এক নীল চোখের মানুষ। সবার কাছে থেকেও এক অজানা দূরত্বে ভেসে থাকে সে। অসীম নির্লিপ্তি আর উদাসীনতায় সে অংশ নেয় সবার জীবনে। আবার বেরিয়েও আসে সবার জীবন ছেড়ে। কলেজে পড়া দিঘির তাকে নিয়ে কীসের এত রাগ? প্রেমিক আর্যর সঙ্গে থেকেও ছটফট করে দিঘি। বারবার তার মনে পড়ে যায় এক সপ্তমীর সকাল, হলুদ গিটার আর দক্ষিণের সেই রঙিন জানলা। ক্রিকেটার রুহান মাথা নিচু করে দেখে কীভাবে সবকিছু চলে যায় তার মুঠোর বাইরে! টালমাটাল হয়ে ওঠে তার জীবন। আর সে অনুভব করে নীল চোখের মানুষটার শূন্যতা। জিয়ানারও এক অপরাধবোধ কাজ করে সেই মানুষটাকে ঘিরে। সংসার আর চাকরির মধ্যে আটকে থাকা জীবনের গায়ে কেন জড়িয়ে থাকে স্বপ্ন? কেন সে দেখে কুয়াশার ভেতর আজও মিলিয়ে যাচ্ছে একটা সাইকেল! নারী-আসক্ত আদিত্যর জীবন পালটে যায় মালিনীকে দেখে। অদ্ভুত একাকিত্ব ঘিরে ধরে ওকে। কেন আদিত্য যেতে পারে না সেই নীল চোখের মানুষটার কাছে? গভীর সমস্যা বুকে চেপে রেখে সবার সামনে উজ্জ্বলভাবে উপস্থিত হতে চেষ্টা করে রাহি। চেষ্টা করে সেই মানুষটাকে আগলে, যত্নে নিজের করে রাখতে। কিন্তু কোথায় ফাঁক থাকে? কেন বারবার সবার থেকে ছিটকে সরে যায় সেই মানুষটা? চাপাডাঙার জমি নিয়ে রাঘব চক্রবর্তী আর মার্চেন্ট মাল্টিপলসের ঝামেলা জটিল হলে তার পাকে জড়িয়ে পড়ে রাহি, আদিত্য। জড়িয়ে পড়ে রুহান আর জিয়ানার ভাগ্যও। অনিশ্চয়তার অন্ধকার এসে ঢেকে ফেলতে চায় সবার জীবন। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘আলোর গন্ধ’ উপন্যাসে গভীর রাত্রির শেষে আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন অর্কদেব।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
Ten years before when Palta Hawa was coming out periodically in Desh magazine, I became a fan of Smaranjit Chakraborty and used to wait eagerly for the next installation of the novel. After years in exploring through the English literature as I decide to return to Bengali, I pick Alor Gandha, my second read of Smaranjit Chakraborty and soon I realize this is going to be my last. I am not that high school student any more, Smaranjit Chakraborty doesn't write for anyone over first or second year college students.
This story of sophomore year students is illogical and at times, factually incorrect. Social science will say, no Tagore reciting, piano playing Bengali family would name their daughter Sneha or Pooja. Though he questions why do we consider white-skinned foreigners as superior, the writer picks a blue eyed, fair skinned, tall guy with Irish blood as the hero. An orphaned, badly treated boy has four cameras with two DSLRs and a guitar. Despite being a common fantasy, the only person I know who has been successful in making his class teacher fall for him is Emmanuel Macron. This is a cheesy love story of naive college students complete with nut and dry-fruit chocolate. The writer hasn't resisted himself from including even the cliche ideas like taking money from girlfriend's father for mother's treatment or a climax gunfight involving the hero. The risk in writing such all emotion stories is that once the young readers start exploring beyond such books, they see the nonsense in them. The more the attraction before, the more the repulsion later. Chetan Bhagat will know. For my part, in my search of twenty-first century Bengali literature, probably I have to turn to Sanmatrananda and Preetam Basu and my initial research shows, they are exciting.
প্রাপ্তির গল্পগুলো সবসময়ই সব্বার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়। কিন্তু অপ্রাপ্তির, হারানোর বা লুকিয়ে রাখা বেদনা একান্তই নিজের তা কাউকে বোঝানো যায়না, দেখানো যায়না, হয়না বলা। প্রায় পাঁচশ' পাতার "আলোর গন্ধ" আনন্দের হাট বসায়নি। শুনিয়েছে বেদনামাখা কতকগুলো পারস্পরিক সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য বাঁধনে যুক্ত মানব-মানবীর অকৃত্রিম বেদনামাখা জীবনকাহিনি।
নীল চোখের ছেলেটি খুব করে চেয়েছিল জিয়ানাকে। জিয়ানাও তাইতো বটে। কিন্তু খুব নয়। ভালোবাসার চাইতে আকর্ষণ ছিল ঢের বেশি। তাই হয়তো মোহের বদলে বাবা-মায়ের জন্য মুক্তিই মুখ্য হয়ে উঠলো। কিন্তু জিয়ানা ভুলে গিয়েছিল মোহ আর ভালোবাসার ফারাকটা বড় সূক্ষ্ম। তাইতো এভাবে জ্বলতে হলো। হলো পুড়তে।
দিঘি বড় বাঁচা বেঁচে গেছে। একটা বয়স্ক পার্ভাট, রেপিস্টের হাত থেকে। ব্যাটাকে আচ্ছারকম হেনস্তা করে বিদেয় করা হয়েছে পাড়া থেকে। বন্ধুরা সেলিব্রেট করতে চাইছে। চাইছে দিঘির বয়ফ্রেন্ড আর্যও। অথচ সেই দিঘিই জনঅরণ্যে থেকে শূন্যতা অনুভব করে কেন? কেন সেই মানুষটিকে খুঁজে-ফেরে। আবার কখনো পাবে কী তার দেখা?
নির্জনতাকে, একাকিত্বকে আর বেদনাকে পথের পাথেয় করে বেরিয়ে পড়েছিল নীল চোখের ছেলেটি। অফিস থেকে বদলি নিয়ে চলে এসেছিল এক আধা শহর, আধা গ্রামে। নিজের মতো করে থাকতে পারছে কই? রাহীর তো একেই চাই। আর রাহীকে কোনো এক কারণে চাইছে ত্রয়ণ।
পরাজিত মানুষের প্রতিনিধি রুহান। যাকে আঁকড়ে ধরে সেই চলে যায় নতুবা তৈরি হয় অমোঘ এক দেওয়াল। বাবা চলে গেল, মায়ের সাথে সৃষ্টি হলো দূরত্ব। নন্দা বিয়ে করে ফেলল। ক্রিকেট ছিল প্রাণ। সেই ক্রিকেট ক্লাব থেকেও হারু রুহানকে বের করে দিল৷ এমন ব্যর্থ রুহানেরই বা কী কাজ এই আলোর এই নানামাত্রিক গন্ধে।
অনেকগুলো চরিত্র। সমান্তরালে চলছে কতকগুলো মানুষ। সবার বেদনাটা এক। কিন্তু হারানোর কারণটা আলাদা। গন্তব্য ভিন্ন। "আলোর গন্ধ" নিঃসন্দেহে ভালো বই। নন-ফিকশন পড়তে পড়তে যারা ত্যাক্ত-বিরক্ত, তারা স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর "আলোর গন্ধ" পড়তে পারেন। লেখায় গতি আছে। পড়তেও আরাম। কিন্তু কোনো উচ্চমার্গীয় দর্শন খুঁজতে যাবেন না। কোনো দর্শন নেই, ক্ল্যাসিক এলিমেন্ট নেই।
প্রায় শ পাঁচেক পাতা খরচ করার মতো কাহিনিবিন্যাস এই উপন্যাসের নেই। কিছু জায়গায় রাবারের মতো টেনে টেনে কাহিনি লম্বা করা হয়েছে৷ একটু বিরক্তও লাগছিল। তবু ধরলে শেষ করে ছাড়া যায়না। কারণ এটাই কোনো পপুলার লিটারেচারের একমাত্র সম্বল!
এই উপন্যাস তা হাতে পেয়ে প্রায় তিন দিনের মধ্যে পুরোটা পড়ে ফেলেছি। স্মরঞ্জিত বাবুর লেখার প্রেমিকা হওয়ার কারণ হয়তো এটা। একদিন তো এমন হয়েছে ভোর 4 তে পর্যন্ত পড়েছি তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য। যাই হোক, একটু বিশাল কলেবরের উপন্যাস। পাল্টা হওয়া এর আগে পড়েছি বলেই হয়তো তুলনাটা বার বার চলে আসছিল। এখানে সব চরিত্রের নাম গুলি এত্ত সুন্দর তা আর কি বলবো। দিঘি, আর্য, কিগান, জিয়ানা, রুহানি, রাহি, হোমি, রূপ ,আদিত্য, স্নেহা আরো অনেকে। একটি নীল চোখের মানুষ কে নিয়েই পুরো গল্প আবর্তিত হয়েছে। খুব ই কষ্টের জীবন তার, সবাই তাকে জীবনের কোন না কোনো সময়ে ভুল বুঝেছে, কিন্তু সে কোনোবার ই কোনো প্রতিবাদ করেনি। সবকিছু চুপ করে মেনে নিয়েছে। আর বিপদে প্রতিবার পাশে থেকেছে। প্রতিটি চরিত্র ই জীবনের কোন সময় একটা ভুল করেছে, আর তার খেসারত তাদের পরবর্তীকালে দিতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদের জীবন কোন খাতে বয়ে যায় এবং শেষ এ নীল চোখের মানুষটি কি তার কাছের মানুষকে পায়, এই নিয়েই এই উপন্যাস।
Ek kothay jake bole 'Asadharon'... Alor Gondho thik setai... each and every character bhunno swader o nijeder jaygay thik (leaving the negative ones)... Golper main character 'Kigan Arka Banerjee'-er byapare kichhu bolar nei.... se holo sob meyeder swopner purush... calm, quiet, humble... Lekhok ki kore eto sundor bhabe protyekta character k futiye tulechen amar jana nei... Yes, aneker mone hote pare j Smaranjit Chakraborty... sei ek dhancher lekha... but ami bolbo ei uponyash ra just alada level er... Sob seshe apnio Kigan er preme porte badhho thik amari moto😍😍... Jara amar moto romance genre porte bhalobashen tader jonno highly recommended.
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর 'আলোর গন্ধ' এমন এক উপন্যাস, যেখানে আলোক, অন্ধকার এবং গন্ধ—এই তিনটি ইন্দ্রিয়ের প্রতীক মানুষের অভ্যন্তরীণ জগতের গভীরতম রসায়নের ভাষা হয়ে ওঠে। এখানে গন্ধ শুধুমাত্র ঘ্রাণ নয়, বরং স্মৃতি; আলো শুধু দৃষ্টির উপাদান নয়, বরং আত্ম-উন্মোচনের উপমা; আর অন্ধকার সেই বিস্মৃতির পরিসর, যেখানে মানুষ তার ভাঙা স্বপ্ন, অনুচ্চারিত ভালোবাসা ও অপরাধবোধের আশ্রয় খোঁজে। নীলচোখের সেই কেন্দ্রীয় চরিত্রটি যেন এই সমগ্র উপন্যাসের মধ্যমণি, এক নীরব প্রতীক—যিনি সকলের মধ্যে থেকেও সকলের বাইরে। তিনি টলস্টয়ের ‘Anna Karenina’ বা কামুর ‘L'Étranger‘-এর মিউর্সোর মতো, যাঁদের অনুভূতি সমাজের প্রথা বা বাস্তবতার কাঠামো ভেদ করে অন্য এক বোধের পরিসরে পৌঁছায়। তাঁর নীল চোখের ঠান্ডা দীপ্তি যেন আলো নয়, বরং আলো থেকে নিঃসৃত অস্তিত্বের এক নীরব প্রশ্ন।
এই উপন্যাসে দিঘি, রুহান, জিয়ানা, আদিত্য, রাহি—প্রত্যেকে এমন কিছু চরিত্র, যারা একে অপরের আলো খোঁজে, কিন্তু প্রত্যেকেই সেই আলোয় পৌঁছানোর আগেই গলে যায় নিজের অন্তর্গত অন্ধকারে। দিঘির মধ্যে যে স্নিগ্ধতা, তা যেন ভার্জিনিয়া উলফের ‘To the Lighthouse‘-এর মিসেস র্যামসে-র অনুরণন—একজন নারী, যিনি নিজে�� সত্তার ক্ষয় সত্ত্বেও অন্যের জীবনে আলো আনতে চান। রুহান-এর চরিত্রে আছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘Love in the Time of Cholera’-র ফ্লোরেন্টিনোর মতো এক মৃদু কিন্তু অনমনীয় ভালোবাসার ছায়া, যা কখনো প্রকাশ পায় না সরাসরি, বরং নিঃশব্দে থেকে যায় সময়ের ভাঁজে। আবার জিয়ানা যেন সালমান রুশদির ‘Midnight’s Children‘-এর পার্বতীর মতো—একজন নারী, যার শরীর ও আত্মা দুটোই স্মৃতির উপাদান হয়ে ওঠে, যিনি নিজেকে ভালোবাসার আগুনে পুড়িয়ে তবেই নিজের পরিচয় খুঁজে পান।
‘আলোর গন্ধ‘-এর সবচেয়ে অনন্য দিক হলো, এটি কোনো ঘটনার উপন্যাস নয়, বরং সময়ের এবং অনুভূতির স্তরবিন্যাসের এক দীর্ঘ ধ্যান। স্মরণজিৎ এখানে আখ্যানের রৈখিক গঠন ভেঙে দিয়ে মানুষের চেতনার ভেতরের আলো-অন্ধকারের যাত্রাকে একধরনের সিম্ফনি হিসেবে রচনা করেছেন। এই ভঙ্গি অনেকটা মার্সেল প্রুস্তের ‘In Search of Lost Time‘-এর মতো—যেখানে প্রতিটি স্মৃতি কোনো গল্পের অংশ নয়, বরং অস্তিত্বের এক টেক্সচার। স্মরণজিৎ-এর ভাষা যেন প্রুস্তের ভাষার মতোই গন্ধে ভরা—চায়ের কাপ, পুরনো বই, বৃষ্টির পর ভেজা মাটির সুবাস, কিংবা একান্তে বাজতে থাকা সেতারের অনুরণন—সব মিলিয়ে এটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আত্মার উন্মোচনের এক প্রকরণ।
এই উপন্যাসে আলো ও অন্ধকার শুধু বাইরের জগৎকে নয়, মানুষের সম্পর্কের গূঢ়তাকেও নির্দেশ করে। এক চরিত্র অন্যের প্রতি যতটা আকৃষ্ট, ততটাই ভীত; যতটা ভালোবাসা, ততটাই অনিশ্চয়তা। সম্পর্কের এই অনিশ্চয়তা স্মরণ করায় রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা‘-কে—যেখানে অমিত ও লাবণ্যর সম্পর্কের মধ্যে জাগে আলো-অন্ধকারের সূক্ষ্ম খেলা, বুদ্ধি ও অনুভূতির দোলাচল। তবে স্মরণজিৎ-এর উপন্যাসে এই দ্বন্দ্ব আরও আধুনিক ও অস্তিত্ববাদী; এখানে ভালোবাসা নিছক মিলন নয়, বরং বিচ্ছিন্নতার পরম রূপ। আলোর গন্ধের প্রেম তাই কাম্য নয়, অনিবার্য নয়—এটি এক ধীর মৃত্যু, এক ধোঁয়াটে বেঁচে থাকা।
বিশ্বসাহিত্যের প্রেক্ষিতে এই উপন্যাসকে স্থাপন করলে দেখা যায়, এটি একাধারে কামুর অস্তিত্ববাদের, উলফের সাইকোলজিকাল ইনসাইটের, এবং গার্সিয়া মার্কেসের জাদুবাস্তবতার উত্তরাধিকারী। কিন্তু স্মরণজিৎ এই সব ধারার ছাপ নিয়েও কেবল অনুকারী নন; তিনি তাদের ভেতর দিয়ে নির্মাণ করেছেন এক স্বতন্ত্র বাঙালি মানসের পরিসর—যেখানে নস্টালজিয়া, অপরাধবোধ ও সৌন্দর্যের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ মিলেমিশে গেছে। এখানে শহুরে একাকিত্ব যেমন অনুভূত হয়, তেমনি গ্রামীণ স্মৃতির গন্ধও থাকে বাতাসে। আলো-অন্ধকারের এই দ্বৈততা কখনও রবীন্দ্রীয়, কখনও জীবনানন্দীয়—তবু শেষ পর্যন্ত তা সম্পূর্ণভাবে স্মরণজিতীয়, কারণ তিনি আলোকে কেবল জ্ঞান বা মুক্তির প্রতীক করেননি; বরং সেটিকে বানিয়েছেন জীবনের দগ্ধতার চিহ্ন।
শেষ পর্যন্ত ‘আলোর গন্ধ‘ এমন এক উপন্যাস, যা পাঠককে নীরবে চেপে ধরে। এটি কোনো উত্তেজনাময় আখ্যান নয়, বরং ধীরে ধীরে জেগে ওঠা এক ধ্যান—যেখানে প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি বাক্য যেন নিজেকে নিঃশেষ করে আলোর ভেতরে গলে যাচ্ছে। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে মনে হয়, আমরা সকলেই সেই নীলচোখের মানুষের মতো—অন্যের জীবনে আলো ছড়াতে ছড়াতে নিজের অন্ধকারে ডুবে যাই। আর সেই ডোবার মধ্যেই হয়তো খুঁজে পাই জীবনের আসল গন্ধ—যে গন্ধ আলোয় নয়, বরং ছায়ায় বাস করে।
এইভাবেই ‘আলোর গন্ধ‘ আমাদের শেখায়, মানুষের জীবনে কোনো আলোই বিশুদ্ধ নয়, কোনো অন্ধকারই সম্পূর্ণ অশুভ নয়। জীবন, ভালোবাসা, স্মৃতি ও অপরাধবোধ—সব মিলিয়ে এ এক অন্তহীন গোধূলি, যেখানে সূর্য অস্ত যায় না, কেবল রং বদলায়। সেই রঙের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আলোর গন্ধ—এক এমন ঘ্রাণ, যা একবার অনুভব করলে আর কোনো দিন ভুলে থাকা যায় না।
নীল চোখের মানুষটি যেন আলবার্ট কামুর 'The Stranger'-এর মোরসোর্তের ভারতীয় প্রতিধ্বনি—এক নির্লিপ্ত অথচ আশ্চর্যভাবে মানবিক সত্তা, যার মধ্যে যুক্তি ও অনুভূতির অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটে। তাঁর অস্তিত্ব যেন সমাজবোধ ও নৈতিকতার প্রচলিত সংজ্ঞাগুলোর প্রতি এক নিঃশব্দ চ্যালেঞ্জ। কিন্তু যেখানে মোরসোর্তের বিচ্ছিন্নতা ফরাসি ঔপনিবেশিক মরুভূমির নির্লিপ্ত রোদে পুড়ে যায়, সেখানে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর এই নীলচোখের মানুষটি বসবাস করে এক ভারতীয় মনস্তত্ত্বের ভেতরে—যেখানে একাকিত্ব মানে শূন্যতা নয়, বরং এক গভীর আত্মদর্শনের প্রতিফলন। তাঁর এই নৈঃসঙ্গ্যকে তাই নিছক নিরাসক্তি বলা যায় না; এটি এক ধরনের আধ্যাত্মিক অনিশ্চয়তা, যা রবীন্দ্রনাথের 'অচলায়তন'-এর চরিত্রদের মতোই আত্মসন্ধানের শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে চায়। তিনি যেন এক জীবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন, যার পাশে দাঁড়িয়ে অন্য চরিত্রেরা নিজেদের ভাঙন, ব্যর্থতা, আর আকাঙ্ক্ষার মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়।
দিঘি এই আখ্যানের অন্যতম মর্মভেদী চরিত্র—একজন নারী, যিনি প্রেমিক আর্যর পাশে থেকেও যেন সর্বদা একটু দূরে, এক অচিন আলো-ছায়ার মধ্যে আটকে। তার মানসিক টানাপোড়েনের গভীরতা স্মরণ করিয়ে দেয় ভার্জিনিয়া উলফের Mrs. Dalloway-এর ক্ল্যারিসা ড্যালাওয়েকে—যিনি বহিরঙ্গে সফল, সামাজিক, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অতীতের কোনো রঙিন জানলার আলোয় বন্দি। দিঘির হৃদয়ে সেই জানলা খুলে যায় স্মৃতির গন্ধে—অতীতের এমন কোনো সুর বা কোনো গ্রীষ্মের বৃষ্টির দিন, যা তার বর্তমানের আলোকেও ছাপিয়ে যায়। ভালোবাসা তার কাছে মুক্তির নয়, বরং এক অতল প্রতিধ্বনি, যেখানে নিজেকে হারিয়ে ফেলার ভয় চিরকাল তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
দিঘি ভালোবাসে, কিন্তু ভালোবাসার মধ্যে বিলীন হতে পারে না—এই দ্বৈত অবস্থানই তাকে করে তোলে আধুনিক সাহিত্যিক সত্তার প্রতীক। যেন হেনরিক ইবসেনের A Doll’s House-এর নোরা হেলমারের মতো --- যে ভালোবাসে, তবু নিজের পরিচয় রক্ষার জন্য ভালোবাসার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দিঘিও তেমনি নিজের ভিতরেই ঘুরপাক খায়—তার ভালোবাসা নিঃশেষ নয়, বরং অনন্ত প্রতীক্ষার রূপ। তার স্মৃতিগুলো যেন গন্ধের মতো—অদৃশ্য অথচ স্থায়ী, কোমল অথচ বিধ্বংসী। সেই গন্ধ প্রতিটি মুহূর্তে তার বর্তমানকে দূষিত করে, যেমন প্রুস্তের মাদলেইনের স্বাদে জেগে ওঠে সময়ের অতল গভীরতা, কিংবা জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ‘অন্ধকারের ভিতর থেকে আলো আসা’র রহস্যময় বোধ।
দিঘির চরিত্রের এই ইন্দ্রিয়নির্ভর একাকিত্ব আলোর গন্ধ-এর কেন্দ্রে এক গভীর মানবিক সুর যোগ করে। সে শুধু প্রেমিকা নয়, বরং সময়ের ভেতরে গলে যাওয়া এক মানবিক প্রতীক—যার গন্ধে, আলোর ফাঁকে ফাঁকে, ধরা পড়ে আমাদের নিজেদেরও অনিশ্চয়তা, ভয়, এবং অমোঘ আকাঙ্ক্ষা।
দিঘি এই আখ্যানের সবচেয়ে মর্মভেদী ও জটিল চরিত্র—একজন নারী, যিনি প্রেমিক আর্যর সান্নিধ্যে থেকেও এক গভীর অন্তরঙ্গ দূরত্বে আবদ্ধ। তার জীবন যেন এক দ্বিমাত্রিক ক্যানভাস—বাইরে নরম আলো, ভেতরে ঘনীভূত অন্ধকার। সেই আলো–অন্ধকারের সংঘর্ষ দিঘির মনে তৈরি করে এক অনিশ্চিত সেতুবন্ধন, যেখানে ভালোবাসা ও শূন্যতা হয়ে ওঠে একে অপরের প্রতিবিম্ব ।
তার এই মানসিক টানাপোড়েনের গভীরতা ভার্জিনিয়া উলফের Mrs. Dalloway-এর ক্ল্যারিসা ড্যালাওয়ের মতোই অন্তর্মুখী ও সূক্ষ্ম। ক্ল্যারিসা যেমন জীবনের নিত্য আচার-আচরণের আড়ালে নিজের এক নিঃশব্দ ক্ষয় অনুভব করেন, তেমনি দিঘিও কোনো উৎসবমুখর সপ্তমীর সকাল বা কোনো হলুদ গিটারের সুরে হারিয়ে ফেলে নিজের অস্তিত্বের স্বচ্ছতা। অতীতের কোনো রঙিন জানলা থেকে ঝরে পড়ে যে আলো, তা তার বর্তমানকে আলোকিত করে না—বরং এক ধোঁয়াটে বিষণ্নতায় ঢেকে দেয়।
দিঘির হৃদয়ের জানলা খুলে যায় শুধু স্মৃতির গন্ধে। সেই গন্ধ কখনো শিউলি ফুলের মতো কোমল, কখনো গ্রীষ্মের ধুলোর মতো দমবন্ধ করা—কিন্তু সর্বদা অবিনশ্বর। সময় যত এগোয়, গন্ধ ���ত গাঢ় হয়, যেন অতীত নিজেই তার বর্তমানকে গ্রাস করতে চায়। ভালোবাসা তার কাছে কোনো মুক্তির পথ নয়; বরং এক অন্তহীন প্রতিধ্বনি, যেখানে প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে থাকে অনিশ্চয়তার ছায়া।
দিঘি ভালোবাসে, কিন্তু ভালোবাসার মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে না—কারণ সে জানে, বিলীন হওয়া মানেই অস্তিত্বের বিলোপ। এই ভয়ই তাকে পরিণত করে আধুনিক নারীর প্রতীক-সত্তায়, যার ভালোবাসা আত্মসমর্পণ নয়, বরং আত্মরক্ষার এক নান্দনিক উপায়। হেনরিক ইবসেনের নোরা যেমন ঘর ছেড়ে যায় নিজের সত্যকে খুঁজতে, তেমনি দিঘিও নিজের ভিতরকার নিঃসঙ্গতার আলো খুঁজে বেড়ায়।
তার স্মৃতিগুলো যেন সুগন্ধের মতো—অদৃশ্য অথচ সর্বব্যাপী, কোমল অথচ বিধ্বংসী। এই গন্ধ প্রতিটি মুহূর্তে তার বর্তমানকে ছুঁয়ে দেয়, যেমন প্রুস্তের In Search of Lost Time-এ মাদলেইনের স্বাদে জেগে ওঠে অতীতের স্ফটিকস্বচ্ছ স্মৃতি, অথবা জীবনানন্দের কবিতায় নীল আকাশের নিচে ভেসে ওঠে অচেনা কোনো মুখের বেদনা।
দিঘির চরিত্র তাই কেবল এক প্রেমিকার নয়—সে স্মৃতির ভূতুড়ে শহরে পথভোলা এক পথিক, যার চোখে আলো, অথচ মনের ভিতরে গন্ধের অন্ধকার ঘূর্ণি। সে ভালোবাসে, তবু ভালোবাসার ভেতর নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় সে স্থির হতে পারে না। আর ঠিক এই দোলাচলেই দিঘি হয়ে ওঠে আলোর গন্ধ-এর আত্মা—যেখানে প্রেম মানে অধিকার নয়, বরং হারানোর ভয়েও টিকে থাকা এক গভীর মানবিক সুর।
দিঘি ভালোবাসে, কিন্তু ভালোবাসার মধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হতে পারে না—এই দ্বৈত টানাপোড়েনই তাকে আধুনিক সাহিত্যের এক জীবন্ত প্রতীকে রূপ দেয়। সে প্রেমে জ্বলে, কিন্তু নিজেকে হারিয়ে ফেলে না; বরং ভালোবাসার মধ্যেই খুঁজে ফেরে নিজের সত্তার অক্ষত রেখাটি। এই আত্মসচেতনতা, এই ক্ষীণ অথচ দৃঢ় আত্মরক্ষা, তাকে হেনরিক ইবসেনের ‘‘A Doll’s House’‘-এর নোরা হেলমারের উত্তরাধিকারিণী করে তোলে। নোরা যেমন একদিন ভালোবাসার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় নিজের সত্যকে খুঁজে পাওয়ার তাড়নায়, দিঘিও তেমনি নিজের মনোজগতের বন্ধ দরজাগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তোলে—ভালোবাসা কি নিঃশেষ হওয়া, নাকি টিকে থাকা এক অন্তর্মুখী সত্তা?
তার ভেতরের এই দোলাচল—আত্মরক্ষা ও আত্মবিসর্জনের দ্বন্দ্ব—তাকে এমন এক চরিত্রে রূপান্তরিত করে, যে মানবিক দুর্বলতা ও আত্মবিশ্লেষণের সূক্ষ্ম সীমারেখায় দাঁড়িয়ে। দিঘির ভালোবাসা কোনো পরিণতির দিকে এগোয় না, বরং ক্রমশ রূপ নেয় এক অন্তহীন প্রতীক্ষায়। সে যেন সেইসব সাহিত্যিক নারীদের উত্তরসূরি—অন্না কারেনিনা, এমা বোভারি, বা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ক্যাথরিন বার্কলি—যাদের প্রেম শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে আত্ম-অবলোকনের যাত্রা।
দিঘির স্মৃতিগুলোও যেন গন্ধের মতো—অদৃশ্য অথচ অনিবার্য, কোমল অথচ বিষাক্ত। সে স্মৃতি থেকে পালাতে পারে না, কারণ তা তার দেহের, তার নিঃশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময় যত এগোয়, সেই গন্ধ তত গভীরভাবে মিশে যায় তার বর্তমানের প্রতিটি পরত ও পরমাণুতে। দিঘির জীবন তাই ক্রমশ হয়ে ওঠে অতীত ও বর্তমানের সংলগ্ন এক ভাসমান অঞ্চল, যেখানে সময় সরলরৈখিক নয়, বরং বৃত্তাকার—ঠিক যেমন মার্সেল প্রুস্তের ‘‘In Search of Lost Time’‘-এ মাদলেইনের একটুখানি স্বাদে হঠাৎ জেগে ওঠে অতীতের বিস্মৃত রোদঝলমলে বিকেল।
দিঘির মনেও সেই একই যাদু কাজ করে—একটি গন্ধ, একটি রঙ, একটি সুর হঠাৎ জাগিয়ে তোলে সমস্ত চাপা বেদনা ও অসমাপ্ত আকাঙ্ক্ষা। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাই অতীতের ছায়া ও বর্তমানের আলোয় একসঙ্গে রঙিন ও ম্লান। এই পরস্পরবিরোধী অনুভবেই দিঘির প্রেম এক প্রগাঢ় মানবিক রূপ পায়—যেখানে ভালোবাসা মানে অধিকার নয়, বরং নিজেকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায়ও টিকে থাকা, যেমন জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ‘‘“অন্ধকারের ভিতর থেকে আলো আসে”‘‘—অর্থাৎ হারানোর মধ্যেই পাওয়ার নীরব দর্শন।
দিঘি তাই শুধু এক চরিত্র নয়; সে এক দার্শনিক অভিজ্ঞতা—এক নারীর চিরন্তন যাত্রা, যিনি ভালোবাসেন, তবু ভালোবাসার স্রোতে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাসিয়ে দেন না। বরং, সেই স্রোতের মধ্যেই তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অদৃশ্য তীর, নিজের অক্ষত পরিচয়।
দিঘির চরিত্রের এই ইন্দ্রিয়নির্ভর একাকিত্ব ‘‘আলোর গন্ধ’‘-এর হৃদস্পন্দন হয়ে উঠেছে—এক এমন সুর, যা simultaneously ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন। তার নিঃসঙ্গতা কেবল ভালোবাসার অভাব থেকে নয়, বরং অনুভবের অতিরিক্ত উপস্থিতি থেকে জন্ম নেয়। সে এত গভীরভাবে অনুভব করে যে, পৃথিবীর প্রতিটি আলো, প্রতিটি গন্ধ, প্রতিটি স্পর্শ তার ভেতরে এক অসহ্য প্রতিধ্বনি তৈরি করে। এই অতিসংবেদনশীলতা তাকে সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, কিন্তু মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে না; বরং সে যেন হয়ে ওঠে মানবিকতার এক ঘনীভূত রূপ—যেখানে আনন্দ ও বেদনা, আকাঙ্ক্ষা ও শূন্যতা, সব একসঙ্গে মিলেমিশে যায়।
দিঘি তাই কেবল প্রেমিকা নয়; সে সময়ের ভেতরে গলে যাওয়া এক মানবিক প্রতীক, এক নীরব উপমা—যেমন ‘‘Gabriel García Márquez’‘-এর ‘‘Love in the Time of Cholera’‘-র ফার্মিনা দাজা, অথবা ‘‘Toni Morrison’‘-এর ‘‘Beloved’‘-এর সেই ভূতুড়ে নারী, যারা নিজেদের ভেতরের অন্ধকার পেরিয়ে আলো ছুঁতে চেয়েছে। দিঘির ভেতরেও আছে সেই আকুলতা, সেই আলো-ছোঁয়া তৃষ্ণা। সে জানে, আলো তাকে জ্বালিয়ে দেবে, তবু সে তার দিকেই এগোয়—কারণ আলো মানে অস্তিত্বের প্রমাণ।
তার গন্ধে, তার আলোয়, আমাদের নিজেদের প্রতিফলন দেখা যায়। দিঘির নিঃসঙ্গতা আসলে আমাদেরই একাকিত্বের প্রতিচ্ছবি; তার ভয়, আমাদের ভেতরে চাপা পড়ে থাকা নৈঃশব্দ্যের অনুবাদ। যখন সে আলোর ফাঁকে ফাঁকে হারিয়ে যায়, আমরা যেন নিজেরাই দেখতে পাই জীবনের সেই ক্ষণস্থায়ী দৃশ্য—যেখানে ভালোবাসা কোনো গন্তব্য নয়, বরং এক অন্তহীন অনুসন্ধান।
‘‘আলোর গন্ধ’‘-এর এই দিঘি তাই এক চরিত্র নয়, এক অভিজ্ঞতা—মানুষের সেই চিরন্তন প্রয়াসের প্রতীক, যেখানে আলো ধরতে গিয়ে বারবার ছায়াকে স্পর্শ করতে হয়, আর সেই ছায়ার মধ্যেই জেগে ওঠে মানবজীবনের সবচেয়ে গভীর ও সত্য রাগিণী।
রুহান চরিত্রে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী যেন নির্মাণ করেছেন ব্যর্থতার এক শারীরবৃত্তি, যেখানে শারীরিক পরাজয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকে মানসিক বিপর্যয়ের গভীর স্তর। একসময়ের প্রতিশ্রুতিবান ক্রিকেটার, যার হাতে সাফল্য এসে পৌঁছে আবার নিঃশব্দে ফসকে যায়—রুহান বুঝতে শেখে যে হারের সংজ্ঞা কেবল মাঠের নয়, জীবনের প্রতিটি সম্পর্ক, প্রতিটি আকাঙ্ক্ষার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। এই ব্যর্থতার দর্শন তার ভেতরে জন্ম দেয় এক অস্তিত্ববাদী নিঃশব্দতা, যেন মিলান কুন্দেরার ‘‘The Unbearable Lightness of Being’‘-এর টোমাশ বা সাবিনার মতো—যারা জীবনের প্রতিটি সুখকেও অনিশ্চয়তার ভারে মেপে দেখতে চায়। কুন্দেরা যেমন দেখিয়েছিলেন, জীবনের “হালকাতা”ই আসলে তার সবচেয়ে অসহনীয় ভার, তেমনি রুহানও অনুভব করে যে সহজতর জীবনের আকাঙ্ক্ষাই কখনো কখনো মানুষের সমস্ত জটিলতার কেন্দ্রবিন্দু।
তার এই হালকাতা যেন এক তীব্র আত্মসমালোচনার প্রকাশ—একজন মানুষ, যে নিজের অক্ষমতার কাছে হার মানতে মানতে নিজের ভেতরে তৈরি করে এক নীরব দর্শন। রুহান তাই কোনো পরাজিত মানুষ নয়; সে এক আয়না, যেখানে প্রতিটি পাঠক দেখতে পারে নিজের জীবনের সেই মুহূর্ত, যখন সাফল্য আর ব্যর্থতার পার্থক্য অস্পষ্ট হয়ে যায়, আর যা বাকি থাকে তা কেবল গভীর মানবিক এক ক্লান্তি।
অন্যদিকে জিয়ানার চরিত্রে লেখক দেখিয়েছেন আত্মপরিচয়ের অন্তহীন অনুসন্ধান। তার জীবনের দ্বন্দ্ব—সংসার, কাজ, দায়িত্ব, এবং অদৃশ্য অপরাধবোধের মধ্যে—যেন ঝুম্পা লাহিড়ীর অভিবাসী নারীদের নীরব সংগ্রামের প্রতিধ্বনি। জিয়ানা যেন ‘‘Interpreter of Maladies’‘ বা ‘‘The Namesake’‘-এর নায়িকাদের মতো—যারা একদিকে সামাজিকতার বাঁধনে জড়ানো, অন্যদিকে আত্ম-উন্মোচনের এক অবিরাম যাত্রায় ক্লান্ত কিন্তু অচল নয়। তার অপরাধবোধ কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার নয়, বরং নিজের অস্তিত্বের ভেতরে এক সূক্ষ্ম ফাটল, যেখানে সে ক্রমশ আবিষ্কার করে নিজের অসম্পূর্ণতাকে।
জিয়ানার চোখে যে কুয়াশার ভেতর মিলিয়ে যেতে দেখা যায় এক সাইকেল, তা নিছক এক দৃশ্য নয়—এটি ‘‘আলোর গন্ধ’‘-এর এক স্থায়ী প্রতীক, এক অতীন্দ্রিয় স্মৃতিচিহ্ন। সেই সাইকেল যেন সময়ের বৃত্তে ঘুরে চলা জীবনের প্রতীক—যেখানে অতীত, বর্তমান, এবং ভবিষ্যৎ একে অপরের ভেতরে মিশে যায় ধোঁয়াটে আলোয়। এটি যেন আমাদের শেখায়, জীবনের গতিও এক কুয়াশাচ্ছন্ন স্মৃতির মতো—চলমান, অথচ অনিশ্চিত; দৃশ্যমান, অথচ অস্পষ্ট।
রুহান ও জিয়ানা—এই দুই চরিত্রের মধ্য দিয়ে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী আধুনিকতার সবচেয়ে অনিবার্য সংকটকে প্রকাশ করেছেন: আত্মপরিচয়ের ভঙ্গুরতা ও অস্তিত্বের অনন্ত অনিশ্চয়তা। রুহানের নিঃশব্দ আত্মসমর্পণ আর জিয়ানার অপরাধবোধে আচ্ছন্ন স্থিতধীতা একসঙ্গে মিলে গড়ে তোলে এক মানসিক ভূগোল—যেখানে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি ভালোবাসা, এমনকি প্রতিটি স্মৃতিও ক্রমশ কুয়াশার ভেতর মিলিয়ে যায়, রেখে যায় কেবল এক গন্ধ—সময়ের, হারানোর, এবং টিকে থাকার গন্ধ।
আদিত্য ও মালিনীর সম্পর্ক যেন সময়ের এক অনিশ্চিত ধূসর আলোয় গড়ে ওঠা—যেখানে প্রেম আর প্রতিশ্রুতির রেখা মিলেমিশে এক হয়ে যায়, আবার ছিন্নও হয়ে যায় অদৃশ্যভাবে। তাদের সংলাপ, নীরবতা, চোখের ভেতরের অন্ধকার—সব কিছুই যেন এমন এক সুরে বাঁধা, যেখানে হৃদয়ের ধ্বনি ও নিঃশব্দ বেদনা একাকার হয়ে ওঠে। এখানে ভালোবাসা কোনো স্থির আশ্রয় নয়; বরং তা এক অবিরাম অভ্যন্তরীণ কাঁপুনি, এক অনির্দিষ্ট অনুসন্ধান। মালিনীর উপস্থিতিতে আদিত্যর যে রূপান্তর ঘটে, তা কেবল মানসিক নয়, অস্তিত্বগতও—যেন হারুকি মুরাকামির ‘‘Norwegian Wood’‘-এর ওয়াতানাবে ও নাওকোর ভেতরের নীরব শোক, সেই অসম্পূর্ণতার মৃদু নেশা। আদিত্যর মনেও তেমনি প্রতিটি ছোঁয়া, প্রতিটি কথায় জন্ম নেয় এক অদৃশ্য হাহাকার—ভালোবাসা তার কাছে ধ্বংসেরও নাম, কিন্তু তবু সে তা থেকে মুক্তি চায় না।
রাহি এই সমস্ত চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে মানবিক, সবচেয়ে সচেতন—তবু তার একাকিত্বই সবচেয়ে গভীর। সে ভালোবাসে পরিমিতভাবে, কিন্তু সেই পরিমিত ভালোবাসাই তাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত করে। নীল চোখের মানুষটিকে ধরে রাখার তার প্রচেষ্টা যেন এক চিরন্তন ব্যর্থতার মহড়ার মতো—যেখানে যত বেশি হাত বাড়ায়, ভালোবাসা ততই পিছু হটে, গলে যায় অদৃশ্য সময়ের গন্ধে। এই নীরব বিভাজনেই রাহি হয়ে ওঠে এক প্রতীকী চরিত্র—যে ভালোবাসাকে ভাঙতে চায় না, অথচ তাকে ধারণও করতে পারে না।
তার মানসিক কাঠামোতে মিশে আছে ভার্জিনিয়া উলফের ‘‘To the Lighthouse’‘-এর লিলি ব্রিসকোর ছায়া—যে নিজের ক্যানভাসে সেই আলো আঁকতে চায়, যা ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যায় সময়ের স্রোতে। লিলির মতোই রাহিও নিজের জীবনের ছবিটি সম্পূর্ণ করতে পারে না, কারণ সে বুঝতে পারে, ভালোবাসা মানে নিখুঁত আকার নয়—বরং অসম্পূর্ণতার সৌন্দর্য। সেই অসম্পূর্ণতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এক গভীর শিল্পবোধ, এক বেদনাময় সত্য।
আদিত্য, মালিনী ও রাহির ত্রিভুজ যেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘‘Love in the Time of Cholera’‘-র দূরবর্তী প্রতিধ্বনি—যেখানে ভালোবাসা বয়স, সময়, যুক্তি—সব কিছুর সীমা ভেঙে এক অন্তহীন প্রতীক্ষায় পরিণত হয়। কিন্তু ‘‘আলোর গন্ধ’‘-এ সেই প্রতীক্ষা শুধু প্রেমের নয়, আত্ম-অন্বেষণেরও। প্রতিটি চরিত্রের ভেতরে এক গন্ধ জমে থাকে—স্মৃতি, অনুশোচনা ও আকাঙ্ক্ষার সংমিশ্রণে তৈরি—যা কখনো আলো হয়ে ওঠে, কখনো বিষণ্ণ ছায়া।
রাহির নীরবতা, মালিনীর বিচলন আর আদিত্যর অপরাধবোধ—এই তিনে মিলে গড়ে ওঠে এমন এক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিচ্ছবি, যা রাশিয়ান সাহিত্যের দস্তয়েভ্স্কি-ঘরানার গভীর আত্মসমীক্ষণের কথা মনে করায়। প্রত্যেকে নিজের অন্ধকারকে চিনতে চায়, কিন্তু আলোয় পৌঁছাতে গিয়ে বারবার থেমে যায়। হয়তো এই থেমে যাওয়া, এই নীরবতার মধ্যেই ‘‘আলোর গন্ধ’‘-এর আসল শিল্পগুণ—যেখানে সম্পর্ক, অনিশ্চয়তা ও আত্মবোধ মিলেমিশে এক হয় এক অন্তর্নিহিত মর্মসংগীতে।
আলোর গন্ধ–এর ভাষা যেন গদ্যের ভেতর গোপন কোনো কাব্যের ধ্বনি—যেখানে শব্দ নয়, বরং সুবাস, আলোর প্রতিফলন, আর নীরবতার প্রতিধ্বনি গল্প বলে। স্মরণজিৎ চক্রবর্তী সংলাপের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন ইন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতায়; তিনি চরিত্রের মনস্তত্ত্ব নির্মাণ করেন গন্ধ, আলো, রঙ, ও ক্ষণিক গতির ভেতর দিয়ে। আলো এক জানলায় এসে থেমে যায়, কারও পায়ের আওয়াজ হারিয়ে যায় দূরে, বাতাসে ভেসে আসে পুরোনো গানের এক অস্পষ্ট সুর—এই ক্ষুদ্রতম মুহূর্তগুলোই এখানে ভাষার আসল দেহ। যেন সময়, স্মৃতি ও অনুভূতি পরস্পরের উপর গলে গিয়ে তৈরি করে এক অনির্দেশ্য, স্বপ্ন-ভেজা বাস্তবতা।
এই রচনার গঠনরীতি স্পষ্টতই বহন করে stream of consciousness–এর প্রভাব—যে চেতনাপ্রবাহের ধারাকে ভার্জিনিয়া উলফের Mrs. Dalloway বা The Waves এবং জেমস জয়েসের Ulysses ভাষায় নতুন মাত্রা দিয়েছিল। স্মরণজিৎও চরিত্রের অন্তর্জগৎ প্রকাশে বহির্জগতের বর্ণনা নয়, বরং মনের ভেতরের অস্থির তরঙ্গকে ভাষায় ধরতে চেয়েছেন। তার বাক্য কখনও লম্বা, কখনও হঠাৎ থেমে যায়, যেন ভাবনার ছন্দে শ্বাস নিচ্ছে—এই ভঙ্গিই তাকে পশ্চিমী আধুনিকতাবাদের ধারায় আত্মীয় করে তোলে।
কিন্তু সেই চেতনাপ্রবাহের মাঝেও তিনি বুনেছেন লাতিন আমেরিকান magical realism–এর উষ্ণ আবহ—গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের One Hundred Years of Solitude বা Love in the Time of Cholera–র মতোই এখানে বাস্তবতা ও স্বপ্ন একে অপরের ছায়ায় লীন। বাংলা সাহিত্যে এমন ইন্দ্রিয়নির্ভর মায়ামিশ্র বাস্তবতার চর্চা বিরল। বিভূতিভূষণের প্রকৃতিচেতনা, বুদ্ধদেব বসুর অন্তরাত্মার একাকিত্ব বা মহাশ্বেতা দেবীর কঠোর বাস্তববোধ—সবই হয়তো “আলোর গন্ধ”-এর ভেতর দিয়ে নতুনভাবে পুনর্জন্ম নেয়, কিন্তু স্মরণজিৎ তাদের ধারার অনুসারী নন; বরং তিনি এক নতুন ভাষাগত অঞ্চলের স্রষ্টা।
এই উপন্যাসে “আলো” কোনো ঈশ্বরীয় প্রতীক নয়, বরং মানবিক সম্ভাবনার, স্বচেতনতায় পৌঁছানোর প্রতীক—যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজের ভেতরের অন্ধকারের মুখোমুখি হয়। এই ধারণা The Myth of Sisyphus, কিংবা Siddhartha–র সঙ্গেও অনুরণিত—যেখানে পরিত্রাণ আসে কোনো ধর্মীয় অবতারণা থেকে নয়, বরং জীবনের প্রতি স্বীকৃতি ও সহানুভূতির মধ্য দিয়ে।
এই বইয়ের পাঠশেষে মনে হয়—এক অদ্ভুত গন্ধে ভরে উঠছে সমস্ত অস্তিত্ব। সেই গন্ধে আছে অতীতের ধূলিকণা, ভবিষ্যতের আলোর দোলা, আর মাঝখানে আমাদের বর্তমানের অন্ধকারে ঝিলমিল করা এক শ্বাস। আলো এখানে দেখা যায় না, তবু তার অনুপস্থিতিই যেন আলোর গভীরতম প্রমাণ হয়ে ওঠে।
পুনশ্চ: স্মরণজিৎকে আমি একসময় নিঃসংকোচে অবজ্ঞা করেছিলাম—হয়তো পাঠের অহংকারে, কিংবা নিজের বোঝাপড়ার ভ্রমে। আজ মনে হয়, সেই অবজ্ঞাই ছিল আমার সবচেয়ে নির্মল অজ্ঞতা। এই বই শেষ করে যেন বিধাতা নীরবে ফিসফিস করে বললেন—“দেখো, আলোকে নয়, গন্ধকেই চিনে নিতে শিখো।”
আমি খুবই ঘরকুনো ধরনের মানুষ। 4-5 দিনের জন্যও কোথাও ঘুরতে গেলে আনন্দ যে করি না, তা নয় - কিন্তু কোথাও যেন সারাটাক্ষণ কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে। নিজের শহরকে মিস করি খুব। বেড়াতে যাওয়ার থেকে বাড়ি ফেরার আনন্দ হয় অনেক বেশি। ট্রেনে, প্লেনে বা যেভাবেই হোক - কলকাতায় পা দিলেই যে একটা অদ্ভুত, মায়াবী গন্ধ ভরা হাওয়া এসে নাকে ঝাপটা মারে, তাতে যেন এক মুহূর্তে বুকের মাঝে এক জাহাজ জোনাকি দপ্ করে জ্বলে ওঠে। খুশি আনন্দ, ভালোলাগার সাথে সাথে নিজের শহরের পরিচিত, আপন- আপন গন্ধ যেন মাথায় হাত বুলিয়ে কাছে টেনে নেয় প্রিয় বন্ধুর মতো। আলোরও কি তেমন কোন গন্ধ হয়? অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর মেঘের বুক চিরে এক চিলতে রোদ এসে চারদিকটা যখন আলো আলো করে দেয় তার কি কোন গন্ধ হয়? কিংবা অনেক দিন বন্ধ থাকা ঘরের জানলা খুলে দেওয়ার পর ঘরের প্রত্যেকটা কোণ যখন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার কি কোন আলাদা গন্ধ হয়? অথবা হঠাৎ বিপদে পড়লে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষটা যখন এসে পাশে দাঁড়ায় আর আমাদের যাবতীয় ভয় উধাও হয়ে যায় সেই ভরসার আলোরও কি কোন গন্ধ হয়?
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর "আলোর গন্ধ" উপন্যাস ঠিক এমনই এক মানুষকে নিয়ে লেখা, যে ঠিক হয়তো আলো হতে পারে না কারোর জীবনেই - এমনকি নিজের জীবনেও না - কেবল আলোর গন্ধের মতো, ফেলে যাওয়া পথের রেশটুকুর মতো জড়িয়ে থাকে সবার জীবনে। 'কিগান অর্ক ব্যানার্জি' - এক নীল চোখের মানুষ, যে "...সবকিছুর ভেতরে থেকেও যেন কোন কিছুতেই নেই। যেন তাকে পোড়ানো য���য় না। ভাঙ্গা যায় না। ছেঁড়া যায় না। কিগান যেন কেমন আলো দিয়ে তৈরি মানুষ। দেখা যায়। স্পর্শ করা যায় না। অনুভব করা যায়। কিন্তু আকার দেয়া যায় না। কিগান যেন আলোর গন্ধ। যেন ঝড়ের সঙ্গে না আসা মেঘ। যেন চিঠির ওপর কোনদিন না লেখা হওয়া অক্ষর। যেন প্রেমিকের একার দীর্ঘশ্বাস। গোপন। অগোচর।"
ছোটবেলায় অ্যাক্সিডেন্টে বাবা-মাকে হারিয়ে কাকু কাকিমা আর ঠাকুমার সংসারে মানুষ হয় সে। অতীত��র এক অপ্রিয় ঘটনায় নিজের সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়ি ছেড়ে সে চলে আসে চাপাডাঙ্গা। কলেজে পড়া দিঘির তাকে ঘিরে কিসের এত অভিমান? প্রেমিক আর্য-র সঙ্গে থেকেও ছটফট করে সে। বারবার তার মনে পড়ে এক সপ্তমীর সকাল, হলুদ গিটার আর দক্ষিণের রঙিন জানালা। রুহানের অনিশ্চিত জীবনের প্রতিটা বাঁকে সে অনুভব করে সেই নীল চোখের মানুষটার শূন্যতা। সংসার আর স্বপ্নের মধ্যে পিষে যেতে যেতে জিয়ানা নিজের কাছে ধীরে ধীরে অপরাধী হয়ে ওঠে। আজও সে বারবার দেখতে পায় কুয়াশার মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে একটা সাইকেল! মালিনী আর আদিত্যর মধ্যের টানাপোড়েন আদিত্যকে একা করে দেয় কিন্তু তবুও আদিত্য কেন যেতে পারে না সেই নীল চোখের মানুষটার কাছে? চাপাডাঙায় বাড়তে থাকা রাজনৈতিক প্রভাব, দুই কর্পোরেট সংস্থার লড়াই আর জমি নিয়ে চলা গন্ডগোলে কিভাবে যেন জড়িয়ে পড়ে সবার জীবন। অনিশ্চয়তার অন্ধকার ঘিরে ধরে সবাইকে - কিন্তু স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর "আলোর গন্ধ" উপন্যাসে গভীর রাত্রির শেষে নতুন ভোরের গন্ধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন অর্কদেব।
আমি স্মরণজিৎ বাবুর উপন্যাসের তেমন কোন বড় ভক্ত নই। নিঃসন্দেহে একটা সময় ওনার লেখা পড়তে ভীষণ ভালো লাগলেও মাঝখানে সব গল্পই প্রায় একই রকম বলে মনে হতো আমার। তবে কেন জানিনা "আলোর গন্ধ" আমার মনে প্রচন্ড প্রভাব ফেলেছিল। প্রত্যেকটা চরিত্র - তাদের অপ্রাপ্তি, প্রাপ্তি, পাওয়া, না-পাওয়া, অভিমান, রাগ, দুঃখ - সবকিছুই আমি খুব অন্তর দিয়ে অনুভব করেছি। সত্যি বলতে, এই উপন্যাসটা আমায় কাঁদিয়েছেও খুব। কোনদিন আনন্দে, ভালোলাগায়। কোনদিন দুঃখে। দিঘির কষ্টতে কষ্ট হয়েছে, সব হারিয়ে ফেলার পর নতুন করে বাঁচতে চাওয়া রুহানকে দেখে চোখ ভিজেছে, বলতে ইচ্ছা হয়েছে, রুহান ভাই তোকে পারতেই হবে। এইটুকু তুই ডিসার্ভ করিস! আর সবথেকে বেশি কষ্ট হয়েছে - নির্জনতাকে, একাকীত্বকে আর বেদনাকে পাথেয় করে বেরিয়ে পরা সেই নীল চোখের ছেলেটার জন্য।
কিছু কিছু বই থাকে যা আষ্টেপৃষ্ঠে মানুষকে বেঁধে ফেলে অনুভূতিতে, মায়ায়। "আলোর গন্ধ" উপন্যাসটা ঠিক তেমনি। না লেখা চিঠির মত, শুরু না হওয়া বন্ধুত্বের মতো, অলক্ষ্যে বহতা প্রেমের মতোই এই উপন্যাস ভেসে চলে আর মানুষের কাছে পৌঁছানোর, তাকে ভালবাসার, তার পাশে থাকার গল্প বলে। যে গল্প ঘিরেই আসলে গড়ে ওঠে মানুষ। তার জীবন। তার বেঁচে থাকা। তার প্রেম।
"মালিনী আকাশের দিকে তাকালো... ও দেখল এক আকাশ তারা ফুটে আছে মাথার ওপরে। যেন বকুল ফুল। যেন হীরের গুঁড়ো। আর সেই নিয়ে পৃথিবী ছুটে চলেছে অনন্তের পথে। এত অর্বুদ প্রাণ, এত অগণিত বৃক্ষসকল, এত অসংখ্য নদী ও জল সংগ্রহ বহন করে, তার সমস্ত নিয়ে পৃথিবী নিজেকে সমর্পণ করছে সূর্যের জীবনে। এই সমর্পনে কোনও দ্বিধা নেই, নেই কোন বন্ধন...মালিনী বুঝল আলো মানুষের ভেতরেই থাকে। যেমন সূর্য লুকিয়ে থাকে রাতের অন্ধকার গভীরে। জল সম্পূর্ণ করে আগুনকে আর রাত্রি পূর্ণ করে দিনকে...ধীরে ধীরে মুঠো খুললো মালিনী...আর ওর চোখের কোণে ধীরে ধীরে এসে জমা হতে লাগলো হীরের কুচি, বকুল ফুল। এমন দু'-চার কুচি হীরে আর টুপটাপ বকুল ফুলের জন্যই তো বেঁচে থাকে পৃথিবী। বেঁচে থাকে প্রাণী জগত। বেঁচে থাকি আমরা।"
কালকে রাত্রেই পড়া শেষ করলাম স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এর আলোর গন্ধ।
কিছু বই থাকে, যেগুলো কেবল পড়া হয় না— অনুভব করা হয়। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর "আলোর গন্ধ" ঠিক তেমন একটি বই। গল্প নয়, এ যেন একটা অভিজ্ঞতা। যেন শব্দে নয়, স্মৃতির ঘ্রাণে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। আর এখানে আলোও যেন ঘ্রাণ ছড়ায়।
প্রথম পাতাটি খুলেই মনে হয়েছিল আমি ঢুকে পড়েছি আমার অতি পরিচিত একটি শহরের অলিগলিতে—একটা কোলকাতা, যে শহরের প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে ভালোবাসা, বিরহ, কবিতা আর কিছু অসমাপ্ত সংলাপ।
উপন্যাসের প্রথম থেকেই বিভিন্ন চরিত্রের সমাবেশ ঘটে এবং যত পড়তে থাকি ততই মনে হয় চরিত্রগুলো মনে হয় কাগজে আঁকা নয়—এরা আমার আশেপাশেরই মানুষ, এমনকি আমি নিজেই হতে পারতাম।
প্রতিটা চরিত্রের হাত ধরে গল্প এগিয়েছে নিজের গতিতে এবং ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি এ গল্প শুধু প্রেমের নয়— বরং হারানো প্রেম, চুপচাপ ভালোবাসা, আর অস্পষ্ট কষ্টের গল্প। গল্পটা শিল্প, স্মৃতি, পরিচয়, আর একটা চাপা নস্টালজিয়ার, যা ভুলতে চাইলেও ভুলে থাকা যায় না।
আমার বরাবরই মনে হয় স্মরণজিতের লেখার একটা আলাদা ছন্দ আছে— কখনও কবিতার মতো, আবার কখনও নগ্ন বাস্তব। এক একটা লাইন পড়ে থেমে যেতে হয়, ভাবতে হয়, আবার পরের লাইনেই মনে হয় যেন বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। পড়তে পড়তে এতটাই একাত্মতা জন্মে যায় গল্পের চরিত্র ও তাদের জীবনে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার সাথে।
এই উপন্যাসের মূল আকর্ষণ হল তার চরিত্র নির্মাণ। এখানে প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা এবং প্রত্যেকেই কিছু না কিছু চাওয়া পাওয়ার প্রতীক। প্রত্যেকটা চরিত্রের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় কিছু অসম্পূর্ণতা এবং না পাওয়ার গল্প। আর সেই অসম্পূর্ণতা ই তাদের করে তোলে বাস্তব, আমাদের মতো।
কোলকাতা শহরটা এখানে শুধু পটভূমি নয়—একটা জীবন্ত চরিত্র। সে কখনও নরম, কখনও নিরুত্তর, কখনও বোবা কান্নার মতো চুপচাপ।
একবার মনে হল এই উপন্যাসে কোনও নাটকীয় মোড় নেই, নেই উত্তেজনার চরম বিন্দু। কিন্তু তারপরেই বুঝতে পারলাম সেখানেই এর সৌন্দর্য এবং সাফল্য। নীরবতাই এখানে সবচেয়ে বেশি বলে। কিছু না বলা কথা, কিছু অপূর্ণ প্রেম, কিছু অসমাপ্ত গল্প—এসবই যেন এই বইয়ের প্রাণ।
অসাধারণ একটি উপন্যাস, যদিও কর্মজীবন এবং সংসার জীবন সামলে ৪৭০ পাতার এই অতীব সুন্দর পথ অতিক্রম করতে আমার প্রায় ২০ কুড়ি দিনের মত লেগে গেল। কিন্তু এই চলার পথের প্রত্যেক মুহূর্তে আমার শুধুই মনে হয়েছে যদি কেউ কখনও ভুল সময়ে সঠিক কাউকে ভালোবেসে থাকো, যদি পুরোনো চিঠি বা কবিতার ভাঁজে নিজেকে কেউ খুঁজে পেয়ে থাকে, যদি সন্ধ্যার অন্ধকারে কারোর একা হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়ে থাকে একসাথে পূর্ণ আর ফাঁকা হয়ে আছো— তাহলে "আলোর গন্ধ" তাদের সাথেই কথা বলবে।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী র উপন্যাসগুলির আরেকটি সুন্দর দিক হলো এদের নামকরণ। ওনার লেখা যে কটা উপন্যাস আমি পড়েছি তার সবকটাই যেন মনে হয় এক একটা সুন্দর গন্ধের মতন আমাদের চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং আমাদের সব সময় একটা ভালো লাগার এবং ভালোবাসার অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে।
আমার মনে হয় এই বই কখনো কোনও শেষ দেয় না। বরং, সঙ্গ দেয়। নিঃশব্দে পাশে বসে বলে, “আমি আছি, আমি থাকবো।”
🍂📖উপন্যাসের নাম - আলোর গন্ধ📖🍂 ✍️লেখক - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী 🖨️প্রকাশক - আনন্দ পাবলিশার্স 📃পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৪৭০
🍁✨না - লেখা চিঠির মতো , শুরু না হওয়া বন্ধুত্বের মতো , অলক্ষ্যে বহতা প্রেমের মতো এই উপন্যাস ভেসে চলে জীবনে । ভেসে চলে আর মানুষের কাছে পৌঁছনোর , তাকে ভালবাসার ,✨🍁
💙🌼এক নীল চোখের মানুষ । সবার কাছে থেকেও এক অজানা দূরত্বে ভেসে থাকে সে । অসীম নির্লিপ্তি আর উদাসীনতায় সে অংশ নেয় সবার জীবনে । আবার বেরিয়েও আসে সবার জীবন ছেড়ে । কলেজে পড়া দিঘির তাকে নিয়ে কীসের এত রাগ ? প্রেমিক আর্যর সঙ্গে থেকেও ছটফট করে দিঘি । বারবার তার মনে পড়ে যায় এক সপ্তমীর সকাল , হলুদ গিটার আর দক্ষিণের সেই রঙিন জানলা । ক্রি��েটার রুহান মাথা নিচু করে দেখে কীভাবে সবকিছু চলে যায় তার মুঠোর বাইরে । টালমাটাল হয়ে ওঠে তার জীবন । আর সে অনুভব করে নীল চোখের মানুষটার শূন্যতা । জিয়ানারও এক অপরাধবোধ কাজ করে সেই মানুষটাকে ঘিরে । সংসার আর চাকরির মধ্যে আটকে থাকা জীবনের গায়ে কেন জড়িয়ে থাকে স্বপ্ন ? কেন সে দেখে কুয়াশার ভেতর আজও মিলিয়ে যাচ্ছে একটা সাইকেল । নারী - আসক্ত আদিত্যর জীবন পালটে যায় মালিনীকে দেখে । অদ্ভুত একাকিত্ব ঘিরে ধরে ওকে । কেন আদিত্য যেতে পারে না সেই নীল চোখের মানুষটার কাছে ? গভীর সমস্যা বুকে চেপে রেখে সবার সামনে উজ্জ্বলভাবে উপস্থিত হতে চেষ্টা করে রাহি । চেষ্টা করে । সেই মানুষটাকে আগলে , যত্নে নিজের করে রাখতে । কিন্তু কোথায় ফাঁক থাকে ? কেন বারবার সবার থেকে ছিটকে সরে যায় সেই মানুষটা ? চাপাডাঙার জমি নিয়ে রাখব চক্রবর্তী আর মার্চেন্ট মাল্টিপলসের ঝামেলা জটিল হলে তার পাকে জড়িয়ে পড়ে রাহি , আদিত্য । জড়িয়ে পড়ে রুহান আর জিয়ানার ভাগ্যও । অনিশ্চয়তার অন্ধকার এসে ঢেকে ফেলতে চায় সবার জীবন । স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘ আলোর গন্ধ ' উপন্যাসে গভীর রাত্রির শেষে আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন অর্কদেব ।🌼💙
🌼💙তোরা আমায় অনেক পুরনো দিন থেকে চিনিস তো তাই বেসিকটা ধরতে পারিস । আর বেসিক ক্যারেক্টার তো পালটায় না ।
অতীত বলে কিছু হয় না । মানুষ যতদিন বাঁচছে তার জীবনের সমস্ত কিছুই বর্তমান । প্রতিটা কষ্ট , চোট আর অপমান সব বর্তমান ।💙🌼
🌼💙আলোর গন্ধ থাকে? থাকে..... প্রতিটা আলোর একটা নিজস্ব গন্ধ আছে.... সকালের প্রথম আলোটা ঘরে ঢোকামাত্র তার গন্ধ.... উত্তর কলকাতার গলি, ঠাকুরমার চন্দন, ধূপ আর কর্পূর ছুঁয়ে ভেসে আসা অদ্ভুত এক আলোর গন্ধ... জঙ্গলে দাঁড়িয়ে শেষ বিকেলের আলোর অন্য এক গন্ধ.... প্রতিটা মানুষের মতো প্রতিটা সময়ের মতো আলোরও আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে... 💙🌼
When I have started reading this book, I thought it would be like normal love stories we have read by ABCD writers. But this guy has taken it to another level. Worth reading a novel like this which revolves around the each phases of life we can possibly feel.
মডার্ন বাঙ্গালি রোমান্টিক ধারা হিসেবে খারাপ না।প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তির গল্প নিয়ে রোমান্টিক উপন্যাস, খুবই সহজ গল্প আর পাঠককে কোনও গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি করে না। আমাদের ভুবনায়িত ফিল গুড বাঙালির বাইরের চিত্র-বিচিত্র জীবনযাপনকে ও খানিকটা ভেতরকে চিনিয়ে দেয়।
উপন্যাসটির ভাষার সৌন্দর্য এবং কাব্যিক ছোঁয়া গল্পকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। আলোর গন্ধ শুধুমাত্র একটি গল্প নয়, এটি জীবনের প্রতি নতুন করে ভাবার অনুপ্রেরণা। প্রতিটি বাক্যে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবন দর্শনের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
"জিয়ানা সেদিন বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে গিয়েছিল ওদের বাড়ি থেকে সামান্য ওপরে, সেই পাহাড়ের সবুজ রেলিং ঘেরা প্রান্তে, লাল বেঞ্চটার কাছে। দেখেছিল বেঞ্চের গায়ে ছুরি দিয়ে কেটে খোদাই করা আছে — ' আমি তোর জন্য এসেছিলাম...'" — কিগান অর্ক ব্যানার্জী simp here y'all 🫰🏻
📌 আলোর গন্ধ থাকে ? থাকে , কিগান জানে , প্রতিটা আলোর একটা নিজস্ব গন্ধ আছে । ছোট থেকেই সকালের প্রথম আলোটা ঢোকামাত্র তার গন্ধ পেতো ও। ছোট থেকেই কিগান বুঝেছিল , প্রতিটা মানুষের মত, প্রতিটা আলোরও আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে ।
কিগান অর্ক ব্যানার্জী - নীল চোখের অধিকারী এক মানুষ , যাকে ঘিরে এই গল্পটি। নিঃসঙ্গ , একাকী , শান্ত এক মানুষ । কলকাতার জীবন ছেড়ে কিসের জন্য চাপাডাঙ্গার মত গ্রাম্য এলাকায় চাকরি নিয়ে চলে যায় কিগান ? কলেজে পড়া দিঘির কিসের এত রাগ কিগান এর উপর ? আদি কেনো এখনো দাদাভাই এর ঘুড়ি পেরে দেওয়াকে ভুলতে পারেনি ? কিসের আক্ষেপ তার ? জিয়ানার জীবনে সব থেকেও কি নেই ? রাহির জীবনের কোন গোপন অতীত ওকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ? রুহানের জীবন আর পাঁচটা সাধারণ ক্রিকেটারের মত নয় কেনো ? কার হয়ে রয়ে গেলো কিগান ? কার জন্য তার সন্ধের পর গিটারের সুর ? এই সব প্রশ্নের উত্তরই দেবে " আলোর গন্ধ " যা পড়ার পর ভুলতে পারা যাবে না।
📌 সেই টিনএজ বয়েসে প্রথম লেখা পড়ি স্মরণজিৎ চক্রবর্তী মহাশয়ের উনিশ কুড়ি ম্যাগাজিনে । সেই থেকে ওনার লেখার ভক্ত । তাই অভিজ্ঞতা থেকে জানি উনি পাঠক দের কখনোই নিরাশ করেন না । বরং কিছুটা বেশি পেয়ে থাকি সব সময় । অন্য পাঁচটা সাধারণ প্রেমের গল্পের চেয়ে একটু বেশি পাই ওনার লেখায় । আলোর গন্ধের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি ।
📌 " আলোর গন্ধ " গল্প বলে কষ্টের , কষ্ট থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর , অভিমানের , ভুল বোঝাবুঝির , মানুষের স্বার্থপরতার আবার নিঃসার্থতার , এই গল্প প্রত্যেকটা টিনেজার এর আবার জীবনের মধ্য গগনে এসে পড়া প্রাপ্ত বয়স্���ের । এই গল্প কখনও হেরে যাওয়ার, আবার কখনও জিতে যাওয়ার , এই গল্প ফেলে আসা অতীতের তো কখনও আবার জুড়ে থাকা বর্তমানের , এই গল্প বন্ধুত্বের, প্রেমের এবং সর্বোপরি এই গল্প ভালোবাসার ।
📌 বেশ কিছু চরিত্রের সমন্বয়ে লেখা এই গল্পটার মূল চরিত্র কিগান । তাকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু চরিত্র । প্রতিটি চরিত্রের ইতিহাস খুব সূক্ষ্মভাবে লেখা যাতে পাঠক তাদের সাথে একাত্ম অনুভব করতে পারে । আর সেখানে লেখক সফলও হয়েছেন । কখনও কিগান , কখনও জিয়ানা , কখনও শমী, কখনও রুহান আবার কখনও আদি - প্রত্যেকের কোনো না কোনো মুহূর্ত মনের গভীর জায়গাটা ছুঁয়ে গেছে । প্রত্যেকের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা যে আলাদা সেটা খুব সুন্দর ভাবে এবং পটু হাতে লিখেছেন লেখক । আধুনিক ভালোবাসার গল্প লিখতে যে লেখক সিদ্ধহস্ত তা তিনি প্রত্যেক জায়গায় বুঝিয়ে দিয়েছেন।
📌 গল্পে যেহুতু সম্পর্কের , জীবনের , চাকরির টানাপোড়েন আছে তাই প্রাপ্ত বয়েসে এসে গল্পটা পড়লে সবচেয়ে ভালো লাগবে । কারণ খুব কম বয়েসে পড়লে অনেক কিছু জানা হলেও বোঝা হবে না , অনুভব করা হবেনা । মানুষ যখন উপলব্ধি করে তখনই তো তার মর্ম বোঝে তাই । এই গল্পের চরিত্র গুলোর সাথে একাত্ম হতে গেলে সেই উপলব্ধি টা করা খুব প্রয়োজন ।
📌 রেটিং দিয়ে বইটার সৌন্দর্য্য একদম নষ্ট করবো না । আমার খুবই ভালো লেগেছে। যারা এখনো পড়ে উঠতে পারনি তাদের বলব অবশ্যই কিনে নিও । পড়ার পর অবশ্যই জানিও কেমন লাগলো । আর যারা ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছো তারাও জানাও কেমন লেগেছে ।
আমার অন্যতম প্রিয় চরিত্র হয়ে রয়ে গেলো - নীল চোখের হরিণ - কিগান অর্ক ব্যানার্জী ♥️ । .
One of my favourite stories of Smaranjit Chakraborty. The Novel is written so beautifully that you will feel all the characters live in front of you, as if you are not reading story, you are actually witness of a life journey.
আমার ভালো লাগা উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম |প্রতিটি চরিত্রই এত প্রানবন্ত , বইটা পড়তে পড়তে আমি যেন ওদেরই একজন হয়ে গেছি. |নামগুলো খুব মিষ্টি, কিগান আর্ক , দিঘি ,রাহি।