প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের জ্ঞান সাহিত্য-সিনেমা কিংবা অভিজ্ঞতা নির্ভর। কেউ কেউ এর সাথে যৌনতার ফ্রয়েডীয় প্রাক-বৈজ্ঞানিক কল্পনানির্ভর তত্ত্ব জুড়ে এক ধরনের যুক্তিও দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও অন্যসব প্রাণিদের মতো মানুষ যেমন ক্ষুধা-ভয়- স্নেহ ও নিরাপত্তাবোধের মতো বিষয়গুলোতে বিবর্তন-প্রভাবিত প্রাচীন আচরণ করে; তেমনি করে বংশ-বিস্তারের ক্ষেত্রেও। আর যেকোনো প্রাণীর বংশবিস্তারের প্রস্তুতিটাই হলো বিপরীত লিংঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কিংবা সম্পৃক্ততার তাড়না। যাকে মানুষের ক্ষেত্রে বলা হয় ভালোবাসা কিংবা প্রেম...
ভালোবাসা প্রভাবিত হয় ব্যক্তির মানব-প্রকৃতি দ্বারা। আর মানব-প্রকৃতি গঠনে পরিবেশ থেকেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে জিন বা বংশাণু। মানবপ্রকৃতি গঠনে পরিবেশের ভূমিকা সম্পর্কে সবাই কিছু না কিছু ধারণা রাখলেও বংশাণুর ভূমিকা বেশিরভাগের কাছেই অজ্ঞাত। মানব-প্রকৃতি গঠনে এই জ্ঞাত আর অজ্ঞাত বিষয়গুলোকে বিজ্ঞানের যে শাখাটি একসাথে আলোচনা করে তা হলো- বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান; যা বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান আর বৌদ্ধিক মনোবিজ্ঞানের সমন্বয়ে তৈরি তুলনামূলক নতুন একটি শাখা...
অভিজিৎ রায়ের ‘ভালোবাসা কারে কয়’ বইটি সাবলীলভাবে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে যেমন আলোচনা করেছে; তেমনি প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত আচরণে বিবর্তনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেছে খুবই প্রাঞ্জল ভাষায়। যাদের বিবর্তন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা নেই তারা যেমন এই বইটি পড়ে সহজে বুঝতে পারবেন; তেমনি প্রেম সম্পর্কে যাদের নিজস্ব কোনো দৃষ্টিভঙ্গী নেই তারাও বুঝে নিতে পারবেন প্রেমের বিজ্ঞান...
[Dr. Avijit Roy is a Bangladeshi-American blogger, published author, and prominent defender of the free thought movement in Bangladesh. He is an engineer by profession, but well-known for his writings in his self-founded site, Mukto-Mona—an Internet congregation of freethinkers, rationalists, skeptics, atheists, and humanists of mainly Bengali and South Asian descent. As an advocate of atheism, science, and metaphysical naturalism, he has published eight Bangla books, and many of his articles have been published in magazines and journals. His last two books, Obisshahser Dorshon (The Philosophy of Disbelief) and Biswasher Virus (The Virus of Faith), have been critically well-received and are popular Bengali books on science, skepticism, and rationalism. }
লেখক হবার কোন বাসনা ছিলো তা নয়। কিন্তু ছোট্ট একটা স্বপ্ন হয়তো ছিলো একটা মনের গহীনে। স্বপ্নটা পালটে দেবার। সেই পালটে দেবার স্বপ্ন থেকেই ২০০১ সালের দিকে একদিন সমমনা কয়েকজন লেখকদের নিয়ে তৈরি করে ফেললাম মুক্তমনা সাইট (www.mukto-mona.com)। এর পর থেকেই সাইটটির বিস্তৃতি বেড়েছে। এখন বাঙালি বিজ্ঞানকর্মী, যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদীদের কাছে মুক্তমনা একটি বিশ্বস্ত নাম। ২০০৭ সালে মুক্তবুদ্ধি, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্যক অবদান রাখার প্রেক্ষিতে তার মুক্তমনা সাইট অর্জন করেছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক।
শখের বশে টুকিটাকি লেখা লিখছিলাম ইন্টারনেটে, ম্যাগাজিনে আর দৈনিক পত্র-পত্রিকায়। পছন্দের বিষয় প্রথম থেকেই ছিলো আধুনিক বিজ্ঞান এবং দর্শন। আমার সেসময়ের চিন্তাভাবনার গ্রন্থিত রূপ ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫)। এরপর একে একে অনেকগুলো বইই বের হয়েছে। তার মধ্যে, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭, পুনর্মুদ্রণ ২০০৮), স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮), সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০,পুনর্মুদ্রণ ২০১৩), অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১, দ্বিতীয় প্রকাশ: ২০১২, তৃতীয় প্রকাশ: ২০১৪), বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২), ভালবাসা কারে কয় (২০১২),এবং শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪: প্রকাশিতব্য)। পাঠকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, বইগুলো পাঠকদের ভাল লেগেছে। অনেকেই বইগুলোকে ‘ব্যতিক্রমী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, কেউবা আবার আগ বাড়িয়ে বলেছেন ‘মাইল ফলক’। তা যে ফলকই হোক না কেন, আমি এই বইগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখে একটি ব্যাপার বুঝতে পারি যে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী ও সাধারণ মানুষেরা বিজ্ঞান বিমুখ নয় মোটেই, নয় দর্শনের প্রতি অনাগ্রহীও। ভাল বই তাদের আগ্রহ তৈরি করতে পারে পুরোমাত্রায়।
পেশায় প্রকৌশলী। পড়াশুনা করেছি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট), পি.এইচ.ডি করেছি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে (এন.ইউ.এস)। বর্তমানে আমেরিকায় কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত । অবসর সময় কাটে বই পড়ে, লেখালিখি করে, গান শুনে, জীবনসঙ্গিনী বন্যার নিয়মিত বকা খেয়ে, আর নিঃসীম আঁধারে আলোকিত স্বপ্ন দেখে - ‘মানুষ জাগবে তবেই কাটবে অন্ধকারের ঘোর’...
আমরা কোনো প্রিয়জনকে বলি আমি তোমাকে ভালবাসি, এই ভালবাসা জিনিসটা কি??আসছে কি করে আমাদের জগতে??প্রাণিজগৎ এ এর অস্তিত্ব আছে কি না??এই বই এ এর বিস্তৃত আলোচনা আছে। তাছাড়া আছে বিবর্তন এর মাধ্যমে আমাদের মনোজগৎ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে,মানবদেহে স্বার্থপর জিন থাকা মানেই কি আমরা জন্মগত শুধুই কি স্বার্থপর,ভালোবাসা, সহমর্মিতা কি শুধু স্বার্থের জন্যই।এই বই এ অনেক বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
Evolutionary Psychology এর মত একটা বিষয়কে সহজপাচ্য করে লেখা বেশ কঠিন।লেখকের সে গুণটা ছিল(হায়,পাস্ট টেন্সে লিখতে হচ্ছে..)
ঝরঝরে বর্ণনা,দ্রুতই পড়ে ফেলা যায়।মনোবিজ্ঞানের কিছু প্রধান বিষয়কে বিবর্তনবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় এটা শুনেছি আগেই,এই বই পড়ে ধারণাটা একটু পরিষ্কার হল।
ব্লগে লেখার সংকলন বলে বৈঠকি আলোচনার ভাবটা রয়ে গেছে।বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার অনিবার্য একঘেয়েমি এড়াতে এটা কিছু ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল,কিছু ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুকে একটু লঘু করে দিয়েছে মনে হল।
বাংলায় 'বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান' নিয়ে এর পূর্বে এমন বই কেউ লিখেছে বলে জানা নেই।
এই বইয়ের প্রতিটা লাইনই নোট করে রেখে দেওয়ার মতো। শিম্পাঞ্জি আর গরিলা সমাজের যৌন-সমাজ সম্পর্কীত আলোচনাগুলো ছিল বেশ চিত্তাকর্ষক। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি, ইখ্নিউনেন (Ichneumon) নামের বোলতার প্রজননের সময় তাদের হিংস্রতার পরিচয় সম্পর্কে জেনে।
আর মানুষের প্রেমে পড়ার পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তো আছেই। :-D যাদের বিজ্ঞান আর বিবর্তন নিয়ে সত্যিই আগ্রহ আছে, ৩৭৭ পৃষ্ঠার এই বইটা পড়লে তাদের সময় যে বিফলে যাবে না, সেই নিশ্চয়তাটুকু নির্দ্বিধায় দিতে পারি! (:
প্রেম ভালোবাসাকে বরাবরই রহস্যময় একটা প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে দেখে শুনে অভ্যস্ত আমরা। অথচ এই স্বাভাবিক ঘটনাটার ও পিছনে আছে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের হাত।
লেখকের মতে, বাইরে অনেক বদলালেও ভেতরে ভেতরে ছেলেরা সেই পেখমওয়ালা ময়ূরই রয়ে গেছে। যারা সারাজীবন ভারী, রঙচঙে পেখমখানা বয়ে চলে ময়ূরীকে আকর্ষণ করতে। এমনকি পিতৃতন্ত্রের মূলও সেই একই বিবর্তনে। ওয়ার্নিংঃ কোন কিছু 'প্রাকৃতিক' মানেই সেটা উচিত হয়ে যায় না।
প্রচুর রেফারেন্স দেয়া বইয়ে, সময় পেলেই ঘাঁটাঘাটি করার ইচ্ছা আছে। যেহেতু দু হাজার এগারো সালে লেখা, এতদিনে নিশ্চয় অনেক আপডেট এসেছে রিসার্চে।
নিজের জীবন, কার্যকলাপ, সমাজ, ধর্ম, যৌনতা সমস্ত কিছু নিয়ে বরাবরই আমার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন খেলা করে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ছিল না, থাকলে এইসব প্রশ্নের অনেক গুলোরই উত্তর আগে পেয়ে যেতাম। নিজেকে ও সমাজকে আরো স্পষ্টভাবে বিশ্লেষন করতে পারতাম। বইটা যে মনোবিজ্ঞান ধাচের কিছু হবে ভাবি নি, বইয়ের নাম টা রবীন্দ্রনাথের একটা গানের খুবই থটফুল একটা লাইন থেকে নেয়া। তাই ভাবলাম দেখি বই এর ভিতরে কি আছে। ভিতরে যতই পড়তে শুরু করলাম, বইয়ের বিষয়বস্তুর ব্যপকতা আমাকে ততই মুগ্ধ করতে থাকল। অসাধারন বই, বাংলা ভাষাতে বেশ বিরল, আশা রাখি মানুষ মুক্ত বুদ্ধির পুজো করা শিখবে, সমস্ত কিছু কে প্রশ্ন করার সৌন্দর্য কে উপভোগ করবে।
সমাজে অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, অসহিষ্ণুতা, নাস্তিকতা ও উগ্রতা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক বই চমৎকার ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এক চিমটি বিজ্ঞানের সাথে দুই চা চামচ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (Sci-fi) এবং এক গ্লাস ইসলাম-বিদ্বেষ মিশিয়ে জোরসে একটা ঝাকুনি দিলেই প্রস্তুত হয় একেকটা বিজ্ঞানধর্মী গ্রন্থ!!