Munier Chowdhury (Bangla: মুনীর চৌধুরী), born in 1925 at Manikganj, Dhaka, hailed from Noakhali, was a Bangladeshi educationist, playwright, literary critic and political dissident. He's the brother of Kabir Chowdhury.
Munier studied English literature for his Bachelors degree (with honors, 1946) and Masters (1947) at the Dhaka University. In 1954, he completed a second Masters degree, summa cum laude, in Bengali. In 1958, he obtained another Masters in Linguistics from Harvard University. He joined the Dhaka University in 1950 and taught both in English and Bengali language departments between 1950 and 1971. Students flocked to his class, many from other departments, as he lectured in his inimitable fashion on Mir Mosharraf Hossain, Bankim Chandra and Rabindranath, among others. To this day he is fondly remembered as an extraordinary teacher who was able to kindle in his students a genuine love for great literature. He was honored with Bangla Academy Award in 1962.
Munier Chowdhury actively participated in the Language Movement of 1952, and was imprisoned by the Pakistan government. He wrote his famous symbolic drama, Kabar (The Grave) in Bengali during his imprisonment. 'Kabar' is a shadow of Irwin Shaw's 'Bury the Dead'. He also fought against any type of cultural repression during the late 1950s and 1960s. In 1967, he protested the Pakistan government's ban on Tagore songs on radio and television. In the late 1960s there was a movement in Pakistan to replace the Bengali language alphabet with the Arabic alphabet. As a linguist and writer, Munier Chowdhury protested this move to undermine the native language of East Pakistan. He actively participated in the non-cooperation movement during the early part of 1971 and renounced his award Sitara-e-Imtiaz (awarded by Pakistan Govt in 1966).
After the Pakistani army crackdown in 1971 in the Dhaka University area from which Munier Chowdhury luckily escaped like many, he moved to his parents' house but he couldn't mentally adjust to the idea of fleeing from his beloved motherland. He preferred to stay back and surrendered to his 'fate'.
On 14 December, 1971 Munier Chowdhury, along with a large number of Bengali intellectuals, educators, doctors and engineers, was kidnapped, later tortured and executed by the Pakistan Army and its Bengali collaborators Al-Badr, Al-Shams, only 2 days before the end of the Liberation War. His dead body could not be identified. A witness who survived the killing had narrated how he recognized Munier as he screamed while his fingers were chopped off. "Have mercy" that is all Munier had said. As this was being done the butcher said, "write your famous essays on Rabindranath Tagore." That was the last that anyone saw of him.
"কবর" নাটকটির কাহিনী রাতের মাত্র কয়েক ঘন্টার। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত। মুর্দা ফকির কবরের বাসিন্দা। সে মৃত মানুষের সাথে অহরহ কথা বলে। ভাষা শহীদদের প্রতিমূর্তি কল্পনা করে তাদের মুখে সংলাপ যোগ তাদের তিনি পরিচয় দেন। মুর্দা ফকির সব মৃতদের উঠে আসতে আহ্বান করেন। বলেন-"তোরা কোথায় গেলি? সব ঘুমিয়ে নাকি? উঠে আয়। তাড়াতাড়ি উঠে আয়। সব মিছিল করে উঠে আয়। গুলি, গুলি হবে। ফুর্তি করে উঠে আয়। কবর খালি করে উঠে আয়।"
"কবর" নাটকে নাট্যকার যা ব্যক্ত করেছেন। আমরা ৭১রের মুক্তিযুদ্ধে তা কিন্তু ফলস্বরূপ পেয়ে গেছি। নাট্যকার চেয়েছেন, মারা যাওয়া শহীদ গুলো আবার উঠে আসুক এবার তো আর তাদের মৃত্যুর ভয় নেই। আমরা তার বাস্তবতা পেয়েছি। কেন না স্বাধীনতার জন্য যারা সংগ্রাম করেছে, ভাষা আন্দোলনের শহীদের একবারের মৃত্যুতে তারা মৃত্যু ভয় ভুলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে। যেভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলা কে কেড়ে এনেছে, তেমনি ভাবে স্বাধীন দেশের পতাকাও তারা শোষণকারীদের থেকে কেড়ে এনেছে। এটাই নাটকের বাস্তব সার্থকতা।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক গল্প-কবিতা-নাটক রচিত হয়েছে। কিন্তু মুনীর চৌধুরীর "কবর" নাটক ভাষা অবলম্বন করে রচিত হয়েই পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাটক রচনায় উৎসাহ দেয়। আমাদের বাঙালির জাতীয় জীবনে একুশ যেমন অনস্বীকার্য এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রে বিরাজ করে, তেমনি একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা কবর নাটকও পরবর্তী শিল্পকর্মে অবদান রেখেছে।
উপন্যাস মনে করে বইটা পড়তে গিয়ে যখন দেখি নাটক তখন হতাশ হয়েছিলাম। কারন নাটক আমার কাছে তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু ‘কবর’ নাটকটি পড়ে শেষ করার পর আমি মুগ্ধ। এক কথায় অসাধারণ লেগেছে।
"এই শিকল পরা ছল, মোদের এই শিকল পরা ছল এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয় ওরে, ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন ভয় বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয় ওরে, ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন ভয়"
১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাস, ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় থাকার অপরাধে রাজবন্দি হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে বন্দী ছিলেন মুনীর চৌধুরী। বন্দী জীবনে করার তেমন কিছুই ছিল না, অলস সময়ের বেড়াজাল যেন তাঁকে ঘিরে ধরছিল। এমনই এক সময়ে ১৭ জানুয়ারি তাঁর কাছে একটি চিঠি এল, প্রেরক ছিলেন আরেক রাজবন্দী রণেশ দাশগুপ্ত। অসাধারণ এক প্রস্তাব ছিল সেই চিঠিতে, প্রথম শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লেখার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
জেলখানায় নাটক মঞ্চস্থ করা চাট্টিখানি কথা নয়। তাছাড়া জেলে ওমন স্টেজ, আলোর ব্যবস্থা কোথায় যে ঠিক করে নাটক মঞ্চায়ন হবে! সবকিছু মাথায় রাখতে হয়েছিল মুনীর চৌধুরীর। তিনি এসব মাথায় রেখেই লিখে ফেললেন ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিখ্যাত সেই নাটক, যার নাম "কবর"। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত এই নাটক এখনো বাংলা সাহিত্যে সমাদৃত। এ ব্যাপারে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুনীর চৌধুরী নিজেই বলেছিলেন,
▪️"জেলখানাতে নাটক রচনার অসুবিধা অবশ্যই ছিল। এ অসুবিধাটুকু সামনে ছিল বলেই তো 'কবর' নাটকটিতে বেশ কিছু নতুনত্ব আনতে হয়েছে। আট - দশটি হারিকেন দিয়ে সাজাতে হবে, সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই ‘কবর’ নাটকটিতে আলো - আঁধারি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।"
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যেই নাটকটি জেলখানায় সর্বপ্রথম মঞ্চস্থ হয়। জর্জ বার্নাড'শর ব্যঙ্গাত্মক জীবন - জিজ্ঞাসা মুনীর চৌধুরীকে বরাবরই প্রভাবিত করেছে, ‘কবর’ নাটকটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ভাষা আন্দোলনে বহু মানুষ শহীদ হলেও অল্প ক'জনের পরিচয় আমরা জানতে পেরেছিলাম; কত শত লাশ গুম করা হয়েছিল, তার প্রকৃত হিসাব আজও জানা যায়নি। লাশ গুমের এই ঘৃণ্য রাজনীতিকে উপজীব্য করেই নাটকটির পুরো গল্প এগিয়ে গেছে।
নাটকটির সমগ্র ঘটনাস্থল ছিল গোরস্থান। ভাষার জন্য জীবন দেয়া এদেশের বিল্পবী দামাল ছেলেদের লাশগুলো ধামাচাপা দিতে আসা এক ক্ষমতাসীন নেতা এবং নেতাদের সাহায্যকারী যেমন থাকে তেমনি সরকারের পাচাটা গোলাম ইন্সপেক্টর হাফিজ। এদের সাথে আছে আরো কিছু মানুষ। সকালের আগে লাশগুলো ধামাচাপা দিতে হবে। মাটিতে গনকবরে চাপা দিয়ে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চান নেতা। সরকার এমন উটকো ঝামেলা নিয়ে চলবে না।
সবকিছু যখন পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছিল, তখুনি মুর্দা ফকির নামক এক চরিত্রের আগমন ঘটে, আধপাগল এই মানুষটি যেন সমাজের বিবেক হিসেবে আবির্ভূত হন। লাশগুলো এখনো জীবিত আর তাঁদের কবর থেকে উঠিয়ে তিনি মিছিল করবেন– এমন অদ্ভুত একটি কথা বলে নেতা এবং হাফিজকে ভড়কে দেন মুর্দা ফকির। এরপর কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার আবর্তনে এগিয়ে গেছে সম্পূর্ণ গল্প।
একটি নাটক সার্থক করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের। চরিত্রগুলো যত শক্তিশালী হবে, নাটকের বুনিয়াদ তত মজবুত হবে। 'কবর' নাটকটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না, তিনটি কেন্দ্রীয় চরিত্র পুরোটা সময় দারুণভাবে নাটকটির গল্প টেনে নিয়ে গেছে।
▪️ চরিত্রায়ন ▪️
▪️নেতা: একজন আগাগোড়া অসৎ মানুষ, ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে ভাষা আন্দোলনের মতো মহান এক ঘটনাকে ‘সামান্য গণ্ডগোল’ হিসেবে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন। পাকিস্তানি সরকার অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়েছে সেটা নেতা মানতে নারাজ। তাঁর ভাষ্যমতে ছাত্ররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই নেতা রাতের অন্ধকারে যেভাবে ছাত্রদের লাশ কবর দিতে এসেছেন তা ঘৃণিত লেগেছে।
তবে এই নেতার চরিত্রকে মুনীর চৌধুরী এত নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন যে রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত এসব নেতাদের হাবভাব কিংবা কাজকর্ম দেখলেই বোঝা যায়। মদ্যপ হয়ে নেশার ঘোরে হাফিজকেও অনেক কিছু বলেছিল এই নেতা। আবার বারবার ক্ষমতার প্রভাবে পিস্তলের ভয়ও দেখিয়েছেন।
▪️হাফিজ: হাফিজ ছিল একজন চাটুকার পুলিশ কর্মকর্তা, নাটকের সিংহভাগ সময় জুড়ে তাঁকে নেতার চামচামি করতে দেখা গেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে নিজের আদর্শ, বিবেককে বিসর্জন দিতে পারে টাকার লোভে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাবে তা হাফিজকে দেখে বোঝা যায়। সারাটা নাটক জুড়ে সে নেতার গোলামী করে গেছে।
আমাদের সমাজেও এমন চাটুকারিতার নজির দেখা যায়। যেখানে বিবেক যাক চুলায় এদের দরকার শুধু টাকা কিংবা ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে আরামে থাকা। নাহলে চোখের সামনে অন্যায় দেখেও কীভাবে সেই অন্যায়ের সহযোগিতা করা সম্ভব! মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ এই হাফিজকে কিছু জায়গায় মনে হয়েছে এ যেন সমাজের এক চরিত্রের প্রতিনিধি।
▪️মুর্দা ফ��ির: পুরো নাটকটিকে অন্য উচ্চতায় নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে মুর্দা ফকির। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষে নিজের চোখের সামনে সমস্ত আপনজনকে মারা যেতে দেখেছে, মানুষগুলোকে কবর দেওয়ার সামর্থ্যও তাঁর ছিল না। সেই থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গোরস্থানের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায় সে, নাম হয় মুর্দা ফকির।
আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র এই নাটকে। যে অন্যায় ওই চাটুকারিতা করা হাফিজের চোখে পড়েনি তা এই পাগল মুর্দা ফকির ঠিক বুঝলো। লাশগুলোর ট্রাকে এক নজর দেখে সে বললো এরা তো কেউ মরেনি, এরা মরবে না, এরা কবরে থাকবে না কেউ, এরা বারবার ফিরে আসবে। আসলেই কিন্তু তাই হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে। এক ছাত্র গুলি খেয়েছে ওমনি হাজার হাজার ছাত্র জনতা দাঁড়িয়ে গেছে ভাষার দাবিতে। মুর্দা ফকিরের কথা আপাতদৃষ্টিতে পাগলের প্রলাপ মনে হলেও এর কিন্তু গভীর তাৎপর্য আছে।
লেখক মুর্দা ফকিরের মাধ্যমে তুলে এনেছেন প্রতিবাদের ভাষা। যে ভাষা এই কবর নাটকে মূখ্য হয়ে উঠেছে। যেখানে মুর্দা ফকিরের মাধ্যমে মুনীর চৌধুরী হয়তোবা নিজের প্রতিবাদটাই করে গেছেন।
▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া ▪️
কবর নাটক নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করতে গিয়ে আমি জানতে পারি যে ১৯৩৬ সালে রচিত মার্কিন নাট্যকার আর উইন শ’র 'বেরি দ্য ডেড' এর প্রভাব রয়েছে ‘কবর’ নাটকে। নাট্যকার মুনীর চৌধুরী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। কবরে যেতে অস্বীকার করার ব্যাপারে দুই নাটকের মাঝেই মিল রয়েছে, তবে তা কেবলমাত্র ভাবগত ঐক্যের মিল। মুনীর চৌধুরী তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তায় নাটকটির বুনিয়াদ যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন, তা এক কথায় অসাধারণ। তাছাড়া ‘বেরি দ্য ডেড’ নাটকে মৃত সৈনিকদের বিদ্রোহকে সত্য বলে তুলে ধরে কিছুটা আধিভৌতিক ঘটনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটা প্রতিবাদী ভাব তুলে ধরে হয়েছিল।
কিন্তু ‘কবর’ নাটকে নেতা ও হাফিজের মাতাল অবস্থায় অপ্রকৃতিস্থ দেখানো হয়, ফলে শহীদদের কবরে যেতে অস্বীকার করার দৃশ্যটির যৌক্তিক কারণ হিসেবে নেতা ও হাফিজের বিভ্রমকে প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই মিল থাকার প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদ বলেন,
"এই সামান্য ভারসাম্যটির জন্য 'কবর'কে অনুসারী নাটক বলা যাবে না। এমন হলে পৃথিবীর অধিকাংশ শ্রেষ্ঠ নাটককে কাহিনী ভাগের জন্য অনুকৃতির দায় বহন করতে হবে।"
সবচেয়ে বড় কথা এই নাটক তৎকালীন পাকিস্তান শাসকদের মুখে চপেটাঘাত বলা যায়। কার বুকের পাটা ছিল যে এমন করে প্রতিবাদী নাটক লিখবেন শাসকদের বিরুদ্ধে? মুনীর চৌধুরীর মতো মানুষ সেটা করে দেখিয়েছেন। এবং এই নাটকের প্রতিটি চরিত্র এবং প্লট এত শক্তপোক্ত ভাবে তৈরি যে কবর নাটক নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত এমন নাটক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে দ্বিতীয় নেই। মুনীর চৌধুরী আপন মেধায় বিকশিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধে এই মানুষটির প্রতিবাদ ছিলো এবং এইজন্যই বোধহয় মুনীর চৌধুরীকে হারিয়ে যেতে হয়েছিল স্বাধীনতার প্রাক্কালে। কিন্তু তাতে কী তাঁর আদর্শ মোছা গেছে?
না, যায় না। আর যায় না বলেই যুগের পর পর ‘কবর’ নাটকটিকে শ্রদ্ধাভরে মানুষ স্মরণ করবে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে যত নাটকই হোক, মুনীর চৌধুরীর 'কবর' নাটকটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। মুনির চৌধুরীর আদর্শ, ন্যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ এই কবর নাটকে প্রতিয়মান।
▪️ বইয়ের নাম: "কবর" ▪️লেখক: মুনীর চৌধুরী ▪️ ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫
স্কুলে পাঠ্য থাকা 'কবর' সম্ভবত একমাত্র নাটক, যেটায় আমি খানিকটা অভিনয় করেছিলাম। আর এটা নিয়ে পরীক্ষার খাতায় এত বেশি লিখতে হয়েছে যে, রিভিউ লেখার প্রয়োজন নাই।
পুরাতন মুর্দারা লড়াই করে করে ক্লান্ত। বার বার উঠে এসে আর কতই বা লড়াই করবে? আর কতবারই বা স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট তারা ভোগ করবে কবর থেকে উঠে এসে। নতুন প্রজন্মের লড়াই লড়ে? আজ আর কেউ মুর্দা হতে চায় না। ভুল করে কেউ মুর্দা হওয়ার সাহস দেখালেও তার পাশে কেউ দাঁড়ায় না। পাছে নিজেও মুর্দা বনে যায়!
নেতা: পুঁতে ফেল।দশ -পনেরো- বিশ-পঁচিশ হাত যত নিচে পারো। একেবারে পাতাল পর্যন্ত খুঁড়তে বলে দাও। পাথর দিয়ে মাটি দিয়ে, ভরাট করে গেতে ফেল। কোনদিন যেন আর উঠতে না পারে।কেউ যেন টেনে ওপরে তুলতে না পারে। যেন মিছিল করতে না পারে,স্লোগান তুলতে না পারে,যেন চ্যাঁচাতে ভুলে যায়। । । । ।
মূর্তি: আমাকে শুতে যেতে বলছো মা? না । না। আমি শোব না। আমি এখন শোব না মা। আমি আর কোনদিন শোব না। একবার ঘুমিয়ে পড়লে ওরা আমাকে আর জাগতে দেবে না।
১৯৫৩ সাল, ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তাক্ত দিনের বর্ষপূর্তি- ঢাকার রাজপথ থেকে তখনও শুকোয়নি শহিদের রক্তের দাগ, কারাগারে বন্দি অসংখ্য আন্দোলনকারী। আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে বন্দিরা সিদ্ধান্ত নিলেন ভাষাদিবসের স্মরণে জেলখানাতেই একটি নাটক মঞ্চস্থ করার। রাজবন্দি কমিউনিস্ট নেতা রণেশ দাশগুপ্ত অনুরোধ করলেন মুনীর চৌধুরীকে- জেলখানায় মঞ্চস্থ করার উপযোগী একখানা নাটক লেখবার জন্য। তখন মুনীর চৌধুরী নিজেও একজন বন্দি হিসেবে জেলখানাতে আটক। জেলখানাতে যেহেতু সীমিত সুযোগ, নারী চরিত্র রাখার সুযোগ নেই, তাই সেরকম করেই একখানা নাটক রচনা করা হলো। নাটকের আয়োজন অতি সাধারণ, চরিত্র মোটে চারটি, ব্যাপ্তি মধ্যরাত থেকে ভোরের আলো ফোটা অবধি, গোরস্থানের আলোআধারি দৃশ্যপট। কিন্তু এক অঙ্কের এই নাটকটিই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো অনেক কিছু, শাসকশ্রেণির প্রতি হানল মোক্ষম আঘাত। দিনেদিনে এটিই হয়ে ওঠে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যতদিন বাঙালির ইতিহাস বাঁচবে, ততদিন উঠে আসবে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের প্রথম চরণ- ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস; আর যত দিন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জীবিত থাকবে, ততদিনই অবধারিতভাবে চলে আসবে সার্থক এই একাঙ্কিকার নামটি।
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র তিনটি: নেতা, যিনি অত্যাচারী শাসকযন্ত্রের প্রতিনিধি; ইন্সপেক্টর হাফিজ, শাসকযন্ত্রের হাতিয়ার; এবং মুর্দা ফকির, যে আবির্ভূত হয় জাতির বিবেকরূপে। ভাষা আন্দোলনের শহিদ হিসেবে আমরা যে-কজনের নাম জানি, '৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে এরচেয়ে অনেক বেশি মানুষ নিহত হন। তবে তাঁদের পরিচয় আমরা পাই না কেন? কেননা, সেইসব নাম না-জানা মানুষদের লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল রাতের অন্ধকারে। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লেখা হয় এ নাটকটি।
নাটকের শুরুতে আমরা দেখতে পাই- নেতা এসে তড়িঘড়ি করে লাশ কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন; আর সেই কাজে সহযোগিতা করে ইন্সপেক্টর হাফিজ। নেতার ভাষ্যে, ভাষা আন্দোলন হলো 'সামান্য গণ্ডগোল', আর ভাষাশহিদরা হচ্ছেন 'কিছু দুষ্টু ছেলে'। পুরো নাটকজুড়��� তিনি মদ খান, আর নির্দেশ দিতে থাকেন লাশ লোপাটের; তার ক্রমাগত মদ্যপান-ই যেন নির্দেশ করে তার নৈতিক চরিত্রের দিকে। এর সাথে যুক্ত হয় ইন্সপেক্টর হাফিজ, যার সাহায্যেই সমস্ত ঘটনা পরিচালিত হয়- লোপাট হতে থাকে সবকিছু। এ-পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা মাফিক চললেও হঠাৎ উদয় হয় মুর্দি ফকির; সে এসে সমস্ত ঘটনার নতুন রূপ দেয়। লাশগুলো যখন মাটির গর্তে ধামাচাপা দেওয়া হয়, তখন সে এসে দাবি করে- লাশগুলো জীবি���, তাদের গায়ে এখনও রক্তের স্পন্দন; অন্যদিকে সে মৃতের গন্ধ পায় নেতা ও তার সহযোগী ইন্সপেক্টর হাফিজের গায়ে। সত্যিই তো, যাঁরা শহিদ হয়েছেন ভাষার জন্য, যারা প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য; তাঁরা কখনও মরতে পারে না, তাঁরা কখনও হারিয়ে যেতে পারে না- দেশের মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সকল ভাষা শহিদদের। অন্যদিকে যে শোষকের নির্দেশে নির্যাতনের শিকার হলো দেশের মানুষ, ভাষার জন্য অকালে প্রাণ দিলো তাজা তাজা প্রাণ; তারাই আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, তারাই আজকে মৃত, তারাই বাতিল। মুর্দা ফকিরের এ দাবির পরে নেতাও যেন দেখতে পান জীবিত সেই লাশের সারি, যেন লাশগুলো উঠে এসে আবারও যাবে মিছিলে, আবারও করবে অধিকারের আন্দোলন। ক'টা বুলেট দিয়ে ঠেকানো যাবে সে মিছিল, ক'বার মারলে সত্যিই মরবে তাঁরা?
ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা হলেও এ নাটক মূলত তুলে ধরে পাকিস্তানোত্তর সমাজবাস্তবতা, রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতা ও সাংস্কৃতিক নিষ্পেষণকে। নাট্যকার নিজেও এ বিষয়ে বলেন, "নাটকটিতে শুধুমাত্র একুশের তাৎপর্য খোঁজা হলে খানিকটা ভুলই বরং করা হবে, হয়তো আর বেশি কিছু বলার চেষ্টা করেছি আমি। আরও বেশি কিছু।"
একটি নাটকের সফলতা নির্ভর করে এর দৃশ্যায়ন, চরিত্রায়ণ ও সংলাপের উপরে; সেদিক থেকে বলা যায়- নাটকটি অত্যন্ত সফল ও শক্তিশালী। তাছাড়া নাটকের সফল মঞ্চায়নও নাটকটিকে বাঁচিয়ে রাখে দর্শকদের মাঝে। নাটক-টি ১ম মঞ্চস্থ হয় ১৯৫৩ সালে- কারাগারে, বন্দিদের অভিনয়ে; এরপরে কারাগারের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ১৯৫৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নাটক-টি মঞ্চস্থ হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত, সারাদেশে এ নাটক-টি সফলভাবে মঞ্চস্থ হয়ে আসছে, আর সমাদৃত হচ্ছে সচেতন দর্শক ও পাঠকমহলে। এ নাটকের পরিসর অন্তত ছোট, বিষয়বস্তু জোরালো, চরিত্র ও সংলাপ দুর্দান্ত; এদিক থেকে ভাষা-আন্দোলনকেন্দ্রিক সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী রচনা হিসেবে নাটকটিকে চিহ্নিত করা হলেও অত্যুক্তি করা হবে না।
'কবর' মুনীর চৌধুরীর ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক একখানা নাটক। রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী স্লোগানে, আন্দোলনে মুখরিত হয়ে উঠে রাজপথ। এসময় পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার উপর গুলি বর্ষন করে। তখন অসংখ্য ছাত্র- জনতা নিহত হয়। এই সময় সব মৃতদেহ দাফন করার জন্যে তৎকালীন শাসকচক্রের দোসরেরা চুপিসারে গোরস্তানে নিয়ে যায়। তখন সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দলের নেতা, তাকে সাহায্যকারী পুলিশ অফিসার হাফিজ, দুর্ভিক্ষে সর্বহারা ঘর-সংসারহীন মুর্দা-ফকির, গোরস্তানের গার্ড এবং ভাষা আন্দোলনে নিহত দুই বীর সন্তানের কাল্পনিক ছায়ামূর্তির বাদপ্রতিবাদ ও আদেশ নির্দেশের সংলাপে জমাট বাঁধে কবর নাটকের কাহিনী। এই নাটক অসম্ভব মুগ্ধ করেছে আমাকে।
২১ শে ফেব্রুয়ারি ৫২' সালে ভাষা আন্দোলনে, মাতৃভাষার জন্য ছাত্র সমাজেরা যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাঁদেরকে পুলিশবাহিনিরা নির্বিচারে হত্যা করে যখন, মাটিচাপা দিতে চেয়েছিল, তার প্রতিবাদে, মুর্দা ফকির, মৃতদের কবর হতে উঠে আসতে আহ্বান জানান।
নাটকটি পড়তে গিয়ে, শামসুর রাহমানের 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতার একটি লাইন বারবার মনে পড়তেছিল, "একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনার রঙ"
মুনীর চৌধুরীর "কবর" শুধু একটা নাটক নয়—এটা যেন একটা সময়ের থাপ্পড়, একটা অদৃশ্য ঘুষি, যা এখনো আমাদের নাড়া দিয়ে যায়। ১৯৫০-এর দশকের রাজনৈতিক উত্তাল সময়ে লেখা এই একাঙ্ক নাটক আকারে ছোট হলেও এর গভীরতা বিশাল। আজকের জুলাই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে "কবর" পড়তে গিয়ে মনে হলো, মুনীর চৌধুরী যেন ভবিষ্যৎ দেখে গেছেন।
প্রথমেই বলি, এই নাটকটা পড়ার সময় আপনার গা শিরশির করবে। ভাষার শক্তি আর প্রতীকী উপস্থাপনার এমন মিশেল কমই দেখা যায়। নাটকের কেন্দ্রে আছে ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামের ছায়া, যেখানে বাঙালি জাতির চেতনায় প্রথম জাগরণ ঘটে। নেতা আর দারোগা সাহেবের মধ্যকার সংলাপ এতটাই তীক্ষ্ণ যে মনে হয়, যেন আজকের আমাদের চারপাশের ঘটনা গুলোই তুলে ধরা হয়েছে।
আর জুলাই বিদ্রোহের সাথে তুলনা করতেই হয়। সেই সময় যেমন তরুণরা বুকের পাটা দিয়ে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" স্লোগান তুলেছিল, আজকের তরুণদেরও ঠিক একইভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে দেখেছি। "কবর"-এর চরিত্ররা যেন আজকের তাদেরই প্রতীক।
তবে নাটকের সবচেয়ে মজার ব্যাপার? নাটকের নেতা আর দারোগা সাহেবের কথোপকথন পড়ে মনে হয়, আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র আর রাজনীতির হাল আজও একেবারে সেইখানেই আটকে আছে। মনে হলো, একটা টাইম মেশিনে করে ’৫০-এর দশক থেকে আমাদের বর্তমানে কেউ এই নাটকটা এনে দিয়েছে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। এই নাটকটা পড়ার সময় মাঝেমাঝেই হেসেছি—না, মজার জন্য নয়, বরং এটা ভাবতে গিয়ে যে আমরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে সেই পুরনো ভুলগুলোই করে যাচ্ছি। তবু আশা আছে। ঠিক যেমন মুনীর চৌধুরী আশার আলো দেখিয়েছিলেন তার নাটকের চরিত্রদের মধ্য দিয়ে, তেমনি আজকের বাংলাদেশও নতুন এক জাগরণের পথে এগোচ্ছে।
শেষ কথা, "কবর" পড়ুন। নতুন করে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমাদের সংগ্রামের পথ এখন কোন দিকে?
তিনটা নাটিকা আছে বইয়ে। ১. মানুষ ২. নষ্ট ছেলে ৩. কবর
"মানুষ" নাটিকাটি হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে লেখা। চলমান দাঙ্গার কোনো একদিনে এক মুসলিম পরিবারে চলমান টানাপোড়েন নিয়ে কাহিনী। ধর্মীয় বিভেদ থেকে উঠে গিয়ে মানবতার কথা বলেছেন এখানে মুনীর চৌধুরী। খুবই ছোট পরিসরের হলেও কাহিনী হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মত। রেটিং: ৫/৫
দ্বিতীয় নাটিকা "নষ্ট ছেলে"। দুই দৃশ্যের একটা নাটক। কাহিনী মূলত এক পরিবারের ঘর পালানো বিদ্রোহী এক মেয়েকে নিয়ে যার খোঁজে বাসায় পুলিশ তল্লাশী চলে। এর কাহিনীও বেশ ভালো লেগেছে। রেটিং ৪/৫
তৃতীয় নাটিকা "কবর"। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে লেখা। আন্দোলনে গুলিতে নিহতদের কোনো এক গোরস্থানে গণকবর দেয়া নিয়ে এক নেতা আর পুলিশের কথোপকথন উঠে এসেছে মূলত এখানে। কিছুটা ভৌতিক আবহে লেখা। রেটিং ৩.৫/৫
সিতারা ই ইমতিয়াজ, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর এ এক অমর সৃষ্টি। কারাগারে অবরুদ্ধ থাকাকালেই উনি ১৯৫৩ সালে এই নাটিকাটি রচনা করেন। অকিঞ্চন তদুপরি অকুতোভয় মূর্দা ফকির চরিত্রটিই মূলত মুনীর চৌধুরীর এই নাটিকাটির সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। মূর্দা অর্থাৎ গুলিবিদ্ধ লাশগুলোকে উঠে আসার জন্য তার সেই বিখ্যাত সংলাপটি এখনো গায়ে কাঁটা দেয় আমার।
মায়ের নিষেধ অমান্য করে দেশমাতৃকার টানে খোকারা বারবার মিছিলে যায়। ৫২, ৭১, ২৪ বা তার-ও অনেক আগে থেকে তারা মুর্দা হতে যায়। বৃটিশ রাজ, পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার এমনকি এদেশীয় এরশাদ-হাসিনারা তাদের কবরে পুঁতে ফেলতে চায় - যেন তারা কখনও উঠে আসতে না পারে। কিন্তু মুর্দারা শুধু উঠে আসতেই জানে। কিছুতেই যেন ভয়ঙ্কর শাসক-শোষক এবং তাদের বাহিনীরা তাদের চেপে রাখতে পারেনা।