হতাশাগ্রস্থ বিজ্ঞান নামে অভিহিত অর্থনীতি ছিল একদিন সমাজবিজ্ঞানের দুয়োরানি।অথচ অর্থনীতিই আজকের সমাজবিজ্ঞানের সম্রাজ্ঞী। এর আওতা শুধু চাহিদা-জোগান বা রুটি-রোজগারেরর মতো আটপৌরে সমস্যায় সীমিত নয়। অর্থনৈতিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, সংগঠন ও সিদ্ধান্ত তত্ত্বে এবং সমাজতত্ত্বের সব শাখায়। জন্ম, বিবাহ, ধর্ম, এমনকি ভাষা নিয়ে গবেষণায়ও প্রয়োগ করা হচ্ছে অর্থনীতির সূত্র।দুর্ভাগ্যবশত অর্থনীতির বিকাশমান মাত্রা ও নতুন ধারাসমূহের বৈভন এখনো বাংলা ভাষায় প্রতিফলিত হয়নি। বাংলায় অর্থনীতি এখনো মান্ধাতা আমলের পাঠ্যবিষয় ও বাম-ডানির তরজায় সীমাবদ্ধ।গতানুগতিক গণ্ডির বাইরের কিছু অর্থনৈতিক তত্ত্বের সঙ্গে বাঙালি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবে এ বই।প্রবন্ধগুলোর বিষয়বস্তু বিচিত্র ও কৌতূহলোদ্দীপক।একটি প্রবন্ধের শিরোনাম ‘ভেগোলজি ও অর্থনীতি।’ দুটি প্রবন্ধে অর্থনীতিতে অনভিপ্রেত পরিণাম ও মিত্রপক্ষের গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।দটি প্রবন্ধের উপজীব্য বিশ্বায়ন। সুখ ও অর্থনীতির সম্পর্ক নিয়ে পর্যালোচনা দেখা যাবে একটি নিবন্ধে।তথ্য অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি’তে। একটি প্রবন্ধে জন্মদিনের অর্থনীতি ও আরেকটি প্রবন্ধে সরকারের অপচয় নিয়ে বিশ্লেষণ রয়েছে। নির্ভেজার গবেষণামূলক এই বই লেখা হয়েছে সহজ ভাষায়, বৈঠকি মেজাজে। সূচিপত্র * ‘আজব’ ও ‘জবর-আজব’ অর্থনীতি * মিত্রপক্ষের গুলি : অনভিপ্রেত পরিণামের অর্থনীতি * সুখের লাগিয়া : সুখ ও অর্থনীতি * ভেগোলজি ও অর্থনীতি : ‘না মিথ্যা না সত্য’ * সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি : অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তথ্যের ভূমিকা * শুভ জন্মদিন : জন্মদিনের অর্থনীতি ও রাজনীতি * সরকারের অপচয় : রাজনৈতিক অর্থনীতি * বিশ্বায়ন : একটি সমীক্ষা ও কয়েকটি অমীমাংসিত প্রশ্ন * বিশ্বায়ন ও বাঙালির সত্তার অন্বেষা : একদিন বাঙালি ছিলাম রে * বাংলাদেশে সিভিল সমাজ : বাস্তবতার সন্ধানে একটি ধারণা * নির্ঘন্ট
Akbar Ali Khan (Bengali: আকবর আলি খান) was a Bangladeshi economist and educationist who served as a bureaucrat until 2001. He was the SDO of Habiganj during the Bangladesh Liberation War, when he decided to join the war. Later he served as an official of the Mujibnagar Government. After the independence he joined back the civil serviceand reached to the highest post of Cabinet Secretary and also worked as a university teacher. His book Porarthoporotar Orthoniti (Economics of Other-minding) has been a popular book on economics à la Galbraith.
বইটি স্টিভেন লেভিট এবং স্টিফেন ডাবনারের লেখা দুটো বই Freekonomics ও Superfreekonomics এর ভাবানুবাদ। অবশ্য এতে খোদ আকবকর আলি খানের বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ক নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা রয়েছে। অর্থনীতির মতো নিরস বিষয় নিয়ে কোন বই একটানা পড়ে ফেলার মতো করে লেখা চাট্টিখানি কথা নয়। আকবর আলি খানের লেখা বেশ সুখপাঠ্য। অনেক জটিল জটিল বিষয় তাঁর লেখার প্রসাদগুণে বোধগম্য হয়ে উঠে। বইটিতে অর্থনীতির মজার মজার বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে। যে শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে জগৎসংসার চলে সেই শাস্ত্র জটিলতার কারনে জনসাধারণের আয়ত্তের বাইরে। আকবার আলি খান কে ধন্যবাদ অর্থনীতির মতো বিষয়কে আকর্ষণীয় ও আগ্রহান্বিত করে তোলবার জন্য।
কী নিয়ে বইটি তার আলাপ না করে বরং আকবর আলী খানের লেখার ঢঙ নিয়ে বলি- এমন ভঙ্গিতেও যদি প্রবন্ধ নিয়মিত লেখা যেত তবে এদেশে প্রবন্ধেরও আলাদা একটা পাঠকগোষ্ঠী থাকতো। কী স্বাদু! কী স্বাদু!
আর উপরি প্রাপ্তি কিছু আপাত পারিভাষিক শব্দের চমৎকার বাঙলায়ন। Paradox এর চমৎকার বাংলা কিন্তু প্রহেলিকা কিম্বা Thesis এর ভালো বাংলা অভিসন্দর্ভ।
আকবর আলী খানের লেখা পড়তে আরাম লাগে। যদিও অর্থনীতির বিষয়বস্তুগুলো বোঝা কঠিন, তবে খান বাহাদুর যথেষ্ট সহজবোধ্য করেই লেখার চেষ্টা করেছেন৷ এর আগে পড়েছিলাম তাঁর পরার্থপরতার অর্থনীতি। সেই ধারাবাহিকতায় এই বইটা পড়া হলো।
আকবর আলি খান নি:সন্দেহে সুলেখক। একাডেমিক নীরস একটি বিষয়কে তিনি এত সরস ভাবে উপস্থাপন করেছেন। বইটি শুধু অর্থনীতির নয়, সমাজ, রাষ্ট্র এবং কিছুক্ষেত্রে মনস্তত্ত্বের ও।
বিংশ শতাব্দীকে বলা হয় অর্থনীতির জয় জয়কারের সময়। অথচ তার আগের শতাব্দীতেই অর্থনীতিকে বলা হত সমাজবিজ্ঞানের দুয়োরানি। যাকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী কার্লাইল নাম দিয়েছিলেন "হতাশাগ্রস্ত বিজ্ঞান বা dismal science" । বর্তমানে অর্থনীতির গণ্ডি আরো ব্যাপক হয়েছে। অথচ বাংলা ভাষায় অর্থনীতিকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের তেমন কোন রচনা নেই বললেই চলে। যা আছে তার সিংহভাগই আকবর আলি খানের মতে "রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে ডান-বামের তরজা আর খিস্তি-খেউড়"।
তাই অর্থনীতির তত্ত্ব বাংলায় উপস্থাপনের তাগিদ থেকেই আকবর আলি খান লেখা শুরু করেন। সেই তাগিদের ফসল রূপেই অর্থনীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রবন্ধের সংকলন এই বই। এই বইয়ে রয়েছে সর্বমোট দশটি প্রবন্ধ।
প্রথম তিনটি প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে অনভিপ্রেত পরিণামের অর্থনীতি, অর্থাৎ যা চাওয়া হয়নি তা পাওয়ার অর্থনৈতিক আলোচনা। এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করেছেন স্টিভেন ডি লেভিট। তিনি স্টিফেন জে ডুবনারের সঙ্গে যৌথভাবে Freakonomics ও Superfreakonomics নামে দুটো বইও রচনা করেন! বইদুটোর ইংরেজি নামের বাংলা করলে দাঁড়ায় যথাক্রমে "আজব অর্থনীতি" ও "জবর-আজব অর্থনীতি"। মূলত এখান থেকেই আকবর আলি খান প্রথম প্রবন্ধ এবং বইটির নামকরণ করেন। এই প্রবন্ধে তাই সামগ্রিকভাবে ওই দুটো বইয়েরই বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রবন্ধের নাম "মিত্রপক্ষের গুলি: অনভিপ্রেত পরিণামের অর্থনীতি"। যুদ্ধক্ষেত্রে তুমুল লড়াই চলাকালে নিজ পক্ষের গুলি দ্বারা হতাহত হওয়া সৈন্যের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। একে বলা হয় মিত্রপক্ষের গুলি। তেমনি সকলের মঙ্গল কামনা করে অর্থনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হলেও দেখা যায় আখেরে তা বেশকিছু বিপত্তিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে কি এই ধরনের মিত্রপক্ষের গুলি নির্মূল করা যাবে না? বা ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় না? গেলেও কিভাবে? সে নিয়েই আলোচনা হয়েছে এই প্রবন্ধে।
তৃতীয় প্রবন্ধের নাম "সুখের লাগিয়া : সুখ ও অর্থনীতি", যেখানে আলোচিত হয়েছে ব্যক্তিগত সুখের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক। সেইসাথে করা হয়েছে সুখ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও মনস্তত্ত্ববিদদের গবেষণার তাৎপর্য বিশ্লেষণ।
আকবর আলি খানের মতে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হতে হলে দুটি বিষয়ে পারদর্শীতা থাকা লাগে। এক, আড্ডাবাজি ও দুই, ভেগোলজি। ভেগোলজি হচ্ছে এমন এক বিদ্যা, যার কিছুটা স্পষ্ট কিন্তু অধিকাংশই অস্পষ্ট। এই ভেগোলজির উৎপত্তি, বিকাশ এবং অর্থনীতিতে ভেগোলজির দৌরাত্ম্য নিয়েই চতুর্থ প্রবন্ধ "ভেগোলজি ও অর্থনীতি : না মিথ্যা, না সত্য"।
অর্থনীতিতে বাজার সম্পর্কে অবগত না থাকলে ক্রেতারা মার খায়। কিন্তু বাজার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলেও প্রয়োজন বাড়তি খরচ এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট, অর্থনীতিবিদরা এর নাম দিয়েছেন shoe-leather cost বা সুকতলার ব্যয়। অধিকাংশই এই ব্যয় করতে রাজি নয়, ফলে থেকে যাচ্ছে তথ্যের অপ্রতিসাম্যতা। আর এরই বিশ্লেষণ নিয়ে পঞ্চম প্রবন্ধ "সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি : অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তথ্যের ভূমিকা"।
ব্যক্তিগতভাবে জন্মদিন পালন উপমহাদেশে অতি আধুনিক একটি প্রথা হলেও বর্তমান সমগ্র বিশ্বে এই জন্মদিন পালন নিয়ে রয়েছে বিশাল আড়ম্বর। আর বিশেষ ব্যক্তির জন্মদিন হলে তো কথাই নেই। কারো কারো জন্মদিনকে ঘিরে আবর্তিত হয় অর্থনীতি ও রাজনীতির চাকা। "শুভ জন্মদিন : জন্মদিনের অর্থনীতি ও রাজনীতি" নামক পঞ্চম প্রবন্ধে মূলত আলোচিত হয়েছে এই বিষয়টি। আর এর জন্য বিশেষ ভাবে আলোচিত যীশু, জিন্নাহ ও স্বয়ং লেখকের কথিত জন্মদিবস ২৫ ডিসেম্বর নিয়েও আলোচনা।
পরবর্তী প্রবন্ধের নাম "সরকারের অপচয় : রাজনৈতিক অর্থনীতি", এতে আলোচিত হয়েছে অপচয়ের বিভিন্ন প্রকারভেদ ও বিশ্লেষণ।
পরবর্তী প্রবন্ধ দুটি "বিশ্বায়ন : একটি সমীক্ষা ও কয়েকটি অমীমাংসিত প্রশ্ন" এবং "বিশ্বায়ন ও বাঙালির সত্তার অন্বেষা : একদিন বাঙালি ছিলাম রে" - তে আলোচিত হয়েছে বিশ্বায়নের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রভাব। বিশ্বায়নের পক্ষ ও বিপক্ষ - উভয় দলের মতামত বিশ্লেষিত হয়েছে এই প্রবন্ধ দুটিতে।
বাংলাদেশে civil servant - দের অনেক সময় "সুশীল সেবক" বলে দাবি করা হয়। লেখক তাঁদের দাবিকে বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করে আর্জি করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা ঠুকে দিতে। বইটির সর্বশেষ প্রবন্ধ "বাংলাদেশের সিভিল সমাজ : বাস্তবতার সন্ধানে একটি ধারণা" - তে আলোচিত হয়েছে সিভিল সমাজের বিভিন্ন দায় দায়িত্ব এবং কার্যক্রমের বিভিন্ন ধারা নিয়ে।
পরিশেষে, বইয়ের মূল উদ্দেশ্য অর্থনীতির তত্ত্ব ব্যাখ্যা হলেও তা শুধুমাত্র অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং রাজনীতি, বিশ্বায়ন, ইতিহাস, সিভিল সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা সবকি��ুই বইটিকে পূর্ণতা প্রদান করেছে। বইটি একই সাথে সুখপাঠ্যও বটে। প্রতিটি প্রবন্ধে আকবর আলি খানের বিদগ্ধতার পরিচয় উঠে এসেছে তো বটেই, লেখকের সরসিক লেখার ভঙ্গিও প্রবন্ধগুলোকে করে তুলেছিল প্রাণবন্ত। তাই অর্থনীতি সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান না থাকলেও এই বইয়ে আলোচিত তত্ত্বগুলো বুঝতেও কোন বেগ পেতে হয়নি।
অর্থনীতি বরাবরই বিরক্তিকর একটি বিষয়। রাজনীতির চেয়েও কয়েকগুণ বিরক্তিকর। এইসব টাকাপয়সা খরচ করতে মজা লাগে। হিসাব-নিকাশ, মূদ্রাস্ফিতি, জিডিপি এইসব ক্যাচাল জমে না সাধারণত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, জমেছে; আকবর আলি খানের লেখায় জমে ক্ষীর হয়েছে।
আকবর সাহেবের সবচাইতে বড় গুণ হলো, তিনি শুধু ইক্যুয়েশন, ফর্মুলা আর ক্যালকুলেশন ই বুঝান না। তিনি হাস্য রসিকতা ও করেন। অর্থনীতির মতো বিষয় নিয়ে রঙ তামাশা করেন। আস্পর্ধা চিন্তা করেন। আর তার এই আস্পর্ধাই আপনাকে অর্থনীতি বিষয়ে জানতে, চোখ বড় বড় করে তাকাতে বাধ্য করবেন।
অর্থনীতি এক আজব বিষয়। অর্থনীতির বিষয়ে মূলত কোন প্রেডিকশন ই কাজ করেনা। কারণ অর্থনীতি জেনজির চেয়েও বেশী প্রভাবিত হয়, ট্রিগার্ড হয় বিভিন্ন ইন্টারনাল এক্সটার্নাল ফ্যাক্টরস দিয়ে। তাই একজন অর্থনীতিবিদ এর ফর্মুলা, আরেক অর্থনীতিবিদ সহজেই গুড়িয়ে ফেলতে পারেন।
এই বইয়ে আকবর সাহেব অর্থনীতির ইক্যুয়েশনের চেয়ে, অর্থনীতির হেরফেরে, মানে টাকাপয়সার নৃত্যে কীভাবে জীবন, ও আমাদের চারপাশ নড়েচড়ে বসে তা দেখিয়েছেন। অর্থনীতিকে উপজীব্য করে জীবন, সুখের হিসাব নিকাশ, সামর্থ্য, চাহিদা, লাইফস্টাইলের যে পরিবর্তন, তার গল্প বলেছেন।
আকবর সাহেবের সাথে সময়টা কেটেছে চমৎকার। একজন অর্থনীতিবিদ হয়েও, তিনি আমার প্রিয় লেখকদের একজন হয়ে উঠেছেন নিয়ম করে।
অর্থনীতি, একসময় ছিল সমাজবিজ্ঞানের দুয়োরানি, যা পরে অভিহিত হয়েছে হতাশাগ্রস্থ বিজ্ঞান। নব্য উদারবাদে অর্থনীতি জুড়ে ভাগ বসিয়েছে সংখ্যা আর তত্ত্ব। এই অর্থনীতিই এখন সমাজ বিজ্ঞানের সম্রাজ্ঞী।
অর্থনীতি এখন আর শুধু চাহিদা আর যোগানে সীমাবদ্ধ নয়, আইনশাস্ত্র থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সবখানে রয়েছে এখন তার দৌড়। জন্ম থেকে শুরু করে ধর্ম, যাবতীয় গবেষনায় এখন ব্যবহার করা হয়েছে অর্থনীতির সূত্র। কিন্তু এমন জটিল সব বিষয় নিয়ে আধমরা বাঙ্গালী পাঠকের জন্য নেই তেমন কোন বই।
ডঃ আকবর আলি খান রচিত গ্রন্থ 'আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি'। ডজনখানেক প্রবন্ধ নিয়ে সমৃদ্ধ এই বই একজন সাধারণ পাঠকের সামনে খুলে দিবে অর্থনীতির জটিল সব হিসেব কে সহজে বোঝার এক নতুন দুয়ার।
লেখককে নিয়ে নতুন করে বলার মত কিছু নেই। তার রচিত এই বই অর্থনীতি নিয়ে কোন একাডেমিক বই নয়। এটি লেখকের অসাধারণ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতার এক গভীর নির্যাস।
তার ১০ টি প্রবন্ধে তিনি আলোকপাত করেছেন ভিন্ন ১০ টি বিষয়ে। যেখানে স্থান পেয়েছে অর্থনীতি, সুশাসন, সমাজ এবং ইতিহাস। প্রতিটা প্রবন্ধ আমাদের দীর্ঘদিনের যাবতীয় ধারনাকে মুখোমুখি করে এক বিভ্রান্তিকর চ্যালেঞ্জের।
লেখকের নিজস্ব এবং বিভিন্ন খ্যাতিমান পন্ডিতের বিশ্লেষনে সমৃদ্ধ বইটিতে লেখক নিজে কোন সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি প্রশ্ন করেছেন পাঠককে, সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের হাতে।
দিনশেষে বইটি একটা সুখপাঠ্য। অর্থনীতি নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষন নেই, আছে শুধু সুস্বাদুময় বর্ণনা। আমার মত আধমরা পাঠককে দিবে নতুন এক ধারনা। ড. আকবর আলি খানের কৃতিত্ব হচ্ছে বইটি লেখা হয়েছে সহজ ভাষায়, বৈঠকি মেজাজে।
বই এর টপিক পরে বলি, কথা হলো আকবর আলী খান স্যার যে ঢঙে লিখতেন, সেই ঢঙে যদি প্রবন্ধ নিয়মিত লেখা যেতো, তবে এদেশে আলাদা এক প্রবন্ধের পাঠকগোষ্ঠীও থাকতো 😔
যে অর্থনীতি, একসময় ছিল সমাজবিজ্ঞানের দুয়োরানি, সেই অর্থনীতিই এখন সমাজ বিজ্ঞানের সম্রাজ্ঞী।
অর্থনীতি এখন আর শুধু চাহিদা আর যোগানে সীমাবদ্ধ নয়, আইনশাস্ত্র থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সবখানে রয়েছে এখন তার দৌড়। জন্ম থেকে শুরু করে ধর্ম, যাবতীয় গবেষনায় এখন ব্যবহার করা হয়েছে অর্থনীতির সূত্র। কিন্তু এমন জটিল সব বিষয় নিয়ে আধমরা বাঙ্গালী পাঠকের জন্য নেই তেমন কোন বই। ডজনখানেক প্রবন্ধ নিয়ে সমৃদ্ধ এই বই একজন সাধারণ পাঠকের সামনে খুলে দিবে অর্থনীতির জটিল সব হিসেব কে সহজে বোঝার এক নতুন দুয়ার।
লেখককে নিয়ে নতুন করে বলার মত কিছু নেই। তার রচিত এই বই অর্থনীতি নিয়ে কোন একাডেমিক বই নয়। এটি লেখকের অসাধারণ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতার এক গভীর নির্যাস।
তার ১০ টি প্রবন্ধে তিনি আলোকপাত করেছেন ভিন্ন ১০ টি বিষয়ে। যেখানে স্থান পেয়েছে অর্থনীতি, সুশাসন, সমাজ এবং ইতিহাস। প্রতিটা প্রবন্ধ আমাদের দীর্ঘদিনের যাবতীয় ধারনাকে মুখোমুখি করে এক বিভ্রান্তিকর চ্যালেঞ্জের।
লেখকের নিজস্ব এবং বিভিন্ন খ্যাতিমান পন্ডিতের বিশ্লেষনে সমৃদ্ধ বইটিতে লেখক নিজে কোন সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি প্রশ্ন করেছেন পাঠককে, সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দিয়েছেন পাঠকের হাতে।
দিনশেষে, অর্থনীতি নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষন নেই, আছে শুধু সুস্বাদুময় বর্ণনা। আমার মত আধমরা পাঠককে দিবে নতুন এক ধারনা। ড. আকবর আলি খানের কৃতিত্ব হচ্ছে বইটি লেখা হয়েছে সহজ ভাষায়, বৈঠকি মেজাজে।
পরার্থপরতার অর্থনীতি পড়া ছিলো আগেই, সেই সূত্রেই এটাও পড়ে ফেলা। কয়েকটি আলাদা প্রবন্ধের সমণ্বয়ে এই বই। ভেগোলজি(Vague-o-logy) হিসেবে অর্থনীতির জুড়ি মেলা ভার। জুতার অর্থনীতি আর জন্মদিনের রাজনীতি এদের শিরোনামের মতই মজার চ্যাপ্টার। অপচয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি, বিশ্বায়ন বিষয়ক লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি আর শেষে সিভিল সোসাইটি নিয়ে আলোচনাগুলো বেশ ইনসাইটফুল।
Freakonomics ও Super Freakonomics. ইংরেজি freak শব্দটির সাথে Economics শব্দটির সন্ধি ক��ে freakonomics শব্দটি পয়দা করা হয়েছে। আর Super Freakonomics বইটি এর পরের অংশ। সাধারণ মানুষেরা অর্থনীতির বই বলতে যা বুঝেন, সেই সব আলোচনা এই বই দুইটিতে করা হয় নি। তবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বই দুইটি লিখা হয়েছে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ ধারণাটির জনক হচ্ছেন গ্যারি বেকার (Gary Becker) । ১৯৯২ সালে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরুষ্কার পান। বেকার অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন, 'It is a method of analysis and not an assumption about a particular motivations. ... Behavior is driven by a much richer set of values and preferences.'
According to Gary Beaker, Economics is not only restricted with using your resources efficiently, Economics is a system, in which people behavior can be described. To describe such thing we need to know what people wants.
এই সমস্যাটিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অতি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার 'ঐকতান' কবিতায় :
"সব চেয়ে দুর্গম-যে মানুষ আপন-আন্তরালে, তার পূর্ণ পরিমাপ নাই বাহিরের দেশে কালে। সে আন্তরময়, আন্তর মিশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়। পাই নে সর্বত্র তার প্রবেশের দ্বার;"
একমাত্র মানুষের অন্তরের পরিচয় জানলেই তার আচরণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কিন্তু তার আন্তরের প্রবেশের দ্বার সহজে খুজে পাওয়া সম্ভব নয়। এটাই হল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণের সমস্যা।
বইটি শুরু হয়েছে ফ্রিকোনওমিকস নামের আরেকটি বইয়ের রিভিউ বা পর্যালোচনা দিয়ে শেষ হয়েছে শিভিল সোশাইটি দিয়ে। এর মাঝে রয়েছে অনেকগুলো গবেষণা প্রবন্ধ যেগুলো আলোকপাত করেছে অর্থনীতির ভিন্ন কিন্তু মজার কিছু পরিসংখ্যান ও বিষয়। তিনি অর্থনীতিকে সংযুক্ত করেছেন রাজনীতি, সমাজনীতি, বিশ্বায়ন, নৃতত্ত্ব, ধর্ম, বিখ্যাত মানুষ দের বিভ্রান্তকর জন্মতারিখ ও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব। গবেষণা প্রবন্ধ হলেও এতে তেমন কোন খটমট শব্দ বা ভাষার ব্যাবহার নেই। সহজপাঠ্য ও সহজপাচ্য ও বটে। নিখাদ আনন্দলাভের সাথে এক চিমটি অরথনীতি জানা।
বইটি সুখপাঠ্য। অর্থনীতির তত্ত্ব নিয়ে জবড়জং লেখা খুঁজলে বইটি থেকে দুরে থাকুন। এখানে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নেই। আছে অর্থনৈতিক সমস্যাসংকুল ঘটনার সুস্বাদু বর্ণনা।
ইংরেজি "FREAKONOMICS" বইয়ের অবলম্বনে লেখা এই বইটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য।সাধারণত অর্থনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, এই বইটি সেরকম নয়।বরং অর্থনীতির মজার দিক টি ই এখানে আলোচনা করা হয়েছে।