Jump to ratings and reviews
Rate this book

কাঁদো নদী কাঁদো

Rate this book
'Cry, River, Cry’ by Syed Waliullah highlights human suffering around a dying river and juxtaposes the two. The book has been deftly translated from the original Bangla 'Kando Nadi Kando' (first published in 1968) by Osman Jamil.

115 pages, Hardcover

First published May 1, 1968

45 people are currently reading
532 people want to read

About the author

Syed Waliullah

21 books166 followers
Syed Waliullah was born on 15 August 1922 at Sholashahar in Chittagong. After completing his Bachelor’s from Ananda Mohan College in Mymensingh, he enrolled at Calcutta University but did not complete his Master’s. Proficient in both Bangla and English, he worked for the Statesman during 1945-1947. After the Partition, he moved to Dhaka and joined Radio Pakistan as assistant news editor. In 1950 he was posted to Radio Pakistan, Karachi. From 1951 to 1960 he served as press attache at Pakistan missions in New Delhi, Sydney, Jakarta and London. It was in Sydney that Waliullah met Anne-Marie Thibaud, whom he later married and who translated Lal Shalu into French. In 1960 Waliullah moved to Paris where he served as first secretary at the Pakistan Embassy till 1967 when he joined UNESCO. Syed Waliullah did not live to see the liberation of his motherland, passing away in Paris on 10 October 1971.

Syed Waliullah (Bengali: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ) is often considered the pioneer of existential analysis of the characters psyche and root cause analysis of social-psychic conflicts in the literature of Bangladesh. The last two of his three novels, specially Kando Nadi Kando, show his mastery in revealing the inner depths of his characters. Contemporary writer Shahidul Jahir was influenced by him.


Novels:
লালসালু(Tree without roots), ১৯৪৮
চাঁদের অমাবস্যা (Dark moon), ১৯৬৪
কাঁদো নদী কাঁদো (Cry, o river), ১৯৬৮
The Ugly Asian, 1959

Play:
বহিপীর (১৯৬০)
তরঙ্গভঙ্গ (The Breakers), ১৯৬৫
সুড়ঙ্গ (১৯৬৪)
উজানে মৃত্যু

Short story collection:
নয়নচারা (১৯৫১)
দুই তীর ও অনান্য গল্প (Akte Tulse Gaser Khine), ১৯৬৫

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
90 (34%)
4 stars
100 (38%)
3 stars
57 (21%)
2 stars
12 (4%)
1 star
3 (1%)
Displaying 1 - 30 of 39 reviews
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
April 18, 2023
কাঁদো নদী কাঁদো উপন্যাসটিকে কাছ থেকে অবলোকন করলে ঝাপসা দেখাবে। দূর থেকে অবলোকন করলে খাপছাড়া দেখাবে। উপন্যাসটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে, এই কথা জানানোর পরে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, উপন্যাসের বিষয়বস্তু কী? কাহিনি কী? কোনো বই পড়ার পরে এমনিতে আমি ভালোলাগা মন্দলাগার কারণগুলো গুছিয়ে বলার চেষ্টা করি। কিন্তু এইক্ষেত্রে, ক্যানো জানি মনে হচ্ছে, ম্যাজিকের রহস্য জানিয়ে দিলে যেমন ম্যাজিকের মজা কমে যায়, কাঁদো নদী কাঁদোকে নিয়ে বেশি বিশ্লেষণ করলে পড়ার আনন্দও কমে যাবে।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "বড় সাহিত্যের একটা গুণ হচ্ছে অপূর্বতা— অরিজিন্যালিটি।" এই ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে এই উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সচেতনভাবে অরিজিন্যাল কিছু সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলেন। "স্ট্রিম অফ কনসাসনেস", রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছিলেন "সচেতন মনের অবিরাম বকবক", এই বিষয়টা ওয়ালীউল্লাহর অনেক আগে থেকেই সাহিত্যে বিদ্যমান। ম্যাজিক রিয়েলিজমের ব্যবহারও এই উপন্যাসের মৌলিকতা নয়। তাহলে? আমার মনে হয়েছে, এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় অরিজিন্যালিটি হলো এর বর্ণনাকৌশল। মানুষের শরীরের বর্ণনা হোক কিংবা প্রাকৃতিক দৃশ্যের, অলৌকিকতার বর্ণনা হোক কিংবা প্রখর বাস্তবের, কী যে এক রহস্যময় বাঙ্ময়তা ছড়িয়ে আছে উপন্যাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়— মুখর হয়েও স্তব্ধ। চঞ্চল হয়েও নিবাতনিষ্কম্প। বাংলা সাহিত্যে এমন জিনিস আমার চোখে পড়েনি কস্মিনকালে। বিশ্বসাহিত্যের কথা জানিনা। কতোটুকুই বা আর পড়েছি!

মানুষের মনকে, মানুষের মনের সিঁড়িভাঙা জটিল অঙ্ককে যেন হাতের মুঠোয় ধরে ফেলেছেন ওয়ালীউল্লাহ। কাহিনির একদম শুরু থেকেই, নিদ্রারসে সিঞ্চিত এক দ্বিপ্রহরে, স্টিমারের একজন যাত্রীর দেহভঙ্গিমা এবং স্বভাবচরিত্রের বর্ণনার মধ্যে দিয়ে পাঠকের চেতনাকে আবিষ্ট করতে শুরু করেন লেখক। সেই বিশেষ যাত্রীটি তাঁর ফেলে আসা জীবনের একটি বিশেষ ঘটনার কথা স্টিমারের সহযাত্রীদের কাছে বলবার উপক্রম করেন। মূল উপন্যাসের যিনি কথক, ঘটনাটি তিনি আগে থেকেই জানতেন। শুরু হয় গল্পের যাত্রা। এইভাবেই ধূপের অদৃশ্য সুগন্ধের মতো, কাহিনির প্লটহীন মন্থর আমেজ আমাকে ঘিরে ফ্যালে। ভাষার অমোঘ অথচ অনায়াস প্রয়োগে, বর্ণনার সূক্ষ্ম কারুকাজে, চিত্রকল্পের মগ্নতায়, আমি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করি, "অরিজিন্যালিটি" শব্দটির দ্বারা রবীন্দ্রনাথ ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।


I am moved by fancies that are curled
Around these images, and cling :
The notion of some infinitely gentle
Infinitely suffering thing.


(টি এস এলিয়ট)
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
219 reviews288 followers
December 17, 2024
এই ব‌ইটা সম্পর্কে কিছু বলার স্পর্ধা এখন হচ্ছে না। আরো কয়েকবার পড়লে হয়তো আরো অনেক অর্থ বের হয়ে আসবে এবং তখন বলতে পারব। এমন জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব‌ইয়ের পাঠ্যনুভূতি শুধু 'দারুণ! মাথা ঘোরানো! ভালো লেগেছে' বলে ক্ষান্ত দিতে ইচ্ছে করছে না, আবার আপাত ব্যাখ্যা করলেও হাওয়াই মিঠাই এর মতো মজা ফুঁস!

আগে আরো কিছুদিন ঘোরগ্ৰস্ত হয়ে কাটিয়ে কুমুরডাঙ্গা হতে বের হ‌ই....
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
October 26, 2020
স্টিমারের লোকজনের ভেতর মজলিসি আড্ডায় মুহাম্মদ মুস্তফার নাম না বলা হলেও আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের তবারক ভূইঞার জবানে বর্ণিত গল্পগুলো কুমারডাঙার ছোট হাকিম মুহাম্মদ মুস্তফার জীবনের ইতিবৃত্ত এবং সেটি 'কাঁদো নদী কাঁদো' গল্পের মূল বিষয়বস্তু হয়ে শক্তপোক্ত অবস্থান নেয়৷ তবে স্টিমারের সর্পিল গতি ধীরে ধীরে নদীর স্রোত ভাঙার সাথে গল্পের চেতনা মুক্তাগাছি গ্রামের বৃহৎ বটগাছের ছড়ানো বৃক্ষপল্লবের মত শাখা প্রশাখা বিস্তার করে এবং সেখানে উঠে আসে কুমুরডাঙার আধিবাসীদের অস্তিত্বের ভাঙা-গড়া ও নিয়তির দীর্ঘশ্বাস, বিপর্যস্ত জনজীবন, খোদেজার মৃত্যু নিয়ে সংশয়কূল পরিবেশ, মুহাম্মদ মুস্তফার অবচেতন মনের বিবৃতি, স্টিমারঘাটের উদ্বোধন নিয়ে হিন্দু জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর আক্রমণ এবং বাকাল নদীতে চিড় ধরায় বন্ধ স্টিমারঘাট, উকিল কফি্উলদ্দিনের ধ্যান-ধারণা এবং সকিনা খাতুনের শোনা নদীর শোকাবহ কান্নার শব্দ৷

তবে নদী কেন কাঁদে? বাকাল নদীতে হঠাৎ করেই স্টিমার চলাচল থেমে যাওয়ার কারণ নদীতে চিড় ধরা হোক অথবা উকিল কফিউদ্দিনের প্রস্তাবিত মতবাদসমূহ, কুমুরডাঙার আধিবাসীদের ধারণা মরণোন্মুখ নদীর দুঃখেই রাতের অন্ধকারে নদীর বেদনার্ত শোকাচ্ছন্ন মনের ক্ষত আরো গভীর হয়ে উঠে বাঁশির সুরের মতই কান্নার ধ্বনি শ্রবণেন্দ্রিতে উত্তাল ঢেউয়ের মত আঘাত হানে। তবে সেখানে আরো একটা সম্ভাবনা প্রকটভাবে আমাদের বোধে বৃষ্টিস্নাত আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে ধরে দেয়৷ সেটা হলো নদীর শোকাবহ কান্নার কারণ হয়তবা জগতের সকল বিষয়-আসয়ে নির্বিকার মুহম্মদ মুস্তফার সংকটময় অস্তিত্ব এবং খোদেজার মৃত্যু অথবা আত্নহত্যায় প্রতিক্ষণে দ্বন্ধে ভুগতে থাকা অবচেতন মনের মুমূর্ষু হাহাকার৷

'কাঁদো নদী কাঁদো' সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর চেতনাপ্রবাহরীতির সার্থক প্রয়োগ এবং উৎকৃষ্ট উদাহরণ— শিল্প মূলায়নের আমার মতে উনার সেরা কীর্তি৷ 'চাঁদের অমাবস্যা' উপন্যাসেও একই রীতির দেখা পাওয়া যায়, তবে এইখানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর আরো বেশি সুদক্ষতার নিদর্শন স্পষ্ট৷ গল্পের টাইমফ্রেম ইচ্ছেমতো ভেঙ্গেচুরে অতীত এবং বর্তমানের সন্ধির ধোঁয়াটে জটিল বৃত্তে সমাচ্ছন্ন ঘোর নির্মাণ করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ আমাদের বাকাল নদীর গভীরতলে ধীরলয়ে তলিয়ে যেতে বাধ্য করেন৷ রচনাশৈলীতে জাদুবস্তবতার প্রয়োগও ভোরের কুয়াশা কেটে আবছাভাবে রোদের মোহ হয়ে দেখা দেয়- পাশ্চাত্য প্রভাবে যা বাংলা সাহিত্য সুনিপুণভাবে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ ওয়াউল্লাহ এবং পরিপূর্ণতা পায় শহীদুল জহিরের অনন্য দক্ষতায়। বিষয়বস্তুর আঙ্গিকে গল্পের গতি ধীর, কিন্ত শিল্পের বিচারে এই বইয়ের সাহিত্যরস আস্বাদন করতে হবে আস্তে আস্তে— তবেই মনে হবে অমৃত! মাস্টারপিস!
Profile Image for Isaac Miftuv.
13 reviews5 followers
January 18, 2016
অদ্ভুত কিছু চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন ওয়ালীউল্লাহ সাহেব।দুইবার পড়ে ফেলেছি,দুই বার দুই রকম অর্থ বের হয়েছে।অনেকদিন এরকম চমকিত হই না।
এমনভাবে পাঠকদের খেলিয়ে নিজের ইচ্ছামত নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো এবং সাথে সাথে দর্শনকে হালকা টাচ করে পাঠকমনে প্রচুর প্রশ্নের উত্থাপন- ওয়ালীউল্লাহর এককথায় অনবদ্য,মাস্টারক্লাস একটা উপন্যাস।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews193 followers
September 26, 2022
বইটা সম্পর্কে কিছু লেখার আগে বইটা আবার পড়তে হবে। এমন মোহময়ী, রহস্যঘেরা লেখনশৈলী সম্পর্কে আলটপকা মন্তব্য করা মোটেই সমীচীন হবে না। একদমই নতুন অভিজ্ঞতা।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
542 reviews
May 9, 2025
কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি���ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অন্য উপন্যাস, লালসালু ও চাঁদের অমাবস্যা-তে গল্প যেভাবে সহজবোধ্যভাবে বর্ণিত হয়েছে, কাঁদো নদী ��াঁদো-এর বেলায় এসে লেখক সেই ধারা বজায় রাখেননি। এর কাহিনি সরলরৈখিক নয়।

বিচ্ছিন্ন, জটিল, অ্যাবসার্ড; এই তিন শব্দ দিয়েই সম্ভবত উপন্যাসটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যায়।
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
June 10, 2025
বাংলায় চেতনাপ্রবাহরীতির (Stream of Consciousness) সফল ও সার্থক প্রয়োগ ঘটে ১৯৬৮ সালে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। লিখেছেন কনটেম্পরারি ফিকশনের সেরা লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্। যাঁকে আপনারা চেনেন ‘লালসালু’ উপন্যাসের লেখক হিসেবে। দীর্ঘ কুড়ি বছরে ওয়ালীউল্লাহ্ মাত্র তিনখানা বাংলা উপন্যাস লিখেছেন—লালসালু (১৯৬৪), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৮) এবং কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮)। এরই মধ্যে-মধ্যে তিনি লিখেছেন প্রবাস জীবনের সংকট নিয়ে একটি ইংরেজি অসমাপ্ত উপন্যাস How Does One Cook Beans (শিম কীভাবে রান্না করতে হয়)। বইটি লেখকের মৃত্যুর বহু বছর পর প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ ২০১২ সালে অনুবাদ হয় বাংলায়। প্রথমা প্রকাশন থেকে এটি প্রকাশিত হয় শিবব্রত বর্মণের অনুবাদে (ইংরেজি ম্যানুস্ক্রিপ্ট থেকে)। এছাড়া তাঁর The Ugly Asian বইটির ষাটের দশকে লেখা হলেও, ১৯৬৫ সালে আমেরিকায় সেটি প্রকাশের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কিছু কারণবশত সেটা হয়নি। পরবর্তীতে এটিও বাংলায় প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে ‘কদর্য এশীয়’ নামে। অনুবাদক ছিলেন যথারীথি শিবব্রত বর্মণ।

উপন্যাস ব্যতীত তিনি ‘নয়নচারা’ (১৯৫১) ও ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ (১৯৬৫) নামে দুটি গল্প সংকলন লিখেছেন। লিখেছেন চারটি নাটক—বহিপীর (১৯৬০), উজানে মৃত্যু (১৯৬৩), সুড়ঙ্গ (১৯৬৪) এবং তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৫)।

যাহোক, ওয়ালীউল্লাহ্ কে ছিলেন বা তাঁর কীর্তি কতটুকু মহৎ ও সৎ সেটার গুণগান করার জন্য লেখাটি লিখছি না। লিখছি এক গভীর আত্মতৃপ্তির জায়গা থেকে, এক অতৃপ্ত হাহাকার থেকে। আজকের আলোচনা তা-ই তাঁর চেতনাপ্রবাহরীতি ধারায় অস্তিত্ববাদের সাথে মিশিয়ে দেওয়া পরাবাস্তববাদ ও জাদুবাস্তবতার এক অনন্য, মৌলিক ও কালজয়ী উপন্যাস ‘কাঁদো নদী কাঁদো’র প্রেক্ষাপট ও বর্ণনারীতি নিয়ে। লেখকের পূর্বের দুই উপন্যাসে ‘লালসালু’ ও ‘চাঁদের অমাবস্যা’-ও অস্তিত্ববাদের সফল প্রয়োগ ছিল। লালসালুতে এসেছে সেটা মজিদের দ্বিতীয় বিবাহ জামিলাকে ঘরে তোলার পর আর চাঁদের অমাবস্যায় এসেছিল গল্পের নায়ক আরেফ আলী যখন একটি খু নে র ঘটনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় তখন। চেতনাপ্রবাহরীতি স্বল্প সূত্রপাতও এখান থেকেই হয়।

‘কাঁদো নদী কাঁদো’-তে অস্তিত্ববাদের বিষয়টি পূর্ণাঙ্গভাবে উঠে এসেছে গল্পের প্রথম নামহীন কথক বা ‘আমি’-এর মনস্তত্ত্ব ও স্মৃতিপট থেকে উঠে আসা মুহাম্মদ মুস্তফার শৈশব, কৈশোর, যৌবনে ঘটা জীবনের নানান আনুষাঙ্গিক ক্রিয়ার মাধ্যমে। সেই সাথে যোগ হয়েছে দ্বিতীয় কথক তবারক ভুঁইয়ার মনোসংলাপে রচিত কুমুরডাঙ্গা নামে দরিদ্র মহাকুমা শহরের মানুষদের চেতনাপ্রবাহ, পরাবাস্তব-মনস্তাত্ত্বিক ভাবনা আর জাদুবাস্তবতার কথা। যা উঠে এসেছে গল্পেরই এক চরিত্র সকিনা খাতুনের শুনতে পাওয়া কান্নায় ভর করে।

এ উপন্যাসের কাহিনির ধারা একটু জটিল, বর্ণনাভঙ্গিও। যে স্বাভাবিক সহজ ছন্দে এখনকার সাহিত্যিকরা গল্প লিখেন ছোটো বাক্যে পর বাক্য বসিয়ে—এটি তেমন নয়। নয় বলেই হয়তো ওয়ালীউল্লাহ্ হয়েছেন সবার থেকে আলাদা, ব্যতিক্রম ও বিশুদ্ধ। যাঁর রীতিতে হেঁটেছেন খোদ সৈয়দ শামসুল হক, আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস ও শহীদুল জহিরের মতো কালজয়ী লেখকরা। তাঁরা সকলে ওয়ালীউল্লাহ্কে অনুসরণ করে গেছেন। তাঁদের সাহিত্য রচনায় গণ্ডিতে ঘুরলে দেখতে পাবেন, খুব বেশি সাহিত্য তাঁরা রচনা করেননি। কারণ যে ঢঙে, ভাবনায়, ভঙ্গিমায় তাঁদের উপন্যাস রচিত হতো—ওটা কোয়ান্টিটির কম হলেও কোয়ালিটির দিকে নজর ছিল সর্বপেক্ষা বেশি।

একটু ভেবে দেখুন না। গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, যেটাকে বলা হয় দুনিয়ার দ্বিতীয় বাইবেল; সেই ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অভ সলিচিউড’ রচিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এক অনন্য অসাধারণ নিঃসঙ্গ যাত্রার ঠিক পরের বছর পৃথিবীর অন্য এক প্রান্তে ১৯৬৮ সালে প্রকাশ হয় নদীর কান্নার অর্থ খুঁজে পেতে লেখা ‘কাঁদো নদী কাঁদো’। আপনি যদি দুটো উপন্যাসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা খুঁজতে চান তবে বহু কিছু পাবেন। কিন্তু একটির প্রেক্ষাপট লাতিন আমেরিকার কলম্বিয়ায় আর আর অন্যটি আমাদের বাংলাদেশে। দুটোরই কাহিনিই স্বতন্ত্র, কেবল পাশ্চত্য দর্শনের প্রভাব বাদ দিয়ে। এখন মনে এমন প্রশ্নের উদয় কি হয় না যে, মার্কেজ বিশ্ববরণ্য হতে পেরেছিলেন ঠিক কিন্তু ওয়ালীউল্লাহ্ কেন হতে পারেননি? যে এত শক্তিশালী উপাখ্যান রচনা করতে পারে, তাঁর স্থান তো বিশ্বসাহিত্যে শক্তপোক্ত অবস্থানে থাকার কথা ছিল, অথচ হয় নি কেন?

যেখানে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’র মতো উপন্যাস বুকার প্রাইজ পায় না, নোবেল পুরষ্কার পায় না—কী ভাবেন, সেখানে এখনকার বাংলা সস্তা ফ্যামিলি সিরিয়াল, কোরিয়ান ড্রামা ও চটি নির্ভর সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যে জায়গা করে নিবে? ওসব সরল, ভঙ্গুর, স্থূল কেন্দ্রিক লেখা টিকে থাকবেই বা ক’বছর?

বর্তমানে আমরা কীসব সাহিত্য নিয়ে লাফালাফি করছি? কাদের অনুসরণ করছি? কেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র মতো লেখকরা শুধুমাত্র শামসুল হক, ইলিয়াস আর জহিরের লেখায় বেঁচে রয়েছেন, সামসময়িক সাহিত্যিকদের মধ্যে কেন না; হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া? এর মানে কি ধরে নেওয়া যায়, বিশ্বসাহিত্য নিয়ে আমাদের যত লাফালাফি তা কেবল সহজ-সরল ধাঁচে লিখিয়ে, কম ভাবনা ও টুইস্ট মূলক সাহিত্যের জন্য? একটু জটিল চিন্তা, রীতি, দর্শন, ধরন, গঠন দেখলেই আমরা সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কী বোঝাতে চায়... ওয়ালীউল্লাহ্ আমাদের জন্য না? কখনও ছিলই না?

‘কাঁদো নদী কাঁদো’-তে ফিরে আসা যাক। ব্যতিক্রমধর্মী, অভিনব উপায়ে ওয়ালীউল্লাহ্ এ উপন্যাস রচনা করেছেন। যেখানে একক ব্যক্তি থেকে শুরু করে পুরো একটি সমাজজীবনের ধ্যান-জ্ঞান, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, সংকট, প্রশ্ন ও রহস্য শৈল্পিক কিন্তু জটিলময় এক বর্ণনাভঙ্গিতে ফুটে ওঠে। এখানে যে বর্ণনারীতির দেখা পাওয়া যায় সেটি হলো ‘নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালরূপ’। এই ধাঁচের লেখা কিছুটা এমন:

‘কী কারণে তবারক ভূঁইয়া থামে। বাইরে, রাতের ঘনীভূত অন্ধকারের মধ্যে, নদীর বিক্ষুব্ধ অশ্রান্ত পানি আর্তনাদ করে। সে-আওয়াজই সহসা কানে এসে লাগে। শ্রোতাদের মধ্যে একজনের চোখ নিমীলিত হয়ে পড়েছে, মুখটা ঈষৎ খুলে সোজা হয়ে বসে সে ঘুমায়। শান্ত মুখ, তাতে ঘুমের কোনো ছায়া নেই। তাই মনে হয় সে বুঝি জেগেই চোখ বুঁজে রয়েছে, অথবা সে অন্ধ। তারপর আবার তবারক ভূঁইয়ার কণ্ঠস্বর শোনা যায়।’ [১]

এই রীতি বা বর্ণনা সহজবোধ্য নয়। ‘সাধারণ অতীত কালরূপের’ মতো এলো, গেল আর খেলো ও ছিল-র মতো ছন্দময় সরল নয়। অল্প উদাহরণে বোঝা না গেলেও, আমি যখন কাঁদো নদী কাঁদো উপন্যাসটি পড়ি, এর প্রথম অধ্যায় পড়তে হয়েছে বার তিনেক। এরপর খণ্ডাতে পারি ঠিক কী উপায়ে লেখক তাঁর এমন দুর্দান্ত রীতি রচনা করেছেন ক্রিয়ার এ-ই নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালরূপের মধ্যে দিয়ে। ক্রিয়াপদের এই কালরূপটি চিন্তার জটিলতা যতখানি ধারণ করতে সক্ষম, সাধারণ অতীত কালরূপ তার ধারে কাছেও যেতে পারে না। [২] যা পড়তে গেলেই অনুধাবন করা যায় সহজে। যেখানে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একই সঙ্গে পরিচালিত হয়। বর্তমানে অবশ্যই বহুল ব্যবহৃত হয় সাধারণ অতীত কালরূপ।

দুটি ধারায় উপন্যাসটির কাহিনি প্রবাহিত হয়। একটি মুহাম্মদ মুস্তফার জীবনি, যে লেখাপড়া শেষ করে ছোটো হ��কিম হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে কুমুরডাঙ্গা গ্রামে। এবং অন্যটি বাকাল নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীতে স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার তীরবর্তী জনমানুষের জীবনে নেমে আসা দুর্দাশার কথা। যা ফুটে উঠে দ্বিতীয় কথক তবারক ভুঁইয়ার জবানিতে। প্রথম কথক ‘আমি’ ও দ্বিতীয় কথক তবারক ভুঁইয়া, দুই জনই একটি স্টিমারের তৃতীয় শ্রেণির ডেক বা পাটাতনে বসে যাত্রা করছে। তাদের দু’জনের কখনও স্বাভাবিক কথাবার্তা হয় না। একজনের গল্পে, জেগে উঠে অন্য জনের ভাবনা। আর এখানেই কুমুরডাঙ্গার মহাকুমা শহর ও মুহাম্মদ মুস্তফার অস্তিত্ব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

প্রথম কথক, অর্থাৎ ‘আমি’ বা উত্তমপুরুষে বর্ণনায় যে গল্প এগিয়ে নেয়, সে হলো সম্পর্কে মুহাম্মদ মুস্তফার চাচাতো ভাই। মুস্তফার সাথে জড়িত থাকে খোদেজা নামক একটি মেয়ে। যে শ্যাওলা-পড়া ডোবার মতো পুকুরে পড়ে আ ত্ম হ ত্যা করে। কী কারণে সেটার কারণ খুঁজতে যেতে হয় উপন্যাসের শেষ অবধি। অন্যদিকে দ্বিতীয় কথক তবারক ভুঁইয়া শোনায় কুমুরডাঙ্গার ৮০ বছরের পুরোনো ইতিহাস পর ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা। যেখানে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনির হাঙ্গামা পর মোক্তার কফিলউদ্দিন, ডা. বোরহানউদ্দিন-সহ নানান সভ্য মানুষদের হাত ধরে মহাকুমা শহর প্রতিষ্ঠা পায়। তারপর একদিন শোনা গেল, যে বাকাল নদী তাদের শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যায় এবং যে নদী ধরে স্টিমার আসা-যাওয়া করে, সেই নদীতে চড় পড়েছে। অর্থাৎ নদীর তলদেশ শুকিয়ে গেছে। ওটা দিয়ে আর স্টিমার আর যাতায়ত করবে না। আর এই খবর পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর হাহাকারের রব ওঠে। কী এক বিস্মৃতি ঘটানোর কারণে শহরের এক মেয়ে সকিনা খাতুন, যে সমাজের রীতিনীতি তোয়াক্কা না করে স্বাধীন হয়ে চলে, সেই মেয়ে রাত হলেই নদী থেকে একটি মেয়েলী কণ্ঠের কান্না শুনতে পায়। যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। মানুষ মেয়েটিকে ভিন্ন নজরে দেখা শুরু করে। এক সময় তারাও সকিনার মতো মাস ইল্যুশনের শিকার হয়। এ থেকে প্রতিকার কী আর কেন-ই বা হচ্ছে এমন তা-ই নিয়ে রচিত হয় আরও একটি কাহিনি।

ওদিকে প্রথম কথক, মুহাম্মদ মুস্তফা আর খোদেজার কাহিনির বাঁকে বাঁকে ঘটে চলে অন্য এক দ্বন্দ্ব। যা একেবারে উপন্যাসের শেষে এসে খোলাসা হয়। কিন্তু রেখে যায় বহু প্রশ্ন। তার উত্তর খুঁজতে হয় আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে। লেখক পুরো উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের মনস্তত্ত্বের ভেতরে এমনভাবে ঢুকে পড়েছিলেন, যা জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছিল। তাদের ভাবনা, চেতনা আর দ্বন্দ্বের বদ্ধ দ্বারগুলো নগ্ন করে তুলে ধরেছেন। সমাজ, ধর্ম আর বিশ্বাসের পরতে পরতে পদচারণা করেছেন লেখক, আর সেগুলো ক্ষুরধার কোনো ক্ষুর দিয়ে পোঁচ দিয়ে করেছেন ছিন্নভিন্ন।

খোদেজার আ ত্ম হ ন ন কিংবা সকিনা খাতুনের শোনা কান্নার শব্দ আমাদের এক গভীর দ্বিধাদ্বন্দ্বের নদীতে টেনে নিয়ে গেলেও, যখন সেই নদীকে আমাদের চেনা হয়ে যায়, বোঝা হয়ে যায়—হয়তো তখন লুকানো রহস্য উন্মোচিত হয়। কেন এমন জটিল প্রক্রিয়ায় লেখক এমন এক উপাখ্যান লিখেছেন তার উপলব্ধি হয়।

এছাড়া লেখক এমন সব উপমা পুরো উপন্যাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন, যা কুড়িয়ে আনলে, তার ব্যাখ্যাহন্তে আরও বহুকিছু তুলে ধরা যাবে। যেমন এই প্যারাটি না-হয় পড়ুন, যখন উকিল কফিলউদ্দিন বাকাল নদীতে চড় পড়ায় তার নিজ বৈঠকখানায় একটি সভা ডেকেছিল শহরের অন্যান্য লোকেদের নিয়ে:

‘সে-বাড়ির বৈঠকখানায় নথিপত্রে-ঢাকা টেবিলের ওপর স্থাপিত লণ্ঠনের পশ্চাতে বষে উকিল কফিলউদ্দিন কোনো মামলার জট খোলার চেষ্টায় রত ছিল, মুখে আত্মমগ্ন ভাব, মন স্টিমারঘাট নদনদী থেকে বহুদূরে। ভেতর থেকে হুঁকা আসে-মক্কেলদের জন্যে সাধারণ হুঁকা, তার জন্যে নলওয়ালা সুদৃশ্য গুড়গুড়ি। কিছুক্ষণের জন্যে ঘরটি হুঁকা-গুড়গুড়ির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে, ক্রমশ ধূমায়িতও হয়ে পড়ে, তার পশ্চাতে মানুষের মুখগুলি অস্পষ্ট দেখায়। পরে পান আসে; বড় পেতলের থালায় করে সাধারণ পান, রুপার পিরিচে সেজে সাচি পান। তারপর কখন উকিল কফিলউদ্দিন কথা বলতে শুরু করে। তবে জ্বর কণ্ঠে যেন ঘুমের আমেজ; সে-কণ্ঠ অবিরাম গুঞ্জনের মতো শোনায়। তারপর এক সময়ে সহসা সে এমনভাবে কেশে ওঠে যেন কাশিটি পূর্বাভাস না দিয়ে অকস্মাৎ তাকে অতিভূত করে ফেলেছে, এবং মুখে যা উঠে আসে তা নিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে হঠাৎ পাশে ঝুঁকে টেবিলের পশ্চাতে অদৃশ্য একটি পিদানিতে সশব্দে থুথু ফেলে। নিমেষের মধ্যে অদৃশ্য সে-পিদানি থেকে এবার সচকিত একটি মাছি উঠে এসে অন্ধের মতো নিঃশব্দে ঘুরপাক দিয়ে পশ্চাতের দেয়ালে টাঙানো ফ্রেমে বাঁধা সোনালি অক্ষরে লিখিত আল্লাহর নামের এক প্রান্তে আশ্রয় গ্রহণ করে; হয়তো... রূঢ়ভাবে ঘুমে ব্যাঘাত-পাওয়া ক্ষুদ্র জীবটির কাছে সমগ্র বৈঠকখানার মধ্যে সে-স্থানটিই সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়। এবার ঘরে যে-আকস্মিক নীরবতা নাবে সে-নীরবতার মধ্যে সে দেখতে পায়, উকিল চোখ নিমীলিত করেছে।’

একটি মাছিকে ঠিক কীভাবে প্রাধান্য দিয়েছে একটু ভাবুন। এই মাছির রূপক ছেঁটে আপনি যদি ওটাকে মানুষ হিসেবে কল্পনা করেন, তবে মাছিটির মতোই কোনো মানুষ যখন ভয় পায়, তখন সে কী করে? কোথায় ঠাঁই নেয়, কাঁর কাছে নেয় সেটি কি বেরিয়ে আসে না? এমন অসংখ্য রূপক, দর্শন পুরো উপন্যাসে ছড়ানো। তা নিয়ে আলাপ করতে গেলে আরও একটা বই হয়তো লিখে ফেলতে হবে।

‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাস সকল বাঙালির পড়া উচিত। পড়ে, খুঁড়ে বের করা উচিত কী অসাধ্য সাধন তিনি করেছেন। কী দুর্ধর্ষ সেই উপায়। যেখানে জ্যাঁ-পল সার্ত্র, আলবেয়ার কাম্যুর দর্শনকে ওয়ালীউল্লাহ্ ব্যবহার করেছেন নিজস্ব ভাবনা দিয়ে, ভঙ্গিমায়। কাফকার চিন্তা, মার্কেজের সৃষ্টির সমতুল্য হওয়ার চেষ্টা করেছেন স্বতন্ত্র উপায়ে। নদীর মতো একটি বিশেষ দিকটি তুলে ধরে তিনি ট্রিবিউট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সভ্যতার শুরু ও মানবজীবনের দ্বারা পরিচালিত হওয়া ভোলগা, তাইগ্রিস, ইউফ্রেতিস, ইন্দোস, ইয়োলোর মতো নদীগুলোকে। [৩] কতটা দূরদর্শী আর কালজয়ী চিন্তা নিয়ে একজন লেখক লিখতে বসলে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’র মতো উপন্যাস রচিত হয়, তা ভাবনারও অতীত।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বাংলা সাহিত্যের অতুলনীয় সম্পদ, বাঙালির সম্পদ। এমন লেখককে আমাদের যে সম্মান প্রদর্শন করা দরকার, যে চর্চা কর দরকার, যে আলোচনা হওয়া দরকার—সেই সব করার মতো লেখক কিংবা পাঠক বর্তমানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু সাহিত্য বাঁচিয়ে রাখতে গেলে এমন লেখকদের রীতি, নীতি ও বৈশিষ্ট্য আমাদের ধারণ করতে হবে। তবেই গ্রেট লিটারেচার তৈরি হবে। অন্যথায় নদী শুকিয়ে যাওয় চড়ের মতো একদিন এসব সাহিত্য কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা হচ্ছে।

টীকা:
[১] মার্জিনে মন্তব্য – সৈয়দ শামসুল হক – পৃষ্ঠা: ৪৯
[২] মার্জিনে মন্তব্য – সৈয়দ শামসুল হক – পৃষ্ঠা: ৫২
[৩] Syed Waliullah: A Centenary Tribute Edited by Niaz Zaman
Profile Image for Shakil Mahmud.
90 reviews40 followers
September 24, 2020
হলিউডে নরমালি দুই টাইপের মুভি দেখা যায় - লিনিয়ার আর নন-লিনিয়ার। নন-লিনিয়ার ক্যাটাগরিতে মুভি বানানোর ক্ষেত্রে নোলান সাহেবের খ্যাতির কথা অলরেডি আমরা সবাই মোটামুটি জানি। যেগুলোতে কাহিনী স্ট্রেইট যায় সেগুলো লিনিয়ার। আর যেগুলোতে স্ট্রেইট যায় না, সিকোয়েন্স গুলো এলোমেলো করা থাকে, মানে জাম্বলড থাকে, সেগুলো নন-লিনিয়ার নামেই পরিচিত। উপন্যাস বা কথাসাহিত্যেও এরকম লিনিয়ার আর নন-লিনিয়ার ক্যাটাগরি গুলো খাটে। কিন্তু এই উপন্যাস খানা পড়ে মনে হলো ওয়ালীউল্লাহ সাহেব লিনিয়ার বা নন-লিনিয়ার কোন টাইপের ক্যাটাগরির ধারই ধারেন নাই। তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ক্যাটাগরি দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। যেকোনো কাহিনী বেশিরভাগ সময়ই সাধারণত সামনের দিকে আগায় হোক সেটা লিনিয়ার কিংবা নন-লিনিয়ার। কিন্তু এই উপন্যাসেই দেখলাম একমাত্র ভিন্ন জিনিস - কাহিনী গেছে উল্টাদিকে। এটা শুরুই হয়েছে শেষ থেকে। আর ডিরেকশন গেছে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে। মানে শুরু থেকে শেষ এর দিকে না গিয়ে উনি গেছে শ��ষ থেকে শুরুর দিকে! শেষ থেকে ভাঁজ খুলতে খুলতে উনি শুরুর দিকে গেছেন। লেখক সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটা এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে গেছেন পুরো উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত।কোন একটা কাহিনী বা গল্প বলার নতুন একটা ভঙ্গিমা উন্মোচন করে দিয়ে গেছেন তিনি। উনার এই এক্সপেরিমেন্টের জন্য বাংলা কথাসাহিত্য তার কাছে ঋণী থাকতে বাধ্য।


সঞ্জীব দা'র একটা বিখ্যাত গান আছে - "তোমার ভাঁজ খুলো আনন্দ দেখা��/করি প্রেমের তরজমা। "
আগে এই গানের এই প্রথম লাইনটা যখনই মনে পড়তো, তখনি আমার সবার আগে যে জিনিসটার কথা মনে পড়তো সেটা হইলো শিঙারা। আগে একসময় শিঙারা খাওয়ার সময় আমি শিঙারার ভাঁজ খুলতাম ধীরে সুস্থে। এরপরে খেতাম - আস্তেধীরে। তাড়িয়ে তাড়িয়ে। ভাঁজ খুলে খুলে শিঙারা খাওয়ার মধ্যে কেমন যেন একটা আদিম বন্য আনন্দ অনুভব করতাম। একটা আদিম নৃশংস জংলী অনুভূতি। এটা ঠিক সেই ধরনের অনুভূতি যেটা ভরা যুবতী প্রেমিকার সাথে অভিসার কালে যুবক প্রেমিক তার প্রেমিকার শাড়ি খোলার মাধ্যমে এবং শাড়ি খুলে "প্রেমের তরজমা" করার সময় অনুভব করে। ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের এই "কাঁদো নদী কাঁদো " নামক মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক উপাখ্যান পড়ার সময় আমার ঠিক সঞ্জীব দা'র এই গানের লাইনটাই মনে পড়েছে সবার আগে, যেই লাইনটা শুনলে আগে শিঙারার কথা মনে আসতো। শিঙারার জায়গা দখল করলো এখন থেকে "কাঁদো নদী কাঁদো"।


এবার আসি মূল কথায়। পুরো উপন্যাসটাই শুরু থেকে অনেকদূর পর্যন্ত ছিল শিঙারার ভিতরে। লেখক শুরুতে পাঠককে বিন্দুমাত্র হিন্টস দেন নাই যে গল্পটা কোনদিকে যাবে অথবা যেতে পারে। এমনকি উপন্যাসের নাম "কাঁদো নদী কাঁদো" হতে গেলো কেন সেটা পর্যন্ত বুঝার সুযোগ দেননি তিনি। মানে শিঙারা এখনো শাড়ি পড়া অবস্থায় আছে, কেউ এখনো একে অনাবৃত করে নাই, কেউ খোলে নাই ভাঁজ। এখনো সে প্রিস্টিন। বিশুদ্ধ। একটু একটু করে লেখক শাড়ি খোলার মহান দায়িত্ব খানা নিয়ে নিলেন। প্যাঁচ খোলা শুরু হলো। আমিও একটু নড়েচড়ে বসলাম। আচম্বিতে খোদেজা বের হলো শিঙারা থেকে। একটু হতচকিত হলাম কারণ কোনধরনের পূর্বপরিচয় ছাড়াই সে বের হয়েছে। এরপরে ধুম ধাম করে তবারক মিয়া, খতিব মিয়া, খেদমতুল্লাহ, কালু মিয়া, উকিল কফিলউদ্দিন, সকিনা খাতুন বের হয়ে আসে এক এক করে - প্রত্যেকেই নিজস্ব একেকটা কাহিনী নিয়ে বের হয়ে আসে। লেখকের লিখার এই স্টাইলটা অনেক বেশি ভালো লেগেছে। যখন যে চরিত্রটা উনি বের করেছেন বা প্যাঁচ খুলেছেন, প্রত্যেকেরই একটু একটু করে ব্যাকস্টোরি তিনি টেনে নিয়ে এসেছেন। চরিত্র গুলো বিল্ড আপ হয়েছে অত্যন্ত দুর্দান্ত ভাবে।


সবচেয়ে বিশেষ ভাবে উনি যেই চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, সেটা হচ্ছে মুহাম্মদ মুস্তফা। মুস্তফার চরিত্রের সবজায়গায় সবকিছু নিয়ে উদাসীনতাটা খুব নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছেন তিনি। মুস্তফার সবকিছু থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকার প্রবণতা, সকল ব্যাপারে ঔদাসিন্য তাকে একটা ছায়ার মতন বানিয়ে দিয়েছিল। তার এই ধুন্ধুমার উদাসীনতা তার ব্যাক্তিত্ব কে তরলের চেয়েও পাতলা রূপে পরিনত করেছে। এই বিষয়ে লেখকের বর্ণনা-

"সে মাত্রাতিরিক্তভাবে নিরীহ নম্রভদ্র হয়ে পড়ে। তবে সেই নিরীহতা নম্রতা ভদ্রতা এমনই যে সেসব তাকে যেন কেমন নিশ্চিহ্ন করে ফেলে ; মানুষের পরিবর্তে সে একটি ছায়ায় পরিণত হয়। "

" বস্তুত, মুহাম্মদ মুস্তফা এমনভাবে নিজেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে সক্ষম হয় যে চোখের সামনে সে বসে থাকলেও অনেক সময় কেউ সহসা বলে উঠতো, কোথায় গেল মুহাম্মদ মুস্তফা? "

মুস্তফার চরম উদাসীন, অতি নিরীহ, প্রায়-অদৃশ্য ব্যাক্তিত্ব টাইপের চরিত্র নির্মাণে লেখক কোন কার্পণ্য করেন নি। মুস্তফার সাথে খোদেজার সম্পর্কটা তিনি প্রথমে সহজভাবে উল্লেখ করেন নি। এদের মধ্যে সম্পর্কটা বুঝতে এবং এরাই কি গল্পের মূল প্রটাগনিস্ট কিনা সেটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে। আবার, এদের সাথে নদীর কান্নার সম্পর্কটা কি (যেহেতু উপন্যাসের নাম "কাঁদো নদী কাঁদো") অথবা সকিনা খাতুনের সাথে এদের সম্পর্কটা কি সেটা ধরতেও সময় লেগেছে। অবশ্য সময় লাগারই কথা ছিল। কারন লেখক সাহেব খুবই ধীরে ধীরে শিঙারার প্যাঁচ খুলেছেন। উনার শিঙারার(উপন্যাসের) আলু গুলো (চরিত্র গুলো) বোধহয় বেশিই বেয়াড়া ছিল কিনা! পিছলে পড়ে যাবার ভয় ছিল তো। এক্ষেত্রে লেখক যথেষ্ট ধৈর্য, স্থৈর্য এবং ঠান্ডা মাথার একজন পরিণত সাহিত্যিকের পরিচয় দিয়েছেন। তাড়াহুড়ো করে শাড়ি খুলতে গিয়ে শৃঙ্গারের মজাটা নষ্ট করে অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিকের পরিচয় তিনি দেননি। তিনি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে করতে খুলেছেন। তিনি কথাসাহিত্যের দুর্দান্ত জমাট বুননে তার দক্ষতার হাত দেখিয়ে দিয়েছেন।


সকিনা খাতুনের গল্প শুরু হবার পর থেকেই মূলত উপন্যাসে বড় একটি মোড় আসে, যেই মোড় পাঠককে নিয়ে যাবে এমন একটা নদীর বাঁকে, যে নদী একসময় ভরা যৌবনবতী থাকলেও কালের আঘাতে যার অন্তর ভেঙে চুরমার হয়েছে, যার বার্ধক্য এসেছে অনাগত সময়ে। যেই মোড় ঘুরলেই পাঠক শুনতে পাবে বাকাল নদীর কান্না। আর দেখতে পাবে কুমুরডাঙ্গা নামক ছোট একটা শহরের মানুষের উপরে সেই কান্নার দুর্দমনীয় প্রভাব। পাঠক পড়বে আর ভাববে - একটা নদী কিভাবে কান্না করতে পারে যেখানে আপাতদৃষ্টিতে নদীর কোন আত্নাই নেই, যেখানে নদী একটা জড়বস্তু বৈ কিছু নয়? নদী কি মানুষ? নদী কি আসলেই কান্না জানে?


এখন, এখানে কথা হলো পাঠকদের মধ্যে যারা অতি উত্তেজনার টাইমে তাড়াহুড়ো করে সবকিছু করতে পছন্দ করে(মানে যারা টি-টোয়েন্টি খেলতে আগ্রহী বেশি ), তাদের কাছে লেখকের এই ধীর-স্থির ভাবে গল্প টেনে নেয়াটা মনোঃপূত হবেনা। তারা বরং বিরক্তই হবে এইটা পড়লে। পড়ে বলবে - "ধুর্বাল এত্তো স্লো ক্যান!"

আর যারা রসিয়ে রসিয়ে কোন কিছু উপভোগ করতে জানে(মানে যারা টেস্ট ম্যাচ খেলতে পছন্দ করে), তাদের কাছে এই উপখ্যান হবে অত্যন্ত সুস্বাদু, যেটা মুখের মধ্যে গলবে স্লো মোশনে - মাখনের মত অথবা মধুর মত (এবং মাতৃভান্ডার এর রসমালাই এর মতো :p)।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
January 8, 2023
বছর শুরু হলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর একমাত্র উপন্যাস হিসেবে অপঠিত থেকে যাওয়া চমৎকার এই গ্রন্থ পাঠ করার মধ্য দিয়ে। বিষাদগ্রস্ত মন নিয়ে মেঘে ঢাকা সাজেকের কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় বসে শুরু করেছিলাম যে উপন্যাস, তা শেষ হলো রাঙামাটির কোনো এক আবাসিক পান্থশালায় বসে। সবকিছু মিলিয়ে এ উপন্যাস পাঠ করার স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা আজীবন মনে রাখার মতো।
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
September 11, 2023
নদীর কান্না দেখতে গিয়ে নিজেরই কাঁদো কাঁদো অবস্থা। বইটা শুরু করে কিছুদূর যাওয়ার পরে মনে হয়েছে আমি বুঝি কোনো অন্ধগলির মধ্যে ঢুকে পরেছি। এবং শেষ পর্যন্ত লেখক তাঁর অদ্ভুত লেখনীতে সেই অন্ধগলির মধ্যেই আমায় ছেড়ে গেছেন। আমি সারারাত অন্ধগলিতে হেটে হেটে কিছুই দেখিনি, শুধু হেটেই গেছি। বইটা শুধু পড়েই গেছি কিছুই বুঝিনি। সেটা আমারই অজ্ঞতা বলে ধরে নিচ্ছি। বা আমার দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা, যা আমাকে গলির মধ্যে কিছুই দেখতে দেয়নি।
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
October 31, 2023
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখার সাথে পরিচয় লালসালু দিয়ে। তারপর চাঁদের অমাবস্যা। লালসালু পড়ে বিস্তর চিন্তাভাবনার উদয় না হলেও চাঁদের অমাবস্যা সে চিন্তার উদয় ঠিকই করেছিলো। একটু বয়স না হলে তার লেখা অবোধগম্য থাকাটা অযৌক্তিক কিছু না। চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাস পড়ে মনে হয়েছিলো একজন মানুষ কিভাবে এত কিছু ভাবতে পারে? কিভাবে প্রত্যেকটা ক্যারেক্টরের মনের কথা সুনিপুণ ভাবে বর্ণনা করতে পারে? একটা বিষয় যে এতভাবে ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে সেটাই বা ��িভাবে বলতে পারে! চাঁদের অমাবস্যা উপন্যাস এখনও আমার কাছে ওয়ালীউল্লাহর লেখা সেরা উপন্যাস। আর সেই ধারাই যেন অব্যাহত রাখলো কাঁদো নদী কাঁদো।


মানুষকে নিগুঢ় ভাবে পর্যবেক্ষন করা সহজ কাজ না। সেক্ষেত্রে দেখার চোখটা ভিন্ন হওয়া চাই। উপরের চোখ বাদ দিয়ে দেখতে হয় মনের আর বুদ্ধির চোখ দিয়ে। গল্পের তবারক ভুইঞার মাধ্যমে লেখক যেন নিজের একটা গুণ ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। মানুষকে নিগুঢ় ভাবে পর্যবেক্ষন করাই শুধু না, সে মানুষের মনের ভেতরের চলমান ঘটনা বর্ণনা করার ক্ষেত্রেও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জুড়ি মেলা ভার। বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক যে একমাত্র তিনিই সে-কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। স্ট্রিম ওফ কনসাসনেস বলেন আর চিন্তাশক্তির প্রখরতার প্রতিফলন বলেন, সবক্ষেত্রেই উপমার সব কিছু ছাপিয়ে একটা নামই আসবে আর সেটা সৈয়দিজম। অতীত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান, সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছু নিয়ে যে সমাজ তিনি তৈরি করেছেন কাঁদো নদী কাঁদোতে, তাকে কথায় ব্যক্ত করা খুব একটা সহজ কাজ না। সমাজ, সমাজের মানুষ, তাদের মনের ভেতরে ঘটে চলা চিন্তামালা, তাদের বাহ্যিক কার্যকালাপ সব কিছু ওয়ালীউল্লাহ তার কথার জাদুতে ছন্দময় করে উপস্থাপন করেছেন এই উপন্যাসে।

কাঁদো নদী কাঁদোতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ একটা মরতে চলা নদীর চারপাশের মানুষের ভোগান্তি তুলে ধরেছেন এবং সেই দুইটা আলাদা আলাদা জিনিসের মধ্যে যোগসাদৃশ্য স্থাপন করেছেন। নদী আর মানুষকে মিলিয়ে দিয়েছেন এক অজানা কোনো বন্ধনে। কেউ যদি উপন্যাসের বিষয় বস্তু বলতে বলে তাহলে সেটা যে কী হবে তা আমার জানা নেই। কারণ গল্প একটা হলেও গল্পের মোড় অনেক। প্রত্যেকটা চরিত্রকে আলাদা করে উপস্থাপন করার কারণে এবং তাদের ইনার ওয়ার্কিং গুলো ব্যাখ্যা করার কারণে আসলে একটা প্লট বলে গল্পকে বিশেষায়িত করা একটু কষ্টের। এই গল্প, এই উপন্যাস, দুই লাইনে বলে ফেলার মতো বিষয়বস্তু নির্ভর খুব একটা না। উপন্যাসের প্রত্যেকটা চরিত্র একেকটা নিজস্ব গল্পের মুল চরিত্র। তারা একটা উপন্যাসে, একটা গ্রামে থাকার পরও কেন জানি সবাই সবার থেকে দূরে। সবার নিজস্ব একটা জগৎ আছে। আর এখানেই ওয়ালীউল্লাহর সার্থকতা। গল্পের তবারক ভুইঞা, মুহাম্মদ মুস্তফা, সকিনা সহ সবারই নিজের একটা গল্প আছে। যে গল্প গুলো আস্তেধীরে, অনুভবের জোয়ারে ভেসে, অনুধাবন করে, উপলব্ধি করে আস্বাদন করতে হয়। নয়তো পড়ার কাজটা হয়তো হয় কিন্তু মনের তৃপ্তি মেটেনা।
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
August 22, 2025
লেখকের ফিলোসোফি বোঝার জন্য প্রচুর ভাবার ব্যাপার আছে।
Profile Image for Swajon .
134 reviews76 followers
February 2, 2017
" নদী কি তার নিজের দুঃখেই কেঁদেছিল? নদী কেঁদেছিল তাদের দুঃখেই। "
Profile Image for Arif  Raihan Opu.
212 reviews7 followers
January 4, 2023
এক বসায় পড়ার মতো নয়। জীবনের অর্থবহ দিক গুলো ভালো ভাবেই উঠে এসেছে। উপন্যাসের কথায় যদি বলি জীবনের বাকে বাকে রয়েছে উপলব্ধি। কেউ সেটা আগে অথবা পরে করে থাকে। কিন্তু উপলব্ধি হবেই। সেটা অনুভবে অনুভূতিতে থাকবে।

কাদো নদী, কাদো - যারা ক্ল্যাসিক ভালোবাসেন তারা অবশ্যই পড়বেন।
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
February 18, 2022
একদম অন্য ধরনের একটা উপন্যাস পড়লাম মনে হলো। প্রচন্ড আস্তে আস্তে পড়েছি। কাহিনী কোনদিকে এগুচ্ছে বুঝতেই বেশ অনেকখানি সময় গেছে। লেখক বইটি লিখেছেনই বোধহয় এভাবে। সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী চিন্তা ও গভীর কথাবার্তা রয়েছে বইটিতে। সুন্দর।
Profile Image for Ivey Rashid.
42 reviews29 followers
January 24, 2014
This was my first book of Syed Waliullah, so the writing style is pretty new to me. I liked the book, but the storyline did not seem strong enough, specially the finishing part where the writer tries to draw a conclusion by reasoning with the fate of the central character and the theme of the book. Also it's a pretty slow-read for me.
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
November 22, 2017
'কাঁদো নদী কাঁদো' মানে নদীর কাঁন্দার মত পানি নাই (বিপরীত অর্থেও হইতে পারে, ওয়াও না?) । ওয়ালীউল্লাহ'র উপন্যাসে বক্তা বা দর্শকগুলা একটু তফাতে অবস্হান করে । যেন সে ঘটনার মধ্যে ঘটনার কেউ না, আগন্তুক । এই উপন্যাসে একটা স্টীমার যাত্রায় একজন মনোয়ারের চেতনকে নিয়া লেখক যেন দূর থেকে খেলা অথবা হেলা করেন । নদীতে পানিশূন্যতায় কুমারডাঙ্গার মানুষেরা একটা 'আল্লা মেঘ দে, পানি দে' জীবন যাপন করে । অথচ নদী বেষ্টিত অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি কম (মাঝে মাঝে উপরের দিকের ব্রক্ষ্মপুত্র আর তিস্তা ছাড়া)। স্টীমার যাত্রাটা যেন বাংলাদেশের অসংখ্য জলপথ; চাঁদপুর হইয়া বরিশাল বা গোকর্ণঘাট থিকা শীবপুর তিতাসের ঠিক ওইপারে । যমুনার নানা রূপ এই বঙ্গে; কখনো ভরাট, কখনো ক্ষরাট- ঘোলা পানির এক রেখা পরে স্বচ্ছ, কেউ কাউতে মিশে যায় না! এজন্য বোধয় যমুনার জল লয়ে অনেক কাব্য ও উপমা (?) । 'কাঁদো নদী কাঁদো'তে যে লোক স্টীমারের মধ্যে নিথর বইসা থাকে; আশেপাশে হইহল্লা, আলুবাজি, বাদাম-ছোলা কিন্তু মনোয়ারের যেন কিছুই মনে লয় না । সে তার জনপদ থেইকা দূরে অন্য এক অবচেতনে, অন্য এক লোক হইবার ইচ্ছায় বসবাস করে যা সে নিজেও হয়ত স্পষ্ট না । হয়ত তাই অনেকের গল্পের প্লটে হালকা আর ভাষায় এ্যাবসার্ট লাগে পড়তে । অথবা কারো এই ধোঁয়াশা আর বাবুয়ানি ভালোও লাগতে পারে । 'কাঁদো নদী কাঁদো' বাংলাদেশের নদী জীবনকে পোট্রে বা বহন করে না ।
২.৫ ⍟ - ফর গদ্য
.৫ ⍟ - কি করব?
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
January 5, 2019
"নদী কি তার নিজের দুঃখে কেঁদেছিল? নদী কেঁদেছিল তাদের দুঃখেই।"

একটি নদীর বার্ধক্য, একটি জনপদের হাহাকার - দুইয়ে মিলেমিশে উপন্যাসটি। নদীর জিইয়ে যাওয়া স্রোত যেন তার স্তিমিত জনপদের প্রতিচ্ছবি ঘটায়।

এক স্টিমার-যাত্রা দিয়ে উপন্যাসের শুরু, স্টিমার-যাত্রা দিয়ে শেষ। মাঝে ব্যক্তিজীবন ও জনজীবনের বিচিত্রতা - কখনো বহমান, কখনো স্তিমিত। মনে হয় যেন একটা নদী - এক তীরে শুরু, অন্য তীরে শেষ। কিন্তু কতোই স্রোত রেখে গেল বয়ে যাওয়ার সময়।
Profile Image for Estiak Ahmed.
4 reviews20 followers
February 23, 2018
অসাধারণ বই, লেখক দেখিয়েছেন যে তিনি পাঠকের মাথা ঘোরানোর যথেষ্ট সামর্থ্য রাখেন। বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য উপন্যাস...

“নদী কী* তার নিজের দুঃখে কেঁদেছিল? নদী কেঁদেছিল তাদের দুঃখেই। ”
.
.
.
হয়তো নদী সর্বদা কাঁদে, বিভিন্ন কণ্ঠে, বিভিন্ন সুরে, কাঁদে সকলের জন্যই। মনে মনে বলি : কাঁদো নদী, কাঁদো।


*আধুনিক নিয়ম অনুসারে ‘কী’ এর স্থলে ‘কি’ হবে।
Profile Image for Sehemi Akhi.
65 reviews2 followers
August 17, 2023
কিছু বই সম্পর্কে লিখে বা মুখে বলে বোঝানো যায়না৷ এই বইটাও ঠিক তেমনি। পড়লে বুঝবেন কি পড়ছেন। আর না পড়লে অনেক কিছুই বৃথা হয়ে যাবে বলে মনে করি।
লেখক যেভাবে বাকাল নদীর দু:খের সাথে কুমুরডাঙা শহরের মানুষের জড়িয়ে থাকা উল্লেখ করেছেন, তা সহসা বুঝে উঠতে পারার মত নয়। বইটার যত গভীরে যাবেন ততই বুঝবেন নদী কার জন্য কাঁদছিল, কেন কাঁদছিল। শেষটুকু এতটাই নাড়া দিবে যে ক্ষণিকের জন্য চিন্তাতে পড়ে যাবেন এই ভেবে যে কি হলো এসব! এমন সমাপ্তিও কি হয়?
Profile Image for Shahin Rana.
5 reviews2 followers
Read
April 8, 2021
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ পড়েছি কিছুটা দেরিতে, ২০০৭ সালের দিকে। ত��র আগে পড়েছি তাঁর ‘লালসালু ’ও ‘চাঁদের অমাবস্যা’। তিনি ‘লালসালু’র জন্য বাঙালি পাঠকের কাছে বিখ্যাত। তাঁর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে যায় উপন্যাসটির কথা। কিন্তু আমার মনে হয়, তাঁর চারটি উপন্যাসের মধ্যে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ সর্বার্থে সেরা। শুধু তাঁর উপন্যাসগুলোর মধ্যেই নয়, বিষয় ও শিল্পবিচারে বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ ব্যতিক্রমধর্মী এক সেরা উপন্যাস। উপন্যাস তো বানিয়ে তোলা একটা ব্যাপার। বিষয়, আঙ্গিক ও ভাষা দিয়ে কিভাবে উপন্যাস বানিয়ে তুলতে হয়, তার খানিকটা শিখেছি ওয়ালীউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ পড়ে। ব্যক্তি ও সমাজজীবনের সংকটের রহস্য এক শৈল্পিক-জটিলতায় এই উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন ওয়ালীউল্লাহ। আঙ্গিক প্রকরণে পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকলেও এর সমাজজীবন, পরিবেশ ও চরিত্রাদি স্বদেশীয়। দরিদ্র মহকুমা শহর কুমুরডাঙ্গার জনজীবন, স্টিমারঘাট উদ্বোধনকালে স্থানীয় হিন্দু জমিদারকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তাঁর লাঠিয়াল বাহিনীর তত্পরতা, বাঁকাল নদীতে চর পড়ায় স্টিমারঘাট বন্ধ হওয়া, চাকরি হারানো কর্মচারী খতিব মিঞার অসহায়ত্ব, বন্ধ ঘাট নিয়ে কফিল উদ্দিন উকিলের ধারণা, তা চালুর জন্য তাঁর প্রচেষ্টা, নতুন হাকিম মুহাম্মদ মুস্তফা ও তাঁর বাগদত্তা খোদেজার আত্মহত্যার রহস্য, সমাজের রোগগ্রস্ত মানুষ সম্পর্কে ডাক্তার বোরহানউদ্দিনের ধারণা, মানুষের নদীর কান্না শোনা প্রভৃতি বিষয় ওয়ালীউল্লাহ যে শিল্পকুশলতায় উপস্থাপন করেছেন, তার নজির বাংলা উপন্যাসে এর আগে ছিল না। তবারকের দৃষ্টিকোণ থেকে ধরা পড়ে কুমুরডাঙ্গা জীবনের ইতিহাস, বাঁকাল নদী মজে যাওয়ার ফলে বা নদীতে চর জেগে ওঠার ফলে বস্তুগত জীবনের ক্ষয়ক্ষতির ইতিহাস, সেই সঙ্গে উঠে আসে নানা বৃত্তির নর-নারীর জীবনের বিশ্বাস, সংস্কার, দ্বন্দ্ব, ধীরে ধীরে হতাশা থেকে প্রত্যাশায় উত্তরণেরও ইতিহাস। গোটা উপন্যাসে একটা ঘোর নির্মাণ করেছেন ওয়ালীউল্লাহ। পাঠককে হাতে ধরে সেই ঘোরের মধ্যে তিনি ঢুকিয়ে দেন। পাঠক ঘুরপাক খেতে থাকে সেই ঘোরে। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে একেবারে শেষ থেকে, অর্থাৎ সব কিছু ঘটে যাওয়ার পর। এ ক্ষেত্রে চেতনাপ্রবাহরীতিতে ফ্ল্যাশব্যাক করে সমগ্র বিষয়টিকে তুলে এনেছেন তিনি। এক স্টিমারের যাত্রা থেকে গন্তব্যে পৌঁছার মধ্য সময়ে চেতনাপ্রবাহরীতিকে অবলম্বন করে কুমুরডাঙ্গার যে সমাজ ও মানুষকে তুলে ধরেছেন, তা আসলে পূর্ববঙ্গের এক সামাজিক ইতিহাস। ব্যক্তি থেকে পরিবার ও সমাজ, ব্যক্তিচেতনা থেকে সমন্বিত সমাজচেতনা এখানে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যবচ্ছেদ করেছেন। বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ একটি স্টেশন। উপন্যাসের পাঠকদের এখানে এসে থামতেই হবে।
Profile Image for Tareq Ul.
31 reviews4 followers
December 29, 2019
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাশিল্পী। চেতনা এমনকি সার্বিক দিক থেকে তার উপন্যাস জীবনবাদী। বিষয় ও শিল্প বিচারে বাংলা উপন্যাসের ব্যতিক্রমধর্মী, অভিনব ও গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস কাঁদো নদী কাঁদো।
কাঁদো নদী কাঁদো শুরু হয়েছে একেবারে শেষ থেকে অর্থাৎ সবকিছু ঘটে যাওয়ার পর। এক্ষেত্রে চেতনাপ্রবাহরীতিতে ফ্ল্যাশব্যাক করে সুকৌশলে সমগ্র বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে।
উপন্যাসটির কাহিনী গড়ে উঠেছে বাঁকাল নদী ও কুমুরডাঙাকে কেন্দ্র করে। এই দরিদ্র মহকুমা শহরের জনজীবনের বর্ণনা ফুটে উঠেছে। লেখক কুমারডাঙা ও তার লোকদের সম্পর্কে বলেন,

"কুমুরডাঙার লোক গুলো হিংসুটে এবং নীচমনা যে নিজের নাক কেটেও পরের ক্ষতি করবার জন্য প্রস্তুত। অবশ্য কুমুরডাঙার অবস্থা তেমন ভালো নয়। রাহজানি, খুনখারাবী, নারী ধর্ষন এর মতো দারিদ্র্যও নৈতিক অবনতির একটি লক্ষন।"

কুমুরডাঙ্গার একমাত্র স্টিমারঘাট উদ্বোধনকালে স্থানীয় হিন্দু জমিদারকে আমন্ত্রণ না জানানোর ফলে তার লেলানো লাঠিয়ালদের দৌরাত্ম্য তথা প্রতিশোধস্পৃহা বা পেশিশক্তির আধিপত্য যেমন প্রকাশ পেয়েছে ঠিক তেমনিভাবে বাকাল নদীতে চর পড়ায় অনিশ্চিতকালের জন্য তার স্টিমারঘাট বন্ধ হওয়া আর তাতে চাকরি হারানো কর্মচারী খতিব মিঞার অসহায়ত্ব ও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া বন্ধ ঘাট নিয়ে উকিল কফিল উদ্দিনের ধারণা, তা চালুর জন্য তাঁর তথাকথিত সংগ্রাম বা প্রচেষ্টা, নতুন হাকিম মুহাম্মদ মুস্তফা ও তাঁর বাগদত্তা খোদেজার মৃত্যু বা আত্মহত্যা রহস্য, তাৎপর্যপূর্ণ এক নির্মোহতায় আক্রান্ত ডাক্তার বোরহানউদ্দিন – সমাজের রোগগ্রস্ত মানুষ সম্পর্কে তার ধারণা-বিশ্বাস, মানুষের নদীর কান্না শোনা প্রভৃতি বিষয় যে শুধু এক নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে তা নয়, এসব এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশেস্নষণ করে তাতে অভিনব মাত্রা দেওয়া হয়েছে।


একদিকে কুমুরডাঙ্গার মানুষের জীবনোপাখ্যান, অপরদিকে শুকিয়ে যাওয়া বাকাল নদীর প্রভাবতাড়িত কুমুরডাঙ্গার মানুষের ব্যতিব্যস্ত জীবন ও নিসর্গ, বাস্তব ও পরাবাস্তব, বিশ্বাস ও সংস্কার সবকিছু মিলে অস্তিত্ববাদ ও নিয়তিবাদের সমন্বয়ে বাংলা উপন্যাসে এক অভিনব মাত্রা যোগ করেছে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’।
Profile Image for Gain Manik.
335 reviews4 followers
March 6, 2024
সম্প্রতি দেখলাম ফেসবুকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর একটা ছবি খুবই প্রচারিত হচ্ছে। সবাই তাজ্জব বনে যাচ্ছে যে এরকম ইউরোপীয় এট্যায়ারে কীভাবে লালসালু বা বহিপীর লিখবে। লালসালুর লেখক হবে রোগা পাতলা এনিমিক, চুল হব ধূসর পাঞ্জাবি, ফতুয়া হবে ছেঁড়া। কিন্তু না সে তো দারুন স্মার্ট, আধুনিক পোশাক। এটা মনে হয় কেউ সহ্য করতে পারছে না।

লালসালু পাঠ্যব‌ইতে পড়েছিলাম, তখনই একটা আচ্ছন্নতা তৈরি হয়ে ছিল। যাইহোক পরীক্ষা এসে যায় , অজান্তেই সৈয়দ সাহেব বিস্মৃত হয়ে যান। কিন্তু লেখক পরিচিতিতে বিখ্যাত সাহিত্যকর্মে কাঁদো নদী কাঁদো সাবকনশাসে থেকে গেল। পরে একদিন যখন হঠাৎ এই নাম সামনে এল তখনই পড়া শুরু করি। ছোট কিন্তু জটিল উপন্যাস। রেট্রোস্পেকটিভ। মোহাম্মদ মোস্তফা কেন আত্মহত্যা করে আর কোন শোকেই বা নদী কাঁদে এরকমই একটি গল্প তবারক বলে যান তার জলযানের সহযাত্রীদের, উপন্যাসের কথক‌ও থাকেন এই জলযানে। গল্পের প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে সুচারুভাবে। বোঝা যায় ওয়ালীউল্লাহ এর রক্তে বাস করত পুরো বাংলা, তাইতো মুক্তিযুদ্ধে চলাকালীন স্ট্রেস ইনডিউসড স্ট্রোকে উনি মারা যান। বেঁচে থাকলে না জানি আমাদের আর অনুশোচনা থাকতো না যে মুক্তিযুদ্ধের উপর আমাদের কেন কোন ক্লাসিক উপন্যাস নেই। সৈয়দ সাহেব তাহলে হয়তো লিখতেন চাঁদের অমাবস্যা কিংবা কাঁদো নদী কাঁদো'র মত কোন কালোত্তীর্ণ কোন রচনা।স্ট্রিম অব কনশাসনেস আর ম্যাজিক রিয়ালিজমের এক আশ্চর্য মিলন। যেন মার্কেস আর জয়েস সহজিবী বা এক দেহে লীন হয়ে আমার সামনে প্রকট আকার ধারণ করেছেন।
Profile Image for Kafil Recherche.
61 reviews2 followers
April 9, 2023
অদ্ভুত এবং সুন্দর একটি উপন্যাস সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচিত ”কাঁদো নদী কাঁদো” ; যা খুব সম্ভবত চেতনাপ্রবাহরীতিতে রচিত প্রথম বাংলা উপন্যাস।
“লালসালু” ও “চাঁদের অমাবস্যা” উপন্যাস দুটি পড়ার পর বহুদিন ধরে এই উপন্যাসটি পড়ার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। অবশেষে পড়ে ফেললাম। একদিকে যেমন মানসিক পরিতৃপ্তি কাজ করছে, সেই সাথে আরো অনেক অনেক বই পড়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে।

গঠনগত দিক থেকে উপন্যাসটি খুব পাশ্চাত্য ধর্মী, কিন্তু বিষয়বস্তুর দিক থেকে খুব প্রাচ্য ধর্মী। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে — একটি খাঁটি পূর্ববঙ্গীয় উপন্যাস, যা রচিত হয়েছে পশ্চিমা ঘরনায়।

নৈরাশ্যবাদ, অস্তিত্ববাদ ও অদৃষ্টবাদের এক অদ্ভুত কিন্তু চরম সমন্বয় এই উপন্যাসটি। আমার অতি পছন্দের তিনটি থিম। উপন্যাসটি শুরু হয় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। চেতনা প্রবাহ রীতিতে রচিত উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে বাকাল নদীর তীরবর্তী কুমুরডাঙ্গা শহর ও সেখানে বসবাসকারী মানুষজনকে নিয়ে। খুব বাস্তব ও স্বাভাবিক প্রতিটি চরিত্র। কিন্তু তাদের সাথে ঘটে যায় কিছু অবাস্তব ও অস্বাভাবিক ঘটনা। আসলেই কি এগুলো অবাস্তব ও অস্বাভাবিক?

ধীরে ধীরে পড়েছি, আর মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছি উপন্যাসটি। যেন হাতে উষ্ণ চায়ের কাপ নিয়ে একচুমুক-দুইচুমুক চা পান করেছি আর হারিয়ে গিয়েছি চিন্তার এক জগতে, অথবা কল্পনার রাজ্যে। আবার একচুমুক, দুইচুমুক।

ভোগ নয়, উপভোগ করেছি এই উপন্যাসটি।
Profile Image for Hossain Hanif.
12 reviews1 follower
October 8, 2025
এত দেরিতে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ পড়ায়া আফসোস হইতেছে, কেন আরও আগে পড়লাম না! শেষ হওয়ার পর মনে হইলো, কেন এত তাড়াতাড়ি শেষ হইলো!
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রায় সব গল্প পড়া। তাও নাবালক থাকতে। আমার শুরুর দিকের গল্পগুলা লেখার সাহস পাইছিলাম সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্প পইড়াই। উপন্যাস লালসালুও সেই সময়েই পড়া। বইগুলা হারায়া ফেলছি সব 🙁
কাঁদো নদী কাঁদো পড়তে গিয়া চমকে উঠছিলাম। যেন শহীদুল জহির পড়তেছি! যেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গদ্যেরই আপগ্রেড করছেন শহীদুল জহির। যদিও অনেক পার্থক্য আছে। দুজনের রসবোধের ব্যাপক পার্থক্য খেয়ার করার মতো। কিন্তু গদ্যের বুনিয়াদের কথা যদি বলেন, তাহলে এই কথা বলতে দোষ নাই। এবং অবশ্যই এইটাকে আমি ভালো ঘটনা হিসাবেই পড়তে চাই।
কাঁদো নদী কাঁদো পড়তে গিয়া মনে হইলো, তুলনা করতে গেলে লালসালুর থেকে কাঁদো নদী কাঁদো অনেক অনেক ভালো উপন্যাস। দুঃখের কথা যে আমাদের ওয়ালীউল্লাহ পাঠ শুরু হয় লালসালু দিয়া।
চাঁদের অমাবস্যা পড়ি নাই এখনো। শিগ্গির পইড়া ফেলমু।
Profile Image for Subhasree D. .
14 reviews2 followers
February 14, 2024
এই বইটি প্রথমবার পাঠ করা মানে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া । এক মরণাপন্ন নদীর কথা যে বলে, তীরের কত মানুষের কত কথা কতরকমে বলে, আদপে এই উপন্যাস গল্প বলতে বলতে এগোয় নদীধারার মতোই -- অনেক গতিতে অনেক পথে বহু বর্ণের সমাহার জুড়ে জুড়ে । জীবনযাত্রার নিরন্তর কন্ঠস্বরে এই উপন্যাসে উচ্চারিত হয় সাধারণ মানুষের ততোধিক সাধারণ ঘটনাবলী কিন্তু যা লেখকের লেখায় পড়ে অদ্ভুত লাগে, ভাষাতীত অনুভূতির সঞ্চার ঘটে বোধে । বড় প্রিয় হয়ে থাকলো এই বই ।
Profile Image for Shariful Islam.
Author 4 books22 followers
December 29, 2024
ঔপন্যাসিক শহীদুল জহিরের এক সাক্ষাৎকারে প্রথম এই বইয়ের নাম পড়েছিলাম। শহীদুল জহির তার লেখায় জাদু বাস্তবতার প্রেরণা হিসেবে এই বইয়ের নাম উল্লেখ করেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ'র লালসালু আর চাঁদের অমাবস্যা আগে পড়া ছিলো। শহীদুল জহির না বললে এই বই হয়তো পড়তাম না। নামের কারণে পড়া হতো না। নামটা পড়ে মনে হয়েছিলো দেশাত্মবোধক একটা ভাব আছে। কিন্তু না। এই বই আমাদেরকে এই দেশ, এই জগৎ ছাপিয়ে অন্য আরেক জগতে নিয়ে যেতে সক্ষম। সেটা হলো মানুষের ভেতরের জগৎ। সাহিত্যে এটা এক অমূল্য রতন।
Profile Image for Beauty Rahman.
33 reviews7 followers
July 17, 2025
এত চমৎকার কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। মানুষের চরিত্রের এত সুক্ষ্ম বর্ণনা সচরাচর পড়িনি।
মানসিক ব্যাপার বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, চরিত্রদের স্বাভাবিক কথোপকথন খুব কম কিন্তু তাদের অবচেতন মনের ভাবনাগুলো নিখুঁতভাবে স্থান পেয়েছে।
একদিনের স্টিমারযাত্রায় দু'জনের বয়ানে কুমুরডাঙার মানুষের জীবনযাপন এবং বিশেষ করে একজন মানুষের কথাই শৈল্পিক নৈপুণ্যে উঠে এসেছে।
অতীত বর্তমানের একত্রিত এ চিত্র কখনো জটিল মনে হতে পারে তবে সবশেষে মুগ্ধ হবার মতোই।
Profile Image for Zaba Humayra.
1 review
Read
June 29, 2022
অদ্ভুত কিছু চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন ওয়ালীউল্লাহ সাহেব।দুইবার পড়ে ফেলেছি,দুই বার দুই রকম অর্থ বের হয়েছে।অনেকদিন এরকম চমকিত হই না।
এমনভাবে পাঠকদের খেলিয়ে নিজের ইচ্ছামত নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো এবং সাথে সাথে দর্শনকে হালকা টাচ করে পাঠকমনে প্রচুর প্রশ্নের উত্থাপন- ওয়ালীউল্লাহর এককথায় অনবদ্য,মাস্টারক্লাস একটা উপন্যাস।
Profile Image for Mysha Tasnim.
6 reviews1 follower
October 4, 2024
এ উপন্যাসের শিল্প কৌশলের মূল ভিত্তি হচ্ছে চেতনাপ্রবাহরীতি বা Stream of consciousness. এই চেতনাপ্রবাহরীতি বলতে বুঝায় এমন এক বর্ননাত্মক কৌশল যা ব্যক্তিক বা সমন্বিত চেতনায় বহমান বিচিত্র চিন্তা ও অনুভবকে কথাসাহিত্যে রূপ দেয়। এ রীতিতে গল্পের কাহিনী আখ্যানধর্মী নয়, বরং কাল-পারম্পর্যহীন ও মনোবিশ্লেষণাত্মকধর্মী হয়।
Displaying 1 - 30 of 39 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.