Jump to ratings and reviews
Rate this book

রূপসী বাংলা

Rate this book
৬১টি কবিতা নিয়ে ‘রূপসী বাংলা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালের আগস্টে, সিগনেট প্রেস কলকাতা থেকে। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর তিন বছর পর।

Hardcover

First published January 1, 1957

23 people are currently reading
488 people want to read

About the author

Jibanananda Das

84 books421 followers
Jibanananda Das (bn: জীবনানন্দ দাশ) is probably the most popular Bengali poet. He is considered one of the precursors who introduced modernist poetry to Bengali Literature, at a period when it was influenced by Rabindranath Tagore's Romantic poetry. During the later half of the twentieth century, Jibanananda Das emerged as the most popular poet of modern Bengali literature. Popularity apart, Jibanananda Das had distinguished himself as an extraordinary poet presenting a paradigm hitherto unknown. It is a fact that his unfamiliar poetic diction, choice of words and thematic preferences took time to reach the heart of the readers. Towards the later half of the twentieth century the poetry of Jibanananda has become the defining essence of modernism in twentieth century Bengali poetry.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
238 (64%)
4 stars
98 (26%)
3 stars
25 (6%)
2 stars
5 (1%)
1 star
3 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 48 reviews
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
September 14, 2021
একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি;
হৃদয়ের পথ-চলা শেষ হলো সেই দিন।

কুয়াশা! কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি অতি গরম থাকলেও প্রকৃতি আমার বাংলার ঋতুর গতি-প্রকৃতিকে ঠিকই মনে রেখেছে। সন্ধ্যার এই মৃদু কুয়াশা যেন আমায় 'রূপসী বাংলা'র কথা মনে করিয়ে দিল।

যদিও এখন গ্রাম-বাংলা আর আগের মতো নেই; ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে সব। অনেক গ্রামের কাঁচামাটির রাস্তায় পিচ ঢালা হয়েছে। ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ আর চাল গুঁড়ো করার শব্দও খুব একটা পাওয়া যায় না। আগের সেই রূপ হয়তো নেই, তবুও কিছুটা তো আছে! আর এই ক্ষয় হয়ে যাওয়া রূপের সাথে আমাদের আছে রূপসী বাংলা নামক বাংলার রূপের জীবন্ত পান্ডুলিপি। গাঁয়ের বধূর ভেজা চুল থেকে শুরু করে মধুকূপী ঘাস- কিছুই বাদ যায় নি ^_^

ভাগ্যিস লেখক শাহাদুজ্জামানের একজন কমলালেবু আমাদের ছিলেন! এই শুদ্ধতম নির্জনতার কবি সাহেব ছিলেন! নইলে তো গ্রাম বাংলার সেই অপরূপ রূপ পুনরায় দেখার ইচ্ছা আমাকে জীবনভর জ্বালিয়ে মারতো!

সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকার ঘাসের উপর
সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের পর-
শঙ্খমালা নাম তার : এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে
তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকো-বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর
তাই-সে-জন্মেছে নীল বাংলার ঘাস আর ধানের ভিতর।

এখানে কবি শঙ্খমালা রূপকের কথা বলেছেন আমি তো তার কথাই বলি- ভাগ্যিস তিনি এই নীল বাংলার ঘাস আর ধানের মাঝে বেড়ে উঠেছিলেন! কেউ কি আদৌ এভাবে রূপসী বাংলাকে উপলব্ধি করতে পারতো!?

"মনে হয় একদিন" শিরোনামে কবি বলেছেন-
মৃত্যুরে কে মনে রাখে কীর্তিনাশা খুঁড়ে খুঁড়ে চলে বারো মাস
নতুন ডাঙার দিকে – পিছনের অবিরল মৃত চর বিনা
দিন তার কেটে যায় – শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ ??

মনে রাখে তো! মনে রাখে!
কয়েকদিন ধরে পড়তে পড়তে আজই পড়া শেষ হল। আর আজকের দিনেই কবি না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন আবার ফিরে আসার কথা বলে-
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হ'য়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হবো— কিশোরীর— ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।


~২২ অক্টোবর, ২০২০
Profile Image for তানজীম রহমান.
Author 34 books757 followers
June 9, 2021
অসাধারণ শিল্পকর্ম আসলে কী করতে পারে? কোথায় তার মূল ক্ষমতা?

রূপসী বাংলার পাশাপাশি আরেকটা বই পড়ছিলাম-মার্টিন হেইডেগারের ‘পোয়েট্রি, ল্যাঙ্গুয়েজ, থট’। সেখানে অসাধারণ শিল্পকর্ম বা Great Work of Art নিয়ে কিছু কথা আছে, যে কথাগুলো আমার ধারণা রূপসী বাংলার ক্ষেত্রেও খাটে।

হেইডেগারের মতে মানুষ যেভাবে বাস্তবতাকে দেখে, পৃথিবীকে বোঝার জন্য যে সংজ্ঞাগুলো ব্যবহার করে, সেই সংজ্ঞা কিছু সময় পরপর বদলায়। ধরুন প্রাচীন গ্রিকরা মহাবিশ্বকে যে চোখে দেখতো, আমরা ঠিক সেভাবে দেখি না। গ্রিকদের কাছে যে বিদ্যুতের চমক ছিলো দেবরাজ জিউসের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি, আমাদের জীবনে একই বিদ্যুতের মানে হচ্ছে জলবায়ুর বিক্রিয়া, প্রাণহীন রসায়ন। প্রকৃতির সংজ্ঞাকে বদলে দিয়েছে সময় আর মানুষ।

মহৎ শিল্প-তা পেইন্টিং হোক, বা মন্দির হোক, অথবা কবিতা-যেকোনো মহৎ শিল্প বাস্তবতার এই সংজ্ঞাগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরে। অসাধারণ শিল্প আমাদের দেখায় ‘সত্য’ আসলে কী। হেইডেগার উদাহরণ হিসেবে ভ্যান গখের একটা পেইন্টিং-এর কথা লিখেছেন। কিন্তু রূপসী বাংলাকে মহৎ শিল্পের উদাহরণ হিসেবে ধরলে ঠিক একই বিষয় খেয়াল করা যায়।

কোন সত্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরে রূপসী বাংলা? পৃথিবীর কোন অংশের, জীবনের কোন অভিজ্ঞতাকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করে?

উত্তরটা আসলে আছে বইয়ের নামেই।

এই বইটার এক এক কবিতা হচ্ছে বাংলার রূপের জন্য এক একটা সংজ্ঞা। কেন আমি বাংলার সন্ধ্যা ভালোবাসবো? কবির জবাব: ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখেনিকো-দেখি নাই অত অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত, জানি নাই এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে...’ কেন আমি মনে করবো বাংলার বৃষ্টি অপরূপ? এখানে কবির উত্তর: ‘এই জল ভালো লাগে, বৃষ্টির রূপালী জল কত দিন এসে ধুয়েছে আমার দেহ-বুলায়ে দিয়েছে চুল-চোখের উপরে...’

জীবনানন্দ যে কবিতাগুলোকে সংজ্ঞা হিসেবে লিখেছেন, বা সাজিয়েছেন, তা একদমই বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু অসাধারণ শিল্পকর্মের ব্যাপারটাই এটা। সে এতো পরিষ্কার, এতো প্রাঞ্জলভাবে সত্যকে তুলে ধরে, যে তাকে সংজ্ঞা হিসেবে না নিয়ে উপায় থাকে না। বাংলার রূপ-পরিচয় নিয়ে এরপর যেখানে কথা হবে, সেখানে জীবনানন্দের প্রসঙ্গ না টানা প্রায় অসম্ভব।

এটাই হচ্ছে শিল্পের মূল ক্ষমতা। অসাধারণ শিল্প বাস্তবকে বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে। কারণ মানুষ যেভাবে বাস্তবকে দেখে, শিল্প তা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

জীবনানন্দের লেখা এর আগে আমার পড়া হয়নি। তার কিছু বিষয় লেখাগুলোকে আরও সুন্দর করে তুলেছে:

তিনি জানেন কীভাবে ভালনারেবল হতে হয়। লেখায় নিজের সবচেয়ে নাজুক, সবথেকে দুর্বল মুহূর্তগুলো পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে তার আপত্তি ছিলো না। এদিক থেকে তাকে অসম্ভব সাহসী মনে হয়েছে। তার মৃত্যুভয়, অন্যদিকে, আমাকে সামান্য অবাক করেছে।

আমি শহুরে মানুষ, গ্রামের রূপ খুব কম দেখেছি। তাও কবিতাগুলো খুবই ভালো লেগেছে। নিজেকে সহজেই কল্পনা করতে পেরেছি নদীর পাশে মাঠে, তারা গোনায় ব্যস্ত অবস্থায়।

ধূসর পাণ্ডুলিপিটা পড়তে হবে।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
September 28, 2018
তাকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি, বলা হয় নির্জনতার কবি, বাংলা সাহিত্যের শুদ্ধতম কবিও বলা হয়। তবে রূপসী বাংলার কবি নামেই তিনি বেশি পরিচিত। জীবনানন্দ দাশ , যিনি কবিতায় পঙক্তিতে উঠিয়ে এনেছেন বাংলার রূপকে। বলেছিলেন উপমাই কবিত্ব। বহুমুখী উপমায় বাংলার চিরায়ত রূপকে কে আঁকতে পেরেছে তারচেয়ে বেশি?

‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় কবির মৃত্যুর পর। প্রকাশসময় ১৯৫৭ এর আগষ্ট। কবিভ্রাতা অশোকানন্দ দাশের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। রূপসী বাংলা’র রচনাকাল ১৯৩২। জীবনানন্দ দাশ রূপসী বাংলা’র কবিতাগুলো ছিল শিরোনামহীন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কাব্যগ্রন্থটির প্রতিটি কবিতার শিরোনাম প্রথম পঙক্তির প্রথমাংশ থেকে থেকে। ধারনা করা হয় রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের নামকরণ এবং উৎসর্গ অশোকানন্দের।

সবচেয়ে পছন্দের কবিতা :

মনে হয় একদিন

মনে হয় একদিন আকাশের শুকতারা দেখিব না আর;
দেখিব না হেলেঞ্চার ঝোপ থেকে এক ঝাড় জোনাকি কখন
নিভে যায়; দেখিব না আর আমি পরিচিত এই বাঁশবন,
শুকনো বাঁশের পাতা-ছাওয়া মাটি হয়ে যাবে গভীর আঁধার
আমার চোখের কাছে; লক্ষ্মীপূর্ণিমার রাতে সে কবে আবার
পেঁচা ডাকে জ্যোৎস্নায়; হিজলের বাঁকা ডাল করে গুঞ্জরণ;
সারা রাত কিশোরীর লাল পাড় চাঁদে ভাসে-হাতের কাঁকন
বেজে ওঠে : বুঝিব না-গঙ্গাজল, নারকোলনাডুগুলো তার
জানি না সে কারে দেবে- জানি না সে চিনি আর শাদা তালশাঁস
হাতে লয়ে পলাশের দিকে চেয়ে দুয়ারে দাঁড়ায়ে রবে কি না…
আবার কাহার সাথে ভালোবাসা হবে তার-আমি তা জানি না-
মৃত্যুরে কে মনে রাখে?-কীর্তিনাশা খুঁড়ে খুঁড়ে চলে বারো মাস
নতুন ডাঙার দিকে-পিছনের অবিরল মৃত চর বিনা
দিন তার কেটে যায়- শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ।
Profile Image for Anjuman  Layla Nawshin.
85 reviews144 followers
October 22, 2024
"একদিন মৃত্যু এসে যদি দূর নক্ষত্রের তলে
অচেনা ঘাসের বুকে আমারে ঘুমায়ে যেতে বলে,
তবুও যে ঘাস এই বাংলার অবিরল ঘাসের মতন
মউরির মৃদু গন্ধে ভ'রে র'বে;..."
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
June 10, 2021
"(এই সব ভালো লাগে): জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে
আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়, — আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল–
এই নিয়ে খেলা করে: জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কী ভুল
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে;
পউষের শেষ রাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে
ফিরে এলো; রং তার কেমন তা জানে অই টস্‌টসে ভিজে জামরুল,
নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল; –
পউষের শেষ রাতে নিম পেঁচাটির সাথে আসে সে যে ভেসে"


জীবননান্দের সাথে পরিচয় সেই স্কুলে, 'আবার আসিবো ফিরে' কবিতার মাধ্যমে। সেই কবিতা এই রূপসী বাংলা বইয়ের-ই অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জীবনানন্দ না পড়লে মনে হতোনা পোকার নাম ও সুদর্শন হয়, চালতার ফুল দেখা হতোনা,লক্ষ্মীপেঁচাকেও এতো লক্ষ্মী মনে হতোনা। নতুন করে বাংলার মুখ দেখা হতোনা।

"আমি চ'লে যাব ব'লে
চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!"


বাইরে বৃষ্টি পড়তেছে, আর আমি রূপসী বাংলা পড়তেছি, এর থেকে ভালো কম্বো আর হয়না।


"কবেকার মৃত কাকঃ পৃথিবীর পথে আজ নাই সে তো আর;
তবুও সে ম্লান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব সোহাগে,
মলিন পাখনা তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাথায়;
তখন এ পৃথিবীতে কোনো পাখি জেগে এসে বসে নি শাখায়;
পৃথিবীও নাই আর;- দাঁড়কাক একা — একা সারারাত জাগে;
‘কি বা, হায়, আসে যায়, তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার।’"




Profile Image for Md. Rahat  Khan.
96 reviews25 followers
June 14, 2021
শুধু কথা, গান নয়— নীরবতা রচিতেছে আমাদের জীবন!
Profile Image for Nujhat Tabassum Tonny .
30 reviews41 followers
August 2, 2024
৫/৫

বাংলার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থেকেই তিনি আমাদের এই অমর পান্ডুলিপিটি উপহার দিয়েছেন।তাঁর বর্ণনায় প্রকৃতি যেন সৃষ্টির মধ্যদিয়ে অন্তরতম অনুভবে পরিস্নাত হয়েছে।প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই জন্ম নিয়েছিল এই এক ঝাঁক কবিতার।রুপসী বাংলার ৪ টি কবিতা বাদে বাকিসব কবিতাই সনেটধর্মী।এই সনেটগুলির অঙ্গসন্ধি শিথিল,বানীবিন্যাস ভাস্কর্যধর্মী নয়,চিত্রধর্মী।কিন্তু কবিতাগুলি বাংলার পল্লীবধূর তুলসীমঞ্চে সাঁঝের প্রদীপের মত স্নিগ্ধ, কমনীয়,পবিত্র।

জীবনানন্দ প্রকৃতিলালিত কবি।মায়ার দৃষ্টি দিয়ে তিনি এই বাংলার প্রতিটি জিনিসকে উপলব্ধি করেছেন,হৃদয়ে ধারণ করেছেন।প্রকৃতিই তাঁর ক্লান্ত ব্যথিত চিত্তকে শুশ্রূষার গান শুনিয়েছে।আর কোনো কবি প্রকৃতির সাথে এমন গভীর ভাবে মিশেছেন কিনা জানা নেই।সুদর্শন পোকাকেও যে এতোহহ সুন্দর উপমায় ফুটিয়ে তোলা যায় তা এর সাহিত্যকর্ম না দেখলে না জানাই থেকে যেত।মধূকুপী ঘাস,হিজল বন,ফিঙ্গে,বাদুড়,ধুন্দল লতা,নরম ধানের গন্ধ,কলমীর ঘ্রাণ,হাঁসের পালক,সাপমাসি,শরবন,
পুকুরের মাছ,রুপসার ঘোলা জল,সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণ,কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাত এগুলো সব কিছুর স্পর্শেই এক গন্ধময় চিত্তল জগৎকে প্রত্যক্ষ করা যায়।প্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের বর্ণনা তার কবিতায় অলঙ্কারের মতো দোদুল্যমান। তাঁর কাব্যে বুদ্ধির সাথে তিনি সক্রিয় রেখেছেন তাঁর দর্শন,শ্রবণ,মনন ও স্বপ্নকে।এখানেই তার প্রকৃতিপ্রেমের বৈশিষ্ট্য, স্বার্থকতা।

"এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে-সবচেয়ে সুন্দর করুণ: সেখানে সবুজ ডাঙা ভ'রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল; সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল; সেখানে ভোরের মেঘে নাটার র'ঙের মতো জাগিছে অরুণ; সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে, সেখানে বরুণ, কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল; সেইখানে শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল, সেইখানে লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ।"

তাঁর কবিতার প্রতিটি পঙক্তি পড়লেই বোঝা যায় জীবনকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন।প্রকৃতির মধ্যেই তিনি সব খুঁজে পেয়েছিলেন। মেঠোচাঁদ তাঁর দিকে তাকিয়ে যে ভাষায় কথা বলে তা অন্তরঙ্গ আত্মীয়েরই ভাষা।ভোরের নরম রং তাঁর দৃষ্টিতে শিশুর নরম গালের মতো লাল।তাঁর কবিতার প্রতিটি উপমা প্রকৃতির নৈসর্গিক রুপ তুলে ধরে যা পাঠককে ভাবিয়ে তোলে। "জাফরান রঙের সূর্যের নরম শরীর,মোরগ ভুলের মত লাল আগুন,কচি কলাপাতার মত নরম রোদ,নক্ষত্রের রুপালি আগুন,জ্যোৎস্নার উঠানে খড়ের চালের ছায়া,হরিৎ ঘাসের ঘ্রাণ ইত্যাদি বর্ণময় উপমাগুলো কেবল ধ্বনিচিত্র নয়,চেতনার কল্পনাবোধের স্মারক হয়ে উঠেছে।তাঁর সৃষ্ট বিশেষণগুলো বহ্নিমান অঙ্গারের মতো।তাঁর কবিতায় বাংলার প্রকৃতি, লোকপুরাণ এবং মনোরম সম্বন্ধে মাটি ও অরণ্যের সরস রুপায়ণে যে অনন্য পরিবেশ পরিস্ফুট হয়েছে তা বাংলা কবিতার প্রাঙ্গণে হরিৎ লাবণ্য ছড়িয়েছে।বাংলার ভালোবাসার কাছে সব কিছুই তুচ্ছ।

"তোমার যেখানে সাধ চলে যাও,আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাবো...

বাংলার প্রকৃতিকে,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রাণভরে ভালোবেসেছেন তিনি।

" বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,তাই আমি পৃথিবীর রুপ খুঁজতে যাই না আর.....

প্রকৃতির মুগ্ধতায় তিনি সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন।মৃত্যুর পরও এই প্রকৃতি অনন্ত যৌবনা থাকবে সে কথাও তিনি চিন্তা করেছেন।প্রকৃতিই কেবল তার আবহমান রুপমাধুরী অবিকল ধরে রাখে চিরকাল।এই প্রকৃতির রুপ-রং-শব্দ-গন্ধকে তিনি নিজের মন ইন্দ্রিয় ও মন দিয়ে নিজের মতো করে উদ্বেল হৃদয়াবেগে অনুভব করেছেন।প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা থেকে তিনি এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।

"আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে, হয়তো ভোরের কাক হ'য়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়; হয়তো বা হাঁস হবো-কিশোরীর-ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে-ভেসে; আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;"

তিনি চিরকালের বাংলার জাগ্রত পথচারী।যার কাছে প্রকৃতি,প্রেম,ইতিহাস,সময়,সভ্যতা,চলমানতা সব এক অনন্যমাত্রায় ধরা দিয়েছে।

"এখানে ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্ণে শান্তি আসে মানুষের মনে, এখানে সবুজ শাখা আঁকাবাঁকা হলুদ পাখিরে রা���ে ঢেকে; জামের আড়ালে সেই বউকথাকওটিরে যদি ফেলো দেখে একবার,-একবার দু'পহর অপরাহ্ণে যদি এই ঘুঘুর গুঞ্জনে ধরা দাও, তা'হলে অনন্তকাল থাকিতে যে হ'বে এই বনে; মৌরির গন্ধমাখা ঘাসের শরীরে ক্লান্ত দেহটিরে রেখে আশ্বিনের ক্ষেত ঝরা কচি-কচি শ্যামা পোকাদের কাছে ডেকে র'বো আমি; -চকোরীর সাথে যেন চকোরের মতন মিলনে;"

জীবনানন্দ রুপসী বাংলার কবি।তাঁর অনন্যসাধারণ কাব্য বৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ চিত্ররুপময় বলেছেন।ব্যক্তিমনের নিঃসঙ্গতা,আধুনিক জীবনের বিচিত্র যন্ত্রণা ও হাহাকার এবং সর্বোপরি জীবন ও জগতের রহস্যও মাহাত্ম্য সন্ধানে তিনি এক অপ্রতিম কবিভা��া সৃষ্টি করেছেন।এজন্য বুদ্ধদেব বসু তাকে বলেছেন নির্জনতম কবি।বাংলার কথাসাহিত্যে অরণ্যপ্রকৃতির যেমন সহাস্য বন্দনা ও রুপাঙ্কণ করেছিলেন কথাশিল্পী বিভূতি-ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।তেমনি বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ দাশ। প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা নিখাদ,গভীর,দ্যুতিময়।

~কাব্য বিশ্লেষণ করার মতো পাঠক এখনও আমি না।আর জীবনানন্দের কাব্য বিশ্লেষণ করব তার তো প্রশ্নই আসে না।তবুও মুগ্ধতা নিয়ে লিখাগুলো অনুভব করলাম,কিছু শব্দ লিখায় ফুটিয়ে তুললাম এ ই বা কম কি।৬৫ পৃষ্ঠার এক বই তবুও পড়তে অনেকটা সময় লেগেছে।
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
January 24, 2022
কী আছে রূপসী বাংলায়?
ঘাসের 'পরে ঝরা শেফালি, শিশিরের জলে ভেজা চালতাফুল, ভাটফুল, টসটসে ভেজা জামরুল, ভোরের বাতাসে ঝরা কাঁঠালপাতা, অশ্বত্থের খয়েরি পাতা, আমের পাতায় ঘুমন্ত কাঁচপোকা, বাঁশবনে উড়ন্ত সুদর্শন, লাল লাল বটফল, মৌরির গন্ধমাখা ঘাস, জামের ডালে মউমাছির চাক, হিজলের বনে ঘুঘুর ডাক, বৈশাখের মেঘ, হেমন্তের পাকা ধানের নরম গন্ধ, বাঙালি নারীর চাল-ধোয়া স্নিগ্ধ হাত, ভেরেণ্ডাফুলে নীল ভোমরা, সিঁদুরের মত রাঙা লিচু, শালিখ গাংচিল শঙ্খচিলের স্বাধীনতা, হাওয়ায় নড়া শুপুরির সারি, ধানসিঁড়ি নদী, নদীর গোলাপি ঢেউ, কার্তিকের নীল কুয়াশা, কমলা রঙের সন্ধ্যা, শাদা মেঘের পাহাড়ে সূর্যের রাঙা ঘোড়া, সোনালি চিলের ডানা,কলমীর ঘ্রাণ, হেলেঞ্চার ঝোপে জোনাকির রূপ, নিশুতি জ্যোৎস্নার রাতে লক্ষীপেঁচার গান,... এবং অবশ্যই নক্ষত্রের রাত।
বাংলার রূপ কী চোখে দেখতে হয়, তার গাইড রূপসী বাংলা
Profile Image for Domhnall.
459 reviews375 followers
January 1, 2019
In a Guardian review artical, 8 September 2018, Amit Chadhuri referred to Jibanananda Das as one of the most “wilfully underrated” poets of the last century, which is as good a provocation as any to find and read his work. Of course I have to read this in translation, and take it as I find it, but in this case that is no compromise.

Every poem in this collection is a sonnet, with some slight liberties, and each poem is presented as a single sentence, albeit usually fragmented into disjointed phrases; sometimes, to be fair, a full stop might be inserted without altering the flow. Some of the minor liberties with form can be accounted for by the fact that this collection was published posthumously, from a notebook that was certainly still work-in-progress. I also suspect that some of the repetitions that jar, overlaps between adjacent poems, and some of the less effective moments generally, also reflect the fact that the poems were not yet ready for publishing, and the poet possibly hoped to continue improving them. Beyond this, though, I see few grounds for apology or misplaced humility: they are relaxed and read with a natural flow that is not strained by the constraints of form, but rather display to best advantage the reasons why sonnets are so much loved; it just is a great way to write and to read poetry and Das has demonstrated the possibility of using sonnets in ways that are original and personal.

Like poets around the world, Das makes extensive use of local place names, culture, folklore and natural imagery, and in most poems the local flavour is enhanced by leaving in a few specific terms that are not translated, but listed in a helpful glossary at the end of the book. For some, like names of months which follow a different calendar to the English, translation would not be accurate; for some, like names of mythical figures, we need additional explanation (which the glossary supplies) to appreciate their significance; for some, like names of some birds or plants, it is just more attractive to use the local name and besides it probably fits the metre best that way. There is an obvious patriotic appeal to people for whom this is their local poet, and this was historically the case with Dal’s work. The primacy of local detail is possibly also important in post colonial contexts, as it was for Yeats or Walcott for example. However, the experience of writers globally has always been that their universal appeal is greater when they talk most intimately about their own, personal history and places. Far from alienating a foreign reader, such local details invite us to see things in the way local people see them – which is on the whole a welcoming sensation, a warm embrace – and to recognise that we are similar, while frankly we can also love difference.

Some of the nature observation is beautiful and simple; is there a hint of John Clare in this example?

A sparrow’s white egg lying broken in grass – the pity, the silence
of its surface I love – at some moment it broke – on the front it is all
stuck with dust and straw – I look forever at it, ...


He can evoke mood with skill:

In this dark air only beetles and dragonflies fly,;
Straws drop silently from a shalik’s [a small, brown bird] beak on the way;
Ah, softly it picks them back up from where they lay;
The dusk’s red vein sets homeward mild of eye,
A dove croons – the stars find peace in the silent sky; ...


Some of the poems may seem straightforwardly patriotic, even addressing Bengal as a person.

I have looked on the face of Bengal: nowhere else shall I go to see
The loveliness of the Earth;


However, the emotional reference does not seem boastful to me, but melancholic, referrring to the experience of a migrant, possibly moving to a city for employment and prospects but fondly recalling their origins in a rural village, and this experience is one that could be shared in nearly every detail by any Irish, Carribean or other migrant in Birmingham or New York as much as Calcutta:

... If ever I go
Upon the way of the world – dust and buses and trams
I shall see in plenty – and so many markets, slums,
Dank lanes, broken chillums and urns, yelled “damns”,
Blows exchanged, crossed eyes, rotten shrimps – too much to write down, I know –


He can often find sublime phrasing:

I have lived long on Earth, and many a tender theme
Of the sad secret heart I have learned as I have gone by
On the way of the world


Or even:

The human hurt on the way of the world is mine, I have fed
On laughter’s taste ...
... The world’s path is full of my scratches, a few tears I have let fall


I have to wonder is there a Bengali equivalent to Patrick Kavanagh to remind us that such dreamy affection for a remembered rural idyll does not account for the grim realities that drove so many of its people to migrate in order to survive. In fact, I don’t think that homesickness is invalidated by such reflections. But I think even that is part of the appeal in these poems; I argue with the poet because I have been caught up by his imagination; I cannot avoid becoming engaged.

Amit Chadhuri has made a good point: the poetry of Jibanananda Das deserves to be acknowledged and more widely read. I have already ordered another volume – Naked Lonely Hand.
Profile Image for Sayonee.
94 reviews21 followers
December 29, 2020
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি" ও "আবার আসিবে ফিরে ধানসিড়িটির তীরে"; এই কবিতা দুটি পাঠ্য হিসেবে বহুবার পড়েছি এবং কোথাও একটা গিয়ে হয়তো ভালবেসে এর নির্যাসটুকু আত্মস্থ করতে পেরেছিলাম; তাই যতবারই পড়া হোক না কেন মুগ্ধতার সেই অনুভূতির কোনও বদল হয়নি। আর আজ "রূপসী বাংলা" কাব্যগ্রন্থটি পড়ার কারণও সেটিই।

৬১টি কবিতার সংকলন, এই বইটির প্রতিটি লাইনে রয়েছে গ্রাম বাংলার রূপের বিস্তারিত বর্ণনা। কবির রূপসী বাংলা, যা তাঁর কাব্যিক সত্ত্বাকে করেছে সম্পৃক্ত, এক কিশোরীর বেশে ধরা দিয়ে বারবার হারিয়ে গেছে 'বাংলার নদী, মাঠ, ক্ষেত'-এ 'দূরে নিরুদ্দেশে'। কবির ভাষায় কখনও ফুটে উঠেছে বিদায়ের মূর্ছনা, কখনও বা ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি, আবার কখনও রয়েছে ইতিহাস থেকে বর্তমানের বহমানতার চিরকালীন গল্প।

সহজ, সরল ও অকৃত্রিম - বাংলা সাহিত্যের এই অপূর্ব সৃষ্টির 'রিভিউ' হিসেবে, এই তিনটি শব্দই বোধহয় সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে সাধারণের অসাধারণ হয়ে ওঠার জয়গানসুলভ এই কবিতাগুলির ভিড়ে, অসাধারণত্বের সহযাত্রী হলেও, কয়েকটি কবিতা সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি এবং কয়েকটিকে মনে হয়েছে 'একঘেয়ে'; সেক্ষেত্রে তা হয়তো আমারই ব্যর্থতা।







Profile Image for Mridul.
45 reviews2 followers
August 16, 2018
জীবনানন্দ দাশের "রূপসী বাংলা" পাঠের অনুভূতি কি? প্রতিটি কবিতা পড়ার পর শুধু একটা কথাই বলতে ইচ্ছে করে, "তোমার যেখানে সাধ চলে যাও- আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব" । এখনও 'বাংলায়' রয়ে গেছি বটে তবে সেটা কোন বাংলা জানি না ........। একটা সময় বন্ধুদের দেখাদেখি দেশ ত্যাগের হুজুগে মেতেছিলাম । শেষাবধি যাই নি । একথা বলার উদ্দেশ্য এই নয় যে, "রূপসী বাংলা" পড়ে আমি দেশে থেকে গেছি । এতটা রোমান্টিক মানুষ নই, নিজেকে এতটা দেশপ্রেমিক পরিচয় দেওয়ার সাহসও নাই । কবিতা টানা না পড়ে জমিয়ে রাখা অভ্যাস । যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে "রোদ ভাল লাগে", যখন বিকালে আকাশে তাকিয়ে যদি দেখি "নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুলের" মত হিম শাদা মেঘ, যখন "বৃষ্টির জল ঝরে চোখের পাতায়, চুলের পরে" , তখন "রূপসী বাংলা" হাতে নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে । কতদিন ধরে পড়ছি জানি না ! এমনি একদিন লম্বা পরীক্ষা শেষে বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টাই , পেন্সিলে নিজের হাতের লেখায় চোখ আটকে যায় ।
"কে যাবে বিদেশে বল?" হ্যাঁ, তাই তো । জীবনানন্দের "রূপসী বাংলা" ছেড়ে কোথায় যাব?
"এই ডাঙ্গা ছেড়ে হায় কে রূপ খুঁজিতে যায় পৃথিবীর পথে/.......তাদের উপেক্ষা করে কে যাবে বিদেশে বল........ বাসমতী ধানখেত ছেড়ে দিয়ে মালাবারে- উটির পর্বতে/ যাব নাকো ..."

আমি ভ্রমণবিলাসী মানুষ নই । ভ্রমণে অরুচি আছে । তবু প্রায় মনের মাঝে তীব্র ইচ্ছা জাগে, সব কিছু ছেড়ে "রূপসী বাংলার" পথে নেমে পড়ি, সেই মাঠ, ঘাস, অপার আকাশ, কাঁচপোকা, গঙ্গা ফড়িঙের সাথে মিশে যাই । যদি কোনদিন কোন দৈত্য এসে বলে কোথায় যেতে চাও, আমি বলব, আমায় নিয়ে যাও জীবনানন্দের "রূপসী বাংলায়" । আমি "ঘাসের বুকের থেকে" যেন খুঁজে পাই আমার শরীর ।

বাংলার মানুষ আর প্রকৃতি দুটোই "রূপসী বাংলা" র অনুষঙ্গ । বাঙ্গালি নারীর চাল ধোয়া সফেদ হাত, শাদা শাঁখা, শাড়ির আঁচলকে কিভাবে বাংলার আম কাঁঠালের শ্যামলতা থেকে আলাদা করব? কিশোরীর রাঙ্গা ফিতা আর প্রজাপতির নরম পাখা শুধু কবি নয়, আমাদের কাছেও এক হয়ে ধরা দেয় ।

জীবনানন্দের মত বিষণ্ণ রোমান্টিক কবি বাংলা সাহিত্যে মনে হয় বেশি নাই । প্রায় কবিতায় জীবনের উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে মৃত্যুর নীরব পদচারণা । "কখন মরণ আসে কেবা জানে " , "তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকারে মৃত্যুর আহবান " , "কোথাও চলিয়া যাব একদিন" , "ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে" - এমনি সব স্তবকে যেন জীবনকে ফাঁকি দেওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা । কোন অভিমানে তা জানি না। তবে মৃত্যুতে কবির রূপ তৃষ্ণা মরে যায় নি । মৃত্যুর পরেও কবি এই বাংলায় পুনর্জন্ম চান।

"আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ হয়ত মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে" - এই কবিতাকে পুরো কাব্যগ্রন্থের সারকথা বলা অত্যুক্তি হবে না ।
Profile Image for Asif Mahmud.
11 reviews
December 2, 2025
এ রুপসী বাংলা আমাদেরই, চলতে ফিরতে যাকে দেখা যায়।
Profile Image for Amjad Hossain.
196 reviews1 follower
April 24, 2023
একটা মানুষ কতটা গভীরভাবে সব কিছু খেয়াল করলে এত টা নিখুত করে লিখতে পারে।
এই বাংলা, এই সবুজ প্রান্তর, এই নদী কিংবা হিজল, শালিক, বক, নীল জারুল বা সবুজ ঘাস প্রান্তর ।
সব কিছু যেন এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে এড়িয়ে যাওয়া যায়না।
৪.৫★
Profile Image for Hasan Rahman Marzan.
13 reviews28 followers
October 26, 2018
গ্রামে থাকি! এই রূপসী বাংলার রূপ খুব কম দেখা হয় নাই। তারপরও একটা আফসোস আজীবন থেকে যাবে... ইশ! যদি একটিবার জীবনানন্দের চোখ দিয়ে দেখতে পারতাম!

জীবন মানেই জীবনানন্দ... ❤
Profile Image for Fatema-tuz    Shammi.
126 reviews21 followers
August 31, 2020
ছোট একটা বই। ৬৫ পেইজ। তাও পড়তে অনেকটা সময় লাগলো৷ আমি কবিতার বই সে-রকম পড়ি না। তাই জানিও না যে আসলে যারা কবিতা পড়েন কিভাবে পড়েন! তবে আমি পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম গল্প পড়ার মতো কবিতা পড়া অতো সোজা কর্ম নয়। কবিতা বুজতে হয়, ভাব অনুভূতি এগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে অনেকটা মাথা খাটানো লাগে।যেটা গল্প উপন্যাসে সেরকম প্রয়োজন পরে না।
আমার মনে হলো এক বসায় ৪/৫ টার বেশি কবিতা আমি পড়তে পারি না। পড়লেও আর যাই হোক ঠিকঠাক কবিতা পড়া হয় না। তবুও আমি তাড়াহুড়ো করেছি। যেহেতু কবিতা পাঠক হিসেবে খুব নতুন।

রূপসী বাংলা সত্যি বাংলার আসল একেবারে নিখাঁদ কিছু রূপের বর্ননা পাওয়া যায়৷ সাথে একজন কবির জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং একপ্রকার আশ্রয় ও প্রকাশ পায়। যেহেতু কমলালেবু পড়েছিলাম তাই জীবনানন্দ এর জীবনের নানা ক্রাইসিস জানা আছে। এই কবিতাগুলি ও যে এমন ই এক চরম সময়ের তা তো আগে থেকে জানি। আর কবিতা গুলি পড়ে মনে হয় যেন সেটা আরও ভাল করে টের পেলাম। সব কবিতা ভালো লেগেছে বলবো না তবু একজন চাকরিচ্যুত সেসময় মোটামুটি ব্যর্থ একজন কবির দুঃখ এবং ভালো লাগা কিছু টা হলেও অনুভব করেছি। "বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি,তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা আর;" "এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে সবচেয়ে সুন্দর করুন://সেখানে সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল;" এরকম কবিতাগুলি বাংলার একদম সত্যিকারের সৌন্দর্যগুলি তুলে ধরেছে৷ তাছাড়া তাঁর কবিতায় ই নীল বাংলা, নীল কাক, গোলাপি ঢেউ, এরকম আরও কতশত অচেনা উপমা৷ ভাঁটফুল, সুদর্শন(গোবরে পোকা) , করমচা, জাম জামরুল, মউমাছি আরও কত শত গ্রামীণ চিরায়ত বাংলা তার কবিতায় কথার মাধ্যমে উঠে এসেছে৷ সত্যি উনি বাংলা কবিতায় সম্পূর্ণ নতুন ধারায় লিখালিখি করেছেন। যেটা সে সময় কেউ ভাবতেও পারেনি৷
Profile Image for Shishir.
186 reviews39 followers
November 16, 2025
চ'লে যাব শুকনো পাতা-ছাওয়া ঘাসে—জামরুল হিজলের বনে;
তল্ তা বাঁশের ছিপ হাতে র’বে—মাছ আমি ধরিব না কিছু; —
দীঘির জলের গন্ধে রূপালি চিতল তার রূপসীর পিছু
জামের গভীর পাতা-মাখা শান্ত নীল জলে খেলিছে গোপনে ;
আনারস-ঝোপে ঐ মাছরাঙা তার মাছরাঙাটির মনে অস্পষ্ট আলোয় যেন মুছে যায়;—সিঁদুরের মতো রাঙা লিচু
ঝ'রে পড়ে পাতা ঘাসে—চেয়ে দেখি কিশোরী করেছে মাথা নিচু-
এসেছে সে দুপুরের অবসরে জামরুল লিচু আহরণে,-

চ'লে যায়; নীলাম্বরী স'রে যায় কোকিলের পাখনার মতো
ক্ষীরুয়ের শাখা ছুঁয়ে চালতার ডাল ছেড়ে বাঁশের পিছনে
কোনো দূর আকাঙ্ক্ষার ক্ষেতে মাঠে চ'লে যায় যেন অব্যাহত,
যদি তার পিছে যাও দেখিবে সে আকন্দের করবীর বনে
ভোমরার ভয়ে ভীরু; বহুক্ষণ পায়চারি ক'রে আনমনে তারপর চ'লে গেল: উড়ে গেল যেন নীল ভোমরার সনে।
Profile Image for Shaurav Saha (পার্কের খঞ্জ).
18 reviews21 followers
April 7, 2016
এমন তো হতে পারে, প্রকৃতি ভিন্ন ভঙ্গিমায় হাজির হতে পারে কবিতায়, একেবারে চিরচেনা আপামর নিসর্গ যেখানে আবাল্য কেটেছে, তার খুঁটিনাটি, রূপরস গন্ধ আসতে পারে কোনো বিশেষ দার্শনিকতার বাতাবরণে যদিও দার্শনিকতা কবিতার উদ্দেশ্য বা সাফল্য নয়। কবিতার জন্যই কেবলমাত্র রচনা হতে পারে কবিতা।
এমনই এক ব্যতিক্রমী কাব্যগ্রন্থ : রূপসী বাংলা।

দর্শন হিসেবে বারবার ফিরে এসেছে গৌতম বুদ্ধের জাতকচক্র (wheel of life) তত্ত্ব। নির্বাণ অর্জন না করা পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে জন্ম-পুনর্জন্মের চক্রের মধ্য দিয়ে চলতে হবে জীবনের পথে।

-এই আম জামের ছায়াতে কবে যেন তারে আমি দেখিয়াছি/
-কবে যেন রাখিয়াছে হাতে তার হাত/
-কবে যেন তারপর শ্মশান চিতায় তার হাড় ঝ'রে গেছে, কবে যেন;/
এ জনমে নয় যেন-এ পাড়াগাঁর পথে তবু তিন শো বছর আগে হয়তো বা-/
আমি তার সাথে কাটিয়েছি;/
-[ঘুমায়ে পড়িব আমি]

কিন্তু এর চেয়েও আকর্ষণীয় কবির চিত্রকল্প, যা এই বাংলার নিসর্গ, ইতিহাস বা গাঁথা থেকে অকাতরে সংগ্রহীত।

১. পুকুরের লাল সর ক্ষীণ ঢেউয়ে বারবার চায় যে জড়াতে কবরীর কচি ডাল; চুমো খেতে চায় মাছরাঙাটির পায়।
২. পেঁচার ধূসর ডানা সারারাত জোনাকির সাথে কথা কয়।
৩. তবু জানি আমাদের স্বপ্ন হতে অশ্রু ক্লান্তি রক্তের কণিকা ঝরে শুধু--/
স্বপ্ন কি দেখেনি বুদ্ধ-নিউসিডিয়ায় বসে দেখেনি মণিকা?/
স্বপ্ন কি দেখেনি রোম, এশিরিয়া, উজ্জয়িনী, গৌড়-বাংলা, দিল্লী, বেবিলন?
৪. নীল ধোঁয়া নরম মলিন বাতাসে ভাসিয়া যায় কুয়াশায় করুণ নদীর মতো ক্ষীণ।
৫. তখন এ জলসিড়ি শুকায়নি, মজেনি আকাশ, বল্লাল সেনের ঘোড়া/
-ঘোড়ার কেশর ঘেরা ঘু��ুর জিনের শব্দ হ'ত এই পথে।

সবকিছু ছাড়িয়ে কবির দেশপ্রেম, প্রবাসে বিমুখতা আর বারবার এই বাংলায় ফিরে আসার স্বপ্ন ভাস্বর।

-কোনো দিন রূপহীন প্রবাসের পথে
বাংলার মুখ ভুলে খাঁচার ভিতরে নষ্ট শুকের মতন কাটাইনি দিন মাস,/
বেহুলার লহনার মধুর জগতে/
তাদের পায়ের ধুলো মাখা পথে বিকায়ে দিয়েছি আমি মন বাঙালি নারীর কাছে --/
চাল-ধোঁয়া স্নিগ্ধ হাত, ধান-মাখা চুল,/
হাতে তার শাড়ীটির কস্তা পাড়;-- ডাঁশা আম কামরাঙা কুল।
-[যেদিন সরিয়া যাব]
Profile Image for Fahad Ahammed.
386 reviews44 followers
July 7, 2018
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব- কিশোরীর-ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংরার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে।
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায়; রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।
Profile Image for Sajid.
457 reviews110 followers
February 15, 2022
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল — বট — তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলার একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে —
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চরায় —
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়।
Profile Image for Hanif.
154 reviews5 followers
November 13, 2021

কিছু কিছু বইয়ের পর্যালোচনা করা যায় না, এটা হল এমন ধাঁচের বই। এই বইটা পড়ার সময় বাংলার প্রকৃতির সাথে জীবনানন্দ কিংবা মানুষের যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ফুটিয়ে তুলা হয়, তা শুধুই উপলব্ধি করাই সম্ভব, ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত কঠিন বলেই মনে করি।
Profile Image for Saheli Roy.
30 reviews
November 28, 2025
রোম এবং উজ্জয়িনী কে যে একই বাক্যের মধ্যে ফেলা যায় এটা সত্যি আমার ভাবনার বাইরে। ভেরেন্ডা, শ্যমাপোকা এর ও এত সৌন্দর্য সেটাও জানলাম। আর রাজকুমারী এর গল্প আর আতাবন এর গল্প যে একই কবিতা তে পাওয়া যায় এটাও জানলাম।
Profile Image for Ahnaf.
24 reviews
December 19, 2024
বাংলার রুপ সৌন্দর্য্যটা কে কবিতা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলা যে কতটা সৌন্দর্য্য এটা আমরা গ্রামে গেলেই দেখা যায়।

আমার মতে এই গ্রন্থটি সকল বাঙালির পড়া উচিত।
Profile Image for Soumitro Roy.
117 reviews
April 2, 2016
"নিরবতা রোচিতেচে আমাদের সবার জীবন"
Out of all the beautiful poems I liked these seven most:
সন্ধ্যা হয়
বাতাসে ধানের শব্দ শুনিয়াছি
কতদিন তুমি আর আমি
এসব কবিতা আমি যখন লিখেছি
গৌলপতা ছৌনির বুক
মনে হয় একদিন আকাশের
আবার আসিবো ফিরে
These poems repeats the pictures of: a meadow or brookside full of grass, a starry night,a girl having the scent of rice water on her hands, a native girl gathering berries in the forest, horses, owls, rats, rice fields and many more that is just a detailing out of Bengali life, specially of the village.A must read for all Bengalis out there. Nothing can paint a Bengali life as Das did.
Profile Image for Tawheeda Rufah Nilima.
294 reviews58 followers
June 20, 2022
এই বইয়ের সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা কি আদৌ সম্ভব?
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,740 reviews355 followers
July 6, 2025
রূপসী বাংলার সন্ধানে: জীবনানন্দের এক অক্ষয় কাব্যভাষ্য

“আমি চ'লে যাব ব'লে
চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে?”

একটি প্রশ্নই যেন সমগ্র গ্রন্থটির স্পন্দন—এই "রূপসী বাংলা" কি কেবল এক কবির স্মৃতিমেদুর স্বপ্ন, না কি বাংলার আত্মার কাব্যিক আত্মজ?

প্রথম প্রকাশ ১৯৫৭, কবির মৃত্যুর পরে। প্রকাশক সিগনেট প্রেস, প্রচ্ছদশিল্পী সত্যজিৎ রায়। আর যাঁর কবিতা—তিনি সেই জীবনানন্দ দাশ, বাংলা সাহিত্যের “the most silently luminous comet”।

কবির স্বপ্ন ও প্রকৃতির পাণ্ডুলিপি:

জীবনানন্দ নিজেই বলেছেন, “আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে—এই বাংলায়।” কী আশ্চর্য! এই পংক্তি যেন কবির ভবিষ্যদ্বাণী। এই কাব্যগ্রন্থে, আমরা দেখি প্রকৃতির প্রেমিক কবিকে—যিনি বাংলার প্রতিটি গাছ, পাখি, গন্ধ, রোদ্দুর, বৃষ্টিকে নিজের প্রাণের মতো চেনেন।

এই গ্রন্থের ৬১টি কবিতা—প্রায় প্রতিটি সনেটের ঢঙে, কিন্তু যেন “বাঁধা ছন্দে বাঁধাহীন ভ্রমণ”—অন্তর্মুখী, রহস্যময়, গোপন প্রেমের মতো।

কেউ কেউ বলে "রূপসী বাংলা" কাব্যগ্রন্থটি একটি দীর্ঘ প্রেমপত্র—বাংলার উদ্দেশ্যে, তার রূপের প্রতি, স্মৃতির প্রতি। কবিতার এক একটি চিত্র যেন অবিকল আঁকা পেইন্টিং—

“সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকার ঘাসের উপর”
“শঙ্খমালা নাম তার : এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে / তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকো”

Nostalgia না Nationalism?

পাঠ করতে করতে বারবার প্রশ্ন আসে—এ কি কেবল স্মৃতির নস্টালজিয়া, না কি একটি অস্তিত্ববাদী আহ্বান? কবি জানেন, এই "রূপসী বাংলা" ধীরে ধীরে পাল্টে যাবে, তবুও তার প্রেম কমে না। হাইডেগার যেমন বলেছিলেন, "Great art reveals truth"—জীবনানন্দ যেন বলছেন, বাংলার রূপই তাঁর সত্য।

আর এই সত্য ভাষার গহিন থেকে উঠে আসে—“লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ”, “ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্ণে শান্তি আসে মানুষের মনে”—সত্যিই কি কেউ বাংলাকে এভাবে শুনতে, দেখতে, গন্ধ পেতে শিখিয়েছেন আগে?

সত্যজিৎ রায়ের প্রচ্ছদ: Minimal meets Myth

সত্যজিৎ রায়ের করা প্রচ্ছদ এক অদ্ভুত সংযমী সৌন্দর্যের প্রতীক। এক নারীমুখ—অর্ধেক দেখা, অর্ধেক লুকানো—যেন কবির ‘রূপসী’র প্রতিচ্ছবি। গ্রামীণ বাংলার উপাদান, নারীত্ব, এবং স্বপ্নের সমাহার যেন প্রচ্ছদেই।

কবির প্রকৃতির দর্শন

জীবনানন্দ প্রকৃতিকে শুধু দেখেন না, তিনি প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান। “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে—সবচেয়ে সুন্দর করুণ”—এই এক স্থানের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে কাঁঠাল, হিজল, জারুল, শঙ্খচিল, ঘুঘু, পেঁচা আর সেই চিরপ্রত্যাশিত রূপসী।

এক পাঠক যেমন সুন্দর করে বলেছে, “জীবনানন্দ না পড়লে লক্ষ্মীপেঁচা কেমন লক্ষ্মী তা জানতাম না”—এটাই তো কবিতার সার্থকতা।

লোকজ ও মিথের সম্মিলন

রূপসী বাংলার কবিতাগুলিতে “বারুণী”, “বিশালাক্ষী”, “শঙ্খচিল”, “জলাঙ্গী”—এই নামগুলি কেবল প্রতীক নয়, বাংলার পুরাণ, স্থানিকতা ও ইতিহাসের গভীর মেলবন্ধন। ইংরেজি অনুবাদে যেমন মন্তব্য করা হয়েছে, “The primacy of local detail is possibly also important in post-colonial contexts... talking most intimately about one’s own places brings universal appeal.”

জীবনানন্দের কবিতা তাই স্রেফ দেশাত্মবোধ নয়, এটি গ্রামীণ স্মৃতির এক আত্মনিবেদিত গীত।

কাঠামো ও আঙ্গিক

প্রতিটি কবিতা এক একটি লম্বা বাক্য, মাঝে মাঝে বিরতি, কখনো ফুলস্টপ ছাড়াই—যেন একটা মনস্তাত্ত্বিক এক্সপ্লোরেশন। একধরনের “stream of poetic consciousness”। যে পাঠক আত্মস্থ পড়তে চায়, তার জন্য প্রতিটি কবিতা এক এক রত্ন।

মৃত্যু ও পুনর্জন্ম: A Soft Obsession

মৃত্যু এখানে ভয় নয়, পুনরাগমনের আশা। “হয়তো ভোরের কাক হয়ে আসিব”—এই যে পাখির রূপে, বাতাসের রূপে ফিরে আসা—এটি জীবনানন্দের কবিতার অতিপ্রাকৃত রোমান্স। জীবন, মৃত্যু, প্রকৃতি আর প্রেম—এই চক্রই তাঁর অনন্ত কাব্যচর্চা।

একটি প্রজন্মের কাব্যগান

আমরা যারা শহরে বড় হয়েছি, যারা চাল ধোয়ার ভেজা হাত দেখিনি, তারা যখন এই বই পড়ি—আমরা যেন এক অদ্ভুত আত্মীয়তা অনুভব করি। বাংলার রূপ চোখে দেখা যায় না, কিন্তু কবিতার ভিতর গন্ধ আসে।

এই অনুভূতিটাই মহৎ শিল্পের কাজ। যেমন ভ্যান গখের চটি-জোড়া দেখতে দেখতে আমরা কৃষকের ক্লান্তি বুঝি, তেমনি “ভাটফুল, জামরুল, কচি কাঁঠালপাতা” পড়ে আমরা বাংলাকে স্পর্শ করি।

কিছু পরিশেষের কথা

রূপসী বাংলা শুধু একটা কাব্যগ্রন্থ নয়—এটা একটা ম্যানিফেস্টো, বাংলার প্রতি অটুট প্রেমের, এক অন্তর্লীন যাত্রার। যেমন ইংরেজি ভাষায় এক পাঠক লেখেন—“I argue with the poet because I have been caught up by his imagination.”

এই কবিতাগুলির সবটাই অনবদ্য—তা নয়। কিছু কিছু একঘেয়ে লাগতে পারে। কিন্তু সেই একঘেয়েমিও যেন একটা বিষণ্ণ গান, যার সুরে বেজে ওঠে বাংলার হেমন্ত।

উপসংহার

রূপসী বাংলা পড়া মানে এক ধরণের সময়ের ভিতর দিয়ে হাঁটা—এক ধরণের স্মৃতির নদী পার হওয়া, যেখানে ‘শালিখ’ ডাকে, ‘লিচু’ পাকে, ‘নিম পেঁচা’ গান গায়।

আর সবশেষে শুধু এটুকু বলা যায়—
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি / তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।"

এই একটি বাক্যই যেন কবির, এবং আমাদের, রূপসী বাংলার প্রতি শেষ এবং চিরন্তন প্রতিশ্রুতি।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Khachar vitor  Ochin  Pakhi .
8 reviews
January 8, 2023


বই:রূপসী বাংলা
লেখক:জীবনানন্দ দাশ


এই আপাত সুদীর্ঘ জীবনে যত বই পড়েছি তার মাঝে কিছু বই আমার ভেতরে তাদেরকে চিরদিন মনে রাখবার মতো আবেগ তৈরি করতে পেরেছে।আমি সেরকমই একটা বই সম্পর্কে লিখছি।আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না এই পৃথিবীর সবচেয়ে বাগ্মী মানুষটিও তার জীবনের সুখ-দুঃখকে কথা বলার ভাষায় পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেনি।আমি কূপমণ্ডূক মানুষ। তাই রূপসী বাংলাকে ঘিরে জন্ম নেয়া আমার সমস্ত স্বপ্ন,সুখ,দুঃখ আর ভালোবাসাকে আমি ব্যক্ত করতে পারবো– এই আশা সম্ভবত দুরাশা।তবুও এক ধরনের স্পর্ধা (?) দেখাচ্ছি।

অন্য কবিদের চেয়ে জীবনানন্দ দাশ আমার চোখে আলাদা।এই বইটিও তাই।জগতে আপাত কার্যকারণ ছাড়া যেসব ঘটনা ঘটে সেসব ঘটনার স্মৃতি আমরা ধরে রাখতে চাই না কিংবা পারি না।কিন্তু তিনি চান কিংবা পারেন।একটা শালিক হয়তো ঘাসের উপর খেলছে।প্রকৃতির খেয়ালে সে হঠাৎ চলে গেল বনের হিজল গাছের কাছে।এই আপাত তুচ্ছ ঘটনার ভেতরেও যে সৌন্দর্য আছে,এই অতিক্ষুদ্র ঘটনাটিকেও যে প্রকৃতি স্মৃতি তৈরি করবার ক্ষমতা দিয়েছেন সে কথা জীবনানন্দ দাশ আমাদের বলেছেন—

‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও আমি এই বাংলার পাড়ে
রয়ে যাবো;দেখিবো কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে
দেখিবো খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাঙ নেচে চলে ঘাসে অন্ধকারে
একবার দুইবার- তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে... '

~ (কবিতা:তোমরা যেখানে সাধ)

এই বইটিতে বারে বারে তিনি বাংলা মায়ের জন্য তাঁর মজ্জাগত ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। বাংলা মা কখনো দোয়েল পাখি হয়ে তাকে মুগ্ধ করেছেন।কখনো রূপসার ঘোলা জলের মতো তাঁর নয়নের অশ্রু হয়েছেন।তাই তিনি মৃত্যুর পরও এই স্নেহময়ী জননীর কোলে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি; তাই পৃথিবীর রূপ

খুঁজিতে যাই না আর;অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে

চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব'সে আছে

ভোরের দোয়েলপাখি—....'

(বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি)

'আবার আসিবো ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে– এই বাংলায়...'

(আবার আসিবো ফিরে)

শুধু দেশপ্রেম নয় এই বইটি আমাকে আমার চারপাশের,এই মহাবিশ্বের,মহাকাশের সব সৃষ্টিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।চিত্ররূপময়তা সৃষ্টিতে কবিতাগুলো নিরূপম!
মৃত্যু চেতনা,প্রকৃতি চেতনা ও প্রেম চেতনাও সরাগে ফুটে উঠেছে এই বইটিতে।মানবজীবনের চিরায়ত সুখ-দুঃখের সাথে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য,অপ্রকাশিত অশ্রু আর ভালোবাসা মিশিয়ে তিনি যে অনুপম,চিরস্মরণীয় মুহূর্ত আমাকে উপহার দিয়েছেন তা ব্যাখ্যা করবার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

জগতে দুঃখ আছে।কিন্তু সেই দুঃখ মুছে দেওয়ার মতোও অনেকেই আছে।আমি তাদেরই গান গাই।

'পৃথিবীর পথে আমি কেটেছি আঁচড় ঢের,অশ্রু গেছি রেখে:

তবুও ঐ মরালীরা কাশ ধান রোদ ঘাস এসে এসে মুছে দেয় সব।'

(কবিতা:মানুষের ব্যাথা আমি)

আমার এইসব প্রলাপের আদি থাকলেও ইতি টানতে পারছি কিনা তা জানি না। বইটি পড়তে পারেন।গত আড়াই বছর ধরে আমি এই বইটিকে ভালোবাসছি।শুধু মনে হয়–

‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হইয়েও হইলো না শেষ... '

এই বইয়ের কোনো একটা কবিতার কিছু চরণ বলে চলে যাচ্ছি-

'সময়ের হাত থেকে ছুটি পেয়ে স্বপ্নের গোধূলিতে নামি
খড়ের চালের নিচে মুখোমুখি বসে থেকে কতোদিন তুমি আর আমি
ধূসর আলোয় বসে দেখেছি বুঝেছি এইসব... '
Profile Image for Mahfuj Imon.
29 reviews2 followers
March 28, 2022
সুন্দর করুণ পাখা পড়ে আছে — দেখি আমি; — চুপে থেমে থাকি;
আকাশে কমলা রঙ ফুটে ওঠে সন্ধ্যায় — কাকগুলো নীল মনে হয়;
অনেক লোকের ভিড়ে ডুবে যাই — কথা কই — হাতে হাত রাখি;
করুণ বিষন্ন চুলে কার যেন কোথাকার গভীর বিষ্ময়
লুকায়ে রয়েছে বুঝি… নক্ষত্রের নিচে আমি ঘুমাই একাকী;
পেঁচার ধূসর ডানা সারারাত জোনাকির সাথে কথা কয়।

জীবনানন্দ দাশ নিয়ে আগ্রহ পাঠ্যবইয়ে থাকা কবিতাগুলো পড়ে। এই আগ্রহ জন্মেছে একটু একটু করে। জীবনানন্দ দাশের কবিতা বাংলা সাহিত্যে বহুমাত্রা যোগ করেছে সেটা নিয়ে কোনো দ্বিধা নাই ; পঞ্চপান্ডবের অন্যতম যার শাব্দিক ব্যবহারগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। রুপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থে প্রতিটি কাব্যেই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণণায় যেইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদানগুলো ব্যবহার করেছেন তা হয়তো একজন নির্জনতম কবির দৃষ্টিকোণ থেকেই কাব্যে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব৷প্রতিটি কবিতা পড়লেই মনে হবে দীর্ঘ সময় ধরে হয়তো পর্যবেক্ষণ করে তার কাব্যের জগতে তুলে এনেছেন৷সন্ধ্যার আধাঁর, কুয়াশার হিম, নক্ষত্র, মধুকূপী ঘাসসহ আরো অসংখ্য উপাদান তার কাব্যে বিদ্যমান। নক্ষত্রসহ কিছু উপাদানের ব্যবহার আরো বেশ কয়েকটা কাব্যে পাওয়া যায় আর কিছু কাব্য প্যাটার্নের দিক দিয়েও মিল পাওয়া যাবে যেটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে এটাই সম্ভবত উনার কাব্যের সিগনেচার সিম্বল। একটা ব্যাপার না উল্লেখ করলেই না সেটা হচ্ছে কবির শব্দের ব্যবহার নিয়ে ; এ ব্যাপারে বুদ্ধদেব বসুর মতামত - ❝ সংস্কৃত শব্দ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলে শুধু দেশজ শব্দ ব্যবহার করে'ই তিনি কবিতা রচনা করতে চেয়েছেন। ফলে তাঁর diction সম্পূর্ণরূপে তাঁর নিজস্ব বস্তু হয়ে পড়েছে - তার অনুকরণ করাও সহজ বলে মনে হয় না৷ তার নিজের ব্যবহারের জন্য তিনি আলাদা ভাষা তৈরি করে নিতে পেরেছেন, এজন্য তিনি গৌরবের অধিকারী।❞ [১]

একটা প্রবন্ধ কিংবা উপন্যাস একবার পড়ে শেষ করে ফেলবো দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার হয়তো বড়জোর পড়লে আনন্দটা একইরকম থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু একটা ভালো কাব্যগ্রন্থ পড়া যায় অসংখ্যাবার। কবিতা আমার খুবই কম পড়া হয় তাই কাব্যগ্রন্থ তেমন কেনা হয়ে ওঠে না ; জীবনানন্দ দাশের এই কবিতাগুলো হয়তো সন্ধ্যার আধাঁর কিংবা নক্ষত্র নিয়ে ভাবাবে ; নির্জনতায় নিঃসঙ্গতা আমায় প্রকৃতির পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত রাখবে।

[ [১] সৈয়দা আইরিন জামান, ❝নজরুল জীবনানন্দ : কতিপয় ভাষিক প্রবণতা❞, বিমূঢ় বিস্ময়, পৃষ্ঠা ৪৪৪। ]
Profile Image for Nuhash.
221 reviews8 followers
May 12, 2024
বাংলা চরণে মুগ্ধ কবি হেঁটেছিল কলমি ঘ্রাণে! শঙ্খচিলের আবেশে তিনি চেয়েছিলেন জীবিত থাকার অমোঘ বিধানের। পায়ের পাতা গুলো ভিজিয়েছেন নরম ঘাসে! প্রিয়তমার হাতের ছায়াতে কুমড়ো ফুলের সরলতা শান্তির দিয়েছেন তাকে! প্রিয়তমার শাড়ির ছায়া ঘাসে মুগ্ধ করেছেন তার বেঁচে থাকার ইচ্ছে!

"রূপসী বাংলা" বইটি পড়লে হয়ত নিজের মাঝে পৃথিবীকে দেখার নতুন রূপ জাগবে সকলের মাঝে। বৃষ্টির শব্দে মুখরিত বিকেলে বের হয়ে যাবে যুবক যুবতী! পিঙ্গল রঙের শাড়ি পড়ে বের হয়ে যাবে ঘাসের বুকে নিজেকে লুটিয়ে দিতে। কেউ যে কোথাও নেই, নিজের ভালোবাসা আর প্রকৃতি ছাড়া। রোদে যে বৃষ্টি ঝড়বে তেমনি করে সৌন্দর্যের বৃষ্টি হবে প্রেমিকার হাতে ধরা প্রেমিকের প্রেমের কবিতার।

তিনি যে দ্রোহের কথা বলেন! মৃত্যু চেয়ে বারবার আকুতি করেছেন ফিরে আসার। নদীর সন্নিকটে ঘুমের দেশে বসে তিনি আঁকতে চেয়েছেন রায়নী দেবীকে! কে তিনি নিরঞ্জনা নাকি বনলতা?

হেমন্তের মাঠে তিনি দুল খাবেন যেমন করে ধান গুলো বাতাসে নড়ে উঠে। তার নিস্তব্ধ চাওয়া পাওয়া চিরসবুজ এই বাংলার বুকে মেঘের মউরি।

তিনি তো বাংলার রূপ দেখেছেন, পৃথিবীর রুপ কেমন করে তার দেখতে ইচ্ছে করবে! তিনি যে প্রিয়তমাকে বিদায় দিয়েছেন শুধু বাংলার বুকে আবার আসবে বলে! তার মুগ্ধতা রাত্রির আকাশে রাখি পূর্ণিমার মতো।

এই বই যে তাহার চির প্রেম। তার যৌবনের বাংলার ভালোবাসা। তিনি যে কবি নন, তিনি যে পুঁইশাকের ডাঁটা হতে চেয়েছেন। খয়েরী রঙের শালিক হতে চেয়েছেন বারে বার।
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
March 25, 2024
"পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু;জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।"

"সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি
এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
আমি চ'লে যাব ব'লে
চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!"

"তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও — আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে-একবার — দুইবার — তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ — শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে। "

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে।"

বসে থাকি; কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতাে
গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে—আসিয়াছে শান্ত অনুগত
বাংলার নীল সন্ধ্যা—কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;
আমার চোখের পরে আমার মুখের 'পরে চুল তার ভাসে;
পৃথিবীর কোনাে পথ এ কন্যারে দেখে নি কো—দেখি নাই অত
অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত,
জানি নাই এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে

"পৃথিবীর কোনাে পথে : নরম ধানের গন্ধ—কলমীর ঘ্রাণ,
হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদ-সরপুঁটিদের
মৃদু ঘ্রাণ, কিশােরীর চালধােয়া ভিজে হাত—শীত হাতখান,
কিশােরের পায়ে- দলা মুথাঘাস—লাল লাল বটের ফলের
ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা—এরই মাঝে বাংলার প্রাণ;
আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি পাই টের।"

"যেদিন সরিয়া যাব তোমাদের কাছ থেকে – দূর কুয়াশায়চ’লে যাবো, সেদিন মরণ এসে অন্ধকারে আমার শরীরভিক্ষা ক’রে লয়ে যাবে;- সেদিন দু’দও এই বাংলার তীর —এই নীল বাংলার তীরে শুয়ে একা একা কি ভাবিব, হায়;-সেদিন র’বে না কোনো ক্ষোভ মনে –এই সোঁদা ঘাসের ধুলায়জীবন যে কাটিয়াছে বাংলায় – চারিদিকে বাঙালীর ভিড়বহুদিন কীর্তন ভাসান গান রুপকথা যাত্রা পাঁচালীরনরম নিবিড় ছন্দে যারা আজো শ্রাবণের জীবণের জীবন গোঙায়,
আমারে দিয়াছে তৃপ্তি।"

"আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁল-ছায়ায়।"

"হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা বায়।"

"মনে হয় একদিন আকাশে শুকতারা দেখিব না আর ;
দেখিব না হেলেঞ্চার ঝোপ থেকে একঝাড় জোনাকি কখন
নিভে যায় – দেখিব না আর আমি এই পরিচিত বাঁশবন ,
শুঁকনো বাঁশের পাতা -ছাওয়া মাটি হয়ে যাবে গভীর আঁধার
আমার চোখের কাছে।"

"যে শালিখ মরে যায় কুয়াশায়-সে তো আর ফিরে নাহি আসে:
কাঞ্চনমালা যে কবে ঝরে গেছে;-বনে আজো কলমীর ফুল
ফুটে যায়-সে তবু ফেরে না, হায়_ বিশালাক্ষি : সে-ও তো রাতুল চরণ মুছিয়া নিয়া চ'লে গেছে।"

"কোথাও চলিয়া যাব একদিন-তারপর রাত্রির আকাশ
অসংখ্য নক্ষত্র নিয়ে ঘুরে যাবে কতকাল ���ানিব না আমি;
জানিব না কাল উঠানে ঝরিবে এই হলুদ বাদামি
পাতাগুলো-মাদারের ডুমুরের- সোঁদা গন্ধ- বাংলার শ্বাস
বুকে নিয়ে তাহাদের।"

"খুঁজে তারে মরো মিছে — পাড়াগাঁর পথে তারে পাবে নাকো আর।"

"এত দিনে কোথায় সে? কি যে হলো তার
কোথায় সে নিয়ে গেছে সঙ্গে করে সেই নদী, ক্ষেত, মাঠ, ঘাস,
সেই দিন, সেই রাত্রি, সেই সব ম্নান চুল, ভিজে শাদা হাত
সেইসব নোনা গাছ, করমচা, শামুক গুগলি, কচি তালশাসঁ
সেইসব ভিজে ধুলো, বেলকুড়ি ছাওয়া পথ, ধোয়া ওঠা ভাত,
কোথায় গিয়েছে সব?"

"এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে—সবচেয়ে সুন্দর করুণ :
সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;
সেখানে গাছের নামঃ কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।"

"এ-বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে
তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকো—বিশালাক্ষী দিয়েছিলো বর
তাই সে জন্মিছে নীল বাংলার ঘাস আর ধানের ভিতর।"

"এই ডাঙা ছেড়ে হায় রূপ কে খুঁজিতে যায় পৃথিবীর পথে।
বটের শ‍ুকনো পাতা যেন এক যুগান্তের গল্প ডেকে আনে:
ছড়ায়ে র’য়েছে তারা প্রান্তরের পথে পথে নির্জন অঘ্রাণে।"

"একদিন আমি যাব দু-প্রহরে সেই দূর প্রান্তরের কাছে,
সেখানে মানুষ কেউ যায় নাকে — দেখা যায় বাঘিনীর ডোরাবেতের বনের ফাঁকে — জারুল গাছের তলে রৌদ্র পোহায়রূপসী মৃগীর মুখ দেখা যায়, — শাদা ভাঁট পুষ্পের তোড়াআলোকতার পাশে গন্ধ ঢালে দ্রোণফু বাসকের গায়।"

"এখানে ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্নে শান্তি আসে মানুষের মনে;
এখানে সবুজ শাখা আঁকাবাঁকা হলুদ পাখিরে রাখে ঢেকে;
জামের আড়ালে সেই বউকথাকওটিরে যদি ফেল দেখে
একবার — একবার দু’পহর অপরাহ্নে যদি এই ঘুঘুর গুঞ্জনে
ধরা দাও — তাহলে অনন্তকাল থাকিতে যে হবে এই বনে।"

"সোনার খাঁচার বুকে রহিব না আমি আর শুকের মতন;
কি গল্প শুনিতে চাও তোমরা আমার কাছে — কোন্‌ কোন্‌ গান, বলো,
তাহলে এ — দেউলের খিলানের গল্প ছেড়ে চলো, উড়ে চলো, —
যেখানে গভীর ভোরে নোনাফল পাকিয়াছে, — আছে আতাবন।"

"কতদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে মিলিয়াছি আমরা দুজনে;
আকাশ প্রদীপ জ্বেলে তখন কাহারা যেন কার্তিকের মাস
সাজায়েছে, — মাঠ থেকে গাজন গানের স্নান ধোঁয়াটে উচ্ছ্বাস
ভেসে আসে; ডানা তুলে সাপমাসী উড়ে যায় আপনার মনে
আকন্দ বনের দিকে।"

"অশ্বত্থ বটের পথে অনেক হয়েছি আমি তোমাদের সাথী;
ছড়ায়েছি খই ধান বহুদিন উঠানের শালিখের তরে।"

"আজ আমি ক্লান্ত চোখে ব্যবহৃত জীবনের ধুলোয় কাঁটায়
চলে গেছে বহু দূরে; — দেখোনিকে, বোঝানিকো, করনিকো মানা
রূপসী শঙ্খের কৌটা তুমি যে গো প্রাণহীন — পানের বাটায়।"

"সান্ত্বনার কথা নিয়ে কারা কাছে আসে—
ধূসর কড়ির মতো হাতগুলো—নগ্ন হাত সন্ধ্যার বাতাসে
দেখা যায়; হলুদ ঘাসের কাছে মরা হিম প্রজাপতিটির

সুন্দর করুণ পাখা প’ড়ে আছে—দেখি আমি; চুপে থেমে থাকি।"

"মানুষের ব্যথা আমি পেয়ে গেছি পৃথিবীর পথে এসে—হাসির আস্বাদ
পেয়ে গেছি; দেখেছি আকাশে দূরে কড়ির মতন শাদা মেঘের পাহাড়ে
সূর্যের রাঙা ঘোড়া: পক্ষিরাজের মতো কমলারঙের পাখা ঝাড়ে
রাতের কুয়াশা ছিঁড়ে।"

"আমাদের রূঢ় কথা শুনে তুমি সরে যাও আরো দূরে বুঝি নীলাকাশ;
তোমার অনন্ত নীল সোনালি ভোমরা নিয়ে কোনো দূর শান্তির ভিতরে

ডুবে যাবে?"

"এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি — আমি হৃষ্ট কবি
আমি এক; — ধুয়েছি আমার দেহ অন্ধকারে একা একা সমুদ্রের জলে;
ভালোবাসিয়াছি আমি রাঙা রোদ, ক্ষান্ত কার্তিকের মাঠে — ঘাসের আঁচলে
ফড়িঙের মতো আমি বেড়ায়েছি — দেখেছি কিশোরী এস হলুদ করবী
ছিঁড়ে নেয় — বুকে তার লাল পেড়ে ভিজে শাড়ি করুন শঙ্খের মতো ছবি
ফুটাতেছে — ভোরের আকাশখানা রাজহাস ভরে গেছে নব কোলাহলে
নব নব সূচনার।"

"কোনোদিন দেখিব না তারে আমি; হেমন্তে পাকিবে ধান, আষাঢ়ের রাতে
কালো মেঘ নিঙড়ায়ে সবুজ বাঁশের বন গেয়ে যাবে উচ্ছ্বাসের গান
সারারাত,—তবু আমি সাপচরা অন্ধ পথে—বেণুবনে তাহার সন্ধান
পাব নাকো।"
Displaying 1 - 30 of 48 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.