Jump to ratings and reviews
Rate this book

পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ

Rate this book
উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে গাছ, ফুল আর পাখির প্রতি ছফার অপত্যস্নেহ। একদমই ভিন্ন ধারার এই উপন্যাসটিতে আত্মজীবনীর ছায়া আছে। দার্শনিক ছফার জীবনবোধ, দর্শনের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায় "পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ" উপন্যাসে।

70 pages, Paperback

First published February 1, 1996

44 people are currently reading
899 people want to read

About the author

Ahmed Sofa

71 books596 followers
Ahmed Sofa (Bangla: আহমদ ছফা) was a well-known Bangladeshi philosopher, poet, novelist, writer, critic, translator. Sofa was renowned for his intellectual righteousness as well as his holistic approach to the understanding of social dynamics and international politics. His career as a writer began in the 1960s. He never married. On 28 July 2001, Ahmed Sofa died in a hospital in Dhaka. He was buried in Martyred Intellectuals' Graveyard.

Sofa helped establishing Bangladesh Lekhak Shibir (Bangladesh Writers' Camp) in 1970 to organize liberal writers in order to further the cause of the progressive movement.

Ahmed Sofa's outspoken personality and bold self-expression brought him into the limelight. He was never seen hankering after fame in a trivial sense. His fictions were often based on his personal experience. He protested social injustice and tried to portray the hopes and dreams of common people through his writing. Sofa always handled his novels with meticulous thought and planning. The trend of telling mere stories in novels never attracted him; he was innovative in both form and content.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
468 (48%)
4 stars
370 (38%)
3 stars
101 (10%)
2 stars
15 (1%)
1 star
6 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 166 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
November 3, 2024
স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে হুমায়ূন আহমেদ বর্ণিত একটা ঘটনা বলি। তখন "আগুনের পরশমণি " সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায়। হুমায়ূন আহমেদ গেছেন আহমদ ছফার বাসায় তাকে দাওয়াত দিতে। হুমায়ূনকে দেখে ছফা শিশুর মতো খুশি হয়ে উঠলেন। "হুমায়ূন এসেছে! হুমায়ূন এসেছে!" বলে বাড়ি মাথায় তুললেন। তারপর হুমায়ূনকে চুপি চুপি বললেন, "ক্ষমতা থাকলে আমি আপনাকে টাকা পয়সা দিতাম। টাকার অভাবে আজেবাজে উপন্যাস লিখছেন, পড়ে খুব কষ্ট পাচ্ছি।" নিজের লেখার সমালোচনা হুমায়ূন আহমেদ সহজভাবে নিতে পারেন এমন সুনাম কোনোকালেই নেই। কিন্তু ছফার সরল সমালোচনার গল্পটি তিনি গভীর মমতায় নিজের বইতে লিখে রেখেছেন। এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে যা থেকে বোঝা যায় আহমদ ছফা আর যাই হোক, ভণিতা জানতেন না। তিনি যা বলতেন, সরাসরি বলতেন, হৃদয় থেকে বলতেন। আর এই হৃদয় থেকে বলার গুণের কারণে তার আত্মজৈবনিক "পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ " এতোটা অসাধারণ।

জীবনানন্দের কবিতায় আছে,
"নির্জন ক্ষেতের দিকে চেয়ে দেখি দাঁড়ায়েছে অভিভূত চাষা।" ছফা এই "অভিভূত চাষা"র মর্মার্থ বুঝতে পারেননি আগে। নিজে যখন ক্ষেতে ফসল ফলিয়েছেন; তার ক্ষেতের ফসলেরা যখন একটু একটু করে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে, পরিত্যক্ত একটা জমিতে যখন জীবনের স্পন্দন লেগেছে, অদম্য স্পৃহায় পুরো জমি জুড়ে গাছেরা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে তখন ছফা "অভিভূত চাষা"র মতো উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন। (আমি নিজে এই রুক্ষ প্রাণহীন প্রান্তরে এনে দিয়েছি এই জীবনের কোলাহল? এনে দিয়েছি এই নবীন সজীবতার ধারা?!) ছফা তার এই ক্ষেতের ফসল ফলানোর অভিজ্ঞতাকে জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি বলে মনে করেছেন। আর সহজ, নিরাভরণ গদ্যে আহমদ ছফার সাথে সাথে অভিভূত চাষার মতো আমরাও চলে যাই এক আশ্চর্য ভ্রমণে। ছফা তার একান্ত অনুভূতি প্রবলভাবে পাঠকের মনে সঞ্চারিত করতে পারেন। ফুল, পাখি, গাছ; সঙ্গে ছোট ছোট অজস্র চরিত্রের ভিড়- লেখকের এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা পাঠকদের প্রায় তুরীয় আনন্দ প্রদান করে। পুরো জগৎটাকেই মনে হয় অনেক আপন। মনে হয়, এই পৃথিবীতে আমি সবার আর সবাই আমার। যদিও লেখক প্রকৃতিতেও দেখেছেন হিংসা আর হানাহানি; আশ্রয়ের জন্য যদিও তাকে ফিরতে হয়েছে মানুষেরই কাছে তবু তার এসব অভিজ্ঞতা পুরো ব্যাপারটিকে আরো স্বাভাবিক, আরো মানবিক করে তুলেছে।

সতেরো বছর বয়সে প্রথমবার এই বই পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এভাবেও লেখা যায়! এতো সহজ অথচ এতো গভীর! বহুবছর পর আবার পড়ে আগের মতোই অভিভূত হলাম। লেখক হিসেবে আহমদ ছফার যা কিছু গুণ আছে তার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় "পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ "এ। লেখক আহমদ ছফাকে অমরত্ব দেওয়ার জন্য এই একটা স্মৃতিকথাই যথেষ্ট বলে মনে হয়। পড়া শেষ হওয়ার পরও মনে বাজতে থাকে গল্পশেষের কথাগুলো -

" এই পুষ্প, এই বৃক্ষ, তরুলতা, এই বিহঙ্গ আমার জীবন এমন কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছে, আমার মধ্যে কোনো একাকিত্ব, কোনো বিচ্ছিন্নতা আমি অনুভব করতে পারিনে। সকলে আমার মধ্যে আছে, আমি সকলের মধ্যে রয়েছি।... একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে। আমার পাখিপুত্র মুক্ত, আমি মুক্ত, আমাদের সম্পর্ক থেকে প্রত্যহ অমৃত উৎপন্ন হয়। এই আকাশের জীবনের সঙ্গে আমার জীবনের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কি অমৃতসমুদ্রে অবগাহনে নয়?"

(২৫ জুন, ২০২৩)
Profile Image for Manzila.
166 reviews159 followers
April 19, 2016
- জানেন, আহমদ ছফা এই বাসাটায় বসে “পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ” বইটা লিখেছিলেন।
- বলেন কি! চলেন তো একটু কাছ থেকে দেখে আসি। ইশ! এই গলি ধরেই বুঝি আহমেদ ছফা হাঁটতেন!
- বইটা পড়েছেন?
- না। তবে কেনা আছে। শীঘ্রই পড়ে ফেলব।

কথা বলছিলাম এক বন্ধুর সাথে, ইস্কাটনের এক রাস্তার ধারে আমরা ক’জন চা খেয়ে কেবল উঠছিলাম তখন। সেদিন বাসায় ফিরেই হাতে নিয়ে নিলাম - “পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ”। “যদ্যপি আমার গুরু”র মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই ভাললাগার এক অদ্ভূত রেশ কুয়াশার মত ঘিরে ধরল নতুন করে। ছফা খুব ভালবাসাতে পারেন, তাকে ভাল না বেসে আসলে থাকা যায় না।
নামে যা যা বলা আছে, বইটাও তাই নিয়েই। মানে পুষ্প, বৃক্ষ আর বিহঙ্গ নিয়ে। ছফার সবচেয়ে বড় গুন তিনি খুব বড় মাপের গল্প বলিয়ে; গল্প বলাটা তাঁর খুব আসে। একদম আটপৌরে নিতান্ত জিনিসপত্রও তার লেখায় কি জানি অসামান্য হয়ে যায়। উনিশ শ’ তিরানব্বই সালের আগস্টে চারতলার এক চিলেকোঠায় ভিটা গাড়েন আহমদ ছফা। গল্পের শুরু এখান থেকেই। চিলেকোঠা সবসময় আমাকে খুব আকর্ষণ করে। বাসার দুয়োর খুললেই প্রান্তরের মত একটা ছাদ, খোলা আকাশ। তাতানো রৌদ কি ঝুমঝুমে বৃষ্টি, হাতে এককাপ চা আর একটা দারুন বই, বাকি দুনিয়া ভুলে যান। তাই ছফা যখন তার চারতলার চিলেকোঠার কথা পাড়লেন আমাকে নড়ে চড়ে বসতেই হল। নতুন বাড়ির চিলেকোঠায় নয়নতারা আর তুলসীর দারুন এক বাগান গড়ে তুললেন লেখক। তুলসী আর নয়নতারা এমন কিই বা ফুল, এত আদিখ্যেতাই বা কিসের! কিন্তু নিজেই আবার সাফাই গেয়েছেন যে এই নয়নতারা আর তুলসী তো অর্ধেক প্রাণ আর অর্ধেক ছাদ থেকে জন্ম নিয়েছে। মায়া না করে পারবেন কি করে? দেখতে দেখতে গোলাপেরাও হাজির হয়, কিন্তু লেখকের মনে ভয়, তার নয়নতারা আর তুলসীরা বুঝি এই ফুলের রানীর আগমনে মন বেজার। কিন্তু না, সৎ প্রতিবেশীর মত ফুলগুলো পরষ্পরের পাশাপাশি অবস্থান করতে লাগল। তাঁর মতে কমবেশি সব পুষ্পের মধ্য ঈশ্বর বিরাজ করেন। দিনে দিনে এই ছাদের ফুল গুলোই তার জীবনের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। লিখেছেন, “গাছের সংগে ফলের সংযোগ সূত্রটির যে মিলনবিন্দু, সেটাইতো পুষ্প। পুষ্পের মধ্যে গাছ এবং ফল দুইই বর্তমান রয়েছে। যেমন গোধূলির মধ্যে দিন এবং রাত যুগপৎ অবস্থান করে, তেমনি ফুলের মধ্যে বর্তমান এবং ভবিষ্যত এ ওর হাতে ধরে সুখনিদ্রায় শয়ান রয়েছে।”

বৃক্ষের গল্প শুরু করলেন তিনি একটু ফ্ল্যাশব্যাক থেকে। উনিশ শ’ আশি সাল, আবার আগস্ট মাস। “দৈনিক গনকন্ঠ” মরতে বসেছে। চূড়ান্ত হতাশা নিয়ে টিপু সুলতান রোড থেকে আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসে ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ রাস্তায় দেখতে পেলেন একটি থেঁতলানো বেগুন চারা। খুব মায়া হল। নিয়ে এলেন। হলের একটুখানি মাটিতে লাগিয়ে দিলেন চারাটি। পরদিন সকালে উঠে যখন দেখলেন চারাটি নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে তাঁর হতাশা সব যেন কোথায় মিলিয়ে গেল। শুধু এইটুক বেগুন চারা এমনই প্রভাবিত করেছিল তাঁকে যে ছাত্রাবাসেই বিরাট এক সবজি বাগান গড়ে তুলে ছিলেন। এই ক্ষেতটিকে তিনি তুলনা করেছেন তার মনের চিরহরিৎ উদ্যানের সাথে। সন্তানের প্রথম বসতে শেখা, প্রথম হামা দেয়া যেমন আজীবন মা-বাবার মনে থাকে তিনি তেমনই এই সন্তানতুল্য ক্ষেতটির কোনটিতে প্রথম ফুল ধরেছিল, কোনটিতে “বিস্ফোরিত পুষ্পের অন্তর মথিত করে ফল দেখা দিয়েছিল” সব যত্ন করে মনে রেখেছিলেন। দলিত বেগুনচারা থেকে যদি এই এত বড় ক্ষেতটির জন্ম নিতে পারে তাহলে ভাঙ্গা-চোরা মানুষের শিশুর মধ্যেও মহামানবের অংকুর রয়েছে- এই ভাবনার ফলশ্রুতিতে ছিন্নমূল বাচ্চাদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন স্কুল। তাদেরকে নিজে বাগানের প্রথম তোলা সবজি দিয়ে বনভোজন করিয়েছিলেন। কত উৎস থেকেই না বড় বড় মানুষেরা ভাল কাজের অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকেন!

সবচেয়ে বেশি মায়া লাগে এই বইয়ের শেষ অংশে এসে, মানে বিহঙ্গ পুরাণে। নানান সময় পাখিদের সঙ্গী করেছিলেন ছফা। ঢাকার রাস্তায় কাঁধে ���িয়া পাখি নিয়ে ঘুরেছেন এমন ঘটনাও আছে। এক ঝুটিশালিক বন্ধুর কথা খুব বলেছেন এই বইতে। পাখিটির যাতে খাঁচায় “পাখিত্বে” কোন অবমাননা না হয় তাই তাকে খাঁচা কিনে দিয়েছিলেন ইয়া বিশাল সাইজের! একেকদিন একেক রঙ গোলানো পানিতে গোসল করাতেন একে আর একেকজনের কাছে বানিয়ে বানিয়ে পাখিটিকে নিয়ে গল্প বলতে। মানুষের আত্মাকে প্রায়ই পাখির সাথে তুলনা করা হয়। তাই বোধহয় পাখিটির কাছে এলে লেখক নিজের ভেতরেও একটা পাখির অস্তিত্ব অনুভব করতেন। ভীষণ আদরের এই পাখিটি তবু একদিন পালিয়ে যায় তাঁর বুক খালি করে। লেখক নিজেই আবার বলেছেন যে এই পাখিপুত্রটি তাকে এমন এক গুরুবানী শিখিয়েছে যা আর কোথাও তিনি পাননি – “একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে।” তাঁর পাখিবন্ধুদের লিস্টিটি একেবারে কম বড় নয়। চিলেকোঠার ছাদে খাবার ছড়িয়ে দিতেন; কাক, ঘুঘু, দোয়েল, গাঙশালিক আর চড়ুইয়েরা খুব ভীড় জমতো। দিনে দিনে পাখিদের গানের সমাঝদার হতেও তাই দেরী হয়নি তাঁর।

শুধু দু’টো বই পড়ে যতটুকু বলা সম্ভব, পাঠক হিসেবে আমি অনুভব করেছ কী অপরিসীম মায়া এই মানুষটার হৃদয়ে! তাঁর স্নেহের সমুদ্রের বিশালতা অপরিমেয়। প্রিয় শিক্ষক আবদুর রাজ্জাককে যেরকম শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালবাসার সাথে “যদ্যপি আমার গুরু” তে তুলে ধরেছেন ঠিক একই ভাবে স্নেহ আর মমতামাখা বর্ণনায় তাঁর প্রিয় ফুল, গাছ-তরু-লতা আর পাখিদের এনেছেন “পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ” এ। ভূমিকায় সলিমুল্লাহ খান খুব জোরেসোরে বলার চেষ্টা করেছেন এই বইয়ের আসল কাহিনী মানুষের। এসব ব্যাখ্যা কেন জানি না আমি মানতে পারিনি। আমার চোখে এই বইটি বরং পুষ্প বৃক্ষ আর বিহঙ্গ – প্রকৃতির এই সন্তানদের সাথে ছফার মেলবন্ধন আর মিতালির গল্প, অনেকখানি স্মৃতিচারণ মূলকও বটে। বন-পাখি আর প্রকৃতি যদি ভাল লাগে তাহলে এই বই মনে স্থান করে নেবেই, আর যদি এসব নিয়ে অতটা এখনও না ভেবে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ভাবতে শেখাবে। খুব ইচ্ছে করবে ওরকম একটি চিলেকোঠার ছাদে নয়নতারা আর তুলসী গাছের আদরমাখা স্পর্শে দাঁড়িয়ে রুটির টুকরো আর খুদকুঁড়ো হাতে নিয়ে পাখিদের খাওয়াতে। যে মমতা লেখকের বুক থেকে লেখার পাতায় স্থান নিয়ে একদিন পাঠকের হৃদয়েও জায়গা করে নেয়- এতখানি মমতা দিয়ে খুব বড় মাপের লেখকের পক্ষেই লেখা সম্ভব।
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
219 reviews288 followers
November 22, 2025
‘ফুল ফোটানো সহজ কথা নয়
শূন্য থেকে মূর্ত করা সৃষ্টির বিস্ময়
পারে সেজন ভেতর থেকে ফোঁটার স্বভাব যার
ফালতু লোকের ভাগ্যে থাকে বন্ধ্যা অহংকার।’
– আহমদ ছফা


পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ–এর তিনটি বিশেষ্য‌ই আদতে ছদ্মবেশী বিশেষণ। মানবসমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে শ্রেণি-সংঘাত, নিচু স্বার্থপর মানসিকতা, তা যেন এই তিন বিশেষ্যের সাহায্যে অকপটে তুলে ধরলেন ছফা সাহেব। ব‌ইটা পড়তে পড়তে শুধু হেসেছি, পরক্ষণেই কেঁদেছি, আবার হয়তো পাখিদের 'দাগা দেওয়া' দেখে মন উদাস হয়ে গেছে... অসাধারণ ছাড়া আর কিছু মাথায় আসছে না।

এ ধরনের ব‌ই শেষ করার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সাহস থাকে না পাছে কোনো ধরনের অমর্যাদা হয়। শুধু বলতে পারি, আপনিও স্তব্ধ হয়ে যাবেন– এভাবেও কোনো আত্মজৈবনিক-আখ্যান লেখা যায়? কী সহজ সহজ শব্দ, কত সরল কথামালা। অথচ এর মধ্য দিয়েই আমাদেরই মধ্যকার বিভেদের পরিচয় প্রকাশিত হয়ে গেল। আবারো বলি, অসাধারণ....
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
October 13, 2021
ছোট্ট একটা বই। ডাক্তারের চেম্বারে সিরিয়ালের অপেক্ষায় বসে পড়তে নিয়ে সময়টুকু বেশ কেটে গেছে। সেই সাথে উপরিপাওনা হিসেবে কিছু পুরোনো স্মৃতি এসে মন জুড়িয়ে গেছে। বইটার রিভিউ লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না আজ, ভাবলাম খানিক স্মৃতি রোমন্থনই করি।

কালার স্ক্রিনের প্রথম ফোন ভাইয়া কিনে দিয়েছিল মনে হয় স্কুলে থাকতে, সিম্ফোনি বি২০ মডেলের নীলরঙা একটা ফোন। সেই ফোন থেকেই প্রথম এফএম রেডিওর সাথে পরিচয়। ২০১২-১৩ এর দিকে এফএম রেডিও বেশ জনপ্রিয় ছিল। বগুড়ায় ৮৯.৬ এফএম চলতো বেশ সেসময়। সেখানেই একজন রেডিও জকি ছিলেন নাবিলা আপু। ওনার সেগমেন্টটা শুনতাম আমি নিয়মিত। তো একদিন বিকেলে বসে ওনার কথা শুনছি, গাছ বিষয়ক কিছু কিংবা ওনার শৈশব স্মৃতি নিয়ে কথা বলছিলেন হয়তো৷ আপু বলছিলেন কীভাবে ওনার বাসার কোনো এক গাছকে বটি দেখিয়ে আচ্ছা করে শাসিয়ে দিয়েছিলেন যাতে সেটাতে ফুল আসে। এবং অবাক করা ব্যাপার হলো, কদিন বাদে তাতে আসলেই ফুল ফোটে, পুরোটা গাছ জুড়ে!
সেসময় আমাদের বাড়িতে একটা কামিনী গাছ ছিল, আমিই লাগিয়েছিলাম। মাস ছয়েক হয়তো হয়েছিল কিন্তু সেই গাছটাতেও আপুর গাছের মতো ফুলের কোনো নাম-গন্ধ ছিল না। ভাবলাম, একটা চেষ্টা করেই দেখি। জীবন শঙ্কায় আপুর গাছে যখন ফুল এসেছে, আমার গাছেরও প্রাণভয় থাকা উচিৎ! সাথে সাথে চলে গেলাম ছাদে, হাতে একটা দা নিয়ে। গাছের সাথে টুকটাক আলাপ করার অভ্যেস আগে থেকেই ছিল, তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি। ভোতা গোছের দাখানা হাতে উঁচু করে ধরে শুরুতে একটু দরদ নিয়ে, তারপর জোরগলায় হুমকিধামকি করে বলেছিলাম, "একটা সপ্তাহের মধ্যে যদি ফুল না ধরছে, তাহলে এক্কেবারে কেটে ফেলবো গোড়া থেকে, বুচ্ছিস? এইযে এই দা দিয়েই এক কোপে ধর নামায়ে ফেলবো!"
মজার না? কিন্তু আরো মজার ব্যাপার হলো, আমার আল্টিমেটামের ঠিক শেষদিন দেখি প্রায় প্রত্যেকটা ডালের মাথায় কচিকচি পাতার কোলে ছোটো ছোটো কুঁড়ি এসে গেছে! খুব অবাক হয়েছিলাম। সাথে খানিকটা আবেগাপ্লুতও।
ছোটোবেলা থেকে বাড়ির উঠোনের এমন অনেক গাছপালার সাথে আমার মিতালি। এদের মাঝে দাঁড়িয়ে খুব কম সময় নিজেকে একা মনে হতো। সেই বাড়িটার টিনের চালে বৃষ্টি হলেই আমগাছের সব মরাপাতা এসে জমা হতো, বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে চাইতো চালের কোণায় কোণায়। বৃষ্টির মাঝেই কখনো আব্বু, কখনো আম্মু, কখনো ভাইদের কেউ না কেউ সেই চালার ছই অংশটা লাঠি দিয়ে পরিষ্কার করতে নামতো। শরতের পাতাঝরার সময়টাতে তো বৃষ্টিও লাগতো না। এতগুলো গাছের পাতা দিয়েই ছই ভরে উঠতো, বারান্দার পাশে নিচু চালার গলিটাতে পাতা জমে যেন ভার হয়ে থাকতো রোজ সকালে। ঘুম থেকে উঠেই আব্বুর কাজ ছিল চালার সেই গলিটুকু পরিষ্কার করা। আর তাতেই আমাদের জন্য এলার্ম-ঘড়ির পাটটুকুও মিটে যেত!
সেই তিনটে আম গাছ, একটা কাঁঠাল গাছ, একটা লিচু গাছ, দুটো পেয়ারা গাছ, তিনটে মেহগনি, একটা গন্ধরাজ, একটা মেহেদি, একটা জবা আর অসংখ্য ছোটোখাটো গাছেদের সাথে টিনের চালের চারখানা ঘরের বাড়ির উঠোনে একগাদা পুতুল আর খেলনা ছড়িয়ে বসে কাটানো আমার শৈশব-কৈশোরের প্রতিটা বিকেল বেশ সুন্দর ছিল। বড় গাছগুলোর সাথে কত যে গল্প করতাম একা একা! লিচু গাছটার নিচের মাটিতে দাঁড়িয়ে পায়ের তালুতে শুকনো-ভেজা-সিক্ত-মুক্ত কত ধরণের মাটির পরশ নিয়েছি। হুটহাট খালি পায়ে হাঁটতে বের হওয়ার নেশা বোধ হয় সেখান থেকেই। আম গাছগুলোর মাটি ফুরে আসা শিকড়ে হাত বুলিয়ে দিতাম। হাত বুলিয়ে আবার ভাবতাম আমার শিকড় তাহলে কোনটা? হাত নাকি পা? কত বিকেল আমার এসব উদ্ভট ভাবনায় চলে গেছে! তার সাক্ষী শুধু এই গাছগুলো।
তারপর একটা সময় আমার সাধের উঠোনটা মরে গেল। পাকাপোক্ত দালান উঠে গেল সেখানে। গাছগুলো কাটা পড়ে গেল সব। এখন ভাবলে চোখ শুকনো থাকে না কখনো, তবে কেন যেন তখন কী করেছিলাম তা মনে করতে পারি না। কে জানে কেন!
একটা সময়ে বদ্ধ দালানেরও এক ছটাক উঠোন হলো, যাকে আমরা ছাদ বলি। সেখানে ধীরে ধীরে গাছের সমাগম বাড়তে লাগলো। বড় গাছগুলোর ঘাটতি পূরণ হলো না। কিন্তু সবুজের কোটা পূরণ হতে থাকলো। ফুলের গাছ দিয়ে শুরু হয়ে এখন মোটামুটি শাক-সবজির একদফা চাষ হয়ে যায় এই ছাদেই। সবকিছুর মাঝে আমার গাছ-সখীদের সাথের মিতালিও আবার ফিরে আসে। গল্প বাড়ে। মাঝেসাঝে এক-দুবার যেয়ে সবাইকে জিগ্যেস করে আসি তারা কেমন আছে। মুখ শুকনো দেখলে খুব করে বুঝিয়ে আসি, সব ঠিক হয়ে যাবে। নতুন ফুল ফুটতে শুরু করলে মনটা ভরে যায় কেমন একটা তৃপ্তিতে! এইতো সেদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে একগাদা ফুলের বীজ এনেছিলাম হল থেকে। সূর্যমুখীর বীজও এনেছিলাম কয়েকটা। খুব শখ করে, দুরুদুরু বুকে গুনে গুনে ঠিক তিনটে বীজ লাগিয়েছিলাম। বীজ থেকে এভাবে চারা করার অভিজ্ঞতা আমার এটাই প্রথম। সত্যি বলতে আশা ছিল না খুব বেশি। তারপর সপ্তাহ দুয়েক পর একদিন ছাদে যেয়ে দেখি সূর্যমুখীর তিনটে চারা বুক ফুলিয়ে মাটির বাইরে তাদের সতেজতার জানান দিচ্ছে! হালকা সবুজ রঙের কচকচে কাণ্ডের চারা তিনটে দেখে কী খুশিটা হয়েছিলাম বোঝাতে পারবো না! কতজনকে ধরে ধরে আমার এই তিনটে গাছ দেখিয়েছি। প্রতিবার ছাদে গেলে ওদের একবারের জন্য হলেও আদর করতে ভুলি না। মাসখানিকের মাথায় হয়তো সূর্যকে টেক্কা দিয়ে আমার এই গাছগুলোতেই সূর্যরঙা সূর্যমুখী আলো ছড়াবে! আশায় আছি, খুব করে আশায় আছি!

যাহ! কত কিছু বলে ফেললাম! থাকুক। বিহঙ্গ নিয়েও আরেকদিন কোনো বইয়ের রিভিউ বাঁচিয়ে স্মৃতিকথা শুনিয়ে যাব হয়তো। আপাতত মানুষ হিসেবে নিজেদের জ্ঞান-গরিমা ভুলে প্রাণধারী হিসেবে পুষ্প-বৃক্ষ-বিহঙ্গের সাথে একাত্ম হতে বইটি পড়ে ফেলুন।
Happy reading!
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
December 6, 2025
জীবনে মনপ্রাণ মাতাল করা এমন বই খুব বেশি পড়িনি। 'আরণ্যক' পড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা যেমন ছিল 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' পড়ার অভিজ্ঞতাও ঠিক তেমন। আমার জীবনদর্শন পাল্টে দেয়া এক অভিজ্ঞতা। আর চাষার কাজ তো আসলেই বিশাল এক ইবাদত। সেই ইবাদত তো আমি করিনি। নিজেকে তাই আজ ভীষণ পাপী মনে হচ্ছে। আমি পাপী, স্থান আমার নরকেই হওয়া উচিত।

আমরা কেন এতোটা ইন্টারনেট আসক্ত? আমাদের মনে কেন এতো অস্থিরতা? আমরা কেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ এই মুহূর্তে আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। কারণ আমরা প্রকৃতির সংস্পর্শে নেই, আমাদের বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা নেই, পুষ্পের প্রতি স্নেহ নেই, বিহঙ্গদের প্রতি দরদ নেই। প্রকৃতির প্রতি চরম উদাসীন এক পাপী বান্দা আমরা। আমরা যতোই প্রকৃতির সংস্পর্শ থেকে দূরে সরে যাব আমাদের মনে ততো বেশি অস্থিরতা বিরাজ করবে। আমাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যাবে।

আপনি যতো বেশি প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকবেন ততো বেশি আপনার মনে শান্তি থাকবে। একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম করে প্রকৃতিকে সময় দিতেই হবে। প্রকৃতির কতো রহস্য জানা বাকি। প্রকৃতিরাণীকে ভালো না বাসলে তো প্রকৃতিরাণী আপনাকে ভালোবাসবে না। এজন্য আমার সময় প্রকৃতিকে দিতে হবেই। নিজেকে ভালো রাখার জন্য হলেও দিতে হবে। নিজের সুখের জন্য, নিজের পরিপূর্ণতার জন্য।

আমার তো এখনি গ্রামে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। আমাদের বাড়ির পেছনের ক্ষেতগুলোতে কাঁচামরিচ-পেঁয়াজ, টমেটো, বাঁধাকপি-ফুলপি, লাউ-কুমরো, আলু, শশা, গাজর, পেঁপে, কলা চাষ করতে মন আনচান করছে, বাড়ির পেছনে আমাদের ফিশারির নারকেল, আম, সুপারি, আকাশি, মেহগনি, চালতা-গাছগুলোকে খুব মিস করছি, বিলের আকাশে গান গাওয়া শালিক, বুলবুলি, কাক, টিঁয়াদের মধুর গানের স্মৃতি আমাকে বিষাদে আচ্ছন্ন করে ফেলছে, আমার শৈশবের স্মৃতিতে থাকা শাপলা, গোলাপ, গাঁদা, মাধবীলতা, রজনিগন্ধা, বকুলের ঘ্রাণ আমার মন অচেতন করে দিচ্ছে।

কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাকে এই অস্থির ব্যস্ত বদমেজাজি নোংরা ঢাকা শহরেই থাকতে হচ্ছে। তবে আমি খুব শীঘ্রই গ্রামে চলে যাব হয়তো। আমার গ্রামের পুষ্প, বৃক্ষ, বিহঙ্গ আমাকে যে পরিপূর্ণতা দিতে পারবে তা শহরের এই চার দেয়ালে বন্দি কৃত্রিম জীবন দিতে পারবে না। আমার যেসকল বন্ধু গ্রামে খামার, ফিশারিজ, কৃষির ব্যবসা আর আবাদ করছে তাদের প্রতি আমার প্রদ্ধা, সালাম আর কৃতজ্ঞতা।

আমি আজ আমার প্রাণের আহমফ ছফাকে আবিষ্কার করলাম। আহমফ ছফা হয়তো চেয়েছিলেন তাঁর প্রকৃতির প্রতি এই অবোধ ভালোবাসার রোগ সবার মাঝে ছড়িকে যাক। আর এটা ভেবেই হয়তো বইটা লিখেছেন। আমিও চাইবো সবাই এই বইটা পড়ে নিজেকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে তুলুক। নিজের অবসর সময়টুকু প্রকৃতির সাথে কাটাক। সবার মন শান্ত থাকুক, সবাই ভালো থাকুক।

এখন অবধি আহমদ ছফার 'যদ্যপি আমার গুরু' আর 'গাভী বিত্তান্ত' পড়া হয়েছে। আজ বাতিঘরে বসেই 'পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' পড়ে শেষ করলাম। উনার সবগুলো বই পড়ে শেষ করে ইউটিউবের জন্য একটা সিরিজ ভিডিও বানাবো।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
January 7, 2025
বইটা শেষ করে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। এ কোন ছফা! এ কোন মানুষ! ডাকাবুকো ছফার এমন কোমল এক হৃদয় ছিল! এমন ভালোবাসা ছিল প্রকৃতির জন্য! সেজন্যই তো অসীম মমতায় লিখতে পেরেছেন পাখির কথা, গাছের কথা, প্রাণের কথা।

বছরের শুরুটা হলো চমৎকার এক বই দিয়ে। এই বছর তো বটেই, আমি নিশ্চিত যতদিন বেঁচে আছি এই বইটা আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে মনে। যতবারই গাছের দিকে তাকাবো, পাখির দিকে তাকাবো, ততোবারই হয়তো মনে পড়বে খ্যাপাটে ছফার ‘পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’।
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
April 26, 2023
এই বইয়ে আহমদ ছফা তার বৃক্ষ, পাখি, শাকসবজি চাষ, এসবের সাথে সম্পৃক্ততা, একাত্মতা, ভালবাসা, সম্পর্কের কথা বলেছেন। উনি গাছের সাথে যেভাবে আপন হয়েছেন, গাছের কিছু হলে নিজ থেকে বুঝে যাওয়া, গাছও তাকে আপন করে নেওয়া, এসব নিয়ে খুব সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে লিখেছেন। আরো ছিলো উনার পাখি পালন করা, পাখিকে খাবার দেওয়া, শহরের কাককে খাবার দেওয়া, এদের অনেককিছু লক্ষ্য করতে করতে বুঝতে পারা ইত্যাদি।

আমরা আরো জানতে পারব উনার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের কোনো স্থানে শাকসবজি চাষ করা। এবং প্রথম ফলন দিয়ে বস্তির কিছু বাচ্চাকে খাওয়ানো।
এই অংশটা আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশ এই বইটার

খুবই সুন্দর একটা বই। উনার জীবনের পাখি, বৃক্ষ নিয়ে কাটানো সময়, এসব নিয়ে অনুভূতি উনি বেশ সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। পড়ার সময় মনেই হলো না কোনো আত্মজীবনী পড়ছি। সুন্দর লেখা ছাড়াও উনার এই বৃক্ষকুল, পক্ষীকূলের সাথে গড়ে উঠা সম্পর্কের মধ্যে যে শিশুসুলভ আচরণ, তাদের নিয়ে উনার যত্ন, তাদের কথা বুঝতে পারা এবং ছোটখাটো বিষয় লক্ষ্য করা, এসব পড়তে এমনিতেই সুন্দর-স্নিগ্ধ একটা অনুভূতি দেয়।।
বইটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমাদের বৃক্ষ এবং পশুপাখির আরো কাছাকাছি যাওয়া উচিত, তাদের বুঝা উচিত, আদর-যত্ম করা উচিত
Profile Image for Samiur Rashid Abir.
217 reviews44 followers
December 22, 2023
আহমদ ছফা নিয়ে বহুবছর আগে একটা কথা শুনছিলাম, "কম পড়ে বেশি জানতে চাইলে আহমদ ছফার লেখা পড়তে পারো।" কথাটা নেহায়েত ভুল নয়। ছোট্ট একটা বই, কিন্তু মনে হল কত আলোচনা যেন শুনে ফেললাম।  


নামের সার্থকতা যে বইয়ের ভেতরের অংশের সাথে মিলিয়ে সেটা শুরুতে বুঝিনি, ভাবছি হয়ত কোন উপন্যাস হবে, সুন্দর একটা নাম দেওয়ার দরকার, দেয়া হইছে। নামের মতন বইখান আরোও সুন্দর। 


বেগুন চাষের অংশটুকু খুব সম্ভবত শ্রেষ্ঠতম অংশ। পাখির অংশে আমি কিঞ্চিৎ অবাক হইছি, পাখি কি এতই পোষ মানে। যতটুকু জানি, মানুষ শালিক পোষ মানাইতে কখনো পুরোপুরি পারে নাই। ছফা সাহেব দেখি কাকের সাথে দহরম মহরম করে বেড়াইছেন, অদ্ভুত এক ব্যক্তি বটে! 


প্রকৃতির সাথে আত্মার মিলনেই এক ধরণের নির্মল শান্তি বিদ্যমান। সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে গাছ লাগানো তে প্রাধান্য দেয়া উচিত। 
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
December 3, 2023
আহমদ ছফা জীবনে সংসারী মানুষ ছিলেন না। সাধারণ সামাজিক মানুষও তিনি ছিলেন না। তিনি ছিলেন বিশেষ প্রকৃতির মানুষ যাদেরকে Insane, Crazy এমন ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়, বাংলাতে বলে উন্মাদ, পাগল।
পাগল বলতে মানসিক চিকিৎসার দরকার এমন কিছু না। ফ্রেডরিখ নিতশের একটা কথা আছে না, "Those Who Were Seen Dancing Were Thought To Be Insane By Those Who Could Not Hear The Music." ঔ ধরনের Insane বুঝাতে চাইছি। যাদের অনুভূতি তীব্র, যাদের স্পর্শকাতরতা গড়পড়তা মানুষের উপলব্ধি করার সীমা ছাড়িয়ে যায়।

তিনি যখন বৃক্ষ বা প্রাণীপ্রেমের কথা লিখবেন, সাধারণ মানুষ হিসেবে একপর্যায়ে আমরা খেই হারিয়ে ফেলতেই পারি (আমরা বলতে নিজের কথাই বলছি)। আমরা মনে করতে পারি, একটা শালিক পাখি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কি আছে? কুকুরের মত প্রাণী হলেও হয়, যারা ভালোবাসা বহুগুণে ফিরিয়ে দেয়, তাই বলে শালিক, মানুষের পোষ না মানা বনের শালিক!

বই থেকে ছফার insane চরিত্রের আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে একটা ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিলেন ছফা। ঔ বাড়ির একটা কমলাগাছ দেখাশোনা করার শর্তে তিনি ক্রেতাকে বাজারমূল্যের থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছিলেন। ঘটনাটার সময় উল্লেখ নেই, এটা যদি ১৯৮০ এর দশকের ঘটনা হয়, তখনকার পঞ্চাশ হাজার টাকার মূল্যমান আজকের দিনে কত? শুধু একটা কমলাগাছের জন্য!

তবে ছাপোষা সাধারণ মানুষেরাও প্রাণী বা উদ্ভিদপ্রেমীদের অনুভূতি মূল্যায়ন করতে জানেন। ছফা যখন বেগুনসহ আরও বিভিন্ন সবজির খেত প্রস্তুত করেছেন, অনেক মানুষ নিঃস্বার্থ আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে এসেছেন। লেখকের মত তীব্র অনুভূতি না থাকুক, গাছের চারা বা বীজ লাগিয়ে অঙ্কুরিত হতে দেখা, গাছকে বড় হতে দেখার আনন্দ কমবেশি সবাই অনুভব করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক হলের মাঠে ছফার সবজি বাগান আমার মত অনেক পাঠকের মনেই জায়গা করে নেবে। কিংবা তার তুলসী গাছ আমার নিজের তুলসী গাছটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, নয়নতারা মনে করিয়েছে শৈশবের স্মৃতি।
আমগাছ নিয়ে সবারই কমবেশি স্মৃতি আছে। আহমদ ছফার ছোটবেলার স্মৃতিময় আমগাছ হারানোর কষ্ট অল্প হলেও অনুভব করতে পারি। কোন গাছ কেটে ফেলা হলে আমাদের বুকেও শূন্যতার সৃষ্টি হয়। আর গাছ যত বড় হয়, তার সৃষ্ট শূন্যতাও যেন তত বড়।
প্রাসঙ্গিক একটা ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। কয়েকবছর আগে যশোর রোডের শতবর্ষী (তারও অধিক বয়স হবার কথা) অনেক গাছ কাটা হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের বহু মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। মানুষের দাবি মেনে নিয়ে সরকার শেষপর্যন্ত গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল। ছফা এই সফল প্রতিবাদী মানুষদের নিয়ে গর্ববোধ করতে পারেন।

লেখক পরিচিতিতে টিয়াপাখি কাঁধে আহমদ ছফার ছবি দেওয়া আছে। সেই টিয়াপাখিটার কথাও বিহঙ্গপুরাণে লিখেছেন। যথারীতি মনে দাগা দেওয়া গল্প। যারা পশুপাখি পোষেন, তারা জানেন একটা অবলা প্রাণী কেমন মায়ার বন্ধন তৈরি করে। আর শেষমেশ বুকটা খালি করে দিয়ে চিরতরে হারায়ে যায়।

"পুষ্প বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ" আহমদ ছফার আত্মজীবনীমূলক রচনা, স্বভাবতই এ গ্রন্থের প্রতিটি পাতা তাঁর উদ্ভিদ ও প্রাণী সংক্রান্ত তীব্র সংবেদনশীল অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। পাঠক হিসেবে লেখকের অনুভূতির তীব্রতার সাথে তাল মেলানো সবসময় আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই কখনও কখনও মনঃসংযোগ হারিয়েছি।

৩.৭৫/৫ তারকা

কাঁটাবন বস্তির শিশুদের জন্য "শিল্পী সুলতান শিক্ষালয়" নামে স্কুল করেছিলেন ছফা। সেই স্কুল কি এখন আছে? জানার আগ্রহ হয়।
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews13 followers
January 12, 2023
ফুল পাখি গাছ নিয়ে এতোসুন্দর বই থাকতে পারে তা "পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পূরাণ" পড়ে টের পেলাম। বিভূতিভূষণের "অরন্যক" পড়িনি আমি। তবে অরন্যক এরচে ভালো লাগবে কিনা জানিনা। আমার প্রিয় বাংলা সাহিত্যিক আহমেদ ছফা। ছফা সাহেবের লেখা বরাবরই আমাকে অবাক করে। পড়তে পড়তে ডুবে যাই। বইটা শেষে সোদা মাটির গন্ধ যেনো নাকে লেগে আছে টের পাওয়া যায়, কিংবা গাছেদের পাতার মড়মড় শব্দ অথবা পাখিদের কিচিরমিচির।
রবিবৃক্ষ নামক আমগাছ থেকে বেগুনগাছ, গাছেদের মনের গল্প, যেনো ছফা সাহেবের সাথে আমিও তাদের কথাগুলো বুঝতে পারছি।

উনার আপেল গাছের অভিমানের বর্ণনায় মনে পড়লো আমার একটা বেলিগাছ ছিলো। বেলিগাছটাকে মা শীতে নিচে নিয়ে যেতেন। বর্ষাকালে ওটাকে উপরে আনতেন। ওপরে আনার পর দেখি বেলিটা নুইয়ে যা'তা অবস্থা। আমার পড়ার টেবিলের পাশে ওকে বসিয়ে রাখতাম। বই পড়তাম গাছটার পাতাগুলো দুলে দুলে উঠতো। কেউ মেসেজ দিলে সেগুলোও তাকে পড়ে শুনাতাম। মনে হতো সেও আমার সাথে হাসছে। ওপরে আনার কয়দিনের মধ্যেই ওর পাতাগুলো তেল চুকচুকে হয়ে যেতো। কলি আসতো, ফুল দিতো। আমি আদর করে দিতাম। যখন বৃষ্টিতে ভিজত আমিও হাত ভিজাতাম ওর সাথে। মনে হতো গাছটা সবচে সুখি।
ছফা সাহেবের আপেল গাছটাও এমন আদুরে ছিলো। আমার বেলি গাছটার কথা মনে করিয়ে দিলো।

তারপর এলো পাখিকুল। নানা ধরণের পাখির বর্ণনা। কাকের মতো তুচ্ছ পাখিকেও কি সুন্দর রুপসী বানিয়ে দিলেন উনি। যেনো কতো দামি পাখি কাক।
ছফার একটা শালিক পাখিপুত্র ছিলো। আমার ছিলো দুটো ঘুঘু পাখিপুত্র আর কন্যা। দুটোকে আমার ভাই এনেছিলো একটা ভাঙা বাসা থেকে। ঝড়ে বাসাটি পড়ে যায়। একটার পায়ে চোট লাগে। সে উড়তে পারতোনা খুব উচুতে। আর একটা উড়তে শিখেছিলো। ছফার ধারণা ঠিক ছিলো, পাখি একটা সময় পোষ মানলেও নীল আকাশের মায়া ত্যাগ করতে পারেনা। আমার দুটো পাখি কোনোদিন নীল আকাশ দেখেনি। তাও একটু খাচা খোলা পেয়েই একজন উড়ে যায়। আরেকজনকে উড়িয়ে দিই আমি।
ছফা তার পাখিপুত্রের উদ্দেশ্যে বলেছেন,
"আমার পাখিপুত্রটি আমাকে যা শিখিয়েছে,কোনো মহৎ গ্রন্থ, কোনো তত্বকথা, কোনো গুরুবানী আমাকে সে শিক্ষা দিতে পারেনি। একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে"

পরিশেষে একটা নিজস্ব সুন্দর কোট শেয়ার করি,
" অল্প কিছুদিন না যেতেই তুলসিগাছের ডালপালায় সাদামতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুলে ছেয়ে গেলো। নয়নতারায় লাল বরণ ফুল এলো। আমি যখন তুলসী ও নয়নতারার ফুলগুলো দেখি সেগুলোকে জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামলব্ধ বিজয় মুকুটের মতো মনেহয়। তুলসী এবং নয়নতারার ফুল দেখে আমার জীবনের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস নতুন করে জন্মায়।"

🍁বইটা অনেক গভীর দর্শন থেকে লেখা। গুডরিডসে অনেকের এটা নাকি ছফার দূর্বল লেখা লেগেছে। উপলব্ধি করে পড়লে এটা যথেষ্ট শক্ত লেখনি। আর মানুষকুলের সবাই গাছ, ফুল, পাখিদের বুঝতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। পাখি,গাছকুলের সবাই ও বোঝেনা। যারা বোঝে এদের সুপিরিয়রও বলছিনা ভাই, আমাকে কেউ আবার এট্যাক দিয়েন না।
তবে বইটা অনবদ্য এটুকু বলতে পারি। ৭০ পেজের এইটুকুন বইটা বারবার পড়তে পারবো আমি। আহমেদ ছফার বইয়ের রিভিউ আমি ভালোভাবে লিখতে পারিনা। তালগোল পাকিয়ে ফেলি। সেজন্য দুঃখিত🥹
হ্যাপি রিডিং❤️🙆‍♀️
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
October 19, 2017
শুরুটা বেশ ঝরঝরে ছিল। পরবর্তীতে কিছুটা একঘেয়ে হয়ে গেছে। একটু রুক্ষ ভাবে বলতে গেলে ত্যানা পেঁচিয়ে বড় করার মত ব্যাপার ঘটেছে।

সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য উপন্যাসে উল্লেখিত শিল্পী সুলতান পাঠশালাটি তিনি সত্যি সত্যি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন!

আমি বোধহয় উচ্চ শ্রেণীর পাঠক নই। নতুবা আহমদ ছফার মতো ইন্টালেকচুয়াল লেখকের শ্রেষ্ঠ একটা উপন্যাসকে (এই উপন্যাস জাপানী ভাষায় অনুদিত হয়েছে!) এভাবে "বোরিং" কিংবা "একঘেয়ে" ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয়ার দুঃ���াহস করতাম না।
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
April 29, 2019
এই রচনায় ব্যক্তি আহমদ ছফার জীবনের কিছু টুকরো অংশ পাওয়া যায় । পাওয়া যায় তাঁর চিলেকোঠার ঘর, টবের গাছের পরিচর্যা, তাদের সাথে একা কথা বলা, ভাত ছিটিয়ে পাখিদের খেতে দেখা, হলের মাঠের এক কোনায় সবজি চা���, নদীর ওপার থেকে প্রাণিজ সার সংগ্রহ, ইতস্তত দু'একজন পরিচিতের সাথে বাক্য বিনিময় আর শহরের পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার পদছাপ । এই রচনাকে উপন্যাস না বলে লেখকের ব্যক্তি মনের স্মৃতিচারণ বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
Profile Image for Wasim Mahmud.
357 reviews29 followers
July 10, 2023
অনেকদিন পর আহমদ ছফা রচিত কিছু পড়া হলো। ব‌ইটি পাঠের সময় এবং পাঠ শেষে এক ধরণের মুগ্ধতার রেশ রয়ে গেছে। প্রাণ এবং প্রকৃতির প্রতি এরকম নিদারুন ভালোবাসা ক'জনের মধ্যেই বা থাকে?

গ্রন্থটি মূলত ছফার উত্তম পুরুষে বলা কিছুটা দিনলিপির মতোই। যদিও তারিখ, অধ্যায়, এবং নিজ জীবনের কাহিনি ছফা এখানে অপেক্ষাকৃত কম বলেছেন।

উত্তম পুরুষে লিখা প্রায় যেকোন ধরণের ন্যারেটিভ আমার বেশি ভালো লাগে। তার উপর লেখক যখন আহমদ ছফা স্বয়ং, তখন সেই ভালো লাগাটা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়।

ক্ষ্যাপাটে আহমদ ছফার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক হলে থাকাকালীন আনাড়ী হাত কিন্তু ভালোবাসায় পূর্ণ মন নিয়ে যে সকল চাষবাস সম্পর্কিত কর্মকান্ড করে গেছেন তা তার নিজ ভাষ্যমতেই পাগলামি। ফুল, গাছ এবং পাখির ভাষা আয়ত্ব করার অদ্ভুত চেষ্টা পর্যন্ত করেছিলেন লেখক।

তবে এতো সহজ ভাষায় কিছু জায়গায় দারুন হিউমার সমৃদ্ধ বর্ণনা পাঠকের মন জয় করে নিতে পারে। ছফার তীব্র দৃষ্টির সূক্ষ্মতা রিডাররা পাবেন কারণ এর চেয়েও বেশি পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ বিষয়ক হৃদয়ঘটিত সুকোমলতা কাজ করেছে অকৃতদার এ মানুষের মাঝে।

আহমদ ছফার বাল্যকালের এবং ইশকুলে পাঠকালীন অতীত‌ও সুন্দর করে উঁকি দিয়ে গেছে বেশ প্রাসঙ্গিকভাবেই। একটি শালিককে পুত্র হিসেবে দেখার ক্ষমতা এবং তৎপরবর্তি মমতামাখা বিভিন্ন ক্ষ্যাপাটে কাজকারবার আহমদ ছফাকেই মানায়।

ব‌ই রিভিউ

নাম : পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ
লেখক : আহমদ ছফা
প্রথম প্রকাশ : ব‌ইমেলা, ১৯৯৬
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
প্রকাশনায় : সন্দেশ ( লুৎফর রহমান চৌধুরী )
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Profile Image for Salman Sakib Jishan.
272 reviews158 followers
April 26, 2021
পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ

সব কথার আগে একটা কথা বলতে চাই আমি, আহমদ ছফা এত সুন্দর করে সহজেই বৃক্ষরাজি আর পক্ষিকূলের প্রতি ভালোবাসা এই এক ছোট্ট বই দিয়েই আমার ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেবেন আমি ভাবিনি। এই বইটা যখন পড়তে শুরু করি, আমি মনের অজান্তেই কখন চারাগাছ খোঁজা শুরু করে দিয়েছি আমি নিজেও খেয়াল করিনি। বইটিতে সবুজের গন্ধ, সোঁদা মাটির গন্ধ প্রবল।

"...আমি যখন তুলসী এবং নয়নতারার ফোটা ফুলগুলো দেখি সেগুলোকে জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামলব্ধ বিজয়মুকুটের মত মনে হয়৷ তুলসী এবং নয়নতারা ফুল দেখে আমার জীবনের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস নতুন করে জন্মায়।''

ঠিক এখান থেকে বইটাকে আমি ভালোবেসে ফেলি। লেখক এত আনন্দ নিয়ে পুষ্প, বৃক্ষ আর পক্ষীকূল নিয়ে কথা বলেছেন, এরকমটা খুব কমই পড়েছি আমি। এরকম স্নিগ্ধ আনন্দ বোধকরি উনি নিজের ব্যক্তিসত্তায়ও লালন করতেন।

বৃক্ষের সাথে মানুষের সম্পর্ক সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই গড়ে উঠেছে। একটা সাধারণ সবজি ক্ষেতের বর্ণণাও শিল্পের মতো লেগেছে আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সামনের অংশে তিনি বেগুন, ফুলকপি, টমেটোর চাষ করলেন যখন, সেই বর্ণনা আমার কি যে ভালো লেগেছে!
এখানে তিনি তার বাড়ির পাশে এক সুবিশাল আম গাছের কথা বলেছেন। এত প্রকান্ড এই আমগাছটা আমি কল্পণা করেছি। তিনি গাছটার নাম রেখেছিলেন, 'রবিবৃক্ষ'। এই গাছটা একটা সময় কেটে ফেলা হলো, লেখকের মতো আমিও শুন্যতা অনুভব করলাম, ভয়াবহ শূন্যতা!
ছফা সাহেব যখন পক্ষীকূলের আলাপে গেলেন, আমি আবিষ্কার করলাম আমি কাক নামের পাখিটাকেও ভালোবাসছি, কি আশ্চর্য!
এই বইটা একটা 'সবুজ বই'। সবুজ এইজন্য বলছি কারণ, এরকম কোন বই পড়ে আমি প্রকৃতিকে ভালোবাসিনি কখনও। আমার বেড়ে ওঠা প্রকৃতির সাথেই, যেখানেই যাই এই প্রকৃতিকে সাথে নিয়েই যেনো যাই, সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন আমাকে আহমদ ছফা।

আমার প্রিয় একজন লেখক হবার লিস্টে আরেক ধাপীগিয়ে গেলেন ছফা সাহেব।
Profile Image for Sehemi Akhi.
65 reviews2 followers
September 19, 2022
কিছু কিছু বইয়ের রিভিউ দেওয়া যায়না আসলে। এই বইটা ঠিক তেমনই৷
ছফা স্যারের লেখা পড়ার পর লেখাগুলো আপনাকে অনেক ভাবাবে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাবাবে। এই যে গাছ, ফুল, পাখি নিয়ে কেউ এত সুন্দর লেখা লিখতে পারে তা হয়তো এই বইটা না পড়লে বোঝা যেতো না। নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে তার এই গল্প লেখা৷ পড়তে গেলে ডুবে যেতে বাধ্য হবেন।
আমি ছফা স্যারের এই নিয়ে দুইটা বই পড়লাম। এখন ভাবছি তার সব লেখাগুলো একদিন নিশ্চয় পড়ে ফেলতে পারবো।
Profile Image for Rony Rahman.
71 reviews6 followers
December 13, 2024
ছফার আনাড়ি হাতে করা সবুজ ক্ষেতের মত সতেজ তার লেখনী। যার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, পঁচা সব্জি চড়া দামে কিনে বাড়ি ফেরা পাঠক। খুবই সুন্দর। খুবই সুন্দর।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
July 4, 2023
ছফা সাহেবের তিন টা বই আমি পড়েছি। গাভী বৃত্তান্ত, যদ্যপি আমার গুরু,ওঙ্কার।  তিন বই দুই বার করে পড়েছি,পড়তে বাধ্য হয়েছি লেখকের গুণে। তিন বইয়ে তিন রকম ভাবে পেয়েছি ছফাকে,কোন বইয়ে নিজের গুরুপ্রতি তার অবিচল ভক্তি প্রকাশ পেয়েছে। কোনটাতে দেশ সেরা বিদ্যাপীঠের জঘন্য রাজনৈতিক অবস্থার কথা বলেছেন,কোনটাতে দেশ প্রেমিক ছফার দেখা মিলে। তবে তিন বইতেই,এক জায়গায় ছফার মিল ছিল সেটা হচ্ছে, ছফা ন্যায়ের পক্ষের লোক,ছফা সত্য বলতে কুন্ঠা বোধ করেন না,সর্বোপরি একজন সৎ সাহিত্যিক হিসেবে ছফার পরিচয় আমি পেয়েছি আগের তিনটা বই পড়ে।

পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ পড়ে পেয়েছি একজন নতুন ছফাকে। যার মধ্যে শিশুর সরল আবেগ আছে। না হলে পুরাতন বাসা ত্যাগ করতে গিয়ে কী বলতে পারে যে আমার হাতে চারতলার ঘরের চাবিটি তুলে দিল। আমার ডুকরে কেঁদে উঠতে ইচ্ছে হল। এই ঘরটাতে আমি তিন বছর ধরে থাকছি। আমার মনে হল,সকলে মিলে আমাকে বধ্যভূমিতে পাঠাচ্ছে। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম,এই বইয়ের পৃষ্ঠা গুলো যত শেষ হচ্ছিলো তত। এমন ও হতে পারে মানুষ? একটা থেঁতলানো বেগুনের চারাকে বাঁচানো তাগিদ থাকতে পারে কোন মানুষের? বা বাঁচালে ও অতটুকুন ই, তারপর বিশাল বেগুনের বাগান করার ইচ্ছে জাগাটা, কতটুকু উদার এবং সরল মনের মানুষ হলে সম্ভব সেটা ছফাকে না পড়লে আমি বুঝতাম না। ছফা প্রেমিক ছিলেন। তিনি ভালোবেসেছেন প্রকৃতি কে। তিনি অনুভব করতে চেয়েছিলেন বৃক্ষ তরুর জীবন, যেমন টা তার শিক্ষক সারদা বাবু করেছিলেন। ছফা সেটা পেরেছিলেন,তাই তো লিখেছেন, এই চারাগাছগুলো কোমল শরীরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তানের মতো একে একে সবুজ প্রাণ হিল্লোলিত হয়�� উঠছে,কোন গভীর পাতালে রয়েছে তার উৎস? আমি অনুভব করি বুকের মধ্যে এই সবুজ প্রাণের নুরব ঝংকার। আমার সমগ্র  চেতনা চারাগাছের রঙে সবুজ হয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে।

পাখিদের যে এত আবেগে কেউ নিজের পুত্র বলে এবং তার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করা খাবার নিয়ে,এটা সত্যিই অনন্য। সৃষ্টি কর্তা যাদের হাঁটার দু'টো পা,কাজের জন্য দু'টো হাত, দেখার জন্য দু'টো চোখ দিয়েছেন,তারা সবাই মানুষ। কিন্তু প্রকৃত মানুষ ক ���ন হতে পারে? পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণে আমি একজন সত্যিকারের মানুষ দেখেছি। সেটা আহমেদ ছফা। যিনি তরুর কাছে শিখেন,বৃক্ষের কাছে শিখেন,বিহঙ্গের কাছে শিখেন। এই শেখায় শেষ নয়,তাদের জন্য তিনি পুষে রাখেন এক পৃথিবী ভালোবাসা। এটা সবাই পারে না। যিনি প্রকৃত মানুষ, তিনিই পারেন।

ছফার যে বইটা আমি প্রথম পড়েছিলাম,সেটা গাভী বৃত্তান্ত। সেটা পড়েই আমার পছন্দের হয়ে উঠেছিলেন "আহমদ ছফা"। ঠিক করেছিলাম উনার সমস্ত লেখা পড়ব,তবে ধীর লয়ে কারণ লেখক কেমন জানি একটু কঠিন করে লিখতে পছন্দ করেন আর আর এই কঠিন কে ভালোবাসতে আমার একটু সময়ের প্রয়োজন ছিল। এরপর হুট হাট তিন বই পড়ে ফেললাম, আবার রিপিট করে পুনরায় পড়লাম। চতুর্থ বইয়ে এসে ছফা আমাকে একদম চমকে দিলেন,এত সুন্দর লেখা,সহজ সরল অথচ সমুদ্রের মত গভীর। অন্য বইগুলো দুইবার পড়েছি,এটা বার বার পড়ব। এত সুন্দর, আহা।
Profile Image for Zihad Saem.
123 reviews7 followers
November 3, 2024
'পুষ্প,বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' এতে আশ্চর্য এক ছফাকে আবিষ্কার করলাম। এ ছফার আত্মকথন। 'পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' -এতে এক সরলতা আছে। আছে দ্বিধাহীন কতকথা। সেগুলো ছফার জীবনের অতিশয় ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কথা। যা পাঠকের চোখে হয়ে উঠেছে রবিবৃক্ষ বা আষাঢ়ে আমগাছের মতো বিশাল। যাকে ক্ষ্যান্তবুড়ির মতো প্রণাম করা যায়।
এভাবেও যে আত্মকথা বিবৃত হতে পারে, তা ভাবিনি। কোনো দ্বিধা নেই, দ্বন্দ্ব নেই, আছে শুধু অকপটে বলে যাওয়া। সেই বলে যাওয়ায় বাজিকরের জাদুর মতো বিস্ময়তা আছে। আছে নিজেকে শাণিত করার মতো অজস্র উপাদান।
আমার মনে হচ্ছিলো আমি ছফার সামনে বসে তার মুখ থেকে তার কথাগুলো ঘোরগ্রস্তের মতো হয়ে শুনছিলাম।
পুষ্প, বৃক্ষ,বৃষ্টি, বিহঙ্গের প্রতি আমার অনুভব, তা ছফার ' পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' পড়ে আরো শাণিত হয়ে উঠলো।
আমি আজন্ম গ্রামের সন্ততি। এই ছোট্ট জীবনের বেশিরভাগটাই আমার স্নিগ্ধ সবুজ, রূপোকথা’র মতো গ্রামটিতে কাটিয়েছি। যে গ্রামে রূপকথার মতোই একপাশে ছোট্ট নদী আর আরেক পাশে বিশাল মাঠ। যে মাঠে কার্তিকে কচি নধর ধানের দুধ ঘন হতে থাকে। অঘ্রাণে মাঠে জ্বলে উঠে ধান আর শষ্যের হলুদ। আষাঢ়, শ্রাবণে চারিধারে তাথৈ জলের নৃত্য দেখে আমি বড় হয়েছি। বক, সারস, ডাহুক, পানকৌড়ি কখন কোথায় থাকবে, কখন হলুদ পাখি আর জুটি শালিকের ঝগড়া বাধবে, কোন গুহায় হাত দিলে মাছরাঙা খুঁজে পাবো তা আমার অস্তিত্বর কোষে কোষে সাজানো আছে ।
হিজলের স্নিগ্ধ গোলাপি ফুল কখন ঝরে পড়ে, নদীর জলে ভেসে বেড়াবে আর কখন শিম,বেগুন, মরচে গাছে ফুল থেকে গুটি হবে। সজলে ডাটা কখন বুড়ো হবে, ঝালি কুমড়োর গায়ে কখন শুভ্র গুণ পড়ে মোরব্বার জন্যে পরিণত হবে, মাসকলাইের বীজ কখন ছড়ানো হবে এসব তো আমি আমার অনুভবে সাজিয়ে রেখেছি সেই কবেই।
সেজন্যেই 'পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' নামটা দেখে বইটার প্রতি আমার ভীষণ আগ্রহ জেগেছিলো। পড়তে গিয়ে দেখলাম পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গের কথা এখানে আছে, তবে তা আমার অনুভব ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো না। তবে তা বাদেও যা আছে সেগুলো আমাকে ঘোরগ্রস্ত করে রেখেছিলো।
Profile Image for Shishir.
186 reviews39 followers
December 10, 2024
"পাখিটি খাঁচার ভেতর হাঁটা-চলা করত, একদণ্ডের জন্যও তার বিরাম নেই। আমি তাকে ডাকতাম শালিক পাখি, মানিক পাখি, কালো পাখি, ভাল পাখি, হলুদ পাখি, মলুদ পাখি, যত ভাল ভাল নাম আসে সব নামেই ডাকতাম। পাখিটি ছুটোছুটি করার ফাঁকে একবার আমার দিকে তাকাত। আমার ভেতরেও যে একটি পাখি আছে শালিকটি কি বুঝত? আলাওল মনে করতেন, মনুষ্যশব্দ শ্রবণ করলে পাখির মনেও মনুষ্যজ্ঞান সঞ্চারিত হয়। পদ্মাবতী কাব্যে লিখেছেন, “হীরামন শুকজান তার প্রিয় পাখি, শুনিয়া মনুষ্যশব্দ হৃদে হল আঁখি।” আমার পাখিটির হৃদয়েও কি চোখ জন্মাচ্ছে"?


- একটা মাস্টারপিস !!

ফুল, পাখি ও গাছ নিয়ে এমন কিছু এমন ভাবে লেখা, যে বলে বোঝানো যায় না। এ লেখা পড়ে দেখতে হবেই। অসাধারণ!!
Profile Image for নাহিদ  ধ্রুব .
143 reviews27 followers
January 5, 2024
কৃত্তিম কোন প্রাচুর্যের জটিলতা নয় বরং ছফা’র লেখার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে অপার্থিব সরলতা। তাই, হয়তো ছফা’র অমৃত সমুদ্রে অবগাহনে কখনও কোন দ্বিধা কাজ করে না। শুধু ক্ষণে ক্ষণে বিহবল হয়ে ওঠে মন। মনে হয়, যে জীবন আহমদ ছফা’র তার সাথে কেন আমাদের হয় নাকো দেখা!
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews121 followers
February 18, 2021
শুরুটা পড়ে খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে খুব চমৎকার একটা বই পড়তে যাচ্ছি। কিছুদূর আগানোর পর মনে হল সেই আগ্রহ টা আর পাচ্ছিনা! সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গল্প পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু এরপর থেকে আর নিতে পারছিলাম না। প্রচন্ড একঘেয়ে লাগছিলো। একই জিনিস, একই কথা বারবার ঘুরিয়ে পেচিয়ে একটু ভিন্নভাবে বলা!

আমি মনে হয় পাঠক হিসেবে ভালো না এজন্য তার এরকম বিখ্যাত একটা বই কে শেষ পর্যন্ত "আমার ভালো লাগে নাই" এর তালিকাতে ফেলে দেওয়ার মত দুঃসাহস দেখিয়ে ফেললাম!
Profile Image for Samiha Anu.
36 reviews18 followers
December 10, 2024
এইসব বই জীবনে একবার পড়তে হয়। এইসব বই পড়তে হয়!
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
July 20, 2022
ছফা সাহেবেরর এই লেখাটুকু যখন পড়ি, তখন আমাকে স্টেশন বানিয়ে একটা স্মৃতির রেলগাড়ি কু ঝিকঝিক করে প্রবেশ করে। সেই গাড়িতে করে চলে আসে আমার ফেলে আসা শৈশবের শহরতলী ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহ তখন শহরতলীই ছিলো বটে! দাদার হাফবিল্ডিং বাড়ির সামনের ছোটো ফুপ্পির লাগানো বৃক্ষেরা আর উঠানে, টিনের চালে, বৃক্ষশাখে চরে বেড়ানো প্রচুর বিহঙ্গ। এইভাবে ছফা সাহেব আমার ভিতরে প্রবেশ করে যান। আমি তার `পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ` পাঠ শেষ না করে বের হতে পারি না। এই লেখাতে পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গরা ছফার পার্শ্বচরিত্র, বরং বলা ভালো ছফা ও অন্যান্যরাই এদের পার্শ্বচরিত্র। কেননা সমস্ত বয়ান, ঘটনার বর্ণনা ও স্মৃতিচারণ ঘটেছে পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গদের ঘিরেই।


লেখকের জীবনের কিছু টুকরো স্মৃতি দিয়ে সাজানো এই লেখার ভুবন। সেই ভুবনে বৃক্ষলতা, পুষ্প রানী আর বিহঙ্গ নিয়ে গড়ে উঠেছে লেখকের দার্শনিক প্রেমময় সংসার। পুরোনো বাড়ি ছেড়ে লেখক নতুন বাড়িতে উঠেছেন। পুরাতন বাড়িতে লেখক ছেড়ে এসেছিলেন তার অতি যত্নের আঙ্গুরবালা, আপেল কুমারকে। বেলি ও সন্ধ্যামালতীর ���ন্য তার পরান পোড়ে। নতুন বাড়ির চেহারা খেলনা খেলনা এবং রুমগুলো জাহাজের কেবিনের মত। লেখকের সঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলেন ইদ্রিস, সুশীল ও আনোয়ার।


লেখাতে প্রকৃতি ও মানব মনের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ প্রকাশ পেয়েছে। উপন্যাসের বিবরণকে পাশ কাটিয়ে গভীরের যে বিষয় ফুটে উঠেছে, তা হল সমাজে শ্রেণী পার্থক্যের আদিম রূপ। প্রতিটি মৌলিক চাহিদার জন্য লড়াই যেন রক্তে মিশে যাওয়া বিষের মতো!
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
January 12, 2021
"অল্প কিছুদিন না যেতেই তুলসীগাছের ডালপালা শাদামতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুলে ছেয়ে গেল৷ নয়নতারায় লাল বরণ ফুল এল৷ আমি যখন তুলসী এবং নয়নতারার ফোটা ফুলগুলো দেখি সেগুলোকে জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামলব্ধ বিজয়মুকুটের মত মনে হয়৷ তুলসী এবং নয়নতারা ফুল দেখে আমার জীবনের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস নতুন করে জন্মায়।''


চিলেকোঠার নতুন বাসার ছাদে ইটের চাপায় মৃতপ্রায় নয়নতারা এবং তুলসী গাছকে ছফার পালকপুত্র সুশীল উদ্ধার করার পর যত্নের পরশে তাদের মধ্যে নবজীবনসঞ্চার হওয়ায় আহমদ ছফা উল্লেখিতভাবে নিজের মনের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেছেন৷ এই স্নিগ্ধ আনন্দের স্রোত সংক্রামক৷ লেখকের স্বচ্ছন্দ বর্ণনায় পাঠকের মনেও স্নিগ্ধ সবুজ আনন্দের নীরব ঝংকারের স্রোত আন্দোলিত হয়ে সমগ্র চেতনায় সবুজ রঙের আভা ছড়িয়ে দেয়৷

কিছুদিন পর নয়নতারা গাছের ফাঁকে ফাঁকে চারটা গোলাপের টব বসানো হলো৷ সেই গোলাপ যখন বর্ণে গন্ধে পরিপূর্ণ হলো, তখন সেখান থেকে ঈশ্বরীয় বিভূতি প্রকাশ পেতে লাগলো৷ লেখকের মনে সংশয় দেখা দিলো যে, অর্ধেক প্রাণের ভেতর থেকে জন্মানো নয়নতারা আর তুলসী গাছের সাথে নার্সারি থেকে কিনে আনা কুলীন পুষ্পের কোনো বিবাদ হয় নাকি! কিন্তু দেখা গেলো তারা সৎ প্রতিবেশীর মতই পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ এবং সেখানে বিবাদের আভাস নেই৷ তাহলে কি লেখক নিজের মনের কথাই তাদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন? লেখকের ভাষায়,

"এখন বুজতে পারছি এটা নয়নতারাদের মনের কথা ছিল না৷ আমার মনের কথাটিই তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি৷ মানুষ সুবিধের জীব নয়, তারা নিজেদের মনের ময়লা কাদা এগুলো ফুলের শরীরে মাখিয়ে দিয়ে ভীষন আনন্দ পায়।"


এই থেকে লেখকের সহজেই উপলব্ধি হয় যে, পুষ্প-সমাজে মানুষের মত সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই৷ সেখানে ভ্রাতৃত্ববোধের মেলবন্ধনে প্রণোচ্ছল জীবনের আভাস পাওয়া যায়৷

অতপর, বৃক্ষ-সম্বন্ধীয় উপলব্ধি নিয়ে আহমদ ছফার ভাষায়ঃ
"বৃক্ষের ভেতর যে সরল জীবনপ্রবাহ স্পন্দিত হয়, তার সঙ্গে মানুষের হৃদস্পন্দনের অবশ্যই একটা মিল আছে৷ প্রকৃতিগতভাবে উভয়ই একই বস্তু৷ কিন্তু তারতম্য হচ্ছে শক্তি এবং গতিশীলতায়৷ একজন পুরুষ একজন নারীর সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক নির্মাণ করে, সেভাবে একজন মানুষ একটি বৃক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে৷ কিন্তু কোন মানুষ? যিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে পারেন, বৃক্ষেরও একটি জীবন্ত সত্তা রয়েছে, অন্য যে-কোন প্রাণীর মত৷"


বৃক্ষের সাথে মানবমনের সম্পর্কটা বিশুদ্ধ এবং আদিম৷ যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনের যুগেও মানুষ বিশ্বাসশক্তির বলে বৃক্ষের সাথে হৃদস্পন্দনের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে৷ ছফা বিশ্বাস করতেন আল্লাহতালা তাঁর গোপন শক্তি বৃক্ষজীবনের মধ্যদিয়ে ক্রিয়াশীল করেছেন৷ তাই একদিন না একদিন মানুষকে বৃক্ষের কাছে শরণাগত হতে হয়৷

বৃক্ষের প্রতি আহমদ ছফার নিগূঢ় ভালবাসার বীজ ছোটকাল থেকেই ছিল৷ বাড়ির পাশে বিশাল আম গাছের সাথে লেখকের একটা নিবিড় স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল৷ আহমদ ছফা সেই স্মৃতিচারণে বলেছেনঃ

"দাদু-নাতির সম্পর্কের মধ্য যে প্রচ্ছন্ন প্রশয় এবং স্নেহের স্থান আছে আমার সঙ্গে বৃক্ষের সে রকম একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে৷ আমি ভাবতে থাকতাম বিরাট সংসারসহ এই বিশাল বৃক্ষটি একান্ত আমার, তার শাখায় যে আম দোলে সেগুলো আমার৷ যে সব পাখি আসে, যে সব পাখি বাসা করে বাস করে সব আমার।"


আহমদ ছফা সেই আম গাছটির নাম দিয়েছিলেন 'রবিবৃক্ষ'৷ একদিন মায়ের মামা বাড়ি থেকে ফেরার পথে আধ মেইল দূর থেকেই বাড়িটা ফাকা লাগছিল৷ কাছে এসে দেখলেন সেই রবিবৃক্ষ কেটে খন্ড খন্ড করে ফেলা হয়েছে— দিয়ে গেছে এক বিশাল শূন্যতাবোধ৷ লেখক বলেছেন,

"আমার বুকে সেই যে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত পৃথিবী ক্যাপসুল করে ঢুকিয়ে দিলেও সে ফাঁক ভরাট হবে না৷"


মানুষ হিসাবে এই শূন্যতাবোধ—হাহাকার আমাকেও স্পর্শ করে বিষণ্ণতার ভাবসম্প্রসারণ করে৷ কারণ, আমাদের বাড়ির রান্নাঘরের পাশে কলপাড়ে একটা বিশাল জাম গাছ ছিল — যার বিশালতা আমার অবিস্তীর্ণ নয়নে আকাশস্পর্শী অসীম মনে হত৷ সেই গাছটা কেটে ফেলার সময় মনে হচ্ছিল আমার অস্তিত্বের ব্যবচ্ছেদ রচনা করা হচ্ছে৷

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে সামনে চার কাঠা জমিতে আহমদ ছফা বেগুন, টমেটো, ফুলকপিসহ নানান রকমের সবজির চাষ করেছেন৷ বইয়ে এই অংশটির আখ্যান সবচেয়ে দীর্ঘ৷ চাষাবাদ শুরুর গোড়ার কথা এবং পরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা বিস্তারিত বলা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত উঠে এসেছে ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্টার মোস্তানের সাথে ' শিল্পী সুলতান শিক্ষালয় ' প্রতিষ্ঠা করার কথা৷ ক্ষেতের প্রথম সবজি দিয়ে স্কুলের বাচ্চাদের খাওয়ানোর নির্মল আনন্দটা লেখকের সাথে পাঠকের মনেও বিকশিত হয়৷

"একদিন দুপুরবেলা সুশীল নীলক্ষেতের চিড়িয়াঅলার কাছ থেকে একটা ঝুঁটি-শালিকের বাচ্চা কিনে নিয়ে এল৷"


বিহঙ্গরা কি শুধু আকাশের সৌন্দর্য-ই বৃষ্টি করে? নাহ, মানবজীবনের সঙ্গে বিহঙ্গদের মায়ায় সম্পর্কও গড়ে উঠে৷ আহমদ ছফা দীর্ঘদিন কাঁধে একটা টিয়া পাখি নিয়ে শহরময় ঘুরে বেড়িয়েছেন৷ বিহঙ্গকুলের সাথে উনার ছিলো প্রগাঢ় মায়ায় বন্ধন৷ রুটি হাতে ছাদে দাঁড়িয়ে 'কাকমণ্ডলী' শব্দটি উচ্চারণ করলেই আকাশে কাকদের সমুদ্রের জোয়ার নামত৷ পুষ্পবাগানে চড়াই পাখিদের কল্লোল চারপাশে মনোমুগ্ধকর সুরের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করত — যে সুর শব্দের ফাঁক গলে এসে পাঠকের কানে শ্রুতিমধুর হয়ে ঠেকবে৷

আহমদ ছফার ধারণা, পাখি পোষ মানলেও একটা সময় দাগা দিয়ে মরে যায় অথবা পালিয়ে যায়৷ লেখক দুইটা ধরণার পেছনে গল্প বইয়ে বিস্তারিত বলেছেন৷ তাছাড়া উনি পালিয়ে যাওয়া পাখিপুত্র শালিকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন৷ কেননা,

"আমার পাখিপুত্রটি আমাকে যা শিখিয়েছে কোন মহৎ গ্রন্থ, কোন তত্ত্বকথা, কোন গুরুবাণী আমাকে সে শিক্ষা দিতে পারেনি৷ একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে৷"


অবশেষে,
'' আমার প্রাণে পুষ্পের আঘ্রাণ লেগেছে, জীবনের একেবারে মধ্যবিন্দুতে বৃক্ষজীবনের চলা অচলার ছন্দদোলা গভীরভাবে বেজেছে, বিহঙ্গজীবনের গতিমান স্পন্দন বারংবার আমার চিন্তা-চেতনা অসীমের অভিমুখে ধাবমান করেছে৷"


পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ; এইসব প্রকৃতিরই অনন্য অসাধারণ রূপ—আশীর্বাদ৷ মনুষ্যজীবনের অন্তরঙ্গ অনূভুতির সাথে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের রেখাচিত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনবদ্য শিল্পকর্ম ' আরণ্যক ' উপন্যাসে প্রকটভাবে ধরা দেয়৷ সেই সম্পর্কের রেখাচিত্রের উপর আহমদ ছফা আরো মোটা এবং উজ্জ্বল দাগ টেনে দিয়েছেন তাঁর অসাধারণ সৃষ্টি ' পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' নির্মাণের মাধ্যমে৷ আহমদ ছফার ভবঘুরে—বাউল—নিঃসঙ্গ— জীবনযাপনকে অঢেল পূর্ণতার ঐশ্বর্য এবং প্রাণশক্তির প্রাচুর্যে ভরিয়ে তুলেছিল এই পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ৷
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
April 19, 2022
আমার মায়ের সারাজীবন শখ ছিলো নিজের একটি বাড়ির। ঢাকা শহরের কোন ফ্ল্যাট বাড়ি নয়, মফস্বলের এক চিলতে উঠোনওয়ালা বাড়িও নয়। তার শখ ছিলো এমন একটি বাড়ির যেখানে ঘরের চেয়ে ফাঁকা জায়গার অংশটাই বেশি থাকবে। ‘কি করবে সে ফাঁকা জায়গায়?’ হেসে যদি কখনো জিজ্ঞেস করেছি সেও পাল্টা হাসি দিয়ে বলেছে, ‘কেন মুলার চাষ করবো। এক সাইডে আবার লাউয়ের চারাও লাগাবো। লাল শাক চাষে কাজ অনেক, দেখিও ওটাও করতে পারি।’ মুলা, লাউ, লাল শাক চাষ করার জন্য সারাজীবন শহরে বাস করা এই গিন্নিটির মন কেন এত পোড়ে তা বোধহয় কখনো তার মত করে উপলব্ধি করিনি। তবে সে যে গাছের চারাই লাগাতো, সে গাছের চারাই ফুল-ফল দিতে বাধ্য ছিলো। তা সে বোম্বাই মরিচ গাছই হোক কিংবা হালের ড্রাগন ফল গাছই হোক। ‘এই যে গাছের পেছনে এত সময় দাও, এই যে ফল হয় তা খেয়ে কি পরিশ্রমের দাম ওঠে? এই পরিশ্রমের চেয়ে তো বাজার থেকে কিনে খাওয়াই ভালো,’ শহুরে শর্টকার্টে অভ্যস্ত আমার মুখ দিয়ে মাঝে মধ্যেই এ কথা বেরিয়ে যেত। ‘বাজারের জিনিস তো ওষুধ দেয়া। দেখবা লাউ সিদ্ধ হয় কিন্তু মুখে নিলেও পুরোটা গলে না। আর আমার গাছের লাউ খেয়েও দেখো। মুখে নিলে গলে তো যাবেই সাথে যে ঘ্রাণ তুমি পাবে ঐ ঘ্রাণের জন্য হলেও লাউয়ের গাছের পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা টাইম দেয়া যায়।’ আমার শহুরে মুখ সকালে নাক-মুখ গুঁজে লাউ ভাজি খেতো, রাতে স্মার্টফোনে স্ক্রল করতে করতে ইলিশ মাছের মাথার সাথে মায়ের গাছের লাউয়ের তরকারী খেতো। তা এই শহুরে ব্যস্ত মুখ কি আর সে স্বাদ পায় নাকি আমার নাক সে লাউয়ের ঘ্রাণ পায়? পায় না, আর মন ও বোঝে না সেই গিন্নিটির ঘাম ঝরানো একটা লাউয়ের দাম কত। কতটা ভালোবাসা মিশে আছে লাউয়ের শিশুচারাটার গোড়ায়।

ছফা সাহেব এই বইটিও গাছেদের প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ তুলে ধরে ধরে। তবে যে আমি মায়ের এত কাছে থেকেও গাছের প্রতি তার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি ছফা সাহেব সে ভালোবাসাই অল্প কিছু শব্দে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি যখন বলেছেন, ‘আমি যখন ক্ষেত থেকে বেরিয়ে আসি, তখন আমার হাতে পায়ে মাটি। ধবধবে প্যান্ট-শার্ট গলায় নেকটাই বাগানো সাহেবরা আমার দিকে তাকিয়ে চেকন করে হাসেন। আমি কিছুই গায়ে মাখিনে। কোন বিদ্রুপকে আমার বিদ্রুপ মনে হয় না। লোকে যা ইচ্ছে বলুক, আমি তো করবার মতো একটা কাজ পেয়ে গেছি। আমি জানি, এই যে প্রতিদিন নিবিড় শ্রম ব্যয় করে করে যাচ্ছি, মাস গেলে তার জন্য কেউ কানাকড়ি বেতন আমাকে দেবে না। তবু আমার দুঃখ নেই, নালিশ নেই। অস্তিত্বের ভার লাঘব করার মতো একটা কাজ আমি পেয়ে গেছি। মাস শেষে মাইনে পাইনে বলে আমি তো ফেলনা নই। আমি বুঝতে পারছি জগতে আমারও মূল্য আছে। আমি না থাকলে চারা শিশুগুলোকে দেখবে কে?’ তখন আমি একটা ধাক্কা খাই। আসলেই তো, এই গাছ, গাছের লাউ এগুলো তো স্রেফ খাওয়ার জন্যে নেয়। সারাজীবন সংসারের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, আমাদের দু ভাই বোনকে মানুষ করার কারিগর হিসেবে তিনি তো একটা পয়সাও পারশ্রমিক পান নি। যে মানুষ পারিশ্রমিক ছাড়া এই অমানুষিক পরিশ্রম করে তারা গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছেন, সে অল্প কিছু টাকা বাঁচাতে বা অর্গানিক ফল ফলাদির খাওয়ার উদ্দেশ্যে এই লাউ গাছ, ড্রাগন ফল গাছ লাগিয়েছেন; এমনটা ভাবার জন্য আমার ভীষণ ভীষণ লজ্জা হলো। মনে হচ্ছিলো মাটিতে মিশে যাই। মাকে তো জীবনে কিছু দিতে পারিনি, মাটিতে মিশে গিয়ে যদি সার হয়েও তার লাউ গাছকে বাড়ন্ত করতে পারি তাও এ লজ্জা খানিকটা কমবে। আমি কখনো বুঝতেই পারিনি, সংসারে সময় দিতে দিতে অক্লান্ত এই মানুষটি নিজের প্রতি কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছেন। অ্যাপ্রিসিয়েশন না পেতে পেতে ভেবে নিয়েছেন, সংসারে তার ভূমিকা তো মনে রাখার মতো কিছু না। এখানে যেন তার অস্তিত্ব নেই, তার অস্তিত্ব আছে ঐ টিয়ে কালারের লাউয়ের কচি ডগায়, ভোরের শিশির জমে থাকা লাল শাকের পাতায়।

এরকম আরো অনেক কিছু শিখিয়েছে আহমদ ছফার মাত্র ৭০ পৃষ্ঠার ‘পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ বইটি। আমি চাইলে এখানে বইয়ের কিছু দার্শনিক উক্তি তুলে ধরতে পারি। কিন্তু আমি সেটা করছি না। আমি চাই পাঠক নিজে থেকে বইটি পড়ুক। সুন্দর সুন্দর দার্শনিক উক্তি শোনার চাইতে পাঠক উপলব্ধি করুক, এই দর্শনের পেছনের নিগূঢ় অর্থটি তার জীবনেও ছড়িয়ে আছে। হয়তো গাছ নয়, অন্য কোন রুপে।

বি:দ্র: বইয়ের শেষ ভাগটায় পাখি নিয়েও লেখকের বিশদ গল্প আছে। ওখানেও দর্শন আছে। তবে পাখি নিয়ে আমার বাস্তবিক খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই। আর তাছাড়া গাছের ব্যাপারটা নিয়ে এতটাই মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে মন আর অন্য কোথাও ধাবিত হয়নি। তবে আমার দু বছরের শিশুপুত্রের জন্য হয়তো এই অভিজ্ঞতাও কোন একদিন হয়ে যাবে কারণ পাখির দোকানের পাশ দিয়ে গেলেই কিংবা পাখি দেখলেই বলে ওঠে, ‘বাবা দেখো, মুগির বাচ্চা, মুগির বাচ্চা।’
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
August 14, 2022
গাছপালা বা পক্ষীকূলের সাথে যে মানুষের মনের এত গভীর সম্পর্ক হওয়া সম্ভব তা বোধহয় এই বইটা না পড়লে বুঝতে পারতাম না। নিজ হাতে মাটিতে লাগানো চারা গাছটি যখন বড় হয়, ফুল ফলে ভরে ওঠে তখনের আনন্দ অকল্পনীয়। আবার সেই গাছেরই কেউ কোন ক্ষতি করতে আসলে আত্মিক ভাবে টের পাওয়াটা এক অভাবনীয় ব্যাপার। ছোট্ট একটা পাখি মায়া দিয়ে আদর করে পোষ মেনে যাওয়ার পরে সেই পাখির মৃত্যু যখন নিজের চোখে দেখতে হয় সেই কষ্ট ভয়ানক। সেই মায়া কাটানো কত কষ্ট।
পুরো বইটা পড়তে এত ভাল লাগলো। লেখক এত সহজ সুন্দর করে লিখেছেন।
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
March 18, 2021
প্রথম বার যখন এই বই পড়েছিলাম,তখন আমার আর আমার ভাইবোনদের রোপন করা টমেটো গাছে ফুল এসেছিলো। আমরা সবাই সকালে(সকালে আমরা সবাই আয়োজন করে পানি দিতে উঠতাম,অথচ সেখানে তেমন গাছও নেই) দেখে আনন্দে এতই লাফালাফি শুরু করলাম যে,বাবাও বিরক্ত 😅😅 এটা বই পড়ার অনুভূতি লিখতে এসে কেনো বললাম,বইটা হাতে নিলেই বুঝতে পারবে। ছফা সাহেব এক জায়গায় লিখেছেন তার সবজি বাগানে যখন ফুল আসতে শুরু করে,তখন লেখকের অসহ্য আনন্দ হয়েছে। আমাদেরও এমন অসহ্য আনন্দ হচ্ছিলো।ছোট্ট একটা বীজ থেকে ফুল ফুটানোর আনন্দ।
নিজের গাছপ্রীতি নিয়ে এতো সুন্দর করে একটা বই আহমদ ছফা-ই লিখতে পারেন। জানতে চাইতে পারো, এতো ভালো লাগলেও ৩.৫ তারা কেনো দিলাম। সহজ উত্তর, এই তারাগুলো প্রথম দিকের জন্য। শুরুটা এতো সুন্দর যে মনে হবে লেখক গাছের সাথে কথা বলতে ভাষা আবিষ্কার করেছেন এবং তা নিয়েই বই লিখেছেন, অন্যরা যারা গাছ ভালোবাসে তাদেরও তা শেখাতে।
আর ছফা কেমন ক্ষ্যপা ধরনের ছিলেন তারও কিছু নমুনা পাবেন বইয়ে। আর কাঠখোট্টা মানুষের ভীড়ে,ইট পাথরের জংগলে ওনার মতো দুএকজন পাগলামো দেখানোর মতোন থাকেন বলেই এই শহরগুলো এখনও সুন্দর।
তিনি আর মোস্তান নামের একজন মিলে বস্তির শিশুদের জন্য একটা স্কুল খুলেছিলেন। এর কথা আরেকদিন তুলবো। আজ গাছ প্রেমের পর্ব পর্যন্তই থাক।
Profile Image for Sultan Ahmed.
31 reviews28 followers
November 19, 2020
বইটি পড়ার পরেই ছাদে বাগান করা শুরু করলাম।
পড়া স্বার্থক মনে হচ্ছে।
Profile Image for শোয়েব হোসেন.
193 reviews13 followers
April 4, 2022
এই বই রেট করার মতো বা কিছু বলার মতো দুঃসাহস আমার নাই। শুনেছি এই জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, শুনে মনে হয়েছে হওয়াই উচিৎ, এই বই-ই হওয়া উচিৎ। শুধু জাপানি না, সব প্রধান ভাষায় হওয়া উচিৎ। বাংলা সাহিত্যে এই বই এক ও অদ্বিতীয়।
Displaying 1 - 30 of 166 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.