Jump to ratings and reviews
Rate this book

ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ

Rate this book
১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙা হল বার্লিনের প্রাচীর, এক হল দুই জার্মানি। ঐতিহাসিক এই সন্ধিক্ষণে উন্মাদনাময় মিলনােৎসবের প্রত্যক্ষ সাক্ষী রূপে এক বন্ধুকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আরও দু-চারজন বন্ধুকে সঙ্গী করে সেখান থেকে তিনি যান হাঙ্গেরি, রুমানিয়া এবং পােল্যান্ডে। প্রায় বিনা যুদ্ধে, কোনও সাম্রাজ্যের পতনের মতন, পূর্ব ইউরােপের যেসব দেশে ঘটে গেছে বিস্ময়কর পালাবদল, এই দেশগুলিও তাদের অন্যতম। সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে। সেখানকার মানুষ ফিরতে চাইতেন গণতন্ত্রে। অথচ মানুষের সভ্যতার যে অগ্রগতি তাতে গােষ্ঠিতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, ধনতন্ত্র এবং গণতন্ত্র পার হয়ে সমাজতন্ত্রের দিকেই ইতিহাসের স্বাভাবিক পদক্ষেপ। তবু এইসব দেশে সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হল কেন? এই বিস্ময় এবং প্রশ্ন নিয়েই প্রতিটি দেশ ঘুরেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মিশেছেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে, জেনেছেন তাঁদের মতামত। সেই প্রত্যক্ষ দর্শন ও অভিজ্ঞতারই পরিচয় এই দুরন্ত কৌতূহলকর গ্রন্থে।

117 pages, Hardcover

First published April 1, 1991

28 people are currently reading
429 people want to read

About the author

Sunil Gangopadhyay

736 books971 followers
Sunil Gangopadhyay (Bengali: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) was a famous Indian poet and novelist. Born in Faridpur, Bangladesh, Gangopadhyay obtained his Master's degree in Bengali from the University of Calcutta, In 1953 he started a Bengali poetry magazine Krittibas. Later he wrote for many different publications.

Ganguly created the Bengali fictional character Kakababu and wrote a series of novels on this character which became significant in Indian children's literature. He received Sahitya Academy award in 1985 for his novel Those Days (সেই সময়). Gangopadhyay used the pen names Nil Lohit, Sanatan Pathak, and Nil Upadhyay.

Works:
Author of well over 200 books, Sunil was a prolific writer who has excelled in different genres but declares poetry to be his "first love". His Nikhilesh and Neera series of poems (some of which have been translated as For You, Neera and Murmur in the Woods) have been extremely popular.

As in poetry, Sunil was known for his unique style in prose. His first novel was Atmaprakash (আত্মপ্রকাশ) and it was also the first writing from a new comer in literature published in the prestigious magazine- Desh (1965).The novel had inspiration from ' On the road' by Jack Kerouac. His historical fiction Sei Somoy (translated into English by Aruna Chakravorty as Those Days) received the Indian Sahitya Academy award in 1985. Shei Somoy continues to be a best seller more than two decade after its first publication. The same is true for Prothom Alo (প্রথম আলো, also translated recently by Aruna Chakravorty as First Light), another best selling historical fiction and Purbo-Paschim (পূর্ব-পশ্চিম, translated as East-West) a raw depiction of the partition and its aftermath seen through the eyes of three generations of Bengalis in West Bengal, Bangladesh and elsewhere. He is also the winner of the Bankim Puraskar (1982), and the Ananda Puraskar (twice, in 1972 and 1989).

Sunil wrote in many other genres including travelogues, children's fiction, short stories, features, and essays. Though he wrote all types of children's fiction, one character created by him that stands out above the rest, was Kakababu, the crippled adventurer, accompanied by his Teenager nephew Santu, and his friend Jojo. Since 1974, Sunil Gangopadhyay wrote over 35 novels of this wildly popular series.

Death:
Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack. He was suffering from prostate cancer for some time and went to Mumbai for treatment. Gangopadhyay's body was cremated on 25 October at Keoratola crematorium, Kolkata.

Awards & Honours:
He was honored with Ananda Award (1972, 1979) and Sahitya Academy Award (1984).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
125 (44%)
4 stars
129 (45%)
3 stars
23 (8%)
2 stars
4 (1%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 35 reviews
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
April 23, 2022
(রিভিউ না, বইয়ের একটা অধ্যায় থেকে কপি পেস্ট। নতুন কোল্ড ওয়ার শুরু হয়েছে, তাই গত শতাব্দীর কোল্ড ওয়ারের গল্প-কৌতুকগুলো পেছন ফিরে দেখার ব্যাপারটা একটা গুড আইডিয়া মনে হচ্ছে।)

"কলা নিয়ে পশ্চিম বার্লিনে একটা মজার গল্প চালু আছে। এটাকে গল্প হিসেবেই গণ্য করা উচিত।

পাঁচিল তোলার পর পূর্ব ও পশ্চিমের দুটো বাড়ি একেবারে মুখোমুখি। দুটি বাড়িতেই একটি করে বাচ্চা মেয়ে থাকে, তারা জানলা দিনে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে। একদিন পশ্চিমের মেয়েটি একটি ইলেকট্রনিক খেলনা দেখিয়ে বলল, এই, তোদের এটা আছে? পূর্বের মেয়েটি একটা সুন্দর পুতুল তুলে ধরে বলল, ওটা না থাকলে কী হয়, আমাদের এত সুন্দর পুতুল আছে। পশ্চিমের মেয়েটি এক জোড়া নতুন জুতো দেখিয়ে বলল, তোর আছে? পূর্বের মেয়েটি একটা কারুকার্য করা লেসের স্কার্ফ দেখিয়ে বলল, তোর এটা আছে? এইভাবে দুটি মেয়েই নানারকম জিনিস তুলে তুলে দেখাতে লাগল। এক সময় পশ্চিমের মেয়েটি একটা পাকা কলা তুলে দেখিয়ে বলল, তোর কলা আছে? পূর্বের মেয়েটি কখনও কলা চোখেই দেখিনি। কলার বদলে অন্য কোনও ফলও দেখাবার মতন তাদের বাড়িতে নেই। সে তখন কাঁদো-কাঁদো হয়ে মাকে জিগ্যেস করল, মা, আমাদের কলা নেই কেন? মা বললেন, আমাদের কলা নেই তাতে কী হয়েছে, আমাদের কমিউজিনম আছে। পূর্বের মেয়েটি সে কথা জানাতেই পশ্চিমি মেয়েটি একটু দমে গেল। কমিউনিজম কী তা সে জানে না, বাড়িতে তার মা-বাবা কেউ নেই তখন, জিগ্যেসও করতে পারছে না। কিন্তু সে পশ্চিমি কনজিউমার সোসাইটির মেয়ে তো, সে জানে, পয়সা থাকলে সব কিছুই কেনা যায়। তাই সে বলল, ঠিক আছে, আমার বাবাকে বলব, আমার জন্যও কমিউনিজম কিনে দেবে? তখন পূর্বের মেয়েটির মা মেয়েকে বলল, তুই ওকে বলে দে, ও যদি কমিউনিজম কেনে, তা হলে কিন্তু আর কলা পাবে না!"

(রাশিয়া আর তাদের মিত্রদেশ বেলারুশের কোন টেনিস খেলোয়াড় ২০২২ সালের উইমবলডন টেনিস টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাব।)
Profile Image for Akash.
446 reviews148 followers
December 10, 2022
এত সুন্দর করে এবং স্বল্প পরিসরে ইউরোপ, সমাজতন্ত্রের ইতিহাস লিখেছেন সুনীল। অসম্ভব ভাল লেগেছে বইটি পড়ে শেষ করতে পেরে। এই বইটিকে আমি অসীম তারা দিলাম। ইতিহাসের একটা নিজস্ব গতি আছে যা কোনো শক্তি জোর করে বদলাতে পারে নি এবং পারবে না।

বই থেকে নেয়া একটা গল্পঃ

সমাজতন্ত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে মস্কোতে একটা প্রতীকী গল্প প্রচলিত আছে।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা হচ্ছে একটা ট্রেন। লেনিন এই ট্রেনটা চালাতে চেষ্টা করলেন। এত বড় একটা ট্রেন চালাবার জন্য প্রচুর জ্বালানি দরকার, লেনিন বললেন, মানুষের বাড়ির দরজা-জানলা ভেঙে আনো, বন-জঙ্গল কাটো, যে-ভাবে হোক এ ট্রেন চালাতেই হবে। এরপর স্তালিন হলেন সেই ট্রেনের চালক। তখন লোকের বাড়ির দরজা-জানলা আর নেই, বন-জঙ্গলও সাফ হয়ে গেছে, স্তালিন বললেন, মানুষ ধরে ধরে এনে ইঞ্জিনে ভরে দাও। মানুষ বেশ ভালো জ্বালানি। কয়েক কোটি মানুষকে সমাজতন্ত্রের শত্রু বলে দেগে দিলেই হবে। তারপর এল ক্রুশ্চেভের আমল। তখন দেখা গেল, ট্রেন যে চলবে, সামনের দিকে আর লাইন পাতা নেই, লাইন পাতার মতন ইস্পাতও নেই। তবু সমাজতন্ত্রের ট্রেন চালাতেই হবে। ক্রুশ্চেভ বললেন, পেছন দিককার রেল লাইন উপড়ে এনে সামনের দিকে পাত, এইভাবে পাততেই থাক। এরপর এলেন ব্রেজনেভ। তখন জ্বালানি নেই, লাইন পাতা যাচ্ছে না তো বটেই, তা ছাড়াও সামনে এক বিশাল পাহাড়। ট্রেন এগুবে কী করে? ব্রেজনেভ বললেন, এক কাজ করা বাক। সমস্ত কামরার দরজা জানলা বন্ধ করে দাও, ভেতরে সারা দেশের মানুষ থাকুক, পার্টি মেম্বাররা শুধু নেমে দাঁড়াও। তারপর পার্টি মেম্বাররা সবাই মিলে ট্রেনটাকে ঝাঁকাতে থাক, তা হলে ভেতরের লোকগুলো ভাববে, ট্রেন ঠিকই চলছে। এরপর গরবাচেভ এসে বললেন, ভেতরে অন্ধকারে লোকগুলো যে কাতরাচ্ছে। দরজা-জানলা সব খুলে দাও। ভেতরের লোকগুলো বাইরের আসল চেহারাটা দেখুক। তারপর যা হওরার হোক!

এটা একটা মর্মান্তিক রসিকতা! সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থা নিশ্চয়ই এতটা খারাপ হয়নি, কিন্তু দেশের অবস্থা কতটা খারাপ হলে সাধারণ মানুষ নিজের দেশ সম্পর্কে এরকম গল্প ছড়াতে পারে?
Profile Image for Sami Choudhury.
77 reviews43 followers
April 8, 2017
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া

-
প্রায় বছর ১৫ আগে প্রথম বারের মতো পড়েছিলাম সুনীল গন্গোপাধ্যায়ের 'ইতিহাসের স্বপ্নভন্গ'। তখন সমাজতন্ত্রের প্রতি কিছুটা আগ্রহ এবং সহানুভূতি থাকার কারনেই কি না জানিনা সুনীল বাবুর মায়া কান্না খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয়নি। আর যুক্তিগুলোও খুব চিত্তাকর্ষক মনে হয়েছিলো। কিন্তু এখন দীর্ঘদিন পর মানসিক চিন্তা-ধারার নানা বিবর্তনে বইটি আবার পড়তে গিয়ে খুব একটা আগ্রহ জাগানিয়া মনে হয়নি। যদিও সুনীল গান্গুলীর লেখনী বরাবরই আমার প্রিয়। আর ভ্রমন কূহিনী হিসেবেও বইটি খুব খারাপ নয়। তবু বইটি পড়লে পাঠক ভাবতে বাধ্য হবেন যে, লেখক সমাজতন্ত্রের উপর বায়াসনেস থেকেই পুরোটা বই লিখেছেন। এ যেন সুনীলের কন্ঠে সমাজতন্ত্রের আত্মপক্ষ সমর্থন। তাই সমাজতন্ত্রের জন্য লেখকের মায়া কিংবা নাঁকি কান্নায় বইয়ের পাতাগুলো ভিজে এতোটাই নরম হয়েছে যে পড়তেই রীতিমতো কষ্ট হয়। এ যেন ইতিহাসের স্বপ্নভন্গ নয়, স্বয়ং লেখকেরই স্বপ্নভন্গের ইতিহাস। :P

-
যাই হোক, যুক্তি-তর্কের পরাকাষ্ঠা পেরিয়ে শুধু ভ্রমন কাহিনী হিসেবে চিন্তা করলে পশ্চিম বন্গে আমার প্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গন্গোপাধ্যায়ের 'ইতিহাসের স্বপ্নভন্গ' বইটি সত্যিই অসাধারণ। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো সম্পর্কে খুব অল্প কথায় জানতে অতুলনীয় একটি বই। লেখক জার্মানী থেকে শুরু করে, পোলান্ড, হান্গেরি, রুমানিয়া, রাশিয়া অনেক দেশই ঘুরেছেন। মিশেছেন তাদের মানুষের সাথে, কথা বলেছেন, বুঝতে চেয়েছেন তাদের অন্তরের ব্যাথা, মানসিক পরিবর্তনের ধাপগুলো।

-
১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীর ভান্গার ঐতিহাসিক মূহুর্তে, দুই জার্মানী একিভূত হবার সেই আবেগের স্রোতকে প্রত্যক্ষ করার জন্য হিসেবে সুনীল স্ববান্ধব সেখানে উপস্হিত ছিলেন। লেখকের বর্ননায় ঘটনাগুলো এতোই বাস্তব মনে হয় যে, পাঠকদের কেউ সেখানে না থেকেও তা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন অনেকাংশে। সেখান থেকে যাত্রা করে হান্গেরি পৌছে এয়ারপোর্টের তিক্ত অভিজ্ঞতা, তারপর ঐতিহাসিক ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে হান্গেরি থেকে রুমানিয়া ভ্রমন, রুমানিয়ার আর্থিক দৈন্যদশা, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত পোলান্ডের ঘুরে দাঁড়ানো, সাধারণ মানুষের ঐক্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া, রাশিয়ায় বিপ্লব-প্রতিবিপ্লব সবই যেন শিল্পীর ক্যানভাসের আকার পেয়েছে সুনীলের কলমের টানে। অসাধারণ কাব্যিক সব বর্ননা।

-
এক কথায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্ষমতার পালাবদলে পূর্ব ইরোপের দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের মাঝে যে পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া ঘটেছিলো, তা বেশ সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন সুনীল তার 'ইতিহাসের স্বপ্নভন্গ' নামক ভ্রমন কাহিনীতে। ইতিহাস ও বর্তমানকে পুঁজি করে সুনীলের সাথে পূর্ব ইউরোপে এ যেন এক মহাকাব্যিক যাত্রা।
Profile Image for এম এম হাসান (Md. Mahadi Hasan).
20 reviews1 follower
January 29, 2020
সমাজতন্ত্র নামে চমৎকার একটি স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নে ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির একটি স্থির চিত্র আঁকা ছিল। এটি এক মহান আদর্শের নাম। কিন্তু সেই আদর্শ কোন দেশেই সফল হতে পারে নি। সমাজতন্ত্রের দেখানো সেই স্বপ্ন, সেই ছবি অলীক হয়ে গেল। এটাই খুব বেদনার। এটাই যেন স্বপ্নভঙ্গ। পূর্ব ইউরোপের পটপরিবর্তন আসলে এক শোকাবহ ঘটনা যা সমাজতন্ত্রের বা আদর্শের পরাজয়।
১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙ্গা হলো বার্লিনের প্রাচীর। এক হল পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি। ঐতিহাসিক সেই মিলন উৎসবের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কেননা তার হৃদয়ে ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের যে ক্ষত আমৃত্যু দগদগে ঘা এর মতো যন্ত্রণা দিয়েছে তা যেন কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে দুই জার্মানির এই মিলনে। দুই বাংলা আর এক হবে না; ফরিদপুর আর কলকাতা দুরুত্ব কম হলেও কাঁটাতার দিয়ে যোজন যোজন দুরুত্ব তৈরি করা হয়েছে। এর মূলে ছিল ধর্ম যা লেখকের মতে একটি রূপকথা। লেখক বার্লিন প্রাচীর ভাঙার সন্ধিক্ষণে জার্মানি ঘুরে ২-৪ জন বন্ধুকে সঙ্গী করে যান হাঙ্গেরি, রুমানিয়া এবং পোল্যান্ড। প্রায় বিনা যুদ্ধে, কোন সাম্রাজ্যের পতনের মতন, পূর্ব ইউরোপের যেসব দেশে ঘটেছিল বিস্ময়কর পালাবদল এসব দেশ তাদের অন্যতম। সেসব দেশে ঘুরে লেখক দেখেছেন সমাজতন্ত্রের মুখোশ পরে কীভাবে মানুষকে ঠকানো হয়েছে। কীভাবে স্লোগানের আড়ালে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সেখানকার মানুষ ফিরতে চাইলেন গণতন্ত্রে। অথচ মানুষের সভ্যতার যে অগ্রগতি তাতে গোষ্ঠীতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, ধনতন্ত্র এবং গনতন্ত্র পার হয়ে সমাজতন্ত্রের দিকেই ইতিহাসে স্বাভাবিক পদক্ষেপ। তবু এই সব দেশে সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হল কেন? এই বিস্ময় এবং প্রশ্ন নিয়েই প্রতিটি দেশে ঘুরেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। মিশেছেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে, জেনেছেন তাদের মতামত। লেখক নিজেই সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনিও সেই স্বপ্নের সারথী ছিলেন। তাইতো সমাজতন্ত্রের পতনে যেন তার নিজের স্বুপ্ন ভঙ্গের সাথে সাথে যেন ইতিহাসের স্বপ্নও ভেঙে চুরমার হয়েছে।

বইটি পড়তে পড়তে পাঠক সেই সময়ে ফিরে যেতে পারবে। এটিকে ইতিহাস নির্ভর ভ্রমণকাহিনী বলা যায় যাতে সমাজতন্ত্র নিয়ে লেখকের দর্শন এবং গভীর ব্যাখ্যার পরিচয় পাওয়া যায়।
Profile Image for Fahad Amin.
168 reviews9 followers
April 20, 2025
সমাজতন্ত্রের পতনের সন্ধিক্ষণ নিয়ে চমৎকার পর্যবেক্ষণ।
Profile Image for Mijan Rashid.
55 reviews20 followers
November 4, 2023
মার্ক্সবাদী সমাজতন্ত্রের সমর্থক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমাজতন্ত্র পতনের পর পূর্ব ইউরোপের দেশ, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া এবং পোল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন এবং জানার চেষ্টা করেছেন সেই সব দেশে সমাজতন্ত্রের পতনের এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণার কারণ। মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করেছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। লেখক দুটি কারণের উপর জোর দিয়েছেন, ১. খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অপ্রতুলতা, ২. ব্যক্তি স্বাধীনতার কঠোর নিয়ন্ত্রণ। একদলীয় শাসন ও শাসকশ্রেণীর দূর্নীতি এইসকল দেশের জনগণকে সমাজতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রধান কারণ বলে লেখক মনে করেন নাই।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অসাধারণ লেখনীর আরেকটি স্বাক্ষর হয়ে থাকবে বইটি।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
December 7, 2024
কাগজে-কলমে ও বিপ্লবীদের মনে যে সমাজতন্ত্র এক উঁচু আদর্শ, তা যখন বাস্তব হয়, তখন দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। ইউরোপের অনেক দেশে, সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে বিভিন্ন কারণে, ভেঙ্গে গেছে বহু স্বপ্ন। এই স্বপ্নভঙ্গের বর্ণনার সাথে সুনীল যোগ করেছেন কিছু জায়গায় ভ্রমণ আর ইতিহাস।
Profile Image for Nusrat Faizah.
99 reviews37 followers
December 3, 2022
সমাজতন্ত্র কেন ব্যর্থ হল পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে?জার্মানি,পোল্যান্ড,হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়া এবং কিছু সময় পরে রাশিয়া ঘুরে তার ই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন সুনীল।
পাতার পর পাতা জুড়ে দেশগুলোর মানুষের কথা,সমাজ ও অর্থনীতির অবস্থা এবং সুনীলের চিন্তাভাবনার বিস্ময়কর গভীরতার ছাপ মিলবে এই বইতে।
Profile Image for Rocky Rahman.
106 reviews10 followers
March 7, 2025
মানব সভ্যতার অগ্রগতীর হিসেবে, গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের পরেই আসার কথা সমাজতন্ত্র। তবে কেনো অগ্রগতি হবার পর পুনরায় সমাজতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে পিছিয়ে এসে গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের কাছে সকলে আশ্রয় নিলো?
১৯৯১ সাল, ভেঙ্গে গেলো পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন, পতন ঘটলো সমাজতন্ত্রের। যেটা মানুষরা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি, সেটাই হলো, এ যেনো এক অবিশ্বাস্য কান্ড।
সেই সময়টাতে লেখক পূর্ব জার্মানিতে গেলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হতে। সেখানে গিয়ে বার্লিন দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ দেখে অবাক হচ্ছেন তিনি, কেউ কি কখনো ভেবেছে যে এই দেয়ালের এতো জলদি পতন ঘটবে!
লেখক অতঃপর পূর্ব ইউরোপের আরও কিছু দেশ হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, পোল্যান্ড গেলেন। এই দেশগুলো সেভিয়েতভুক্ত ছিলো। কিছু বছর পর এককালীন সোভিয়েতের প্রাণ, সোভিয়েতের উত্তরসূরী রাশিয়াতেও গেলেন।
লেখক সমাজতন্ত্রের প্রতি দুর্বল ছিলেন, সেই আদর্শকে তিনি বুকে ধারণ করতেন, উনার মনে প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো যে কেনো সমাজতন্ত্রের পতন ঘটলো। তাইতো তিনি এই দেশগুলো ঘুরে ঘুরে সেই উত্তরগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
উনি বুঝতে পারলেন, পতনের অন্যতম কারন মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারা। রাষ্ট্রনায়কেরা স্বৈরশাসক হয়ে উঠা বিশেষ করে রোমানিয়ার ইতিহাসটা এখানে অনেকটাই তুলে ধরা হয়েছে যে চাউসেস্কু তার দেশের মানুষদের উপর কেমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সোভিয়েতের পতনের সময়। এছাড়াও মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া। এছাড়াও আরও অনেক কারনেই সমাজতন্ত্রের মতো আদর্শ থেকে মানুষের রূহ উঠে যায়, মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়ে।
এখানে একটি জিনিস আমাকে অনেকটাই ভাবিয়েছে, যেটা হচ্ছে- যখন লড়াই করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো সকলে সেটাকে বিপ্লব বলেছে, আবার যখন লড়াই করে সকলে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছে সেটাকেও বিপ্লবই বলা হয়েছে।
সুনীলের ভ্রমণকাহিনি খুব আরামদায়ক, আপনি ভ্রমন কাহিনির থেকেও তথ্য, ইতিহাস বেশি জানতে পারবেন বিরক্ত না হয়ে।
যদি এই সকল বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই পড়বেন।
Profile Image for Imam Abu Hanifa.
115 reviews26 followers
October 21, 2020
জার রাজ��ংশের পতন ঘটিয়ে লেলিনের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায় আসা ছিলো বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলো সাম্যবাদের। এমন এক বিশ্বের স্বপ্ন যেখানে মানুষে মানুষে কোনো শ্রেণীভেদ থাকবে না। থাকবে না কোনো ধনী-গরিবের ব্যবধান। থাকবে না কোনো ধর্ম, জাতীয়তাবাদ। মানুষ ভেবেছিলো পৃথিবীর ইতিহাসের ভবিষ্যত হলো কমিউনিজম।
এরপরে আসলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। স্ট্যালিন হয়ে উঠলেন এক মহাবীর। দেশে দেশে তার জয়গান।
তারপরে?
একে একে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে লাগলো সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা। বার্লিনের প্রাচীর ভাঙলো। যারা এই কমিউনিজমের মেরুদণ্ড হওয়ার কথা, সেই শ্রমিকরাই সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলো। এক সময় বিপ্লব বলতে বোঝাতো ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাম্যবাদের স্লোগান। অথচ কালের কি নির্মম পরিহাস! সেই সাম্যবাদের বিরুদ্ধেই শুরু হলো বিপ্লব।
একে একে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো গনতন্ত্রের আশ্রয় নিতে লাগলো। কেন এমন হলো? সাম্যবাদের মত একটা মহৎ আদর্শ কেন মুখ থুবড়ে পড়লো? কেন সমাজতান্ত্রিক দেশে এত তীব্র জাতীয়তাবাদ? কেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়লো? তবে কি সাম্যবাদ শুধু একটা আদর্শ হয়েই থাকবে? এর বাস্তব প্রয়োগ কি সম্ভব না?

যখন থেকে কমিউনিজম ব্যাপারটা অল্প অল্প বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা খুতখুতে ভাব ছিলো। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে কমিউনিজমের মাধ্যমে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা একটা দিবাস্বপ্ন। যদিও এই ব্যাপারে আমার জ্ঞান শূণ্যের কোঠায়। তবুও লেখকের এই বইটা পড়ে মনে হলো, একেবারে ভুলও ভাবি নাই।
পুরো বইটা জুড়েই লেখক দেশেদেশে সমাজতন্ত্রের পতন নিয়ে দর্শকের ভূমিকা থেকে লিখেছেন। তিনিও আমার মতই প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়াচ্ছেন। বইটা অনেক কিছু জানাবে। অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,866 followers
March 17, 2013
A collection of memoir, travelogue, journalistic narratives and reminiscences, brought together by one of the most iconic moments of 20th Century (breaking-up of the Berlin Wall), and the author's thoughts about shattering of the socialist dream. Alas, non-fiction of this type would no longer be written in Bengali, now that the author has left us last year!
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
March 4, 2023
'দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রুমটারে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?'
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। সমাজতন্ত্রের পতনের পর ঐ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থান প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় দুই পর্বে অভিজ্ঞতার বর্ননা দিয়েছেন। তবে বইটিকে ভ্রমণকাহিনী বলার চাইতে পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ইতিহাসের প্রত্যক্ষ বয়ান বলাই শ্রেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির প্রধান ছিল জার্মানি। হিটলারের আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে জার্মানি পরাজয় বরণ করে নেয়। তখন বার্লিনে উপস্থিত ছিল ধনতান্ত্রিক ইঙ্গ-মার্কিন ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী। জনগণ না চাইতেও জার্মানিকে দুই ভাগে ভাগ করে নিল তারা। পূর্ব জার্মানি পড়লো সমাজতান্ত্রিক ব্লকে এবং পশ্চিম জার্মানি নিয়ে নিল ধনতান্ত্রিক ব্লক। দুইটি সমাজব্যবস্থা তাদের দুই ধরনের নতুন স্বপ্ন গেঁথে দিল মস্তিষ্কে। কিন্তু ভ্রমণকালে লেখক দেখেছেন দুই জার্মানির মধ্যকার পার্থক্যগুলো। সাম্যবাদের গান গেয়ে পূর্ব জার্মানির শাসকেরা জনগণকে ভুলিয়ে রাখলেও কার্যত উন্নয়ন হয়ই নি। শুধু একটি দেয়ালের মাধ্যমে একই জনগোষ্ঠীকে আলাদা করে রাখা হয়েছে এবং দীর্ঘ সময়ে তাদের মধ্যকার বৈষম্যগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। নদীর প্রবাহ যেমন বাধাপ্রাপ্ত হলে নতুন গতিপথ খুঁজে নেয়, তেমনিভাবে সমাজতন্ত্রের আস্ফালন মিথ্যা প্রমাণিত করে ১৯৯০ সালে বার্লিন দেয়ালের পতন ঘটে।

জার্মানির পর পূর্ব ইউরোপের আরেক দেশ হাঙ্গেরিতে যান লেখক। সেখানে কিছুকাল আগে সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে চলে গিয়েছে। একটা সময় পূর্ব ইউরোপ অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কারণে সেখানে জনজীবনের করুণ অবস্থা দেখা দেয়। মানুষের বিক্ষিপ্ত অবস্থা ধীরে ধীরে পুঁজিবাদের দিকে নিয়ে যায়। তারই ফলশ্রুতিতে সমাজতন্ত্রকে বয়কট করে হাঙ্গেরির জনগণ।

হাঙ্গেরির পাশের দেশ রোমানিয়াতে ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। সরকারের বেঁধে দেওয়া রেটে ডলার না কিনে রাস্তাঘাটে বিদেশি দেখলেই তাদের থেকে অতিরিক্ত দামে ডলার কিনে মানুষেরা। দোকানগুলোতে খাবার কেনার জন্য লম্বা লাইন পড়ে যায় অথচ খাবার নেই। বিদেশীদের কেনাকাটার জন্য আলাদা দোকান; কিন্তু দেশের মানুষেরা সেখান হতে কিছু কিনতে পারছেনা। দেশের সর্বত্র হতাশা ও দারিদ্র্যের ছাপ। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাম্যবাদের গান তাদের শুনিয়ে সেই গানকে বাস্তবায়ন করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। গুটিকয়েক মানুষের হাতেই ক্ষমতা ও সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সকল প্রতিষ্ঠানই সরকারি; তবে কিছু কিছু কিছু ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা যানবাহনের লোকেরা কাজ করতে চায়না। কারণ তারা জানে মাস শেষে ঠিকই টাকা পাবে। অন্যদিকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সেবার মান ভালো।

রোমানিয়ার পর লেখক যান পোল্যান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার এই দেশে ব্যপক গণহত্যা চালায়। মূলত ইহুদি নিধনের প্রধান এলাকা ছিল পোল্যান্ড। জার্মানি যেমন যুদ্ধের সময় গণহত্যা চালিয়েছিল তেমনি ওয়ারশ অভ্যুত্থানের সময় কমিউনিস্ট নয় বলে তাদের পাশে দাঁড়ায়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাই দুই দেশকেই মনেপ্রাণে ঘৃণা করে পোলিশরা। যুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক ব্লকে চলে যায় পোল্যান্ড। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের একনায়কতন্ত্র এখানেও সমাজতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেয়। পোল্যান্ডের মানুষ যখন দেখে ধনতান্ত্রিক ফ্রান্সের মানুষ রুটি ও মাখন খেতে পারছে কিন্তু তারা সমাজতান্ত্রিক হওয়া সত্ত্বেও পারছে না, তখন তারা কীভাবে সমাজতন্ত্রের উপর ভরসা রাখবে?

বইটির দ্বিতীয় পর্বে লেখকের রাশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছেন। ততদিনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। গর্বাচেভের গ্লাসনস্ত ও পেত্রোইস্কা ব্যর্থতায় পর্যবসিত। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকেই গর্বাচেভের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই বিদ্রোহ সফল হয়নি; তবে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় টেলিভেশনে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। ভেঙে যাওয়া সোভিয়েতের প্রধান অঞ্চল রাশিয়া ভ্রমণকালে পূর্ববর্তী ভ্রমণের সাথে পার্থক্য খুঁজে পান লেখক। অনেককিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে, এমনকি বিপ্লবের নায়ক থেকে শুরু করে রাস্তার নাম পর্যন্ত।

কোনো সমাজব্যবস্থাই ত্রুটিমুক্ত নয়। আজ যাকে বিপ্লবের নায়ক বলে পূজা করা হচ্ছে, হয়তোবা অদূর ভবিষ্যতে তাকে খলনায়কের আসনেও বসতে হতে পারে। পুঁজিবাদকে উচ্ছেদ করে যখন সমাজতন্ত্রকে বসানো হলো তখন যেমন তাকে বিপ্লব বলা হলো; তেমনিভাবে সমাজতন্ত্রের উচ্ছেদকেও সেই বিপ্লব বলেই আখ্যা দেওয়া হয়। সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে লেখক দুইটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন। প্রথমত খাদ্যের অভাব এবং দ্বিতীয়ত বাকস্বাধীনতা না থাকা। সমাজতন্ত্রের শাসনব্যবস্থায় লেনিন একদলীয় শাসনের উল্লেখ না করলেও সকল ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে একনায়কতন্ত্র। ফলশ্রুতিতে জনগণের অধিকার আদায়ের বিপরীতে ক্ষমতাসীনদের ধনী হওয়ার স্রোত বেশি দেখা যায়। সমাজতান্ত্রিক নেতারা তাদের শাসনকে নিজেদের ইচ্ছামত পরিচালনা করতে গিয়ে পুরো ব্যবস্থাকেই কলঙ্কিত করেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ননাভঙ্গি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বইটা পড়তে গিয়ে ভ্রমণ ও ইতিহাস জানা দুইই হয়ে যাবে। লেখকের সমাজতন্ত্রের প্রতি কিছুটা টান দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১৮ হাজার ভারতীয় সেনা শহীদ হওয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত সংখ্যাটা ছিল ১৪৭৭(নিখোঁজসহ)। অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে। সর্বোপরি ভালো একটা বই। পাঠকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়তে পারেন। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Rakibul Dolon.
167 reviews24 followers
December 11, 2018
ইতিহাস অনেক বড় শিক্ষক।
মানুষের ভালোর জন্যে তৈরি কোন ব্যবস্থা ভুল নেতৃত্বে গেলে দেশের মানুষের পরিণতি কেমন হতে পারে তা এই বইটিতে স্পষ্ট।
যারা সর্বত্র গণতন্ত্রের বুলি আউরে বেরান তারা সবাই কি নিজের দেশকে আর দেশের মানুষকে কখনো সত্য গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেতে দেন?
Profile Image for Md Khalid Rahman.
137 reviews38 followers
August 9, 2019
সুনীলের ইতিহাসভিত্তিক লেখাগুলোই সবচেয়ে অসাধারণ ।
Profile Image for Nayeem Samdanee.
58 reviews14 followers
February 3, 2024
সুনীলের গদ্য বরাবরই অনবদ্য। দীর্ঘ, অথচ একঘেয়ে নয়; তথ্যসমৃদ্ধ, কিন্তু তথ্যভারাক্রান্ত নয়। তিনি ভ্রমণকে ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত করেন সাবলীলভাবে, আবার প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সমালোচনা কিংবা আত্মসমালোচনাও করেন। তাঁর জানার পরিধি, শিল্পবোধ এবং সমাজ-দর্শন আমাকে সবসময়ই মুগ্ধ করে।

এটি মূলত ভ্রমণকাহিনী, তবে মূল আলোচ্য বিষয় নিঃসন্দেহে সোভিয়েতকেন্দ্রিক সাম্যবাদের মুখ থুবড়ে পড়া। বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে দুই জার্মানি যখন এক হয়ে যায়, সেই সময়টাতে সুনীল সেখানে ছিলেন। সামনাসামনি দাঁড়িয়ে দেখেছেন কিভাবে শক্তিশালী জাতীয়তাবাদের কাছে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ মুখ থুবড়ে পড়ছে। আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরপরই ঘুরেছেন হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, পোল্যান্ড আর রাশিয়া। দেশগুলো ঘুরেফিরে, আর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে তিনি পাঠককে গল্পচ্ছলে ইতিহাস পড়ান। সোভিয়েতভুক্ত এই দেশগুলোতে পার্টিজানরা যেভাবে আত্মকেন্দ্রিক ও নীতিভ্রষ্ট হয়ে উঠেছিলো, তৈরি করেছিলো সুবিধাবাদী শ্রেণি ও নেতা, ফলশ্রুতিতে অধিকারবঞ্চিত সাধারণ মানুষ কিভাবে সমাজতন্ত্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলো, তার চমৎকার একটা ধারণা পাওয়া যায়। তাত্ত্বিকরা হয়তো সুনীলের অনেক পর্যবেক্ষণের সঙ্গেই একমত হবেন না, কিন্তু তার এসব চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করারও সুযোগ নেই।
Profile Image for Muin Mohammad Mozammel.
61 reviews9 followers
March 21, 2024
সংক্ষিপ্ত পরিসরে সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা নিয়ে বেশ তথ্যবহুল একটা বই লিখেছেন বটে প্রিয় সাহিত্যিক। লেখক যে সমাজতন্ত্রের ভক্ত এটা গোপন করার কোন চেষ্টাই করেননি, তারপরও অনেকটাই নির্মোহ ভঙ্গিতে বর্ণনা করে গেছেন এর ত্রুটি-বিচ্যুতি।

২য় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের পরে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেকটা আয়োজন করেই সমাজতন্ত্র চাপিয়ে দেয়া হয় সোভিয়েত জোটের প্রভাবে। কিন্তু, তত্ত্বের বহিরঙ্গে এই রাজনৈতিক পট অনেক আদর্শিক হলেও, বাস্তবিকতা দেখায় ভিন্ন কথা; যা কিনা রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডের মত দেশ এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রমাণ করে গেছে।

উৎপাদনের সমবন্টনের কারণে যখন প্রতিযোগিতা নিঃশেষ হয়, তখন কর্মে চলে আসে নিস্পৃহতা। যেটার ধাক্কা আবার গিয়ে পড়ে রাষ্ট্রের আয় উপার্জনেই। এই মতবাদকে সবসময় জয়ী রাখতে পার্টি যখন সর্বেসর্বা হয়ে পড়ে, তখন আস্তে আস্তে তৈরি হয় চাহিদা ও যোগানের অসামঞ্জস্যতা। ফলস্বরূপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দোকানের সামনে লেগে থাকে দীর্ঘ লাইন; মাংসের ব্যবস্থা হলেও রুটির ব্যবস্থা না হওয়াতে আস্বাদন করা যায় না রুটি-মাংসের সুস্বাদ।

আমাদের দেশে যেমন বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন হয়, তেমনই শুধু সরকারের সার্বক্ষণিক জয়গানের মধ্যে দিয়ে জনমনে তৈরি হয় বিতৃষ্ণা; রমরমা হয় কালোবাজারি। দিনশেষে ধনতন্ত্রের চটকদার ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে চোখ ফেরানো দায়।

লেখক ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়ে গেছেন এক হো চি মিন ছাড়া স্টালিন, লেনিন, মাও সহ তাবত সমাজতান্ত্রিক নেতারা ভোগবিলাসে কিরকম বেপরোয়া ও উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সমাজতন্ত্র যেখানে শ্রেণিবিভেদের সমাধান হয়ে আসার কথা ছিল, সেখানে এই নেতারাই হয়ে উঠেছেন একেকজন শ্রেণিবৈষম্যের প্রতিভূ। উপসংহারে গিয়ে দেখা যায় দেশগুলোর অবস্থা পূর্বের তুলনায় আরও সঙিন অবস্থায় উপনিত হয়েছে।

গর্বাচেভ প্রকৃতই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এই সংকট। তাই তো যত দ্রুত পেরেছেন, শেষ পর্যন্ত সমাজতন্ত্র কবর দিয়েছেন আর জোটের দেশগুলোকেও স্বতন্ত্র করে দিয়েছেন। তবে এর পটভূমিতে ছিল আরব বসন্তের অনুরূপ মার্ক্সবাদ বিরোধী বিদ্রোহ। আসলে তাত্ত্বিক আলোচনা করে অনেক কিছুই প্রতিষ্ঠা করা যায়, কিন্তু মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি আদর্শ দিয়ে প্রভাবিত হয় না সব সময়৷ এই সহজ সত্য বা Real life scenario কে আমলেই নেয়া হয়নি এখানে।

এসবের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল বার্লিন দেয়ালের ভাঙন, যেখান থেকে লেখক তার বিশ্লেষণী অভিযাত্রার শুরু করেছেন। আর তুলে এনেছেন এই আদর্শের সীমাবদ্ধতা। বইটি আমাকে রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে বেশ ঋদ্ধই করেছে বলবো।
Profile Image for Sushanto Kumar Saha.
93 reviews9 followers
April 16, 2020
দুই পর্বে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনী। তবে পুরোপুরি ভ্রমণকাহিনী না বলে হয়ত রাজনৈতিক ভ্রমণকাহিনী বলাটা শ্রেয় কারণ বইটির মূল উপজীব্য হলো ইউরোপের রাজনীতি।

ব্যক্তিগতভাবে, রাজনীতি নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও এই বইয়ের রাজনৈতিক আলাপ যথেষ্টই উপভোগ্য। প্রথম পর্বে জার্মানী, হাঙ্গেরী, রোমানিয়া ও পোল্যান্ড এবং দ্বিতীয় পর্বে রাশিয়া ঘোরার পাশাপাশি লেখক সেদেশের মানুষের সাথে মিশে তাদের রাজনৈতিক মনোভাব জেনেছেন, কিভাবে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্রের ভাঙা গড়া হয়েছে এসব দেশে তার কারণ খুঁজে বেরিয়েছেন, তার সাথে তুলে এনেছেন সেসব দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট। গত ৯০ এর দশকেও বিরাট রাজনৈতিক উথ্থান পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এসব দেশের আজকের অবস্থার সাথে নিজের দেশের তুলনা করলে খারাপই লাগে। এখন তাদের অবস্থান কোথায় আর আমাদের অবস্থান কোথায়!

বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দুই জার্মানী এক হওয়া লেখক নিজের চোখে দেখে বর্ণনা করেছেন, তখনকার দিনেও ভারতীয় পাসপোর্টের এয়ারপোর্টে বিড়ম্বনার কথা লিখেছেন, সোভিয়েত ভেঙে অন্যান্য রাষ্ট্রের উথ্থানের কথা লিখেছেন। কিছু কিছু বর্ণনা এত বেশি জীবন্ত যে মনে হয়, এই মাত্র নিজেই প্রত্যক্ষ করলাম। কিছু উক্তিও সবসময় মনে রাখার মতন।

তবে প্রত্যেক দেশেই সমাজতন্ত্রের পরাজয়ে (পরাজয় বলা ঠিক কিনা জানি না, হয়ত সমাজতন্ত্রের আদর্শ রক্ষা না হওয়ায়) লেখক একটু কষ্টই পেয়েছেন এবং আদর্শ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন প্রত্যেক জায়গাতেই ভঙ্গ হওয়ায় হয়ত বইয়ের নাম " ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ "।
Profile Image for Sagar Mallick.
46 reviews7 followers
January 6, 2021
ঐতিহাসিক কাহিনির টানাপোড়নে এক হারানো সময়ের গল্পঃ ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ

সমাজতন্ত্র নাকি গণতন্ত্র এই নিয়ে মানুষের মাঝে সবসময় এক ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। বিশেষ করে প্রগতিশীল মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মাঝে সমাজতন্ত্র নাকি গণতন্ত্র এই প্রশ্নের উত্তর মরীচিকার মতো। বৃহত্তর গণতন্ত্রে বাস করে সমাজতন্ত্রকে যেমন সোনার হরিণ মনে হয় তেমনি সমাজতন্ত্রের সময়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কাছে গণতন্ত্রে প্রবেশ করা ছিল বিশাল কোন পাওয়া।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নিয়েছিলো সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত সরকার এবং ধনতন্ত্রে বিশ্বাসি আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়ন যে সব দেশের কর্তৃত্ব নিয়েছিলো স্বাভাবিকভাবেই সে সব দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো সমাজতন্ত্র। পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া এবং পোল্যান্ড এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। পালাবদলের ইতিহাসে এই সমাজতন্ত্র ভেঙে আবার তারা গড়ে তুলেছিলো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা।

কিন্তু কেন?

সমাজতান্ত্রের সমস্যা গুলো কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লেখক চষে বেড়িয়েছেন গোটা ইউরোপ। জার্মানির অলি গলি ঘুরে বেড়িয়েছেন অার সংগ্রহ করেছেন নানা তথ্য। বুদাপেস্ট, বুখারেস্ট, ওয়ারশ, মস্কো, লেলিনগ্রাদ সহ নানা শহর ঘুরে খুঁজেছেন কেন গণতন্ত্রে ফিরে অাসা এই প্রশ্নের উত্তর। শহরের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অন্য অনেকের সাথে মত বিনিময় করেছেন। কমিউনিজমের পতনের কারণ খুঁজেছেন। নিজের চোখে অবলোকন করেছেন সমাজতান্ত্রিক দেশের অবস্থা। লেখল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা লব্ধ সেই সব জ্ঞানই স্থান পেয়েছে ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ বইয়ের পাতায়।

ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক----

বার্লিন প্রাচীরের একপাশে সমাজতন্ত্র অন্যপাশে গণতন্ত্র। এই দেয়াল ঘেসে পূর্ব ও পশ্চিমের দুটো বাড়ি একেবারে মুখোমুখি। দুই বাড়িতেই থাকে একটা করে বাচ্চা মেয়ে। তারা জানালা দিয়ে পরস্পরের সাথে কথা বলে। একদিন পশ্চিমের মেয়েটি একটি ইলেকট্রনিক খেলনা দেখিয়ে বলল, তোদের এটা আছে? পূর্বের মেয়েটি একটা সুন্দর পুতুল দেখিয়ে বলল, ওটা না থাকলে কী হয় আমাদের সুন্দর পুতুল আছে। পশ্চিমের মেয়েটি একজোড়া নতুন জুতো দেখিয়ে বলল, তোর আছে? পূর্বের মেয়েটি একটা কারুকার্য করা লেসের স্কার্ফ দেখিয়ে বলল, এটা নেই কিন্তু এটা অাছে। তোর এটা আছে? এইভাবে দুটো মেয়েই নানারকম জিনিস তুলে তুলে দেখাতে লাগল। একসময় পশ্চিমের মেয়েটি একটা পাকা কলা দেখিয়ে বলল, তোর কলা আছে? পূর্বের মেয়েটি কখনো কলা চোখেই দেখেনি। কলার বদলে অন্য কোনো ফলও দেখাবার মতো নেই বাড়িতে। সে তখন কাঁদো কাঁদো হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, মা, আমাদের কলা নেই কেন? মা বললেন, আমাদের কলা নেই তাতে কী হয়েছে, আমাদের কমিউনিজম আছে।

পূর্বের মেয়েটি তখন পশ্চিমের মেয়েটিকে বলল তাদের কলা নেই কিন্তু কমিউনিজম অাছে। সে কথা জানাতেই পশ্চিমি মেয়েটি একটু দমে গেল। কমিউনিজম কী তা সে জানে না, বাড়িতে তার বাবা-মা কেউ নেই তখন, জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। কিন্তু সে পশ্চিমি কনজিউমার সোসাইটির মেয়ে তো, সে জানে, পয়সা থাকলে সব কিছুই কেনা যায়। সে তখন বলল, ঠিক আছে বাবাকে বলব, আমার জন্য কমিউনিজম কিনে দেবে। তখন পূর্বের মেয়েটির মা বলল, তুমি যদি কমিউনিজম কেনো, তাহলে কিন্তু আর কোন দিন কলা পাবে না।

নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইনের সারি চিন্তা করলেই ভাবনা থমকে যায়। হ্যা!যদি শুনেন সমাজতন্ত্রের সময়ে সামান্য সবজি কিংবা মাংস, দুধের জন্য সকাল থেকে বিশাল লাইন পড়ে যেত এমনকি গভীর রাত থেকে চলতো সামান্য দুধের জন্য দীর্ঘ লাইন তবে কি সত্যিই অবাক হবেন?

বিভিন্ন জিনিসের জন্য দীর্ঘ লাইনের সারি নিয়ে অারেকটা গল্প বলা যাক---

একবার একজন মহিলার ভিষণ অসুক হলো। কোনভাবে কেও সারাতে পারছে না। শেষমেশ এক ডাক্তারের চিকিৎসায় মহিলা ভাল হয়ে উঠলেন। দেশে সমাজতন্ত্র চলছে। সুতরাং ডাক্তারের কাজ সেবা দেওয়া এক্সট্রা খাতিরের বালায় নেই। কিন্তু মহিলা ডাক্তারকে কিছু দিতে চাইলেন। ডাক্তার তখন মহিলাকে বললেন অাপনি যদি সত্যিই কিছু দিতে চান তবে অামাকে একটি রাত দিন। ছি!ছি! এ কি কু প্রস্তাব! মহিলাটি তার স্বামীকে বললেন সে কথা। স্বামী বললেন সে তার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে তার বদলে একটি রাত এমন কিছু না। স্বামী বললেন, তার কোন সমস্যা নেই। মহিলা ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেলেন। এক পত্রিকা, ম্যাগাজিনের দোকানের সামনে নিয়ে বসিয়ে রাখলেন। বললেন দোকান খোলা মাত্র পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন নিয়ে তাকে যেন পৌঁছে দেওয়া হয়। সামান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য এমন ঘটনা ঘটতো তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সমাজে।

এই যে অামরা এখন মন খুলে কথা বলতে পারছি, যা ইচ্ছে তা নিয়ে অালোচনা করতে পারছি তৎকালীন সময়ে কিন্তু এমন কল্পনাও করা যেত না। স্বাধীন ভাবে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারার কথা তারা চিন্তাও করতে পারতো না তখনকার মনুষ। এমনকি দেশের প্রতিটি মানুষের পিছনে তারা স্পাই লাগিয়ে রেখেছিল। কেও দেশ বিরোধী কথা বললে, অালোচনা করলে সাথে সাথে শাস্তি দেওয়া হবে।
এ নিয়েও অারেকটি গল্প বলা যাক----

স্কুল থেকে ছাত্র ছাত্রীদের বলা হল বাড়িতে কি বিষয় নিয়ে কথা হয় তা স্কুলে এসে জানাতে হবে। পরিবারের লোক কি নিয়ে কথা বলে, বাবা মা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে কিনা সব বিষয়ের কথা যেন স্কুলে জানায়। যদি কেও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে তবে তাকে গ্রেফতার করা হবে। সামান্য স্কুলগামী ছেলে মেয়েদের স্পাই হিসাবে ব্যবহার করা হত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে।

এতশত ঘটনার পরেও যদি কখনো কাওকে প্রশ্ন করা হতো অাপনি সমাজতন্ত্র থাকুক এটা চান নাকি গণতন্ত্র তবে অকপটে সবাই বলতো সমাজতন্ত্র? এত অর্থ কষ্ট, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব তারপরেও মানুষ কেন সমাজতন্ত্র চাইতো তার সহজ উত্তর হল মানুষের ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা ছিল। এক কথায় সবার জন্য মৌলিক অধিকার ছিল এবং তাদের জীবনের অনিশ্চয়তা ছিলো না।

বইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সোভিয়েত ইউনিয়ন! একসময় এই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে কয়েকটি নতুন দেশের জন্ম হয়! সোভিয়েত ইউনিয়নের এই উথান-পতন এবং ভেঙে যাওয়ার গল্প লেখক বর্ননা করেছেন সুনিপুণ হাতে! লেখক মূলত কয়েকটি দেশের সমাজতান্ত্রিক অবস্থা এবং সে সব দেশের জনগণের সাথে ঘুরে তাদের নিকট জানতে চেয়েছেন সমাজতন্ত্রের উপর তাদের অনাস্থার কারণ কি? ঐসব দেশের কিছু লোকেরা তখনও সমাজতন্ত্র পছন্দ করত, কিন্তু তারা সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছিলো, বাক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ ছিলো সরকার!আরো অনেক কারণ আছে, পেছনে অনেক ইতিহাস অাছে, আর এই ইতিহাস-রাজনীতির খেলা জানতে হলে পড়তে হবে সুনীলের ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ।

ইতিহাস নিয়ে যাদের একটু অাগ্রহ অাছে তাদের সবার অাগ্রহ থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির বিভক্তি সম্পর্কে। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির বিভক্তিসূচক সেই বার্লিন প্রাচীর এখনও নীরবে-সরবে আলোচিত হয়ে থাকে। ১৯৮৯ সালে এই প্রাচীর ভাঙ্গার ঐতিহাসিক মুহূর্তে লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সেই ঐতিহাসিক কাহিনির টানাপোড়েনে শব্দের মায়াজালে খেলা করেছেন লেখক। অবশ্য এসব মনগড়া কোন গল্প নয়। লেখকের নিজের চোখে দেখা ইতিহাস।

বইঃ ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশনীঃ অানন্দ পাবলিশার্স
মূল্যঃ দুইশত সত্তর টাকা
Profile Image for Shishir.
188 reviews40 followers
October 17, 2024
সুনীলের গদ্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক সম্ভবত নানা লেখায়, হোক ভ্রমণ বা নিছক গদ্যে- তাঁর চমৎকার জীবনবোধ প্রকাশ পায়। জীবন ও মানুষ নিয়ে তাঁর ভাবনা অন্যকে প্রভাবিত করবে ঠিক।

বাংলাদেশী এই সংস্করণটিতে বেশ কিছু বানান ভুল বিরক্তিকর। আশা করি পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করবেন।

পড়ে ফেলুন ইতিহাস আশ্রয়ী এই চমৎকার ভ্রমণ আখ্যান !
Profile Image for Debashish Paul.
46 reviews13 followers
September 19, 2018
লেখকের '৯০ এর দশকে পূর্ব ইউরোপ ও তারপর রাশিয়া ভ্রমণের বর্ণনা। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘোরার বর্ণনার সাথে সেইসব স্থান সম্পর্কীয় ইতিহাসের কথাও চলে এসেছে। আছে সোশালিজমের ব্যর্থতা নিয়ে আক্ষেপ এবং কেন ব্যর্থ তার কিছু ব্যাখ্যা। খুব সহজ ভাষায় লেখা। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
Profile Image for Jaber Ahamed.
10 reviews3 followers
May 21, 2016
সমাজতন্ত্র বনাম ধনতন্ত্র

একজন সমাজতন্ত্র-ভক্তের ���েখনীতে...
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews135 followers
March 6, 2020
জার্মানি থেকে হাঙ্গেরি। সেখান থেকে রোমানিয়া। তারপর পোল্যান্ড। অবশেষে মস্কো, রাশিয়া। দেশের পর দেশ জুড়ে সমাজতন্ত্রের স্বপ্নভঙ্গ। অথচ মানুষের স্বপ্ন দেখার অধিকারের নতুন করে যাত্রা শুরু।
Profile Image for Khaled Tamim.
53 reviews3 followers
April 26, 2020
শ্রেণীসংগ্রামের মাধ্যমে শোষণমুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিল মানব ইতিহাস, তা কীভাবে ব্যর্থ হয়ে গেল-১৯৯০ পরবর্তী সময়ে পূর্ব ইউরোপ ঘুরে লেখক সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন।
Profile Image for Zahid Aashaa.
35 reviews21 followers
August 5, 2021
মনে হচ্ছিল সোভিয়েত সময়ে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়েছিলাম বলে অনেক চরিত্রের নাম আগে শুনেছিলাম, তাদের বিষদ বর্ণনা মুগ্ধ হয়ে পড়েছি।
Profile Image for Arif  Raihan Opu.
212 reviews7 followers
July 1, 2021
পৃথিবীর ইতিহাস বদলেছে গত শতাব্দীতে ক্ষণে ক্ষণে পট পরিবর্তন হয়েছে। শুধু যে পরিবর্তন হয়েছে তাই নয় রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তনও এসেছে। দেশ রাজনীতি দেশের অবস্থান মানুষের স্বপ্ন আশা সব কিছুর পরিবর্তন এসেছে।
.
ইতিহাসের এক চরিত্র হিটলার। তিনি কারো কাছে বিখ্যাত আবার কারো কাছে কুখ্যাত৷ এটা নিজের ভাব ধারার মধ্যে থাকে। যে যেভাবে চায় হিটলার কে ব্যাখ্যা করে থাকে৷ সেই হিটালারের আত্মহত্যার পর জার্মানি আত্মসমর্পণ করে মিত্র বাহিনীর কাছে। জার্মানরা শ্রেষ্ঠ জাতি এমনটাই হবার ছিল। কিন্তু আত্মসমর্পণ এরপর পুরোপুরি পট পরিবর্তন হয়েছে। জার্মানি দুই ভাগ হয়েছে। বৃটিশ-ফ্রান্সের অধীনে গড়ে উঠে ধনতন্ত্র ও সোভিয়েতের অধীনে সমাজতন্ত্র। পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানি মাঝে শুধু একটা দেয়ালের ব্যবধান। দেয়াল তুলে ভাগ করা হলো একটা জাতিকে। তখন মনে পরে ভারতীয় উপমহাদেশও ভাগ করা হয়েছিল তবে সেটা ধর্ম, বর্ণ এর ভিত্তিতে৷
.
যেই দেয়াল তুলে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল সুন্দর সুশৃঙ্খল একটি দেশের সেখানেই অরাজকতা আর অভাবের অনটন। মানুষের মাঝে ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে ক্রোধ সেই ক্রোধ একদিন ভেঙ্গে দিল জার্মানির দেয়াল। দুই জার্মানি এক হয়ে গেল। দিনটি ছিল ৩ অক্টোবর ১৯৯০, সেদিন ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এক হয়েছিল। সেদিন খুশির কোন অন্ত ছিল না।
.
"ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমণ কাহিনী। তবে বলা যায় এটা ভ্রমণ কাহিনীর চেয়ে রোমাঞ্চকর। কারণ এতে উঠে এসেছে হিটলার থেকে সোভিয়েতের ভেঙ্গে যাওয়া পর্যন্ত সব কিছু সমাজতন্ত্রের আদর্শ ও নীতির যে ভেঙ্গে পরা সব কিছু তার লেখনিতে উঠে এসেছে।
.
ইউরোপে সমাজতন্ত্রের যে ভরাডুবি হয়েছে সেটা লেখক তার লেখনিতে তুলে ধরেছেন। লেখক নিজে যদিও সমাজতন্ত্র পছন্দ করেন, তবুও তার লেখনিতে বোঝা যায় যে সমাজতন্ত্র শুনতে যত ভাল মনে হয় সেটা বাস্তবায়ন করতে কতটা সংগ্রাম করতে হয়।
.
মজার বিষয় হচ্ছে লেখক এই ভ্রমনে সাহিত্যের কিছু খোজ খবর উল্লেখ করেছেন। এক জায়গাতে তিনি রবি ঠাকুরের প্রতি একটু ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আসলে ঘটনা হচ্ছে ইউরোপে বাংলা সাহিত্যের সম্পর্কে শুধু রবি ঠাকুর কেউ ধরা হয় এটা নিয়ে উনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটা অবশ্য এক দিক থেকে সত্যি রবি ঠাকুর মারা যাবার পর কি বাংলা সাহিত্য থেমে গিয়েছে অবশ্যই নয়। তাহলে শুধু ওনাকেই মানুষ চিনে থাকে কেন। যদিও আমারদের সাহিত্যের খবর বাইরে খুব কই প্রচার হয় আমার ধারণা।
.
আবার রাশিয়া প্রসঙ্গে যখন লেখক বলেছেন তখন তিনি রাশিয়ার অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে সব কিছু তুলে এনেছেন। রাশিয়া সমাজতন্ত্রের দেশ কিন্তু সেখানে স্বাধীন ভাবে কোন কথা বলা যায় না। কিছু করা যায় না। লেখকের ভ্রমনে তিনি দেখেছেন ইতিহাসের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে কিভাবে মানুষের জীবন যাত্রার পরিবর্তন ঘটে থাকে।
.
আমার মনে হয় যে লেখক নিজেও সমাজতন্ত্র পছন্দ করেন৷ কিন্তু তিনি সমাজতন্ত্রের যে রূপ দেখেছেন তাতে তিনি নিজেও হতাশ হয়েছেন। কেননা তিনি হয়ত স্বপ্ন দেখতেন সমাজতন্ত্র সব কিছুর সমাধান করে দিতে পারবে। তবে সেটা হয়নি।
.
বইটি পড়ার সময় আমি তার সাথে সেই সময়ের জায়গা গুলোতে ঘুরে এসেছি। তার লেখাকে চোখের সামনে দেখেছি বলে মনে হয়েছে।

"ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" বইটি আসলে তুলে এনেছে মানুষের জীবন যাত্রার যে অবস্থা ও অবস্থান গত পরিবর্তন সেগুলো তুলে আনা হয়েছে৷
Profile Image for Klinton Saha.
357 reviews5 followers
October 29, 2023
ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই দুটি ধারণার উপর ভিত্তি করে রাতারাতি জার্মানিতে তৈরি করা হলো বার্লিনের দেয়াল , পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা হলো। পূর্ব জার্মানির রাশ টেনে ধরল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিম জার্মানি গেল ধনতন্ত্রের হাতে অর্থাৎ আমেরিকার হাতে।একই দেশ অথচ আলাদা রাজনীতি, কোনো তন্ত্রের আর আদর্শ ঠিক রইল না,ফলে শীঘ্রই পতন হলো মানুষের গড়া প্রাচীরের।
সমাজতন্ত্রের হতশ্রী অবস্থা দেখতে লেখক ভ্রমণ করেন হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড।সব জায়গায় দেখা যায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, দারিদ্র্য ।
বইয়ের ২য় অংশে দেখা যায় লেখক ভ্রমণ করেন সমাজতন্ত্রের সর্ববৃহৎ দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে।স্বয়ং এখানে সমাজতন্ত্রের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে দেখা যায় রাষ্ট্র শাসকদের।যে সমাজতন্ত্র সমাজের কথা বলে, মানুষের কথা বলে,সেই সমাজতন্ত্র কেন ব্যর্থ হলো - সেটা জানতে লেখক ঘুরেছেন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে। সাধার�� মানুষের মুখ থেকে বের হয়ে আসে প্রকৃত সত্যতা।
Profile Image for Koushik Ahammed.
150 reviews12 followers
December 28, 2019
সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর পতনের সময়কার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জানিয়ে গেলেন লেখক।

এতো সুন্দর একটা ব্যবস্থা কীভাবে কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত সুখ শান্তির খোঁজে হারিয়ে গেল তারই বর্ননা বই জুড়ে।
তবে এই ব্যবস্থা (সমাজতন্ত্র) নতুন ভাবে নতুন কোন পরিচ্ছন্ন রূপে ফিরে আসবে বলে লেখক প্রত্যাশা রাখেন।

আদর্শ হিসেবে সমাজতন্ত্র নিঃসন্দেহে উন্নত লেখকের সাথে ভিন্নমত পোষণ করা যায় না।
9 reviews1 follower
July 31, 2022
ভ্রমণ কাহিনী বরাবরই ভালো লাগে। বার্লিনের দেয়াল ভেঙ্গে যেন সমাজতন্ত্রের দূর্গপতন হলো। সেখান থেকেই শুরু। সেই পালা বদলের দিনে পশ্চিম জার্মানি থেকে শুরু হয়ে পূর্ব জার্মানি, তারপর হাঙ্গেরি, সেখান থেকে রোমানিয়া হয়ে পোলান্ড, পোলান্ড থেকে রাশিয়া অথবা সোভিয়েত ঘুরে চীনের গা ঘেঁষে ছুটে চলে এই বই যেন সমাজতন্ত্রের কবরে ফুল দিয়েছে।
Profile Image for Shuvongkar Shitu.
44 reviews17 followers
May 20, 2021
সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন ধীরে ধীরে স্বপ্নদোষ হয়ে গেল, গনতন্ত্রও পরিপূর্ণ নয়, ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থার তো প্রশ্নই ওঠে না। পৃথিবীটা বড়ই অদ্ভুত জায়গা, মানুষ প্রজাতিটা তো তার থেকেও বেশি অদ্ভুত। চলবে কিসে তাহলে? বড়ই চিন্তায় ফেলে দিলেন!
Profile Image for Abu Syed sajib.
147 reviews15 followers
March 1, 2019
স্বপ্নভঙ্গের গল্প,স্বপ্নভঙ্গের পর নতুন করে স্বপ্ন দেখার গল্প...
Displaying 1 - 30 of 35 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.