রাত ১২:১৩ থেকে ভোর পর্যন্ত মৃত্যুশয্যায় কাতর মন্ত্রী ও তাঁর সহচর মওলা বক্সের কথোপকথনে মন্ত্রীর ছোটবেলা থেকে যৌবনের সব গল্প উঠে আসে। আর তার সাথে সাথে উঠে আসে এমন এক সমাজের গল্প যেখানে অনৈতিকতাই উপরে উঠে আসার সিঁড়ি।
Ahmed Sofa (Bangla: আহমদ ছফা) was a well-known Bangladeshi philosopher, poet, novelist, writer, critic, translator. Sofa was renowned for his intellectual righteousness as well as his holistic approach to the understanding of social dynamics and international politics. His career as a writer began in the 1960s. He never married. On 28 July 2001, Ahmed Sofa died in a hospital in Dhaka. He was buried in Martyred Intellectuals' Graveyard.
Sofa helped establishing Bangladesh Lekhak Shibir (Bangladesh Writers' Camp) in 1970 to organize liberal writers in order to further the cause of the progressive movement.
Ahmed Sofa's outspoken personality and bold self-expression brought him into the limelight. He was never seen hankering after fame in a trivial sense. His fictions were often based on his personal experience. He protested social injustice and tried to portray the hopes and dreams of common people through his writing. Sofa always handled his novels with meticulous thought and planning. The trend of telling mere stories in novels never attracted him; he was innovative in both form and content.
ক্যান্সারে আক্রান্ত মন্ত্রী বাবাজীর মনে হচ্ছে আজই তার শেষ রজনী। মৃতুর আগে সমস্ত পাপের স্বীকারোক্তি দিয়ে সে আসলে কি প্রমাণ করতে চায়? মৃত্যুপথযাত্রী এই মন্ত্রীর দেখাশোনার ভার পড়েছে পাতিনেতাটাইপ এক লোক,মাওলা বক্সের উপর। যে কি না নিজের স্বার্থের জন্য আপাতদৃষ্টিতে মহৎ এই কাজের ভার নিয়েছেন (নিজের পরিবার, ঘুম, ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধাকে নির্বাসন দিয়ে আপাত নির্বান্ধব মন্ত্রীর ভ্যাজং ভ্যাজং শোনা) সে যা হোক.. মন্ত্রী মহোদয়ের শেষ রজনীতে মাওলা বক্সের সামনে উন্মোচিত হল মন্ত্রীর আসল রূপ। আহমদ ছফার লেখায় দুর্দান্তভাবে উঠে এসেছে এমন এক চিত্র যেখানে ন্যায় কিংবা নীতি নয়, অনৈতিকতা আর অন্যায় কাজই হল উপরে উঠবার মূলমন্ত্র। এককথায় দারুণ!!
খুবই আলাদা ধরণের একটা লেখা। এটাকে হয়তো 'নষ্ট রাজনৈতিকে'র 'ভ্রান্ত সমাজের' মাঝ দিয়ে 'প্রতিষ্ঠা' পাবার কাহিনী হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেত। কিন্তু আমি লেখাটাতে আসলে তিনটি জিনিসের মাঝে তেমন কোনো দৃঢ় সংযোগ পাইনি। এটা আমার কাছে তাই মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস।
একজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, বুঝতে পারছেন ক্যান্সারে তিনি মারা যাচ্ছেন, যিনি কিনা এক সময়ে পাকিস্তান আমলেও মন্ত্রী ছিলেন এবং ক্রমাগত ভোল পাল্টে বাংলাদেশেও মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছেন। মৃত্যু সজ্জায় তার সকল অপকর্ম তার দিকে তেড়ে আসছে আর মৃত্যুর আগে শেষ সময়টুকু তিনি কাউকে অপকর্মের কথা বলে হালকা হতে চাইছেন। রোগীর সাথে রাতে থাকেন মাওলা বক্স নামক তোষামোদে এক ব্যক্তি। নিজের সম্পর্কে সে বলে " মেরুদণ্ড থাকাটা আসলেও খুব খারাপ ব্যাপার। যাতে স্যারের মত মহান ব্যক্তিদের দরবারে প্রয়োজনে হাজির থাকতে পারি, সেজন্য বহু কষ্ট করে ওটাকে বাঁকিয়ে নিয়েছি"। একেক করে নিজের নিকৃষ্ট কর্মগুলো বলতে থাকেন মাওলা বক্সের নিকট। মাওলা বক্সের মত তোষামুদে ব্যক্তিও বিষিয়ে ওঠে সেই সব অপকর্মের ভারে। সে আর শুনতে চায় না এসব অপকর্মের কাহিনী। তার মনে হতে থাকে এই সব নৃশংসতার কাহিনী তাঁর স্নায়ুকে অবশ করে দিচ্ছে। কিন্তু শয্যাশায়ী মন্ত্রীর ইচ্ছাশক্তির হাত থেকে তার নিস্তার নেই, তাকে শুনে যেতে হয় সেই কাহিনী। ঘৃণা প্রকাশ্য হয়ে ওঠে তার বক্তব্যে। সে দোষী সাব্যস্ত করতে চায় যে মন্ত্রী ফজলে ইলাহিকে। কিন্তু মন্ত্রীর সর্বগ্রাসী মানসিক শক্তির কাছে সে পেরে ওঠে না। তার করা পাপ নিয়ে তিনি দুঃখিত নন। স্বীকার করেন সকল অপকর্ম তিনি পরিষ্কার বিবেকে করেছেন কিন্তু দায়ভার চাপিয়ে দেন সমাজ-মহাকাল-ইতিহাস ইত্যাদি বায়বীয় জিনিসের উপর। তা সত্ত্বেও মন্ত্রী জানেন তিনি মানুষ নয়, "আমি জানি আমি পশু এবং সারাজীবন পশ্বাচারই করেছি"। অনেক পাপ, অনেক হত্যার দায়ভার তার উপর। কিন্তু নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বাজি রেখে একটি কিশোরকে বাঁচানোর স্মৃতি তাকে নিজের ভিতরকার মানুষটিকে অনুভব করায়। "আমার পাপ কর্মগুলো আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেষতে পারছে না। কিশোরটি আমাকে রক্ষা করছে। মাওলা বক্স আমার মানবজন্ম বৃথা যায়নি। আমারও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো।"
হয়তো তাই...আলোর একটি শিখা অনেকখানি অন্ধকার মুছে দেয়! কিংবা তার উলটো...এক ফোঁটা বিষ অনেকটা পানিকে বিষাক্ত করে ফেলে! কে জানে...
আশির দশকের প্রায় শেষাংশ। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন একজন মন্ত্রী। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে এলাহী সেই পাঞ্জায় ভোর হওয়ার আগেই হারছেন। সেটা তাঁর অজানা নয়। ছেলেমেয়ে, দুই স্ত্রী, এবং অসংখ্য তথাকথিত শুভাকাঙ্খীর কেউ নেই মন্ত্রীর শেষ সময়ে।
মওলা বক্স। ধূর্ত, তোষামুদী এবং উচ্চাকাঙ্খী এই তরুন নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন শেষ সময়ে ফজলের মৃত্যুশয্যা পাশে থাকার। মানবতার চেয়েও তৎকালীন সরকার থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার উদগ্র ইচ্ছে থেকেই তাঁর এহেন প্রকল্প।
পুরো আখ্যান জুড়ে ফজলে এলাহী এবং মওলা বক্সের কথোপথনই আছে। মৃত্যুমুখে পতিত মন্ত্রী মনের সব ঝাল মিটিয়ে মওলাকে বলছেন তাঁর জীবনের অন্ধকার সব অধ্যায়ের কাহিনি। মওলা খারাপ মানুষ হলেও ফজলের বিভিন্ন নারকীয় কীর্তিকলাপের বিবরণ শুনে সময়ে সময়ে তাঁর নিজস্ব সহ্যশক্তির সুকঠিন এক পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন যেন।
মন্ত্রীর শৈশব থেকে উত্থান, বিভিন্ন ভয়ানক অপরাধে জেনে বা না জেনে জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ফিলসফি মওলার সাথে সাথে পাঠকও শুনতে পাবেন। ফজলে এলাহীর জীবনের বিভিন্ন সংশয়, দ্বন্দ্ব, আবার তীব্র আত্মবিশ্বাসের বয়ানে সৃষ্টি হয় এক প্যারাডক্সের। কখনো মওলা তাঁর আদরের ভাইটির মত আবার কখনো মন্ত্রীর দৃষ্টিতে মওলা একজন শু*ড়ের বাচ্চা। তবে ভোর হওয়ার আগেই যা কিছু সম্ভব তা মওলাকে বলে যেতেই হবে।
আহমদ ছফা হাসপাতালের রুমে ডেথবেডে শুধুমাত্র দু'জনের কথোপকথনে এমন এক গল্পকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন যে পাঠক ভুগবে অস্বস্তিতে। অবশ্য জীবনের মত সাহিত্যও অস্বস্তিকর বিষয় এবং অশ্লীল। দ্রুতগতিময়তার এই গল্পে ইতিহাসের অনেক অধ্যায়ও চুপিসারে চলে এসেছে। মানব ইতিহাসের দুঃখজনক কিন্তু অবশ্যম্ভাবী এক উপাদান সেই ভায়োলেন্সের কথা অনবদ্যভাবে চলে এসেছে আহমদ ছফার গল্পকথনে।
এগিয়ে আসছে মহাশক্তিধর মৃত্যু। ভোর হওয়ার আগেই মন্ত্রী বলে যেতে চান মওলাকে যা যা সম্ভব। এটি-ই ফজলে এলাহীর মরণ বিলাস।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
মরণ বিলাস লেখক : আহমদ ছফা (প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৯) খান ব্রাদারস অ্যান্ড কোম্পানি প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০১৬ পুনর্মুদ্রণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৯ প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
আমি ভীষণ আবোলতাবোল লিখেছি বোধহয়। আসলে মরণবিলাস নিয়ে যতো সময় যাবে ততো আমার চিন্তাভাবনাগুলো আরো গভীর হবে। পড়ে ফেললাম শেষ, এইরকম লেখা তো ছফা লিখেন না। তিনি লিখেন আত্নার জন্য। আপনার চোখ পড়া শেষ করলে আপনার অন্তর পড়বে সারাজীবন ধরে।
সমাজের দৃষ্টিতে গণ্যমান্য একজন মন্ত্রী অন্তিমশয্যায় পাশে পেয়েছেন মাওলা বক্স নামে এক উঠতি নেতাকে যে কিনা প্রেসিডেন্টের গুডবুকে থাকতে মন্ত্রীর সাথে হাসপাতালে রাত্রিযাপন করছে। মন্ত্রীর পাশে যখন আর কেউ নেই, তখন জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার একধরনের বোধ জাগ্রত হয়েছে। তার জীবনের যাবতীয় পাপবোধ উন্মোচিত করে তিনি নিজে হতে চান হালকা। তিনি মাওলা বক্সকে বলেন- "সারাজীবন সম্ভ্রান্ত পশুর মতো কাটিয়েছি একথা তো গোড়াতেই কবুল করেছি। কেন আমাকে সাধের মানবজন্মের সমস্ত সুন্দর প্রতিশ্রুতি ছেড়ে পশুর জীবন কাটাতে হল কারণসহ বৃত্তান্তটা তোমার কাছে বলে যেতে চাই। তোমাকে আমার জীবনে লিখতে হবে না, শত্রুর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লাঠি হাতে নামতে হবে না, কিছুই করতে হবে না। তুমি শুধু ধৈর্যের সঙ্গে একটু মনোযোগ মিশিয়ে আমার কথা গুলো শুনবে। তোমাকে শুনিয়ে এক��ু ভারমুক্ত অনুভব করব। অনুভব করব জ্বলন্ত সূর্যের তলে আমি এমন একজন বান্ধব রেখে যাচ্ছি যে আমাকে আমার বেদনার সমান মূল্য দিয়ে গ্রহণ কর��ে পেরেছে।"
মানুষ কতোটা খারাপ কাজ করতে পারে এইটা আমাকে এই উপন্যাস থেকে যতোটা না নাড়া দিয়েছে, তার থেকে বেশি জটিল মনে হয়েছে ছফা যেভাবে মানুষের জাস্টিফিকেশানটা তুলে ধরেছেন। সে যতো পাপই করুক, তার নিজের কাছে একটা জাস্টিফিকেশান থাকে ঐ পাপকাজকে যৌক্তিক করে তুলতে। এই জাস্টিফিকেশান জন্মানোর পরে কথা বলতে শিখতে থেকেই বা ভাবনা মাথায় আসতে থেকেই আমরা শিখে যাই। নিজের কৃতকর্মকে জাস্টিফাই করতে না পারলে কি মানুষ বাঁচতে পারতো? পাপবোধে মরে যেতো না?
মন্ত্রীসাহেব যতোই বলেছেন স্বজ্ঞানে তিনি সব পাপকর্ম করেছেন এবং এর জন্য নিজেকে পশুর সাথেও তুলনা করেছেন কিন্তু ক্লাইমেক্সে গিয়ে একটা তুমুল টানাটানি তৈরি হয় মন্ত্রী আর মাওলা বক্সের মধ্যে। মন্ত্রী শেষে গিয়ে মানুষের মর্যাদা চাচ্ছেন, মাওলা বক্সকে মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছেন তিনিও ভালো কাজ করেছেন। অন্যদিকে মাওলা বক্স তার অপরাধগুলিকে বিচার করতে বসেছে, মন্ত্রীর অপরাধের পক্ষের সাফাই নাকচ করে চলেছে। এইখানটায় এসে উত্তেজনা অনুভব করেছি। এছাড়া পুরো উপন্যাস একটা সরলরেখায় চলে গিয়েছে। মন্ত্রীর পাপের ফিরিস্তি আমাকে অবাক করে নি। অবাক করেছে যে মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি এগুলোর পক্ষে জাস্টিফিকেশান তৈরি করেছেন। প্রথমত, তিনি যাদের প্রতি অবিচার করেছেন (এইক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খুন করেছেন) তাদের দোষবিচার করে এই অবিচারের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন উপলক্ষ হিশেবে। দোষ চাপাতে চেয়েছেন সমাজ-কাল-ইতিহাস এইসব বায়বীয় ধারণার উপরে৷
আরও একটা দিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে- মাওলা বক্সের রিয়েকশন। একজনের জঘন্য অন্যায়কাজের বর্ণনা শুনে যাওয়াও যে অন্যজনের স্নায়ুর উপর, মনের উপর তীব্র প্রভাব ফেলে এইদিকটা ছফা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এছাড়া মৃত্যুর পূর্বে মানুষের খ্যাতি-যশ-প্রতিপত্তি সবকিছুকে মিথ্যে মনে হওয়া, আমিত্বকে পুরো পৃথিবীর অংশ হিশেবে ভেবে নেওয়ার বোধোদয়টা মন্ত্রীর চরিত্রায়নে তিনি তুলে ধরেছেন। একজন নার্সিসিস্ট, অহংকারী মানুষ যে কি না ভাবছে পৃথিবীর ফুল-লতা-গান-সাহিত্য-জীবন পরিবৃত্ত আসলে তাকে ঘিরে, তিনি এসবের রূপরস আস্বাদন করছেন বলে এরা আছে- তার কাছে নিজের থেকে বাকি মানুষদের জীবন ছোট করে দেখাটা সহজ। কারণ তিনি নিজেকে বসিয়েছেন খুব উঁচু এক অহংকারের আসনে। তার ফিলোসফি যদি এমন না হয়ে উল্টো হতো ( আমি এবং আমরা বৃহত্তর পৃথিবীর অংশ, নির্দিষ্ট সময়ের পর পৃথিবী রয়ে যাবে তার শোভা নিয়ে; মানুষ থাকবে না) তবে চিন্তার ধারাটাও বদলে যেতো, সেই সাথে অপরাধের জাস্টিফিকেশানের প্যাটার্নটাও অন্যরকম হতো।
কাল কে কে মরে যেতে চায় প্রশ্নে কোনো স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া যাবে না। এটা প্রকৃতির দেয়া মানবপ্রকৃতি। বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আমাদের জীবনকে সঞ্চয়ের পথে ঠেলে দেয়। আমরা যদি জানতাম কবে শেষ হচ্ছে দুনিয়াদারী বোধ করি সঞ্চয় ও গুপ্ত বাসনাগুলো আমাদের ছুটি দিত। মন সবকিছু ছেড়ে থাকত কেবল খরচের দলে। মিথ্যে বলার ক্ষমতাটি যদি হারিয়ে যেত তবে আমরা গায়ের রঙের চেয়ে বরং মন দিয়ে মানুষের সৌন্দর্য্য বিচার করতে পারতাম। সত্য বললে বেশিদিন হয়ত বেঁচে থাকাও যেত না মানবের নিজের কাছে নিজের মনের কদাকার রূপ দেখে। মরণের আভাস সেই মনকে খরচ করে দেয়ার, মনের কু-প্রবৃত্তি ও সত্যিকার চেহারা প্রকাশের উপলক্ষ্য করে দেয়। এটা হচ্ছে মরণের আগে করে যাবার মত একমাত্র বিলাসিতা। কেননা, আর বাকি সব বিলাসিতাই নিছক অপচয়, অহেতুক। কেবল নিজেকে বের করে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটুকুই বিলাসিতা। এ বিলাসিতাটুকু যখন এসে হাজির হয় কেবল একটি উপহারই আনে। এই দুইয়ে মরণ বিলাস।
একবার শুধু ভাবুন, মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আছেন আপনি। একটু পরেই আপনি মারা যাবেন। আপনজন বলতে আপনার পাশে কেউ নেই, আপনার সামনে আস্তে আস্তে ছবির মত ভেসে উঠছে আপনার সমস্ত জীবন। কেমন লাগবে তখন আপনার?
আহমদ ছফার 'মরন' বিলাস সেরকম একটি উপন্যাস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে রাব্বি, পাকিস্তান আমলেও যিনি ছিলেন মন্ত্রী। দেশ পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশ হয়েছে তখনো তিনি ছিলেন বহাল তবিয়তে। কিন্তু ক্যান্সার নামক মরনব্যাধি তাঁকে আঁকড়ে ধরেছে এবার, জীবনের কাছে হার মানছে সে। কোনো আপনজন কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি, কেউই নেই তার পাশে আছে। পাশে আছে শুধু তার দীর্ঘদিনের চামচা মাওলা বক্স। কিন্তু সেও আছে কেবল প্রেসিডেন্ট সাহেবের চোখে ভালভাবে নিজেকে জাহির করার আশায়। মাওলা বক্স বলেন, "মেরুদণ্ড থাকাটা আসলেও খুব খারাপ ব্যাপার। যাতে স্যারের মত মহান ব্যক্তিদের দরবারে প্রয়োজনে হাজির থাকতে পারি, সেজন্য বহু কষ্ট করে ওটাকে বাঁকিয়ে নিয়েছি"
মাওলা বক্স কখনোই ভালো মানুষ ছিল না। কিন্তু মন্ত্রীর জীবনের শেষ কথাগুলো শুনে তার মন বিষিয়ে উঠে। মন্ত্রী জীবনের শেষক্ষনে এসে বলে যায় তার জীবনের কালো অধ্যায় গুলোকে। মন্ত্রী ফজলে রাব্বি আকুতি করে বলেন, "মাওলা বক্স, ও মাওলা বক্স, আমার অতীত জীবন আমাকে গ্রেফতার করে ফেলতে চাইছে। আমি ধরা পড়ে যাচ্ছি। পালাবার পথ পাচ্ছিনে। সব দরোজা জানালা বন্ধ।"
রাজনীতির মাঠে প্রভাবশালী মন্ত্রী জীবনের শেষক্ষনে এসে বুঝতে পারে, সে আসলে কতট ক্ষমতাহীন। তবুও সে বলে, "পলিটিক্স করতে হলে বিদ্যেবুদ্ধির চাইতে ঘ্রানশক্তিটা প্রয়োজনই সবচাইতে বেশি। ওই বস্তু প্রচুর পরিমাণে আমার মধ্যে ছিল বলেই জীবনে এতদূর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি।"
ফজলে রাব্বি জীবন অন্ধকার হতে শুরু করে ছোটোবেলা থেকে। নিজ ভাইয়ের খুনের রক্ত এখনো লেগে আছে তার হাতে। এত বছর তার অপরাধ তার কাছে , তার অতীত তার কাছে অপরিচিত হলেও, আজ সে মুখোমুখি অতীতের। মন্ত্রী বলেন, "এখন আমার প্রতি লোমকূপে দৃষ্টিশক্তি জন্ম নিয়েছে এবং প্রতিটি জিনিসকে অন্তর্গত পরিচয়ে চিনতে পারছি। এটা একটা আশ্চর্য রকমের ক্ষমতা। একমাত্র মৃত্যুর পূর্বেই মানুষ এ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে।"
আহমদ ছফার খুব ভিন্ন রকমের একটা লেখা। উপন্যাসে মূল চরিত্র ফজলে রাব্বিকে বলা যায়, এই সমাজের ফুলে ফেঁপে উঠা ভন্ড রাজনীতিকদের আদর্শ প্রতিনিধি। অথবা উপন্যাসটা একটি আদর্শ মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। ব্যক্তিজীবনের আমাদের প্রতিটা মানুষের মধ্যেই রয়েছে একেকটা ফজলে রাব্বি।
মানুষ সবসময় নিজেকে দেখে আসে একরূপে, জীবনভর সে নিজেকে নিয়ে করে বিলাসিতা। কিন্তু এই বিলাসিতা যখন মরীচিকা হয়ে ধরা দেয় তখন সেটা হয়ে যায় 'মরন বিলাস।'
তাইতো মন্ত্রী ফজলে রাব্বি বলে যায়, "প্রকৃতির সঙ্গে যখন মিলিয়ে দেখি আমি শব্দটির কোন অর্থ খুঁজে পাইনে।আবার মানুষের সঙ্গে,সমাজের সংগে মিলিয়ে বিচার করতে যখন প্রবৃত্ত হই,আমি শব্দটা কি অসাধারন গুরুত্ব সম্পন্ন হয়ে ওঠে,কি অপুর্ব ব্যাঞ্চনা ধারন করে। আমি কে,আমি ক�� গভীরভাবে চিন্তা করে কোন অর্থ আবিস্কার করতে পারিনে। কিন্তু যখন কথা বলি,যখন কাজ করি তখন আমার চাইতে সত্য আমার চাইতে বড় কোন কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করিনে। আমি আছি বলেই জগত আছে আমি শুনি বলেই সংগিত মধুর হয়,আমি দেখে পরিতৃপ্ত হই বলে কাননে ফুল ফোটে। আমি না থাকলে কোথায় থাকত তোমার জগত,কি করে বিকশিত হত সংগিতের মাধুর্য,কি কারনে ফুটত ফুল। সমস্ত সৃষ্টি জগতের সার পদার্থ আমি।"
নীতি কথায় শোনা যায় মেরুদণ্ড সোজা রাখা টা কষ্টের কাজ। আসলে কষ্টের কাজ হলো সেটাকে প্রয়োজনের খাতিরে বাঁকা করে উপর মহলে বারংবার সেলামি ঠোকা । আমৃত্যু যেটা আমরা করে যাই।
৩.৫/৫ নামটা যথার্থই হয়েছে। একজন মৃত্যুপথযাত্রী রাজনীতিবিদের যন্ত্রণাদায়ক কিংবা শান্তিময় মৃত্যু। জীবনের অপরাধগুলো কাউকে জানিয়ে যাওয়ার মতো সুখময়, নাকি দুঃখজনক মৃত্যু- তা আমার জানা নেই।
"প্রকৃতির সংগে যখন মিলিয়ে দেখি আমি শব্দটির কোন অর্থ খুঁজে পাইনে।আবার মানুষের সংগে,সমাজের সংগে মিলিয়ে বিচার করতে যখন প্রবৃত্ত হই,আমি শব্দটা কি অসাধারন গুরুত্ব সম্পন্ন হয়ে ওঠে,কি অপুর্ব ব্যাঞ্চনা ধারন করে।আমি কে,আমি কি গভীরভাবে চিন্তা করে কোন অর্থ আবিস্কার করতে পারিনে। কিন্তু যখন কথা বলি,যখন কাজ করি তখন আমার চাইতে সত্য আমার চাইতে বড় কোন কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করিনে।আমি আছি বলেই জগত আছে আমি শুনি বলেই সংগিত মধুর হয়,আমি দেখে পরিতৃপ্ত হই বলে কাননে ফুল ফোটে।আমি না থাকলে কোথায় থাকত তোমার জগত,কি করে বিকশিত হত সংগিতের মাধুর্য,কি কারনে ফুটত ফুল। সমস্ত সৃষ্টি জগতের সার পদার্থ আমি।" -মন্ত্রী ফজলে রাব্বি
মানুষের জীবন অনেক বিচিত্র হয়। এমন ও হতে পারে আপনার সাথে বসে চা খাচ্ছে একজন খুনী কিন্তু আপনি জানেন না। আমরা সবাই মুখোশ পড়ে থাকি। একেকজন একেক রকমের। উপন্যাসটিতে তেমনই এক মুখোশধারী মানুষ মৃত্যু শয্যায় বসে আরেকজনের কাছে নিজের মুখোশ উন্মোচন করে। শুনাতে থাকে তার সব গোপনীয় কথা এবং বীভৎস সব কাজ। আমি অনেক উপভোগ করেছি। বাকিরা উপভোগ করতে পারবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই...
ইংরেজি একটা মুভি অনেক দিন আমার মনে দাগ কেটেছিল- "Flashback of a fool"। এই বইটি একজন রাজনীতিবিদের মরাল কম্পাসের গল্প বলে, সে তার মৃত্যুকে কিভাবে দেখে তার গল্প বলে।
মৃত্যুপথযাত্রী মন্ত্রী ফজলে ইলাহি। শেষ সময়ে পাশে কেউ নেই। আছে শুধু চাটুকার মওলা বক্স, তাও রাষ্ট্রপতির অনুরোধে। মন্ত্রী নিশ্চিত এটাই তার শেষ রাত। এসময়ে তার বুকের ভিতর ঠেলে জীবনের সব কথা বেরিয়ে আসছে। শিউরে উঠা সেসব কাহিনী শুনে মওলা বক্সের মত মানুষের পর্যন্ত আত্নহত্যা করে ফেলতে মনে চাচ্ছে। কিন্তু তার রেহাই নেই, শুনে যেতেই হবে মৃত্যুপথযাত্রী এক নিন্মশ্রেনীর মানুষের ভয়ংকর জবানবন্দী।
আহমেদ ছফা লেখাগুলা হাতুরির মত। পড়লে মনে হয় কেউ যেন মাথায় হাতুরি দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে। মানুষের জীবনদর্শন কত অদ্ভুত হতে পারে তা যেন অবর্ননীয়। কিছু ঘটনা পড়ে আমারও মনে হল মওলা বক্সের এখুনি আত্নহত্যা করা জরুরী দরকার। বইটাতে ফজলে ইলাহীকে ভিলেন দেখানো হলেও আমার কাছে আরো ভয়ংকর লেগেছে আব্দুল বাকীকে। ফজলে ইলাহির তাও নূন্যতম বিবেক হলেও আছে। কিন্তু আব্দুল বাকী মত লোকেরা আরো ভয়াবহ। উদাসীন ভাবে বিড়ি টানতে টানতে যেকিনা একজন নিষ্পাপ মানুষকে ভয়াবহভাবে হত্যা করতে পারে।
সবশেষে বলি আহমেদ ছফা একজন জাত সাহিত্যিক। উনি এখনকার লেখকদের মত সরল বাংলা শব্দের জাল বুনেন নাহ। উপমাগুলা যে দেয়া হয়েছে সেগুলা অসাধারণ। একজন বিবেকহীন সফল রাজনীতিবিদের জীবনদর্শনে সবাইকে স্বাগতম।
I wish আমাদের দেশের কোনো মন্ত্রীর মৃত্যুর আগে দেশের জনসাধারণের প্রতিচ্ছবি হয়ে কোনো মওলা বক্স উপস্থিত থেকে তাদের জীবন গাঁথার অসামান্য সুকর্মের (!?) বিবরনী পেলে বুঝতে পারতাম আসলেই তারা আমাদের যোগ্য না আমরা তাদের অযোগ্য
"আমাদের এই পোড়া দেশে সুবিচার কোহিনূর পাথরের চাইতে দুলর্ভ।"
আজ এই ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে, যখন বুয়েটের মতো দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ উত্তাল অবস্থায়, তখনও কথাটা কতখানি বাস্তব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তা যাক্ গে— আলোচনাটা ওদিকে না: আলোচনাটা বই নিয়ে। বইয়েই আবার ফিরে আসি।
আহমদ ছফা সম্পর্কে জানেন না এমন পাঠক খোঁজে পাওয়া দুরূহ। অনেকের মতে, মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন আহমদ ছফা।
মরণ বিলাস (১৯৮৯) আহমদ ছফার একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের উপন্যাস। মরণ বিলাসে চিত্রায়িত হয়েছে মৃত্যুশয্যায় এক মন্ত্রী– যে তার রাজনৈতিক অনুসারী মাওলা বক্সের কাছে তার সারা জীবনে কৃত অপকর্মের বর্ণনা দেয়। মন্ত্রীর অপকর্মগুলো খুন, ব্যভিচার, ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘিরে আবর্তিত হয়। মরণ বিলাশ উপন্যাসের শুরুটা হয় তাই একজন শয্যাশায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মৃত্যুর অপেক্ষা দিয়ে। মন্ত্রী সাহেব জানেন তিনি আজ ভোর পর্যন্ত বাঁচবেন। তাই তিনি তার সারাজীবনের অপকর্মের কথা মাওলা বক্সের কাছে স্বীকার করে নিজের মৃত্যু যন্ত্রনাকে লাঘব করতে চান। অসুস্থ মন্ত্রীর সাথে হাসপাতালে কেউই থাকতে রাজি হয়নি, কিন্তু—প্রেসিডেন্টের কথায় মাওলা বক্স রাজি হয়। মন্ত্রী সারাদিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকেন, তবে, রাত দশটা থেকে ভোর ছ'টা পর্যন্ত মাওলা বক্সকে মন্ত্রীর কথা শুনতে হয়। গত তিনমাস ধরে মন্ত্রীর এই প্রাত্যহিক রুটিন। আজ যেহুতু মন্ত্রী মারা যাবেন তাই রোজকার মতো বিরক্তিকর হলেও মাওলা বক্স এখান থেকে আজই মুক্তি পাবে এই ক্ষীণ আশায় মন্ত্রীর অপকর্মের কথা শুনতে রাজি হয়। মাওলা বক্সের মতে, "মেরুদন্ড থাকাটা আসলেও খুব খারাপ ব্যাপার। যাতে স্যারের মতো মহান ব্যক্তিদের দরবারে হাজির থাকতে পারি, সেজন্য বহু কষ্ট করে ওটাকে বাঁকিয়ে নিয়েছি। "
মন্ত্রী সাহেব স্বীকার করেন তিন��� পশু, মানুষ নন। তারপরও তার অপকর্মের দায়ভার নিজে নিতে চান না, তার কাজের জন্য তিনি লজ্জিত নন। তিনি তার সব কাজের দায় ইতিহাসের উপর চাপিয়ে, অন্য মানুষের উপর চাপিয়ে নিজেকে নিরাপরাধী প্রমাণ করতে চান৷ মন্ত্রীর একেকটা অপরাধের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে মাওলা বক্সের মনে হয়, প্রত্যেকটা গল্প যেন তার আত্মার উপর নতুন বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। মাওলা বক্সের আরো মনে হয় সে যদি আরও কিছুক্ষণ এইসব অপরাধের কাহিনী শুনে তাহলে সে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে। মাওলা বক্স মন্ত্রীর কাহিনী শুনতে আপত্তি জানালেও, মন্ত্রী তাকে বাধ্য করেন বা মাওলা বক্স মন্ত্রীর ইচ্ছা শক্তির কাছে পরাজিত হয়।
মাওলা বক্স মন্ত্রীর এইসব জঘন্য অপরাধের কথা শুনে বলে: ''আমাদের এই পোড়া দেশে সুবিচার কোহিনূর পাথরের চাইতে দুলর্ভ। তবু আমি বলব, যে কোন কলঙ্কিত আদালতের যে কোনো হাকিমের কাছে আপনার কাহিনী সবিস্তারে উপস্থিত করা হলে আমি নিশ্চিত অন্তত আপনার দশবার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিতেন৷।''
'মরন বিলাশ' আহমদ ছফার একটি ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস। বর্তমান সময়ে অল্প বিস্তর হলেও আমাদের রাজনৈতিক মন্ত্রীদের সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে (যদিও আমাদের বর্তমান মন্ত্রীরা এই বইয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী 'ফজলে ইলাহি'কে ছাড়িয়ে গিয়েছেন সেই আহমদ ছফার সময়েই। বর্তমান মন্ত্রীদের কাছে, ফজলে ইলাহি একেবারেই নস্যি একজন ছাত্রসংগঠনের নেতার চাইতেও তিনগুন নিম্নস্তরের মানুষ)। বইটি আকার খুব ছোট। ঘণ্টাখানেক লাগবে শেষ করতে কিংবা দ্রুত পাঠের পাঠকদের এরচে কম সময় লাগবে। পড়ে দেখতে পারেন, ভালো লাগবে আশা করি।
It's a shame that I only recently started reading books authored by Ahmed Sofa. I have been hearing his name for quite some time, but it wasn't until 2020 that I finally picked up a copy of "Joddopi Amar Guru", which was a splendid book to read.
After that, I kept on reading his books, and this is my latest read.
Just like the famous novel-turned-movie "Ongkar”, Moron Bilash (celebration of death; in my words) is a short novel. It is about a dying politician, who has been infamous for switching sides and for being consistent in maintaining his minister status through different political regime changes. Rings a bell, doesn't it?
Now, on his death bed, he finds a sycophant in the form of "Mawla Box" who started off as a typical sweet tongued person, but by the end of the night, he becomes quite rebellious.
Basically, the corrupt politician, Fazle Ilahi keeps narrating his life's different misdeeds to Mawla Box. His narrative has a clear confessional tone, but the stories of his past misdeeds not only paints a typical picture of a person who lived through a life of corruption, but it also gives us a good history lesson.
Ilahi realizes that cancer is killing him, and declares that he will die in the morning.
Then he starts a kind of a monologue with Mawla Box. At first, Mawla is subdued, but eventually he starts taking an interest in the minister's life, and adds some much needed diversity.
From Ilahi's stories, we get to experience an abridged version of Bangladesh's history; starting all the way back from the days of 1947 and on to the current days.
We are introduced with characters and plots that well deserve novels of their own. Some of the stories are shocking, some have significant, and yet, not too unpredictable plot twists, while some are just unique.
However, the events themselves are not much to write home about, but instead, we get to read the inner thoughts of Fazle Ilahi; an all-powerful home-minister, in his most vulnerable state. Just like any other normal human being, we see him get humanized.
By the end of the night, the role of the sycophant has almost reversed. He hates his master, and starts calling him by his name. I must say, both the characters in the book went through significant development within the short scope of the novel.
This book is a relatively easier read, in comparison with some of Sofa's other non-fiction (Bangali Musolmaner Mon) or even fiction (Pushpo, Brikkho ebong Bihongo Puran) books.
I highly recommend it. Did not read any reviews or anecdotes on this book before buying it. The title intrigued me, and I am glad that I picked it up.
মরণ বিলাস আহমদ ছফার একটি মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস। তবে আমার কাছে উপন্যাসটি যতটা না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক। নষ্টসময়ের রাজনীতিতে একজন নষ্টরাজনীতিকের রাজনৈতিক সামাজিকায়ন অথবা পেশাদার রাজনীতিক হয়ে ওঠার এক অনবদ্য বর্ণনা-এ উপন্যাসটি। আকারে ছোট, মাত্র ৮৬ পৃষ্ঠার এক সুখপাঠ্য উপন্যাস। “মরণ বিলাস” আমার পড়া উপন্যাসগুলোর মধ্যে খুবই বিশিষ্ট একটি রচনা। উপন্যাসটি রচিত হয় ১৯৮৮ সালে, এবং পরের বছরই সেটি প্রকাশিত হয়।
আমি কেন মরণবিলাসকে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস মনে করি? মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের প্রধান আশ্রয় পাত্র-পাত্রীর মনোজগতের ঘাত-সংঘাত ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; চরিত্রের অন্তর্জগতের জটিল রহস্য উদঘাটন ঔপন্যাসিকের প্রধান লক্ষ্য। আবার সামাজিক উপন্যাস ও মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস এর নৈকট্য লক্ষ করা যায়। সামাজিক উপন্যাসের যেমন মনস্তাত্ত্বিক ঘাত-প্রতিঘাত থাকতে পারে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত থাকতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের কাহিনী অবলম্বন মাত্র, প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে মানবমনের জটিল দিকগুলো সার্থক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। বিশ্বসাহিত্যে ফরাসি লেখক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার লিখিত ‘মাদাম বোভারি', রুশ লেখক দস্তয়ভস্কি লিখিত ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট' এবং বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি', চতুরঙ্গ', সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘চাদের অমাবস্যা’ 'কাঁদো নদী কাঁদো' মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসের উজ্জ্বল উদাহরণ। যা এই উপন্যাসেও প্রকাশ পায় তাই এটিকে আমার কাছে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস বলে মনে হয়েছে ।
বাংলাসাহিত্যে এ পর্যন্ত যত প্রাবন্ধিক, লেখক এবং সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সাহসী, বুদ্ধিমান, কুশলী, বহুমুখী এবং তেজদীপ্ত লেখকদের তালিকায় একটি নাম জ্বলজ্বল করবে, নামটি “আহমদ ছফা”। মননশীল এবং সত্যসমৃদ্ধ স্পষ্টবাদী সাহিত্যক আহমদ ছফা ছিলেন সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং আদর্শনিষ্ঠ-প্রগতিপন্থী একজন গণবুদ্ধিজীবী। নতুন নতুন বিষয় অনুসন্ধান করা তার সাহিত্যের প্রকৃতিজাত স্বভাব।তার উপন্যাসের ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের জীবনের-মনস্তত্ত্বের ভাল-খারাপ নানান বিষয়ের আলোকপাত করেছেন খুবই সহজ-সরল ভাষায়।
উপন্যাসের মূল চরিত্র জনাব ফজলে ইলাহি, তিনি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, যিনি কিনা এক সময়ে পাকিস্তান আমলেও মন্ত্রী ছিলেন এবং ক্রমাগত ভোল পাল্টে মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছেন স্বাধীন বাংলাদেশেও। তিনি মৃত্যুপথযাত্রী, বুঝতে পারছেন ভয়াবহ ক্যান্সারে তিনি মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত এগুচ্ছেন। মৃত্যু শয্যায় তিনি দেখতে পাচ্ছেন ইতিপূর্বে করা তার সকল অপকর্ম তার দিকে যেন তেড়ে আসছে, আর মৃত্যুর আগে শেষ সময়টুকু তিনি কাউকে অপকর্মের কথা বলে হালকা হতে চাইছেন। রোগীর সাথে রাতে থাকেন মাওলা বক্স নামক মেরুদণ্ডহীন তোষামুদে এক ব্যক্তি, হাসপাতালে শুয়েশুয়ে যার কাছে মন্ত্রীসাহেব তার অতীতস্মৃতিচারণ করছেন।
ফজলে ইলাহী মূলত তার জীবনের তিনটি বিশেষ ঘটনা বর্ণনা করেন মাওলা বক্সের কাছে। কাম, লালসা, ঘৃণা আর অবিবেচনার মোড়কে আবৃত এই ঘটনাগুলো যেন মানব জীবনের চিরন্তন কদর্যতারই প্রতীক। প্রতিটি পাপকেই ফজলে ইলাহী পাশ কাটিয়ে এসেছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, জীবনে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি অর্জন করেছেন, কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে তার সকল অর্জনের নিষ্ফলতা তার সামনে প্রকট। ছফা অতি সন্তর্পণে কথোপকথনের ছলে কাহিনী প্রবাহ এগিয়ে নিয়েছেন
উপমহাদেশের দ্বি-মেরুকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে হিন্দু মধ্যবিত্তের নাক সিটকানো, আর পশ্চাৎপদ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের হীনমন্যতা কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়, সদ্ভাবপূর্ণ দুটি সম্প্রদায়কে কিভাবে ঠেলে দেয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিকে, তার তাৎপর্যময় বর্ণনা করেছেন আহমদ ছফা।
অনেক পাপ, অনেক হত্যার দায়ভার তার উপর, কিন্তু দেশভাগের দাঙ্গার সময় নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বাজি রেখে একটি কিশোরকে বাঁচানোর স্মৃতি তাকে নিজের ভিতরকার মানুষটিকে অনুভব করায়–“আমার পাপ কর্মগুলো আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উন্মত্ত আবেগে উদ্বাহু নৃত্য করছে। কিন্তু কাছে ঘেষতে পারছে না। কিশোরটি আমাকে রক্ষা করছে। মাওলা বক্স,আমার মানবজন্ম বৃথা যায়নি। আমারও কিছু সুকৃতি আছে। আমি উদ্ধার পেয়ে যাবো।” হয়তো তাই..আলোর একটি শিখা অনেকখানি অন্ধকার মুছে দেয়–কে না জানে সে কথা!এভাবে, নাতিদীর্ঘ, তবে সুখপাঠ্য উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফজলে ইলাহির জবানের মাধ্যমে আহমদ ছফা মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, চড়াই-উৎরাইসহ নানা বিষয়ের যে শৈল্পিক বর্ণনা দিয়েছেন, বোধ করি পাঠককে তা নিরাশ করবেনা মোটেই !
মরণ বিলাস’ এর ছফা ঘোর আশাবাদী। মানুষ ও মানুষের জীবন নিয়ে তার দৃপ্ত আশাবাদই মূলত ব্যক্ত হয়েছে এই বইটিতে। তিনি মানুষের প্রগতিতে ও চিরন্তন সম্ভাবনায় বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। ফজলে ইলাহীর মতো মানুষরা মৃত্যুর পরে স্বর্গে যায় নাকি নরকে, সে প্রশ্ন উহ্যই থাক। জীবিতাবস্থায় স্বর্গ আর ন��কের সহাবস্থানে মানুষের আস্ফালন, পথ নির্ধারণ আর, স্বাধীন ইচ্ছার সঠিক ব্যবহার আর সর্বোপরি এক চিরন্তন অপার সম্ভাবনার মধ্যে দিয়েই মানবজীবন মহিমাময় হয়ে ওঠে। আর তাই মানবজীবন তথা মানুষ সম্পর্কে সংকীর্ণ ধারণা পোষণ করার পক্ষপাতী ছফা নয়।
আহমদ ছফা তার সূক্ষ্ম জীবনবোধ ও মানব দর্শন প্রকাশ করেছেন ‘মরণ বিলাস’-এ। মানুষের জীবনের প্রকৃত অবয়বটি চূড়ান্ত বাস্তববাদিতার সাথে ফুটিয়ে তুলে পাঠককে তিনি ভাবিয়েছেন; যারা আগেও ভেবেছেন, তাদের আরও আরেকবার ভেবে দেখার আগ্রহ জাগিয়েছেন। একইসাথে তিনি সাম্প্রদায়িকতা, পশ্চাৎপ্রদতা, প্রভূত রিপু ও মানবীয় সীমাবদ্ধতাসমূহ অবজ্ঞা করে মানুষ হিসেবে আমাদের যে অপার সম্ভাবনা, তাকে জড়িয়ে ধরার আহবান জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে ‘মরণ বিলাস’ আহমদ ছফার শ্রেষ্ঠতম কীর্তিগুলোর একটি। ভাবতে ভালোবাসেন এমন পাঠকদের জন্য এটি আহমদ ছফার এক অনবদ্য উপহার। তাই আর দেরি না করে পড়ে ফেলুন এই উপন্যাসটি...
রেটিং: 3.5 একটু বেশি পেল, কারণ বইটার পরতে পরতে আরেকটা বইয়ের ছায়া দেখলাম। ওসামা দাজাই এর "No Longer Human" বইটা কি আহমদ ছফা পড়েছিলেন? মিলটা তেমন বেশি কিছুই না, আবার কাকতালীয়ভাবে অসম্ভব মিল। ফজলে ইলাহী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মৃত্যুশয্যায় মাওলা বক্সকে তার জীবনের বৃত্তান্ত শুনিয়ে যেতে চান, নিতান্ত ভালো মানুষ মাওলা বক্স তাতে রাজি হয়েই বিপদে পড়ে।মিল এখানেই শুরু, ফজলে ইলাহী ও ইউজুউ দুজনেই দ্যোর্দণ্ডপ্রতাপ বাবার সন্তান, অল্প বয়সে নারীপুরুষের সম্পর্কের সর্পিল চিত্র মগজে গেঁথে যায়। ইউজুউ যেখানে একমাত্র বন্ধুকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়, ফজলে ইলাহী সৎভাইকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। দুজনেই বড় অপরিণত বয়সে অবৈধ (এবং অজাচারই বলা যায়) সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, মজার ব্যাপার উভয়ক্ষেত্রে এর সমাপ্তিও একমাত্রার, গর্ভধারণ ও মেয়েটির মৃত্যু। কোনো এক বিশেষ কারণে ইউজুউ এবং ফজলে ইলাহী আবারও বয়সে বড় ও নিষিদ্ধ রমণীর প্রতিই আকৃষ্ট হয়, তবে এখানে বলতেই হবে, চেমন বাহারের সাথে প্রেম কাহিনীর আলাদা একটা সৌন্দর্য দাঁড় করিয়েছে। ফজলে ইলাহী এরপরও তার কর্মকান্ড চালিয়ে যায়, এখানে অবশ্য আহমদ ছফা ও তাঁর সময়-সমাজের ছাপটাই প্রাধান্য পেল। ফজলে ইলাহীকে হেডমাস্টারের ঘরে আগুন দিতে পাওয়া গেলেও সৌভাগ্যক্রমে ইউজুউ সেদিকে যায় নি। প্রতিক্ষেত্রে যেখানে ইউজুউ একের পর এক অতীতের প্রেতাত্মার হাতে আটকা পড়ছিল, সেখানে মন্ত্রীর পিছলে পড়া বিবেকই তাকে উদ্ধার করে(যার যন্ত্রণা ভোগ করেছে বেচারি মাওলা বক্স) বৈপরীত্য বলতে গেলে মানসিক দৃঢ়তায়। ইউজুউ যখন শুরু থেকেই গল্প তার ভিতরের দানোদের শুনাচ্ছিলো, তখন থেকেই চরিত্রের দুর্বলতা ভালোই ফুটে ওঠে (যা সম্ভবত ওর ভেঙে পড়ার কারণ ছিল); অন্যদিকে মাওলা বক্স ফজলে ইলাহীর কনফেশন শুনতে শুনতে ভাবেন, "মরণের মুখে দাঁড়িয়েও তার মতো কাউকে শুধু কথা দিয়ে খুন করা মন্ত্রীর জন্য কঠিন কিছু না"। জীবন যে শুধুমাত্র চেতনার জোরে জেতা যায়, তা মন্ত্রীমশায়ের শেষ মুহূর্ত শুনেই বিশ্বাস করতে হলো।
এক বইয়ের কাহিনীতে অবশ্যই অন্য বইয়ের রিভিউ লেখা হক কথা না। তবে যে আবেশটা ছিল তা লিখতে বাধ্য করলোই।
This entire review has been hidden because of spoilers.
‘মরণ বিলাস’ আহমদ ছফার একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত একজন মন্ত্রী, ফজলে ইলাহী, যিনি ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি তার পূর্বের জীবনের সমস্ত অপকর্ম দেখতে পাচ্ছেন। মৃত্যুর আগে সেই কথাগুলো কাউকে বলে হালকা হতে চাইছেন। তাই হাসপাতালে তার অসুস্থ সময়ের সঙ্গী মাওলা বক্সের কাছে তিনি তার পূর্ব জীবনের ইতিবৃত্ত বয়ান করেন।
ফজলে ইলাহী মূলত তিনটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন। বিষপ্রয়োগে সৎ ভাইকে হত্যা, ভাবীর আত্মহত্যা এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে হেডমাস্টারের মৃত্যু। এই ঘটনাত্রয়ের মধ্যে লালসা, কাম, ঘৃণা ও অবিবেচনার অস্তিত্ব আছে, যেগুলো আমাদের মানবজীবনের চিরন্তন কদর্যতার প্রতীক।
ফজলে ইলাহী প্রথাগত পদ্ধতিতে তার অপরাধ স্বীকার করতে চাননি। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে নিজের কৃত অপরাধের স্বীকারোক্তির চেয়ে আত্মোপলব্ধি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন তিনি অনুভব করেন তার জীবনের অজস্র খারাপ কাজের মধ্যে একটি নিঃস্বার্থ ভালো কাজও আছে। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর সময় তিনি এক কিশোরের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। এবং এই একটি কাজই তার জীবনের অন্যতম সুকৃতি।
‘মরণ বিলাস’ উপন্যাসে লেখক একটি Optimistic বা আশাবাদী চেতনার বার্তা দিয়েছেন। ভালো, খারাপ, পাপ, পুণ্য নিয়ে মানুষের জীবন। একটি নিঃস্বার্থ সৎকাজের ক্ষমতা আছে অনেক পাপকাজের কালিমা ম্লান দেওয়ার। গল্পের এক পর্যায়ে ফজলে ইলাহী মাওলা বক্সকে বলে, ‘আমার মানব জন্ম বৃথা যায়নি, আমার আশা আছে মাওলা বক্স, আশা আছে।’
‘মরণ বিলাস’ উপন্যাসে লেখক অনেক জটিল দার্শনিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও এই রচনাটি কথাসাহিত্যের একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন। একজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মনের অনুভূতি এমন সাবলীল ও সূক্ষভাবে ফুটিয়ে তোলা ও পাঠকদের দ্বারা উপলব্ধি করানো আহমদ ছফার পক্ষেই সম্ভব।
বই: মরণ বিলাস লেখক: আহমদ ছফা প্রকাশক: খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৬৪ মুদ্রিত মূল্য: ৫০ টাকা।
আমার মাঝে মধ্যে বিরক্ত লাগে। কেন অসহায়ের মত অন্যের বিষাদ শ্রবণ করতে হবে! অলিতে গলিতে থলিতে ভরে মানুষ বির্সজন দিচ্ছে বিষাদ। এর অন্তিম গন্তব্য শহরের উপকন্ঠের নর্দমায়। কাঁকের ঠোঁটে খন্ড বিখন্ড হয় তারা!
যে চোখে মানুষ ভালোবাসার পরম শ্রাদ্ধ করে সে চোখ নিয়ে আর বাঁচতে চায় না। অর্পকমে ঢাকা মানুষের সবুজ হাত আরো সবুজ হয় প্রকৃতির ছায়ায়। এ কেমন যেন অদ্ভুত দৃশ্য। না বোঝা যায়, না অনুধাবন করার মত বোধ মানুষের রয়েছে।
যে চলে যায় শুধু চলে যাওয়াটা দেখতে হয়। সে একাকীত্ব জ্বালিয়ে দেয় বুকে, বলে যায় বেদনা নিয়ে বাঁচতে শেখো। তুমি বেঁচে আছো তার শুকরিয়া করতে হবে সে নেই তার মেঘ তোমাকে যাতে স্পর্শ না করে!
পাপকাজে নিবদ্ধ থাকা মানুষের কাছে সত্য হচ্ছে তার জীবন। সত্য মিথ্যে রূপক হলেও সবার নিজস্ব একটি ধারণা রয়েছে তা নিয়ে। জীবনে চলার পথে তুমি হয়ত বুঝবে না মানবতার মুক্তি কি, যখন দেখবে সন্নিহিত মৃত্যু দরজায় দেখবে মানবতার আস্ত পর্দা ঝুলে আছে তোমার খেয়ালে।
'মরণ বিলাস' আশ্চর্য একটি বই। পুরো বইটি দুটো ব্যক্তির মাঝে কথোপকথন বলা চলে। এত সাবলীল বর্ণনা দিয়ে ও গল্প লেখা যায় আহমদ ছফা দেখিয়েছেন। তিনি দুটো চরিত্রের আবহে ভালো খারাপ দ্বন্ধকে চরম প্রশ্ন করে তুলেছেন!
গল্পটির সারসংক্ষেপ হলো, ফজলে এলাহী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার জীবনে এমন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেন নি। পাশাপাশি ভালো কাজও কিছু করেছেন। শেষ বয়সে মৃত্যুর সাথে যখন লড়ছেন হাসপাতালে তখন তার সেক্রেটারি মাওলানা বক্স কে বলে গেছেন তার জীবনের আশ্চর্য সব লোমহর্ষক বিবরণ। কি অদ্ভুত করে মেরেছেন মানুষ তার ব্যাখ্যা পুরো বাংলার চিত্র ফুটিয়ে তুলে।
পর্যালোচনাঃ দেশের একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সময় গুনতেছে। পাশে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ নাই, শুধুমাত্র 'মাওলা বক্স' নামের একজন চাটুকার প্রেসিডেন্টের কাছের মানুষ হওয়ার লোভে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মন্ত্রীর পাশে বসে বসে তোষামোদ করতেছেন। মন্ত্রীর মনে হচ্ছিল, সে অল্পক্ষণ পরেই মারা, তার চোখের সামনে জীবনের সম্পূর্ণ অতীত ভেসে উঠতেছিল। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মাওলা বক্সকে তার কৃত কর্মকান্ড পর্যায়ক্রমে যখন উপস্থাপন করতেছিল, এবং বারবার নিজেকে প্রমাণ করতে চাইছিল যে, নিজের কৃত অপকর্মের কোনটাতেই মন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দোষ ছিল না। কিন্তু অল্পশিক্ষিত মাওলা বক্স তার স্বল্প জ্ঞানের পরিধির মাধ্যমে মন্ত্রীকে দোষারোপ করতে থাকে।
কতগুলো লাইনের মধ্যে এতোই গভীরতা প্রকাশ করা হয়েছে যে, অজান্তেই নিজেকে বিমোহিত করে তুলেছে। শুধুই উপলব্ধি করা যাচ্ছে, এবং আরো কয়েক হাজার বার বইটি পড়ার আগ্রহ জন্ম নিয়েছে। কিছু উপলব্ধি করার মতো লাইন, নিচে হুবুহু তুলে দেওয়া হলো.. ⊕ বনের বাঘের নিষ্ঠুরতার মধ্যে একটা সরল সৌন্দর্য আছে। স্বভাবের তাগিদে বাঘ নিষ্ঠুর। কিন্তু মানুষকে অনেক কায়দা কানুন করেই নিষ্ঠুরহতে হয়।
⊕ তুমি এক বস্তা চিনি ঢেলে দিয়ে বুড়িগঙ্গার পানি যদি মিষ্টি করতে করতে চাও, বুড়িগঙ্গার পানি কখনো মিষ্টি হবে না। মাঝখান থেকে তোনার চিনিটাই নষ্ট হবে। ⊕ দেশের মন্ত্রীরা প্রেসিডেন্ট সাহেবের হুকুমের চাকর মাত্র। তাঁদের কি কোন স্বতন্ত্র ব্যাক্তিত্ব আছে? ⊕ অযোগ্য মানুষের কাছে নিজের ভেতরটা তুলে ধরা এক ধরনের আত্ম অবমাননা।
মরন বিলাস আমার নিজের শেলফের জন্য কেনা প্রথম বাংলা বইগুলোর একটা। অতি আগ্রহের সাথে কিনে নিয়ে এসেছিলাম স্থানীয় বুকস্টোর থেকে।নামটা আহমদ ছফা বলেই হয়ত কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না বইটা ভালো লাগবে নাকি খারাপ লাগবে।আহমদ ছফার বইয়ে বরাবরই ভিন্ন আঙ্গিকে খুবই সাধারণ হরহামেশা ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অসাধারণ ভাবে ফুটে ওঠে।ইংরেজিতে Sooting শব্দটা এক্ষেত্রে একদম যথার্থ।প্রচন্ড জ্বর নিয়ে বইটা শেষ করেছিলাম সেবার।চিন্তাভাবনা আরেকটু স্থির ও শান্ত করতে ছফা সাহেবের বই এজন্য ভালো কাজে দেয়।যেমনটা এখন প্রয়োজন পড়ছে।তাই লেখালেখি করতে শুরু করেছি। ৩০ সেকেন্ডের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি ছফা সাহেবের বই দিয়েই মাথা ঠান্ডা করব।
মরনবিলাস উপন্যাস কে সাধারণ অর্থে রাজনৈতিক উপন্যাস বলা হলেও এর মনস্তাত্ত্বিক দিকই বেশি সুক্ষ্ম। ভিন্ন ভিন্ন সময়কাল ও ঘটনা প্রবাহে দ্বন্দ্ব, প্রত্ত্যোক্তি মুহুর্তে মনের ভেতর ঘটে যাওয়া অনেক গুলো ভাবনা-দুর্ভাবনার ঝড়। ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে অন্তিম মুহুর্তে মনের দ্বন্দ্ব থেকে বের হওয়ার অনিশ্চিত চেষ্টা - এসবই পুরো ঘটনা গুলো পর্যালোচনা করতে বাধ্য করেছে। সত্যি বলতে প্রথম কিছু অংশ পড়ে নিজেও বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কোন আঙ্গিকে লেখক চাইছেন তার ভাবনাগুলোকে প্রকাশ করতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ফজলে ইলাহির শেষ শয্যায় নিজের জীবন বৃত্তান্ত খোলাসা করার দিকটা প্রথম সাধারণ মনে হলেও কিছু ঘটনার গতিময়তার আড়লে করা অনুতাপ বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে বৈকি!কিশোর বয়স থেকেই স্বার্থান্বেষী, গা - বাচানো মনোভাব নিয়ে একের পর এক অপকর্ম করেছেন এবং এখন শেষ শয্যায় সঙ্গীহীন মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। মওলা বক্স নিজেও স্বার্থান্বেষী হওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রী সাহেবের মুখে জঘন্য সব ঘটনার কথা শুনে নিজেও মেনে নিতে পারছিলো না "মানব সন্তানের রুপে এই রাক্ষস বৃত্তান্ত "। পরিশেষে মন্ত্রী সাহেব নিজের পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের দায় তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার দোষ দিয়ে দুনিয়ার জীবনকে অনিয়ন্ত্রিত ক্যান্সারের কাছে শপে দিয়ে পরলোকে পাড়ি জমান। নিজের পাপের জীবন ক্যান্সারের মতো পাপ আর পৈশাচিকতার ফলাফল ছড়িয়ে রেখে গেছেন অন্য কারো জীবনময়।মনস্তাত্ত্বিক এসকল নানা জটিল বিষয় এমন স্বার্থপর মানুষের জীবনে করা অপকর্ম দিয়ে বোঝানো হয়েছে যা পাঠকের মনের ভেতর বিচারবোধ আর সুচিন্তার জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে সক্ষম।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফার মরণবিলাস বইটি নিয়ে আলোচনা বেশ কমই দেখা যায়। আহমদ ছফার শক্তিশালী কলমে সমাজের উচ্চশ্রেণীর ক্ষমতাশীল মানুষের করা অন্যায়ের ব্যাপারে তিনি নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ করে গেছেন। একজন সাহসী বুদ্ধিজীবী হিসেবে অকপটে সমাজের ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন স্বল্প পাতার এক গভীর উপন্যাস মরণবিলাসে।
"মরণবিলাস",নামেই যেন পরিচয়। গল্পের প্লট টা যদিও বা তৈরি করা হয়েছে আশির দশকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহির আসন্ন মৃত্যুকে উপজীব্য করে তবে ভিতরে যেতেই যেন ধরা পড়ে অন্য এক গল্প। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কিন্তু প্রচন্ড এই কষ্টের মুহুর্তে তার পাশে নেই কাছের কেউ; শুধুমাত্র রয়েছে মওলা বক্স নামের চাটুকার তোষামুদে পিএস।
মৃত্যুর ঘণ্টা বাজার আগে আগে ফজলে ইলাহীর জীবনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য স্মৃতি রোমন্থন করেন। তার করা অসংখ্য অপকর্ম, পাপাচার ও ভয়াল কাজকর্ম গুলো যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সারাটা জীবনের করা এসব ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক কাজ সংঘটনের আলাপচারিতা চলতে থাকে অবিশ্বস্ত মওলা বক্সের সাথে। অন্তিম মুহূর্তে বলে যাওয়া সেসব স্বীকারোক্তি এবং জীবনভর করে যাওয়া পাপের পরও আত্মপক্ষ সমর্থনের স্পর্ধা একজন মানুষকে ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা করা যায় লেখক সাহেব খুব জটিল মনস্তত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন এখানে।
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার মুহুর্তে জীবনের অন্ধকার দিকগুলোকে এক অপরিচিত অবিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে খুচরো পয়সার মত ভাঙিয়ে বলে অসুস্থ মন্ত্রীর প্রয়াণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উপন্যাস,শিখিয়ে দিয়ে যায় জীবন নাটকের শেষ নাম মরণবিলাস।
একজন মানুষ তিনি যত খারাপ-ই হোক তিনি নিজে তা স্বীকার করেন না।
প্রমাণ দেই? প্রমাণ দেখবেন? দেখুন:
আজ ৩৫জুলাই, ২০২৪(৪আগষ্ট,২০২৪) -কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে -একদফা দাবি চলছে (শেখ হাসিনার পদত্যাগ) -২০৭+(অফিশিয়াল হিসাব) কোমলমতি শিশু সহ ছাত্র-ছাত্রী খুন -৯,০০০+ জেলবন্দী -১৮,০০০+ আহত -কাল্কেও অনেক মানুষ মরবে, পরশুও মরবে..
এইগুলা কার আদেশে হচ্ছে জানেন? বর্তমান বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আদেশে। তারপরেও তিনি বলে বেড়াচ্ছেন তিনি নিষ্পাপ! তিনি খারাপ কি করেছেন তি��ি জানেন-ই না। আম-জনতাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, "আপ্নারাই বলুন, আমার দোষ কি? আমি কি দোষ করেছি? কেন আমি চলে যাবো?" একই ভাবে ছাত্রলীগ যাদেরকে দেশের মানুষ চুপি চুপি কু*ত্তালীগ বলে ডাকে, তারাও আওয়ামী লীগের পা চেটে একই কথা বলে যাচ্ছে। তারা দেশের সাধারণ ছাত্রদেরকে জামাত, বিএনপি এর লোক, রাজাকার বলে কুপিয়ে, গুলি করে হত্যা করছে। সাথে আছে পুলিশ, সেনাবাহিনীর লোকজনও! কথা একটাই তারা আমাদেরকে দমিয়ে না রাখতে পারলে তারা গদিতে থাকতে পারবে না। ওই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার মতো আরকি.. তাদের কথা তারা একেবারেই নিষ্পাপ। তারা তাদের হাতে সদ্য হত্যা হওয়া ৬বছরের শিশুর চাইতেও নিষ্পাপ!
এর চেয়ে এই বইয়ের কাহিনীর ভালো উদাহরণ হতে পারে না.. বইয়ে এমন-ই একজন মন্ত্রীর কাহিনী ব্যাখ্যা করা আছে..
বৃষ্টিবিলাস, সমুদ্রবিলাস ইত্যাদি অনেক বিলাসের কথা শুনলেও কখনো কি মরণ বিলাসের কথা শুনেছেন? বৃষ্টিবিলাস করতে গেলে যেমন কিছু ভাবপ্রবণ স্মৃতিচারণ করে থাকেন তেমনি মৃত্যুশয্যায় যখন গোটা জীবনের কৃতকর্মের স্মৃতিচারণ করবেন ধরে নিন সেটাই মরণ বিলাস৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহি হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার একাকিত্বে সঙ্গ দেয়ার জন্য হাসপাতালে তার পাশে থাকেন মাওলা বক্স। মাওলা বক্সের প্রধান ও একমাত্র কাজ হচ্ছে মন্ত্রীর সাথে কথা বলা। কথায় কথায় আমরা দেখতে পাই মাওলা বক্স মন্ত্রীর একজন চাটুকার অনেক আগে থেকেই৷ জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে মন্ত্রী তার জীবনের কৃতকর্মগুলো চোখের সামনে দেখতে পান৷ যার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে তিনি সব কথা মাওলা বক্সের কাছে বলতে থাকেন৷ নিজের পাপিষ্ঠ জীবনের বিস্তৃত কাহিনী বর্ণনা করতে একটুও অনুতপ্ত হন না তিনি৷ কিন্তু তার এইসব নির্মম পাপাচার শুনে সহ্য করতে পারেন না মাওলা বক্স। কিন্তু তবুও তাকে সেইসব শুনতে হয়৷
ফজলে ইলাহির বাবা একজন অতিধার্মিক দেওবন্দী মাওলানা যিনি দেশব্যাপী সুপরিচিত। লা মাযহাবীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নিমিত্তে তিনি এক মাজার ধ্বংস করেন। তার ডাকে ত্রিশহাজার লোকের বিশাল বহর এসে জুটে যায়৷ মাজার ধ্বংসের কারণে তার ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তিনি জেল খাটেন। জনপ্রিয়তা বাড়ে৷ কিন্তু তার হাতে গড়া সুসন্তান ফজলে ইলাহি তার অনুপস্থিতিতে এক জালেমে পরিণত হয়৷ দিনে দিনে তার জাহেলিপনা বেড়ে চলে৷ নিজের সৎভাইকে বিষপ্রয়োগে হত্যা, চাচাতো ভাইয়ের বউয়ের সাথে কুকর্ম, হেডমাস্টারকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হেন কোনো অপরাধ নেই যা ফজলে ইলাহি করে নি। এত সকল অপরাধ করে সে দিনে দিনে আরো হিংস্র হয়ে উঠে। জীবনে সফলতা আসে এইসব নির্মম পাপাচার করেই। পাকিস্তান পিরিয়ডে আইয়ুব খানের আমল বাদে সব সময় তিনি মন্ত্রী থাকেন৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মন্ত্রী হন৷ প্রেসিডেন্টের প্রিয়ভাজন হন। কিন্তু এত সফলতার পরও তার ভয় মৃত্যুর পর তার নামে সাংবাদিকরা অপবাদ রটাবে৷ মৃত্যুশয্যায় তার পাশে তার স্ত্রী সন্তানরাও থাকে না।
এই উপন্যাসটিকে আমরা বলতে পারি এক পাপিষ্ঠ মন্ত্রীর সফল জীবনের উপাখ্যান যেখানে তিনি মৃত্যুশয্যায় নিজের পাপাচারের ঘটনাসমূহ বর্ণনা করেন এবং আশা করেন যে দাঙ্গাকালীন সময়ে একটি ছেলেকে বাঁচানোর অসিলায় তিনি পরকালে পার পেয়ে যাবেন৷
আহমেদ ছফার সাথে আমার পরিচয় হয় "যদ্যপি আমার গুরু" বইটা থেকে। সেই বইটা কিছুটা "memoir" ধরনের হওয়ার কারণে তার লেখা সম্পর্কে খুব একটা ধারণা করতে পারিনি। এরপর পড়া হয় "গাভী বিত্তান্ত", এই বইটা পড়ার পর আহমেদ ছফা সম্পর্কে আগ্রহ আরেকটু বেড়ে যায়। তার আরো লেখা পড়তে ইচ্ছা হয়। তিন নম্বরে এসে বইটা পড়া শুরু করি। আমি যখন আহমেদ ছফার " মরন বিলাস" পড়া শুরু করি তখন আমার পড়াশোনার হাল, বেহাল অবস্থা। আমি বইয়ের একটা লাইন পড়ি তো আধাঘন্টা ফোন চালাই কিন্তু এই অবস্থাতেও আমি এই বইটা এক বসায় পড়ে ফেলছি। এত চমৎকার সাবলীল লেখা উনার! এত আরাম করে অথচ কি টানটান উত্তেজনা নিয়ে পড়া যায়! এই বইটার কাহিনি একজন মৃত্যু পথযাত্রী রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে। গল্পটা এত সুন্দর করে লেখা, নেতার দিক থেকে তার সকল কর্মকান্ডের সাফাই গাওয়ার ধরনে মাঝে মাঝে তার প্রতি সহানুভূতিশীল অনুভব কাজ করছিলো। কিন্তু আবার নেতার সঙ্গীর কথা শুনে সাথে সাথে সেই সহানুভূতি চলে যাচ্ছিলো। এইযে আহমেদ ছফা তার লেখার মাধ্যমে একজন অতি নিকৃষ্ট নেতার প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে পারলো, এটাই আমাকে একদম অবাক করে দিয়েছিলো। আমার কাছে মনে হয় আহমেদ ছফা ঠাট্টা-তামাশায় অনেক কঠিন সত্যি কথা লিখতে পারেন।
মন্ত্রী ফজলে ইলাহি মৃত্যুপথযাত্রী। হাসপাতালের বেডে সারাদিন অজ্ঞান হয়ে থাকেন। রাত গভীর হলে তার হুশ ফিরে। তাকে দেখভালের জন্য রয়েছেন সাধারণ একজন কর্মচারী—মাওলা বক্স। তার সঙ্গেই পুরোরাত পাপ-পুণ্যের কথা বলে কাটান।
মন্ত্রীর জীবনের শেষ রাতটি তিনি আঁচ করতে পারেন। তখন মাওলা বক্সের সঙ্গে আলাপ জুড়েন তিনি। জীবনের পাপের একেক করে ফিরিস্তি টানতে থাকেন। একসময় রাত ফুরিয়ে আসে। মন্ত্রী ফজলে ইলাহির যাওয়ার সময় হয়।
আহমদ ছফার উপন্যাস রচনা কম। কিন্তু সবক'টি ভিন্নধর্মী অর্থাৎ লেখকের গদ্যশৈলী, চরিত্রগুলির সংলাপ নতুন এবং অভিনব করে রেখেছেন। ওঙ্কারের পর আরেকটি চমৎকার বই শেষ করলাম।
অপরিচিত শব্দ ছিল: নিকেল, ত্যাঁদড়, ভুখা, খসম, ঘৃতাহুতি, ন্যাও
প্রাঞ্জলব্যাক্য: পিঁপড়ের মতো পায়ে হাঁটা, গাছেরটা খায় এবং তলারটাও কুড়োয়, অতল পানিতে ঝিম মারা কাতলা মাছের মতন
বই: মরণ বিলাস লেখক: আহমদ ছফা ধরণ: উপন্যাস প্রকাশনী: খান ব্রাদার্স প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ পৃষ্ঠা: ৮৬ সংখ্যা মুদ্রিত মূল্য: ১৫০ টাকা মাত্র
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একজন মৃত্যুপথযাত্রী–স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহী–হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার অধীনস্ত কর্মচারী, মাওলা বক্সকে নিজের পাপে ভরা জীবনের গল্প শুনাচ্ছেন–এমনই অভিনব একটি প্লটে লেখা এই উপন্যাস(কিংবা বড়গল্প?)। গোটা কাহিনী শুধুমাত্র এই দুজনের কথোপকথনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি, গল্পের আড়ালে উঠে এসেছে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের চিত্র। সে চিত্রে ইতিহাসের রক্তাক্ত চোরাস্রোত যেমন উঁকি দিয়েছে, তেমনই আভাস দিয়েছে বর্তমানের কর্দমাক্ত প্রতিচ্ছবি।
সত্যিই ছফা একজন অসামান্য কুশলী কথাশিল্পী। আফসোসের ব্যাপার, এমন একখানা বই নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনাই কোথাও চোখে পড়ে না!