ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় লেখকের ছদ্মনাম। তাঁর প্রকৃত নাম তারাদাস। জন্ম ১৯০৪ সালের ৭ মার্চ এবং মৃত্যু ১৯৭৫ সালের ২৫ এপ্রিল। বঙ্গলক্ষ্মী মাসিকপত্রের সম্পাদকীয় বিভাগে তিনি কাজ করতেন।
তাঁর উপন্যাস পড়েই সাহিত্যপাঠের সূচনা হয়েছিল অনেকের। তাঁর উপন্যাস এতোই জনপ্রিয় ছিল যে চলচ্চিত্রের কাহিনী হিসেবেও সমাদৃত হয়েছিল। 'চিতা বহ্নিমান' এবং 'শাপমোচন' এর জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে। পাঠকসৃষ্টিতে তিনি একটা বড় ভূমিকা পালন করেছেন।
'আকাশ বনানী জাগে' (১৯৪৩), 'আশার ছলনে ভুলি' (১৯৫০), 'বহ্নিকন্যা' (১৯৫১), 'ভাগীরথী বহে ধীরে' (১৯৫১), 'মন ও ময়ূরী' (১৯৫২), 'জলে জাগে ঢেউ' (১৯৫৪), 'মীরার বধূয়া' (১৯৫৬), 'স্বাক্ষর' (১৯৫৭), 'চরণ দিলাম রাঙায়ে' (১৯৬৬) তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। 'হিঙ্গুল নদীর কূলে' (১৯৩৫) এবং 'কাশবনের কন্যা' (১৯৩৮) তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ।
আবারও ভুল বয়সে আরেকটা বই পড়ে ফেললাম! তাই এত প্যানপ্যানে কাহিনি আর ওভার-অ্যাক্টিং এর খুব বেশি প্রশংসা করা সম্ভব হচ্ছে না। ওই যুগের মানুষ টক্সিক না বলেই মনে হতো–কিন্তু লেখক আমার এই ভুল ধারণা ভাঙাতে সহায়তা করেছেন... একটা তারা তারজন্য।
দ্বিতীয়ত, বেহুদা সময় কাটানোর জন্য বইটা খুবই ভালো। মানে একদম গড়গড়িয়ে পড়ে ফেলবার মতো একটা বই, তবে মনে দাগ কাটবে না–এই যা! প্রাপ্তবয়স্কদের এই বইটা পড়ার কথা একদমই বলতে পারছি না.. তবে টিনএজারদের জন্য উপযোগী। ওই বয়সেই এই বই পড়ে গ্যালন গ্যালন চোখের পানি ফেলা সম্ভব এবং আমি সেখানেই ভুল করেছি!
সবশেষে, লেখা চমৎকার। গল্প, ভাষা, বলার ভঙ্গি চমৎকার। নাটকের স্ক্রিপ্টের ক্ষেত্রে আদর্শ বলা যায়।
কলকাতার এক বিয়ের আসরে পাত্রের পিতা যৌতুক হিসেবে কন্যার পিতার যে টাকা দেবার কথা ছিল সেটা দাবি করছেন এবং টাকাটা বিয়ের আগে না দিলে তিনি পুত্রসহ বিদায় নেবেন এই হুমকিও দিচ্ছেন। কন্যার পিতা বলছেন তিনি আগামিকাল সকালেই টাকা দিয়ে দিবেন। বরের পিতা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। কন্যার পিতা হঠাৎই বলে বসলেন ঠিক আছে টাকা দিব না আপনারা উঠে যান। এবার ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে বর পক্ষ উঠে যেতে বাধ্য হলেন।
এদিকে এই বিয়ের ডামা-ডোলে কেউ খেয়াল করেনি যে কন্যার পিতার ছোটবেলার বন্ধুর পুত্র এসে হাজির হয়েছে বিনা নিমন্ত্রণে। তাকে দেখে কন্যার পিতার মনে পরেছে যে তিনি তার বন্ধুকে কথা দিয়েছিলেন তার ছেলের সাথে কন্যার বিবাহ দিবেন। এখন তিনি সেই দেয়া কথাই পূরণ করলেন বন্ধুপুত্রের হাতে কন্যাকে অর্পন করে।
কন্যার নাম তপতী সে বি.এ. পড়ে, অতীব সুন্দরী, গান জানে, নাচ জানে শহরের দশটা পাচটা ছেলে সর্বক্ষণ তার পেছনে ঘুর ঘুর করে। এহেন কন্যা যখন জানতে পারে তার পিতা তাকে বিয়ে দিয়েছে এক অকাট মূর্খের সঙ্গে, যে স্কূলের গন্ডি পেরোতে পারেনি, যে পুথি পাঠ করে, যে মাথায় টিকি রাখে, মুখে চন্দন ঘসে। এমতাবস্থায় তপতীর মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা পাঠকমাত্রই বুঝতে সক্ষম।
তপনজ্যোতিকে মেয়ে জামাই হিসেবে পেয়ে ধন্য হয়ে গেছেন তপতীর বাবা-মা। সে রূপে-গুনে অদ্বিতীয় শুধু তপতীই ফিরে দেখে না। তপতীর রুক্ষ্ম নিঃশ্বাসে কত দিন তপনের ভালবাসার ফুল ফুটে থাকতে পারবে? কোনদিন কি তপতী ফিরবে ? চিনতে পারবে আসল তপনকে ? আর তপনই বা সেদিন কি করবে ?
যদিও প্রেমের উপন্যাস আমার ভাল লাগে না তবে এটা ভাল লেগেছে। বিশেষ করে তপনজ্যোতির শক্তিশালী ব্যক্তিত্বময় চরিত্রটি। বাংলা সাহিত্যে এমন চরিত্র কমই দেখেছি। ফাল্গুনীবাবুর মাত্র দুটো বই পড়েছি। দুটা বইতেই একটা কমন মেসেজ আছে সেটা হচ্ছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো কাজ করতে চায় না বলে খেতে পায় না তা মোটেই নয় তারা কাজ করতে ইচ্ছুক তবে কোন ভাবে কোন কাজটা করতে হবে সেটা জানে না আর এই জানানোর দায়িত্বটা হচ্ছে শহরের শিক্ষিত্ব ধনী ব্যক্তিদের। ব্যাপারটা এরকম তুমি ভাল আছ এবার অন্যদের ভাল থাকার পথটাও একটু দেখিয়ে দাও না বাপু।
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের পাঠকপ্রিয় রোমান্টিক উপন্যাস 'চিতা বহ্নিমান'। বাংলা মেলোড্রামার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই উপন্যাস। যেখানে লাইনে লাইনে আবেগের ছড়াছড়ি। টিনেজ বয়সে এই উপন্যাস পড়লে নিঃসন্দেহে মুগ্ধ হয়ে যেতাম এবং হয়তো আবেগ আমাকে স্পর্শ করতো।
ধনাঢ্য বাড়ির মেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও আধুনিক মেয়ে তপতী। পঞ্চাশ হাজার টাকা পণের বিনিময়ে মি. ঘোষালের পুত্রের সাথে তার শুভবিবাহ। সেদিনই দরিদ্র তপনজ্যোতি তপতীদের বাড়িতে হাজির হলো একটি চিঠি নিয়ে। তপনের পিতা সেই চিঠি লিখেছিল তপতীর বাবাকে।
যৌতুকের পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদে বুঝে না পাওয়ায় তপতীর সাথে বিয়ে ভেঙে দিয়ে ঘোষালপুত্র চলে যান। তখন তপনজ্যেতির সাথে বিয়ে হয়ে যায় তপতীর। মোটকথা, ওখানে কন্যার মতামতের কোনো আবশ্যকতা ঔপন্যাসিক দেখেননি।
দরিদ্র, আচারনিষ্ঠ ও আর্যধর্মে আস্থাশীল তপন নানা গুণের আধার। তার পুঁথিগত বিদ্যা নেই। তাই প্রথম থেকেই তপতী তার স্বামীকে মেনে নিতে পারেনি। যদিও তপন নিমিষেই তপতীর বাবা-মা ও তপতীর এক সখী শিখাকে মুগ্ধ করে ফেলে। সে হয়ে ওঠে শিখার আদর্শ ভাই।
তপতী রূপবতী ও গুণবতী। উপরন্তু, বড় লোকের মেয়ে। তাই শিক্ষিত সমাজে তার গুণগ্রাহীর কমতি নেই। বিভিন্ন শিক্ষিত পরিবারের সন্তানের আনাগোনা তপতীদের বাড়িতে। তাদের কাজ তপতীকে মুগ্ধ করা এবং তপতীর লক্ষ্য তাদের মাধ্যমে তপনকে পদে পদে অপদস্থ করা।
তপতীর অপমান ও অবহেলা সয়েও তপন তাকে চায়। কিন্তু তপতী চূড়ান্তভাবে তাকে আঘাত করে। মুক্তি চায় তপনের কাছে। মনের বেদনা নিয়েও তপন তপতীকে স্বাধীন, মুক্ত ও স্বতন্ত্র করে দেয়। তখন তপন শিখাকে বলে,
'আত্মবঞ্চনায় কোনো লাভ নেই। ভালবাসি বলেই তাকে অত সহজে মুক্তি দিতে পারলাম। তার বুকে বোঝা হয়ে থাকতে ইচ্ছে করলো না। আমার মনের আসনে ওর স্মৃতি আমি বহন করবো, শিখা, আমার চোখের জলে নিত্য ধুইয়ে দেবো সেই আসন। '
মুক্তির স্বাদ উপলব্ধি করার জন্য চাই বন্ধনের অনুভূতি অনুভব করা। কিন্তু তপতীকে তো কখনও বাঁধেনি তপন।
সাহিত্যকে সমাজের আয়না বলা হয়। সেই বিবেচনায় জনপ্রিয় উপন্যাস 'চিতা বহ্নিমান'-ও নিশ্চয়ই সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে, যে সমাজের চিত্র ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এঁকেছেন তা এখানকার পাঠককে মুগ্ধ করবে না। বরং ক্ষুব্ধ ও হতাশ করার সম্ভাবনা বেশি। যেমন: পুরো উপন্যাস জুড়ে যৌতুকের মতো একটা ঘৃণ্যপ্রথাকে খুব সহজভাবে দেখানো হয়েছে। মেয়েপক্ষ পণ দেবে এবং পাত্রপক্ষ তা নির্লজ্জ ও বেহায়ার মতো নিবে তা যেন অতি স্বাভাবিক বিষয়। আবার, তথাকথিত 'আর্যনারী' ধারণার জন্ম দিয়েছেন ঔপন্যাসিক। যা আরও বেশি উৎকট। যেখানে নারী হবে স্বামীর অনুগত কোনো জন্তু।
সময়ের সাথে শব্দের অর্থের বদল হয়ে যায়। যেমন: ঔপন্যাসিক তপতীর গুণপনা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন সে 'সোসাইটি গার্ল' অর্থাৎ ইতিবাচক অর্থে সংস্কৃতিবান উচ্চমহলে সে অবস্থান করে। কিন্তু এখন সোসাইটি গার্ল কথাটার মানে মোটামুটি কদর্য।
ষাটের দশকে এই উপন্যাস নিয়ে সিনেমা হয়েছিল। এবং তা সুপারহিট হয়। সময়ের সাথে নিশ্চয়ই রুচির ও চিন্তার পরিবর্তন হয়। নতুবা লাইনে লাইনে অতিনাটকীয়তা ও বর্বর প্রথাকেন্দ্রিক কোনো চলচ্চিত্র এত জনপ্রিয় হয় কীভাবে!
আপনি একজন সৎ মানুষ। সারা জীবনে একটাও মিথ্যা বলেন নি। এত ভাল হয়ে চলার পরেও যদি আপনি যদি জীবনে কষ্ট ভোগ করেন, কেমন লাগবে? হয়ত এমনই হয়! সৎ মানুষই জীবনে কষ্ট ভোগ করে বেশি।
ধনী পিতার একমাত্র কন্যা তপতী। তার বাবা মিঃ শঙ্কর চ্যাটার্জি মেয়ের বিয়ে তারাতারি দিতে চান। বিয়ে নিয়ে সাধারন বাঙালি মেয়েদের যেমন উচ্ছ্বাস থাকে সেটা নেই তপতীর। সে বি.এ. পরীক্ষা দিবে; সেটা নিয়েই ব্যাস্ত। তপতীর জন্য ভদ্র ঘরের সুন্দর শিক্ষিত ছেলে ঠিক করা হলেও পনের টাকা দিতে দেরি করায় ছেলের বাবা তার বাধ্য ছেলেকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যান। বিয়ের প্রস্তুতির সময় শঙ্কর চ্যাটার্জির পুরানো বন্ধু মহাদেবের ছেলে তপন আসে একটা জরুরী কাজে। বাবার মৃত্যুর পরে তার দলীল-দস্তাবেদ ফেলতে গিয়ে শঙ্কর সাহেবের কিছু দরকারী দলীল পেয়ে সেগুলো ফেরত দিতে আসে। তপনকে দেখে শঙ্কর চ্যাটার্জির মনে পড়ে যে, তার বন্ধু মহাদেবকে কথা দিয়েছিলো তার ছেলেকে নিজের জামাই বানাবে। বিয়ের পাত্র পক্ষ চলে যাওয়ায় তৎক্ষনাত তপনের সাথে তপতীর বিয়ে দেন মিঃ চ্যাটার্জি। বিয়ের পরে জানতে পারেন অভাবের কারনে তপনের লেখাপড়া বেশিদুর আগায় নি। সকলে ছি! ছি! করে উঠলো। কিন্তু কতদুর লেখাপড়া করেছে সেটা আর কেউ জানতে চাইলো না। তপতীও তার এই অশিক্ষিত মূর্খ স্বামীকে এড়িয়ে চলতে লাগলো। দু'জন পৃথক রুমে বসবাস। তপতীর বন্ধুরা তপনকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। তপন পূজায় বসলে পিছন থেকে টিকি কেটে নেয়। তপন নিরবে সব সহ্য করে। সে আদর্শবান পুরুষ। সে নিজেকে প্রকাশ করে না। সে দেখতে চায় তার স্ত্রী তাকে এভাবেই ভালবাসে কিনা। সে পরীক্ষা করতে চায় তার স্ত্রীর মনে অন্য কেউ আছে কিনা। কিন্তু তপতীর মনে কেউ ছিলো না। তপতীর মত অাধুনিক মেয়ের মনে প্রবেশ করা কারো জন্য সহজ ছিলো না। অাধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তপতী যতটা সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলে। বন্ধুদের দিয়ে অপমান করায়। সে চায় তপন বাড়ি ছেড়ে চলে যাক। কিন্তু তপন নির্বিকার। অবশেষে একদিন তপনকে চুড়ান্ত অপমান করার জন্য মিঃ ব্যানার্জির ঘাড়ে মাথে রেখে বললো, 'আমাকে মুক্তি দেও।' তপন কি মুক্তি দিয়েছিলো! তপতী কি শেষ পর্যন্ত তপনকে চিনতে পেরেছিলো! জানতে হলে বইটা পড়তে হবে। :-)
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের পড়া এটা আমার দ্বিতীয় বই। প্রথম পড়েছিলাম 'শাপমোচন'। বইটা পড়ে ভাল লাগে এবং পরে অনেক মানুষ 'চিতা বহ্নিমান' পড়ার জন্য পরামর্শ দেয়। অবশেষে বন্ধু অদিতি আমার জন্মদিনে বইটা গিফট করে। কিন্তু বইটা পড়ে হতাশ হয়েছি। সবাই বলে 'শাপমোচন' ও 'চিতা বহ্নিমান' লেখকের সেরা বই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এই বইটা শাপমোচনের ধারেকাছেও না। পুরো বইটা পড়ার সময় তপতীর উপর এবং একই সাথে তপনের উপরেও বিরক্ত হয়েছি। আমার মনে হয়েছে, তপন চরিত্রটায় একটু বেশি ন্যাকামি ফুটে উঠেছে। পড়ার সময় নবনী বলছিলো যে, শেষে এসে চোখে পানি চলে আসবে। অথচ শেষেও ভাল লাগেনি। মনে হচ্ছিল লেখক ফিনিশিংএ তারাহুড়া করেছেন। সবশেষে বলবো, একটা রচনা মানুষের বাস্তব জীবনের যত কাছাকাছি থাকবে সেটা তত বেশি মনকে ছুয়েঁ যাবে। কিন্তু 'চিতা বহ্নিমান' কে জীবনের প্রতিচ্ছবি বলা যায় না।
সবার এত পছন্দের একটা বইয়ের নামে এত দুর্নাম করার জন্য দুঃখিত।
"তোমায়-আমায় মিলেছি, প্রিয়, শুধু চোখের জলের ব্যবধান টুকু রইলো"
🌻
নাম: চিতা বহ্নিমান লেখক:ফাল্গুনী মুখোপা ধ্যায় জনরা: রোমান্টিক-ট্র্যাজেডিক উপন্যাস
🌻 সার-সংক্ষেপ:
বেশ ধনাঢ্য এক পরিবারের মেয়ে তপতী চ্যাটার্জি। রূপের পাশাপাশি তার গুণেরও তারিফ করতে হয়। নাচ, গান, সাঁতার, পড়াশুনাসহ সব কিছুতেই সে সমান পারদর্শী। কৈশর পর্যন্ত ঠাকুরদার কাছে আর্য্য শিক্ষায় দীক্ষা নিলেও পরবর্তীতে অত্যাধুনিক সোসাইটির বন্ধুদের পাল্লায় অহংকারী ও বেপরোয়া হয়ে উঠে। ধনাঢ্য পিতার কন্যা ও বহু গুণে গুণান্বিত হওয়ায় তপতীর অহংকারের শেষ নেই। আর দশটা বাঙালি বাবা-মায়ের মতন তপতীর বাবামায়েরও সেই এক চিন্তা- মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, এখন বিয়ে দাও। তবে নিজের বিয়ে নিয়ে তপতীর খুব একটা আগ্রহ নেই। সামনে বিএ পরীক্ষা, আপাতত সেটাই তার ধ্যান-জ্ঞান। তার মতে বিয়ে হলো একধরণের শাস্তি যা একসময় গ্রহণ করতেই হবে।
মডার্ন সোসাইটিতে তপতীর দর বেশ উঁচু, নানারকমের সুপুরুষেরা তার আগে-পিছে ঘোরাঘুরি করে। তেমনি এক 'যোগ্য' পাত্রের হাতে তার বাবা মি. শঙ্কর চ্যাটার্জির কন্যা সমর্পন করার ইচ্ছে থাকলেও পণের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোতে বরপক্ষ উঠে চলে যায়। ভাগ্যক্রমে সেদিনই মি. চ্যাটার্জির পুরোনো বন্ধুর ছেলে তপন জ্যোতি গোস্বামী কিছু পুরোনো দলিলপত্র খুঁজে পেয়ে তাকে দিতে এসেছিলো। মি. চ্যাটার্জি তপনের সাথেই তপতীর বিয়ে দিয়ে দিলেন, কোনো এককালে নাকি তিনি তার সেই পুরোনো বন্ধুকে এমন কথাই দিয়েছিলেন। অকালে পিতা-মাতা দুজনকেই হারিয়ে ফেলাতে তপনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হয়নি বললেই চলে। তার পোশাকখানাও বেশ মলিন। অত্যন্ত সৎ প্রকৃতির ছেলেটি কখনো মিথ্যে কথা বলেনি। কারো মনে আঘাত দেয়নি। শান্ত-সৌম্য চেহারার তপন তার ব্যবহার তার বিনীত ব্যবহারে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির মন জয় করে নেয়।
এমন এক হীন ব্রাহ্মণ যুবকের সাথে নিজের বিয়ে হওয়ায় তপতী বেশ ক্রুব্ধ হয়। অভিজাত পরিবারের আধুনিকা শিক্ষিত কন্যা তপতী কিছুতেই এই গেঁয়ো, অল্পশিক্ষিত লোক যে কিনা পুঁথি পাঠ করে, মাথায় টিকি পরে, চন্দন মাখে- এমন ব্রাহ্মণ যুবককে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারে না। অহংকার হোক কিংবা ঔদ্ধত্যতায়, তপনকে তার অযোগ্যই মনে হয়। এমনকি স্বামীর পদবীটুকুও সংযুক্ত করেনি তপতী, নিজেকে সে সবার কাছে মিস চ্যাটার্জি বলেই তুলে ধরে।
এরপর ধীরে ধীরে উঠে আসে তপনের বন্ধু বিনায়কের কথা, যে কিনা তপনকে ভগবানের আসনে বসিয়েছে। তপন কোন ধাতুতে গড়া, তা শুধু বিনায়কই ভালো বলতে পারবে। তপনকে দেবতার আসনে বসায় আরো একজন মানুষ, সে হলো তপতীর কাছের বান্ধবী শিখা। সে তপনকে দাদা ডেকে সম্বোধন করে।
তপনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও সে বিদ্যায় ও বুদ্ধিতে অতুলনীয় এবং দেখতেও বেশ সুদর্শন। তপতীর শত অপমান সহ্য করেও তপন হাল ছাড়ে না, হয়তো তপতী তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরবে তার কাছে। যোগ্যতায় তপন, তপতীর অন্যান্য বন্ধুর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কিন্তু তপন চায়নি তার যোগ্যতার পরিচয় পেয়ে তারপর তপতী তাকে ভালোবাসুক। সে যেমন সাদাসিধে, তেমনি ভাবেই তপতীকে জয় করবে। প্রচন্ড আত্মসম্মানী তপনও কখনো নিজেকে তপতীর কাছে তুলে ধরে না। তপনের বলে, "যে আমায় কুৎসিত দেখে ভালোবাসলো না, সে আমায় সুন্দর দেখে ভালোবাসতে পারে না। যে আমায় মূর্খ ভেবে গ্রহণ করলো না, আমাকে পন্ডিত দেখে গ্রহণ করার অধিকার তার নেই। যদি সে অন্য কাউকে চায় তবে তারই হাতে ওকে তুলে দেবো"
তপনকে তপতী যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করতে থাকে। তপনের সামনেই সে আরেক পুরুষের দেওয়া আংটি নিজের বা হাতের অনামিকায় পরে ঘুরে-বেড়ায়, আরেক পুরুষের কোলে ঢোলে পড়ে। শুধু নিজে অপমান করে সে ক্ষান্ত হয়নি, বন্ধুবান্ধবদের দিয়েও তপনকে অপমান করতে লাগলো। তপতীর শত অপমানেও সে নির্বিকার। তার যত কথাবার্তা শুধু শ্বাশুড়ির সাথে! অহংকারী তপতী ও তার বন্ধুরা নানাভাবে তপনকে আঘাত করে বুঝিয়ে দিতে চায় যে সে এ সমাজের অযোগ্য, তপতীর অযোগ্য। অথচ তপতীর অপমানও একদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ৭ মাস এমন মানসিক অত্যাচারের পর একদিন মিঃ ব্যানার্জির কোলে মাথা রেখে তপনের কাছে মুক্তি চেয়ে বসে তপতী। যে নারী অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত, সে নারীর প্রতি তার কোনো অনুরাগ নেই। সে কোনো নারীকে সহধর্মিণী হিসেবে চায়, বিলাসধর্মিণী হিসেবে না।
একসমইয় চলে যায় তপন। ধীরে ধীরে তপনের আসল রূপ প্রকাশ পেতে শুরু করে তপতীর কাছে। কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। মাসের পর মাস কেটে যায়, তপন আর ফেরে না। তপতীর বাবা-মা আবারও তপতীর বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। এরইমধ্যে শিলংয়ে যেয়ে তপতীর পরিচয় হয় মিস্টার রায়ের সাথে। তার সাথে ভাব জমে তপতীর, যদিও তপনকে সে ভুলতে পারে না। ঘটনাক্রমে একদিন শিলংয়ে উপস্থিত হয় তপন। দুজনে��� দেখা হয়, পুরোনো ভালোলাগা প্রকট হয় তপতীর। কিন্তু তপন তো আর তপতীকে চায় না।
তাহলে তপতীর প্রেম কি আর পূর্ণতা পাবে না? তপতী যখন সব অহংকার ভুলে নিজেকে তপনের কাছে সমর্পন করলো, কেন সে তপতীর হাত দুটো ধরলো না? তাই তো তপন বলে, "আজ এতদিন পর এভাবে কেন এলে তপতী?
🌻 পাঠ-প্রতিক্রিয়া:
সত্যি বলতে 'শাপমোচন' এর চেয়ে এইটাই আমার বেশি ভালো লেগেছি। তপতীর উপর প্রচন্ড বিরক্তি ধরে গিয়েছিল, তপনের জন���য মায়াও হচ্ছিল খুব, রাগও ধরে যাচ্ছিল। তবে তপন চরিত্রটা অতিরিক্ত ন্যাকা এবং তপতীও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অহংকারী। আর এই উপন্যাসটা পড়েও মনে হচ্ছিল লেখকের (জ্বী, ইনি লেখক, লেখিকা না) বই শেষ করার খুব তাড়া আছে। উনি উনার পুরুষ চরিত্রগুলো বড্ড বেশি সৎ ও সাধু করে ফেলেন। এই বইয়েরও টুইস্ট বলতে সেই শেষ অংশটুকুই। লেখকের লেখার ধারাটাই এমন কীনা, সেটা আরো দুইটা উপন্যাস পড়লে বোঝা যাবে। এই বইটা পড়েও মনের মধ্যে কান্নার মেঘ গুড়গুড় করেনি। কিন্তু হ্যাঁ, উনার সংলাপগুলো কিন্তু বেশ চমৎকার। বলছি না যে উপন্যাসটা অনেক খারাপ, কিন্তু আমি এর হাইপ দেখে আরো ভালো আশা করেছিলাম। পড়তে পারেন, বইটা সেভাবে আমার মন না ছুঁতে পারলেও, আপনাদের বোধহয় বেশ ভালোই লাগবে।
"তোমায় আমায় মিলেছি,প্রিয়,শুধু চোখের জলের ব্যবধানটুকু রইল" এহ মোটামুটি ভালোই ছিল বইটি,প্রথমে বিরক্তি এসে গেলেও মাঝে তাও ঠিক ছিল। যাক বাবা,কিছু কিছু মিলন না হওয়াটাই ভালো বলে আমি মনে করি
গরীব ছেলে এবং ধনী ঘরের মেয়ে নিয়ে তো বাংলা অনেক চলচ্চিত্র দেখেছেন, তেমনই একটা প্লট নিয়ে রচিত এই বইটি। কিন্তু যখন আপনি বইটা পড়া শুরু করবেন তখন আপনি একদম হারিয়ে যাবেন গল্পের মাঝে। অবসর সময়ে বইটি পড়তে পারেন।
চিতা—বহ্নিমান ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের এক অনবদ্য সৃষ্টি। গোবেচারা একটা পাড়াগাঁয়ের ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায় কলকাতার বি এ পাশ সুশ্রী এক রমণীর। বাবার প্রভাব প্রতিপত্তির অভাব নেই শুধু বেশি আধুনিক হতে যেয়ে বাঙালি নারীত্বের যতসামান্য অভাব,স্বামীর প্রতি বাঙালি বধূর কর্তব্যের অভাব ধনীর একমাত্র দুলালী তপতীর। স্বামীকে সে মেনে নিতে পারে না, পদে পদে অপমান করে,অন্যদের দিয়ে অপমান করায়। আহা স্বামীও তাহার কী সহ্য, ধৈর্য শক্তি সব কেমন হজম করে দেয়, স্ত্রীর মন বুঝতে চায়,ভালোবাসতে চায়, জানাতে চায় সে আসলে কেমন। শেষ পর্যন্ত কী জানাতে পারে?
## অনুভূতি :: প্রথমবার রিভিউ লিখলাম, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। উপন্যাসটা পড়ে কেমন ভোঁতা হয়ে গেছে অনুভূতিরা। কেমন রুদ্ধশ্বাস করা উপন্যাস। কিন্তু ইহা শেষ হয়েও যেন শেষ হলো না!!
This entire review has been hidden because of spoilers.
বই : চিতা বহ্নিমান লেখক : ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় রেটিং : ৩.৫/৫ ধরন: প্রেমের উপন্যাস
চিতা বহ্নিমানে আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয় এক নীরব যুদ্ধ, প্রগতিশীল সমাজের বিরুদ্ধে সনাতনী ভাবধারার মরণ-প্রাণ যুদ্ধ। প্রাচীনতা আঁকড়াইয়া ধরিয়া বাঁচিবার আবেদন নস্যাৎ করিয়া আধুনিকায়নের জোরালো স্রোতে গা ভাসাইয়া দেবার প্রবণতা প্রকট রূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে উক্ত উপন্যাসে। গল্পের প্রধান দুই চরিত্র, তপন ও তপতী, সেই বিরুদ্ধ মতাদর্শের প্রতিনিধি। উনিশ শতকের প্রগতিশীল নারী মূর্তি তপতী, আর্য নারীর সতীত্বকে সে অস্বীকার করে, পশ্চিমা সংস্কৃতির মৃদু-মন্দ হাওয়ায় ভাসিয়া চলে তাহার ছোট্ট তরীখানায়। অকস্মাৎ তপতীর বাবা, মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করিবার ব্রত গ্রহণ করিলেন, সৎপাত্র জোগাড় হইলো বটে তবে পয়সা লইয়া উহার বাপের সহিত কথা কাটাকাটির জের ধরিয়া সাঙ্গ করিলেন বিয়ের পালা। তক্ষুনি জমিন ফুরিয়া উদয় হইলো তপন, তপনের বাপের সহিত উহার বন্ধুত্ব ছিল। বাবার মৃত্যুর পর তপন নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করিলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করিবার ফুসরত সে পায় নাই। মেয়ের উপর কলঙ্কের দাগ পড়িবে ভাবিয়া উপায়ান্তর না দেখিয়া তপনের নিকট হস্তান্তর করিলেন তাহার আদরের কন্যাকে এবং তপনকে গ্রহণ করিলেন ঘর জামাই হিসেবে। সৎ, নিষ্ঠাবান, সুপুরুষ সে, খানিকমাত্র গেঁয়ো বেশভূষা দেখে ফুলশয্যার রাতেই রুদ্ধ হল তার প্রতীক্ষিত দ্বার। পরে অবশ্য তাহা খুলিলেও মনের বদ্ধ দ্বারগুলো পীড়িত করিত তপনকে। তাহার প্রাচীনপন্থি ভাবধারার কারণে তাকে গ্রহণ করে না তপতী। অতিমাত্রায় আধুনিকা সে । পরপুরুষের বাহুডোরে আবদ্ধ হইয়া এবং উহাদের সহিত হররোজ পার্টি করিয়া বেড়াইয়া সে নিজের প্রগতিশীলতার লেবাস ধরিয়া রাখার চেষ্টা চালাইয়া যায়। নিজের অজান্তেই সে হইয়া উঠে একজন “Toxic Woman” তাহার উদ্দেশ্যে কয়েকখানা নিষিদ্ধ শব্দ ব্যবহারের ইচ্ছেটা দমন করিতে বেগ পেতে হইবে পাঠকদের। কাহিনী সম্বন্ধে যদি আর দুই-এক খানা শব্দও ব্যবহার করি তবে উহার যে যৎসামান্য ইন্টারেস্টিং প্লট-পয়েন্ট আছে উহাও লোপ পাইবে। প্রতিটা বাক্যে বাক্যে চুঁইয়ে পড়া অতি নাটকীয়তার নহর সম্বন্ধে যদি আমার স্পষ্ট মতামত দিতেই হয় তবে বলিব, উচ্ছ্বসিত না হইলেও পড়িতে বেশ মজা পাইয়াছি। যদিওবা মাঝেমধ্যে মনে হইয়াছে “ধুর ছাতার মাথা ! এসব হয় নাকি?” তবুও কাহিনীর খাতিরে তাহা মানিয়া লইয়া পাঠ খতম করিয়ছি। লেখকের রচনাভঙ্গির প্রশংসা অবশ্য করিতেই হয়, তা না হইলে শেষ করা বেশ কঠিন হইয়া পড়িতো, ব্যাস, এতোটুকুই। ট্র্যাজেডি রচনা করিবার উদ্দেশ্যে কলম ধরিলেও শেষ পর্যন্ত কী যে রচনা উনি করিয়াছেন তাহা আমার বোধগম্য হয় নাই। ক্লাসিক লেখক না হইলে উনাকে যে বেশ রোষানলে পড়িতে হইত তা অনুমেয়। কাউকে রেকমেন্ড করিতে চাই না, যদি ইচ্ছে অথবা সময় কখনো থাকে তবে চেখে দেখার আমন্ত্রণ রইল।
রাত দুটোয় হঠাৎ মনে হলো বইটি পড়ি৷ পড়া শুরু করে শেষ করলাম মাত্র, এখন সকাল সাতটা। বলবো না রাতটা বৃথা গেল। তবে যে আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম সেটা পূরণ হলো না৷ আমি ছবি দেখি খুব কম৷ বলতে গেলে দেখিই না৷ তবুও ছোটোবেলায় যা দুই একটা বাংলা ছবি দেখেছিলাম সে স্মৃতি থেকে বলতে পারি বইটা তারই প্রতিচ্ছবি। তবে বইটা পড়ার জন্য সুপারিশ করছি৷ পড়লেই বুঝতে পারবেন খারাপ লাগার জায়গাগুলো কী কী!
ধনী পিতার একমাত্র কন্যা, রূপসী , শিক্ষিতা, গুণী, সাঁতার, গান, পড়াশোনা সব বিষয়ে প্রথম এমন মেয়ে বিয়ের পাত্র হিসেবে কোন রকমের ছেলে পছন্দ করবে বলে আপনারা মনে করেন? অসমান্য সোসাইটির গার্ল সব সময় পাত্র হিসেবে তো অসমান্য সোসাইটির বয় পাত্র হিসেবে চাইবে? তাই নয় কি?
একটা মেয়ে বিয়ের পর বরের যোগ্যতা নিয়ে সমাজে পদে পদে বাঁধা পায়, তাকে নিয়ে হাই সোসাইটির সমাজে মানিয়ে চলা যায় না তখন সে মেয়ে তার বরকে যোগ্যতার আসনে বসানো তো দুরে থাক তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে, তাকে পদে পদে অপমান করে তার থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু এই মেয়ে যখন জানতে পারে সমাজের আর দশটা ছেলের মত তার বরের যোগ্যতাও কোনো অংশে কম নয়, তখন বরের প্রতি তার ভালবাসা কাজ করে। সে চায় বরের সানিধ্যে এবং তার ভালবাসার স্পর্শ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু বর যখন তাকে প্রত্যাক্ষাত করে, তাকে ভালবাসা দেয়ার বদলে তাকে মুক্তি দেয় তখন মেয়ের বুকে জ্বলতে থাকে আমরণ বিরহের "চিতা বহ্নিমান"।
আধুনিক যুগের অহংকারী ধনী পিতার একমাত্র অহংকারী কন্যা তপতী। তপতী বড় হয়ে উঠছে এখন তার বিবাহদ্যোগ চলছে। ৫০ হাজার টাকা যৌতুক নিয়ে বর পক্ষের সাথে কথা কাটাকাটি করে তপতীর বাবা বিয়ে ভেঙে দেয় তার । ধনী বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা হাতের ময়লা তবু কেন? তপতী কিছু বুঝে উঠার আগে অসামান্য সোসাইটির গার্ল তপতী চ্যাটার্জীর সহিত এক নিতান্ত হীন ব্রাহ্মন যুবকের সাথে বিয়ে হয়ে যায়।
তপতী বি.এ. পড়ে, অতী সুন্দরী, গান জানে, নাচ জানে, টেনিস খেলে, সাঁতারে সে প্রথম পুরস্কার পায়। এমন কন্যার পিছনে শহরের হাই সোসাইটির পাঁচটা দশটা ছেলে সর্বক্ষণ তার পেছনে ঘুর ঘুর করে। এমন কন্যা যখন জানতে পারে তার পিতা তাকে বিয়ে দিয়েছে এক মূর্খের সঙ্গে, যে স্কূলের গন্ডি পেরোতে পারেনি, যে পুঁথি পাঠ করে, যে মাথায় টিকি রাখে, মুখে চন্দন ঘসে। এমতাবস্থায় তপতীর মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা পাঠকমাত্রই বুঝতে সক্ষম।
তপন জ্যোতিকে মেয়ের জামাই হিসেবে পেয়ে ধন্য হয়ে গেছে তপতীর বাবা - মা। কিন্তু তাদের অহংকারী কন্যা তপনকে নিজের স্বামী হিসেবে কখনোই মেনে নিতে পারে নি। কেন পারেনি? তপতীর বন্ধুরা তপন কে হাসির পাত্র বানায়, টিকি কেটে দেয়, নানা ভাবে নানা অপমান করে । তপন নিরুত্তাপ, শুধু শাশুড়ির সাথেই তার যত কথা! প্রচন্ড অহঙ্কার তপতী আর তার বন্ধুদের, তাদের মতে অশিক্ষিত তপন কে সমাজে মেশানোর মত না।
তপন রুপে গুনে আর দশটা ছেলের থেকে কম সুদর্শন না। কিন্তু কি এমন বাঁধা আছে তপতীর মধ্যে যে বাঁধা স্বামী স্ত্রীকে আলাদা ঘরে থাকতে বাধ্য করে? তপতী তপনের দিকে কখনো রেখাপাত করে না। তপন ও তার সঙ্গ প্রায় ই পরিত্যাগ করে এবং বুঝতে পারে তপতী তার না। এজন্য তপন বলে- "যে আমায় কুৎসিত দেখে ভালবাসলো না সে আমায় সুন্দর দেখে ভালবাসতে পারে না। যে আমায় মূর্খ ভেবে গ্রহন করলো না আমাকে পন্ডিত দেখে গ্রহন করবার অধিকার তার নেই। যদি সে অন্য কাউকে চায় তবে তারই হাতে ওকে তুলে দেবো"।
তপতী কী করে বাড়ি থেকে তপনকে তাড়াবে সেই চিন্তা করতে থাকে। তপনের ব্যাবহারে সে মাঝে মাঝে মুদ্ধ হয়ে উঠে এবং তপনের জন্য মনে প্রেম জাগে । আবার কিছুক্ষণ পর হারিয়ে যায়। তপন ও বুঝতে পারে তপতী তাকে মনে মনে চায় কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। তপন এ সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে তপতীকে বিভিন্ন ভাবে চমকে তার প্রতি প্রেম জাগানোর চেস্টা করে- কেননা তপন আগেই বলে রেখেছিল - "সে আমায় ভালো যদি বাসে, এমনিই বাসবে, কারো প্ররোচনায় নয়। আমি যেমন, যেমনটি সে আমায় দেখেছে, তেমনি ভাবেই আমি তার হৃদয় জয় করতে চাই। যদি না পারি, জানবো সে আমার নয়"।
অপমানের পর অপমান করার পরও তপন বাড়ি থেকে যায় না এমনকি তপতীকে ত্যাগ ও করে না। তপতী একদিন সীমা ছাড়িয়ে তপনকে চুড়ান্ত অপমান করার জন্য মিঃ ব্যানার্জির কোলে মাথে রেখে বললো, 'আমাকে মুক্তি দাও।' মিঃ ব্যানার্জি , মিঃ বোস, মিঃ অধিকারী তার মিঃ এর অভাব নেই। তপন কি করবে এখন? সে কি মুক্তি দিবে তপতীকে? নাকি তপতী ভুল বুঝে আবার ফিরবে তপনের কাছে?
ব্যক্তিগত মতামতঃ পুরো বই জুড়ে মুগ্ধতার শেষ নেই, মন্ত্রমুগ্ধ। বইটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে আমি কোনো সিনেমায় ডুবে আছি। এতো সহজ সরল ভাবে লেখক কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন তা বর্নানাতীত। লেখক অত্যান্ত সাদামাটা ভাবে নিখুঁত প্রেম কাহিনী গড়ে তুলেছেন। তপনজ্যোতির শক্তিশালী ব্যক্তিত্বময় চরিত্রটি ছিল অসাধারন। সাধারনত এ রকম কম দেখা যায় যে- মেয়ে তার ভালবাসার কাঙাল কিন্তু ছেলে তাকে পাত্তাই দিচ্চে না। সচরাচর আমরা দেখি কোনো মেয়ের ভালবাসার প্রতি ছেলেদের দূর্বলতা থাকেই। তপনের ও দূর্বলতা ছিল কিন্তু তারপর ও তার "সত্য বজ্রের চেয়ে কঠোর, মৃত্যুর চেয়ে নিষ্ঠুর”। সে তপতীকে পাত্তাই দেয় নি। এই না হলে ছেলে মানুষ।
বইটা পড়ে তপনের প্রেমে পড়ে যেতে পারে মেয়েরা কিন্তু সব মেয়েরা না। অন্য দিকে ছেলেদের ইচ্চা করবে তপতীতে গরম তেলে ভেজে ফেলতে। মান অভিমান, ভুল বোঝাবুঝি সব আছে বইটাতে।
উপন্যাসের বিনায়ক, মীরা, রেখা, চরিত্র তপনের আর্দশে বড় হয়েছে। তপন চরিত্র সবাইকে কাছে টানবেই। তার শক্তিময় ব্যক্তিগত চরিত্র সবাইকে মুগ্ধ করবে। শুধু প্রেম ভালোবাসা মান, অভিমান ই নেই বইতে। আরো অনেক কিছু আছে। তাহলে পড়ে ফেলুন বইটি।
নিমাই এর মেমসাহেব অনেকে অনেক রকম মন ছিল। কেউ বলে ভালো না লুতুপুতু মার্কা বই। কেউবা বলে অসাধারণ। আমিও তাই বলি কেন জানি এই লুতুপুতু বইটি আমার ভালো গেলে গিয়েছিল। ঠিক তেমনি ভাবে আজ ভালো লেগে গেল বইটি। পড়ছিলাম ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এর #চিতা বহ্নিমান
আধুনিক যুগের আধুনিকা মেয়ে তপতী। ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে তপতী অহংকারী। ৫০ হাজার টাকা যৌতুক নিয়ে কথা কাটাকাটি করে বাবা বিয়ে ভেঙে দেয় তপতীর। ৫০ হাজার বাবার হাতের ময়লা তবু কেন? তপতী কিছু বুঝে উঠার আগে তার বিয়ে হয়ে গেল অন্য এক ছেলের সাথে।
হত দরিদ্র তপন। বাবা মাকে অল্প বয়সে হারিয়ে লেখা পড়া করা হয়নি তার। তাই বলে মুর্খ বলা যায় না তাকে।মৃত বাবা ব্যাবহার তরা বস্তু গুলো গঙ্গায় ফেলে আসতে গিয়ে খুজে পায় একটা দলিল। সেই দলিলে লেখা তপতীর বাবার নাম। দলিল দিতে এসে তপতীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় তার!
এত বড় লোকের মেয়ের তপতীর কিনা মুর্খ রাস্তার মানুষ তার স্বামী? কিছুতেই মেনে নিবে না তপতী। বন্ধুদের সামনে এই রাস্তার ছেলেকে নিয়ে স্বামী বলে পরিচয় দিতে হবে ভাবতেই শিহরিত হয়ে উঠে সে।
অন্যদিকে তপনের ভালো ব্যাবহারে মুগ্ধ তপতীর মা। মুর্খ তপনকে বলা যায় না মোটেও। দেখতেও সুদর্শন যুবক তপন। না তাকে মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে ভুল করেন নি তারা।
তপতী কী করে বাড়ি থেকে তপনকে তাড়াবে তাই ভাবতে লাগিল। তপনের ব্যাবহারে সে মাঝে মাঝে মগ্ধ হয়ে উঠে এবং তপনের জন্য মনে প্রেম জাগে । আবার কিছুক্ষণ পর হারিয়ে যায়।
তপন বুঝতে পেরেছে তপতী তাকে চায় না�� কিন্তু কি চায় সে। যদি অন্য কারো সাথে ভাব হয়ে থাকে তবে তপন তার সাথে তপতীকে মিলিয়ে দিয়ে চলে যাবে সে।
এমনই মান অভিমান নিয়ে চলতে থাকে গল্প। ঠিক যেন স্টার জলসার বজ গোবিন্দ নাটক। অনেকেই বইটি পড়ে এই কথাটি বলতে। ঠিক মেমসাহেব বইটির মতো এটি আমি আগেও বলেছি। মেমসাহেব লুতুপুতু আর এটা স্টার জলসার নাটকের মতো কিন্তু আমাকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিয়েছে বইটি। খুবই তৃপ্তি বোধ করেছি পড়েছি বইটি পড়ে। তপন এর প্রেমে পড়ে যেতে পারে মেয়েরা। অন্য দিকে তপতীতে ইচ্ছে করবে গরম তেলে ভেজে ফেলতে। একটু পর ইচ্ছে হবে তপনের পাছায় লাত্থি মারতে। তপতীকে একটু ভালোবাসতে। মান অভিমান, ভুল বোঝাবুঝি খেলোয় কে জিতল এখন সেটা জানার জন্য পড়তে হবে বইটি।
আমার খুব ভালো লেগেছে। এটাই আমার পড়া এই লেখকের প্রথম বই। লেখক যে কতটা জ্ঞানী তা তার বইতে স্পষ্ট ছাপ রেখেছেন। লেখকের সহিত দেখা করার স্বাদ জাগে মনে। এটাই আমার পড়া সাধু ভাষায় লেখা প্রথম বই। বাংলা সাহিত্যের সেরা যে ১০০ বই এর লিস্ট করা হয়েছে সেই লিস্টে সে জায়গা করে নিয়েছে। বইটি কেনার পর পড়া হয়নি লিস্টে নাম দেখে পড়া শুরু করেছিলাম। সত্যিই বইটি লিস্টে রাখার যোগ্যতা রাখে। শুধু প্রেম ভালোবাসা মান, অভিমান ই নেই বইতে। আরো অনেক কিছু আছে। শেখার আছে প্রচুর। রেটিং আমি দিব ৪.৯০/৫ .। ৫ ই দিতাম কিন্তু শেষটা.. 😔
গল্পটা সুন্দর। বেশ সুন্দর। কিন্তু তপতীকে একতরফা ভিলেন করে দেওয়াটা ভালো লাগেনি৷ ওর পরিস্থিতি থেকে ভাবলে তপন কে ভুল বুঝাটা অস্বাভাবিক ছিল না৷ তপনও তো কখনো ঠিকটা বুঝানোর চেষ্টা করেনি৷ চেষ্টা করেনি তপতীকে বুঝতেও৷ তপতীকে অহংকারী হিসেবে দেখানো দেখানো হয়েছে পুরো গল্পটা জুড়ে। অথচ তপনের অহংবোধ তপতীর চেয়ে অনেক বেশি ছিল৷ তপতীর সবচেয়ে কাছের মানুষগুলো তপনের সাপোর্ট হয়ে ছিল৷ তপতীর জন্য তো কেউ ছিল না। নিজেকে প্রমান করার জন্য তপতীকে নিজের সবটা বদলাতে হবে, অথচ তপন তার নিজের নীতি থেকে কোথাও, কোন ক্ষেত্রে একচুলও সরে আসবেনা৷ সেই জেদ, অহংকারে তপতী ছল ছেড়ে নিজেকে পুরোটা সমর্পন করার পরও তপন গ্রহন করলো না৷ ব্যাপারটা আমার মহাপুরুষোচিত লাগেনি। বাইরেটা বিচার করে তপতীকে ভিলেন আর তপনকে এমন হিরো করে ফেলাটা ভালো লাগে নি একটুও৷
Frustrating. Easily happy ending dite parto. But the author just had to ruin it. I think he was a sadist or something. Dui ta boi porlam unar, dui ta tei heartbreak.
Tapan is the definition of a pure egoistic brown man. I mean, accha Tapati vul korse (I'm not justifying her actions), but everyone deserves a second chance, no? Eto boro dharmik hoye Tapan eituku jane na? The author just overdid it.
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের লেখা আমার এত্ত পছন্দ যে হুটহাট করেই লেখকের আগেই পড়ে ফেলা বইগুলো নিয়ে আবারও পড়তে বসে যেতে পারি। লেখকের সেই পঞ্চাশ - ষাটের দশকের লেখনীর মাধুর্যে মুগ্ধ হতে হয়। কি আধুনিক লেখনী!
আগেই লেখকের শাপমোচন এবং ফুলশয্যার রাত উপন্যাস দুখানি পড়া হয়েছে। সেই মুগ্ধতার রেশেই চিতা বহ্নিমান বইটি ধরেছিলাম। সত্যি বলতে আগের দুটি বইয়ের তুলনায় এটার কাহিনী বেশ ফিঁকে লেগেছে। কিন্তু এর লেখনশৈলীর মাধুর্যের জন্য অনায়াসে রেটিং পাঁচে চার দেওয়াই যায়।
অনেককাল পর রাতের ঘুম তুচ্ছ করে টানা নেশার মত পড়ে শেষ করলাম বইটা। ভীষণ ভালো লাগলো। 'শাপমোচন' এর মত লেখকের এই বইটাও পছন্দের লিস্টে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আফসোস, লেখকের কেবল এই দু'টি বই-ই আমার সংগ্রহে আছে।
শেষটায় মনে হলো লেখক খুব তাড়াহুড়ো করেছেন। শাপমোচন বইটা পড়ে মূলত লেখকের লেখনীশৈলীর প্রেমে পড়ি। দুইটি বইয়ের তুলনা করলে আমি শাপমোচনটাকেই এগিয়ে রাখবো।
একটা মানুষ যে পড়াশোনা করলেই যে সে একটা বুদ্ধিমান মানুষ হয় সেটা আসলেই সত্য না আর অহংকার আসলেই মানুষের জীবনের পতন এনে দেয় আসলেই এই গল্পের মাধ্যমে বোঝা যায় কারণ এখানে তপতী যতই শিক্ষিত হোক না কেন সে তার অহংকারের জোরে অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে কিন্তু তপন শিক্ষিত না হলেও সততা বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একটা সুন্দর সভ্য মানুষের পরিচয় দিয়েছে এবং সে তার নিজের জীবনের থেকে তার সত্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে! এবং এই গল্পের সবচেয়ে সুন্দর বিষয় এই জিনিসটি আমার কাছে লেগেছে একটা মানুষের জীবনের সত্যতা আসলেই সব থেকে বড়!
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের "শাপমোচন" উপন্যাসের সুখ্যাতি আগেই শুনেছি, কিন্তু পাশাপাশি তার "চিতা বহ্নিমান" এর মিশ্র প্রতিক্রিয়াও পেয়েছি। তাই বাধ্য হলাম আগে এই উপন্যাসটিই পড়তে।
ধনী বাবা মায়ের একমাত্র আদরের দুলালী তপতী; হাইফাই সোসাইটিতে বেড়ে উঠা, প্রগতিশীল এক তরুণী সে, যার জীবনে শখ শৌখিনতার কোন অভাব নেই। এক আকস্মিক কারণবশত এই আধুনিকা তপতীর বিয়ে হয়ে যায় স্বভাবে তারই বিপরীত যুবক তপনজ্যোতির সাথে। স্বভাবতই এ বিয়ে মেনে নেয়না তপতী, এবং ফলশ্রুতিতে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন ও ভাঙনের খেলা। আর এ নিয়েই কাহিনী টেনেছেন লেখক পুরো বইজুড়ে। কখনো তপতীর অপমান, শ্লেষভরা কথার বেড়াজাল, আর এর প্রত্যুত্তরে তপনের মৌনতা, গুরুগাম্ভীর্য।
এই উপন্যাসকে সামাজিক ও পারিবারিক ঘরানার উপন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করার আগে এর মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো বলে নেয়া ভালো। প্রথমত, তৎকালীন সমাজে আর্যনারী হিসেবে স্বামীকে ইতিবাচকতার সাথে গ্রহণ করে নেয়াই ছিলো একজন নারীর প্রতি হিন্দুসমাজের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু তপতী ছিলো প্রগতিশীল, সময়ের সাথে নিজেকে বদলানো বা আপডেটেড করার ইচ্ছাই যার ছিলো প্রবল। একদিকে নিজের অমতে বিয়ে করতে বাধ্য হওয়া, অপরদিকে স্বামীর সাথে প্রতিটি বিষয়েই মতের অমিল-- এসব দিকগুলো প্রত্যহই তপতীকে জর্জরিত করছিলো তীব্রভাবে, যার ফলে তার অবচেতন মন তাকে বাধা দিচ্ছিলো তপনের প্রতি মনোযোগী হবার, বা তাকে ভালকরে খেয়াল করার ব্যাপারটিতেও। একইসাথে তার গরিমা ও অহমিকাবোধের ব্যাপারটিও তাকে প্রভাবিত করছিলো তপনকে স্বামী হিসেবে মেনে নেবার বিপক্ষে।
পূর্বেই বলেছি, তপনের স্বভাব পুরোপুরিই তপতীর বিপরীতমুখী খাতে প্রবহমান। শাস্ত্রজ্ঞ, ধৈর্যশীল ও বিনয়ী তপন প্রতিটি সম্পর্কের প্রতি বেশ দায়িত্বশীল। কিন্তু তপনের মনের কোমলতার বিপরীতে এক আশ্চর্য কাঠিন্যও আমরা দেখতে পাই যখন তপতীর আবির্ভাব তার জীবনে ঘটে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের মানসিক ধীরতা ও স্থিরতাকে খুব দৃঢ়ভাবে বজায় রাখার এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত গড়ে তোলে তপন, যা এই উপন্যাসের একমাত্র মনোমুগ্ধকর দিক বলে আমার মনে হয়েছে। আমার কাছে কখনো কখনো মনে হয়েছে যে গোটা উপন্যাসের একমাত্র মধ্যমণি তপন নিজেই, যাকে কেন্দ্র করে কোনরকমে উপন্যাসটি এগিয়ে গিয়েছে।
উপন্যাসটির প্লট বেশ সুন্দর এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেগের অতিরঞ্জন এবং কাহিনীর পরিসমাপ্তির অপূর্ণতাবোধের কারণে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে প্লটের বুনিয়াদ তেমন মজবুত বলে মনে হয়নি। লেখক নিজের কিছু ব্যক্তিগত মতামত, গভীর মনস্তত্ত্ব ও দর্শনবাদী চেতনাকে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন সত্য, কিন্তু এতে করে মূল উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তুর প্রতি কোনরূপ আলোকপাত হয়নি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া উপন্যাসের নামঃ চিতা বহ্নিমান লেখকঃ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় ধরনঃ সামাজিক-পারিবারিক-রোমান্টিক-মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস প্রকাশনীঃ দ্বীপায়ন প্রকাশনী মোট পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৯৬