Jump to ratings and reviews
Rate this book

ক্রাচের কর্নেল

Rate this book
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্কিত কিন্তু স্বাপ্নিক, অস্পষ্ট কিন্তু বর্ণাঢ্য এক নাম কর্নেল তাহের। শাহাদুজ্জামান ‘ক্রাচের কর্নেল’ বইয়ের কেবল লেখকই নন, বরং তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির একজন কৌতূহলী পর্যবেক্ষকও বটে। রাজনৈতিক চাদরে ঢেকে রাখা একটি চরিত্রকে লেখক পাঠকের দ্বারে টেনে তুলে এনেছেন অপার সাহসিকতা আর সামগ্রিকতায়। বাংলাদেশের ইতিহাসকে পতিত করে অবিরাম জন্ম দেয়া হয়েছে ধোঁয়াচ্ছন্নতা আর মিথ্যার বেসাতি। লেখক প্রায় সম্পূর্ণভাবে নির্মোহ থেকে তুলে ধরেছেন সিনেম্যাটিক অভিযানের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যোগদান করা মুক্তিযোদ্ধা, দুর্ধর্ষ কামালপুর অপারেশনে পা হারানো সেক্টর কমান্ডার, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ক্রাচে ভর দেয়া এক স্বাপ্নিক নাগরিক, বিরল আর আপাত ব্যর্থ এক সেপাই অভ্যুথানের নায়ক এবং সর্বোপরি ক্ষুদিরামের পথের অভিযাত্রী কর্নেল তাহের ও সেই ঘোর লাগা সময়ের কুশীলবদের।

350 pages, Hardcover

First published February 1, 2009

176 people are currently reading
2260 people want to read

About the author

Shahaduz Zaman

49 books530 followers
Shahaduz Zaman (Bangla: শাহাদুজ্জামান) is a Medical Anthropologist, currently working with Newcastle University, UK. He writes short stories, novels, and non-fiction. He has published 25 books, and his debut collection ‘Koyekti Bihbol Galpa’ won the Mowla Brothers Literary Award in 1996. He also won Bangla Academy Literary Award in 2016.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,228 (59%)
4 stars
635 (30%)
3 stars
172 (8%)
2 stars
24 (1%)
1 star
16 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 304 reviews
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews621 followers
May 23, 2017
শাহাদুজ্জামানের গল্প বলার নিজস্ব একটা ভঙ্গিমা আছে। ছোট ছোট অধ্যায়ে বিভক্ত বইটি একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাওয়া যায় না। আর বইটি যখন কর্নেল তাহেরকে নিয়ে তখন বৈচিত্র্যময় তো অবশ্যই হবে। ১৯৭৫ এ যে পরপর ৩টি অভ্যুত্থান হয়ে গেল সেটা নিয়ে বেশ ক্লিয়ার আইডিয়া দেয়া আছে। স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়টা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ঘোলাটে ভাব কাজ করে। কোন অভ্যুত্থানের পিছনে কি কারণ সেটা নিয়ে বেশ ভালোভাবে জানা যাবে। আরও জানা যাবে ওই সময়ে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা। জিয়াউর রহমানের এইরকম আচরণের পরও উনি কেন মানুষের কাছে জনপ্রিয় তাই এখন জানতে ইচ্ছা হচ্ছে।

বইয়ের একটি চরিত্রের কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। উনি কর্নেল তাহেরের মা আশরাফুন্নেসা। এমন মা যদি প্রতি ঘরে ঘরে থাকত দেশ তাহলে আজকে এই অবস্থানে থাকতো না। সত্যি অসাধারণ একজন মহিলা ছিলেন। নাহলে এক পরিবারের সবকটি ছেলেমেয়ে কিভাবে এত দেশপ্রেমী হতে পারে, কিভাবেই বা পারে এত সংগঠিত হয়ে কাজ করতে। যুদ্ধের সময় তারা যে যেখানে ছিলেন কেউ নিষ্ক্রিয় ছিলেন না। আবার গ্রামের বাড়ি কাজলায় মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ের একসাথে আবির্ভাব হওয়ায় নিরক্ষরদের স্বাক্ষর করার মত প্রোডাক্টিভ আইডিয়া উনার মাথায় আসে। এত বড় বিপদের সময়ও উনি যে মাথা কতখানি ঠাণ্ডা রেখে কাজ করেছেন সেটাই তার প্রমাণ।

আর বইটির মুল নায়ক কর্নেল তাহের সাহসী এবং ব্যক্তিত্ববান। দুটি গুণ আমার কাছে খুব প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। একটি হচ্ছে ফোকাস। যখন থেকে উনি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বুঝতে শুরু করেন তখন থেকেই দেশকে সেই পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নিজের জীবন সাজাতে শুরু করেন। একবারের জন্যও উনি এমন কিছু করেন নাই বা এমন সিদ্ধান্ত নেন নাই যাতে করে ওনার লক্ষ্য থেকে সরে আসতে হয়। দ্বিতীয়ত ওনার সংগঠন করার ক্ষমতা। ছোটবেলা থেকেই ভাই বোনদের মধ্যে লিডার ছিলেন তিনি। ৩ নম্বর ভাই হয়েও সকলেই তাকে লিডার বলেই সম্মান করত। এই ফাকে ওনার ভাইদের কথাও একটু বলে নেই। ওনার ভাইবোনরা ওনার মতই সাহসী আর ব্যক্তিত্ববান ছিলেন। যুদ্ধের সময় তো বটেই, পরবর্তীতে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বিপ্লবের সময় ওনারা সাহসিকতা পরিচয় রেখেছেন। ওনার এক বোন তো গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মানুষ হিসাবে ছিলেন সৎ, সত্যবাদী, স্পষ্টভাষী। পরিবারকেও তাহের অনেক ভালোবাসতেন। সময় দিতে পারতেন না তাদের। এইজন্য স্ত্রী লুতফার কাছে ক্ষমা চাইতেন তিনি।

কর্নেল তাহেরের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করলাম বা করলাম না কিন্তু এটা মানতে বাধ্য হতেই হবে যে ওনার মত দেশ অন্তপ্রাণ মানুষকে সম্মান করতেই হয়।
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
October 13, 2023
এ বইয়ে বর্ণিত ইতিহাস নিয়ে কখনো কখনো কারো আপত্তি দেখেছি, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে খুব জরুরী কিছু সেটা। সবকিছু বাদ রেখেও শুধুমাত্র জাদুকরী ভাষাশৈলীর জন্য এটা আমার সবসময়ের প্রিয় একটা বই। প্রতিটা পাতা যেন মৌতাতে ছাওয়া, শাহাদুজ্জামানের ছোটগল্পগুলো বাদে বড়কাজের ভেতর এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ আমার মতে।
Profile Image for Md Khalid Rahman.
137 reviews38 followers
November 20, 2015
বইটা শেষ করলাম । দুই সপ্তাহের মতো লাগলো ... খুব বেশী মোটা বই না, চাইলে আগেই শেষ করে ফেলা যেতো । ইচ্ছা করে নি, কিছু বই আসলে পড়ে শেষ করতে ইচ্ছে হয় না । মনে হয় থাকুক না ... শেষ করলে তো শেষ হয়েই গেলো ।

ছোট বেলায় তো বটেই, কলেজ লাইফেও উভচর মানব, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, আমি তপু, ক্লিওপ্যাট্রা, শঙ্খনীল কারাগার, একজন মায়াবতী সহ অনেক বই পড়ার সময় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়েছে । কান্নার একচ্ছত্র অধিকার এদেশে মেয়েদের, ছেলেদের কান্না নিতান্তই চারিত্রিক দূর্বলতা । তখন বয়স ছিলো অল্প; অতো উচিত - অনুচিতের নিয়মকানুন মাথায় আসতো না, বুঝতামও না ।

এরপর তো সময় অনেক-ই গড়ালো । বয়স বাড়ার সাথে সাথে মন শক্ত হয়ে গেছে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই । নিজের জীবনই প্রতিনিয়ত ভরে চলেছে নানা ট্রাজেডিতে, বইয়ের পাতার বাস্তব - অবাস্তব চরিত্ররা আর কি মন ভার করবে? কিন্তু ' ক্রাচের কর্নেল ' এর শেষের দশ - পনের পাতা, কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার অংশটুকু, পড়তে আমার কষ্ট হয়েছে । বইয়ের পাতায় ছাপা শব্দেরা বারবার ঝাপসা হয়ে আসছিলো খুব ।

আপনি যে দলের বা মতেরই হন না কেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের ক্ষমতায় আসীন পরিবর্তিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি আপনাকে প্রচন্ড আহতও করেন, তবুও একমাত্র দেশের স্বাধীনতায় জোরালো ভূমিকা রাখার জন্যেই তাকে আপনার সম্মান করতে হবে । মুজিব না থাকলে দেশের পতাকা এখনও লাল - সবুজের বদলে অর্ধচন্দ্র আর তারার-ই থাকতো । ঠিক একই ভাবে ২৭ মার্চ বেতারে স্বাধীনতার ঘোষনা প্রচার করে দেশের দিকভ্রান্ত মানুষকে সাহস জোগানো, সত্তরের দশকের টালমাটাল দেশকে মজবুত একটা ভীতের উপর দাড় করিয়ে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে জিয়াউর রহমানের যতো অন্ধ ভক্তই আপনি হোন না কেন কর্নেল তাহেরের সাথে তিনি যা করেছেন কেবল তার জন্যেই জিয়াউর রহমান কে আপনার আজন্ম ঘৃণা করে যেতে হবে । তা না করলে আপনি কোন বিবেকবান মানুষ নন .... হ্যা, কর্নেল তাহেরের রাজনৈতিক দর্শন আর বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের সমালোচনা মাথায় রেখেই আমি এ কথা বলছি ।

সুলেখক শাহাদুজ্জামানকে ধন্যবাদ ' ক্রাচের কর্নেল ' -এর জন্যে । নেটে অনেক বিজ্ঞজনই বইটার নানা সমালোচনা করেছেন - নির্মোহ হয় নি, উপন্যাস হয় নি ব্লা ব্লা ব্লা বলে । সমালোচক হওয়া আসলে সবসময়ই সৃষ্টিশীল হওয়ার চেয়ে বহুগুণে সহজ কাজ ছিল, আছে, থাকবে । ' ক্রাচের কর্নেল 'তার খুঁত গুলোর জন্যই আরও বেশী মানবিক ।

বইটা আমাদের সকলেরই পড়া উচিত বলে মনে করি ।

প্রিয় কর্নেল তাহের,
আপনার স্বপ্নের দেশ এখনও বাস্তব হয় নি, স্বপ্নই রয়ে গেছে । উল্টো দেশ কে নিয়ে আমরা এখন স্বপ্ন দেখতেই ভুলে যাচ্ছি ধীরে ধীরে ।

আপনার মতো সাহসী কিছু দেশপ্রেমিকের আমাদের বড় বেশী দরকার । আবার মনে হয়, আপনাদের মতো মানুষ এ জনপদে আর জন্মাবে না । কারণ তেমন মানুষ নিজেদের মাঝে পাওয়ার যোগ্যতা আমরা রাখি না ।

ভালো থাকুন ।
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
219 reviews288 followers
September 21, 2024
‘আমাদের জীবনে নানা আঘাত, দুঃখ এসেছে তীব্রভাবে। প্রকাশের অবকাশ‌ও নেই। ভয় হয় যদি সে প্রকাশ কোনো সহকর্মীকে দুর্বল করে তোলে, ভয় হয় যদি কেউ আমাকে সমবেদনা জানাতে আসে, আমাকে, আমার জাতিকে ছোট করে। তাই মাঝে মাঝে মন ব্যাকুল হয়। তোমাকে পেতে চাই নিবিড়ভাবে। তোমার স্পর্শ, তোমার মৃদু পরশ, আমাকে শান্ত করুক।’

▪️▪️▪️

আমি জানি, ব‌ইটাই এমনভাবে লেখা হয়েছে যাতে কর্নেল তাহেরের ভুলত্রুটি এড়িয়ে গিয়ে প্রতিটি পাঠকের মানসে কেবল তার বিপ্লবী রূপটাই জাগরুক থাকে। হয়তো লেখক এটা সচেতনভাবেই করেছেন। কিন্তু তবু আমার দুর্বলতা এইক্ষেত্রে, লেখাকে খুব সহজে অবিশ্বাস করতে পারি না। অল্পতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।
এখানেও ব্যতিক্রম না। কর্নেল তাহেরের উপরোক্ত চিঠিটি আমাকে প্রবল আবেগে আচ্ছন্ন করেছিল। একজন মানুষের বাইরের যত চেহারাই থাক, তার একান্ত অসহায়ের চেহারা শুধু প্রিয়জনের সামনেই উন্মোচন করে।

▫️ একটা ব্যাপার ভাবতেই লজ্জা লাগে–কর্নেল তাহের এবং তাঁর সব ভাইবোনেরা ওই সময়েই যে সাহসী মনোভাবের এবং দারুণ স্মার্ট ছিলেন, আমরা এই আধুনিক যুগেও ওঁদের ধারেকাছে যেতে পেরেছি বলে মনে হয় না। আশরাফুন্নেসা সত্যিকার অর্থেই একজন রত্নগর্ভা।

▫️ যেকোনো ঘটনাকে অসংখ্য দিক থেকে নিরুপন করা যায়; এবং আমার মনে হয়, এই সবগুলো দিক‌ই জানা থাকা ভালো। সে বিবেচনায় এই ব‌ইটাও অবশ্যপাঠ্য। হোক বাহুল্য কিংবা একপক্ষীয়, ইতিহাসের কিছুটা তো জানা হলো। আর উপন্যাস বিবেচনায় লেখকের অসাধারণ লেখা অবশ্যই মনোমুগ্ধকর।
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
February 9, 2022
ক্রাচের কর্নেলকে শাহাদুজ্জামানের ম্যাগনাম ওপাস বলা যায়। দারুণ মর্মস্পর্শী লেখনী। প্রতিটি পাতা ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং বেদনার করুণ রসে একাকার। কর্নেল আবু তাহের বাংলাদেশের বাম রাজনীতির গর্ব, বাম রাজনীতির বেদনা।
‘আফসোস’ – এই একটা শব্দে দিয়ে ক্রাচের কর্নেলকে বর্ণনা করা যায়।

কর্নেল তাহেরের এই জীবনচরিতের মোরাল অফ দ্য স্টোরি : যুদ্ধের মত অভ্যুত্থানও একটা আর্ট, অভ্যুত্থান নিয়ে খেলা কইরো না। - ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস।
Profile Image for Rehan Farhad.
242 reviews12 followers
August 11, 2025
মাত্র এক তারা? নন-ফিকশন পড়ে এসে ‘ক্রাচের কর্নেলের’ রেটিং দিলেন? না। ‘ক্রাচের কর্নেল’ প্রায় দেড়যুগ আগে পড়েছিলাম। সেই সময় আমিও ‘ক্রাচের কর্নেল’ পড়ে রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন ‘জাসদের উত্থান পতন’ (২০১৪) বা ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী’(২০১৫) কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। আজও এসব নন-ফিকশন বইয়ের কোনো রেফারেন্স টানবো না। স্রেফ শাহাদুজ্জামান ও তার ফিকশনাল বইটার ভিতরে আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে।

পুরো বইয়ের বিভিন্ন অংশে লেখক তাহেরকে গ্লোরিফাই করেছেন, সেটা কমরেড ক্রাচের কর্নেলের প্রতি বায়াসড হয়ে করতে পারেন। সমস্যা হল গ্লোরিফাই করতে গিয়ে জায়গায় জায়গায় গু-ফাই হয়ে গেছে। একটা উদাহরণ দেই। তাহের নিজে সেক্টর কমান্ডার হয়ে ১১ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বামরাজনীতির আদর্শের পাঠ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কারন স্বাধীনতার যুদ্ধকে তিনি টেনে লম্বা করে সমাজতন্ত্রের যুদ্ধে রূপ দিতে চান (পেজ-১২০)। পাকিরা নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে, আর ঠিক ওই সময়ে আপনি নিজের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চিন্তা করবেন? এমনকি যুদ্ধোত্তর আহত তাহের চেয়েছিলেন ভিয়েতনামের মতো দীর্ঘস্থায়ী কমিউনিস্ট ওয়ার (পেজ-১৬২)। এক দায়িত্বশীল সেক্টর কমান্ডার বাম আদর্শের অনুরাগী হতে পারেন, কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে অন্যদের বাম রাজনীতিতে টানা দেশের স্বাধীনতার পরিপন্থী কাজ নয় কি? শাহাদুজ্জামান এসব ছাইপাশ তার মগজের কোন গুহা থেকে পয়দা করেছেন জানতে পারলে খুশি হতাম।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ, এবার আসি কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টে তাহেরের কর্মসূচী নিয়ে। এখানে আবারও সমাজতান্ত্রিক আর্দশের পাঠ খুলে বসেন। এবং তার ধারনা ছিল, বাংলাদেশ আর্মি তার এই মডেলটা রেপ্লিকেট করবে। (পেজ-১৯৩), ওয়াও! ইয়োর এক্সপ্লয়েটস আর লেজেন্ডারি ম্যান! একলাফে একটু সামনে আগাই, ১৯৭৫ সালের ঘটনায়। ১৫ আগস্ট রাতে মেজর রশীদ-ফারুক ক্যু ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে। ডানপন্থী মদদে এই ক্যু নাহলে বামপন্থী জাসদের মদদেও সেম ক্যু হত। এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য এবং লেখকের লেখা কর্নেল তাহেরের একটি সংলাপে স্পষ্ট, ‘আমরা যে সোশালিস্ট এজেন্ডা নিয়ে আর্মস স্ট্রাগলের দিকে যাচ্ছিলাম, মোশতাকের গর্ভমেন্টের সময় সেটা তো আরো জাস্টিফায়েড।’(পেজ-২৪৩) অর্থাৎ অন্য কেউ আগে ক্যু না করলে সেটা জাসদ একদিন ঠিকই করতো। নিজেরা ক্যু করতে না পারার কারনে তাহেরের হতাশাও লক্ষ্য করা যায়।

এরপর খালেদ মোশাররফ আবার ক্যু করেন, তাহের পাল্টা ক্যু করে জিয়াকে মুক্ত করেন। জিয়াকে মুক্ত করার পর কি কি দাবি ছিল জানেন? শাহাদুজ্জামান নিজেই লিস্টি দিয়েছেন:
১. জনগনতান্ত্রিক (!) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
২. অফিসার/সৈনিক ভেদাভেদ থাকবে না, একইভাবে রিক্রুট করা হবে। 
৩. রাজবন্দিদের মুক্তি (যার মধ্যে জাসদের মোস্টওয়ান্টেড কিলারও আছে)

আপনি স্বাধীন দেশের আর্মি চিফ হলে এই সব ভন্ডামি মানবেন? 

প্রথমে দেখলাম একজন আর্মি অফিসার মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতর বামরাজনৈতিক আদর্শ ঢোকাতে চান। তারপর স্বাধীন দেশের আর্মির পাছায় দু-দু বার বাম হাত ঢোকাতে চান। কোন লেভেলের উন্মাদ নাহলে কেউ এরকম চিন্তা করতে পারে! আর্মি কেনো রাজনীতিতে অংশ নেবে? এই হলো শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্নেল! আদতে তাকে স্রেফ একটাই তকমা দেয়া যেতে পারে, ‘সন্ত্রাসী কর্নেল’। 

এখানে খেয়াল করলাম, জিয়ার চরিত্রকে বার বার আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে ‘দোদুল্যমান’। লেখক এখানে জিয়াকে দুমুখো সাপ বললেও পারতেন, আমি নিজেও তাই মনে করি। কারন জিয়ার মাথায় বন্দুকের নল ঠেকালেও তার পেন্ডুলামদ্বয় কখনো দোদুল্যমান হয়নি। হি ওয়াজ নেভার দোদুল্যমান। জিয়া ছিলেন হার্ডকোর নার্ভ, তুখোড় ও ধুরন্ধর চরিত্রের মানুষ। একজন জেনারেলের চরিত্র নিয়ে ব্যাসিক জানাশোনা লেখকের নাই। অথবা ইগনোর করেছেন। অবশ্য সুশীল বামেদের মজ্জাগত স্বভাব আসল পয়েন্টগুলা মিস করে যার তার পাছায় বাম হাত ঢোকানো। আমি এই বই পড়ার পর ঘুমের ঘোরে তাহের আর জিয়ার কিছু ডায়লগ শুনেছিলাম, তার মধ্যে একটাই মনে আছে। 

তাহের: u will be under my foot.

জিয়া: which one? 
Profile Image for Sourav Das.
42 reviews76 followers
April 21, 2021
বইটা পড়ার মাঝখানের সময়টাতে আমার সাথে কিছু মানুষের আলাপ হয়েছিল বইটা নিয়ে। তাদের মাঝে ২-১ জনের মতে বইটাতে কর্ণেল তাহেরকে একটু বেশি glorify করা হয়েছে। অনেকেরই এমন মনে হতে পারে। হ্যাঁ, উনি ওনার স্বপ্ন সফল করতে জাসদের দল্ভুক্ত হয়েছিলেন কথাটা ঠিক! তবে এটা বলতেই হবে ওনার স্বপ্ন নিষ্কলুষ ছিল। ওনার ক্ষমতার লোভ থাকলে উনি সেনাবাহিনীর চাকরি নিশ্চয়ই ছেড়ে দিতেন না! একেবারে ভুল ত্রুটির উর্ধে উনি ছিলেন না, থাকতে পারেন না। কারণ উনি মানুষ। তারপরও একজন সেক্টর কমান্ডার, সরাসরি যুদ্ধে পা হারিয়েছেন, স্বপ্ন দেখতেন সোনার বাংলা গড়ার। ইতিহাস সবসময় পক্ষপাততুষ্ট হলেও ওনার অবদান একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যায়। এমনকি ওইসময়ের সৈনিকদের মাঝে ওনার জনপ্রিয়তাও লীডার হিসেবে ওনার সাফল্যের কথাই বলে।

লেখক শাহাদুজ্জামানের প্রশংসা করা অবশ্য কর্তব্য। ওনার কাহিনী বলার, ঘটনা গড়ে তোলার ধরন চমৎকার। উনি গত ফেব্রুয়ারীতে আমাদের ভার্সিটিতে এসে বলেছিলেন, উনি এই বই লেখার জন্য আরেকটা Ph.D. দাবী করতেই পারেন। এই বই লিখতে যেয়ে উনি প্রচুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, অনেক ইতিহাস ঘেটেছেন। আমাদের প্রজন্মের জন্য এই বইটাকে আমি অবশ্যপাঠ্য বলে মনে করি। অন্ধকারে ভরা দেশের অতীতকে জানবার জন্য।

সেইদিনকার সিপাহী বিপ্লব পুরোপুরি সফল হলে আজ বাংলাদেশ হয়তো অন্য এক অবস্থানে থাকতো! ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে কমিউনিজমের প্রতি অনেকটাই দুর্বল! আমি জানি কর্ণেলের জ���বন আর আবর্তিত হবে না। আমাদের স্বান্তনা দেয়া থিওরিমতে, স্বর্গ বলে কোথাও তাঁর স্থান হবে না! একজন স্বপ্নদেখা মানুষের প্রতি থাকুক আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা।
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews121 followers
April 18, 2021
গুডরিডস এর এই পাঁচটা তারকা দিয়ে এই বইকে রেট করা কি আদতে সম্ভব? এত অসাধারণ একটা বই লাস্ট কবে পড়েছি মনে পড়ে না।
আমার প্রশ্ন শুধু একটাই, জিয়া এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে করলো কর্নেল তাহেরের সাথে?

পুথিকাত��� এই বইয়ের খুব সুন্দর অডিও ভার্সন আছে। কারো অডিও বুক শোনার অভ্যাস থাকলে এটা ট্রাই করে দেখতে পারেন। হতাশ হবেন না।
Profile Image for Nowrin Samrina Lily.
157 reviews15 followers
September 30, 2021
কি অসাধারণ একটা বই পড়লাম আমি। সেলিনা হোসেনের "লারা" বইটা যখন প্রথম পড়েছিলাম,তখন প্রথম কর্নেল তাহেরের নাম শুনেছিলাম। তারপর পড়লাম "দেয়াল", তখন থেকেই কর্নেল তাহেরের সম্পর্কে আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে,আর আজ শেষ করে ফেললাম এই বিপ্লবী বীরউত্তম এর জীবনকাহিনী। দেশের জন্য তিনি যা স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ হয়েছে কিনা বলবোনা, কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই র‍য়ে যায়।
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
September 30, 2022
কিছু কিছু বই থাকে শুরু করলে চুম্বকের মতো টানে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থ্রিলার বই এভাবে টানে। একটা নন থ্রিলার বইয়ের পক্ষে এভাবে পাঠককে আটকে রাখার ক্ষমতা অনেক বড়ো ক্ষমতা। বইয়ের প্রথম থেকে শেষ লাইন পর্যন্ত এক অদ্ভুত টানে বইয়ে আটকে ছিলাম যেনো। বারবার মনে হচ্ছিলো, এতো গুছিয়েও লেখা যায়! এতো গুছিয়েও লেখা যায়! কিছু কিছু বই পড়ে মনে হয় আমি জীবনেও লেখক হতে পারবো না, আমি জীবনেও এরকম গুছিয়ে লেখতে পারবো না। এ বইটি এমন বই।
এ বইটি আমার কাছে আলাদা একটি মর্যাদা পেয়ে গেছে কয়েকটি কারণে। কর্ণেল তাহেরের ছোট ভাই ড. আনোয়ার হোসেন এবং কর্ণেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফার জন্য। এই দুজন মানুষই আমার নিজের বিভাগের ছাত্র ছাত্রী ছিলেন এবং আমি নিজে আনোয়ার স্যারের ক্লাস পেয়েছিলাম সেকেন্ড ইয়ারে। মলিকুলার বায়োলজি ক্লাস নিতেন স্যার। প্রথম দিন নাম ডাকার সময় ইয়েস স্যার বলার পরই স্যার আমার গলার স্বর চিনে ফেলে জিজ্ঞেস করেন আমার বাড়ি ময়মনসিংহ নাকি(স্যারের শৈশব কাটে ময়মনসিংহে), আমি বলি কিশোরগঞ্জ। (ময়মনসিংহ আর কিশোরগঞ্জ পাশাপাশি জেলা হওয়ায় দুই অঞ্ছলেরই কথা বলার ধরণ প্রায় একই)। স্যার প্রথমদিনই আমাকে অনেক কিছু বলেন, শুদ্ধ উচ্চারনে কথা বলার জন্য। কিছুটা মন খারাপ হয়েছিলো প্রথম ক্লাসে এতো কিছু বলার জন্য। স্যার নিজে কিন্তু অসম্ভব রকম শুদ্ধ উচ্চারণ করে কথা বলতেন। ইন ফেক্ট আমি আমার জীবনে এতোটা মার্জিত আর শুদ্ধভাবে কাউকে বাঙলায় কথা বলতে শুনিনি। কথা বলার সময় প্রতিটি শব্দ যেনো বাংলাই থাকে সে দিকে ছিলো তার সজাগ দৃষ্টি। যেমন পাখাগুলো চালু করে দাও বা বাতিগুলো জ্বালিয়ে দাও যেখানে অন্য সবাই বলে ফ্যান চালাও বা লাইট জ্বালাও। দুর্ভাগ্য আমার, তখনও জানতাম না স্যার জীবনে এতোকিছুর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, স্যারের ভাই কর্ণেল তাহের এতো বড়ো মাপের মানুষ ছিলেন। আরো একটা মজার বিষয় ছিলো এই যে, স্যার আর আমার দুজনের কলেজও একই ছিলো, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। তাই বই পড়ার সময় যখনই আনোয়ার স্যারের নাম আসতেছিলো এক আলাদা শিহরণ পাচ্ছিলাম। এই মানুষটার ক্লাস পেয়েছিলাম বলে আজকে মনের ভেতর ভালো লাগার একটা অদ্ভুত অনুভূতি দোল খেয়ে যাচ্ছে। সে যাই হোক, বইয়ের কথায় আসি।
বই সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যার সম্পর্কে বলতে হয় তিনি হলেন আশরাফুন্নেসা। কর্ণেল তাহেরের মা। ১১ টি সন্তানের এই জননী যদি পুরো বাংলার সকল সন্তানের জননী হতো তাহলে আজ হয়তো আমাদের এই বাংলাদেশ দেখা লাগতো না। আজ সত্যি সত্যি বুকে এই কথা ধারণ করতে পারতাম যে, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা এই বাংলার প্রতিটি মা যদি আশরাফুন্নেসার কাছে মা হওয়ার শিক্ষা নিতে পারতো তাহলে এক প্রজন্মের ব্যবধানে এই বাংলার প্রতিটি ঘর স্বর্ণের খনিতে পরিণত হয়ে যেতো।
বইয়ের মূল চরিত্র কর্নেল তাহের। দেশপ্রমের যে দৃষ্টান্ত উনি দেখিয়ে গেছেন উনার জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত, তা খুব বেশি মানুষ পারে না। একটা দেশকে এভাবেও ভালোবাসা যায়! এভাবেও একটা দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া যায়! এভাবেও একটা দেশের জন্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে দেওয়া যায়! ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন তাহের জিয়াউদ্দীনের লেখা কবিতা আবৃত্তি করলেন,
জন্মেছি, সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে,
কাঁপিয়ে দিলাম।
জন্মেছি, তোদের শোষণের হাত দুটো ভাঙব বলে,
ভেঙে দিলাম।
জন্মেছি, মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে,
করেই গেলাম।
জন্ম আর মৃত্যুর বিশাল পাথর
রেখে গেলাম।
পাথরের নিচে, শোষক আর শাসকের
কবর দিলাম।
পৃথিবী, অবশেষে এবারের মতো
বিদায় নিলাম।

তখন সত্যি সত্যি মনে মনে বলতে হয়েছে, হ্যাঁ কর্নেল তাহের, আপনি কাঁপিয়ে গেছেন, আপনি ম’রে গিয়ে দেখিয়ে গেছেন কীভাবে মৃত্যুকে পরাজিত করতে হয়।
কর্নেল তাহের একইসাথে ছিলেন মেধাবী, সাহসী, শক্তিশালী, রোম্যান্টিক এবং রাজনৈতিক দূরদর্শী সম্পন্ন মানুষ। উনার একটা মাত্র চারিত্রিক দুর্বলতা ছিলো মানুষকে উনি খুব বিশ্বাস করতেন। মানুষকে অবিশ্বাস করার মতো একটি প্রয়োজনীয় গুণ যদি উনার থাকতো তাহলে হয়তো উনার জীবনের ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হতো, হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতাগুলো লিখা হতো ভিন্নভাবে। বাংলার মানুষকে উনি অন্ধের মতো ভালোবাসতেন আর বিশ্বাস করতেন। এই ভালোবাসা আর বিশ্বাস তাকে উপহার দেয় ফাঁসির মঞ্চ।
বই সম্পর্কে বললে আরো অনেক কিছু বলা যাবে। শেষ হবেনা। এর চেয়ে ভালো বইটি পড়ে ফেলুন। এক মূহুর্তের জন্য হতাশ হবেন না। একজন বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে কর্নেল তাহের সম্পর্কে না জানাটা দুর্ভাগ্যের বিষয়।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
January 10, 2023
এই বইটা গত ৬/৭ বছর ধরে পড়ার তালিকায় থাকলেও কেন জানি এতদিন হয়ে উঠেনি।এই দীর্ঘ সময়ে অন্যদের রিভিউ ও আলাপ-আলোচনা দেখেছি। একদল আছেন যারা এটাকে কর্নেল তাহেরের অথেনটিক জীবনীগ্রন্থ বলে মনে করেন। তবে মনে রাখা দরকার এটা উপন্যাস।

উপন্যাস লেখার সময়ে লেখকের স্বাধীনতা থাকে ভিলেনকেও হিরো হিসেবে দেখানোর আবার হিরোকেও ভিলেন বানানোর। এই বইয়ের হিরো কর্নেল তাহের। লেখক তার প্রতি কিছুটা পক্ষপাতিত্ত দেখিয়ে সব দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক।

তবে বই হিসেবে ক্রাচের কর্নেল দারুন লেগেছে। একটানে শেষ করেছি। শাহাদুজ্জামানের লেখনী চমৎকার। পাঠককে চুম্বকের মতন ধরে রাখতে পারেন।
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
March 22, 2021
লেখক নিজের কথায় স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন এইটা 'ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস।' জিনিস টা 'বেসড অন ট্রু স্টোরি' হলিউড মুভিগুলোর মতো। 'ইতিহাস আশ্রিত' আর 'ইতিহাস' বা 'ঐতিহাসিক দলিল' এর তফাৎ ভুলে গিয়ে কেউ যখন বোদ্ধার বেশে বইটাকে জাজ করতে বসেন; তাছাড়াও বইটা ইভেন না পড়ে ঘাটাঘাটি না করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক রেফারেন্স তুলে বোদ্ধা ভাবুক মানুষ যখন বইটাকে জাজ করতে বসে আমি চরম ক্ষুব্দ হই পড়ুয়া সমাজের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করে! কোথাও বলা নেই, উপন্যাস টা সেই সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির ঐতিহাসিক দলিল! তবুও বইটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, দেশপ্রেম জাস্টিফাই এর কেনাবেচা চলে হরদম।

বইটা আমাকে চুম্বকের মতো টেনেছে লেখকের আমুদে লেখনশৈলীর কারনে। লেখনশৈলীতে প্রচন্ড মাটি-মানুষ আর দেশপ্রেমের গন্ধ আছে। কোনটা ঠিক, বেঠিক সেটা জাস্টিফাই করতে যাচ্���ি না যেহেতু আমি কোনো রিসার্চ এ বসিনি। আমার যা মনে হইসে, এ দেশের রাজনৈতিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আশ্রিত বিষন্নতম উপন্যাসের তালিকা করা হলে ক্রাচের কর্ণেল উপরের দিকে থাকবে। আরো অনুভব করেছি, অন্ধকার কুয়াশার মতো ষড়যন্ত্রের চাদরের আচ্ছাদনে গোপন করে ফেলা দীর্ঘ ইতিহাস আছে এই দেশের। কর্ণেল তাহের বলেছিলেন, 'ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না'। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেওনি, লিটারেলি হিস্ট্রি রিপিটেড ইট���েলফ ইভেনচুয়ালি। কিন্তু ইতিহাস যে কাউকে ক্ষমা করে নি সেই ইতিহাস টুকু এই প্রজন্মের জ্ঞ্যানভান্ডার থেকে বিচ্চিন্ন কোনো এক ভাবে। প্রজন্ম কী আদৌ জানে 'এভাবেও দেশকে ভালোবাসতে পারে একজন দেশপ্রেমিক?! SIGH!!
Profile Image for Mahbuba Sinthia.
133 reviews97 followers
September 24, 2021
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
ইতিহাসে আমার জ্ঞান যৎসামান্য। ওই নবম দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের প্রথম দুটো অধ্যায়ে যা লেখা ছিল, তার পঞ্চাশ ভাগ (বাকি পঞ্চাশ ভাগ পরীক্ষার খাতায় উগরে দেওয়ার পরে কর্পূরের মতো উবে গেছে ) সম্বল। তো, সেই বইয়ে ঘটনাবহুল ১৯৭৫ সাল সম্পর্কে বরাদ্দ ছিল বোধকরি আড়াই পাতা, যার দুই পাতায় ছিল ১৫ই আগস্টের আখ্যান। বাকি অর্ধেক পাতায় প্রথম পড়েছিলাম কর্ণেল তাহেরের নাম, সেখানে তার সম্পর্কে একটা মাত্র লাইন ছিল - "৭ই নভেম্বর কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে পরিচালিত পাল্টা সেনা অভ্যুত্থানে মুক্ত হন মেজর জিয়া এবং পরবর্তীতে তিনিই বিদ্রোহের অপরাধে কর্ণেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলান। " তখন কি আমি জানতাম, এই এক লাইনের পেছনে লুকিয়ে আছে এত ইতিহাস?

ইতিহাসের ভাঙা রাস্তায় ক্ষণিক হাঁটা
বইটা শুরু হয়েছে কর্ণেল তাহের আর লুৎফার বিয়ের ঠিক আগমুহূর্তে, তৎকালীন টগবগ করে ফুটতে থাকা পূর্ব পাকিস্তানে। তখন চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব, যদিও সবার তা অজানা। তবে তা আন্দাজ করতে পেরেছিল অনেকে। তার মধ্যে আছে তাহেরের পরিবার। কী অসাধারণ একটা পরিবার! সবাই মিলে যেন একটা প্রতিষ্ঠান, প্রত্যেকে তার নিরলস কর্মী।
আর বইটা শেষ হয়েছে অন্ধকার চাদরে মোড়ানো ১৯৭৫ সালে। মাঝখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো।

যুদ্ধের শুরু, যুদ্ধের শেষ
মুক্তিযুদ্ধের বেশ সংক্ষিপ্ত কিন্তু গোছানো একটা বর্ণনা পাওয়া যায় এখানে। কর্ণেল তাহেরের পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগদান, তার অসাধারণ বীরত্ব ও তার পা হারানো - এসব কিছুর সঙ্গে রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অবস্থান অনেক নতুন কিছু জানিয়েছে আমাকে। আর একটা প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছে মনে, যা অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে প্রথম - যুদ্ধ শুরু হয়েছিল বটে, কিন্তু শেষ হয়েছিল কি?

মুদ্রার অপর পিঠ
এতদিন ধরে কেবল যাদের সম্পর্কে শুনে এসেছি, এবার গভীরভাবে দেখার সুযোগ মিলল। বঙ্গবন্ধু, মেজর জিয়া, তাজউদ্দীন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক - কী করেছিলেন, আর কেনই বা করেছিলেন, কিছুটা হলেও বুঝতে পারলাম। সব মুদ্রারই দুটো পিঠ থাকে। দুটোই সমান সত্য।
যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না, জানতাম না কেন কিসিঞ্জার বলেছিলেন এদেশকে "তলাবিহীন ঝুড়ি "। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই। যুদ্ধের সময় মানুষের মধ্যে যে স্বর্ণের আভাস মিলছিল, তা যুদ্ধের পর এভাবে অদৃশ্য হয়ে গেল কেন? সোনার মানুষগুলো তখন থাকলে কি আমাদের '৭৫ এর ঘটনা দেখতে হত?

একজন স্বপ্নবাজ বনাম রাষ্ট্র
কর্ণেল তাহেরের সারাটা জীবন কেটেছে কীভাবে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা ভেবে, তার স্বপ্ন দেখে দেখে। তা বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য খেটেছেনও তিনি। কিন্তু একটা মানুষের বিরুদ্ধে যখন গোটা রাষ্ট্র, তখন বাকি সব অবান্তর।

শেষ কথা
ঐতিহাসিকের চেয়ে একজন লেখক বেশি স্বাধীনতা পান তার রচনাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য। তাই স্থানে স্থানে যদি বইটা অতিরঞ্জিত হয়েও থাকে, তবে তা দোষের নয়। কিন্তু সেই একই দৃষ্টিকোণ থেকে লেখার ভঙ্গিমাকে ফুটিয়ে তোলাও লেখকের কর্তব্য, যা এখানে অনুপস্থিত। পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল যেন উপন্যাস নয়, ডকুমেন্ট পড়ছি।

তবে ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করা গবেষণা সমৃদ্ধ বইটা আমার জ্ঞান বিস্তৃত করেছে, ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী করেছে, সর্বোপরি সম্পূর্ণ অজানা একটা অধ্যায় আমার সামনে তুলে ধরেছে। সেই জন্য আমি লেখকের কাছে ঋণী।
Profile Image for Ifsad Shadhin.
115 reviews24 followers
December 15, 2021
বেশ আয়রনিক উপন্যাস। পাঁচ তারকার ছড়াছড়ি রিভিউ সেকশনের টিপিকাল নেগেটিভ রিভিউ তকমা খাওয়ার ইচ্ছা নেই। দুটো অংশ তুলে দিচ্ছি বইয়ের প্রথমার্ধ থেকে। ট্রাই টু রিড বিট্যুইন দ্যা লাইনস।



ভিয়েতনাম যুদ্ধের নানা ডকুমেন্টারি তখন দেখানো হয় পাকিস্তান আর্মিদের। আমেরিকান সেনাদের ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রস্তুতি সেসব ডকুমেন্টারির বিষয়। একদিন তাহের আর আনোয়ার ওরকম একটা ডকুমেন্টারি দেখছেন। ছবিতে দেখানো হচ্ছে আমেরিকান সৈন্যরা বাঁশের সাহায্য নিয়ে বিশেষ কায়দায় একটা খুব উঁচু দেয়াল পার হচ্ছে। তাহের হঠাৎ বেশ উত্তেজিত হয়ে পাশে বসা আনোয়ারকে বলেন : দারুণ, আমরাও তো ট্রাই করে দেখতে পারি।

আনোয়ার বলেন : কিন্তু খুব রিস্কি হবে স্যার। ক্ষেপে যান তাহের : মাই ব্লাডি ফুট। রিস্কি শব্দটা কমান্ডোদের অভিধানে আছে নাকি? এই রোববারই আমি আটক ফোর্টের দেয়াল ওভাবে পার হবো। রেপেলিং করার জায়গায় ওটা করব আমি।

আনোয়ার চমকে ওঠেন : কিন্তু আমেরিকানরা যে দেয়ালটা পার হচ্ছে ওটা স্যার ম্যাক্সিমাম বিশ/ত্রিশ ফুট উঁচু হবে। আর আটক ফোর্টের ওয়াল তো এক শ বিশ ফুট। আপনি কি ঠাট্টা করছেন স্যার?

তাহের : শাট আপ। এটা কোনো ঠাট্টার ব্যাপার না। আই এম গোয়িং টু ডু ইট। এ বেটাদের দেখিয়ে দেব বাঙালি অফিসাররা কি করতে পারে।

পরদিন ইউনিটে টি ব্রেকের সময় তাহের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সবাইকে। ইউনিটের চিফ কমান্ডিং অফিসার কর্নেল সোলেমান আপত্তি করেন ব্যাপারটায়। অন্য অফিসাররাও ব্যাপারটাকে একটা পাগলামি মনে করেন। কিন্তু তাহের তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। কর্নেল সোলেমান তাহেরকে স্নেহ করেন। শেষে কর্নেল সোলেমান রাজি হন এবং সবাইকে পরের রোববার রেপেলিং এরিয়ার আসতে অর্ডার দেন। সব অফিসার বলাবলি করতে থাকে, ছুটির দিনটাই মাটি।

অফিসে ফিরে আনোয়ার তাহেরকে জিজ্ঞাসা করে : কিন্তু স্যার অত উঁচু বাঁশ পাবেন কোথায়?

তাহের : কেন ছোট ছোট বাঁশের টুকরা জোড়া দিয়ে।

আনোয়ার : কিন্তু স্যার জোড়া দেওয়া জিনিস কি আর আস্ত বাঁশের মতো

শক্ত হবে?

তাহের : সেটা আমি ম্যানেজ করব।

রোববার সকাল। সব অফিসার আটক ফোর্টের রেপেলিং করার জায়গায়। হাজির। দুর্গের দেয়ালের একটা জায়গা একটু বাঁক খেয়ে খাড়া কোনাকুনি গোল হয়ে উপরে উঠে গেছে। একটার সঙ্গে আরেকটা জোড়া দিয়ে একশ বিশ ফুট উঁচু একটা বাঁশ তৈরি করেছেন তাহের। তাহের দুই হাতে বাঁশের উপরের কোণাটি ধরেন এবং দশ জন বেশ ভাগরা সিপাই বাঁশটাকে খাড়া দেয়ালের কোনাকুনি বরাবর ঠেলে একটু একটু করে উপরে উঠাতে থাকেন। তাহের দুই পা দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে অনেকটা হাঁটার ভঙ্গিতে দেয়াল বেয়ে উঠছেন। পঞ্চাশ ষাট ফুটের মতো উঠে গেছেন তাহের। নিচে রুদ্ধশ্বাসে দাঁড়িয়ে আছেন সব অফিসার। বুক ধড়ফড় করছে আনোয়ারের। বাঁশটা বেশ দুলছে, যে কোনো মুহূর্তে একটা মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে। নিচে দাঁড়ানো অফিসারদের মধ্যে আতঙ্ক। কিন্তু তাহের দেয়াল বেয়ে উঠতে উঠতে যে সিপাইরা বাঁশটা ঠেলছে তাদের বলছেন, দ্যাটস রাইট, ক্যারি অন হ্যাঁ এভাবেই বাঁশটাকে একটু একটু করে ঠেলতে থাকো।

সবাই নিরব। একসময় সবার বিস্মিত চোখের সামনে তাহের আটক ফোর্টের এক শ বিশ ফুট দেয়ালের উপর গিয়ে দাঁড়ান। উপরে দাড়িয়ে চিৎকার করে নিচে কর্নেল সোলেমানকে বলেন, স্যার এটা কোনো ব্যাপারই না। আপনি আরেকজনকে পাঠান 1

কর্নেল সোলেমান চারদিকে তাকান কিন্তু না কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। কর্নেল সোলেমান অন্যদের বলেন, তাহের যদি এটা পারে তোমাদেরও পারা উচিত। কিন্তু সবাই নিরুত্তর।

তাহের এবার পাকিস্তানি অফিসারদের হেয় করার মোক্ষম সুযোগটা নেন। তিনি বলেন: অল রাইট। একজন বাঙালি অফিসার যখন এটা পেরেছে আমার ধারণা আরেকজন বাঙালি অফিসার তা পারবে। আনোয়ার এবার তুমি চলে আস। ক্যাপ্টেন আনোয়ার একটু দ্বিধান্বিত থাকলেও তাহেরের ডাকের পর তার আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয় না। তিনি সোজা গিয়ে ঐ বাঁশটাকে ধরেন। মনের সব সাহস সঞ্চয় করে শুরু করেন উপরে উঠা। উপর থেকে তাহের চিৎকার করে আনোয়ারকে উৎসাহ দিতে থাকেন : ব্রাভো, এই তো আর একটু, কুইক।

আনোয়ার প্রায় আশি ফুটের মতো উঠেও যান। কিন্তু তখন হঠাৎ বাঁশটা দুলতে শুরু করে এবং ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করতে থাকে। বাঁশটা প্রায় ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হলে তাহের তাড়াতাড়ি আনোয়ারকে নেমে আসতে বলেন। নেমে যান আনোয়ার।

নিচে নামলে তাহের আনোয়ারকে বলেন : ব্লাডি হেল কমান্ডো, তোমার মতো একটা ভীতু অপদার্থের কমান্ডোতে যোগ দেয়াই উচিত হয়নি। নাউ পুশ অফ।

আনোয়ার মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলে, পেছন থেকে ডাক দেন তাহের : কাম অন, ইটস অল রাইট। আমি তোমার বিপদটা টের পাচ্ছিলাম। একবার ইউজের কারণে বাঁশটা তো উইক হয়ে গিয়েছে, তাছাড়া তোমার ওয়েটও তো আমার চেয়ে বেশি। বাদ দাও চলো এবার বারে গিয়ে গলাটা একটু ভিজিয়ে আসি।**

(পৃষ্ঠা ৭৩-৭৫)



পরবর্তী অংশে লেখকের বর্ণনার ধরণ এবং চরিত্রের আচারণ খেয়াল করবেন। খানিকক্ষণের জন্য ধরে নিন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়ছেন, বুঝবেন কি বলতে চাচ্ছি।

এই আলোচনায় অপ্রয়োজনীয় বলে কিছু কিছু অংশ বাদ দিয়েছি। সম্পূর্ণ পড়তে চাইলে বইয়ের ১৫০–১৫২ পৃষ্ঠা দেখুন। তৃতীয় বন্ধনীতে কনটেক্সট উল্লেখ করা।



[১১ নং সেক্টর কামালপুর পাকিস্তান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। কর্তা হলো সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের।]

যুদ্ধে, যুদ্ধে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে আসে।

সেকেন্ড লে. মিজান ওয়াকিটকিতে বলেনকর্তা, আমরা পাক বাঙ্কারের একেবারে কাছে চলে এসেছি। একটু পরেই এখন আমরা বাঙ্কারে সরাসরি চার্জ করতে যাচ্ছি।

এইটুকু বলার পর অনেকক্ষণ মিজানের আর কোনো কথা শোনা যায় না। উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তাহের। ওয়াকিটকিতে বারবার চিৎকার করে : মিজান তুমি কোথায় কোথায় তুমি?

কিন্তু মিজানের কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। তাহের খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে মিজানের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তাহের বলেন : লেটস্ মুভ। আই মাস্ট গো ক্লোজার।

পেছনের কমান্ডিং বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন তাহের। ভারী মর্টার আর শেল চারদিকে। ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার [ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার] ওয়াকিটকিতে চেঁচিয়ে বলেন : হোয়াট আর ইউ ডুয়িং কর্তা? ইউ ক্যান্ট মুভ ফ্রম ইয়োর প্লেস। তাহের বলেন : আই মাস্ট ফাইন্ড লে. মিজান, ফ্রন্ট লাইন ফাইটার।

তাহের কমান্ড পোস্ট ছেড়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। তার পারসোনাল সিকিউরিটিতে থাকা দুই ভাই বেলাল আর বাহারের স্কাউট টিমটিও এগিয়ে চলে সামনে। মিড রেঞ্জ বরাবর আসেন তাহের। সেখানে ভাই সাঈদ অবস্থান করছেন তার কোম্পানি নিয়ে। সাঈদ বলেন: আপনি আর সামনে যাইয়েন না। মিজান আগেও এরকম কয়েকবার কমিউনিকেশন মিস করছে। সুতরাং ভয়ের কিছু নেই।

কিন্তু তাহের কথা শোনেন না, এগিয়ে যেতে থাকেন ফ্রন্ট লাইনের দিকে। তিনি প্রথম সারির বাঙ্কারগুলো অতিক্রম করে যান, অতিক্রম করেন বানরোড। একটু এগিয়েই পেয়ে যান মিজানকে। তাহের বলেন: তুমি তো চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে।

ওয়াকিটকির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন মিজান। তাহের বেলাল বাহারকে বলেন তাদের কোম্পানি নিয়ে সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যেতে। দিগন্তে ভোরের আলো ফুটছে। তাহেরের হাতে কোনো আর্মস নেই। তার হাতে সর্বক্ষণিক সঙ্গী সেই গলফ স্টিক। তার আশে পাশে তার পারসোনাল সিকিউরিটির যোদ্ধাদের কারো কাছ থেকে প্রয়োজনে অস্ত্র নেবেন তাহের ব্যবস্থা তেমনই।

তাহের যখন এগোচ্ছেন পাশের আখক্ষেত থেকে এবং পেছনের বাঙ্কারগুলো থেকে তুমুল গুলিবর্ষণ হচ্ছে তখন। শত্রু সীমানার ভেতর ঢুকে গেছেন তাহের। একটা প্রবল উত্তেজনা তাকে ভর করে। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তাহের হঠাৎ তার হাতের গল্ফ স্টিকটি ফেলে দিয়ে পাশে অবস্থান নেওয়া বেলালের কোম্পনির একজন যোদ্ধার কাছ থেকে চাইনিজ এসএমজিটি হাতে তুলে নিয়ে ফায়ার করতে শুরু করেন। বেলাল, বাহারকেও বলেন, তিনি যে রেঞ্জে ফায়ার করছেন ঠিক সে একই রেঞ্জে তারাও যেন ফায়ার করতে থাকে। বেড়ে যায় গোলাগুলির তীব্রতা। তাহেরকে এগিয়ে আসতে দেখে পেছন পেছন ভারতের মেজর এস আর সিংও একটা জীপে রিকুয়ারলেস রাইফেল নিয়ে এগিয়ে এসে খানিকটা দূরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তাহের ইশারায় বেলালকে বলেন: এস আর সিংকে গিয়ে বলো আরও একটু সামনে এগিয়ে আসতে একটু পরেই আমি পাকিস্তানি বাঙ্কারে হিট করব আর এজন্য আমার রিকুয়ারলেস রাইফেল দরকার।

তাহের জানেন পাকিস্তানি বাঙ্কারের যে কংক্রিট সেগুলো শুধু রিকুয়ারলেস রাইফেল দিয়ে আঘাত করলেই ভেদ করা এগিয়ে আসেন মেজর সিং। তাহের তার কাছে থেকে রিকুয়ারলেস রাইফেল হাতে নিয়ে এগিয়ে যান এবং সরাসরি বাঙ্কারে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। পেছনের কমান্ডিং পজিশন ছেড়ে সেক্টর কমান্ডার তখন যুদ্ধের মধ্যবিন্দুতে। বেলাল, বাহার খানিকটা পেছনে একটা আম গাছের আড়ালে। তারা দেখতে পান পাকিস্তানিরা সামনের বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে পেছনের বাঙ্কারে। অনেকে ঢুকে যাচ্ছে পাশের আখক্ষেতে। বোঝা যাচ্ছে নিশ্চিতভাবে পিছু হটছে তারা। বেলাল, বাহার এবং তাহের এগোতে এগোতে পাকিস্তানি বাহিনীদের প্রথম বাঙ্কারটি দখল করে ফেলেন। উত্তেজিত বাহার ওয়াকিটকিতে সবাইকে জানিয়ে দেন তাদের প্রথম বাঙ্কার দখলের খবর। পাকিস্তান বাহিনীরা রিইনফোর্সমেন্টের জন্য ওদিকে বক্সিগঞ্জ থেকে সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তাদের ঠেকিয়ে দেয় বক্সিবাজার সড়কে পজিশান নিয়ে থাকা মারাঠা রেজিমেন্টের অ্যামবুশ। যোগাযোগের পথ ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে কামালপুর বক্সিবাজার থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে সেখান থেকে সাহায্য পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানিদের।

সকাল প্রায় সাতটা তখন। কামালপুরের অনেকটা ভেতরে ঢুকে গেছে মুক্তিবাহিনী। তারা এগোচ্ছেন প্রচুর পাকবাহিনী এমনকি মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ ডিঙিয়ে। ভয়াবহ গোলাগুলির মধ্যে পড়ে একই সাথে পাকবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধা উভয়ই নিহত হচ্ছে একের পর এক। দখল করে নেওয়া বাঙ্কারের সামনে উঁচু একটা ঢিবির মতো জায়গা দেখা যায়। ঢিপিটা বানানো হয়েছে বাঙ্কারের প্রতিরক্ষার জন্য। সেই উঁচু জায়গায় গিয়ে বসেন তাহের। উত্তেজনা, আত্মবিশ্বাস তার মধ্যে। আবার তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন তার সেই গলাফ স্টিক। এক মুক্তিযোদ্ধা হঠাৎ দৌড়ে এসে পাকিস্তানিদের বাঙ্কার থেকে দখল করা একটি মেশিনগানের গুলির চেইন মালার মতো করে পরিয়ে দেয় তাহেরকে, বলে-শুভ জন্মদিন কর্তা।

সেদিন ১৪ই নভেম্বরের ভোর। তাহের মুচকি হেসে বলেন : জলদি পজিশনে ফিরে যাও।

পাকিস্তানিরা পাশের আখ ক্ষেতে লুকিয়ে অবিরাম ফায়ার করছে। তাহের উঁচু ঢিবিতে বসে তার গলফ স্টিক দিয়ে মিজান, বেলাল, বাহারের কোম্পানিকে নির্দেশনা দেন কোনো কোনো দিকে ফায়ার করতে হবে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি জায়গায় তখন বসে আছেন তাহের। সামনে আরও ৭/৮ টি বাঙ্কার। সে বাঙ্কার গুলোও অচিরেই দখল করার পরিকল্পনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে থাকেন তাহের।...


...উঁচু ঢিপিতে বসে থাকা তাহের নামতে উদ্যত হবার মুহূর্তেই সেখানে বস্তুত একটি শেল ড্রপ হয়। তাহেরের সবচেয়ে কাছে ছিলেন বেলাল আর বাহার। তারা তখন তার পারসোনাল সিকিউরিটির দায়িত্বে। তারা হঠাৎ দেখেন উঁচু ঢিপি থেকে ঢলে পড়ছেন তাহের।**

[কর্নেল তাহের তাঁর পা হারায়। মিসকমিউনিকেশনের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা মন�� করে সেক্টর কমান্ডার মারা গেছে। মনোবল হারায় সবাই। নিশ্চিত জিতে যাওয়া যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ হারায় যৌথবাহিনী। পিছু হটতে বাধ্য হয়।]



কেন আয়রনিক বললাম বুঝলেন?


কিন্তু দিনশেষে ক্রাচের কর্নেল হলো শাহাদুজ্জামানের কর্নেল তাহের। লেখক যেভাবে তাহেরকে দেখেছেন, নিশ্চয়ই সেভাবেই এঁকেছেন তাঁকে।


ক্রাচের কর্নেল এমন এক সময়ের উপন্যাস, যে সময়ের ধারাবাহিকতায় আমরা এখনো চলছি।
– প্রথম আলো



উপন্যাস হিসেবে সত্যিই অনবদ্য। আমি মাতি যুদ্ধে হেথায়, না প্রেমিক না বিপ্লবী – এরকম কাব্যিক শিরোনামে কিংবা অফিসারের রক্ত চাই – এমন রক্ত হিম করা স্লোগান-শিরোনাম দিয়ে লেখনীর মোহনীয় বুননী বুনেছেন শাহাদুজ্জামান।

কিন্তু আমাদের বর্তমানের কারিগরদের প্রতি লেখকের মায়া হয়তো একটু বেশিই ছিল। কখনো কখনো ওই ধূসর সময়কে খুব বেশি সাদাকালো রংয়ে দেখিয়েছেন তিনি। সেজন্য ঠিক মনঃপুত হয়নি।


তিন দশমিক পাঁচ তারকা।





** বই থেকে ছবি তুলে গুগল লেন্সের মাধ্যমে উদ্ধৃত অংশগুলো এখানে পেস্ট করা। উপর দিয়ে শুধু চোখ বুলিয়েছি একবার, বানান ভুল থাকতে পারে।
Profile Image for Samidhya Sarker Torsho.
36 reviews17 followers
July 28, 2014
কর্নেল তাহের এবং হিরোইসম, এখানে যেন দুটি সমার্থক শব্দ। একজন মানুষকে হিরোর আসনে বসালে তাঁর চরিত্রের অনেক ত্রুটি চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় না। বাঙালি হুজুগে, অলস জাতি। এই হিসেবে অনেক সাধারন মানুষের মাঝখানে তাকে একজন হিরো হিসেবে কল্পনা করতে কষ্ট হয় না।

বিপ্লবের রোমান্টিকতা গ্রাস করেছে চে গুয়েভেরা এবং কর্নেল তাহের দুজনকেই। তাদের মৃত্যুদণ্ড গুলোর এত মিল দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। ব্যর্থ বিপ্লবের নায়ক এই দুজন।

একাত্তরের দিনগুলি, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প এই দুটি বইএর উত্তরসুরী এই বইটি। কেবলমাত্র মুক্তিযুদ্ধ নয়, এর পেছনের এবং সামনের সমাজতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে এই বইতে।

A book, well written.
Profile Image for Farhana.
325 reviews202 followers
April 7, 2017
স্কুলে থাকতে বিএনপি সরকারের আমলে ৭ নভেম্বর 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস' নামে একটা দীর্ঘ নামের সরকারি ছুটি পাওয়া যেত। তার নেপথ্যের কাহিনী জানা ছিল না। ট্রটস্কির'র ভাষায় , Insurrection is an art, and like all arts has its own laws. অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের ডামাডোলে সেসময়ের সিপাহী বিপ্লব কে কম্যুনিজমের রোমান্টিসিজমে বুঁদ হয়ে থাকা কর্নেল তাহেরের যুথভ্রষ্টতা ঠিক বলব না , কারণ অভ্যুত্থানে যারা সফল হয় তাদের থেকে কম ঝুঁকি বই তো অসফলরা নেয় না । বাকিটা বোধহয় ভাগ্যের উপর~
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
July 25, 2020
অসম্ভব সুন্দর লেখনী।ছোটো ছোটো বাক্যে গতিময় সাবলীল বর্ণনা।ইতিহাস তো জানি না আর এই দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারব এমন বিশ্বাস ও হয় না।উপন্যাস হিসেবেই পড়ছি।

কর্নেল তাহেরের গল্প পড়ে স্কুলে পড়া এক রাজার কাহিনী মনে পরে গেল।রাজা বারবার যুদ্ধে হারে আবার প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ করে।অবশেষে রাজা সাত বার পরাজিত হওয়ার পর বিজয় অর্জন করেন।কিন্তু ক্রাচের কর্নেল সারা জীবন নিজের দেশের জন্য লড়াই করেও হেরে গেলেন......হেরেই গেলেন।
তবু দেশের জন্য কাজ করার উদ্যম উৎসাহ কখনো কমে নি।তার এই উদ্যম দেখে সম্মানে বুক টা ভরে ওঠে।এমন করাপ্ট একটা সিস্টেমেরে মধ্যে থেকেও আমৃত্যু লড়ে গেছে।ইন্সপিরেশন পাই যে এর মধ্যে থেকেও হয়তো নিজের আত্মাকে শুদ্ধ রাখা যায়।
Profile Image for Mohammad Tasawar.
6 reviews3 followers
August 20, 2020
রীতিমত লোম দাড়িয়ে গেলো। শাহাদুজ্জামান এর লেখার সাথেও পরিচিত হলাম। রেসের ঘোড়ার মতো ছুটলো একজন সাহসী দেশপ্রেমিকের জীবনের গল্প, তার পরিবারের গল্প।তার সাথে সমসামিয়ক সব ঘটনার মিশ্রণ ৪৭ পরবর্তী সময়ের খুব কাছে নিয়ে যেতে বাধ্য করে পাঠকদের।

এক কথায়, অনবদ্য, অসাধারণ।

গল্পটা শুধু একজন দেশপ্রেমিকের নয়, এখানে আমাদের দেখা মেলে একজন সাহসী মায়ের। ছেলেকে মৃত্যুর একদম কাছাকাছি দেখেও যিনি থাকেন অনড়।

অনেক নতুন ব্যাপার জানা হলো, বুঝা হলো।জানা গেল একাকী অভিযাত্রীর এক গল্প। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অল্প কজন বাঙালী অফিসারের একজন, যিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যুদ্ধ করতে আসেন। ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে অসীম সাহস নিয়ে লড়াই করে যান যুদ্ধে। এক পা হারালেও উদ্যম হারাননি কোনোদিনও। তবুও শেষ পর্যন্ত এন্জেলসের সেই উক্তিই মনে পরে বারবার,

“যুদ্ধের মতো অভ্যুত্থান ও একটা আর্ট, অভ্যুত্থান নিয়া খেলা কইরো না”
Profile Image for DEHAN.
275 reviews86 followers
February 8, 2020
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস টুকটাক পড়ছি কিন্তু স্বাধীন হওয়ার পর এতো দ্রুত যে এরকম কিছু ঘটনা ঘটছিলো তার বিস্তারিত তথ্য জানতাম না। স্বাধীনতার পাঁচ বৎসরের মধ্যে বাংলাদেশের মালিকানা বেশ কয়েকবার পাল্টায়। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- প্রতিবার ই একজন বাংলাদেশের মালিক হন তারপর তিনি সাবানপানি তে ভালো মতো দেশটা ধুইয়া ছাদে নেড়ে দিয়া আসে।
কিন্তু দিন শেষে ছাদ থেকে শুকনা বাংলাদেশ ঘরে নিয়ে আসার জন্য সুযোগ আর তার হয় না।
ততক্ষনে মালিকানা চেঞ্জ হয়ে গেছে।শুকনো বাংলাদেশ নিতে আসে আরেকজন।তার আবার আগের জনের ধোয়াটা পছন্দ হয় না তাই তিনি আবার বাংলাদেশটা নিজের মতো ধুইয়া নেড়ে দিয়ে আসেন কিন্তু ইনিও আগেরজনের মতো নিয়ে আসার সুযোগ পান না। মালিকানা আবারো চেঞ্জ হয়ে গেছে।
বেশ ভেতরের খবর জানা হইলো।
মেজর জিয়া ভালো খেলা দেখায়েছেন।
Profile Image for Pritha Hasan.
10 reviews43 followers
May 18, 2024
পড়তে পড়তে কতো কতো ইমোশন যে পার করেছি, আনন্দ -কষ্ট -বিস্ময়- লজ্জা - ক্ষোভ। সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তাহেরের মা আশরাফুন্নেসা, এগারো সন্তানের জননী যিনি চিরাচরিত বাঙালি মায়ের বৈশিষ্ট্যের সম্পুর্ণ বাইরের একজন মানুষ।অদ্ভুত দক্ষতা আর শৃঙ্খলার সাথে তার সন্তানদের তিনি গড়ে তুলেছেন আর প্রতিটি সন্তানের বুকের মধ্যে খোদাই করে দিয়েছেন দেশপ্রেম। বাবা-মা,সব ভাই-বোন,ভাইয়ের স্ত্রীরা ও তাহেরের স্ত্রী লুৎফা সব মিলিয়ে দারুণ আর বিস্ময়কর এক পরিবার । পরিবারের একেক সদস্য একেক রকম, কিন্তু দেশের জন্যে সবাই নিবেদিত প্রাণ।তাহের যেন রুপকথার পাতা থেকে উঠে আসা দুর্ধর্ষ এক নাইট!
যতই বইটার ভিতরে গিয়েছি অজান্তেই ততই নিজের ভিতরে দানা বেধেছে কষ্ট, রাগ আর ক্ষোভ।কিন্তু একদম শেষের দিকে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। পড়া শেষ করে বিষাদ,তীব্র ক্ষোভ আর হাহাকারের পাশাপাশি ভেসে গেছি সীমাহীন লজ্জায়।এক অকৃতজ্ঞ জাতির একজন হওয়ার লজ্জা!
Profile Image for Jarin Khan Mou.
25 reviews12 followers
March 5, 2022
শাহাদুজ্জামানের সাথে আমার পরিচয় হলো এই বই দিয়ে। অনেক সময় নিয়ে আমি বইটা পড়েছি। কিছু ব্যাক্তিগত কারন ছিল আর ছিল বইটার প্লট বোঝায় অসুবিধা। এত ক্রিটিক্যাল একটা সময় নিয়ে লেখক কথা বলেছেন,যে এক লাইন এদিক ওদিক হলেই সব ঘুলিয়ে যাচ্ছিলো।

ক্রাচের কর্ণেল- বইটি প্রকাশ পায় ২০০৯ সালের বইমেলার শেষ দিকে। তারপর বইটি নিষিদ্ধ থাকে বেশ কয়েকবছর। নিষিদ্ধ ছিল বলেই ঝোক টা বেশি ছিল আমার। এবং কেনো নিষিদ্ধ - এর সঠিক উত্তর আমি কোথাও পাই নাই। তাই বুঝলাম এর খোজ পাওয়া যাবে একমাত্র বইয়ের ভিতরে।

যুদ্ধে ১১ নং সেক্টর কমান্ডার আবু তাহেরে পা উড়ে যায় পাক বাহিনীর ঘাঁটি দখল করতে গিয়ে। যুদ্ধের পরবর্তী অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা এবং ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আটকে পরা ক্রাচ ভর করা সেই বীর-উত্তম কর্ণেল আবু তাহেরের গল্প রটেছে পুরো বইয়ে। এ বই নিয়ে বেশি কিছুই বলা যাবে না। অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে রেখে বইটার ইতি ঘটলো।
Profile Image for Turna Dass.
145 reviews
September 30, 2025
আমার আর কিছু বলার নেই।অসাধারণ স্টোরিটেলিং!

আর ক্রাচের কর্ণেল যেন সবার মনে সাহসিকতার আগুন জ্বালিয়ে দিক,এই কামনা করি।
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews64 followers
December 21, 2021
আমরা রাজা বাদশার গল্প পড়ি। তাদের বীরত্বের কথা পড়ি। পড়তে পড়তে আমরা অবাক হই। কিন্তু সেসব গল্পের অধিকাংশ হচ্ছে কাল্পনিক বা মিথ।

কিন্তু আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে একজন রাজার জন্ম হয়েছিল। যে রাজা সব সময় শুধু তার দেশের কথা ভাবত। দেশের উন্নতি নিয়ে ভাবত। দেশকে বদলে দেবার স্বপ্ন দেখত। সে রাজা নিজের রক্ত দিয়ে স্বদেশ কে শত্রু মুক্ত করেছে।

নিজের মাতৃভূমি কে মুক্ত করতে গিয়ে হারায় তার পা। তবুও তার পথ চলা থেমে থাকে নি। দেশকে বাহির শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করার পর,তিন আবার ঝড়িয়ে পড়েন অভ্যন্তরীণ শত্রু তাড়ানোর কাজে। তার কাজে তিনি প্রায় সফল। কিন্তু শত্রুর শেষ ছোবল থেকে তাকে রক্ষা করা যায়নি।
যে রাজার নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছে,যে রাজা দেশের মানুষকে আপন জনের মতো ভালোবাসত। তাকে কি আসলে দূরে সরিয়ে দেয়া সম্ভব? কখনোই সম্ভব না। সেটা রাজা ও জানতেন। তাই তো তিনি কারাগারে বসে বলেছিলেন, "আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত। আমাকে হত্যা করতে হলে পুরো জাতিকে হত্যা করতে হবে। কোনো শক্তি কি তা করতে পারে? "

পাঠপ্রতিক্রিয়া: ক্রাচের কর্নেল একটা ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস। যেটার কাল, চরিত্র সবই সত্য। আমি রুপকথা বা রাজা বাদশা টাইপ গল্প উপন্যাস খুব কম পড়েছি। তাই এই সম্পর্কে আমার ধারণা খুব কম।
ক্রাচের কর্নেল পড়ার সময় আমি একজন সত্যিকারের রাজার ছবি আমি দেখেছি। সে রাজা "আবু তাহের"৷ যে রাজা সিংহাসনে বসে নয়,ক্রাচে ভর করে দেশের সেবা করতেন। যে মানুষ টা নিজের দেশ কে শুধু ভালোবেসে গেছেন।
এরকম ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস লেখা বেশ কষ্টকর। তবে সে কাজটা লেখক শাহাদুজ্জামান খুব ভালো ভাবেই করেছেন। খুব গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। সেজন্য লেখককে ধন্যবাদ দেয়া যায়।
Profile Image for Azmain Akash.
6 reviews64 followers
November 9, 2017
আপনি ইতিহাস নিয়ে তেমন আগ্রহী না হলেও,শাহাদুজ্জামান আপনাকে বাধ্য করবেন সেই উত্তাল দিনগুলোতে আপনাকে নিয়ে যেতেন।ক্ষমতার মোহ যে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকেও শত্রু বানিয়ে দে,আমাদের দেশের ইতিহাস তার জলজ্ব্যান্ত প্রমাণ।কাউকে বিশ্বাস করার সর্বোচ্চ মাশুল কিভাবে বঙ্গবন্ধু,কর্নেল তাহের দিয়েছেন তার খুঁটিনাটি এতে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।লেখনী অনেক বেশি সুখপাঠ্য।
Profile Image for Nadia Jasmine.
213 reviews18 followers
February 23, 2024
বাংলাদেশ হবার পর মানুষকে বিশ্বাস করলেই ধরা খেতে হবে, এই ‘জাতীয় চরিত্রের’ মূল ইতিহাস অবিকৃত রেখে অসাধারণ এই উপন্যাস রচনার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। যেকোন ভালো কিছু কি করে আমরা একদম বরবাদ করে করে এতোদূর এসে চারিদিকে হতাশা দেখে নিরুপায় হয়ে ক্ষণস্থায়ী সব ভালো লাগার পথ খোঁজার জন্য নিজেদেরকে যে অপরাধী ভাবি, সেটারও মনে হল কারন এই বই পড়লে বর্তমানে যে কোন মানুষ পেয়ে যাবে। আর যেই মানুষটাই ভালো করতে চায়, তার কপালে যে করুণতম পরিণতি বাদে অন্যকিছু নেই, তাও জানতে বইটি সাহায্য করে। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবন, সর্বত্র এখনো বেঈমানীর ঐতিহ্য কি করে এতো সফলভাবে ধরে রাখতে পেরেছি, তাও বইটি পড়লে বুঝতে কষ্ট হবার কথা না।

দিন আসলে খুব কমদিনের জন্য ভালো ছিল। আর সেটার জন্য কে যে দায়ী, তা নির্ণয় করা মুশকিল। দুধের সরটুকু খেয়েছেন দুই মহাবেঈমান, মোশতাক আর জিয়া। মোশতাকের পরবর্তীতে স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা এখনো একারনে বিরক্তিকর।

এক অবাঙালী বন্ধুকে পড়তে দিতে চেয়ে অনুবাদ খুঁজলাম, পাই নি। এই বইয়ের ইংরেজী অনুবাদ নেই যদ্দূর জানি। আর কোন ভাষায় অনুবাদ আছে কিনা জানা নাই। ইংরেজী অনুবাদটা বন্ধুকে দিতে চাই বলে এই সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় সেটা জানিয়ে রাখলাম। কোন অনুবাদক বা লেখকের চোখে পড়লে হয়তো উপকৃত হব, এই আশা রাখলাম।
Profile Image for Fahad Ahammed.
386 reviews44 followers
November 14, 2020
"তাহের আমাকে বাঁচাও"
ফোনটা আসার ঠিক কয়েক মাস পর, যিনি ফোনটা করেছিলেন তিনি নিজ হাতে ফাঁসির দড়ি পরিয়ে দেন কর্নেল তাহেরের গলায়। কেউ প্রাণ বাঁচালে তার প্রতিদানে তাকে ফাঁসি দেবার মতো বিরল ঘটনার সাক্ষী হলাম আমরা।

ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে, সিরাজুদ্দৌলার রাজসভায় মিরজাফর পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করে ওয়াদা দিয়েছিল আর এই বইয়ে একজন "মেজর" কে পাওয়া যাবে ঠিক একই কায়দায় কুরআন শরীফ ধরে কথা বলতে। কি অলৌকিক মিল দুজনার, কাজে এবং চরিত্রে.....

প্রথম বিষয় হলো শাহাদুজ্জামানের ভাষা শৈলী এবং শব্দের কারুকাজ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে দারুণ শব্দে বর্ণনা দিলেন। আর বইটা লেখার জন্য যে পরিমাণ পড়াশোনা করেছেন এই রকম পড়ুয়া লেখক ঠিক এখন তেমন পাওয়া যায় না। পড়াশোনা করে নতুন কিছু সৃষ্টি তে নতুন লেখকদের আগ্রহ চোখে পরে না। এখন জনপ্রিয় লেখকদের চৌর্যবৃত্তিই তাদের কে আরু জনপ্রিয় করে।

মন থেকে যেই বিষয় টা তাড়াতে পারি না সেটা হলো, দেশটা আর দেশের জনগণ নিয়ে যে যার মতো দাবার চাল চেলেছে। সু ও কুজনের এই দাবার চাল দেশটার ইতিহাসকে যেমন দিয়েছে নাট্য রূপ তেমনই দেশটাকে বানিয়ে ছেড়েছে একটা নাট্যমঞ্চ।

কর্নেল তাহের, তাঁর স্বপ্ন, সংগ্রাম, মুক্তি যুদ্ধ, দেশ ও সেনাবাহিনী কে নতুন করে সাজানোর চিন্তা চেতনা র পাশাপাশি পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ১৯৭১, জাসদ, সমাজতন্ত্র, ১৯৭৫, বঙ্গবন্ধু ক��� স্ব পরিবারে হত্যা, জিয়া, মুশতাক সহ আরু অনেকের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে এই ঐতিহাসিক উপন্যাস। মূল গল্প টা কর্নেল তাহেরের, যার শাখা-প্রশাখায় ছড়িয়ে গেছে পুরো বাংলা।

খট খট শব্দে এগিয়ে চলা এই কর্নেল সত্যি ই অসাধারণ মানুষ, তাতে আমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই কিন্তু ঠিক নতুন রূপ দিতে পেরেছিলেন ইতিহাসটা কে এটা বলা যায় না। হয়তো বলা যায় যে সমস্ত জীবটা দিয়ে চেয়েছিলেন ইতিহাস টাকে পাল্টে দিতে। ফাঁসির পর কর্ণেল তাহেরের নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে বলতে হয় জাসদ, জিয়া, তাহের ইতিহাস টাকে আরু নাটকী রূপই দিয়েছেন, ভিন্ন অনেক কিছুই হতে পারতো কিন্তু এরচেয়ে খারাপ কিছু হয়তো হতে পারতো না।

জীবন দিয়ে কর্ণেল সাহেব বুঝিয়ে গেছেন কি চিজ ছিলেন "মেজর" সাহেব। মানুষ কে বিশ্বাস করতে হয়, সঙ্গী এবং জুনিয়র দের সব সময় এই কথাই বলতেন তাহের। তাঁর এই বিশ্বাস তাকে পৌঁছে দিয়েছে ফাঁসির মঞ্চে।

১১ নাম্বার সেক্টর টাকে সাজানোর মাধ্যমে যুদ্ধে একটা নতুন রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন কর্নেল তাহের, সম্পূর্ণ পরিবার লড়ে গেছেন দেশ স্বাধীনের জন্য। মুক্তি যুদ্ধ টাকে একটা গণযুদ্ধের রূপ দিয়েছিলেন এই কর্নেল। দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধরত সব গেরিলা যোদ্ধাদের যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে গেছেন সব কটি ভাই। পা হারিয়ে পঙ্গু হলেন। দেশ স্বাধীন হবার পরও চললো তাঁর ছুটেচলা, দেশকে ঢেলে সাজাতে তাঁর চিন্তা, ভাবনা, পড়াশোনা, আর কাজে কোনো কান্তি ছিল না। বিনিময়ে ফাঁসির দড়ি হয়েছিল প্রতিদান।

বইটা অসাধারণ কোনো সন্দেহ নেই তবে কর্নেল তাহেরের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু নতুন তথ্য ছাড়া প্রায় সব তথ্য ই আগে নানান জায়গায় পড়েছি, তারপরও বইটা ছিল বেশ উপভোগ্য।

জন্মেছি সারা দেশটিকে কাঁপিয়ে তুলতে
কাঁপিয়েই গেলাম।
জন্মেছি তাদের বুকে পদচিহ্ন আঁকব বলে
এঁকেই গেলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে
করেই গেলাম।
জন্ম আর মৃত্যুর দুটো বিশাল পাথর
রেখে গেলাম।
সেই পাথরের নিচে শোষক আর শাসকের
কবর দিলাম।
পৃথিবী অবশেষে এবারের মতো
বিদায় নিলাম।

লাইনগুলো যেন কর্নেল তাহেরের জীবন কথা......
Profile Image for Mubtasim  Fuad.
316 reviews41 followers
February 15, 2025
অক্টোবর, ২০২৪, সবে শেষ করলাম হুমায়ূন আহমেদের লেখা দেয়াল উপন্যাসটি। উপন্যাসটিতে এমন অনেক তথ্য ছিল যেগুলা আমার ২১ বছরের দীর্ঘ জীবনে অজানা ছিল। বইটি শেষ করে আমি ভাবতে বসে যাই, সেই ছোট থেকে ইতিহাস পড়তে পড়তে বড় হয়েছি কিন্তু দিনশেষে ইতিহাস হিসাবে যেটাকে চিনেছি সেটা আদোও কতখানি সত্যি। একজন মানুষকে নিয়ে ইতিহাসের সবখানে পরিপূর্ণ। বই খুললে শুধু তাকে নিয়েই সব কাহিনীর আবর্তন, কিন্তু সে একাই কী দেশ স্বাধীন করেছিল? তার পাশাপাশি যারা দেশের স্বাধীনতার পিছে অবদান রেখেছিল তাদের সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ পাই নাই আমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের মাঝে।
এরপর দেশের আসল ইতিহাস জানার জন্য মনের মাঝে ক্রমাগত আগ্রহ বাড়তে থাকে। তখন কোন একজনের সাজেশনে (নামটা ঠিক মনে নাই,তবে আপনাকে ধন্যবাদ) ক্রাচের কর্নেল বইটা কিনি।
শাহাদুজ্জামানের লেখা পূর্বে আমার পড়া হয় নাই কিন্তু বই পাড়ায় তার জনপ্রিয় কিছু বই যেমন একজন কমলালেবু, মামলার সাক্ষী ময়না পাখি, একটি হাসপাতাল... ইত্যাদি বই সম্পর্কে অনেক পজিটিভ রিভিউ পড়েছি। সেজন্য ক্রাচের কর্নেল বইটি হাতে আসার সাথে সাথে পড়া শুরু করে দিই।
এবং এক নিমেষে হারিয়ে যাই সেই অজানা এক ইতিহাসের পাতায়।
বইটি যাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে তিনি হচ্ছেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের, বীরবিক্রম। একজন দূঢ় মানসিকতার, অসীম সাহসী, দূরদর্শী, বিচক্ষণ যোদ্ধা। তাহের ছোট থেকেই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং ক্ষুদিরামের থেকে অনুপ্রাণিত। তিনি তার বাবা মা এর তৃতীয় সন্তান হলেও তিনি ছিলেন সবকয় ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ। বইটিতে মূলত তাহেরের ছোট বেলা, তার সেনাবাহিনীতে যোগদান, লুৎফার সাথে বিয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সহ আরো অনেক বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
বইটিতে বাঙালির ইতিহাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সমূহ ১৯৬৯ থেকে শুরু করে ১৯৭১,৭২,৭৪,৭৫ এবং সর্বশেষে ১৯৭৬ এর মর্মান্তিক এক বিচারের মাধ্যমে একটা স্বাধীনচেতা চরিত্রের উপসংহার সবটাই শাহাদুজ্জামান নিখুঁতভাবে লিখে গেছেন বইটার মাঝে।
বইটাতে কতটা সত্য মিথ্যা লুকিয়ে আছে আমি জানিনা। তবে বইটির মাঝে ছিল এমন অনেক তথ্য যা পূর্বে আমার কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল।
তাহেরের মনোবল আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করছিল এবং ভবিষ্যতেও করবে। যুদ্ধে সে তার পা হারিয়েও দমে যায় নাই, দেশ গঠনে, দেশের মঙ্গল কামনায় সে নিজের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগটি দিয়েছিল। কিন্তু...
ইদানিং কালে আমার ইতিহাস ভিত্তিক বইগুলা পড়তে দারুন লাগছে। আমার ইচ্ছা আছে তাজউদ্দীন আহমেদ, মাওলানা ভাসানী এবং এবং ইতিহাসে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো সম্পর্কে আরও জানার। ইনশাআল্লাহ একে একে পড়ব।


[ বইটি শেষ করেই রিভিউ লিখেছিলাম ফোনের নোটে কিন্তু সেটা আপলোড করতে মনে ছিল না, এরপর ফোন রিসেট করায় সে রিভিউ হারিয়ে যায়। এজন্য বাধ্য হয়ে আবার রিভিউ লিখতে হল, বইটি পড়েছি অনেকদিন হয়ে গেছে, কিছু কিছু তথ্য ভুলে গেছি যা পূর্বের রিভিউতে উল্লেখ করেছিলাম, কি আর করার। ]
Profile Image for Tanjina Tamanna.
99 reviews20 followers
October 7, 2017
কিছু ব্যপার ঘোলাসা লেগেছে তবে ইতিহাসটি যখন মুক্তিযুদ্ধের এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের তখন সম্পূর্ণ সত্যতা আশা করাটাই বোকামী।অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও মনে হয় আমার কাছে এটাই সত্য।কাজেই ঐতিহাসিক বই না ভেবে শুধু উপন্যাস ভেবেই পড়েছি।
তবে they've made a big mistake.They shouldn't have allowed Sheikh Mujib's burial.Now a shrine will be built there.His body should've been thrown into bay of Bengal" এই কথাটী যে কর্ণেল তাহের বলেছিলেন তার উল্লেখ কেন লেখক করলেন না ? জিয়ার প্রতি বিদ্বেষটা দেখানো হল মুজিবের প্রতিও যে ছিল তা কেন দেখালেন না? নিরপেক্ষ হলে ভালো লাগতো আরও,ব্যক্তিগত মতামত সম্পূর্ণই।তবে যেহেতু বলেছি শুধুই উপন্যাস হিসেবে পড়েছি কোন ঐতিহাসিক রেফারেন্স নয় তাই সত্য মিথ্যার বিচার তোলা থাক।
Profile Image for Humayra Ta Deen Fabi.
74 reviews8 followers
June 23, 2024
পড়ে শেষ করলাম বর্তমান সময়ের মননশীল লেখক শাহাদুজ্জামানের বই 'ক্রাচের কর্নেল'। ক্রাচের কর্নেল বইটিকে লেখকের ভাষ্যমতে ইতিহাস,আত্মজীবনী নাকি উপন্যাস এভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেয়েও তিনি বইকে মূলত সংজ্ঞায়িত করেছেন সময়কে উপজীব্য করে। ভবিষ্যত কে জানতে হলে অবশ্যই অতীত ইতিহাসের সাথে মানুষকে পথ চলতে হয়। তারই প্রয়াস থেকে লেখকের কৌতূহল ছিল তাঁর বেড়ে ওঠার সময়কে তুলে ধরবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়টিকে প্রতিনিধিত্ব করবে এমন একটি বই তিনি লিখতে চেয়েছেন যা পাঠকদের মাঝে আগ্রহ তৈরি করবে। উপন্যাস আত্মজীবনী এবং ইতিহাসের সংমিশ্রণে সময়কে সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়ে তখন তিনি সাহিত্য ও গবেষণায় মন বসালেন,লিখলেন ক্রাচের কর্নেল। 

মুলত বইটির মূল চরিত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেল,বীরবিক্রম। মা আশরাফুন্ন্নেছা এবং বাবা মহিউদ্দিন আহমেদের দশ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় স���্তান আবু তাহের ওরফে নান্টু। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন স্থির, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন ক্ষুদিরামের অনুরক্ত। জীবনের স্রোতে এগিয়ে চলা তাহেরের জীবনে সেনাবাহিনীতে যোগদান, লুৎফার সাথে বিয়ে, যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও ১১ নং সেক্টরে অকুতোভয় কমান্ডার হয়ে নিজের পা হারিয়ে একাধিকবার প্রমাণ করেন দেশের প্রতি তীব্র ভালবাসা। একজন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক তাহের দেশকে পাকসেনাদের থেকে মুক্ত করতে নিয়েছেন সর্বোচ্চ জীবনের ঝুঁকি, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে শ্রমিক, কৃষক দের নিয়ে গড়ে ওঠা যোদ্ধাদের দিয়েছেন সঠিক দিকনির্দেশনা। 

ঘটনার পরিভ্রমণ ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ হওয়ায় অচিরেই সময়ে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ,মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃংখলা, দুর্ভিক্ষ এবং রাজনীতির বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানান টালবাহানা। ১৫ অগাস্টের বিভীষিকাময় অধ্যায়, দেশপ্রেমিক ৪ নেতার হ-ত্যা সহ দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং রাজনীতির বিভিন্ন বাঁক নিয়ে লিখেছেন লেখক।বঙ্গবন্ধুর হ/ত্যার পরবর্তিতে খোন্দকার মোশতাকের ৮১ দিনের শাসন শেষে খালেদ মোশাররফের ক্ষমতায় বসা এবং জেনারেল জিয়া কে গৃহবন্দি করা এবং জাসদ নেতা তাহের জিয়াকে উদ্ধার করা থেকে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক অধ্যায় উঠে এসেছে বইয়ে। 

একান্ত ব্যক্তিগতভাবে বলব বইটি আমাকে ভীষণ মাত্রায় ছুঁয়ে গেছে। লেখকের লেখনীতে স্বাধীনতার পরবর্তী কালকে নিয়ে একটা আবহ সত্যিই পাঠককে ধরে রেখেছে। লেখকের ভাষ্যমতে তিনি বারবারই চেয়েছেন মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করতে। এক্ষেত্রে তিনি আসলেই স্বার্থক। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র, ঘটনা, উপাত্ত যেহেতু বাস্তব সেক্ষেত্রে তিনি উপন্যাসটি কে সাজিয়েছেন অত্যন্ত সংবেদনশীল ভাবে। ইতিহাসে অস্তিত্ব রয়েছে এমন একজন বিশিষ্ট দেশপ্রেমিকের জীবননির্ভর ফিকশন সেখানে তিনি গল্পকে ন্যারেট করেছেন ফ্ল্যাসফোরয়ার্ড স্টাইলে। বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের দিনটিকে তির্যকভাবে ইঙ্গিত দিয়ে ঘটনার তীব্রতা বুঝিয়েছেন। যেহেতু কর্নেলের জীবনের শেষ অধ্যায়টি অত্যন্ত সেন্সিটিভ তাই কোনরকম জাস্টিফিকেশিনের দিকে যাওয়ার সাহস আমি করছিনা । যেহেতু ইতিহাস লেখকেরা নিজের দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকেই তুলে ধরতে চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রে অনেক বিষয়বস্তু হয়তো বা নিরপেক্ষভাবে উঠে আসেনি এমন টা দাবি হয়তো অনেক এসে থাকবে।কিছু ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল ইনসাইট আরেকটু ডিটেইল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। 

কর্নেল তাহের, মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদান, দেশের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ, আর গড়তে চেয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। উত্থান পতনের রাজনীতিতে হোঁচট খেয়ে পড়েছেন, বারবার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। শেষটায় লেখক স্পষ্ট প্রশ্ন করে গিয়েছেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের প্রাপ্তি ছিল এই! 

ইতিহাসের এই জটিল অধ্যায়ে অসংখ্য বার প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার নিরপেক্ষতার, পক্ষপাতদূষ্টতার। তাই জটিল সে সমীকরণকে এক পাশে রেখে সবশেষে বলব ইতিহাস বা আত্মজীবনী হিসেবে নয় বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব এবং পরবর্তী সময়কে জানতে এবং ইতিহাসে কৌতূহলী হতে ক্রাচের কর্নেল সুপাঠ্য। ৩৫০ পৃষ্ঠার ইতিহাসের পটপরিবর্তনকে উপজীব্য করে লেখা ক্রাচের কর্ণেল পাঠকের জন্য recommended
Displaying 1 - 30 of 304 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.