বই এর রচনা গুলো ১৯৯৩'র মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ৯৫ সালের জানুয়ারীর মধ্যে লেখা। প্রবন্ধ গুলো আহমদ ছফার কলম থেকে নয়, বিভিন্ন সময় তিনি যেসব কথা বলেছেন, তা বিভিন্ন অনুলেখকদের মাধ্যমে এই বই এর আকার লাভ করেছে।
Ahmed Sofa (Bangla: আহমদ ছফা) was a well-known Bangladeshi philosopher, poet, novelist, writer, critic, translator. Sofa was renowned for his intellectual righteousness as well as his holistic approach to the understanding of social dynamics and international politics. His career as a writer began in the 1960s. He never married. On 28 July 2001, Ahmed Sofa died in a hospital in Dhaka. He was buried in Martyred Intellectuals' Graveyard.
Sofa helped establishing Bangladesh Lekhak Shibir (Bangladesh Writers' Camp) in 1970 to organize liberal writers in order to further the cause of the progressive movement.
Ahmed Sofa's outspoken personality and bold self-expression brought him into the limelight. He was never seen hankering after fame in a trivial sense. His fictions were often based on his personal experience. He protested social injustice and tried to portray the hopes and dreams of common people through his writing. Sofa always handled his novels with meticulous thought and planning. The trend of telling mere stories in novels never attracted him; he was innovative in both form and content.
ভারতীয় বইয়ের অবাধ আমদানি এবং চোরাই অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে একদল লেখক এবং বুদ্ধিজীবী মিছিল বের করেছিলেন। এটি আজ থেকে পাক্কা ত্রিশ বছর আগের কথা। 'নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ' নিয়ে আলাপ-আলোচনার একটি বড় জায়গা জুড়ে ছিল ভারতীয় বইসংক্রান্ত তর্ক-বিতর্ক। বই জ্ঞানের বাহন। জ্ঞানের রাজ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতার পক্ষে নন ছফা। তবে ভারতীয় লেখকদের তুলনামূলক সস্তামানের লেখার মাধ্যমে এদেশের পাঠকদের মনোজগতে উপনিবেশ সৃষ্টির বিরোধিতা তিনি করেছেন। আজকে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প যথেষ্ট সবল। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের পরিস্থিতি নিশ্চয়ই এত সহজে বোধগম্য হবে না। ভারতীয় পুস্তক বিষয়ক আলোচনায় ফ্যাক্ট নিশ্চয়ই ছিল। তবে ছফার আবেগের আতিশয্যে অনেকক্ষেত্রেই ফ্যাক্টকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। যা লেখাটি নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরি করে দেবে।
মৌলবাদ রোখার সবচাইতে বড় হাতিয়ার যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তার চাষ। কিন্তু আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা মৌলবাদের মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজেরাই কীভাবে উসকে দিচ্ছেন প্রতিক্রিয়াশীলতা নিয়ে তা নিয়ে ছফা ইশারা-ইঙ্গিতে লিখেছেন। এ সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ,
' অজ্ঞ, নির্বোধ এবং নিরক্ষর মানুষের বিশ্বাসের ওপর আক্রমণ করে, তাঁকে চেতিয়ে তুলেই মৌলবাদের বিরুদ্ধে বড় জঙ্গটা করা হয় বলে মনে করেন তাদেরকে আমি সুস্থ মানুষ বলে মনে করিনে। হয়ত তাঁরা কপট নয়ত মূর্খ। '
আইয়ুবের ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন (এনএসএফ)-এর ত্রাসের রাজত্বের সঙ্গে বর্তমানের কলুষিত ছাত্ররাজনীতির অনেক মিল পাওয়া যাবে। তবে অমিলও কম নয়। তখন ওদের হাতিয়ার ছিল বড়জোর হকস্টিক। এখন অস্ত্র ছাড়া চলে না৷ কেননা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল লক্ষ্য হওয়ার কথা জ্ঞানচর্চার পথকে প্রশস্ত করা। নিজেদের সমুন্নত ভাবমূর্তি তৈরির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ইতরদের স্পর্ধার লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু তা হচ্ছে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সন্ত্রাসের অন্যতম কারখানায় পরিণত হয়েছে। আগে মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষক দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে নিয়োজিত থাকলেও বেশির ভাগ জ্ঞানের সাধনা করতেন। কিন্তু এখন,
' সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে করতে শিক্ষকদের মুখের ভাবে সন্ত্রাসী চেহারা ফুটে উঠেছে, এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়। '
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে ভালো করছে। অথচ আমাদের দেশের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো খবর নেই। এই দুরবস্থা হবে তা নব্বইয়ের দশকে লেখা ছফার প্রবন্ধ থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছিল। যেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়শূন্য চিত্তে, মাথা উঁচু করে জ্ঞানচর্চার সুযোগ দেওয়া হয় না, সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয় অন্ধকারের দিকে অগ্রসর হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
তসলিমা নাসরিনের 'লজ্জা' বাংলাদেশকে সারা দুনিয়ায় সামনে লজ্জিত করলেও ভারত এবং ডানপন্থী আনন্দবাজার গোষ্ঠীকে উৎফুল্ল করেছিল। আনন্দবাজার পত্রিকা এবং প্রকাশন নিজেদের বাংলা সাহিত্য এবং বাঙালিত্বের একমাত্র পরিবেশক জ্ঞান করে৷ তাদের বাজার বিস্তৃত করতে হেন কোনো কৌশল নেই যা তারা অবলম্বন করে না। এই গোষ্ঠীর কার্যকলাপ এবং তসলিমার নিজস্ব স্বার্থে একদেশদর্শী লেখা 'লজ্জা'র মাধ্যমে দেশকে হেয় করার ঘটনাবলি ছফা নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখা করেছেন।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ওরফে দেলু রাজাকারের জনপ্রিয়তা এবং তা জাতিকে কতটা বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলতে পারে এ নিয়ে বিদ্রুপাত্মক একটি লেখা আছে।
১৯৬৭ সালে প্রথম বইয়ের জন্য ছফাকে আগাম অর্থ দিয়েছিল স্টুডেন্ট ওয়েজ। ১৯৯২ সালে এসে বইমেলায় এই প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রকাশনী ছফার বই ছাপতে নারাজ। একজন পরামর্শ দিলেন,
' পাঠক আপনার ওই সকল কঠিন বই আর পড়ে টড়ে না। আপনি লেখার ধাঁচ পাল্টান তারপর দেখব ছাপানো যায় কি না। '
১৯৯৩ সালের বইমেলায় ঋণ করে বই ছাপিয়েছিলেন ছফা। অবশ্য বই বিক্রি করে সেই ঋণ শোধ করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের পাঠক কোন ধরনের বই পড়ে তা বুঝতে চেয়েছিলেন ছফা। ১৯৯৩ সালের বইমেলায় প্রথম তিনটি বেস্টসেলার বই ছিল যথাক্রমে -
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে - হুমায়ূন আহমেদ লজ্জা - তসলিমা নাসরিন এবং ভালবাসার দুঃখ সুখ - ইমদাদুল হক মিলন
হুমায়ূন আহমেদ একদা ছফার বন্ধু ছিলেন। ছফা আফসোস করেছেন নন্দিত নরকে লেখার মধ্য দিয়ে যার সূচনা, সে পয়সার জন্য এমন অখাদ্য কীভাবে লেখে। তসলিমাকে 'শরীরকেন্দ্রিক' এবং স্বার্থান্বেষী বলে সমালোচনা তো করেছেনই। মিলনকে মন্তব্য করার যোগ্যই মনে করেননি। এটা সম্ভবত বাংলাদেশের পাঠকদের দীনতা, তারা সৃষ্টিশীল এবং জ্ঞানসংশ্লিষ্ট লেখা কেনা দূরে থাকুক পড়তেও রাজি নয়।
তসলিমা নাসরিনের 'লজ্জা' নিঃসন্দেহে একপেশে এবং তা কখনোই সমগ্র বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তবে তসলিমাকে নিয়ে ছফার স্ট্যান্ড এবং মন্তব্য সর্বক্ষেত্রে যৌক্তিকতার গণ্ডি রক্ষা করেনি। তসলিমার লেখা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এটি সত্য। সমানভাবে এও মিথ্যা নয় যে, এদেশে গোঁড়ামির শেকড় খুব গভীর। সেই গোঁড়ামি এবং ধর্মান্ধতাকে তসলিমা পুঁজি করেছিলেন মাত্র। তাই তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে ছফার ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মন্তব্যকে শতভাগ সমর্থন দিতে প্রস্তুত নই। মুদ্রার এপিঠ দেখলেও, ওপিঠ দেখেননি ছফা। তাঁর এই দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতার সঙ্গে তসলিমাকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ মিশে আছে বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।
ছফার সাহসিকতা আর অন্তর্দৃষ্টি বরাবরের মতই মুগ্ধ করেছে।প্রায় ২০ বছরের ও আগের লেখা এখনো কতটা আশ্চর্যভাবে বাস্তবিক তা ভেবে অবাক হতে হয়।
বইটিতে মোট ১২ টি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রবন্ধ ই পাঠককে ধীমান ও চিন্তাশীল করে তুলবে। ভারতীয় বইয়ের বিরোধিতা করে ছফা দেশের সাহিত্যকে বাচিঁয়েছে। ছফার কঠোর প্রতিবাদী মনোভাব এবং দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় যদি সবার থাকতো তাহলে হয়তো আমরা অন্যরকম দেশ দেখতে পারতাম!
এই ধরনের চিন্তাবিদ দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে এখন কম। লেখকরা যেমন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ আমরা পাঠকরাও তেমনিই দোষী। সর্বোপরি সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় আমরা শোচনীয়ভাবেই বিকারগ্রস্ত হয়ে পরেছি।
আজ থেকে এত বছর আগে লেখক এত কিছু কিভাবে বুঝতে পেরেছিলেন জানিনা। সেই সময় অনেক কিছুই তিনি সম্ভাবনা হিসেবে দেখিয়েছেন যা পরবর্তীতে বাস্তবে আমরা দেখতে পেয়েছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক।
This entire review has been hidden because of spoilers.
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সম���়কার ছফার ১২ টি প্রবন্ধ নিয়া বই। হিসেব করলে চলে গেছে ২০ বছরের অধিক সময় কিন্তু কয়েকটা প্রবন্ধ এখনো বর্তমানকে আঁকড়ে আছে। ছফার সাবলীল লেখনিতে উইঠা আসছিল ৯০ দশকের বিশ্ববিদ্যালয়, সরকার, তসলিমা, জাতীয় গ্রন্থনীতি এবং দেশ নিয়া উনার আরো নানবিধ আশা-হতাশা। "কল্পকন্যা রওশান আরা" কে জানতে পেরে বিশেষ আনন্দ হইতাছে।
আপাতত একটা লাইন কোট করি - "ছাত্রসমাজকে যদি রাজনীতির শিশুশ্রমিক বলে অভিহিত করা হয়, একটুও অন্যায় করা হবে না।"