Buddhadeb Guha (Bengali: বুদ্ধদেব গুহ) is a popular Bengali fiction writer. He studied at the well-known St Xavier's College of the University of Calcutta.
His novels and short stories are characterized by their dreamy abstractness and romantic appeal. His essays reveal the soul of a true wanderer providing some of the most beautiful renditions of travel in Bengal. His love for forests and nature provide the background for many of his novels.
A highly successful chartered accountant by profession, and an accomplished musician, Guha is very urbane in his lifestyle. He was one of the first to create characters representing easy-going, upper middle-class modern Bengali families, whom readers could identify with, and that gave him instant popularity.
He is the recipient of many awards including Ananda Puraskar, 1976; Shiromani Puraskar; and Sharat Puraskar.
The Library of Congress has over fifty titles by him. His most famous novel, according to many, is Madhukori. It is considered a milestone in Bengali literature. He is also the creator of Rijuda, an imaginary character who moves about in jungles with his sidekick Rudra. The jungles that he wrote about were mainly in Eastern India.
আজ ভোরে খবরটা পেলাম। যে বইয়ের রিভিউ করিনি, সেটাই করতে বসলাম তারপর। কী করব? বই দিয়ে ছাড়া আর কীভাবেই বা ছোঁব একজন সাহিত্যিককে? তাই এটিই আমার শেষ নমস্কার। এ এক প্রেমের উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের তো বটেই, হয়তো আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম প্রেমের উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। অথচ এর মতো শীর্ণকায় বই উপন্যাস হিসেবেই বোধহয় বিবেচিত হবে না! কী নিয়ে লেখা হয়েছে এই বই? একটি পুরুষ ও এক নারীর অন্তর্দ্বন্দ্ব— এটিই এই কাহিনির উপজীব্য। এই বিষয় নিয়ে লেখা লক্ষ-লক্ষ গল্প আর উপন্যাস আছে বাংলায়। তাহলে কীসের জোরে বিশিষ্ট হয়ে ওঠে এটি? কারণ চাওয়া আর পাওয়ার মাঝের রহস্যময় অথচ ঘোর বাস্তব শূন্যতার সবক'টি প্রভেদ ধরা পড়েছে এই উপন্যাসে। আছে দ্বিধা, লোভ, আকর্ষণ, বিকর্ষণ, অসূয়া, ঘৃণা, সমর্পণ... শেষে আছে অপ্রাপ্তি। তার চেয়েও বড়ো কথা কী জানেন? এর সবটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভীষণরকম ন্যাকামি-বর্জিত আধুনিক ভাষায়। পদাবলি বা রবীন্দ্রনাথের ভরসায় থাকেননি লেখক। বরং এই সময়ের এক নারী ও এক পুরুষের আধুনিক মন ও দৃষ্টিকে তিনি পেশ করেছেন ঝকঝকে স্মার্ট ভাষায়। অথচ শব্দ-চয়নের দক্ষতায় সেই ভাষাতেই তৈরি হয়েছে এক কুহক— যেখানে অন্তে বসন্ত পীত হবে জেনেও সবুজ মন বুঁদ হয়ে যেতে চায়। উপন্যাসটি ঠিক বিয়োগান্তক নয়। বরং এর কাহিনি কোথাও গিয়ে শেষ হয় না। বরং মনে হয়, দীর্ঘ সাহচর্যের পরেও নয়না'র সমান্তরালে থাকতে পারেনি কাহিনির কথক। সে সরে গেছে দূরে, বহু দূরে। গল্পটা শেষ হয় মন-ভার-করা একরাশ দুঃখ আর হতাশা নিয়ে। আমি এতকাল এই বই নিয়ে কিছু লিখিনি, তার অন্যতম কারণ এটি। আর অন্য কারণটি হল... আম্বালা এয়ারফোর্স বেসের নিস্তরঙ্গ বিকেলগুলো এক মহিলা রোদ্দুর পিঠে নিয়ে এই বইটি পড়ে কাটাতেন। অভাগা কথক ঋজু'র চরিত্রটি তাঁকে বড়ো বেশি আকর্ষণ করেছিল। হয়তো মেয়েরা অমন কাউকে পেতে চায় চোখের আড়ালে; বা তিনি হয়তো মানুষটিকে করুণা করেছিলেন। মোদ্দা কথা, তিনি ঠিক করেছিলেন, যদি তাঁর সন্তান ছেলে হয়, তাহলে তাঁর নাম হবে ওই চরিত্রের নামেই। সেই নাম এই চির বেরসিক আমি আজও বহন করে চলেছি! কথাটা লেখকের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেও ফেলেছিলাম। তিনি হেসেছিলেন। ওই হাসিটাই মনে রেখে দেব। ওতেই আমার বসন্ত ধরা থাক।
বইটি পড়েছি আজ বেশ কয়েকদিন হলো। কিছু গুছিয়ে লেখার তাগিদ বা তারণা, অনুভব করছি না। বইটি কি তবে ভালো লাগে নি? শুনলে আশ্চর্য হবেন, বুদ্ধদেব গুহ-র লেখা আজ অবধি যত কিছু পড়েছি, সবচেয়ে পছন্দের হয়তো এটাই হয়ে রইবে। তবে কেন এই দ্বৈততা? ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না। হয়তো, এমন একটি বইকে স্রেফ আরেকটি ক্লাসিক ভালোবাসার গল্প বলে দাগিয়ে দিতে মন চাইছে না। মন বলছে, বইটি আসলেই একটি বিভ্রান্তিকর উলট-পুরান। প্রেমের চেয়ে বেশি, একটি অপ্রেমের গল্প।
বইটির স্বল্প কলেবরে মাথাচাড়া দেয়, ভালোবাসা ও ভালোলাগার এক অপরিণত সন্ধি বিভাজন। অযাচিত প্রেমের খোঁজে, এক অতি রোমান্টিক যুবকের যাবতীয় বাসনার, ভারসাম্যহীন উপহাস! তাই যেন লেখক নিজেও নিজের প্রতি রাশ টেনে ধরেন না। বইয়ের পাতায় পাতায় ভরিয়ে দেন, মানব-মনের তীব্র অসুয়া। যা কোথাও করুণ আবার কোথাও হিংস্র! কামনা ও সমর্পণের এই অন্তর্দ্বন্দ্বে, নিজের একচেটিয়া স্বভাবে, মিশিয়ে দেন প্রকৃতির লাগামহীন সৌন্দর্য্য। ঠিক যেইভাবে কেবল বুদ্ধদেব গুহই পারেন। কোথাও গিয়ে তাই গদ্যজুড়ে দেখা মেলে কবিতার পরশ। আবার কোথাও গিয়ে অতি আবেগের বেড়াজালে গল্পের স্রোত বিভ্রান্ত, অনেকাংশে নাটকীয়।
এই বই তাই যেন লেখকের পাগলামো। তার উদ্দাম কলমে ভর করে স্বীকার করে যাওয়া, হেরে যাওয়ায় আসলে কোনো গৌরব নেই। তা হোক না সে কোনো বর্ষাকালীন মেঘময় সকালে, এক চিলতে রোদের খোঁজেই। ক্ষনিকের সুখে আরাম থাকতে পারে, তবে প্রশান্তি আছে কি? তবুও গল্প লেখা হয়। লেখা হয় শত সহস্র কাব্য-কবিতা। ভালোবাসাও হয়তো বা সবসময় যুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় না।
জানি না, সেই অবাক করা হলুদ বসন্ত পাখিরা এখন কোথায় আছে বা কি করছে। তবে হয়তো, প্রকৃতির অমোঘ খেয়ালে, আমাদের ভীষণ চেনা চাতক পাখিরা থেকেই যাবে। সময়ের ওপারে, আকাশপানে চেয়ে।
সাধে কি আর নব্বইয়ের দশকে বসে, কবীর সুমন লেখেন,
'এক ফালি মেঘ, এক ফোঁটা জল রংধনুকের একটি কণায় একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা। একটি ঘাসের একটু সবুজ একটু মাটি রং মিশিয়ে দু’চোখ দিয়ে আঁকছি ছবি স্বপ্ন দেখছি তোমায় নিয়ে?'
রোমান্টিক ধাঁচের উপন্যাস আমার মাথায় ঠিকমতো ঢোকে না (পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা এবং রোমান্টিক পড়ার চেষ্টাও করি না)। তবে বুদ্ধদেব গুহ'র লেখার ভেতর এমন কিছু একটা আছে যা গল্পের মূল রোমান্টিকতাকে ছাপিয়ে অনন্য এক রূপে হাজির হয়। প্রকৃতির অসম্ভব সুন্দর বর্ণণা আর ক্ষেত্রবিশেষে চমৎকার রূপকাশ্রিত শব্দের গাঁথুনি ব্যবহার- এই সিগনেচার স্টাইলের জন্যই তাঁর লেখা পছন্দ করি।
হলুদ বসন্ত বুদ্ধদেব গুহ'র বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলোর একটি, ১৯৭৬ সালে আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত। অল্প কথায় বলতে গেলে, ঋজু নামের এক যুবকের নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছোট বোন নয়নার প্রেমে পড়াকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে মাত্র নব্বই পৃষ্ঠার বইটার কাহিনি। তবে বৃহৎ পরিসরে ছক কেটে আলাপ করতে গেলে, হলুদ বসন্তকে নিছক প্রেমের উপখ্যান বলা যাবে না কিছুতেই। হৃদয়ের অনুভূতি, অনিশ্চয়তা, মস্তিষ্কের যুক্তির টানাপোড়েন, হিংসা, ক্রোধ, নিজের কাছে নিজে হেরে যাওয়া, ছলকলা-কত ধরণের মানসিক প্রবৃত্তি একই সাথে উঠে এসেছে এই বইয়ের পাতায়। যদিও পুরো গল্প জুড়ে নয়না আর ঋজুর মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বটাই মূল উপজীব্য।
তাই হয়তো শেষপর্যন্ত 'রাজ-জীবনের' আমন্ত্রণ পেয়েও ঋজুকে পিছপা হয়ে যেতে হয়! রাজ্য হাতে পেয়ে আবার যদি সে ভিখিরির আচরণ শুরু করে, সেই ভয়ই তাকে নিবৃত্ত করে রাখে। আর শুরু থেকেই নয়না আদৌ কী চাইতো, তার এহেন আচরণের কারণই বা কী- সে ব্যাপারটা স্পষ্ট নয়। শঙ্খ ঘোষের কবিতার ভাষায় বলতে গেলে-
"হাতের ওপর হাত রাখা সহজ নয়, সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়। এ কথাটা খুব সহজ কিন্তু কে না জানে সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়।"
বই থেকে পছন্দের কিছু লাইন উদ্ধৃতি দিচ্ছি -
- ভাল লাগা আর ভালবাসার পার্থক্যটা কোথায়? ভাল লাগলে মানুষ সেই ভাল-লাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনও নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালবাসা তাকে যা বলে, পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।
- তারপর একটি একটি করে বুড়ি বছরগুলি হাওয়ার সওয়ার হয়ে নিমগাছের পাতার মতো ঝরে গেছে। দুপুরের ক্লান্ত কাকের মতো কা-খবা--কা-খবা করে প্রথম যৌবনের দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। বেগুনি প্যাশন ফ্লাওয়ারের মতো সুগন্ধি স্বপ্ন দেখেছি এবং একদিন এক জিয়াভরলি ভোরে আবিষ্কার করেছি যে, নয়না আর আমার কাছে সুজয়ের বোন মাত্র নয়। সে আমার অজানিতে আমার নয়ন মণি হয়ে উঠেছে। ঠিক কোন সময় থেকে সে আমার মনে, অনবধানে, একটি কৃষ্ণসার হরিণীর মতো সুন্দরী, কাকাতুয়ার মতো কোমল এবং মৌটুসি পাখির মতো সোহাগী হয়ে উঠেছে তা বুঝতে পারিনি। সেই ভোরে, হঠাৎ দরজা খুলেই মনের উঠোনে পত্রপল্লব বিস্তার করা রঙিন কৃষ্ণচুড়ার মতো তার মঞ্জুরিত ব্যক্তিত্বকে অনুভব করে আমার সমস্ত সত্তায় শিরশিরানি জেগেছে।
- ওর সঙ্গে দেখা হলেই ভিতরের ভিখিরিটা রাজার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে হাঁটু গেড়ে বসে ভিক্ষা চাইবেই। এই ভালো। দেখা না হওয়াই ভাল। কথা না হওয়াই ভাল! তার চেয়ে লোভগুলি আমার বুকের ভিতরেই ঘুমিয়ে থাকুক অথবা বুকের ভিতরেই ঘুম ভেঙে উঠে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে ক্যান্সারের মতো কুরে কুরে খেয়ে ফেলুক।
এই ভালো।দেখা না হওয়াই ভালো,কথা না হওয়াই ভালো। তার চেয়ে আমার দুরন্ত লোভগুলি আমার বুকের ভিতরেই ঘুমিয়ে থাকুক অথবা বুকের ভিতরেই ঘুম ভেঙে উঠে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে ক্যান্সারের মতো কুরে কুরে খেয়ে ফেলুক, তবু আমার "ও" সুখে থাকুক,খুশি থাকুক। আমার অশেষ আর্তি তার সুখকে কোনোওদিন যেন বিঘ্নিত না করে।
বইটা বেশ সুন্দর আর গোছানো ছিল। আর ঋজু,আমি জানি চিঠি না পাওয়ার যন্ত্রণা কত বেদনাদায়ক। তুমি যেমন অনুক্ষণ,অনুক্ষণ নয়নার কথা ভাবো,কিন্তু নয়না তোমাকে ভালোবাসেনা। আমিও হয়তোবা কারোর কথা এভাবে ভেবে থাকি। আচ্ছা এরকম মানুষগুলোকে ভালোবাসতেও তো ভাগ্য লাগে তাইনা? আমার তো মনে হয় আমরা বেশ ভাগ্য নিয়ে জন্মিয়েছি। নাহয় এতো উঁচুদরের মানুষদের কিভাবে আমরা নিঃস্বার্থভেবে ভালোবেসেই যাচ্ছি। আহ গানের কথাগুলো আসলেই অনেক সুন্দর। কী যেন ছিল- Nothing comes from nothing, Nothing ever could In my youth Or in my childhood: I must have done something good....
বেশ কয়েক দিনের অস্বস্তিকর গরমের পর এক মধ্যরাতে যখন বৃষ্টি শুরু হলো তখন জানালার পাশে বসে এ বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। পড়তে এত ভালো লাগছিল যে এক বসাতে এক-তৃতীয়াংশের বেশি পড়ে ফেলেছিলাম। পরের দিন যখন আবার শুরু করলাম তখন আর ভালোলাগাটা এত তীব্র তো ছিলই না, বরং মাঝেমধ্যেই বিরক্ত হচ্ছিলাম, ন্যাকা ন্যাকা লাগছিল অনেক কিছু। রেখে দিয়েছিলাম তখনই। তারপর একটু-আধটু করে পড়ে আজ প্রায় ১০ দিনে শেষ করলাম।
অনেক দিন হয়ে গেলেও বুদ্ধদেব গুহ’র ‘মাধুকরী’র স্বাদ ভুলতে পারিনি আজও। ‘মাধুকরী’র পর উনার যে ক’টা বই পড়েছি কোনোটাই আমাকে সন্তুষ্ট করতে না পারা সত্ত্বেও জানি যে ‘মাধুকরী’র স্বাদের খোঁজে বদ্ধদেব গুহ’র কাছে ফিরে আসব আবারও।
ইহা একটি রোমান্টিক ধাঁচের উপন্যাস, যা এমনিতে আমার ভালো লাগে না, কিন্তু এটা পড়া শুরু করে প্রথমেই ভালো লেগে গেছে। লেখক এখানে রোমান্টিকতার বাইরেও আরো অনেক কিছু গেঁথে রেখেছেন। এতো সুন্দর করে বুদ্ধদেব গুহ সব কিছুর সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন, যেসব উপমা দিয়ে তুলে ধরেছেন তাতে ভালো না লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু মাঝখানটায় ঋজুদাকে কেমন একটু বেশিই গায়ে পড়া অসহ্য ব্যক্তির মতো লাগছিল, তবে লেখক সে অসহ্য জিনিসটাকে এগোতে দেন নি,সাবলীলভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বর্ণনা দিয়ে আবার মনঃপূত করে গল্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন, শুরু এবং শেষ দুটোই মন মতো হয়েছে। সুন্দর! মন ভার হওয়া সুন্দর! ''সুখ নেইকো মনে নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে হলুদ বনে বনে।''
.....এই ভালাে। দেখা না হওয়াই ভালাে। কথা না হওয়াই ভালাে। তার চেয়ে আমার দূরন্ত লােভগুলি আমার বুকের ভেতরেই ঘুমিয়ে থাকুক অথবা বুকের ভিতরেই ঘুম-ভেঙে উঠে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে ক্যান্সারের মতাে কুরে কুরে খেয়ে ফেলুক; তবু নয়না আমার সুখে থাকুক, খুশি থাকুক। আমার অশেষ আর্তি তার সুখকে কোনদিনও যেন বিঘ্নিত না করে।
🔸বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেমের গল্পের ঠিক কি প্রতিক্রিয়া লেখা যায়? ক্ষুদ্র পরিসরে লেখা এই উপন্যাসটির প্রতিটি পাতা জুড়ে অজস্র মনিমুক্তো ছড়ানো রয়েছে, যা পড়ে মনের মধ্যে শুধুই মুগ্ধতার রেশ রয়ে যায় । ১৯৭৬ সালে আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত এই ছোট উপন্যাসটির গল্প এগিয়েছে - ঋজু নামের এক যুবকের নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছােট বোন নয়নার প্রেমে পড়াকে কেন্দ্র করে । তবে ‘হলুদ বসন্ত’কে নিছক প্রেমের উপখ্যান বলা যাবে না কিছুতেই। হৃদয়ের অনুভূতি, অনিশ্চয়তা, মস্তিষ্কের যুক্তির টানাপােড়েন, হিংসা, ক্রোধ, নিজের কাছে নিজে হেরে যাওয়া, ছলকলা-কত ধরণের মানসিক প্রবৃত্তি একই সাথে উঠে এসেছে এই বইয়ের পাতায়। পুরাে গল্প জুড়ে ঋজুর মনস্তত্ব এবং চিন্তাভাবনাই উপন্যাসটির মূল উপজীব্য । প্রেমিক মনের অনুভূতির এইরকম চমৎকার বিশ্লেষণ আমি আর কোনও বইতে পড়েছি আমার মনে পড়ে না ।
🔸বই থেকে অন্যতম পছন্দের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি দিচ্ছি -
.....ভালোলাগা আর ভালবাসার পার্থক্যটা কোথায়? ভাল লাগলে মানুষ সেই ভাললাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনও নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালবাসা তাকে যা বলে, পােষা পুষ্যির মতাে সে তাই করে।
“জানো নয়না, ছোটবেলা থেকে জনারণ্যের মুখ চেয়ে বড় হইনি— আজও মাত্র একজন দুজনের দাক্ষিণ্যে বেঁচে আছি— যা কিছু করার করছি— তাই তাদের মধ্যে যখন কেউ ফাঁকি দেয়, তখন অন্ধের মত দিশাহারা হয়ে পড়ি— পথ দেখতে পাই না। কী করবো বুঝতে পারিনা। বুঝলে?”— . এই একটা ছোট্ট লাইন খুব মনে ধরেছে। বুদ্ধদেব গুহ এর 'হলুদ বসন্ত' কে যদি শুধু ছোট্ট একটি প্রেমের গল্প বলি তাহলে হয়তো ভুল বলা হবে। প্রেমের সাথে সাথে বর্তমান কলকাতার মডার্ন বাঙালির জীবনযাত্রার কিছু প্রাঞ্জল ছবি আমরা দেখতে পাই। অনেক জায়গায় আবার প্রকৃতির সুন্দর বর্ণনাও রয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় ঋজু এবং নায়নাকে। যেখানে ঋজু নয়নাকে আপ্রাণ ভালোবাসে কিন্তু নয়না, সে কি বুঝেও বুঝতে চায় না? . লেখায় যে ব্যাপারটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটি হল লেখক খুব কৌশলাতার সঙ্গে প্রধান চরিত্র ঋজু এর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। পাঠক যখন চরিত্রের মাথায় ঢুকে তার দৃষ্টিকোণ কে উপলব্ধি করতে পারে, চরিত্র কি বলতে চাইছে বুঝতে পারে তখন বই পড়ার আনন্দ এবং উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সেই ব্যাপারটি ঘটেছে এই বইটির সাথে। তবে কোথাও কোথাও মনে হয়েছে 'নয়ন' চরিত্রটিকে লেখক আরেকটু ডেভেলপ করতে পারতেন। গল্পের শেষে গল্পটি একটি ছোট ব্যথা আর কিছুটা কৌতুহল দিয়ে যায়। হয়তো 'ক্লোজড এন্ডিং' হলে কিছুটা খুশি হতাম কিন্তু এই গল্পের সাথে এরকম 'ওপেন এন্ডিং'ই শ্রেয়।
অনেকদিন পর কোনো পুরোনো চেনা জায়গায় ঘুরে আবার সেখানে শেষবার তাকিয়ে ফেরার রাস্তা ধরায় যে মিশ্র অনুভূতিটা আছে সেরকমই একটা কিছু মনে হল বইটা পড়ে।
কি জানি কেন বইটা পড়তে পড়তে কখন ঋজু হয়ে গিয়েছিলাম জানিনা। ঋজু ভা���োবাসার কাঙাল মাত্র। নয়নার জন্য নিজের সবকিছু হারাতে হলেও সে একমুহুর্তের জন্য কিছু চিন্তা করবেনা। কিন্তু নয়নার থেকে সে কি ভিক্ষা করবে সে জানেনা। কোনোওসময় ঋজু নয়নার চোখে চোখ রেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায় আবার কোনোসময় সে নয়নাকে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠা করে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে চায় আবার কখনও নয়নাকে নীতিশের সাথে দেখে দুজনকেই গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে চায়। যতটাই অগোছালো ঋজু নিজের কাছে ঠিক ততটাই রহস্যময়ী নয়না।
ঋজুর পাহাড়প্রমাণ ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ, রাগ, হাসি-কান্না সবই যে নয়নাকেন্দ্রিক এসবই হয়তো নয়না বুঝতে পেরেও বুঝে উঠতে পারেনা। আবার পারলেও কি করবে ভেবে পায়না। এই উপন্যাস পড়ে দীর্ঘশ্বাসই ফেলবে সবাই এবং কোথাও কোনও ভাবনায় কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাবেই। এখানেই এর সার্থকতা। বুদ্ধদেব গুহর পড়া এ আমার প্রথম লেখা। এবং গুডরিডসেও প্রথম সেভাবে লেখা। আজকের পৃথিবীতে ঋজুর মত কাউকে এত তীব্র ভালোবাসতে খুব কম লোকই পারে এবং তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় নিয়েও বেঁচে থাকার সাহস দেখায়।
বন্ধুর বলপূর্বক প্রচেষ্টায় প্রায় এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম বটে কিন্তু এবার কেমন যেন লাগছে। এই অস্বস্তিতেও একটা ভালোলাগা আছে। পারলে পড়ে ফেলুন।
'যে টাকায় নয়নাকে শাড়ি কিনে দিলাম, সে টাকায় আমার একটি ভাল টেরিলিনের সুট হত। কিন্তু বিনিময়ে এ যে আমার কত বড় পাওয়া হল আমিই জানি। নয়না যেদিন পূজোর মধ্যে ওই শাড়িটি পরে আমার সঙ্গে দেখা করবে, ওই শাড়িটি পরে যখন হাসি হাসি মুখে আমার দিকে চাইবে, তখন আমি দশ দশটি টেরিলিনের সুট-প্রাপ্তি আনন্দ পাব। সব আনন্দের মাপ কি একই কাঁটায় হয়? এ আনন্দ অন্য আনন্দ, উদার আনন্দ। মহৎ আনন্দ।'
আমি ঋজুকে নানা কারণে হিংসে করি। ওর মত ভাগ্যবানই বা কটা আছে!?
এই ভালো। দেখা না হওয়াই ভালো। কথা না হওয়াই ভালো। তার চেয়ে আমার দূরন্ত লোভগুলি আমার বুকের ভেতরেই ঘুমিয়ে থাকুক অথবা বুকের ভিতরেই ঘুম-ভেঙে উঠে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে ক্যান্সারের মতো কুরে কুরে খেয়ে ফেলুক; তবু সে সুখে থাকুক, খুশি থাকুক। আমার অশেষ আর্তি তার সুখকে কোনদিনও যেন বিঘ্নিত না করে।
" নয়নাকে যে শাড়ি আমি দেবো সে তো নিছক শাড়ি মাত্র নয়। তা আমার ভালোবাসার সুতো দিয়ে বোনা, তাতে যে আমার দুঃখের পাড় বসানো - সে শাড়ির আঁচলার জরিতে যে আমার অবুঝ চাওয়া শরতের আলোয় জ্বলবে।সে শাড়ির সমস্ত মসৃণতায় আমি যে আমার নয়নাসোনার সমস্ত শরীরে মিশে থাকবো --- ছড়িয়ে থাকবো।আমি যে জড়িয়ে থাকবো। "
- ভাল লাগা আর ভালবাসার পার্থক্যটা কোথায়? ভাল লাগলে মানুষ সেই ভাল-লাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে, কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। তার নিজের কোনও নিজস্ব সত্তা থাকে না। ভালবাসা তাকে যা বলে, পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।
বেশী বড় গল্প নয়। কিন্ত এই কম পৃষ্ঠার মধ্যেই গুহ সাহেব ভালোবাসার বিভিন্ন স্বরূপ অনিশ্চয়তা,ক্রোধ, সুখ ,দুঃখ ,মান ,অভিমান সব ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক ।
কাহিনি সংক্ষেপ : বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম, তবে একতরফা প্রেম, এই নিয়ে গল্প। নায়ক (ঋজু বোস, পেশায় - ইঞ্জিনিয়ার)- নায়িকার ( নয়না) টেলিফোনে কথোপকথন দিয়ে গল্পের শুরু। ঋজু সাধারণ দেখতে একটি ছেলে যে কিনা তার এক কাছের বন্ধুর বোনের প্রেমে পড়ে। নানা ভাবেই সে তার মনের ভাব প্রকাশ করে নয়নার কাছে, কিন্তু নয়না সেসব কথায় পাত্তাই দেয় না। ঋজু তাও সারাদিন নয়নার ভাবনায় মগ্ন হয়ে থাকে, নয়নাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে,যদিও জানে তা হয়ত ভেঙে যাবে, নয়না তাকে শুধু দাদার চোখেই দেখে তবুও তার অবাধ্য মন মানে না বারণ। প্রেমে পড়লে মানুষ অনেক পাল্টে যায়, ঋজুও পাল্টাতে থাকে। সে শিকার করা পছন্দ করলেও নয়না বারণ করার পর থেকে সে আর শিকার করেনি। সুজয়ের বন্ধু হওয়ার সুবাদে নয়নাদের বাড়িতে ঋজুর অবাধ যাতায়াত লেগেই থাকে, নয়নার মাও তাকে স্নেহ করে। এরপর একদিন নয়নাকে লেখা তার গোপন চিঠিতে গুলো সকলের সামনে আসে।আর হঠাৎ করেই গোটা পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপর ঋজু প্রেম কি শেষ পর্যন্ত পরিণতি পায়? নাকি সে ব্যর্থ প্রেমিক রূপে তার প্রেম অপূর্ণই থেকে যায়।
পাঠ্য প্রতিক্রিয়া : অনেক জায়গায় অতিরিক্ত বর্ণনা আছে,যেগুলো আমার ভালো লাগেনি। মাঝে মাঝে খুব বিরক্তই হয়েছি। তবে পরিণতিতে ঋজুর জন্য খারাপ লাগছিল। উপন্যাসের কয়েকটি উক্তি আমার বেশ লেগেছে সেগুলো এখানে যুক্ত করলাম -
১) "ভালোলাগা আর ভালোবাসার পার্থক্যটা কোথায় ?ভালো লাগলে মানুষ সেই ভালোলাগাকে নিজের ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে।কিন্তু ভালোবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালোবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে।তার নিজের কোনও নিজস্ব সত্ত্বা থাকে না। ভালোবাসা তাকে যা বলে , পোষা পুষ্যির মতো সে তাই করে।"
২) " নয়নাকে যে শাড়ি আমি দেবো সে তো নিছক শাড়ি মাত্র নয়। তা আমার ভালোবাসার সুতো দিয়ে বোনা, তাতে যে আমার দুঃখের পাড় বসানো - সে শাড়ির আঁচলার জরিতে যে আমার অবুঝ চাওয়া শরতের আলোয় জ্বলবে।সে শাড়ির সমস্ত মসৃণতায় আমি যে আমার নয়নাসোনার সমস্ত শরীরে মিশে থাকবো --- ছড়িয়ে থাকবো।আমি যে জড়িয়ে থাকবো। "
৩) " টাকায় কি হয় ? কারই বা কি হয় ? একটা সীমা - ন্যূনতম ভদ্রলোকি সীমায় পৌঁছানোর পর টাকায় কারই বা কি হয় ? ভালোবাসার ধনকে উপহার দেবার মতো মহৎ উপায়ে নষ্ট করা ছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা থাকার কোনো মানে হয় না।.....নিজের প্রয়োজন কোনও দিন মিটবে না।প্রয়োজনের শেষ হবে না।বাড়ালেই বাড়বে।তার চেয়ে নিজের প্রয়োজন সীমিত রেখে, যাদের ভালোবাসি তাদের জন্য কিছু করতে পারলে আনন্দে বুক ভরে যায়।..... সব আনন্দের মাপ কি একই কাঁটায় হয় ? এই আনন্দ অন্য আনন্দ,উদার আনন্দ।মহৎ আনন্দ। "
বিষয়বস্তু:- বইটি একটি অসামান্য ভালোবাসার গল্প বলে যায়। মূল চরিত্র ঋজু, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, যে তার বন্ধু সুজয়ের ছোট বোন নয়নাকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে চিঠির আদান প্রদান হয়, টেলিফোনে কথাবার্তাও হয়। কিন্তু ঋজু জানে নয়না তাকে ভালোবাসে না, সে কেবল তাকে দাদা হিসেবেই শ্রদ্ধা করে। মানুষ প্রেমে পড়লে অনেক কিছু বদলে ফেলে, ঋজুও বদলাতে থাকে নিজেকে, শিকার করতে ভালোবাসলেও নয়নার কথায় সে তা ছেড়ে দেয়। কিন্তু নয়নার কাছে সে কোনোদিনই মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে না। নয়নাকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে দেখলে তার শরীর জ্বলে ওঠে। সে নিজেই নিজেকে অক্লান্ত শাস্তি দেয়। কিন্তু নয়না কে ঘেন্না করতে পারে না, তাকে দুঃখ দিতে পারে না, বরং উল্টে নিজের কষ্ট দ্বিগুণ করে। ��ালোবাসার টানাপোড়েন, সম্পর্ক, ও অনুভূতির ঘেরাটোপে বইটি শেষ হয় বেশ এক আবেগঘন আবহে।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া:- জানি না কেন এই বইটি আমার ভীষণ কাছের হয়ে থাকবে। ঋজুর জীবনে ঘটে চলা প্রত্যেকটা ঘটনা, আমি অনুভব করতে পেরেছি। লেখকের বর্ণনা বা সাহিত্যশৈলী নিয়ে আমার কিছু বলা সাজে না, অসম্ভব সুন্দর বললেও কম বলা হয়। এই বইতেও জঙ্গলের বর্ণনা আছে, কিন্তু তা বেশ মনোরম লেগেছে আমার, অতীব মাত্রায় কিছু নেই। সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে বইয়ের শেষ স্তবকটি, ওটা পড়ে নিজেকে শক্ত রাখা সত্যিই খুব কঠিন। বইটির একটি প্রিয় সংলাপ তুলে ধরলাম, যদিও প্রচুর সংলাপ মন কেড়েছে, তবে এটি সবচেয়ে পছন্দের---- . "ভালোলাগা আর ভালোবাসার পার্থক্যটা কোথায়? ভালো লাগলে মানুষ সেই ভালোলাগাকে নিজের ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে। কিন্তু ভালোবাসলে মানুষ নিজেই ভালোবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে, তার নিজের কোনও নিজস্ব সত্ত্বা থাকে না। ভালোবাসা তাকে যা বলে সে পোষা পুষ্যির মতো তাই করে।"
কেউ আমাকে ভালোবাসলে এমন ভাবেই বাসুক. বইটা শেষ করার পরে এই ছিল আমার প্রথম ভাবনা. নয়না এভাবে কষ্ট দেবে ঋজু কে আমি ভাবিনি. ছেলেটা সবসময়ই কষ্ট পেয়েছে আকাঙ্খিত নারীর থেকে কিন্তু তাচ্ছিল্য নয়. শেষ টুকু তে তাচ্ছিল্য পেয়ে নয়নার ঋজুদা যেভাবে সরে গেলো তা আমার যথাযথ মনে হয়েছে. ভালোবাসা বা অন্য কোনো অনুভূতিই আত্মসম্মানের চেয়ে বড় নয়, হবে না কখনো. বইটি খুবই ভালো লেগেছে আমার. A must read!!
Not my type. Not my genre. প্রেমের উপন্যাস ঠিক আমার হজম হয় না৷ তবুও ইদানিং নিজের গন্ডির বাইরে এসে সব রকম লেখা পড়ার চেষ্টা করছি বলে পড়া শুরু করেছিলাম। আমার টাইপ হলে হয়ত ভালোই লাগতো৷ বর্ননা খুব মিষ্টি ছিল৷ ঋজুর মনের অনুভূতি, নয়নার জন্য ওর ভালোবাসা, ওর শ্রদ্ধা, পাগলামো ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই ছিল৷ তবুও, ওইযে, Not my type! এখানেই আটকে গেছি৷ কোন একটা গ্রুপে মন ভালো করার মত বইয়ের সাজেশনে এই বইয়ের নামটা পেয়েছিলাম। পড়া শেষ করে দেখি উল্টো মন খারাপ হয়ে গেছে!
প্রেমের উপন্যাস পড়া এই প্রথম। তবে নিজের ভালোবাসার অনুভুতিগুলো যে এত সুন্দর ভাবে ভাষায় প্রকাশ করা যায় সেটা জানা ছিল না। সুখ, দুঃখ, মান, অভিমান, অপমান, রাগ, অপমান সবকিছু মিলিয়ে যেন এক বাঙ্গালী পুরুষের ভালোবাসার স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে।
হলুদ বসন্ত বুদ্ধদেব গুহ সংক্ষেপে : 'ভাললাগা আর ভালবিসার পার্থক্য কোথায়?ভাললাগলে মানুষ তার ভাললাগাকে তার ইচ্ছাধীন করে রাখতে পারে,কিন্তু ভালবাসলে মানুষ নিজেই সেই ভালবাসার ইচ্ছাধীন হয়ে যায়।' ঋজু একজন প্রতিষ্ঠিত চাকুরীজীবী। পাশাপাশি টুকটাক লেখালেখিও করে।একটি বোহেমিয়ান জীবন কাটায় সে।বন্ধু,পার্টি,শিকার নিয়েই অধিকাংশ সময় কাটায় সে।তার বন্ধু সুজয়।বেশ ভালোই যাওয়া-আসা আছে তাদের বাড়িতে।ঘটনাচক্রে সে প্রেমে পড়ে যায় সুজয়ের বোন নয়নার।সুন্দরী,শিক্ষিতা,আধুনিকা মেয়ের জন্য অনেকেই প্রত্যাশী।সেও একধরনের টান অনুভব করে ঋজুর প্রতি।কিন্তু সে টানটা ঠিক সেধরনের নয় তা ঋজু প্রত্যাশা করে।নয়না তার সাথে দেখা করে,তার চিঠি পেয়ে উল্লসিত হয়।কখনো দাদার বন্ধু হিসেবে কখনো নিজেই তাকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে যেখানে ঋজু তাকে করতে চায় তার গল্পের নায়িকা। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হাজির হয়।নয়না তার সাথে ঘোরাঘুরি করে,তার সাথে সেই ধরনের ব্যবহার করে যা ঋজু প্রত্যাশা করে।এমনই একসময় নয়নার বিয়ে ঠিক হয় এবং অন্যদিকে ঋজুর দেওয়া চিঠিগুলো পুরো পরিবারের দৃষ্টিগোচর হয়।পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট।তারপর? পাঠ প্রতিক্রিয়া : একদিকে অনেক ভালো লেগেছে অন্যদিকে বেশ বিরক্ত লেগেছে।ভালোর লাগার কারন বলতে গেলে ঋজুর নয়নার প্রতি ভালবাসার যে প্রকাশ তা লেখক যেভাবে তুলে ধরেছেন তা সত্যিই অনবদ্য।রোমান্টিকতার একদম সুুউচ্চ লেভেল।আর অন্যদিকে নয়নার বুঝেও না বোঝার যে আচরন তা বেশ বিরক্তকর।তবে লেখকের মুন্সিয়ানার এখানেই যে লেখক একজন প্রেমিক এবং একজন বন্ধুর মনস্তত্ত্ব খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছেন।তবে শেষটা ঠিক ততটা ভালো লাগে নি,তবে এমন পরিণতিটাও মোটামুটি অনুমিত ছিল।
প্রেমিকের অনুভূতির এমন চমৎকার প্রকাশ খুব কম বইয়েই পড়েছি। কারোর কারোর কাছে ন্যাকামি মনে হতেই পারে, আমার সত্যিই ভালো লেগেছে। তবু শেষটুকু বড়োই খারাপ লাগলো, লেখকরা কখনো কখনো খুবই নিষ্ঠুর হোন...
আজকের এই বৃষ্টিস্নাত দিনে আমার সঙ্গী ছিল আমার অন্যতম প্রিয় লেখক, প্রাণের লেখক বুদ্ধদেব গুহ'র এক মন কেমন করা উপন্যাস "হলুদ বসন্ত"। খোলা জানালার ধারে বইটা হাতে নিয়ে বসে পড়ছিলাম। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছিলো নিজের ইচ্ছে মতো। বৃষ্টির ঠান্ডা হাওয়া আমার চোখে মুখে এসে লেগে প্রাণের মাঝেও এক শীতল হাওয়ার স্রোত বইয়ে দিচ্ছিলো অবিকল । সেই হাওয়ার অভিঘাতে আমি পুনরুজ্জীবিত , স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠছিলাম। উত্তপ্ত ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে গলা ভেজাচ্ছিলাম মাঝে মাঝেই। তার সঙ্গে নিম্ন গ্রামে সারা ঘরে ভেসে বেড়াচ্ছিল কিছু মন কেমনের উদাসী গানের কলি। আজকের সুন্দর আবহাওয়াটাকে ভীষণভাবে উপভোগ করেছি। এই বৃষ্টি ভেজা দিনগুলো যেন সঙ্গে করে অনেকটা প্রেম, ভালোবাসা, যন্ত্রণা, সুখস্বপ্ন, নাম না জানা আরো অনেক অনুভূতিদের বয়ে নিয়ে আসে। বাঁধন হারা বৃষ্টিরা যেমন বাইরের উঠোন, শুকনো আমগাছ, একাকী শালিক পাখি, পিচ রাস্তাক�� ভিজিয়ে দেয় তেমনই এই অনুভূতিগুলোও আমার মনটাকে ভীষণভাবে সুস্নাত করেছে।
"হলুদ বসন্ত" আমার আমার কাছে কোনো সামান্য একটা উপন্যাস নয়। লেখকের সব লেখাগুলোর মধ্যে এই উপন্যাসটি আমার কাছে চিরস্মরণীয় ও অত্যন্ত প্রিয় হয়ে রইবে আজীবন।এই উপন্যাসের কোনো বিস্তৃত পাঠ প্রতিক্রিয়া আমি লিখতে অপারগ। তবে হ্যাঁ, নিজের ভালোলাগা, আবেগগুলোকে লিখে যেতে পারবো একনাগারে। নিজের মনের না বলা কথাগুলো, হৃদয়ের অতল গভীরে জমে থাকা ধুলো ধূসরিত ব্যথাগুলো লিখে যেতে পারবো ক্লান্তিহীনভাবে।
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
ঋজু বোস একজন সামান্য মধ্যবিত্ত অদ্যপান্ত বাঙালি। পেশায় সে ইঞ্জিনিয়ার আর নেশায় একজন লেখক। ঋজু ভালোবাসে নয়নাকে। নয়না আর কেউ নয়, ঋজুর বন্ধু সুজয়ের বোন। ঋজু নয়নাকে সত্যিই প্রচন্ড ভালোবাসে। নিজের মনে একান্ত আপন করে ভালোলাগা, ভালোবাসা, কল্পনা, অসংখ্য আবেগ দিয়ে দেবী মূর্তির ন্যায় গড়ে তাকে ভালবাসে। সারাদিনের সমস্ত ব্যস্ততায়, একান্ত অবসরে, ঘুম ভেঙে, ঘুমের ভিতরে স্বপ্নের মধ্যেও ঋজু শুধু নয়নার কথায় ভেবে চলে। এ ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। যেন এক পাগলামি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। তার সমস্ত কল্পনা, ভাবনা, স্বপ্ন, চিঠি জুড়ে শুধুই নয়না। অত্যন্ত শিকার প্রেমী ঋজু, নয়নার এক কথায় নিজের সামান্য ভালোলাগা টুকুও অচিরেই ত্যাগ করেছে।নয়নার কাছ থেকে হাজার কষ্ট, ব্যথা, অবহেলা পাওয়ার পরেও নয়নার প্রতি ঋজুর ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি। কিন্তু নয়নাও কি ঋজুকে ভালোবাসে? সে কি বোঝে ঋজুর হৃদয়ের আকুতি, তার মনের বেদনা ? নাকি শুধু ঋজুই পাগলের মতো নয়নাকে ভালোবেসে গেলো আজীবন?
সত্যিই গল্পের শেষটা পড়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। পড়ার সময় বুক টা ফেটে যাচ্ছিলো। আমার কষ্ট মাখানো দুই ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে এই বইয়ের পাতাকেও সিক্ত করেছে। আজ অনেকদিন পরে কোনো উপন্যাস পড়ে প্রাণ ভরে কাঁদলাম। হ্যাঁ, সে কান্নায় চোখ ভেজেনি ঠিকই, তবে হৃদয় হয়েছে অশ্রু প্লাবিত। কেমন এক ঘোরে, এক আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলাম পড়ার সময়। আমার নিজস্ব আমিটাকে কি ভীষণভাবে উপলব্ধি করতে পারছিলাম। পুরোনো স্মৃতিগুলো বারবার এসে হৃদয় দোলা দিয়ে যাচ্ছিলো। ভালোবাসা যে ভালো বিষের মতোই প্রচন্ড প্রাণঘাতী তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।
🍁তবে ঋজুর উপর সত্যিই ভীষণ হিংসে হচ্ছিলো আমার। একজন মানুষ কি ভীষণভাবে আর একজন মানুষকে ভালোবাসতে পারে। নিজের সবটা বিলিয়ে দিতে পারে। উজাড় করে ঢেলে দিতে পারে সবকিছু। যদি আমিও ঋজুর মতোই নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য, নিজের প্রেমিকার জন্য আমার আমিটাকে এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারি তবে নিজেকে ধন্য বলে মনে করবো। যদি তার বাহ্যিক শরীরটাকে ভালো না বেসে আজীবন শুধু তার ওই দু চোখের মায়ায় গলা অবধি ডুবে থাকতে পারি ,নিজের প্রেমিক সত্ত্বা নিয়ে তবে গর্ববোধ করবো। সেদিন মৃত্যু এসে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও এতটুকু কষ্টবোধ হবে না। বরঞ্চ ভীষণ শান্তিতে বরণ করে নেবো আমার অন্তিম নিয়তিকে।
🍁 অন্যান্য লেখার মতোই লেখক এখানেও উপন্যাসের নায়িকা নয়নাকেও এক প্রেমিকের ভালোবাসার তুলিতে অপরূপ সুন্দরী করে এঁকেছেন। যেন নয়না এই পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকার এক নিদারুণ প্রতিচ্ছবি। তার প্রেমে পাগল না হয় সাধ্যি কার!! তার ঘন কালো কেশরাশি, নরম ঠোঁট, ফর্সা পাতলা গড়ন, সরু পায়ের পাতা, মনমুগ্ধকর হাসির ঝর্ণা যেন সমগ্র প্রেমিক জাতির বুকে ঝড় তুলে দিতে যথেষ্ট।
🍁 পড়ার সময় যেন নিজেকে ঋজু রূপে কল্পনা করছিলাম আর নয়নার অবহেলায়, অবুঝ ভালোবাসায় সমব্যথী হয়ে কষ্টে কুঁকড়ে মরছিলাম ঋজুর মতোই।তেমনই নীতীশের উপর প্রচন্ড রাগে শরীর গজগজ করছিলো। যদিও বেচারার কিন্তু কোনো দোষ নেই। কারণ, ভালোবাসা যে অবুঝ, অন্ধ, বড্ড বোকা। সব কিছু বুঝেও সবটা বুঝতে চাইনা সে।
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে থাকলেও আমি লেখার পরিস্থিতিতে এখন নেই। আজ সারাটা রাত এই উপন্যাসের কষ্টরুপী নেশা টাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চাই। কল্পনায় প্রেমিকার বুকে মাথা রেখে, তাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে চাই। উপন্যাসটা আমার লেখক এবং প্রেমিক সত্ত্বায় ধোঁয়া দিয়েছে আর সেই সত্ত্বাগুলো এখন উপচে উপচে পড়ছে বাঁধ ভাঙা পাগলিনী, উত্তাল নদীর মতো। আমি মুগ্ধ, আমি বাক্যহারা, আমি পাগল.....
সকলেই অবশ্যই উপন্যাসটি পড়ে দেখুন। ভালো লাগবেই, লাগতে বাধ্য। এটা শুধু সামান্য কোনো উপন্যাস নয়, এক নিখাদ প্রেমের আত্মগাঁথা। আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই লেখককে। আমার মনের কথাগুলোকে, আমার সত্ত্বাকে অবিকৃত রেখে ঋজু চরিত্রটিকে অঙ্কন করার জন্য। ভালো থাকবেন সকলে... এবং অতি অবশ্যই সাহিত্যে থাকুন। ধন্যবাদ। 🙏🏻🥰❤️
🌷 পুনশ্চ :- এই বইটি খুব প্রিয় একজন মানুষের থেকে উপহার স্বরূপ পেয়েছিলাম। ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে ছোটো করবো না। বরঞ্চ অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো তার প্রতি আমার হৃদয় জুড়ে এই অসামান্য মুগ্ধতা বয়ে এনে দেওয়ার জন্য। 🥰❤️
পর্যলোচনাঃ- "মনের গহীনে লুকানো বালুচর, ঢেউয়ের মাঝে থাকা সৌন্দর্যের ফোয়ারা, সব যেন তোমার নামে উৎসর্গকৃত সৃষ্টি।" বুদ্ধদেব গুহের এটি প্রথম রোমান্টিক উপন্যাস। লেখক কি সুক্ষ্ম ভাবে উপস্থাপন করেছেন তার দুই যৌবন ময় টগবগে যুবক যুবতীর ভালবাসা। লেখার আঙ্গিক এবং সংলাপ ছিল নান্দনিকতায় ভরা। শুরু থেকে শের্ষ পর্যন্ত বিরক্ত হওয়ার মত কোন ঘটনা তিনি সৃষ্টি করেন নি। এতেই বোধ হয় লেখকের প্রকৃত সার্থকতা।
অসাধারণ ভাবে বর্ণনা করেছেন, ভালবাসলে তোমাকে মরতে হবে, বেঁচে যদিও থাকো মৃত্যুকে জড়িয়ে থাকতে হবে। কিন্তু কিছু জায়গায় তিনি যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন নি। মাঝের কিছু ঘটনা যেমন, ঋজুর পরিবর্তন কিংবা নয়নার ভাইয়ের প্রবেশ অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও কাহিনী শ্লথগতি করে দিয়েছে। আমি এই বই বিচার করার কেউ নয়, তবু অসাধারণ একটি বই যেন পাহাড়ের মাঝে হিজল বর্ষার বৃষ্টি টুপটাপ করে বয়ে চলছে।
কাহিনী সংক্ষেপঃ- এই উপন্যাসের চরিত্র গুলো যেন লেখকের নিজের দেখা। ঋজু এবং নয়না লেখকের নিজের হাতের গড়া। ঋজু কলকাতার এক বেসরকারি অফিসের ইন্জিনিয়ার। যার এই শহরের প্রতিযোগিতার ভিড়ে প্রেমিক হয়ে উঠে নি। ও ওর বন্ধুর ছোট বোনের প্রেমে পড়ে যায় হঠাৎ করে। চিঠি লিখতে থাকে, তার মনের গহীনে থাকা ভালবাসা দিয়ে। কিন্তু নয়না তো তাকে ভালবাসতে পারে নি। নয়না ভালবেসেছে অন্য কাউকে। এই দ্বিমুখী ভালবাসার জের যেন শতাব্দীর অপূর্ণতা। কারো হৃদয়ে বিচ্ছেদের দামামা বাজে কিংবা কারো হৃদয়ে বাজে না পাওয়ার বেদনা। কেউ কাউকে পায় না। যেন আঙুর ফল টক। যাকে কেউ একবার ভালবাসে সে জানে তাকে ভোলা কি কঠিন।
ঋজু পারি নি নয়নাকে ভুলতে। নয়না এসেছিল অন্য কারো কাছে উপেক্ষিত হয়ে। ঋজু তবু পারি নি নয়নাকে নিজের করতে। তাকে কি বেদনা আঁকড়ে ছিল না, না নয়না ওর ভালবাসার ছেদ বুঝতে পারি নি। কি হয়েছে তাদের মাঝে? লেখক অপূর্ণতা রেখে দিয়েছেন খুব করে।
উপসংহারঃ- কুঁড়ে খাওয়া হৃদয় কি আর স্পর্শে গলে যায়? বহুদিন যে হৃদয়ে ভালবাসা আসে নি, যে হৃদয় জানবে কি করে তার দরজায় ও একদিন অতিথি রুপে সে এসেছিল! সব ভালবাসা কি হলুদ বসন্ত?
বইয়ের নাম - হলুদ বসন্ত লেখকের নাম - বুদ্ধদেব গুহ প্রকাশনী - আনন্দ পাবলিশার্স মূল্য - ১২৫ টাকা পৃষ্ঠসংখ্যা - ৯৩ টি
বুদ্ধদেব গুহর লেখা অন্যতম প্রেমের উপন্যাস "হলুদ বসন্ত"। প্রত্যেকেই জীবনে অন্তত একবার প্রেমে পড়েছেন তাই প্রত্যেকেই ঋজু দার সাথে রিলেট করতে পারবেন।
গল্পের প্রধান চরিত্র ঋজু আর নয়না। ঋজু নয়নার দাদার বন্ধু। সেই সূত্রেই নয়নার বাড়িতে যাওয়া-আসা ঋজুর এবং সেখান থেকেই প্রেম। তবে একতরফা। ঋজু ভালোবাসে নয়নাকে পাগলের মতো। বারবার নিজের ভিক্ষাপাত্র হাতে সে ছুটে ছুটে যায় নয়নার কাছে এবং বারবার নয়নার দ্বারা অপমানিত হতে হয় তাকে। না, নয়না কখনোই ঋজুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি বা সরাসরি ঋজুর ভালোবাসাকে প্রত্যাখ���যান করেনি। ঋজু তাকে কতটা চায় , কতটা ভালোবাসে জেনেও সে তাকে নিজের মতো করে খেলিয়েছে। ঋজুর লেখা একান্ত গোপন চিঠিও সে সকলকে পড়াতে দ্বিধাবোধ করেনি। তার একবারও মনে হয়নি এতে সে ঋজুর ভালোবাসাকে , ঋজুকে সকলের কাছে কতটা ছোট করে ফেলেছে। এর চেয়ে বোধহয় সরাসরি প্রত্যাখ্যান অনেক শ্রেয়। সাময়িক কষ্ট হলেও এতটা অপমানিত হতে হতো না।
যায় হোক নয়না চরিত্রটি আমার ভালো লাগেনি বলাই বাহুল্য। খুব স্বার্থপর বলেই মনে হয়েছে। নিজের স্বার্থে ব্যবহারও করেছে বহুবার ঋজুকে। তবে বইটি নিঃসন্দেহে ভালো লেগেছে। বুদ্ধদেব বাবুর জায়গা আমার কাছে সব সময়ই অন্য রকম থাকবে। আমার উপন্যাস পড়া শুরুই হয়েছে ওঁনার হাত ধরে। ওঁনার লেখনীতে একসাথে অনেকরকম অনুভূতি পাওয়া যায়। ওঁনার লেখায় প্রেম এবং প্রকৃতি একসাথে মিলিত হয়। এই ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগে আমার। অনেকেই পড়েছেন " হলুদ বসন্ত "। যারা পড়েননি তারা এবার পড়ে ফেলুন।
বহুবছর হলো রোমান্টিক কোনো বই পড়িনা।আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিলো,রোমান্টিক বই আমার জন্য না।সুদূর ইন্ডিয়া থেকে, আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু, ৭ বছর পর দেশে এসে আমাকে এই বই দিয়ে গেছে।আমার হারিয়ে ফেলা বন্ধু কি কখনো জানবে লেখক তার মতো কাউকে ভেবেই ঋজুকে লিখেছেন!?এই বই অন্য সময় পড়লে আমি কতো তারা দিতাম জানিনা,কারণ এখন আমার মন biased,এতোই biased যে সার্জারী আর ENT লেকচার ক্লাসে ব্যাগের আড়ালে লুকিয়ে এই বই পড়ে শেষ করেছি।আমার বন্ধুটি আমাকে তারানাথের মধুসুন্দরী দেবী বলে ডাকেন।তার সমস্ত কথাবার্তা এতোদিন নিছক বাড়াবাড়ি লাগতো কিন্তু এই বই পড়ে বুঝলাম ঋজুরা এরকম ই হয়,এতোই গ্রেট যে ঋজুরা নিজেই নিজেদের বলে "I should not have more greatness than i contain."
বই থেকে- জুতো পায়ে যতো ময়লাই মাড়াই না কেনো,মন্দিরে যাবার আগে যেমন জুতো ছেড়ে রাখি বাইরে,নয়নার কাছে এলেও তেমন জুতো পায়ে আসার কথা ভাবতে পারিনা,নয়না আমার মন্দির।
আমার অশেষ আর্তি তার সুখকে কোনোদিন যেনো বিঘ্নিত না করে
তোমাকে যদি সবাই কোনোদিন ত্যাগ করে,সবাই ভুল বোঝে-একমাতে সেদিন ই তুমি জানতে পারবে আমি তোমার জন্য কতোটুকু করতে পারি!!
আমার সর্বস্ব দিয়ে নয়নাকে ভালোবাসার আগে আমার কোনো পরিচয়ই ছিলোনা,আমি একটা negative entity ছিলাম,কিন্তু এখন আমি একজন মহৎ মানুষ,প্রেম আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে যা আমার কোনোদিন ও ছিলোনা।
"ভালোবাসলে কি করতে হয়?" এর উত্তর কি জানা আপনাদের? নাকি আমরা আসলে জেনেও মিথ্যা বলি? বুদ্ধদেব গুহ’র বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলোর একটি, এই হলুদ বসন্ত। অল্প কথায় বলতে গেলে, ঋজু নামের এক যুবকের নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছোট বোন নয়নার প্রেমে পড়াকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে মাত্র নব্বই পৃষ্ঠার বইটার কাহিনি। হলুদ বসন্তকে নিছক প্রেমের উপখ্যান বলে ছোট করা দুঃসাহস আমার নেই; হৃদয়ের অনুভূতি, অনিশ্চয়তা, মস্তিষ্কের যুক্তির টানাপোড়েন, হিংসা, ক্রোধ, নিজের কাছে নিজে হেরে যাওয়া, ছলকলা-কত ধরণের মানসিক প্রবৃত্তি একই সাথে উঠে এসেছে যে এই বইয়ের প্রতিটি পাতায়। পুরো গল্প জুড়ে নয়না আর ঋজু দা'র মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বটাই মূল উপজীব্য।
আমার ভীষণ অভিমান হয় ঋজু দা, নয়না দুইজনের উপরই। নয়না কি করে ঋজু দা'র এই ভালোবাসা উপেক্ষা করল? আরেকটু কি দিতে পারতো না সে তার ঋজুদা কে? ঋজু'দা ও কি আরেকটু সাহস করে ওর হাতটা চাইতে পারতো না? ঋজুর সাথে নয়না সুখী হতো না, ঋজু'দা কেন ভাবলো এ কথা? ঋজুদা হয় আরেকটু ভিখারি হয়ে চাইলেই হয়তো একটা সুন্দর সমাপ্তি ঘটতো! আমি এটা তার মহৎ হওয়া দেখি না, ইগো না নাম না জানা কি এক অনুভূতির দেওয়াল কি তাদের মাঝে বড় হয়ে গেলো? নাকি সারাজীবন এক জোড়া হাত বইবার সাহস ওরা করতে পারে নি?
ভালোবাসা তো এতো সস্তা না, তবে কেন আমরা তা শক্ত করে ধরিনা?
Not even going to attempt to write my review in Bengali because there's 100% chance I won't be able to express my emotions properly. First of all, great writing. Literature flows through his pen like how fluid flows laminar like through a pipe. Smooth and uniform. But man, you had to ruin it by making the protagonist objectify his BFF's little sister. I get it, you got 'them feelz' for her, as the kids these days would say but no. Just NO. Also I think the author has a foot fetish. Correction, I am definitely sure he has a foot fetish. Also unresolved romanticism is NOT HEALTHY. IF YOU HAVE FEELINGS, GIVEN THE RIGHT CIRCUMSTANCES TELL THEM. You CANNOT just walk around huffing and puffing with fire burning in your chest and ember in your eyes and other romantic gestures.
But I wouldn't mind an engineer who's in touch with his literature side, and can write letters. (I'm talking about the protagonist ;p)
This entire review has been hidden because of spoilers.
বসন্তের শেষের দিকে এসে কাল মনে হল বইটা পড়ে ফেলি, যেই ভাবা সেই কাজ। দিব্যি স্কুলের পড়া রেখে বারান্দায় বসে বসে ঋজু আর নয়নার ছোট্ট উপন্যাসখানি পড়ছিলাম। ঋজুর নয়নার প্রতি যে অসাধারণ ভালোবাসা তা দেখে বিস্মিত হতে হয় বইকী! মনে হচ্ছিল যেন দেবীপ্রতিমার স্থান দিয়েছে সে নয়নাকে, নয়না তার আদিগন্ত বিস্তৃত আকাশের হলুদ বসন্ত পাখি। লেখকের শব্দচয়ন, প্রতিটি উপমার ব্যবহার, সাধু সাধু! ঋজুর কল্পনার সবটা জুড়েই যখন নয়না, তখন নয়নার কেমন যেন একটা উপর্যুপরি উদাসীনতা। ইশ! সব প্রেমের গল্প এমন স্বর্গীয় হয় না কেন? এক শূন্যতায় মুড়ে দিয়ে গেল আমাকে। ভালো থাকুক নয়না আর ঋজু।
ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি,
চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী।
"যেন কোন করুণ জাঙ্গিল- উড়ে চলেছে-উড়ে চলেছে- উড়ে চলেছে। ভারী ভালো লাগছে। বেঁচে আছি বলে আনন্দ হচ্ছে। মরার কথা ভাবতেও ইচ্ছে করছে না। পৃথিবীটা এত সুন্দর জায়গা।এত কিছু কান ভরে শোনার আছে, চোখ ভরে দেখার আছে, আর এই একটি পাগল মন নিয়ে ভাবার আছে যে, আমার মরতে ইচ্ছে করেনা।"
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঋজু। সে ব্যক্তিগত জীবনে এক সফল পুরুষ কিন্ত তার ভিতরে সবসময় এক অসম্পূর্ণতার অনুভূতি। একদিন তার জীবনে আগমন ঘটে নয়নার, যাকে দেখেই সে তার প্রেমে পড়ে যায়। তারপর থেকে গল্পটি প্রেমের সেই মুহূর্তগুলোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। সাথে আছে বুদ্ধদেব গুহর প্রকৃতির বর্ণনা, যা উপন্যাসটিকে অন্যমাত্রা দেয়। বইটির গভীরতা এতটাই বেশী যে বইটি শেষ হলে একরাশ শূন্যতা অনুভূত হয়।
উপন্যাসটি রোমান্টিকতা, প্রকৃতি-বর্ণনা এবং মানুষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের এক অসাধারণ মিশ্রণ। বুদ্ধদেব গুহ চরিত্রগুলোকে এতটাই জীবন্ত করে তুলেছেন যে, ঋজু ও নয়নার কথা পড়তে পড়তে মনে হল যেন এটি আমার নিজের গল্প। সত্যি বলতে বইটির নাম 'হলুদ বসন্ত' সার্থক হয়েছে, কারণ এটি হলুদ ফুলের মতো উজ্জ্বল কিন্তু বসন্তের মত ক্ষণস্থায়ী, যা প্রেমের সৌন্দর্য এবং তার অনিশ্চয়তাকে ইঙ্গিত করে।
উপন্যাসের একটি লাইন আমার ভীষণ প্রিয়- "সুখ নেইকো মনে, নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে, হলুদ বনে বনে।"
যারা এখনও বইটি পড়েননি, তারা অবশ্যই এটি পড়ে দেখবেন। নিঃসন্দেহে এটি ভীষণ ভালো উপন্যাস।