Jump to ratings and reviews
Rate this book

অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী

Rate this book
সত্য কল্পকাহিনীর চাইতে আশ্চর্যতরো। এটা আপ্তবাক্য। যে কাহিনীর মূলে সত্যের স্পর্শ নেই, সে কাহিনী মূল্যহীন। নর-নারীর প্রেম হলো সবচাইতে জটিলতম শিল্পকর্ম। প্রেমজ একটি অঙ্গীকার না থাকলে প্রেমের কাহিনী বয়ান করা যায় না। আহমদ ছফা অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী উপন্যাসের প্রথম খন্ডটিতে প্রেমজ অঙ্গীকার নিয়েই প্রেমের কথা বলেছেন।

প্রেমে পড়ার জন্য যেমন সঙ, একনিষ্ঠ হৃদয়বৃত্তির প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন প্রেম কথা বয়ান করার জন্য আরেক ধরনের নিষ্ঠা এবং সততার। শক্তির সঙ্গে সততার সম্মিলন সচরাচর ঘটে না। আহমদ ছফা এই অনুপম রচনাটিতে সেই আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন।

অসাধারণ লিপি-কুশল লেখকের এই ধ্রুপদধর্মী উপন্যাসটিতে মানব-মানবীর প্রেম যে এ নতুনতরো ব্যঞ্জনায় দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দ্বিতীয় খন্ড অপ্রকাশিত।

125 pages, Hardcover

First published January 1, 1996

76 people are currently reading
1213 people want to read

About the author

Ahmed Sofa

71 books596 followers
Ahmed Sofa (Bangla: আহমদ ছফা) was a well-known Bangladeshi philosopher, poet, novelist, writer, critic, translator. Sofa was renowned for his intellectual righteousness as well as his holistic approach to the understanding of social dynamics and international politics. His career as a writer began in the 1960s. He never married. On 28 July 2001, Ahmed Sofa died in a hospital in Dhaka. He was buried in Martyred Intellectuals' Graveyard.

Sofa helped establishing Bangladesh Lekhak Shibir (Bangladesh Writers' Camp) in 1970 to organize liberal writers in order to further the cause of the progressive movement.

Ahmed Sofa's outspoken personality and bold self-expression brought him into the limelight. He was never seen hankering after fame in a trivial sense. His fictions were often based on his personal experience. He protested social injustice and tried to portray the hopes and dreams of common people through his writing. Sofa always handled his novels with meticulous thought and planning. The trend of telling mere stories in novels never attracted him; he was innovative in both form and content.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
367 (28%)
4 stars
578 (45%)
3 stars
285 (22%)
2 stars
34 (2%)
1 star
19 (1%)
Displaying 1 - 30 of 152 reviews
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
October 29, 2018
ছফা সাহেবের আত্মজৈবনিক প্রেমের উপন্যাস অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী'র প্রারম্ভিকার ওভার ডোজ দর্শন শাস্ত্রের ভারে যখন খানিকটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটতে শুরু করেছিল ঠিক তখনই বৈশাখী ঝড়ের মতো মঞ্চে দুরদানা আফরাসিয়াবের প্রবেশ ঘটে। ষাট-সত্তর দশকের দিকে উনিশ বছরের একজন তরুণী ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে কলেজে আসা যাওয়া করছে ব্যাপারটা ভাবতেও শিহরণ জাগে! অথচ ডাকসাইটে মেয়ে দুরদানা অনায়াসে লোকজনের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে সাইকেলে চড়ে সারা শহর চক্কর দিতো।

শুরুতেই উল্লেখ করেছি অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী আহমদ ছফার আত্মজীবনী। তবে ধরে নিতে হয় কল্পিত নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুরদানার অস্তিত্বও অভিকর্ষ বলের মতোই ধ্রুব সত্য। খানিকক্ষণ গবেষণা করে জানলাম টিএসসি চত্বরের বিখ্যাত ভাস্কর্য "স্বোপার্জিত স্বাধীনতা"র কারিগরি শামীম শিকদারই এই দুরদানা আফরাসিয়াব!



শামীম শিকদার ছিলেন আহমদ ছফার প্রথম প্রেমিকা। এই উপন্যাসে ছফা সাহেব আরও দুইজন রমণীর কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দুরদানার মতো দুর্দান্ত আর কেউ ছিল না। পার্থিব সৌন্দর্যের বিচারে ছফা সাহেবের দ্বিতীয় প্রেমিকা শামারোখ ছিলেন অদ্বিতীয়। দুরদানার প্রস্থানের পরপরই তাঁর আগমন ঘটে। শামারোখ ছিলেন অসাধারন সুন্দরী আর প্রতিভাবান একজন রমণী।



তবে কিনা ছফা সাহেবের লেখনীতে এই ভদ্রমহিলার যে কদাকার রূপ উঠে এসেছে তাতে আমি যারপরনাই বিরক্ত। বাহ্যিক সৌন্দর্য্যকে হাতিয়ার করে দুনিয়া জয় করার আইডিয়াটা আমার কোনোকালেই পছন্দ ছিল না। অথচ শামারোখ বারবার এই কাজটি করেছেন। শামারোখের রূপে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই কাব্য রচনা করেছিলেন। ওদের মধ্য অন্যতম হলো চালচুলোহীন তরুণ কবি শাহরিয়ার। খুব অল্প বয়সেই নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে গিয়ে কবি শাহরিয়ার প্লুরিসি রোগে ভুগে সবেমাত্র বিলেত থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। এরমাঝে শামারোখের সাথে পরিচয়। এই পরিচয়ের ব্যাপারটা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ সেটা নিয়ে আমার খানিকটা দ্বন্দ্ব আছে। কারণ শামারোখের রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি অসামান্য কিছু কাব্য রচনা করেছেন এটা যেমন সত্যি তেমনি ওষুধ-পথ্য সেবনে অনিয়ম শুরু করেছিলেন এটাও মিথ্যে নয়। ফলশ্রুতিতে খুব অল্পবয়সেই এই প্রতিভাবান কবির মৃত্যু ঘটে।

আহমদ ছফার আত্মজৈবনিক প্রেমের উপন্যাসের রিভিউ লিখতে বসে বারবার কবি শাহরিয়ারকে টেনে আনছি কেন?? কারণ এই কবি শাহরিয়ার নামের আড়ালে থাকা মানুষটা আবুল হাসান, আমার অসম্ভব প্রিয় একজন কবি!

অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী পাঠশেষে খানিকটা হতাশ হয়েছি। যে সোহিনীকে উদ্দেশ্য করে লেখক এতো সময় জুড়ে দুরদানা আর শামারোখের কাহিনী বর্ণনা করেছেন সেই সোহিনীর পরিচয় ধাঁধার মতো অস্পষ্ট থেকে গেছে। দ্বিতীয় খন্ড লিখবেন ভেবেই সম্ভবত ছফা সাহেব এই বইয়ের অসমাপ্ত সমাপ্তি টেনেছেন। অথচ এই বইয়ের দ্বিতীয় খন্ড আর কখনোই প্রকাশিত হবেনা।
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
August 14, 2023
❝নারী আসলে যা, তার বদলে যখন সে অন্যকিছুর প্রতিক হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার আকর্ষন করার শক্তি হাজার গুন বেড়ে যায়।❞

লেখকের উক্তিটা ছিল অসাধারন। কিন্তু সত্যি বলতে উক্তিটিকে একটা গন্ডিতে নারীকে আবদ্ধ করে তোলা হয়েছে, নারী তার থেকেও অনেক কিছু, সে যে কারোর না কারোর কাছে অমূল্য।
সে শুধু আকর্ষন নয়, শ্রষ্ঠা প্রদত্ত সকল শক্তি নিয়ে বিরাজ করে আমাদের মাঝে। কারোর কাছে মায়া হয়ে, কারোর কাছে বা ঘৃণা হয়ে। সেই নারীই কারোর কাছে অতি আদরের মা, সেই নারীই কারোর কাছে ভালোবাসার সব কিছু। তাকে পেয়ে কেউ ধন্য, তাকে না পেয়ে কেউ নিঃস্ব।
সত্যিই কি সে সব কিছুর শিকড় না?
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews85 followers
October 3, 2023
আহমদ ছফার লেখা তো বটেই তাঁর অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব আমার খুব পছন্দের। বর্তমানে দিন দিন তাঁর জনপ্রিয়তা আর প্রভাব বাড়তে থাকলেও জীবদ্দশায় তিনি যে সবার খুব প্রিয় ছিলেন এমনটা না। এমনকি এখনো তাঁর অনেক কঠিন সমালোচক আছেন। ছফা কে ভালো লাগুক বা না লাগুক তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রখরতা অস্বীকার করবার উপায় নেই। ছফার নানান পরিচয় রয়েছে চিন্তক, লেখক, কবি, অনুবাদক সমালোচক, বুদ্ধিজীবী, সংগঠক, দার্শনিক এমনকি পাগল । বর্তমানে তিনি বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমধিক বিবেচিত। তবে আমার কাছে ছফা একজন খাঁটি সৃজনশীল সাহিত্যিক। ছফার জীবন থেকে তাঁর সাহিত্য আলাদা করে দেখবার জো নেই।


'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' ছফার আত্মজৈবনিক উপন্যাস। বুকশপগুলোতে একে প্রেমের উপন্যাস হিসেবে বিজ্ঞাপিত করা হয়। যদিও প্রেম এই উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ, আমি একে শুধু প্রেমের উপন্যাস বলতে রাজি নই। নারী-পুরুষের পারস্পরিক জটিল সম্পর্কের এক অননুভবনীয় অবস্থার উন্মোচিত হয়েছে এতে। শামারোখ কিংবা দুরদানার সাথে উপন্যাসের নায়ক জাহিদের সম্পর্ককে গতানুগতিক প্রেমের সম্পর্ক বলা যায়না। সম্পর্কগুলো প্রেম, কাম, আত্মিক আধ্যাত্মবাদ আর সামাজিক রীতিনীতির প্রতি বিদ্রোহ ইত্যাদির জটিল রসায়নে সৃষ্ট অভূতপূর্ব এক জিনিস। সম্পর্কের চমৎকার অ্যাখানের বাইরে এই উপন্যাসে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়কালের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। প্রেম কখনো বিবিক্ত ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে থাকেনা। রাষ্ট্র ও সমাজ বরাবরেই মতোই প্রেমকে প্রভাবিত করে, প্রেমের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়ায়। "মানুষের কোন কিছুই একান্ত ব্যক্তিগত নয়" - এই সারসত্য কথন উপন্যাসটি থেকে আমরা বুঝতে পারি।

উক্ত উপন্যাসে ছফার মোহনিয়া গদ্যে প্রেমের সাথে সাথে সমাজ-রাষ্ট্রের সত্যিকার চেহারা পাশাপাশি তৎকালীন সময়ের নানান মানুষ যারা ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাবশালী তাদের ভিন্নরকম এক রূপ( যা মোটেও প্রশংসনীয় নয়) আমরা দেখতে পাই। পাশাপাশি সমকালকে প্রশ্নবিদ্ধ যারা করে তাদেরকে কেমন কেমন প্রতিকূলতার সাথে লড়তে হয় তার বিবরণ আমরা পাই। হয়তো এটা অতি সার্থক উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ নয়, কারো মতে এটা নিছক ব্যক্তিগত কুৎসারটনার উপাখ্যান কিন্তু আমার কাছে এই উপন্যাস সৎ সাহিত্যের প্রকৃষ্ট রূপ। লেখকের নিজস্ব সত্য সমস্ত সত্যের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও তাকে সেই সত্যের বয়ান দৃঢ়তাব্যঞ্জক উপায়ে করে যেতে হবে বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত..
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
April 24, 2021
আমার পঠিত প্রথম ছফা ❤️❤️এখনো সমানরকম প্রিয় বই। বারবার পড়তে পারবো।
"সোহিনী, তুমি আমার কাছে অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা। অর্ধেক কষ্ট, অর্ধেক সুখ। অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী। তোমাকে নিয়ে আমি কি করবো! তোমার টানা টানা কালো চোখের অতল চাউনী আমাকে আকুল করে। তোমার মুখের দীপ্তি মেঘ-ভাঙা চাঁদের হঠাৎ ছড়িয়ে-যাওয়া জোছনার মতো আমার মনের গভী��ে সুবর্ণ তরঙ্গ জাগিয়ে তোলে। দিঘল চিকন কালো কেশরাশি যখন তুমি আলুলায়িত করো,হাওয়া-লাগা চারাগাছের মতো আমি কেমন আন্দোলিত হয়ে উঠি।"
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
September 5, 2021
একজন যুক্তিবাদী শক্ত একজন পুরুষ মানুষ একটি নারীর প্রেমে পড়লে কতটা বিহ্বল, অচেতন হয়ে পড়তে পারেন এবং আত্নসত্ত্বাকে ভুলে গিয়ে, শত অপমানের পরও নিজকে ঐ নারীর কাছে বিলিয়ে দিতে পারেন তার আখ্যান হলো এই "অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী"

এই বইটি খুব যে ভাল লাগছে তা কিন্তু না।
লেখা তেমন শক্তিশালী লাগেনি। শুধু ধারাবাহিকভাবে ঘটনা বলতেই আছেন। মাঝখানে এসে এই কারণে বিরক্ত লেগেছিল এবং রেখে দিয়েছিলাম।।
পরে যখন আবার হাতে নিলাম তখন বেশ ভালোই লাগছিল। উনার জীবনের এত রকমের ঘটনা পড়তে পড়তে একরকম থ্রিলও ফিল করেছি :3

তবে একান্ত একটা ব্যক্তিগত মন্তব্য হলো,, আমাদের জীবনে কৃতকর্মের মধ্যে অনেক ভুল থাকে, অনেক কাজ থাকে যা আমরা কাউকে বলি না।। সেই হিসেবে নিজের জীবনের এসব প্রেম-শেম বিষয়ক জিনিসপাতি নিয়ে উনি না লিখলে ক্ষতি তো হতোই না, বরং লাভ হতো। আমার মতে, প্রেম-ভালোবাসা এসব যতটা ব্যক্তিগত/একান্ত রাখা যাবে ততই ভালো।। এই বইটা না লিখলে ছফাকে নিয়ে নেগেটিভভাবে উনাকে বিচার করার সুযোগ কেউ পেতো না, তবে এখন পাচ্ছে বইটি লেখার কারণে। যেমন ধরুন এখন যদি কেউ এমনটাও বলে তবে অবাক হবো না "বুঝলেন মশাই, এমন আজেবাজে মেয়েমানুষের সাথে ছফার মতো যুক্তিবাদী, কঠিন একজন মানুষের মেলামেশা ছিল ব্যাপারটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না"

রেটিংঃ ৩.৫/৫
Profile Image for Anika.
20 reviews20 followers
February 17, 2021
"যে কাহিনীর মূলে সত্যের স্পর্শ নেই সে কাহিনী মূল্যহীন।"
~আহমেদ ছফা (বই এর ফ্ল্যাপে লিখা)।

বইটার সূচনা হয়েছে সোহিনী নামের কাউকে লেখকের মনের দোলাচল নিয়ে লেখার মধ্য দিয়ে। লেখক তাঁর সোহিনীর কাছে লিখছেন জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জায়গা করে নেওয়া নারীদের নিয়ে... এই প্রেক্ষপটেই জন্ম নিয়েছে "অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী" শীর্ষক বই।

📖 এই প্রেক্ষাপট কে সামনে রেখে প্রথম পর্দা উন্মোচন ঘটে "দুরদানা আফরাসিয়াব" নামক এক তরুণীর। তরুণী? হ্যাঁ, তরুণী-ই বটে। তবে এই তরুণীর সাহস আর জীবন ধারণ তৎকালীন আর দশটা সাধারণ তরুণকেও হার মানায়। সেই ষাট বা সত্তুরের দশকে ঢাকা শহরের বুকে শার্ট-প্যান্ট পড়ে সাইকেলে প্যাডেল করা অথবা প্রয়োজনে কুনজরে তাকানো পুরুষ মানুষ দের ছুরি দেখিয়ে দমিয়ে দেওয়ার মতো ১৯ বছর বয়সী নারী... এই দৃশ্য এখনো মফস্বলের বাসিন্দাদের জন্য কল্পনা করা দুষ্কর বৈকি! ঘটনা চক্রে এই দুর্দান্ত দুরদানার সাথে সখ্যতা হয় লেখকের। তৈরি হয় খানিকটা ঘনিষ্ঠতা। তবে এর মাঝে জেঁকে বসে হাজার টা প্রতিকূলতা। আর এর অন্যতম কারণ দুরদানার ভাই এবং তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সময়ের সাথে হারিয়ে যায় দুরদানা।
তবে শুরুতেই বই এর ফ্ল্যাপে লেখা যেই উক্তিটা তুলে ধরেছি সেটাই এই বই এর প্রাণ।কারণ দুরদানা আফরাসিয়া কোনো কাল্পনিক চরিত্র নয়। এই দুরদানা বাস্তবে হলেন আমাদের শামীম শিকদার ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের বিখ্যাত ভাস্কর্য " স্বোপার্জিত স্বাধীনতা"র কারিগর)। এই শামীম শিকদারকেই একসময় লেখক আহমেদ ছফা ভালোবেসেছিলেন (?), এমনকি লোকমুখে শোনা যায় বিবাহের বাসনাও করেছিলেন এবং শামীম শিকদারের সাথে দূরত্ব তৈরিই ছিল নাকি লেখকের আমৃত্যু বৈবাহিক সম্পর্কে না জড়ানোর কারণ।

📖 দুরদানার পরে লেখকের জীবনে আসে "কন্যা শামারোখ"। এই চরিত্র টা একটু আলাদা। কেম্ব্রিজের ডিগ্রি ধারী উচ্চ শিক্ষিতা শামারোখ ছিলেন এক সন্তানের মা, তবে স্বামীকে ছেড়ে থাকতেন ঢাকায় বাবার বাসায়। এই চরিত্রটার মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে "Beauty with Brain" তত্ত্বটিকে লালন করা হয়েছে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শামারোখের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান জনিত টানাপোড়েনের সময় লেখকের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই কন্যা শামারোখ কে কল্পনায় অন্য আসনে বসিয়ে ফেলেন লেখক। কিন্তু কন্যা শামারোখ ছিলেন সেই দুর্দমনীয় সৌন্দর্যের রাজকন্যার মতো যাকে পাবার জন্য রুপকথার গল্পে রাজাদের মাঝে যুদ্ধ বাধে। শেষ অবদি লেখক বুঝলেন এই রাজকন্যাকে পাবার মতো সুঠাম রাজা সে এখনো হয়ে উঠতে পারেনি, হয়তো কখনো পারবেওনা। তবে লেখকের আপ্রাণ চেষ্টায় শামারোখের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি হয়। এই উপকার টা করে প্রিয় মানুষটাকে ধাতস্থ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঘটনাক্রমে লেখক ও শামারোখ পরস্পরের থেক্র অনেকটা দূরে ছিটকে পড়েন । শামারোখের জীবনে আসে সেসময়ের তরুণ কবি "শাহরিয়ার"। ঢাকা শহরের দূষিত বাতাস ছেয়ে যায় তাদের প্রেমের গন্ধে। কিন্তু এই প্রেমের নৌকার ভরাডুবি ঘটিয়ে অকালে প্রাণ হারান উক্ত তরুণ কবি। তবে শামারোখ এতে থেমে যাননি। ১৫ দিনের মাথায় কাউকে বিয়ে করে পাড়ি জমান সুদূর আমেরিকায়। এই ঘটনাও গল্প হতে পারতো। কিন্তু ওই যে, ফ্ল্যাপে লিখা কথাটা!
হ্যাঁ, এই শামারোখ চরিত্রের অস্তিত্ব ও বাস্তবে ছিল। তাঁর বাস্তব জীবনে নাম অধ্যাপক সুরাইয়া খানম। এই সুরাইয়া খানম লেখক আহমেদ ছফার জীবনকে অনেকটা নাড়িয়ে দেন। তাই তাঁকে ঘিরেই তৈরি করেন কন্যা শামারোখ চরিত্রটি। এই চরিত্রকে নিয়ে লেখক লিখেছেন "তুমি আমার কাছে অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা। অর্ধেক কষ্ট, অর্ধেক সুখ। অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী।"

📖 শামারোখের প্রেমিক কবি শাহরিয়ার হলেন বাস্তবে আমাদের চিরচেনা কবি "আবুল হাসান", ১৯৭৫ সালে হৃদযন্ত্রের বৃদ্ধিজনিত কারণে এই তরুণ কবির মৃত্যু ঘটে। তিনি " পৃথক পালঙ্ক" নামে একটি কবিতার বই সুরাইয়া খানম কে উৎসর্গ করেছেন, পাশাপাশি তাকে নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। তবে আবুল হাসান এর মৃত্যুর পরে সুরাইয়া খানম খুব দ্রুত বিয়ে করে ফেলেন এবং বিদেশে পাড়ি জমান। লেখক " আবুল হাসান" এর মৃত্যুর পেছনে সুরাইয়া খানমের সাথে তার অনিয়মতান্ত্রিক জীবনকেও দায়ী করেন অনেকে।

বইটার সবগুলো বাস্তব ঘটনা গুছিয়ে সোহিনী নামের কারো কাছে লিখতে চেয়েছেন লেখক। তবে এই সোহিনীর আসল পরিচয় পাওয়া যায়নি শেষ অবদি। এর কারণ লেখক চেয়েছিলেন "অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী" বই টির দ্বিতীয় খন্ড লিখতে। কিন্তু অবশেষে তা সম্ভব হয়নি; কখনো আর হবেওনা।

|| তথ্যগুলো বিভিন্ন বই, আর্টিকেল, রিভিউ, ইন্টারভিউ থেকে সংগ্রহ করে নিজের মতো করে গুছিয়েছি। নিজের জানা সব টা এখানে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। আশা করি, ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন ||
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
March 17, 2021
মার্ভেলাস!

আহমদ ছফার লেখায় যাদু আছে জানতাম কিন্তু সে যাদু যে তার লেখা রোমান্টিক বইতেও থাকবে এটা কেন যেন আমি আশা করতে পারিনি। আর সে কারণেই একদমই অল্প এক্সপেক্টেশন নিয়ে বইটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু শেষ করতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কি অসাধারণ ভাবে প্রেমের অনুভূতির কথা জানিয়ে গেছেন তিনি। অনুভূতিগুলো মোটেও টিপিক্যাল প্রেমের অনুভূতি নয়। এ যেন এক পুরুষ সত্ত্বা দিয়ে এক নারী সত্ত্বার প্রতি দুনির্বার আকর্ষণের আখ্যান। আরো অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু একেতো আমি আলসে তারওপর আবার রাত পৌনে ৪ টা বাজে। সো, আজকের মত থাক। সময় পেলে আরেকদিন লিখবোখন। তবে আমি লিখি বা না লিখি বইটা মিস দিয়েন না।
Profile Image for S M Hridoy.
32 reviews6 followers
January 18, 2017
কিছুটা ব্যাতিক্রমধর্মী,আত্মজীবনীমূলক লেখা যেখানে নাকি তিনি একটুও মিথ্যার আশ্রয় নেননি ,বুদ্ধ��েব বসুর রাত ভরে বৃষ্টির পর মনে হল আরেকটি চিরাচরিত লেখনির বাইরের বই পড়লাম।

আহমেদ ছফার লেখার আমি আগে থেকেই ভাল লাগে,নিছক সময় কাটানোর জন্য যেসব লেখা উনার লেখা সেটার উল্টো, সুন্দর সময় কাটার সাথে মাথাতেও কিছু সারপদার্থও ঢুকবে উনার লেখা পড়ে । নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের "স্বাধীনতা সংগ্রাম" বা "স্বোপার্জিত স্বাধীনতার"এর নিচে বসে কত রাত যে আড্ডা দিয়েছি তার ঠিক নেই কিন্তু "শামীম সিকদার" যে মেয়ে সেটাই আমি জানতাম না। শাহরিয়ারকে প্রথমে রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ভেবেছিলাম কিন্তু পরে জানতে পারলাম তিনি আসলে কবি আবুল হাসান যিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে মারা যান ।আর শামারোখ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুরাইয়া খানম যার মৃত্যুর দুই বছর পর বইটি প্রকাশ পায় ।

কিছু কিছু দার্শনিক উক্তি রয়েছে বইটিতে যা মানুষের ভাবনার-চিন্তার জগতকে আলোড়িত করবে অনন্তকাল ।
এক কথায় ভালো লাগার মত একটি বই।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
March 8, 2014
আহমেদ ছফার পড়া আমার প্রথম উপন্যাস। ভালো লেগেছে বলাই বাহুল্য। এরকম বই সম্পর্কে কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না । শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল, যাকে উদ্দেশ্য করে বইটা লেখা সেই সোহিনী সম্পর্কেই বিশেষ কিছু জানা হল না। দুরদানা আর শামারোখ এর কাহিনী তেই বইটা শেষ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ড আর বের ও হবেনা। একটা অতৃপ্তি থেকেই যাবে । আর বর্ণনা এর ধরণ ও বেশ সাবলীল। যুদ্ধ পরবর্তী ঢাকার একটা সুন্দর ছবি ফুটে উঠে। লেখার মাঝে মাঝেই যে দার্শনিক উক্তি গুলো আছে তা চিন্তার খোড়াক জাগায় । বই এর একদম শেষ লাইনটা অনেক দিন মনে থাকবে।
Profile Image for Fahim Montasir Misbah.
25 reviews4 followers
May 31, 2021
বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' পড়া শুরু করেছিলাম। শুরুতেই দর্শনতত্ত্ব দেখে বিক্ষিপ্ত মন আরও বিক্ষিপ্ত হওয়ার জোগাড় হয়েছিলো বলা যায়। না, দর্শন আমি অপছন্দ করি না। কিন্তু ঐ সময়টায় এত ভারী, গুরুগম্ভীর মেজাজের বাণী গ্রহণ করার জন্যে আমার মস্তিষ্ক প্রস্তুত ছিলো না। সেই ব্যারিকেড পেরিয়ে উন্মুক্ত পথে প্রবেশ করতেই আমার মগজের সবটুকু এই বইয়ে কেন্দ্রিভূত হয়ে পড়ে। 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' পড়ে বেঘোরে কেটে যায় আমার ইদের দিন।
Profile Image for Alvi Rahman Shovon.
467 reviews16 followers
August 24, 2023
প্রায় এক মাস আগে ধরেছিলাম বইটা। আস্তে ধীরে পড়তে পড়তে আজ শেষ হল এই ছোট্ট বইখানা। এই বইয়ের ব্যাপারে অনেক পজিটিভ রিভিউ শুনে বইটা কিনেছিলাম। দুরদানাকে নিয়ে যখন কাহিনীর শুরু হচ্ছিলো বেশ বোরিং লাগছিলো কিন্তু শামারোখের আখ্যান শুরু হতেই কাহিনীতে আসল থ্রিল পাচ্ছিলাম। ছফার লেখনীশৈলী নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। সুন্দর ঝরঝরে লেখার জন্য উনার বই সব সময় পড়ে বেশ আরাম পাই।
Profile Image for Tirtha Nandi.
19 reviews2 followers
September 25, 2022
চরম লেভেলের বোরিং বই। কাহিনী তেমন কিছু নাই। যা মনে হইছে, লিখে গেছে।
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews13 followers
September 26, 2022
ছফার প্রেমে পড়ার জন্য এই বইটা যথেষ্ট
Profile Image for Ratika Khandoker.
300 reviews34 followers
February 15, 2024
কেন আমার আহমদ ছফাকে খানিকটা হিমুর মত লাগলো?
Profile Image for Raihan Ferdous  Bappy.
226 reviews13 followers
August 22, 2025
সোহিনীকে উদ্দেশ্য করে লিখা শুরু হলো। সোহিনী জাহিদের জীবনের তৃতীয় নারী। তার আগেও দু'জন এসেছে। দুরদানা আর শামারোখ। তাদের দুইজনকে নিয়েই সোহিনীর কাছে লিখছেন জাহিদ। দুরদানার ডোন্ট কেয়ার ভাব, শামারোখের মোহনীয় সৌন্দর্য আর সবশেষে সোহিনীর কাছে নীরব আশ্রয় প্রার্থনা দিয়েই মূলত 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী'।

পুরো বই পড়ে সবচাইতে বড় আফসোস যেটা হলো আমার সেটা হচ্ছে অসম্পূর্ণতা। দ্বিতীয় খন্ড আসার কথা ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আহমদ ছফা দ্বিতীয় খন্ড শেষ করতে পারেননি।

আমার কেমন লাগলো? আমার ভালো লেগেছে৷ হ্যাঁ, প্রথমে ধীর গতির কারণে কিছুটা একঘেঁয়ে লেগেছে। তবে, ধীরে ধীরে ভালো লাগা শুরু। বেশি ভালো লেগেছে শামারোখের এন্ট্রির পর থেকে। বেশ উপভোগ করেছি।

সবমিলিয়ে, বইটা হলো এক পুরুষের ভাঙন ও আশ্রয়ের খোঁজ নিয়ে। যেখানে নারীকে কেবলমাত্র চরিত্র হিসেবে দেখলে ভুল হবে। তারা আরো অনেক উর্ধ্বে। না পড়া থাকলে অবশ্যই পড়বেন। আশা করি ভালো লাগবে।
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
March 30, 2021
কারো সাথে পরিচয়ের শুরুতে একবার এবং খানিকটা পরিচিত হয়ে গেলে একবার, মোটে এই দুবার আমি মানুষকে একটা প্রশ্ন করি_হয়তো সরাসরি, কিংবা কিছুটা ঘুরিয়ে। প্রশ্নটা হলো, "সুন্দর মানুষকে সঙ্গী বা সঙ্গিনী করে পাবার বেলায় তাদের মতামত কী?" কিছু বিষয়বস্তুর আদলে সামনের মানুষটাকে বুঝে উঠতে সেই প্রশ্ন আমাকে কিছুটা সহায়তা করতো, এখনো করে। পরিচয়ের শুরু থেকে পরিচিত হবার মাঝের সময়টায় তাদের উত্তরে যে তারতম্য আসে তার সম্ভাব্যতার পরিমাণ আমার এতদিনের পর্যবেক্ষণে প্রায় নব্বই শতাংশ। কী বলতে চেয়েছিলাম, আর কী বলে যাচ্ছি! আসলে এতদিনের এই ছোট্ট সারভে করতে নিয়ে যে ধারণা আমার মাঝে জন্মেছিল, তার বহিঃপ্রকাশ আমি এই বইটায় খুব ভালোভাবে পেয়েছি বলেই হয়তো প্রসঙ্গটা এলো।

'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী', আহমেদ ছফার একটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস। পরের খণ্ড তিনি লিখে যেতে পারেননি। বইতে একটা লাইন আছে, "আমার কেমন জানি আশঙ্কা হয়, এই কাহিনি যখন আমি শেষ করবো, তুমি হয়তো এই বিশাল পৃথিবীর কোথাও হারিয়ে যাবে।" আইরনি বলা যায়, না? গল্পকথক জাহিদ তার ঈশ্বরীরূপী মানবী প্রেমিকা, যার নাম তিনি দিয়েছেন সোহিনী, তাকে হৃদয়ের নানা ভাঁজে আটকে পড়া নারীদের-ভালোবাসার-অভিজ্ঞতার-আকর্ষণের কিছু নিপাট স্মৃতিবিজরিত গল্প জানাতে চেয়েছেন। কথকের জীবনে আসা আপন গরিমায় প্রস্ফুটিত কিছু নারী চরিত্র আমরা উপন্যাসে দেখতে পাই। সেখানে যেমন ডাকসাইটে নারী হিসেবে দুরদানার জীবনী এসেছে, ঠিক তেমন বৈসাদৃশ্য নিয়ে এসেছে শামারোখের রূপ ও মেধার নিক্তিমাপা মিশ্রণ। তবে শুরুতে যতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্বের আভা চোখে পড়েছে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতির যাঁতাকলে পড়ে সেসব কোথাও একটা গৎবাঁধা ছাঁচে পড়ে গেছে। বাকিসব বাদ দিয়ে বাস্তববাদী বললে হয়তো ঠিক হয়, মন-মননের প্রভা একটা সময় মেরুদণ্ডের সেই একটা বাঁকা হাড়ওয়ালা নারী শরীরের ছাঁচেই এসে থেমে যায়। হয়তো না। কে জানে! গল্পকথক হিসেবে জাহিদ চরিত্রটির কূলকিনারা করতে আমাকে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে। কখনো তাকে চাছাছোলা পুরুষ বলে মনে হয়েছে, তো কখনো রক্ত-মাংসের পরিণত মানুষ, তো কখনো পালিয়ে বাঁচতে যাওয়া একটি ভীত কিশোর। কখনো মনে হয়েছে ছেলেটাই ঠিক, আবার কখনো মনে হয়েছে মানুষটা ভুল, তো কখনো মনে হয়েছে পরিস্থিতিটাই হয়তো এমন। এই নারী-কন্যা, ছেলে-পুরুষ এসবের ক্রমাগত চলতে থাকা দোলাচলে ছফা সাহেবের লেখা যে তরতরিয়ে পড়ে গেছি, লিখতে বসে আসলে এতটুকুই মনে পড়ছে। শুধু আফসোস এটাই, লেখাটা তিনি শেষ করতে পারেননি। যতখানিতে এসে গল্পটা থেমেছে, পরবর্তী খণ্ডের সংবাদ না জানলে মনে হতো এটা 'মেমসাহেব' এর স্মৃতির ভার নামানোর জন্য কোনো মরীচিকাকে লেখা সেই অখণ্ডিত চিঠির মতোই, এখানে যে মরীচিকার নামটা সোহিনী।

আজকাল পড়ে শান্তির উপরে আর কিছুতে উপসংহার আনতে পারছি না। তাই এবেলাতেও তাই বলি, অসম্পূর্ণ হলেও পড়তে নিয়ে সময়টা ভালো কেটেছে। শুধু শেষে এসে একটা চাঁপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছে, "ছফা সাহেব, পরের খণ্ডটা পাঠাবেন নাকি?"
Profile Image for Abu khan.
51 reviews6 followers
November 5, 2018
জন কীটস এবং ফ্যানি ব্রনের অল্প সময়ের জন্য প্রেম হয়েছিল ঠিক যেমনটা হয়েছিল আবুল হাসানের সাথে সুরাইয়া খানমের। উপন্যাসের ভাষায় বললে শাহরিয়ার এবং শামারোখের। ছফার সাথে সুরাইয়া খানমের প্রেমের ক্যামেস্ট্রি দুর্দান্ত ছিল বটে। তবে তারচেয়েও আকর্ষণীয় ছিল দুরদানা (শামীম সিকদার)। “এখানে সবকিছু বিকলাঙ্গ, সবকিছু অসুস্থ, অস্বাস্থ্যকর। এই পরিবেশে, এই পরিস্থিতিতে একজন তরুণী সমস্ত বাধা-নিষেধ অস্বীকার করে প্রবল প্রাণশক্তির তোড়ে চারপাশের সমস্ত কিছু একাকার করে ফেলতে চাইছে, আমি একে জীবনের স্বাধীনতা সৃষ্টির একটা মহৎ প্রয়াস বলে ধরে নিলাম”। ৭০-এর দশকে এরকম দুরন্ত, আত্মপ্রত্যয়ী, অসীম সাহসী একজন মেয়ের সাথে পরিচয় থাকা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। অন্তত আমার কাছে। ছফা শামীম সিকদার সম্পর্কে উপন্যাসে যথার্থই বলেছেন।

আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস হলেও এর দার্শনিক উক্তিসমূহ আরও নতুন চিন্তা চেতনার দুয়ার উন্মুক্ত করে। একই সাথে আমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসে সুদূর অতীতের খুব কাছ থেকে।
Profile Image for Rehnuma.
444 reviews21 followers
Read
November 18, 2022
লোকে বলে প্রেম দুনিয়ার ব্যাপার না। প্রেম আসে স্বর্গ থেকে। সেই স্বর্গীয় অনুভূতি যার উপর ভর করে, সে পরিণত হয় অন্য মানুষে। প্রিয় মানুষটির সূক্ষ্ম বিষয়ও তার নজর এড়ায় না। মোদ্দাকথা প্রেমে পড়া মানুষটি অধবোধ ভুলে হৃদয়ের কথা শুনে।
জাহিদ হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার। মাসে ❛বারোশ❜ টাকা বৃত্তি বাবদ পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করে। তিনি এক নারীর প্রেমে পড়েছেন। যাকে অ্যাখ্যা দিয়েছেন ❛অর্ধেক আনন্দ অর্ধেক বেদনা কিংবা অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী❜ হিসেবে। গানের রাগের সাথে মিলিয়ে নাম দিয়েছেন ❛সোহিনী❜। সোহিনীকে আপন করে নেয়ার আগে জাহিদ তার অতীত জীবনে আসা নারীদের সম্পর্কে এক রকম স্বীকারোক্তিমূলক পত্র লিখেছেন সোহিনীর কাছে।
জাহিদ সাহেবের জবানীতে প্রথম যে প্রেমের কথা আসে তিনি হলেন ❛দুরদানা আফসারিয়াব❜। আদৌ সে নারী? শার্ট-প্যান্ট পড়া, ছোটো করে কাঁটা চুল আর গলায় বুলেটের লকেট ঝুলিয়ে সাইকেল দাপিয়ে বেড়ানো ৭০ এর দশকের একজনকে নারী হিসেবে দেখতে একটু বেশি-ই বেগ পেতে হয়। তখনকার সমাজে দুরদানা এক হট টপিক, আড়চোখে যাকে লোকে দেখে, যে কুখ্যাত ইউনূস জোয়ারদারের বোন। আর আমাদের গল্প কথক জাহিদ প্রেমে পড়লেন এই দুরদানার। যার সাইকেলের পিছে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। যার সাথে মেলামেশা নিয়ে কঠোর সমালোচনা আর লোকের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাকে। তবুও দমে যাননি। অ-নারীসুলভ এই নারীর মাঝেই তিনি জীবনের সুখ খুঁজে নিয়েছিলেন। এক বৃষ্টির রাতে জাহিদ সাহেব এই অপ্রতিরোধ্য দুরদানার নারীসুলভ রূপটি আবিষ্কার করলেন। এই নারীকে কী তিনি ভালোবেসেছিলেন? সাইকেল হাকিয়ে, ছেলে পিটিয়ে বেড়ানো সত্তাটি তবে কোথায়?
ছাপোষা, সাধারণ কিংবা নামের আগে পিছে ভারী গল্প লাগানো ছাড়া নারী যেন জাহিদ সাহেবের জীবনে দোলা দিতে পারতেন না। তাই এবারের প্রেমটি হলো স্বামী-সন্তান ছেড়ে আসা অনিন্দ্য সুন্দরীর সাথে। সোহিনীর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক চিঠিতে যার নাম ছিল ❛শামারোখ❜। তিনি ❛কন্যা শামারোখ❜ নাম দিয়েছিলেন। রূপে-গুনে অনন্যা, শিক্ষিত শামারোখের সাথে পরিচয়ের পর জাহিদ সাহেবের আলোচনায় আসা জীবন যেন নতুন করে আলোচিত হলো। চাকচিক্যহীন, বেকার আর দরিদ্র এই লোকটি কেন হাজারো পুরুষের হৃদয়ে বসন্তের বাতাস বইয়ে দেয়া নারীটির সঙ্গে উঠবস করবে?
শিক্ষক পারায় যাকে নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প আছে এমন একটি নারীর সাথে সখ্যতা আর তার হারানো চাকরি পাইয়ে দিতে জাহিদের এক রকম একাই লড়াই করে যাওয়ার ফলাফল কি ছিল? যার জন্য এত কিছু করলেন, শেষ অবধি কি টিকেছিল সে সম্পর্ক? বিদেশ ফেরত তরুণ কবি শাহরিয়ারের সাথে শামারোখের সখ্যতা আর তার চরিত্রের বিচিত্র সব দিক নিয়ে জাহিদ সাহেবের এই প্রেমের পরিণতি কী?
জানতে হলে বইটা তো পড়তেই হবে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
আহমদ ছফা আমার অন্যতম প্রিয় লেখক। ফিকশনের আড়ালে তার লেখায় ফুটে উঠে বাস্তবতা। কঠিন সত্য তিনি বেশ হিউমার দিয়ে অকপটে বলে দেন। তার প্রতিটা লেখা পড়তে গিয়ে এই অনন্য প্রতিভাধর লেখকের লেখার গুনে নতুন করে মুগ্ধ হই।
❛অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী❜ লেখকের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস কিংবা বলা যায় প্রেমকাহিনি। উপন্যাসের জাহিদ হাসান যেন স্বয়ং আহমদ ছফা। তার জীবনে আসা নারীদের কথা অকপটে লিখে গিয়েছেন জাহিদের নাম ধরে। সোহিনী নাম দেয়া তার নতুন প্রেমের কাছে বলে গিয়েছেন অতীত প্রেমের কথা।
তার জীবনে আসা নারীদের প্রেমে পড়া নিয়ে লেখক বইতে এত দারুণ সব উপমার ব্যাবহার করেছেন যা মুগ্ধ করে।
প্রেমকাহিনির বিশেষ ভক্ত না হয়েও ছফার বয়ানে প্রেমের উক্তি গুলো শুধু প্রেমের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেখানে লেখকের কিংবা জাহিদের জীবনের অনাড়ম্বর ভাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, মুখোশের আড়ালের ব্যাক্তির প্রকৃত সত্ত্বা মোটাদাগে প্রকাশ পেয়েছে। যুদ্ধ পরবর্তী পরিবেশ, রাজনৈতিক অবস্থা লেখক এই বইতে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
❛তুমিই আমার জীবনে প্রথম নারী কিংবা তোমাকে ছাড়া আর কাউক্কে আগে ভালোবাসি নাই। কছম! (আঞ্চলিক টানে লিখলাম আরকি)❜ জাতীয় আদিক্ষেতা লেখক জাহিদের মধ্যে দেখাননি। নতুন করে এক নারীর প্রেমে পড়ে তার সামনে নিজেকে একেবারে খোলা বইয়ের মতো তুলে ধরেছেন। তাতে সোহিনী নাম্নী নারী তাকে গ্রহণ করুক বা না করুক, নিজের কাছে দায়মুক্ত ভারমুক্ত থাকবেন তিনি।
দুরদানার মধ্যে যেমন পুরুষভাব, সাহসে তিনি আকৃষ্ট হয়েছেন তেমন শামারোখের শারীরিক সৌন্দর্য, তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণার প্রেমে পড়েছিলেন।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে উপন্যাসের নারী দুই চরিত্র কিন্তু বাস্তবের এক প্রতিনিধি। দুরদানা নামের আড়ালে আসল মানুষটি শামীম শিকদার। পেশায় যিনি বিখ্যাত ভাস্কর এবং সিরাজ সিকদারের আপন বোন। শামারোখের বৈশিষ্ট্য বাস্তবের সুরাইয়া খানমের প্রতিনিধিত্ব করে। শামারোখের সেই প্রেমিক শাহরিয়ার বাস্তবের ক্ষণজন্মা তরুণ কবি আবুল হাসান। জাহিদই যে ছফা সেটা আরো বেশি প্রমাণ হয় উপন্যাসের এক চরিত্র যখন তাকে ❛মৌলবী জাহিদ হাসান❜ বলে সম্বোধন করে। বাস্তবে ছফা সাহেবকে মৌলবী বলে কে ডাকত এটা বেশিরভাগেরই জানা। লেখক বইয়ের শুরুতেই বলেছেন ❛সত্য কল্পকাহিনীর চাইতে আশ্চর্যতরো। এটা আপ্তবাক্য। যে কাহিনীর মূলে সত্যের স্পর্শ নেই, সে কাহিনী মূল্যহীন।❜ সুতরাং ফিকশনের সাথে যে সাদা সত্য মিশে আছে বুঝতে অসুবিধা হয়না।
উপন্যাসের শুরুর দিকে পড়তে আমার বেশ বিরক্ত লেগেছে। এক পর্যায়ে মনে হয়েছে ❛ধুরো! রেখেই দিই❜। আবার আহমদ ছফার লেখাকে রেখে দিবো এমন দুঃসাহস কী করেই বা দেখাই? বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক সময় এর ভেতর ঢুকে গেছি। আর লেখকের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে টুকটাক ধারনা থাকায় বাস্তবের সাথে সংযোগ স্থাপন করতেও সমস্যা হয়নি। বিধায় পড়তে আগ্রহ বেড়েছে এবং ভালো লেগেছে।
দুই খন্ডে প্রকাশিত হবার কথা থাকলেও সেটা আর সম্ভব হয়নি। প্রকৃতির কঠিন সত্য মৃ ত্যু র কাছে ধরা দিয়ে চলে গেছেন তিনি। সাথে নিয়ে গেছেন তার জীবনে আসা অন্যান্য নারীদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি। জানা হয়নি ❛কে সোহিনী?❜
আর কোনোদিন জানা হবেও না। এই হতাশা বা অসম্পূর্ণতা নিয়েই অসমাপ্ত ভাবে রয়ে গেলো ❛অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী❜।
Profile Image for Farhad Naeem.
36 reviews11 followers
February 4, 2019
"কল্পকাহিনী থেকেও সত্য অনেক বেশি আশ্চর্যতরো! যে কাহানীর মধ্যে সত্যের কোন স্পর্শ নাই, সেই কাহানি মূ��্যহীন!...............
নর-নারীর প্রেম হলো সবচাইতে জটিলতম শিল্পকর্ম!
প্রেমে পড়ার জন্য যেমন সৎ, একনিষ্ট হৃদয়বৃত্তির প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন প্রেম কথা বয়ান করার জন্য আরেক ধরনের নিষ্ঠা এবং সততার! "
- বইয়ের ব্যাককভারে লিখা ছিল কথাগুলা!

রিভিউ এর শুরুতে একটা কথা ধাক্কা দিই সবাইকে! টিএসসির সামনে বিখ্যাত "স্বোপার্জিত স্বাধীনতা" ভাস্কর্যটা কার হাতে গড়া জিজ্ঞাস করলে সবাই গুগল করে হলেও শামীম সিকদার এর নাম বলতে পারবে! কিন্তু শামীম সিকদার যে একজন মহিলা ছিল, সেটা কতজন জানেন? xD
অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী, আহমেদ ছফার আত্মজৈবনিক প্রেমের উপন্যাস! ছফার বই শুধু পড়ার মতো পড়ে গেলে এই বইটারে আপনার খুব নিম্নমানের মনে হবে! এইখানেই ছফার সাথে সবার বিস্তর বিস্তর ফারাক!তার "শাদা কথা"-গুলো অনেক গূঢ়! এই "মৌলবী" ছফা একটা মাল ছিল! মাল না হইলে, জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের স্মৃতিবিজড়িত কিয়োস্কটি আহমেদ ছফার নামে নামকরন হয়?
উপন্যাসটা শুরু হয়, জাহিদ তার কল্পনাপ্রসূত প্রেমিকাকে নামকরন করেন!প্রেমিকাকে এই নিজের দেওয়া নামকরণ করতে গিয়ে তিনি পুরো ৪ পৃষ্ঠা লিখে শেষ করছেন, "সাধ আর সাধ্য এক জিনিস নয়! আমার যদি সে কামালিয়াত থাকতো, একটি নাম, শুধু একটি নামে তোমার সত্তার আসল রূপ বিকশিত করার জন্যে সমস্ত জীবন ধ্যানে আসনে কাটিয়ে দিতাম!" জাহিদ তার প্রেমিকার নামকরণ করেন "সোহানী"! যারা প্রেমিকারে রোমান্টিক লাইন শুনাইতে চান, তাদের জন্য ১ম চাপ্টার পড়া আবশ্যক :p :p
জাহিদ পেশায় লেখক এবং গবেষক। ইউনিভার্সিটি হোস্টেলে থাকে এবং মাসে ১২০০ টাকা বৃত্তি দিয়ে কোন রকম ভাবে চালায় নিতেন!জাহিদ তার "সোহানী"-কে তার জীবনের প্রথম প্রেমিকা দূরদানার গল্প শুনান!
“এখানে সবকিছু বিকলাঙ্গ, সবকিছু অসুস্থ, অস্বাস্থ্যকর। এই পরিবেশে, এই পরিস্থিতিতে একজন তরুণী সমস্ত বাধা-নিষেধ অস্বীকার করে প্রবল প্রাণশক্তির তোড়ে চারপাশের সমস্ত কিছু একাকার করে ফেলতে চাইছে, আমি একে জীবনের স্বাধীনতা সৃষ্টির একটা মহৎ প্রয়াস বলে ধরে নিলাম” -এই ছিল দূরদানা aka শামীম সিকদার!
এন্ড ইয়াপ, শামীম সিকদারের সাইকেলের পিছনে বসে জাহিদ aka ছফা ঢাকা শহরে ঘুরতেন! প্রচন্ড ড্যাম কেয়ার এবং সাহসী দূরদানা চরিত্রটা আমার কাছে ভালো লাগছে!
এরপরে, জাহিদ "সোহানী"কে তার জীবনে আসা ২য় প্রেমিকা শামারোখ এর গল্প বলেন! শামারোখ ছিল ভয়ংকর সুন্দরী, যোগ্য কিন্তু একই সাথে দুর্বোধ্য, রহস্যময়ী! কবি শাহরিয়ার এর জন্য শামারোখ যখন ছফাকে ত্যাগ করে,(কিংবা উল্টোটা বলা যায়, জাহিদ শামারোখকে প্রত্যাখ্যান করে) কবি শাহরিয়ার aka আবুল হাসান এবং শামারোখ এর পরিণতি কি হয়? সেটা ছফা বলছেন এইভাবে-
"জীবন শিল্প নয়,কবিতা নয়। জীবনে যা ঘটে শিল্প ও কবিতায় তা ঘটে না।জীবন জিবন ই। জীবনের সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না এবং জীবন ভয়ানক নিষ্ঠুর। সমস্ত প্রতিশ্রুতি, সমস্ত প্রতিজ্ঞা, সমস্ত স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের ওপারে জীবনের লীলাখেলা।"
যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশের রাজধানী ঢাকার ছবি লেখক বেশ ভালো ভাবে ফুটায় তুলছেন! ঠোটকাটা ছফা ঐ সময়ের বিভিন্ন অধ্যাপকের চরিত্র কাটাছেড়া করতে দ্বিধা বোধ করেন নাই!

বইটির বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন কথাগুলোকে সাঁজালে কথাগুলো সুন্দর একটি কবিতা হয়ে উঠে। সামহোয়্যার ইন ব্লগের তানুসা নামের একজন ব্লগার কথাগুলোকে সাজিয়ে একটা কাব্যিক রূপ দিয়েছেন! প্রতিটা লাইন এই বইয়ের, তানুসা শুধু তার মতো সাজাইছেন!লেখাটি হুবহু কপি করে দিলাম -
'নারী,যার আঁচল জুড়ে ভালবাসা আর মায়ার পূর্ণতা পাবে,
নারীর চোখে তাকিয়ে দেখ-দেখবে সহজ সরল,
মায়া ভরা এক দীপ্ত আলো,
সে অবাধ ভাবে মায়া দিতে পারে,বাঁচতে শিখাতে পারে তোমায়,
তোমার ভেতরের মানুষটাকে চিনাতে পারে।
সে দেবী…সে কখনোও উন্মাদ, কক্ষনোও শান্ত,
কখনোও বধূ নামের তোমার সেই আত্মার প্রশান্তি,
নারী মানে –বহুদুর হেটে ফিরে এসে তুমি
যখন হুমড়ি খেয়ে পড়বে তার আঁচলে একটু ঘুমের জন্য
মায়া নামের অনুভুতিটা তার বুকের গন্ধে খুঁজে পাবে,
যাকে তোমরা নারী বলো-তার আরেকটা ছাঁয়ার নাম-প্রশান্তি,
শীক্ততা ,পবিত্রতা, মায়া, বন্ধন তার অলংকার,
হঠাৎ বুকের পরে সিক্ত স্পর্শের স্পর্শ সে,
কন্যার আলতা পায়ের রক্তাক্ত ভাল লাগা সে,
লক্ষ ফাগুনের কৃষ্ণচূড়ার আবিড় আলো সে,
রক্ত –মাংসে গড়া এক বস্তু ভেব না তাকে,
তার ডানায় আছে উন্মাদনা,
সাম্যবাদ এর সংগ্রামী চেতনা-তা ভুলে যেওনা,
নারী কোন বদ্ধতায় আবদ্ধ থাকবে না-
সীমা কাকে বলে তাকে বুঝাতে এসো না,
তার প্রাপ্তি, তার সাম্য-তার –ই,
নারী আজ জানে –জীবন মানে শুধু বেঁচে থাকা নয়,
নিজের আলোয় নিজের জীবনকে রাঙ্গানো মানেই জীবন…
ও হে মানব –মানবীর হাত টেনে ধরো না,
তাকে তোমরা আটকাতে পারবে না,
হৃদয়পুরে তার আজ বড্ড আশা,

সে আকাশে ,নিজ হাতে ,নিজ উল্লাসে ,
স্বাধীনতার ,নিজস্বতার আলোর প্রদীপ আঁকবে

সাদা ,সফেদ শাড়ি ,আলতা পায়ে
নিজস্বতার আল্পনা আঁকবে মাঠ জুড়ে,

ছুটতে দাও,বাচতে দাও তাকে –তার মতন
করে…
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
August 15, 2024
'তুমি আমার জীবন। তোমাকে না পেলে আমি বাঁচবো না। তুমি আমার গন্তব্য, আমার মঞ্জিলে মকসুদ।তোমার জন্যে, শুধু তোমার জন্যে দুনিয়ার অপর প্রান্ত অবধি আমি ছুটে যাব। দুস্তর সমুদ্র পাড়ি দেব। দুর্লঙ্ঘ্য পাহাড়ের শীর্ষ চুড়োয় আমি আহরণ করব। তুমি আমার মৃত্যু। তোমার পেছন পেছন আমি তীর্থযাত্রীর মতো ছুটে যাব। যদি মৃত্যু আমাকে গ্রাস করতে ছুটে আসে শহিদের আবেগ নিয়ে আমি সেই মরণকে আলিঙ্গন করব।

কাঁদায় আটকানো হাতি যেমন ডাঙ্গায় ওঠার জন্য শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে আমিও সেরকম স্মৃতির জলাভূমি থেকে নিয়ে আসার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি প্রাণপণ।

কাজটা সহজ নয় সোহিনী। একজন মানুষের শরীরের একটা হাত কিংবা পা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে অবশ হয়ে গেলে মানুষ যেমন স্বেচ্ছায় আপন হাতে সে-অঙ্গটি কেটে বাদ দিতে পারে না, সেরকমই অতীতকে বর্তমানে টেনে তুলে তার জীর্ণ অংশ ছেঁটে ফেলাও একরকম অসম্ভব। দিব্যচেতনা অর্জন না করলে কেউ তা পারে না। আমি মনে করছি আমার হৃদয়ে প্রেম জন্ম নিয়েছে।

মানুষ একজনমাত্র নারীকেই মনে প্রাণে কামনা করে। আর সেই সম্পূর্ণ নারী জগতে মহামূল্যবান হীরকখণ্ডটির চাইতেও দুর্লভ। তাই খণ্ড খণ্ড নারীকে নিয়েই মানুষকে সন্তুষ্ট থাকার ভান করতে হয়। তোমার মধ্যে একটা অখণ্ড নারীসত্তার সন্ধান আমি পেয়েছি। আমার কেমন জানি আশঙ্কা হয়, এই কাহিনী যখন আমি শেষ করব, তুমি হয়তো এই বিশাল পৃথিবীর কোথাও হারিয়ে যাবে। তবু আমার সুখ, আমার আনন্দ, আমার প্রাণের সমস্ত উত্তাপ কেন্দ্রীভূত করে একটি সম্পূর্ণ নারীকে আমি ভালোবাসতে পেরেছি। জীবনে ভালোবাসার চাইতে সুখ কিসে আছে? '

গ্রন্থটি আহমদ ছফার আত্নজৈবনিক প্রেমের উপন্যাস।
গ্রন্থে আহমদ ছফার জীবনে যে তিনজন মহীয়সী নারীর আগমন ধটেছিলো তার বর্ণনা করেছেন। শামীম শিকদার (দুরদানা) ছিলেন আহমদ ছফার প্রথম প্রেমিকা। এছাড়াও আরও দুজন রমণীর কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তন্মধ্যে শামারোখ ছিলেন ছফাসাবের দ্বিতীয় প্রেমিকা।প্রার্থিব জীবনে অপরুপ সুন্দরী এক নারী।

'অর্ধেক নারী অর্ধেক ইশ্বরী' বইটি পড়ে ক্ষানিকটা অসন্তুষ্ট হয়েছি। গ্রন্থটিতে ছফাসাব সোহীনিকে উদ্দেশ্য করে যে এতোগুলো কথা লিখেছে তার তেমন কোনো পরিচয় দেননি। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হবে বলে বোধহয় তিনি সোহিনী চরিত্রের বর্ণনা দেন নি তেম���। অথচ দ্বিতীয় খণ্ড আর প্রকাশিত হবেনা। প্রকাশিত হবার আগেই নক্ষত্রের পতন হয়েছে.....
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews64 followers
Read
August 2, 2021
জাহিদ সাহেব,বিশ্ববিদ্যালের একজন পিএইচডি ফেলো,সে তার জীবনের প্রিয় মানুষ সৌহিনীকে তার অতীত প্রেমের ঘটনা বর্ণনা করছেন।যেখানে ছিল দুরদানার মতো সাহসী নারী গল্প,যা পড়তে পড়তে অবাক বনে যেতে হয়।
আবার,এই গল্পে রয়েছে শামারোখের মত অনিন্দ্য সুন্দরী,যার সৌন্দর্যের বর্ণনা পড়ে মন রোমাঞ্চিত হয়।

আহমদ ছফার লেখার সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল 'যদ্যপি আমার গুরু'বইটির মাধ্যমে, তার প্রথম বইটা পড়েই বেশ ভালো লাগছিল।এরপর 'গাভি বৃত্তান্ত 'পড়ে আরো চমৎকৃত হয়েছিলাম।তারপর ছফা সাহেবে গল্প গ্রন্থও আমাকে নিরাশ করেনি।চমৎকার বর্ণনা আর চমৎকার উপমা ছফার লেখাকে এক অন্য মাত্রাই নিয়ে যায়।অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী 'বইয়ে আমার সবচে চমৎকার লেগেছে মানুষের বর্ণনা,এতো চমৎকার বর্ণনা মনে হয় মানুষটা চোখের সামনে ভাসছে।সব মিলিয়ে বইটা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
Profile Image for Shariful Sadaf.
195 reviews108 followers
August 27, 2020
ভিন্নতর একটি লেখা, একদম অন্যরকম। শুরুতে অনেক কঠিন কঠিন প্রেমের কথা লিখেছেন কিন্তু শেষটা বেশ সাবলীল ছিলো।
Profile Image for Rizal Kabir.
Author 2 books45 followers
January 25, 2020
রোমান্টিক লেখা কম পড়িনি আমি, কিন্তু এটাকে ঠিক কোন ঘরানার প্রেমের উপন্যাস বলবো আমি ঠিক জানিনা। সোহিনী নামক কাল্পনিক এক নারীকে উদ্দেশ্য করে আহমেদ ছফা লিখে গেছেন তার নিজের জীবনের অনবদ্য প্রেমের গল্প।
প্রেমের পটভূমিতে লেখকের জীবনের গভীরতম বোধের ছাপ পাওয়া গেছে উপন্যাসে। প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে এসেছে রাজনীতি, সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল।

এই বইয়ের প্রধান নারীচরিত্র দুজন হলেনঃ দুরদানা এবং শামারোখ।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দুরদানা একজন স্বাধীনচেতা, তথাকথিত রক্ষণশীল নারীত্বের ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো একজন তরুণী। পত্রলেখকের সাথে তার ওঠাবসা, রহস্যময় রসায়নের ফলে সংকীর্ণমনা সমাজের তীর্যক এবং আক্রমণাত্মক ভূমিকায় প্রকাশ পায় আমাদের সমাজের নৈতিক দৈন্য।

এরপর দ্বিতীয় নারীচরিত্র হিসেবে আসে কন্যা শামারোখ। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে, ঘটনার ব্যাপ্তিতে এই সম্পর্কটি ছাড়িয়ে গেছে অন্য সবকিছু। শামারোখের মাধ্যমে লেখক নারীকে আবিষ্কার করেছেন ভিন্নভাবে। খুব কাছে, একদম নিঃশ্বাসের দূরত্বে এসে লেখক আবিষ্কার করেছেন নিজেদের মধ্যে অলঙ্ঘ্য ব্যবধান। নারীর সৌন্দর্য, চারিত্রিক দুর্বোধ্যতা - সব মিলিয়ে অসাধারণ এক উপাখ্যান।
এই দুই নারী চরিত্রের কাউকেই লেখক নিজের অধিকারে পান নি, সে চেষ্টাও করেন নি। যদিও ঘটনার প্রেক্ষাপটে কমবেশি শারীরিক নৈকট্য লাভ করেছেন। কিন্তু তা কখনই মাত্রা ছাড়ায় নি, তবে সেই অনুপাতে সমাজ কর্তৃক বঞ্চনা লাভ করেছেন আরো অনেক বেশি।
প্রেমের উদ্দীপনা যৌবনকে কিভাবে আন্দোলিত করে সেটাই বারবার প্রকাশ পেয়েছে, শামারোখের নারীত্ব ও সৌন্দর্যের আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এক তরুণ কবির কথাও চলে এসেছে। তবে বারবার লেখকের ভাষায় মূর্ত হয়েছেঃ
জীবনে ভালবাসার চাইতে সুখ কিসে আছে?
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
April 20, 2021
দুঃখ হচ্ছে শেষটা পড়ে। দ্বিতীয় খন্ড কেন নেই তার জন্য প্রচন্ড হাহাকার ও হচ্ছে!
Profile Image for Mubtasim  Fuad.
316 reviews41 followers
October 25, 2024
আহমদ ছফা ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা লেখক। উনি আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম। এখন অবধি আমি ওনার ৫টি উপন্যাস পড়েছি। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় দুটি উপন্যাস হচ্ছে, গাভী বৃত্তান্ত এবং একজন আলী কেনানের উত্থান পতন। আমার সেই প্রিয় তালিকায় নতুন করেই সংযুক্ত হচ্ছে এই বইটি।
পাঠক মহলে এই বইটি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে নারী পাঠকদের নিকট, এই বইটি ছবি তোলার জন্য অতি প্রিয়। শাড়ি পড়ে, বইটি হাতে নিয়ে, হাস্য উজ্জ্বল মুখে একটা ছবি। সে যে নারী এবং একীধারে একজন ঈশ্বরী সেটাই সে বুঝাতে চাচ্ছে।
যাইহোক, এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র হচ্ছে জাহিদ হাসান। সেই গল্পের ন্যারেটর। তিনি সোহিনী নামক এক নারীর নিকট নিজের অতীতের অন্য দুই নারীর সাথে যে সম্পর্ক ছিল সেটাই প্রকাশ করছেন সমগ্র উপন্যাস জুড়ে।
প্রথমে আমরা জানতে পারি, চারুকলার শিক্ষার্থী দুরদানা সম্পর্কে। লেখক তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে। এবং পরবর্তীতে জানতে পারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ইংরেজি বিভাগের শামারেখের সম্পর্কে।
এই দুই তরুণী কিভাবে জাহিদ হাসানের জীবনে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল এটাই উপন্যাসের উপজীব্য বিষয়।

আমি বইটি শেষ করে ফেসবুকে বেশ কিছু রিভিউ পড়ি, সেখানে জানতে পারি, এই উপন্যাসটা সত্যি ঘটনার উপর ভিত্তি করে লিখিত। অনেকটা মেটাফোরিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করা। যেখানে আহমদ ছফা নিজেকে জাহিদ হাসানের ভূমিকায় দেখিয়েছেন। এবং দুরদানার চরিত্রে ছিল তৎকালীন সিরাজ শিকদারের বোন ভাস্কর শামীম শিকদার, এবং পরবর্তীতে শামারেখ ছিল ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা সুরাইয়া খানম।

যখন উপন্যাসের এই কল্পিত চরিত্র গুলার আসল রুপ জানতে পারি তখন উপন্যাসটা আমার কাছে আরও বেশি দারুণ লাগা শুরু করে।
Profile Image for Rafiq Shardar.
42 reviews3 followers
July 9, 2020
বইঃ অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী
লেখকঃ আহমদ ছফা
প্রিয় বন্ধু তানবীর,
বইটি তোর পরামর্শে পড়তে শুরু করি, কেমন লেগেছে সেটা জানানোর ইচ্ছা দমন করতে পারছি না। স্পাই স্টোরিজ বইটি পড়ার পর গুডরিডসে ঢুকে একদিন দেখেছিলাম চিঠি লেখে রিভিউ দেওয়ার পদ্ধতি। আমি যাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে বই পড়ছি সেগুলোর রিভিউয়ের ক্ষেত্রে চিঠি লেখে রিভিউ পদ্ধতিটা অবলম্বন করতে শুরু করি।
অনেকগুলা বই পড়ার পর মনে মনে আফসোস হয় কেন আগে এই বইটা পড়লাম না। কিন্তু এই বই পড়ার পর মনে হলো কেন পড়লাম এই বই? কেন মনে একটা অতৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে হবে? (ঘুমানোর আগে শেষ করেছিলাম) জীবন আসলেই এরকম। জীবনে কিছু কিছু অতৃপ্তি থাকে সেটা হয়তো আমাদেরকে বোঝাতেই লেখক তার এই লেখা শেষ করেননি বা তিনি তার নিজের অতৃপ্তিটাই পাঠককে অনুভব করালেন। “জীবন শিল্প নয়,কবিতা নয়। জীবনে যা ঘটে শিল্প ও কবিতায় তা ঘটে না। জীবন জিবন ই। জীবনের সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না এবং জীবন ভয়ানক নিষ্ঠুর। সমস্ত প্রতিশ্রুতি, সমস্ত প্রতিজ্ঞা, সমস্ত স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের ওপারে জীবনের লীলাখেলা”।
পাঠ সংক্ষেপঃ জাহিদ স্কলারশিপে কোনরকমে দিনযাপন করছিল সেই সময় তার সাক্ষাৎ হয় দূরদানার সাথে। অন্যান্য মেয়েদের মত তিনি না, তিনি স্বাধীনতাচেতা। জাহিদের সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হয় কিন্তু বেশিদিন তা টেকে না। দুরদানার ভাইয়ের খুন হবার পর থেকেই তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। তারপর জাহিদের জীবনে আসে শামারোখ যার সৌন্দর্য দিয়ে তিনি সব জয় করতে পারেন। কিন্তু তার জীবনেও আছে নানা ধরনের বিপত্তি। বাইরে থেকে শামারোখের যে সৌন্দর্য দেখা যায় ভিতরে তার বিপরীত চরিত্র দেখতে পান জাহিদ। ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে বেশি কবির সংখ্যা বেশি। শেষে এক প্রতিভাবান কবির সাথে শামারোখের প্রণয় হয় যা সদ্য সুস্থ হওয়া এক রোগীর জীবনে বিপদের মত আসে। অনিয়মের কারণে কবির মৃত্যু হয়। শেষে শামারোখ বিয়ে করে পাড়ি দেন আমেরিকায়।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আহমদ ছফা তার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসে তিনি তার জীবনে আসা নারীদের কথা বলতেছিলেন সোহিনীকে। কিন্তু সেই সোহিনী কে তা না জানা গেলেও শামারোখ আর দূরদানার সম্পর্কে জানা যায়। শামীম সিকদার যে একজন মহিলা সেটাও প্রথম জানলাম এই বই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে, দূরদানাই হল শামীম সিকদার।
ইতি,
রফিক সরদার
Profile Image for Dipak Karmoker.
68 reviews2 followers
October 25, 2024
‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’—মূলত আহমদ ছফার ব্যক্তিগত প্রেমের উপাখ্যান, যেটাকে তিনি আপাদমস্তক একটা প্রেমের উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন। সে প্রেম কতখানি প্রেম, তা একপাক্ষিক না দ্বিপাক্ষিক, কতখানি সফল বা ব্যর্থ তা— আমাদের অনুভব করে নিতে হবে। কারণ লেখক তাঁর লেখায় অনেক কিছু যেমন বলেছেন, তেমনি বলেননি অনেক কিছুই। তবে, এটুকু আন্দাজ করা যায়—উপন্যাসে বর্ণিত প্রেমের সাথে, আমরা ‘প্রেম’ বলতে যা বুঝি, তার মাঝে বিস্তর তফাৎ আছে। তবু আলোচনা সুবিধার্থে আমরা একে প্রেম বলেই উল্লেখ করবো।


১৯৯৬ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটিতে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল অবধি সময়ে আহমদ ছফার জীবনে আসা দুজন নারীর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা আমরা জানতে পারি। যেহেতু বাস্তব সময় ও চরিত্রের ছায়া নিয়ে রচিত, ফলে সমসাময়িক অনেক বিষয় ও মানুষের কথাও মূল ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে এসেছে। কিছু ছোট-খাটো বিষয় বাদ দিলে এবং লেখাটিকে উপন্যাসের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই বলতে হয় যে, লেখক হিশেবে ছফা খুব চমৎকার লিখেছেন।

আহমেদ ছফার সবচেয়ে বড় গুণ—ব্যতিক্রমী বিষয় নির্বাচন। তবে শুধু ব্যতিক্রমী বিষয় নির্বাচনই নয়, যে কোন বিষয়েই তাঁর লেখার ক্ষমতাও ভালো। বেশ ঝরঝরে, সহজ এবং সাবলীল গদ্যশৈলীতে একটা নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে থেকে যতটুকু বলতে চান তার সবটাই বলতে পারেন, যেটা বলতে চান না তা পাশও কাটিয়ে যান সহজভাবে। যার প্রমাণ আমরা ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’তেও পাই।

আত্মজীবনীর মতই উত্তম পুরুষে রচিত ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’-তে আহমদ ছফা নিজের নাম রেখেছেন জাহিদ, তাঁর দুজন প্রেমিকার নামকরণ করেছেন—দুরদানা আফরাসিয়াব ও শামারোখ নামে। একথা কারও জানতে বাকি নেই যে দুরদানা মূলত বিখ্যাত ভাস্কর শামীম শিকদার ও শামারোখ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও কবি ড. সুরাইয়া খানম।

আরও একজন নারী অবশ্য আছেন, তিনি লেখকের ‘বর্তমান’ প্রেমিকা, তাঁর নাম সোহিনী। এই সোহিনীই একমাত্র প্রধান চরিত্র যাঁর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। আবার লেখকের লেখার ধরন থেকেও এটা আন্দাজ করা যায় যে, উপন্যাসেও সোহিনী একটি কল্পিত চরিত্র মাত্র, উপন্যাসের মধ্যেও যার কোন রক্ত-মাংসের শরীর নেই।
মূলত লেখাটিকে উপন্যাস হিশেবে গড়ার জন্যই সোহিনীর উদ্ভব। এই কল্পিত প্রেমিকা সোহিনীর কাছেই লেখক একজন শুদ্ধ প্রেমিকের মতো—যেন পরবর্তীতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়—সেই লক্ষ্যে তাঁর পূর্বের প্রেমিকাদের বা জীবনে আসা নারীদের সঙ্গে ঘটা যাবতীয় কীর্তিকলাপ সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তবে সেই দুজন প্রেমিকার সাথে কোন রোমান্টিক প্রেমের আলাপ না করলেও, মনে মনে তাঁদের প্রতি দুর্বল হলেও মুখে তার বিন্দুমাত্র প্রকাশ বা সে কথা বইয়ে উল্লেখ না করলেও, সোহিনীর প্রতি তিনি নিবেদন করেছেন মনের অতল থেকে রচিত প্রেমের অজস্র কথামালা, নানান বিশেষণে করেছেন বিশেষিত, সোহিনীকে তুলনা করেছেন ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’র সঙ্গে।


বর্তমান প্রেমিকা সোহিনীর কাছে ব্যক্ত করা সেই প্রেমের গল্পদ্বয়ের দিকে একটু গভীরভাবে আলোকপাত করলে দেখা যাবে—দুটো গল্পের প্রথমটি শামীম শিকদারকে নিয়ে, দ্বিতীয়টি ড. সুরাইয়া খানমকে নিয়ে। ঘটনা দুটোকে আপাত দৃষ্টিতে দুটি ভিন্ন সময়ের মনে হলেও বা লেখক এক নারীর গল্পের মধ্যে আরেক নারীর ছিঁটেফোঁটা-বর্ণনা না করলেও, সময়ের হিশেবে দেখা যায় দুটো ঘটনা একেবারেই কাছাকাছি সময়ের।
শামীম শিকদারের সাথে পরিচয় ১৯৭২ সালে। সেই সম্পর্ক কতদিন টিকেছিল তা আমরা জানতে না পারলেও শামীম শিকদারের ভাই সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারের (উপন্যাসে ইউনুস জোয়ারদার) মৃত্যু অবধি সেই সম্পর্কের হালকা-পাতলা বিস্তারের কথা আমরা জানতে পারি। সিরাজ সিকদার মারা যান ১৯৭৫ এর ২ জানুয়ারি।
এদিকে সুরাইয়া খানমের সাথেও আহমদ ছফার পরিচয় হয় যুদ্ধের পরে। ১৯৭৪ সালে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান, আহমদ ছফার সাথে তাঁর পরিচয় তার বেশ খানিকটা আগে থেকেই। এদিকে কবি আবুল হাসানের (উপন্যাসে নাম শাহরিয়ার) সাথে সুরাইয়া খানমের প্রেমও ১৯৭৪ সাল থেকেই। আবুল হাসান মারা যান ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর। ফলে আবুল হাসানের সাথে প্রেম হবার আগ অবধিই আহমদ ছফার সাথে সুরাইয়া খানমের সম্পর্ক ছিল, অর্থাৎ ১৯৭৪ সালেই সে সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে। ফলে দুটো সম্পর্ক যে কাছাকাছি বা একই সময়ের তাতে কোন সন্দেহ নেই।

শামীম শিকদারের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির জন্য আহমদ ছফা দেশের তৎকালীন অস্থির রাজনীতিকেই দায়ী করেন। সিরাজ সিকদারের বোন হবার জন্য পরিস্থিতির কারণেই ছফার সাথে শামীম শিকাদারের ক্রমেই দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে এবং সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পরে শামীম শিকদারকে সপরিবারে আত্মগোপনে থাকতে হয় বলেও তাঁদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার জন্য এই কারণগুলো পর্যাপ্ত মনে হয় না। আবার সম্পর্ক কেন আর এগুলো না সে ব্যাখ্যাও আহমদ ছফা দেননি, রেখেছেন ধোঁয়াশা। যে ধোঁয়াশা তিনি রাখেননি শামারোখের ক্ষেত্রে—আবুল হাসানের সাথে সুরাইয়া খানমের প্রেম, আবুল হাসানের (কু)কীর্তি এবং আবুল হাসানের মৃত্যুর পনেরো দিন পরে সুরাইয়া খানমের বিয়ে করার কথা উল্লেখ করলেও, আরেক নারী শামীম শিকদারের সাথে প্রেমটা কেন এগুলো না তা নিয়ে তিনি এমন বিস্তারিত পথে হাঁটলেন না। দু’ক্ষেত্রে দু’রকমের আচরণে দুটি বিষয় ধারণা করা যায়—এক. শামীম শিকদারের সাথে সম্পর্কটা ছফার অনাগ্রহের জন্যই এগোয়নি। কারণ বিশ বছর বয়সী শামীম শিকদারের সাথে পরিচয়ের কিছুকাল পরেই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে সুরাইয়া খানমের এবং তিনি সুরাইয়া খানমের সৌন্দর্যের কাছে পরাজিত হন। দুই. শেষ অবধি শামীম শিকদারের প্রতি ছফার একটা শ্রদ্ধা অবশিষ্ট থাকলেও সুরাইয়া খানমের প্রতি সেই শ্রদ্ধা তাঁর আর ছিল না, ফলে সুরাইয়া খানমের ব্যাপারে কিছুটা বিষোদগার করা থেকে নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি, তাই বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, যেটা শামীম শিকদারের ক্ষেত্রে করেননি। যদিও রিকশায় চুমু খাওয়া, বুকে হাত রাখার যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, সেটার মতো করে সুস্পষ্টভাবে প্রেমবিচ্ছেদের কারণও উল্লেখ করতে পারতেন।

নিজের গল্প বলার ক্ষেত্রে আমাদের একটি চেষ্টা থাকে নিজেকে সবসময় সঠিক হিশেবে উপস্থাপন করার, ছফার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনেকের দ্বারা তিনি অপমানিত বা লাঞ্ছিত হয়েছেন, তার উল্লেখ আমরা পাই; আবার পরিচিত অনেকের প্রকৃত চরিত্র কেমন তাও তিনি উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটির বর্ণনা পাওয়া যায় না। নিজেকে আলাভোলা গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন সাধারণ মানুষরূপেই উপস্থাপন করেছেন, যিনি নিজে কোন দোষ করেন না, কিন্তু সবাই তাঁকে ভুল বোঝে। নিজের ব্যাপারে যেটুকু যা নেতিবাচক কথা বলেছেন, তাও এমন করে বলেছেন যেন পাঠকের কাছে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি শামারোখকে বিয়ে না করতে পারার জন্য কিছু যুক্তি দিয়েছেন, যুক্তিগুলো মানার যোগ্য হলেও মূল সত্য এই যে—কাউকে প্রেমিকা হিশেবা কামনা করা ও তাকে বিয়ে করার বিষয়টা আলাদা ও কঠিন—পুরুষ-মানসের এই গোঁড়া-স্বভাবে আক্রান্ত হয়েই তিনি শামারোখকে বিয়ে করতে পারেননি বা চাননি—তা বুঝতে পারা যায়। তবে শামারোখকে যে মশারির স্ট্যান্ড দিয়ে আচ্ছা মতো পিটিয়েছেন, নিজের দুর্নামের বিষয়টি বিবেচনায় না এনে অকপটে সে কথা উল্লেখ করেছেন।
আবার বয়সে ছোট, কবি খ্যাতি প্রাপ্ত ও সুরাইয়া খানমের প্রেমিক বনে যাওয়া আবুল হাসানের প্রতি ছফার কিছুটা হীনম্মন্যতা প্রকাশ পেয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে। হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। সুরাইয়া খানম যদি আবুল হাসানের সাথে প্রেম না করতেন তাহলে হয়তো এরকম মনোভাব সৃষ্টি হতো না।
আরেকটি মজার বিষয় হলো, আহমদ ছফা তাঁর বইয়ে সুরাইয়া খানম ও তাঁর সম্পর্ককে সেই সময়ের যতটা আলোচিত বিষয় বলে উপস্থাপন করেছেন, আদতে হয়তো বিষয়টি অতটা আলোচিত ছিল না। যতটা আবুল হাসান ও সুরাইয়া খানমের প্রেমের ক্ষেত্রে শোনা যায় (এখন অবধি), এই উপন্যাসের বাইরে ছফা ও সুরাইয়া খানমের প্রেমের কথা সেই অর্থে শোনাই যায় না, উপন্যাস রচিত না হলে হয়তো আমরা জানতেই পারতাম না।

বাস্তব চরিত্র নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে বাস্তবের চরিত্রগুলোর সাথে কিছুটা অন্যায় করা হয় বলেই আমি মনে করি, অন্তত এ ধরনের উপন্যাসের ক্ষেত্রে কথাটা সত্য। কারণ যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মুহূরর্তের কথাগুলো ছাপার হরফে উপস্থাপিত হয়েছে তা প্রকাশিত হওয়া উক্ত নারীদের ব্যক্তিজীবনে কিছুটা হলেও বাজে প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

তবে সর্বশেষ এটাই বলতে চাই, বইটি পড়তে আমার কোথাও তেমন খারাপ লাগেনি, এমনকি কোনরূপ বিরক্তি আসেনি, বরং ছফার লেখা একদম শুরু থেকে শেষ অবধি আমি যথেষ্ট উপভোগ করেছি। তাই যাঁরা পড়বেন ভাবছেন, তারা বিনা দ্বিধায় পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
December 2, 2021
আহমদ ছফা রচিত আমার সবচে পছন্দের বই 'যদ্যপি আমার গুরু'।
জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের বাড়ি আমার বাড়ি (দোহার, ঢাকা) থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ঐ মানুষটাকে তবু কি চেনা হতো, যদি না আহমদ ছফা পড়তাম?
এর আগে বলি কিংবা পরে, পছন্দের তালিকায় রয়েছে 'ওঙ্কার'। এমন অসাধারণ বই খুব কম রচিত হয়েছে এই বাংলায়।
লেখকের পরবর্তী বইগুলো যেমন- গাভী বিত্তান্ত, পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গ পুরাণ, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী ভালো লাগলেও, মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক রচনা হওয়ায় ততটা স্পর্শ করেনি। আমি জানি না কেন.. হয়ত সামগ্রিক কিছু প্রত্যাশা করছিলাম। যেমনটা 'বাঙালী মুসলমানের মন'।

এই বই পাঠের সমসময়েই হাতে তুলে নিয়েছি 'ঝিনুক নীরবে সহো'। নীরবে রোগ সইতে থাকা আবুল হাসানই 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী'র মলাটে বন্দী পড়ে রইলেন কিনা তা-ই এখন দেখার বিষয়।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, একই সাথে দুটো বই পড়ার মজা হচ্ছে, যদি কোনরকমে এরা রিলেটেড হয়, তাহলে মজাটা দ্বিগুণ হতে সময় লাগে না। কিছুদিন আগে যেমন, নিল গেইম্যান এর 'নর্স মিথলজি' এবং 'স্টোরিজ' পড়ছিলাম। এবং দুটোর গল্পই কানেক্টেড, ফলত, পড়তে ভালো লেগেছে।
Profile Image for Sadia Haque.
13 reviews4 followers
August 31, 2021
এই বই এর শুরুর অংশ পড়ে মনে হইসিল খুব আধ্যাত্মিক লেখা টেখা হবে বোধ হয়। তাই রাতে কলেজের ব্যাগে রেখে দিসিলাম, ক্লাসে বসে পড়ব দেখে। বই এর মেইন ঘটনা শুরু হউয়ার পর দেখলাম পড়তে আর ভালো লাগতেসে না। তাই ভাবসিলাম পরের দিন চেঞ্জ করে অন্য বই আনব। তারপর টানা চার পাঁচ দিন সকালে উঠে হুড়াতাড়ার ভেতরে আর মনে ছিল না চেঞ্জ করতে। আর কিছু না পেয়ে শেষে এটাই পড়সি। এই চার পাঁচ দিনে একটু একটু করে পড়তে পড়তে বইটা শেষ হয়ে গেল লাস্টে।

আমার কেন কাহিনী এত বাজে লাগসে এখনও জানি না। খুব ডিস্টার্বিং কাহিনী লাগসে। বেশিরভাগ মানুষকে বলতে দেখসি, প্রথম অংশ পড়েই নাকি ঝামেলা লাগতেসিল। মেইন ঘটনা শুরু করার পর ভালো লাগসে। অদ্ভুত। বইটা কয়েক বছর আগের পড়া। তখনই লেখাটা লিখে ফেললে হয়তো ভাল করে বলতে পারতাম কি জন্যে বাজে লাগসে। হাতে প্রচুর সময়। নতুন করে আবার পড়া উচিত নাকি বুঝতেসি না। তাহলে হয়তো দুএকটা লেজিট কারণ দিতে পারতাম। এতদিন পর এসে শুধু মনে আছে, পড়তে খুব যন্ত্রণা লাগসিল।
Displaying 1 - 30 of 152 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.