Jump to ratings and reviews
Rate this book

দহনকাল

Rate this book

176 pages, Hardcover

First published February 1, 2010

19 people are currently reading
335 people want to read

About the author

Harishankar Jaladas

63 books96 followers
Harishankar is a promising Bangladeshi author. The most significant point to notice is that all the four novels produced from Harishankar's pen sketch the life of the downtrodden, some of whom are from among fisherfolks, some from among prostitutes and some others are the 'harijons' or 'methors'.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
79 (38%)
4 stars
101 (49%)
3 stars
19 (9%)
2 stars
2 (<1%)
1 star
2 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 46 reviews
Profile Image for Zarin Haider.
55 reviews41 followers
June 19, 2021
ভাগ্যিস,বাবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পড়েছিলাম, তিনিও পড়ার মাঝাখানে ছিলেন। এমনিতেই কেমন ম্লান একটা আবহাওয়া, বইটা পড়ে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।
Profile Image for Ayesha.
117 reviews36 followers
February 21, 2018
4.5 stars. একসাথে জেলেদের জীবনযাত্রা, হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা, মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা। :)
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
December 5, 2022
কত সুন্দর একটা গল্প। বেশি সুন্দর গল্প গুলো পড়ার পরে লেখার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়না। লেখার তাল লয় সব হারিয়ে যায়।

গল্প জলদাসদের নিয়ে। লেখক নিজেও জলদাস। একটা সম্পর্ক থাকাই যুক্তিযুক্ত। হয়তো লেখকেরই সাথে নয়তো লেখকেরই কারোর সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনি। অথবা হতে পারে আত্মার টান থেকে, কিছুটা সত্য ঘটনা মিশায়ে কল্পকাহিনিটি রচনা করা। সে যাই-ই হোক নিদারুণ এক কাহিনি যা মনকে ধীরে ধীরে ব্যাথাতুর করে তোলে।

গল্পটা জেলেদের নিয়ে। জেলেদের জীবন-জীবিকা, জেলেদের সংগ্রাম, বেঁচে থাকার সংগ্রাম, সমুদ্রে লাড়ায় করার সংগ্রাম, উন্নত জীবনের আশার সংগ্রাম নিয়ে। শেষের ভাগের কিছু পূর্ব পর্যন্ত ঠিক ঠাক চলছিলো। মনে হচ্ছিলো যে আশার আলোকে সঙ্গে নিয়ে গল্প চলছে সেইটা পরিস্ফুটিত হবে আর নয়তো হবেনা। কিন্তু গল্পের মোড় যে এভাবে ঘুরে যাবে ভাবিনি।

বইটা পড়া মানে অতীত থেকে ঘুরে আসা। গোটা কতক গ্রামের চিত্র বা গোটা কতক গ্রামকে চাক্ষুষে দেখার মতো অভিজ্ঞতা পাওয়া। মানুষকে বাইরে থেকে বিচার করা অনেক সহজ একটা ব্যাপার। বাইরে থেকে বিচার করে সহজেই কাওকে ব্যাথা দেওয়া যায়, সহজেই খারাপ আচরণ করা যায়। ভেতর থেকে জানলে কত অজানাকে জানা যায়। কত খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখা যায় নিজেকে। এইযে আমাদের চারপাশের কত মানুষ, বিভিন্নজন বিভিন্ন কিছু করে দিন পার করছে। আমরা জানিনা তাদের পরিবারের কথা, জানিনা কয়বেলা খেতে পারে, কয়বেলাই বা না খেয়ে থাকে। জানিনা পরিবারের সন্তানদের আবদার। সেই আবদার মেটাতে বাবার করা কাজ গুলো। মায়ে বুকের কষ্ট আমরা দেখিনা।

ঠিক এরকমই গল্প নিয়ে পতেঙ্গা এলাকার ষাটের দশকের দুই তিনটা জেলে গ্রামের উপর রচিত উপন্যাস "দহনকাল"। যে দাহে জন্ম থেকে মৃত্যু অবদি দাহ হয় তারা। কিভাবে চলে সংসার তাদের। কী কী করে তারা। কেমন তাদের পরিবারের চিত্র। কেমন তাদের ভবিষ্যৎ কল্পনা।

যে জায়গার মানুষের পেটের ভাত জোগাতে অন্য কিছু ভাবার সময় হয়না তারা কিভাবে খোজ রাখবে দেশে তখন কী চলছে? কারাই বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে অর্থ লুট করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিচ্ছে,  কারাই বা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে দেশকে স্বাধীন করতে চাচ্ছে, তাদের এসব জানার কথা না। তাদের জানার কথা না কোন মিলিটারি কমান্ডার দেশের ভার নিলো বা সে লোক কেমন হবে। তাদের চিন্তা একটাই। খেয়ে পরে বাঁচতে হবে। বাচ্চাদের মুখে দুমুঠো ভাত দিতে হবে। মাছ ধরতে হবে, বাজারে নিতে হবে তবেই কিছু অন্ন জুটবে পেটে। কিন্তু সে সুখটুকুও ছিলোনা কপালে।

দুঃখ ছিলো, কষ্ট ছিলো, অভাব ছিলো, কিন্তু যা ছিলোনা সেটা হলো হানাদার বাহিনীর উপদ্রব। ছিলোনা বর্বর পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচার।  ছিলোনা ধর্ষন, খুন, লুটপাট।

গল্পে পতেঙ্গার ভাষা আর সময়ের যে তাল মিল,  এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার বর্ণনা এসবে একটু প্রোবলেম হইছে। তাছাড়া সব ঠিক ঠাক।

কত মলিন একটা সময়ের পর হটাত করেই কী থেকে যেন কী হয়ে গেলো জীবন। বইটা শেষ করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

বইঃ দহনকাল
লেখকঃ হরিশংকর জলদাস
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
September 29, 2025
হরির ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা, এ এক অভূতপূর্ব যাত্রা!

"বাপ রাধানাথের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসলো হরিদাস জলদাস। হঠাৎ করে হরিদাসের চোখে একটি দৃশ্য ভেসে উঠলো- বাপ রাধানাথ ছেলে হরিদাসের হাত ধরে আদাবস্যার স্যার এর বাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছে। বাবার ক্ষীণ  অথচ স্পষ্ট কণ্ঠ যেন সে শুনতে পেল এই সময়ে।বাবা বলছে, আরো ইক্কিনি জোরে হাট অ বাআজি। 

হরিদাস গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বাবার আকুলতাময় চোখে চোখ রেখে হরিদাস চিৎকার করে বলে উঠলো, বাবারে তোয়ার কথা রাইখ্যম আই। আই হাইট্যম,আরও জোরে সামনের মিক্কে হাডি যাইয়ম আই।"

অবশেষে পড়ে ফেললাম বর্ষসেরা বইটি।
হরিশংকর জলদাসের প্রথম বই পড়লাম, উনার এত প্রশংসা শুনেছি। হ্যা সেরা লিখেন।এত গভীরতা লেখায়, তিনি পতেংগার জেলেপল্লিতে জন্মেছেন।বইটিতে জেলে দের জীবন কে কাছে থেকে উল্লেখ করেছেন। কষ্ট, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, সাংসারিক টানাপোড়েন সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
Profile Image for Jannatul Firdous.
89 reviews178 followers
November 9, 2021
দহনকাল-হরিশংকর জলদাস

গল্পের শুরুটা এমন,হনহন করে ছেলের হাত ধরে চলেছে রাধানাধ জলদাস। ছেলেকে সে পড়াতে নিয়ে যাচ্ছে। এর আগে জেলেপাড়ার কোন ছেলে হরিদাসের মতো পড়াশোনা করেনি। সবার বাবা স্বপ্ন দেখেছে তাদের ছেলে জেলে হবে। উন্নতি বলতে বড়জোর বহাদ্দার হবে, নিজের নৌকা থাকবে,জাল থাকবে। পড়ানোর কথা জলদাসদের মধ্যে কেউ ভাবে না। হরিদাসের মতো কেউ যদি স্কুলে যায়‌ও সে ডোম,জাইল্যা ইত্যাদি গালাগালির মত শোনে।

লক্ষ্য করুন, লেখকের নাম‌ও জলদাস। তিনি লিখেছেন জলদাসদের সামাজিক দুরাবস্থা নিয়ে। বোঝাই যায় ছোটবেলায় এগুলো হয় খুব কাছ থেকে দেখেছেন নাহয় নিজেই ছিলেন ভুক্তভোগী।

গল্পের দুই তৃতীয়াংশ স্বাভাবিকভাবেই চলে। জেলেপাড়ার বিভিন্ন নিয়ম নীতি,সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবন,বহাদ্দারের কাছে সাধারন জেলেদের জুলম হবার, অত্যাচারিত হবার কাহিনী। তবে সবাই এক না। কেউ কেউ হরিদাসের মতো,রাধানাথের মতো স্বপ্ন দেখে, কোনো কোনো বহাদ্দার সাধারণ জেলেদের প্রতি বেশ সদয়।

সময়টা মুক্তিযুদ্ধের। তখন পর্যন্ত যুদ্ধের আলোড়ন সাধারণ জেলেজীবনে পড়েনি। কিন্তু একটা সময় পড়লো। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এসে ঘাঁটি গাড়লো এই পাড়ায়। আটকে দিলো সমুদ্রপথ। জেলেদের মাছ মারা বন্ধ হয়ে গেল। মাছ‌ ছাড়া যে তাদের একটা দিন ভাত রান্না হয় না, বাচ্চাকাচ্চা, বুড়ো বাবা মা না খেয়ে থাকে এসব নিয়ে বর্বরগুলোর কোন মাথাব্যথা নেই। আর এখানেই থেমে থাকলো না তারা।‌ নারী শিশুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করলো। এই নির্যাতনের কথা ব‌ইয়ের পাতায় অব্দি পড়ে সহ্য করা যায় না।

স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প নয়। শুধুমাত্র এই লড়াইয়ে পাকবাহিনীর হাতে পদদলিত হ‌ওয়া ছোট্ট একটা জেলেপাড়ার গল্প। তাদের দুঃখ, তাদের আর্তনাদ, তাদের প্রতিবাদের গল্প। লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা যে উনি এগুলো কাছ থেকে দেখেছেন, তারপরও সেই ভয়ংকর সময়টার গল্প বলতে গিয়ে মানসিক চাপের সাথে তাকে কতটা লড়াই করতে হয়েছে হয়তো ধারনাও করতে পারবো না।

হরিশংকর জলদাসের লেখায় তার চরিত্ররা চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে। প্রথম প্রথম বুঝতে সমস্যা হতো তবে এর একটা ভালো দিক‌ও আছে। সরাসরি এই ভাষা কারো মুখে শুনে আমি কিছুই বুঝতাম না। তবে ব‌ইয়ে ধারনা করে নেয়া যায় যে,এই প্রেক্ষিতে এই কথাটা বলতে পারে। সেই থেকে ভাষাটা ব‌ইয়ের পাতায় মোটামুটি রপ্ত করে ফেলেছি। কাজেই বুঝতে অসুবিধা হয় নি। আর এটাতে পাকবাহিনীর ডায়লগ‌গুলোও উর্দুতে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আমার মনে হয় ওনার ব‌ইগুলো একটা নির্দিষ্ট বয়সেই পড়া উচিত, বুঝতে সুবিধা হবার জন্য। আর তাছাড়া এই ব‌ইয়ে পাকবাহিনীর অত্যাচারের গল্পগুলো মানসিকভাবে খুব ডিস্টার্ব করে দেয়,কাজেই কোনো বাচ্চার পড়ার মতো ব‌ই অন্তত না।

রেটিং:৫/৫
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
July 25, 2024
উপন্যাসটা যখন পড়ছি তখন যেন একটা দহণকাল চলছে দেশে। উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা পড়ছি। এদিকে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে দেশের মেধাবী ছাত্র রা। ওদিকে জ্বলছে পতেঙ্গার জেলেপাড়া, এদিকে দেশের সরকারি স্থাপনা। এক অদ্ভুত ব্যাপার।
Profile Image for Imam Abu Hanifa.
115 reviews26 followers
December 17, 2018
কোনো ভালো বই পড়লে রিভিউ লিখতে গিয়ে আমি বিপদে পড়ি। ঠিক কিভাবে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারি না। এজন্য মাস্টারপিস বইগুলোর রিভিউ খুব বেশি একটা লেখা হয়নি।
হরিশংকর জলদাসের কোনো বই আগে পড়া নেই। দহনকাল দিয়েই শুরু করলাম। শুরু করেই থেমে যেতে হলো টপিক দেখে। জেলেদের নিয়ে বাংলা সাহিত্যে খুব কম লেখক লিখেছেন বলে আমার মনে হয়। জেলেদের নিয়ে লেখা উপুন্যাসের নাম বলতে গেলে “পদ্মানদীর মাঝি” “তিতাস একটি নদীর নাম” এর মত হাতেগোনা কয়েকটি উপন্যাস পাবেন। তাই শুরুতেই আগ্রহ বেড়ে গেলো।
শুরুতেই দেখতে পাই ছেলে হরিদাসকে নিয়ে আদাবস্যারের বাড়িতে যাচ্ছে অশিক্ষিত জেলে রাধানাথ। জেলেপাড়ায় লেখাপড়ার কথা শোনা যায় না কখনো। ছেলেরা একটু বয়স হলেই বাবার সাথে জাল নিয়ে নেমে যায়। কিন্তু রাধানাথ তা হতে দিবেন না। ছেলেকে শিক্ষার আলো দিতেই যত সংগ্রাম রাধানাথের। তার পরিবারকে ঘিরে সমাজের পিছুটান, স্বার্থপরদের লোলুপতা, সুবিধাবাদীদের ওপর-চালাকি আবর্তিত হচ্ছে। নিকুঞ্জ সর্দার আবদুল খালেকের সঙ্গে মিলেমিশে রাধানাথ তথা গোটা জেলেসমাজকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে।
রাধানারথের মা চন্দ্রকলা নামের বিধবা মহিলাটি শেষ পর্যন্ত এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকে গেছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে কোথাও একটি বারের জন্য দুর্বল মনে হয়নি এই বৃদ্ধাকে। চন্দ্রকলা চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের এক বিধবার জীবনের নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার । হরিদাসের মা বসুমতী চরিত্রে আমরা দেখি একনিষ্ঠ গৃহিণীর সংগ্রাম যে সামান্য উপার্জন দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে গেলেও হার মানেন নি কখনো !
এটা ছিলো রাধানাথের পরিবারের মোটামুটি পরিচয়। পুরো উপন্যাস রচিত হয়েছে মুলত এই পরিবারটিকে কেন্দ্র রেখেই। পুরো উপন্যাস জুড়েই ছিলো অসংখ্য চরিত্রের ছড়াছড়ি।
সর্দার আব্দুল খালেক ও জালাল মেম্বার দরিদ্র, অশিক্ষিত এসব জেলেদের গ্রাস করার চেষ্টা করে। জেলেদের নিজেদের মধ্যে আবার জাতিভেদের শিকার হরবাঁশি। হরিদাস, রাধানাথ, খু-উ বুইজ্যা, রাধেশ্যাম, চন্দ্রকলা, পরিমল, রসমোহন, শিবশরণ এদের প্রত্যেকেই যেন জেলেসমাজের বাস্তবতার এক একটি বিমূর্ত প্রতীক। সঙ্গ-নৈঃসঙ্গ্য, মৃত্যু-জীবন চলতে থাকে জেলেদের নিরন্তর।
এভাবে জেলেরা জীবনযুদ্ধে দিনদিন কাটাতে কাটাতে চলে আসে এক অন্য যুদ্ধ। মা-বোন-স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করবার জন্য হরিদাস-রাধেশ্যাম-খু-উ বুইজ্যারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়... জীবনযুদ্ধে ভিতু,বঞ্ছিত, নির্জীব,জেলেরা জড়িয়ে পরে দেশের যুদ্ধে। তাদের সর্ব শক্তি দিয়ে তারা প্রতিরোধ করে পাক হানাদার বাহিনীর। নিজেদের অজান্তে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ উত্তর পতেঙ্গার দুটি জেলেগ্রাম মাউছ্যাপাড়া এবং কৈত্তরপাড়াকে পটভূমি করে লেখক লিখেছেন এই উপন্যাস । কি নেই এই বইতে? আছে পারিবারিক বন্ধন, আবার ভাইয়ে ভাইয়ে ভাঙন। আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আবার আছে প্রলয়ঙ্কারী সামুদ্রিক ঝড়। আছে জীবন সংগ্রামের গল্প, আবার আছে লোভে পড়ে সব শেষ করে দেওয়ার গল্প। সংলাপগুলো আঞ্চলিক ভাষায় হওয়ায় আলাদা একটা আবেগ কাজ করেছে। প্রথমে অনেকের হয়ত বুঝতে অসুবিধা হবে। তবে পরে ঠিক হয়ে যাবে। এটা আমার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ এতে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়েছে। কথা বুঝতে কিছু সময় লেগেছে ঠিকই, কিন্তু বইয়ের কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণতা ছিল। যেমন শেষাংশে: "বাবারে, তোঁয়ার কথা রাইখ্যম আই। আই হাইট্যম, আরো জোরে সামনের মিক্কে হাডিঁ যাইয়াম আই।" এটা সহজ চলিত ভাষায় লিখলে গল্পে বক্তার যে আকুলতা তা নিশ্চয়ই প্রকাশ পেতো না।
নদীতীরবর্তি মানুষ ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তথা জীবনের টানাপোড়েনের কথা খুবই প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসে। পাশাপাশি উপন্যাসের কাহিনীতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকে স্থান দেয়ায়। হয়ত মুক্তিযুদ্ধকে টেনে না আনলে আর দশটা একই শ্রেণির সাহিত্যের কাতারে ঠাঁই হত এ উপন্যাসের। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ আর সেই মুক্তিযুদ্ধের ফলে মোড় ঘুরে যাওয়া কিংবা আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠা কাহিনী উপন্যাসকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
এমনিতে হরিদাস নামক জলপুত্রের জীবনপ্রবাহ, তার মনোজগতে বাবার প্রেরণা আর সমাজের নানা বাধা-বিপত্তি, তার পরিবারকে ঘিরে সমাজের পিছুটান, স্বার্থপর সুবিধাবাদীদের ওপর চালাকি অপরাপর কথাসাহিত্যের ভাবই বহন করে। বঞ্চিত-নিপীড়িত জেলেসমাজকে গ্রাস করতে রাধানাথ আর আবদুল খালেকের কূটচালও নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসব ঘটনাকে লেখক যেভাবে একটির সাথে আরেকটির সংযোগ ঘটিয়ে একীভূত করেছেন, সেটা নজর কাড়বার মতই। তাছাড়া উপন্যাসটির সবচেয়ে বড় দিক হল চন্দ্রকলার মত বিধবাকে অপর্ণার মত সংযমী কিন্তু সদা সংগ্রামশীল রুপে পাওয়া যা পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দিতে বাধ্য। আর সময়ের প্রয়োজনে উপন্যাসের চরিত্ররা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে পরোক্ষভাবে হলেও জড়িয়ে পড়ে, তারপরের ঘটনাপ্রবাহ ও তাদের অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমে পড়ার আখ্যান উপন্যাসকে পূর্নাঙ্গতা দান করে।
এতক্ষন যা পড়লেন তার পরে আর হয়ত নামকরনের সার্থকতা বলার দরকার নাই।
লেখায় ডিটেইলিং ছিলো খুব বেশি। আমার মত পাঠককে এটা আকৃষ্ট করলেও অনিয়মিত পাঠকরা বিরক্ত হতে পারে। তবে ডিটেইলিং এর জন্যই জেলে জীবন সম্পর্কে অনেক চমৎকার কিছু জানতে পারবেন। লেখক নিজে ৩০ বছর নৌকা আর জাল নিয়ে নদী ও সাগরে চষে বেড়িয়েছেন। তাই আমার কাছে এটাকে উপন্যাসের চেয়ে লেখকের জীবনের কথাই বেশি মনে হয়েছে।
বইটা নিয়ে লিখতে থাকলে কয়েক পৃষ্ঠার রচনা লেখা যাবে। যতই লিখছি ততই মনে হচ্ছে সঠিক অনুভুতিটা হয়ত বোঝাতে পারছি না। বইটা সবার ভালো লাগার মতই। তবে আমার মত ক্লাসিক লাভারদের জন্য অবশ্যই মাস্টারপিস।
Profile Image for Mridul.
45 reviews2 followers
April 28, 2018
বঙ্গোপসাগরের জেলে জীবন সম্পর্কে জানলাম । "পদ্মা নদীর মাঝি" , "তিতাস একটি নদীর নাম" এ নদী তীরবর্তী জেলেদের জীবন কাহিনী বর্ণিত ছিল । "দহনকাল" এ লেখক কর্ণফুলী তথা সাগর তীরবর্তী উত্তর পতেঙ্গার জেলেদের গল্প বলেছেন ।
উপন্যাসের নায়কের নাম হরিদাস জলদাস । নাম থেকে অনুমান করা যায়, হয়ত এটা লেখকের একরকম আত্মজীবনীমূ���ক রচনা । খারাপ লাগে নি । লেখক বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখেছেন বলেই মনে হল । চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অধিকাংশ সংলাপ । বারবার আটকালেও ভাব বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হয় নি ।
গল্পের ধারাবাহিকতা কম মনে হল । অসংখ্য চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন , এবং অনেক চরিত্র এমন যে না থাকলেও ক্ষতি ছিল না । বরং অসংলগ্ন লেগেছে ।
উপন্যাসের শেষে মুক্তিযুদ্ধকেও তার গল্পের অংশ করেছেন । না করলেও হয়ত চলত । ম���ে হয়েছে লেখক নিশ্চিত না তিনি কি পরিণতি টানবেন । তাই উপসংহারে সর্বজনগ্রাহ্য কিছু দিতে তার এই প্রয়াস । অবশ্য খারাপ লাগে নি । কিন্তু শুরুতে জেলে জীবনের যে সংগ্রাম পড়ে উদ্বুদ্ধ হচ্ছিলাম তা যেন নিভেই গেল । এক রকম নিয়তির উপরে তিনি তার এত কষ্টে গড়া সব চরিত্রকে সমর্পণ করলেন । মুক্তিযুদ্ধকে , স্বাধীনতা সংগ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করার অভিপ্রায় থাকলে তার সুযোগ ছিল । সেই সুযোগ তিনি নষ্ট করেছেন । অথবা যা শুরুতে বলছিলাম, আত্মজীবনী যদি হয়, তবে যা দেখচ্ছেন তাই লিখেছেন ।

সব মিলিয়ে পড়া যায় - এমন উপন্যাস । আহামরি কিছু নয় । আরও ভালো হতে পারত ।
Profile Image for Klinton Saha.
357 reviews6 followers
August 30, 2025
বই-দহনকাল।
লেখক -হরিশংকর জলদাস।
প্রকাশনা -মাওলা ব্রাদার্স ।
ধরণ-সমকালীন উপন্যাস ।

অশিক্ষিত জেলে রাধানাথ- তার স্বপ্ন ছেলে হরিদাসকে শিক্ষিত করবে।দারিদ্রের সাথে লড়াই করে ছেলেকে শিক্ষিত করার সং*গ্রাম করে রাধানাথ।হরিদাসও পিতার দেখানো আলোর পথে এগিয়ে যায়। এদিকে প্রতি*বাদী রাধানাথ লাঞ্ছ*নার শিকার হয় জেলে সমাজের উঁচু ও স্বার্থপর ব্যক্তিবর্গের । অভাব ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লৌহ মানবী হয়ে উঠেন রাধানাথের মা "চন্দ্রকলা"।
এছাড়া নিকুঞ্জ সর্দার ও জালাল মেম্বারের মতো স্বার্থপর চরিত্রের পাশাপাশি ছিল দয়ালহরি ও শিবশরণের মতো কোমল চরিত্রের ব্যক্তিবর্গ।বিরূপ পরিবেশে মাছ ধরার বর্ণনাও লেখক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন ।
সারা দেশে শুরু হওয়া মুক্তিযু*দ্ধের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ।পাকি*স্তানি হানা*দার বা*হিনী ও রাজা*কারদের অত্যা*চারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জেলেজীবন ।প্রাণ হারায় অনেক জেলে ,লা*ঞ্ছিত হয় তাদের স্ত্রী-কন্যা। অন্যায়ের প্রতি*শোধ নিতে একত্রিত হয় জেলেরা। তাদের সাথে যুক্ত হয় হরিদাস ।শুরু হয় জেলে জীবনে আরেক দহনকাল ।

⚠বইটির প্রতিটি সংলাপ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হয়েছে ।
Profile Image for সায়কা শাহরিন.
152 reviews66 followers
June 24, 2018
এই লেখকের লেখা আগে পড়া হয়নি বলে কিছুটা কনফিউশন ছিলো যে এখন ধরবো নাকি পরে পড়বার তাকে তুলে রাখবো, তারপরে শেষমেশ ধরেই ফেললাম। লেখা ধাঁচ ভালো আর কাহিনিও খারাপ না, তবে শুরুর দিকে জেলেদের আঞ্চলিক টানে কথা বলাটা বুঝতে সময় লেগেছে একটু।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
December 16, 2019
চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী উত্তর পতেঙ্গা এলাকার জেলে পাড়া। কোনো জমি, কোনো শিক্ষা, কোনো দক্ষতা নেই তাদের ; তাদের একটাই আশা, একটাই ভরসা আর তা হলো সমুদ্র। এই সমুদ্রই তাদের খাবার দেয়, আশ্রয় দেয়, বাচিয়ে রাখে। এখানকারই বাসিন্দা রাধানাথ জলদাস যার বাবা সমুদ্রে প্রাণ দিয়েছে, সেও ছোট থেকেই সমুদ্রকে শত্রু ভাবলেও অন্য কোনো উপায় না থাকায় সমুদ্রেই নির্ভর করে। কিন্তু সে চায় না তার পরবর্তী প্রজন্মও সমুদ্রেই যাক, সমুদ্রের করুণার উপর নির্ভর করুক তাইতো ছেলে হরিদাসকে সে আদাবস্যার বা চিত্তরঞ্জন দে'র উঠানস্কুলে পাঠায়।

কিন্তু জীবিকার জন্য তার মতো অন্যদেরও সমুদ্রেই জেতে হয়। কারো বা নৌকা আছে যারা বহদ্দারি করে, কারো বা শুধু জাল আছে যারা পাইন্যা নাইয়া হিসেবে কাজ করে আর তাদের তাও নাই তারা গাউরগীরি করে। দয়ালহরি, রামহরি, জালাল মেম্বার, শিবশরণরা বহদ্দারি করেই সমুদ্রের তীরে বসবাস করে, যেখানে রাধানাথ, পরিমল, রাধেশ্যামরা পাইন্যা নাইয়া বা গাউরগীরি করেই জীবিকা চালায়। কিন্তু শুধু সমুদ্রই তো তাদের চ্যালেঞ্জ না, তাদের বিরুদ্ধে আছে জাতপ্রথা আর ক্ষমতার দাপট। তাইতো কৈবর্তদের সাথে মাউছ্যাদের ঝামেলা হয়ে হরবাঁশিরা একঘরে হয়, ক্ষমতার দাপটের কারণে দুই নৌকার মালিক দয়ালহরি এক সময় হাটে শুটকি বিক্রি করে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে রাধানাথ জাল হারায়, নির্যাতনের শিকার হয়।

এসব সংগ্রাম নিয়েই যখন তাদের জীবন অতিষ্ঠ, তখন তাদের মধ্যে আসে আরও বড় সংগ্রাম। তাদেরকে যেতে হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার মধ্য দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। কি পরিণতি হবে প্রায় নির্জীব জেলেদের ভাগ্যে? তারা কি প্রতিবাদ করতে পারবে নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে পাক বাহিনীর দাপটে?

পাঠ প্রতিক্রিয়া :

জেলে সম্প্রদায় নিয়ে লেখা অসাধারণ এক বই। লেখক একই সাথে দুইটি প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন ; একদিকে জেলে জীবনের সমস্যা- দুর্দশা আরেকদিকে একটা পশ্চাৎপদ জনপদে মুক্তিযুদ্ধ ও এর প্রভাব। আর লেখকের বিশেষত্ব হলো তিনি অসাধারণভাবে এই দুইটা প্রেক্ষাপটকে জোড়া দিয়েছেন, একত্রিত একটা রূপ দিয়েছেন।

প্রথম অংশে লেখক জেলেজীবনকে এঁকেছেন নিপুণভাবে। নিজে সেই সম্প্রদায়ের একজন হওয়ায় তাঁর স্বচক্ষে দেখা ঘটনাগুলোকেও তিনি ব্যবহার করতে পেরেছেন, জেলেরা কিভাবে সমুদ্রে মাছ ধরে, কিভাবে খায়-দায়-অবস্থান করে, কিভাবে জাতপ্রথা, ক্ষমতা তাদের জীবনকে সংকুচিত করে, জেলেদের দাম্পত্যজীবন, সামাজিক জীবন সবই তো লেখকের স্বচক্ষে দেখা। তাইতো তিনি সহজেই দেখাতে পেরেছের হরিদাসের স্কুলে পড়ার ঘটনায় সবার অবাক হওয়া, জাতপ্রথার জাতাঁকলে পৃষ্ট হওয়া জেলেদের সামাজিক জীবনকে, দেখিয়েছেন স্বার্থপরদের লোলুপতা, সুবিধাবাদীদের চালাকি, লোভীদের লোভ। আবার এর মাঝেই তিনি এঁকেছেন চন্দ্রকলা নামের এক বিধবা চরিত্রকে যে শুরু থেকেই প্রতিটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে কখনও ভেঙ্গে পড়ে নি, হরবাঁশির মতো চরিত্র যারা জাতপ্রথাকে ভাঙ্গতে চেয়েছে লালনের তত্ত্বে, খু-উ বুইজ্যার মতো চরিত্র যারা অশিক্ষিত হয়েও হরিনাথের শিক্ষায় সাহায্য করেছে সর্বদা।

আর এদিকে যখন এসব সংগ্রাম চলছে তখন দেশের ইতিহাসেও ঘটে যাচ্ছে নানা রদবদল। প্রথমদিকে সেসবের প্রভাব জেলেপাড়ায় না পড়লেও কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধের ঘটনায় প্রথমবার এখানে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। আর এর সুযোগে একদিকে যেমন হামিদরা সুযোগ পেয়ে লুটতরাজ, হত্যায় নেমে পড়ে ঠিক তেমনি অন্যদিকে আবদুস সোবাহানের মতো মানুষেরা সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বস্ব বাজি রাখে। আবার একাত্তরের যুদ্ধ শুরু হলে সারাদেশের মতো পতেঙ্গার জেলেপাড়াও আক্রান্ত হয় পাক বাহিনী দ্বারা। এখানে লেখক সচরাচর যে বয়ান পাওয়া যায় তাই শুনিয়েছেন আমাদের; হত্যা, ধর্ষণ, জোরপূর্বক কাজ করানো, হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ এসব তুলে এনেছেন। কিন্তু এরপরেই তিনি দেখিয়েছেন এক প্রতিরোধ; কোনো অস্ত্র ছাড়া শুধু মা-বোন-স্ত্রীদের নির্যাতনের প্রতিরোধে জেগে উঠেছে এক নির্জীব গ্রাম।

বইটি পড়তে গিয়ে যেখানে বেশ হোচট খেতে হয়েছে তা হলো এর ভাষার জন্য। সমুদ্র অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করার কারণে বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়েছে যদিও কিছুদির যাওয়ার পরেই সহজেই ধরতে পারা যায়। আরেকটা বিষয় যদি বলি তা হলো বইয়ের চরিত্রের সংখ্যা খুব বেশি যা পড়ার সময় বাঁধার সৃষ্টি করে। আরও স্বল্প চরিত্র ব্যবহার করেও লেখক যা বলতে চেয়েছেন বা যা বলতে পেরেছেন তা বলা যেত বলে মনে হয়েছে। আর আরেকটা বিষয় যা বলব তা হলো লেখক দুইটি প্রেক্ষাপটকে যোগ করেছেন তা ঠিক আছে তবে মনে হয়েছে এই যোগ করাটা অনেকটাই কৃত্রিম। ১৭০ পেজের বইয়ে লেখক যুদ্ধের কথা এনেছেন বলতে গেলে ১৩০ পৃষ্ঠার দিকে। আর তাছাড়া জেলেদের দ্বারা তিনি যে প্রতিরোধ দেখিয়েছেন তাও অসম্পূর্ণ। কনস্টেবলজাতীয় ৪-৫ জন হানাদার আর ৩-৪ জন রাজাকার মারার পর শেষে আমরা গ্রামের যে পরিস্থিতি দেখি তাতে এটাকে আদৌ প্রতিরোধ বলা যায় নাকি সে বিষয়েই সন্দেহ জাগে অর্থাৎ ঐ বিশেষ ঘটনার পর কি ঘটত যার কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি। আবার একদম লাস্ট পেজে হরিদাসের শেষ বক্তব্যটার মাধ্যমে লেখক যে নতুন দিনের গান শোনাতে চেয়েছেন তাও যুদ্ধের ঐ পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
Profile Image for Chayan Biswas.
35 reviews13 followers
October 1, 2019
বইঃ দহনকাল
লেখকঃ হরিশংকর জলদাস
পৃষ্টাঃ ১৯৬; মূল্যঃ ৩০০ টাকা

হরিশংকর জলদাসের লেখা "দহনকাল" পেয়েছে প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার। অদ্বৈত মল্লবর্মনের ৪৯ বছর পর আর একজন জেলে লিখতে শুরু করলেন তিনি হরিশংকর জলদাস। হরিশংকর জলদাস দহনকাল উপন্যাসটি লিখেছেন উত্তর পতেঙ্গার দুটি জেলেগ্রামকে (মেছোপাড়া) পটভূমি করে—মাউছ্যাপাড়া এবং কৈত্তরপাড়া। মাউছ্যাদের জীবনযাত্রার এক বিশাল চিত্রপট এঁকেছেন হরিশংকর জলদাস। হরিশংকর জলদাসের দহনকাল সমুদ্রসংগ্রামী ও নদীসংলগ্ন কৈবর্তসম্প্রদায়ের জীবনকথা। এতে অন্তর্ভূত হয়েছে বঞ্চিত-পীড়িত-শোষিত ধীবরশ্রেণীর আনন্দ-কান্না, জন্ম-মৃত্যু; তাদের প্রতিবাদ- প্রতিশোধ ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।

সাধারন পাঠক হিসেবে আমরা সবাই জানি জেলে জীবন নিয়ে লিখিত দুটি বিখ্যাত উপন্যাস আছে। আপনারা বুঝে নিয়েছেন আমি কোন দুটি উপন্যাসের কথা বলছি। উপন্যাস দুটি—অদ্বৈত মল্লবর্মণের "তিতাস একটি নদীর নাম" ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পদ্মা নদীর মাঝি"। এ দুটি উপন্যাস পড়েন নি এমন পাঠক কাউকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তারা দুজনই জেলে জীবনকে দেখেছেন বাইরে থেকে, কিন্তু হরিশংকর তাঁর উপন্যাসটি তৈরি করেছেন জেলে জীবনের ভেতর থেকে। কেমন করে? বাংলা সাহিত্যের পাঠকেরা এ যাবৎ সম্ভবত সামুদ্রিক মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরার নিবিড় অভিজ্ঞতার কথা শোনেননি। হরিশংকরের বিশ্বস্ত চিত্রায়ণ থেকে আমরা "দহনকাল" উপন্যাস থেকে জানতে পারবো গভীর সমুদ্রে কিভাবে জেলেরা মাছ ধরে।

উপন্যাসের শুরু এইভাবে- ‘ওই চলেছে রাধানাথ জলদাস, হন হন করে। তার ডান হাতে সাত বছরের ছেলেটি ধরা হরিদাস’। এরপর পাই আদাবস্যারের অর্থাৎ চিত্তরঞ্জন দে’র উঠান স্কুলের বিবরণ। রাধানাথ নিজে মৎস্যজীবী, স্ত্রী বসুমতীকে সে তার মনোবাসনার কথা জানিয়েছে এই বলে ‘হরিদাসেরে আঁই পড়াইয়ম। মাছ মারাইন্যা জাইল্যা হইতাম দিতাম নো। পড়ালেখা শিখইন্যা জাইল্যা বানাইয়ম।’ বসুমতীও স্বামীর প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল, আঁরার উগগা পোয়ারে অন্তত আঁরা শিক্ষিত গইয্যাম। অর্থাৎ উপন্যাসে হরিদাসকে ব্যতিক্রমী ভূমিকায় দেখা গেল। শেষ পর্যন্ত হরিদাসের ভাগ্যে কি হবে?

উত্তর পতেঙ্গায় কর্ণফুলীর অববাহিকায় দুই পাড়ে দুটো জেলেপাড়া। ইচাখালির পাড়াটার নাম মাউছ্যাপাড়া আর কাঁঠালিয়ার পাড়াটার নাম কৈত্তরপাড়া। কৈবর্ত এবং মাউছ্যা। হিন্দু ধর্মে জাতপাতের মান-অভিমান বেশি। কৈবর্তরা মাছও ধরে আবার জমি চাষও করে, আর ইচাখালির জেলেপাড়ার অধিবাসীরা হলো শুধু মাউছ্যা, তারা শুধু মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করে। কৈবর্ত পাড়ার শিবশরণের একটি নিমন্ত্রণে হরিদাসের নানা হরবাঁশিকে জাত তুলে অপমান করে নিরক্ষর শশধর আর পড়ুয়া ছাত্র প্রদীপ। বিস্ময়ে হতবাক হয় মাউছ্যারা। একই হিন্দু জাত হয়েও তলে তলে এত ঘৃণা! হরবাঁশির বেদনা কাটে না। সে গান লেখে, সুর করে, ঢোল বাজায়। এক সকালে তার দেউড়িতে বসে সে লালনের গান ধরে, ‘জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা।’

কিন্তু জাতপাত তো শেষ কথা নয়।আসে সাম্প্রদায়িকতার কথা। ’৬৪ সালের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কথা। কাশ্মীরের একটি ঘটনা থেকে এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। পাড়ার চেনাজানা মুসলমান ছেলেগুলো হয়ে ওঠে হিন্দুবিদ্বেষী।

দয়ালহরি আর রামহরি পরস্পর ভাই হলেও একই চরিত্রের নয়। রামহরিকে জালাল মেম্বার পটিয়ে ভাইয়ের কাছ থেকে শুধু আলাদা করে ফেলে তা নয়, তাদের নৌকা ও জমি দখল করে। যেভাবে মেন্বার আবদুল খালেক কোনো দিন একটা মাছ না ধরেও উত্তর পতেঙ্গা মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি হয়ে দরিদ্র জেলেদের জন্য পাঠানো বিদেশি ত্রাণসামগ্রী মেরে দেয়। তলায় তলায় আমরা বুঝতে পারি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মুসলমানেরা ক্রমেই জাইল্যাপাড়ার ব্যবসা হাত করছে। প্রতিশোধ নিল রামহরি সমুদ্রে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো তখন এ মুসলমানদের হামিদ, এমদাদ এরা রাজাকার হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ডেকে এনে রাধেশ্যামের বউকে ধর্ষণ করাল, নিজেরা করল পরিমলের মেয়েকে লুণ্ঠন। রাধেশ্যামের স্ত্রী অপমানে আত্মহত্যা করলে নির্বীর্য রাধেশ্যাম প্রতিশোধ স্পৃহায় জ্বলে উঠল। হরিদাস, পরিমল, সুধীর—সবাই মিলে শেষ পর্যন্ত প্রতিশোধ নিল হামিদদের ও কিছু খান সেনাকে হত্যা করে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া হয় নির্মম। মেজর গিলানির নেতৃত্বে জেলেপাড়ায় যে দলটি ঢুকল, তারা শুধু তিনটে লোককে খুঁজে পেল। পাড়ার মসজিদের ইমাম খবিরউদ্দিন, পাগল হয়ে যাওয়া নিকুঞ্জ বহদ্দার, যার মুখে রাজাকার হামিদ জোর করে গরুর গোশতের ঝোল ঢেলে দিয়েছিল। আর রাধানাত হরিদাসের বাবা যাঁকে গিলানিরা তার ‘রাধা’ নামের জন্য ভারতের অনুচর ভেবে মেরে কোমর ভেঙে দিয়েছিল। আর পুত্রকে বাঁচাতে গিয়ে মারা পড়লেন রাধানাতের মা, হরিদাসের ঠাকুরমা, বৃদ্ধা চন্দ্রকলা, যে এ উপন্যাসের বলা যায় মাউছ্যাদের মেরুদণ্ড।

উপন্যাসে পিতা রাধানাথের মৃত্যুর পর হরিদাসের শেষ কথাতেই যেন ফুটে ওঠে আগামীর প্রতিরোধ - "বাবারে, তোঁয়ার কথা রাইখ্যম আঁই। আঁই হাইট্যম, আরও আরও জোরে সামনের মিক্কে হাঁডি যাইয়ম আঁই।" এবং এ কথা দিয়েই উপন্যাস শেষ হয়।

পাঠ পর্যালোচনাঃ লেখক হরিশংকর জলদাসের লেখার সাথে আমার পরিচয় হয় "একলব্য" উপন্যাসটি পড়ার মাধ্যমে। তখন থেকেই তার লেখার যাদুতে জড়িয়ে পড়েছি। "দহনকাল" বইটা আমি সংগ্রহ করেছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী থেকে। হরিশংকর জলদাসের "দহনকাল" সত্যি একটি চমৎকার উপন্যাস।

"দহনকাল" উপন্যাসটি সব দিক থেকে বহুমাত্রিক। প্রথমত উপন্যাসটি আত্মজৈবনিক। কেননা লেখকের পদবিতেই তা স্বতঃই প্রমাণিত। তাঁর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ অতিবাহিত হয়েছে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে। জীবন বাজি রেখে বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে লেগেছেন সংসার প্রতিপালনের তাগিদে। উপন্যাসের নায়ক হরিদাস লেখক স্বয়ং।

অদ্বৈত এবং মানিক লিখেছেন নদীলগ্ন জেলেদের জীবন নিয়ে, কিন্তু হরিশংকর জলদাস লিখেছেন সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনলেখ্য। তারপরও "দহনকাল" এর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বঞ্চিত-লাঞ্চিত জেলেসম্প্রদায় আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।

কঠিন জীবনসংগ্রামে যুক্ত থেকেও হতভাগ্য মৎস্যজীবীদের বহুলাংশে যে দারিদ্র্য মুক্ত হতে পারে না সে জন্য দায়ী অন্য কেউ নয় মুষ্টিমেয় লোভী স্বার্থপর জলদাসই। এদের শোষণচিত্র বিশ্বস্তভাবে চিত্রিত হয়েছে এবং এক ধরনের প্রতিবাদও সোচ্চারিত হয়েছে প্রকারান্তরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসবকে অতিক্রম করে গেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত বিভীষিকাময় বিবরণ।

দহনকাল’- এ নানা চরিত্রের সমাবেশ। লেখক চরিত্রগুলোকে নিপুণ চিত্রকরের মতো সীমিত পরিসরে উপস্থাপিত করেছেন তথাপি সেগুলি বিশ্বস্ত চিত্রণ হয়ে উঠেছে। কয়েকটি তুলির আঁচড়ে টানা চিত্রের মতো উপন্যাসের চরিত্রগু���ি। যেমন- হরিদাস "দহনকাল" উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র। বাবা রাধানাথের প্রেরনায় সে আলোর পথে হাঁটছে। স্বার্থপর নিকুঞ্জ সর্দার আবদুল খালেকের সঙ্গে মিশে গোটা জেলে সমাজকে গ্রাস করতে উদ্যত। চন্দ্রকলা নামের বিধবাটি সকল অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল থেকেছে। খু-উ বুইজ্যা এই উপন্যাসের প্রান। রামহরি জীবনের বিনিময়ে জালাল মেম্বারের অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয়। হরবাঁশি গানের ভিতর জীবনের মানে খোঁজে।

দহনকালের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উত্তর পতেঙ্গার জেলেরা একাত্তরের পাদদেশে এসে পৌঁছায়। জড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার মুক্তিসংগ্রামে। অনেক জলপুত্রের মৃত্যু হয়। কিন্তু "দহনকাল" এর মৃত্যু যেন নতুন এক জীবনের পূর্বাভাস, এ মৃত্যু যেন স্বাধীনতার উষালগ্ন।

দহনকাল কেবল নিম্নবর্গের জীবনছবিই নয়, এটি দুঃসময়তাড়িত মানুষের অস্তিত্বসংকট ও সংগ্রামের প্রতিবেদন। বাংলাদেশের উচ্চবর্গ, মধ্যবিত্ত, গ্রামীণ ও শহুরে জীবনায়নের বৃহৎ বৃত্তে দহনকাল ভিন্নমাত্রার উপন্যাস।

হ্যাপি রিডিং ♥♥♥
পৃথিবী হোক বইময় ♥♥♥
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews13 followers
July 4, 2024
উত্তর পতেঙ্গা এলাকার জেলে-গ্রাম "মাউছ্যাপাড়া(মেছোপাড়া)" ও "কৈত্তরপাড়া(কৈবর্তপাড়া)" কে নিয়ে এই উপন্যাসের পটভুমি।
প্রথমদিকে বইয়ে উঠে এসেছে, সাধারণ গ্রামীন জেলে-গ্রামের মানুষের সাথে মানুষের প্রণয়,কলহ, দৈনন্দিন অভাব। আবার আছে তাদের সমুদ্র- সংগ্রামের গল্প। আছে পারস্পারিক লোভ, রাগ, ঘৃণা, প্রহার। জেলেপাড়ার মানুষের প্রতিনিয়ত বহাদ্দারের কাছে জুলম হবার, অত্যাচারিত হবার কাহিনী।সমুদের ঢেউয়ের সাথে এই মাউছ্যা ও কেবর্তদের জীবনের টানাপোড়েনের কথা, হিন্দু মুসলিম দাঙা ও জাত-পাতের উত্থান, গ্রামীন জীবনযাপন, সুখ-দুঃখ খুবই প্রাণবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসে।
পরের অধ্যায়ে জেলেপাড়ায় জেলেদের জীবনে নেমে আসে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ। হানাদারদের হানায় পড়ে এই জেলেপাড়ার লোকজন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এসে ঘাঁটি গাড়ে গ্রামে। জেলেদের মাছ মারা বন্ধ হয়ে গেল। আর এখানেই শুরু প্রতিবাদের আরেকটা অধ্যায়।
অকথ্য নির্যাতন সইতে থাকলো হরিদাস, পরিমল, শিববরণ, খু-উইজ্জ্যা বুড়ো, রাধ্যেশ্যেম যার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হলো রাজাকারদের সহযোগিতায়। জেলেপাড়ায় নেমে আসে "দহনকাল" আর সেই "কাল"কে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে একেকজন জলপুত্র। শুরু হয় তাদের ভাগ্যের মুক্তিসংগ্রাম।
এর আগে জেলেদের নিয়ে পড়েছিলাম "পদ্মা নদীর মাঝি"। কিন্তু সেই বই আর এই বই অনেক তফাত। নদীভিত্তিক জেলেপাড়ার জীবন নিয়ে ছিল "পদ্মা নদীর মাঝি", আর "দহনকাল" মূলত সমুদ্রভিত্তিক জেলেদেরকে নিয়ে।
বইতে ডিটেইলিং অনেক, ক্যারেক্টর এনালাইসিস অনেক। একটা সময়/কালের'র ওপর ভিত্তি করেও বইটা লেখা না। হাইলাইট করা হয়েছে জেলে-জীবিকাকে তাই কাল আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণও না।
তবে, পাঠকের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হতে পারে ভাষার জন্য। পুরোটাই আঞ্চলিক ভাষায় কথোপকথন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা তাই অনেক কথাই বুঝিনি, একটা কাছাকাছি তর্জমা নিজের মতো ধরে নিয়েছি। হানাদারদের কথোপকথনও উর্দুতে।
লেখক নিজে জেলে জীবনের সাথে দীর্ঘ সময় সম্পৃক্ত ছিলেন তাই এখানে অনেক কিছু জানার আছে যা আপনি হয়তো এখনো জানেন না। হরিশংকর জলদাসের প্রথম বই পড়লাম। সে হিসেবে As a reader আমি যথেষ্ট এক্সপেকটেশন মিট করেছি।
হ্যাপি রিডিং💜
Profile Image for Hussain M Farabi.
73 reviews1 follower
March 19, 2020
'তিতাস একটি নদীর নাম' এর পর জেলেজীবনের এতো নিখুঁত আর গভীর উপাখ্যান বোধহয় আর খুব বেশি বইয়ে পাওয়া যাবে না! বইটার বর্ণনাশৈলি আর চরিত্রের গঠন অনবদ্য। নিম্নশ্রেণির জেলেদের দুঃখভরা জীবন সাথে '৭১ এ তাদের অবস্থান অত্যন্ত চমকপ্রদ ছিলো। সংলাপ গুলো চট্টগ্রামের একেবারে আঞ্চলিক ভাষায় হওয়াতে একটু বেগ পেতে হয়েছে বইটা পড়তে, জায়গা বিশেষে কিছু জিনিস পুরোপুরি বোধগম্য-ও হয়নি আর শেষটায় কাহিনির প্রবাহ মুক্তিযুদ্ধের দিকে যেনো হুট করেই সরে গিয়ে পূর্বোক্ত প্রবাহ টা যেনো খই হারিয়ে ফেলেছিলো। এন্ডিং টা আরেকটু যত্ন নিয়ে করা যেতো বলে মনে হচ্ছে। তাই ৪/৫ দেয়া যায় বইটাকে!
Profile Image for Imtiaz Emu.
60 reviews33 followers
June 10, 2017
অদ্ভূত! অদ্ভূত!
বইয়ের শুরুটাই ছিল চমৎকার। বাপ রাধানাথ ছেলের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে স্কুলে। ছেলে বাবার হাঁটার সাথে তাল মেলাতে পারছে না। তারপরেও ছুটছে।
হরিশংকর সাহেবের বই গুলো খুব বিস্তৃত ধরণের হয়। কাহিনী অনেক লম্বা হয়। অনেক তথ্য থাকে। জেলেদের জাল, নৌকা, মাছের মৌসুম, শুটকি ইত্যাদি, মূলত জেলেসমাজ যা যা নিয়ে গঠিত তার পুরো ধারণাটা উনি তার বইয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে একদিকে যেমন পাঠক অনেক কিছু জানতে পারে অন্যদিকে অনভ্যাসের পাঠক আগ্রহ হারায়। তাদের কাছে বইটা অনেক লম্বা মনে হয়।
'দহনকাল' জেলেসমাজের নিপীড়নের একটা প্রামাণ্যচিত্র। আশ্চর্যের বিষয়টা হচ্ছে সময়কাল। বইয়ে বর্ণিত সময়কাল হলো বিট্রিশ শাসনের শেষ থেকে স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত। যদিও প্রথমে বই পড়া শুরু করলে আপনি সময় কাল সম্পর্কে বিশেষ আইডিয়া করতে পারবেন না। তারপরে আস্তে আস্তে লেখক আপনাকে সময়টার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন। লেখনীতে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ছোঁয়া পাবেন।
বইয়ের ক্যারেক্টার নির্মাণে লেখক বিশেষ পারদর্শী না। হরিদাসের ক্যারেক্টার আরো গভীর হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো কাহিনী। গল্পের কাহিনী প্রথমে জেলেদের নিজেদের মধ্যে বিস্তৃত থাকলেও পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোলে জেলেদের জীবন এবং সেখানে পাকিস্তানী মিলিটারি, রাজাকার মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এর কেন্দ্রে দাড়িয়ে আছে বঞ্চিত-লাঞ্চিত জেলেসম্প্রদায় আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। জেলে পাড়ায় শিক্ষার আলোর জন্য একজনের সংগ্রাম বইয়ের শেষাংশে বিপুলভাবে প্রজ্জ্বল্লিত হয়।
বই পড়তে গতানুগতিক পাঠকদের একটু সমস্যা হতে পারে। কারণ লেখক পুরো বইতে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন পারস্পরিক কথোপকথনে। এটা আমার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ এতে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়েছে। কথা বুঝতে কিছু সময় লেগেছে ঠিকই, কিন্তু বইয়ের কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণতা ছিল। যেমন শেষাংশে: "বাবারে, তোঁয়ার কথা রাইখ্যম আই। আই হাইট্যম, আরো জোরে সামনের মিক্কে হাডিঁ যাইয়াম আই।" এটা সহজ চলিত ভাষায় লিখলে গল্পে বক্তার যে আকুলতা তা নিশ্চয়ই প্রকাশ পেতো না।
অনেকগুলো ক্যারেক্টার। সবগুলো সমান নয়। কিছু তো পুরোপুরিই অবাঞ্চিত। কিন্তু তারপরেও জেলেসমাজে যে এতো মানুষ, নিরক্ষরতার দরুণ বিপুল বংশবিস্তারের ছোঁয়া আর কুসংস্কার তার কিছু খন্ডচিত্র লেখক এই ক্যারেক্টার গুলোর মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এতে বইটি অণ্য একটি মাত্রা পেয়েছে। বইটি প্রথম আলো বর্ষসেরা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। নামকরণের সার্থকতা যদি বিবেচনা করি তাহলে বলতেই হয় 'যথার্থ'। সমাজের নিপীড়নে পুড়তে পুড়তে জেলেরা একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের পাদদেশে এসে পৌঁছে। সংগ্রামে লিপ্ত হয় তাদের অনেকেই আগুনে পোড় খাওয়া জীবনের সমাপ্তি ঘটায়, যা এক নতুন জীবনের পূর্বাভাস, এ মৃত্যু যেন স্বাধীনতার উষালগ্ন।
Profile Image for Mustahid Salman.
58 reviews9 followers
April 4, 2019
এক ছিলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াস'র "খোয়াবনামা, আর এক হচ্ছে এই "দহনকাল"। একবিংশ শতাব্দীর ২য় দশকের শেষ ভাগে এসে আমরা যখন নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে বিস্মৃত হবার দোরগোড়ায় তখন জলদাস যেনো ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে গেলেন আবহমান বাংলায়। শুরুতে কেনো জানিনা পথের পাঁচালী'র সাথে খুব মিল পাচ্ছিলাম। লেখক প্রভাবিত হতেই পারেন। শুরুতে জেলে পাড়া বর্ণনায় একটু বেশিই লেখা হয়ে গেছে মনে হইসে। শেষ করে অসম্পূর্ণও মনে হইসে। আরো ১০০ পাতা বেশি হলে আরো ভালো লাগতো। হরিশংকর জলদাসের এই প্রথম কোনো বই পড়লাম। চমৎকৃত হয়েছি। আরো পড়তে হবে।
Profile Image for Tanoy Bhowal.
63 reviews4 followers
July 16, 2021
এই গল্পটা আমার কাছে একটা দৃষ্টান্তের মত , যেখানে জেলে সমাজের সবিস্তার বর্ণনা থেকে শুরু করে বাংলার মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাসমূহ নির্ভেজাল ও নিগূঢ় ভাবে ক্রমান্বয়ে অপূর্ব আঞ্চলিক ভাষাশৈলীর সমন্বয়ে গঠিত । খাঁটি ঢাকার মানুষ বলে , আঞ্���লিক ভাষার সাথে প্রথমে এঁটে উঠতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিলো ,কিন্তু কাহিনির পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিচ্ছবি সে বাধা সহজে অতিক্রম করতে সহায়তা করেছে ।
Profile Image for Nusrat Jahan Mimi.
8 reviews
April 30, 2025
লেখক হরিশংকর জলদাসের লেখা চমৎকার উপন্যাস দহনকাল। বাংলা ১৪১৬ সালে এটি প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের তকমা পায়। এই একটা পুরষ্কার এই বইয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। আমার মতে লেখকের এই উপন্যাস আরো অনেক পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য। কিছু বই পড়ার পরে আপনি অল্পসময়ের মধ্যে ভুলে যাবেন কি পড়েছেন বা আরেকবার হয়তো পড়তে ইচ্ছা করবে না বা পড়লেও অনেক দিন পরে হয়তো। আবার কিছু বই পড়ার পরে এর রেশ থাকবে বহুকাল। সেই বই আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে। এমন কিছু সত্য আমাদের সামনে উপস্থিত করবে যা আমরা জানি না বা জেনেও না জানার ভান করি অথবা জানতে চাইই না। এই বইটা তেমনই একটা বই। এটা পড়ার সময় কখনো খুব ভালো লাগবে, কখনো বইটা দুঃখের সাগরে ভাসাবে আপনাকে, কখনো প্রতিবাদী হতে শেখাবে, কখনো মানুষের প্রতি দরদী হতে বলবে। শেষ করার পরে মনে হবে কেন শেষ হলো। আরো কয়েকশো পৃষ্ঠা হলেও নির্দিধায় পড়ে ফেলা যেতো।

দহনকাল মূলত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলেদের জীবনের বঞ্চনা ও লান্ছনার সাক্ষী, সেই সাথে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার দলিল। এখানে অনেকগুলো চরিত্র রয়েছে। মূল চরিত্র হরিদাস নামের এক কিশোর যে জেলে সমাজের এস এস সি পাশ করা একমাত্র ব্যক্তি। পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও নীচু জাতের হওয়ার কারণে তাকে শিক্ষিত সমাজ মেনে নিতে চায় না। কিন্তু সে দমে না গিয়েও তার পড়াশোনা চালিয়ে যায়। হরিদাসের বাবা রাধানাথ একজন পরিশ্রমী ও প্রতিবাদী জেলে যে নিজে অশিক্ষিত হয়েও ছেলেকে শিক্ষিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগে যেন তার ছেলেকে তারমত অন্যের নৌকায় মাছ ধরে জীবন নির্বাহ করতে না হয়। সে বিভিন্ন সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য অনেকের রোশের মুখে পরে এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় কিন্তু তবুও কখনো দমে যায় না। পাকিস্তান সরকার উন্নয়নের নামে হিন্দু পাড়ার অনেকের জমি কেড়ে নেয়। সেসময় চিত্তরঞ্জন দে ওরফে আদাবস্যার নামের এক শিক্ষক তার বাড়িঘর জমিজমা সব হারিয়ে পথে বসে যান, তবুও ছাত্রদের শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকেন না। তিনি বিশ্বাস করেন সব চলে গেলেও তার ছাত্ররা তার পাশে থাকবে, তারাই তার বড় সম্পদ। আরেক মূখ্য চরিত্র খু-বুইজ্জা নামের এক আধা পাগল লোক। কিন্তু কখনো কখনো মনে হবে সে ই একমাত্র সুস্থ লোক অসংখ্য অসুস্থ লোকের ভীড়ে। সে নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও হরিদাসকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে যায় পড়াশোনার জন্য। সবসময় হরিদাসের পাশে থাকে তার পরম বন্ধু হয়ে। হরিদাসের দাদী চন্দ্রকলা সব সময় অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী নারী। সে জীবন দিয়ে হলেও তার ছেলে ও নাতিকে রক্ষা করতে চায়। রামহরি যে তার বড়ভাইয়ের সব কথা সবসময় মেনে চলার পরেও কোনো একবার নিজের ভুলে, ভাইয়ের অবাধ্য হয়ে জালাল মেম্বারের কাছে নিজের সর্বস্ব খুইয়ে বসে আর নিজের জীবনের বিনিময়ে মেম্বারের উপর প্রতিশোধ নেয়।

এই উপন্যাসে এমন আরো অনেক চরিত্র আছে যাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না পাওয়া, হতাশা, বেঈমানী, সাগর পাড়ের জীবন ও সাগরে বহমান জীবনের গল্পগাথা এখানে লেখা হয়েছে। বিভিন্ন রকম মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের যুদ্ধ দেখানো হয়েছে।

কখনো আবার লেখক দেখিয়েছেন অন্যদেশের হিন্দু মুসলিমের দাঙ্গা কিভাবে এত পথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রপাড়ের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে। আরো আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলে সমাজের দুর্দশার চিত্র আর সেখান থেকে উঠে দাড়ানোর আকুতি। সাধারণ অশিক্ষিত জেলেদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ঠকিয়ে কিভাবে ফুলে ফেপে উঠেছে কিছু ক্ষমতালোভী অমানুষ। সেই সাথে আছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতার চিত্র এবং রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতা। সেসময়ে হরিদাস, খু-বুইজ্জা সহ আরো কিছু জেলে তাদের মা বোনেদের উপর হওয়া অত্যাচার ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করার জন্য জীবন বাজি রেখে হাতে বানানো ক্ষুদ্র অস্ত্র হাতে নিয়ে হানাদার দমন করতে যায়। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে তারা এক হয়ে লড়াই করতে চায় অত্যাচারীর বিরুদ্ধে।
Profile Image for Arfaz Uddin.
91 reviews7 followers
July 4, 2024
বাঙালি জাতি মাছে ভাতে খ্যাত ৷ প্রতিটি পরিবারের বেলার খাবারের পাতে এক পদের মাছ থাকা চাই ই চাই৷ কিন্তু নদীর জল থেকে মাছের পাতে স্থানপ্রাপ্তি পর্যন্ত যে দীর্ঘ যাত্রা অতিক্রম করতে হয়। সে যাত্রায় ড্রাইভিং সিটে বসে একজন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, একজন জেলে। সে মাছ মারে, মাছ বিক্রি করে, আর সেই মাছ হাতবদলের পর আমাদের হাতে পৌছায়। আমরা কখনো ভেবে দেখেছি মাছ ধরা কিংবা মাছ মারা এই পেশাজীবী মানুষজনের দিন কিভাবে যায়?

একজন জেলে, জেলে পরিবার কিংবা জেলেপল্লীর জীবনযাপন সম্বন্ধে আমাদের ধারনা আর কতটুকু ই বা আছে? একজন মানুষ মাছ ধরছে আর বিক্রি করছে, এতে কি কোনো বৈচিত্রতা আছে? মাছ আহরন খুবই জটিল একটি কর্ম, তবে সামাজিক স্তরে এটির মান বেশ নিম্নবর্গীয়। তবে এই কষ্ঠসাধ্য কাজে তাদের আয়ের পরিমান ততটা নয় যতটা তাদের প্রাপ্য। কেননা সমাজের প্রতিটি স্তরেই দেখা যায় অন্যায়-দুর্নীতি আর এই ক্ষেত্রেও সেটি অনুপস্থিত নয়। আর এ কারনেই দৈনন্দিন জীবনে ধুকে ধুকে বেচে থাকে জেলেপাড়ার জেলেরা। জেলেদের জীবনসংগ্রামের চিত্র নিয়েই লেখা হয়েছে হরিশংকর জলদাসের দহনকাল বইটি।

দহনকাল বইয়ের গল্পটি শুরু হয় রাধানাথ জলদাস এর ছেলে হরিদাস জলদাস কে দিয়ে। উত্তর পতেঙ্গার একটি জেলেপাড়ার ছোট শিক্ষক চিত্তরঞ্জয় কিংবা আদাবস্যার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে রাধানাথ তার সন্তানকে শিক্ষিত করবার দিকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। হরিদাস এখানে একজন স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষ হিসেবে উপন্যাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষার প্রতি অদম্য আগ্রহ এবং পরিশ্রমী হরিদাস এগিয়ে যায় এবং পল্লীর মাঝে নিজস্ব স্থান গড়ে তুলে। জেলে সমাজের মধ্যকার অশিক্ষার এক অপ্রচলিত কিন্তু প্রবাহিত প্রথাকে ভেঙে ফেলে হরিদাস। এখানে রাধানাথ সে ভূমিকা পালনে অক্ষম হলেও নিজ সন্তান কে মাছ মারার সেই প্রথাগত নিপীড়নের একজন হতে বাধা দেয়।

রাধানাথের মত অনেক ছোট জেলেদের নিপীড়ন আর বহা���্দার ও বড়মাঝিদের সমাজে দাপটের চিত্র ফুটে উঠে। দেখা যাক অনেক জেলে যেমন রাধানাথ নিজের অবস্থান থেকে উন্নয়ন সম্ভব নয় কারন বহাদ্দারদের অন্যায় নিয়মের কারনে। তবুও অদম্য রাধানাথ নিজের জন্য লড়াই করে যায় অবিরাম।

এছাড়া গল্পে কৈবর্তগ্রামের উল্টোচিত্র, জেলেদের ও কৈবর্তের মধ্যকার বৈষম্য দেখা যায়। পুরো উপন্যাস জুড়ে দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তর পতেঙ্গা অঞ্চলের জেলেপল্লীর কয়েক পরিবারের মধ্যকার জীবনযাপনের অসমতা। কিভাবে দেশীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই জীবনযাপনে প্রভাব ফেলে তাদের দৈনন্দিন জীবনধারন বদল ঘটে। তাদের মধ্যকার একত্বতা কিভাবে শত্রু মোকাবেলায় সাহসীকতা দেখায়।

হরিশংকর জলদাসকে আমার ব্যাক্তিগতভাবে পছন্দ কারন সে সেই গল্পকে বলে যে গল্প কেউ লেখে না। নিজস্ব লালনপালনের পরিবেশের কারনে তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বেশ চমৎকার। তিনি গল্পে ফুটিয়ে তুলেন তৃণমূল মানুষের গল্প, ছনের ঘরের কিংবা অনাহারী আর্তনাদের শব্দ। দহনকাল তার ব্যাতিক্রম নয়। তার লেখনি, বর্ননা, চরিত্রায়ন সব ক্ষেত্রে দেখা যায় নিপুনতা। একজন জলদাস হয়ে তিনি জেলেপল্লীকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং তুলে ধরেছেনে এমন সব পাঠকদের কাছে যাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না জেলেদের জীবনসংগ্রামের গল্পকে জানা। এই সংগ্রামী মানুষদের গল্প বলার কেউ নেই, কিন্তু তিনি বলেছেন। এই সবকিছুর কারনে দহনকাল আমার বিশেষ পছন্দ হয়েছে। দহনকাল আমার মনে দাগ কাটাতে সক্ষম হয়েছে, কেননা জেলেপাড়া সম্বন্ধে আমার কোনো জ্ঞান নেই। এই বই দিয়েই সেই জ্ঞান অর্জন করেছি।
Profile Image for Mrinmoy Akash.
79 reviews
February 20, 2020
দহনকালের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে এর সততা। হরিশংকর জলদাস নিজে জলপুত্রদের থেকে ওঠে এসেছেন, সুতরাং সমুদ্রতীরের জাইল্যাদের জীবনের যে বর্ণনা তিনি করেছেন তাতে কোন প্রকার কারচুপি নেই।

তার সাথে যুক্ত হয়েছে সরল মোলায়েম ভাষা। লেখকের বলার ভঙ্গিমাটা খুবই সুন্দর। অনেক গল্প-উপন্যাস আছে যেগুলো সহজবোধ্য ভাষায় লেখা হলেও বাক্যের গঠন আর শব্দের অতিরিক্ত পুনরাবৃত্তির কারণে পাঠক পড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়ে জান। হরিশংকর জলদাসের লেখার ক্ষেত্রে তেমন ঘটার সুযোগ নেই।

তবে মাঝে মাঝে বর্ণনার কিপটেমি চোখে পড়ে। হঠাৎ হঠাৎ কিছু অংশ পড়ে মনে হয় লেখক দায়সারা লিখে ছেড়ে দিয়েছেন। মনে হয়েছে, এ জায়গায় আরও কিছু বলা উচিৎ ছিল। কিংবা অন্যভাবে বলা উচিৎ ছিল। তবে এরকম অস্বস্তি উপন্যাসের শুরুর দিকে লাগতে পারে, কিছুক্ষণ পর গল্পের ধারা আবার সোজা হয়ে গিয়েছে।

অসংখ্য অসাধারণ এবং বহুমাত্রিক চরিত্র সঙযোজন করলেও তাদের মাঝে সামঞ্জস্য খুব কম। যেমন, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য একজন নিরীহ-নিরপরাধ চরিত্রকে হত্যা করা হয়েছে উপন্যাসে। কিন্তু সেই নৃশংসতার ছোঁয়া পাঠকগণ খুব একটা পাবেন না, কারণ এক প্যারাগ্রাফের চরিত্রটির সাথে তাদের তেমন কোন মানসিক সংযোগ গড়ে ওঠেনি। কিছু কিছু চরিত্র আবার অনেক বেশি নাটকীয়। রাধানাথ পরিবারের লোকজন যখনই বিপদে পড়ে তখনই খু-উ বুইজ্যার ডিউস এক্স মাকিনার মত আবির্ভাব একটু অবাস্তব বলেই বোধ হয়।

মাঝে মাঝে উপন্যাসে লেখকের নিজের মতামত চলে এসেছে। যেমন এক জায়গায় পাকিস্তানী আর্মিদের সরাসরি হায়েনা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। সাহিত্যিক বলবেন কী ঘটেছে, পাঠক বুঝে নেবে। নৃশংসকে নৃশংস বলে দেয়াটা খুব বেশি সহজ কাজ, নৃশংসতা ফুটিয়ে তোলা বরং শক্ত।

শেষদিকে মুক্তিযুদ্ধের অংশটি ভালো খারাপ মেশানো। আর্মি ও রাজাকারদের আচরণ, যুদ্ধ নিয়ে সাধারণ জেলেদের মনোভাব - সবকিছুই সুন্দর। কিন্তু জলপুত্রদের সাহসের এবং ঘুরে দাঁড়াবার যে কাহিনীটুকু তা একটু বেশিই নাটকীয়।

সবশেষে, অসাধারণ একটি উপন্যাস। যদি আর একটু দীর্ঘ হতো, চরিত্র এবং ঘটনার সামঞ্জস্যতা আরও একটু বেশী থাকতো তাহলে দহনকাল সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের মাস্টারপিসদের মাঝেই জায়গা পেতে পারতো।
93 reviews18 followers
February 28, 2020
দহনকাল-হরিশংকর জলদাসঃ বুক মিভিউ
একটা উপন্যাস ঠিক যতটা মমতা দিয়ে লেখা সম্ভব, যতটা মর্মস্পর্শী করে লেখা সম্ভব ততটাই। পড়ে চলেছি, বারবার মনে হয়েছে এটা লেখকের জীবনী না হয়ে যায় না। মনে হচ্ছিল লেখক নিজ চোখে এগুলো দেখেছেন। তারপরে আবার যেখানে মুল চরিত্রের নাম হরিদাস। আবার লেখকের বাসস্থান, আর বইয়ের উপজীব্য একই। পদ্মানদীর মাঝি লিখতে গিয়ে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক দুই বছর না হয় জেলেপাড়াতে ছিলেন, সেখানে লেখক ত সেখানেই বড় হয়ে উঠেছেন।
নাহ তিনি কারো মত নদীর রুপের বর্ননায় যাননি। যাননি কারোমত প্রেম ভালোবাসার গল্প করতে। উপমা দিয়ে কাদাতে যাননি। একান্ত জেলেদের জীবন, বাবা সন্তান, মা সন্তান এর একান্ত ভালোবাসা যেন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। যা ছুয়ে গিয়েছে বারবার। বাবা রাধানাথ-মা চন্দ্রকলার কষ্টের দিনগুলি, বাবা রাধানাথ-ছেলে হরিদাসের শিক্ষা দিনগুলি। জ্বলে জ্বলে উঠার দিনগুলিই ত দহনকাল। সেই বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবার দিনগুলি, সকালের ভোর, বাসে উঠতে উঠতে আব্বা আব্বা করে ডেকে বাবাকে খুজে বেড়ানোর কথা গুলো মনে পড়ে যায়। সেই সময় কালে চলে আসে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পুর্ববর্তী সময়গুলি। জেলেপাড়াতে তা তেমন প্রভাব ফেলবে না মনে হলেও আস্তে আস্তে আচড় কেটে যায়। জেলেরাও অংশ হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের।
“ওঁই চলেছে রাধানাথ জলদাস, হনহন করে। তার ডানহাতে সাত বছরের ছেলেটি ধরা-জলদাস। ...
বাবার সংগে তাল রেখে হাটতে পারছে না হরিদাস। রাধানাথ বলে ‘আর ইক্কিনি জোরে হাট-অ বাবাজি। ঠিক সমত পোইন পরিবো”
পুরো উপন্যাস পড়ে, নানা ঘাত প্রতিঘাতের সংক্ষেপ যেন এই কয়েক লাইন।
লেখকের অন্য লেখা পড়িনি। প্রথম আলোতে উনার কিছু লেখা পড়েছি। কখনো এতটা দাগ পড়েনি মনে। কিন্তু এ উপন্যাস ধীরে ধীরে মনে এতটা দাগ কেটেছে বলার অপেক্ষা রাখেনা। এক কথায় অসাধারন বই। যারা ভালো সাহিত্য খুজেন তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য।
Profile Image for Rupayan Dhruba.
13 reviews5 followers
Read
May 26, 2020
অদ্বৈত মল্লবর্মণ এর "তিতাস একটি নদীর নাম" প্রকাশের দীর্ঘকাল পরে জেলে জীবনের সুখ দুঃখের কথা লিখেছেন লেখক হরিশংকর জলদাস। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার এক ছোট জেলে পল্লী জীবনের খুঁটিনাটি ঘটনাই উপন্যাসের কেন্দ্র।
লেখক তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে ৫৫ বছর বয়সে "অনেকটা অপমানের কারণেই " উপন্যাস লেখায় হাত দেন। ধীবর জীবনের গল্প নিয়ে মানিক(পদ্মা নদীর মাঝি) কিংবা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ( হাসুলি বাকের উপকথা) লিখে থাকলেও তাদের উপন্যাস গুলি সেভাবে জেলে জীবনের রূঢ় কঠোর বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে নি শুধুমাত্র লেখকের জেলে জীবনের সাথে সম্পৃক্ততার অভাবের কারনে, যেহেতু তারা কেউ ব্যক্তিগত জীবনে জেলে পরিবার থেকে উঠে আসেন নি। এক্ষেত্রে ভীষণভাবে ব্যতিক্রম হরিশংকর জলদাস। ব্যক্তিগত জীবনে জেলে পরিবারের সন্তান হিসেবে নিজের দেখা সমাজের খুঁটিনাটি কথা তিনি অকপটে লিখেছেন সাবলীলভাবে। শুধু ঘটনা আর কালের ব্যাপ্তি নয়। ভাষার ক্ষেত্রেও অভিনবত্ব দেখিয়েছেন লেখক। পতেঙ্গার জেলে পল্লী অঞ্চলের মানুষের কথ্য ভাষায় উপন্যাসের সকল সংলাপ লিখেছেন তিনি। গল্পের নায়ক হরিদাস। তার জীবনের শৈশব থেকে কৈশোরের বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছে উপন্যাসের বিস্তৃতি। সমাজের মানুষের কাছে " "ছোড" জাতের "জাইল্লা" হিসেবে পরিগণিত হরিদাসের শিক্ষার প্রতি দুর্নিবার আগ্রহের কথা আছে উপন্যাসে। শেষ অংশে স্থান পেয়েছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডাংশ, যুদ্ধে নিঃস্ব পরিমল/রাধেশ্যাম এর পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অসম প্রতিরোধ যুদ্ধ। অসীম মনোবল কিভাবে সুবিশাল প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে ঘায়েল করতে পারে তাই দেখা যায় শেষ অংশে। এসবের মধ্যে দিয়ে বহমান কালের পরিক্রমায় এগিয়ে গিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ।সময়,ভাষা আর ঘটনার বিচারে এটিকে একটি এই সময়ে প্রকাশিত এক অনন্য রচনা বলে বিবেচনা করা যায়।
Profile Image for Sukanta Bhattacharjee .
52 reviews11 followers
May 6, 2021
হেই হরিদাস, হেই হরিদাস,
অইয়ে তোঁয়ারার সর্বনাশ।

লেখকের লেখা আগে যারা পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, কাদের নিয়ে লিখেন তিনি। এটাও তাদের নিয়েই লেখা। অবহেলিত জেলেসমাজ নিয়ে না কেউ আগে তার মতো লিখতে পেরেছে৷ না কেউ পারবে।

এই বইয়ের প্রেক্ষাপট পুরনো দিনের কথা বলে। সম্প্রীতির কথা বলে, সহিংসতার কথাও বলে।

রাধানাথ একজন জেলে। যে জানে সমুদ্র জালভরে মাছ দিতে জানে। আবার, জলপুত্রদের প্রাণও কেড়ে নিতে জানে। তাই রাধানাথ চায় না তার ছেলে হরিদাস পেশা হিসেবে জেলেবৃত্তি বেছে নিক। হরিদাস লেখাপড়া করবে, বড় চাকরি করবে। পাড়ার মুখ উজ্জ্বল করবে। তাই একদিন বাবার হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে গিয়ে পড়তে বসেছিল আদাব স্যারের কাছে।

তারপর বারবার কাহিনীর সময় পাল্টাতে থাকে৷ হরিদাসও একটু একটু বড় হতে থাকে। রাধানাথে আর হরিদাসের সাথে পাল্লা দিয়ে আরো অনেক চরিত্র আসে।

খু বুইজ্যা, চন্দ্রকলা,আদাব স্যার, সুধীর, এরা প্রথম দিকের চরিত্র। তারপর আসে, দয়াল হরি, রামহরি, খালেক মেম্বার, নিকুঞ্জ বহদ্দার এরা। এরপর যারা আসে তারা কাহিনীর ট্র্যাকটাই পালটে দিয়ে যায়।

অসাধারণ ভালো লাগার একটা বই। আগে মোহনা পড়েছিলাম এই লেখকের। দহনকাল পড়ে আরো ভালো লাগল। বইটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটা ঘোর লাগা কাজ করেছিল।

এই বইয়ের একটাই ফ্ল আমার চোখে লেগেছে, দুমদাম কাহিনী এক সময়কাল থেকে আরেকসময়ে জাম্প করছে। হরিদাসের বয়সটা সময়কালের সাথে এডজাস্ট হয় নি। হয়তো, শুধু আমার কাছেই মনে হয়েছে। যারা চাঁটগা ভাষা জানেন না, তাদের বইটা পড়তে কষ্ট হতে পারে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার জেলে সমাজ নিয়ে, ওদের আদি ভাষা ব্যবহারের বেশ আধিক্য রয়েছে এই বইয়ে। ব্যস, আর কিছু না বলি।🙂
Profile Image for Tanmay.
14 reviews
June 4, 2025
খুব নিপুণ লেখক না হলে জেলে জীবনের লাঞ্ছনা, দারিদ্র্য, উচ্চাকাঙ্খা, শ্রমিক শোষণ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছু এক বিনিসুতোয় বাঁধা মুশকিল। নিপুণতার মাপকাঠিতে তাই লেখক হরিশংকর জলদাস বেশ ভালোভাবেই উতরে গেছেন।

মাছে ভাতে বাঙালি হলেও, মাছের সরবরাহকারী জেলে সম্প্রদায় এক উপেক্ষিত জনপদ। উপন্যাসটি শুরু হয় এক উচ্চাকাঙ্খী দরিদ্র জেলে রাধানাথ ও তার পুত্র জলদাসকে নিয়ে, স্বপ্ন ছেলেকে শিক্ষিত বানাবেন, জেলের পরিবারে শিক্ষিত সন্তান? হাসির পাত্র বনে গেল ছোট্ট হরিদাস, কিন্তু মেধার বলে সে প্রমাণ করে তার যোগ্যতা। কাহিনী এগিয়ে চলে, যোগ হয় আরও অসংখ্য চরিত্র, গল্পের দুই তৃতীয়াংশ হরিদাস কেন্দ্রিক এবং বাকি অংশে ধনী জেলেদের হঠকারিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডচিত্র পাওয়া যায়। খণ্ডচিত্র পাওয়া গেলেও একে ছোট করে দেখবার জো নেই, পাক বাহিনীর নৃশংসতা যেন বইয়ের পাতা ছাপিয়ে চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত ভেসে উঠছিল। জেলে সমাজের পুরোদস্তুর আবেশ পাওয়া যায় গল্পে ব্যবহার করা ভাষার জন্য, শুরুর দিকে বুঝতে কষ্ট হলেও, পরে স্বচ্ছন্দ্যে পড়া যায়। গল্পে জেলে জীবনের হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ, ভাইয়ের ধূর্ততা, পারিবারিক বন্ধন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা কি নেই? গল্পের হরিদাস শুধু জেলে সমাজের নিচু জাতকে নয়, বরং যেন আমাদেরই আশেপাশের কোনো অবহেলিত শ্রেণির মাঝে জেগে ওঠা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

হরিশংকর জলদাস, লেখকের সারনেম দেখেই বোঝা যায় লেখক জেলে সম্প্রদায়ের অংশ, অনেক কাছ থেকে জেলেজীবনকে দেখেছিলেন বলেই হয়তো বাংলা সাহিত্যে এই অমূল্য সম্পদটিকে উপহার দিতে পেরেছেন। নিঃসন্দেহে মাস্টারপিস।
Profile Image for Tahsina Alam.
108 reviews
August 4, 2020
#বইমেলারিভিউ১৬

দহনকাল
হরিশংকর জলদাস
মাওলা ব্রাদার্স
দামঃ৩০০/-

গ্রেডিংঃ Exceeds expectation

কালিদইজ্যার মাছ সেঁচে আনা উত্তর পতেঙ্গার এই জেলেরা "ছোটলোকদের মধ্যেও ছোটলোক"। সেই গ্রামেরই রাধানাথ জলদাসের ছেলে হরিদাস জলদাস। স্কুলের পরীক্ষায় ছেলে প্রথম হয়ে আসে, তাই দেখে রাধানাথের মনে আশা জাগে। বাপটা গেছে কালিদইজ্যায়, ছেলেটাকে সে হারাবে না।

হুট করেই শুরু হয় পাকিস্তানি মিলিটারির আক্রমণ। অত্যাচারে কোমর ভেঙ্গে দেয় রাধানাথের। জেলেরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। প্রতিহিংসায় পঙ্গু রাধানাথকে মেরে ফেলে মিলিটারি।

উপন্যাসটা হুট করে শেষ হয় এখানেই। ভেবে নিলাম, হরিদাস কোনভাবে পালিয়ে গিয়ে যোগ দিয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে হয়তো পড়াশোনাও শেষ করেছিলো।

অধিকাংশ ডায়লগ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। ৭০% এর মত বুঝতে পারি।

সেন্টমার্টিন-কক্সবাজারে গিয়ে দুবেলা করে সামুদ্রিক মাছ খেয়েছিলাম। সেই মাছ কীসের বিনিময়ে আসে বইটা না পড়লে বুঝতাম না৷
Profile Image for Abid Arnab.
12 reviews
March 15, 2020
হরিশংকর জলদাসের লেখালেখির সাথে পরিচয় হলো এই "দহনকাল" এর মাধ্যমেই। নদীপাড়ের মাঝিদের নিয়ে দুটি বই থাকলেও কর্ণফুলী নদী, তথা সমুদ্রপাড়ের জেলেদের সামগ্রিক জীবন নিয়ে বই সম্ভবত এটিই প্রথম। ঠিক কেমন লাগবে- এরকম একটা অনিশ্চয়তার দোলাচলে বইটি শুরু করলেও পৃষ্ঠা উল্টানোর সাথে সাথে সে অনিশ্চয়তা কেটে যেতে সময় নেয়নি। প্রত্যন্ত জেলেপল্লীতে বেড়ে উঠেছেন বলেই হয়তো ষাট-সত্তরের দশকের পতেঙ্গানিবাসী জেলেদের জীবনকে বেশ চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন লেখক। জেলেপল্লীতে নিজেদের মধ্যে সংঘাত, জাতভেদ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা এবং পরবর্তীতে এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট সংযোজন করার মাঝে লেখকের মুন্সিয়ানা টের পাওয়া যায়। সিংহভাগ স্থলে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার উপন্যাসটিকে বেশ সমৃদ্ধ করেছে, পাশাপাশি এর মর্মোর্থ উদ্ধারে ক্ষেত্রবিশেষে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সর্বোপরি, বেশ উপভোগ্য এবং জীবন্ত একটি উপন্যাস!
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
November 19, 2024
কসবির মতো আবার হতাশ হলাম হরিশংকর বাবুর লেখাতে। নি:সন্দেহে বইটা আমার ভালো লেগেছে।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, হরিশংকর বাবু খুব ভালো লিখেছেন। তার জীবনবোধ দারুন। তার লেখাতে সময়ের বি���িন্ন পরিক্রমায় মাটি, মানুষ, নিগৃহীত, নিপীরিত, নির্যাতিত মানুষের অসহায় হাহাকারের অনুভূতি ফুটে উঠে। তার লেখনশৈলী দারুণ লাগে।

উপন্যাস টা তারাশংকরবাবু বা বিভূতি বাবুর কাল-জয়ী উপন্যাস গুলোর মতোই খুব প্রমিসিং একটা সুচনা ছিলো। জীবনের বিভিন্ন বাঁক, ঘাত প্রতিঘাত গুলো নিয়ে উপন্যাস এগিয়ে যাচ্ছিলো দারুণভাবে। একসময় খেই হারিয়ে ফেলি অর্ধেক এগোবার পর। লেখকের আরেকটি উপন্যাস পড়বার সময় ও এমন হয়েছিলো। উপন্যাস শেষের দিকে এসে কেমন যেনো আগ্রহ কমে যায়। রিলেট করতে বিরক্তবোধ করি। এই শেষদিকের শীঘ্র সমাপ্তি টানার আগ্রাসন আমাকে আর পূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে নি।
Profile Image for Saiful Islam.
58 reviews1 follower
February 9, 2024
উত্তরবঙ্গের হয়েও দক্ষিণবঙ্গের ভাষায় লেখা বই পড়তে আমার একটুও কষ্ট হয়নি। মনে হয়েছে, আমি যেনো কিছুদিনের জন্য উত্তর পতেংগায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। বেড়াতে গিয়ে দেখে আসলাম জেলেদের দু:খ-দুর্দশা, প্রভাবশালীদের অত্যাচার আর নারীদের সম্ভ্রম হরণ।
বহুদিন পর আবেগ মাখানো একখানা বই পড়লাম। মনে থাকবে দীর্ঘ সময়...
Displaying 1 - 30 of 46 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.