Abul Mansur Ahmed (Bangla: আবুল মনসুর আহমেদ) (1898–1979) was a Bangladeshi politician and journalist. His political career helped him writing political satire. He is the most famous political satirist in Bangla literature.
He was honored with Bangla Academy Award in 1960 and Swadhinota Dibosh Padak (Independence Day Medal) in 1979. Tahmima Anam is his granddaughter.
১৯৬৬ সালে পাক-বাংলার কালচার নামে বইটি লিখেছিলেন জনাব আবুল মনসুর আহমদ। স্বাধীন বাংলাদেশে আর দুইটি নতুন প্রবন্ধ যোগ করে, 'পাক-বাংলার কালচার' কে বানিয়ে দিলেন 'বাংলাদেশের কালচার'।
একশো পঁয়ষট্টি পৃষ্ঠার বইয়ের নব্বই শতাংশ পাতা আবুল মনসুর আহমদের মতো মানুষ খরচ করেছেন এটা প্রমাণ করতে যে, পাক-বাংলা তথা মুসলিম বাংলার সাহিত্য, ভাষা,'কৃষ্টি'(সংস্কৃতি বলতে রাজি হন নাই) ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় উত্তম তো বটেই। এমনকি তারা আমাদের বিশেষ শত্রুতুল্য বলেই জ্ঞান করেন লেখক। মুসলিম বাংলার ধর্ম আছে তারা কেন পশ্চিম বাংলাকে মেনে নিবে? - এমন সব বিদ্বেষপূর্ণ অসুস্থ ইঙ্গিতে ভরপুর এই বই।
জনাব আবুল মনসুর আহমদ বড় রাজনীতিবিদ ছিলেন; কিন্তু শেষ জীবনে সাম্প্রদায়িক চিন্তাতেও বড়ত্ব দেখাতে কলম হাতে নিয়েছিলেন বৈ কি!
যুদ্ধোত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যে সকল বুদ্ধিমান মানুষ নতুন বাংলাদেশের কাঠামো গঠনে ভূমিকা রাখেন তাদের মধ্যে আবুল মনসুর আহমদ অন্যতম । 'বাংলাদেশের কালচার' বইটি যুদ্ধের আগে 'পাক-বাংলার কালচার' নামে প্রকাশিত হয়েছিল । যুদ্ধের পর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন করে নেন বিবিধ লেখা ও বইয়ের নাম । 'সহজ কথায় ব্যক্তি বা ইন্ডিভিজুয়্যালের যা ব্যক্তিত্ব বা পার্সন্যালিটি, সমষ্টি বা কমিউনিটির তা-ই কালচার' 'কালচারকে ডিফাইন করার আর কোনও উপায় নাই; বিশ্লেষণ দ্বারাই উহাকে বুঝিতে হইবে' 'সভ্যতাটা আসলে যুগেরই বৈশিষ্ট্য, কোন জাতি বা দেশের বৈশিষ্ট্য নয়' 'নারীকে নরের অধীন দাসী-বাদী গৃহপালিত জীব বা পণ্য মনে করা অসভ্যতা। কিন্তু পারিবারিক সামাজিক জীবনে উভয়ের কর্তব্যের পৃথকীকরণটা অসভ্যতা নয়, কালচারের পার্থক্য মাত্র' 'মনের বিকাশের নাম কালচার, মস্তিষ্কের বিকাশের নাম সিভিলিযেশন' 'দুই কুল ছাপিয়া দুই পাড় ভাংগিয়া ইচ্ছামতো চলাই নদীর ব্যক্তিত্ব' 'বাংলায় জাতীয় কালচার গড়িয়া না উঠার কারণ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা' 'রাষ্ট্রীয় জাতি হিসেবে নতুন হইলেও সভ্য মানুষ ও কৃষ্টিমান জাত হিসাবে আমরা শিশু নই'
সাহিত্যের প্রাণ, রূপ ও আঙ্গিক এ অঞ্চলে কেমন হবে বা হওয়া উচিৎ এবং তা কালচার গঠনে কিভাবে কাজ করবে তা বর্ণনা করে দেখান । বিশ্বে শঙ্কর জাতিদের মধ্যে এ্যমেরিকানদের সাথে বাঙালির বৈশিষ্ট্যগত কেমন মিল, বাঙালির মেধা, অপারগতা ও সুযোগ সন্ধান নিয়ে কৌতুকি ঢংয়ে সমালোচনা । ধর্ম কিভাবে যুগের দাবিতে বিশ্বাস হতে অধিকতর কালচার হয়ে ওঠে, রাষ্ট্রতন্ত্র ও রাজনৈতিক বিচ্যুতি, উত্তোরণ ও করণীয়, ভবিষ্যত বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা; এমন সব বিষয়কে সহজ করে বলেছেন ।
"নারীকে নরের অধীন দাসী-বাদী গৃহপালিত জীব বা পণ্য মনে করা অসভ্যতা। কিন্তু পারিবারিক সামাজিক জীবনে উভয়ের কর্তব্যের পৃথকীকরণটা অসভ্যতা নয়, কালচারের পার্থক্য মাত্র।"
বইটার প্রত্যেকটা প্রবন্ধ ধরে বিস্তারিত আলাপ করা যাবে। সভ্যতা - রাষ্ট্র - ধর্ম - কালচারের সহাবস্থান এই বইয়ের গুণ। পশ্চিম বঙ্গ ও পূর্ব বঙ্গের ভাষার পার্থক্য তিনি দেখাইছেন মার্কিন ইংরেজি ও ব্রিটিশ ইংরেজির পার্থক্য আকারে। চলিত ভাষার শব্দ নিয়ে যে বাক্য তাই বাংলা বাক্য। মুসলিম মানসের চোখে আবুল মনসুর আহমদ রেনেসার স্বপ্ন দেখেন আর পূর্ব বাংলার সাহিত্যিকদের তিরস্কার করেন, মনসুরিয় সুরের বড়দিক বাংলা ভাষার সর্বোত্তম ব্যবহার। যে সোসাইটি মনসুর আহমদ গড়তে চান সেটা গণতান্ত্রিক ও পূর্ব বঙ্গীয় ।
আমার ভাবতে কষ্ট হয় যে, যেই লেখক চল্লিশের দশকে যৌবনকালে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বাড়াবাড়িকে আঘাত ও ব্যঙ্গ করে 'আয়না' কিংবা 'ফুড কনফারেন্স' এর মতো বই লিখেছেন, তিনি শেষ বয়সে এসে বাংলাদেশের কালচারের এরকম সাম্প্রদায়িক ও ধর্মবাদী সংঞ্জা দিয়েছেন। পুরো বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশ লেখক ব্যয় করেছেন শুধু এটা বুঝাতে যে পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক কালচার বাঙালি কালচারের ভেতরই পড়ে না, বরং বাঙালি কালচার শুধু ইসলাম ধর্মভিত্তিক কালচার। কিন্তু বাংলাদেশ তো শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দেশ নয়। পড়ে হতাশ হয়েছি। আবুল মনসুর আহমদকে অসাম্প্রদায়িক লেখক বলেই জানতাম।