Jump to ratings and reviews
Rate this book

সূর্য-দীঘল বাড়ী

Rate this book
বাংলা ১৩৫০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পঞ্চাশের আকাল নামে যে দুর্ভিক্ষ হযেছিল তাতে প্রাণ হারায় বহু লক্ষ দরিদ্র মানুষ। যারা কোনমতো শহরের লঙ্গরখানায় পাত পেতে বেঁচে থাকতে পেরেছিল তদেরই একজন আকালের সময় স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুন। সঙ্গে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইদের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন একখণ্ড জমিতে ঘর ওঠায় যা অপয়া ভিটা বলে পরিচিত ছিল। জীবনের যুদ্ধে যখন সে প্রাণপণে লড়ছে তখন তার প্রতি দৃষ্টি পড়ে গাঁয়ের মোড়লের। দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। সে কারো প্রস্তাবেই সায় দেয় না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাৎ ঘটে এবং মোড়ল তার প্রতিযোগীকে হত্যা করে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে। এই কাহিনীর বিচিত্রতার মধ্যে মূল বিষয় একটিই; তা হচ্ছে কুসংস্কার, সম্পদ, ধর্ম, প্রতিপত্তি, সামাজিক
বিধি-নিষেধ, এমনকি জাতীয়তাবোধ-এসব কিছুকেই কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবী ক্ষুধার্ত মানুষের ক্রমাগত শোষন।

110 pages, Hardcover

First published January 1, 1955

53 people are currently reading
1690 people want to read

About the author

Abu Ishaque

17 books79 followers
Abu Ishaque (Abu Bashar Mohammad Ishaque; Bangla: আবু ইসহাক) was a renowned modern Bangladeshi author and a famous novelist. Ishaque is often categorized with those who wrote the least and showed the best. Three novels - one of which is a detective novel, two collections of short stories and the voluminous Samokalin Bangla Bhashar Obhidhan. He comes forth as a major novelist in contemporary literature with the publication of সূর্য দীঘল বাড়ি [Surya-Dighal Bari, that means A Cursed House] written at the age of only twenty one and till now its mighty presence is felt by readers of Bangla fiction. This was the first successful novel in Bangladeshi literature.

Literary awards:
Bangla Academy Literary Award (1963)
Ekushey Padak (1997)
Independence Day Award (2004)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
911 (57%)
4 stars
549 (34%)
3 stars
103 (6%)
2 stars
21 (1%)
1 star
11 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 179 reviews
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
April 22, 2023
"সৎ-সাহিত্য" বলে একটা কথা আছে। যে সাহিত্য সৎ। যে সাহিত্যে ভান নেই। ভণিতা নেই। লোক-দেখানো ঢং নেই। যে সাহিত্যের চরিত্ররা জ্যান্ত। এই চরিত্ররা আমাদের পরিচিত হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। পরিচিত হোক বা অপরিচিত, কিন্তু একবারের জন্যেও লেখকের মনগড়া কৃত্রিম সৃষ্টি বলে ভ্রম হয়না। মাটির পৃথিবীতে শক্তপায়ে দাঁড়িয়ে আছে এরা। জীবন্ত। যে সাহিত্যের চরিত্ররা স্টেজে উঠে নাটকের ভাষায় কথা বলেনা। ভাষাও এদের জ্যান্ত। বাস্তব। দুপুর বারোটার রোদের মতো গায়ের চামড়ায় এদের মুখের ভাষার তাপস্পর্শ টের পাওয়া যায়। অথচ কেমন অবাক কান্ড, এই ভাষাটা আমার নিত্যদিনের ব্যবহার্য পরিচিত ভাষা নয়। গ্রাম্য আঞ্চলিক দুর্গম ভাষা। তবু এই ভাষা খাঁটি। খাঁটি এবং টগবগে। সদ্য হাঁড়িতে ধরা জিয়োল মাছের মতো টগবগে। এই হলো "সৎ-সাহিত্য"। আবু ইসহাকের লেখা "সূর্য-দীঘল বাড়ি" নিটোল নিখুঁত সৎ-সাহিত্যের একটি অনুপম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর অন্যতম। এই ব্যাপারে আমার কোনো দ্বিধা নেই।

এই উপন্যাসে নায়ক নেই। নায়িকা আছে। জয়গুন নামের একজন অসামান্য নারী এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তিনি একজন অশিক্ষিত কুসংস্কারতাড়িত দারিদ্র্যপীড়িত ধর্মভীরু গ্রাম্য মহিলা ; কিন্তু শহুরে শিক্ষিত আলোকিত আধুনিক মানুষদের চেয়ে তাঁর শিরদাঁড়া অনেক বেশি সপাট সোজা। দুর্ভিক্ষ-পরবর্তী বাংলাদেশের হতকুচ্ছিত সমাজে জয়গুনের মতো নারীরা তাঁদের অমসৃণ লালিত্যহীন হাতে লক্ষ্মীর প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই পোড়ামুখো কীটদষ্ট সমাজটাকে উজ্জ্বল করে রেখেছিলেন। আহা রে, সেই নারীর না ছিলো উদরে আহার, না ছিলো শরীরে একটা গোটা কাপড়, না ছিলো সামাজিক সম্মান, না ছিলো পারিবারিক সিকিউরিটি, না ছিলো ভবিষ্যতের আশা, না ছিলো মাথা গোঁজার ভদ্রস্থ একটা ঠাঁই। এমনকি যে-প্রদীপটা জ্বালিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, সে প্রদীপে ছিলো না একফোঁটা তেল। তবু তিনি নিভতে দেননি তাঁর প্রদীপের শিখা। তবু কতো উঁচু ছিল তাঁর শির! তাঁর বাড়ির পাশের বুড়ো তালগাছটার চেয়েও উঁচু। করুণায়, কাঠিন্যে, কর্তব্যনিষ্ঠায়, আত্মসম্মানবোধে, দীপ্ত এবং দৃপ্ত এই মানুষটি— অতল গহ্বরের মতো নিরুপায় দারিদ্র্য তাঁকে ফুঁ দিয়ে নেভাতে পারেনি! তাঁর মাথা নিচু করাতে পারেনি।

সূর্য-দীঘল বাড়ির অপয়া অভিশপ্ত ছায়ায় ঢেকে যাক এই বাংলার পূত-পবিত্র সমাজের জীবাণুমুক্ত বিবেকপ্রতিমা। যে-প্রতিমার বহিরঙ্গ সুসংস্কৃত, সুসজ্জিত এবং সুষমামণ্ডিত, কিন্তু ভিতরটা খড়ের গাদা দিয়ে ঠাসা! জয়গুন, আপনাকে লাল নীল সবুজ গেরুয়া রঙের স্যালুট নয়। আমার তরফ থেকে আপনার জন্যে রইলো একটা মানুষ-রঙের স্যালুট!
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
September 22, 2022
ভয়ংকর বিষয় এইটা না যে ধর্মের নাম করে গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে মানুষকে শোষণ করা হোতো। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে সেই শোষণ এখনো বহাল তবিয়তে চলছে। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত এ বইয়ের সমাজচিত্র আর ২০২২ সালের সমাজচিত্র একই। ৬৭ বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ কিছুই বদলায়নি।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
September 17, 2020
প্রথমত বইটির প্রচ্ছদের দারুন প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আর দ্বিতীয়তঃ গত সাতদিন ধরে বইটি বিছানার এপাশে ওপাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে, হাতে নিয়েও নাড়াচড়া করেছি বেশ কয়েকবার। কিন্তু প্রচণ্ড অসুস্থতার দরুন ব্যাটাকে বাগে আনতে পারছিলাম না কোনোভাবেই। শেষ পর্যন্ত এন্টিবায়োটিকের কড়া ডোজই সফলতার দ্বারপ্রান্তে এনে দিল আমায়। গ্রামীণ পটভূমির উপর যেকোনো উপন্যাস পড়তে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসের কথা। সেরকম মায়া না লাগাতে পারলেও নিঃসন্দেহে এটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছিল আমার কাছে। লেখক তাঁর এই স্মরণীয় উপন্যাসে জয়গুনের চরিত্রকে কেন্দ্র করে যে চরম এক বুভুক্ষার চিত্র এঁকেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।

আমরা জানি , ছিন্নমূল মানুষেরা জীবনের সর্বত্রই বঞ্চিত। শহুরে বিলাস, স্বাচ্ছন্দ্যের পশ্চাদপটে অনলগ্রাসী আক্রমণের অসহায় শিকার হয় সর্বত্যাগী সর্বোপেক্ষিত জয়গুনরা। আবু ইসহাক পরম নিষ্ঠার সঙ্গে সেই আহত ও অপমানিত জীবনের কথাই উপন্যাসের প্রতি পংক্তিতে বিধৃত করেছেন। ভাষিক দিক থেকে উপন্যাসটি অতি সহজপাঠ্য হলেও ঘটনা বর্ণনায় আছে গভীরতা। প্রগাঢ় অর্থবোধকতায় সমৃদ্ধ এ উপন্যাসটির মাধ্যমে সহজ কথায় অনেক কঠিন বিষয় পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার অসীম ক্ষমতা দেখিয়েছেন কথাশিল্পী আবু ইসহাক।

শুধু এটুকু বলব , সব মিলিয়ে 'সূর্যদীঘল বাড়ী' সুদূরপ্রসারী জমিনে আঁকা এক মহা উপন্যাস। উপন্যাসের সূর্যদীঘল বাড়ীটি কেবলমাত্র থাম-খুঁটি আর কয়েকখানা অন্ধকার ঘরের নিথর আলয় হয়ে থাকেনি,বরং হয়ে উঠেছে গোটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিরূপ। আধিভৌতিক সূর্যদীঘল বাড়ীর মতোই এ সমাজ নারীর পক্ষে অশুভ- পদে পদে সে শৃঙ্খলিত করতে চায় নারীর স্বতঃস্ফূর্ত ছন্দিত গতিকে, নানা নিয়মের বেড়াজালে তাকে আটকে রাখতে চায় সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র আর সেবাদাসী হিসেবে, রক্তমাংসের নারী এখানে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না, হয়ে পরে স্থাণু। সেখানে আত্মমর্যাদা আর আপন চেষ্টায় সম্মান অর্জনের প্রতীকী নাম হয়ে ওঠে জয়গুন। জয়গুনেরাই ভাঙার চেষ্টা করে এই অসাম্যের দেয়াল, শিকল ভেঙে ওড়াতে চায় সাম্যের বিজয়কেতন। কখনো তারা সফল হয়, কখনো বা অসফল- কিন্তু সজোরে কুঠারাঘাত করে যায় সমাজের ভিত্তিমূলে।

তাই নিঃসন্দেহে গভীর জীবনবোধ, নারীর মর্যাদা আর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের সমবায়ে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ সাহিত্যাকাশে উজ্জ্বল কালপুরুষ হয়ে বেঁচে থাকবে আজন্মকাল।
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews80 followers
January 30, 2022
মাস্টারপিস..... বাংলাদেশের এত আগের লেখা অথচ এত বেশি পরিণত। ♥️
কিছু কিছু বই আছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে অথচ বইটা নিয়ে কিছু লেখার সাহস হয়ে উঠেনা, এই বইটাও তেমন। বইটা নিয়ে যেমন শুনেছি, এবং যেমন এক্সপেকটেশন ছিল তার থেকেও বেশি পূরণ করেছে বইটা। এত আগের বই অথচ চিন্তাভাবনা এখনকার সময়ের সাথেও খাপ খায়।😔
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
January 24, 2016
প্রথম পরিচয় সম্ভবত স্কুলে থাকতে, পাঠ্যবইয়ে লেখকের 'মহাপতঙ্গ' নামক গল্প পড়ে। সেটিই যে কি ভীষণ শক্তিশালী ছিল। খুঁজে খুঁজে ছোটগল্পগুলো পড়েছি সেই বয়সে। এই উপন্যাসটির নাম শুনে বড় হয়েছি কিন্তু পড়া হয়নি এতদিন। লজ্জা ঘুচালাম আজকে পড়ে শেষ করে। এবং প্রতিক্রিয়া শুধুই মুগ্ধতায় শেষ।সময়ের প্রেক্ষাপটে কি ভীষণ শক্তিশালী আচরণ উঠে এসেছে বইটিতে। অনেকদিন পর একটা ভাল লাগার আবেশ ফিরে আসলো।জহির সাহেবের 'হাজার বছর ধরের' গ্রামীণ স্টাবাদ চাখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, 'সূর্য-দীঘল বাড়ি' সেটা পূরণ করে উদরে আরও বেশি মিঠাই মণ্ডা ভরে দিল যেন।
Profile Image for Tusar Abdullah  Rezbi.
Author 11 books55 followers
May 2, 2023
এতদিন পর পড়ার জন্য আপসোস হচ্ছে। আসলে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা আর তখনকার সমাজ ব্যবস্থা একই রয়ে গেছে। মানুষ বদলেছে, রঙ বদলেছে৷ সমাজটা আর বদলাইতে পারল না। দারুণ! অসাধারণ! যত বলব তত কম হয়ে যাবে। মাস্টারপিস! মাস্টরিড! 🌸
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 12, 2023
বাঙলা ১৩৫০ সালের ঘাড়ে চেপে বসেছিলো চরমভাবে দুর্ভিক্ষ। এটা ঘাড় থেকে নামলো না। আবারও ১৩৫৫ সালে শুরু হলো দুর্ভিক্ষ। সে দুর্ভিক্ষ নির্মম খেলা খেলে গেলো বাঙ্গলার ঘরে ঘরে। এই অকাল দৈত্যের হাত থেকে মুষ্টিমেয় কিছু লোক বাঁচতে পেরেছিলো। যারা সমাজ ও দেশের মাথায় বসে শুধু নিজের স্বার্থকেই দেখে থাকেন। সাধারন মানুষরা সাধারনের ধারাতে মিশে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে অথবা মিশে যায় জনস্রতে পরিবারের হাত থেকে ছিকটে।

জয়গুন জব্বার মুন্সীর স্ত্রী। হাসু এবং মায়মুনার মা। ভাগ্যক্রমে সে কাসুরও মা। কারন জব্বার মুন্সী মারা যাবার পর জয়গুনের করিম বক্ শের সাথে বিয়ে হয়। মায়মুনা ও কাসুর জন্মের পর দুর্ভিক্ষের পর কাসুকে নিজের কাছে করিম জয়গুনকে তালাক দেয়।

হাসু ও মায়মুনাকে নিয়ে জয়গুন দুর্ভিক্ষের সময় শহরে চলে যায়। খেয়ে না খেয়ে তারা কোনো করম টিকে আছে যাকে বেঁচে থাকা বলে না।

একসময় তারা গ্রামে ফিরে আসে। দুর্ভিক্ষের সময় জায়গা জমি সব বিক্রি করার ফলে তাদের বসবাসের কোন জায়গা না থাকায় জয়গুনের ভাইয়ের একটা ভিটা ছিলো যাতে জয়গুনের অংশ ছিলো। সেখানে জয়গুন এবং তার ভাইয়ের স্ত্রী শফির মা পাশাপাশি দুইটা ঘর তুলে বাস করতে থাকে।

গ্রামে সকলের ঘরই হয় উত্তর -দক্ষিন প্রসারি।
কিন্তু তাদের ঘর হলো পূর্ব-পশ্চিম প্রসারি। পূর্ব-পশ্চিম প্রসারি বাড়ীর নাম সূর্য-দীঘল বাড়ী। গায়ের লোকের বিশ্বাস সূর্য-দীঘল বাড়ীতে মানুষ টিকতে পারে না। কিন্তু জয়গুন তার শ্রম আর বিশ্বাস নিয়ে থাকতে শুরু করলো আর শুরু হলো তার সংগ্রামের, অস্তিত্বের আর টিকে থাকার।

এই বইটা নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কিছু বলার নাই। লেখক এই বইটাতে দেশ বিভাগের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষে চিত্রটা ফুটিয়ে তুলেছেন, একই সাথে তিনি সুক্ষ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন একটি সংগ্রামী নারীর ছেলেমেয়েদের নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও ধর্মের শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকার চিত্র।আমি এতো দিন যে পড়ি নাই বইটা এটা স্বীকার করতেই লজ্জা হচ্ছে। সকলের পড়া শেষ, এবার আমিও এতো সুন্দর একটা বই একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে শেষ করলাম।
Profile Image for Sayeem Shams.
Author 17 books74 followers
May 17, 2021
এককথায় অনবদ্য। এধরনের মাস্টারপিস উপন্যাসের যথাযথ রিভিউ লেখার জন্য কম করে হলেও এক-দেড় হাজার শব্দ খরচ করতে হবে; তারপরেও তৃপ্তি পাব কিনা সন্দেহ আছে। ১০২ পৃষ্ঠার উপন্যাস, অথচ কত গভীর! এত স্বল্প কলেবরে এত বেশি সংখ্যক পয়েন্ট স্পর্শ করেছে, যা বিস্ময়কর! সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার- লেখক উপন্যাসটি মাত্র ২১ বছর বয়সে রচনা করেছিলেন!
Profile Image for নিশাত জাহান ঊষা.
63 reviews30 followers
June 2, 2025
ইদানিং ধর্ম ব্যাবসা, ধর্মের নামে শোষন আর নীপিড়ন যে হারে প্রেইজ করে বড় একটা শ্রেণী, সে স্কেলে মাপলে উপন্যাসটা এখনো আশ্চর্যভাবে সময়োপযোগী! বরং সেকালে লেখা বলে বইটা প্রকাশ হতে পেরেছে, বাজারে কেনাবেচা হতে পেরেছে এবং বাংলা সাহিত্য ভান্ডারে সুন্দরমতো জায়গাও করে নিয়ে‌ছে। যেটা এখন প্রায় অসম্ভব ঠেকে!! সময় তীরবেগে উল্টোপথ ধরেছে, না?

আবু ইসহাকের লেখা বলতে গেলে আমার এই প্রথম পড়া। এর আগে লেখকের ছোটগল্প "মহাপতঙ্গ" পড়েছিলাম। তাও অনেক ছোটবেলার কথা। লেখকের ক্রিয়েটিভিটি বিস্ময়কর! চিঁহিটগবগ, প্যাঁকটৈটৈ, দোপেয়ে দৈত্য সহ অদ্ভুত অথচ লাগসই সব নাম দেখে কী মজা লাগতো! এতো বছর পরে সূর্য দীঘল বাড়ি পড়েও ভীষন ভালো লেগেছে। ভীষন ঝরঝরে লেখনী। আরো আগে পড়া উচিত ছিলো।❤️
Profile Image for Saydoul Tasfin.
10 reviews
March 15, 2021
বাংলা সাহিত্যের সার্থক উপন্যাসগুলোর অন্যতম আবু ইসহাকের 'সূর্য দীঘল বাড়ী'।
কুসংস্কার, দারিদ্র্যতা, সামাজিক অবহেলা ও ধনী-শ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে গ্রামীণ জনপদের মহিলা জয়গুণের জীবনযুদ্ধের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ উপন্যাসে।

বর্তমান সমকালীন উপন্যাস যেদিকে এগুচ্ছে মনে হয় অল্প কিছুদিন পর ৪০০/৫০০ পৃষ্টার নিচে কোনো উপন্যাসই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। আমাদের বেস্টসেলার লেখকদের উপন্যাসের সাইজ দেখে আমার অন্তত এটাই মনে হয়। অথচ আবু ইসহাক তার এ ১০০ পৃষ্টার উপন্যাসে কত কিছুই না জানিয়ে দিয়েছেন পাঠককে-সমাজকে।
Profile Image for Iftikhar Sajid.
25 reviews5 followers
September 2, 2021
একটি নির্ভেজাল মাস্টারপিস!
খুব সহজেই আমার কাছ থেকে পাঁচ তারা আদায় করে নিয়েছে
Profile Image for Subrata Das.
164 reviews19 followers
February 16, 2023
সমাজের নানা অপ-নিয়মকানুন, ধর্মীয় বাধানিষেধ, কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে এক হার না মানা মায়ের লড়াইয়ের গল্প উঠে এসেছে এই উপন্যাসে।
একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে, "অভাব এসে যখন দরজায় কড়া নাড়ে, ভালোবাসা তখন জানলা দিয়ে পালায়" । কিন্তু এই উপন্যাসে আমরা দেখি জানলা দিয়ে ভয়, অপবাদ, সংকোচ এসবই পালিয়েছে। আর ঘরে রয়েছে কেবল ভালোবাসা। এ ভালোবাসা সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। এ ভালোবাসার জোরে মা সমাজের নানা লঞ্চণা সয়ে লড়াই করে গেছে ক্ষুদা আর দারিদ্র্যের সাথে।
মা নিজের হাজারো কষ্ট সইলেও সন্তানের এইটুকু কষ্ট সইতে পারে না। জয়গুণ চরিত্রটা যেন মমতা,ভালোবাসা,সহিষ্ণুতা, সংগ্রাম আর অণুপ্রেরণার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।


এছাড়াও উপন্যাসে আমরা পাকিস্তানের জন্মলগ্নে গ্রামবাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্র দেখি। কিভাবে মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন ভাঙ্গতে শুরু করেছিল, কিভাবে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছিল।
এছাড়া ধূর্ত ফকিরদের দ্বারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসীদের শোষণ, অপচিকিতসা , বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতির কদর্য স্বরূপ ইত্যাদিও এই লেখনীতে পাই। রমেশ চক্রবর্তী চরিত্রটি বেশ ব্যতিক্রমী। সে বিজ্ঞানমনস্ক। গ্রামবাসীদের নানা মূর্খতা তাকে বিরক্ত করে। নিজের পারিশ্রমিক তো দূরে থাক , চিকিতসার কৃতিত্বটুকুও সে পায় না। কিন্তু তবু সে তাদের চিকিতসা করে যায়। তাদের ভুলগুলো ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করে। দেশভাগের পর সংখ্যালঘুদের মধ্যে যখন দেশত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়, তখন রমেশ ডাক্তার শুধু গ্রামবাসীদের কথা চিন্তা করেই থেকে যায়। তার কাছে গ্রাম যেন মায়ের কোল।

মোটকথা ,এক বিশৃংখল সময়ে প্রান্তিক মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে এটি একটি কালজয়ী উপন্যাস। আরো শত বছর পরেও বাঙ্গালী এই উপন্যাদ পড়ে ��লোড়িত হবে।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
April 23, 2023
" সূর্য-দীঘল বাড়ী " পুরুষতান্ত্রিক  এই বিচ্ছিরি সমাজ আর দারিদ্র্যের সাথে যুঝতে যুঝতে টিকে থাকা এক নারীর আখ্যান। এই সমাজ যে শুধু পুরুষতান্ত্রিক তাও নয়,এর পরতে পরতে আছে কুসংস্কার। এমন সব কুসংস্কার যার অধিকাংশ শুধু নারীর উপর ই বিদ্যমান। এই পুরুষতান্ত্রিকতা, এই গোড়া সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে জয়গুন,সে বলে, " যেই থুক একবার মাডিতে ফালাইছি,তা ��বার মোখ দিয়ে চাটতে পারতাম না "

লেখক আবু ইসহাকের লেখা এই প্রথম পড়লাম। এত চমৎকার লেখা খুব একটা পড়েছি বলে আমার মনে হয় না। প্রতিটা ঘটনা,জয়গুনের সূর্য দীঘল বাড়িতে আসা থেকে শুরু করে,প্রথম দূর্ভিক্ষের ফাড়া কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা, মেয়ে বলে মায়মুনের প্রতি অবহেলা, হাসু রোজগেরে বলে তাকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া, সর্বক্ষন অভাবের প্রত্যক্ষ ছাপ লেগে থাকা,কাসু প্রতি বাৎসল্য, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা,  গ্রামের মোড়লদের অত্যাচার,সর্বোপরি দূর্ভিক্ষের প্রভাব একটা শ্রেণীকে কি পরিমাণ বিপর্যস্ত করেছে, আবার আরেকটা দূর্যোগ কিভাবে ঝাপিয়ে পড়ছে,এই প্রতিটি ঘটনার এত নিখুঁত চিত্র লেখক উপস্থাপন করেছেন। মুগ্ধ হয়ে যেতে হয় পড়তে গিয়ে। নির্মোহ লেখনী। অসাধারণ।

গতদিন দিন স্বপ্নময় চক্রবর্তীর " চতুষ্পাঠী " পড়েছি,সেখানে দেশভাগ পরবর্তী একটা পরিবারের ভেঙে পড়ার দৃশ্য পড়েছি,আজকে সূর্য দীঘল বাড়ী তে দূর্ভিক্ষ এসে ক্ষয়ে দেয়া আরেকটা হতভাগ্য পরিবারের গল্প পড়েছি। বিশেষ করে এই দূর্যোগ, দূর্ভোগ যে শুধু সমাজে নুয়ে পড়া মানুষের জনের জন্যই আসে,সেটা স্থায়ী হয়ে গেল মনে। আমরা যেটাকে সমাজ বলি,"এটা আধমরা মানুষ কে মেরে ফেলার,যাঁতাকল ছাড়া আর কিচ্ছু নয় "।

পর পর দুই ক্লাসিক পড়ে ফেললাম। নাও আই এম ফিলিং রাজা রাজা।
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
January 24, 2022
❝ সূর্যদীঘল বাড়ি বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী, কালোত্তীর্ণ অমর উপন্যাস বলে আমি মনে করি। কিছু উপাত্ত তা আমি জেনেছি উপন্যাস পড়বার পড়ে, সেসব উল্লেখ না করলেই নয়। এ উপন্যাস থেকেই তৈরী হয়েছে দেশের প্রথম সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ছবি৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে উপন্যাসটি বইয়ের পাতায় যেমন আলোচিত, ছবি তৈরীর পরও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। বইটি উর্দু ভাষায়ও প্রকাশ পায়। উর্দু ভাষায় উপন্যাসটির অনুবাদ হয়েছে ‘আসেবি ঘর’ নামে, যা ১৯৬৯ সালে হাবিব ব্যাংক সাহিত্য-পদক লাভ করে। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কারসহ ৭টি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৫টি পুরস্কার অর্জন করে। বইটি প্রকাশক প্রথম দিকে না পাওয়ায় পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের দারস্থ হয়েছিলেন লেখক আবু ইসহাক। আবু ইসহাক কবিকে দুই অধ্যায় পড়ে শুনানোর পর জসীমউদ্দিন প্রশংসা করেন। কিন্তু, কবি ব্যস্ত থাকায় প্রকাশের ব্যাপারে পরবর্তীতে আর গুরুত্ব দেয়নি। অবশেষে উপন্যাসটি প্রকাশের কিছুদিন পর আবু ইসহাক বদলি হয়ে যান করাচি। এর মধ্যে আর দেখা হয়নি কবি জসীম উদাদীনের সঙ্গে। ১৯৬১ সালে দেখা হয় দুজনার। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের অনেক কবি-সাহিত্যিকদের সাথে জসীমউদদীন রাইটারস গিল্ডের সম্মেলনে যোগ দিতে করাচি যান। সেই জায়গায় জসীমউদদীন লেখককে বলেন ‘ভাই ইসহাক, আমি তোমার ওপর সুবিচার করি নি। তোমার উপন্যাসের কিছুটা পড়ে শুনিয়েছিলে। অতটুকু শুনে তখন উপন্যাসটি মূল্যায়ন করতে পারিনি। এজন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইব কি, আমি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।’
আবু ইসহাক আরো লিখেছেন “১৯৬২ সালে তিনি একবার আমার বাসায় গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, তোমার ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ চেক ভাষায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ডক্টর দুসন একদিন এসে আমাকে বললেন, উপন্যাসে যেসব জায়গার উল্লেখ আছে সেসব জায়গায় তাকে নিয়ে যেতে হবে। তাকে নিয়ে দুদিনে নারায়ণগঞ্জ স্টিমার স্টেশন, রেলস্টেশন, রেলওয়ে ওভারব্রিজ, নম্বরী কুলি, খুদে কুলি, ফতুল্লা স্টেশন ইত্যাদি সব ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছি। লোকটার নিষ্ঠা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি।” (অম্লান স্মৃতি/স্মৃতি-বিচিত্রা)। এ উপন্যাস রচনার পটভূমি আবু ইসহাক সংগ্রহ করেছিলেন তাঁর যাপিত জীবন থেকে। লেখকের এক পত্রে জানা যায় তেমনই অজানা অনেক কথা। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইয়ের চাকরি নিয়ে তাঁকে কলকাতা থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে হয়। কর্ম উপলক্ষে এ সময় তিনি প্রায়ই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াত করতেন। ঐ সময় ট্রেনে জয়গুনদের মতো অসংখ্য দুস্থ নারীকে তিনি দেখতেন। যারা ট্রেনে চড়ে ময়মনসিংহ যেতো এবং সেখান থেকে সস্তায় চাল কিনে ফিরে আসতো। ফতুল্লা এবং চাষাড়া স্টেশনে ট্রেন পৌঁছাবার আগেই চালের থলিগুলি তারা রেল রাস্তার পাশে নিক্ষেপ করতো। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের স্টিমার ঘাটে এবং রেল স্টেশনে হাসুর মতো অনেক নম্বরবিহীন কিশোর শ্রমিকও তিনি দেখেছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন, প্রতিযোগিতা করে তাদের নদী সাঁতরে স্টিমারে উঠে মোট বইতে। গ্রামবাংলার ওঝা-ফকিরের ঝাড়ফুঁক ও অসহায় নারীদের দুঃসহ জীবন সংগ্রামও দেখেছেন লেখক। লেখকের বক্তব্য থেকে জানা যায়, তাঁর মামাবাড়ির পাশে একটি ছাড়া ভিটে ছিল। সেই ভিটের নাম ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’। সে বাড়িতে মানুষজন স্থায়ীভাবে বাস করতে পারতো না। এ রকম একটি কিংবদন্তি তিনি শুনেছেন তাঁর মায়ের কাছে। কৈশোরের জীবনভিজ্ঞতা ও পরিণত বয়সে নারায়ণগঞ্জের রেলস্টেশনে স্টিমারঘাটে তাঁর সে বাস্তবজীবন-অভিজ্ঞতা, তারই সঙ্গে ছেলেবেলায় শোনা কিংবদন্তি একসূত্রে গ্রথিত হয়ে উঠেছে এ উপন্যাসটি। ❞



উপন্যাস প্রসঙ্গে আসি৷ উপন্যাস টা ভাটায় থাকা একটা নির্জন শান্ত নদীর মতোন। একদম এইদেশের গ্রামীণ সমাজের অভাবী সরল মানুষগুলার মতো সরল এই উপন্যাস। বাড়তি কোনো কিছুই নাই। ইতিহাস কিংবা চলমান বাস্তবতা নিয়ে তথ্য-উপাত্ত, দর্শন নাই। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কোনো বাড়াবাড়ি নাই। কোনো ভেজাল নাই। কোনো মেদজনিত ডিটেইলিং নাই, ত্যালত্যালে দর্শন নাই, তত্ত্বকথার ফুলঝুড়ি নাই।


উপন্যাস টা এমন এক সময়ের, এমন এক সমাজের যেখানে ক্ষুধার্ততা নিবারণ ই ঈশ্বর, এটাই ধর্ম। বাংলা পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষ আর তার পরের অবস্থা এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। প্রেক্ষাপট যাই হোক, উপন্যাস টা পড়তে গিয়ে আমি আবিষ্কার করেছি বাঙ্গালি জাতীকে। আমি অবাক হয়ে উপলব্ধি করলাম, এই যে বর্তমান সময়ে যে কোনো বিষয়ে-দর্শনে আমরা দ্বিধাবিভক্ত হিয়ে যাই, আমাদের জাতিগত মূল্যবোধের মাঝে যত গোড়ামি, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা এসমস্ত কিছু আজ একদিনে আমরা করছিনা। আমরা আগেও এমন ছিলাম। এখনো আছি৷ কিচ্ছুটি পাল্টাইনি। আমাদের মূল্যবোধ শতবছর ধরে এভাবেই আবর্তিত হচ্ছে। দুর্নীতি, পাওয়ার গেম, রাজনীতি, হঠকারিতা, ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মান্ধতা এমন কি ঘুষ পর্যন্ত সমাজের রন্ধ্রে অবস্থান করছে শত বচ্ছর ধরেই। শুধু মাত্র যুগের সাথে সমস্ত কিছুর মাধ্যম পাল্টেছে। যেমন যদি উদাহরণ টেনে বলি, তখন হয়তো ঘরের স্ত্রী বাইরের জগতে আসলেই তারে হারাম নারী বলা হইতো, এখন বেসরকারি অফিসে চাকুরি, সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকা, আবাসিক মেসে থাকা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকা মেয়েদের হারাম নারী বলা হয়! আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম লেখক সেই পঞ্চাশ সনের দুর্ভিক্ষের চিত্রই একেছেন। আমরা জাতিগতভাবে অগ্রসর হইনি আদতে,পাল্টাইনি। উপন্যাস টা কালোত্তীর্ণ হয়ে বয়স একশো বছরের কাছাকাছি এসেও তাই আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে শতভাগ রিলেট হয়ে যায়! আচ্ছা আমরা কি কোনোকালেই বদলাবো না?! সেই সময়ে যথেষ্ট শিক্ষার অভাব আর পারিপ্বার্শিক টানাপোড়েন থেকে যদি দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি, পণ্য রিজার্ভ স্টক রেখে দাম বাড়ানো, সরকারি রিলিফের পণ্য আত্মসাত করে ব্ল্যাকে বিক্রি, ধর্মান্ধতা জড়িয়ে গ্রামীণ নোংরা পলিটিক্স ইত্যাদি হয়ে থাকে তবে শত বছর পরে এখনো কিজন্যে সেই প্র‍্যাক্টিস অব্যাহত আছে? আমার জানতে ইচ্ছা করে। এই প্রশ্নের উত্তর খুজেছেন আবু ইসহাক সাহ���ব কালোজয়ী সূর্য দীঘল বাড়ি উপন্যাসে_

আমরা জাতিগতভাবে পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারি না। নতুনকে স্বাগত জানাতে আমরা অপারগ। আমরা ব্যার্থতা অনুসন্ধানে যাইনা। পুরনোকে আকড়ে ধরি আবারো নতুন করে শুরু করি পুরনো দিয়েই। এভাবেই চলছে। সেখানে পরিবর্তনকে বা নতুনকে উলটো আমাদের গোড়ামি মনে হয়। শতবছর ধরে আমাদের জাতিগত মূল্যবোধ স্থবির ও এই একভাবেই তা চলছে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে পরিবর্তন বা নতুন আসে৷ সেটাই স্বাভাবিক। যেখানে মন্দটুকুকে চর্ম রোগের মত কেটে ফেল ভালো টুকু গ্রহণ করা উচিত, সেইখানে আমরা মন্দের ভয়ে সমগ্র নতুনকেই পায়ে ঠেলি।

... নিয়মের দুনিয়ায় অনিয়ম অনেক আছে। 'যেমন কর্ম তেমন ফল' তাই সব সময় পাওয়া যায় না। পরোপকার সহ মানবীয় গুনাবলির চর্চা প্রায়ই তাই বিফলে যায়। সে কর্মে যদিও ফল ফলে, তা তিতো, বিষাক্ত!...


গত বছর এক্সট্রিম নয়েজের আড্ডায় মুহার কিছু বিতর্কিত প্রশ্ন নিয়ে চায়ের কাপে প্রচুর ঝড় ওঠে। একটা প্রশ্ন ছিলো এমন, বাংলা সাহিত্যের কোন উপন্যাস আগামী একশোবছর টিকে যাবে কিংবা কালোত্তীর্ণ হয়ে তদ্দিন পঠিত হবার মতো কন্টেন্ট। বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি৷ নিঃসন্দেহে, এই তালিকায় সূর্য দীঘল বাড়ি থাকবে এবেলা আমি নিশ্চিত। প্রথম তিনের মাঝেই থাকবে।
Profile Image for Samiha Anu.
36 reviews18 followers
Read
April 20, 2025
সূর্য দীঘল বাড়ি বোধ করি সেই বিরল বইগুলোর একটি; যা পড়ে আমার ভালো লাগে নাই বলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং আহত হয়েছি।
Profile Image for ~Rajeswari~ Roy.
153 reviews41 followers
April 11, 2021
উদরের আগুন নেভাতে দোজখের আগুনে ঝাঁপ দিতেও তার ভয় নেই
চল্লিশের দশকের অস্থিতিশীল প্লটে এই উপন্যাস রচিত।জয়গুন ও তার সন্তানদের টিকে থাকার সংগ্রাম এই উপন্যাসের মূল বিষয়।দ্বিতীয় স্বামী দ্বারা পরিত্যক্ত জয়গুন নিজের রুটিরুজির জন্য পর্দা ঠেলে রাস্তায় নামে।এই উপন্যাসে-
• নারীর দ্বারা নারীর অবমূল্যায়ন(মায়মুন ও তার শাশুড়ি)
• পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব(গদু প্রধান)
• কুসংস্কার (সূর্যদীঘল বাড়ি সংক্রান্ত)
ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।যুগে যুগে মানুষ যে এসবের কাছে পরাজিত হয়ে আসছে সেই বার্তাও রয়েছে।
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
December 11, 2014
সব কিছু ছাপিয়ে মানুষের চিরন্তন সংগ্রামের গল্প। রচনাকালের প্রেক্ষিতে খুবই আধুনিক উপস্থাপন।
Profile Image for Maruf Hossain.
Author 37 books258 followers
April 24, 2016
অনুভূতি বলার ভাষা কিছু কিছু বই পড়ার পর হারিয়ে যায়। এ বইটা সেই দলের। সময়কে উত্তীর্ণ করা এ বই যতবারই পড়ি নতুন লাগে প্রতিবারই।
Profile Image for Rehan Farhad.
242 reviews12 followers
January 1, 2025
কালোত্তীর্ণ বই এভাবেই সময়ের চিত্র ধরে রাখে। বার বার পড়েও মুগ্ধতা কখনই কমেনি।
Profile Image for Salman Sakib Jishan.
272 reviews158 followers
July 29, 2022
'শামুক খাজারে, আমার বাড়ী আয়,
কুচি কুচি শামুক দিমু হলদি দিমু গায়'

প্রত্যাশার চাইতে বেশি সুখ পেলে কোনো কিছুতে, ছোট্ট মায়মুনের মতো আমারও এরকম নিজ মনে গান গেয়ে উঠতে মন চায়। 'সূর্য দীঘল বাড়ি' আমাকে প্রশান্তি হয়তো দিয়েছে, কিন্তু পড়বার সময় প্রত্যেকটা পৃষ্ঠায় আমার যে অস্বস্তিকর অনূভুতি হয়েছে, তা তুলনাহীন।
১৯৫৫ সনে প্রথম প্রকাশ, লেখক আবু ইসহাকের কালজয়ী সৃষ্টি 'সূর্য দীঘল বাড়ি'। পটভূমি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নেমে আসা দুর্ভিক্ষের সময়কার। অভাবে, ক্ষুধার তাড়নায় সব ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসা সহায় সম্বল, স্বামীহীনা জয়গুনের জীবনের ঘানি টেনে চলার গল্প এটা। সঙ্গে তার মৃত প্রথম ঘরের স্বামীর ছেলে আর দ্ব্বিতীয় ঘরের স্বামীর মেয়ে। একখন্ড মাথা গোজার ঠাঁইয়ের জন্য ছুটে বেড়াবার পর জায়গা মেলে গ্রামের অপয়া বাড়ি নামে পরিচিত সূর্য দীঘল বাড়িতে। যে বাড়িতে কেউ কোনোদিন থাকতে পারেনি।

কালেবরে এতো ছোটো, কিন্তু প্রতিটি বিষয়বস্তু এত গভীর। এতো নিখাঁদ, এত সুনিবিড় ভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক বিষয়গুলো। আশ্চর্য হতে হয়। প্রতিটি আপত্তিকর পয়েন্টে পয়েন্টে করাঘাত করে ছেড়েছেন। মনে সৃষ্টি হয়েছে অস্বস্তি। আর অভাব, এই অমানুষিক শ্রম, সমাজের অবর্ণনীয় চাপের দশা এতো করুণ ভাবে দেখিয়েছেন লেখক, বুক কেঁপে ওঠে। এই যেমন এই বইতে খাদ্যাভাবের বর্ণণা পড়ে আমি দুপুরে ঠিকঠাক গলা দিয়ে খাবার নামাতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো জয়গুনের সাথে অন্যায় করছি। অন্যায় করছি হাসু, কাসু, মায়মুনের সাথে। এতোটাই আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো এই ছোট বইটা। এর চাইতে আসলে আর ভাষায় বর্ণণা করা সম্ভব না আমার পক্ষে কতটা ছিলো এর সৌন্দর্য।

জহির রায়হানের 'হাজার বছর ধরে' পড়বার পর আমার মনের কোথায় যেনো আকুপাকু করতো এইরকম গ্রাম্য পরিবেশের সুন্দর একটা গল্প পড়ার। যেটার ভাষা হবে খুব সহজবোধ্য আর প্রাঞ্জল। প্রতিটি খুঁটিনাটি যেখানে থাকবে। আমার মনের সেই লুকানো ক্যাটাগরিতে আরেকটি বই আমি আজ স্থান দিলাম। বইটিকে ঘোষণা করলাম আমার সবচাইতে পছন্দের একটি বই হিসেবে।
ঘোষণাটি শেষ হলো!
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
February 17, 2022
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ আর ৪৭ এর দেশভাগ, এই সময়টাই বেছে নিয়েছেন আবু ইসহাক,তার উপন্যাস সূর্য-দীঘল বাড়ী-র জন্য।গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দেয়া জয়গুন ফিরে আসে।অনেক আশা ভরসা নিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দেয়া জয়গুন বাইরের ছন্নছাড়া জীবন ছেড়ে,ছায়া সুনিবিড় একখানি বাড়ীর স্বপ্নে আবার ফিরে আসে গ্রামে।জয়গুনের সাথে ফিরে আসে শফি, জয়গুনের ভাইপো ও তার মা। উদ্দেশ্য তাদের ভিটের জঙ্গল সাফ করে দুখানি ঘর তুলবে।লোকে বলে সূর্য-দীঘল বাড়ী,যাতে নাকি মানুষ ঠিকতে পারেনা। এই ভীতির ইতিহাস পড়তে বই হাতে নিতে হবে।

লেখক সমাজের এর চিরায়ত রূপ দেখিয়েছেন। জয়গুনকে দিয়ে পুরুষশাসিত সমাজের শেকল ভাঙতে চাওয়া নারীদের দেখিয়েছেন। জয়গুন কী সমাজের প্রথা ভেঙেছিলো? নাকি শুধু মানুষের মতোন দুটো খেয়ে পরে বাঁচতে চেয়েছিলো?তবে তার এই থাকাটাই যেনো সমাজের অহংয়ে লেগেছিলো,মানে সমাজের কিছু পুরুষের অহংয়ে লেগেছিলো।
ক্ষমতা, কুসংস্কার,অজ্ঞতা-এই তিন খুঁটিকে ভিত্তি করে সমাজের তথাকথিত উঁচু শ্রেণির মানুষজন যে কতো নির্মম আর নিষ্ঠুর হতে পারে,লেখক তা দেখিয়েছেন। তারউপর নারী হওয়া অপরাধ,আবার গরিব নারী হওয়া যেনো মরার উপর খাঁড়ার ঘা। জয়গুনের মতোন খুব সামান্য কজনই শেকল পায়েও আগে যেতে পারে,সাহসের সাথে মাথা তুলতে পারে। তবুও কী কখনো জয়গুনেরা জয়ী হয়? ক্ষমতা কুৎসিত জিনিস, যার হাতে থাকে সে দিনকে মুখের কথাতে রাত করে ফেলতে পারে। এদের ক��ছে জয়গুনেরা প্রতিদিন হারে,তবে কিছু জয়গুন পরেরদিন আবার কোমর বেঁধে বাঁচার তাগিদে লেগে যায়।
Profile Image for Raihan Ferdous  Bappy.
226 reviews13 followers
October 23, 2023
বইটা শেষ করে আমার অনেক আফসোস হলো।এর পেছনে রয়েছে মূলত দুটি কারণ।প্রথমত,এই বইটা আমার কাছে অনেকদিন থেকে পড়ে আছে।পড়িনি।আমার উচিত ছিলো অনেক আগে পড়া।আর দ্বিতীয়ত,বইটা শেষ হয়ে গেলো।বইটা অনন্তকাল চললেও হয়তো খারাপ লাগতো না।কিছু কিছু বই আছে যেগুলা পড়লে পুরো প্লটটা চোখের সামনে দেখা যায়।এটা হচ্ছে সেরকমই একটা বই।সবকিছুই চোখের সামনে ভাসছিলো যেনো।প্রত্যেকটা দৃশ্যপট এতো সুন্দর নিখুঁতভাবে লিখেছেন লেখক,যেখানে কোনো উপাদান মিস হবার কোনো সুযোগ নেই।সব একদম পারফেক্ট।দারিদ্রতা,কুসংস্কার,পুরুষতান্ত্রিক সমাজ,ধর্মীয় গোঁড়ামি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখেছেন লেখক।এই বই হাইলি রেকোমেন্ডেড।সবার অবশ্যই পড়া উচিত আবু ইসহাকের লিখা এই নিখুঁত অনবদ্য সৃষ্টি।
Profile Image for অনিরুদ্ধ.
143 reviews23 followers
August 18, 2020
আবু ইসহাক সাহেব উদরের জ্বালাকে কেন্দ্র করে চমৎকার এক গল্প ফেঁদেছেন! ব্যাপারটা হলো নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আসলেও তাই। বইয়ের সময়কাল হলো ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতাকালীন সময়। গণ্ডগ্রামের মানুষের মাঝে তখন স্বাধীনতা বলতে 'চাইলের দর' কমা। গ্রাম্য মশলা, ভাষা, তাদের জীবনযাত্রা, কুসংস্কার সবকিছুই আছে। আমি শহরের মানুষ, সূর্য-দীঘল বাড়ি বলতে সূর্য -দীঘল বাড়িই বুঝতাম! কিন্তু এটার ডেফিনেশন আলাদা। এছারাও ধর্মের দিকটা চলে আসে। তখনকার দিনে ধর্মের শেকল আমাদের এমনভাবে পেঁচিয়ে রেখেছিল, (এখনও রেখেছে) বাঁচার চিন্তার চেয়েও বড় ছিল ধর্ম রক্ষা করা।

ছোট্ট করে গল্পটা বলি। জয়গুন, যার প্রথম স্বামী মারা গেলে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে, কিন্তু সে তাকে তালাক দেয়। দ্বিতীয় স্বামী তার ছেলেকে নিজের কাছে রাখলেও মেয়েকে রাখেনি। জয়গুনের আগের ছেলে হাসু ও সেই মেয়ে মায়মুনকে নিয়ে বাঁচবার তাগিদে, শত 'অভিশপ্ত' কথা উপেক্ষা করে উঠে আসে সূর্য-দীঘল বাড়িতে। শুরু হয় মানুষের নিন্দা তুচ্ছ করে সংগ্রাম। নিজের ছেলে-মেয়েদের দুবেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দেয়াটাই প্রধান। মোদ্দাকথা, জয়গুন পরিবারের দিনরাত্রি।

গ্রামীণ পরিবেশের চিত্র আঁকতে হলে যা যা প্রয়োজন পরে তার সবই ছিল। অভাব অনটনে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলেছেন। তবুও কেন যেন, জয়গুনের প্রতি সহানুভূতি সেভাবে জেগে উঠেনি। ভালো লেগেছে তার নতুন দিনের বার্তা। যার মশাল দিয়ে আলোর পথ দেখাচ্ছেন 'রমেশ ডাক্তার'-এর মতো মানুষেরা।

যাই হোক, খাঁটি গ্রাম্য ভাষা পড়তে আমার কাছে ভালোই লাগে। বিরক্ত বোধ করি না। নির্ঘণ্টের খুব একটা প্রয়োজন পরেনি দু-এক জায়গা ছাড়া। বইটি নিয়ে অনেক প্রশংসার বুলি শুনেছি। আমি তা না করলেও, ব্যর্থতার দায়ভার নিতে রাজি নই!
Profile Image for Md. Rahat Khan.
50 reviews5 followers
February 1, 2025
আহ! কি দারুন! আবু ইসহাকের লেখা কখনও হতাশ করেনি। মুগ্ধতার আবেশ জমাটবদ্ধ হয়ে আছে চিত্তজুড়ে। কিছু সংলাপ পড়তে গিয়ে বারবার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠছিলো।
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
March 4, 2023
বরাবর এর মত মাস্টারপিস গুলোতে আমি আমার রিএকশন জানাতেও ভয় পাই। আমার রিএকশন বই এক লাইনের যোগ্যও হবে না। আমার ২ লাইন এর গার্বেজ মন্তব্য অন্য কাউকে পড়তে কি আগ্রহী করে তুলবে তাও মনে হয় না। তবে তাও বই নিয়ে না লিখে বই পড়ার পর নিজের অনুভূতির আফটার ইফেক্ট নিয়ে বকবক করতে লজ্বাও লাগে, ভয় ও লাগে!
Profile Image for Samsudduha Rifath.
425 reviews22 followers
July 13, 2024
মাস্টারপিস যাকে বলে। যুগে যুগে মানুষ এসেছে ভিন্ন রূপে কিন্তু বাকি সবই সমান রয়ে গিয়েছে। যারা আগে শোষিত হয় তারা এখনো শোষিত হচ্ছে আর রাজার উদর পূর্ণ হচ্ছে সেই শোষণ করা পুঁজিতে।
Profile Image for Shahin Alam.
20 reviews1 follower
February 21, 2023
বহুকাল ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত ভিটা। তালগাছের ভিটা নামে পরিচিত এ জায়গাকে ঘিরে রয়েছে অনেক ভয়, অনেক গুজব। শোনা যায় প্রেতাত্মাদের বাস এখানে। এ ভিটাতে থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত। অথচ সেই বাড়িতেই এসে ওঠে দরিদ্র জয়গুন ও তার ছেলেমেয়েরা।

কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতন্ত্রের নির্যাতন ও ধনীর শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট গ্রামীণ বাংলাদেশের এক নারীর জীবন সংগ্রামের অনবদ্য দলিল ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’।

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হয়। যৌথভাবে পরিচালনা করেছিলেন শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের।

উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৭ এর দেশভাগ, নবগঠিত পাকিস্তান নিয়ে বাংলার মানুষের আশাভঙ্গ, গ্রামীণ সমাজের কুসংস্কার, মোড়ল শ্রেণির মানুষের ষড়যন্ত্র, সর্বোপরি গ্রামীণ নারীর জীবন সংগ্রাম ও প্রতিবাদী চেতনা।

এর উপর ভিত্তি করে ১৯৭৯ সালে নির্মিত হয় ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। সিনেমার কেন্দ্রে শ্রমজীবী নারী জয়গুন। বাংলাদেশের এক গ্রামের দরিদ্র মেয়েটির প্রথম স্বামী জব্বার মুন্সী মারা যাওয়ার পর করিম বকশ নামে এক কৃষকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গরুর দুধ বিক্রি করে করিম বকশ সংসার চালায়। ১৯৪৩ সালে আকালের সময় স্বামী তাকে ত্যাগ করে। শিশুপুত্রকে নিজের কাছে রেখে মেয়েসহ জয়গুনকে তাড়িয়ে দেয় করিম। ছেলে বড় হয়ে খাওয়াবে কিন্তু মেয়ে থাকলে বিয়ে দিতে খরচ হবে সেজন্য এই চালাকি করে সে। শহরের লঙ্গরখানায় গিয়ে সন্তানদের নিয়ে প্রাণ বাঁচায় জয়গুন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দৃশ্য দিয়ে সিনেমা শুরু হয়। এরপর জয়নুল আবেদীনের দুর্ভিক্ষের স্কেচ দেখানো হয়।

টাইটেলের পর কাহিনি শুরু হয় জয়গুনের গ্রামে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। জয়গুনের সঙ্গে রয়েছে তার প্রথম পক্ষের সন্তান কিশোর হাসু, দ্বিতীয় স্বামীর মেয়ে মায়মুন, মৃত ভায়ের স্ত্রী ও সন্তান। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে রয়েছে তার শিশু পুত্র কাসু। শিশুটিকে করিম বকশ মায়ের কাছে যেতে দেয় না, তাকে আটকে রাখে নিজের কাছে। জয়গুনের মাতৃহৃদয় হাহাকার করে কোলের সন্তানটিকে এক নজর দেখার জন্য। লুকিয়ে সে মাঝে মাঝে দেখা করে ছোট ছেলের সঙ্গে। এজন্য অনেক গালমন্দ খেতে হয় তাকে। শিশুটিকেও মারধোর করা হয় মায়ের কাছে যাওয়ার অপরাধে।

জয়গুন গ্রামে ফিরে এসে আশ্রয় নেয় তালগাছের ভিটা বলে পরিচিত তার বাবার রেখে যাওয়া সূর্যদীঘল বাড়িতে। গ্রামে সাধারণত বাড়ি বানানো হয় উত্তর-দক্ষিণ বিস্তারী। দু-একটি বাড়ি হয় পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তারী। এই বাড়িগুলোকে বলা হয় সূর্যদীঘল বাড়ি। এগুলো অপয়া হিসেবে পরিগণিত। বলা হয় এ বাড়িতে বাস করলে নির্বংশ হতে হয়।


জয়গুনের বাবা এক সময় জমিটা কিনেছিলেন স্বল্প দামে। এ ভিটায় এর আগে অনেক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে অপঘাতে। গ্রামের অনেকে এখানে প্রেতাত্মা ও অশুভ শক্তির ছায়া দেখেছে বলে গুজব রয়েছে। অসম সাহসী জয়গুন তার সন্তানদের দিয়ে এ ভিটাতে নতুন করে ঘর তোলে। কারণ ভূতের ভয় করলে গরীব মানুষের চলে না। জয়গুন নিজের ও আশে পাশের কয়েকটি গ্রামে গৃহস্থালীর কাজ করে সংসার চালায়। প্রতি পদে তাকে গৃহকত্রীর অপমান সহ্য করতে হয়, সহ্য করতে হয় কর্তার কুনজর। কিশোর হাসু কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে কুলিগিরি এবং অন্যান্য ছোটখাটো কাজ করে সংসারের চাকা সচল রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। গ্রামের ফকির জয়গুন ও তার ভাবীকে ভয় দেখায় এ ভিটাতে এবং বিশেষ করে চারপাশের গাছগুলোতে রয়েছে জিনের আছর। যদিও হাসু বলে, "আমরা তো ক দিন গাছতলাতেই ছিলাম, আমাদের তো কিছু হয় নাই।" ফকির বলে "হয় নাই হতে কতক্ষণ।" সে বাড়ি বন্ধন করে। অর্থাৎ ঝাঁড়ফুঁক করে তাবিজ দেয়। এর বদলে সে পায় চাল। এ ধরনের লোক ঠাকানো কাজই তার পেশা।
অন্যের বাড়ির দাসীগিরি ছেড়ে জয়গুন ময়মনসিংহ থেকে চাল এনে আশে পাশের গ্রামে ব্যবসা শুরু করে। এতে তার সংসারের কিছুটা আয় বাড়ে। কিন্তু তার এ কাজকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে গ্রামের ধনীরা। কারণ নারীর স্বাধীন চলাফেরা তাদের পছন্দ নয়। মায়মুন হাঁস পালে। সেই হাঁসের ডিম দিয়ে দিতে হয় মসজিদের ইমামকে। ইমাম সেই ডিমকে ‘হারাম’ বলে আখ্যায়িত করে কারণ জয়গুন কাজ করে খায় অন্যের বাড়িতে ও ভিন গ্রামে।

গ্রামের মোড়ল গদু প্রধান জয়গুনের উপর কুদৃষ্টি দেয়। তাকে ‘নিকা’ করতে চায়, যদিও তার ঘরে আরো দুই স্ত্রী রয়েছে। কিন্তু সাহসী জয়গুন গদু প্রধানকে প্রত্যাখ্যান করে।

এদিকে জয়গুনের কিশোরী মেয়ে মায়মুনের বিয়ে স্থির হয়। কিন্তু বিয়ের আসরে বলা হয় জয়গুনকে তওবা করতে হবে এবং সে ময়মনসিংহে ব্যবসার কাজে যেতে পারবে না ও গ্রামের বাইরে কাজ করতে যেতে পারবে না। এভাবে জয়গুনের জীবিকার পথ বন্ধ করে দিয়ে তাকে নিজের বশে আনতে চায় গদু প্রধান। মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য জয়গুন তওবা করে। এদিকে কাসুর অসুখ হলে তাবিজ ও ফকিরের ঝাঁড়ফুঁকে যখন তার অবস্থা মরমর তখন এগিয়ে আসে জয়গুন। শফিকে দিয়ে শহর থেকে ডাক্তার আনে, মায়মুনের পোষা হাঁস দুটি বিক্রি করে চিকিৎসা করায়। দিনরাত ছেলের সেবা করে। এই সেবার ফলে সুস্থ হয় কাসু। জয়গুনের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করে করিম বকশ। কাসুকে সে ফিরিয়ে দেয় মায়ের কাছে।

শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় মায়মুনকে। মায়মুন ফিরে আসে মায়ের আশ্রয়ে। জীবিকার পথ বন্ধ হওয়ায় চরম অভাবে পড়ে জয়গুন। শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার তাগিদে সে কাজ নেয় ধানকলে।তওবা ভাঙায় তার উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে গদু প্রধান। প্রতি রাতে বাড়িতে ঢিল মারতে থাকে সে। ভিটা থেকে জয়গুনদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করে সে।

এদিকে করিম বকশ চায় ছেলেমেয়েসহ জয়গুনকে আবার ঘরে নিতে। কিন্তু জয়গুন রাজি হয় না। কারণ তাহলে করিম বকশের নতুন স্ত্রীর সংসার নষ্ট হবে।এক রাতে ঢিল মারার সময় দেখে ফেলায় গদু প্রধান গলা টিপে হত্যা করে করিমকে। গ্রামে রটনা হয় যে সূর্য দীঘল বাড়ির অশুভ শক্তি হত্যা করেছে করিমকে। হত্যাকাণ্ডটি দেখে ফেলেছিল জয়গুন। সে প্রতিবাদী হওয়ায় এবার আঘাত আসে তার উপর। গদু প্রধানের লোক আগুন দেয় তার বাড়িতে।পুড়ে যায় জয়গুনের সব স্বপ্ন।

এ ছবিতে জয়গুন চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেছিলেন ডলি আনোয়ার (ইব্রাহিম)। করিম বকশ চরিত্রে ছিলেন কেরামত মাওলা। গদু প্রধানের চরিত্রে অভিনয় করেন জহিরুল হক। ভায়ের স্ত্রী শফির মা চরিত্রে ছিলেন রওশন জামিল। ফকির চরিত্রে ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। আরো অভিনয় করেন আরিফুল হক, ইলোরা গহর, হাসান ইমাম, ফখরুল হাসান বৈরাগী, নাজমুল হুদা বাচ্চু, লেনিন প্রমুখ। ছবিটির প্রযোজক ছিলেন মসিহউদ্দিন শাকের। সংলাপও লেখেন তিনি। সংগীত পরিচালক ছিলেন আলাউদ্দিন আলী।

ছোট ছোট দৃশ্য ও সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় গ্রামীণ জীবনের কুসংস্কারকে।

এই কুসংস্কার ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে শোষণ চালায় মোড়লশ্রেণীর মানুষ তা তুলে ধরা হয়। সমাজে দরিদ্র নারী দ্বিমুখী নির্যাতনের শিকার। দরিদ্র বলে এবং নারী বলে তার ওপর চলে ক্রমাগত নিপীড়ণ। তবু এই নিপীড়ণকে পায়ে দলে এগিয়ে যায় জয়গুনের মতো সাহসী নারীরা। ছবিটি শিল্পমানে অনন্য। মন্তাজের প্রয়োগ ছিল অসাধারণ। সংলাপ, পরিচালনা, দৃশ্য ধারণ এবং অভিনয়গুণে এটি ধ‍্রুপদী চলচ্চিত্রের মর্যাদা অর্জন করেছে।

ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসায় সিক্ত হয়। ছয়টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। শেখ নিয়ামত আলী শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার জয় করেন। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান ডলি আনোয়ার। ১৯৮০ সালে ছবিটি জার্মানির ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে তিনটি পুরস্কার জয় করে। এটি পর্তুগালের ফিগুয়েরা দ্য ফোজ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে একটি পুরস্কার জয় করে। এটি ডন কিহটে পুরস্কারও পায়। বাংলাদেশ সিনে জার্নাল অ্যাসোসিয়েশন ছয়টি বিভাগে ছবিটিকে পুরস্কৃত করে।

‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক এবং বাংলার গ্রামীণ জীবনের অসামান্য চিত্রায়ন।
Profile Image for Towhid Zaman.
103 reviews19 followers
October 24, 2023
গত শতকে এই অঞ্চলের মানুষজন কেমন ছিলো এবং তাদের জীবনযাত্রার একটা ছোটোখাটো বর্ননা দেয়া হয়েছে. আশ্চর্যের ব্যাপার গত শতকে যেমন ছিলো, আমার মনে হয় এখনোও সেইম টা ই আছে. গ্রামে গেলে সুন্দর মত বোঝা যায় ব্যাপারটা.

এই উপন্যাসকে একটা সহজ সুন্দর সৎ উপন্যাস বলা যেতে পারে, কোনো বাজে প্যাচাল নেই, চোখ লেগে থাকা মত লেখা. 

আবু ইসহাক সহ আরো অনেক গুনীজনেরা গত শতকের আলাপ করেছেন, তাদের আলাপ পড়লেই বোঝা যায় দিনকাল কত বিশ্রি ছিলো.

উপন্যাসের নামের সাথে মিল খুজতে যাওয়া যাবেনা এটা জানতাম, সেইভাবেই দিক ঠিক রেখে পড়ে ফেললাম. আপনি যদি এখনও এই মাস্টারপিস না পড়ে থাকেন, দ্রুত পড়েন.


৫/৫
২৪ অক্টোবর, ২০২৩
Profile Image for Sarowar Sadeque.
58 reviews6 followers
September 22, 2022
বাংলা সাহিত্যের খুব সম্ভবত সেরা প্রতিবাদী নারী চরিত্র এই জয়নব, সুকান্তের কবিতার মত জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়
Displaying 1 - 30 of 179 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.