Jump to ratings and reviews
Rate this book

জাল

Rate this book
লেখকের কথাঃ

"আমার প্রথম উপন্যাস 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' লেখা শেষ হয় ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে । তারপর চার-চারটে বছর প্রকাশকের সন্ধানে কলকাতা ও ঢাকায় ঘোরাঘুরি করেও বইটির প্রকাশক পাইনি । হতাশ হয়ে ভাবলাম, ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখলে হয়তো প্রকাশক পাওয়া যাবে । কলম হাতে নিলাম । কিন্তু কী লিখবো ? আমি পেশায় ডিটেকটিভ । এ ব্যাপারে আমার পেশাগত প্রশিক্ষণ ও পড়াশুনো আছে, আছে অপরাধ তদন্তের বাস্তব মালমসলা । তাই বিদেশী গোয়েন্দাকাহিনী নকল করে বা তার ছায়া অবলম্বন করে কিছু লেখার প্রশ্নই ওঠে না । তা'ছাড়া অপরাধ তদন্তের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা নেই এমন কিছু লেখকের মতো আজগুবি ও অবাস্তব তদন্তকাহিনী পরিবেশন করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয় । মালমসলা তো আছে প্রচুর, কিন্তু কোনটা লিখবো ? ঠিক তখনই মনে পড়লো, ১৯৫০ সালে জাল নোটে'-র কয়েকটা মামলার তদন্তের ভার পড়েছিলো আমার ওপর । সেই অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করেই 'জাল' উপন্যাসটি রচিত ।
১৯৫৪ সালে উপন্যাসটি লেখা শুরু করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি, এমন সময় হঠাৎ 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' উপন্যাসের প্রকাশক পাওয়া গেলো । ১৯৫৫ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে উপন্যাসটি সাহিত্যিক ও সাহিত্যরসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় । 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' যে সুখ্যাতি অর্জন করেছে তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় তখন ডিটেকটিভ উপন্যাস প্রকাশ করা আমি মোটেই সমীচীন মনে করিনি । তাই আমার লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস 'জাল'-এর পাণ্ডুলিপি বের করে আগাগোড়া পড়লাম এবং নতুন করে বুঝতে পারলাম, 'জাল' আমার সুনাম মোটেই ক্ষুণ্ণ করবে না, কারণ এটি একটি ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস, গতানুগতিক ডিটেকটিভ উপন্যাস নয় । তা'ছাড়া এর ভেতর আছে অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে আমার উদ্ভাবিত কিছু মৌলিক পদ্ধতি ।
উপন্যাসটি ১৯৮৮ সালে 'আনন্দপত্র' ঈদ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয় । কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনার পর এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো নসাস থেকে ।"

--আবু ইসহাক

104 pages, Hardcover

First published January 1, 1988

11 people are currently reading
252 people want to read

About the author

Abu Ishaque

17 books79 followers
Abu Ishaque (Abu Bashar Mohammad Ishaque; Bangla: আবু ইসহাক) was a renowned modern Bangladeshi author and a famous novelist. Ishaque is often categorized with those who wrote the least and showed the best. Three novels - one of which is a detective novel, two collections of short stories and the voluminous Samokalin Bangla Bhashar Obhidhan. He comes forth as a major novelist in contemporary literature with the publication of সূর্য দীঘল বাড়ি [Surya-Dighal Bari, that means A Cursed House] written at the age of only twenty one and till now its mighty presence is felt by readers of Bangla fiction. This was the first successful novel in Bangladeshi literature.

Literary awards:
Bangla Academy Literary Award (1963)
Ekushey Padak (1997)
Independence Day Award (2004)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
50 (24%)
4 stars
98 (47%)
3 stars
49 (23%)
2 stars
10 (4%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 59 reviews
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews288 followers
April 3, 2025
দুর্দান্ত!

বেশিরভাগ সময়ই আমরা যে গোয়েন্দা গল্পগুলো পড়ি, তা থাকে লেখকের কল্পনাপ্রসূত।‌ লেখক বাস্তবতার সাথে তার মনমতো মালমশলা মিশিয়ে এমন উৎকট অতিমানবীয় দুর্ধর্ষ হিরো তৈরি করেন–যা পড়ে কৈশোরে নির্দোষ আনন্দ হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু বড় হতে হতে তার আবেদন ফুরিয়ে যায়।
কিন্তু কেমন লাগবে যখন সত্যিকার কোনো গোয়েন্দা ইন্সপেক্টরের‌ই লেখা কাহিনি পড়বেন গল্প আকারে? চমৎকার না?

কেন জানি ব্যোমকেশ বক্সী কিংবা ফেলুদা আমাকে কখনো টানেনি। কিন্তু এই এত বড় বয়সে এই উপন্যাসটা দারুণ ভালো লাগল! এটা তো আধুনিক যুগের কেস সমাধান নয়; শুধুমাত্র ট্রেন, টেলিগ্ৰাম, চিঠির উপর ভরসা করে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধৈর্য ধরে সাবলীলভাবে রহস্য উদঘাটন চাট্টিখানি কথা নয়।

এই ব‌ইয়ের খুব জোরেশোরে প্রচারণা চালানো উচিত। এমন অসাধারণ লেখা পাঠকেরা না পড়লে ভালো লাগে না। যারা মারামারি-কাটাকাটি ভয় পান, রক্তপাতহীন গোয়েন্দা গল্প পড়তে চান–তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য একটি ব‌ই।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,957 followers
May 3, 2020
সুলেখক আবু ইসহাককে আমরা চিনি মূলত তার বিখ্যাত “সূর্যদীঘল বাড়ি” উপন্যাসটির জন্যে। কিন্তু তিনি যদি ১৯৫৪ সালে রচিত “জাল” নামের এই রহস্যোপন্যাসটি তখনই প্রকাশ করতেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রাইম ফিকশন জগতে তা একটি মাইলফলক হয়ে থাকতো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তেমনটা হয়নি। ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে সূর্য দীঘল বাড়ি রচনার পরে ঢাকা-কলকাতায় অনেক প্রকাশকের কাছে ধর্ণা দিয়েও যখন তা প্রকাশের সুযোগ পেলেন না, তখন ইসহাক সাহেব সিদ্ধান্ত নেন এই ডিটেক্টিভ উপন্যাসটি লেখার। প্রকাশক হয়তো ডিটেক্টিভ উপন্যাস দেখে এটাই আগে ছাপাবেন, এমনটা ভেবে। কিন্তু ভাগ্যদেবীর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়ে গেল “সূর্যদীঘল বাড়ি”। বাকিটা ইতিহাস। এই ক্লাসিক উপন্যাসের লেখক হিসাবে প্রাপ্ত(যোগ্য) সুনাম যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সেজন্যে চৌত্রিশ বছর বাক্সবন্দী থাকলো “জাল” উপন্যাসটির পান্ডুলিপি। ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আনন্দপত্র ঈদ সংখ্যায়।

“জাল” পড়ে শেষ করার পর আমার প্রথম অনুভূতি ছিল- “সূর্যদীঘল বাড়ি” উপন্যাসের রচয়িতা এই উপন্যাস লিখেছেন! কিন্তু তার পেশা সম্পর্কে যখন জানতে পারলাম, তখন আবার উল্টোটা মনে হয়েছে। এরকম পেশার একজন লোক রচনা করেছেন “সূর্যদীঘল বাড়ি”! জ্বি, আবু ইসহাক ছিল তৎকালীন পুলিশের ডিটেক্টিভ। জাল উপন্যাসটি রচনার পেছনে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়েছেন। এজন্যেই তদন্তের বর্ণনার পুরো অংশটুকু ছিল বাস্তবমুখী এবং ভীষণ রকম সাবলীল।

উপন্যাসের পটভূমি সদ্য দেশভাগের পরপর বাংলাদেশ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। তখনও প্রতিদিন ওপার বাংলা থেকে রিফিউজি পরিবার পাড়ি জমাচ্ছে এপারে। সেই অস্থির সময়ের সুযোগ নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে জাল নোট পাচারকারী চক্র। জাল নোটের সমস্যাকে ফেলনা করে দেখার সুযোগ নেই, সুযোগ পেলে একটি দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বসিয়ে দেয়া সম্ভব এর সাহায্যে। ক্ষমতার রদবদলও অবশ্যাম্ভাবী। স্বাভাবিকভাবেই এই চক্রের তৎপরতা ঠেকাতে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। আর এখানেই পরিচয় গল্পের নায়ক ইলিয়াসের সাথে। স্পেশাল অফিসার আলী রেজার অধীনস্থ ক্ষুরধার বুদ্ধির এই ডিটেক্টিভের কৌশলের কারণেই জালিয়াত চক্রের একটি চিঠি হাতে চলে আসে। কিন্তু সেই চিঠি আবার গুপ্তসংকেতের মাধ্যমে লেখা। এখানে আরেকবার অবাক হয়েছি। রচনাকাল ১৯৫০ সাল হলেও তদন্তের কোন বিবরণই ব্যাকডেটেড মনে হয়নি। বরং ক্রিপ্টোগ্রাম বা গুপ্তসংকেতের অর্থ উদ্ধার সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ বিস্তারিত যে বর্ণনা দিয়েছেন আবু ইসহাক সাহেব, তাতে চোয়াল ঝুলে যেতে বাধ্য। ক্রমশ জটিল হতে থাকে রহস্য। খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মতন করেই সামান্য সব সূত্র জোড়া দিয়ে অবশেষে পালের গোদার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তবে এ কাজে ইলিয়াসকে সাহায্য করে রিফিউজি পরিবারের মেয়ে রোকসানা। তার পেছনে নিজের স্বার্থও আছে কিছুটা, জালিয়াত চক্রের দ্বারা প্রতারিত বাবাকে জেল থেকে বের করতে হবে তাকে। ইলিয়াস আর রোকসানার রসায়নও সমগ্র উপন্যাসের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক। সাবপ্লট হিসেবে তোতলা দরবেশের যে কাহিনীর অবতারণা করেছেন লেখক, সেটাও উপভোগ্য।

সবমিলিয়ে চমৎকার একটি রহস্যোপন্যাস ‘জাল’। ছদ্মবেশ, অদৃশ্য কালি, বাস্তবধর্মী তদন্ত, ক্রিপ্টোগ্রাম, টান টান উত্তেজনা- রহস্য প্রেমীদের ভালো লাগবে। এমন নয় যে আগাগোড়া উপন্যাসটি ‘পারফেক্ট’- কিন্তু রচনাকাল এবং অন্যান্য কিছু ব্যাপার বিবেচনায় আনলে সেসব উপেক্ষা করাই যায়।

Profile Image for Farhan.
725 reviews12 followers
May 5, 2020
এই বই নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। মাস্টারপিস হয়তো নয়, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইউনিক পিস তো বটেই। আবু ইসহাক আমাদের কাছে অতি পরিচিত নাম; পাঠ্য বইতে পড়েছি তাঁর মহাপতঙ্গ আর জোঁক, সিনেমা হয়েছে তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস সূর্য দীঘল বাড়ি নিয়ে, মোটের উপর তিনি বাংলাদেশের একজন মূলধারার নামজাদা সাহিত্যিক। এরকম কেউ এই দেশে ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখেন না জাত খোয়ানোর ভয়ে, এবং লেখক নিজেও বলেছেন যে, প্রথমদিকে তাঁর 'সূর্য দীঘল বাড়ি' উপন্যাসের প্রকাশক না পেয়েই তিনি ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর ১৯৫৪ সালে লেখা শেষ হবার সময়েই আগের উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়, এবং তারপরেরটা একেবারে ইতিহাস--সেই উপন্যাস দিয়েই বাংলা সাহিত্যে তাঁর জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেন তিনি। আর যেহেতু তিনি তখন 'মূলধারায়' কল্কে পেয়ে গেছেন, ডিটেকটিভ উপন্যাস প্রকাশ করে আর নিজের 'সিরিয়াস সাহিত্যিক'-এর আসন খোয়ানোর ঝুঁকি নেননি; ৩৪ বছর সে জিনিস বাক্সেই বন্দী করে রেখেছেন। সে উপন্যাস প্রকাশিত হলো কিনা ১৯৮৮ সালে। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের থ্রিলারপ্রেমীদের। কাজী আনোয়ার হোসেন নয়, বরং আবু ইসহাককে দিয়ে সেবা প্রকাশনী বা মাসুদ রানার এক যুগ আগেই গোড়াপত্তন হতে পারতো সিরিয়াস ধরণের মৌলিক থ্রিলারের; ৬৪ বছর পরে এই উপন্যাসটা পড়ে সে বিশ্বাসই দৃঢ় হয়েছে।
কেন? কারণ বাংলাদেশে তো বটেই, বাংলা ভাষাতেই এতটা বাস্তবঘেঁষা বিশ্বাসযোগ্য পুলিশ ডিটেকটিভ উপন্যাস আর লেখা হয়েছে কিনা সন্দেহ। হ্যাঁ, বাঁকাউল্লার দপ্তর, সেকালের দারোগার কাহিনী, দারোগার দপ্তর কিংবা হালের গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার পড়েই বলছি। ওগুলো মোটামুটি পুলিশ কেস হিস্ট্রি, একদম ফুল ফ্লেজেড উপন্যাস নয়, এবং যারা সেগুলো লিখেছেন তারা সেগুলোর প্লট নিয়ে গল্প সাজানোর কষ্ট করেন নি, কাজেই যা দাঁড়িয়েছিল সেগুলো একদমই কাঠখোট্টা নীরস জিনিস। আবার ব্যোমকেশ-কীরিটি-ফেলুদা-কাকাবাবু-অর্জুন-কর্নেল-গোগোল-মিতিনমাসী-তিন গোয়েন্দা যতই ভালবাসি না কেন, ওগুলো বড় বেশি কাল্পনিক, বড় বেশি সুপারহিরো, বাস্তব থেকে অনেক অনেক দূরে। কিন্তু 'জাল' উপন্যাসের ইন্সপেক্টর ইলিয়াস একদম বাস্তবের মত, কারণ আবু ইসহাক নিজেই ছিলেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর (সারপ্রাইজ, সারপ্রাইজ! একেবারেই জানতাম না, অনুমানও করতে পারিনি কোনদিন।)। কাজেই ইলিয়াস বুদ্ধিমান পুলিশ হলেও অতিবুদ্ধিমান নন, কর্মঠ হলেও এক টিপে পাখ���র চোখ গাঁথার মত ধনুর্ধর নন, তাঁর তদন্ত পদ্ধতিও রুটিন বাঁধা, কোন ঐশ্বরিক প্রতিভায় প্রাপ্ত সমাধান নয়। আর তাঁর সহকর্মীরাও আমাদের আশপাশে দেখা পুলিশের লোকজনই। কাজেই এ উপন্যাস পড়তে পড়তে আপনি চেয়ারের উপর উঠে বসবেন না, বা উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপবেন না, কিন্তু চারপাশের চেনা জগৎ আর সেখানে কাজকর্ম করে খাওয়া মানুষগুলোকে এত ভালভাবে দেখবেন যে, একটানা পড়েই যেতে হবে।
আগেই বলেছি, লেখার সবচেয়ে দারুণ দিক লেগেছে পুলিশের বাস্তব তদন্ত পদ্ধতি। বাস্তব তদন্ত ম্যাজিকের মত চলে না, বা সেখানে সারাক্ষণ উত্তেজনা বা গোলাগুলি বা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে না, বরং সেটা রুটিন বাঁধা একঘেঁয়ে কাজ, যেখানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি এবং বুদ্ধিমত্তার চেয়েও সাফল্য নির্ভর করে একগুঁয়ের মত তদন্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে গুছিয়ে কাজ করার উপর। কাজেই ইলিয়াস যেভাবে প্রায় শূন্য থেকে চিঠির সূত্র বের করেন বা চিঠির বক্তব্য থেকে ট্রেন লাইনের রুট ধরে অপরাধীদের খানিক অনুমান, খানিক তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উপর ভর করে একজন একজন করে বাদ দিয়ে জালের কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যান, সেটা দারুণ লেগেছে। আর সবচেয়ে বড় চমক হলো চিঠির কোডব্রেকিং। হ্যাঁ, শার্লক হোমসের 'দ্য ড্যান্সিং মেন'-এর পদ্ধতির মত, কিন্তু সেটা ছিল ইংরেজির জন্য, বাংলার ৫০টা অক্ষর আর স্বরচিহ্ণ মিলিয়ে সেই পদ্ধতিতে কাজ করা একেবারে অভাবনীয় চমক। জিনিসটা পুলিশ বিভাগেও পড়ায় কিনা জানা নেই, কেউ থাকলে বলতে পারেন। লেখক যেভাবে অক্ষর ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সি দেখিয়েছেন সেটাও অবশ্য যাচাই করতে পারছি না, ভাষাতাত্ত্বিকরা বলতে পারবেন। কিন্তু অ্যাপ্রোচটা দারুণ, এবং এখন পর্যন্ত দুই বাংলার কোন উপন্যাসে এই কাজ করতে দেখিনি, হলফ করে বলতে পারি। ৬৪ বছর আগে লেখা উপন্যাস, বইয়ে লেখা বেশ কিছু জায়গা এবং ট্রেন রুট পাল্টে গেছে, কিন্তু তাতে মোটেই খাপছাড়া লাগে না কিছু। ভেবে দেখুন, শার্লক হোমসে ভিক্টোরিয়ান লন্ডন বা ব্যোমকেশে দেশভাগপূর্ব কোলকাতা বরং আকর্ষণ আরো বাড়ায় না? এখানেই সংবাদপত্রের কাঠখোট্টা রিপোর্টের সাথে একজন কথাসাহিত্যিকের তফাৎ; তিনি স্থান কাল ছাপিয়ে যেতে পারেন। তবে হ্যাঁ, উপন্যাস্টা খুবই স্বল্প পরিসরে লেখা, সেজন্য ইন্সপেক্টর ইলিয়াস বাদে কারো চরিত্রই সেভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। বিশেষত রোকসানা যে ব্যোমকেশের সত্যবতীর চেয়েও দারুণ কিছু হতে পারতো, কিন্তু লেখক ভদ্রলোক জীবনে আর কোন ডিটেকটিভ উপন্যাসই 'সস্তা জিনিস' ভেবে না লেখায় আমরা কতটা বঞ্চিত হলাম, সেটা ভেবেই আফসোস হচ্ছে।
বাজে ব্যাপারটা হলো, ৩৪ বছর অপেক্ষার পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হবার পরও ৩২ বছর চলে গেছে, কিন্তু বাংলা ডিটেকটিভ আর থ্রিলার পড়ার বেশ ভাল অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, (বলা যায়, সেবা থেকে বাতিঘর পর্যন্ত) এরকম বাস্তবানুগ তদন্ত পদ্ধতি এবং সেই সাথে এরকম কোড ব্রেকিংয়ের বৈজ্ঞানিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে একটা লেখাও পড়িনি, অথচ বিদেশে এরকম খেটেখুটে গবেষণা করে লেখা থ্রিলার শত শত। সেদিক থেকেও এই উপন্যাস সকল মিস্ট্রি ও থ্রিলারপ্রেমীর পড়ার ও ভাবার দাবী রাখে। বইটা দুর্লভ, কাজেই অনলাইনেই পড়তে হলো। যারা পুরো বইটা টাইপ করে পিডিএফ করেছেন, তাদের নামও দেয়া আছে, একজন ক্ষুদ্র পাঠকের পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। এমন নিঃস্বার্থ লেখক-পাঠক যখন দেখি, তখন বাংলা ভাষা আর লেখালেখির ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই আশাবাদী হয়ে উঠি।
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
April 23, 2021
ছোট কিন্তু পারফেক্ট সাইজের একটা বই। সমস্ত কিছু এই ১০০ পাতায় গুছিয়ে এনেছেন লেখক। আবু ইসহাক সামাজিক উপন্যাসের পাশাপাশি ডিটেকটিভ উপন্যাস যদি আরও লিখতেন ব্যোমকেশ, ফেলুদার মত আমরাও হয়ত বাঘা ইলিয়াস ডিটেকটিভ পেতাম।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
May 19, 2021
৩.৫/৫
সময়ের তুলনায় বেশ অগ্রসর কাহিনি।গোছানো, সুন্দর লেখা।কোড ভাঙার অংশটা দুর্দান্ত।পড়ার পর মনে হচ্ছে-উৎসাহের অভাবে আবু ইসহাক ইলিয়াসকে নিয়ে পরে কিছু লেখেননি।নাহয় আমরাও একটা ভালো গোয়েন্দা সিরিজ পেতে পারতাম।
Profile Image for বিমুক্তি(Vimukti).
156 reviews88 followers
June 18, 2020
বাংলা সাহিত্যে এই বই একটা ইউনিক পিস। যদি ব্যোমকেশ এর এর প্রথম বই 'সত্যান্বেষী' বা 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি' থেকে এই বই যে অনেকখানি ভালো তা যেকোনো সাধারণ পাঠকেরই বোধগম্য হবে। সেই দিক থেকে ইন্সপেক্টর ইলিয়াসের শুরুটা হয়েছিল ফেলুদা বা ব্যোমকেশ থেকে ভালোরকম।
কোডব্রেকিং নিয়ে অসাধারণ আলোচনা রয়েছে। এছাড়া বই এর শেষে তিনটা রহস্যলিপিও দেয়া হয়েছে। আগ্রহী হলে সমাধান করে ফেলতে পারেন।

আসামীর পিছনে সিনেমার মতো পিস্তল নিয়ে না দৌড়িয়েও যে সমস্যার সমাধান করা অনেক ইন্টারেস্টিং তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই বই।

এই বই মারা যাওয়ার আগে পড়া সকল বাঙলা গোয়েন্দাগল্প পাঠকের কর্তব্য।
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews80 followers
November 22, 2020
কয়েকদিন আগে পড়া হলো 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' খ্যাত আবু ইসহাক এর ডিটেকটিভ উপন্যাস 'জাল'। বইটি অসম্ভব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ১৯৫৪ সালে লেখা এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশ হওয়া উপন্যাসটা ভালো লাগার কারন তৎকালীন সময়েও তদন্ত করার পক্রিয়ার কারনে , এত আগের লেখা হয়েও তদন্ত করার প্রক্রিয়া গুলো বেশ ভালো লেগেছে এবং তদন্ত করার প্রক্রিয়া লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা ছিল। গল্পের কিছু জিনিস যেমন রাস্তায় গাড়ির টায়ারের ছাপে অসংগতি বের করা এবং তা দেখে গাড়ির মালিকের পরিচয় বের করার চেষ্টা, ছদ্মবেশ নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করা এগুলো ভালো লেগেছে ।ক্রিপ্টোগ্রাফির কথা আর কি বলবো, সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে চিঠি লেখা এবং চিঠির মানে উদ্ধার করার প্রক্রিয়া সবথেকে ভালো লেগেছে। বইয়ের শেষে সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে দু'টো চিঠি লেখা আছে পাঠকদের বুদ্ধির খেলা দেখানোর জন্য। আর এই ডিটেকটিভ উপন্যাস এমন একজনের লেখা যিনি বাস্তবে গোয়েন্দা ছিলেন কিন্তু আমরা সবাই তাকে চিনি সূর্য-দীঘল বাড়ী উপন্যাসের জন্য। যাইহোক, এত আগের প্রেক্ষাপটে লেখা ডিটেকটিভ উপন্যাসটি আসলেই আন্ডাররেটেড লেগেছে আমার কাছে, আরো বেশি আলোচনায় আসা উচিৎ ছিল। এজন্য লেখক এবং সু অনুবাদক সালমান হক ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ কারন উনার একটা রিভিউ দেখেই বইটা সম্পর্কে জানতে পারি।

বই থেকে লেখকের ভূমিকা তুলে দিলাম, আশা করি সবাই পড়ার চেষ্টা করবেন। ভালো লাগবে।

'আমার প্রথম উপন্যাস সূর্য-দীঘল বাড়ী লেখা শেষ হয় ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে। তারপর চার-চারটে বছর প্রকাশকের সন্ধানে কলকাতা ও ঢাকায় ঘােরাঘুরি করেও বইটির প্রকাশক পাইনি। হতাশ হয়ে ভাবলাম, ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখলে হয়তাে প্রকাশক পাওয়া যাবে। কলম হাতে নিলাম। কিন্তু কী লিখবাে? আমি পেশায় ডিটেকটিভ। আমার পেশাগত প্রশিক্ষণ ও পড়াশুনাে আছে, অপরাধ তদন্তের বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, আর আছে ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখার মত প্রচুর মালমসলা। তাই বিদেশী গােয়েন্দাকাহিনী নকল করে বা তার ছায়া অবলম্বন করে কিছু লেখার প্রশ্নই ওঠ��� না। তাছাড়া অপরাধ তদন্তের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা নেই এমন কিছু লেখকের মতাে আজগুবি ও অবাস্তব তদন্তকাহিনী পরিবেশন করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মালমসলা তাে আছে প্রচুর, কিন্তু কোনটা লিখবাে? ঠিক তখনই মনে পড়লাে, ১৯৫০ সালে জাল নােটের কয়েকটা মামলার তদন্তের ভার পড়েছিল আমার ওপর। সেই অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করেই ‘জাল' উপন্যাসটি রচিত।

১৯৫৪ সালে উপন্যাসটি লেখা শেষ করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি, এমন সময় হঠাৎ ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী উপন্যাসের প্রকাশক পাওয়া গেলাে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে। উপন্যাসটি সাহিত্যিক ও সাহিত্যরসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সূর্য-দীঘল বাড়ী' যে সুখ্যাতি অর্জন করেছে তা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় তখন ডিটেকটিভ উপন্যাস প্রকাশ করা আমি মােটেই সমীচীন মনে করিনি। তাই আমার দ্বিতীয় উপন্যাস 'জাল'-এর পাণ্ডুলিপি সুদীর্ঘ চৌত্রিশ বছর বাক্সবন্দী হয়ে ছিলাে।

১৯৮৬ সালে আমার ‘পদ্মার পলিদ্বীপ উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর জাল’-এর পাণ্ডুলিপি বের করে আগাগােড়া পড়লাম এবং নতুন করে বুঝতে পারলাম, ‘জাল আমার সুনাম মােটেই ক্ষুন্ন করবে না, কারণ এটি একটি ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস, গতানুগতিক ডিটেকটিভ উপন্যাস নয়। তাছাড়া এর ভেতরে আছে অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে আমার উদ্ভাবিত কিছু মৌলিক পদ্ধতি।

উপন্যাসটি ১৯৮৮ সালে ‘আনন্দপত্র ঈদ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়। কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনার পর এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলাে।'
'জাল'
লেখকঃ আবু ইসহাক
নওরোজ সাহিত্য সম্ভার প্রকাশনী
মূল্যঃ ১৫০ টাকা
Profile Image for Samma Irtifa.
43 reviews12 followers
July 28, 2025
হঠাৎ হঠাৎ খুঁজে এমন বই পেয়েও যাই যেগুলোর কথা জানাই ছিলোনা, অথচ বইগুলো আলোচনায় আসা দরকার ছিলো।
তেমনই একটা আন্ডাররেটেড বইয়ের সন্ধান পাই একজন পাঠকের রিভিউ দেখে। অথচ রিভিউটার আগে বইটার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানাই ছিলো না।
বইটির নাম 'জাল", আর এই বইটির লেখক হলেন আমার সবার কাছে পরিচিত "সূর্য দীঘল বাড়ি"র লেখক আবু ইসহাক।

জাল টাকার কারবারের উপর লেখা পুলিশ প্রসিডিউরাল জনরার এই বইটি যখন গতবছর আমার সামনে আসে তখনও জানতাম না যে সেই ১৯৫৪ সালেই কি লিখে রেখেছেন আবু ইসহাক!

তখনকার দিনে জাল টাকার কারবার ছড়িয়ে পড়েছিলো পুরো দেশে। দশ, বিশ, একশ টাকার জাল নোট পাওয়া যাচ্ছিলো বিভিন্ন দোকানে। স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছিলো না। তখন তদন্তে নামে গল্পের প্রধান চরিত্র ইনসপেক্টর ইলিয়াস।

তথ্য প্রযুক্তির যুগের আগে, মেধাকে কাজে লাগিয়ে একজন ইনসপেক্টর কিভাবে অপরাধী চক্র পর্যন্ত পৌছে গেছেন সেটা জানার পর বিমোহিত হতে হয়েছে। ক্ষুদ্র একটা সূত্রকে ভরসা করে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে অপ্রান্তে। আর অদৃশ্য কালিতে লেখা একটা কোডিং করা চিঠির কিভাবে পাঠ উদ্ধার করতে হয় সেটাও সুচারু ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বইতে।

ছোট একটা বই, যার পেজ সংখ্যা মাত্র ১০১ , পড়লে বিশ্বাসই হতে চায়না যে এদেশে এমন একটা মৌলিক থ্রিলার লেখা হয়েছে সেই ১৯৫৪ সালে! কত অল্প পেজে টানটান উত্তেজনাকর একটা থ্রিলার লিখেছেন আবু ইসহাক। বইয়ের ভাষার মাধুর্যতা নিয়ে তো কোনো প্রশ্নই হবে না।

আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে বইয়ের শেষে একটা সাংকেতিক চিঠি রেখেছেন লেখক। বইয়ে শেখানো পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎসাহী পাঠক সমাধান করতে পারবে চিঠিটার।

আফসোস, বইটা আন্ডাররেটেড। এমন বইগুলো ফোকাসে আসা প্রয়োজন। কোনো প্রযুক্তি ছাড়া বুদ্ধি আর শ্রমকে পুঁজি করে কিভাবে তদন্ত করা যায় সেটাও উপভোগ করার বিষয় আছে বইটাতে। চাইলে এক বসাতেই পড়ে ফেলতে পারবেন "জাল" বইটি।

একনজরে:

বই- জাল
লেখক- আবু ইসহাক
প্রকাশনী- নওরোজ
পৃষ্ঠা- ১০৩
মুদ্রিত মূল্য- ২৫০ টাকা
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
May 10, 2021
একেবারে বাস্তবমানসম্পন্ন পুলিশ ইনভেস্টিগেশন থ্রিলার যাকে বলে আর কি ! হাই - ভোল্টেজ মারামারিতে (একশন) ঠাঠাশোঁশোঁগোলাগোলি কিংবা ফ্লোরে পুকুরভরারক্তময় খুনখারাপির উৎপাত নেই, নিছক মগজের জোরে ( পোয়ারোর ভাষায় - ধূসর কোষ ) ক্রাইম সল্ভিং।
লেখার চালে স্ল্যাশ বর্ণনাভঙ্গিতে নন-ফিকশনের কুসুম-কুসুম ঝাঁজ মেশানো। বোধহয় নিজের ( লেখকঃ আবু ইসহাক ) গোয়েন্দা জীবনে 'জাল নোটে'-র কয়েকটা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গল্পের প্লট বিন্যস্ত করেছেন বলেই। তবে, পড়ে এক গামলা চিত্তপ্রসাদ অনুভূতি পেলাম।
Profile Image for Abdullah  Al Mamun .
26 reviews20 followers
May 23, 2021
⭐⭐⭐⭐⭐

লেখকের উপর রাগ হচ্ছে। আরও কিছু গোয়েন্দা গল্প উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো।
Profile Image for Pranjal Kumar Nandi.
57 reviews43 followers
January 19, 2021
এরপর থেকে যখনি ক্রিপ্টোগ্রাফির কোনকিছু নিয়ে পড়বো কিংবা সামনে আসবে সমস্যা সমাধানে, এই বইটার কথা যে মাথায় ভেসে উঠবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। প্রথম কোন বাংলা উপন্যাসে এভাবে একদম পাঠ্য বইয়ের মত করে কোন cipher text ( গুপ্ত সংকেতলিপি) decipher (পাঠোদ্ধার) করতে দেখলাম। বলতে গেলে পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বাস্তবসম্মত গোয়েন্দা উপন্যাস। কোন অশেষ সিক্সথ সেন্স ওয়ালা গোয়েন্দা না, কোন ভাগ্যবান হিরো না, একটা সাধারণ ডিটেক্টিভ দলের জাল টাকা ছাপানোর জালিয়াতি চক্রকে অসীম ধৈর্য নিয়ে ধরার কাহিনীকে ঘিরে এত মারাত্মক একটা উপন্যাস। ১৯৫০ সালের এরকম জাল নোটের কিছু চক্রকে ধরার কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা এইটা। লেখক নিজে একজন ডিটেকটিভ ছিলেন এবং ১৯৫০ সালের কেস গুলায় তিনি নিজেই তদন্তে ছিলেন। তো ১৯৫৪ সালে প্রথম বইটা লিখলেও তা প্রকাশ করেন ১৯৮৮ তে। বইতে শুধু যে চোর-বাটপার ধরা নিয়ে তাই কিন্তু না, এখানে সুন্দর একটা প্রেমকাহিনী আছে, একটা সামাজিক সমস্যারও মজাদার উপস্থাপন আছে। নিজের কাছে মনে হয়েছে, "জাল" এক বসায় পড়ে ফেলার মত বই।

এখন ব্যাপার হল এখানে যে পদ্ধতিতে সংকেতলিপির পাঠোদ্ধার করা হয়েছে, সেই একইরকম পদ্ধতি গতবছর Cryptography Lab এ করতে হয়েছিলো। সেইখানে অবশ্য ইংরেজির জন্য করেছিলাম। ইংরেজিতে সেই cipher method টার নাম ছিল Vigenere Cipher. এটা একধরনের Substitution Cipher. Substitution Cipher সেইসব cipher কে বলা হয় যেইখানে একটা অক্ষর অন্য একটা অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। যেমন আমি HUMAN কথাটার বদলে KXPDQ লিখলাম। এখানে আমি প্রতিটা letter কে তার পরবর্তী ৩ ঘর পরের letter দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি। এইরকম ভাবে আমার কোন বড় চিঠি থাকলে যতবার H আসবে আমি H এর জায়গায় K বসাবো। এই ধারণাটা caeser cipher এর। Caeser cipher নিজেও substitution cipher. উপন্যাসে Caeser Cipher ব্যবহার করা আছে। Vigenere আরেকটু জটিল caesar cipher এর তুলনায়। Caesar cipher এ যেমন সবসময় একটা নির্দিষ্ট letter এর জায়গায় cipher text এ কি বসাবো সেইটা ফিক্সড, vigenere এ তেমন টা না। Vigenere এ দেখা যাবে প্রথম বার H এর জায়গায় K বসলো, কিন্তু পরে আবার যখন H আসবে তখন k না বসে অন্য কোন letter বসবে। এটা একটু কমপ্লেক্স মেথড। আগ্রহীরা চাইলেই youtube video দেখলে সহজে বুঝে যাবে। Cryptography এর জগত অনেক বড় আর মজার। এত এত method আর উপায় একটা text কে cipher করার। কেউ ধৈর্য নিয়ে পড়লে এর প্রেমে পড়ে যাবে।

তো উপন্যাসে letter frequency থেকে letter prediction এর ব্যাপার ছিল যেটা ল্যাবেও করতে হয়েছে। বাংলায় যেমন "া " (আ কার) সব চেয়ে বেশি দেখা যায়, এরপর "ে" (এ কার), তারপর তৃতীয়তে আছে "র"। একইভাবে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় "e", এরপর "t" , এরপর "a". এভাবে এখন যদি ciphertext analysis করে সবচেয়ে যে letter টা অথবা চিহ্নটা বেশিবার আছে সেইটা পাওয়া যায়, তাহলে এটুকু ধরা যায় এইখানে "e" বসবে অথবা "আ" কার বসবে (বাংলার ক্ষেত্রে)। এভাবে করে ধীরে ধীরে সবটুকুই বের করে ফেলা সম্ভব। বাংলার ক্ষেত্রে আরও অনেক নিয়মের কথা বলা আছে। যেইগুলা মূলত কার অথবা ফলা চিহ্নের জন্য। ইংরেজিতে এই সমস্যাটুকু ��িল না।

শুধু cryptography তেই শেষ না। এখানে steganography ও আছে। Steganography হলো সেই পদ্ধতি যেখানে আসল তথ্যকে ছদ্মবেশে রাখা হয় বা লুকিয়ে রাখা হয়। দেখা যাবে লেখা আছে এক কথা, কিন্তু তার আসল অর্থ ভিন্ন। আবার কোন ছবি দিয়ে এমন কিছু বুঝানো আছে যা কেউ খালি চোখে সহজ দেখায় বুঝবে না। আবার কোন ধাঁধা দিয়ে কোন তথ্য গোপন করা আছে। তাই চোখের সামনে থেকেও অদৃশ্যমান। পুরোটা মিলিয়ে বইটা জমজমাট। এই বছরে পড়া প্রথম বই। ২০১৭ সালের বইমেলাতে কিনেছিলাম। ৪ বছর পর পড়লাম। আমি একদম দীর্ঘসূত্রিতার গুরু যাকে বলে আরকি।
Profile Image for Samsudduha Rifath.
425 reviews22 followers
September 18, 2024
সূর্য-দীঘল বাড়ীর সাথে এটারও আলোচনা আরো দরকার। বেশি পরিমানেই দরকার। যেরকম জিনিস আপনি একটা ডিটেকটিভ উপন্যাস থেকে আশা করেন সবই আছে। কেন,কে এর থেকে বড় হয়েছে কিভাবে করছে তা যা দারুণ করে তুলেছে বইটাকে। রহস্যজনক চিঠি উদ্ধারের জায়গাও দারুণ। লেখক নিজেই কিন্তু ডিটেকটিভ ছিলেন।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
August 6, 2020
আবু ইসহাক যে পেশায় ডিটেক্টিভ ছিলেন তা এর আগে জানাই ছিলো না! ১৯৫০ সালে জাল নোট এর কয়েকটা মামলার তদন্তের ভার পড়েছিলো তাঁর উপর৷ সেই অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করেই এই উপন্যাসটি রচিত।
অতিমাত্রায় আন্ডাররেটেড একখানা বই। কোড ব্রেকিং এর উপর যে আলোচনা দেয়া হয়েছে বইতে, তা খুবই চমৎকার।
Profile Image for DEHAN.
275 reviews87 followers
July 7, 2020
খুব চমৎকার গোয়েন্দা কাহিনি পড়লাম । আবু ইসহাক ডিটেকটিভ ছিলো জানতাম না তো !
Profile Image for Abhishek Saha Joy.
191 reviews56 followers
July 11, 2020
এতোদিন যেসব গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি তা সবই লেখকের কল্পনা।কিন্তু এই উপন্যাসের লেখক নিজেই একজন গোয়েন্দা।তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই রচিত এই উপন্যাসটি।
ইংরেজিতে বিভিন্ন সংকেত ডিকোড করা নিয়ে সিনেমা বা বই তো অনেক পড়া আছে সবারই।চমক হিসেবে এই বইতে আবু ইসহাক একটি অনবদ্য বাংলা ভাষার কোড ব্রেকিং এর বর্ণনা দিয়েছেন।অসাধারণ বললেও কম বলা হবে এই কোড ব্রেকিং অংশটুকুকে।তারপর ছোলা দিয়ে কিভাবে অপরাধ করা যায় তারও একটি ধারণা পাবেন।
এখন আসি বইটি কেমন লাগলো তা নিয়ে। একজন সত্যিকারের গোয়েন্দার কাহিনী পড়ার ব্যাপারটা যথেষ্ট থ্রিলিং।কাহিনী ফাস্ট পেইসড।কিছু কিছু জায়গায় লেখনী বিরক্তির উদ্রেক করেছে।সব মিলিয়ে বাংলা সাহিত্যের একটি আন্ডাররেটেড বই 'জাল'!

এটাই কি বাংলাদেশের প্রথম মৌলিক থ্রিলার?কেউ বলতে পারবেন?
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
June 2, 2020
ইলিয়াসের কোড ব্রেকিং অংশটা! উফফ! 🔥🔥

আমি কোডের ছবিগুলো দেখে ধরেই নিসি এটা হয়তো বা হায়ারোগ্লিফিক্সে লেখা। বেক্কল রে বেক্কল! 😤😂
Profile Image for Mohammad Kamrul Hasan.
342 reviews15 followers
January 18, 2023
আফসোস করছি লেখক আর এমন ডিটেকটিভ লিখেননি বলে। আরো আফসোস হচ্ছে বর্তমানের মতো লেখকের সময়ে এমন পাঠক ছিলো না। যদি থাকতো তাহলে আবু ইসহাক আরো লিখতেন গোয়েন্দা ইলিয়াসকে নিয়ে।

আমার এখনো কল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছে, আজ থেকে ৩৪ বছর আগে লেখক এতো অসাধারণ আপডেট লেখা লিখলেন কি করে।
Profile Image for Sakib A. Jami.
334 reviews36 followers
August 12, 2023
সময়টা দেশভাগ পরবর্তী। দেশভাগ হয়েছে বেশ কিছু বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দাঙ্গা থেমে থাকেনি। হিন্দুস্তানে বসবাসকারী মুসলমানরা যেমন প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলে, ঠিক তেমন পাকিস্তানের মাটিতে থাকা অন্য ধর্মের মানুষকেও প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হয়। এখানে কেবল দেশভাগ হয়নি, হয়েছে ধর্মের ভেদাভেদ। তুলে দেওয়া হয়েছে জাতিসত্তার বিভেদের দেয়াল। ফলে শরণার্থীদের মতো মানুষের পাল দেশ ছাড়া হচ্ছে, কেউ এ-দেশ থেকে ও-দেশে যাচ্ছে। ও-দেশ থেকে মানুষ এ-দেশে আসছে। ধর্মীয় অনুভূতি যেন নির্ধারণ করে দিচ্ছে মানুষের ভিটে মাটির অস্তিত্ব। জন্মস্থান ছেড়ে দিতে হচ্ছে জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে।

এই সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু মানুষ। ভারত থেকে এই পূর্ব পাকিস্তানে পা রাখা মানুষদের জীবনধারণের জন্য চাই অর্থ। কিন্তু ও-দেশের টাকা এ-দেশে চলবে না। তাই অর্থ বদল করতে হতো। সেই অর্থ বদলের দায়িত্ব যেসব দালাল আছে, তারা সত্যি মানুষের উপকারে আসে? কিছু অসাধু মানুষ আছে যারা বদলে দেওয়া টাকায় মিশিয়ে দিচ্ছে জাল নোট। যে মানুষটা নিজের জন্মভূমি ছেড়ে অন্য বিভ্যুইয়ে কেবল টিকে থাকার এসেছে, তাদের অর্থ আত্মসাৎ করার মতো মানুষ যে নির্দয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সাথে জাল নোটের কারবারে ফেঁসে যায় সেই অসহায় মানুষও। ফলে জীবনের থেকে সব রঙ হারিয়ে যায়, পরিবারের উপর থেকে ছায়া সরে যায়। জাল নোটের কারবার খুব ভয়ানক জিনিস, একবার ফেঁসে গেলে আর পরিত্রাণ পাওয়া যায় না।

পূর্ব পাকিস্তানে নোট জালিয়াতির কারবার চলছে অনেকদিন ধরে। পুলিশের একটি দল চেষ্টা করেও এর রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না। টুকরো টুকরো ঘটনা সামনে এলেও এর সাথে জড়িত সকলেই থাকছে আড়ালে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাল টাকা আবিষ্কার হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু সুরাহা হচ্ছে না। অবসর নেওয়া ঝানু গোয়েন্দা মিস্টার আলী রেজা আবারও ফিরেছেন এই কঠিন রহস্য সমাধানের জন্য। চারিদিকে পুলিশের নামে বদনাম চলছে। উপরমহল থেকে চাপ আসছে। গোয়েন্দা বিভাগ কি কোনো কাজ করছে, না বসে বসে মাস শেষে মাইনে গুনছে? — এমন প্রশ্নও শোনা লাগছে। কিন্তু সামান্য সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে, সবই যেন মরীচিকা।

গোয়েন্দা হতে হলে বিচক্ষণ হতে হয়। ছোটো ছোটো সূত্রের পথ ধরে এগিয়ে যেতে হয়। ছোটো মনে করে যা বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা থেকেও পাওয়া যেতে পারে অমূল্য রতন। সেই রতনের খোঁজ করছে ইলিয়াস। পুরো নোট জালিয়াতির কেস এখন তার উপর। সে ছুটছে রংপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের মতো জায়গায়ও। যেখানে সূত্র পাচ্ছে, ছুটে যাচ্ছে। এরই মধ্যে হাতে আসে একটি চিঠি। সাংকেতিক এই চিঠির মর্মোদ্ধারের জন্য যে সময় আর মস্তিষ্ক ব্যয় হচ্ছে, তাতে কি মিলবে আলোর দেখা? সত্যিই এমন গুপ্তচিঠির সমাধান করতে পারবে ইলিয়াস। সমাধানের পর সত্যের দেখা মিলবে? না-কি সব শ্রম-ই পন্ডশ্রম?

এক তোতলা দরবেশে মজেছে মিস্টার আলী রেজা। বেশ কামেল দরবেশ। যা বলে তা-ই যেন হয়! ধর্মের বাণী ছড়িয়ে দেওয়া এই দরবেশকে নিজের এক জায়গা ছেড়ে দিয়েছে আলী রেজা। সেখানে দরবেশের দরগা হবে। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের আনাগোনা হবে। ধর্মের নাম করে মানুষের সহানুভূতি জয় করা বেশ পুরনো পন্থা। সেই পন্থা এই তোতলা দরবেশ অনুসরণ করছে, না সত্যি তার মধ্যে এমন কিছু আছে যা বিস্ময়ের জন্ম দেয়। ইলিয়াস এর র��স্য উদঘাটন করবে। কিন্তু কীভাবে? সত্যি যদি দরবেশের অলৌকিক শক্তি থাকে, তাহলে ইলিয়াসের ক্ষতি হবে না তো?

যারা নোট জালিয়াতির সাথে জড়িত, তারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুয়েকটা চুনোপুঁটির খোঁজ পাওয়া গেলেও রাঘব বোয়ালরা থাকে আড়ালেই। শাস্তির খড়গ নেমে আসে সেইসব চুনোপুঁটিদের ঘাড়ে। কিন্তু ইলিয়াস চায় অপরাধীদের সমূলে উপড়ে ফেলতে। আর এই জন্য জাল বিছিয়েছে সে। সেই জালে ততটা মজবুত হবে কী না বোঝা যাচ্ছে না। জালে বাঁধা পড়বে রাঘব বোয়াল, না জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে?

▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :

লেখক আবু ইসহাককে হয়তো অনেকেই চিনেন ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ বইটির জন্য। কালজয়ী এ বইটি হয়তো বেশিরভাগ পাঠকের পছন্দ। কিন্তু অনেকেই জানেন না, তিনি এক ধরনের দুর্দান্ত গোয়েন্দা কাহিনি লিখে গিয়েছেন যেই গোয়েন্দা কাহিনি অন্য যেকোনো গোয়েন্দা গল্পের চেয়ে কম না।

বর্তমান সময়ে খু ন খারাবি ছাড়া গোয়েন্দা গল্প পাওয়া দুষ্কর। এতেই যেন পাঠকরা স্বস্তি পায়। সেক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমধর্মী এক রহস্যোপন্যাস মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে। যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল রোমাঞ্চকর। বিশেষ করে লেখক যেভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছেন, একই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূত্রের উপর জোর দিয়ে ঘটনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন– তা প্রশংসার যোগ্য। টায়ারের ছাপ থেকে সূত্র খুঁজতে গিয়ে মূল হোতাকে খুঁজে বের করার যে পন্থা লেখক দেখিয়েছেন, সেটা অসাধারণ। সবচেয়ে বেশি দারুণ লেগেছে গুপ্তচিঠির পাঠোদ্ধার। কতটা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা করতে পারলে এভাবে রহস্যের জাল বিছানো যায়। এতে অপরাধীকে খুবই দুর্দান্ত ও শক্তিশালী হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। বাংলা ভাষা দিয়েও যে সাংকেতিক চিঠি লেখা যায়, এই বিষয়টা বেশ ছিল। তাছাড়া মানচিত্র তৈরি করে রহস্য সমাধানের ক্ষেত্র একটু একটু করে কমিয়ে আনা বা তালিকা করে রহস্যের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা লেখকের বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়।

“জাল” বইটি লেখা হয়েছিল সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা না যাতায়াত ব্যবস্থা খুব একটা সহজ ছিল না। তাই অপরাধীকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে অনেক কঠিন বাঁধা এসেছে, সেগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়েছে। সবকিছুকে লেখক খুবই সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন। সেই অতীত সময়ের চিত্র ধারণ করেছেন লেখক। একই সাথে লেখকের বর্ণনা ও ভাষাশৈলী মুগ্ধ করার মতো। গল্পে গতিশীলতা ছিল। কোথাও বিরক্তির ভাব আসেনি। লেখক পুরোটা সময় গল্পের মধ্যেই ছিলেন। মনোযোগ একচুলও এদিক ওদিক হওয়ার সুযোগ রাখেননি।

যদিও বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু গল্পের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়ের আনাগোনা ছিল। যেমন, তোতলা দরবেশের বিষয়টা মূল গল্পের সাথে সামঞ্জস্য কিছুতেই ছিল না। বরং গল্পের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য লেখক এই চরিত্রের অবতারণা করেছেন। খারাপ লাগেনি। একই কথা খাটে রোকসানার ক্ষেত্রে। মেয়েটিকে যেন লেখক এনেছেন রোমান্টিক আবহ তৈরির ক্ষেত্রে। খারাপ লাগেনি। যদিও অনেকে মনে করে এমন সিরিয়াস তদন্তের ক্ষেত্রে এমন রোমান্টিক ক্ষেত্র তৈরি করলে মূল অংশ খেই হারিয়ে ফেলে। আমারও অনেক ক্ষেত্রে তাই মনে হয়। যদিও “জাল” গল্পে রোকসানার আগমন খুব একটা খারাপ লাগেনি। গল্পের প্রয়োজনে এক আধটু রোমান্টিক ঘটনার প্রয়োজন হলে ক্ষতি কী?

শেষটা চমকপ্রদ। বেশ ভালো লেগেছে। যদিও খুব সোজাসাপ্টা আর একটু তাড়াহুড়ো মনে হয়েছে তবুও তৃপ্তিদায়ক। একটা খটকা কিছুতেই যাচ্ছে না। প্রথম সাংকেতিক চিঠি কীভাবে উধাও হলে সেটা খোলসা করা হয়নি। এটা ঠিক যে একটা হাইপোথিসিস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সত্যতা যাচাই হয়নি। তাই আমিও মেনে নিতে পারিনি বিষয়টা।

ইলিয়াস চরিত্রকে বেশ মনে ধরেছে। কর্মঠ এক গোয়েন্দা চরিত্র। এমন গুরুতর রহস্য তদন্ত করতে গেলে অনেক বাঁধা আসে সামনে। শত্রুপক্ষ ক্ষতি করতে চেষ্টা করে। উপযুক্ত প্রমাণ না দেখাতে পারলে উপরমহল থেকেও সাহায্য আসে না। তবুও ইলিয়াস নাছোড়বান্দা। সে এর শেষ দেখে ছাড়বে। কিছু সহযোগী নিয়ে তার চেষ্টা সে করে গিয়েছে। তার এই হার না মানা মানসিকতা ভালো লেগেছে। খুব ছোটো পরিসরে হলেও লেখক এই চরিত্রকে দারুণ প্রানবন্ত করে রেখেছিলেন।

▪️ পরিশেষে, জাল বড়ো ভয়ংকর জিনিস। সে যেই জাল-ই হোক! নোট জাল কিংবা রহস্যের জাল বা অপরাধীর জন্য জাল বিছানো অথবা প্রেমের জাল। একবার এই জালে কেউ জড়িয়ে পড়লে কিছুতেই নিস্তার মেলে না...

▪️বই : জাল
▪️লেখক : আবু ইসহাক
▪️ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৫/৫
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
February 12, 2016
কোডব্রেকিং নিয়ে চমৎকার একটা আলোচনা আছে বইতে।
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews136 followers
June 16, 2021
উপন্যাসখানা শেষ করেছিলেন ১৯৫৪ সালে। এই কথা মনে রেখে বইটা পড়লে চোখের উত্তেজনা মনে আর মনের উত্তেজনা চোখে গিয়ে মিশতে পারে কয়েক বার। কারণ বইটার ভাষা আর বর্ণনা সময়ের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়েই মনে হলো।

বইটা গোয়েন্দা গল্পের হলেও লেখক কিন্তু ডিটেকটিভ উপন্যাসের লেখক নয় বরং স্বয়ং নিজেই ডিটেকটিভ। আর এখানেই পার্থক্য অন্য গোয়েন্দা উপন্যাসের সাথে এই বইটির।

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্পের মত এখানেও তাগড়া কেস আছে। জাল নোটের। সেই নাম অনুসারেই উপন্যাসের নাম "জাল"। সাথে বাড়তি আকর্ষণ তোতলা দরবেশ। আরও আছে এডভেঞ্জার, ছদ্মবেশ, গুপ্তচরবৃত্তি, হালকা প্রেমের প্রলেপ। এসব অনেক গোয়েন্দা উপন্যাসেই থাকে। তবে ঐ যে বললাম পার্থক্য হলো স্বয়ং গোয়েন্দা লিখেছেন গোয়েন্দা উপন্যাস।

১৯৫০ সালে গোয়েন্দা পুলিশ বিভাগে কর্মরত লেখক আবু ইসহাকের বেশ কিছু জাল নোটের মামলা তদন্ত করতে হয়। আর তদন্ত করতে গিয়ে উনি ভাষার ক্রিপ্টোগ্রাফি( Cryptography) কোড ভাঙ্গার নিজস্ব কিছু উপায় উদ্ভাবন করেন। আর উপন্যাসে উনি কিন্তু এই ক্রিপ্টোগ্রাফি কোড ভাঙা নিয়ে উপন্যাসের ছলে নিছক বাহাদুরি দেখান নি বরং পুরো পদ্ধতিটা পাঠকদের শিখিয়ে দিয়েছেন ৩৭ থেকে ৪৩ পৃষ্ঠায়। সংক্ষিপ্ত একটা কর্মশালাও বলতে পারেন।

এই উপন্যাসে লেখক তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতা। একজন গোয়েন্দার কর্মজীবন অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইলিয়াস কখনো রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়িয়েছেন, ঝুঁকি নিয়েছেন, নিয়েছেন একেকদিন একেক ছদ্মবেশ। উপন্যাসের মশলা হিসাবেই শুধু এগুলো লেখা হয়নি, একজন গোয়েন্দা পুলিশের জীবনে এগুলোই বাস্তবতা।

৩৪ বছর পান্ডুলিপিতে বন্দী থাকার পর ১৯৮৮ সালে আবু ইসহাকের গোয়েন্দা উপন্যাস ছাপার কালির স্পর্শ পায়। উনি পাঠকদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে ওনার "সূর্যদীঘল বাড়ি" উপন্যাসের জন্য। ক্লাসিক হিসাবে উপন্যাসটি দুই বাংলার ভেতরেও অসামান্য এক সৃষ্টি। তবে থ্রিলার বা ডিটেকটিভ পাঠকদের জন্য জাল উপন্যাসটি অবশ্যই সুপাঠ্য হবে। অন্যরাও পড়তে পারেন। ঐ ৬/৭ (৩৭-৪৩) পৃষ্ঠা বাদে বইটাখানা কখন শেষ হয়ে গেল টেরই পাবেন না।
Profile Image for Subrata Das.
164 reviews19 followers
August 25, 2022
চমৎকার, দারুন, অসাধারন।

১৯৪৫ সালের প্রেক্ষাপটে এত দারুন , টানটান উত্তেজনাময় গল্প লেখা সহজ নয়।
বইটি পড়ে যেন মনে হল পুরো তদন্ত চোখের সামনে দেখছি, এত বিস্তারিতভ��বে খুটিনাটি উল্লেখ করেছেন লেখক।
আর বাংলাভাষাতেও যে ক্রিপ্টোগ্রাম করা যেতে পারে কখনও ভাবি নি।
সাংকেতিক ভাষায় চিঠি লেখার ব্যাপারটা দারুন লেগেছে।

বইটির কথা প্রথম জেনেছিলাম ফেসবুকের এক গ্রুপে, এক আপু রক্তারক্তিহীন থ্রিলারের সাজেশন চেয়েছিলেন।
সেখানে এক ভাইয়া এই বইটি সাজেস্ট করেছিল। সে ভাইয়াকে ধন্যবাদ।
আবু ইসহাককে চিনতাম তার সূর্য দীঘল বাড়ীর জন্য। তার এই বইটি তাকে আমার মনে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
লেখকের পুলিশি পরিচয় পেলাম বইটিতে। আমার বিশ্বাস ইলিয়াসকে নিয়ে আরো কিছু বই লিখে ইলিয়াসকে দারোগা প্রিয়নাথ , ফেলুদা কিংবা কাকাবাবুর মতো অবিস্মরণীয় করে রাখতে পারতেন লেখক।
Profile Image for Galib.
276 reviews69 followers
December 27, 2020
ভারত পাকিস্তান আলাদা হবার পর দাঙ্গা ছড়িয়ে পরলো।অনেক মুসলমান ভারত থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী হলো। পুরাতন মুদ্রা অচল হওয়ায় একদল লোক মুদ্রা বদলে জাল নোট ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে এসব শরণার্থীর মাঝে।

অবসরপ্রাপ্ত ঝানু ডিটেক্টিভ মি. আলী রেজাকে ডেকে আনা হয়েছে কেস সলভ করার জন্য। তখনই উদয় হয় তোতলা দরবেশের।
....
..
লিখতে ইচ্ছে করে না আর 🙄
কেস সলভিংয়ের সুন্দর বর্ণনা আছে, মনে হবে সবকিছু যেনো চোখের সামনে ঘটছে!!

( ছোট্ট বই।পড়তে ৪৫/৫০ মিনিটের বেশি লাগবে না)
Profile Image for Subrata.
12 reviews
September 9, 2016
আবু ইসহাক-এর সাথে পরিচয় দীর্ঘদিন আগে "সূর্য দীঘল বাড়ি" বইটির মাধ্যমে। সেই লেখক যে এরকম একটি খাঁটি দেশী ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখে গিয়েছেন তা সত্যি অবাক করার মত! তাও আবার সুদূর ১৯৫৪ সালে! তবে লেখকের পেশাগত পরিচয় জানার পর বিষয়টি আবার ১৮০ ডিগ্রী উল্টে গেলো। তখন মনে হতে লাগলো যে এরকম একজন ব্যক্তি কি করে "সূর্য দীঘল বাড়ি"-র মতো অসাধারণ একটি উপন্যাস লিখলেন!

যাই হোক, একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো বইয়ের নায়ক কোন প্রাইভেট ডিটেকটিভ নয়, বরং পুলিশের একজন ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর। এটি একদিকে যেমন বইটিতে একটি ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে, সেইসাথে নায়ক পুলিশ হওয়ায় পুলিশি প্রসিডিউর সম্পর্কে বেশ একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। আরেকজন রিভিউয়ার যেমনটি বলেছেন, বইটিতে কাহিনীর প্রয়োজনে কোডব্রেকিং সম্পর্কে বেশ তথ্যসমৃদ্ধ চমৎকার একটি আলোচনা আছে। বাংলা ডিটেকটিভ উপন্যাসের পাঠকদের অবশ্যই বইটি পড়ে দেখা উচিৎ।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
November 12, 2020
সূর্যদীঘল বাড়ি, জোঁক কিংবা মহাপতঙ্গের লেখক 'জাল' এর মতো একটি রহস্যোপন্যাস লিখে ফেলেছেন! পড়তে বেশ লেগেছে। লেখকের নানা ধরনের রচনার এক অনায়াস দক্ষতা যে ছিলো, তা প্রমাণের জন্য জাল এর দরকার আছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখার ফলে কেসের খুঁটিনাটি দিকগুলো হয়েছে অনেক বেশি নিখুঁত। বিনোদনের জন্য এই বইটি একটি সুন্দর নির্বাচন।
Profile Image for Koushik Ahammed.
150 reviews12 followers
June 13, 2020
এমন বর্ষাময় সন্ধ্যায় এমন বই পাঠক মাত্রই পড়তে চাইবে। আর বর্ষণমুখর দিন যদি না ও জুটে তাহলেও এই বই হতাশ করবে বলে মনে হয় না।

টেকনোলজির সাহায্য ছাড়া আস্ত একটা গ্যাং ধরতে পারা দারুণ তৃপ্তি দিল।

হ্যাঁ, এই বইয়ের ও একটা খারাপ দিক ছিল আমার কাছে। সেইটে হলো এই যে, আমাদের এই দুঁদে গোয়েন্দার কোন গালভরা নাম ছিল না। ব্যোমকেশ বক্সী বা প্রদোষ চন্দ্র মিত্র এমন একটা ভারিক্কি নাম হলেই আমার আর কিছু চাওয়ার ছিল না।

গোয়েন্দা হিসেবে ``ইলিয়াস'' নাম যে বড্ড বেশি বাস্তব মনে হয়!!! ঠিক বই পড়ছি এই ফ্লেভার টা ঠিক থাকে না। মনে হয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে কারও বয়ান শুনছি।
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
April 29, 2021
এক বসায় পড়ার মতো চমৎকার একটি বই। সবচেয়ে চমকপ্রদ লেগেছে সাংকেতিক চিঠি ও চিঠির রহস্যভেদ এর ব্যাপারটা।
Profile Image for Habib Rahman.
74 reviews1 follower
June 15, 2024
কোড ব্রেকের অংশটা শার্লক হোমসের The Adventure of the Dancing Men গল্প থেকে অনুপ্রাণিত মনে হলো। তবে যাই হোক, কোনোভাবেই একে ডয়েলের গল্পের থেকে কম বলা যাবে না। সময়ের তুলনায় অগ্রগামী এ উপন্যাসটি বেশ উপভোগ করেছি।
Profile Image for Klinton Saha.
357 reviews5 followers
June 25, 2023
লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা উপন্যাস এটি। দেশজুড়ে যখন জাল নোটের ছড়াছড়ি,তখন এই অবৈধ কর্মকান্ডের মূল হোতাদের ধরতে ব্যতিব্যস্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইলিয়াস। পাওয়া যায় বেশ কিছু গুপ্ত সংকেত ব্যবহৃত চিঠি।অত্যন্ত সুনিপুণতার সাথে অর্থ উদ্ধার করা গেলেও সামনে আসে বেশ কিছু সংকেত।এর মধ্যে জড়িয়ে যায় কলকাতা থেকে রিফিউজি হয়ে আসা রোকসানার বাবা। তাকে বাঁচাতে রোকসানাকে সহকর্মী করে তদন্তে নামে ইলিয়াস।হ্যা এরই মধ্যে তাদের প্রেমও হয়ে যায়।
শুরু থেকেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে মিলেমিশে ছিল ধর্মব্যবসায়ী তোতলা দরবেশ। তার সাথে কি কোনো যোগসূত্র আছে জাল নোট চক্রের? জানতে চমৎকার এই ছোট্ট বইটি পড়তে পারেন।
Profile Image for Rabeka Mustarina.
48 reviews24 followers
June 28, 2021
পূর্ব পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে লেখা গোয়েন্দা উপন্যাস। দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে জাল নোট, তা আটকাতে তৎপর গোয়েন্দা বিভাগ। কোন অতিরঞ্জিত এডভেঞ্চার নেই উপন্যাসে। গোয়েন্দা পুলিশের কাজ করার বাস্তবিক ধরণ ই সুন্দর করে তুলে ধরেছেন লেখক। ব‌ই এর যে জিনিসটা বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে তা হলো বাংলা বর্ণমালা দিয়ে রচিত ক্রিপ্টোগ্ৰাম আর তা সমাধানের নিয়মগুলো। বাংলাদেশের প্রথম দিককার ডিটেকটিভ উপন্যাস হিসেবে বেশ ভালো মানের ই বলা যায়।
5 reviews4 followers
May 10, 2020
মাঝেমধ্যেই লেখা একটু কাচা কাচা মনে হইছে যদিও তবুও কইতেই হয় বইটা পইড়া মজা পাইছি। কোড ব্রেকিং সিস্টেম ভাল্লাগছে, অল্প হইলেও রোকসানার প্রেমে পড়ছি, আর মনে হইছে লেখক ক্যান আরো বেশি গোয়েন্দা বই লেখলেন না।
Displaying 1 - 30 of 59 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.