে সেই স্কুল চিরকালের জন্য কাপ ঘরে নেবে। এ খেলাকে নিয়েই শুরু হয় পলিটিক্স। এর মধ্যে এক স্কুলের ছাত্র রুদ্র তো পুরা চার্চিল লেভেলের পলিটিশিয়ান। যেকোন ভাবেই হোক প্রতিদ্বন্দ্বী স্কুলকে আটকাবেই। সেটার জন্য প্রেম, কাম আর বাহুবলের প্রয়োগ করতে পর্যন্ত কোন দ্বিধাবোধ নাই। এছাড়াও এ ওর প্রেমে পড়ে আর যার প্রেমে ও পড়ে সে আবার আরেকজনের প্রেমে পড়ে। এগুলা আছেই। সব মিলিয়ে বইটা পড়ে বেশ বিনোদন পেলাম। লেখকের লেখা ঝরঝরে। পড়ে আরাম খুব। বইয়ের শেষে টাপুরের পুরুর প্রতি বুকফাটা আর্তনাদ আমাকে আবেগে আপ্লুত করেছে। কিন্তু সমস্যা একটা, সেটা হল আমার বয়স।
রবীন্দ্রনাথ তো সেই কবেই বলে গিয়েছিলেন, ‘তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। তাহার মুখে আধে-আধো কথাও ন্যাকামি , পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা।’
'পাতাঝরার মরশুমে' বলতে গেলে কলকাতার কাছের 'বাটানগর' নামের একটি মফস্বলের ২০০৫ সালের দিককার গল্প।
গল্পের কুশীলব দিয়েগো, ডুডু, জ্যাকসন, কবীর আর পুরুর। পুরু বাদের বাকি সবাই টিনেজ। টিনেজ এমন একটা সময় যখন ছেলেদের মনে রঙিন আশা, স্বপ্নে বিভোর আর শত বাঁধা ডিঙিয়ে কিছু পাওয়ার হাতছানি। আর মেয়েদের মনে হয় কেউ তাদের পাত্তা দিচ্ছে না।
"বাটানগর" ছবির মতো সুন্দর একটি মফস্বল শহর। এই শহরের দুটি স্কুল এবং তাদের মধ্যকার ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে গল্প আবর্তিন হয়েছে। আর এর মধ্যেই গল্পের কুশিলবদের মধ্যে এসেছে প্রেম, বিরহ, বিশ্বাসঘাতকতা আর একজন অন্যের পাশে এসে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। চার বন্ধু আর ওদের গেল টিচার পুরুর কাহিনী পড়তে পড়তে উদাস হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি নিজে মফস্বলে বড় হয়েছি বিধায় ওদের কর্মকান্ডগুলো আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল কি একটা সময় পছনে ফেলে এসেছি। স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকা আজকের টিনেজরা কি সেই আবহটা পায়? হয়তো পায় কিংবা ওদের মতো করে ওদের টিনেজ অসাধারণ।
বইটার প্রধান চরিত্রে রয়েছে কয়েকজন কিশোর। তাই বলা যায় বইটি কিশোর উপন্যাস। বিশেষ ভাবে বলতে গেলে কিশোর প্রেম ও বন্ধুত্বের উপন্যাস। যেহেতু কিশোর প্রেম নিয়ে ফোকাস করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এডাল্ট কিছু লাইন চলে এসেছে। বইটাতে বলতে গেলে তেমন কিছু নেই। তারপর ও পড়ে আরাম পাওয়া গিয়েছে। সেটা অব্যশই লেখকের লেখনীর গুনে।
বইটা যুবক বয়সের ছেলেদের কাছে বিশেষভাবে উপভোগ্য হবে।আমি কয়েকটা বছর আগে পড়লে হয়তো আর বেশি মজা পেতাম।
স্মরণজিতের লেখা এই প্রথম পড়লাম, উনার সম্পর্কে আগে ওইরকম একটা শুনিনি, তাই একেবারে কোনো এক্সপেকটেশন ছাড়াই বইটা শুরু করেছিলাম। ভাবতেই পারিনি যে বইটা এত ভালো লাগবে!
আর গল্পের ফ্লো খুবই চমৎকার, একদম মেদহীন যেটাকে বলে। যদিও বইয়ে রোমান্টিক ব্যাপার-স্যাপার আরেকটু কমানো গেলে পুরো পাঁচ তারাই দিয়ে দিতাম! এক তারা কমানোর আরো একটা কারণ হচ্ছে এই ধাঁচের গল্পের উপর বেশ কয়েকটা কে-ড্রামা দেখে ফেলেছিলাম, তাই এসব মেলোড্রামাটিক জিনিসে কিঞ্চিৎ অ্যালার্জি দেখা দিচ্ছে(!)
দিয়েগো, ডুডু, ��বীর আর জ্যাকসন- নঙ্গী হাই স্কুলে এটাই ওদের শেষ বছর। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি রবিন মেমোরিয়ালের বিরুদ্ধে ওরা খেলতে নামবে শেষবারের মতো। জিততে পারলে কাপটা চিরদিনের মতো হয়ে যাবে নঙ্গী হাই এর। বিদায় নেবার আগে স্কুলকে কিছু দিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ওরা। জিততে ওদের হবেই। এ নিয়ে বিরাজ করছে এক চাপা উত্তেজনা। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে মফস্বল এলাকার আনাচে কানাচে।
চলতে থাকে খেলার প্রস্তুতি। চারজনে যেমন খেলা হয় না, উপন্যাসেও আছে একাধিক চরিত্র। তাদের মাঝে একজন দিয়েগো। নাম দয়ারাম হলেও পায়ের জাদুর কারণে দিয়েগো বলেই পরিচিত ছেলেটা। কথাবার্তায় চটপটে হলেও মাঠে অবশ্য তেমন পারদর্শী নয় জ্যাকসন। সেদিক থেকে আবার বেশ ভাল খেলে সংস্কারপন্থী ডুডু। আর গোল কিপার কবীর একেবারেই শান্ত প্রকৃতির। কিন্তু মাঠের বাইরেও আরেকটা জীবন রয়েছে ওদের। সেই জীবনে আছে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ মনে প্রেমের ছোঁয়া, পারিবারিক জটিলতা, না পাবার হাহাকার। আর তারই মাঝে ক্ষণে ক্ষণে উঁকি দিয়ে যায় শিমুল, রূপাই আর সায়েকারা।
এসবের মধ্যে জড়িয়ে যায় ভাগ্য বিতাড়িত পুরু। ফুটবলার হয়ে উঠা আর হয় না তার শারীরিক কারণে। আর পুরুর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রতিশোধ স্পৃহা জাগে টাপুরের মনে।
না, এই গল্প দিয়েগো কিংবা পুরুর নয়। টাপুর বা জ্যাকসনেরও নয়। এই গল্প বাটানগরের, যেখানে প্রেম, হাসি, কান্না আর ষড়যন্ত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে একদল কিশোরের জীবনে।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর মূল শক্তি-তার লেখনশৈলী আর অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গী। এমন সাবলীল ভাষায় লেখা প্রতিটা বাক্য, যেন চোখের সামনে ফুটে উঠছিল প্রতিটা দৃশ্য। মনে হচ্ছিল, আমিও বুঝি বাটানগরেরই কেউ! টানা শেষ না করে হাত থেকে রাখতে পারিনি বইটা। বিরতি নিলেও মনে পড়ে থাকত বাটানগরেই। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর একটা খরা দেখতে পেয়েছি সমসাময়িক উপন্যাসের ক্ষেত্রে। আগাছার মতো গজিয়ে উঠা কপিবাজদের ভিড়ে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী একটা স্বস্তির নাম।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখা এই প্রথম পড়লাম। বুঝলাম, তিনি দারুণ গল্প বলিয়ে। দুই স্কুলের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্রে রেখে অনেকগুলো চরিত্র এবং পরস্পর জড়িত নানা ঘটনা নিয়ে দারুণ এক গল্প ফেঁদেছেন। এ উপন্যাস কৈশোরের নস্টালজিয়ায় ভোগাবে যে কাউকে। আমাকেও ভুগিয়েছে। আবার একই সঙ্গে কিছু ঘটনা, চরিত্রের কার্যকলাপ, এবং বিশেষত কথোপকথন অনেক সময় অতি সিনেমাটিক লেগেছে। স্মরণজিতের লেখনী ঠিকঠাক, আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েনি। সবমিলিয়ে পাঠক হিসেবে প্রথমবার স্মরণজিৎ পড়ে সন্তুষ্টই বলা চলে।
আদি ভাইয়ের রিভিউ দেখে পড়া শুরু করেছিলাম। কিছু কিছু বই থাকে যেটা শেষ না করা অবধি মনের মধ্যে শান্তি লাগেনা৷ এই বইটা ঠিক তেমন। লাস্ট দুদিনে মনে হয় বাটানগরের পথে ঘাটে চষে বেড়িছি। ফুটবল, পড়াশুনা, প্রেম, বন্ধুত্ব কি নেই। সব মিলে দারুণ একটা মশলার বই।
ধরুন, একজন ভাইবন্ধুর সাথে কোনো কফিশপে বা চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। সে আপনার সামনে বসে কোনো বিষয়ে একটা গল্প বলছে। উপন্যাস টা পড়তে পড়তে উপন্যাসের টোন, এপ্রোচ, কনভার্সেশান পড়তে পড়তে আমার এমন মনে হচ্ছিলো।
কলেজ পড়ুয়া ছেলেপেলে, তাদের টিন এজ ক্রাইসিস, একটা ঐতিহ্যবাহী ফুটবল টিম উপন্যাসের প্লট। তবে এসমস্ত কিছু ছাপিয়ে দুর্দান্ত হয়ে গিয়েছে লেখনশৈলীর কারনে। কোনো উপন্যাস পড়ছি যত টা মনে হচ্ছিলো, তারচেয়ে ঢের বেশি মনে হচ্ছিলো, কফি খেতে খেতে কোনো ভাইবন্ধুর সাথে আড্ডা মারছি। তার কথাবার্তা শুনছি।
এপার অবধি ঠিক আছে। মাঝামাঝি আসার পর প্রত্যেকটা চরিত্রের জীবনে বাড়াবাড়ি রকমের প্রেমের আধিক্য পীড়াদায়ক লাগছিলো। এছাড়া লেখা খুব স্মুথ। মেদহীন। কি জানি, টীনএইজ বয়সটাও তো ওমোন। চারিদিকে সব সময় অস্থির অস্থির একটা অবস্থা।
গল্পের নামকরণ খুব দারুণ হয়েছে। গল্পের সঙ্গে নামটা একদম মিশে গেছে। এত গুলো চরিত্র এই সীমিত পরিসরে ফুটতে ফুটতে কিছুটা আউলে গেলো মনে হলো। শেষের দিকে এসে গল্পের স্পীডের ধুপধাপ পরিবর্তন এটাকে আরেকটু গোলমাল পাকিয়েছে। কখন কোনটা উহ্য রাখলে আর কোনটা ছাপিয়ে কোনটা হাইলাইট করলে গল্প মজবুত হবে এ ব্যাপারে লেখক পুরোপুরি সফল হতে পারেননি মনে হলো।
তবে ভালো লেগেছে দিয়েগো, ডূডু, জ্যাকসন, কবীর, টাপুর, রূপাই, পরী, সায়েকা, পুরু, আমন, শিমুল, কুশ - আর রোহিণীর জীবনের একটা ছোট্ট কালকে লেখক বন্দি করেছেন।
ক্লাস টেন থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত মন্ডল স্যারের কোচিং সেন্টারে সবাই মিলে হুটোপুটি করে পড়তে যাবার সময়টা মনে পড়ছে। নস্টালজিয়া আসন্ন ছিলো, অনুমেয়োও ছিলো। লেখকের বাকি উপন্যাসগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়বো!
এক আকাশ মুগ্ধতা নিয়ে শেষ করলাম "পাতাঝড়ার মরশুমে"। কী নেই বইটিতে! পড়তে পড়তে কোথাও হো হো করে হাসছিলাম,আবার কোথাও গাঢ় মন খারাপ হচ্ছিল। কখনো কখনো আবার উত্তেজনার পারদ ছিল চরমে।
মূল গল্পটা যে খুব গুরুগম্ভীর বা খুব উচ্চমার্গীয়,এমন নয়। খুব সহজ এবং স্বচ্ছ একটা গল্প। কিন্তু এই সহজ গল্পটাই স্মরণজিৎ চক্রবর্তী ফুঁটিয়ে তুলেছেল অবিশ্বাস্য দক্ষতায়। যাকে বলে,সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস।
কৈশোর-যৌবনের মানসিক টানাপোড়ন,সেই সময়টার সমস্ত খুঁটিনাটি দক্ষতার সাথে নিপুণ হাতে আঁকা হয়েছে এই বইয়ে। পড়তে পড়তে ফিরে যাচ্ছিলাম নিজের সেই সময়টাতে। আর বইয়ের বর্ণণাটা এতো বেশি সুন্দর যে,কখন যে বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে মিশে গিয়েছিলাম,তাদের সুখ দুঃখের ভাগীদার হয়ে গিয়েছিলাম ঠেরই পাইনি।
এ যেন নিছক কোনো বই নয়,একটা অসাধারণ সিনেমা দেখলাম। সবমিলিয়ে, অনেক অনেকদিন পর গাঢ় ভালোলাগা,এক আকাশ তৃপ্তি দিয়ে গেলো কোনো বই।
বেশ ভালো লাগলো পড়ে। স্কুলের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, বন্ধুদের কথা, ছোটো ছোটো মান-অভিমান, ঝগড়া-ভালোবাসা-ভাললাগা গুলোর কথা সব একসাথে মনে পড়িয়ে দিল। কিছু কিছু বই নানা কারণে খুব কাছের হয়ে যায়। এই বইটি তেমনই একটা জায়গা দখল করে রাখল। সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সময়ে ছেলে-মেয়েদের সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে যে উদ্দামতা থাকে, সেটাকেই নিজের প্রথম উপন্যাসে ধরতে চেয়েছেন স্মরণজিৎ। সফল যে হয়েছেন, তা স্বীকার করতে হবে। যদিও কিছু জায়গায় ভালো করার বেশ সুযোগ ছিল, কিন্তু, এসব বাদ দিলেও, সুন্দর এক সমাপ্তির এই উপন্যাস পাঠককে মুগ্ধ করে তোলে।
An ingenious teenage romantic comedy novel, within a small urban city. . . . Its all about School, Teenage Loves, Friendships, Betrayal, Loyalty and relation among classmates as we all have in our daily lives.
Written in 2005 for Sharodiya Patrika, I finished it yesterday night and I am truly spellbound by the classy humor of this novel. Certain jokes are funny enough to read again and again. I am sure going for another read and would advise any book lover to go for this one. Please. . . . DO NOT MISS this one! It's really fab~~
কলকাতার উপকন্ঠের এক মফস্বল শহর বাটানগর। এখানেই পাশাপাশি দুই স্কুল নঙ্গী হাই এবং রবিন মেমোরিয়াল। প্রতি বছর টমাস চ্যালেঞ্জ কাপের অংশ হিসেবে হোম ও অ্যাওয়ে ভিত্তিতে দুইটা ফুটবল ম্যাচ হয় স্কুল দুইটার মধ্যে। গত দুইবাবের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবারও কাপটা নিজেদের করে রেখে দিতে চায় নঙ্গী হাইয়ের দিয়েগোরা কিন্তু রবিন মেমোরিয়ালের রুদ্ররা এবার যেভাবেই হোক ক্যাপটা নিজেদের করতে তৎপর কেননা এবার-ই যে স্কুলের হয়ে ওদের শেষ টুর্নামেন্ট।
নঙ্গী হাইস্কুলে একসাথে টুয়েলভে পড়ে দয়ারাম আংরে বা দিয়েগো ( দারুণ ফুটবল খেলে ও), মনোময় বা জ্যাকসন, দেবপ্রস্থ বা ডুডু এবং কবীর। স্কুল, ফুটবল, আড্ডা বা টিউশন সব একসাথেই কাটে ওদের। আরেকটা জায়গায় ওদের মিল আছে ; বয়েজ স্কুলের নারী-বঞ্চিত প্রতিটা কিশোরের-ই রয়েছে একেকজন স্বপ্নের নায়িকা যাদের কাছ থেকে পাত্তা আদায় করতেও টুর্নামেন্টটার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দিয়েগোর রুপাই, ডুডুর সায়েকা, কবীরের টাপুর – কৈশোরের অপ্রতিরোধ্য টান উপেক্ষা করতে পারে না কেউই। সাথে আছে এক দুর্ঘটনায় ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হওয়া পুরু যে বর্তমানে ওদের কোচ যার জন্যও ম্যাচটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর পজিটিভ ফলাফল-ই যে ওর চাকরিটা পাকা করবে! কিন্তু পুরুর কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া টাপুর যে দল বেঁধেছে রবিন মেমোরিয়ালের রুদ্রর সাথে ; ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক জিততে যে চায় ওরা। এভাবেই এক টুর্নামেন্টে এসে মিশেছে পড়াশুনা, ফুটবল, কৈশোরের প্রেম আর জীবনের রোমাঞ্চ।
ফুটবল আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা। আর কিশোর উপন্যাস পড়তে তো আমার বরাবরই ভালো লাগে। তো যখন এক বইয়ে দুটাই পাওয়া যায় তখন সেই বইটা যে আমার ভালো লাগবে সেটা বলাই বাহুল্য! কৈশোরের বন্ধুত্ব, প্রেম, আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, স্বপ্ন, সাধনা ইত্যাদিকে লেখক দারুণভাবে মিশিয়ে দিয়েছেন ফুটবলের সাথে। তেমন এক্সপেকটেশন নিয়ে বইটা শুরু করি নি কেননা লেখকের লেখনী নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিল না কিন্তু বইটা শেষ করে বলতে হচ্ছে লেখকের লেখনী বেশ উপভোগ করেছি।
চরিত্রগুলোর পাশাপাশি লেখকও একটু অন্যধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন যেগুলো বাংলাদেশে প্রচলিত না, তাই মাঝে মাঝে একটু-আধটু হোঁচট খেলেও গল্পের দ্রুতগতির কাছে এই সাময়িক অসুবিধা হার মেনেছে। বিশেষ ধরনের লেখনী, চিরপরিচিত প্লটের ভিন্ন ধরনের প্রেজেন্টেশন আর দ্রুতগতি আমাকে বাধ্য করেছে টানা পড়ে যেতে। আমি টুকটাক গল্পের সাথে পরিচিত হলেও লেখক বোধহয় আরেকটু বেশি কেননা নিজের স্কুলের ( তিনি নঙ্গী হাই থেকে পড়েছেন) প্রেক্ষাপটেই যে গল্পটা বলেছেন তিনি। একেকটা অধ্যায় একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলার যে টেকনিকটা লেখক ব্যবহার করেছেন সেটাও চমৎকার ছিল।
বলছিলাম যে টুকটাক গল্পের সাথে পরিচিত আমি, সেটা সত্যি। খেলা নিয়ে উত্তেজনা বা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের দিকটা তো চিরপরিচিত-ই। তবু গল্পের কিছু কিছু দিক মেলাতে পারি নি। বিশেষ করে ওদের সবার ধুপধাপ প্রেমে ( জ্যাকসনের ভাষায় বললাম, এখানে একমাত্র ও-ই প্রেম বঞ্চিত কি না!) পড়ার বিষয়টা। এই বয়সে আকর্ষণ থাকে, লুকিয়ে দেখা বা পিছু নেওয়া স্বাভাবিক, বড়জোর দু-একজনের প্রেমও না হয় মেনে নেওয়া যায় কিন্তু তাই বলে সব্বাই! বেশি সিনেম্যাটিক হয়ে গিয়েছে আর কি! লেখকের ভাষারীতির তো প্রশংসা করলাম কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় কিছুটা অস্বস্তিকর ( অন্তত আমার জন্য) পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন। যেমন রঙ্গনার ব্যাপারটা বা পুরু-টাপুরের ব্যাপারটা। মানে যেটা বলতে চাচ্ছি, এরকম দৃশ্য খুব বেশি অস্বাভাবিক না কিন্তু লেখক যে কিছুটা রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করেছেন আর কি! এছাড়া টাপুরের নাইন থেকে ইলেভেনে উঠতে না উঠতেই কিশোরী থেকে নারী হওয়ার দীর্ঘ সময়ের রহস্য, আমন-শিমুলের আকস্মিক মিল বা সায়েরা শেষ মুহূর্তে এন্ট্রি – কিছুটা ব্যাখ্যাতীত বা সিনেম্যাটিক। আর শেষটা তো সেই গৎবাঁধা সমাপ্তিই।
মোটের উপর বলতে গেলে, প্রথম স্মরণজিৎ-পাঠে আমি বেশ সন্তুষ্ট। লেখক তাঁর আরও বই পড়ার দাবি রেখে গেলেন!
ফিকশন আমার বরাবরই প্রিয়। তবে, বইটা তিন-চার বছর আগে পড়লে বোধহয় বেশি উপভোগ্য হতো। এতো এতো চরিত্রের আনাগোনা আর আর গল্পের প্লটের বিস্তৃতি একটা জগাখিচুড়ির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুরুর দিকে একটার সাথে আরেকটা ক্যারেক্টার গুলিয়ে যাচ্ছিল।কুশ আর জ্যাকসনকে মোটা দাগে একই মনে হয়েছে। দিয়েগো আর পুরু স্যার ও তেমন।এই বইয়ের অনেক রিভিউ আছে গুডরিডসে। অধিকাংশই চার বা পাঁচ তারকাসমৃদ্ধ।বইটি নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। কিন্তু প্রথমদিকে গল্পে এতগুলো মোড় থাকায় বা প্লট অনেক ছড়িয়ে যাওয়ায় এবং কয়েকটা চরিত্র একটু বেশিই স্টেরিওটাইপড হওয়ায় আমার কাছে তিন তারকা।তবে,স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ক্যারেক্টারের নামগুলো বেশ বৈচিত্র্যময়!
A book written totally for Teenagers About their new coming feelings, their first crushes, relationships, friendships. But even as a teenager I couldn't vibe with it. I just don't get along with his plots. So it's definitely not for me. Nope.
এই লেবু রঙের চাঁদ, এই সারি সারি ঘুমন্ত গুলমোহর, এই দু’-এক ঝাপটা ফুলের গন্ধ, এই কণ্ঠহারের মতো মার্কারি ভেপার, এই ঝুলনের মতো সাজানো শহরতলি, এইসব বন্ধুত্ব, এইসব ভালবাসা —সমস্তকে সাক্ষী করে, হাজার হাজার মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে, বসন্ত ফিরে আসছে আবার। বসন্ত ফিরে আসে বারবার।