What do you think?
Rate this book


Hardcover
First published January 1, 1957
একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি;
হৃদয়ের পথ-চলা শেষ হলো সেই দিন।
যদিও এখন গ্রাম-বাংলা আর আগের মতো নেই; ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে সব। অনেক গ্রামের কাঁচামাটির রাস্তায় পিচ ঢালা হয়েছে। ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ আর চাল গুঁড়ো করার শব্দও খুব একটা পাওয়া যায় না। আগের সেই রূপ হয়তো নেই, তবুও কিছুটা তো আছে! আর এই ক্ষয় হয়ে যাওয়া রূপের সাথে আমাদের আছে রূপসী বাংলা নামক বাংলার রূপের জীবন্ত পান্ডুলিপি। গাঁয়ের বধূর ভেজা চুল থেকে শুরু করে মধুকূপী ঘাস- কিছুই বাদ যায় নি ^_^
ভাগ্যিস লেখক শাহাদুজ্জামানের একজন কমলালেবু আমাদের ছিলেন! এই শুদ্ধতম নির্জনতার কবি সাহেব ছিলেন! নইলে তো গ্রাম বাংলার সেই অপরূপ রূপ পুনরায় দেখার ইচ্ছা আমাকে জীবনভর জ্বালিয়ে মারতো!
সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকার ঘাসের উপর
সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের পর-
শঙ্খমালা নাম তার : এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে
তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকো-বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর
তাই-সে-জন্মেছে নীল বাংলার ঘাস আর ধানের ভিতর।
মৃত্যুরে কে মনে রাখে কীর্তিনাশা খুঁড়ে খুঁড়ে চলে বারো মাস
নতুন ডাঙার দিকে – পিছনের অবিরল মৃত চর বিনা
দিন তার কেটে যায় – শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ ??
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হ'য়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হবো— কিশোরীর— ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল — বট — তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলার একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে —
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চরায় —
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়।