Jump to ratings and reviews
Rate this book

Voices from Asia

তিতাস একটি নদীর নাম

Rate this book
Originally published in 1956, A River Called Titash is among the most highly acclaimed novels in Bengali literature. A unique combination of folk poetry and ethnography, Adwaita Mallabarman's tale of a Malo fishing village at the turn of the century captures the songs, speech, rituals, and rhythms of a once self-sufficient community and culture swept away by natural catastrophe, modernization, and political conflict.

Both historical documents and work of art, this lyrical novel provides an intimate view of a community of Hindu fishers and Muslim peasants, coexisting peacefully before the violent partition of Bengal between India and East Pakistan (now Bangladesh). Mallabarman's story documents a way of life that has all but disappeared.

440 pages, Hardcover

First published January 1, 1956

104 people are currently reading
1296 people want to read

About the author

Adwaita Mallabarman

5 books17 followers
Adwaita Mallabarman (Bengali: অদ্বৈত মল্লবর্মণ) (alternative spelling Advaita Mallabarmana) was a Bengali writer. He is mostly known for his novel Titash Ekti Nadir Naam (English: A River Called Titash) which was published in a monthly named Mohammadi five years after his death.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
350 (47%)
4 stars
288 (38%)
3 stars
87 (11%)
2 stars
11 (1%)
1 star
4 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 82 reviews
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
July 4, 2022
বাংলাভাষায় লেখা নদীকেন্দ্রিক সাহিত্যের প্রসঙ্গ উঠলে, "তিতাস একটি নদীর নাম" উপন্যাসের কথা সবার আগে মনে পড়ে। তিতাস নদীর চেয়ে খ্যাতনামা নদী বাংলাদেশে আরো অনেক আছে। তবু এই আপাত-অখ্যাত নদীটিকে, অদ্বৈত মল্লবর্মণ চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন আপামর বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে। প্রধানত দুটো কারণে।

এক। প্রান্তিক হতদরিদ্র মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়াশুনার রেওয়াজ, সেই আমলে প্রায় ছিলোনা বললেই চলে। এমন অবস্থায়, নিরক্ষর মালোজাতিদের ঘরের একজন মানুষ, দৈবক্রমে লেখাপড়া শিখে, নিজের জাতির মানুষদের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার বিবরণ এরকম দরদ দিয়ে লিখবেন, এটা একটা অভাবনীয় ঘটনা। সারা পৃথিবীতে এই বিরল ঘটনা ক'টা ঘটেছে তা আঙুল গুনে বলে দেওয়া যায়।

দুই। সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যাওয়া একটা সময়কাল, সেই হারিয়ে যাওয়া সময়ের মানুষজন, তাদের সমাজ, সামাজিক রীতিনীতি, তাদের জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ, বেঁচে থাকার অপরিসীম সংগ্রাম, তাদের অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা, একদরিয়া দুঃখের মাঝে ভাসমান একঘটি সুখ, জীবনের উত্থান-পতন, তাদের প্রেম-ভালোবাসা-বিরহযন্ত্রণা— এই সমস্তকিছু জানতে পেরে পাঠক হিসেবে আমার উপলব্ধি হয়েছে যে, এইসব বৃত্তান্ত যদি লিখে না-রাখা হতো, একটা অপূর্ব ঐশ্বর্য্য তলিয়ে যেতো কালের গর্ভে। এমনও ছিলো আকাশ বাতাস জল মাটি নৌকা বৃক্ষ নদী চোখের জল? আমরা কোনোদিন জানতেই পারতাম না! এখানেই তো সাহিত্যের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।

বইটা পড়ে যে-অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতিকে চিনলাম, সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান ছিলেন গিরীন চক্রবর্তী। তাঁর লেখা এবং আব্বাসউদ্দীন আহমদের গাওয়া ভাওয়াইয়া আঙ্গিকের একটা লোকসংগীত আমার খুব প্রিয়। রিভিউ শেষ করার আগে সেই গানের অন্তিম কয়েকটা লাইন এখানে লিখে রাখি। গানের কথাগুলো শুনলে উপন্যাসের চরিত্রদের অভিব্যক্তি এবং সারল্যের কথা মনে পড়ে যায়।
শালিধানের শ্যামলা বনে হইলদা পঙ্খি ডাকে

চিকমিকাইয়া হাসে রে চান্দ সৈর্ষা ক্ষেতের ফাঁকে-ফাঁকে সৈর্ষা ক্ষেতের ফাঁকে

সোনালি রূপালি রঙে রাঙা হইলো নদী

মিতালী পাতাইতাম মুই মনের মিতা পাইতাম যদি রে

আরে ঝিলমিলাইয়া ঝালর পানি নাচে থৈইয়া দিয়া পানি নাচে থৈইয়া দিয়া ...

এরকম গান, এরকম উপন্যাস— এগুলো শুনলে/ পড়লে মনে হয় যেন একটা সাংস্কৃতিক-টাইমমেশিনের ভেতর বসে আছি আমি।
Profile Image for Zunaed.
54 reviews119 followers
June 28, 2017
তিতাসের সাথে আমার পরিচয় পৃথিবীর আলো-বাতাসের স্পর্শ পাওয়ার আগ থেকেই। তিতাস পাড়ের ছেলে হিসেবে তিতাস আর তার চারিপাশের জনপদের প্রতি আমার এক বিশেষ দুর্বলতা তো আছেই। "তিতাস একটি নদীর নাম" উপন্যাসে "কুয়ারা" বা এধরনের আরো কিছু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক শব্দ, যা আমি অন্য এলাকার মানুষের মুখে শুনতে পাইনি, তার ব্যবহার পেয়ে যে অনুভূতি আমার মনে হয়েছে, তা কি আর কোনো শব্দে প্রকাশ করা যাবে?

যাবে না, আর এ কারণে যার সাথে তিতাসের পরিচয় নেই, তার চেয়ে আমার মনে বইটার গভীর স্থান পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। তাই নিরপেক্ষভাবে এই বইয়ের কোনো রিভিও লেখা আর রেটিং দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। পক্ষপাতিত্ব করেই পাঁচতারা দিয়ে দিলাম। আর রিভিও? না, ঠিক রিভিও না, যা মনে আসছে লিখছি। কিছু কথা তো বলার থাকেই।

বর্তমানের নাগরিক জীবনে বিকেলে তিতাসের পাড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া দিনগুলোকে খুব মনে পড়ে। কখনও কখনও আড্ডা হত না, চুপচাপ দেখতাম নদীর চলা। কখনও ভাবতাম, দূরে তিতাসের ঐ পাড়ে যে ইটভাটা দেখা যায়, সেই জায়গাটা একদিন কিনে নেব। ইটভাটা ভেঙে ফেলব, তিতাসের পাড়ে ইটভাটা মানায় না। সেখানে একটা কুঁড়েঘর তুলব। সভ্য দুনিয়া থেকে দূরে চলে যাবো সেখানে। থাকব আমি, একা অথবা বিশেষ কারো সাথে। এখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়া গেলে তিতাসের পাড়ে যাই, আড্ডা দিই, চুপ থাকি। কখনও কখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে একটা কুঁড়েঘরের ছবি, তার সামনে দুজন বসে আছে। কেউ কাউকে খেয়াল করছে না, দুজনেই নদী দেখছে। তিতাসই তাদের একমাত্র যোগসূত্র।

বইটার নাম কবে প্রথম শুনেছিলাম? একদম দিন-তারিখ ধরে তো বলতে পারবো না, তবে স্কুলজীবনের শুরুর দিকেই। হাইস্কুলে উঠে বইটার প্রতি কেমন একটা অধিকারবোধ জন্মাল, আমি আর ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মন যে একই বিদ্যাপীঠের বিদ্যার্থী! স্কুলে আসতে-যেতে আর টিফিনের বিরতিতে আমি বন্ধুদের সাথে যে পথে হেঁটেছি, খেলেছি, সেই পথেই হেঁটেছেন একজন লেখক! আচ্ছা, এই স্কুলের কথা আছে উনার লেখায়? জানতে ইচ্ছে হত, কী আছে আর কী নেই এই উপন্যাসে।

সত্যিই কী আছে বইটাতে? বইটাতে একটা গল্প আছে। গল্পটা চিরকালীন, গল্পটা চোখে দেখা গল্প। এতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে, কেবল চরিত্রগুলোই বদলেছে। কিন্তু গল্প আজো সেই একই আছে। সেই গোকর্ণঘাট, নয়নপুর, আনন্দবাজার, জগৎবাজার আজো আছে। আছে মালোরা, আছে তিতাস নদী, আছে বুক জুড়ে জীবন নিয়ে। তিতাস আজো মাছ দিয়ে চলেছে জেলেদের, আজো ফসল ফলিয়ে চলেছে দুপাশে। তিতাস আজো শান্ত বালিকা, পাড় ভাঙে না কখনও। আজো সে মুগ্ধ করে বালককে, আজো বালক তার দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ নয়নে। আজো অনন্ত তিতাসের বুকে নৌকায় শুয়ে রাতের আকাশের তারা দেখে, বড় হয়ে হারানো তিতাসের পাড়ে এসে উচ্ছ্বসিত হয়।

নদীর একটা দার্শনিক রূপ আছে। নদী বহিয়া চলে, কালও বহিয়া চলে। কালের বহার শেষ নাই, নদীরও বহার শেষ নাই। কতকাল ধরিয়া কাল নিরবিচ্ছিন্নভাবে বহিয়াছে। তার বুকে কত ঘটনা ঘটিয়াছে। কত মানুষ মরিয়াছে, কত মানুষ বিশ্রীভাবে মরিয়াছে— কত মানুষ না খাইয়া মরিয়াছে— কত মানুষ ইচ্ছা করিয়া মরিয়াছে— আর কত মানুষ মানুষের দুষ্কার্যের দরুণ মরিতে বাধ্য হইয়াছে। আবার শত মরণকে উপেক্ষা করিয়া কত মানুশজ জন্মিয়াছে। তিতাসও কতকাল বহিয়া চলিয়াছে। তার চলার মধ্যে তার তীরে তীরে কত কান্নার রোল উঠিয়াছে। কত অশ্রু আসিয়া তার জলের স্রোতে মিশিয়া গিয়াছে। কত বুকের কত আগুন, কত চাপা বাতাস তার জলে মিশিয়াছে। কতকাল ধরিয়া সে এসব নীরবে দেখিয়াছে, দেখিয়াছে আর বহিয়াছে। আবার সে দেখিয়াছে কত শিশুর জন্ম, দেখিয়াছে আর ভাবিয়াছে। ভারী নিগ্রহের নিগড়ে আবদ্ধ এ অজ্ঞ শিশুগুলো জানেনা, হাসির নামে কত বিষাদ, সুখের নামে কত ব্যথা, মধুর নামে কত বিষ তাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে।

অজ্ঞ ছেলেগুলোর সুখের নামের ব্যথা চিরকাল ভুলিয়ে দিক তিতাস। নিজের সহস্র বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সে বেঁচে থাকুক চিরকাল, আরো অভিজ্ঞতা হোক তার। কালের মতই অনন্তযাত্রায় তিতাস বুকে রাখুক আমাকে, অনন্তকে আর সবাইকে। বৃদ্ধ হয়ে যখন আমি দাঁড়াবো তিতাসের পাড়ে, তার শান্ত সুনির্মল বাতাস আমার সব না পাওয়ার হাহাকার মুছে দিক! তিতাস জীবন দিয়ে জীবিকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখুক মানুষ আর জনপদ। তিতাস একটি নদীর নাম, তিতাস জীবনের নাম, তিতাস জনপদের নাম!
Profile Image for Naziur Rahman.
Author 1 book68 followers
November 5, 2016
মানুষের জীবনকে তুলনা করা হয় বহতা নদীর সাথে। জীবন যেমন কারো জন্য থেমে থাকে না, সময় যেমন প্রতিমূহুর্তে বদলায়, নদীও ঠিক তেমনি অবিরাম প্রবাহে বদলাতে থাকে। তাই "তিতাস একটি নদীর নাম" ঠিক কোন উপন্যাস হয়ে ওঠে না যেন। নামের স্বার্থকতা ধরে রাখবার জন্যই যেন এ উপন্যাসও ঠিক নদীর মতই বহতা! ঠিক একক বা ���কাধিক চরিত্রকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাস গড়ে উঠে নাই। তিতাস নদীর প্রবাহকে ঘিরে এ উপন্যাসের বয়ে চলা। সাথে বাকি সব চরিত্রের উপস্থিতি যেন শুধুই তিতাসকে বইয়ের পাতায় জীবন্ত করে তুলবার জন্যই। তিতাসের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা কিছু গ্রাম, কিছু পরিবার আর কিছু মানুষ জীবনের প্রতিটা বাঁকেই যেন তিতাসের হাতেই নিজেদের সমর্পণ করে দেয়। তাদের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, হাসি-খেলা, আনন্দ-উৎসব, বাঁচা-মরা সবকিছুই যেন তিতাসকে ঘিরেই! তিতাসের দর্প থাকলে তারাও প্রবল দর্পে বাঁচে, তিতাস ধুঁকতে থাকলে তারাও ধুঁকতে থাকে আর তিতাস শুকায়ে গেলে সেসব মানুষ গুলোর প্রাণরসও যেন শুকায়ে যায়। তাই "তিতাস একটি নদীর নাম" কোন উপন্যাস না। "তিতাস একটি নদীর নাম" একটি ইতিহাস। তিতাস নদীর ইতিহাস। মালোপাড়ার ইতিহাস। কৃষকদের ইতিহাস। হিংসা-বিদ্বেষ, সুখ-দুঃখের ইতিহাস। একটি বিস্তৃত জনপদের ইতিহাস!

হয়তো। হয়তো সারা বাংলার ইতিহাস! বাংলার বুকে জালের মতন ছড়িয়ে থাকা সব ছোট-বড় নদ-নদীর ইতিহাস! বাংলার হারানো গৌরবের ইতিহাস!

তাই এই উপন্যাসের নাম "তিতাস একটি নদীর নাম" না হয়ে "তিতাস বাংলাদেশের নাম" হলেও একেবারে যে অপ্রাসঙ্গিক হত তা বলার উপায় নেই একদমই!

নদীর দেশের মানুষের নদীই শুকায়ে গেলে থাকে কি!
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
May 15, 2023
৪.৫★।

অনেকদিন ধরেই বইটা পড়ব ভেবেছিলাম, নদীমাতৃক বাংলার নদীকে ঘিরে জনপ্রিয় বইগুলোর একটা তিতাস একটি নদীর নাম। দীর্ঘ এক সপ্তাহে বইটা পড়লাম, বেশ আস্তেধীরে কিন্তু পুরোটা সময় বইটার মাঝেই ছিলাম। নদীর সাথে সম্পর্কযুক্ত দুই পেশার মানুষ, জেলে এবং কৃষক সমাজের কিছু মানুষকে নিয়ে এই বইটি যাদের বিচরণ তিতাস নদীর পাড়ে। নদীকে ঘিরেই তাদের বসবাস এবং সকল কর্মকাণ্ড নিহিত। তাদের আচার, সংস্কৃতি , পেশা সর্বোপরি প্রতিদিনের বিচরণ নিয়েই বইটি। দুঃখ দুর্দশায় ভরা সেই মানুষগুলোর জীবনসংগ্রামকে ঘিরেই এই বইটি লেখা।
Profile Image for Soham Chakraborty.
113 reviews31 followers
June 3, 2015
According to famous anthropologist Clifford Geertz, "[b]elieving, with Max Weber, that man is an animal suspended in webs of significance he himself has spun, I take culture to be those webs, and the analysis of it to be therefore not an experimental science in search of law but an interpretive one in search of meaning. Symbolic anthropology or, more broadly, symbolic and interpretive anthropology, is the study of cultural symbols and how those symbols can be interpreted to better understand a particular society. (citation - http://en.wikipedia.org/wiki/Symbolic...)

If we have to understand the good days and bad days of the protagonists described in this book, we have to contextualize their life as a symbol with the river and water, which is an almost uphill task to us, modern, urban people. It tells the story of a specific group of fishermen, called 'Malo', who used to thrive at the banks of the now extinct river Titash. Malos were one of the most marginalized, poor sub-sections of the rigid social hierarchy of the time when this book was written, which to this day, exists. Malos used to thrive on the river, they spent their lives on water. Water was life to them and water was land to them and water was air to them. If their life and culture are to be understood, it must be done from the context of the river and water. This novel, although being fiction, is more of an ethnographic, historical study. It also helps to feel for the people who are less fortunate than us, because sociologically, humans tend to form two groups. One is in-group and one is out-group. This novel talks about the out-group.

It should also be remembered that the writer, Advaita Mallabarmana, was the first child from the Malo community in his village and nearby area, to finish school. Members of the community collected whatever little money they had to support him, mostly books, as his tuition used to be covered by the scholarships he earned. As a child, he was known to turn down offers of food from upper-caste schoolmates and teachers and hardly took material help from his affluent acquiaitances. But as is always the case with less fortunate and marginalized people, he had to drop out of college because of financial burdens and then he proceeded to be the literary editor of a Bengali magazine. He started writing extensively and quickly garnered wide acclaim in literary circles. He was deeply sensitive to the hardships faced by Malos and in his short lifespan of 37 years, tried to help the community as much as he could.

This novel doesn't follow a single stream of narration. Characters come and leave - mostly die - but their lineage can be traced down, despite of having no written record. It starts with two young Malo guys, Kishore and Subal, who went out of their village to get a better catch of fish. Told from an insider's point of view, Mallabarmana narrates the bemused exclaimations when they see new villages and new people and their way of life. As unexpected as today, Kishore got married to a girl in a village where they had landed for fishing. What doesn't look unexpected is the way the marriage is depicted in the book. It takes the reader to a world of unknown people and their unknown customs. The novel ends with Ananta, the only child of Kishore, going to Calcutta and earning a Bachelors' degree. In between the pages, reader gets to know of Basanti, a girl from Kishore's village who loved Kishore but got married to Subal, because Kishore had already got married in that village. A large section of the novel is devoted to Basanti, who is referred by her villagers as 'wife of Subal', and her fierce, rebellious way of living life. Subal died shortly after their marriage but she subsisted on whatever little was granted to her. She also reared Ananta, after his parents died. There are numbers of characters in this book and all leave their indelible mark, but if we have to pick central characters, that would be Basanti and Ananta.

More than the characters, this novel is about the broad community of fisherfolk and their way of living. They were self sufficient, bathed by the river and cleansed by the sun. They had a culture of their own, poetry of their own and ritual of their own. However as the times started changing and the river started to dry, their idyllic way of living got destroyed like dead leaves befallen by chilly, gusty winter wind. They had no other sources of income and to survive, they had to take high interest loans from loan-sharks, which eventually led themselves to sell their boats and houses. The double edged sword of capitalism and natural catastrophe, crumbled their lives and annihilated their living. The people who laughed with the river and cried with the river, also weathered with the river. In a deep philosophical manner, the writer compared Malo lives as the suspended air over water. If water runs with its own strength, the air flies on top of it, happily dancing, but if the water dries out, the air is sucked by the looming sun above head. There was only a single thread of life to them and that was their river. Those Hindu fisher folk lived peacefully with Muslim peasants, before violent partition and political conflicts swept the area. This book is less fiction and more history which lyrically explained a way of life never seen before, never heard before and which will never be seen again.

Their way of living is now all but extinct. In the village where most of the novel takes place, Gokhanghat, only fifty Malo families lived in 1990. Only a quarter of them owned fisher boats. Only six of the fifty families owned some farmland, which were rented to Muslim farmers. The young men had shifted from fishing to other work, as carpenters or tailors. Some aspired to complete their vocational training if they could. Women no longer spun threads and wove nets, they bought them from shops. Dry fishing work was almost non-existent. (Citation - Anthropogical Survey of India, 1990)

Mallabarmana envisaged this catastrophe and that is why he advised to his people, ruminating like the old village leader, 'you have to have ploughs along with nets'. In his time, it was a prophetic vision, urging everyone to learn multiple methods of earning and living. It is unknown whether whatever little is left of the Malo community is doing so, because unless they do, modernization, politics and economics will sweep them away in it's own net.
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,740 reviews355 followers
March 3, 2025
#Binge Reviewing all my past Reads:

অদ্বৈত মল্লবর্মণের এই সাহিত্যকর্ম, বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় উপন্যাস, যা কেবল কাহিনির দিক থেকে নয়, সমাজবাস্তবতা ও জীবনদর্শনের দিক থেকেও এক অনন্য সৃষ্টি। এই উপন্যাসটি মূলত তিতাস নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জেলে সম্প্রদায়ের জীবনসংগ্রামের এক হৃদয়বিদারক দলিল। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত, যা কেবল সাহিত্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং গভীর মানবিক বোধ ও বাস্তবতার এক অনবদ্য চিত্র এঁকেছে।

উপন্যাসটির মূল প্রেক্ষাপট তিতাস নদী ও তার আশপাশে বসবাসকারী মল্লা সম্প্রদায়ের জেলেদের জীবন। এরা মূলত নদীর ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। নদী যেমন তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র উৎস, তেমনি প্রকৃতির নির্মমতা ও সামাজিক বৈষম্য তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে।

কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশোরী বসন্তী এবং তরুণ কিশোর। বসন্তী ও কিশোরের প্রেমের মধ্য দিয়ে এই উপন্যাসের মানবিক ও ট্র্যাজিক দিকটি ফুটে ওঠে। কিশোরের বিয়ের দিনই তাকে তুলে নিয়ে যায় ডাকাতেরা, আর বসন্তীর জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দশা। সে সমাজে অবহেলিত, নিপীড়িত, কিন্তু সংগ্রামী। তার জীবন এক প্রতীক, যা মল্লা সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত দুর্ভোগ ও লড়াইকে প্রতিফলিত করে।

অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাসের অন্যতম শক্তি তার চরিত্রগুলো। তিতাস একটি নদীর নাম-এ প্রতিটি চরিত্র বাস্তব ও হৃদয়গ্রাহী। বসন্তী এক – শক্তিশালী, সংগ্রামী নারী চরিত্র। সমাজের নিপীড়ন সত্ত্বেও সে হার মানে না। কিশোরের তার জীবন এক ট্র্যাজেডির প্রতিচিত্র। সে নদীর সন্তান, কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুরতায় তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। রাখাল, সুহাসিনী, নীলো, শ্যামলী ইত্যাদি অন্যান্য চরিত্ররা মূলত জেলে সমাজের বৈচিত্র্যকে ফুটিয়ে তুলেছে। এরা কেউ বঞ্চিত, কেউ নিপীড়িত, কেউবা নতুন সমাজব্যবস্থা�� শিকার।

এই উপন্যাসের মূল ভাবধারা ও বিষয়বস্তু আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় নদী ও জীবনসংগ্রামের কথা। তিতাস কেবল একটি নদীর নাম নয়, এটি এক জীবন্ত চরিত্র। উপন্যাসে নদী যেন মানুষের জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। নদী যেমন জীবন দেয়, তেমনি তা কেড়েও নেয়। সময়ের সঙ্গে নদীর পরিবর্তন এবং তার ফলে জেলে সম্প্রদায়ের দুর্দশা লেখক অত্যন্ত বাস্তবভাবে তুলে ধরেছেন।

দ্বিতীয়ত, এই উপন্যাস মূলত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কাহিনি। সমাজের মূলধারায় তারা অবহেলিত, শোষিত ও নির্যাতিত। অদ্বৈত মল্লবর্মণ নিজে মল্ল সম্প্রদ��য়ের মানুষ ছিলেন, তাই তার উপন্যাসে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

তৃতীয় অনুষঙ্গ হিসেবে আমরা পাই প্রেম ও ট্র্যাজেডির এক অনুপম গাথা। বসন্তী ও কিশোরের প্রেমের মধ্য দিয়ে মানবজীবনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা উঠে আসে। তাদের ভালোবাসা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়, যেখানে সামাজিক প্রথা, অর্থনৈতিক দুর্দশা ও প্রকৃতির প্রতিকূলতা তাদের জীবনকে এক অমোঘ ট্র্যাজেডির দিকে ঠেলে দেয়।

চতুর্থত, এই উপন্যাসে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ বদলায় এবং কীভাবে এই পরিবর্তন কিছু মানুষের জন্য আশীর্বাদ হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। নদীর গতিপথ বদলের সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের জীবনের গতিপথও বদলে যায়, কিন্তু পরিবর্তন তাদের জন্য উন্নতি বয়ে আনে না—বরং দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তোলে।

অদ্বৈত মল্লবর্মণের ভাষা অত্যন্ত সহজ, কিন্তু তাৎপর্যময়। তার লেখনী কাব্যিক, কিন্তু সংলাপগুলো একদম প্রাণবন্ত ও বাস্তবসম্মত। নদী, প্রকৃতি, মানুষ—সবকিছুর বর্ণনায় এক অপূর্ব সাহিত্যিক সৌন্দর্য আছে।

উপন্যাসটি পাঠ করতে গেলে মনে হয়, আমরা যেন সত্যিই তিতাস নদীর তীরে বসে এইসব চরিত্রগুলোর জীবনযাপন প্রত্যক্ষ করছি। উপন্যাসের গতি কখনো ধীর, কখনো উত্তাল, যেন তা নদীর নিজস্ব গতিপথের সঙ্গে মিলিয়ে লেখা।

ব্যক্তিগতভাবে, এই উপন্যাস যখন প্রথমবার পড়ি, হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম আমি। এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি একটি নিঃস্ব মানুষের কান্না, এক হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির প্রলাপ, এক বিদ্রোহের আর্তনাদ। এই উপন্যাস পাঠ করার পর মনে হয়, আমরা মূলধারার সমাজে বসবাস করলেও অনেক মানুষের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের চোখের সামনে এক জীবন্ত বাস্তবতা মেলে ধরে, যা আমরা সচরাচর দেখতে পাই না বা দেখতে চাই না।

যদিও উপন্যাসটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ, কিছু অংশে অতিরিক্ত বর্ণনাত্মক হওয়ায় পাঠের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যেতে পারে। তবে, এটি কোনোভাবেই উপন্যাসের সাহিত্যগুণকে খাটো করে না। বরং এটি সময় নিয়ে গভীরভাবে পড়ার মতো এক অনন্য সৃষ্টি।

পরিশেষে বলতে হয়, এই বইটি নিছক একটি উপন্যাস নয়, এটি এক হারিয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর আত্মচিত্র। এটি বাংলা সাহিত্যে এক অসামান্য সংযোজন, যা কেবল পাঠকের মনকে আন্দোলিত করে না, বরং সমাজের প্রতি নতুন করে চিন্তা করতেও বাধ্য করে। এই উপন্যাস আমাদের শিখিয়ে দেয়, সমাজের প্রতিটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরও নিজস্ব কাহিনি আছে, তাদের জীবনও গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাদেরও স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে। এটি শুধু সাহিত্যিকদের জন্য নয়, সমাজবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক, এমনকি সাধারণ পাঠকের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক দলিল।

জীবনে অন্তত একবার হলেও পড়ুন এই বই। তুলে দিন আগামী প্রজন্মের হাতে।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
May 21, 2021
তিতাস। একটি নদী। সময় যেমন বয়ে চলছে তেমনি তিতাসও অনাদিকাল থেকে বয়ে চলছে। আর সাথে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এর তীরবর্তী মালো আর কৃষকদের জীবন। এই মালো আর কৃষকদের জীবনকে তিতাস থেকে কখনও আলাদা করা যায় না। কেননা তিতাস বাঁচলে এরা বাঁচে, তিতাস মরলে এরা মরে। তিতাস তার বুকে লুকানো মাছ জেলেদের দিলে তারা দু'বেলা খাবার পায় আর না দিলে দিন কাটে অনাহারে। তেমনি তিতাস পরিমিত বৃষ্টি আর বন্যা দিলে মুখে হাসি ফোটে কৃষকদের আর না হলে কষ্টের শেষ থাকে না তাদের।

কিশোর, সুবল, রামকেশব, বনমালী, অনন্ত – এরা তিতাস পাড়ের জেলে। আর ওদিকে কাদির, ছাদির, রমু এরা হলো কৃষক। বাসন্তী, উদয়তারা, খুশি, অনন্তবালা – এরা তাদের সহযোগী। জাত-ধর্মে ভিন্ন হলেও এদের জীবন তিতাসের সাথে একইভাবে যুক্ত। এরা একইভাবে তিতাস দ্বারা উপকৃত হয় আর একইভাবে তিতাসকে ভক্তি করে। মাছ ধরা আর চাষ করা – এই দুই কাজে ভিন্নতা থাকলেও এরা একইভাবে তিতাসকে ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, আত্মীয়তা রক্ষা করে, অবসরে একসাথে গান-বাজনা করে, একে অপরের বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ায়। তাইতো যেদিন থেকে তিতাস নিজেকে হারানো শুরু করে সেদিন থেকেই কপালে ভাঁজ ওঠে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কপালে।

সহজ ভাষায় বললে বইটা একটা কালের দলিল, একটা পেশার মানুষের জীবনযাত্রার বয়ান। আর এই বয়ানটা একদম প্রাকৃতিক কেননা লেখক নিজে ঐ সমাজের একজন মানুষ যিনি নিজ চোখে এই জীবনটা দেখেছেন, নিজে সেই জীবনটা কাটিয়েছেন। ফলে লেখককে খুব বেশি কিছু কল্পনা করতে হয় নি, শুধু নিজের দেখা ঘটনাগুলোকে সাদা পাতায় আবদ্ধ করেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ পদ্মা নদীর মাঝি'র সাথে নিজের লেখার পার্থক্য করতে গিয়ে লেখক এই বিষয়টা স্পষ্ট করে বলেছেন যে একদিকে নিজের অভিজ্ঞতা আর অন্যদিকে মানিকবাবুর স্বল্পকালের দর্শন-ই এই দুইটা বইয়ের মূল পার্থক্য।

কি আছে বইটাতে? এক কথায় বললে তিতাসের কাহিনী আর এর তীরে বাস করা মানুষের কাহিনী। তিতাস এবং এর তীরে বাস করা মানুষগুলোর প্রথা, সংস্কার, উৎসব, সঙ্গীত, জীবন দর্শন, জীবিকা প্রভৃতি কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আধুনিকতা, রাজনৈতিক সংঘাত ইত্যাদির দ্বারা পরিবর্তিত হলো তিতাস একটি নদীর নাম তারই আখ্যান। যেমনটা বললাম, বইটা তিতাস নদী এবং দুইটা সম্প্রদায়ের মানুষের কথা তাইতো এই বইয়ের প্রধান ‘চরিত্র' এই দুইটাই ; কিশোর, সুবল, অনন্ত, বাসন্তী বা উদয়তারা নয়।

সবকিছু নিজের চোখে দেখা এবং অভিজ্ঞতালব্ধ বলে লেখকের বর্ণনাভঙ্গি ছিল খুবই সহজ এবং সাধারণ। কিন্তু এই সহজ ভাষা আর বর্ণনাতেই লেখক দারুণভাবে পাঠকের সামনে একটা ইতিহাস তুলে ধরতে পেরেছেন। বর্ণনাগুলো এত প্রাণবন্ত যে কিশোর-সুবলদের সাথে যেন আমি উত্তাল নদীতে গভীর রাতে মাছ ধরছিলাম, বাসন্তী বা উদয়তারাদের সাথে ধাঁধার খেলা খেলছিলাম, তিতাসের মরুকরণ এবং ফলশ্রুতিতে জেলেদের জীবনের ওলটপালট অবস্থা স্বচক্ষে অবলোকন করছিলাম, পূর্বপুরুষের সংস্কার গানের সাথে আধুনিক যাত্রার দ্বন্দ্বটা উপলব্ধি করছিলাম। আর এটাই বইটার সবচেয়ে বড় সফলতা, বইটা পাঠককে একটা সময়ে নিয়ে যাবে এবং তাকে সেই সময়ে আটকে রেখে ঐ সময়ের একজন মানুষ হিসেবে দিন কাটাতে বাধ্য করবে। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত একটা বই।
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews65 followers
November 10, 2021
তিতাস একটি নদী। যার সাথে জড়িত মালোদের জীবন। এই তিতাস তাদের সব। এই নদী তাদের ভরনপোষণ জোগায়, এই নদী তাদের বাঁচিয়ে রাখে। এই তিতাসের আশীর্বাদেই মালোরা সব দিকে স্বাবলম্বী হয়ে হয়ে উঠে। তখন দেখা দেয় নতুন সংকট। এই সংকটে পড়ে একদিন হারিয়ে যায়,তিতাস পাড়ের মালো পল্লি। যে তিতাস তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল,সে তিতাস তাদের মারিল।

শ্রদ্ধেয় লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ চমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন,তিতাস পাড়ের গল্প। চমৎকার গল্প। আমরা মাছ খেয়ে আয়েশ করি,অথচ ভাবি না কিভাবে এসব আসে! কোথেকে আসে! যারা আনে তাদের আমরা সঠিক মূল্যায়ন করি না। অথচ তারাও মানুষ। "তিতাস একটি নদীর নাম" গল্পে লেখক মালোদের গল্প বলেছেন,তাদের সুখ দুঃখ,হাসি আনন্দের গল্প বলেছেন। সব মিলিয়ে বলতে গেলে,তিতাস পাড়ের ইতিহাস বলেছেন লেখক।
Profile Image for Abid.
135 reviews23 followers
March 20, 2025
তিতাসের সাথে আমার কোনোভাবেই সংযোগ নেই; তবুও তিতাস যখন শুকোতে লাগলো, আমার চোখে জল এলো কেনো? কেবল একজন মহান লেখকই বোধহয় পারেন নিজের অন্তরের হাহাকার পাঠকের মাঝেও সংক্রমিত করতে।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 6, 2023
ভালবাসলেই কি কথা দিতে হয়?
প্রতিজ্ঞা করতে হয় ছেড়ে না যাবার?
শপথ নিতে হয় আমরন পাশে থাকার?
এগুলো হয়তো মনের ভুল। যে মানুষটা কখনও বললোই না ভালোবাসি বা আমরন পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করলো না, তবু শুধু মাত্র তার চোখের চাহনিকে ভালোবাসা মনে করে গোটা একটা জীবন পার করে দিলো অনন্তবালা। এটাই হয়তো ভালোবাসা।যে ভালোবাসার গভীরতাটা অনন্তর অজানাই রযে গেলো সারাজীবন।

ভালোবাসার মানুষ গুলো হয়তো এমনই প্রচন্ড রকমের ব্যতিক্রম হয়। যখন কাছে থাকে মনে হয় ভালোবাসার কমনি নাই, আর বহু বিচ্ছেদে দীর্ঘ দিনের সময়ের ব্যবধানে মন থেকে মুছে ফেলতে দুবার ভাবে না। তাই যদি না হতো তাহলে অনন্ত হয়তো অনন্তবালাকে মনে রাখতো আর বহু বছরের ব্যবধান হলেও তার জন্য একখানা শাড়ী কিনে পাঠাতো।

সেই যে বাসন্তী তিতাসের জলে ভেউরা ভাসাইলো, সুবোল আর কিশোর কাড়াকাড়ি করে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে কিশোর পরাজয় স্বীকার করে নিলো। এতে বাসন্তী মনো ক্ষুন্ন হলো, কারন বাসন্তীর জিনিসে শুধু কিশোরের অধিকার, এটা শুধু বাসন্তী মনে করে।

তারপর এলো বসন্ত কাল। কিশোর, সুবল এই প্রথম বার রং খেললো ভিনদেশে গিয়ে হোলির দিনে।
মানুষ নিজেকে নিজে রাঙ্গায়, তাতে তৃপ্তি না পেলে প্রিয় জনকে রাঙ্গায়, তাতেও পরিপূর্ণ তৃপ্তি না পেলে আপন পর বিবেচনা না করে সকলকে রাঙ্গায়। তেমনি ভাবে ভিনদেশের এক মেয়ে রাঙ্গিয়ে দিলো কিশোর কে। শুধু মালা বদল করেই তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। দেশে ফেরার পথে কিশোর হারিয়ে ফেললো তার মালা বদল করা বউ। নিজে পাগল হয়ে ফিরলো বাবা -মা এর কাছে।কাছের মানুষ হারানোর শোকটা মানুষকে মনে হয় এমনি করেই ভেঙ্গে দিয়ে যায়।

"তিতাস একটি নদীর নাম " উপন্যাসটির স্বতন্ত্রতা বা সাফল্য এই কাহিনীর মধ্যে নয়। উপন্যাসটি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে তিতাস নদীর তীরের মালোদের জীবন চিত্রটা সুস্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য। মালোদের জীবন চিত্র বর্ননায় লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মন কোন রাখ ঢাক করেন নি। তাদের দুঃখ গুলোকে লেখক হৃদয় দিয়ে বর্ননা করেছেন। প্রতিটি চরিত্রের পরিনতি হয়েছে করুন এবং হৃদয়বিদারক। প্রতিটি চরিত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দৈনতা উপন্যাসের মূল বিষয়। প্রকৃতির পট পরিবর্তনের সাথে সাথে তিতাস নদীর তীরের মালোদের দুঃখের পট পরিবর্তন হয়। তবে তাদের মধ্যে এ দুঃখ কষ্ট থেকে উত্তরনের আভাস ও দেখা যায়।
মূলত নদী ও মানুষের বহমান জীবনের শাশ্বত সত্য প্রকাশের মাধ্যমে লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মন "তিতাস একটি নদীর নাম "উপন্যাসটি তে মানুষের এতোটা ভালোবাসা পেয়েছেন।


লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণের শ্রষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি"তিতাস একটি নদীর নাম"। উপন্যাসটি ১৩৫২ বঙ্গাব্দের শ্রাবন সংখ্যা থেকে ধারাবাহিক ভাবে ' মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু সম্পূর্ন প্রকাশিত হবার পূর্বে লেখক মোহাম্মদী পত্রিকার চাকরি আদর্শিক মতবাদের কারনে ছেড়ে দিলে উপন্যাস প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এর পর পান্ডুলিপিটি হারিয়ে যায়। এর পর লেখক উপন্যাসটি আবার লেখেন। আগের উপন্যাসের সাথে পরে লেখা উপন্যাটির বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পরের উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে বিস্তৃত জীবনের শিল্পরূপ। যার নাম উপন্যাস। এই পুনলিখিত পান্ডুলিপিটি গ্রন্থাকারে পুথিঘর থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৫৬খ্রিষ্টাব্দে।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
November 24, 2023
'তীর্থের মধ্যে কাশি, ইস্টির মধ্যে মাসি।
ধানের মধ্যে খামা, কুটুমের মধ্যে মামা।'

নদীর তীরে বসবাসকারী জেলে সম্প্রদায় নিয়ে বাংলা সাহিত্যে একাধিক উপন্যাস লেখা হলেও, সেই সম্প্রদায়ের নিজস্ব মানুষের লেখা উপন্যাস হাতেগোনা। 'তিতাস একটি নদীর নাম' এই ধারার উপন্যাসের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবে। তিতাসের পাড়ে মালোদের জীবনের চিত্র নিপুণ হাতে অঙ্কন করেছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। উপন্যাসটিতে আমরা তিতাস পাড়ের জেলেদের জীবনযাপন, আচার অনুষ্ঠান, জীবিকার তাগিদে দূরদেশে যাত্রা, জীবনের উত্থান পতনের বাস্তব উপাখ্যানের পরিচয় পাই।

ত্রিপুরা জেলার (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া) গোকন্নঘাটের জেলে পাড়া। দুই বন্ধু কিশোর ও সুবল ছোটবেলা থেকেই জাল ও নৌকার সাথে বসবাস করে আসছে। পূর্বপুরুষদের পেশাকেই লালন করে তারা। কৈশোরের বন্ধু বাসন্তীর সাথে দুইজনেরই খুব ভাব। তবে কোনো একজনকে স্বামী হিসেবে বাসন্তী বেছে নিতে চাইলেও কিশোর ও সুবল দুইজনই দ্বিধান্বিত, কে হবে বাসন্তীর বর! তিতাস নদী কালের পরিক্রমায় নাজুক অবস্থানের দিকে যেতে থাকে। তাই নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। জেলেরা তখন আরো উজানে মেঘনায় যেত মাছের খোঁজে। মেঘনার বিজয়গ্রামে কিশোর ও সুবল নিজেদের নৌকা নিয়ে রওনা দেয়। বিজয়গ্রামেই কিশোর তার অর্ধাঙ্গিনীর দেখা পায়। গ্রামের এক মেয়েকে মৌখিক ও মালা বদলের মাধ্যমে বিয়ে করে কিশোর। বাড়ি ফিরে শাস্ত্রমতে বিয়ের কথা বলে দেয় মেয়ের পরিবার। নৌকায় ফেরার পথে ডাকাতের ভয় ছিল সেই সময়ে। সেই ডাকাতের হাতেই কিনা তাদের পড়তে হলো!

এক সন্তান অনন্তকে নিয়ে অনন্তর মা গোকন্নঘাটে যেদিন পা দিল, তখনই বুঝেছিল এই গ্রামে তাদের ঠাঁই হবে। জেলে পাড়ায় নতুন ঘর তুলে দিয়েছিল তাদের জন্য। কিন্তু সেই সংসারও বেশিদিন রইলোনা। অনন্তর ঠাঁই হলো সুবলের বউ বাসন্তীর ঘরে। সুবলের সাথে গ্রামের মেয়ে বাসন্তীর বিয়ে হওয়ার পর সুবলার বউ হয়ে যেন সুবলকে বাঁচিয়ে রেখেছিল গ্রামের মানুষের মাঝে। তবে হারিয়ে গিয়েছিল বাসন্তী। কিন্তু বাসন্তীর কাছেও অনন্তের বেশিদিন ঠাঁই হয় না। অনন্তকে আবারও বাস পালটে যেতে হয় উদয়তারার কাছে।

উদয়তারার ভাই বনমালী যখন তাকে নাইওর নিতে আসে তখন তাদের সাথে অনন্তও যায়। সেখানে অনন্তর পরিচয় হয় তারই সমবয়সী অনন্তবালার সাথে। দুইজনের মাঝে সেই বয়সেই ভাব হয়ে যায়। বিরামপুরের কাদির বেপারি আলুর নৌকা নিয়ে হাটে যাওয়ার সময় বৃষ্টিতে যখন নৌকা ডুবুডুবু ভাব তখন বনমালী তাদের উদ্ধার করে। কাদিরের ছেলে ছমির সেবার নৌকা বাইচে নৌকা নামানোর আগ্রহ প্রকাশ করে। হাতে কাচা পয়সা থাকলে যা হয় আরকি। সেই নৌকা বাইচে উদয়তারা ও বাসন্তীর মাঝে হাতাহাতি হয়। বাসন্তী একচোট মার খেয়ে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে। এদিকে জেলেপাড়ার মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। একদল যখন জেলেদের সংস্কৃতি রক্ষার্থে জোট বাঁধে, অন্যদিকে আরেক দল শহুরে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না। জেলেপাড়ার সংস্কৃতি বিলীন হয়ে যায় নদীর পাড় ভাঙনের মতো।

উপন্যাসটি শেষ হওয়ার পর পাঠকের মস্তিষ্ক একটি প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করবে, বইটি এভাবে শেষ হলো কেন? আসলে এটাই বাস্তবতা। নতুন সবসময় পুরাতনকে উপড়ে ফেলে। চাইলেও এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা যায় না। জেলেপাড়ার সংস্কৃতি যখন ধীরে ধীরে ভাঙছিল তখন তিতাসের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া জেলেদের কোনো উপায় ছিল না। তাই পূর্বপুরুষদের পেশাকে পেছনে ফেলে তারা চর দখল করতে যায় কিংবা কৃষি কাজে নিয়োজিত হয়। এটাই কি চেয়েছিল তারা? কিন্তু এটাই তাদের নিয়তি ছিল। তিতাস পাড়ের জেলেরা যেন আমাদের দেশের মৌলিক পেশার সম্প্রদায়গুলোর প্রতিচ্ছবি। তিতাস নদীর প্রবাহের পরিবর্তন আশেপাশের মানুষদের জীবনকেও আগাগোড়া পরিবর্তন করে দিয়েছে।

গ্রাম্য বধূরা যখন শ্বশুর বাড়ি যায় তখন নৌকার চারদিকে ঘের থাকলেও, বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় স্বাধীনতা হিসেবে নৌকার আব্রু রাখেনা। এমনই একদিনে নৌকা থেকে ছমিরের বউ জমিলা নদীর ঘাটে দেখেছিল উদয়তারাকে। ভেবেছিল সই পাতবে তার সাথে কিন্তু দেখা হবে কীভাবে আর! ভাগ্যের লিখনে হয়তো তার এই ইচ্ছাপূরণ লেখা ছিল, তাই উদয়তারা ও জমিলার সাক্ষাৎ হয়ে যায় একটা সময়। এই যে গ্রাম্য বধূর মনোভাব এবং তাদের জীবনযাপন উভয়েরই ছাপ পাই উপন্যাসটিতে।

উপন্যাসের শেষদিকে লেখক বোধহয় একটু দ্রুত কাহিনি টেনেছেন। একের পরে একটি ঘটনা মঞ্চায়িত হচ্ছিল দ্রুত। তবে ধ্বংসটা আচমকাই হয় কিনা তাই লেখকের দায় বলা যায় না। অসাধারণ একটি উপন্যাস। ঋত্বিক ঘটক এই উপন্যাস অবলম্বনে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, সেটাও দারুণ। বইটির মাধ্যমে লেখক আপনাকে তিতাস পাড়ের মানুষের হাসি-কান্না'র সঙ্গী বানিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Monirul Hoque Shraban.
171 reviews52 followers
June 6, 2022
যে গোকর্ণঘাটের চিত্র অদ্বৈত মল্লবর্মণ এঁকেছেন সে গোকর্ণঘাট আর আগের মতো নেই, যেন শহর হয়ে গিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়ায় তিতাসের এ পাড় থেকে ও পাড় জুড়ে উঁচু সেতু হয়েছে। দেখতেও হয়েছে সুন্দর, প্রতিদিন বিকেলে অনেক মানুষ সে সেতু পেরিয়ে বিল দেখতে আসে। দাড় টানা কিংবা বৈঠা বাওয়া নৌকায় কেউ এখন আর নবীনগর যায় না। স্পিড বোট আছে, রাস্তা হয়ে গেছে, সিএনজি চলে সেই গোকর্ণঘাটেরই বাজার থেকে। এখন আর কেউ তিতাসের জল ঘটিতে করে খায় না, সবারই টিউবওয়েল আছে। বিশাল বড় মাঠ নিয়ে স্কুল হয়েছে কলেজ হয়েছে গোকর্ণঘাটেরই আশেপাশে। শুকনো মৌসুমে কেউ আর অনাহারে মরে না।

এতকিছুর পরিবর্তন হলেও তিতাস রয়ে গেছে সেই আগের তিতাসেরই মতো। আগেও তিতাস তার কোলে কোলে মানুষকে উপকার করেছে, এখনো করে যাচ্ছে। জেলেরা রাত জেগে এখনো মাছ ধরে, সে মাছ অটো রিকশা কিংবা সিএনজিতে করে জেলা শহরের বাজারে বিক্রি করে আয়ও করে। তিতাস তার দুই কূলের ধানক্ষেতে এখনো পানি যোগায়। তিতাসের বিলে বেড় দিয়ে এখনো মাছের চাষ হয়, শুটকি হয়, অস্থায়ী বেড়ার ঘরও হয়। হাজারে বিজারে হাঁসের পাল নিয়ে হাঁস খামারীরা তিতাসের জলে এখনো চড়ে বেড়ায়। তিতাসের জলে নৌকায় করে এখনো ধান এসে ঘাটে লাগে। তিতাসে ভেসে এখনো দূর দূরান্তের মাজারের উরসে যায়। তিতাসে করে এক শহর হতে আরেক শহরে পণ্যের চালান এখনো আসে।

কত উপায়ে যে তিতাস কত মানুষের, কত সংসারের খাদ্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছে তার হিসাব করলে শেষ করা যাবে না। উপকারের হয়তো ধরন বদলেছে কিন্তু উপকারটা বদলায়নি। তিতাসের জলে এখনো মানুষ স্নান করে। তিতাস তার পাড়ে পাড়ে এখনো কত নারীর, কত নরের শরীরের ঘাম আর ক্লান্তি নিজের বুকে শুষে নিচ্ছে তার হিসাবও কেউ রাখে না। কিন্তু তিতাস রয়ে গেছে তিতাসেরই মতো। তিতাস তার পাড়ের সন্তানদের অন্ন বস্ত্র দিতে আজও ক্লান্তিহীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষের সাত জনমের ভাগ্য যে তারা অদ্বৈত মল্লবর্মণ নামে একজনকে পেয়েছিল। যে চিত্র তিনি তার 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসে তুলেছেন তা এ অঞ্চলের এক ঐতিহাসিক চিত্র। সত্যি বলতে এ চিত্র শুধু এ এলাকারই নয়, তৎকালের সারা বাংলাদেশেরই চিত্র। এ অঞ্চলে বেড়ে উঠা মানুষ হিসেবে এখানে ব্যবহৃত আঞ্চলিক শব্দগুলো আর আঞ্চলিক আচারগুলোর মাধ্যমে সেই ছেলেবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। অন্তত নব্বই দশকে জন্ম নিয়েও জীবনে যা অভিজ্ঞতা পেয়েছি তা এখন এই মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে আর দেখা যায় না। যে যুগটা চলে গিয়েছে সে যুগটা লিপিবদ্ধও নেই সেভাবে। কিন্তু ঐ যে আমাদের সাত জনমের ভাগ্য, অদ্বৈত মল্লবর্মণ জন্মেছিলেন আমাদের মাঝে, তিনি সে কাজটা করে গিয়েছেন। যেন আস্ত একটা মহাকালকে উপন্যাসে আবদ্ধ করেছেন। একদম বাস্তব সে বিবরণ। কেমন ছিল সে সময়টা, কেমন ছিল সে সময়ের মানুষের জীবন, কেমন ছিল সে সময়ের রীতিনীতি তার এক ক্রিস্টালবদ্ধ বর্ণনা এই উপন্যাস। আর নদী হিসেবে তিতাসের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা কোনো বিজ্ঞানী কিংবা ভূতাত্ত্বিকও দিতে পারবে না। তিতাস নিয়ে এর চেয়ে সুন্দর ও উপযুক্ত বর্ণনা আমি কোথায় পড়িনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের সৌভাগ্য তিতাস নদী এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। শান্ত নদী হিসেবে তিতাসের যে grandness তা অন্য কোনো নদীর আছে কিনা জানা নেই। পুরো জেলার একদম উত্তর থেকে একদম দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত বাহু দিয়ে পুরো জেলার প্রায় সবগুলো উপজেলাকে আঁকড়ে রেখেছে। অথচ তিতাসের সার্বিক গতিপথ কিন্তু পূর্ব থেকে পশ্চিমে। গুগল ম্যাপে পুরো তিতাসের বিস্তৃতি অনুসন্ধান করলে যে কেউ বিস্মিত হবে। সেজন্যই বলছিলাম তিতাসের একটা গ্র্যান্ডনেস আছে, যা সালদা কিংবা গোমতী কিংবা কর্ণফুলীর নেই। তিতাসের মতো এমন একটা নদী এক ডজন উপন্যাস ডিজার্ভ করে, এক শত ছোট গল্প ডিজার্ভ করে। তিতাসের জীবনীকার অদ্বৈত মল্লবর্মণকে নিজের কোলে ধারণ করতে পেরে তিতাস নিজেও গর্বিত। এর চেয়ে বাস্তব সুন্দর উপন্যাস কমই হয় , এর চেয়ে পারফেক্ট কাল বর্ণনা খুব কমই আছে। এ উপন্যাস বাংলার এবং বাংলা ভাষার এক heritage. এমন উপন্যাস পড়তে পারাও আনন্দ।

লেখকের সেই গোকর্ণঘাটে বাঁধা নৌকা। সামনেই সেতু হচ্ছে (২০১৭)।
লেখকের সেই গোকর্ণঘাটে বাঁধা নৌকা। সামনেই সেতু হচ্ছে (২০১৭)

সেতুর উপর থেকে দেখা গোকর্ণঘাট (২০২০)
সেতুর উপর থেকে দেখা গোকর্ণঘাট (২০২০)

তিতাসের কোলে জেলেরা এখনো মাছ ধরে (২০২০)
তিতাসের কোলে জেলেরা এখনো মাছ ধরে (২০২০)

গোকর্ণঘাট থেকে দূরে তিতাসেরই আরেক রূপ। ছবিটি উপন্যাসে উল্লিখিত দুটি স্থান আনন্দবাজার ও জগৎবাজার থেকে সামান্য দক্ষিণে (২০২১)। Photo Credit: Amil Photography
গোকর্ণঘাট থেকে দূরে তিতাসেরই আরেক রূপ। ছবিটি উপন্যাসে উল্লিখিত দুটি স্থান আনন্দবাজার ও জগৎবাজার থেকে সামান্য দক্ষিণে (২০২১)। Photo Credit: Amil Photography
Profile Image for Mohammad Thowhid.
57 reviews7 followers
June 29, 2024
ত্রি-চরণে স্মরি : তিতাস একটি নদীর নাম

তিতাস বড়ো কোনো নদী নয়, একদমই ছোটো পরিসরে ছুটে চলছে; কিন্তু সেটাকে কেন্দ্র করে জীবনের আয়োজনে মোটে কমতি নেই। মালো সমাজের জীবনগাথা নিজেতে ধারণ করে কালের সাক্ষী হয়ে বয়ে চলে নিরবধি, না, ভুল হলো— নিরবধি চলতে পারে না, চারদিকে ভীষণ হাহাকারের আবহওয়া তোলে বেঁচে থাকার কারণ হয়ে যায় মৃত্যুর মিছিলের নিয়ামক। ছোট্ট তিতাসকে নিয়ে কী বৃহৎ এক হাহাকারের গল্প এঁকেছেন লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ!
Profile Image for Pranta Biswas.
122 reviews4 followers
April 17, 2022
প্রথম ৩০-৪০ পাতা পর্যন্ত বেশি ভাল লাগেনি। কিন্তু তারপর একটানা শেষ করতে কোন কষ্টই হয়নি। অত্যন্ত সুখপাঠ্য একটি বই।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
December 8, 2024
থাকেনা কিছু বই যেগুলো পড়ার পর মনে হয়, ভাগ্যিস পড়তে জানি! ভাগ্যিস পাঠক হয়েছিলাম! 'তিতাস একটি নদীর নাম' পড়ার পর ঠিক এই অনুভূতিটা কাজ করছে। ভাগ্যিস বাংলা ভাষা পড়তে জানি! ভাগ্যিস অদ্বৈত মল্লবর্মণ এই দেশে জন্মেছিলেন! নয়তো বাংলা সাহিত্যে তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই রচনা পড়তাম কীভাবে!
Profile Image for Farhana Sultana.
94 reviews72 followers
December 18, 2019
নদীকেন্দ্রীক উপন্যাস আমার বরাবরই ভালো লাগে। "পদ্মা নদীর মাঝি" পড়ে অনেকদিন বিভোর হয়ে ছিলাম।
তাই "তিতাস একটি নদীর নাম" এই বই��া নিয়েও অনেক কৌতূহল ছিল। বইয়ের নামটাই এমন যে শুনলেই মনের মধ্যে কেমন একটা শীতল অনুভূতির সৃষ্টি হয়। দুইদিন আগে পড়া শুরু করে আজ শেষ হলো। এই দুইদিন মালোপাড়ার সুখে দুঃখে উৎসবে আনন্দে বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম।
এসব বইয়ের আসলে রিভিউ লেখা যায় না। শব্দভাণ্ডারে যেন উপযুক্ত শব্দের খরা লাগে তখন।

এত সুন্দর করে উপমা দিয়ে, শব্দের পর শব্দের বুনন কারসাজিতে লেখক যেভাবে তিতাসের পাড়ের জীবনযাত্রার আখ্যান লিখেছেন তারই আবেশ মনে লেগে আছে। জানি লেগে থাকবে অনেকদিন।

"যে পথ চিনিয়া চলে তার পথ একটি, আর যে দিশাহারা হইয়া চলে তার পথ শত শত..." _______

লেখকের গভীর জীবনবোধের এমনই পরিচয় পাওয়া যাবে পুরো বই জুড়ে, যা মনকে নাড়া দিয়ে যায়। নতুন করে ভাবতে শেখায়।
Profile Image for DEHAN.
275 reviews86 followers
February 29, 2020
গল্পটা আসলে কার?
কখনো মনে হয়েছে গল্পটা কিশোরের
কখনো বা মনে হয়েছে গল্পটা বাসন্তীর
কখনো আবার মনে হয়েছে গল্পটা অনন্তর....কিংবা গল্পটা হয়তো তিতাসের পাড়ে বসবাস করা সকলের ই.... এ এক অদ্ভুত উপন্যাস পড়লাম।অনেক বছর আগে জহির রায়হানের "হাজার বছর ধরে" শেষ করার পর যেমন একটা হাহাকার বোধ হয়েছিলো ঠিক সেরকমটা বহুদিন পর অনুভব করছি।
তিতাস শুধু নদীর নাম নয়।
তিতাস মানুষের জীবন এবং মৃত্যুর নাম,
তিতাস মানুষের স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের নাম,
তিতাস মানুষের আশা এবং হতাশার নাম,
তিতাস একটি আশীর্বাদ ও অভিশাপের নাম।

মানুষের কল্পনাশক্তি এতো চমৎকার হয়!
আহারে! আহারে!
Profile Image for Shreya.
60 reviews
January 14, 2023
তিতাস একটি নদীর নাম। প্রথম যখন নামটা শুনি আমি সাত কি আট, আনন্দবাজারের হাল ছেড়োনা কলামে। উপন্যাসের নাম যেরকম মনে লেগেছিল, সেরকমই লেখকের নামটিও, আর ওনার অসম্ভব স্ট্রাগল। আজ এত বছর পর পড়তে বসে ছোটবেলার কথাই মনে এসে যায় বারবার, আর তাই হয়তো ভীষণ high expectations ছিল 😅। যাকগে সেসব, একটা খুব খুব খুবই সুন্দর, মিষ্টি, বাংলার মাটির গন্ধ লেগে থাকা বই ✨।
Profile Image for Ishak Al Mamun  Rohan.
76 reviews
March 5, 2025
"A great civilization is not conquered from without until it has destroyed itself from within." ~ Will Durant.

📚 তিতাস একটি নদীর নাম
✍️ লেখক: অদ্বৈত মল্লবর্মণ।
🖇️ জনরা: চিরায়ত সাহিত্য
⭐ ব্যাক্তিগত রেটিং: ৯/১০

▪️মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই একত্রিত বা দলগত ভাবে বসবাস করে। এই একত্রিত বসবাসের ফলে সেখানে সভ্যতার জন্ম হয়। একটি সমাজ বা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নত রূপ, সংস্কৃতি, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সুসংগঠিত রূপকে সভ্যতা বলে। প্রাচীন কাল থেকেই এই সভ্যতার মধ্যে রয়েছে উত্থান ও পতনের খেলা। সভ্যতার উত্থান দলগত ভাবে হলেও এর পতন ঠিকই হয়ে থাকে বিভেদ ও বিচ্ছেদের সমন্বয়ে।

▪️'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৎ সাহিত্য। এই উপন্যাসের গল্প একটি নদীকে কেন্দ্র করে। এই নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা সভ্যতা ও এই সভ্যতার মানুষদের জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ঘাত-প্রতিঘাতই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়। শুনতে নিতান্ত একটা কাহিনি মনে হলেও এর পরতে পরতে আছে গভীর দর্শণ, যা পাঠককে একদিকে যেমন পুলকিত করবে, তেমননি অপরদিকে করবে ব্যথিত।

▪️লেখকের ভাষ্যমতে, তিতাস একটি নদীর নাম। এ নামের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ তার তীরের লোকেরা জানে না। জানিবার চেষ্টা কোনদিন করে নাই, প্রয়োজন বোধও করে নাই। নদীর কতো ভালো নাম থাকে - মধুমতী, ব্রম্মপুত্র, পদ্মা, সরস্বতী, যমুনা। আর এর নাম তিতাস। সে কথার মানে কোনোদিন অভিধানে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। কিন্তু নদী এ নামে যতো প্রিয়, ভালো একটা নাম থাকিলে তত প্রিয় হইতোই যে, তার প্রমাণ কোথায়!

ভালো নাম আসলে কি? কয়েকটা অক্ষরের সমষ্টি বৈ ত নয়। কাজললতা মেয়েটিকে বৈদুর্যমালিনী নাম দিলে আর যাই হোক, এর খেলার সাথীরা খুশি হইবে না। তিতাসের সঙ্গে নিত্য যাদের দেখাশোনা, কোনো রাজার বিধান যদি এর নাম চম্পকবতী কি অলকানন্দা রাখিয়া দিয়া যায়, তারা ঘরোয়া আলাপে তাকে সেই নামে ডাকিবে না, ডাকিবে তিতাস নামে।

▪️ ছোট থেকেই বিভিন্ন ইতিহাস পড়েছি। কিন্তু এই প্রথম পড়লাম যে সভ্যতার উত্থান ও পতন কি ভাবে হয়। শুধু তাই নয়, সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কারের দিকগুলো এখানে স্বাভাবিক ভাবে ফুটে উঠলেও এগুলোর মর্ম অসাধারণ। লেখকের অতিকথন অভ্যাস হলেও, সত্যকথন তার অলংকার। অনেক ভারী-ভারী শব্দ ও অতি বিস্তৃত আলোচনা। তবুও পড়ে কখনো বিরক্ত লাগবে না।

▪️উক্ত উপন্যাসটি সম্পূর্ণ সাধুরীতি বা চলিতরীতিতে লিপিবদ্ধ হয় নি। দুটি রীতিরই মিশ্রণ রয়েছে। প্রচুর তৎসম, তদ্ভব ও আঞ্চলিক শব্দ এ উপন্যাসকে নতুন আঙ্গিক দান করেছে। উপন্যাসটি চারটে খন্ডে বিভক্ত। প্রতিটি খন্ডে আবার দুটি পর্ব রয়েছে। যেমন:-

১ম খন্ড: তিতাস একটি নদীর নাম, প্রবাস খন্ড।
২য় খন্ড: নয়া বসত, জন্ম - মৃত্যূ - বিবাহ।
৩য় খন্ড: রামধনু, রাঙা নাও।
৪য় খন্ড: দুরঙা প্রজাপতি, ভাসমান।

▪️'তিতাস একটি নদীর নাম' - এ উপন্যাসটি অদ্বৈত মল্লবর্মণের এক অমর কীর্তি হিসেবে বিধৃত। অনুকূল ও প্রতিকূল সংঘাতে বেঁচে থাকা মৎস্যজীবি মানুষের কাহিনি এখানে বর্ণিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি উপন্যাস নয়, এটি হলো গভীর দর্শণের সংমিশ্রণে এক সভ্যতার বাস্তব নিদর্শন।
Profile Image for Maimuna Akter.
14 reviews11 followers
November 21, 2021
'তিতাস' নদীকে ঘিরে এই উপন্যাসটি রচিত। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট চরিত্রের আধিপত্য নেই। তিতাসকে ঘিরে মালোদের (জেলেদের) জীবনের সব ঘটনা লেখক এখানে তুলে এনেছেন। ফুটিয়ে তুলেছেন কীভাবে তিতাস এই মালোদের জীবনকে প্রভাবিত করে। বইটাতে মালোদের সবকিছু এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে যে মনে হবে কারো জীবনী পড়ছি। লেখকের পরিচিতি পড়ার পর অবশ্য আমার ধারণা একদমই সঠিক বলে মনে হয়েছে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার গোকর্ণ গ্রামে অতিবাহিত জীবনটিই এখানে তুলে এনেছেন।
Profile Image for Ashikur Khan.
Author 4 books7 followers
February 28, 2023
বইয়ের নামঃ তিতাস একটি নদীর নাম
লেখকঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণ
বইয়ের ধরণঃ সামাজিক উপন্যাস
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৪৫(পত্রিকায় প্রকাশ), ১৯৯৮(কলেজ সংস্করণ)
প্রকাশকঃ বুকম্যান (কলেজ সংস্করণ)
গায়ের মূল্যঃ ২৯ টাকা
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৫০/৫.০০

মানব ইতিহাসের যুগে যুগে কালে কালে গড়ে উঠেছে নানা সভ্যতা। কালিক ও স্থানিক পার্থক্য থাকলেও এসব সভ্যতার অধিকাংশই গড়ে উঠত কোনো নদীকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ বিভিন্ন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত বিভিন্ন মানব বসতি। মানব বসতির সাথে সাথে যুক্ত হত নানা রকম মানুষের জীবনের গল্প। টেমস, রাইন, সীন, অ্যামাজন, টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস বা দানিয়ুব নদীর তীরে যেমন বড় বড় শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল মানব বসতিকে কেন্দ্র করে, তেমনি পদ্মার পলি বিধৌত এ বঙ্গদেশেও নদী কেন্দ্রিক বেশকিছু মানব বসতির সৃষ্টি হয়েছিল। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা এ দেশের প্রধানতম নদীত্রয় হলেও আরো অসংখ্য নদনদী এ দেশে রয়েছে, যার নাম আমরা অনেকেই হয়ত জানি কিংবা হয়ত জানি না। এমনি এক স্বল্পপরিচিত নদীর নাম তিতাস, যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এ দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অংশ বিশেষের মানব বসতি।

এমনই এক নদীকেন্দ্রিক মানব বসতির জীবনের নানা গল্প উপন্যাসের পাতায় তুলে এনেছেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনের নানা গল্পকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে এ উপন্যাস। তিতাস নদীর দুপাড়ে গড়ে ওঠা জেলে সম্প্রদায়ের জীবনের নানাদিক প্রাধান্য পেয়েছে এ বইটিতে। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত জীবনে মালো সম্প্রদায় তথা জেলে পরিবারের সন্তান ছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। এ বিবেচনায় বলতে গেলে মূলত তার আশেপাশের মানুষের গল্প-ই এ বইতে তুলে ধরা হয়েছে। মালো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের জীবনের টানাপোড়নের গল্পই এখানে এসে পেয়েছে শাব্দিক প্রকাশ। এ দিক থেকে বইটিকে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের "পদ্মানদীর মাঝি" উপন্যাসের ন্যায় "বাস্তব পর্যবেক্ষণ (Realistic Observation)" এর ফসল বললে খুব একটা অত্যুক্তি হয়ত হবে না।

এবার আসা যাক বইটির চরিত্র বিশ্লেষণের আলোচনায়। কেননা, মূল বিষয়বস্তু নিয়ে কম কথা তো আর হলো না। তিন প্রজন্মের জীবনের চিত্রের মিশেলে গড়ে ওঠা এ উপন্যাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যে চরিত্রের কথা মাথায় আসে, সেটি হচ্ছে কিশোর। তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার গোকনঘাট গ্রামের এক মালো পরিবারের সন্তান কিশোরের স্থানীয় পর্যায়ে বেশ খ্যাতি রয়েছে জেলে হিসেবে। অল্পবয়সী কিশোর জেলে হিসেবে বেশ নাম করলে তা অনেকেরই চক্ষুগোচর হয়। শুরুতে তার নিজ গ্রামেরই মেয়ে বাসন্তীর সঙ্গে তার বিয়ের কথা থাকলেও ঘটনাচক্রে তা আর হয়ে ওঠেনা। মাছ ধরতে অন্য গাঁও গেলে সে এক স্বল্পপরিচিতা সুন্দরীর রূপের মোহে পড়লে ধর্মত মালাবদল করে তাকে বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে তার আর ঘরে ফেরা হয়ে ওঠে না। এরপর কী ঘটে? কেন তার সস্ত্রীক ঘরে ফেরা হয়ে ওঠে না? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে উপন্যাসটি।

এ উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রাখা হয়েছে বাসন্তীকে। প্রথমে এগারো বছরের কিশোরী বাসন্তীর কিশোরের সঙ্গে বিয়ে হবার কথা থাকলেও তার মালাবদল হয় কিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুবলের সঙ্গে। কখনো বাসন্তী, কখনো সুবলার বউ, আবার কখনওবা অনন্তর মাসী --- গল্পের খাতিরে তাকে নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন ঔপন্যাসিক। একেক ভূমিকায় তাকে একেক রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। যখন তাকে সে বাসন্তী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তখন পাঠকের চোখে সে এক "দুরন্ত কিশোরী"। আবার, যখন সে অনন্তর মাসী, তখন তার মধ্য দিয়ে এক মাতৃস্থানীয়া নারীর গুণাগুণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিয়ের কিছুকাল পরেই সে বিধবা হয়ে গেলে নিজের সংসার বা গর্ভজাত সন্তান আর তার কপালে জোটে না। পরের গর্ভজাত সন্তান লালনপালনের মধ্য দিয়ে নিজে মা হতে না পারবার অভাব ঘুচাতে হয় তাকে। এ সন্তানের জন্য তাকে নানাভাবে পদে পদে নানা লাঞ্চনা-গঞ্জনা মুখ বুজে সইতে হয়। এক সময় নিদারুণ দৈন্যদশার শিকার হয়ে মালো সম্প্রদায়ের আরো অনেকের মত প্রাণ দিতে হয় তাকেও।

উপরোক্ত দুইটি চরিত্রের পর প্রধানতম চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয় অনন্ত। কিশোরের স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান হলেও বাবার কাছে থাকবার সুযোগ তার আর হয়না। মায়ের সংসারের পাশাপাশি অন্যের সংসারে থেকে বড় হওয়া অনন্ত আর দশজন সাধারণ মালো সন্তানের মত করে বেড়ে ওঠেনা। তার বয়সী অন্য সকলে একসময় গিয়ে নৌকায় উঠলেও তার সুযোগ হয় বিদ্যার্জন করবার। নতুন এক জগতের অবারিত দুয়ার তার সম্মুখে উন্মোচিত হয়ে যায়। এরপরের গল্প শুধুই এগিয়ে যাবার। এ চরিত্রটিকে অনেকেই ঔপন্যাসিকের আত্মজৈবনিক চরিত্র বলে উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঔপন্যাসিক এক জেলে পরিবারে জন্ম নিয়ে বেড়ে ওঠা মানুষ। অনন্তর মত কাহিনী তার জীবনেও ঘটেছে। যাহোক, জ্ঞানচর্চার অদম্য আগ্রহ অনন্তকে একবার পেয়ে বসলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কুমিল্লা শহরে চলে যাবার সময় অনন্তবালা নামক এক ধনাঢ্য পরিবারের কন্যার পিছুটান উপেক্ষা করতে হয়েছিল তাকে। একসময় সেও পোশাক-আশাকে আর দশজন তথাকথিত ভদ্রলোকের মত ভদ্রলোক হয়ে ওঠে, কিন্তু পেছনে ফেলে যাওয়া মানুষগুলিকে সে ভুলতে পারেনা।

এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে অনন্তবালা, সুবল, রামকেশব, রামপ্রসাদ, উদয়তারা, বনমালী, করমালী, বন্দে আলী, নয়নতারা, কাদের আলী, ছামির আলী, অনন্তর মা প্রমুখ। একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, ঔপন্যাসিক তার এ উপন্যাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামী নারী চরিত্রে অনন্তর মা-কে রাখলেও তার নিজের নামে তার পরিচয় তুলে ধরেননি। বরং তাকে পরিচিত করে তুলেছেন সন্তানের নামে, যা আমাদের সমাজের কঠিন সমাজ-বাস্তবতা। গল্পের প্রয়োজনে এসব চরিত্র চিত্রণের আশ্রয় নিতে হয়েছে ঔপন্যাসিককে, যা তার উপন্যাসের গল্পকে করে তুলেছে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল। উল্লেখ্য যে, এসব চরিত্রের মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজের এক বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত লোকের জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলবার কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে করে গেছেন তিনি।

এবার উপন্যাসের ভাষারীতি নিয়ে কথা বলবার পালা। সাধুরীতিতে এ বইটি লিখা হলেও কোথাও বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি। এছাড়া চরিত্রের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষার যথাযথ প্রয়োগের দরুন মূল ভাষারীতিতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়নি; বরং তা আলাদা এক ব্যঞ্জনার জন্ম দিয়েছে। বেশ সহজ ভাষায় গল্পের ভঙ্গিমায় সবকিছু বলে গিয়েছেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। এর পাশাপাশি লেখকের নিজস্ব অনেক দর্শন যুক্ত হয়েছে এ লেখাটিতে, যা পাঠক হিসেবে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক লেগেছে আমার কাছে। এছাড়া কাব্যিক ভঙ্গিমায় সমাপ্তি আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।

পরিশেষে (last, but not the least) বলা যায়, উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে বেশ ভালো মানের এক সাহিত্যপাঠ্য এ বইটি। অন্য কথায়, আমার পঠিত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ক্লাসিক উপন্যাস এটা। মানুষের জীবন সংগ্রামের চিত্র এতে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে এর তুলনা চলে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের "পদ্মানদীর মাঝি" কিংবা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের "দি ওল্ডম্যান & দি সি" উপন্যাসের সঙ্গে। সর্বোপরি, কোনো পাঠক এটা পড়লে আশাহত হবেন না বলে আমার বিশ্বাস।

Happy reading! ♥

Profile Image for Bayejid Ahmad.
28 reviews1 follower
October 13, 2024
তিতাস নদী থেকে মালে গোষ্ঠীর পাওয়া এবং তার বদলে মালে গোষ্ঠীর থেকে তিতাস নদীর কেড়ে নেয়া।
আহা! সেকি অপূর্ব সুনিপুণ অনবদ্য বর্ণনা। প্রতিটি লাইন আমাকে ভাবিয়েছে।"পদ্মা নদীর মাঝি"এবং এই বইয়ের আলোচ্য বিষয় অনেকটাই কাছাকাছি তবে দুজনের শব্দচয়ন ও উপস্থাপন ভঙ্গিতে রয়েছে বিস্তর তফাৎ।
উপন্যাসের চিত্রপটে স্পষ্ট হয় যে কিশোরগঞ্জে লোক বসতি হওয়ার আগেই ভৈরব ছিল একটি প্রতিষ্ঠিত নদীবন্দর এবং একটি প্রাচীন নগরী।
১৯৫১ সালে মৃত্যুবরণ করা অদ্বৈত মল্লবর্মণ এতটাও প্রাচীন লোক ছিলেন যতটা প্রচীন এই উপন্যাসের চিত্রপট।
পদ্মা নদীর মাঝি "এবং এই বই পড়ার পর নিঃসন্দেহে যে কোন ব্যক্তির নদী সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা বদলে যাবে।
Profile Image for Jahangir Alam.
115 reviews7 followers
July 31, 2023
#39
তিতাস একটি নদীর নাম
অদ্বৈত মল্লবর্মণ
সূর্যোদয় প্রকাশনী
মুদ্রন মূল্য ২৭৫ টাকা
রিডিং টাইম - ১০ দিন

মালো। হারিয়ে পড়া এক জাতির নাম। তিতাস নদীতে মাছ ধরে জীবিকা উপার্জনই ছিল যাদের পেশা। কালাক্রমে তাদের সংষ্কৃতিতে যাত্রার প্রভাবেই তাদের জাতিগত পতনের সূত্রপাত, তারপর বিলাসিতায় মগ্ন হতে দূরদর্শীতার অভাবে দেনার দায়ে ধুঁকে ধুঁকে একসময় ধ্বংস হয়ে যায়।

বাংলা সাহিত্যে নদীভিত্তিক উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ " তিতাস একটি নদীর নাম "। লেখক নিজে ছিলেন মালো জাতিভুক্ত, সেখান থেকে নিজের স্ব-অভিজ্ঞতার আলোকে রচনা করেন এই উপন্যাস, যেখানে মালোদের প্রাত্যাহিক দিনযাপন, সংষ্কৃতি, লোকাচার, সমাজপ্রথা,উৎসব সবকিছুই সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।মালোদের হারিয়ে যাওয়া গান এই উপন্যাসের বিশেষ একটি দিক।

উপন্যাসটি মূলত দুই প্রজন্মের কাহিনী। উপন্যাসের মূল দুই চরিত্র কিশোর, তার ছেলে অন্তত, যাদের কেন্দ্র করেই এগিয়ে চলে কাহিনী।উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রেরই সেকাল-একালের অবস্থান, আর সবশেষে সবার মধ্যেকার কানেকশন দেখিয়ে মালোদের ধ্বংসের মধ্যে দিয়েই উপন্যাসের সমাপ্তি।এর থেকে বেশি বলতে গেলে স্পয়লার হয়ে যায়।

সাধু ভাষায় লেখা হওয়ায় অনেক ধীরগতিতেই উপন্যাসটি পড়তে হয়েছে, আর প্রতিটা চরিত্রের কানেকশন বুঝতে বইটি খুব ভালোভাবে পড়া দরকার।
October 23, 2020
নৌকাবাইচ নয়, নৌকাদৌড়,
বর্তমান সময়ের প্রচলিত শব্দ নয়, বরং সহজ অথচ প্রকৃত রূপ তুলে ধরা এসব শব্দ আর আলোচাল, টুলাইন্যা গিরস্তি, ঠ্যাঙ্গের তলা ইত্যাদি অসংখ্য আঞ্চলিক শব্দের প্রাসঙ্গিক উল্লেখ দিয়ে 'তিতাস একটি নদীর নাম' আমাদের নিয়ে যায় আজ থেকে অনেক বছর আগে, বৃহত্তর কুমিল্লায় মেঘনার গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া তিতাস নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে।

অনেক লোকাচার আর জীবনাচরণ ফুটে উঠেছে এই বইয়ের পাতায় পাতায়, যা আজ হয়তো তিতাসের বুকের স্রোতের মতই বিলীন। আমরা ফিরে যাই যান্ত্রিক যুগের পূর্বের নদীলগ্ন মাটিঘেঁষা পূর্ববাংলায়। মনের চোখে দেখে নিই,

মাঘমণ্ডলের ব্রতে কুমারী মেয়েরা কীভাবে তিতাসের বুকে চৌয়ারি ভাসিয়ে দিয়ে বর প্রার্থনা করে আর সারা তিতাসপার মহাসমারোহে নেচে ওঠে...চৈত্রের শেষে উত্তরায়ন সংক্রান্তিতে আর শ্রাবণ মাসের শেষদিনে মনসা পূজায় পদ্মপুরাণ পাঠ ও শাপলা লতায় ঘেরা মনসা মূর্তির পূজায় মালোপাড়া মাছধরার সকল ব্যস্ততা ফেলে কী আনন্দময় হয়ে ওঠে...বেদের বহর কীভাবে বিচিত্র সব জিনিস নিয়ে ফেরি করে বেড়ায়, দূরবাজারে না গিয়ে জেলেরা তাদের কাছ থেকেই জিনিস কিনে নিতে পারে কিছু মাছপ্রদানের বিনিময়ে...একদিকে নদীর নৌকায় চলে সুরেলা পুঁথিপাঠ, কেচ্ছা গান, মুর্শিদা বাউল গান বা বারোমাসি, অন্যদিকে ধান কাটা শেষে বেদনাদায়ক কারবালার কাহিনি নিয়ে স্থলে বাজে জারি গান, সাথে সাথে হিন্দুদের দোল উৎসবে গীত কবিগান... বর্ষায় তিতাসের বুকে রাঙা নাও ভাসিয়ে নৌকাদৌড়ে মেতে ওঠে মুসলমান মাঝিরা আর গেরস্তরা, সাথে কী ঝংকারে চলে সারিগান...

এভাবে একদিকে নদীর অকৃত্রিম বর্ণনা ও ঋতুভেদে তিতাসের রূপ, অন্যদিকে নদীপারের মানুষজনের জীবন ও বাংলার অন্ত্যজ মানুষের লোকাচার, এই লেখাকে করেছে নদীময় পূর্ববাংলার আন্তরিক দলিল।

তিতাস খুব বিখ্যাত নদী নয়, বৃহৎ তো নয়ই, এই নামটি খুঁজে পাওয়া যায় না ইতিহাসে, এই নামকরণ ভাল কি মন্দ তাই বা কে জানে! তিতাসের অখ্যাতি তিতাসপারের মালো বা জেলে সম্প্রদায়ের লোকদের বিচলিত করে না, কারণ তিতাস তাদের অন্তরে। তাদের অর্ধেক জীবন তিতাসের পারে আর বাকি অর্ধেক জীবন তিতাসের বুকে। জলে আর স্থলে তিতাসপারের লোকজনের যেমন মেশামেশি, হিন্দু আর মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ও তেমন হাটে বাজারে, সালিসে বৈঠকে, উৎসবে পার্বণে এক হয়ে যায়, যেমন- বনমালী এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নৌকাডুবিতে আলুহারা মুসলিম ব্যাপারিকে। তখনো আসলে পুর্ববাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতার কুৎসিত রঙ তখনো এসে লাগে নি।

উজানে 'খলা বেয়ে' প্রবাসী জেলেরা মাছ ধরে আনে আর সম্পর্ক গড়ে বিদেশী কন্যার সাথে, নদীভিত্তিক নানা জীবনাচার- গুণ টানা, হাল ঠিক করা, গলুইয়ে দাঁড় ধরা, গাব গাছের কষ দিয়ে জাল ধারালো করা, সুতা কাটা ও পাকানো, জাল বোনা- সবটুকুই হাতে কলমে, আর জালের কত ধরণ- ভেসাল জাল, ভৈরব, ছান্দি, জগৎবেড়ি জাল! জেলেদের মনোবৃত্তি- নদীর রহস্য শুনিয়ে আর বলেই তাদের আনন্দ, কবে কোন নদীতে তারা ঝড়ের পাল্লায় পড়েও তারা কীভাবে বেঁচে ফিরে এসেছিল, নদীর পারে হাট বসানো নিয়ে জেলে ও মোড়লদের বৈঠক, লেখকের বর্ণনায় এসবকিছুই পুরোমাত্রায় নদীকেন্দ্রিক।

সেই তিতাস এখনো বহমান, তার দুইকূলে গোকর্ণঘাট, ভৈরব, নবীগঞ্জ নামের স্থানগুলো আজও অক্ষয়, শুধু ক্ষয়ে গেছে সেই স্থানে বসবাসরত মালোসমাজ, উপন্যাসের শেষের দিকে তাদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা ফুটে উঠছে, অনেক মালো তাদের পূর্বপুরুষদের পেশা ছেড়ে মজুরিভিত্তিক কাজে যোগ দিচ্ছে, কারণ-
“তিতাস শুখাইয়া গিয়াছে, মালোরা জলছাড়া মীনের মত হইয়াছে।''

দুই বন্ধু কিশোর ও সুবল, তাদের অভিভাবক বৃদ্ধ মাঝি তিলক, কিশোরের প্রবাস হতে আনা বৌ- পরে যে হয়ে যায় অনন্তের মা, সুবোধের বৌ কিংবা অনন্তের মাসি বাসন্তী, কাদির ও তার পুত্র ছাদির, এসব অনেক চরিত্রের ভিড়েও গল্পের কাহিনি এগিয়েছে মূলত জেলে কিশোর থেকে বিদ্বান অনন্তে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে,

ঠিক যেমন ক্ষীণ ধারা লয়ে আজও এগিয়ে যাচ্ছে, বয়ে যাচ্ছে তিতাস। অদ্বৈতর মায়াময় ভাষা, কাব্যিক উপমা আর হৃদয়ঘন বাস্তব বর্ণনায় এই তিতাসই হয়ে ওঠে এই উপন্যাসের প্রধানতম নায়ক।
Profile Image for Anika.
29 reviews42 followers
November 24, 2018
another classic novel which is worthy of every bit of acclaim it has received, perhaps it deserves even higher acclamation. অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার বইটিতে শুধুমাত্র যে একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রাম তুলে এনেছেন তা নয়, বরং মানব জীবনের সাধারণ জীবন দর্শন ও ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণ নৈপুণ্যে র সাথে।
বইটি পড়তে আমার সময় লেগেছে, ফ্লো ধরতে, কাহিনী এবং চরিত্র গুলোর সাথে রিলেট করতে আমার বেশ সময় লেগেছে। বাসন্তী, কিশোর, সুবল কেই প্রথম দিকে মনে হয়েছে protagonist, অন্যান্য চরিত্র গুলো হয়তো এসেছে কাহিনীর প্রয়োজনে। এরপর পড়তে পড়তে এসেছে তিতাস এর অবিরত দানের কথা, কল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছিল যদি ও, দেশের নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখে এরকম তেজস্বী নদী, বুক ভরে নির্মল বাতাস ফুসফুসে ঢুকানো, বা টলটলে পানি কল্পনা করতে বেশ কষ্ট ই হচ্ছিল বৈকি।
এরপর থেকে যেন আস্তে আস্তে গল্পের মোড় ঘুরতে শুরু করল। কিশোর, সুবল, তিলক মিলে কোন্ গ্রামে গেল সেখান থেকেই শুরু। এরপর সময়ের প্রবাহে অনন্ত আসল, বাসন্তী বিধবা হল, গল্পের কাহিনী আগাতে থাকল। সময়ের সাথে শুধু যে চরিত্রের যোগ - বিয়োগ হল, তাতো নয় , মালোদের জীবন যাপনের পরিবর্তন ও দৃষ্টি গোচর হওয়া শুরু করল। বইটির অন্যতম স্বার্থকতা আমার কাছে এটা ও মনে হয়েছে যে কাহিনী কখনো একঘেয়ে হয়ে যায়নি, there was no predictable plot twist, whatsoever. Every plot change was as unpredictable as it could ever be.
উপন্যাসের বেশ কিছু জায়গা আমাকে ভাবিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কিভাবে সময় মানুষকে বদলে দিতে পারে, একজন দয়ালু মানুষ ও কিভাবে সময় ও পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবচ���ইতে নির্মম হয়ে উঠে আর কিভাবে তার আশেপাশের মানুষ তার সেই benevolence ভুলে যায়। এবং এই ভুলে যাওয়াটাও শুধুই একটি human trait, কারণ এই কাজটা পাঠক হিসেবে আমি ও করছি যখন বাসন্তীর বুড়ো মা অনন্তর মুখে পোড়া খড় ঢুকিয়ে দিতে গেলেন। তার এই আকস্মিক নির্মমতায় আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে অনন্তর মা যে সময় অভুক্ত ছিল, এই বাসন্তীর মা ই আসন্ন অনাহার ক্লিষ্ট দিনের কথা চিন্তা না করে নিজের মুখের অন্ন ভাগ করে নিয়েছিল অনন্ত আর তার মার সাথে। ঠিক তেমনই বাসন্তী, কাদির মিয়া সময় সময় কখন ও হয়ে উঠেছে মমতাময়ী মাসী কিংবা দয়াময় কৃষক যে নিজের লাভের কথা চিন্তা না করে গরীব অনাহারী শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আবার পরমুহূর্তেই তাদের নির্মমতা ও আমাদের অভিভূত করে। ভালো - মন্দ মিলিয়েই যে মানুষ সেই দর্শন ই বারংবার সত্যি হয়ে চোখে পরে।
সেই বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এক অনুন্নত জনগোষ্ঠীর সমাজব্যবস্থায় ভাঙনের ঢেউ যেভাবে লেগেছিল, সেই ভাঙন আমরা আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ও দেখি। মালোসমাজ তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ - সারি গান, ভাটিয়ালি গান, হরিবংশি গান হারিয়েছে যাত্রা দলের সস্তা গানের কাছে, আর আজ আমরা আমাদের সংস্কৃতির গৌরব গুলো প্রতিদিন হারাচ্ছি নতুন কোন সস্তা আনন্দের জন্য।
Profile Image for Tawfiqa Yeasmin .
10 reviews1 follower
October 31, 2022
নদী কেন্দ্রিক উপন্যাস হিসেবে "তিতাস একটি নদীর নাম" সুপরিচিত। ধীবর সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা এক লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। নিজের বেড়ে ওঠা সম্প্রদায়ের পটভূমি নিয়েই এ উপন্যাস।

উপন্যাসটিতে মালোদের (যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে) নিজস্ব জীবন-জীবিকা সমাজ ব্যবস্থার চিত্র উপস্থাপন করেছেন লেখক। তিতাসের সাথে মালোদের যে অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে আর ভাসমান শ্যাওলার মতো এই মালোরা যে তিতাসের জলের সাথে অস্তিত্বের শর্ত ধরে রেখেছে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে উপন্যাসে। শুধু যে নদী কেন্দ্রিক অস্তিত্বের লড়াই উপস্থাপিত হয়েছে তা নয় ক্ষয়িষ্ণু কৌম সমাজের ও সংস্কৃতির উত্থান পতনের বিষয়টিও লেখক ফুটিয়ে তুলতে কার্পণ্য করেননি।

এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বলতে সমগ্র মালো সম্প্রদায়কেই ধরা যায়। তার মাঝে কিছু উজ্জ্বল চরিত্র বলতে কিশোর, সুবোল, বাসন্তী, অনন্ত, অনন্তের মা, উদয়তারা, বনমালী, কাদির প্রভৃতির নাম উঠে আসে। নিয়তিবাদের কাছে অসহায় কিশোর ও অনন্তের মায়ের সংসার না হতে গিয়েও না হওয়া থেকে মৃত্যু উপন্যাসে ট্রাজেডির সূচনাপর্বের কথা। প্রতিবাদী নারী বাসন্তী তথা সুবোলের বৌ যেন আধুনিক নারীচরিত্র।

পুঁজিবাদের আগ্রাসন, আধুনিকতার নামে বিলাসিতা ও নব-সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ত্যাজ্য করা কীভাবে একটা জাতির জাতিগত অস্তিত্বের সংকট করে তুলতে পারে সেটি উপস্থাপন করেছেন লেখক। পাশাপাশি দেখিয়েছেন ব্যক্তিস্বার্থ যখন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে সামষ্টিক স্বার্থ তখন নুইয়ে পড়ে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সবকিছুর পরেও রক্তমাংসের মালোদের অস্তিত্ব নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ ছিল তিতাসের জল শুকিয়ে যাওয়া। তিতাস শুকিয়ে না গেলেও মালোদের ভঙ্গুর সমাজ-সংস্কৃতির অস্তিত্বও টিকে থাকতো না।
Profile Image for Latiful Hassan Bnadhon .
5 reviews
December 3, 2023
ভূগোল পরিবর্তিত হয় প্রতিনিয়ত। সমুদ্র হয় মরুভূমি, জনপদ বিলীন হয় নদীগর্ভে। তেমনি একটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে, নাম তিতাস। মেঘনা নদী হতে উৎপত্তি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভিতর দিয়ে বয়ে আবার পড়েছে মেঘনায়। এই তিতাসের তীরে বাস করা গোকর্ণনগরের জেলে জাতি মালোদের নিয়ে রচিত উপন্যাস 'তিতাস একটি নদীর নাম'। প্রায় শতাব্দী পুরান এই উপন্যাসটি এখনো পাঠকমহলে সমাদৃত।

প্রেম, বিরহ, শোক, অনুতাপ, অন্তর্দাহ সহ প্রায় সব মানবীয় আবেগ লেখক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে।
গৌরাঙ্গ-নিত্যানন্দের ভ্রাতৃত্ব, কিশোর-সুবলের বন্ধুত্ব, বাসন্তীর চপলতা, জেলেজীবন দিয়ে শুরু হওয়া উপন্যাস মাঝে এসে পাঠকমনে সৃষ্টি করেছে কিশোর, অনন্তর মা আর অনন্তর জন্য গভীর করুণা। আর শেষটায় উদয়তারা আর সুবলার বউয়ের জন্য পাঠককে বেদনাসিক্ত হতে হয়েছে। পৃষ্ঠা গণনায় বড় উপন্যাস না হলেও এর আবেদনের ব্যপ্তি অসীম।

উপন্যাসটির শেষে এসে সত্য মনে হয়েছে Sydney Sheldon এর কথাটি - Being poor is only romantic in books.
পড়ার আহবান রইল।
Profile Image for David Haberlah.
190 reviews2 followers
August 22, 2022
My interest in Titash was picked when reading references to this book by my favourite author Amitav Ghosh in The Great Derangement: Climate Change and the Unthinkable. It is one of the rare books in which nature becomes a protagonist and climate crises defines human fate. This ethnographic novel is setting a frightening, albeit realistic example illustrating the fallout of the current climate change crisis and its effects to come, especially to the peoples of Asia just 100 years later. It also records a lost culture and its demise through the globalising forces of culture and commerce. All this before the separation that split Hindu and Muslim communities with the formation of East Pakistan.

While the book is fascinating and an important ethnographic document, the novel unfortunately remained largely unedited after Mallabarman’s untimely death. This makes for a rocky and sometimes tedious reading. Also, the English translation by Bardhan is not particularly inspired. He makes up to it in part by offering interesting notes and an afterword.
March 30, 2024
বইয়ের মতো বই বটে একটা। শেষ করার পরেও মাথায় ঘুরছে। পুতুল নাচের ইতিকথা, পথের পাচালি,পদ্মা নদীর মাঝি, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, এই বইগুলোর সমপর্যায়ের একটি চিরায়ত উপন্যাস। তিতাসের পাড়ের মালোপাড়া টা যেনো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
Profile Image for Noor Kutub.
37 reviews
July 23, 2024
আমার বাসার পাশেই জেলেদের পাড়া ছিলো। যখন ছোটো ছিলাম, দেখতাম ওই পাড়ার সবাই মাছ ধরার সাথে যুক্ত। আমাদের জেনারেশন আসতে আসতে ওই পাড়ার কেউই আর মাছ ধরার সাথে বর্তমানে যুক্ত নেই।
বাংলাদেশের মালো বা জেলে সম্প্রদায়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এর এক প্রামাণ্য দলিল এই উপন্যাস যা মালো সম্প্রদায়ের আপনজন অদ্বৈত মল্লবর্মণ বাদে আর কেউই এতো আবেগ ও অনুভূতি বাদে লিখতে পারতো না।
Displaying 1 - 30 of 82 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.