অলাতচক্র মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত লেখক দানিয়েল ও ক্যান্সারে আক্রান্ত তাইয়্যেবার মধ্যকার অস্ফুট ভালবাসা, মানসিক টানাপোড়েন, যুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা একটি উপন্যাস। বাংলাদেশের যুদ্ধ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির এত ভিন্নতা খুব সম্ভবত আর কোথাও এভাবে আসে নি।
আহমেদ ছফা অলাতচক্র উপন্যাসটি প্রথম লিখেছিলেন ১৯৮৫ সালে সাপ্তাহিক 'নিপুণ' পত্রিকার ঈদ সংখ্যায়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে মুক্তধারা থেকে বই আকারে প্রকাশ করেন পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে। খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানির এই সংস্করণে বইয়ের দুইটিই সংস্করণ এবং সেই সাথে ড. সলিমুল্লাহ খানের আলোচনা সংযুক্ত রয়েছে।
Ahmed Sofa (Bangla: আহমদ ছফা) was a well-known Bangladeshi philosopher, poet, novelist, writer, critic, translator. Sofa was renowned for his intellectual righteousness as well as his holistic approach to the understanding of social dynamics and international politics. His career as a writer began in the 1960s. He never married. On 28 July 2001, Ahmed Sofa died in a hospital in Dhaka. He was buried in Martyred Intellectuals' Graveyard.
Sofa helped establishing Bangladesh Lekhak Shibir (Bangladesh Writers' Camp) in 1970 to organize liberal writers in order to further the cause of the progressive movement.
Ahmed Sofa's outspoken personality and bold self-expression brought him into the limelight. He was never seen hankering after fame in a trivial sense. His fictions were often based on his personal experience. He protested social injustice and tried to portray the hopes and dreams of common people through his writing. Sofa always handled his novels with meticulous thought and planning. The trend of telling mere stories in novels never attracted him; he was innovative in both form and content.
বাংলাদেশের যতগুলো প্রেক্ষাপট রয়েছে তার মধ্যে সাহিত্যে সবচেয়ে উপেক্ষিত প্রেক্ষাপট হচ্ছে ভারতে বাংলাদেশী শরনার্থী শিবিরের পিরিয়ডটা। একচুয়ালী এই পিরিয়ডে কোনো উপন্যাস লেখাই হয় নি (অন্তত আমার পড়া হয় নি)। হতে পারে রাজনৈতিক রোষানল এড়াতে কিংবা ধারণা না থাকার কারণে লেখকরা এই বিষয়ে লেখেনা। তো এই অলাতচক্র বইটা কলকাতায় বাংলাদেশী শরনার্থীদের প্রেক্ষাপটে লেখা। এটা আসলে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি চলা একটা স্নায়ুযুদ্ধের গল্প, যা একদিকে দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো, অন্যদিকে দেখাচ্ছিলো ভবিষ্যৎের অনিশ্চিত বাংলাদেশের আশঙ্কা। লেখক আহমদ ছফা শরণার্থী শিবিরে থাকাকালীন অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন এই বই। লেখায় কেন্দ্রীয় বিষয় দানিয়াল আর তায়্যেবার প্রেম নিয়ে লেখা হলেও মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী শিবিরের বিভিন্ন বিষয় একজন সমালোচকের দৃষ্টিতে তুলে ধরা। কলকাতার মানুষের বাংলাদেশীদের প্রতি বিরুপ মনোভাব , জয়বাংলা নিয়ে হাস্যমুখ করা, বাংলাদেশীয় অনেক নেতাদের যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কলকাতায় ফুর্তি ইত্যাদি ইত্যাদি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে লেখক।
আহমদ ছফার লেখা হচ্ছে নির্জনে পড়ার মত। একটু এদিক ওদিক হলেই মূল বিষয়টা ধরা যায় না। এজন্য ওনার সংলাপ ধরতে বেশ কয়েকবার রিপিট রিড দেওয়া লাগছে। বইটায় প্রথমে ভালো ভাবে গেলেও শেষের দিকে পুরোদস্তুর নন-ফিকশন বানিয়ে ফেলেছে লেখক। কিছুটা হতাশা, অধরা প্রেম, আহমদ ছফার লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গিতে বইটা যথেষ্ট উপভোগ্য ছিলো।
আমার প্রিয় দুইটা Genre হল ইতিহাস ও আত্মজীবনী। দুইটাই একসাথে আছে এই বইতে। তাই বেশ আগ্রহ নিয়েই শুরু করা। বইটা শেষ করে খুব অসাধারণ মনে না হলেও ভাল লেগেছে।
বইটা মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় যাওয়া দানিয়েলের জবানিতে লেখা। দানিয়েল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে জীবনের সাথেই যুদ্ধ শুরু হয় তার। গল্পের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তায়েবা, যাকে দানিয়েল ভালোবাসে, যে দানিয়েলকে ভালোবাসে, কিন্তু বাস্তবতা তাদের মিলনের অন্তরায়।
বইটা পড়েছি আহমদ ছফার উপন্যাসসমগ্রতে। কিন্তু একে উপন্যাস বলার চেয়ে আত্মজীবনীই মনে হয়েছে অনেক বেশি। আহমদ ছফার আত্মজীবনীমূলক লেখারই নাকি পরিবর্তিত রূপ এটা।
আমার দৃষ্টিতে বইটার সবচেয়ে ভালো দিক হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মনস্তত্ত্ব ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণ। ঘটনা ঘটে যাবার পর তাকে হাজারভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু ঘটার সময়ের ব্যাখ্যাই ঘটনার গতিপ্রকৃতি সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝাতে পারে। এখানে সেসময়ের কিছু ব্যাখ্যা পেয়ে ভালো লাগল।
নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তাই তা নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টির চেষ্টাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরে লেখা সাহিত্যকর্মগুলোর একটা বড় ব্যর্থতা হলো মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ব্যাখ্যা না করতে পারা। মুক্তিযুদ্ধ পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। কিন্তু তা যতটা না দেশাত্মবোধ থেকে, তার চেয়ে অনেক বেশি জীবনের তাগিদে। যুদ্ধ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ অনেক পরিবর্তন এনেছিল তৎকালীন জীবনে। এর বড় অংশ ইতিবাচক সন্দেহ নেই, কিন্তু বেশকিছু নেতিবাচক পরিবর্তনও এসেছিল। সবগুলো ব্যাপারই লেখাটায় পেলাম। এটাও ভালো লাগার একটা কারণ।
আত্মজীবনী হিসেবে সম্ভবত এটা প্রথমে ছাপা হয়েছিল। পরে পরিবর্তিত হয়ে উপন্যাস হিসেবে ছাপা হয়। মূল লেখাটা পড়া দরকার বলে মনে হচ্ছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আহমদ ছফার উপন্যাস 'অলাত চক্র', মূল চরিত্র দানিয়েলের জবানিতে লেখা উপন্যাসটি অনেকটাই আত্নজীবনি ধরনের বই। অনেক সময় মনে হতেই পারে, ছফা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার কথাই বলে গিয়েছেন। পুরো উপন্যাস জুড়েই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে এক ঠান্ডা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই।
দানিয়েল নামক যুবকটি ৭১ এর যুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। দানিয়েল প্রথম ধাপে চেয়েছিল মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে, কিন্তু শরীর সামরিক বাহিনীর প্রস্তুত না হওয়ায় তার আর রণক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয় না। দানিয়েল ক্ষোভের সাথে বলে, "আমার যুদ্ধ যাওয়া হয়নি। যুদ্ধকে ভয় করি বলে নয়। আমাদের দেশের যে সকল মানুষের যুদ্ধের দায়দায়িত্ব, তারা আমাকে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠাবার উপযুক্ত বিবেচনা করতে পারেনি।"
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ ভিন্ন ধাঁচের এই উপন্যাসে উঠে আসে যুদ্ধ নিয়ে নানা বিশ্লেষন। প্রতিটা ঘটনার সময়ই জন্ম হয় নানা মতের। আমাদের যুদ্ধের সময়েও ছিল নানা পক্ষ। সবার কৌশলও এক ছিল না। কেউ যুদ্ধকে নিয়েছিল নিজের ভাগ্য পরিবর্তণের সুযোগ হিসেবে। মুজিবনগর সরকারের এক মন্ত্রী ধরা পড়েছিল নিষিদ্ধ পল্লীতে। কেউ কেউ আরামে দিন কাটাচ্ছিল থিয়েটার রোডে। যখন ট্রেনিং ক্যাম্পে সৈনিকরা পার করছিল করুণ দিন। এগুলা ইতিহাস। উপন্যাসের দানিয়েলের বন্ধু নরেশদা বলেন, "নিজের প্রান ছাড়া আর কিছু যেখানে বাঁচাবার নেই, সেখানে এ ধরনের বিকৃতিগুলো আসবে, আসতে বাধ্য।"
পুরো উপন্যাস জুড়ে ছিল অনেক চরিত্র। সবার আলাদা আলাদা গল্প লেখক বলে গিয়েছেন যথেষ্ট আবেগ দিয়ে। একদিকে যুদ্ধ যখন স্বপ্ন দেখাচ্ছিল নতুন একটা সূর্যের, অন্যদিকে যুদ্ধ প্রতিদিন তছনছ করে দিচ্ছিল অনেক স্বপ্নের। ছিল নানা জটিলতা।
জটিল রাজনীতির মুক্তিযুদ্ধে দানিয়েল সরল ক্ষোভের সাথে বলে, " নেতা এবং দল এসব মানুষের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করল। কিন্তু তাদের সংগ্রামের ক্ষেত্র রচনা করতে ব্যর্থ হল।"
'অলতা চক্রে' ছফা মুক্তিযুদ্ধকে তুলে এনেছেন একদম শিকড় থেকে। লেখক রচনা করেছেন রনক্ষেত্রের বাহিরে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মানবিক চিত্র। একটা যুদ্ধ কীভাবে বিষিয়ে তুলেছিল মানুষকে, শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর ভাবনা, ছফা তুলে এনেছেন যুদ্ধ ঘিরে সাদা কালো- ধুসর চিন্তাগুলো। ছফার তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তির ছাপ রয়েছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। পাকিস্তান, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, ভাসানী, মোশতাক, ওসমানী সবগুলো চরিত্র হাজির হয় উপন্যাসে, লেখক তুলে আনেন এক রাজনৈতিক মুক্তিযুদ্ধকে।
মূল চরিত্র দানিয়েল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলে যায়, "দশ পনেরো বছর থেকে তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছি। এখন সেই বাংলাদেশ যুদ্ধ করছে। কিন্তু আমি কোথায়? আমার সবকিছু তো চোখের সামনেই ছত্রখান হয়ে গেল। আমার মা কোথায়, ভাই বোনেরা কোথায়, এখানে আমি একেবারে নিতান্ত একাকী আপন রক্তের বিষে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি।"
ইহা একটা হতাশার গল্প, পাওয়া- না পাওয়ার গল্প, মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গভীর মমত্ববোধ, নির্মোহ সত্য ভাষন, আর ব্যাক্তি সংঘাতের গল্প।
মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। জানতে পারলাম মূল লেখাটি আত্মজীবনী ধাঁচের ছিল, পরবর্তীতে পরিবর্তন কর��� হয়। কিছু উপাদান আছে যেগুলো একটি উপন্যাসের ক্ষেত্রে ঠিক মানানসই নয়, আত্মজীবনী হলে মানিয়ে যেত। আর তাছাড়াও মূল ভার্সনটি না পড়ে কিছু বল���ে ঠিক স্বস্তি পাচ্ছি না।
আমার কাছে এই উপন্যাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান মনে হয়েছে ধোঁয়াশার চিত্রায়ন। একটা ঘটনা ঘটে যাবার পর সব কিছু সাদা কালো হয় যায়, পক্ষ বিপক্ষ আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু ঘটবার প্রক্রিয়ার চলতে থাকা ধোঁয়াশা, তৈরি হয় কালো এবং সাদার মাঝে একটি ধূসর এলাকা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের মনে চলতে থাকা ধোঁয়াশার কিছু বিবরণ রয়েছে। যার উৎস আরও কিছু ধোঁয়াশার মাঝে প্রথিত।
মানুষ না চাইলেও, বড় কোনো উদ্দেশ্যের প্রতি সমর্থন থাকার পরও তার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাবলী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, বইয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সেটি।
এই বইটাকে কোন জনরায় ফেলা যায় সেটা নিয়ে শুরুতে একটু দ্বিধান্বিত ছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধ, আত্মজীবনী উভয়ই উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। 'অলাতচক্র'কে সেমি অটোবায়োগ্রাফিক্যাল উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত করলে খুব একটা ভুল বলা হবে না সম্ভবত। আহমদ ছফা-পাঠ শুরু করলাম এটা দিয়েই, অভিজ্ঞতা সুখকর-ই ছিলো বলা যায়।
বইয়ের নামঃ অলাতচক্র লেখকঃ আহমদ ছফা জনরাঃ আত্মজীবনী, উপন্যাস পৃষ্ঠাঃ ২৪০
একটা যুদ্ধ কতো কিছুর পরিবর্তন আনতে পারে? সহজ সরল নির্বিরোধ,কারো সাতে পাচে না থাকা একটা পরিবারের সব কিছু একদম ওলোট পালোট হয়ে যায় যুদ্ধে। এটা কি শুধু যুদ্ধের ই দোষ না আসলে মানুষের মন ও মনননের অন্তস্থল এ এই জিনিসগুলো সবসময়ই লুকায়িত থাকে যুদ্ধ শুধু সুযোগের দ্বার টা উন্মোচন করে দেয় মাত্র? নইলে যে ডোরার অভিভাবকত্বের দায়িত্ব ছিলো জাহিদুলের কাঁধে তার নাবালকত্বের সুযোগ সে নিবে কেন? একারণেই কি যুদ্ধে এক সাধারণ মানুষ এমন মনুষত্ব্য বিবর্জিত ঘৃণ্য কাজ করে ফেলে যা দেখে অন্যরা শিহরিত হয়ে ওঠে? যে কাজটা স্বাভাবিক সময়ে তার কাছে কল্পনাতীত যুদ্ধে তাই হয়ে যায় অপরিহার্য। নইলে যে ছেলে রক্ত দেখলে বমি করে একাকার হতো সে শত্রুর শরীর ছিন্নভিন্ন হতে দেখে উল্লাসনৃত্য করতে পারতো না। নৈতিকতা, মোরালিটির সীমানা টা তখন ধূসর হয়ে যায়, এ পক্ষে যা ঠিক তা ঐ পক্ষে অন্যায় শুধু দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণেই তো। জীবন বাঁচাতে পারলে তারপরে না ঠিক বেঠিক এর অবস্থান চিন্তা করবে। আসলেই কি? অলাতচক্র মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত লেখক দানিয়েল ও ক্যান্সারে আক্রান্ত তাইয়্যেবার মধ্যকার অস্ফুট ভালবাসার কাহিনী। সাহসী তাইয়্যেবার যে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো, শারীরিক অক্ষমতা তাকে যুদ্ধে যোগ দিতে দেয় নি। ভাষা আন্দোলন এ তার কীর্তি কেও জানে না কিন্তু রওশন আরার বানোয়াট বীরগাঁথা যা কাগজের বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশে রচিত হয়েছিলো চারপাশে তারই জয়জয়কার। এ কাহিনীই উৎসাহ দিচ্ছে সবাইকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। এছাড়া একজন শরণার্থীর মানসিক টানাপোড়েন, যুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত, যুদ্ধ নিয়ে কে কিভাবে ভাবছে, সময় কিভাবে সবার ভাবনায় পরিবর্তন আনছে, যে কলকাতাবাসী শরণার্থীদের স্বাগতম জানিয়েছিল প্রথমে তারাই পরে কিভাবে তাদের মত বদলিয়ে নিলো, মানব চরিত্রের বিচিত্র কিছু দিক লেখক খুবই সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির এত ভিন্নতা খুব সম্ভবত আর কোথাও একসাথে আসে নি, রাজনৈতিক ব্যাক্তি, তাদের অনুসারী, চীন, ভারত, পাকিস্তান আমেরিকা, তাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক, বাঙালি হিন্দু, ভারতীয় হিন্দু, বাঙালি মুসলিম ভারতীয় মুসলিম, রাজনীতিবিদ, বিপ্লবী এবং এদের নিজেদের ভিতর এও এত ভিন্ন চিন্তা ভাবনা আর মতাদর্শ, অন্ততঃ এসব সম্পর্কে একটু জানতে হলেও বইটা পড়তে বলব। লেখনীও ঝরঝরে, পড়তে বেশি সময় হয়তো লাগবেনা, আমার লেগেছে যদিও😅। হ্যাপি রীডিং।
১৯৭১ সাল।বাংলাদেশে সারা দেশজুড়ে চলছে যুদ্ধ।দেশে আনাচে কানাচে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তৎপরতা,নির্যাতন,ধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ।রণাঙ্গনে প্রাণ দিচ্ছে হাজারো মুক্তিবাহিনী।কোথাও কোথাও বাংলাদেশি গেরিলারা পাকিস্তানি সৈন্যদের আস্ত ক্যাম্প।স্থলে জলে আকাশে চলছে মুক্তির জন্য লড়াই। তবে এটা মুক্তিযুদ্ধের একটা অংশমাত্র।২৫শে মার্চের সার্চলাইট অপারেশনের পর দেশ ছেড়ে লাখো মানুষ পাড়ি দিয়েছিল ভারতে।ভারতের সীমান্তের কাছে গড়ে উঠেছিল শরনার্থী শিবির।তাছাড়াও মুক্তিবাহিনীদের ট্রেইনিং দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন ট্রেইনিং ক্যাম্প।কলকাতার অলি গলিতে ছিল বাংলাদেশী মানুষদের বিচরণ। বাংলাদেশী সমাজের চিন্তাশীল মানুষদের একাংশ নিয়ে কলকাতায় গড়ে উঠেছিল ক্ষণস্থায়ী একটা সমাজ।'অলাতচক্র' উপন্যাসের লেখক আহমদ ছফাও ছিলেন এই সমাজের একটা অংশ।১৯৭১ এ কলকাতায় অবস্থানকালীন সময়টুকু নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক উপন্যাস লেখকের 'অলাতচক্র'।যুদ্ধে তিনি যেতে পারেন নি, কৈফিয়ত হিসেবে লিখেছেন,‘আমার যুদ্ধ যাওয়া হয়নি। যুদ্ধকে ভয় করি বলে নয়। আমাদের দেশের যে সকল মানুষের যুদ্ধের দায়দায়িত্ব, তারা আমাকে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠাবার উপযুক্ত বিবেচনা করতে পারেনি।’ মূল উপন্যাস যখন লেখক ১৯৮৫ সালে 'সাপ্তাহিক নিপুণ' পত্রিকার ঈদসংখ্যায় প্রকাশ করেন তখন উপন্যাসের সব চরিত্রই স্বনামে ছিল।১৯৯৩ সালে বই হিসেবে প্রকাশের সময় চরিত্রগুলোর নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও উপন্যাসটিকে প্রেমের উপন্যাস বলাই ঠিক হবে।উপন্যাসটির মূল চরিত্র দানিয়েল এবং তায়েবা,দুজনই কলকাতায় বাংলাদেশ থেকে আগত।তায়েবা লিউকেমিয়া রোগে ভুগছে এবং কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি। মৃত্যুপথযাত্রী তায়েবা এবং দানিয়েলের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালাবাসার সাথে বুনেছেন আহমদ ছফা।তায়েবার পরিবার ঘিরে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনা পরিস্থিতি আরো বেগতিক করে তোলে।উদ্দেশ্যহীন দানিয়েল ঘুরে ফেরে কলকাতার অলি গলি। উপন্যাসের কাহিনীজুড়ে উঠে এসেছে যুদ্ধ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, কলকাতায় আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের কষ্ট, তাদের প্রতি কলকাতার মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গি, যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী নেতাদের কলকাতায় ফুর্তি করা। সেই সাথে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিরা কী করে বেড়িয়েছেন, তার একটা খণ্ডচিত্রও রয়েছে। কেউ কেউ আরামে দিন কাটাচ্ছিল থিয়েটার রোডে। ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা পার করছিল কঠিন সময়।কলকাতায় তরুনরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য করে চলেছে প্রচারের কাজ।আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও পড়েছে বিপুল প্রভাব।সেটা নিয়েও করেছেন অনেক বর্ননা। এটি চিরাচরিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস থেকে এটি অনেকাংশেই আলাদা। এই উপন্যাসে সবকিছুই দেখা হয়েছে সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে। উপন্যাস হিসেবে দারুন উপভোগ্য। তবে একটা জিনিস আমাকে বিরক্ত করেছে যে উপন্যাসের কোন চরিত্র কোন সংলাপ দিচ্ছে সেটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল প্রথম প্রথম। শেষের দিকে উপন্যাসের গন্ডি ছাড়িয়ে অনেকটা প্রবন্ধের রূপ নিয়েছিল। এটুকু বাদ দিলে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি উপন্যাস 'অলাতচক্র'।রণাঙ্গনের বাইরেও ঘটে যাওয়া খুটিনাটি স্নায়ুযুদ্ধের অম্লান দলিল।পড়ার জন্য আমন্ত্রণ রইল।
বাংলাদেশের সাহিত্যে আহমদ ছফা অনন্য নাম। নন ফিকশনে নানা চমৎকার কাজ কর�� ছফা সাহেব ফিকশনেও কম মুনশিয়ানা দেখাননি। তার রচিত বেশ কিছু উপন্যাস এখনও বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের অবশ্যপাঠ্য। কেবল তা-ই নয়, পাঠক এ বইগুলো পড়ে রাহিত্যের রসও আস্বাদন করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও আহমদ ছফার লেখা আছে। লেখা বলতে উপন্যাস। এবং তেমনই একটি উপন্যাস ‘অলাতচক্র’। এখানে লেখক তার নিজের অভিজ্ঞতাকে কাহিনী আকারে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
দানিয়েল নামে এক লেখক, মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্ডার পেরিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। যদিও যুদ্ধ করার তার ইচ্ছে ছিল প্রবল কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা কিংবা অন্য অনেক কারনে তাকে ক্যাম্পে গ্রহণ করা হয়নি। এবং যেহেতু দানিয়েল একজন কলম-যোদ্ধা, তাকে বলা হলো তিনি যেন লেখার মাধ্যমে যুদ্ধে সক্রিয় হন।
কিন্তু কীভাবে? যুদ্ধে জড়িত দেশ, আত্মীয় স্বজনকে দূরে ফেলে একটা প্রতিবেশী দেখে ভাসমান অবস্থায় কেমন করে স্থির থাকা সম্ভব? দানিয়েলও পারে না। তবু সে চেষ্টা করে।
গল্প শুরু হয় দানিয়েলের খোঁজের মাধ্যমে। সে খোঁজ করে একটি মেয়ের। পরবর্তীতে আমরা জানতে পাড়ি, মেয়েটি দানিয়েলের ভালোবাসার মানুষ। তায়েবা নামে মেয়েটির জীবনীশক্তি এক সময় দানিয়েলকে অবাক করতো। গল্প যখন বলা হয়, তায়েবা তখন মৃত্যুশয্যায়।
মূলত মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভারতে ‘শরণার্থী’ হিসেবে অবস্থান করা বাঙালীদের চিত্র ফুটে উঠেছে এ বইয়ে। আহমদ ছফা, দানিয়েল চরিত্র সৃষ্টি করে সে চরিত্রের দৃষ্টিতে দেখিয়েছেন সে সময়ে কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া বাঙালীদের যাপিত জীবন, তাদের মনোভাব। যে হোস্টেলে ছফা আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে থাকতো আরও অনেক বাঙালি। এরা কেউই কোন না কোন কারনে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি। তাই ক্ষোভ দূর করতো তারা নানা উপায়ে। কখনও ইন্দিরা গান্ধী, কখনও মুজিব, কখনও থিয়েটার রোডে থাকা কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে তাদের তর্ক হতো।
সে তর্কের মাধ্যমে ছফা দেখিয়েছেন মানুষের ক্ষোভ। সেই সঙ্গে এসেছে তাদের স্বপ্ন, তাদের চাওয়া। আমরা দানিয়েলের সঙ্গে কলকাতায় ঘুরে ঘুরে সে সময়ের কলকাতার মানুষের মনোভাব, তাদের রাজনীতির কথাও জানতে পারি। ছফা তার কলমে যেন তুলে এনেছেন শরণার্থীর এক টুকরো মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি, কিংবা কলকাতার স্মৃতি। সেখানে তায়েবা এবং দানিয়েল নিমিত্ত মাত্র। তাদের প্রেম, চাওয়া পাওয়া এবং জীবনের সমান্তরালে আমরা দেখি একটা সময়।
উপন্যাসের দুটো ভার্শনের মধ্যে ১৯৮৫ সালের প্রথম ভার্শনটা বোশি ভালো লেগেছে সমাপ্তির জন্য। পরের ভার্শনে নায়িকার মায়ের চরিত্র এবং কল্পিত এক বীরাঙ্গনার অংশটি দারুন লেগেছে, কিন্তু, শেষটা মন ভরায় নি।
আমি জানি না কেন সলিমুল্লাহ খানের পরিশিষ্ট যোগ করা হয়েছে। কয়েক লাইন পড়ে আর পড়তে মন চাইল না সে অংশ। তাই বইটার শেষটুকু বাদ দিয়েই শেষ করলাম।
‘অলাতচক্র’ জরুরী বই। কারন, ইতিহাসের মূল সুরে এর সমালোচনা করা রীতিমতো নিষেধ এবং অবমাননার নামান্তর। কিন্তু, অতি ভক্তির চেয়ে ত্রুটিসহই সবচেয়ে মহান ঘটনা এখনো বাংলাদেশের মাটিতে যে মুক্তিযুদ্ধই, তা বুঝতে উপন্যাসের দুটো রূপই সাহায্য করে। কিং লিয়ারের কনিষ্টতম কন্যা আহমদ ছফা, তার উপন্যাসের বাস্তবতাই ‘লবন’।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থী কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন প্রত্যাশী শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র দেখে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার শরণার্থীদের অবস্থা কিছুটা হলেও অনুধাবন করা যায়। এই শরণার্থী জীবনের ছায়ায় লেখকের (চরিত্র - দানিয়েল) তায়েবা নাম্নী এক নারীর সাথে প্রেমের গল্প 'অলাতচক্র'।
উপন্যাসে তায়েবা এবং দানিয়েলের প্রেম বা প্রেম প্রেম ভাবের অংশটুকু দারুণ। ঝরঝরে লেখা আর রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহারের ফলে পড়তে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু উপন্যাসটি মার খেয়ে যায় যখন আহমদ ছফা গল্প লিখতে গিয়ে ইতিহাস লিখতে যান। মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু ভুল/বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখা যায়। পড়তে গিয়ে মনে হয় জোর করেই মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা প্রচেষ্টা যেন। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকেও মুক্তিযুদ্ধ বলতে তেমন কিছুই হচ্ছে না বলাটা ইতিহাসকে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা বলে মনে হয়। তাছাড়া দানিয়েলের চোখ দিয়ে একজন শরণার্থী যুবকের হতাশা বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে। সে সময়ের জীবনসংগ্রামের কষ্ট, রাজনৈতিক দলাদলি, মুক্তিযোদ্ধাদের হতাশা বেশ ভালোভাবে এসেছে।
উপন্যাস কখনোই ঐতিহাসিক দলিল হতে পারে না। সে হিসাবে 'অলাতচক্র' বেশ ভালো বই
একটু কল্পনায় সওয়ার হয়ে এক উদভ্রান্ত যুবকের কথা চিন্তা করা যাক। শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য আর দাসত্বের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়ানো কলকাতা মহানগরীতে সে হেটে চলছে "সম্পর্ক নিরূপণ করতে না পারা" ভালবাসার মানুষকে খুঁজতে। উদভ্রান্ত সে যুবকের মুখে সাত-আটদিনের না কামানো দাড়ি, মুখে অনিদ্রার ছাপ, পায়ের চপ্পল আর পোশাকে সহজেই ঠাহর করা যায় জয়বাংলার লোক বলে। 'জয়বাংলা' শব্দটি ততদিনে দ্রোহ আর মুক্তির প্রতিকী ছাড়িয়ে যথেষ্ঠ ব্যাপকতা লাভ করেছে। ঠিক আজকের দিনের "রোহিঙ্গা " শব্দের মতন। যে শব্দের সাথে মিশে থাকে জাতিসত্তার ইতি পরিচয়, নিজের শেকড় আর মুক্তির পরম আকাঙ্ক্ষা, সে শব্দ কিনা সময়ের আবর্তে অন্য জাতীর কাছেই পরিচিতি পায় দূর্বলতা, সস্তা আর ক্ষণস্থায়ী কোনো কিছুর প্রতিকীরূপে। আহারে! মানবতার ধ্বজাধারী মানুষ! শরনার্থী হয়ে ভিন্ন একটি দেশে অবস্থান করাটা কেমন হতে পারে? ঠিক কেমন হতে পারে তা উপলব্ধি করতে হয়তো আমরা তাকাবো হাল আমলের সিরিয়ান, রোহিঙ্গা অথবা ইউক্রেনীয় জনগোষ্ঠীর দিকে। তবুও অনিশ্চিত জীবন, পরনির্ভরশীলতা কিংবা সময়ের খরস্রোতা প্রবাহে খড়কুটোর মতো ভেসে যাওয়াটা ঠিক কতটা ছুঁয়ে যাবে তা আজকের এই আরাম আয়েশে কাটানো ভার্চুয়াল জেনারেশনের কাছে তা ভাবতে বারবার ভাবনার দুয়ারে ছেদ পড়ে। তার উপর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জনগণের গঞ্জনা, আহমদ ছফার উদ্ধৃতিই সরাসরি তুলে ধরা যাক, ❝ তাদের কেউ যদি ভালো কাপড় পরে – কলকাতার একশ্রেণীর মানুষ ওদের দেখিয়ে বলে, এই দেখো জয়বাংলার মুক্তিসংগ্রামীরা কেমন ধোপদুরস্ত কাপড় পরে ফুলবাবু সেজে ঘুরর বেড়াচ্ছে। যদি পরনে ময়লা নোংরা কাপড়চোপড় থাকে, তখনো অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলে – নোংরা বিচ্ছিরি, এই হতচ্ছাড়াদের দেখলে কার মনে প্রত্যয় জন্মাবে যে, এরা একটি মুক্তিযুদ্ধ করতে পারে? যদি জোরগলায় কথা বলে, তখন মন্তব্য করে, ব্যাটা ভিখিরিদের আস্পর্ধা দেখো! এখানে থেকে, এখানে খেয়ে চোখরাঙ্গানো চলছে। ব্যাটাদের ঘাড় ধরে বর্ডারের ওপারে পাঞ্জাবীদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত।কোলকাতার মানুষদের কাছে যদি বিনয় দেখিয়ে কথা বলা হয়, অমনি সমালোচনা শুরু হয়ে যায়।এই সমস্ত ম্যাদা লোকেরা পাঞ্জাবীদের তাড়িয়ে দেশকে স্বাধীন করবে! তাহলে তো পুবের সূয্যি পশ্চিমে উঠবে গো। ❞ (অলাতচক্র ; পৃষ্ঠা -২০৩) তবে সমান্তরালভাবে ছফা ভারতের বন্ধুবৎসল আচরণ দেখিয়েছেন অর্চনা/সুনন্দা কিংবা ডাক্তার মাইতিদের মতন চরিত্রদের ভেতর দিয়ে। আর ঠিক সে কারণেই প্রেম, দ্রোহ আর শরনার্থী বাঙালীর কাহিনীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে "অলাতচক্র" হয়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধের একাংশের নিরেট বয়ান। সে বয়ানকে বায়াসড বলে সহজে উড়িয়ে দেয়া যায় না, বরং দীর্ঘ সময় শরনার্থী হয়ে কাটানোর অভিজ্ঞতা আর মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্তাব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা দেখতে পাওয়া ছফা উলটো বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে প্রশ্ন ছোড়েন ❝যে স্বাধীনতার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, সে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি?❞ সে প্রশ্নের কারণে হোক অথবা ক্ষমতার মসনদ হারানোর ভয়েই হোক কর্তাবাবুরা কিন্তু ঠিকই হুকুম ছোড়ে, ❝হারামজাদাকে ধরে নিয়ে আয়।❞ আর প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকা ছফা আজও বলতে থাকে ❝কেউ আমাদের বড় ঠকিয়েছে, যুদ্ধের ফসল আমাদের ঘরে উঠেনি।❞
বই: অলাতচক্র লেখক : আহমদ ছফা মূদ্রিত মূল্য: তিনশত টাকা প্রকাশনী : খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি
বইটা ঠিক উপন্যাস নয়। অনেকটা গল্প বলে যাওয়ার মতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে যারা কলকাতা তাদের জন্য কেমন ছিল সেটা কিছু টা বোঝা যায়।গল্পের প্রধান চরিত্র (দানিয়েল) যিনি বলে গেছেন একটার পর একটা তার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনি, পেশায় তিনি লেখক।তাঁর ভালোবাসার মানুষ তায়েবা। যিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। এসব নানারকম কাহিনি। আহমদ ছফা খুব সুন্দর করে লিখেন। এ জন্য ই সম্ভবত আমার এত ভালো লেগেছে।
আহমদ ছফার বইগুলো তে কেমন যেন একটা আলো আধারি ব্যাপার আছে। আল আধারি রাস্তায় যেমন খুব দেখে শুনে বুঝে চলতে হয় ঠিক তেমনি আহমেদ ছফার বই গুলো খুব নীরবে নিভৃতে যত্ন করে পড়তে হয়। একটু মনোযোগচ্যুত হলেই ঘটনাই দিক থেকে ওদিক পাল্টে যেতে পারে।
বই টা কে আসলে ঠিক কোন জনরাতে ফেলব সেটা বুঝতে পারছি না। ফিকশন, নন ফিকশন, আত্মজীবনী,ইতিহাস সবকিছুর সংমিশ্রণ এই বইটা।
মুক্তিযুদ্ধকালীন এদেশের ইতিহাস নিয়ে এদেশের অবস্থা নিয়ে অনেক লেখাই পড়া হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে ছিল শরণার্থী এবং শরণার্থী শিবিরের সব গল্পগুলো। সেগুলো নিয়ে তেমন কোন লেখালেখি হয়নি বললেই চলে। এই প্রথম কোন একটা লেখায় শরণার্থী শিবিরের গল্প উঠে এলো এবং যেটা পূর্ণ তৃপ্তি সহকারে পড়তে পারলাম।
কখনো চায়ের কাপে ইতিহাসের তুমুল ঝড়, কখনো ট্রেনিং ক্যাম্পে যোদ্ধাদের অপেক্ষা, কখনো শরণার্থীদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর গল্প, তাদের টানাপোড়েনের ইতিহাস,কখনো দুই শরণার্থী শিবিরের অব্যক্ত প্রেম এর গল্প। সব মিলিয়ে বইটা দারুন।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন পর্যন্ত যতগুলো বই পড়া হয়েছে তার সবগুলোই ছিল যুদ্ধ আর রাজনৈতিক জটিলতা কেন্দ্রিক। একারণে তরুণ প্রজন্মের অনেকের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা ওই দুই ব্যাপারে সীমাবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে কোটির অধিক মানুষ সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমবংগ চলে যায়, তাদের চোখে মুক্তিযুদ্ধ বুঝার বই "অলাতচক্র"। স্থান-কাল-পাত্র যত বদলাতে থাকে একই বিষয়(এই বইয়ের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ) নিয়ে জনগণের ধারণা কিভাবে বদলে যায় তার বাস্তবিক প্রমাণ এই বইতে আছে। তবে শুধু শরণার্থীদের জীবনযাত্রার গল্প এই বই না। আমার কাছে বইকে শেষ পাতা পর্যন্ত পড়ার আগ্রহ জাগিয়ে রাখা ব্যক্তি শুধু তায়েবা। তায়েবাকে অনেক অনেকদিন মনে থাকবে। 10/10 highly recommended. আহমদ ছফার বই যতই পড়ি আরো মুগ্ধ হচ্ছি।
যুদ্ধের সময়কার দেশের মানুষদের নিয়ে অনেক উপন্যাস পড়া হলেও, যারা ভারতে আশ্রয় নেয়, প্রশিক্ষণ নেয় তাদের নিয়ে এই প্রথম কিছু পড়লাম। ছফার সৃষ্টিকর্ম বরাবরই অসাধারণ।
অলাতচক্র অসাধারণ একটি বই।আহমদ ছফা ১৯৭১ সালে পশ্চিম বাংলায় অবস্থানরত বাংলাদেশী শরণার্থীদের টানাপোড়ন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তাদের কী চিন্তাভাবনা সব অত্যন্ত সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন এই বইতে। কলকাতার মানুষজনের মনোভাব কেমন ছিল এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে,তারা কীরূপ দৃষ্টিতে দেখতো এইপার বাংলার মানুষদের তার সুন্দর বর্ণনা রয়েছে এখানে।দেশ ছেড়ে শরণার্থীরা কেমন মানবেতর জীবন যাপন করত তা জানতে হলেও অনন্ত বইটি পড়া উচিত।এইবার কথা বলা যাক গল্পের মূল চরিএ নিয়ে,যিনি আর কেউ নয়,লেখক নিজেই।তিনি আজ একজন শরণার্থী অবস্থান করছেন কলকাতায়।
বইটি যেহেতু আত্নজীবনি সেহেতু লেখকের জীবনে ঘটে যাওয়া এবং তার আশেপাশের মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে। #দানিয়েল(লেখক)ভাই কলকাতার এক হাসপাতালে এসেছেন তায়েবা কে দেখতে উপন্যাসের শুরু এখানে।এখন প্রশ্ন আসবে কে এই তায়েবা আর লেখক কেন তাকে দেখতে এসেছেন!! এই গুলো তো পড়লে জানতে পারবেন। এইবার আসি বইটি কেমন?? এককথায় বইটি অসাধারণ। স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তবু ও আমরা কিছু জানি কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মানুষ যারা ভারতে অবস্থান করেছিল এই মুক্তি সংগ্রামের সময় তারা কেমন অবস্থাই ছিল বইটি পড়লে জানা যায়।কত মানুষ কত কষ্ট সহ্য করেছিল এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তা এখানে পাওয়া যায়।অপরদিকে গুটিকয়েক মানুষ নিজের স্বার্থে দেশ ও দেশের মানুষকে ঠকিয়েছে তার সুন্দর ছবি ও তুলে ধরেছেন লেখক। #পরিশেষে বলবো ভালো লাগার মত একটি বই।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অধিকাংশ বর্ণনা আমরা পাই দেশের ভিতরকার অংশের। অথচ আমাদের এক বিশাল জনসংখ্যা পড়ে ছিল ভারতে। কেমন ছিল সেসব মানুষের জীবন। কতটুকুইবা আমরা জানি? এ বইটি সে সম্পর্কে ধারনা দেবে। যদিও শুধু কলকাতাকালীন সময় নিয়েই এটি রচিত। লেখকের নিজস্ব মতাদর্শ নিয়ে এ বইটি রচিত। যারা আহমেদ ছফা আগে পড়েছেন, তাদের বুঝতে সুবিধা হবে। যুদ্ধ বুঝতে হলে তো শুধু একপাশের কথাই শুনতে থাকলে পুরো ব্যাপারটাই অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে আমার এ বইটা পড়ার আগে কলকাতার দিকের যুদ্ধকালীন দৃষ্টিভংগির কথা মাথায়ই আসে নাই কখনো।
যে তীব্র উৎসাহের সাথে বইটা বগলদাবা করে পড়তে শুরু করেছিলাম তা শেষমেশ রইলো না। আমার তো খুব হাই ক্লাসের কোন বই মনে হল না।
বইটা প্রথম ম্যাগাজিনে প্রকাশ হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। পরে ১৯৯৩ সালে অনেকখানি পরিবর্তন করে বই আকারে প্রকাশ হয়েছিল। দুই সংস্করণের মধ্যে বেশ তফাৎ। দুইটাই ভালো একটা বিশ্লেষণমূলক, মনস্তাত্বিক উপন্যাস হতে গিয়ে হয়ে উঠেনি।
▫️বইয়ের নাম: "অলাতচক্র" ▫️লেখক: আহমেদ ছফা ▫️ প্রকাশনায়: খান ব্রাদার্স এ্যান্ড কোম্পানি
"অলাতচক্রের ভাবগত অর্থ হচ্ছে জলন্ত অঙ্গার বা জলন্ত কাঠ, বেগে ঘোরালো যে চক্রাকার আগুনের রেখা দেখা যায়, সেই চক্রাকার রেখাই হলো অলাতচক্র। শরণার্থী শিবিরে যারা ছিলেন এবং কলকাতা শহরে ছায়ার মতো জীবনযাপন করছিলেন তাঁদের জীবন ও এ আগুনের রেখার মতো চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান ছিল।
অলাতচক্র মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত লেখক দানিয়েল ও ক্যান্সারে আক্রান্ত তাইয়্যেবার মধ্যকার অস্ফুট ভালবাসার কাহিনী। সাহসী তাইয়্যেবা যে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো, শারীরিক অক্ষমতা তাঁকে যুদ্ধে যোগ দিতে দেয় নি। ভাষা আন্দোলন এ তাঁর কীর্তি কেও জানে না কিন্তু রওশন আরার বানোয়াট বীরগাঁথা যা কাগজের বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশে রচিত হয়েছিলো চারপাশে তারই জয়জয়কার।
"মোরা আর জনমে হংস–মিথুন ছিলাম নদীর চরে যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে।। তমাল তরু চাঁপা–লতার মত জড়িয়ে কত জনম হ’ল গত, সেই বাঁধনের চিহ্ন আজো জাগে হিয়ার থরে থরে।।"
গল্পের প্রধান চরিত্র ‘দানিয়েল’। মনের বিরুদ্ধে তাঁকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে শরণার্থী শিবিরে। সে চেয়েছিল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে, কিন্তু তাঁর উৎসাহকে ছোট করে দেখা হয়। ক্ষোভে তাই বলে ফেলে,‘আমার যুদ্ধ যাওয়া হয়নি। যুদ্ধকে ভয় করি বলে নয়! আমাদের দেশের যে সকল মানুষের যুদ্ধের দায়-দায়িত্ব, তাঁরা আমাকে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠাবার উপযুক্ত বিবেচনা করতে পারেনি।” অতঃপর সে প্রতিটি ঘটনা, আশ্রয় নেয়া মানুষদের জীবন, তাঁদের চিন্তাধারা পর্যবেক্ষণ করে। তাঁর সাথে নিজের চিন্তারাজ্যকে যুক্ত করে আহমদ ছফা যেন নিজেকেই দানিয়েলে রুপান্তর করেছেন। প্রথমে আত্মজীবনীমূলক লেখা হিসেবে ছাপা হলেও পরবর্তীতে এটি পুনরায় সম্পাদনা করা হয়।
গল্পের আরেকটি মন নাড়িয়ে দেয়া চরিত্র তায়েবা। ক্যান্সারে তাঁর উদ্দীপনা ধরাশায়ী হয়ে গিয়েছে। কলকাতার পিজি হাসপাতালে মুক্তিযুদ্ধের মতোই সে তাঁর জীবনের সাথে লড়াই করছে। তায়েবা কোনো সাধারণ মেয়ে নয়। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে আসাদ হত্যার দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিল সে। সে প্রবল রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করে। দানিয়েলের মতে, সে সাধারণ মেয়েদের উর্ধ্বে। সাধারণের মতো কোনো ঈর্ষা, আকাঙ্ক্ষা তাঁকে স্পর্শ করেনি।
তায়েবা-দানিয়েলের সমন্বয় উপন্যাসটিকে নিয়ে গিয়েছে অনন্য ধারায়। পাঠক কখন হারিয়ে যাবেন তাঁদের মাঝে বুঝতেও পারবেন না।
▫️পাঠ প্রতিক্রিয়া▫️
অলাতচক্র বইটি কলকাতায় বাংলাদেশী শরনার্থীদের প্রেক্ষাপটে লেখা। এটা আসলে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি চলা একটা স্নায়ুযুদ্ধের গল্প, যা একদিকে দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো, অন্যদিকে দেখাচ্ছিলো ভবিষ্যতের অনিশ্চিত বাংলাদেশের আশঙ্কা।
লেখক আহমদ ছফা শরণার্থী শিবিরে থাকাকালীন অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন এই বই। লেখায় কেন্দ্রীয় বিষয়, দানিয়েল আর তায়্যেবার প্রেম নিয়ে লেখা হলেও মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী শিবিরের বিভিন্ন বিষয় একজন সমালোচকের দৃষ্টিতে তুলে ধরা।
কলকাতার মানুষের বাংলাদেশীদের প্রতি বিরুপ মনোভাব , জয়বাংলা নিয়ে হাস্যমুখ করা, বাংলাদেশীয় অনেক নেতাদের যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কলকাতায় ফুর্তি ইত্যাদি ইত্যাদি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে লেখক।
আহমদ ছফা লেখনীর ক্ষেত্রে মিথ্যার বা ভণিতার আশ্রয় নেননি। নিজের ভালোবাসা, দুর্বলতা, অসহায়ত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সুযোগ সন্ধানী কিছু মানুষের নগ্নরূপ তাঁর অলাতচক্র উপন্যাসে অকপটে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসটি তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য কাহিনী নিয়ে রচনা করেছেন।
একজন শরণার্থীর মানসিক টানাপোড়েন, যুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত, যুদ্ধ নিয়ে কে কিভাবে ভাবছে, সময় কিভাবে সবার ভাবনায় পরিবর্তন আনছে, যে কলকাতাবাসী শরণার্থীদের স্বাগতম জানিয়েছিল প্রথমে তাঁরাই পরে কিভাবে তাঁদের মত বদলে নিলো, মানব চরিত্রের বিচিত্র কিছু দিক লেখক খুবই সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আমরা দানিয়েলের সঙ্গে কলকাতায় ঘুরে ঘুরে সে সময়ের কলকাতার মানুষের মনোভাব, তাদের রাজনীতির কথাও জানতে পারি।
ছফা তাঁর কলমে যেন তুলে এনেছেন শরণার্থীর এক টুকরো মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি, কিংবা কলকাতার স্মৃতি। সেখানে তায়েবা এবং দানিয়েল নিমিত্ত মাত্র। তাঁদের প্রেম, চাওয়া পাওয়া এবং জীবনের সমান্তরালে আমরা দেখি একটা সময়। পুরো উপন্যাস জুড়ে ছিল অনেক চরিত্র। সবার আলাদা আলাদা গল্প লেখক বলে গিয়েছেন যথেষ্ট আবেগ দিয়ে। একদিকে যুদ্ধ যখন স্বপ্ন দেখাচ্ছিল নতুন একটা সূর্যের, অন্যদিকে যুদ্ধ প্রতিদিন তছনছ করে দিচ্ছিল অনেক স্বপ্নের। ছিল নানা জটিলতা।
"অলাত চক্রে" ছফা মুক্তিযুদ্ধকে তুলে এনেছেন একদম শিকড় থেকে। লেখক রচনা করেছেন রনক্ষেত্রের বাহিরে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মানবিক চিত্র। একটা যুদ্ধ কীভাবে বিষিয়ে তুলেছিল মানুষকে, শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর ভাবনা, ছফা তুলে এনেছেন যুদ্ধ ঘিরে সাদা কালো- ধুসর চিন্তাগুলো।
মূল চরিত্র দানিয়েলের জবানিতে লেখা উপন্যাসটি অনেকটাই আত্নজীবনি ধরনের বই। অনেক সময় মনে হতেই পারে, ছফা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর কথাই বলে গিয়েছেন। পুরো উপন্যাস জুড়েই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে এক ঠান্ডা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট সমূহের মধ্যে সাহিত্যে সবচেয়ে উপেক্ষিত দিকটি হচ্ছে, ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরের অধ্যায়টি। এই প্রসঙ্গে অন্য কোনো উপন্যাস লেখা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যাহোক, আহমদ ছফা তাঁর অলাতচক্র বইয়ে কলকাতায় বাংলাদেশী শরণার্থীদের জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন বেশ সুন্দরভাবেই।
এর একমাত্র কারণ তিনি নিজেও সেই শরণার্থী শিবিরে থেকেছিলেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন সবকিছুই। তাই গল্পের মতো বলে যেতে পেরেছেন পশ্চিম বাংলায় অবস্থানরত বাংলাদেশী শরণার্থীদের টানাপোড়ন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনাগুলো। এক কথায় ইতিহাস আর আত্মজীবনীর মিশ্রণ খুঁজে পাবেন বইটিতে।
স্বাধীনতা বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সেই স্বাধীনতার প্রতি গভীর আবেগ বোধ করে কম বেশি সব বাঙালি। কারন মুক্তিযুদ্ধই বাঙালির শ্রেষ্ঠ অহংকারের জায়গা। সেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, উপন্যাস আর গল্প। তার কিছু হয়েছে কালজয়ী আর কিছু হয়েছে সস্তা ভাবুলতা। মুক্তিযু্দ্ধ আসলে বিশাল এক ক্যানভাস, রণাঙ্গন, বোমা, গোল-বারুদ, হত্যা-ধর্ষন আর ৩০ লক্ষ প্রাণের আত্নত্যাগ শুধু এইটুকু দিয়ে এর ব্যাপকতা বুঝানো যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ কে বুঝতে হলে, মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হলে ৭১ এর রণাঙ্গনের পাশাপাশি জানতে হবে স্বাধীনতার বীজ বপনের একেবারে মূল থেকে। আর সেই মূল হলো ৪৭ এর দেশ ভাগ, ৫২র ভাষা আন্দোলন,৭০ এর নির্বাচন, ত্রিশবছর পাকিস্থানিদের শোষণ।
একটি উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ এমন শিকড় থেকে নিয়ে আসেনি, যেটা এনেছেন আহমেদ ছফা তার ”অলাতচক্র ” উপন্যাসে। উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধ আর মানবিক উপখ্যানের এক অসাধারন দলিল। ছফা দেখিয়ে দিয়েছেন রণাঙ্গনের রক্তাত্ত যুদ্ধ ছা���়াও যুদ্ধ হয়েছে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে, নিজের অস্তিত্বের সাথে। সেই লড়াই মানুষকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অনন্ত শূণ্যতার মুখোমুখি, দিয়ে গেছে একবুক দীর্ঘশ্বাস আর শুকিয়ে যাওয়া এক অশ্রু নদী। এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা যুদ্ধে অংশগ্রহন না করেও যুদ্ধ করেছে প্রতিনিয়ত, এমনও অসংখ্য মানুষ আছে যারা সীমান্তের ওপারে গিয়েও পালাতে পারেনি ছাপানো হাজারের বর্গমাইলের শিকড়ের টান থেকে। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিলো, তাদের অনুভূতি কতটা তীব্র ছিলো তার মর্মস্পর্শী বিশ্লেষন আর গভীর পর্যবেক্ষনের যে উপন্যাস লিখেছেন আহমেদ ছফা তা নি:সন্দেহে বাঙলা ভাষায় রচিত মুক্তিযুদ্ধের উপর আলোকিত উপন্যাসগুলোর মাঝে অন্যতম।
জীবনকে বাঁচিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া কিছু মানুষের জীবনের মধ্য দিয়ে ছফা মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন এতটা গভীর ভালোবাসা দিয়ে যে মনে হবে আপনি নিজেই আছেন সেই মানুষগুলোর দলে। সরনার্থী জীবন কেমন ছিলো, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেমন ছিলো ভারতের মনোভাব, ৭১ এ কেমন ছিলো দেশ ছেড়ে আসা এককোটি মানুষ, তার একটি চিত্র পাবেন বইটিতে। যুদ্ধ কি করে মানুষকে দলে দলে ভাগ করে দেয়, কি করে ব্যাক্তিগত অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়, মানুষকে কি করে আরেক মানুষের কাছে নিয়ে আসে, চিত্রকরের মতো এসবের এক জলছবি এঁকেছেন ছফা. সেই ছঁবি এতটাই নিখুঁত, এতটাই হৃদয়স্পর্শী যে অনেক জায়গায় নিজের অজান্তেই আপনার চোখে জল গড়াবে। গল্পের নায়ক দানিয়েল, একজন ছোটখাট লেখক, টুকিটাকি লেখালেখি করতেন, একসময় রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন। সবকিছুকে গভীরভাবে দেখার ক্ষমতা, চারিত্রিক দৃঢতা, সম্পর্কের প্রতি নিস্পৃহতা, আর দেশাত্ববোধ প্রখর একজন মানুষ দানিয়েল। মুক্তিযুদ্ধকে গভীরভাবে হৃদয়ে লালনকারী, স্বাধীনতাকামী এই যুবকের জীবনে ৭১ আর মুক্তিযুদ্ধ কেমন করে এসেছিলো, তিনি কি দৃষ্টিতে দেখেছেন মুক্তিসংগ্রাম সেটিই উপন্যাসের মূল গল্প। রাজনীতি আর সাহিত্য চর্চার সুবাদেই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে প্রগতিশীল ভিন্নমনা আধুনিক নারী তৈয়বার. যার রয়েছে সংগ্রামী এক জীবন কাহিনী। স্বাধীনতা সংগ্রাম কেমন করে তাদেরকে পরস্পরকে কাছে এনেছে আবার মহাকালের অতলে নিয়ে গেছে সেটিই ফুটে ওঠেছে অলাতচক্রে। ব্যাক্তি জীবনের সাথে জাতীয় জীবনের যে সংঘাত, জাতীয় অর্জনের(স্বাধীনতা) জন্যে যে সব মানুষি যে ছোট-বড় অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন তার উৎকৃষ্ট উদাহারণ উপন্যাসটি।
ছফার তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন ক্ষমতা, অসাধারন নির্মোহ বিশ্লেষন আর অগাধ জ্ঞানের ছাপ রয়েছে উপন্যাসটিতেস্বাধীনতা বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন. মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সেই স্বাধীনতার প্রতি গভীর আবেগ বোধ করে কম বেশি সব বাঙালি. কারন মুক্তিযুদ্ধই বাঙালির শ্রেষ্ঠ অহংকারের জায়গা. সেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, উপন্যাস আর গল্প. তার কিছু হয়েছে কালজয়ী আর কিছু হয়েছে সস্তা ভাবুলতা. মুক্তিযু্দ্ধ আসলে বিশাল এক ক্যানভাস, রণাঙ্গন, বোমা, গোল-বারুদ, হত্যা-ধর্ষন আর ৩০ লক্ষ প্রাণের আত্নত্যাগ শুধু এইটুকু দিয়ে এর ব্যাপকতা বুঝানো যাবে না. মুক্তিযুদ্ধ কে বুঝতে হলে, মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হলে ৭১ এর রণাঙ্গনের পাশাপাশি জানতে হবে স্বাধীনতার বীজ বপনের একেবারে মূল থেকে. আর সেই মূল হলো ৪৭ এর দেশ ভাগ, ৫২র ভাষা আন্দোলন,৭০ এর নির্বাচন, ত্রিশবছর পাকিস্থানিদের শোষণ. একটি উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকে কেউ এমন শিকড় থেকে নিয়ে আসেনি, যেটা এনেছেন আহমেদ ছফা তার ”অলাতচক্র ” উপন্যাসে. উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধ আর মানবিক উপখ্যানের এক অসাধারন দলিল. ছফা দেখিয়ে দিয়েছেন রণাঙ্গনের রক্তাত্ত যুদ্ধ ছাড়াও যুদ্ধ হয়েছে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে, নিজের অস্তিত্বের সাথে. সেই লড়াই মানুষকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অনন্ত শূণ্যতার মুখোমুখি, দিয়ে গেছে একবুক দীর্ঘশ্বাস আর শুকিয়ে যাওয়া এক অশ্রু নদী. এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা যুদ্ধে অংশগ্রহন না করেও যুদ্ধ করেছে প্রতিনিয়ত, এমনও অসংখ্য মানুষ আছে যারা সীমান্তের ওপারে গিয়েও পালাতে পারেনি ছাপানো হাজারের বর্গমাইলের শিকড়ের টান থেকে. তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিলো, তাদের অনুভূতি কতটা তীব্র ছিলো তার মর্মস্পর্শী বিশ্লেষন আর গভীর পর্যবেক্ষনের যে উপন্যাস লিখেছেন আহমেদ ছফা তা নি:সন্দেহে বাঙলা ভাষায় রচিত মুক্তিযুদ্ধের উপর আলোকিত উপন্যাসগুলোর মাঝে অন্যতম. জীবনকে বাঁচিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া কিছু মানুষের জীবনের মধ্য দিয়ে ছফা মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন এতটা গভীর ভালোবাসা দিয়ে যে মনে হবে আপনি নিজেই আছেন সেই মানুষগুলোর দলে. সরনার্থী জীবন কেমন ছিলো, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেমন ছিলো ভারতের মনোভাব, ৭১ এ কেমন ছিলো দেশ ছেড়ে আসা এককোটি মানুষ, তার একটি চিত্র পাবেন বইটিতে. যুদ্ধ কি করে মানুষকে দলে দলে ভাগ করে দেয়, কি করে ব্যাক্তিগত অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়, মানুষকে কি করে আরেক মানুষের কাছে নিয়ে আসে, চিত্রকরের মতো এসবের এক জলছবি এঁকেছেন ছফা. সেই ছঁবি এতটাই নিখুঁত, এতটাই হৃদয়স্পর্শী যে অনেক জায়গায় নিজের অজান্তেই আপনার চোখে জল গড়াবে. গল্পের নায়ক দানিয়েল, একজন ছোটখাট লেখক, টুকিটাকি লেখালেখি করতেন, একসময় রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন. সবকিছুকে গভীরভাবে দেখার ক্ষমতা, চারিত্রিক দৃঢতা, সম্পর্কের প্রতি নিস্পৃহতা, আর দেশাত্ববোধ প্রখর একজন মানুষ দানিয়েল. মুক্তিযুদ্ধকে গভীরভাবে হৃদয়ে লালনকারী, স্বাধীনতাকামী এই যুবকের জীবনে ৭১ আর মুক্তিযুদ্ধ কেমন করে এসেছিলো, তিনি কি দৃষ্টিতে দেখেছেন মুক্তিসংগ্রাম সেটিই উপন্যাসের মূল গল্প. রাজনীতি আর সাহিত্য চর্চার সুবাদেই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে প্রগতিশীল ভিন্নমনা আধুনিক নারী তৈয়বার. যার রয়েছে সংগ্রামী এক জীবন কাহিনী. স্বাধীনতা সংগ্রাম কেমন করে তাদেরকে পরস্পরকে কাছে এনেছে আবার মহাকালের অতলে নিয়ে গেছে সেটিই ফুটে ওঠেছে অলাতচক্রে. .ব্যাক্তি জীবনের সাথে জাতীয় জীবনের যে সংঘাত, জাতীয় অর্জনের(স্বাধীনতা) জন্যে যে সব মানুষি যে ছোট-বড় অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন তার উৎকৃষ্ট উদাহারণ উপন্যাসটি.
ছফার তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন ক্ষমতা, অসাধারন নির্মোহ বিশ্লেষন আর অগাধ জ্ঞানের ছাপ রয়েছে উপন্যাসটিতে। মুক্তিযুদ্ধের উপর উপন্যাস লিখতে হলে যে অগাধ রাজনীতিক জ্ঞান থাকতে হয়, তা উপন্যাসটি পড়লে বুঝতে পারবে পাঠক। উপন্যাসে ওঠে এসেছে দেশভাগ আর তার যন্ত্রনার কথা, পাকিস্থানিদের গভীর ষড়যন্ত্রের কথা। যুদ্ধকালীন সময়ে তাজউদ্দিনের অসীম সাহসিকতা, আওয়ামিলীগের দলে দলে ভাগ হয়ে যাওয়া, বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখানো শেখ মুজিবের কথা। রয়েছে নানা গুজব আর মুজিব বিরোধী কথার ব্যাখা। দুটো দৃষ্টিকোন থেকেই ছফা মুক্তিযুদ্ধকে দেখিয়েছেন। বিদেশিরা কেমন করে দেখেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, কেমন করে দেখেছে পাকিস্থান পন্থী ভারতীয় মুসলমানরা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কেমন ছিলো শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধির ভূমিকা, তিনি কতটা আন্তরিক আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা উপন্যাসটি পড়লে পাঠকের জানা হয়ে যাবে। ইতিহাসের নতুন পাঠকরা জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধে কোন কোন ক্ষমতাধর রাষ্ট দাঁড়িয়েছিলো আমাদের পক্ষে আর কারা ছিলো বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের উপর উপন্যাস অথচ তাতে মাত্র দুুটো মৃত্যুর বর্ণনা আছে, আর সেই দুটো মৃত্যু আপনাকে এতটাই নাঁড়া দিয়ে যাবে যে আমি স্তব্দ নিথর হয়ে যাবেন কিছুক্ষনের জন্যে। ভালোবাসা-দেশপ্রেম-যুদ্ধ-রাজনীতি-আত্নত্যাগের মহিমা ছাড়াও উপন্যাসটি হয়ে ওঠেছে ৭১ আর মুক্তিযুদ্ধকে জানার অসামন্য এক ঐতিহাসিক দলিল। মুক্তিযুদ্ধের উপর এত তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন, গভীর মমত্ববোধ, নির্মোহ সত্য ভাষন, আর ব্যাক্তি সংঘাতের এমন উপন্যাস আমি পড়িনি। এমন উপন্যাস সকল পাঠকের পড়া উচিত...আশা করি উপন্যাসটি সবার জীবনে পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে স্থান পাবে।
মুক্তিযুদ্ধের উপর উপন্যাস লিখতে হলে যে অগাধ রাজনীতিক জ্ঞান থাকতে হয়, তা উপন্যাসটি পড়লে বুঝতে পারবে পাঠক। উপন্যাসে ওঠে এসেছে দেশভাগ আর তার যন্ত্রনার কথা, পাকিস্থানিদের গভীর ষড়যন্ত্রের কথা। যুদ্ধকালীন সময়ে তাজউদ্দিনের অসীম সাহসিকতা, আওয়ামিলীগের দলে দলে ভাগ হয়ে যাওয়া, বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখানো শেখ মুজিবের কথা। রয়েছে নানা গুজব আর মুজিব বিরোধী কথার ব্যাখা। দুটো দৃষ্টিকোন থেকেই ছফা মুক্তিযুদ্ধকে দেখিয়েছেন। বিদেশিরা কেমন করে দেখেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, কেমন করে দেখেছে পাকিস্থান পন্থী ভারতীয় মুসলমানরা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কেমন ছিলো শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধির ভূমিকা, তিনি কতটা আন্তরিক আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা উপন্যাসটি পড়লে পাঠকের জানা হয়ে যাবে। ইতিহাসের নতুন পাঠকরা জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধে কোন কোন ক্ষমতাধর রাষ্ট দাঁড়িয়েছিলো আমাদের পক্ষে আর কারা ছিলো বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের উপর উপন্যাস অথচ তাতে মাত্র দুুটো মৃত্যুর বর্ণনা আছে, আর সেই দুটো মৃত্যু আপনাকে এতটাই নাঁড়া দিয়ে যাবে যে আমি স্তব্দ নিথর হয়ে যাবেন কিছুক্ষনের জন্যে। ভালোবাসা-দেশপ্রেম-যুদ্ধ-রাজনীতি-আত্নত্যাগের মহিমা ছাড়াও উপন্যাসটি হয়ে ওঠেছে ৭১ আর মুক্তিযুদ্ধকে জানার অসামন্য এক ঐতিহাসিক দলিল। মুক্তিযুদ্ধের উপর এত তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন, গভীর মমত্ববোধ, নির্মোহ সত্য ভাষন, আর ব্যাক্তি সংঘাতের এমন উপন্যাস আমি পড়িনি। এমন উপন্যাস সকল পাঠকের পড়া উচিত...আশা করি উপন্যাসটি সবার জীবনে পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে স্থান পাবে।
আহমদ ছফার "অলাতচক্র" এটি একটি অন্তর্মুখী উপন্যাস বলা যায়—যেখানে চরিত্র দানিয়েল, তায়েবা ও কলকাতায় আশ্রিতরা, তাদের যুদ্ধ ও আত্মত্যাগ—সবকিছু এখানে এক বিন্দুতে এসে মিশে যায়। পাঠকের অভিজ্ঞতা এখানেই।
অলাতচক্র শুরু হয় এক উদ্বাস্তু সময় থেকে—কলকাতায় প্রবাসী দানিয়েল যেন এক শূন্য গহ্বরে বসে আছেন, দেশের অভ্যন্তরের আন্দোলনের শব্দ কানে আসছে, কিন্তু হাত পৌঁছাতে পারছে না। মূল চরিত্র দানিয়েলকে আমরা একজন লেখক, দার্শনিক, সমাজ-চিন্তক হিসেবে দেখি। যিনি সমাজ, রাজনীতি ও নিজের মধ্যেই পরবাসী। তার দেশ তিনি আছেন দূরে, আপজনের থেকে দূরে। ছফা দানিয়েলকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন পাঠক ভাবে তিনিই দানিয়েল_ যে দানিয়েল নিজেকে বুঝতে পারেন না, কারণ তিনি এমন এক বুদ্ধিজীবী সমাজে বাস করেন, যেখানে চিন্তাও রাজনৈতিক।
অন্যদিকে তায়েবা একজন জননী, আবার এক মার্কসবাদী, নারীবাদী, প্রগতিশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী। দানিয়েল তাকে ভালোবাসে কিন্তু তাকে সে পায় না—এই ‘চাওয়া ও না-পাওয়ার’ দ্বন্দ্বে তায়েবা ও দানিয়েলরা নিজেই হয়ে যায় একেকটি বিচ্ছিন্ন গল্প।
এই উপন্যাসে যুদ্ধ যেন এক প্রেক্ষাপট মাত্র—প্রকৃত যুদ্ধ ঘটে দানিয়েলের হৃদয়ের অভ্যন্তরে। এটি যুদ্ধের উপন্যাস, যেখানে আমরা বুলেটের যুদ্ধ দেখিনা, যুদ্ধ বলতে আমরা যা বুঝি, সেলিনা হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার বা অন্যান্য লেখক—তাঁরা যেভাবে যুদ্ধকে প্রত্যক্ষ লড়াই, কাহিনি ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরেছেন, আহমদ ছফা ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছেন। এটাই ছফার স্টোরিটেলিং এর বিশেষত্ব। ছফার লেখায় সবচেয়ে সাহসী দিক হলো, তিনি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে কোনো আড়ম্বর তৈরি করেন নি। যেমন, দানিয়েল যখন দেশের কথা ভাবে, তা কখনো গর্ব নয়—বরং একটি ঘা। তার কাছে দেশ মানে তায়েবার থেকে দূরত্ব, সমাজের ধিক্কার, নিজস্বতাহীন এক মানসিক মৃত্যু। যেমনটা হয়তো বেঁচে যাওয়া কোনো এক গাজা'র বাচ্চা থেকে আমরা কোনো এক ভবিষ্যতে শুনবো। অলাতচক্র মুক্তিযুদ্ধের সেইসব মানুষের গল্প বলে, যারা হয়তো কোনো পত্রিকায় নেই, কোনো গল্পে নেই, কিন্তু তারা যুদ্ধকালীন সময়ে ও এরপরে নিজের ভেতরে মারা গেছে। হয়তো আমরা তাদের গল্প শোনারও সুযোগ পাইনি। মুক্তিযুদ্ধ শুধু রাইফেলের আওয়াজ নয়, আত্মপরিচয়ের যুদ্ধও। যেখানে দানিয়েলের মতো মানুষ প্রতিদিন নিজেকে মুক্ত করতে চায়, কিন্তু তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দেশের মাটি থাকেনা, না থাকে তাদের কোনো নাগরিকত্ব।
যুদ্ধ সংক্রান্ত উপন্যাস আমাদের পাঠকদের জন্য কখনো আরামদায়ক নয়। এটি পাঠককে ভেঙে দেয় ও তাকে দেখতে সাহায্য করে ওই সময়ের মৃত মানুষগুলোর আর্তনাদ। এই উপন্যাস পড়লে একটা রিয়েলাইজশনে পাঠক আসবে যে নিজেকে বাঁচিও রাখাও একটা যুদ্ধ।
'অলাতচক্র' যার মানে অগ্নিগোলক।বইটি পড়ার আগে কখনো এ শব্দটি শোনা হয়নি।বইয়ের পটভূমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া দানিয়েল কে নিয়ে। দানিয়েল চরিত্রটি লেখক নিজেই।সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে ইচ্ছুক দানিয়েল বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরেও, সুযোগ না পেয়ে কলকাতায় উদ্দেশ্যবিহীন জীবন যাপন করে । কখনো হাসপাতালে ভর্তি তার প্রিয় মানুষ তায়েবার কাছে,কখনো রাজনীতিবিদ,বিপ্লবীদের সাথে,কখনওবা চাকরির আশায় ঘুরে ঘুরে কাটে তার সময় । কাহিনীজুড়ে উঠে এসেছে আশ্রয় নেয়া রিফিউজিদের কষ্ট থেকে শুরু করে তাদের প্রতি কলকাতার মানুসদের দৃষ্টিভঙ্গি,যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে রাজনীতিবিদদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার, আরও অনেক কিছু । চিরাচরিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস থেকে এটি অনেকাংশেই আলাদা । যেখানে অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে তুলে ধরা হয় যুদ্ধের ইতিহাস,যুদ্ধকালীন অত্যাচার,দুঃখকষ্ট,বীরত্বের কাহিনী সেখানে এই উপন্যাসে সবকিছুই দেখা হয়েছে সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে । যুদ্ধের অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী নেতাদের ব্যাংক লুট করে তা নিয়ে কলকাতায় ফুর্তি করা বা এক ভারতীয় সাংবাদিকের ফ্রন্টে গিয়ে রিপোর্ট করার নাম করে ঘরে বসেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাল্পনিক বীরত্বের কাহিনী তৈরি করা , এ রকম নানা ঘটনা রয়েছে এখানে । আর মুক্তিযুদ্ধ,প্রবাসী সরকার,ভারতীয় রাজনীতিবিদদের নিয়ে লেখকের ব্যক্তিগত ক্রুদ্ধ মতামত রয়েছে পুরো বইজুড়েই । আর অন্যদিকে রয়েছে মৃত্যুপথযাত্রী তায়েবার সাথে লেখকের সম্পর্ক নিয়ে নানা ঘটনা । যে সম্পরকের স্বরূপ লেখক কখনই বুঝে উঠতে পারেননি । যুদ্ধকালীন সময়ে বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হ���েও পরিশেষে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনকাহিনী আর মতামতই প্রাধান্য পেয়েছে ।
আহমদ ছফার গল্পে ব্যক্তির বা চরিত্রের ভেতরে ব্যক্তির উপস্হিতি প্রকট । বক্তার মত কথনের জন্য তাই হয়ত যতটানা উপন্যাসিক, তার চেয়ে বেশি আলোচক বা সমালোচক ছিলেন তিনি । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা শহরে উদ্বাস্তুর মত কখনো শরনার্থী শিবিরে, কখনো পরিচিত কারো ঘরে ঘুরে বেড়ায় গল্পের চরিত্র 'দানিয়েল' । তার এক প্রেমিকা গোছের বান্ধবী 'তাইয়্যেবা'র দুরারোগ্য ব্যাধি হলে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া, কথা বলা, আবদারে মসলাযুক্ত খাবার নিয়ে যাওয়া, ডাক্তারের সাথে আলোচনা ও প্রোটোকল ভেঙে অতিরিক্ত সময় হাসপাতালে বসে থাকার স্মৃতিকথা । এছাড়াও হলুদ ছাড়া মলা মাছ রান্না, বন্ধুর ঘরে ঘুমপাড়া, আরো লোকজনের অবস্হা ও উদ্বাস্তুতা দেখা যায় । কিছু নেতৃস্হানীয়দের তৎসময়ে কলকাতার অন্ধকারের দিকে ফুর্তি করে বেড়ানোর আভাসটা বিলক্ষণ দর্শকের মতই বলে যান, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে অধিষ্টিত হন । রচনার শেষদিকে দেশে ফিরে আকাশে বোমারু বিমান আর পাতালে পাকবাহিনীর বর্ণনাও দেন । দুঃসময়ের মুখোমুখি সেই সময়ের এক চলমান ব্যক্তির গল্প বলে মনে হয় । 'অলাতচক্র' ঠিক উপন্যাস নয়, লেখকের এক জোড়া দৃষ্টির দেখতে দেখতে চলার গল্পকথন ।
রণাঙ্গনের বাইরে যেও এক যুদ্ধ,যে যুদ্ধ আবার একেক মানুষের একেকরকম সেই যুদ্ধের টুকরো ছবি তুলে ধরতে লেখক স্বার্থক। ইতিহাস,রাজনীতি,প্রেম, আত্মজীবনী সবকিছুর একটা সুন্দর মিশ্রণ শুরুতে সুগন্ধ ছড়ালেও শেষ দিকটা একটু গোজামেল লাগে।মনে হচ্ছিলো হয়তো আরও অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্ত খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। তবে লেখক নানাবিধ উপাদান দিয়ে এমন একটা সময় কে তুলে ধরেছেন যে সময়ের শুধু এক ধাঁচের ইতিহাস শুনে আমরা আগ্রহী।কিন্থ আরো কোটি মানুষ যারাও এই ইতিহাসের সাক্ষী ভাগ্যের ফেরে যাদের ঠাই হয়ে যায় ওপার বাংলায়,অন্য এক দেশে তাদের নিয়ে কাজ হয়েছে কম।তাদের নিয়েও সাহিত্য নির্ভর কাজ হওয়া উচিত।তাদের যুদ্ধ ছিলো নিরস্ত্র মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। কোন না কোন একদিয়ে সবাই যুদ্ধ করছিলো নিজ অস্তিত্বের জন্য। এই উপন্যাসের আরেকটি প্লাস পয়েন্ট ছিলো কলকাতার মানুষদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে অভিমত সেটারো সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়।
এই উপন্যাসের মূল চরিত্র লেখক নিজেই।নিজের মত করেই তাই অনেক চরিত্রের কথা বলে গিয়েছেন। তাই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হচ্ছিল।তাইয়েবা আর দানিয়েল এর কথোপকথন গুলো আর একটু পড়ার ইচ্ছা ছিল,বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো।তাইয়েবার জন্য মন কাঁদে.....
আহমদ ছফার লেখা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। হয়তো আমি তার লেখা নিয়ে বলতে গেলে একটু আধটু biased-ও হয়ে যায়! এই লেখাটিকে ঠিক উপন্যাস বলবো না আত্মজীবনী - তা বুঝে উঠতে পারছি না। প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ হলেও মূল বিষয় ছিল ক্যান্সার নিয়ে মরতে বসা প্রেমিকার কথা। তবে তায়েরবার চরিত্র যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা অসাধারণ। তবে সবচেয়ে ভাল দিক ছিল যুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতার সমাজে বাঙালিদের জীবনযাপনটা ফুটিয়ে তোলা। সেই সাথে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিরা কী করে বেড়িয়েছেন, তার একটা খণ্ডচিত্রও রয়েছে। একটা নতুন তথ্য পেয়েছি। খন্দকার মোশতাক যে তখন থেকেই গুটিবাজ ছিলেন, এটা আগে জানতাম না। এমন একজন হারামিকে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেন কীভাবে? আর রওশন আরার ব্যাপারে ছোট একটা কথা ছিল লেখার শেষ দিকে। এই কথাগুলা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।
বেশ কিছু উপন্যাস পড়ার পর আমার কাছে আহমেদ ছফাকে হিমু মনে হয়। জানিনা হুমায়ুন আহমেদ, রাজ্জাক স্যার কিংবা আহমেদ ছফাদের জীবন থেকে হিমুর আইডিয়া নিয়েছিলেন কিনা! যাইহোক, অলাতচক্র এর মাধ্যমে লেখক মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়কে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানোর প্রয়াস করেছেন। উপন্যাসটি লেখার সময়কাল ১৯৮৫। যেহেতু উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা সেহেতু লেখার সময়কালটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। কেননা, যুদ্ধকালীন সময়ের দৃষ্টিকোণ আর অনেকদিন পরে সেইটা নিয়ে দৃষ্টিকোণ কখনও এক হয়ার কথা না। তারপরও অলাতচক্র মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় নিয়ে লেখা একটি গ্রেট উপন্যাস।
ভালো লাগল। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে লেখা একেবারে ভিন্ন একটি গল্প।নতুন করে অনেক বিষয়ে জানতে পারলাম।মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যে দিকটি লেখক তুলে ধরেছেন তা সাধারণত অন্য বই বা মুভিতে উঠে আসেনা।সেসময় যারা দেশ ছেড়ে কলকাতায় শরণার্থী হয়েছিলেন তাদের জীবন যাপন,সুখ-দুঃখ,সংগ্রাম, ভালবাসা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক।সামাজিক ও ব্যাক্তিগত দুই ধরণের টানাপোড়েন তুলে ধরেছেন। সামগ্রিক অস্থিতিশীলতা এবং তার প্রভাব তুলে ধরেছেন সুনিপুণভাবে।
উপন্যাস হিসেবে ভালো। কিন্তু এটা ঠিক উপন্যাস না, আত্মজীবনী। প্রথমে ছফা নিজের এবং অন্যান্য চরিত্রদের স্বনামেই রেখেছিলেন উপন্যাসে। সমালোচনার মুখে বই আকারে প্রকাশের সময় চরিত্রদের নাম পাল্টে দেন। মুক্তিযুদ্ধকালে কোলকাতায় আশ্রয় নেওয়া বুদ্ধিজীবীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আংশিক ধারনা পাওয়া যায় উপন্যাসটি পড়লে। উপন্যাসটির নাম 'মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে প্রেম' হতে পারতো ;)