মধ্যভারতের ছোট্ট স্বাধীন রাজ্য ঝিন্দ। রাজা ভাস্কর সিংহের মৃত্যুর পর শঙ্কর ও উদিত দুই ছেলের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে শুরু হল বিরোধ। অভিষেকের ঠিক আগে শঙ্কর সিং নিখোঁজ হলেন। এদিকে কলকাতার এক বাঙালি ছেলে গৌরীশঙ্কর রায় হুবহু শঙ্কর সিংহের মতোই দেখতে। গোলমাল এড়াতে তাঁকেই শঙ্কর সিং সাজিয়ে সিংহাসনে বসাতে উদ্যত হলেন ঝিন্দের পুরনো কিছু রাজকর্মী। অভিষেক সম্পন্ন, আগে থেকে বিবাহ পর্যন্ত স্থির হয়ে আছে।
কিন্ত সহজে তা মেনে নেবেন কেন উদিত সিং? তিনি তো সবই জানেন। শঙ্কর সিং নিখোঁজ নন, বন্দী করে রাখা হয়েছে তাঁকে। কিন্ত কোথায়? শঙ্কর সিং কি মুক্তি পাবেন? গৌরীশঙ্কর কি লুকিয়ে রাখতে পারবেন তাঁর আসল পরিচয়? তাছাড়া, গৌরীশঙ্করের সঙ্গে এমন চেহারাগত অবিকল সাদৃশ্যই বা কেন থাকবে মধ্যভারতের স্বাধীন রাজ্যের এক রাজকুমারের?
কীভাবে এসব রহস্যের সমাধান হলো, তাই নিয়েই অপূর্ব রোমান্স ও রোমাঞ্চে ভরা এই কাহিনী।
এ-কাহিনীর উৎস বিদেশি। Anthony Hope রচিত The Prisoner of Zenda থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা। তবে পটভূমি ও চরিত্রাবলীকে অসাধারণ মুনশিয়ানায় পুরোপুরি ভারতীয় করে তুলেছেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
Sharadindu Bandyopadhyay (Bengali: শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়; 30 March 1899 – 22 September 1970) was a well-known literary figure of Bengal. He was also actively involved with Bengali cinema as well as Bollywood. His most famous creation is the fictional detective Byomkesh Bakshi. He wrote different forms of prose: novels, short stories, plays and screenplays. However, his forte was short stories and novels. He wrote historical fiction like Kaler Mandira, GourMollar (initially named as Mouri Nodir Teere), Tumi Sandhyar Megh, Tungabhadrar Teere (all novels), Chuya-Chandan, Maru O Sangha (later made into a Hindi film named Trishangni) and stories of the unnatural with the recurring character Baroda. Besides, he wrote many songs and poems.
Awards: 'Rabindra Puraskar' in 1967 for the novel 'Tungabhadrar Tirey'. 'Sarat Smriti Purashkar' in 1967 by Calcutta University.
এই অসাধারণ বইখানি অবশ্যই আমার মোস্ট ফেভারিট শেলফ এ থাকবে। শরদিন্দুর যাত্রা শুরু "তুমি সন্ধ্যার মেঘ" দিয়ে। তারপর যতগুলো উপন্যাস পড়ছি প্রায় সবগুলোই পাঁচ তারা দিয়েছি। যখন যেটা পড়ছি তখন সেটাকেই স্পেশাল মনে হয়েছে। এটাও স্পেশাল আমার পাঠক জীবনে। যাইহোক তার প্রত্যেকটি ঘঠনার বর্ণনা, ঝিন্দের, ঝড়োরা রাজ্যের প্রাকৃতিক রূপালঙ্কারের বর্ণনা, এমন কি প্রতি লাইনে লাইনে একটা নতুন নতুন রহস্য সৃষ্টি করে উচ্চমর্যাদায় নিয়ে গেছেন এই উপন্যাসটিকে।
কলকাতার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত রায় দেওয়ান জমিদারবাড়ি। রায়-দেওয়ান কালীশঙ্কর রায় প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে কলকাতায় আসেন এবং কিনে নেন এই জমিদারী। বিয়ে করে সংসারও পেতেছিলেন, কিন্তু সংসারসুখ বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। অজানা আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মারা যান কালীশঙ্কর। গল্পের নায়ক গৌরীশংকর রায়, দাদা শিবশঙ্কর রায় ও বৌদির সাথে বর্তমানে এই বাড়িতে বাস করছেন। নিরুপদ্রবেই কাটছিল তাদের দিন।
হঠাৎ একদিন বাড়িতে এসে হাজির হলেন অদ্ভুত বেশভূষার এক ব্যক্তি, নাম ধনঞ্জয় ক্ষেত্রী। তিনি নাকি ঝিন্দ রাজ্যের রাজার বংশানুক্রমিক পার্শ্বচর। সবচেয়ে অবাক করার মত কথা হল তিনি কালীশঙ্কর এর তৈলচিত্র দেখে তাকে চিনতে পারলেন, আর এরা তার বংশধর শুনে নিজেও হতভম্ব হয়ে গেলেন। এবার সেই অদ্ভুত ব্যক্তি শোনালেন এক আশ্চর্য ঘটনা, আর দিলেন এক অদ্ভুত প্রস্তাব।
গৌরী নাকি দেখতে হুবহু তাদের যুবরাজ শঙ্কর সিংহের মত, যার ক'দিন বাদে অভিষেক। ছোটভাই উদিতের ষড়যন্ত্রে শঙ্করকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এখন তাকে খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত গৌরী যেন তার ভূমিকায় অভিনয় করে তাদের সাহায্য করেন। পদে পদে বিপদের ভয় থাকা সত্বেও বরাবর এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় গৌরী সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ঘটল আরেক ঘটনা, বলা যায় দু্র্ঘটনা। গৌরী প্রেমে পড়ল শংকরের বাগদত্তা ঝড়োয়ার রাজকুমারী/রাণী কস্তূরীবাঈএর। তারপর..... অবশ্যই পড়তে হবে।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়া এই উপন্যাসটি এতো ভালো লেগেছে যা শুধু লিখে প্রকাশ করার মত নয় ।
ঝিন্দের রাজার অভিষেক হবে কিন্তু হবু রাজা লাপাত্তা। তাকে খুঁজতে বের হলেন রাজার বিশ্বস্ত লোক ধনঞ্জয়। কলকাতায় আসলেন তিনি; রাজাকে তো পেলেন না তবে হুবুহু রাজার মতো দেখতে বাঙালী ছেলে গৌরীশঙ্কর রায়কে পেলেন। গৌরী কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত জমিদার ঘরের ছেলে। তাকেই বুঝিয়ে নিয়ে গেলেন রাজার পরিবর্তে অভিষেকে অংশগ্রহণের জন্য। যতদিন রাজাকে না পাওয়া যায় ততদিন রাজার পরিবর্তে অভিনয় করে যেতে হবে আরকি! আবার ওদিকে পাশের রাজ্যের রাজকন্যা কস্তুরীবাঈ এর সাথে নকল রাজার হঠাৎ দেখায় মন বিনিময় হয়ে যায় :/ এডভেঞ্চারাস কাহিনী :3
এই বইয়ের ভূমিকায় লেখক বলেছেন- " যেদিন Anthony Hope এর Prisoner of Zenda প্রথম বাহির হয় সেদিন রোমান্স-রাজ্যের একটি নূতন পথ খুলিয়া গিয়াছিল। তারপর সেই পথে দেশ-বিদেশের অনেক যাত্রীই চলিয়াছেন।" এই কথার নমুনা নিম্নরূপ🙂-
এই বই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন ঝিন্দের বন্দী। আবার এই বাংলা বই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পরিচালক তপন সিংহ ১৯৬১ সালে নিয়ে এলেন ঝিন্দের বন্দী সিনেমা
এরপরে ২০১২ এর দিকে Prisoner of Zenda অনুকরণে এলো Masquerade নামের কোরিয়ান সিনেমা। এওয়ার্ড আর টাকা পয়সা ইনকাম করে কোরিয়ার মোস্ট ডিমান্ডেবল সিনেমার লিস্টে উঠে গেল।
আর ওদিকে ২০১৫ তে পরিচালক এস. ভারজাতিয়া জুটি বানালেন সালমান খান আর সোনম কাপুরকে (চাচা-ভাতিজি :3) নিয়ে। দিপাবলিতে রিলিজ পেলো হিন্দি সিনেমা Prem Ratan Dhan Payo বক্স অফিসের হিসাবে আয় দাঁড়ালো ৪৩২ কোটি রূপি! আর আমি এই সিনেমা দেখার সুবাদেই এই ঝিন্দের বন্দী বইয়ের কথা জানতে পারি :D
অধিকাংশ পাঠক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনেন তাঁর অসাধারণ সাহিত্যকর্ম ব্যোমকেশ কাহিনির জন্য। কিন্তু ব্যোমকেশ কাহিনির বাইরে তাঁর আরো ভালো ভালো রচনা রয়েছে। ঝিন্দের বন্দী তেমন একটি বই। বইটি মূলত Anthony Hope এর The Prisoner Of Zenda এর বাংলা সংস্করণ। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নিপুণ হাতে ভারতবর্ষ হতে বইয়ের উপাদান নিয়ে বিদেশি কাহিনিকে দেশীয় মোড়কে আমাদের নিকট উপস্থান করেছেন। বইটি থেকে বাংলা চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়েছে।
কলকাতা শহরের দেওয়ান কালীশঙ্কর রায়ের অধস্তন পঞ্চম পুরুষ শিবশঙ্কর রায় এবং গৌরিশঙ্কর রায়। বড় ভাই শিবশঙ্কর এর যেখানে ইতিহাস কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়াদি জানার অপার উৎসাহ সেখানে ছোট ভাই গৌরিশঙ্কর এর আগ্রহ খেলাধুলা, সমিতি-ক্লাবে অংশগ্রহণ নিয়ে। আজ ফেন্সিং শিখছে তো কাল তলোয়ার চালনা শিক্ষা নিচ্ছে। বৌদি অচলা কিংবা ভাই শিবশঙ্কর এর পুনঃপুন বাক্যবাণ সত্ত্বেও ঘরের লক্ষ্মী আনতে আগ্রহ নেই গৌরীশঙ্কর এর। এমনই এক সময় তাদের বাড়িতে আগমন ঘটে ধনঞ্জয় নামের এক ব্যক্তির, যিনি নিজেকে মধ্যভারতের এক পাহাড়ি রাজ্যের রাজার পার্শ্বচর হিসেবে পরিচয় দেন।
মধ্যভারতের পাহাড়ঘেষা এক রাজ্য ঝিন্দ। ব্রিটিশ শাসন চলমান হলেও সেই এলাকার মানুষদের ব্রিটিশরা ঘাটায় না। ঝিন্দ ছিল স্বাধীন রাজ্য। ঝিন্দের পাশেই তাদের আত্মীয়ের রাজ্য ঝড়োয়া। ঝিন্দের রাজা ভাস্কর সিং মারা যাওয়াতে তার সিংহাসনের দুই অধিকারী শঙ্কর সিং ও উদিত সিং এর মাঝে রেষারেষি শুরু হয়ে যায়। বড় সন্তান হিসেবে শঙ্কর সিং সিংহাসনের যোগ্য অধিকারী। অথচ ছোট হয়েও উদিত সিং সিংহাসনে বসতে চায়।কিন্তু জনগণ তাকে চায় না কারণ মাতাল লম্পট হলেও শঙ্কর সিং এর প্রাণটা ভারি দরাজ, অন্যদিকে উদিত সিং দুর্দান্ত অত্যাচারী। সিংহাসন দখলের লোভে দুই-দুইবার উদিত সিং অভিষেকের আগে নারীর লোভ দেখিয়ে বড় ভাই শঙ্কর সিংকে ভাগিয়ে দেন। কিন্তু পার্শ্বচর ধনঞ্জয় এর কারণে উদিত সিং এর কু-চিন্তা চরিতার্থ হয়না। একদিন সত্যি সত্যিই লাপাত্তা হয়ে যান কুমার শঙ্কর সিং এবং ভাগ্যক্রমে দেখা হয় কালীশঙ্কর রায়ের অধস্তন পঞ্চম পুরুষের সাথে। দুই ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য কোথায়?
বইটিতে মোট ২২ টি পরিচ্ছেদ আছে এবং প্রত্যেক পরিচ্ছেদকে ���ার গল্প অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে। বইটির প্রথম থেকেই রহস্য শুরু হয়েছে এবং গল্প যত এগিয়েছে উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পেয়েছে পরের ঘটনা জানার জ��্য। বিদেশি গল্পের অনুকরণে দেশি গল্প উপস্থান করতে হলে বিভিন্ন বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হয়। এদিক দিয়ে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো কমতি রাখেন নি। অনেক সুন্দর কাহিনি প্রবাহ, সংলাপ, ক্লাইম্যাক্সের মাধ্যমে বইয়ের সমাপ্তি টেনেছেন। বইটি পড়তে বিরক্তি লাগার প্রশ্নই আসে না। এক বসায় পড়ার মতো একটি বই। হ্যাপি রিডিং।
বেশ নাটকীয়তায় ভরপুর এক ঐতিহাসিক ধাঁচের উপন্যাস। রহস্য-রোমাঞ্চ, উত্থান-পতন, ট্র্যাজেডি কিছুরই কমতি ছিল না। অবশ্য মৌলিক রচনা না। প্রিজনার অব জেন্দা অবলম্বনে লেখা। তবে না জানলে একবিন্দুও এরকম অনুভূত হবে না। সম্ভবত বলিউডে সিনেমাও আছে এই গল্প অবলম্বনে।
"Anthony Hope" এর "Prisoner of Zenda" বই থেকে এটা মূলত অনুপ্রাণিত। এই নামে আমাদের একটা সিনেমা আছে। ইভেন Prisoner of Zenda থেকেও কোরিয়ান একটা সিনেমা "Masquerade" নামে সিনেমা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। শেষমেশ- সালমান খান আর সোনাম কাপুরের Prem Ratan Dhan Payo ও কিন্তু এখান থেকেই অনুপ্রাণিত।
এই বইটা এত্তো সুন্দর একটা বই! কাহিনী হচ্ছে- ঝিন্দ-ঝড়োয়া মধ্যভারতের দুইটি স্বাধীন রাজ্য। সেই রাজ্যের হবু রাজা শংকর সিং- যাকে অভিষেকের ঠিক আগে আগেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে রাজার এমন মতিভ্রম প্রায়ই হয়- রাজ্যের চেয়ে মদ মেয়েমানুষের তার বেশি নেশা। এই অকর্মণ্য লোককে কিছুতেই রাজার আসনে বসতে দিতে চায় না- তার ছোটো ভাই উদিত সিং- তার ইচ্ছা নিজেরই বসার। এদিকে শংকর সিং এর সব কর্মচারীরা তাকেই বসাবে- কিন্তু অভিষেকে দশদিন আগে শংকর সিং লাপাতা।
শংকর সিং কে খুঁজতে তার প্রধান নির্বাহী চলে আসলো কলকাতায়। শংকর সিংকে পাওয়া গেলো না- পাওয়া গেলো- "গৌরী শংকর রায়" নামে এক বাঙালী জমিদার পুত্রকে- যে কাকতালীয় ভাবে হুবহু শংকর সিং এর মতোই দেখতে (যদিও কাকতালীয় নয়, এরা বংশধর একজনেরই)। তাকে অ্যাডভেঞ্চারে লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হলো- যতোদিং শংকর সিংকে খুঁজে পাওয়া যায়।
এদিকে শংকরের বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো পাশের রাজ্যের রাজকন্যা অনিন্দ্যসুন্দরী কস্তুরীবাঈ এর সাথে নকল রাজার মন বিনিময় হয়ে যায়, রাজ্যের মানুষগুলো আপন করে নেয় এই নকল রাজাকেই। এবার কি হবে? ঝিন্দের নকল রাজা কি ঝিন্দের বন্দী হয়ে থাকবে? নাকি ফিরে যাবে নিজের জায়গায়? শংকর কি ফিরে আসবে?।
দীর্ঘদিন পর সাধুভাষা পড়তে গিয়ে একটু কষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারপরও শরদিন্দু সবসময়ই শরদিন্দু-ই। ঝিন্দের বন্দী অসাধারণ একটা এডাপ্টাশন উনার। একেবারে ভারতবর্ষের ইতিহাসের সাথে খাপ খেয়ে যাওয়া কাহিনী। আর দারুণ বর্ণনাভঙ্গি তো রয়েছেই। রোমাঞ্চ, রোমান্স, রাজনীতি, রাজকীয় কূটকৌশল সবই ছিল কাহিনীতে। শেষটাও ভালো লেগেছে।
এক দুর্দান্ত চরিত্রের বাঙালী কালীশঙ্কর রায়। সাধারণ বাঙালীর মতো ঘরকুণো স্বভাবের নন তিনি। দীর্ঘদিন নানান দেশ পরিক্রমা করে বাংলায় ফিরে জমিদারি করে আচমকা একদিন গুপ্তঘাতক দ্বারা নিহত হন। সেই খুনের রহস্য কখনো উদঘাটিত হয়নি। তাঁরই বংশধর শিবশংকর আর গৌরীশঙ্কর। দুইভাই এ মিল খুব, কিন্তু স্বভাবে অমিল। দাদা ধীরস্থির, ইতিহাস আর প্রত্নতত্ত্বে আগ্রহী মানুষ। ভাই দুর্দান্ত চরিত্রের, খেলাধুলা, সাঁতার, ফেনসিং এসব নিয়ে মেতে আছে। বৌদির ঘন ঘন তাড়া সত্ত্বেও বিয়ে-থা এখনো করা হয়ে ওঠেনি। এমন নিরুপদ্রব জীবনে হঠাৎ ধনঞ্জয় সর্দার বলে মধ্যভারতের পাহাড়ে ঘেরা ঝিন্দ রাজ্যের রাজার পার্শ্বচর এসে হাজির। এক অদ্ভুত প্রস্তাব নিয়ে। সুদূর ঝিন্দ রাজ্যের রাজা ভাস্কর সিং মারা যাওয়ার পরে তার দুই পুত্র শঙ্কর সিং এবং উদিত সিং এর মধ্যে রাজ্য নিয়ে বেঁধেছে বিরোধ। শুরু হয়েছে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। অদ্ভুত ব্যাপার হল গৌরীশঙ্কর এবং শঙ্কর সিং এর চেহারা হুবহু এক। এর পেছনের রহস্য কী? বাঙালীরা ভীতু এই অপবাদ ঘোচাতে এবং শঙ্কর সিংকে নিরাপদে রাজসিংহাসনে বসাতে গৌরীশঙ্কর ছদ্মবেশে গিয়ে হাজির হয় ঝিন্দে। এরপর নানান রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটতে থাকে। একই সাথে শুরু হয় রোমান্টিক কিছু ঘটনাপ্রবাহ ও।
ঐতিহাসিক এবং রোমাঞ্চ উপন্যাস দুই ক্ষেত্রেই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর সাবলীল ভাষা, চরিত্রচিত্রণ এবং কাহিনী পাঠককে আকণ্ঠ নিমজ্জিত করে রাখে বইয়ের পাতায়। এই গল্পে ময়ূরবাহন বলে একটি খল চরিত্র রয়েছে। চরিত্রটি এমনভাবে আঁকা হয়েছে যে পাঠকেরা পড়তে পড়তেই ময়ূরবাহনের প্রতি একরাশ ঘৃণা এবং বিরক্তি অনুভব করবেন। বিশেষত যখন ময়ূরবাহনের হাসির বর্ণনা দেয়া হয় তখন৷ আবার রুদ্ররূপ বলে একটি চমৎকার চরিত্র রয়েছে। বিশ্বস্ততা এবং বন্ধুত্বের প্রতীক এই চরিত্রটি। এছাড়াও কস্তুরী বাঈ, চম্পা তাদের জায়গায় যথাযথ।
উপন্যাসটি লেখক রচনা করেছেন অ্যান্থনি হোপ রচিত দ্য প্রিজনার অব জেন্দা উপন্যাস এর ছায়া অবলম্বনে। তাতে ভারতীয় ইতিহাস আর সংস্কৃতি মিশিয়ে বইটিকে করে তুলেছেন অনবদ্য। চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে, গৌরীশঙ্কর এবং শঙ্কর সিং চরিত্রে যুগ্ম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। আর ময়ূরবাহন নামক দুর্ধর্ষ খল চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
উপন্যাসের শেষটা দারুণ নাটকীয় এবং উপভোগ্য৷ একইসাথে পাঠকদের জন্য স্বস্তির।
বছর শেষে এত সুন্দর একটা বই পড়া হবে, ধারণাই ছিলো না। "ঝিন্দের বন্দী" - শরদিন্দুর লিখায় জাদু আছে বলতে হবে। শরদিন্দু বলতে বোমক্যাশকেই চিনি। যদিও আমার বোমক্যাশ পড়া হয়নি। শরদিন্দুর সাথে পরিচয় ছোট গল্প দিয়ে। অসাধারণ লিখনির বটে মসাইশের।
ঝিন্দের বন্দী মূলত "Anthony Hope"এর "Prisoner of zenda" থেকে অনুপ্রাণিত। আমি ঠিক সিউর না তবে বলিউড এর সালমান খান এর "Prem ratan dhan payo" ছবির সাথেও এর মিল রয়েছে।
অতি সাধারন গল্প, ঝিন্দে - ঝড়োয়া দুইটি স্বাধীন রাজ্য নিয়ে গড়ে ওঠা গল্প। প্রাসাদ, সিংহাসন,ষড়যন্ত্র, ঐত্যিহাসিক ফ্যান্টাসটি, রোমান্স রয়েছে গল্প জুড়ে। প্রতিটি চরিত্রে এতটুকু ফাক রাখেনি লেখক। কাহিনী,সংলাপ,জায়গা বেধে দারুণ মিল রেখে, অনেকটা নাটকীয় ভাবে শেষ করেছেন গল্পের রেশ। অসাধারণ একটা বই। পুরাই ফাইভ স্টার। যাদের পড়া হয়নি তাদের পড়ার অনুরোধ রইল। হ্যাপি রিডিং।
Fantastically graceful! What a story! Not only its romantic, but also adventurous, suspenseful, and beautiful. Its the most adventurous story by the author, at least among the ones I have read. It can be defined as political drama. Prospective king against his vicious brother, and a third party hero coming in aid and got struck in the middle of everything. I liked the characterizations, environmental descriptions, plot, progress and ending.
It might be inspired by The Prisoner of Zenda, but in its own right the story is masterpiece.
সিক্স কি সেভেনের সমাজ ক্লাসে বইয়ের ভেতরে প্রথম গুঁজে পড়া বই।বান্ধবীর প্রচন্ড তাড়া,লুকিয়ে পড়ার ধুকপুকানি আর অসাধারণ গল্প গাঁথুনি ---- এখনো এদ্দিন পরে ও সমান উত্তেজনা পাই,সমান কৌতূহলে গৌরীশঙ্করের অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গী হই :) আমার কাছে এন্থনি হোপের আসল প্লটকে ও ছাড়িয়ে গেছেন শরদিন্দু। কৈশোরের মধুকরা দিনগুলো মাঝে মাঝেই ফিরে আসে এই বই দিয়ে, সমান মুগ্ধতা নিয়ে :)
This is the first historical romance book that I have read till now. I faced some difficulties to read it because of its complex Sadhu writing style. However, the language barrier can't depict that it is a masterpiece. While reading the book, I suddenly remembered the Salman Khan movie "Prem Ratan Dhan Payo" and understood that it took inspiration from it. Got it from the librarian's recommendation, really thankful to him. If any of you have read the book then i want to have a honest take about the climax as i didn’t quite resonate with the ending. 5/5 Book 🤝
অসাধারন । ফ্যান্টাস্টিং । একবারও মনে হয়নি বইটি কোন বইয়ের ছায়া অবলম্বনে লিখা । তবে আমি বইটিকে ছায়া অবলম্বনে বলতে নারাজ । "প্রিজনরা অফ জেনডা" র মুল থিম ছাড়া কোন কিছুই কপি করা হয় নাই । লেখক নিজস্ব স্টাইলে নিজস্ব উপাদান দিয়ে নিজের মনের মত করে লিখেছে । তাই আমার হিসেবে মৌলিক বলেই চালিয়ে দেওয়া যায় । শরদিন্দুর সব হিস্টোরিক্যাল বই জোগাড় করতে হবে দেখছি ।
টানা পড়ে শেষ করার পর মুখ দিয়ে যে শব্দটি বের হচ্ছে তা হলো - বাহ!!মধ্যভারতের এক ছোট্ট স্বাধীন রাজ্যে ঝিন্দ;সেখানকার রাজত্ব নিয়ে দুই ভাইয়ের রেষারেষির মধ্যেই হুট করেই নিখোঁজ হয়ে গেলেন বড় ভাই শঙ্কর সিংহ।তারপর এক বাঙালি যুবক গৌরীশঙ্কর কিভাবে গিয়ে ঝিন্দের রাজা হলেন,রাজকন্যার সাথে প্রেম করলেন,শত্রুর বিনাশ করলেন কিন্তু প্রাণে বাঁচলেন কি?
সাধুভাষায় রচিত উপন্যাসটির বর্ণনা এতো প্রাঞ্জল যে এক পৃষ্ঠা পড়েই একদম জমে গিয়েছিলাম।আর 'The Prisoners of Zenda' থেকে এডাপটেশন সম্পর্কে শরদিন্দু বাবু বলে গেছেন 'নামকরণের দ্বারাই বংশপরিচয় স্বীকার করিয়া লওয়া হইয়াছে'!
যেহেতু মূলটা পড়ি নাই সেহেতু বলতে পারতেছি না যে এডাপটেশন কিরূপ হয়েছে।একটা স্বতন্ত্র উপন্যাস হিসেবে ধরে কেমন লেগেছে সেটা তারকার সংখ্যাতেই প্রকাশ্য!
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ওস্তাদ লিখিয়ে ছিলেন। লেখায় মুসলিমবিদ্বেষটুকু নজরআন্দাজ করতে পারলে মনে হবে, যা লিখেছেন তাতেই তিনি সফল। 'ঝিন্দের বই' মৌলিক কেতাব নয়। বিলেতি লেখক আ্যন্টনি হোপের 'প্রিজনার অফ জেন্দা'র মতো পাঠকপ্রিয় উপন্যাসকে নিজের মতো শরদিন্দুবাবু গ্রহণ করেছেন। তার ওপর ভিত্তি করেই ভারতীয় পটভূমিকে মাথায় রেখে রচনা করেন 'ঝিন্দের বন্দী'। এই বইখানার ওপর নির্মিত হয়েছে ব্যবসাসফল একখানা বই। যা এখনও দেখলে ভালো লাগে।
ঝিন্দ রাজ্যের সিংহাসন নিয়ে ঘোরঘোরালো কাহিনি পড়ার আগেই হোপ সাহেবের 'প্রিজনার অফ জেন্দা' পড়ি। পরে ঝিন্দের কাহিনি পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করি বিদেশি হোপ সাহেবের চাইতে আমাদের দেশি লেখক শরদিন্দুবাবুর ঝিন্দের উপাখ্যান ঢের বেশি রোমাঞ্চকর ও সুখপাঠ্য।
যারা এখনও পড়েননি 'ঝিন্দের বন্দী', তারা জানেন না 'আপনি কী হারাইতেছেন। ' দেশীয় রাজ্য ঝিন্দের কাহিনি পড়ুন। তাতে রোমাঞ্চ ও রোমান্স দুটোই পাবেন। বাড়তি পাবেন দেশীয় রাজ্য সম্পর্কে কিছু ধারণা।
ক্লাস 7 কিংবা 8 এ পড়াকালীন স্কুলের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে বাসায় লুকিয়ে পড়া লাগত। সেই সময় পড়েছিলাম। তখন পড়তে কষ্ট হচ্ছিল সাধুভাষার জন্য্য কিন্তু ভালোও লাগছিলো... এককথায় অসাধারণ বইটা😍
ঝিন্দ নামে এক স্বাধীন ছোট্ট রাজ্য আছে মধ্য ভারতে। সমতল ভূমি থেকে সেখানে যেতে হয় পাহাড় টপকে। সি -লেভেল থেকে চার হাজার ফুট উঁচু। ঝিন্দ রাজ্যের নদীর নাম কিস্তা। নদী ঝর্ণা গাছপালা আর পাহাড় দিয়ে ঘেরা সে এক অপরূপ সুন্দর রাজ্য। সেই রাজ্যর রাজা ভাস্কর সিংহের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে শঙ্কর সিংহ ও উদিত সিংহের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে শুরু হল বিরোধ। কোনভাবে বিরোধ মিমাংসা করে অভিষেকের দিন ঠিক হলো। রাজা হবেন শঙ্কর সিংহ, কিন্তু অভিষেকের ঠিক আগে শঙ্কর সিং নিখোঁজ হলেন। অনুমান নির্ভর এক খবর পাওয়া গেলো তিনি কোন এক মেয়েকে নিয়ে কলকাতা চলে গেছেন। কলকাতায় গিয়ে শঙ্কর সিংহকে খুজতে গিয়ে সেখানে দেখা মিললো এক বাঙালি ছেলে গৌরীশঙ্কর রায়ের সাথে, যে দেখতে হুবহু শঙ্কর সিংহের মতোই । রাজ্য বাঁচাতে আর রাজ্যর গোলমাল এড়াতে তাঁকেই শঙ্কর সিং সাজিয়ে সিংহাসনে বসাতে উদ্যত হলেন ঝিন্দের পুরনো কিছু রাজকর্মচারী । গৌরীশঙ্কর কে শঙ্করসিংহ সাজিয়ে নিয়ে আসা হলো ঝিন্দে। নির্ধারিত দিনে অভিষেক ও সম্পন্ন করা হলো, আর আগে থেকে যার সাথে বিবাহ পর্যন্ত স্থির হয়ে ছিলো তার সাথে বাগদানও সম্পন্ন করা হলো। এপর্যন্ত সব কিছু সহজ সরল ঠিকঠাক চলছিলো না, পুরনো কিছু রাজকর্মচারী সকলের চোখে সব কিছু সহজ করে দেখানোর চেষ্টা করছিলেন মাত্র। উদিত সিং এই সহজ কিছু মেনে নিতে পারছিলেন না, তিনি সব জানতেন তাই একটার পর একটা ঘটনা তিনি ঘটিয়ে চলেছিলেন।
কিন্ত কোথায় শঙ্কর সিং? তিনি কি ফিরে আসবেন? আর গৌরীশঙ্কর কতদিন নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারবেন? আর গৌরীশঙ্করের সঙ্গে চেহারা, কণ্ঠের এমন হুবহু মিলইবা কেন থাকবে মধ্যভারতের স্বাধীন রাজ্যের এক রাজকুমারের? এসব প্রশ্নের মীমাংসা মিলবে শুধু মাত্র " ঝিন্দের বন্দী"তে।
Anthony Hope এর The Prisoner of Zenda-এর কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন ঝিন্দের বন্দী। তবে পটভূমি ও চরিত্রাবলীকে অসাধারণ মুনশিয়ানায় পুরোপুরি ভারতীয় করে তুলেছেন তিনি। এই কাহিনী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পরিচ��লক তপন সিংহ ১৯৬১ সালে নিয়ে এলেন ঝিন্দের বন্দী সিনেমা।
অসাধারণ এক উপন্যাস। একবার শুরু করলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। তবে আমি বুঝলাম না"ঐতিহাসিক কাহিনিসমগ্র" এর মধ্যে "ঝিন্দের বন্দী" নাই।
অনন্য, অসাধারণ, জাদুকরী। শরদিন্দুর ভাষার জালে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। প্রিজনার অফ জেনডা আমার খুব প্রিয় বইয়ের একটা। অনেকবারই সেটা পড়া হয়েছে। এবার এটা পড়তে গিয়ে একবারের জন্যেও মনেহয়নি সেই বইয়ের অ্যাডাপ্টেশন। বেঁচে থাকুক গৌরীশঙ্কর আর কস্তুরির ভালোবাসা।
বাংলাদেশের নালন্দা থেকে প্রকাশিত সংস্করণটা পড়লাম। এতো বেশি বানান ভুল যা বলার নয়। এই ধরনের ক্লাসিক বইয়ে যেখানে একটা ভুল সহ্য হয় না, সেখানে প্রতি পৃষ্ঠায় গাদা গাদা বানান ভুল।
এক বসায় শেষ করার মতো একটা উপন্যাস। কখন শুরু করেছি আর কখন যে গৌরীশঙ্কর, ধনঞ্জয়, রুদ্ররূপ, চম্পা, কৃষ্ণা, কস্তুরীবাঈ এর সাথে ঝিন্দ রাজ্যে আমিও বন্দী হয়ে গেছি বইটা শেষ করার আগে বুঝতেই পারিনি! সবমিলিয়ে বেশ ভালো লাগলো।
শরদিন্দুর লেখা এই উপন্যাসগুলি বাংলা সাহিত্যের তাজ। প্রেম বলুন, আর এডভেঞ্চার, সবকিছু তার কলমে এত অসাধারণভাবে ফুটে ওঠে, যে তা অসামান্য।
তার সবগুলি গল্প নিয়েই মুভি করা যায় ও করা উচিত৷ যারা এই জিনিস মিস করেছেন, you missed an experience. সেটা তাড়াতাড়ি শুধরে নিন। এই উপন্যাসে এডভেঞ্চার এর চেয়ে প্রেমপর্ব বেশি ভাল লেগেছে৷ খুব ক্লাসি বাঙালিয়ানা যেমন আছে, তেমনি আছে সেই রাধিকার বুকের ধুকপুক।
জানি, এই বইটা Anthony Hope এর প্রিজনার অফ জেন্ডা থেকে অনুপ্রাণিত, তবুও, ঝিন্দের বন্দীর স্বাদ অন্যরকম এবং মাচ বেটার দ্যান অরিজিনাল।
যদি বলা হয় সাধুভাষায় লেখা একটি অসাধারণ বইয়ের নাম বলতে, আপাতত আমার মাথায় ঘুরছে একটাই নাম। শরদিন্দুর 'ঝিন্দের বন্দী'।
বহুদিন পর একটা বই পড়ে মন ভালো হয়ে গেল।অনেকদিন পর রাত জেগে একটা বই শেষ করলাম!
প্রথম ২০-২৫ পেইজ স্লো, এরপর থেকে গল্পের টানেই পড়তে ইচ্ছা হবে। আর কোনভাবে বইয়ের মাঝ বরাবর যেতে পারলে তো কথাই নেই।
ধরুন আপনার চেহারা হুবহু কোন এক দেশের রাজার সাথে মিলে গেলো। সেই সুবাদে কিছুদিন আপনাকে রাজত্ব করতে হবে সেই দেশের। যেহেতু আপনি এডভেঞ্চারপ্রেমী, তাই কিছুদিন নিত্য নতুন এডভেঞ্চারের আশায় চলেও গেলেন!
ঠিক এমনটিই ঘটেছে এই উপন্যাসের গৌরিশঙ্করের ক্ষেত্রে। কলকাতায় এক জমিদার বংশের ছেলে শিবশঙ্কর ও গৌরীশংকর। একদিন এক অবাঙালী লোক, ধনঞ্জয় ক্ষেত্রী তাদের বাড়ি এলেন। জানালেন, তিনি ঝিন্দ দেশের রাজার বংশানুক্রমিক পার্শ্বচর। রাজার দুই সৎ ছেলে কুমার উদিত ও কুমার শঙ্কর। কয়েক ঘন্টার বড় শঙ্কর সিংহ রাজা হবেন। কিন্তু উদিত তা হতে দেবেন না। আবার শঙ্কর বড্ড খামখেয়ালিও বটে। মদ আর নারীতে মেতে থাকা এই হবু-রাজা আপাতত গায়েব হয়ে আছেন। অভিষেকের দিন চলে আসছে। ধনঞ্জয় কিছুতেই লোভী স্বার্থপর উদিতের হাতে ঝিন্দ রাজ্য ছেড়ে দিতে পারেন না। তাই কুমার শঙ্করের খোঁজ করতে বেরিয়েছেন তিনি। ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে গেল গৌরিশঙ্করের সাথে, যার গলার স্বর থেকে শুরু করে সবকিছু কুমার শঙ্করের মতো! তাই কিছুদিন তাকেই ঝিন্দের রাজা হয়ে থাকতে অনুরোধ করেন ধনঞ্জয়, অন্তত যতদিন আসল রাজাকে খুঁজে না পান।
এদিকে গৌরি আবার দেওয়ান কালীশঙ্করের বংশধর। যার ছবি দেওয়ালে ঝুলানো দেখে ধনঞ্জয় অবাক হয়েছিলেন। দুই দেশের দুইজন ভিন্ন মানুষের মধ্যে হুবহু একরকম মিল থাকার কিছু কারণ তো অবশ্যই আছে।
গৌরি গেলেন ঝিন্দ রাজ্যে। সবার চোখে ধুলো দিয়ে রাজত্ব করা কি এতই সহজ? একের পর এক রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটতে থাকে সেখানে। গৌরিও যেন পণ করে বসেছে, আসল রাজাকে উদ্ধার করে তার কাছে রাজ্য বুঝিয়ে দিয়েই তবে ক্ষান্ত হবেন। আবার নিয়মানুযায়ী ঝিন্দের পার্শ্ববর্তী ঝড়োয়া রাজ্যের রাজকন্যা কস্তুরীবাঈ-এর সঙ্গে রাজার বিবাহের কথা পাকা হয়ে আছে।
প্রেম, রোমাঞ্চ, ধনঞ্জয়ের বিশ্বস্ততা, ময়ূরবাহন আর কুমার উদিতের ক্রূরতা, সর্বোপরি গৌরিশঙ্করের বুদ্ধিমত্তায় সবকিছুর এত সুন্দর এন্ডিং হয়েছে যে, পড়ার পর মনে হচ্ছিলো এই বই আরও কিছু বছর আগে কেন পড়লাম না!
কস্তুরীবাঈ-এর সৌন্দর্য অনেক ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পের গাঁথুনী, সংলাপ কিংবা ছোট চিঠিগুলো সবই চমৎকার লেগেছে। সাথে গৌরীশঙ্করের সেই অনবদ্য উক্তি - 'আমি তো ঝিন্দের রাজা নই, বরং ঝিন্দের বন্দী।'
লেখক বলেছেন, তিনি এন্থোনি হোপের 'প্রিজনার অফ জেনডা' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বইটি লিখেছেন। তবে এই বইয়ে তার নিজস্ব রচনাশৈলী ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকারভাবে। বইটি নিয়ে ১৯৬১ সালে নির্মিত উত্তম কুমার অভিনীত 'ঝিন্দের বন্দী' নামক সিনেমা তৈরি করা হয়েছিল।
ছোটবেলায় আমরা সবাই নিশ্চই অনেক রাজকাহিনী পড়েছি| গতকাল 'ঝিন্দের বন্দি' পড়ে সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়লো| গল্পটি অতি সাধারণ, কিন্তু শরদিন্দু বাবুর কলমের জাদুতে সেটি অসাধারণে পরিণত হয়েছে|
সুপুরুষ গৌরীশঙ্কর রায় হলেন দেওয়ান কালিশঙ্কর রায়ের উত্তরসূরি| হঠাৎই তার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন ঝিন্দ রাজ্যের পার্শ্বচর ধনঞ্জয় ক্ষেত্রী| ঝিন্দ রাজ্যের যুবরাজ শংকর সিংহ উধাও, আর বৃদ্ধ ধনঞ্জয়ের ধারণা এ তার ভাই উদিত সিংহের কাজ| খুবই আশ্চর্যজনক ভাবে গৌরীশঙ্করকে হুবহু শংকর সিংহর মতো দেখতে! গৌরীশঙ্কর কি পারবে নকল রাজার মুখোশের আসল রাজাকে উদ্ধার করতে?
গল্পটি মন্ত্রমুগ্দ্ধ করে দেওয়ার মতো! আমি 'The Prisoner of Zenda'(Anthony Hope), যেটা এই বইটির আসল অনুপ্রেরণা, সেটি পরেই এই বইটা পড়েছি, তবুও এইটা বলতে কোনো দ্বিধা নাই যে শরদিন্দু বাবু আসল বইটিকে ছাপিয়ে গেছেন| প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো ফাঁকি নেই, টানটান উত্তেজনায় ভরা| বলতে পারেন পুরো ফাইভ ষ্টার রিড!
আশা করি আপনারা পড়বেন বইটা| আর এই বইটার ওপর যে বাংলা চলচ্চিত্রটি বানানো হয়েছে, উত্তমকুমার এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত,পারলে সেটিও দেখতে পারেন (লিংক য়ের জন্য dm করুন আমায়)|ভালো লাগলো কিনা ���বশ্যই জানাতে ভুলবেন না!
প্রায় তিন থেকে চার মাস পর কোন বাংলা (উপন্যাস) বই সম্পূর্ণ শেষ করতে পেরেছি এবং তা সমান ভাবে উপভোগ ও করেছি। এমনিতেই শরদিন্দুর লেখা আমার খু্ব পছন্দের। ব্যােমকেশ পড়ে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম তাই তার ঐতিহাসিক সমগ্রটা আনিয়েছিলাম কিন্তু কোন কারণ বশত তা আর পড়া হয়নি। বিগত বছর দেড়েক ধরে বাংলা বই পড়াটা কমিয়ে দিয়েছিলাম। বাংলায় ঠিক আমার পছন্দ সই তেমন বইয়ের ও দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল না। তাই ইংরেজি ভাষাতেই বেশি পড়া হচ্ছিল। তবে মাঝে মাঝে যখন নিজের ভাষাতে পড়তে মন চায় তখন হুট হাট করে কোন পছন্দের লেখকের কোন বই পড়া শুরু করে দেই। এতে করে একঘেয়েমিতা কাটে এবং পড়ার ফ্লু টা কন্টিনিউ থাকে। বইটার অডিও বুক শুনলাম। গত কাল রাতে নামানো ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই একভাবে টানাই শুনা শেষ করলাম। উপভোগ্য। রহস্য, প্রেম, লোভ,প্রতি হিংসা, ইতিহাস সব একাকার যা বইটাকে প্রবল গতি দান করেছে। তো, এটাই।