বিষয় যদি হয় কলকাতার মতো সজীব এক চরিত্র, আর লেখক যদি হন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের মতো সরস এক ব্যক্তিত্ব, তাহলে দুইয়ে মিলে যে কী হয় তারই মধুরতম প্রমাণ ‘কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই’। এর আগে আমরা অনেকের নগরদর্শন পড়েছি, কিন্তু, না বললেও চলে, সঞ্জীবের দেখার ভঙ্গি এবং বর্ণনার রম্যতা একেবারেই আলাদা। তিনিই পারেন এই শহরের বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির মানুষগুলোর ছদ্ম পোশাক সরিয়ে আসল চেহারাটা টেনে বার করতে, পৌরাণিক ছায়াছবিতে দেখানো দেবদেবীর স্বর্গ থেকে মর্ত্যাবতরণের সঙ্গে লিফটের তুলনা করতে, অন্ধকার সাপ্লাই করপোরেশনের আত্মসাফাই রচনা করতে। অসংখ্য বিচিত্র বিষয় নিয়ে আড্ডার মেজাজে অনিঃশেষ কৌতুক সৃষ্টি করতে। তবে কিনা শুধুই হাসির খোরাক নয় এ-সব রচনা। হাসির সঙ্গে একটু জ্বালা, ভিত-নড়া কলকাতার জন্য একটু হাহাকার, আমরা কোথায় চলেছি আর কীভাবে তা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ আশ্চর্যভাবে মিশিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাতায় পাতায় দেবাশীষ দেবের ব্যঙ্গচিত্র।
Sanjib Chattopadhyay (Bengali: সঞ্জীব চট্ট্যোপাধ্যায়) (born February 28, 1936 in Kolkata) is a Bengali novelist and writer of short stories. His style is characterised by use of short satirical sentences mixed with very lively language.
Childhood and education: Sanjib Chattopadhyay spent his childhood in the hilly terrain of Chota Nagpur Plateau under the care of his father after his mother died when he was five. They relocated to Calcutta and he was admitted to Victoria Institution school which he joined at grade seven. He later went to Scottish Church College, Calcutta where he studied chemistry.
Work: The subjects of his fiction are mostly families living in Calcutta city. Within the confines of these homes, he challenges the moral values of the fast-changing middle class of the city. Chattopadhyay frequently uses old men as his protagonists. These aged characters create the spiritual and philosophical edge found in his novels Lotakambal (The Blanket and Quilt) and Shakha Prasakha (Branches). His most famous novella Swetpatharer tebil (The Ivory Table) is an example of his characteristic style of story-telling which mixes tension, dilemma, curiosity, pity, humor, and satire. He has written fiction for children and continues to write for magazines and newspapers. Chattopdhyay current writing is related to Ramkrishna Paramhansa, Sarada Devi and Swami Vivekananda. Some of his major works apart from the above mentioned are: পরমপদকমলে (At His Divine Feet) ক্যান্সার (Cancer) দুটি চেয়ার (Two Chairs) রসেবশে রাখিস মা রসেবশে বেশ আছি রসেবশে তুমি আর আমি (You And I) একে একে (One By One) কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই (Calcutta Is In Calcutta) Apart from that his notable juvenile literature includes রুকু-সুকু, বড়মামা-মেজমামা series which are fun-filled and analyse various philosophical aspects of life through the eyes of children.
Awards: Chattopadhyay is the recipient of the Ananda Puraskar in 1981 and the Sahitya Academy Award for his book শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন in 2018.
কলিকাতার হলদে মিনিবাসের টঙে চড়ে বসেছিলাম। ভেবেছিলাম প্রাণ খুলে হাসবো। তা হাসলাম বটে। তবে হাসতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়লাম এই প্রথম। বইটি নিয়ে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ করে উঠলাম যেন।
ওদিকে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ভীষণ প্রিয় লেখক। প্রিয় মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য হয়েছে এই বছরেই। সেই নিরিখে, ওনার কিশোর ও আধ্যাত্মিক লেখাগুলোর বাইরে বেরোনোই হয়নি। ওনার তথাকথিত সব সেরা রচনাগুলো বহুদিন ব্রাত্য। বলাই বাহুল্য, রম্য বিনা সঞ্জীব অধরা। আমি আবার মানুষটা রামগরুড়ের পো। রম্যরচনায় আকাট নভিস। খায় না মাথায় দেয়, কিছু না বুঝেই এই বইটি তোলা। অক্কা পাওয়াটা স্বাভাবিক।
লেখকের ট্রেডমার্ক রসিকতা সিক্ত এই পুঁচকে লেখাগুলো তো আর ঠিক গদ্যগল্প নয়। সেই আশা করে এগোনোও অনুচিত। তবে বাদ সাধে, ওনার লেখনীর প্রকৃত ধরন। ছোট ছোট বাক্য। এলোপাথাড়ি বিন্যাস। খেয়ালী, অস্থির, ভ্রমন্ত সব হাসির খোরাক। যেন কালিপটকার চেইন। কোনো নবীন পাঠকের কাছে মাঝরাস্তায় বাম্পার-সম। এই জিনিস বুঝি কেবল উনিই লিখতে পারেন। এ জিনিসের দোষ-গুণ বিচার পাঠক মাত্রেই ভিন্ন হবে, সেটা আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না।
তবে এটুকু প্রতিকূলতা এড়াতে পারলে এই বই আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না, আমার বিশ্বাস। বরং এই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা। আমরা যারা ওই সুবিশাল মহানগরীটির প্রতি কিছুটা হলেও ঋণী। বা অভিমানীও বলতে পারেন। তাদের কাছে বইটির ছোট লেখাগুলোতে আত্মউপলব্ধি মিললেও মিলতে পারে। সময়ের নিরিখে হয়তো লেখাগুলো বয়স ভারে ন্যুব্জ। কারণ যুগটা অনেকদিন হলো বদলে গেছে। তবুও, বাঙালিরা আজও অমলিন। রয়ে গেছে কলিকাতা চলন্তিকা।
এই শহর ও শহরের মানুষগুলোর মননে অবস্থান করেছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। আঘাত হেনেছেন। চিরে ফালাফালা করেছেন মনের সুখে। বাঙালি মানেই যে ভ্রান্তিবিলাস। এই শহরের দা রিচ গেটস রিচার আর দা বেঙ্গলিস গেট ফ্যাটার। চাটুকারিতা ও চাকর মনোভাবে ভর দিয়ে একটা গোটা জাতি গোল্লাপাক দিয়ে গেলো সারাটা জীবন। সব নিপাত যাক। বেচে থাক লোডশেডিং, গাড্ডা ও রবিবারের জলখাবার।
ঐযে গোখলে বলেছিলেন? হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস্ টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস্...ওই আঁকড়ে ধরে (রাদ্যার খামচে ধরে) ঝুটো মহত্ত্বের আবেশে ফুরিয়ে গেল... থুড়ি, যাচ্ছে কতশত জীবন। এইতো। সময়টা বদলেছে কেবল, মানুষগুলো যেন সেই একই। শহরটাও আছে নিজের মাঝেই। স্রেফ বুড়িয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।
লেখক পৃথিবী দেখেছেন অনেক, সেই নিরিখেই এহেন রঙ্গ-রসিকতা। মানা না মানা, সবটাই আপনার ওপর, হে পাঠক। কিন্তু পারলে পড়তে পারেন। অসাধারন লাগবে না, এখনই বলে রাখছি। তবে সূক্ষ জোকসের অলিন্দে সমাজচিত্র ও মানুষ-মনের খোজখবর জানতে হলে, এসব বইয়ের দরজায় না দাড়িয়ে উপায় কি? বলতে ক্ষতি নেই, কিছু লেখা পরে বেজায় বিরক্ত হয়েছি। কিছু পড়ে বোর। আবার কিছুটা পড়ে মুচকি হেসে গালে বেজায় ব্যথা। যুদ্ধই বটে। নতুন করে লেখকের সাথে পরিচিত হওয়ার (অ)সহজ উপায়। সমগ্রের বাইরে, খোলা বই হিসেবে পড়তে পারেন। দেবাশীষ দেবের মজাদার অলংকরণগুলো সেখানে বাড়তি পাওনা।
১. এই বইয়ের ৩১টি লেখার কোনোটিই গল্প নয়। সবই রম্যরচনার মুখোশ পরা মুক্তগদ্য। ২. এদের প্রতিটিই গত শতাব্দীর আটের দশকের কলকাতার বাসিন্দা নাগরিক নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালির হাহাকার ও ক্রোধের যথাসম্ভব তির্যক প্রকাশ। ৩. লেখাগুলোর মধ্যে ন্যূনতম স্নিগ্ধতা বা সরসতা নেই। আছে শুধু পরশ্রীকাতর, ওপরচালাক এক মর্ষকামী মানসিকতা। আনন্দ-র সেই অপ্রতিহত যুগে এইরকম মিসোজিনিস্ট, রেসিস্ট, জিংগোইস্ট লেখাকে রম্যরচনা বলে চালানো গেছিল— সে-ও আবার যথেচ্ছ ভঙ্গিতে বাক্যগঠনের মাধ্যমে। এখন লিখলে কপালে দুঃখ ছিল। এর তুলনায় 'কাণ্ডজ্ঞান' পড়লে এখনও প্রচুর আনন্দ পাওয়া যায়।
কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় আনন্দ মম: ১২৫/-
আদ্যোপান্ত রম্য রচনা। যারা কৌতুক-রস খুঁজছেন তারা এই বই পড়ে হতাশ হবেন। satire এ ভরপুর এই বইটি ৭০-৮০-৯০ দশকের কলকাতা আর কলকাতাবাসীদের নিয়ে।
আমি বলতে পারি এরকম রম্য রচনা আমি এর আগে পড়িনি। এতো দ্রুতভাবে লেখার বিষয়বস্তু এগিয়েছে, মাঝে মধ্যে সামঞ্জস্যতা হারিয়ে ফেলেছি। কিছু জায়গায় বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু থেমে থাকলে আর এগোতে পারবেন না। continuity না রাখলে এই বইটি শেষ করতে সময় লাগবে। একবার পড়া শুরু করলে ওই flow বজায় রেখে যতটা সম্ভব পড়ে যেতে হবে, তাহলে লেখক যে রম্য ধারণা মাথায় রেখে লিখেছেন সেটা আপনার মধ্যেও বজায় থাকবে।
আমার ভালো লেগেছে বইটি পড়ে। তবে লেখার ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে অস্থিরতা, দুর্বোধ্যতা পড়ার প্রতি একটা অবহেলা আনছিলো। বইটি, line by line পড়ে মানে বুঝতে চাওয়ার চেয়ে পুরোনো কলকাতার খোলনলচে রম্য-ভাবাবেগে অনুধাবন করাতেই বেশি উপযোগী।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এই গ্রন্থে বাঙ্গালী বিশেষত কলকাতা নিবাসীদের মূলত ৭০এর দশকের ( সম্ভবত) রোজনামচার বিবরণ দিয়েছেন, যার অনেকটাই এখনো মেলে যদিও। তার বিবরন অনুযায়ী, বাঙ্গালী তার বর্গফুটের ফ্ল্যাটে কখনো নিজেকে সিরাজউদ্দৌলা মনে করছে, কখনো নিজের সঙ্গে বরাহ কিংবা ছাগলের তুলনা করছে, কখনো গ্রীষ্ম বর্ষা অথবা শীতের রূঢ়তা তাকে ভোগাচ্ছে কিংবা ভাবাচ্ছে, কখনো বা বসন্তের প্রেম তাকে ভোলাচ্ছে, কখনো দুর্ব্যবহারের যোগ্য জবাব না দেওয়ার আফসোস, কখনো দুধে ঘিয়ে সংসার লালনপালনের নামে তাকে দুর্বল করার আফসোস, কখনো আবার গরির মানুষদের ignore করার আফসোস, কখনো আবার ঐতিহাসিক যুগের মনীষীদের নাম ভাঙিয়ে গর্ব - এই সবই বাঙ্গালীর মুখের সামনে আয়না ধরার মতো। তবুও writing style বা content , কোনোটাই আর বোধগম্য হচ্ছে না, so I couldn't read more than half of the book.