Aroj Ali Matubbar (Bengali: আরজ আলী মাতুব্বর) was a self-taught philosopher and apostate, of Bangladesh. He was born in British India on 17 December 1900 (Bengali year 1307) in the village of Lamchari in Charbaria union, about 11 km from Barisal town, currently in Bangladesh.
His original name was Aroj Ali, and he only acquired the name 'Matubbar' (meaning 'local landlord') later. He was born to a poor farming family. He studied for only a few months at the village maqtab, however this brief dabble in institutional education centered only on the Quran and other Islam studies. He gathered most of his knowledge on varied subjects, including science and philosophy, through his own readings and research.
Matubbar was little known to the elite educated society of the country during his lifetime. His first book, published in 1973, was rich with secular thought but caught little attention. It is only in the final years of life that he came to be known to the enlightened society of the country. His writings were collected and published. People in general started to take an interest in his books, which, although reflecting an untrained mind, posed a number of intriguing questions. He soon rose to eminence, albeit after his death in 1985.
বরিশাল শহরের অদূরে ছোট্ট গ্রাম লামচরির এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেয় আরজ আলী । দারিদ্রতার আদর-যত্নে (!) ধীরে বেঁড়ে উঠতে উঠতে বাবাকে হারায় চার বছর বয়সে। জমি-জমা ও বসতবাড়ি নিলামে উঠে, অল্প যা কিছু ছিল বন্ধক পড়ে মহাজনের কাছে। সব হারিয়ে কৈশোরেই লেগে যায় কৃষিকাজে। কৃষক আরজ আলীর কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সহস্র বাঁধা-বিপত্তি, পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা ও নিজেকে ডিঙিয়ে তার প্রথাবিরোধী চিন্তা ধারাকে বিস্তৃত করে পরবর্তী ‘আরজ আলী মাতুব্বর’ হয়ে উঠাটা একটা বিস্ময়! বিস্ময়কর তার প্রশ্ন করার ধরন ও সাহসিকতা। তার প্রথাবিরোধী আচরণের মুল কারণ তার ধার্মিক মায়ের মৃত্যু পরবর্তী একটি ঘটনা। আরজ আলীর মৃত মায়ের ছবি তোলার দায়ে মৃতদেহ কেউ জানাজা করতে রাজী হয়নি। এতে তিনি দারুন ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন। সামাজিক এই আঘাতই তাকে সত্য সন্ধানী করে তোলে। লিপ্ত হন জ্ঞান সাধনায়। চলতে থাকে জ্ঞান চর্চা; ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান অধ্যয়ন। রচনা করেন প্রথাবিরোধী প্রশ্ন সম্বলিত গ্রন্থ। আরজ আলী মূলত প্রশ্নবাজ। প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য সত্যের রূপ(Nature of Truth) কে জানা। তার প্রশ্নের তীর ছুটে প্রথার দিকে, ধর্মের দিকে, শত বছরের প্রতিষ্ঠিত অন্ধ বিশ্বাসের দিকে, মনুষ্যত্বহীন কুসংস্কারের দিকে। তার প্রশ্নের মুখে নড়ে উঠে সংস্কার! কেঁপে উঠে হাজার বছরের লালিত বিশ্বাস! তাহলে কি ধর্ম প্রান বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে আঘাত হানাই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল? নাকি অন্ধের চোখে দৃষ্টিদান? নাকি এটা স্রেফ ধর্মীয় কুসংস্কার দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতিশোধ পরায়ণতা? তাঁর বেশ কিছু প্রশ্নই আমার কাছে হাস্যকর ঠেকেছে। মনে হয়েছে কেবলমাত্র প্রশ্ন করার খাতিরেই প্রশ্ন করা আর কি!তবুও সেইগুলি প্রশ্ন। প্রশ্নকে বড় ভালবাসি! সত্যকে জানার সর্বোত্তম পন্থাই হল প্রশ্ন। সন্দেহ জাগুক, প্রশ্ন জাগুক। দূর হোক মূর্খতা। মুক্ত হোক জ্ঞান চর্চা। মুক্ত হোক ধর্ম, প্রসারিত হোক চিন্তার পরিধি।
তিন খন্ডে প্রকাশিত আরজ অালী মাতুব্বর এর লেখার প্রথম খন্ড এটি। আমি অবশ্য শুরু করেছি উল্টো থেকে, প্রথমে ৩য় , তারপর ২ য় এরপর প্রথম। তৃতীয় খন্ডে আরজ আলীর আত্মজীবনীর অংশটুকু থেকে যেমন তার জীবন সম্পর্কে জানা যায়, তেমনি তার ব্যক্তিগত মতামত, চিন্তাভাবনা মূলত আছে প্রথম খন্ডে। সত্যের সন্ধান আর অনুমান ছাড়াও আরও কিছু অপ্রকাশিত লেখা এই সংকলনে আছে। সত্যের সন্ধানে-তে তিনি যেমন বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, তেমনি অনুমানে গল্প বলার ছলে করেছেন বেশকিছু আলোচনা।সত্যের সন্ধানে লেখার (শুধুমাত্র লেখা, প্রকাশ নয়) সময় থেকে আশেপাশের মানুষ তাকে নাস্তিক আখ্যা দিতে শুরু করে, যার ফলে তাকে জেল খাটতে হয়েছিলো এবং তার বই প্রকাশের বিরুদ্ধে আইনী নিষেধাজ্ঞা ছিলো। সেটা পাকিস্তান আমলের কথা, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই বই প্রকাশিত হয়। সত্যের সন্ধানে বইয়ে আরজ আলী শুধু প্রশ্ন করেছেন, উত্তর সরাসরি না দিলেও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এমনভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন যাতে পাঠকের মন উত্তরটি নিজেই বেছে নিতে পারে, অবশ্য আরজ আলীর মতো চিন্তাশীল এবং মুক্তমন সব পাঠকের থাকবে এমন আশা করে লাভ নেই, তবু এই লেখা অনেককেই নিশ্চয়ই ভাবতে শেখাবে। অনুমান গল্পের আকারে লেখা হলেও সেখানেও অাছে অনেক তথ্য, ভাবনার অনেক খোরাক। অন্ধবিশ্বাসের কারাগারে পরে থাকা মানুষ হয়তো এই বই পড়ে চোখ লাল করে রাগে ফুসতে ফুসতে আরজ আলীর মূর্খতা(!)-কে মনে মনে বা প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে নিজের মূর্খতাকে ঢাকার চেষ্টা করবেন। তবু প্রকৃত সত্য চিরকালই সত্য থাকবে। জীবনের বাকী সব কিছুতে যুক্তি আর প্রমাণকে অগ্রাধিকার দেয়া আমাদের মতো মানুষদের ধর্ম নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সেই যুক্তিবাদ যদি হারিয়ে না যায় তাহলে এই বই যে কারোরই ভালো লাগার কথা। শ্রদ্ধা আরজ আলী মাতুব্বরকে।
নানা মুনি নানা মত। পৃথিবীতে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪৩০০ এর মত। প্রত্যেক ধর্মেই আছে সেই ধর্মই শ্রেষ্ঠ। সেই ধর্মের সৃষ্টিকর্তাই এক ও অদ্বিতীয়। সেই ধর্ম পালনকারীরাই স্বর্গে যাবে বাকিরা নরকে। যুগে যুগে এই ধর্মবিরোধ নিয়েই বড় বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলো হয়েছে, এখনো হচ্ছে।এমনকি নিজের ধর্মের ভিতরও শ্রেনীবিভেদ। হিন্দুদের ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র; মুসলিমদের শিয়া, সুন্নি; খ্রিস্টানদের ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট। এদের নিজেদের মধ্যে আবার মতবিভেদ, ভায়োলেন্স। এত বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় মতবাদের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা। এইসব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। এটা একটা অবশ্য পাঠ্য বই।
জ্ঞানের জগত বড়-ই অসাধারণ জগত। এখানে ভাব চলে না, চলে যুক্তি। এখানে ভালোবাসা হয় যুক্তিতে, অাবেগে নয়। সবাই জ্ঞান হজম করতে পারে না, একমাত্র প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরাই পারে। বরিশালের আরজ আলী মাতুব্বর তেমনি একজন প্রজ্ঞাবান মানুষ। যার লেখা সবাই হজম করতে পারেন না। অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী টাইপের অনেকে অাস্তিক নাস্তিক দ্বন্দ্বে গুলিয়ে ফেলেন ওনাকে। মাতুব্বর সাহেবের পরিচয় উনি একজন বই পড়ুয়া, তারপর একজন সমাজ সংস্কারক। অাপনি যেটাই বলুন না কেন, ওনার বই পড়ুয়া সত্ত্বাকে অস্বীকার করতে পারবেন না। ওনার মৌলিক প্রশ্নগুলোকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। আরজ আলী মাতুব্বরের লেখায় ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা উঠে এসেছে। তার লেখার মধ্যে সত্যের সন্ধানে, সৃষ্টির রহস্য, অনুমান এবং স্মরণিকা উল্লেযোগ্য। এসব লেখাগুলো সহ তার সমস্ত লেখাগুলো বর্তমানে আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র নামে প্রকাশিত হয়। অার এই সবকিছু জানতে হলে অামাদে�� জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে। পড়তে হবে, জানতে হবে, ভাবতে হবে। তারপর অালোচনা করতে হবে।
তাইতো তিনি বলেছেন,
" জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে শুধু আপন বিশ্বাসই নয়, সকল মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সকল ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা দরকার প্রতিটি জ্ঞান পিপাসু মানুষের। শুধু সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলে আবদ্ধ হলে চলেনা। সীমানাকে অতিক্রম করে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে। অার এর মধ��যে-ই ক্রমশ অতিক্রম করা যাবে নিজেকে।"
একজন অারজ অালী মাতুব্বরঃ-
অামাদের একজন আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন। যিনি অগাধ পান্ডিত্য আর দর্শন জ্ঞানে মাতুব্বর। যে সময়ে অক্ষর জ্ঞান নিয়ে মানুষের মাঝে টানাটানি ছিলো, তখন বিজ্ঞান, দর্শনের নানা শাখায় তার অবাধ বিচরণ। মাতুব্বর সাহেব একাধারে একজন দার্শনিক, একজন চিন্তাবিদ এবং একজন লেখক। তার দর্শন-চিন্তা অনেকের নাও পছন্দ হতে পারে। কিন্তু তার অধ্যবসায় এবং জ্ঞানকে কেও অস্বীকার করতে পারবেন না। যিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অঘাট জ্ঞান অায়ত্ত করেছেন। সম্পূর্ণ নিজ চেষ্টায় কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও যে জ্ঞানী হওয়া যায় এরকম অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন আরজ আলী মাতুব্বর।
অামার অাজকে অালোচনার মূল বিষয় মাতুব্বর সাহেবের লেখা সমূহ। কিন্তু তার অাগে ওনাকে নিয়ে মূল যে বিতর্ক সেদিকে একটু অালোকপাত করা যাক। কথিত আছে, শৈশবে তার মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ছবি তোলার দায়ে গ্রামের মানুষ তার মায়ের জানাজা পড়াতে রাজি হয়নি। শেষে বাড়ির কয়েকজন লোক মিলে তার মায়ের সৎকার করেন। মূলত এই ঘটনা থেকে মূল বিতর্কের শুরু, মানে ছবি তোলার জন্য ধর্ম অবমাননা। চিন্তা করুণ অাজকের সমাজে ছবি তোলা কত হরহামেশা ঘটনা! এর পরের বিতর্ক ওনার লেখা নিয়ে। যেখানে উনি সৃষ্টিকর্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অাচ্চা বলুন তো অবচেতন মনে কে এই প্রশ্ন করে না? সাহজ করে সবাইকে বলার সাহজ কতজন করেন? নিজের জ্ঞান চক্ষুকে উন্মোচন করে অবচেতন মনের কথা ব্যক্ত করেছেন যে ব্যক্তি সেখানে ধর্ম অালচ্য বিষয় নয়, বিষয় জ্ঞান। তিনি ভাববাদকে মূখ্য না করে বস্তুবাদী হওয়ার চেষ্টা করেছেন জ্ঞান দিয়ে। অার সবথেকে শেষ বিতর্ক মরণোত্তর দেহ দান নিয়ে। মৃত্যুর পর ওনার চক্ষু ও দেহ যেন কোন অসহায় মানুষের কাজে লাগে সেজন্য দেহ দান করেছিলেন অারজ অালী মাতুব্বর। অাপনি এই কাজকে ধর্ম দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারেন না, কারণ মানবতাকে অস্বীকার করতে কেও পারবে না। এ-জন্য অালোচনার শুরুতে বলেছি এ-জগত জ্ঞানের জগত।
অারজ অালী মাতুব্বর রচনাসমগ্রঃ-
অারজ অালী মাতুব্বরের মোট গ্রন্থ সংখ্যা ১৫ টি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেখা সত্যের সন্ধানে প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। তারপর সৃষ্টির রহস্য প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। অনুমান ১৯৮৩ সালে ও স্মরণিকা প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। এই লেখাগুলো সহ অারজ অালী মাতুব্বরের সমস্ত লেখাগুলো এখন অারজ অালী মাতুব্বর রচনাসমগ্র নামে প্রকাশ করে থাকেন পাঠক সমাবেশ থেকে।
রচনাসমগ্র এক এ সত্যের সন্ধানে গ্রন্থটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। যেখানে অতি সাধারণ কিছু প্রশ্নকে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরেছেন। অলৌকিক জগৎ সম্পর্কে মানব মনের প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছেন লেখক। তিনি প্রশ্ন করেছেন এবং নিজে সরাসরি উত্তর দেন নি, তিনি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন ভাববাদ বিশ্বাসী মানুষদের কাছ থেকে। প্রশ্নগুলো সব ধর্মের জন্য অতি সাধারণ। বিশেষ কিছুর সাথে মিল খোঁজাটা বোকামি বৈ অন্য কিছু নয়।
বইয়ের সূচিপত্র লক্ষ করলে পাওয়া যায় সত্যের সন্ধান এবং লৌকিকদর্শন বিষয়ক প্রশ্ন কেন করেছেন তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এবং তারপর একে একে প্রশ্নগুলো প্রস্তাব করে গেছেন মাতুব্বর সাহেব।
প্রথম প্রস্তাব - [আত্মা বিষয়ক] দ্বিতীয় প্রস্তাব - [ঈশ্বর বিষয়ক] তৃতীয় প্রস্তাব - [পরকাল বিষয়ক] চতুর্থ প্রস্তাব - [ধর্ম বিষয়ক] পঞ্চম প্রস্তাব - [প্রকৃতি বিষয়ক]
যে মানুষটি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শুধুমাত্র বই পড়ে, সেই মানুষটির প্রশ্ন জিজ্ঞাসা গুলো কেমন হয় একটু জেনে দেখা দরকার। জানার নতুন অনেক মাধ্যম এসেছে। বাজারে অনেক বইপত্র এসেছে। বইয়ের প্রাপ্তি সহজ হয়েছে। কিন্তু একজন অারজ অালীর মতো বই পড়ুয়া নতুন কোন মানুষের জন্ম হয়নি এদেশে।
অারজ অালী রচনাসমগ্র দুই নং খন্ড
এই খন্ডে অাছে তার সৃষ্টি রহস্য লেখাটি। মূলত সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে ওনার জ্ঞান সংকলন এখানে বর্ণনা করা অাছে। সৃষ্টি রহস্য যতটা ওনার লেখা তার থেকে অনেক বেশি ওনার জ্ঞানের সংকলন। সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের নানা রেফারেন্স সহ উনি তুলে এনেছেন। মূলত বিজ্ঞান সম্মত বিষয় এখানে অালোকপাত করা হয়েছে।
এই খন্ডের শেষে ওনার বিভিন্ন বক্তব্য, এবং চিঠিপত্র সহ বিভিন্ন কিছু তুলে ধরা হয়েছে। ওনার লাইব্রেরি পরিচালনা, তার খরচের হিসাব সহ বিভিন্ন বিষয়, যা একজন অারজ অালীকে জানতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
তিন নং খন্ড নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। কারণ এখানে যা অাছে তা একজন অারজ অালীকে জানতে অবশ্যই পাঠ্য। মূলত তাকে যারা জানতে চান, তিনি কি করতেন, কি করেছেন, কিভাবে বেড়ে উঠেছেন সে সবকিছু অাছে এই খন্ডে। ভিখারির আত্মকাহিনী মূলত একজন অারজ অালীর জীবন কাহিনী। জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শনে যার অঢেল অর্জন তার ব্যক্তি জীবন অজানা থাকলে অনেক কিছুই জানার বাইরে চলে যাবে। একজন অারজ অালীকে অজানা থাকলে, ওনার লেখা গুলো রিলেট করা সহজ হবে না। সুতরাং তিন নং খন্ডটি এরিয়ে যাওয়ার সূযোগ নেই। উপরন্তু বলা যায় সবার অাগে পড়া উচিত এই ভিখারির আত্মকাহিনী।
তিন খন্ডের অারজ অালী রচনাসমগ্র হলো পূর্ণাঙ্গ মাতুব্বর প্যাকেজ। মানে ব্যক্তি অারজ অালী থেকে শুরু করে তার লেখা, কাজ সবকিছু। বিশেষ করে তার সংগ্রামী বই পড়ুয়া জীবনের গল্প। যে জীবনে বই সহজলভ্য ছিলো না, কিন্তু অদম্য ইচ্ছে শক্তি ছিলো। যে সম্পূর্ণ নিজের শক্তি জোরে নিজেই এক জ্ঞানের জাহাজ। এখানে জ্ঞান অালোচনা হবে, কিন্তু সময়কে ভুলে গেলে চলবে না।
স্বশিক্ষিত কিছু মানুষ কেবল অর্জিত জ্ঞানেই রচনা করেছেন অাপন মেধার ভূবন। কুসংস্কার, অজ্ঞতা, ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখে যেতে পেরেছেন। কিন্তু অামরা এইসব মানুষ গুলোকে জানলাম না, পড়লাম না তাদের লেখাগুলো।
সম্ভবত বাংলাদেশে দর্শনচর্চার ইতিহাসে আরজ আলী মাতুব্বরের মত উল্লেখযোগ্য চরিত্র আর নাই। দার্শনিক হিসেবে তিনি বহু বিজ্ঞজনের নিকট যতটা সমাদর পেয়েছেন, সাধারণ জনতার কাছে ব্যঙ্গোক্তি পেয়েছেন তার বহুগুণ। অনেকে তাকে দার্শনিক মানতেই নারাজ।
সে তর্কে যেতে চাচ্ছি না। তবে আনুষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষাহীন একজন গ্রাম্য কৃষক শুধুমাত্র লাইব্রেরিতে আসা-যাওয়া করে এত বিপুল জ্ঞানের অধিকারী হতে পারেন, সেটা ভাবলে অবাক হতে হয়। আলোচ্য গ্রন্থে তিনি একটা কথা বলেছিলেন, "বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী হয়, কিন্তু জ্ঞানচর্চার কোনো ডিগ্রী হয় না।"
আরজ আলীর এই কথিত বিদ্যাশিক্ষা হয়তো ছিল না, সেজন্য ডিগ্রী প্রদানকারী স্কুল-কলেজের প্রতি তার বিশেষ কোনো দুর্বলতাও ছিল না। জীবনভর তিনি তার পরিপার্শ্বিক অবস্থা, অভিজ্ঞতা এবং লাইব্রেরির মাধ্যমেই জ্ঞানচর্চা করেছেন। এগুলোই ছিল তার বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্যেই শেষ বয়সের উপার্জিত সামান্য অর্থ দ্বারা তিনি কোনো স্কুল-কলেজ স্থাপন করেননি, করেছেন লাইব্রেরি নির্মাণ।
তাঁর লেখালেখির মূল অনুপ্রেরণা লক্ষ্য ছিল কুসংস্কারমুক্ত সমাজ নির্মাণ। সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠায় একজন মানুষ যতগুলো কুসংস্কারের সাথে পরিচিত হয়, তার সিংহভাগই সাধারণত কোনো না কোনোভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে। এই বদ্ধমূল সংস্কারগুলো বিবেচনাবোধহীন শিশুর "প্রশ্ন-করতে-অক্ষম" অন্তরে এমনভাবে ঢোকানো হয় যে, একটা সময় শিশু সচেতন ও অবচেতন মনে সেই সংস��কারগুলোকেই বিশ্বব্রহ্মান্ডের মধ্যে "একমাত্র সত্য" হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। যখন সে বড় হয় তখনও সে এই "একমাত্র সত্য"-এর বাইরে গিয়ে ভাবতে পারে না।
হয়তো আরজ আলীও পারতেন না। কিন্তু জীবনের মহাস্রোতের একটি ঘটনা তার জীবনতরীর দিকপথই পালটে দেয়।
দরিদ্র পিতার মৃত্যুর পর মা-ই ছিল আরজের একমাত্র আত্মীয়। স্বভাবতই তার মাতৃভক্তি ছিল অতুলনীয় এবং একমাত্র সন্তান হিসেবে আরজের প্রতিও মায়ের স্নেহ ছিল অত্যধিক। নিজের মা সম্পর্কে আরজের বক্তব্য ছিল, "আমার মা ছিলেন অসম্ভব ধর্মপরায়ণা এক মহিলা। কখনও এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দেয়া তো দূরের কথা, কাজাও করতে দেখিনি। এমনকি মাঘের প্রবল শীতের রাতেও তাকে তাহাজ্জুদের নামাজে সেজদারত অবস্থায় দেখতে পেতাম।"
এমন ধর্মপরায়ণা মায়ের ছত্রছায়ায় থেকে আরজের মধ্যেও ধর্মপ্রীতির বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে। হঠাৎ সেই মায়ের মৃত্যু আরজের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল। মাকে কবর দেবার আগে আরজ শহর থেকে ফটোগ্রাফার আনিয়ে মৃত মায়ের ছবি তুলে রাখল স্মৃতি হিসেবে। কিন্তু গ্রামের মোল্লাশ্রেণির লোকজন আরজের এই কাজের প্রতি সমর্থন যোগাতে পারেনি। ছবি তোলা হারাম বলে জানাজা না পড়িয়েই তারা চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে।
কিশোর আরজ অবাক হয়ে ভাবে, ছবি তোলা যদি দোষের হয়, তার জন্য সে নিজে দায়ী। কিন্তু সারাজীবনে নামাজ কাজা না করা তার এই পরহেজগার মায়ের কী দোষ ছিল?
পরবর্তীতে স্থানীয় অমুসলিমদের সাহায্য নিয়ে জানাজা পড়ানো ছাড়াই তার মায়ের দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। সেদিন মায়ের কবরের মাটি ছুঁয়ে আরজ প্রতিজ্ঞা করে, যদি বেঁচে থাকে তবে এইসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই-ই হবে তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত।
ছোটবেলায় গ্রামের পাঠশালায় শেখা সামান্য বর্ণপরিচয়কে পুঁজি করে তিনি পাঠ করে চলেন একের পর এক গ্রন্থ। কখনও লাইব্রেরি থেকে বেনামে ধার করে, কখনও অন্যের অব্যবহৃত বই হাত পেতে চেয়ে নিয়ে। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি অকপটে নিজেকে "চোর" এবং "ভিক্ষুক" হিসেবে স্বীকার করে গেছেন।
"পাঠক সমাবেশ" কর্তৃক প্রকাশিত রচনা সমগ্র ১-এ তার বেশ কিছু লেখা সংকলিত হয়েছে। প্রথমেই বলা যাক, "সত্যের সন্ধান" নিয়ে৷
সম্ভবত এটিই তাঁর সবচেয়ে আলোচিত বই। ধর্মের কিছু প্রচলিত বিশ্বাসকে তিনি আমূলভাবে করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। কোথাও জীবন-মন-আত্মা ও পরমাত্মার মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরে, কোথাও সহজ অথচ চিন্তালব্ধ প্রশ্নের উত্থাপন করে। যেহেতু মুসলিম সমাজেই তার জন্ম এবং আশেপাশে কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি; তাই তার এই গ্রন্থে ইসলামের অনেক ভিত্তিস্তম্ভকে তিনি করেছেন যৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে প্রসঙ্গত টেনে এনেছেন অন্যান্য ধর্মেরও যুক্তিহীন বিষয়গুলো।
পাকিস্তান সরকারের এক আইনজীবী এই গ্রন্থ রচনার কারণে তাকে কমিউনিস্ট সাব্যস্ত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করালে, তিনি নিজেকে "নির্দোষ" প্রমাণ করতে সক্ষম হন। কিন্তু বিনিময়ে এই বই বাজেয়াপ্ত হবার ঘটনা তাঁকে মেনে নিতে হয়।
বইয়ের শেষে তিনি অকপটে স্বীকার করে গেছেন নিজের অজ্ঞতার কথা। তার উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর জানানোর জন্য বিনয়ের সাথে আহবান করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের লেখককে। সুখের বিষয় এই যে, বিশ্বাসী জনতার একটি পক্ষ এখন "কলমের বিরুদ্ধে তরবারি" নীতি থেকে সরে এসে "কলমের বিরুদ্ধে কলম" নীতিতে প্রবেশ করেছে। যদিও এটা হওয়া উচিত ছিল আরও ২০/২৫ বছর আগেই।
তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধুবাদ জানাই। আরজ বেঁচে থাকলে হয়তো তাদের কলমের উত্তর কলম দিয়েই দিতে পারতেন। পাঠক হিসেবে সেই "কলমযুদ্ধ" দেখতে পারব না বলে একটা বিরাট আফসোস কিন্তু রয়েই গেল।
"সত্যের সন্ধান"-এর পরবর্তীতে যে গ্রন্থটি এই সমগ্রে সংকলিত হয়েছে, তার নাম " অনুমান"। অসম্ভব সুখপাঠ্য একটি বই। এখানে তিনি সত্যের সন্ধানের মত যুক্তিতর্কের বাড়াবাড়ি করেননি, নিয়ে এসেছেন কতগুলো অনুমান। যদিও সূক্ষ্মদাগে তার সেই অনুমানগুলো যুক্তিহীন নয়। কারণ যুক্তিহীন অনুমান মাত্রই কুসংস্কারের পূর্বশর্ত। এই গ্রন্থের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক লেখা হল "শয়তানের জবানবন্দী"। আমি আমার পাঠক জীবনে এমন অভিনব লেখা খুব কমই পড়েছি।
একজন অপরাধী যতই অপরাধ করুক না কেন, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। অন্ততপক্ষে তার বক্তব্যটা শুনে নিতে হয়। অথচ বিশ্বাসের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আমরা শয়তানের বক্তব্য না শুনেই তাকে ছুঁড়ে ফেলেছি ঘৃণার অতল সমুদ্রে। ব্যাপারটা কেমন না? কিছু "যৌক্তিক অনুমান" আর কল্পনার আশ্রয় নিয়ে আরজ আলী লিখে ফেললেন "শয়তানের জবানবন্দী" নামের এই অভিনব লেখাটি।
পুস্তকের পরবর্তী অংশগুলোতে তার ব্যক্তিগত জীবনসংগ্রামের ইতিহাস ফুটে উঠেছে তার নিজ লেখনীতে। বেদের ঐশ্বরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনি লিখেছেন "বেদ এর অবদান" রচনাটি।
বিজ্ঞান, সমাজ ও সভ্যতার বিবর্তন সংক্রান্ত কিছু অপ্রকাশিত লেখা জায়গা পেয়েছে পুস্তকের একেবারে শেষ অংশে। সর্বশেষে তুলে ধরা হয়েছে আরজ আলী ও তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের একসাথে তোলা বেশ কিছু আলোকচিত্র।
আরজ আলীকে পাঠক কীভাবে গ্রহণ করবেন সেটা একান্তই পাঠকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কথাটা অবশ্য বিনয় থেকে বললাম। নৈর্ব্যক্তিকভাবে বললে পাঠক আরজ আলীকে কীভাবে নেবে সেটা নির্ভর করবে পাঠকের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের তীব্রতা, পরিবার ও সমাজ থেকে যে "একমাত্র সত্য"র শিক্ষা পাঠক পেয়েছেন তাতে চোখবন্ধ করে নির্ভর করার প্রবণতা এবং সেই "একমাত্র সত্য" দ্বারা পাঠকের অবচেতন মন কতটা আচ্ছন্ন, তার উপরে।
আরজ আলী মাতুব্বরের প্রশ্নগুলো আমাদের ভাবতে বাধ্য করে।কোনটা সত্য আর মিথ্যা তা নিয়ে প্রশ্ন করতে এবং অন্ধভাবে সব মেনে না নিতে তিনি অনুপ্রাণিত করেন আমাদের কে। উনার প্রশ্নগুলো তে একটা শিশুর সারল্য এবং বিজ্ঞানীর যুক্তিনিষ্ঠতা আছে।তিনি সব কিছু নিয়েই শিশুর মতো বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন খাঁটি সত্যটা বিজ্ঞানীর মতো।' সত্যের সন্ধান' সত্যের সন্ধান সরাসরি না দিতে পারলে ও সত্য সন্ধানে অনেককেই আগ্রহী করে তুলবে। উনার 'অনুমান' গ্রন্থটি অসাধারণ, সাহিত্য কর্ম হিসেবে তো বটেই চিন্তা উদ্রেককারী হিসেবে ও।
আপানার বিশ্বাস এর জোর ঠিক কতখানি? কতটুকু যুক্তিই বা আছে আপনার বিশ্বাস এর স্বপক্ষে, কখনো প্রশ্ন করেছেন নিজেকে? লেখকের প্রশ্নে অগ্নিদগ্ধ হবে আপনার বিশ্বাস আর সেখানে পরে থাকবে ছাই অথবা খাঁটি সত্য। একদম প্রান্তিক সমাজ থেকে উঠে আসা এক স্বশিক্ষিত মানুষের জীবন দর্শন যে মুগ্ধ করবে আপনাকে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না
a simple man with his extraordinary knowledge . if you are a believer , i will recommended it ... if you are a atheist , you may find it more interesting than you think . whatever , just open your mind and take a deep breath before start to read ... you are going to face the bitter truth . :D
বইঃ আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র–১ লেখকঃ আরজ আলী মাতুব্বর প্রকাশনীঃ পাঠক সমাবেশ
আরজ আলী��ে আমরা কম বেশি সবাই চিনি। তার লেখনীর ভাষা এক কথায় অসাধারণ। তিনি তেমন শিক্ষিত না হলেও অনেক পড়াশোনা করেছেন নিজের ইচ্ছায়। এই বইটি ৩ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে৷ ১ম খন্ডে রয়েছে-অনুমান, সরণিকা, সত্যের সন্ধান, বেদের অবদান নামক বইগুলো... ১ম খন্ডেই তাঁর বেশির ভাগ লেখা রয়েছে। লেখাগুলো দর্শনববিষয়ক, ধর্মতত্ত্ব, ধর্মীয় বিভিন্ন লেখা সম্পর্কিত লেখা।
প্রথাবিরোধী ধর্মদর্শনের প্রাচীন ধারাবাহিকতার বাংলাদেশী রূপকার হলেন আরজ আলি মাতুব্বর। তিনি মনে করতেন পশু যেমন সামান্য জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে ধর্মবাদী ব্যক্তিগণও তেমনি সামান্য জ্ঞান নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। মেধার বিকাশ, মুক্তচিন্তা, মুক্তজ্ঞান, বিজ্ঞান চেতনা ইত্যাদি মুক্তবৌদ্ধিক মনোভঙ্গির বিপক্ষে ধর্মপ্রবণ ব্যক্তিগণ দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। তাই ধর্ম অনেকাংশেই মানুষের মানবিক বিকাশকে সমর্থন করে না; মুক্তবুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা, উদারতা, সহানুভূতিশীলতা, মানবিকতা প্রভৃতির প্রসার-প্রচারকে অনেকাংশেই সীমিত করে তোলে। তিনি জানেন সমাজের যথার্থ মুক্তি ঘটে একমাত্র বস্তুবাদী দর্শনের চর্চাতেই। নিজের প্রান্তিক জীবনের সাধারণ কয়েকটি ঘটনাতেই তিনি বুঝে নিয়েছেন তার ও তার সমাজের আচরিত ধর্মের স্বরূপ। ক্রমাগত গ্রন্থ পাঠে বুঝে নিয়েছেন এর কারণাবলী। এই অন্ধকারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। তাই তিনি অনবরত প্রশ্নবাণে দগ্ধ করেছেন তথাকথিত সমাজপিতা ও তাদের আচরিত-প্রচারিত ধর্ম ও দর্শনকে।
আবেগ নয়, তার বক্তব্যের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে যুক্তি। তার ওই যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো নিজের জোরেই এগিয়ে যায়; মুগ্ধ করে না, চিন্তিত করে। তার অসামান্যতা বহুজনের সামান্যতাকেই জানিয়ে দেয়। কিন্তু তাই বলে তার লেখার কোথাও যে কোনো দম্ভ রয়েছে তা নয়, বরঞ্চ আছে পাঠকের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের অভিপ্রায়। শিক্ষক নন, তিনি সঙ্গী। আমরা সংস্কৃতির কথা, সামাজিক অগ্রসরমানতার কথা বলি। কিন্তু আমাদের সমস্ত অর্জনের অভ্যন্তরে একটা দৈন্য থাকে। সেটা চিন্তার। যে জন্য, আমাদের সমাজে বিজ্ঞানকে দেখা যায় উপকরণ হিসাবে, দেখা যায় না দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসাবে। আরজ আলী মাতুব্বর বিজ্ঞানী নন, কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি বৈজ্ঞানিক এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সংস্কৃতি ও সমাজে খুবই প্রয়োজন।
আদেশ-নিষেধের নিগড় ভাঙার দলে যারা আছেন তাদের সাথে মনের অজান্তেই এক ধরনের আত্মীয়তা অনুভব করি। আরজ আলী ছিলেন তেমনই একজন। তাঁর বই পড়বার আগে যখন তাঁর সম্পর্কে জেনেছি, তাঁর লেখা সম্পর্কে নানাজনের মত শুনেছি তখনই তাঁর লেখা পড়ার আগ্রহ মনের মধ্যে আঁকিবুঁকি করছিল। ভেবেছিলাম এক দমকে সব শেষ করে ফেলব। কিন্তু প্রথম খণ্ড পড়তেই লেগে গেল অনেকদিন। এবং যতটা আগ্রহ নিয়ে শুরু করেছিলাম ততোটা আনন্দ আমায় ফিরিয়ে দেয়নি। উনি পড়েছেন সত্যি, জেনেছেন, সেটাও নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। তাঁর কৃতিত্ব কিন্তু যুক্তির ক্ষুরধার বৈশিষ্টের ভেতর নয়। তিনি যে সত্যকে জানতে চেয়েছেন, অনুভব করতে চেয়েছেন, সমাজের অসারতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন, ভন্ডামিকে আঘাত করতে চেয়েছেন - তাঁর অনন্যতা সেখানেই। জ্ঞানকে ধর্ম করে নেবার বিষয়টাই তাঁর থেকে আপন করে নেওয়া যায়। সত্যকে খোঁজার চেষ্টা তো মানুষ আদিকাল থেকেই করছে। সেটা কি আদৌ খুঁজে পাবে? তা আমরা জানি না। তাই খুঁজে পাবার মধ্যে নয়, খুঁজতে থাকার মধ্যেই জ্ঞানচর্চার মূল আনন্দ।
কথিত কথন এর উপর ভিত্তি করে, শাস্ত্র সম্মন্ধে প্রশ্ন করা নিতান্তপক্ষে বোকামী!
লেখক চার ক্লাশ অব্ধি বিদ্যাপিঠে পড়াশুনা করেন পরক্ষনে, আপন জ্ঞানের ক্ষুধাতে বরিশালের লাইব্রেরী এবং অনেক গুনি ব্যাক্তিদের মুখবন্ধ নিয়ে জ্ঞান আহোরন করেন।
"বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী আছে, জ্ঞানের কোনো ডিগ্রী নায়। জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন ও সীমাহীন।
ইসলাম শাস্ত্র নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন শুধু শোনা কথা দিয়ে, যা একজন প্রগতিশীল লেখকের কাছে অবাঞ্চনীয়।
লেখকের অভিমত, "লাইব্রেরী মসজিদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ"
মাতুব্বর সাহেব তিনার মায়ের কবর দেন ইট দিয়ে বাধিয়ে শান করে, মাটির সংস্পর্শ বীহিন!
বইটি আস্তিক-নাস্তিক সবার পড়ার মতো। লেখক অনেকগুলো মূল্যবান যুক্তি তুলে ধরেছেন যেগুলো সেসময়ের গতানুগতিক নাস্তিকরা এড়িয়ে গেছেন। বইটির তথ্যের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও যুক্তির ক্ষেত্রে বইটি কালোত্তীর্ণ। রিচার্ড ডকিন্স অথবা বার্ট্রান্ড রাসেল খ্রিস্ট ধর্মের বিরুদ্ধে যতটা বলেছেন, আরজ আলী তারচেয়ে অনেক গভীর যুক্তি দিয়েছেন ইসলাম আর হিন্দু ধর্মের বিপক্ষে।
একজন কৃষক হয়েও নিজ উদ্যোগ নিয়ে যেভাবে পড়াশুনা করেছেন,তা অকল্পনীয়। মানুষের জন্য ভেবে নিজের বডি মেডিকেলে দিয়েছেন।বৈজ্ঞানিক ভাবে সবকিছুর ব্যাখ্যা করেছেন।খুবই স্বশিক্ষিত মানুষ ছিলেন।
একজন বিক্ষুব্ধ এবং জিজ্ঞাসু মনের নানা প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর তিনি আলেমগনের কাছে আশা করেছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে ধর্মকে যৌক্তিক করার জন্য এগুলোর যথাযথ উত্তর তৈরি করা যেতে পারে।
গ্রামে জন্ম নেয়া একজন মানুষ,যার কিনা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের খুব একটা সুযোগ হয় নি,এরকম একটা মানুষের চিন্তাভাবনা এতটা অবিশ্বাস্য রকমের স্পষ্ট! আমার মতে বাংলাদেশের অন্যতব সেরা দার্শনিক হিসবে তাকে অবশ্যই বলা যায়