Muhammad Abdul Hai was popular bengali author for his scholary Contributions of Bangla Literature. He was litterateur, editor, phonologist, novelist and professor also. Muhammad Abdul Hai was born in Mushidabad, India in 1919 in the village of Maricha. He spend his childwood and education life in various places, school and colleges. He passed High Madrasha Exam from Rajshahi Madrasha in 1936 and Intermediate Examination form Islamic Intermediate College, Dhaka in 1938. He Passed BA in Bangla (1941) and MA (1952) from University of Dhaka. He also obtain MA Degree from University of Landon in Phonology (1952). Muhammad Abdul Hai started his career as teacher of various government colleges. He joined in Bangla department of Dhaka University in 1949 and became professor in 1962. He was also editor of the half yearly literature magazine named Shahitya Patrika in 1956.Popular Books of Muhammad Abdul Hai are Bhasha O Shaihitya (1960), Bilete Share Satsho Din (1958), Dhoni Biggan o Bangla Dhoni Tottya (1964), Shahittya o Sangaskrity (1954), Toshamod o Rajnitir Bhasha (1960), Bangla Shahityer Eitbittya (Co Edited by Syad Ali Ahsan in 1956) etc. For his literary works and research in Bangla phonetics he got Bangla Academy Literary Awards in 1961. Muhammad Abdul Hai was died in serious rail way line accident on 03 June 1969 and His contributions is ended there.
বিলেত বলতে সাধারণত লন্ডন-আমেরিকাই বুঝে থাকি আমরা সুদূর সময় হতে। এই বইয়েও বিলেত বলতে কেবল লেখকের লন্ডন-বাস এবং লন্ডন-প্রীতি উঠে এসেছে।
আমি অবশ্য লন্ডনপ্রীতি এবং তুলনার ব্যাপারটা খুব খারাপভাবে নিইনি। তুলনা আমাদের সবার মধ্যেই বিদ্যমান। আমরা যখন কারো বাড়িতে বেড়াতে যাই, তখনও সেই বাড়ির ডিজাইন, পরিবেশ, রুচির সাথে নিজ বাড়ির তুলনা করি। এই তুলনা-মনোভাব গর্ব কিংবা তুচ্ছতা দুইভাবেই প্রকাশিত হয়। তবুও একবার মনে উঁকি দিয়েছিল... সে কি! দুইশ বছরের শাসনামলে ইংলণ্ডের ভূমিকা লেখক ১৯৫০ সালেই ভুলে গেলেন নাকি! পরে অবশ্য এই কথাটায় আমি একমত পোষণ না করে পারিনি– ''আমাদের দেশ দুশো বছর শাসন করে টাকা-পয়সা লুটে নিয়ে সে টাকা দিয়ে ওরা সব কিছু গড়েছে। এর মধ্যে কিছুটা সত্যি আছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের দেশের টাকা থাকলেও সৃষ্টি করার কোনো তাগিদই দেশের লোকের চরিত্রের মধ্যে নেই। আমরা যেখানে ক্ষয় করি এরা সেখানে জমা করে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে।"–বাক্যটিতে অমত না থাকলেও আবার 'কিছুটা সত্যি'র শব্দদ্বয়ে দ্বিমত আছে।
বলছিলাম ইংরেজ ঔপনিবেশিকে তাদের শাসনের কথা ভুলে গেলেন নাকি–পরক্ষণেই এত সভ্য জাতিটি কেন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শোষণ চালায় তা বুঝলাম–"সুয়েজের এপার পর্যন্ত তারা দেশী আচরণই বজায় রাখে, কিন্তু সুয়েজ পার হলেই তারা যেন খোলস ছেড়ে নতুন করে উগ্র হতে থাকে।"
এতবছর পরেও অবশ্য তুলনার জায়গাগুলো বদলায়নি বলে সেসব নিয়ে আর বলছি না। সত্যিই তো, স্বাধীনতার এতবছর পরও শিক্ষা, সংস্কৃতি, সৌন্দর্য-বর্ধন সবকিছুতে উল্লেখযোগ্যভাবে এখনো গুছিয়ে উঠতে পারিনি।
তথ্যে ঠাসা বই নয় বলে লেখকের লন্ডন নিয়ে উচ্ছ্বসিত এসব কথা পড়তে মন্দ লাগছিল না। কিন্তু লেখক বাড়াবাড়িতে চলে যাওয়ায় খানিকটা বিরক্ত হয়েছি। সারা ইংলণ্ডকে নাকি বেহেশতের মতো সাজানো হয়েছে– লেখক হয়তো আর যুতসই উপমা খুঁজে পাচ্ছিলেন না!?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্র হিসেবে বিএ এবং এমএ ক্লাসে প্রথম শ্রেণি পাওয়া মুহম্মদ আব্দুল হাইকে অনেকেই চিনেন বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন বইয়ের লেখক কিংবা ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে। মাধ্যমিকের 'ওকিং মসজিদে ঈদের জামায়াত' রচনাটি এই বই থেকেই সংকলিত করা হয়েছে।
১৯৫০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন ভাষা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লী, বাগদাদ, কায়রো, মিউনিখ ও আমস্টারডাম হয়ে অবশেষে লন্ডনে পা রাখেন। পূর্বপুরুষের শাসকদের জন্মভূমি এই ইংল্যান্ড। বইটিকে প্রবাস জীবনের স্মৃতি বললে ভুল হবে। কারণ পুরো বইটিতেই তৎকালীন সময়ের ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সংস্কৃতি ও শিক্ষার পরিপূর্ণ একটি চিত্র উঠে এসেছে। পাশাপাশি দেখা গেছে আমাদের দেশের তুলনামূলক অবস্থা। লেখক গিয়েছিলেন গবেষণার কাজে। ফলস্বরূপ সেখানে দুইবছরের বেশি সময় থাকতে হয়েছে। তখন সেখানে নানা দেশের নানা ধর্মের মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে লেখকের। বইটিতে একেবারে ঘরের আদব-কায়দা থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের জাতীয় সমাজব্যবস্থার এক বাস্তব চিত্র দেখতে পাই।
সময় পরিভ্রমণের মাধ্যমে যেন সেই ১৯৫০ সালের বিলেতে চলে গিয়েছিলাম। সেখানকার শিশুদের যে রকম শিক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তা যদি আমাদের দেশে প্রয়োগ করা হতো তাহলে আমরাও জগৎ বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব পেতাম। লেখক বারেবারে আফসোস করেছেন আমাদের সমাজব্যবস্থা নিয়ে। ইংরেজরা কষ্টসহিষ্ণু এবং চতুর জাতি হতে পেরেছে বিধায় প্রায় পুরো পৃথিবীতে রাজত্ব চালিয়ে নিজের ঘর ভরেছে সম্পদে। প্রথমবারে বিলেত গিয়ে ঠান্ডার শিকার হওয়া কিংবা সেখানের ছুটির দিনে বেড়াতে গিয়ে হোটেলে রুম না পাওয়ার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার বর্ননা দিয়েছেন লেখক। তারপর প্যারিস ভ্রমণ এবং বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম এ মোনালিসার ছবি দেখে শিল্প-সাহিত্যের কদর বুঝতে চেষ্টা করেছেন।
বইটি আসলে একটি ইতিহাস গ্রন্থ বললেও অত্যুক্তি করা হবেনা। কারণ গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের পুরো ইংল্যান্ডের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন মাত্র ১২২ পৃষ্ঠার বইটিতে। যারা অতীতের সমাজব্যবস্থা লেখকের চোখে দেখে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান তাদের জন্য খুব সুন্দর একটি বই।বইটিতে কিছু জায়গায় ভুল রয়েছে যেমন ফিনল্যান্ডের জায়গায় থাইল্যান্ড কিংবা ২৪ এর জায়গায় ২৫ দেয়া। আর অনেক বানান ভুল রয়েছে, যা প্রকাশনীর অবহেলা বলে মনে করি। হ্যাপি রিডিং।
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ জাতি শতশত বছর ধরে পৃথিবীর সম্পদশালী দেশগুলোকে শুষে নিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। পৃথিবী জুড়ে যখন তারা নিজেদের প্রভু বলে প্রতিপন্ন করে গেছে শতশত বছর। নিজেদের নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।
বলতে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই শুরু হয়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যের পতন। যাকে বিভিন্ন দেশের শুষিত মানুষেরা বিভিন্নভাবে তরান্বিত করেছে তাদের নিজস্বতায়। যে ব্যাপারটার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তা নিসন্দেহে ঘৃণা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সীমাহীন ঘৃণার পাহাড়।
ইংরেজ শাসিত দেশগুলোর সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্পকে একপ্রকার কবরে পাঠিয়ে দিয়ে। নিজেদের দেশে আধুনিক সভ্যতা আর আধুনিকতার প্রসার সাজিয়ে বসে মানবতার বুলি শুনাতে গেলে কিছুটা হাস্যকরই মনে হয়। এখানে মানবতার যে বুলির কথা বললাম তা আসলে ইংরেজ জাতির কারো মুখে শুনে বলছি না। বলছি আমাদের দেশেরই একজন। যিনি স্বর্গকে আসমানের উপরে না ভেবে ইংলেন্ডের মাটিয়ে ভেবে বসে আছেন। আর তার দেখা সে স্বর্গের এক অসাধারণ বর্ণনাধর্মি বই "বিলেতে সাড়ে সাতশো দিন"।
লেখক মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯৫০ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান থেকে বিলেতে যথা ইংল্যান্ডে পারি জমান। তার ভাষ্য অনুযায়ী এটা ছিল তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়, বিলেতে যাওয়াত সুযোগ ছিল তার জন্য জীবনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। আদতে পড়াশোনার জন্য যাওয়া হলেও ইংল্যান্ডের সভ্যতা, সংস্কৃতি তাকে একপ্রকার আচ্ছন্ন করে ফেলে বলেই মনে হয়েছে তার লেখনিতে। কিছু ক্ষেত্রে সেই আচ্ছনতাকে অন্ধভক্তি বলে মনে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে না ঠিক বইয়ের প্রায় বেশিরভাগ অংশেই আমার মতো দুর্বল পাঠকের কাছে এমনটা মনে হতে পারে। যার মূল কারণ হিসেবে বলতে পারি লেখক নিজের জন্মভূমি সবসময়ই ছোট করে দেখেছেন বা বইয়ে দেখাতে চেয়েছেন। তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী একটা দেশের সাথে সদ্য জন্ম নেয়া একটি গরিব দেশের প্রতিটি ব্যাপারে তুলনা কিভাবে হয় আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। ব্যাপারটা অনেকটা সমুদ্রের সাথে পুকুর বা ডোবার তুলনা করা। যা লেখকের অন্ধভক্তিরই নামান্তর।
লেখনীর দিক দিয়ে বাংলাসাহিত্যে এমন অনবদ্য ভ্রমণকাহিনী বা স্মৃতিচারণ মূলক বই খুঁ���ে পাওয়া কঠিন। এদিক থেকে লেখক সত্যিই বাহবা পাওয়ার যোগ্য।
মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের বিলেত যাপনের বৃত্তান্ত পড়ে দেশটি সম্পর্কে জানি না এমন অনেক কিছু জেনে ফেলার আকাঙ্ক্ষা ছিল না। নামকরা বই। পড়ে দেখার ইচ্ছা হলো, তাই পড়ে ফেললাম। কেমন লেগেছে? মোটামুটি। ইংল্যান্ড ও ইংরেজদের সবই ভালো, লেখকের এই দৃষ্টিভঙ্গি ভালো লাগেনি। ভালো লাগেনি সব বিষয়ে নিজের দেশের সঙ্গে তুলনায় যাওয়ার ব্যাপারটা। লেখকের উদ্দেশ্য সৎ ছিল নিঃসন্দেহে। তিনি আমাদের তাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে গিয়ে চোখে গুঁতো দিয়ে বসলেন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত ছিল। ধর্ম নিয়ে আবদুল হাইয়ের বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ কিঞ্চিৎ চোখে লেগেছে। প্রথমদিকে পাকিস্তান ও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র বন্দনা দেখে ভ্রু কুঁচকে গিয়ে আবার তৎক্ষনাৎ মনে পড়ল, আচ্ছা, প্রথমদিকের অধ্যায়গুলো পঞ্চাশের দশকের শুরুতে রচিত, পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির মোহভঙ্গ তো তখনো বাঙালিদের হয়নি!
রচনার সময়কাল বিবেচনায় ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’ গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণালেখ্য। বলা বাহুল্য, ওই সময় বাংলাভাষায় ইংল্যান্ড ভ্রমণ বিষয়ক এমন সবিস্তারে লেখা বইপত্র বলতে গেলে ছিলই না। তবে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো, মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের লেখনশৈলী। যা সহজ কিন্তু পলকা নয়।
১৯৫০ সালে লেখক মুহম্মদ আবদুল হাই পড়াশোনা করতে বিলেতে পাড়ি জমান। সেই সময়কার বিলেতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশের এক অনন্য বর্ণনা লেখক তার বইতে তুলে ধরেছেন। তৎকালীন উৎসব- অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, প্রাকৃতিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে লেখক খুব সুন্দর করে লিখেছেন। বিলেতের শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা সাবলীল ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা দেশ ইংলন্ডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এসে যে ভাবে মুগ্ধ হলো, তার দৃষ্টান্ত বড়ো বেশী খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের এ আকার্ষণের হেতু ছিল ইংলন্ডের সাহিত্য ও সাহিত্যিকেরা। শেক্সপীয়ার, মিল্টন, শেলী, কীটস্য, ওয়ার্ডসওয়ার্থ এ নামগুলো বাঙালি যুবক সম্প্রদায়ের প্রাতঃস্মরণীয় শুধু নয়, নিত্যস্মরণীয় হয়ে উঠেছিল। মধুসূদন মাইকেল হলেন মিল্টন কে ভালোবেসে, খ্রীস্টধর্মকে ভালোবেসে নয়।
সেই ইংলন্ড যা বিলেত নামে পরিচিত ছিল। ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাই যিনি এই বিখ্যাত "বিলেতের সাড়ে সাতশ দিন" বইটার লেখক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকার সময়েই তিনি ভাষা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ঢাকা থেকে সরাসরি তিনি লন্ডনে যেতে পারেন নাই। কলকাতা, দিল্লি, বাগদাদ, কায়রো, মিউনিখ ও আমস্টারডাম হয়ে তবেই সেখানের মাটিতে পা রাখতে পেরেছিলেন। আর এই সব জায়গায় যা কিছু লেখকের চোখে আটকে গেছে সবটাই তিনি বর্ণনা করেছেন।
এক সময় যে ইংরেজদের দ্বারা আমরা শাসিত হয়েছি সে দেশের সব ভালো ও মুগ্ধ করা জিনিসগুলো তিনি দেশের জন্য করতে চেয়েছেন। কিছুই হয়তো পারেন নাই, তবে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে তিনি চিন্তা করেছিলেন পরিবর্তন আনতে।
বইটা মূলত একটা ভ্রমণ কাহিনি। কিন্তু যতোটা না ভ্রমণ কাহিনি তার থেকেও বেশী বইটাতে পাওয়া যাবে সেই সময়ের ইংল্যান্ডের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতি ও শিক্ষার সুন্দর এক চিত্র।
আজ এতো বছর পরে এসে বইটা একটা ইতিহাস জানিয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতির সাথে সাথে সব কিছু আজ সেখানের পরিবর্তন হয়েছে তবুও বইটা সেই স্থান গুলোর সেই সময়টা আজও ধরে রেখেছে। সুন্দর জিনিস দেখা এবং তা সুন্দর ভাবে বর্ননা করাটা সহজ নয় । তবে তার থেকেও কঠিন অন্য দের ভালো দিক গুলো খুঁজে বের করে নিজেদের সেই ভালো র জায়গাতে নিয়ে যাবার মানসিকতা তৈরি করা। লেখক এক সময় তা যে করেছিলেন " বিলেতের সাড়ে সাতশ দিন" তার প্রমান দিচ্ছে। চমৎকার একটা বই, সেই সময়ের বিলেত ও সাথে আরও কয়েকটি জায়গা জানতে ও বুঝতে।
অসাধারণ গদ্যভাষায় ৭৫ বছর আগের ইউরোপ তথা ইংল্যান্ড। কিন্তু একই সঙ্গে ইউরোপের কয়েকটা দেশের বৈচিত্র্যময় তথ্য। মানুষ, মানুষের অভ্যাস আর অবকাঠামো শিক্ষাদীক্ষা কালচারের অনেক দিকই এই বইয়ের মূল কনসেপ্ট।
মোটের ওপর সুখপাঠ্য। সময় আর প্রকাশকাল বিবেচনায় আনলে বিষয়বস্তুও বেশ আগ্রোহদ্দীপক। বিশেষ করে সেই সময়ের বাঙ্গালি পাঠকের জন্য দেশের বিলেতের জীবনযাত্রা আর সংস্কৃতির পরিচয় একজন বাঙ্গালির লেন্স দিয়ে আবিষ্কার করবার সুযোগ নিশ্চয়ই হয়েছিল। কিন্তু পুরো সময় জুড়ে যেটা আমাকে প্রায় প্রতিটি বাক্যে যন্ত্রণা করে গেছে সেটা হচ্ছে লেখকের ইংরেজপ্রীতি। লেখকের ইংরেজপ্রীতি সাধারণ প্রীতির স্তর ছাড়িয়ে প্রায় উপাসনার পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে। বিশেষ করে যে তৎকালীন বাস্তবতার কথা মাথায় রাখলে লেখকের এই উপাসনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে প্রায় প্রতি পদে পীড়িত করেছে। দুইশ বছর ব্রিটিশ শাসন-শোষণের অবসানের প্রায় পর পর লেখকের এই বিলেতযাত্রা। সেই সময়ে বয়সে তরুণ এই লেখককে সম্ভবত ব্রিটিশদের দুশ বছরের শোষণের ইতিহাস তেমন স্পর্শ করেনি কখনই। অথবা করলেও ব্রিটিশদের স্বর্গীয় গুণাবলীতে মুগ্ধ হয়ে দু'শ বছরের অত্যাচার, ডাকাতি, গণহত্যার অপরাধকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
চলুন ঘুরে আসি টেমস নদীর তীরে, সুবাসিত ফুলে ঘেরা রিজেন্ট পার্কে, কিংবা ঐতিহাসিক বেকার স্ট্রিটের অলি গলি, প্রত্যক্ষ করে নিন হরিণ চড়া তরুসমাচ্ছন্ন রিচমন্ডের প্রান্তর, এবং দালানের আঁকিবুঁকিতে উজ্জ্বল শহর লন্ডন, সমুদ্রের সান্নিধ্যে থাকা রৌদ্রস্নাত বোর্নমাউথই বাদ যাবে কেন? পড়ে ফেলুন মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ‘বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন’
ভ্রমণকাহিনী বোধ হয় সাহিত্যের একমাত্র অঙ্গন যেখানে পাঠক বইয়ের পাতায় পাতায় নিজের উপস্থিতিকে আলাদাভাবে উপলব্ধি করতে পারে।একটি ভাল ভ্রমণকাহিনী মুহূর্তেই পাঠককে বইয়ের ভেতর টেনে নেয়,পাঠককে ভ্রমণের অংশ করে তোলে।পাঠক অচেনাকে চিনতে পারে,অজানাকে জানতে পারে,অদেখাকে দেখতে পারে।এবং অদেখা জিনিসগুলো ছাপার অক্ষর দ্বারা অনুভব করার জন্য প্রাঞ্জল ভাষায়, চিত্তাকর্ষক বর্ণনার প্রয়োজন।মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত ‘বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন’ এমনই একটা গ্রন্থ।
“পাখীর মত ডানা মেলে দিয়ে জীবনের প্রথম আজ নিজের দেশের আকাশে উড়ছি। নীচে ফসলের মাঠ আর তরুলতার সবুজ। ওপরে নীল শূন্য আকাশ। সাদা-কালো রঙ-বেরঙের মেঘমালার ছোঁয়া লাগছে শরীরে ও মনে। ওপর থেকে মাঠঘাট দেখে মনে হচ্ছে কে যেন পাশার ছক পেতে রেখেছে। মানুষ ও মানুষের ঘরিবাড়ীগুলো দেখে মনে গালিভারের লিলিপুটের কথা মনে পড়ছে।ঘরবাড়ী লাগছে ��িশুদের খেলাঘরের মত। বাস-ট্যাক্সী-ট্রেনগুলোকে মনে হচ্ছে যেন তাদের খেলনা।পদ্মাকে মনে হচ্ছে যেন খেয়ালী মেয়ের হাত থেকে খসে পড়া এক টুকরো রূপালী ফিতা।”— অনেকটা এভাবেই শুরু মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের বিলেত যাত্রা।এবং এই শুরুটাই পাঠকের মনকে একটা মায়ার আচ্ছন্নতায় বেঁধে ফেলে। শব্দ ও উপমার এমন সুন্দর দোলাচলে পাঠক লেখকের বিদেশযাত্রার অংশ হয়ে ওঠে।মুহম্মদ আবদুল হাই এর লেখনী আমার বেশ লেগেছে।লেখায় জড়তা নেই,হাল্কা চালের লেখা,পাঠককে মুহূর্তেই লেখার মধ্যে ডুবে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি আসলেই মুগ্ধ করে।সৌন্দর্যের প্রতি লেখকের একটা প্রবল আকর্ষণ আছে তা সহজেই পাঠকের কাছে ধরা পড়ে।তবে প্রথাগত ভ্রমণকাহিনী থেকে অনেকাংশেই ‘বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন’ আলাদা।কোনো গল্পের অবলম্বন না নিয়ে লেখক গ্রন্থটিকে আলোচনাপ্রধান করে তুলেছেন।এবং সেই আলোচনায় মোটেও গুরুগম্ভীর নয় বরং সাবলীল এবং প্রাণবন্ত।লেখকের বর্ণনায় জাতিবিদ্বেষ নেই,কিন্তু নিজস্ব জাতির লক্ষণ তিনি অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে লেখকের শিক্ষা অর্জনের জন্য ইংল্যান্ডে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়।তখনকার বেশির ভাগ লেখকদের জন্যই জায়গাটি ছিল অধরা এবং যারা ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা সেটা নিয়ে খুব কমই লিখেছিলেন।তাই ইউরোপীয় কালচার সম্পর্কে পরোক্ষভাবে ধারণা পাওয়া এদেশের মানুষের পক্ষে যে দুরূহ ছিল সেটা বলাই বাহুল্য ।লেখক ঢাকা থেকে বিমানযোগে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন তবে পথিমধ্যে করাচি, বাগদাদ, মিউনিক এবং আমস্টারডাম শহরেও অবতরণ করেন।এবং এখানকার মানুষ এবং পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করেন।লন্ডনে পৌঁছাবার পর যেই প্রথম বিষয় লেখককে চৈতন্য করে সেটা হল ইংল্যান্ডের আবহাওয়া।ইংল্যান্ডের শীতকাল এবং গ্রীষ্মকাল নিয়েই লিখেছেন প্রায় তিন-চারটি পরিচ্ছেদ।বইটিতে মোট ৩১টি পরিচ্ছেদ রয়েছে।এবং প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদই স্ব স্ব দিক থেকে আলাদা বিষয় নিয়ে আলোচনা।ইংল্যান্ডের আবহাওয়া, ইংরেজদের ব্যবহার, উৎসব, সমাজ, শিক্ষা,সংস্কার,অবসর, খেলাধুলা, শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য,রসনা প্রায় সব বিষয় নিয়ে স্বল্প পরিসরে লিখেছেন। প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদই সুলিখিত। সবচেয়ে ভাল লেগেছে একটা ব্যাপার তা হল প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদের সমাপ্তি মোহাচ্ছন্ন করার মত।সমাপ্তি পড়ার সাথে সাথেই আবার নতুন পরিচ্ছেদ পড়ার ইচ্ছা জাগে।
ইংল্যান্ডের মানুষদের স্বভাবের দারুণ ব্যবচ্ছেদ করেছেন লেখক।ইংরেজদের সমান্তরালে বাঙালীদের তুলনা করে বাঙালীর অনেক দোষ-ত্রুটিই ধরিয়ে দিয়েছেন।তবে ইংরেজদের সমালোচনা করতেও ছাড়েন নি। সৌন্দর্যের প্রতি লেখকের আলাদা দুর্বলতা আছে সেটা বই পড়লেই টের পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডের পার্ক এবং সী-বিচগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং সেই অনুভূতিও তুলে ধরেছেন সুনিপুণ ভাবে।লন্ডনের মিউজিয়াম এবং লাইব্রেরি যে কত সমৃদ্ধ ছিল সেটার সামান্য হদিস দিয়েছেন বইটাতে।সাহিত্যের দিক থেকে ইংল্যান্ড ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। শেলী, কীটস,শেকসপীয়ার, মিল্টন, বার্নার্ড শ' এবং বহু সাহিত্যিকদের বাসগৃহ এবং স্মরনীয় ঘটনাগুলো নিয়ে হাল্কা আলোচনা করেছেন।ইংল্যান্ডের স্থাপত্য,ভাস্কর্য, চিত্রশিল্প ইত্যাদি নিয়েও ছোট ছোট পরিচ্ছেদে ধারণা দিয়েছেন।অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তুমুল আগ্রহ যাদের আছে,তারাও বইটি পড়ে পরিতৃপ্ত হবেন আশা করি।শুধু ইংরেজ না,লন্ডনের মত মেট্রোপলিটন শহরে জমায়েত অনেক জাতীয়তার মানুষ,তাদের স্বভাব সংস্কৃতি সম্পর্কেও লিখেছেন লেখক। তাছাড়া শুধু বিলেতই নয়, লেখক ঘুরে এসেছেন ভালবাসার শহর প্যারিসও।প্যারিসে থাকাকালীন সামান্য কয়েকদিন তুলে ধরেছেন এই বইয়ে।ইংল্যান্ডে ঘটে যাওয়া কিছু ছোট ছোট ঘটনা পাঠকের হৃদয়াবেগ, দেশপ্রেম, শিষ্টাচার এবং ভাবোচ্ছাসকে জাগ্রত করবে নিশ্চয়ই।দারুণ সুখপাঠ্য এই বইটি যেমন শিক্ষনীয় তেমনই রম্য।এবং সকলের অবশ্যই পড়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। কাইয়ুম চৌধুরীর দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদের সঙ্গে বইয়ের শেষে জামিল চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,আবদুল গাফফার চৌধুরীর অভিমতসহ বইটি প্রকাশ করেছে স্টুডেন্ট ওয়েজ। হ্যাপি রিডিং!
পড়ে মনেই হলো না, সে আমলের লেখা। চোখের সামনে ভেসে উঠছিল অনেক কিছুই। ইংল্যান্ডের প্রকৃতির বিচিত্র রূপের প্রতি মোহ তৈরি হয় লেখকের কথাগুলো থেকে। না দেখেও তার প্রতি বিচিত্র আকর্ষণ অনুভূত হওয়া- এটাই হয়তো ভ্রমণ কাহিনীর সৌন্দর্য।
ইংরেজ জাতের ভালোমন্দ দিকগুলো লেখক যেভাবে তুলে ধরেছেন, তার সাথে একমত। মনে হলো ২০১৯ এর বাংলাদেশ ১৯৫০ এর ইংল্যান্ডের চেয়ে এখনো পিছিয়ে। তবে বিশ্বাস করি, বাঙালি জাতির পরিবর্তন আসতেও দেরী নেই - যদি আমরা সবাই নিজ কাজে নিষ্ঠাবান হই।
১/ কেন পড়বেন? -ম্যানার্স ব্যাপার টা খুব গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক জীবনে।সেটা সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়ার জন্য ২/ নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রেখে সময়ের সাথে নিজেদের এডাপ্ট করে ও যে সফলতার শিখরে পৌছানো যায়; তার একটি স্বচ্ছ উপস্থাপন।
কেন পড়বেন না?
১/ লেখক ভয়াবহ ইংল্যান্ড প্রেমী।ভাল দিক গুলো খুব মহৎ করে তুলে ধরেছেন কিন্তু শোষণের দিক টি নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য করতে দেখিনি।
ভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক মুহম্মদ আব্দুল হাই ১৯৫০ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে ভাষাতত্ত্বে গবেষণার জন্য যান।সেখানে অবস্থান করেন ১৯ জানুয়ারি ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত। তখন ই তিনি এ অসাধারণ বইটি রচনা করেন।
বইটি ৩১ টি পরিচ্ছেদের। প্রত্যেকটা পরিচ্ছেদেই আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বইয়ের শুরুতে বিমান থেকে লেখক এই বাংলার প্রকৃতিকে কেমন দেখছেন তার বর্ণনা শুরু করেন। তারপর তিনি তার গন্তব্যে পৌছান। তিনি লক্ষ করেন ইংল্যান্ডে বৃষ্টি হয় বেশি, ইংরেজরা কিভাবে সেই পরিবেশে চলাফেরা করে তার আলোচনা করেন৷ তারপর থেকে বিভিন্ন জিনিসের বর্ণনা, লেখকের অভিজ্ঞতা এবং আমাদের দেশের তৎকালীন অবস্থার সাথে তুলনা করেন। যেই বিষয়গুলো উনার লেখায় উঠে এসেছে__
শীতকাল, বড়দিন, ফুলের প্রিয়তা, শিশুদের যত্নশীলতা, ইংল্যান্ডের পার্ক, তাদের চিড়িয়াখানা,মিউজিয়াম, টিউব রেলওয়ে, ওকিং মসজিদে লেখকের ইদের নামাজ পড়ার অভিজ্ঞতা ,তাদের শিক্ষা এবং কর্তব্যপরায়ণতা, উইকেন্ড এবং হলিডেতে কিভাবে এনজয় করে , লেখকের ফ্রান্সের পারীতে(প্যারিস) ভ্রমণ, মূর্তিতে ইতিহাস খুঁদায় , তাদের রেস্তুরার পরিবেশ, ভদ্রতা, ন্যায়পরায়ণতা , লেখকের বন্ধুর হ���রিয়ে যাওয়া টাকা ফেরত, সাহায্য, পোশাক সেন্স, চিত্রশিল্প, তাদের পত্রিকা, বই, খেলাধুলার জনপ্রিয়তা, পুলিশের প্রতি পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি, Queue সারিবদ্ধ হওয়া,দেশী বাজারের স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে পেটিকোট, রাজা ৬ষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর শোভাযাত্রাতে অংশগ্রহণ, ইত্যাদি আরো বিষয়৷
১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডে যে প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল। সে প্রযুক্তিগুলো আমাদের দেশে বর্তমানে এভাইলেভল হয়েছে। কতটা এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড!
বইয়ের প্রথম দিকটা আমার কাছে কঠিন মনে হচ্ছিল, পড়ে এগুতে পারছিলাম না। মাঝামাঝি আসার পরে পড়ার গতি বেড়ে যাই। বলতে গেলে আমার কাছে ভালো লেগেছে। কেউ ভ্রমণ কাহিনী পড়ার সাজেস্ট চায়লে , এটা সাজেস্ট করা যায় অনায়াসে। পড়তে পারেন...
অর্ধশতাব্দী পূর্বে ভ্রমণ কাহিনি হিসেবে আলোড়ন তুলেছিলো মুহম্মদ আব্দুল হাই রচিত 'বিলেতে সাড়ে শাত শ দিন' বইটি। লেখক ১৯৫০ সালে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। দুই বছরের বেশি সময় তিনি অবস্থান করেছিলেন সেখানে। স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন সেখানকার সমাজচিত্র, অর্জন করেছেন নানা অভিজ্ঞতা। বইটিতে অর্ধশতক পূর্বের সেই চিত্রই তুলে ধরেছেন লেখক।
মানুষের জীবন সেখানে ঘড়ির কাঁটার সাথে বাঁধা। সময়ের সাথে ছুটে চলতে হয় তাদের। ফলে, আলস্য তাদের কাবু করতে পারে না। সমস্ত কিছুই তাদের নিয়মে বাঁধা। এই নিয়মই তাদের করেছে কর্মঠ। কর্মই তাদের করেছে উন্নত।
লেখক বর্ণনা করেছেন তাদের খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা ব্যবস্থা, উৎসব, আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জগৎবিখ্যাত মিউজিয়াম, সমাদৃত চিত্রশিল্প ইত্যাদি সম্পর্কে। সেখানকার রূপ বৈচিত্রের, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রেমেও একসময় নেশাতুর হয়ে পড়েন লেখক। কখনোবা বর্তমানের চেয়ে বহুযুগ পিছিয়ে পড়া স্বদেশের জন্য ব্যথাতুরও হয়েছেন তিনি। ঘটনাপ্রবাহে পারির সৌন্দর্যও বর্ণনা করেছেন লেখক।
বইটার প্রথমদিকটায় যদিও কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম, একই কথা ঘুরেফিরে বারবার এসেছে মনে হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়ে ইংরেজদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম৷ অর্ধশতক পূর্বেও যে ইংরেজরা কতটা উন্নত ছিলো, কী কৌশলে তারা দু'শ বছর গোলাম করে রেখেছিলো ভারতীয় উপমহাদেশকে, কীভাবে ক্রমেই উন্নতির শিখরে উঠছিলো তারা চোখে আঙুল দিয়ে লেখক যেন তা-ই দেখিয়েছেন। আমরা যেখানে ক্ষয় করি এরা সেখানে জমা করে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। সর্বোপরি, ইংল্যান্ড সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করে বইটি। ভ্রমণকাহিনি হিসেবে সুখপাঠ্য হলেও, লেখক ইংরেজদের অতিরিক্ত প্রশংসা করেছেন মনে হতে পারে৷ হ্যাপি রিডিং!
গতানুগতিক ভ্রমণকাহিনী থেকে কিছুটা হলেও ভিন্নতা পেয়েছি। বিলেতের মানুষের জাতীয়তাবোধ তাদের জাতীয় জীবনের নানা শিক্ষনীয় বিষয় এবং আমাদের দেশের সাথে তাদের তফাতটা তুলে ধরেছেন অত্যন্ত নান্দনিক ভাষায়। একজন ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে যতটা গুরুগম্ভীর রচনা আশা করেছিলাম ঠিক ততটাই সরল সাবলীল বর্ণনা পুরো বইতে লক্ষ্য করেছি। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি লেখা বই হিসেবে এর ভাষা ছিল আশ্চর্য রকমের সঙ্গীতমুখর। বিলেতের বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করেছেন নিজের হৃদয়ের অনুভূতি ও সংবেদনশীলতা দিয়ে। কৃত্রিমতার আশ্রয় নেননি। এই জন্যই হয়তবা এখনো বইটি স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে....
ভ্রমণকাহিনী আমার সবসময়ই পছন্দের। ইংল্যান্ড নিয়ে লেখকের বর্ণনা খুবই ভালো লেগেছে। আবহাওয়া থেকে শুরু করে লণ্ডনবাসীর আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি সবই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ❤️❤️❤️
This entire review has been hidden because of spoilers.
মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত 'বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন' আমার খুবই পছন্দের একটা বই। এটা মূলত একটা ভ্রমণ কাহিনী। যেখানে লেখক নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন যখন তিনি উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫০ এর দিকে ইংল্যাংড এর সমাজ আর রাষ্ট্র ব্যবস্থা কেমন ছিল মূলত এটাই হচ্ছে বইটির বিষয়বস্তু।
ইংরেজরা জাত হিসেবে বরাবরই খুব সচেতন। আর এই সচেতনতার প্রমান পাওয়া যায় শিশুদের প্রতি তাদের গভীর মনোযোগ থেকে। যখনই ব্রিটিশ পরিবারে কোনো নতুন শিশুর আগমন ঘটে ঠিক তখন থেকেই ব্রিটিশ সরকার এর পক্ষ থেকে তার জন্য পাঠানো হয় কমলার রস, খাঁটি মধু এবং আরো অনেক পুষ্টিকর খাদ্য। এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত। একটা শিশু দেখতে যেমনই হোক না কেনো পুষ্টির দিক থেকে তার শরীরে যে কোনো কিছুর ঘাটতি নেই তা একবার তার চেহারার দিকে তাকালেই বুঝা যায়।
'আরব্য উপন্যাস' শুধু যে মুসলিম জাহানে জনপ্রিয় তা কিন্তু নয়। এটা ইংল্যান্ডেও বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু ইংল্যান্ডে 'আরব্য উপন্যাস' এর শিশুদের উপযোগী করে লেখা কত যে সংঙ্করণ আছে তার হিসাব মেলা দায়। শুধু কি 'আরব্য উপন্যাস'! আছে 'সুইসফ্যামলী রবিন্সন', 'স্ক্যান্ডিনেভিয়ার হ্যানস আন্ডারসনের পরীর গল্প', 'জার্মানির গ্রিম'স ফেয়ারি টেলস' সহ বিশ্বসেরা শিশুসাহিত্য। কত সুন্দর এবং সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে সবকিছু! কতো সহজ তাদের ভাষা! এর মাধ্যমেই শিশুরা রপ্ত করে নিচ্ছে তাদের মাতৃভাষা ইংরেজিকে।
শিশুদের মনন বিকাশের ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বই ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খেলনা। খেলনার প্রতি ব্রিটিশদের মনোযোগ দেখলে অবাক না হয়ে উপায় নাই। 'আলিবাবা ও চল্লিশ চোর' এর মতো রূপকথাগুলোকে তারা তুলে ধরেছে বিভিন্ন ধরণের খেলনার মাধ্যমে! খেলনা কারিগরদের এই প্রচেষ্টা যেন মনোবৈজ্ঞানিকদেরও হার মানায়!
কিছুদিন আগে পেপারের একটা নিউজ আমার খুব দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। অস্ট্রিয়ার কিছু কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে 'ললিপপ' আকৃতির এক ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদেরকে করোনা ভাইরাস এর ভয়বহতা থেকে দূরে রাখার কি সুন্দর উপায়! অস্ট্রিয়ার এই উদ্যোগ আসলেই প্রশংসনীয়।
অনেক ইচ্ছা ছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ নামটি লেখার। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল মোট জিডিপির মাত্র ২.০৯ শতাংশ য��খানে ইউনেস্কোর গাইডলাইনস অনুযায়ে সেটা হওয়া উচিত ছিল মোট জিডিপির ৪-৬ শতাংশ। শিশু নির্যাতন, শিশু শ্রম, শিশু পাচার এগুলো নিয়ে না হয় আজকে নাই বললাম।
কিন্তু আমি মানুষ হিসেবে খুবই আশাবাদী। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে কারো লেখনীতে শিশুর মনন বিকাশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি উঠে আসবে বাংলাদেশ নামটিও।
বইয়ের পাতায় ঢু মেরে যদি বহু দূরের দেশে হারিয়ে যাওয়া যায় তবে কেমন লাগে??
লেখক তার লন্ডন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন তার লেখা "বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন" বইয়ে।
সময়টা ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাস। তখন শীত আস আসি করছে লন্ডনে। এমনি এক দিনে করাচী হয়ে আফগানিস্���ান, মিউনিক শহর আরো বহু দেশ পাড়ি দিয়ে লেখক পৌঁছালেন তার গন্তব্যস্থল লন্ডনে। পৌঁছেই যেন শীতের কবলে পড়লেন। এ তো আমাদের দেশের মতো শীত নয়, এই শীত অসহ্যকর, ঘুমানোটাও যেন কষ্টের। তবু যেন সে দেশের মানুষ ঠিকে আছে, শুধু ঠিকে আছে বললে ভুল হবে, উন্নতির উচ্চ শিখরে যেন আরোহণ তাদের। এই শীতকে উপেক্ষা করে যেন তারা ছুটে চলছে নিরন্তর, তাদের কাজের প্রতি কর্তব্যবোধ যেন তাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দূর থেকে বহুদূরে। লেখক তুলে ধরেছেন লন্ডনের মানুষের জীবনব্যবস্থা। তাদের ব্যবহার, দায়িত্বসচেতনতা, কর্তব্যপরায়ণতা যেন আপনাকে মুগ্ধ করবে। গ্রীষ্মের সেই রূপ দেখে আপনিও মুগ্ধ হবেন, আপনার মনে পড়বে জন কীটস, শেলী, বার্নাড, শেকসপিয়ার এর কথা। লন্ডনের বৃহৎ বৃহৎ জায়গাগুলোর ধারণা পাবেন আপনি এখানে, জানবেন তাদের খাদ্যভাসের কথা, বুঝতে পারবেন তাদের নিয়ম নীতি....
★★একটা দেশের উন্নতি আসলে কাদের উপর নির্ভর করে?? যে দেশের শিশুরা মার খাওয়ার ভয়ে স্কুলে যায়, যারা রাত্রিবেলা পড়তে বসে বকুনি থেকে বাঁচার জন্য, যারা না বুঝে সব মুখস্থ করে তাদের থেকে আপনি কীভাবে একটা ভালো জাতি আশা করবেন?? অথচ লন্ডনের শিশুরা শিখে খেলার মাধ্যমে, তাদের স্কুলগুলোই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। তারা দোষ করলে মার খায় না বরং যে যত শান্ত থাকবে আর কাজে সাহায্য করবে সে পুরস্কৃত হবে। তাদের মস্তিষ্কে যেনো সেঁটে দেওয়া হয়েছে ম্যানারস জিনিসটা। আমরা শুধু বইয়ের পাতায় পড়ে গেলাম গাছপালার কথা, জীব জন্তুর কথা, অন্য দেশের আবহাওয়ার কথা। অথচ সে দেশে এগুলোর জন্য তৈরি করা হয়েছে জু, গার্ডেন। কোন পরিবেশে কোন গাছটা থাকে সেটা পর্যন্ত তারা তৈরি করে রেখেছে যাতে শিশুরা এর মাধ্যমে শিখে। একটা জাতি গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখবে শিক্ষা। কিন্তু শিক্ষিত শব্দটার যথাযথ উত্তর কী আমরা জানি? লেখকের এই ভ্রমণ কাহিনিতে যেন তিনি দেখিয়েছেন কেন আমরা এতো পিছিয়ে আর তারা এতো এগিয়ে। বইটা পড়ার সময় ভাবছি সেই ১৯৫০ সালে লন্ডন এমন ছিলো তবে এখন কেমন?? কত প্রজন্ম আসলো আর কত কত উন্নয়ন হলো.....
★ছোট্ট একটা বইয়ে লেখক কী সাবলীল ভাবে পুরো লন্ডনকে তুলে ধরলেন তা অবাক হওয়ার মতো। খাদ্যাভাস হতে শুরু করে তাদের চলাফেরা, পোশাক, সেখানকার আবহাওয়া, সৌন্দর্য কোনোটাই তিনি বাদ দেননি। চোখে আঙুল দিয়ে যেন দেখিয়েছেন আমাদের সাথে ওদের তফাৎ। মুগ্ধ হওয়ার মতো একটা বই💙
মুহম্মদ আবদুল হাই এর "বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন" গ্রন্থটি ১৯৫০ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত। এ ভ্রমণকাহিনী টি সেই যুগে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, কারণ পৃথিবী তখন হাতের মুঠোয় ছিল না। অন্য দেশ, অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার পথ ছিল দুর্বোধ্য। এ বইটি নিছকই একটি ভ্রমণকাহিনী নয়, বিলেতে যাপিত জীবনের এর আখ্যান। ধ্বনিবিজ্ঞান সম্পর্কে অধ্যয়ন এর উদ্দেশ্যে লেখক ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৫৩ সালের জানুয়ারী এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিলেন লন্ডনে এবং ভ্রমণ করেন ইংল্যান্ড এর বিভিন্ন স্থান। তার সেই সময়ের অভিজ্ঞতাই এ বইটির মূল উপজীব্য। তিনি বাঙালি ছেলের চোখে বিচার করেছেন ইংরেজদের জীবনাচরণ। না চাইতেও তুলনা করেছেন উপমহাদেশীয় জীবনযাত্রার সাথে। ইংরেজদের জাতিগত চরিত্রের ভেতর যে কর্মঠ মনোভাব তিনি দেখেছেন,তা তাকে যেমন বিমোহিত করেছে, তাদের পাশে বাঙালির আলস্যের চিত্র তাকে ততোটাই হতাশ করেছে। বহু কবি সাহিত্যিক যেখানে ব্যাস্ত ছিলেন এই জাতিকে অত্যাধিক মহিমান্বিত করায়, মুহম্মদ আবদুল হাই সেখানে বিশ্ব নাগরিক এর দৃষ্টিতে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরেছেন আমাদের জাতিগত খামতি। ইংরেজদের দূরদর্শী চিন্তাভাবনা, শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মব্যাবস্থা, শিশু লালনপালনের পদ্ধতি থেকে শুরু করে তাদের ছূটির দিনে আনন্দ উদযাপন এর ধরণ সবকিছুই তার মনে একটু হলেও আফসোস সৃষ্টি করেছে নিজের দেশের জন্য। ইংল্যান্ডের যে বিষয়টি তাকে বিব্রত করেছিল সবচেয়ে বেশি তা হল শীতের তীব্রতা। কখোন রোদ, কখোন বৃষ্টি দেখা বাঙালি ছেলেকে কাবু করেছিল ইংল্যান্ডের বরফময় শীত। তবে গ্রীষ্মেই প্রকৃতির অসাধারণত্বের প্রমাণ তিনি পেয়েছেন। বিলেতে ঈদ পালনের সময় তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন ওকিং মসজিদ কিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মুসলিমকে এক কাতারে দাড় করিয়েছে। লেখক এ বইতে উল্লেখ করেছেন ইংরেজদের আত্মমর্যাদাবোধ, দ্বায়িত্বজ্ঞান ও শৃঙ্খলার কথা। অনেকেরই মনে হতে পারে যে তিনি ইংরেজদের গুণকীর্তন করে বাঙালিকে পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে তুলে ধরেছেন। তারা ও মনের গভীরে জানেন যে লেখকের বক্তব্য কে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
১৯৫০ সাল। প্রায় ৭২ বছর আগের কথা। লেখক পড়াশুনার উদ্দেশ্য নিয়ে পাকিস্তান ছাড়লেন লন্ডনের পথে৷ ধারাবাহিক ভাবে পত্রিকায় ছাপাতে লাগলেন তাঁর ভ্রমণ যাত্রার বর্ণনা। শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে গেলেও লেখা দেখে তা বুঝবার উপায় নেই। পড়লে মনে হবে যেনো নিরেট এক ভ্রমণ কাহিনি।
একটি সমাজ/জাতিকে চিনতে হলে যে সকল বিষয় জানা প্রয়োজন তার প্রত্যেকটিতে টাচ করেছেন লেখক৷ ভ্রমণ শুরুর প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে লন্ডনের সামাজিক, আর্থিক, পারিবারিক, শিক্ষা, উৎসব প্রায় প্রতিটি বিষয় উঠে এসেছে লেখকের লেখায়৷ তাছাড়া লন্ডনের উচ্চবিত্তের চেয়ে মধ্যবিত্তরা লেখকের লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে।
সম্পূর্ণ লন্ডন ব্যতীত প্যারিসের আংশিক বর্ণনাও পাওয়া যাবে বইটিতে৷ লন্ডনের প্রতিটি বিষয়ের সাথে তৎকালীন আমাদের দেশের অবস্থার তুলনা করে আফসোস করেছেন লেখক৷ যা পাঠকের কাছে ৭০ বছর পর এসেও সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক মনে হবে৷ আমরা ওদের থেকে কীভাবে ১০০/১৫০ বছর পিছিয়ে আছি তা এই বইটি পড়লে স্পষ্ট বুঝা যাবে।
ইংরেজদের নিয়ে একটি অভিযোগ আছে যে সারা বিশ্ব লুট করে তারা নিজেদের শহর সাজিয়েছে। কথাটিতে মিথ্যা না থাকলে একটি বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়৷ তা হলো তারা নিজেদের লুটেনি কখনো যেটা আমরা প্রতিনিয়ত করে থাকি।
অসাধারণ একটা বই। মাস্ট রিড যাকে বলে আরকি। সেই ৭৪/৭৫ বছর আগের বিলেত তথা ইংল্যান্ডের গল্প বলছেন উনি এই বইয়ে। সেই সময়কার বিলেতের উন্নয়, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শিক্ষাব্যবস্থা- তথা সবকিছুই তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন একেবারে আতশি কাঁচের নিচে রেখে। এই বইয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে উন্নয়ন কাকে বলে! উন্নয়ন মানেই যে শুধু একটা পদ্মাসেতু আর কয়েক কিলোমিটার মেট্রোরেল নয়; এই বই পড়লে বাঙালি তা কালো চশমা পড়েও দেখতে পাবে।
যখন ক্লাস নাইনে পড়ি; সেই ২০১৫ সালের কথা, তখন বাংলা বইয়ে "বিলেতের অভিজ্ঞতা" নামে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম যা ছিল এই বইয়ের-ই একটা অংশ। সেই থেকেই "বিলেতে সাড়ে সাতশ" দিন পড়ার ইচ্ছে ছিল। অবশেষে ২০২৪ এর বইমেলা থেকে কিনেছি; পড়েছি;তেষ্টা মিটিয়েছি।
পরিশেষে কিছুটা ক্রিটিসিজম না দিলেই নয়; তা হলো লেখক মাঝেমাঝে বিলেতি কালচার আর ধর্মের দিকে একটু ��েশিই ঝুঁকে পড়েছিলেন বোধহয়; যদিও তা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
সবমিলিয়ে এই বইটি বইপ্রেমিদের জন্য মাস্টরিড একটা বই বলে আমি মনে করি।
ব্রিটিশরা আমাদেরকে প্রায় দুইশো বছর শাসন করে গেছে। অনেক নিপীড়ন চালিয়েছে। কিন্তু এদের ভেতর ভালো কিছু আছে, সেগুলো জানতে বইটা পড়া উচিত। লেখক শুধু ব্রিটিশদেরকে নিয়েই লেখেননি, ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের দেশের সাথে মিলিয়ে পর্যালোচনা করেছেন৷ যেখানে আমাদের ভাবার জায়গা আছে, বিশেষ উন্নতির প্রয়োজন আছে।
A wholesome travel story. After completing reading this book I've got this feeling that it's finished but not yet finished. Really enjoyed reading this book, specially the writer's insights about London and it's people around 20th century. How he visited various places throughout his two years of staying in there.
১৯৫০ সালের ইংল্যান্ড কেমন ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে মুহম¥দ আবদুল হাইয়ের ভ্রমনকাহিনী বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে আপনি অবাক হবেন ইংল্যান্ডের মানুষের জীবনধারা ও তাদের সংস্কৃতি তখনকার দিনে কতটা উন্নত ছিল। উপন্যাসের শুরুটা হয় বাংলার অথাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃতির সৌন্দয্য বর্ণনার মাধ্যমে। এই উপন্যাসে লেখন ইংল্যান্ডের জীবনধারা, সংস্কৃতি, তাদের অর্থনৈতিক প্রাচুর্য, প্রকৃতি এবং ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ফুটিয়ে তুলেছেন। ঐতিহ্যের শহর লন্ডন। লন্ডনের বিশালত্বকে বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, গোটা কতক কলকাতা লন্ডনের পেটে হজম হয়ে যাবে। ইংল্যাড শীত প্রধান দেশ হ্ওয়ায় লেখকে প্রথম দিকে তীব্র সমস্যার মধ্যে পরতে হয়েছিল। পরে অবস্য তিনি সেটাকে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন। ত্রীব শীত সেই দেশের মানুষকে করে তুলেছিল কর্মঠ। প্রয়োজনের বাইরে তারা কথা বলে সময় নষ্ট করে না তাই বলে তাদের বেরসিক বলা যাবেন। তারা যে বেরসিক না তার বেশ কিছু উদহারণ তিনি দিয়েছেন এই বইয়ে। আনন্দের সময তারা পরিপূণ আনন্দ তারা ভোগ করে। শীতের পরিমাণ বেশি বলে প্রকৃতি এদের নিরাশ করেনি। এদের প্রকৃতি প্রেম্ও দেখার মতও বটে। শহরের পার্ক গুলোকে তারা মনরম করে সাজিয়েছে। পার্ক গুলোতে গেলে বাইরের কলাহল থেকে মু্িক্ত প্ওায়া যায়। তাদের মিউজিয়াম গুলো ছিল ঐতিহ্যে ভরা। সেগুলো লেখকে মুগ্ধ করেছে। তাদের দেশ প্রেম কোন অংশে কম ছিল না। একজন শ্রমিক তার উপর অর্পিত দায়িত¦টুকু নিজ নৈতিকতা থেকেই পালন করত। সর্বপরি তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল অনূকরণ করার মত। শিশুরা যে জাতির ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ড বাসীরা তাদের কর্মে তার প্রমাণ দিয়েছেন। তাদের থেকে বাঙ্গালী জাতি যে অনেকখানি পিছিয়ে আছে তা লেখক আঙ্গুল দিয়েই দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।