"মধ্যাহ্ন অখণ্ড প্রকাশিত হল। প্রথম এবং দ্বিতীয় খন্ড যুক্ত হয়ে ‘অখণ্ড’ প্রকাশনা। পাঠকরা অনেকেই জানতে চাচ্ছেন তৃতীয় খণ্ড বলে কিছু আছে কি-না? আপাতত আমার জবাব ‘না’। তৃতীয় খণ্ড মানেই দেশভাগ, হতাশা, কষ্ট, গ্লানি এবং মৃত্যুর গাথা। এইসব লিখতে ভালো লাগে না। তারপরেও কিছুই বলা যায় না। তৃতীয় খণ্ড লিখে ফেলতেও পারি। তখন আবারো আরেকটি অখণ্ড প্রকাশিত হবে। সেখানে লেখা থাকবে ‘মধ্যাহ্ন অখণ্ড (আল্লার কসম)’ পাঠকরা যে আগ্রহ এবং মমতায় ‘মধ্যাহ্ন’ গ্রহণ করেছেন তাতে আমি অভিভূত। আমার লেখক জীবন ধন্য।"
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
এ বছরে আমার পড়া সবচেয়ে পছন্দের বই ছিল মধ্যাহ্ন৷ অ-নে-ক বছর আগে হু.আ.'র মধ্যাহ্ন-১ পড়ার পরে দ্বিতীয় খণ্ডটা আর পড়া হয়ে ওঠেনি। সেই হিসেবে মধ্যাহ্ন-২-ই ছিল তার লেখা আমার একমাত্র না পড়া বই৷ এবারে সেই পালাও ঘুঁচলো৷ বইটা যখন লেখা, ততদিনে অনেকেই তাঁর লেখার প্রতি নাক কুচকাতে শুরু করেছে৷ কিন্তু যার জন্যে বি-শা-ল একটা প্রজন্ম সাহিত্যমুখী হয়েছে, তার কলম থেকে এরকম রচনা রচিত হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই৷ মানের দিক দিয়ে হয়তো বাদশাহ নামদার কিংবা জোছনা ও জননীর গল্পের পর্যায়ে যাবে না, কিন্তু মধ্যাহ্ন লেখার আগে তাকে যে বিস্তর হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে, সেটাও লেখায় স্পষ্ট। অতিপ্রাকৃতের সাথে ইতিহাসের মেলবন্ধনটা টেনেছে সবচেয়ে বেশি৷ আবারো পড়বো।
এটা কোনো রিভিউ না। অন্তত এই বইটার রিভিউ লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। যা আমি শুরুর দিকে পড়ার সময়েই বুঝতে পেরেছিলাম। আর নিশ্চিত হলাম গতকাল পড়ে শেষ করার পর।
সাজিদ ভাই সাজেস্ট করেছিলেন বইটি। গত ৯ আগস্ট পড়া শুরু করি হুমায়ূন আহমেদের "মধ্যাহ্ন অখণ্ড"। শেষ হলো গতকাল বিকেলে, ২৯ আগস্ট। ৪০৮ পৃষ্ঠার একটি বই পড়তে সময় লেগেছে ২০ দিন। এত সময় লাগতো না। কিন্তু কয়েক পাতা পড়ি আর মোহাচ্ছন্ন হয়ে যাই৷ চলে যাই ঘোরের মাঝে। সেখান থেকে ফিরতে সময় লাগে। তবে সবসময়ই বইটা পড়ার তীব্র আকর্ষণ অনুভব করি। আবার ভয়ও লাগে৷ চিন্তা হয়, যদি দ্রুত শেষ হয়ে যায়! আমি চাইছিলাম না এটা দ্রুত শেষ হয়ে যাক৷ কিন্তু যার শুরু আছে, তার শেষও থাকে।
কেমন ছিল উপন্যাসটি? আমি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব না। বলতে পারব না অনুভূতির কথা। সম্ভব না আসলে৷ কিন্তু বাড়াবাড়ি রকম শোনালেও এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, এখন পর্যন্ত আমার জীবনে যত বই পড়েছি; তার মধ্যে এটি শ্রেষ্ঠ। এত চমৎকার বই খুব কম পড়ার সুযোগ হয়েছে।
মধ্যাহ্ন অখণ্ড-কে আমার মনে হয়েছে একটি কমপ্লিট প্যাকেজ। কী নেই এতে! সব আছে। সব বলতে সব। আমার পরিচিত যারা আছেন, যারা পড়তে ভালোবাসেন, যদি এই বইটি না পড়ে থাকেন; তাদেরকে অনুরোধ করব- প্লিজ বইটি পড়ুন। জানি না আপনার কাছে কতটুকু ভালো লাগবে, কিন্তু এমন অনবদ্য সৃষ্টি না পড়ে থাকলে দারুণ কিছু মিস করেছেন৷ সময় করে পড়ে নেবেন।
মূলত গল্প শোনার জন্যেই বইটি নিয়েছিলাম।লেখকও দেখলাম বইয়ের শুরুতেই বলছেন ইতিহাসের পটভূমিকায় গল্পই বলছি.. লেখক যে সময়কে ধরতে চেয়েছিলেন তা তিনি খুব সহজ ভাবেই ধরেছেন। সেই সময়কার মানুষের বিশ্বাস,ধর্মপ্রিতি,ধ্যান-ধারণা সবইতো মনে হয় ঠিকঠাক আছে! সাবলীল ভাবেই বয়ে গেছে পুরোটা উপন্যাস। তবে এতো গুলো চরিত্র ঠিক রাখা বোধ হয় বেশ কষ্টসাধ্য ছিল :p যাই হোক,উপন্যাসে লেখক রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,তারাসঙ্কর,বিভুতিভূষণকে নিয়েও বেশ কিছু ঘটনা বলেছেন।এগুলো সত্যি কিনা বুঝতে পারছিনা। তবে বেশ মজা পেয়েছি।
অনেকের কাছে মন্দ লাগার কারণ কী বুঝলাম না! পড়ার ধরণ বা ভাবনা আলাদা হইতে পারে সবার। তবুও এতটা অখাদ্য অনেকে বলে বেড়ায়! সাজেশন চাইছিলাম কারো কাছে। বলছিল এইটা নাকি "অখাদ্য"। পড়লে বদহজম হবে। কিন্তু আমার কাছে অখাদ্য তো লাগল না৷ উল্টা একটু বেশিই সুস্বাদু খাদ্য লাগল। আবার গিলতে হবে সময় করে এটারে। ❤️
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু
বহুকাল ধরে রিডার্স ব্লকের করাল গ্রাসে দিশেহারা এক পাঠকের নাওয়া খাওয়া বাদে বাকি সময়টুকু জুড়ে এ বইয়ের প্রতি পাতায় বুঁদ হয়ে থাকা কল্পনাতীত ভাবনাটাকে বাস্তবে দেখে হঠাৎ ই মনে পড়লো;
হুমায়ূন যদ্দিন আছেন ততদিন ঠিক না ঠিক ফিরে আসব বইয়ের পাতার সখ্যতায়। শুধু মনটাকে বাইরের বিচিত্র বাহারী নাম ভাড়ানো কতগুলো ছাইপাশ থেকে দূরে সরিয়ে হুমায়ূনের কাছে আনতে পারলেই হলো।
হুমায়ূন আহমেদের সবচে বড় গুণ ছিলো,ভদ্রলোক উনার পাঠকের রুচি বুঝতেন। খুব ভালো বুঝতেন। সে মোতাবেক কাজ ও তিনি করে গেছেন। আমি বিদগ্ধ পাঠক নই,তারপরেও কিছু জিনিস খুব চোখে লাগে আমার।
মধ্যাহ্ন লেখক লিখলেন। ঈশ্বর জানেন, লেখার সময় মাথায় কী ছিল তাঁর! উপন্যাস বানানো ঘটনা,বুঝলাম। কিন্তু আপনি যখন একটা বিশেষ সময় কে আপনার লেখায় ধরতে যাবেন,নূন্যতম সচেতনতার দরকার হয়। মন চাইলো একটা বানানো ঘটনা বসিয়ে দিলাম,তার মধ্যে কয়েকটা রঙচঙা "ইতিহাসের" কথা গুঁজে দিলাম,শেষ উপন্যাস! আদো হয় এরকম কিছু!
৪০৭ পাতার ঢাউস একটা বই। আশা নিয়ে বসছিলাম পড়তে,পড়েছিও। একবার ও হাত থেকে রাখিনি,শেষ অব্দি পড়ে দেখেছি কিছু পাই কিনা,পুরোপুরি হতাশ। হুমায়ূনের স্বভাবসুলভ কয়েকটা স্যাটায়ার ছাড়া কিচ্ছু নায়!
কারো হাতে অঢেল সময় আছে,কিভাবে নষ্ট করা যায় তার দিশা পাচ্ছেন না,তাহলে "মধ্যাহ্ন" পড়ুন। সময় দিব্যি কেটে যাবে।
১৯০৫-১৯৪৭ এই সময়ের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা নারী চরিত্রও কি ছিলোনা যার কথা উপন্যাসে উঠে আসবে?মানুষ পড়ে জানবে, চিনবে! কিছু উল্লেখযোগ্য পুরুষ চরিত্র আছে,কিন্ত নারী? যে দুএকজন গ্রাম্যনারী চরিত্রের কথা তুলে ধরেছেন ঘটনাক্রমে তাদের স্থান হয়েছে যৌনপল্লীতে। অথচ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আন্দোলনে কিংবা শিল্প সাহিত্যে নারীদের অবদান একেবারেই কম ছিলোনা। এর আগে অনেক উপন্যাসে খেয়াল করেছি,মধ্যাহ্নতেও তার ব্যতিক্রম নয়, হুমায়ূন আহমেদ একরকম নারীদের অবজ্ঞা করেই লিখে থাকেন। ১ম,২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কম যে পড়েছি তা নয়, কিন্ত সেসময়কার ভারতবর্ষে যুদ্ধের প্রভাব কেমন ছিলো কিংবা তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, হুমায়ূন আহমেদ চাইলে আরেকটু মনোযোগ দিয়েও লিখতে পারতো। ভালো লাগেনি।
বন্ধু ফাহিমের রেকোমেন্ডেশনে হুমায়ুন আহমেদের এই বইটা পড়লাম। হুমায়ুনের শেষের দিকের লেখাগুলো আমি বেশী পড়ি নি। উনি যখন “হলুদ হিমু কালো র্যাব” জাতীয় বই ল্যাখা শুরু করেন তখনি আমার মা তাঁর লেখা বই বাসায় আনা বন্ধ করে দেয়।
একটা জিনিস স্বীকার করতে হবে, তাঁর প্রথম দিকের লেখাগুলোর সাথে পরের দিকে লেখাগুলোর মান একেবারেই মিলে না। আমার সাথে যে কেই দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন। এটা তো সত্যি, একজন সাহিত্যিকের রসের ভান্ডার আস্তে আস্তে খালি হয়ে পড়ে... The well dries up… তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যকে যা কিছু দিয়েছেন, তা পরিমাপের অতীত। তাঁর মত লেখকরাই আমাদের প্রজন্মকে একটু হলেও সাহিত্যমুখী করতে পেরেছেন।
বই এর দৃশ্যপট বঙ্গভঙ্গ থেকে ভারত ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত। বইটাকে বলা যায় “জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প” এর সিক্যুয়েল আর “দেয়াল” এর প্রিক্যুয়েল। যদিও বইটির মান অন্য দুটির চেয়ে সামান্য কম(একান্তই ব্যক্তিগত মতামত)। লেখক এখানে আধিভৌতিক/অলৌকিক ব্যাপারগুলোকে একটি ঐতিহাসিক ফিকশনের সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন। আবার একজন ব্যাক্তিকে প্রথম খন্ডে দেখানো হয়েছে মদখোর বলে, কিন্তু দ্বিতীয় খন্ডে দেখানো হয়েছে মদ স্পর্শ করেন না(তিনি তখন মদ খাওয়া শুরু করলেন)। এখানে কন্সিস্টেন্সির অভাব।
তাঁর উপন্যাস/চলচিত্রে যখন আমি বাঙ্গালী গ্রামীন হিন্দু সমাজের চেহারাটা দেখি, তখন আমার নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মেলাতে পারিনা। এই উপন্যাসে তাঁর কিছুটা উন্নতি দেখতে পাই। লেখক হোমওয়ার্ক করেই মাঠে নেমেছিলেন।
যাই হোক, বাংলা সাহিত্যে হিস্টোরিকাল ফিকশনের সংখ্যা কম(বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থকে যদিও হিস্টোরিকাল ফিকশন ধরা যেতে পারে)। তাদের মধ্যে এটি স্থান করে নিয়েছে।
কোন এক আশ্চর্য কারণে আমি নিজেকে একটা ঘোরের মাঝে রাখতে পছন্দ করি। ঘোরের বিষয়বস্তু অনেকটা এমন - হুমায়ূন আহমেদের সব বই তো আমার পড়া হয়ে গেছে, আর পড়ার বাকি নেই কোনটাই! সে ইল্যুশন মাঝে মধ্যে ভাঙ্গে, আমি হঠাৎ হঠাৎ ভদ্রলোকের এমন দুই একটা বই পেয়ে যাই যা আমার পড়া ছিল না, বাকি সময়টা কাটে আমার আরেকরকম ঘোরের মাঝ দিয়ে, হুমায়ূন ঘোর!!
খুব বেশি বই এই জীবনে পড়েছি দাবী করি না তবে যে কজন লেখককেই পড়ে থাকি না কেন, তাদের কেউই এই কাজল ডাকনামের লোকটার মতন লিখতে পারে নাই, এমনকি আমার মতে, কাছাকাছিও আসতে পারে নাই। (এমন বাজারি লেখককে এরূপ উচ্চস্থানে বসিয়ে ফেলছি দেখে কেউ তেড়ে আসতে পারেন, অন্তত অতীতে এসেছেন, তারা দয়া করে শান্ত হোন। অন্য কাউকে হুমায়ূনের উপরে স্থান দিতে পারি নাই এইটা আমার ব্যর্থতা, সেই অন্য লেখকের না!)
বহু চেস্টা করেছি, ৪০০+ পৃষ্ঠার এই বইটি ধীরে সুস্থে পড়তে। সেজন্য শুধুমাত্র অফিস যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে ছাড়া অন্য কোন সময় পড়িনি। তবে হুমায়ূন আহমেদ ধীরে পড়া যায় না, (যিনি বুলেট ট্রেন আবিষ্কার করেছিলেন খুব সম্ভব হুমায়ুনের কোন এক বই পড়েই তিনি গতি সম্পর্কে আইডিয়া করেছিলেন!) এত আস্তে পড়েও খুব একটা লাভ হয়নি, ৪ দিনের মাথায় বই শেষ। কেমন ফাঁকা লাগছে ভেতরটা এখন, হরিচরণ বাবু, শশী মাস্টার, লাবুস, জুলেখা, ইমাম ইদ্রিস (একজন মনেপ্রাণে মুসলিম ইমাম সাহেবকে দিয়ে এমন ছবি আঁকানো বুঝি শুধু এই লেখকের পক্ষেই সম্ভব!), ধনু শেখ, শশাংক পাল, জুলেখা, অম্বিকা, শরীফা এদেরকে মনে হয় চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছি! উনিশশ সালের শুরুর দিককার পটভূমিতে লেখা এই বইয়ে লেখক একই সাথে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তারাশংকর, বিভূতিভূষণ, জয়নুল আবেদিন থেকে শুরু করে আইনস্টাইন, মাদাম কুরি, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র এমনকি হিটলার মুসোলিনিদেরকেও এক সুতোয় গেঁথেছেন।
চারশ পৃষ্ঠার এই বই, সংজ্ঞানুসারে উপন্যাস। কিন্তু অন্য কোন এক ক্যাটাগরির সাথে এই বইটা খুব চমৎকার মিলে যায় - "অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করিয়া মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ!"
"জগত রহস্যময়" - শব্দদুটো লেখকের অসম্ভব প্রিয় ছিল। কোন এক রহস্যময় জগতেই এখন উনার বাস। কে জানে, হয়ত সেই জগতকে তিনি হুমায়ূন সাহিত্য দিয়ে মোহবিষ্ট করে ফেলেছেন ইতোমধ্যেই। তা করতেই পারেন, জগত যে রহস্যময়!!
মধ্যাহ্ন: দীর্ঘ ৪২ বছরের ইতিহাস আশ্রিত একটি উপন্যাস হুমায়ূন আহমেদের লেখা মধ্যাহ্ন ( অন্যপ্রকাশ ,২০০৭ ও ২০০৮ ) উপন্যাসটি বাংলাদেশের সাহিত্যের একটি অন্যতম প্রধান উপন্যাস | আমার পড়া হুমায়ূন আহমেদের লেখা সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাসের তালিকাতে মধ্যাহ্ন উপন্যাসটিকেও স্থান দিয়েছি | আর ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসটিকে কেন আমি এত ভালো বলছি টা আপনি এই বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন |মধ্যাহ্ন উপন্যাসটি শুরু হয়েছে ১৯০৫ সালে এবং পরিসমাপ্তি ঘটেছে ১৯৪৭ এর ভারতবিভাগের মাধ্যমে | এই উপন্যাস ছাড়া আর কোনো উপন্যাসে এই দীর্ঘ ৪২ বছরের ইতিহাস আমি ধারাবাহিকভাবে পড়িনি | উপন্যাসটি যে সম্পূর্ণ ইতিহাস দিয়ে পরিপূর্ণ তা কিন্তু নয় বরং কল্পকাহিনীকেও উপন্যাসে সম্বনিত করা হয়েছে | হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন যে, “ মধ্যাহ্নে ইতিহাস আছে ঐতিহাসিকতা নেই |” মধ্যাহ্ন একটি বহুকেন্দ্রিক বই, যা দ্বারা লেখক কয়েকটি সমসাময়িক ঘটনার উপর বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন | ঐতিহাসিক পটভূমিটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার বান্ধবপুর নামের একটি হিন্দু গ্রামে | পুরো উপন্যাস জুড়েই রয়েছে কিছু কাল্পনিক এবং সত্য চরিত্র | চরিত্র গুলোর মধ্যে আছে - সৎ,ন্যায়পরায়ণ ,ধনী এবং অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হরিচরণ , মসজিদের তিনজন ইমাম- ইদ্রিস, করিম ও নিয়ামত , উপন্যাসে আরো আছে লোভী ও ঠক ধনু শেখ , মনিশঙ্কর ও তার পুত্র শিবশঙ্কর , কাঠমিস্ত্রী সুলেমান, রুপবতী জুলেখা, জুলেখার পুত্র জহির ওরফে লাবুস , লাবুসের বোন মীরা, ইমাম করিমের স্ত্রী শরিফা , ধনু শেখের কন্যা আতর , জমিদার শশাঙ্ক পাল, যমুনা ও তার স্বামী সুরেনসহ আরো অনেকে | এছাড়াও হরিচরণের কন্যা শিউলী, যে অনুপস্থিত থেকেও উপন্যাসে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা | এসব চরিত্রের দৈনন্দিন জীবনের মাধ্যমেই লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন ১৯০৫ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সমাজের নানারকম কুসংস্কার , কুপ্রথা, অজ্ঞতা, ধর্মান্ধতা , সংস্কৃতি , রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা, মানুষের মানসিকতা ইত্যাদি| যেমনঃ হরিচরণ মুসলিম একটি শিশুকে আদর করায় এবং ঠাকুরঘরে নিয়ে যাওয়ায় সমাজ চ্যুত হয়েছেন, যা কুসংস্কার এবং ধর্ম বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করে |দরিদ্র অথচ চতুর ও কুটিল বুদ্ধিসম্পন্ন ধনু শেখ হঠাৎ করে ক্ষমতাবান হয়ে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে এবং বিভিন্ন খারাপ কাজ করে | যেমনঃ বিপ্লবী জীবনলাল কে ছদ্মবেশে বান্ধবপুর গ্রামে লুকাতে এলে সে পুলিশকে তার খোঁজ দিয়ে দেয় এবং পরে ধনু শেখ ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে 'খান সাহেব' টাইটেল পায় | তারপর হরিচরণ মারা যাওয়ার আগে তার সকল সম্পত্তি একজনকে দিয়ে গেলেও ধনু শেখ সে সম্পত্তি দখল করে রাখে ইত্যাদি আরো অনেক কাজ করে যা পড়লে পাঠকরা ধনু শেখ নামক চরিত্রটাকে ঘৃণা করবে আর মনে হবে যে, মানুষ কীভাবে এত খারাপ হতে পারে? তারপর জুলেখার তার স্বামীর সাথে তালাক হওয়ার পর রঙিলা নটিবাড়িতে ( বেশ্যাপল্লীতে) স্থান নেয়, বাপের বাড়ি না যেয়ে | যা মানুষের জটিল ও রহস্যময়ী মানসিকতাকে নির্দেশ করে | সেসময়কার হিন্দু ও মুসলিমের ভিতরে নানারকম কুসংস্কার ছিলো, যেমনঃ তৎকালীন হিন্দুরা মুসলিমদের দেখতে পারতো না আর তাদের মতে জাতভেদে ব্রাহ্মণ এর অবস্থান সবার উপরে আর শূদ্রের স্থান সবার নিচে এবং মুসলিমের স্থান তো শূদ্রের ও নিচে | কোনো মুসলিম যদি কোনো হিন্দু মানুষের মিষ্টির দোকান�� যায় আর মিষ্টি যদি স্পর্শ ও না করে তাও সব মিষ্টি ফেলে দিবে এবং নতুন করে মিষ্টি বানানো শুরু করবে | মুসলিমদের বিয়ের সময় কনের বাড়ি থেকে একজন দাসী পাঠানো হতো | কনের স্বামী সে দাসীর ও সঙ্গভোগ করতে পারতো এবং দাসীর গর্ভের সন্তান কোনো সম্পত্তির ভাগ পাবে না, সেই সন্তানকেও দাস / দাসী হয়ে থাকতে হবে | উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় ইতিহাসের অনেক ব্যাক্তির বিভিন্ন কাজ বা অবদান তুলে ধরা হয়েছে | কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, হিটলার, মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক, নেতাজী সুভাশচন্দ্র বোস, কিরণ গোস্বামী ,আইন্সটাইন, মাদাম কুরি সহ আরো অনেকে | তিনি এসকল মানুষকে এক সুতোয় গেঁথেছেন , যা আমার মনে হয় না যে অন্য কোনো লেখক এখন পর্যন্ত করতে পেরেছেন | মধ্যাহ্ন বইটি প্রথমে দুইটি খণ্ড আকারে বের হয়েছিল এবং পরে এই দুইটি খণ্ড একত্র করে মধ্যাহ্ন অখণ্ড নামে আবার প্রকাশিত হয় | মোট ৪৭৯ পৃষ্ঠা জুড়ে উপন্যাসটিতে ফুটে উঠেছে ঔপনিবেশিক শাসনামলের বাঙ্গালির ইতিহাস- ঐতিহ্য , শিল্প- সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বর্ণনা আছে বঙ্গভঙ্গ , হিন্দু-মুসলিমের দাঙ্গা, অসহযোগ আন্দোলন , খিলাফত, কংগ্রেস , ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ আর ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের সময়কালে মানুষের জীবনযাত্রা বানধবপুর গ্রামের কিছু মানুষের জীবনের মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন | ধর্মীয় গোড়ামির বিষয়ে অসাধারণ কিছু যুক্তিও লেখক তার চরিত্রগুলোর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন | কেউ আবার ভাববেন না যে এটি ইতিহাসের বই | হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “আমি ঐতিহাসিক না, গল্পকার | আমার প্রথম ও শেষ ঝোঁক গল্প বলার দিকে, তবে ইতিহাস থেকে যতটুকু না আনলেই নয় তা এনেছি |” সুতরাং বইটি পড়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করলাম | আর ইতিহাসের যে অংশগুলো বইয়ে লেখক তুলে ধরেছেন তার রেফারেন্স ও দেয়া আছে , চাইলে দেখে নিতে পারবেন | যদি আপনি এমন একটি বই খুঁজছেন যেখানে ভারত বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত সমস্ত তথ্য থাকে, তবে এই বইটি আপনার জন্য উপযুক্ত কারণ এতে ১৯০৫-১৯৪৭ এর সমস্ত তথ্য এবং সেই সঙ্গে একটি কাল্পনিক গল্প ও আছে তাই বইটি পড়ার সময় আপনার কোনো বিরক্ত লাগবে না কারণ বইটিতে সকল তথ্য সহজ ভাষায় লেখা আছে সমাজ সাবজেক্টের মতো বিরক্তিকরভাবে লেখা নেই |
" রাত অনেক হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার। অসংখ্য তারা উঠেছে। পুকুরঘাটে বসে লাবুস তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। তার চোখে মুগ্ধ বিস্ময়। কী বিপুল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড! মানুষের বাস তার ক্ষুদ্র এক গ্রহে। না জানি অন্য গ্রহগুলিতে কী আছে। কী তাদের রহস্য।"
ইংরেজ শাসন আমলের ১৯০৫ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পূর্বের সময়কাল হচ্ছে মধ্যাহ্ন উপন্যাসের প্রেক্ষাপট৷ বান্ধবপুর নামক কাল্পনিক এক গ্রামের সকল শ্রেণির ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে কথা বলা হয়েছিলো পুরো উপন্যাস জুড়ে। এরই পাশাপাশি প্রথম বিশ্বযু*দ্ধের সময়কালের কেন্দ্রীয় দেশগুলোর সামরিক বাহিনী কিংবা ওই সময়কার বিশিষ্টজনদের নানান কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি তুলে ধরা হয়েছিলো স্বল্প পরিসরে।
পাঠ অভিজ্ঞতাঃ
মধ্যাহ্ন অখন্ড যখন আমি সংগ্রহ করেছিলাম তখন একটাই দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো বইটা পড়বো! নাকি পড়বো না! এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মূল বিষয় হলো শেষ হয়ে যাবার ভয়। হ্যাঁ শেষ করার ভয় থেকেই এতোদিন বইটা পড়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি। অবশেষে দেনামোনা ভুলে চোপর দিন বইটা নিয়ে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম। নিশ্চিন্তপুরের একটা গ্রামকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু রাখা হয়েছিলো। পড়ার সময় নিজেকে নিশ্চিন্তপুরের স্থায়ী বাসিন্দা মনে হচ্ছিলো বেশভাবে। চরিত্র গুলো কতটা যে প্রণবন্ত ছিলো তা হয়তো একজীবনেও আমার স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। হরিচরণ, মাওলানা ইদরিস, ইমাম করিম, ধনু শেখ, জহির (পরবর্তীতে লাবুস), হাদিস উদ্দিন, শশী মাস্টার, জীবনলাল, শশাংক পাল, মনিশংকর, শীবশংকর, শ্রীনাথ, শরীফা, আতর, যমুনা, মীরা, জুলেখা এসব চরিত্র গুলোর পাশাপাশি ওই সময়কার সেরা সব মানুষদের সাথে গল্পের জাদুকর তার পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যেপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যেপাধ্যায়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সহ আরো নানান সম্মানিত গুনীজন।
একটা জিনিস আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে ছিলো আর তা হচ্ছে: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যেপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যেপাধ্যায়, জয়নুল আবেদিনরা কী অবলীলাতেই না উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন, মাটির মানুষের মতো মিশে গিয়েছিলেন।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে গল্পকারের হিউমারগুলো। চরিত্র গুলো যখন একে অপরের সাথে কথা বলে তখন কিছু সময় খিলখিল করে হেসেছিলাম, কখনোবা তীব্র মন খারাপ এসে ভীড় করেছিলো অজান্তেই। স্যারের প্রায় সব বইতেই বোধহয় বিশেষভাবে হিউমারগুলো উপজীব্য থাকে।
খাবারের বর্ণনাগুলো আমাকে ভীষণ পীড়া দিয়েছিলো। যখন মধ্যরাতে বাসার সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন; এইসময় থেকে থেকে আমি যখন খাবারের বর্ণনা গুলো পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছে এইসব খাবার এই নিশিরাতে বানিয়ে না খেলে হয়তো জীবনের সাড়ে ষোলো আনাই বৃথা যাবে! মুখরোচক খাবার সাথে হাল্কা আঁচে চুলোয় রান্না করা রসদগুলো পাঠককে সত্যিই ক্ষুধার্থ বানিয়ে দিবে।
বইটা শেষ হওয়ার ভয় ছিলো। অথচ; শেষ হয়ে গেলো! গভীর এক শোক কিংবা বিষন্নতা আমাকে ভীষণ ভাবে জেঁকে ধরেছে তা আমি খুব করে টের পাচ্ছি।
পুনশ্চঃ এটা কোন রিভিউ না। এই বইয়ের রিভিউ দেওয়ার যোগ্য আমি না। যতটুক অনুভূতি হয়েছে বইটা পড়ার পর, তা লিখতে পারার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে গিয়েছি মাত্র।
"জগতের সবচেয়ে সহজ রান্না খিচুড়ি। হাতের কাছে যা আছে সব হাঁড়িতে দিয়ে জ্বাল। একটু নুন, দুইএকটা কাঁচামরিচ৷ ব্যস।আর সবচেয়ে কঠিন রান্না ভাত।ঝরঝরা নরম ভাত রান্না করা বরই কঠিন।একটু জ্বাল বেশি হলে ভাত গলগলা।জ্বাল কম ভাত শক্ত চাল"__ মধ্যাহ্ন
হরিচরণ, জহির,মীরা, জুলেখা, সুলায়মান, শশাংক সবাই বিশেষ কেউ না। আবার এরা প্রত্যেকেই যেনো এক একটা ঘোর৷ কখনও এরা প্রকৃতি থেকে দূরে আবার কখনও প্রকৃতির মাঝেই নিজেদের অনন্য করে রেখেছেন৷ মধ্যাহ্ন পড়তে গিয়ে প্রায়ই মনে হবে ভৌতিকতার কুয়োয় এসে পড়েছি! তখনই মনে হবে এখন একজন শুভ্র কিংবা মিসির আলীর দরকার ছিলো৷ আবার খানিকবাদেই মনে হবে সবকিছুতে যুক্তি খুঁজতে যাওয়াটা নেহাত বোকামি। অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তিতেই প্রকৃত সৌন্দর্য৷
শহুরে কিংবা গ্রামীণ যেই পরিবেশই হোক একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে হুমায়ুন আহমেদ একই ফর্মুলা ব্যবহার করছেন সর্বত্র।তব�� উনার ডালপালা ছড়ানোর ভিন্নতার জন্য মনে হয় একদম নতুন কিছু পড়ছি। ব্যাপারটা অনেকটা আলু দিয়ে একবার চর্চ্চড়ি, একবার মাংস ভুনা করার পর আরেকবার গুরুত্ব বাড়িয়ে আলুর দম রান্না করার মতো৷ আরেকটি বিষয় হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের লেখায় একটা মাদকতা আছে! এজন্য উনার সেক্সিষ্ট দিকগুলো বেশিরভাগ সময়ই দৃষ্টিগোচর হয় না।বরং ঐ জায়গাগুলোতেই আপনি জোরে হেসে উঠবেন। কোনো কিছু একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত যেনো শান্তি নেই। মাথা থেকে কোনো ভাবেই ঐ বইয়ের চিন্তাকে দূরে সরানো যায় না৷ এইখানেই লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্বার্থকতা। হি নোজ হাউ টু এনগেজ উঈথ ক্রাউড।
বাংলা সাহিত্যের সেরা ১০টি উপন্যাস লিখে ইউটিউবে সার্চ করেছিলাম; সেখানে যে র্যাংকিং করা হয়েছে তাতে মধ্যাহ্ন এর অবস্থান ছিল পঞ্চম। যদিও এই র্যাংকিং কোনো যুক্তিতেই আমার কাছে যথার্থ মনে হয়নি।
উপন্যাসটির দুই খণ্ড শেষ করতে আমার পাঁচদিন লেগেছিল। আমার মনে হচ্ছে পাঁচ দিনের জন্য আমি বান্ধবপুর গ্রামে ট্যুরে গিয়েছিলাম। সেই গ্রামের প্রতিটি জায়গা আমার চেনা, তিন বটের মাথা, জুম্মা ঘর, বট কালী মন্দির, রঙ্গিলা বাড়ি, গ্রামের পাশের জঙ্গল, হরি চন্দ্রের শ্বেত পাথরে বাঁধানো দিঘির ঘাটলা , লঞ্চঘাট—সবকিছুতেই যেন আমার উপস্থিতি ছিল। এই পাঁচ দিনে হরিচন্দ্র, লাবুস / জহির, মাওলানা ইদ্রিস এবং পর্যায়ক্রমে আসা তিন মাওলানা, জুলেখা, ধনু শেখ, তার মেয়ে আতর, শশাঙ্ক, দুই বিপ্লবী মাস্টার—ছাড়াও যারা আছে সবাই আমার পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ।
বান্ধবপুরের বদ মানুষগুলোর প্রতি আমার মনে যেমন রাগ আর ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে, তেমনি হরিচন্দ্র, লাবুস, মাওলানা ইদ্রিসের মতো চরিত্রগুলোর প্রতি গড়ে উঠেছে গভীর শ্রদ্ধা। তারা যেন একেকটি আদর্শ প্রতীক, যারা আলো ছড়িয়ে ম্লান সমাজটিকে উজ্জ্বল করে তুলেছে।
এত বড় উপন্যাসের এত চরিত্র নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। তবে এটুকু বলতে পারি—যদি কোনো দিন সময় মেলে আর যদি বাংলার ১৯০৫ থেকে ১৯৪৩ সালের সেই বঙ্গদেশের গ্রামীণ জীবনকে একদম বাস্তবভাবে অনুভব করতে চান, তাহলে মধ্যাহ্ন পড়ে দেখা আবশ্যক।
যেহেতু বইটা একটা ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’ আমার শুরু করা উচিত ছিল গল্প সংক্ষেপ দিয়ে কিন্তু বইটা এমন এক বিস্তৃত পটভূমিতে লেখা যে এই বইটার কোনো গল্প সংক্ষেপ লেখা সম্ভব না। সহজভাবে বললে বইটা বিংশ শতকের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গ থেকে ১৯৪৭ এর দেশভাগের ঘটনার আলোকে লিখিত। আর এই লেখাটি ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা অঞ্চলের বান্ধবপুর নামক এক গ্রামের মধ্যেই মূলত সীমাবদ্ধ। কিন্তু যেহেতু বইটা ইতিহাসকে আশ্রয় করেছে এবং উত্তাল সময়ে কোনো অঞ্চলই উত্তাপের বাইরে থাকতে পারে না তাই বইটিতে বান্ধবপুরের পাশাপাশি উঠে এসেছে তৎকালীন ভারতীয় এবং বিশ্ব রাজনীতির উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, বলতে গেলে আমি হতাশই হয়েছি। লেখকের মধ্যাহ্ন, মাতাল হাওয়া আর জোছনা ও জননীর গল্পকে যেভাবে এতদিন ইতিহাসের বয়ান বলে জেনে এসেছি তার এক শতাংশও আমি পাইনি বইটা থেকে। তাই আমি মনে করি বইটাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস তো বলা যায়ই না ইতিহাসআশ্রিত উপন্যাস বললেও একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যায়। আমার মতে বইটাকে বলা যেতে পারে, বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধাংশের সাধারণ মানুষের জীবনের চিত্ররূপ অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি বইটাতে লেখক একটা সময়কে ধরতে চেয়েছেন যেখানে ঐ সময়ের ইতিহাস যতটা না প্রাধান্য পেয়েছে তার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। খুব সম্ভবত লেখক বা বইটার কোনো এক সমালোচকের মন্তব্য এখানে বেশ প্রাসঙ্গিক, ‘ মধ্যাহ্নে ইতিহাস আছে, ঐতিহাসিকতা নেই।‘ আর ইতিহাসও কতটা আছে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ!
বইটি কি, কেন, কিভাবে এই আলোচনা দূরে রেখে যদি বইয়ের কাহিনীর দিকে দৃষ্টি দিই তাহলে এটা যে বেশ ভালো একটা সামাজিক বয়ান তা বলতেই হয়। বান্ধবপুর গ্রাম, এর মানুষ, জীবনযাত্রা, প্রথা, বিশ্বাসের পাশাপাশি এর অধিবাসীদের প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদের এক অপূর্ব গাঁথা বইটি। চার শতাধিক পৃষ্ঠার বইটাতে তাই আমরা পাই অসংখ্য চরিত্র ; কেউ অদ্ভূত, কেউ নিষ্ঠুর, কেউ রহস্যময়, কেউ হিংস্র, কেউ নিতান্তই সহজ সরল। জাত-পাত আর গ্রাম্য রাজনীতির শিকার হয়ে মানুষের কি অধঃপতনই না আমরা দেখতে পাই বইয়ের একটা বড় অংশ জুড়ে, আবার অন্যদিকে দেখি ক্ষমতার দাপটের অপূর্ব বয়ান। ধনু শেখের নিষ্ঠুরতা, হরিচরণের ভালোবাসা, লাবুস বা জহিরের রহস্যময়তা, জুলেখা বা শরিফার অসহায়ত্ব, ইদরিসের সরলতা, এককড়ির কৌশল, শশীর বিপ্লব, আতরের প্রেম সবই পাওয়া যায় বইটিতে। আবার এর পাশাপাশি উঠে আসে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, গান্ধি, জিন্নাহ বা হিটলারের কথা, তাইতো বইটাকে নিছক এক সমাজের গল্প বলতে ভাবতে হয় দু'বার। আর এর পাশাপাশি লেখকের স্বভাবসুলভ ছোট ছোট সরল বাক্যের দুর্দান্ত গতি তো আছেই। তাই যদি গল্পের আড়ালে ইতিহাসের দু-একটা কথা শোনার ইচ্ছা হয়, তাহলে বসতে পারেন হুমায়ূনের এই বইটার সাথে। খবরদার, ভুলেও বইয়ে ইতিহাস খুঁজতে যাবেন না, আর যদি গিয়ে ব্যর্থ হন সে দায় একান্তই আপনার নিজের!
"মানব জাতি অপেক্ষা পছন্দ করে না। তারপরও তাকে সবসময় অপেক্ষা করতে হয়। ভালবাসার জন্যে অপেক্ষা, ঘৃনার জন্যে অপেক্ষা, মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা, আবার মুক্তির জন্যে অপেক্ষা।"
অনেকের মতে মধ্যাহ্ন, মাতাল হাওয়া, জোছনা ও জননীর গল্প, লেখকের ট্রিলজি উপন্যাস। সেই দিক বিচারে "মধ্যাহ্ন" লেখকের ট্রলজির একটি উপন্যাস। এর কাহিনী শুরু হয় বান্ধবপুর নমের একটি গ্রামের মানুষের জীবনের কাহিনীকে ঘিরে। যেখানে বেশীর ভাগ মানুষ হিন্দু, অল্প কয়েক ঘর মুসলমানের বাস। একই গায়ে বাস করা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জীবনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা একসাথে যুক্ত করেছেন লেখক। এখানে মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় হলেও অভাব ও পারিপার্শ্বিক ঘটনা নিমেষে তা শিথীল করে দেয়। এ উপন্যসের কাহিনী মূলত প্রথম ও দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার ও দেশ বিভাগের পূর্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিত্তিক। সেই সময়টা ছিলো অবিভক্ত ভারতের সাথে ইংরেজদের একটা সংঘর্সের সময়। রাজনৈতিক চরিত্র ও ঘটনারর সাথে ন��জের কল্পনা মিশিয়ে চিত্রায়িত করেছেন।সেই সাথে সেই সময়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সেই সময়ের বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী এক সাথে গেথে দিয়েছেন সুশৃঙ্খল ভাবে। রাজনৈতিক ঘটনা, বিশ্বের বুকে ঘটে যাওয়া নিশ্বংস সব ঘটনা, একই সাথে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে, সেই সময়ের কিছু বাস্তব চরিত্র এবং তার সাথে লেখকের কিছু কল্পনার চরিত্র ও কাহিনীর মাধ্যমে সমসাময়িক ভাবধারায় উপস্থাপন করেছেন। এউপন্যাসের কিছু চরিত্র:- হরিচরন, মওলানা ইদরিস, শশাংক পাল, শশী মাস্টার, জুলেখা, জীবনলাল,ধনু শেখ, যমুনা, লাবুস, শরিফা, ইমাম করিম, শিব সংকর, শ্রীনাথ, মনিশংকর,আতর। এছাড়াও অনেক বিছিন্ন চরিত্র। উপন্যাসের প্রতিটি ঘটনা অবিভুত করেছে। ভালবাসা, বিচ্ছেদ,, মায়া, গ্রাম্য রাজনীতি, ধর্ম, দ্বন্দ্ব সংঘাত সব মিলিয়ে 'বাহ্' টাইপের সুন্দর।সাধারন জীবনের গল্প, অতি নিম্ন স্তরের মানুষের জীবনের গল্পগুলো অসম্ভব সুন্দর ভাবপ ফুটিয়ে তুলেছেন। তাছাড়া অসম্ভব ভালো লাগার বিষয়টি হলো সেই সময়কার বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্পির বিছিন্ন সত্য ঘটনা গুলো লেখক তাঁর কাহিনীর সাথে যোগ করেছেন যা মনকে ছুয়ে গেছে।।
তুমি জ্যোতির জ্যোতি, আমি অন্ধ আঁধারে তুমি মুক্ত মহীয়ান, আমি মগ্ন পাথারে। তুমি অন্তহীন, আমি ক্ষুদ্র দীন, কি অপূর্ব মিলন তোমায় আমায়। --- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হুমায়ুন আহমেদ এর মধ্যাহ্ন উপন্যাসের অখন্ড সংস্করনের ফ্লাপ শুরু হয়েছে উপরোক্ত রবি বাবুর চরন দিয়ে। 'মধ্যাহ্ন' হুমায়ুন আহমেদ এর একটি অনবদ্য হিস্টোরিকাল ফিকশান। সাথে আছে তার প্রিয় আধিভৌতিকতা। অনেকটা খিচুরি কে আরো টেস্টি করার জন্য যেমন থাকে আঁচার।
মধ্যাহ্ন উপন্যাসের পটভূমি আবর্তিত হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে দেশ ভাগের প্রস্তুতির সময় পর্যন্ত তৎকালীন বাংলায়। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনকে ক্যানভাস বানিয়ে তিনি একছেন সমগ্র বাংলার জীবন চিত্র। বিভিন্ন রঙের ব্যাবহারে জীবন্ত করে তুলেছেন সময়টাকে। ভালবাসা, ঘৃণা, স্বার্থপরতা, বিস্বাসঘাতকতা, সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মভীতি, ধর্ম ব্যাবসা সব রকমের সহজাত মনুষ্য প্রবৃত্তি স্থান পেয়েছে লেখকের তুলির আঁচরে।
প্রচুর কাল্পনিক চরিত্রের পাশাপাশি লেখক অনেক বাস্তব চরিত্রকে এনে হাজির করেছেন 'মধ্যাহ্ন" উপন্যাসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর, বিভুতিভূষণ, নজরুল, জয়নুল আবেদীন কে আপনি পাবেন ক্যামিও চরিত্রে। তাদেরকে উপন্যাসের অংশ করে তুলেছেন লেখক দারুন দক্ষতায়।
'মধ্যাহ্ন' শেষ হয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে কেন লেখক আরো লিখলেন না, হাজার খানেক পৃষ্ঠা লিখতেই পারতেন আরো।
আবার পড়লাম। এটার প্রতিক্রিয়ার জন্য বই থেকেই উদ্ধৃতি দিয়ে দিলাম। আজকাল নিজে থেকে কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা।
“- সব পশু আদর বুঝে। মানুষের চাইতে বেশি বুঝে। - মানুষ কম বুঝে? - জে কর্তা - মানুষ কম বুঝে কেন? - মানুষরে আদর করলে মানুষ ভাবে আদরের পেছনে স্বার্থ আছে। পশু স্বার্থ বুঝে না।”
ভালো বই, ধইরা রাখে। সম্ভবত এক সময় হুমায়ূন আহমেদ চাইছিলেন সুনীলের মতো দীর্ঘ উপন্যাস লিখবেন কিন্তু অতো দীর্ঘ আর সম্ভব হয় নাই। স্টিল, ভালো। লাবুসের মায়েরে ভোলা যায় না।
আমি বহু বছর পর হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখা পড়লাম। এই বইটি এতদিন পর কেন পড়েছি সেটা আসলে নিজেও জানিনা। দুই খন্ডের মধ্যাহ্ন আমি পড়ে গেছি টানা। এমনভাবে পুরো উপন্যাসটি আমাকে ধরে রেখেছে। প্রতিটা চরিত্র, তাদের ডেভেলপমেন্ট ছিলো অসাধারণ। আপনার হয়তো একবার মনে হবে এমন কেন হচ্ছে, পরমুহূর্তেই আপনি পছন্দ করে ফেলবেন চরিত্র গুলোকে। এই বইয়ে সব আছে। ইতিহাস, সমাজ, ধর্ম, ধর্মীয় গোঁড়ামি, প্রেম। সেই উনিশ শতকের দিকের ইতিহাসের সাথে এমন ভাবে জুড়ে দেয়া পুরো প্লট যে আপনার কাছে মনে হবে, প্রতিটা ঘটনাই বোধহয় সত্য। এসেছে ইতিহাসের সত্যি অনেক চরিত্র। খুব খুব ভালো লাগলো বইটি ।
বইটার জায়গায় জায়গায় বুকটা হু হু করে উঠে। ক্লাস ৬ থেকে ৮-৯ পর্যন্ত ইতিহাস পাঠের যেই কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তার বদলে এমন কিছু পেলে বাকি ইতিহাসটুকু নিজেই খুজে পেতে জেনে নিতাম।
যেরকম সুনাম শুনেছিলাম পড়তে বসে সেরকম ভাল মনে হয়নি। গল্পের গাঁথুনিও দুর্বল। তারপরও ৪ তারকা দেওয়ার কারণ এই গল্পে হিন্দু মুসলিম ভণ্ডগুলার চেহারা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। সাথে স্বভাবসুলভ হূমায়নী লেখার ধাঁচ তো ছিলই। গল্পের শুরু ১৯০০ এর প্রথম দিকে শুরু হয়ে শেষ হয় দেশভাগ দিয়ে। রাজনৈতিক বা ইতিহাস না নিয়ে একে তখনকার লোকজনের সামাজিক ঘটনাবলীর একটা বিশ্লেষণ বলাই ভাল। তবে হরিচরণ, লাবুস(জহির), মাওলানা ইদরিসকে সবারই ভাল লাগবে।
বান্ধবপুর নামের একটা গ্রামের কিছু মানুষকে কেন্দ্র করে "মধ্যাহ্ন" এর গল্প যাত্রা শুরু করেছে। হরিচরণ, জুলেখা, মওলানা ইদরিস, জহির, শশী মাস্টার, ইমাম করিম, শরিফা, ধনু শেখ, শশাঙ্ক পাল, শিবশংকর সহ আরও ছোট বড় অনেক চরিত্র নিয়ে প্লট সাজিয়েছেন লেখক। এই মানুষ গুলোর জীবনের গল্পের ফাঁকে ফাঁকে উঠে এসেছে তৎকালীন রাজনীতি ও সমাজের বাস্তব চিত্র এবং মনস্তত্ত্ব। এই ছোট-বড় চরিত্র গুলোই পরবর্তীতে বিখ্যাত সব মানুষের সাক্ষাৎ পাবে এবং জড়িয়ে পড়বে ইতিহাসের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নুল আবেদীন সহ পরিচিত স্বজনদের চিত্র ধরা দেবে পাঠকের সামনে ভিন্ন রূপে - ভিন্ন স্বাদে। বান্ধবপুরের মানুষদের জীবনের একান্ত অভ্যন্তরীণ নীতি-রাজনীতির নগ্নদিকের পাশাপাশি ভারতীয় রাজনীতিকে ছাড়িয়ে ছুঁয়ে যাবে বিশ্বরাজনীতির তটরেখা!
হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসেও ওনার চিরাচরিত লেখার ছাপ স্পষ্ট। চরিত্রগুলোর মাঝে সংলাপের ঘাত-প্রতিঘাত, মধ্য-নিম্নবিত্ত জীবন, কিছুটা পাগলামি, উড়নচণ্ডী মনোভ���ব, একই বর্ণনাশৈলী সবই দৃশ্যমান। একই সাথে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-গাঙ-হাওড় নিয়ে একই রকম ধাচ.... সবমিলিয়ে অসাধারণ—🌸🤍
মোটামুটি ভালোই লাগছে। অনেকের কাছেই হুমায়ুনের সেরা লেখা গল্প, তবে আমার তেমন মনে হয় নাই। আসলে সত্যি বলতে শুরুতে আগাতেই পারতেছিলাম না। পরে অবশ্য বেশ দ্রুতই শেষ করি।
তবে এই বইয়ের চরিত্রায়ন দারুণ ছিলো। প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্রেরই নিজস্বতা আছে, একজন আরেকজনের থেকে পুরাপুরি ভিন্ন। যার যার জায়গায় সব চরিত্র দারুণ, সেটা ভালো বা খারাপ যেমনই হোক।