Jump to ratings and reviews
Rate this book

ফুড কনফারেন্স

Rate this book

104 pages, Hardcover

First published January 1, 1944

43 people are currently reading
545 people want to read

About the author

Abul Mansur Ahmed

18 books75 followers
Abul Mansur Ahmed (Bangla: আবুল মনসুর আহমেদ) (1898–1979) was a Bangladeshi politician and journalist. His political career helped him writing political satire. He is the most famous political satirist in Bangla literature.

He was honored with Bangla Academy Award in 1960 and Swadhinota Dibosh Padak (Independence Day Medal) in 1979. Tahmima Anam is his granddaughter.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
176 (49%)
4 stars
135 (37%)
3 stars
39 (10%)
2 stars
5 (1%)
1 star
2 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 64 reviews
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
October 13, 2020
সাদাসিধে কথায়, “ফুড কনফারেন্স” নামক স্যাটায়ার রচনায় আবুল মনসুর আহমদ বাঙালি জাতিতত্ত্বের ল্যাজে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। হনুমান লেজে আগুন নিয়ে লঙ্কাপুরী তোলপাড় করার মতই বইয়ের প্রতিটা গল্পের প্রখর তেজ বাঙালির জাতিতত্ত্বের ব্যবচ্ছদের সনেট রচনা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর বাংলায় খাদ্যর অভাবে দুর্ভিক্ষের সময়কালে রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় মানুষের নৈতিক চেতনা বর্জিত বিবেক, স্বার্থন্বেষী মনোভাব, চাতুর্যতা, কূটবুদ্ধির কলাকৌশল, অসৎ চিন্তাভাবনা, ক্ষমতার লোভ এবং অপব্যবহার, দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতার চিত্র ব্যঙ্গরসের মাধ্যমে আবুল মনসুর আহমদ শিল্পনৈপুণ্য “ফুড কনফারেন্স” বইয়ের নয়টি গল্পে অনবদ্যভাবে পরিবেশন করেছেন।

গ্র্যান্ড হোটেলে ফুড কমিটির বৈঠক বসেছে।দেশজুড়ে হাহাকার পড়েছে, কারণ খোরাকির অভাব। রাস্তাঘাটে অভুক্ত কঙ্কালসার মানুষদের আর্তনাদ এবং ফুটপাতে লাশের মিছিলে ভদ্রলোকদের স্বাধীন চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। তাই শেরে-বাংলা, মহিষে-বাংলা, সিংগিয়ে-বাংলা, কুত্তায়ে-বাংলা, গাধায়ে-বাংলা, শিয়ালে-বাংলা প্রভৃতি নেতাদের বৈঠকে খাদ্য সমস্যা সমাধানের আলোচনা হবে। কিন্তু বৈঠকে ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ে দুইপক্ষের আলোচনা-সমালোচনা, রাজনৈতিক বিতর্ক এবং ভরপেট ভোজনবিলাসের ভীড়ে খাদ্য সমস্যার কথা অহেতুক বিষয়বস্ত হয়ে উঠে। তাই ‘ফুড কন্সফারেন্স’ নামক গল্পের শেষে দেখা যায় দুর্ভিক্ষে করুণ পরিণতিতে দেশের সব মানুষ মারা যায় আর ছাগলে-বাংলা বলে উঠে পশু-এ-বাংলা জিন্দাবাদ আর মানুষ-এ-বাংলা মুর্দাবাদ। ‘’সায়েন্টিফিক বিযিনেস” আপাদমস্তক হাস্যরসে পরিপূর্ণ অসৎ লোভী ব্যবসায়ীদের গল্প। আচার্য প্রফুল্লচদ্র রায়ের পরামর্শে কেরানি আর চাপরাশির চাকরিতে অভ্যস্ত বাঙাতি জাত তেজারতি ব্যবসায় উদ্যোগী হয়ে উঠে। কিন্তু ব্যবসার নামে ভয়াবহ অর্থলোভ এবং অসততার পরিণামে বাঙাল জাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই বলে পরকালেও তাদের ব্যবসা থেমে থাকে না। বাঙালিরা জাহান্নামে পতিত হওয়ার পরেও প্রহরীদের ফাঁকি মেরে বেহেশত-দোজখে মানুষ আদানপ্রদানের ব্যবসা শুরু করে দেয়। “এ.আই.সি.সি” ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা বিভিন্ন সমিতির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্নমূলক রচনা।‘লঙ্গরখানা’ গল্পেও সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীদের চাল মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি প্রকটভাবে ধরা দেয়। “রিলিফ ওয়ার্ক’’ গল্পটি খুব সম্ভবত কলেজের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। বন্যাদুর্গতের জন্য ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতার নিষ্ঠুর এবং বাস্তব চিত্র। সাধারণ জনগণরা যেখানে রিলিফের দুমুঠো চালডাল পেয়ে খাদ্য অভাবে ভুগতে থাকে, সেখানে সমাজের উঁচু পর্যায়ের মানুষরা প্রভাব খাটিয়ে কয়েক বস্তা চালডাল নিজের জন্য তুলে আনে। ‘সায়েন্টিফিক বিযিনেস’ গল্পের পরে ‘রিলিফ ওয়ার্ক’ সবচেয়ে ভালো লেগেছে। বইয়ের অন্যন্যা গল্প ‘’গ্রো মোর ফুড’’, ‘’মিছিল’’, ‘’জমিদারি উচ্ছেদ’’ গল্পগুলোতে পর্যায়ক্রমে খাদ্য সমস্যা কৃষকদের উপর চাপানো, আদালতে আইনব্যবস্থার ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে আসামীর জামিন, নিজের স্বার্থান্বেষী ক্ষমতালোভী নেতাসহ সমাজের নানা অসংগতি আবুল মনসুর আহমেদ চমৎকারভাবে রম্যরচনার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। শেষের গল্প ‘’জনসেবা য়ুনিভার্সিটি’’ বইয়ের অন্যতম উৎকৃষ্ট লেখা৷ জনসেবার নামে ক্ষমতালোভী এক সেবক মন্ত্রালয়ের উচ্চ থেকেও উচ্চতর পর্যায়ে যেয়ে বিস্তার ক্ষমতার আসন গড়ে বসে। সে ইয়াকুব থেকে হয়ে যায় লর্ড জ্যাকব! কিন্তু জনসেবা শুধুই যেন কাল্পনিক কোনো শব্দ।

অন্নদাশংকর রায় বলেছেন, ‘’আয়না লিখিয়া আবুল মনসুর প্রাতঃস্মারনীয় হইয়াছিলেন আর ফুড কনফারেন্স লিখিয়া তিনি অমর হইয়া গেলেন”। বক্তব্যটি আক্ষরিক অর্থেই সত্য। নিঃসন্দেহে, ‘’ফুড কনফারেন্স’’ আমাদের রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক কাঠামোর প্রতি কঠোর চপোটাঘাত। সেই আশি বছর আগের এইসব রাজনৈতিক চালচিত্র বর্তমান সময়ের সাথে সমান্তরাল প্রাসঙ্গিকতা আমাদের করুণ সামাজবাস্তবতাকে সত্যিকার অর্থেই ক্রুশবিদ্ধ করে। সবার জন্য রেকমেন্ডেড। শেষে করব বইয়ের সেরা লাইনটা দিয়ে, “ ইনসাফের মালিক কঠোর ভাষায় বললেন, বাঙালি জাত যেখানে যেখানে বাস করেছে, হাইজেনিক মেযার হিসাবে সেসব জায়গায় বেশ করে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দাও!” (মারহাবা)
Profile Image for Zahidul Choyan.
82 reviews20 followers
May 17, 2017
বাংলাভাষায় স্যাটায়ার খুব খুব কম লেখা হয়। স্যাটায়ার কালচারটা কেনো যেন এই ভাষায় সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ফুড কনফারেন্সকে আমি আমার পড়া সেরা বাংলা স্যাটায়ার সমগ্র বলবো। বইটির বেশীর ভাগ গল্পই ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে। হাস্যরসাত্মক ব্যঙ্গবিদ্রূপের মাধ্যমে আবুল মনসুর আহমেদ এই বইয়ে বাঙ্গাল হিন্দু-মুসলমানের জাতীয় চরিত্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। জাতিগতভাবে আমরা কতটা নীচ এবং আমাদের মন-মানসিকতা কতটা হীন, তা ফুটে উঠেছে প্রতিটি গল্পের প্রতিটি লাইনে। নিজেকে নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা, সব রেখে কেবল নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করা, ভবিষ্যতের কথা না ভেবে কেবল বর্তমানের আয়েশের জন্যে সব ধ্বংস করে ফেলা - হাজার বছরের বাঙ্গাল চরিত্রের কি নেই এখানে !
"সায়েন্টিফিক বিযিনেস" গল্পের শেষ লাইনটি এখানে উল্লেখ না করে পারছিনা, "বাঙ্গালি জাত যেখানে যেখানে বাস করেছে, হাইজিনিক মেযার হিসেবে সে সব জায়গায় বেশ করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দাও।"
Profile Image for Ruhshan Ahmed Ahmed.
Author 1 book21 followers
February 9, 2018
পড়লাম, পড়ে আনন্দ পেলাম। হাসির ছলে বাঙ্গালির জাত গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ব্লিচিং পাউডার ঢালা হলো। তবুও আনন্দ পেলাম।
Profile Image for Injamamul  Haque  Joy.
100 reviews115 followers
May 23, 2021
—আইচ্ছা কন তো দেহি, দুনিয়ার সবতে বড় দ্বিষৎ ক্যাডা?
—নোলা রে, নোলা।

নয়টা গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে বই। সবগুলোই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলার খাদ্য সংকট নিয়ে। প্রতিটি গল্পে লেখক মহোদয় ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে তুলে ধরেছেন বাংলার আপামর জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভাবে হাহাকার। তুলে ধরেছেন সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভ, নীতিনৈতিকতাহীনতা, দূর্নীতি আর বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি। ও হ্যা মনসুর সাহেব— কুত্তায়ে-বাংলা, গাঁধায়ে-বাংলা, মহিষে-বাংলা, শেয়ালে-বাংলা, খাটাসে-বাংলারা এখনো মরে নাই, টিকে আছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এখনো চলছে ফুড কনফারেন্সের নামে মানুষে-বাংলা নিধনের উৎসব। এখনো চলছে 'গ্রো মোর ফুড' এ বীজ বোনা। সে যুগে যেমন বইটা প্রাসঙ্গিক ছিলো, এ যুগে তেমনি প্রাসঙ্গিক আর একশো বছর পরও এই বইটা তার নিজস্বতা দিয়ে টিকে থাকবে পাঠক আর সমালোচকদের অন্তরে।।
Profile Image for Zarif Hassan.
121 reviews42 followers
December 6, 2020
কিছু বই আছে, হাসতে হাসতে কেঁদে দিতে হয়। কাঁদতে কাঁদতে মনে হয়, ওরা এমন কেন? তারপর সেই প্রশ্নের তীর পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করে নিজের পিঠই বিদীর্ণ করে ফেলে! ক্ষান্ত হয় জিজ্ঞাসা!

উপহাসের ক্ষেত্র : রাজনীতি, তাও আবার উপমহাদেশের রাজনীতি। এই এক বিষয়বস্তুই এই বইকে কালোত্তীর্ণ করার জন্য যথেষ্ট। সাহিত্যের আঙ্গিক বিচারে বাংলা সাহিত্যে এমন satire, wit? টর্চলাইট দিয়ে খুঁজলে বোধ করি দু'একটা পাওয়া যাবে। সেই দিক থেকে এই বই আরো অনন্য।

যুগ পাল্টেছে, প্রযুক্তি পাল্টেছে। পাল্টেছে সবই, কিন্তু পাল্টায়নি বাঙালির ঐ উপহাসের ক্ষেত্রের জায়গাটি। বইটি তাই আজও প্রাসঙ্গিক ; বোধ করি প্রাসঙ্গিক থাকবে বাঙালির জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
Profile Image for Imam Abu Hanifa.
115 reviews26 followers
April 24, 2021
প্রতিটা গল্প বর্তমান সময়ের সাথে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। তবে প্রতিটা গল্প প্রায় একই পটভূমি হওয়ায় টানা পড়তে গেলে একঘেয়েমি আসতে পারে। সেক্ষেত্রে সময় নিয়ে পড়া উচিত।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
August 6, 2021
বইঃ ফুড কনফারেন্স
লেখকঃ আবুল মনসুর আহমদ
প্রকাশনীঃ আহমদ পাবলিশিং হাউস
প্রচ্ছদঃ সমর মজুমদার
পৃষ্ঠাঃ ১০৪
মূল্যঃ ১৪০ টাকা।

আবুল মনসুর আহমদ সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক।

তাঁর জন্ম ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের ধানিখোলা গ্রামে। পিতার নাম আবদুর রহিম ফরায়জী এবং মাতার নাম মীর জাহান বেগম।

তিনি ১৯১৭ সালে নাসিরাবাদ মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯১৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন।

এরপর তিনি ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা রিপন ল’ কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বি.এল পাস করেন।

এ বছরেই তিনি ময়মনসিংহে আইনব্যবসা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তাঁর পেশায় নিয়োজিত থাকেন। তবে তিনি আইন ব্যবসার সাথে দেশের রাজনৈতিক কাজে পুরোপুরিভাবে নিজেকে বিয়োজিত রাখেন।

১৩৫০ সালে সুজলা-সুফলা বাংলায় ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা মর্মান্তিক লোক-ক্ষয়ী আকালের শিকার হয়। সেই হৃদয়বিদারক আকালের ছবি একেছিলেন বাংলার দুই প্রতিভা : শিল্পী জয়নুল আবেদীন আঁকলেন ব্রাশ ও তুলিতে আর আবুল মনসুর আহমদ আঁকলেন কলমেট আঁচড়ে। তাঁর অমর সৃষ্টি ফুড কনফারেন্স একটা নকশা। বেদনার এক তীব্র কশাঘাত।

অন্নদাশংকর রায় লিখেছেলেন, " 'আয়না' লিখিয়া আবুল মনসুর প্রাতঃস্মরণীয় হইয়াছিলেন আর 'ফুড কনফারেন্স লিখিয়া তিনি অমর হইলেন।"

অনেক আগের কাহিনি, যা গল্পের মাধ্যমে চিত্রে ফুটিয়ে তুলেছিলেন লেখক আবুল মনসুর আহমদ। বাঙালি হিন্দু মুসলমানদের জাতীয় চরিত্রের বাস্তব দিক তুলে ধরেছেন" ফুড কনফারেন্স" এ। তবে বাঙালি চরিত্রে এর ব্যতিক্রম চরিত্র ও আছে তার চিত্র ও লেখক তুলে এনেছেন লেখার মাঝে।

ব্যঙ্গ ও রঙ্গের ভেতর দিয়ে বাঙালি চরিত্রের সাধারণ দিকগুলো দেখিয়ে পাঠকদের প্রচুর হাসিয়েছে বটে, তবে অবিমিশ্র হাসিই এখানে আসল ব্যাপার নয়, হাসির পিছনে লেখকের অন্তরের বেদনা ও অন্তর্দাহ পাঠকদের নজর এড়িয়ে যায় নাই।

বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গ ও রঙ্গ একেবারেই নাই এটা বলা চলে না। তবে এদিক দিয়ে সার্থক রচনা খুবই কম। আবুল মনসুর আহমদ এই সার্থক শিল্পী দের অন্যতম একজন।

লেখকের "আয়না" পড়েছি, সেখানে মুসলমানদের সামাজিক জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি টা দেখানো হয়েছে।
আর "ফুড কনফারেন্সে " ১৩৫০ সালের আকালকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
একটা বাস্তব মর্মান্তিক ঘটনাকে এভাবে হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় তা লেখকের লেখা না পড়লে বোঝা যাবে না। তাছাড়া তিনি সে ঠাট্টার ছলে সেই সময়ের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকেও বিদ্রূপ করতে ছাড়েন নাই।
অসাধারণ এবং বিখ্যাত এই বইটা অনেক পরে হলেও আমি পড়লাম।
Profile Image for অমিয়তোষ আকাশ.
17 reviews7 followers
April 13, 2022
মোট ৯টি ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন "ফুড কনফারেন্স" বইটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে বাংলায় ঘটে যাওয়া পঞ্চাশের মন্বন্তর বা ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে গল্পগুলো।

দুর্ভিক্ষের খাদ্য সংকট দূর করার লক্ষ্যে বসেছে নিখিল বাংলার রাজনীতিবিদদের কনফারেন্স বসেছে টাউনহলে। সভায় উপস্থিত শেরে-বাংলা, সিংগিয়ে-বাংলা, মহিষে-বাংলা, গরুয়ে-বাংলা, গাধায়ে-বাংলা, কুত্তায়ে-বাংলা, পাঁঠায়ে-বাংলা, বান্দরে-বাংলা, ইন্দুরে-বাংলা, চুঁহায়ে-বাংলা সহ আরও অনেক নেতা। এই চরিত্রগুলো যেমন তৎকালীন ধূর্ত, দুর্নীতিবাজ, শঠ রাজনীতিবিদদের উপস্থাপন করে তেমনি কালের অন্তর বাদ দিলে দেখা যাবে সেই জন্তুয়ে-বাংলাগণ এখনও আমাদের চারপাশেই বিদ্যমান। বাঙালি রাজনীতিবিদদের স্বভাব ও চালচিত্র উঠে এসেছে এই রচনায়।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র বাঙালিদের উপদেশ দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির কপাল থেকে "কেরানীর জাত" চিহ্ন দূর করে নিজেরাও ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করতে। তারপর আর কী! বাঙালি হেন কোনো জিনিস নেই যা নিয়ে ব্যবসা করা থেকে বিরত থেকেছে। সেটাই উপজীব্য "সায়েন্টিফিক বিযিনেস" রচনাতে।

দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার গড়ে ওঠে নানা সভাসমিতি। কিন্তু একটা সমিতি বাদ থেকে যায়। সেটার গঠন আর কার্যক্রম নিয়েই তৃতীয় গল্প "এ. আই. সি. সি" যার পূর্ণরূপ করলে হয় - অল ইন্ডিয়া কনডোলেন্স কংগ্রেস। সবকিছুর সভা/সমিতি থাকবে আর দুর্ভিক্ষে এতো মানুষ মরছে তাদের শোক জ্ঞাপনের কোনো সমিতি থাকবে না? তা হবে না, তা হবে না।

ফ্রি খাদ্য ডিস্ট্রিবিউশনের নামে গড়ে ওঠা "লঙ্গরখানা" চতুর্থ গল্পের বিষয়। দুর্ভিক্ষে খাদ্য না দিয়ে কীভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয় তা উঠে এসেছে এখানে।

দুর্ভিক্ষ বা দুর্যোগ হলে "রিলিফ ওয়ার্ক"-এর হুলস্থূল বেঁধে যায়। আর রিলিফের আড়ালে দুঃস্থ হয় অতিদুঃস্থ, জোটে না একমুঠো অন্ন। আর উঁচু লোকেরা পায় বস্তায়-বস্তায় ত্রাণ।

গান্ধীর নিজ হাতে চরকা কাটা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু হয় "গ্রো মোর ফুড" প্রোগ্রাম। কিন্তু সকলেই যদি খাদ্য উৎপাদন করে তবে গ্রো মোর ফুড প্রোগ্রামের (অ)সভ্যগণের ভবিষ্যৎ চলবে কীভাবে? তারই চালচিত্র ফুটে উঠেছে ষষ্ঠ গল্পে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। এই যুদ্ধের কারণে সাধারণ হয়েছে সর্বস্বান্ত। কিন্তু বিভিন্ন সভাসমিতির আড়ালে একদল হয়েছে সুবিধাভোগী। যুদ্ধ শেষ মানে সভাসমিতিও শেষ, তাদের সুযোগ সুবিধাও শেষ। তাই সপ্তম গল্পে "মিছিল" বের হলো 'হায় জার্মান, হায় জাপান' মাতম রব তুলে।

জমিদারি উৎখাতের লক্ষ্য জনতা নির্বাচিত করে কৃষকপ্রজার মেহনতি নেতাকে। লক্ষ্য "জমিদারি উচ্ছেদ"। শেষে জমিদার উচ্ছেদ হয় বটে, কিন্তু জমিদারি? তাই জানা যাবে অষ্টম গল্পে।

জনসেবা করতে হবে। তাই দরকার ক্ষমতা। কিন্তু সে ক্ষমতা কোন ক্ষমতা? "জনসেবা য়ুনিভার্সিটি" নামক নবম গল্পে রয়েছে এর বর্ণনা।

সবগুলো গল্প ১৯৪৩-৪৫ এ রচিত হলেও গল্পগুলো আজকের দিনেও অতিপ্রাসঙ্গিক। হাস্যরস মেশানো প্রতিটি গল্পেই উঠে এসেছে বাঙালির চরিত্র। আর বাঙালির চরিত্র আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। তাই গল্পগুলোর আবেদন এখনও একটুকুও কমেনি। সবাইকেই রিকমেন্ড করব অন্তত একবার এই বইটি পড���ার জন্য।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
June 14, 2023
"বাঙালি জাত যেখানে যেখানে বাস করেছে, হাইজিনিকমেজার হিসেবে সে সব জায়গায় বেশ করে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দাও। "
Profile Image for Ismat Sumaiya.
29 reviews32 followers
August 7, 2021
আবুল মনসুর আহমদ -এর ক্লাসিক পলিটিক্যাল স্যাটায়ার 'ফুড কনফারেন্স ' মোট ৯টি গল্পের সংকলন। এই ৯টি গল্প যেন গল্প নয় একেকটা বিদ্রুপের কামান যার থেকে অনবরত নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমাজের স্বার্থান্বেষী,ক্ষমতালোভী, অসৎ, নির্বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের প্রতি তীব্র বিদ্রুপের গোলা।যাইহোক ফুড কনফারেন্স, সায়েন্টিফিক বিযিনেস, এ.আই.সি.সি, লঙ্গরখানা, রিলিফ ওয়ার্ক, গ্রো মোর ফুড, মিছিল, জমিদারি উচ্ছেদ, জনসেবা য়ুনিভার্সিটি - এই মোট নয়টি গল্প স্থান পেয়েছে ফুড কনফারেন্স বইটিতে।
.
১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষে খাদ্যের অভাবে দেশের জনগণ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াতেও টনক নড়েনি দেশের ক্ষমতার গদিতে বসা স্বার্থান্বেষী মন্ত্রী নেতাদের।টনক নড়বেই বা কী করে? তাদের খোরাকের অভাব ছিল না। দেশের মানুষ না খেয়ে মরলেও তারা তো দিব্যি খেয়ে,পরে বেঁচে রইলো।বরং তারা খুশি হয়েছিল লাভের আশা দেখে!

বাঙালিকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ব্যবসা বোঝালে বাঙালি ব্যবসার জন্য ব্যবসা বুঝত না। বাঙালি বুঝত ধর্মের জন্য ব্যবসা,শিক্ষার জন্য ব্যবসা।কালাবাজার ব্যবসা বাঙালি ভালোই বুঝত।
রিলিফ ওয়ার্ক -এর নামে সমাজের গরীব, কঙ্কালসার মানুষদের ডিঙিয়ে ধনী ব্যক্তিবর্গের ভাড়ার ফুলে ফেঁপে উঠার নিদারুণ চিত্র লেখক ব্যাঙ্গাত্মকভাবে তুলে ধরেছে।

সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে,জমিদারি উচ্ছেদের লোভ দেখিয়ে দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে ক্ষমতাসীন মেম্বার কী কৌশলেই না নিজেই জমিদারি দখল করে! জনসেবার নাম দিয়ে, ফ্রীতে খাবার দেওয়ার কথা বলে যত সুন্দর করে ব্যাপারী দল খোরাকী পাস করেছে,তার চেয়েও সুন্দর করে লেখক তাদের কালোবাজারি বর্ণনা করেছে। লেখকের এমন রচনা স্বার্থান্বেষী, ক্ষমতালোভী মানুষের মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছে।
.
প্রতিটি গল্পই মন মুগ্ধকর। তবে ফুড কনফারেন্স, সায়েন্টিফিক বিযিনেস,রিলিফ ওয়ার্ক,জমিদারি উচ্ছেদ,গ্রো মোর ফুড খুব বেশি ভালো লেগেছে। সবার পড়া উচিত বইটি। অবশ্যই আয়োজন করে পড়বেন। যদি আবার নিজের মুখেই ঝামা ঘসে যায়?
তাই তো অন্নদাশঙ্কর রায় তো বলেছেন,  'আবুল মনসুর আহমেদ ফুড কনফারেন্স লিখে অমর হয়েছেন।'
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
January 27, 2021
প্রথম কথা এই বই খাদ্যের দোষ গুণ বিচার করার জন্য লেখা হয় নাই। আমি এই নাম দেখে আসলে এমন কিছুই ভাবছিলাম পড়ার জন্য কন প্রকার আগ্রহ বোধ করিনি। আর কেও যেন এমন ভুল না করে তাই বলে দিলাম।
বই মূলত ১৩৫০ বঙ্গাব্দের মহামারী কে কেন্দ্র করে লেখা ৯ টি গল্প।
Profile Image for Tareque Hasan Tahsin.
18 reviews4 followers
January 11, 2017
অসাধারণ লাগলো। বাংলা ভাষায় পড়া অন্যতম সেরা স্যাটায়ার।
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
November 1, 2024
আবুল মনসুর আহমদের স্যাটায়ার সবসময়ই ভালো লাগে আমার। এর আগে পড়েছিলাম আয়না।
Profile Image for Isaac Miftuv.
13 reviews5 followers
August 11, 2015
বাংলা স্যাটায়েরর অন্যতম পুরোধা হিসেবে এই বইয়ে আবুল মনসুর আহমেদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
খোঁচা দেবার ক্ষমতা তার অনবদ্য। 'জনসেবা ইউনিভার্সিটি'-তে লর্ড জ্যাকবের চরিত্রের মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলে সুবিধাবাদী এক তরুণের মুখোশ উন্মোচন করেছেন তাও এমনভাবে যেন তিনি জ্যাকবের গুণকীর্তন করছেন।
salute to this boss :)
Profile Image for Ahmed Atif Abrar.
719 reviews12 followers
March 30, 2019
বেশ কদিন আগে পড়েছিলাম। বাংলার দুর্ভিক্ষ ও এর কারণ নিয়ে কিছুটা হলেও জানা গেছে।
Profile Image for Shahab Mosharraf.
84 reviews5 followers
September 30, 2020
এমন স্যাটায়ার রচয়িতা মন্ত্রী যদি পেতাম আজ, আজীবন ফ্যান-ফলোয়ার হয়ে থাকতাম তার।
'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' বইটির ভূমিকায় তার স্যাটায়ার লিখার কথা জানালো হলেও বইটিতে এর কোন নিশানা ছাড়াই বইটি নিজ গুণে গুণান্বিত ছিল। এই বইয়ে লেখককে একদম নতুন রূপে আবিষ্কার করলাম! বিচ্ছু-রস+আলোদের রম্য দিন দিন যত বস্তাপচা হচ্ছিল, তাতে বাংলায় কোনদিন এত ভালোমানের রম্য লেখা পাব ভাবিনি।
Profile Image for Tahsina Alam.
108 reviews
April 7, 2021
ফুড কনফারেন্স
আবুল মনসুর আহমেদ
প্রথমা
১৮৮/-

এত ফাইইইইইন পলিটিক্যাল স্যাটায়ার খুব কম ই পড়সি। ১৯৩০-৪০ টাইমলাইনের রাজনৈতিক ইতিহাস জানা থাকলে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়।
এই যুগেও, বিশেষ করে এই প্যান্ডেমিকের সময়ে খুবই রিলেভ্যান্ট।
Profile Image for Raihan Atahar.
120 reviews26 followers
October 13, 2018
শুরুতে লেখক সম্পর্কে দু'একটা কথা না বললেই নয়। আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) ছিলেন একাধারে একজন সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিবিদ। যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামীলীগের হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। পুরদস্তুর রাজনীতিবিদ বলতে যা বুঝায়, তার সব বৈশিষ্ট্য তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিল। কর্মসূত্রে সব ধরনের মানুষের সাথে মিশেছেন তিনি। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহগুলোকে তিনি মলাটবন্দী করেছেন তাঁর লেখনী দ্বারা। সাহিত্য চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ও নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। আবুল মনসুর আহমদকে মানুষ যে লেখাগুলোর জন্য আজীবন মনে রাখবে তার মধ্যে অন্যতম একটি হল 'ফুড কনফারেন্স'। এটি একটি স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক রচনা। ৯টি ব্যঙ্গগল্প আছে এতে। মূলত ১৯৪৩ সালে (বাংলা ১৩৫০ সন) ঘটে যাওয়া দুর্ভিক্ষকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে বইটির গল্পগুলো। 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' নামে পরিচিত সেই মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষে না খেতে পেয়ে দু'বাংলা মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ লোক মারা গিয়েছিলো। পৃথিবীজুড়ে তখন চলছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা। যুদ্ধকালীন আকালের সময় স্বার্থান্বেষী মজুতদারদের দৌরাত্ম্যে চালের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়। এ সুযোগে রাজনীতিবিদ ও মজুতদার শ্রেণী নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। এ অসঙ্গতিগুলোকেই আবুল মনসুর আহমদ ব্যঙ্গাত্মকভাবে 'ফুড কনফারেন্স'-এ তুলে ধরেছেন।

#আমার_মতামতঃ স্যাটায়ারধর্মী লেখা খুব একটা পড়া হয় না। মানসম্মত স্যাটায়ার বাংলা সাহিত্যে নেই বলা যায়। এক্ষেত্রে আবুল মনসুর আহমদের 'ফুড কনফারেন্স'কে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বলা যায়। বলা হয়ে থাকে, বাংলার দুর্ভিক্ষকে দু'জন সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন। একজন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, আরেকজন আবুল মনসুর আহমদ। এ থেকে ধারণা করা যায়, বইটির শিল্পমান কত উঁচুদরের। যারা এখনো পড়েননি তাদেরকে পড়ার নিমন্ত্রণ। আর যারা পড়েছেন তাদেরকেও পুরোনো স্মৃতি ঝালাই করার আমন্ত্রণ রইলো :)
Profile Image for Sanjida Amy.
47 reviews12 followers
December 3, 2020
হাশরের ময়দান,
মহাবিচারের দিন।
মহাবিচারকের প্রতিনিধির হাতে একখানা সাদা-বেগুণী মলাটের বই৷ তিনি হাঁক ছাড়লেন, 'আহমেদ! আহমেদ!'
কোটি কোটি আহমেদ উঠে এলেন। তিনি বিরক্ত মুখে বললেন, 'আবুল আহমেদ, মিডল নেম মনসুর। আবুল মনসুর আহমেদ'
এবার অনেকে বসে পড়লেন, গুটি কয়েক লোক দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রতিনিধি সাহেব আবারও বিরক্ত হয়ে হাতের বইখানা উঁচু করে বললেন, 'আরে, এই বইয়ের লেখক!'
তখন লেখক সাহেব রইলেন শুধু। আরশ থেকে শব্দ এলো, 'তুমি এই বই লিখেছো? কী লিখেছো এসব? তুমি জানো এর শাস্তি কী হতে পারে?' দূর কোনো গর্ত থেকে আওয়াজ এলো, 'মি লর্ড, ওনাকেও আমাদের সাথে হাবিয়া দোজখে থাকতে দিন, তারপর আমরা দেখছি কী করা যায় এর ব্যাপারে। ' সাথে সাথে হাবিয়া দোজখ থেকে কোটি কোটি কণ্ঠের আওয়াজ, 'সহমত হুজুর! সহমত! হক সাহেবের সাথে আমরা সহমত পোষণ করছি।'
মহাবিচারক বললেন, 'বটে? বাঙালীরা চায় তোমাকে হাবিয়াতে। কিন্তু তুমি খাসা একখানা স্যাটায়ার লিখেছো হে! প্রশংসার যোগ্য! এভাবে সত্য কথা বলার জন্য আমি তোমাকে বেহেশতে পাঠাবো। কিন্তু আরও বিভিন্ন স্পর্শকাতর কারণে খুব সুখ শান্তিতে রাখতে পারবো না। তোমাকে আমি বেহেশতের পাক্ষিক পত্রিকার রম্য লেখকের চাকরি দিলুম। তোমার একমাত্র কাজ হবে স্যাটায়ার লেখা।'
Profile Image for S M Hridoy.
32 reviews6 followers
July 18, 2016
বাংলা ভাষায় ব্যঙ্গ সাহিত্য খুব উন্নত হয়নি। তার কারণ, ব্যঙ্গ সাহিত্য সৃষ্টিতে অসাধারণ মেধার প্রয়োজন। এ যেন সেতারের কান মলে সুর বের করা। সুরও বেরুবে, তারও ছিঁড়বে না। আমি একবার এক ওস্তাদকে লাঠি দিয়ে স্বরোদ বাজাতে দেখেছিলুম। সেবার সেই ওস্তাদের হাত সাফাই দেখে আশ্চর্য হয়েছিলুম। আর আজ বন্ধু মনসুরের হাত সাফাই দেখে বিস্মিত হলুম। ভাষার কান-মলে রস সৃষ্টির ক্ষমতা মনসুরের অসাধারণ। এ যেন পাকা ওস্তাদী হাত।
-- কাজী নজরুল ইসলাম
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews350 followers
May 11, 2021
আবুল মনসুর আহমেদের এই ১০০ পৃষ্ঠার বইটা না পড়ে থাকলে বাঙ্গালী পাঠক হয়ে আর করতেসেন-টা কি ভাই?
Profile Image for Fazle Rabbi Riyad.
87 reviews28 followers
February 3, 2020
রঙ্গ ও ব্যঙ্গ - এ দুয়ের মিশেলে লেখা "ফুড কনফারেন্স" বইটি নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যেরজন্য এক রত্নবিশেষ। পারসোনালি আমার স্যাটার আগে একদমই পড়া হয়নি, সেটা হয়তোবা বাংলা ভাষায় স্যাটায়ারের সংখ্যা অনেক কম বলেই।
বইটির রচনার সময়কাল অনেক আগে হলেও, এযুগের পাঠকদের এখনো অনেক ভাল লাগবে।
Profile Image for Maroof Ahmed Shuvo.
33 reviews3 followers
September 14, 2023
বাংলা সন ১৩৫০ (খ্রি. ১৯৪৩) ও দুর্ভিক্ষ। সর্বজনে এ সময়কালটি অধিক পরিচিত 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' নামে। দুর্ভিক্ষ প্রশমে অসহায় মানুষের জন্য পৌছেছে ত্রাণ। হচ্ছে বিতড়ন। দেখেছেন লেখক আবুল মনসুর আহমদ। হয়েছেন ব্যথিত। লিখেছেন ফুড কনফারেন্স।

ফুড কনফারেন্স মূলত একটি স্যাটায়ারধর্মী বই। এই বইয়ে সর্বমোট ৯ টি গল্প আছে। প্রতিটি গল্পই সমাজের অপামর দুর্ণীতি, সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে সুবিধাবাদী শ্রেণির নোংরা খেলা, রাজনীতির অভিশপ্ত দিক, ইত্যাদি বিষয়ই প্রাধান্য পেয়েছে।

মূলত হাস্যরসে টইটুম্বুর হলেও এক অদ্ভুত বিষণ্ণতাবোধ জুড়ে আছে প্রতিটি গল্পতেই।
Profile Image for মুনতাসিফ সুসমিত.
8 reviews4 followers
July 17, 2015
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ আর সামন্তবাদী শোষনের ফলেই সোনার বাংলা ১৩৫০ সালের পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক দূর্ভিক্ষের শিকার হয়,আর লেখার ভাষায়,কিছু গল্পর মাধ্যমে ওই সমাজের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছিলেন আবুল মনসুর আহমদ,যেন তা গল্প নয় কিছু প্রকৃত নকশা সেই সময়কার।হাস্যকর ও ব্যানগাত্বক চরিত্র গুলার সার্থক প্রয়োগ করেছেন তিনি।ওই সময়ের চরিত্র অনুসারে চিত্রায়িত হলেও তা কাল জয় করে আজো বাঙালীর চরিত্রে দেখা যায় :D
অন্নদা শংকর রায় বলেছিলেন : " 'আয়না' লিখিয়া আবুল মনসুর প্রাত:স্মরণীয় হইয়াছিলেন,'ফুড কনফারেন্স' লিখিয়া তিনি অমর হইলেন "
বহু বছর আগের লেখা এই গল্প গুলা কিন্তু কিছুটা পরিবর্তন করে আমরা আজকের সমাজ কেও পাব এই গল্প গুলায়,,,,
কেন একটি বই শ্বতাব্দি ছাড়িয়ে যায়,কেন হাজার বছর পরেও একটি মানুষ পড়ে সমান আগ্রহ নিয়ে, কেননা এই বই গুলো প্রতিটি সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়,আমি বাজি ধরে বলতে পারি কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কখন চিন্তাও করেন নাই শত বছর পরেও কেউ তার লেখা পড়বে :)
আমার মতে ফুড কনফারেন্স এমন একটা বই,শেষ করেই যেন মনে হয় "হায় হায় আরো পৃষ্টাগুলা কই???" ;)
Profile Image for Saumen.
256 reviews
September 16, 2022
বইতে মোট ৯ টা গল্প আছে, সবগুলিই '৪৩ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নিয়ে লেখা। আবুল মনসুর আহমদের রসবোধ ও সমাজসচেতনতা একেবারে টপ নচ। এক্ষেত্রে একেবারে ৫/৫।

সমস্যা হচ্ছে একই প্রেক্ষাপটে লেখা বলে গল্পগুলি টানা পড়লে বোরিং লাগতে পারে( আমার লেগেছে) আর একই ধাঁচের রসিকতা দৃশ্যমান।

একটা ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে চার্চিলকে ব্রিটিশ লায়ন বা বিশ্বরাজনীতির একজন পুরোধা ব্যক্তি হিসাবে সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু উপমহাদেশের না খেতে পাওয়া, ভুখা নাঙা মানুষের কাছে সে স্বয়ং মৃত্যুদূত ছাড়া আর কিছু নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খোরাক মেটাতে তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশগুলির মধ্যে উপমহাদেশকেই সর্বাধিক মূল্য দিতে হয়েছে হয়ত। এটা অনেকটাই অর্থনৈতিক, অনেকটাই নৈতিক। অভাবে স্বভাব নষ্ট হলে তাকে নিয়ে উচ্চমানের স্যাটায়ার লেখাই যায়, কিন্তু পেটের খিদেটা কিন্তু তার চেয়েও বেশি বাস্তব।

হাসি তামাশা খেলো বিষয় নয়। অনেক বক্তব্যকে পাঠক ও দর্শকের হৃদয়ে আরো গভীর করে পৌঁছে দেয় রসালাপ। কিন্তু এই রসালাপ করতে গিয়ে যদি রক্তাক্ত নিপীড়িত ইতিহাসকে আমরা ভুলে যাই, তাহলে এই বইটার প্রতি সুবিচার করা হবে না।
Profile Image for Md Fahim Khan.
195 reviews4 followers
March 25, 2019
আবার ফিরে গেলাম উচ্চ মাধ্যমিকের দিনগুলোয়। পাঠ্যবইয়ের বদৌলতে পরিচয় আবুল মনসুর আহমদের সাথে। রিলিফ ওয়ার্ক নামক এক উঁচু দরের লেখার মাধ্যমে যেন বুঁদ হয়ে ছিলাম। প্রায়ই অবসর সময় পেলে গল্পটি পড়তাম। বলতে গেলে একটি তুলসী গাছের আত্���কাহিনীর পর রিলিফ ওয়ার্কই ছিল সবচেয়ে বেশি পড়া গল্প। গল্পটি নেওয়া হয়েছিলো এই বই থেকে।
তাই নীলক্ষেতের বইয়ের স্তূপ থেকে একে উদ্দ্বার করা আমার জন্য ফরয কাজ ছিল।

বইয়ের মান কিংবা সাহিত্য বিন্যাস করার মতো তাত্ত্বিক জ্ঞান আমার নেই। শুধু বলবো, একবার পড়া শুরু করলে চমৎকৃত হতে হবে প্রতিটি গল্পে। পুরো বইয়ে বেশ কিছু হাস্যরসাত্মক রাজনৈতিক প্রহসনে ঠাসা রয়েছে। মূলত শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সাহেবের শাসনামলে চলমান বিভিন্ন ঘটনার সমালোচনার জন্য তিনি সাহিত্যকে বেছে নিয়েছেন। বাংলা ভাষায় প্রহসন খুব কম পড়া হয়েছে, তাই একে সর্বসেরা বলতে পারছি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত, এই বইয়ের সাহিত্যরস আমার মনে বেশ লম্বা সময়ের জন্য লেগে থাকবে।
Profile Image for Smita Das.
6 reviews31 followers
October 5, 2015
A splendid mixture of wit and sarcasm ^_^
নীলকে ধন্যবাদ, আবুল মনসুরের বইগুলো কেনানোর জন্য। আমি কিনা অলসের ডিব্বা তাই ফেলে রেখেছিলাম -_-
ধন্যবাদ রিফাত, এই অলসের ডিব্বাকে পুনরায় ঠেলা দেওয়ার জন্য :)
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
September 29, 2016
লেখকের রসবোধ যে দারুন সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। চমৎকার সব স্যাটায়ার।
Profile Image for Fariana Priya.
47 reviews18 followers
Read
July 26, 2023
"দেশে হাহাকার পড়েছে; কারণ নাকি খোরাকির অভাব। সে হাহাকার অবশ্যি ভদ্রলোকেরা শুনতে পাননি। ভাগ্যিস অভুক্ত হতভাগ্যদের গলায় চিৎকার করে কাঁদবার শক্তি নেই।"

   -ফুড কনফারেন্স
আবুল মনসুর আহমেদ 

বাংলা সাহিত্যে স্যাটায়ারের কথা আসলেই, আমার প্রথমে মনে পড়ে একই লেখকের লেখা "আয়না" বইটার কথা। আজকের আলোচনা অবশ্য তার আরেক ছোটগল্প সংকলন নিয়ে। এই বইটিও একই জনরার, ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষ আর মানুষের ভূমিকা নিয়ে গল্পগুলো।

১ম গল্পের এই প্রথম লাইনটিই বইয়ের সারাংশ তুলে ধরে। দেশের খাদ্যের অভাব দূর করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে, অপ্রয়োজনীয় সভা ও অযৌক্তিক উপায় নিয়েই কর্তাব্যক্তিরা ব্যস্ত। তার সাথে আছে, পরস্পরকে দোষারোপ আর অকারণ সংঘর্ষ। এই প্রভাব দেখা যায়, 'গ্রো মোর ফুড' গল্পে। যেন বেশি খাদ্য উৎপাদনই একমাত্র উপায়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ঐ সময়ে দেখা গিয়েছিল তা হলো দুর্নীতি। দুর্ভিক্ষকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভ থেকে শুরু করে রিলিফের দুর্নীতি সব উঠে এসেছে, 'রিলিফ ওয়ার্ক,' 'লঙ্গরখানা' গল্পে।

বাঙ্গালি জাতির দুর্নীতি নিয়ে চমৎকার স্যাটায়ার করেছেন লেখক তার 'সায়েন্টিফিক বিযিনেস্' গল্পে। সেখানে দেখা যায়, বাঙ্গালির চাকরিপ্রীতি থেকে বের করতে দেশসেবা, ধর্ম ও মানবতার মিশেলে নতুন ব্যবসা তৈরি করেন জনৈক আচার্য। একটা পর্যায়ে দেখা যায়, বাঙ্গালি পরকালেও কোথাও দুর্নীতি করতে বাদ রাখেনি।

"ইনসাফের মালিক একটু থেমে কঠোর ভাষায় আবার বললেন: হা আরেকটা কথা। বাঙালি জাত যেখানে সেখানে বাস করেছে, হাইজিনিক মেযার হিসেবে সে-সব জায়গায় বেশ করে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দাও।"

ঈশ্বরও যেনো এই জাতির উপর অতিষ্ঠ। তবে, 'রিলিফ ওয়ার্ক' গল্পের হামিদের মতো চরিত্রও ছিল যে এসব অন্যায় মেনে নিতে না পেরে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ বাদ দিয়েছে। 

কয়েক বার 'সকল মানুষ মারা গেল'- এমন লাইন এসেছে। লেখক যেনো মনুষ্যত্বের মৃত্যুর বারবার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন।

অদ্ভুতভাবে আশাহত হলাম, যখন দেখলাম এই বইটি এখনো একইভাবে প্রাসঙ্গিক এবং এই চিত্র আমরা প্রতিদিন চারপাশে দেখে চলছি।
Displaying 1 - 30 of 64 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.