Jump to ratings and reviews
Rate this book

কোজাগর

Rate this book
উপস্থাপন করেছেন স্বাধীনোত্তর ভারতের সামাজিক ও মানবিক জটিল সমস্যাগুলি। তাঁর জাদুকরী কলম মুহূর্তে প্রতিটি পাঠককে আত্মসচেতনায় সজাগ সতর্ক করে তুলবে। এমন বাঙ্ময় ও মরমী উপস্থাপনশৈলী দীর্ঘকাল বাংলা উপন্যাসে অনুপস্থিত। কোজাগর বর্তমান সমস্যাজর্জর ভারতকে আগামী দিনের উদার অভ্যুদয়ের পথপ্রদর্শন করবে নিঃসন্দেহে।

368 pages, Hardcover

First published January 1, 1984

15 people are currently reading
289 people want to read

About the author

Buddhadeb Guha

236 books237 followers
Buddhadeb Guha (Bengali: বুদ্ধদেব গুহ) is a popular Bengali fiction writer. He studied at the well-known St Xavier's College of the University of Calcutta.

His novels and short stories are characterized by their dreamy abstractness and romantic appeal. His essays reveal the soul of a true wanderer providing some of the most beautiful renditions of travel in Bengal. His love for forests and nature provide the background for many of his novels.

A highly successful chartered accountant by profession, and an accomplished musician, Guha is very urbane in his lifestyle. He was one of the first to create characters representing easy-going, upper middle-class modern Bengali families, whom readers could identify with, and that gave him instant popularity.

He is the recipient of many awards including Ananda Puraskar, 1976; Shiromani Puraskar; and Sharat Puraskar.

The Library of Congress has over fifty titles by him. His most famous novel, according to many, is Madhukori. It is considered a milestone in Bengali literature.
He is also the creator of Rijuda, an imaginary character who moves about in jungles with his sidekick Rudra. The jungles that he wrote about were mainly in Eastern India.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
75 (50%)
4 stars
57 (38%)
3 stars
12 (8%)
2 stars
4 (2%)
1 star
2 (1%)
Displaying 1 - 30 of 32 reviews
Profile Image for Sohan.
274 reviews74 followers
June 16, 2022
মাঝে মাঝে মনটা কেমন ছটফট করে।
মাঝে মাঝে চেনা শহরটাও কেমন একঘেয়ে লাগে। বিভূতিভূষণ আর ক্রিস ম্যাকান্ডলেসের প্রেতাত্মা ভর করে। আমি এক অন্য মানুষ হয়ে যাই। আদিম মানুষ। বন্য মানুষ। আশেপাশে যাকে পাই তাকেই ধরে জিজ্ঞেস করি, ও দাদা, ডুয়ার্সের দিকে যাবেন নাকি? চলুন না একটু বন জঙ্গল দেখে আসি। লোকে শোনে। হাসে। উড়িয়ে দেয়। আড্ডা চলে। তবে আমার ডুয়ার্সের প্রস্তাবনা চাপা পরে। চাপা পরে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সিনেমাটিক আলোচনার নিচে।
আমি কেটে পরি। কেটে পরি এই সব আঁতেলমার্কা সভ্যদের থেকে।
আমি ঘরে যাই। একটা কাঁধ ব্যাগ নিই। যে বইটা সবে শুরু করেছি সেই বইটা ব্যাগে পুরি। অতঃপর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরি।

ঠিক এভাবেই বেড়িয়ে পরি একদিন সকালে। কাওকে কিচ্ছু না বলে। কোজাগর বইটা শুরু করেছি দুদিন হল। তাই সেটাই তুলে নিই ব্যাগে। আর কলম নোটবুক। এই সম্বল করে বেড়িয়ে পরি।

পাসপোর্ট আছে। স্রেফ কোজাগর বই বগলে নিয়ে বর্ডার পেরতে পারব না। টাকা নেই। যা আছে তাতে যতদুর যাওয়া যায় তত দূর যাব ঠিক করি। ঠিক করি ডুয়ার্স না হলেও কাছাকাছি যাব । ঠিক করি তাৎক্ষণিকভাবে। অত ভেবেচিন্তে নয়।
মাথার মধ্যে টাকা গুনি। নিজেকে আশ্বাস দিই। আরে চলবে, চ! চ!
শহরের ষ্টেশনটাতে পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে পয়সা ফেলি, দ্বিধাহীনভাবে বলি—একটা রাজশাহীর টিকিট দিন!
রাজশাহী আমার গন্তব্য নয়। আমার গন্তব্যের শুরু।
সেই গন্তব্যের শুরুতে তিন চার ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাই। রাজশাহী গিয়ে আবার নতুন করে ভাবি—আমি ঠিক কোথায় যাচ্ছি? ডুয়ার্সে তো নয় নিশ্চয়ই! তবে কোথায়? যেখানে যেতে চাইছি সেটাকে ঠিক জঙ্গল বলা চলে না। একটা নিরিবিলি জায়গা। একটা চর। ময়নামতির চর।

রাজশাহী থেকে পঞ্চগড় তিনশো কিলোমিটারের পথ। কুচ পরওয়া নেই বলে টিকিট কেটে ফেলি। রাত ন’টায় ট্রেন। ততক্ষন ষ্টেশন টার্মিনাল লাইব্রেরি জাদুঘর ঘুরে টুরে দেখি। বরেন্দ্র রিসার্স মিউসিয়ামে ঢুকলে আমার এমনিতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বাড়ি থেকে রাজশাহী আসবার সময় ট্রেনে ‘কোজাগর’ বইটা কিছুটা পড়ি। রাজশাহী থেকে পঞ্চগড় যেতে অনেক সময় লাগে বুঝতে পারি। বুঝতে পারি সেই সময়টা কাজে লাগবে। রাতের ট্রেনে কিছুটা ঘুমোব আর বই পড়বো বলে ধরে নিই।

ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে আসি ষ্টেশনে। ষ্টেশনে মানুষ দেখি। আমার মতো কয়েকশ মানুষ ট্রেনে উঠে পরে। সবাই কি ডুয়ার্সের জঙ্গলে যাবে? নাকি ময়নামতির চর? নাকি শুধু আমিই একা? হ্যাঁ, সত্যিই সেদিন আমি শুধু একা ছিলাম গোটা দেবীগঞ্জে। কেও যায়নি ময়নামতির চরে। আচ্চা, সে কথা না হয় পরেই বলি।

ট্রেনে উঠে বই নিয়ে বসব ভেবে রাখি কিন্তু পড়া হয়না। আমি মানুষ দেখি। পুরুষ মানুষ। নারী মানুষ। বৃদ্ধ মানুষ। শিশু মানুষ। হিজড়া মানুষ। পুলিশ মানুষ। হকার মানুষ। শ্রমিক মানুষ। ট্রেনের জানালার ঘষা কাঁচে নিজেকে দেখতে পাই—আদিম মানুষ কী?

মানুষ কি জঙ্গলে জীবন যাপন করলে আদিম হয়ে যায়? আমি যেদিন আরণ্যক বইটা শেষ করি, মনের মধ্যে একটা হাহাকার ছিল। অস্বীকার করিনি কারও কাছে, আমার মনে হয়েছিল, সত্যচরণের স্থলে আমি হলে ভানুমতীকে বিয়ে করে বাকি জীবন জঙ্গলেই কাটিয়ে দিতাম। সেটা হয়তো ছিল আমার কিশোর মনের ভাবালু চিন্তা। এই সময়ে এসে পড়লে বোধহয় মনে হবে—নাহ, বিভূতিবাবু ঠিকই করেছেন।

কোজাগর পড়তে বারবার আরণ্যক বইটার কথা মনে হয়েছে। মনে মনে ভাবছি, বোধহয়, লেখক অনুপ্রাণিত হয়ে থাকবেন, কিছুদূর পড়বার পর দেখি সত্যি লেখক উপন্যাসের মধ্যেই সেটা স্বীকার করেছেন। শুধু তাই না, প্রেক্ষাপট এবং চরিত্র কাঠামোতে একটা আশ্চর্য মিল রেখেছেন। তবে, গুহবাবু তাঁর নিজের স্টাইলে গোটা উপন্যাস লিখেছেন—তাঁর লেখার ধরণ যেমন।

আরণ্যকের সত্যচরণের মতোই সায়ন মুখার্জি ঝাড়খণ্ডে থাকেন কর্মসূত্রে। সেখানকার আদিবাসীদের কাছে তিনি বাবু। বাঁশের কারবার নিয়ে কাজ বলে লোকে তাঁকে বাঁশবাবু বলে ডাকে। সায়নের দিনলিপি থেকে আমরা দেখতে পাই আদিবাসীদের জীবন যাপন। তাঁদের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বেদনা। উপন্যাসটি শেষ অবধি পড়লে বোঝা যায় গল্পটা মূলত দাঁড়িয়ে আছে একটা শক্ত সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর। একদিকে বনজঙ্গলের প্রতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি লেখকের প্রেম নিবেদন অন্যদিকে সচেতনভাবে তুলে ধরেছেন বনজঙ্গলের আদিম অধিবাসীদের প্রতি সভ্য মানুষের শোষণ আর নিপীড়নের চিত্র, তুলে ধরেছেন আদিবাসী জনমানসে শ্রেণী সংগ্রামের বীজ কীভাবে নিহিত হয় আর কীভাবে বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে তা সমাধানের দিকে এগিয়ে যায়।
লেখকের সব দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা উপন্যাসটির সবকিছু ভালো লেগেছে বলা যায় না। তবে কিছু কিছু কথা ভালো লাগতে বাধ্য করেছে।
আদিবাসী নারী কাছ থেকে দেখিনি কখনও। দুই একটা চাকমা দেখেছি। শহরে তো ওরা বাঙালিদের সাথে একেবারে মিশে যায়। ওঁরাও জাতি তো দেখিই নি জীবনে। একজন ওঁরাও নারীর জীবন তাঁর সুখ দুঃখ যেভাবে লিখেছেন, মনে হল—আদিবাসী হোক কি বাঙালি, সব নারীর দুঃখ কষ্ট যেন একই।

ট্রেনে ‘কোজাগর’ বইটাতে মুখ গুঁজবার চেষ্টা করছি। আমার পাশের সিটটা ফাঁকা। মনে হল কেও আমার পাশ থেকে টোকা দিল। আমি মুখ তুলে চাইলাম। পাশে একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকাতেই সে হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। বুঝলাম আমি সান্তাহারে এসে গেছি। এইসব এলাকায় এগুলো বেশি হয় জানি। ‘কেও’ এসে হাত পাতে। টাকা চায়।
আমি মুখ তুলে চাইতেই সে তার বুকটা মেলে ধরে। আমি অবাক হয়ে তার বুক আর মুখের দিকে চেয়ে থাকি। কেও এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে নারীর ছদ্মবেশে!
এই ছদ্মবেশী নারীদের নিয়ে কেও কবিতা লেখেনা? কোন উত্তরাধুনিক রবীন্দ্রনাথ? রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, কালো শাড়িতে পেটুনিয়া ফুলের মতো রাঙ্গা, মনে হল, কালো রঙের শাড়িতে একটা গভীর দূরত্ব, যে দূরত্ব ভুট্টোক্ষেতের শেষ সীমানায়, আর শাল-মহুয়ার বনে…আসলে এগুলো কিছুই না, আপনাদের চাঙ্গা করার জন্য একটু বিরতি নিলাম আর কি। আসল কথা (সভ্যদের মতো করে) বলতে, ‘দশটা টাকা দিয়ে হিজড়েটাকে বিদেয় করলাম’


রাত ন’টায় রাজশাহী থেকে ট্রেন ছাড়ে। পঞ্চগড়ে নামি ভোর ছ’টায়। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ট্রেনের ভেতর থেকে সূর্যোদয় দেখার। প্রকৃতিদেবী যে তার রূপের ডালি আমার সামনে মেলে ধরবে কল্পনাও করিনি।
ভোর তখন চারটা বেজে পেরিয়ে গেছে। দিনাজপুর ষ্টেশনে ট্রেন থেমে আছে। দূর থেকে আজান শুনতে পাই। আজানের সুরে হারিয়ে যাই কোথাও। আমার শহরের আজান আর এই আজানের মধ্যে যেন কত তফাত। হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের সাথে কর্ণাটকী সঙ্গীতের যেমন তফাত।
আমি জানালা দিয়ে অধীর অপেক্ষায় আছি সূর্যোদয় দেখব বলে। দিনাজপুর থেকে যখন ট্রেন ঠাকুরগাঁও রোডে তখন দেখি এক আশ্চর্য দৃশ্য। কুয়াশা। ঠিক কুয়াশা নয় ধুয়াশা। যেন মনে হয় আমি এসেছি শীতের দেশে। বৈশাখ মাস তবু আমার ভীষণ শীত শীত করে। ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখি অন্ধকার কেটে একটা নীল কুয়াশায় চারিদিক ভরে যাচ্ছে। আধো আলোতে সারি সারি ভুট্টোর ক্ষেতের মাঝে দুএকটা গাছের সারিকে মনে হয় ভিনগ্রহের কাকতাড়ুয়া। এতো বড় কাকতাড়ুয়া হয় না যে!

হঠাৎ কাকতাড়ুয়াগুলো উড়ে যায়। ডেকে তোলে সূর্যদেবকে। ক্লান্ত সূর্যদেব একটু একটু করে বিছানা ছাড়ে। আমি তখন রাতের আঁধার কেটে কি করে প্রকৃতিদেবী দিনের আলো মেলে ধরে সেই রূপ দেখছি। হঠাৎ খেয়াল হল। গোটা ট্রেনে আমি একা। আমি উঠে দাড়াই। প্রচণ্ড জোরে ট্রেন ছুটে চলে। আমি ট্রেনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চেয়ে থাকি, আমি অব���ক হয়ে দেখি, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই নেমে গেছে কে কখন, আমি কিচ্ছুটি টের পাইনি। পঞ্চগড়ে যখন আমি নামি, তখন গোটা বিশেক মানুষ নামে কি না সন্দেহ। লোকেরা কোথায় নামে কখন নামে টের পাই না কেন? Perhaps I was utterly alone on the Banglabandha express, flying on the scarecrow's wings to call upon the Helios!

সত্যি এতো দূর কখনও যাইনি। এখনও পঞ্চগড় থেকে দেবিগঞ্জ যাওয়া বাকি। দেবী চৌধুরানীর দেবীগঞ্জ।
ট্রেন থেকে নেমে ভ্যানে চড়ি। বিপত্তি ভ্যান থেকে শুরু। পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক ভাষার সাথে আমার কোনরকম পরিচয় নেই। ভ্যানচালক আমায় কি জিজ্ঞেস করেন আমি বুঝি না। তিনি আমায় কয়েকটি প্রশ্ন করেন, আমি শুধু একটি বুঝতে পারি, ট্রেন লেট করেছে কি না। আমি আর কিছু বুঝি না। আমি বুঝি আমায় দেবিগঞ্জের বাসে উঠতে হবে।
কয়েক মিনিট বাদে উঠে পরি একটা ফাঁকা বাসে। বাস আমার নিয়ে চলে দেবীগঞ্জে।
দেবিগঞ্জ থেকে খুব অল্প সময়ে চলে যাই ময়নামতির চরে।

কি এক অপূর্ব জায়গা! জায়গাটা করতোয়া নদীর তীরে একটা বেশ দ্বীপের মতো। সেখানে অসংখ্য গাছপালা, মনে হয় গভীর কোন এক অরন্যে চলে এসেছি, দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে বলি, I now walk into the wild!
একদম সকাল সকাল পৌঁছে যাই তাই বোধহয় কোন মানুষ নেই। মনে হয় বিস্তীর্ণ অরন্যে সত্যিই আমি এক আদিম মানুষ। আমলকী, দেবদারু, আম, মেহগনি, কত বিচিত্র রকমের বৃক্ষ আর কত পাখির আনাগোনা। আমলকীর মতো কি একটা ফল পরে থাকে, কেও কুড়োয় না। সারি সারি গাছের আড়ালে হঠাৎ মানুষ দেখে চমকে উঠি। শ্রমিকের মতো দেখতে এক মানুষ শিমুল তুলা কুড়োয়। খেয়াল করি বাতাসে শিমুল তুলার ভেসে চলা। আমি শিমুল গাছ খুঁজি। আশ্চর্য! চারিদিকে শিমুল তুলা ভেসে বেড়াচ্ছে অথচ আমি শিমুল গাছ খুঁজে পাইনা। বৃক্ষগণ আমার সাথে লুকোচুরি খেলে। আতা, নিম, মেহগনি, জারুল, সেগুন সবাই আমার সাথে লুকোচুরি খেলে, শিমুলকে লুকিয়ে রাখে। আমি শিমুলকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পরি। বসে পরি একটা জারুল গাছের ছায়ায়। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য জারুল ফুল। নিজেকে মনে করি জীবনানন্দের দুপুর বেলার চিল। একটু বিশ্রামের পর বই খুলে বসি। পড়তে পড়তে মনে হয় কেও বোধহয় আমায় আড়াল থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। আমি অস্বস্তি বোধ করি। খেয়াল করি, একটা তের চৌদ্দ বছরের ছেলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আমার বিস্ময়সূচক চাহনির জবাব পাই—একলা আইসেন? মাইয়া আসে নাই?
এই বলে সে হাসতে হাসতে চলে যায়। আমিও হেসে ফেলি। উঠে দাঁড়াই।

চর থেকে নদীতে নারী পুরুষ আর শিশুদের কর্মতৎপরতা চোখে পরে। কি করছে ওরা ভেবে এগিয়ে যাই। দূর থেকে মনে হয় নদীর চরে তাঁরা কিছু একটা চাষ করছে। কাছে গেলে বোঝা যার চাষ নয় ওরা নদী তীরের বালি থেকে পাথর কুড়চ্ছে। আশ্চর্য হই দেখে এটা ওদের জীবিকা নির্বাহের একটা পথ। পঞ্চগড়ের অনেক মানুষ এই পাথর উত্তলনের পেশায় জড়িত। শহরে প্রবেশ করলে করতোয়া ব্রিজ থেকে নিচে তাকালে দেখা যায় ছোট ছোট শিশুরা নদীতে নেমে খেলা করে। আপাত দৃষ্টিতে খেলা মনে হলেও ওরা ওদের পরিবারের জন্য পাথর কুড়োয়। আমি অনেকক্ষণ নদীর পাড়ে বসে থাকি। ওদের জীবন যাপন বোঝবার চেষ্টা করি।


আর এভাবে আমার ময়নামতির চর দর্শন শেষ হয়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি করতোয়ার জলে। দুহাতে জল তুলে তর্পণ করি। তর্পণের মন্ত্র পাঠ করি—I'm going to paraphrase Bibhutibhushan here... rather than love, than money, than faith, than fame, than fairness... give me truth.


Post Script 1: আপনাদের ট্রেনে বই পড়তে ভালো লাগে? বেড়াতে গেলে বই নিয়ে বের হন?

Post Script 2: লিলিকে আমি কথা দিয়েছিলাম কোজাগর বইটা একসাথে পড়বো কিন্তু আমরা কেও কারো কথা রাখতে পারিনি। বেচারি লিলি!





















Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
September 9, 2025
মেকি গাম্ভীর্য দেখাতে আমার ভালো লাগে না। যেখানে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা দরকার সেখানে সেটা না করে রাশভারী হয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগে। তাই উচ্ছ্বাস প্রকাশে কখনো কৃপণতা করি না। বরং যতটা করা দরকার তার থেকে বেশিই করি।

বিরক্তি, একঘেয়েমিতে ভর্তি জীবনটা যখন আলো বাতাস বিহীন বদ্ধ ঘর মনে হয় তখন এমন কিছু বই আসে দক্ষিণমুখী জানালা হয়ে। আমিও গলা বাড়িয়ে দিই, এদিকে ওদিক তাকিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিই, চোখ মেলে দেখি অদেখা অনেককিছু।

বুদ্ধদেব গুহ আমাকে বারবার মুগ্ধ করেন, কোজাগর দিয়ে আরো একবার মুগ্ধ করলেন তিনি।
Profile Image for Ratika Khandoker.
300 reviews33 followers
April 2, 2025
আমি যতদূর বুঝি,লেখক বুদ্ধদেব গুহ দু'ধরনের লেখা লেখেন।
প্রথম ধরনের লেখা: নর-নারীর প্রেম-ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে।
দ্বিতীয় ধরনটি ও ভালোবাসার,তবে সে ভালোবাসায় মুখ্য চরিত্র,পার্শ্ব চরিত্র,খল চরিত্র সব ভূমিকাতে-ই আছে প্রকৃতি।নর-নারীর প্রেম ও সেখানে আছে,তবে তা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
আর এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লেখার আমি বড়-ই ভক্ত।
'কোজাগর' এরকম-ই একটি রচনা।
রচনা বলবো না বইয়ের পাতায় জীবন্ত 'ভালুমার' বলবো ভেবে পাইনা!
'ভালুমার' এর অনাবিল,জংলী সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমাদের কথক 'বাঁশবাবু' যার কিনা চাকরীর সূত্রে শহুরে সভ্য লোকালয় ছেড়ে এই পাহাড়ে-অসভ্য লোকালয়ে আসা।প্রকৃতি এখানে ছয় ঋতুতে নানা রূপসজ্জার পসরা নিয়ে হয়ে উঠে লাবণ্যময়ী,স্নিগ্ধ,মনোহারী।
আবার কখনো এই প্রকৃতি হয়ে যায় রুক্ষ,রুদ্র,নির্মম।
রামধনুর রংয়ের পাখি,ফুল-পাতা যেমন মনের সব গ্লানি মুছে দেয়,আবার রাত বিরোতে বের হওয়া মানুষখেকো শোনচিতোয়া মনে জাগায় আতংক।
আর মানুষরূপী শোনচিতোয়া-ই কি কম আছে?
শেঠ,মাহাতোর মতো মানুষ শোনচিতোয়া গুলো মুঞ্জুরী,মানি,টিহুল,টুসির মতো হতদরিদ্র মানুষ গুলোর মাংস আঁচড়ে কামড়ে খায়।
এভাবেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে,প্রকৃতির-ই বুকে পুষ্ট হয় এই হতভাগা মানুষগুলো।
আর এদের-ই একজন হয়ে যাওয়া কথক 'বাঁশবাবু' আমাদেরকে মনুষ্য চরিত্র ও ভালুমারের অসাধারণ জীবনগাঁথা শোনান।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
January 25, 2024
"পাহাড়" আমরা কম বেশি সবাই ভালোবাসি! পাহাড় ভালোবাসি বলতে স্রেফ পাহাড়কেই ভালোবাসি,তার সবুজ কে ভালোবাসি। পাহাড়ের কোল জুড়ে থাকা পশুপাখি গুলোকে ও অনেকে ভালোবাসেন। আমাদের ভালোবাসা এতটুকুতেই স্থির হয়ে যায়। আর এগোয় না! পাহাড়ের গাছপালা,পশু-পাখিকে ভালোবাসা সভ্য জগতের মানুষেরা ভুলে যাই,পাহাড়ের বাঘ,ভাল্লুক, সিংহ, বাইসন, চিতাবাঘের মত পশুর পাশাপাশি, আরো একটা প্রাণী বাস করে। নাম "মানুষ"! 


বৃক্ষ প্রেমী, পশু প্রেমী সভ্য মানুষেরা বনের জন্তু, জানোয়ারের চিন্তা যতটুকু করেন,তার সিঁকি ভাগ যদি পাহাড়ের কোলে থাকা মানুষ নামের প্রাণীটার জন্য করতেন,তাহলে তাদের জীবন অন্য রকম হতো!! সবুজের কোল জুড়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো ও পেতো বেঁচে থাকার স্বাদ। 


ঘুমোতে পয়সা লাগে না। একমাত্র ঘুমোতেই! তাই,ওরা খুব ঘুমোয়।


" কোজাগর" বইতে সবুজের কোল জুড়ে থাকা, মানুষের জীবনের অংশটা ধরতে চেয়েছেন লেখক। সেখানে ভালুমারের জঙ্গলে বেঁচে থাকা মানুষের গল্প পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়! অভাব মানুষগুলোর ছায়াসঙ্গী। এই অভাবের তাড়নায় ওরা স্বর্গে থেকে ও যাপন করে কীটাণুকীটের জীবন! এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মানুষ, এই অভাগী প্রাণীগুলোর সারল্যের সুযোগ নিয়ে গড়ে তোলে তাদের নিজস্ব "রং মহল",ভরে তোলে তাদের স্বার্থের ভান্ডার! জঙ্গলের ভয়ানক " শোনচিতোয়া " বা মাংসাশী কোন জন্তু যেমন ওদের শত্রু,তার থেকে বড় শত্রু হচ্ছে জঙ্গলে থাকা "মহাজন শ্রেণীর " জানোয়ারগুলো। এরা সাধারণ গরিব পাহাড়ি মানুষগুলো শেষ সম্বল অব্দি লুটে নেয়,ইজ্জতটা অব্দি বাদ দেয় না!! 


এই দুনিয়ার সব নিয়ম খালি গরিব, অভাবী মানুষের জন্য!! সেটা সর্বত্র,হোক পাহাড় বা স্থলভূমি!


"কোজাগর" চমৎকার একটা বই। চট করে হজম করার মত বই নয় "কোজাগর",ধীরে ধীরে স্বাদ বুঝে খেতে হবে। খুব ভালো। সভ্য সমাজের ইতরামি'র অনেকগুলোই লেখক সরাসরি আঙ্গুল ���িয়ে দেখিয়েছেন, এগুলো সবার দ্বারা হজম করা সম্ভব হবে কিনা,সেটা একটা ভাববার বিষয়। "কোজাগর" ভীষণ ভালো বই,সেই ভালোটা বুদ্ধদেব বাবুর চমৎকার গদ্যের গুণে আরো বেড়েছে।  


তবে এই বই কে যারা পাহাড় প্রীতি থেকে পড়বেন, তারা ভুল করবে,কারণ "কোজাগর " পাহাড়ের গল্পের থেকে বহুগুণ বেশি মানুষের গল্প। 
Profile Image for Ronel Barua.
46 reviews4 followers
September 25, 2025
“কোজাগর” শিখিয়ে দেয়—নিঃসঙ্গতা কখনো দুঃখ নয়, বরং আত্মার নির্জনতা। প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।

Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 9, 2022
লেখক বুদ্ধদেব গুহর লেখা মানে বন, পাহাড়, পাহাড়ি নদী, নানা বন্য পশু, বিচিত্র সব চেনা অচেনা পাখি, ভিন্ন এক জনগোষ্ঠী -- আমি যে কয়েকটা বই পড়েছি তাতে এইগুলো দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতি নির্ভর চমৎকার বণর্নায় লেখক মানুষের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা নিজের লেখায় তুলে আনলেও প্রতিটি লেখাই একটা থেকে অন্য টা আলাদা। যেখানে কাহিনিতে একটা শিক্ষিত শহুরে চরিত্র যিনি বন বিভাগের কর্মসূত্রে বনেই থাকা, সেখানের জনজীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলা।


স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের সামাজিক ও মানসিক জটিল কিছু সমস্যা, মানব চরিত্রের কিছু মানবিক দ্বন্দ্ব লেখক তার কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রথা ভাঙার এক প্রকৃতি পরিবেশের চমৎকার এক উপন্যাস "কোজাগর "।
Profile Image for Shampa Paul.
105 reviews36 followers
September 23, 2018
অসাধারণ বললেও খুব কমই বলা হয় বইটির সম্পর্কে। বুদ্ধদেব গুহর যতগুলো বই পড়েছি, তার মধ্যে কোজাগরই এখনও পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ।
পড়ার সময় প্রতি মুহূর্তে বইটি কিছু না কিছু ভাবতে বাধ্য করেছে। হৃদয় দিয়ে অনুভব করার মতো উপন্যাস কোজাগর। শেষ হওয়ার পরও এক গভীর বিষাদ মনে ছেয়ে রেখে গেছে।
উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই অসম্ভব রকমের জীবন্ত, তাদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড, তাদের সুখ দুঃখ, তাদের জীবনসংগ্রামের সঙ্গে পাঠক অতি সহজেই একীভূত হয়ে যায়। এখানেই লেখকের সার্থকতা।
অবশ‍্যই অন্যদের পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
November 30, 2019
"কোজাগর" উপন্যাসে বুদ্ধদেব গুহর লেখার ট্রেডমার্ক উপাদানের সবগুলো উপস্থিত। সাথে কাহিনির গভীরতা উপন্যাসটিকে লেখকের অন্যসব উপন্যাসের চেয়ে আলাদা বিশেষত্ব এনে দিয়েছে৷ ডালটনগঞ্জের ছোট্ট এক রিজার্ভ ফরেস্ট আর সেখানকার গরিব অধিবাসীদের নিয়েই মূল ঘটনা। কথক হলেন সায়ন মুখার্জী নামে এক বাঙালি। যিনি বাঁশবাবু নাম পরিচিত৷ গরিব ওঁরাওদের শোষণ করে হৃষ্টপুষ্ট হয় গোদা শেঠ, মাহাতো আর রওশনলালের মতো শোষকরা। ওঁরারদেরই একজন নানুয়া তাদেরকে জাগাতে চেষ্টা করে। কিন্তু হাজার বছর ধরে নির্যাতীত হয়ে আসা শোষিত মানুষগুলোর ঘুম ভাঙানো কী এতই সোজা? বাঁশবাবু কী শেষমেষ থেকেই যাবেন? তিতলির কী হবে? আর সেই মানুষখেকো শোনচিতোয়ার মৃত্যু আদৌ হবে কী?
Profile Image for Mahabuba Arobe.
60 reviews6 followers
January 21, 2023
আমার কখনো পাহাড় দেখা হয়নি, হয়নি নীল জলের সমুদ্র দেখা। সে হিসেবে জঙ্গল ত দূরের কথা। তবে সবারই ত একটা জগৎ থাকে তাই না? মাঝে মাঝে আমার ও ইচ্ছে হয় একটা পাহাড় তার শেষ সিমানায়, যেখানে তুলো পেঁজা মেঘ ছুয়ে দেখা যায়! কিংবা নীল জলের গর্জনরত ঢেউের খেলা, ঝিনুকের শব্দে খেলা। এসব ছাড়িয়ে মাঝে মাঝে নির্জন কোন গাছগাছালির ভিড়ে, পাখির কলকলানি মুখরতায় কিংবা নতুন কোন প্রাণীর পরিচয়ে, কুয়াশা ঘেরা হিম ডাকে সারা দিতে। কিন্তু না ও আমার কল্পনা জৎগত, বন্ধুদের ট্যুর দেয় ছবিতে কিংবা কোন টুরিস্ট পেইজের পোস্ট গুলায় সিমাবদ্ধ। : (

যাই হোক আমি আমার কল্পনা জগৎ প্রথম দেখা পাই বিভূতী বাবুর আরণ্যক পড়ে। তারপর অনেক দিন সেই বইয়ের ঘোর কাটেনি আমার। কোজাগর বইটা প্রথম কয়েক পাতা পড়ার পর আমি যেন সেই আরণ্যকের-সত্যচরণ বাবুর, সারস্বতী কুন্ডের মিল পাই। বইয়ের মাঝামাঝি গেলে সত্যিই লেখক নিজেই আরণ্যকের সাথে তুলনা করেন। আরণ্যকে ছিলো সত্যচরণ বাবুর দিনলিপি। কোজাগরে সায়ন মূর্খাজীর দিনলিপ যে কিনা বাঁশবাবু। আদিবাসীদের বাঁশবাবু।

লেখক, সায়ন বা বাঁশবাবুর ব্যক্তিগত ডায়রিতে তুলে ধরেছেন আদিবাসীদের জীবন-যাপন, সুখ-দুঃখ। আদিবাসী নারির নারিত্ব দুঃখ,লজ্জা ফুটিয়ে তুলেছেন। কোজাগর উপন্যাসে উঠে এসেছে হালুম পাহাড়, পাল-মৌর রূপ, ভালুমার বস্তিতে বাস করা আদিবাসী মানুষের দারিদ্রে ছবি, টাইগার প্রোজেক্টের সাথে লড়াই, শনচিতায়ার ভয়। শীতের কুয়াশায় হাড় ভাঙ্গা শ্রম, বনের প্রাণী থেকে ফসল বাচানো, বর্ষায় ঘন বর্ষণের পর নতুন সজীব পাতার গজানোর মত নুতন আশায় জেগে উঠা, মাহাতো আর গোদা শেঠের মত রক্তচোষা মানুষ খেকো জীব কিংবা নানকুয়ার মত সংগ্রামী যে বেঁচে থাকার প্রাণ জোগায়। তারাও মানুষ, বেঁচে থাকার অধীকার তাদেরও চাই। ভারতবর্ষের এক নিচু জাতির লাড়াই করে বেঁচে থাকাই তুলে ধরেছেন লেখক। সেই সাথে তুলে ধরেছে বনজঙ্গলের প্রতি,প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি লেখকের প্রেম যেনো গত জন্মের।

অথচ বইটা পড়ে ভালো লাগার চাইতে দুঃখবোধ টাই যেনো বেশি আমার! না বই নিয়ে নয় বইয়ের চরিত্র গুলা, নানকুয়ার ঐভাবে মিলিয়ে যাওয়া, টুসিয়ার শেষ পরিণিতি, কাড়ুয়া, পরশনাথ, বুলকি এরা যেন কোজাগর পূর্ণিমায় মিলিয়ে গেলো।

গুহ সাহের, বালবি দিয়ে শুরু তারপর হাজারদুয়ারী এর পর কোজাগর। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে প্রেয়সীর রূপের যে যোগসূত্র রেখে বর্ণনা করা যায় তার গুহ সাহেবের বই না পড়লে বুঝা দায়। বুদ্ধদেব গুহ "কোজাগর" তার চমৎকার উদাহরণ।
Profile Image for Farhanur Rahman.
47 reviews11 followers
July 15, 2021
আপনার পড়া ২০০ তম উপন্যাস....

অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু অনেকগুলো ঘটনা লেখক অমিমাংসিত রেখে দেওয়ায় প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির যোগমিল ঘটেনি। খানিকটা হতাশই হলাম বৈকি 😣😣😣
Profile Image for Nishat Monsur.
191 reviews18 followers
August 1, 2024
অনেকদিন ধরে একটু একটু করে পড়লাম বইটা। কয়েকটা জায়গায় খটকা থেকে না গেলে বা কয়েকটা প্লট আধাসমাপ্ত অবস্থায় ছেড়ে না দিলে পাঁচ তারাই দেয়া যেতো হয়ত। অনেকদিন বাদে স্বাদমতো একটা বই পড়তে পেলাম বলে মনে হলো।
Profile Image for Rajib Majumder.
136 reviews7 followers
September 28, 2022
জঙ্গলের হিংস্র জানোয়ার এবং মানুষের রূপে থাকা জানোয়ারদের সাথে বনের সহজ সরল মানুষগুলোর অসম লড়াইয়ের কী অসাধারণ উপাখ্যান!
Profile Image for Satyaki Banik.
39 reviews19 followers
December 31, 2018
সামান্য দোলাচলে ছিলাম রেটিং দেয়া নিয়ে - চার অথবা পাঁচ। তবে শেষমেশ পাঁচই দিলাম।
বইটা অদ্ভুত।
অদ্ভুত এই কারণে, যে বইটায় একচেটিয়া ভাবে লেখক শুধু ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের ভালুমার নামক এলাকার কিছু মানুষের গল্প বলে যাননি। বরং, ডায়েরির মত করে ফার্স্ট পার্সন ভিউ থেকে লিখা উপন্যাসটায় লেখক বেড়িয়ে এসেছেন আরো অসংখ্য জগত থেকে। গল্প করেছেন পাখিদের; গল্প করেছেন গাছ-গাছালির। আশির দশকে লিখা উপন্যাসটায় লেখক তুলে এনেছেন শ্রেণীবৈষম্য, মালিক-মজুরদের সাপে-নেউলে সম্পর্কের ইতিবৃত্ত - সবই ভালুমার, চিপাদোহর, ডাল্টনগঞ্জ, অর্থাৎ ছত্তিসগড় আর ঝাড়খণ্ড রাজ্যকে ঘিরে।
স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের সামাজিক ও মানবিক সমস্যার আলোকে রচিত এই মানবতাধর্মী উপন্যাসটি তৎকালীন ভারত সম্পর্কে পরিষ্কার, অথচ মর্মান্তিক ধারণা দেবে।
Profile Image for Shawkat Kamal.
51 reviews15 followers
December 9, 2016
In my evaluation, this is the best book ever written by Mr. Guha.
Profile Image for Partha Goswami.
130 reviews2 followers
February 26, 2022
খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে লেখক সাধারণ মানুষের প্রতি অত্যাচার ও অতি দরিদ্র মানুষের জীবন যাপন, অরন্য অঞ্চলের মানুষের দুঃখ কষ্ট প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরেছেন। ডালটনগঞ্জের ছোট্ট এক রিজার্ভ ফরেস্ট আর সেখানকার গরিব অধিবাসীদের নিয়েই মূল ঘটনা। গল্প করেছেন পাখিদের; গল্প করেছেন গাছ-গাছালির। উপন্যাসটায় লেখক তুলে এনেছেন শ্রেণীবৈষম্য, এটা পড়লে বোঝা যায় কেন ওই প্রান্তীক মানুষগুলির মধ্যে থেকে কেও কেও নকশাল হয়ে ওঠে... সামাজিক শোষন ও বঞ্চনা আজো রয়ে গেছে একই পর্যায়ে... অসাধারণ বললেও খুব কমই বলা হয় বইটির সম্পর্কে।
Profile Image for Fariha Sultana.
7 reviews
March 20, 2023
কোজাগর অর্থ 'কে জেগে আছো?'। আশ্বিনের পূর্ণিমা ই হল কোজাগরী পূর্ণিমা আর আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষীপূজা ই হল কোজাগরী লক্ষীপূজা।
এই গল্পের নাম কোজাগর বা কে জেগে আছো এই জন্যেই রাখা হয়েছে যে এই গল্পে স্বাধীনোত্তর ভারতের পালামৌর জংগলের আদিবাসীদের নিজেদের অস্তিত্ব, নিজেদের অধিকারবোধ জাগানোর ঘটনাপ্রবাহ বর্নিত হয়েছে। আর বুদ্ধদেব গুহ র গল্পে যেমন সব সময় প্রকৃতির বর্ননা থাকে এখানেও আছে, বরং একটু বেশিই আছে, একটু পর পরই আছে, পাতায় পাতায়। এই উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সায়ন মুখার্জির ডায়েরি ই হল এই বইটি, সেকথা গল্পের শেষের দিকে লেখক সায়নের মুখেই লিখেছেন আর এও বলেছেন, এটি ডায়েরি হলেও অনেক কাহিনীতে বক্তা নিজেই অনুপস্থিত। সায়ন একজন প্রকৃতি প্রেমিক এবং অত্যন্ত sensitive আর আবেগ তাড়িত একজন মানুষ যিনি এই পালামৌর জংগলের ভালুমার অঞ্চলের সবার কাছে বাঁশবাবু নামে পরিচিত। বাঁশবাবু এখানে ঠিকাদারি র চাকরি নিয়ে এসেছেন, এবং গ্রামের সবার সাথেই বিভিন্ন ঘটনায় একটু একটু করে আবেগঘন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং শেষমেশ তাদের ই একজন হয়ে সবসময়ের মতো এখানে থেকে যায়। কিন্তু তারপরও সকলের বাঁশবাবু ঠিক শহুরে বাবুই থেকে যান গ্রামের মানুষের কাছে, কারন শিক্ষা, সামাজিক status, অর্থনৈতিক অবস্থা, চিন্তাধারা, রুচিবোধ এসবের পার্থক্য কখনোই সায়নকে তাদের কিংবা তাদেরকে সায়নের সমপর্যায়ে আসতে দেবে না, এই গল্পের শেষে সায়নের এই উপলব্ধির কথা সায়ন নিজেই বুঝতে পারে, যদিও সায়ন নিজেই অনেক affected হয়েছিল তার প্রিয় মানুষদের প্রতিক্রিয়ায়।
গল্পের শুরু হয় সায়ন ডাল্টনগঞ্জ থেকে পালামৌর এ তার ডেরায় ফিরছে এভাবে। তার ডেরার রক্ষনাবেক্ষন থেকে শুরু করে তার প্রতি ঘরের স্ত্রী বা কর্তী র মতো আচরণরূপী চাকরানী তিতলি র সাথে তার সম্পর্ক প্রথমে মনিব চাকরের মতো হলেও সায়নের এক ধরণের মায়া কাজ করতো তিতলির জন্য আর তিতলিরও গৃহস্বামী বাঁশবাবুর প্রতি মমত্ববোধ ছিল আর ছিল আনুগত্য মেশানো একধরণের infatuation কিন্তু সায়নের অফিসের কলিগদের কল্পনাগড়া সায়ন আর তিতলির অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা আর তিতলির বাবা টেটরার শোনচিতোয়ার আক্রমণে আকস্মিক মৃত্যু আর সেই সময়ে তিতলির জ্বরে তাকে সেবা করা এসব কিছু সায়নকে তিতলিকে বিয়ে করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে তাদের বিয়ের আগে একবার জিন নামের একটি মেয়ে সপরিবারে সায়নকে বিয়ের জন্য দেখতে এসে তিতলিকে লক্ষ করে তিতলির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে, বিয়ের সম্বন্ধটি ভেংগে দেয়। কিন্তু বিয়ের পর কেবল শারিরীক মিলনের উৎকর্ষতা ছাড়া, সন্তানলাভ ছাড়া তিতলির কাছ থেকে সায়নের আর কিছুই পাওয়ার নেই এটি সায়ন বুঝতে পেরে আফসোস করে যে তিতলি কোনদিন ই তার মনের সখা হতে পারবে না। এই গল্পটি আর কোন গল্পের মতো কেবল নারী পুরুষের সম্পর্কের গল্প নয়, তাই এখানে আরো গুরুত্বপূর্ণ অনেক চরিত্র আছে যেমন নানকুয়া, মানিয়া ওরাও আর তার স্ত্রী মঞ্জুরী, তাদের ছেলে পরেশনাথ আর নেয়ে বুলকি, সায়নের মতো শহর থেকে এসে এই গ্রামে নিজের প্রাসাদ বানিয়ে থেকে যাওয়া রথীদা, হিরু, হিরুর বাবা, মা, বোন টুসিয়া, ভাই লগন, শিকারী কাড়ুয়া চাচা, রামধানীয়া চাচা, গোদা শেঠ, মাহাতো।

এই গল্পের একটি বিপ্লবী চরিত্র হল নানকুয়া ওরফে নানকু, যে রথীদা, সায়ন এদের সাহচর্যে থাকা অশিক্ষিত কুলি হয়েও অনেক শিক্ষিতদের চেয়ে মন মানসিকতায় অনেক উদার, অনেক অধিকার সচেতন, অনেক উন্নত। নানকু ই গ্রামের সকলকে তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন করে তুলতে চায়, গ্রামবাসীর মধ্যে তাদের নিজেদের অস্তিত্ববোধ জাগাতে চায়। সেই হিসেবে আমার জন্য নানকু ই হল পালামৌর গ্রামের নায়ক ( ব্যক্তিগত মতামত )। এখানে নানকু আর টুসিয়ার ভালবাসা দেখানো হয়েছে যা কোন শিক্ষিত প্রেমিকও কোনদিন পারবে না। টুসিয়া তার ভাইয়ের বন্ধুর কাছে ধর্ষিত হওয়ার পরও টুসিয়ার কাছে প্রথ্যাক্ষিত নানকু তাকে গ্রহণ করে সামাজিক অমর্যাদা থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু তাদের ভালবাসা পূর্নতা পাওয়ার আগেই প্রথমে টুসিয়া তারপর নানকু কাহিনী থেকে হারিয়ে যায়। তাদের এই অপূর্ণ ভালবাসা আমাকে আমাকে পাঠক হিসেবে ব্যাথীত করেছে।

অপরদিকে হিরু চরিত্রটিও গুরুত্ব পেয়েছে তার বোধোদয়ের জন্য। হিরু লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত সমাজের একজন হয়ে তার গ্রামের পরিচয় নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগে এবং নিজের উপাধি পাল্টে হিরু ওরাও থেকে হিরু সিং রাখে। নিজের বাবা মা র পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। কিন্তু তার নিজের বোনের বন্ধুর কাছে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা আর সেই জমিদার বন্ধু যে কখনোই তাকে সমপর্যায়ের ভাবেনি এসব তাকে তার শিকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয় কিন্তু হীরু হীনমন্য ই থাকে, কিছুই করতে পারে না কেবল প্রতিশোধ নেয়া ছাড়া।

কাড়ুয়া চাচা এখানে একটি সাহসী চরিত্র যে কিনা লাইসেন্সহীন বন্দুক নিয়ে বনের রেস্ট্রিকশন এরিয়াতে ঘুরে বেড়ায় আর শিকার করে। কিন্তু শেষমেষ শোনচিতোয়ার কাছে বীরের মত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

রথীদার মুখোশ উন্মোচন - গ্রামের এক জনদরদি, শিক্ষিত সমাজের উন্নতমনা থেকে চিরায়ত উচ্চহিন্দু বর্না, জাত সচেতন হীনমন্য মানুষের পরিচয় সকলেই পায় গল্পের শেষে যখন রথীদা সায়নের সাথে তিতলির বিয়ে মেনে নিতে পারে না বরং সায়নকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে ���েয়। অথচ এই রথীদা সায়ন সহ সকলের মনে এক দেবতার আসনে আসীন ছিলেন। সেই রথীদা এখন সায়ন আর নানকু র মতো অনেকেরই ঘৃণার পাত্র।

গোদা শেঠ আর মাহাতো হচ্ছে গ্রামের আবর্জনা, সমস্যা, সুদের ব্যাবসায়ী আর গ্রামের মানুষের শত্রু, গ্রামের মানুষের দুর্ভাগ্যের পরিহাসকারী।

মানি ওরাও আর মুঞ্জরী গল্পের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রামের সকলের আর্থ সামাজিক অবস্থার, স্বপ্ন, আশা আকাংক্ষার একই রূপের একজোড়া নমুনা মাত্র। মানি তার ছেলে পরেশনাথ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ছেলে একদিন বাবার বোঝা বইবে। আরেকদিকে মানির স্ত্রী তার অলস মেরুদন্ডহীন মাতাল স্বামী আর ছেলে পরেশনাথ আর বুলকি কে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তিত আর নিজের সুখ আহ্লাদ আরাম কিভাবে মানিয়াকে বিয়ে করে বিসর্জিত হয়েছে সেই দু:খে দুখী হয়েও নিজের দূর্ভাগ্যের সাথে লড়াইরত কিন্তু শেষমেষ নিজের প্রয়োজনের কাছে হার মেনে বাজারে মাহাতো র কাছে লাঞ্��িত হওয়ার পরও মাহাতোর অর্থের শক্তির কাছে হার মানে এবং স্বামী, সন্তান কে রেখে মাহাতোর কাছে যায়। এই ঘটনাও আরেকটি হতাশাকর ঘটনা। গল্পের শেষে মানিয়া মঞ্জুরীর সন্তানেরা সাত বছরের পরেশনাথ আর বারো বছরের বুলকি র আকস্মিক মৃত্যু তাদের আশা আকাংক্ষাকে পরাজিত করে আবার এক করে।

এই গল্পের অনেক দিক রয়েছে তার মধ্যে গ্রামের হাটবাজার অনেকটা শহরের high status দের ক্লাবের প্রতিভূ। আবার সায়নের অফিস কলিগদের সাথে অফিস পরিবেশ ও তাদের জীবন, চরিত্র এগুলোও গুরুত্ব বহন করে এই উপন্যাসের। মানবিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক অনেক বিষয় ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। এই উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে শোনচিতোয়া। এই চিতা বাঘের আক্রমণে গ্রামের মানুষ অতিষ্ট। একে একে গ্রামের অনেকেই এই চিতার কাছে প্রাণ হারায়। কিন্তু তাও Man Eater declared না হওয়ায় গ্রামের মানুষ তাকে মারতেও পারে না আবার প্রাণো হারাতে থাকে।

এই গল্পে শুধু বাস্তবতাই দেখানো হয়েছে, বার বার আশার আলো দেখিয়ে হতাশা দিয়েই শেষ হয়েছে। সায়ন এখানে প্রকৃতিপ্রেমী বলে জীবনকেও কেবল হৃদয় দিয়ে বার বার দেখতে চাইলেও শেষমেশ বাস্তবতায় ফিরেছে। সব মিলিয়ে উপন্যাসটি পড়ে এখনো তার রেশ রয়ে গেছে একটি নির্মোগ ভালোলাগায়। অসাধারণ লেখকের শৈল্পিক ঘটনা প্রবাহ। আর আমি তো বুদ্ধদেব গুহ র প্রকৃতি, প্রেম আর নারীদের নিয়ে বর্ননা, নারীদের মনোজগত নিয়ে assumptions এ সব সময় ই মুগ্ধ যদিও সব সময় একমত নই, তবুও ভাল লাগে। তাই বলতে পারি কোজাগর ও লেখকের একটি অমর সৃষ্টি।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Suraj Ghosh.
20 reviews
December 20, 2023
🍁 বই : কোজাগর
🍁 লেখক : বুদ্ধদেব গুহ
🍁 প্রকাশনী : দে'জ পাবলিকেশন
🍁 মুদ্রিত মূল্য : ৪০০/-
🍁 পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৩৬৮

#পাঠপ্রতিক্রিয়া

গগন সম মুগ্ধতা নিয়ে পড়া শেষ করলাম আমার অন্যতম প্রিয় একজন লেখক বুদ্ধদেব গুহ মহাশয়ের "কোজাগর" উপন্যাসটি ।এটি স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের সামাজিক এবং মানবিক জটিল সমস্যাগুলো নিয়ে পাহাড়-পর্বতের পটভূমিতে আদিবাসী গ্রামকে কেন্দ্র করে লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস। এটি মূলত ডালটন গঞ্জের নিকটে অবস্থিত "ভালুমার" নামক একটি আদিবাসী জনবসতির প্রেক্ষাপটে লেখা। গত দু-তিন দিন ধরে উপন্যাসটি পড়াকালীন এক গভীর ভালোলাগা বোধে আমার মন,মস্তিষ্ক, ব্যক্তিত্ব, ভাবনা চিন্তা মানে সমগ্র আমিত্ব আচ্ছন্ন হয়েছে । উপন্যাসটিতে উল্লেখিত সমস্ত চরিত্র, উপন্যাসের পটভূমি, আমাকে ভাবতে বাধ্য করা লেখকের মর্মস্পর্শী লেখার সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছি অজান্তেই । বুদ্ধদেব বাবুর লেখা সব সময়ই আমার অন্তর জুড়ে মুগ্ধতা বয়ে এনে দেয়। তবে এই উপন্যাসটির সঙ্গে যেন আমি একাত্মভাবে বিশেষ রকমে জড়িয়ে গেছি। এবং এটি আমি অবশ্যই স্বীকার করব যে আজ অবধি ওঁনার পড়া সমস্ত উপন্যাস গুলোর মধ্যে এটি আমার ভাললাগার শীর্ষস্থান অধিকার করেই থাকবে।

🍁 বুদ্ধদেব গুহর লেখার একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে নারীদের মন, মানসিকতা, চাহিদা, আবেগ, ভালোলাগা, ভালোবাসা,দুঃখ-কষ্ট, শরীরিক সুখ সম্পর্কে অসাধারণ পাণ্ডিত্য। এই উপন্যাসও তার ব্যাতিক্রম নয়।ওঁনার লেখা পড়লে একজন নারী সম্পর্কে অনেকটাই জানা হয়ে যায়। নারী সম্পর্কে অনেক কৌতুহল দূরীভূত হয়। অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর মেলে। লেখকের বর্ণনায় একজন নারীর সৌন্দর্য,স্নিগ্ধতা, আবেগময়তা সত্যিই পাঠককে মুগ্ধ করে।

লেখকের লেখায় যৌনতাও ভীষণভাবে ফুটে ওঠে। তবে সে যৌনতা রগরগে, হিংস্র,কামনা বিধুর নয়। ওঁনার কলমে যৌনতা খুব সুন্দর, স্নিগ্ধ, ভালোলাগার আবেশে পরিপূর্ণ চিরন্তন সত্তা হিসেবে ফুটে উঠেছে। এই যৌনতা নারী- পুরুষ তা মানুষ সহ যেকোনো পশুপাখিই হোক না কেন সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সমগ্র বিশ্ব চরাচর যেন এই স্নিগ্ধ যৌনতারই একটি অংশ বিশেষ।

আমার মতে লেখক তাঁর সমস্ত লেখনীর মাধ্যমেই আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে " নারীরা ঠিক মন্দিরের মতো। তাদের প্রতি আমাদের পুরুষদের ভালোবাসা,আদর, শ্রদ্ধা,আবেগ, কোন বিগ্রহ বা আমাদের কল্পিত ঈশ্বরের প্রতি অর্পিত ভক্তি ও বিশ্বাসের মতোই দৃঢ় এবং অকৃত্রিম "।

🍁ওঁনার পাঠকমাত্রেই আমরা জানি যে বুদ্ধদেব বাবু একজন ভীষণ রকমের প্রকৃতি প্রেমিক। গাছপালা, পশুপাখি, নদ-নদী, পাহাড় - জঙ্গলের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি। এই প্রকৃতিকে ঈশ্বরের মতোই শ্রদ্ধা করেন লেখক। লেখকের কলমে ফুটে উঠেছে এই বন্য পরিবেশের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা। যে বর্ণনা পাঠকের সামনে চিত্রায়িত করবে এই সুন্দর ভূ- প্রকৃতিকে । বন-জঙ্গল,ভূ-প্রকৃতিকে বুদ্ধদেব বাবু যেন গিলে খেয়েছেন।ডালটনগঞ্জের প্রেক্ষাপটে লেখকের অনেক উপন্যাসই আছে।

🍁 লেখক যেহেতু একজন অরণ্যপ্রেমী, তাই এই উপন্যাসেও গাছেদের সম্বন্ধে বেশ কিছু অজানা বৈজ্ঞানিক তথ্য আমরা জানতে পারি। যা আমাদের জানার পরিধিকে আরও বিস্তৃত করবে।

🍁 "কোজাগর" উপন্যাসে উঠে এসেছে বন্য আদিবাসী, দলিত ও নিচু সম্প্রদায়ের মানুষদের দুর্দশা,চরম দারিদ্রতা, উচ্চবিত্তদের দ্বারা তাদের অমানুষিক নির্যাতন এবং নিপীড়ন। তাদের দৈনন্দিন সংগ্রাম,জীবন যুদ্ধ। লেখক আমাদের দেখিয়েছেন হাজারও সমস্যা, অপমান,লাঞ্ছনা,যন্ত্রনা বুকে নিয়ে এবং পেটে জ্বালাময়ী ক্ষুধা নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছে তারা এবং প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধার মতো লড়াকু বন্য মানুষ গুলোর অসামান্য দুর্দশার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার কাহিনী। যে মানুষগুলো পেটের জ্বালা মেটানোর জন্য দুবেলা দুমুঠো ভাত পায় না। ওদের খাবার বাজরার রুটি, কাঁন্দা -গেঁঠি আর শুখা মহুয়া। ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য চরম ক্ষুধার্ত মানুষ গুলো এই খাবারই গোগ্রাসে গেলে। ক্ষুধার তাড়নায়, উচ্চবিত্তদের আগ্রাসনে এবং সামান্য পয়সা উপার্জনের জন্য বন পাহাড়ের তপশিলি সম্প্রদায়ের এই মেয়ে-বউরা রাতের বেলা উচ্চবিত্ত পরপুরুষের কাছে ইজ্জত খুইয়ে তাদের শরীর বিক্রি করে।

ওদের মধ্যে যাদের সামান্য জমি আছে সেখানে কম জলে একটু মকাই, কাঁন্দা -গেঁঠি, বাজরা চাষ করে। কারণ খুব জলের অভাব এখানে। আর বাকিরা বিভিন্ন সমস্যা উপেক্ষা করেও জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে, বন্যপ্রাণী (যেমন- হরিণ, শম্বর,বন্য শূকর) শিকার করে এবং ফলমূল সংগ্রহ করে হাটে বেঁচে যৎ সামান্য উপার্জন করে। এদের এই দুঃখ কষ্ট জর্জরিত জীবনের একমাত্র আনন্দ এবং উৎসবের মুহূর্ত হলো সপ্তাহন্তের হাট। সেখানে গ্রামের মেয়ে বউরা সামান্য সেজেগুজে জিনিসপত্র কেনে এবং পুরুষেরা মহুয়া খেয়ে নেশা করে। এইই তাদের আনন্দ।

🍁 শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবৃত্তি এদের কাছে একমাত্র লড়াই নয়। বনে বসবাস করে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের কবল থেকে নিজেদের জীবন বাঁচানোও এদের কাছে যুদ্ধের সামিল। অন্নাভাবের সঙ্গে তাদের জীবনের ভয়ও জুড়ে থাকে। হর হামেশাই বাঘের হামলায় এই আদিবাসী মানুষ গুলোর প্রাণপাত হয়। সরকার বাঘ রক্ষা করার জন্য নিরন্ন মানুষগুলোর মৃত্যুকেও নির্দ্বিধায় মেনে নেয়। ঠান্ডা ঘরে উঁচু গদিতে বসে এই বুভুক্ষু মানুষগুলোর প্রাণের দাম সরকারের কাছে মূল্যহীন।

🍁 তৎকালীন সময়ের রাজনীতি এবং সমাজ ব্যবস্থাও উপন্যাসে উঠে এসেছে। সরকারি আগ্রাসন ও উচ্চ বিত্তদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নকশাল আন্দোলনের একটি যোগসূত্র এই উপন্যাসে স্থাপিত হয়েছে।

🌿বিষয় সংক্ষেপে :- এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলেন সায়ন মুখার্জি।তিনিই এই উপন্যাসের কথক।তিনি এই ভালুমার বস্তিতেই অনেক বছর ধরে বসবাস করছেন চাকরি সূত���রে। এখান থেকে বাঁশ কেটে অন্যান্য জায়গায় রপ্তানি করা হয় এবং মালিকের অধীনস্থ কর্মচারী হিসেবে তিনি এই সমস্ত দেখাশোনা করেন। ভালুমার অঞ্চলের সমস্ত আদিবাসী, কুলি-কামিনরা তাঁকে "বাঁশবাবু" বলে সম্বোধন করে। এই পাণ্ডব বর্জিত স্থানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করার জন্য কথক এদেরই একজন হয়ে উঠেছেন। তাঁর দেখাশোনা, রান্নাবান্না করে তিতলি নামের একটি আদিবাসী মেয়ে। চাকরির সুবাদে বেশ কয়েকজনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে কথকের, কিন্তু তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অথবা শ্রদ্ধেয় দাদা হলেন এই ভালুমার বস্তির রথীদা। তাঁর সাথে বিভিন্ন দেশি-বিদেশী লেখকদের বই নিয়ে নিজের জ্ঞানের ক্ষুধা মেটাই সায়ান মুখার্জি। এই গাছপালা, বন-জঙ্গল, দরিদ্র আদিবাসী মানুষ গুলোর সঙ্গে কেমন এক অদৃশ্য বন্ধনে বেঁধে রয়েছেন কথক। এদের দারিদ্রতা, কষ্ট, যন্ত্রনা সব কিছুর সঙ্গেই তিনি ওয়াকিবহাল। উপন্যাসে আমরা বেশ কিছু চরিত্রদের সম্পর্কে জানতে পারি, যারা সত্যিই হৃদয়ে দাগ কেটে যাবে। হঠাৎ করেই একদিন থেকে জঙ্গলে শোন্ চিতোয়ার শিকার হতে থাকে একের পর এক গ্রামের নিরন্ন মানুষ গুলো। এর পাশাপাশি গ্রামের প্রতিবাদী যুবক নানকুয়া গর্জে ওঠে মাহাতো, গোদা শেঠ এর মতো নরপিশাচ,প্রভাবশালী লোকেদের ওপর। এই সম্মিলিত আক্রোশ কি গণ-আন্দোলনের রূপ নেবে? কি হবে শেষ অবধি?

উপন্যাসের শেষ পাষাণ হৃদয় মানুষেরও চোখে জল আনতে বাধ্য করবে। 😔😔

পুনশ্চ :- বইটি জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার এক বান্ধবী উপহার দিয়েছিলো 🙂
Profile Image for DEYA CHAKRABORTY.
37 reviews
November 1, 2021
What a masterpiece! I am so glad that I picked this up while going through a horrible reader's block for ages. This book reminded me the imexplicable joy of reading a rich story with relatable characters and ambience. I wish I had the hard copy of this book. A must must must read...
Profile Image for Sabina Khatun.
5 reviews
October 6, 2022
"লেখক যদি দ্বিতীয় বিধাতা, তাহলে তাঁর সৃষ্টি ঈশ্বরের সৃষ্টির মতোই হয় বৈচিত্র্যে বর্ণোজ্জ্বল, গভীরতায় অন্তঃসঞ্চারী। সৃষ্টির মধ্যেই বিধৃত থাকেন স্রষ্ঠা। বুদ্ধদেব গুহর পরিচয় তাঁর লেখার মধ্যেই বিবৃত।"

♦️তাঁর লেখা বই গুলির মধ্যে এটিই দ্বিতীয় বই আমার পড়া। এক কথায় অসাধারণ লাগল।

♦️ 'কোজাগর' - একটি সমাজ সমস্যা মূলক মানবতাবাদী উপন্যাস। অরণ্য পর্বতের পটভূমিতে আদিবাসী গ্ৰামকে কেন্দ্র করে স্বাধীনোত্তর ভারতের সামাজিক ও মানবিক জটিল সমস্যা গুলি উঠে এসেছে উপন্যাসটি তে।

♦️ উপন্যাসটিতে লেখক - প্রকৃতির মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য্যের বর্ণনা যেমন দিয়েছেন তার সাথে সাথে সমাজের সব থেকে চর্চিত বিষয় শ্রেণীবৈষম্যকে ও যথার্থ ভাবে তুলে ধরেছেন।
এখানে এক শ্রেণী শোষণ করছে আর এক শ্রেণী মুখ বন্ধ করে সব সহ্য করে চলেছে বছরের পর বছর।

♦️প্রতিটি ক্যারেক্টারকে সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল রেখে লেখক সুনিপন ভাবে কলমে তুলে এনেছেন। উপন্যাসটির প্রতিটি পাতায় প্রতিটি বাক্য এমন কিছু উক্তি আছে যা হৃদয় স্পর্শ করার মতো ছিল যা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তার মধ্যে থেকে দুটি উক্তির কথা লিখলাম-

" দুঃখ কার না আছে ? জন্মালেই দুঃখ। বড়-ছোট , গরিব - বড়োলোক সব মানুষেরই দুঃখ আছে। কিন্তু কোনো মানুষ দুঃখের মোকাবিলা কেমন ভাবে করে , তা দিয়েই তো তার মানুষ্যত্বের বিচার হয়। মানুষের শরীরের জন্মালেই কি মানুষ মানুষ হয়?"
সায়নকে দিয়ে লেখক অনায়াসে এই কথা বলিয়েছেন। যাকে লেখক একসময় এই আদিবাসীদের সমগোত্রীয় করতে দ্বিধাবোধ করেননি।

আবার লেখক নানকুর উক্তির মধ্যে দিয়ে সমগ্ৰ আদিবাসীর প্রতিনিধি হিসাবে দেখিয়েছেন তার হার না মানার কথা -

" দুঃখ সইবার সাহস , বইবার সাহস, বিপদের মধ্যে মাথা উঁচু করে নিরস্ত্র অবস্থায় বিপদকে অগ্ৰাহ্য করবার সাহসও একটা দারুণ সাহস ! ক'জন পারে?

নানকুর মতো তেজী সংগ্ৰামশীল প্রতিবাদী চরিত্রটি বারবার তার উক্তি মাধ্যমে নানা শিক্ষা দিয়েছে পুরো উপন্যাস জুড়ে। চরিত্রটিকে অসাধারণ ভাবে লেখক উপস্থাপন করেছেন পাঠকের কাছে।

♦️ এই ছত্তিসগড়ের - ভালুমার , চিপাদোহরের আদিবাসীদের সুখদুঃখ, তাদের কষ্ট তাদের জীবনসংগ্রামকে দেখে বার বার প্রণাম করেছি। তাদের জীবনের কষ্টের কাছে আমাদের জীবনের কষ্ট কিছু নয় তুচ্ছ।

♦️ লেখক মঞ্জুরীর উক্তির মাধ্যমে সকল আদিবাসীদের মনের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন -

" ...ভালো থাকুক নানকুয়ারা। ভালো থাকুক পরেশনাথ। বড় হোক। বড় কষ্ট ওদের , এতো কষ্ট মা-বাবা হয়ে চোখে দেখা যায় না। ভালো বিয়ে হোক বুলকির । সাবান মাখুক , তেল , মাখুক, রোজ ভাত-রুটি খেতে পাক। সুন্দর ছেলে - মেয়ে হোক। এমন ধুলোর মধ্যে, লজ্জার মধ্যে, খিদের মধ্যে , এমন অবহেলায় হেলাফেলায় যেন পরেশনাথ আর বুলকির ছেলেমেয়েরা বড় না হয় । এই জীবন ত জানোয়ারদের চেয়েও অধম।"

তাদের জীবনে এই সামান্য চাওয়া! যার জন্য প্রতিনিয়ত তাদের লড়াই করতে হচ্ছে প্রকৃতির সাথে সমাজের বরবর শাসক শ্রেণীর কাছে। তারা হেরে যাচ্ছে তবুও হার মানছে না। তাদের এই লড়াই একদিন শেষ হবে তারাও সুখের মুখ দেখবে। সব অন্যায়ের সব শোষণের জবাব তারাও দেবে এই বিশ্বাস নিয়ে সায়ন নানকুরা এগিয়ে চলেছে। তারা নীচু জাতি বলে অবহেলায় যে অসম্মান পায় তার বিরুদ্ধে এই লড়াই। তারাও মানুষ তাই ওদের ও আত্মসম্মানের সাথে বাঁচার সম্পূর্ণ অধিকার আছে, তা একদল নিষ্ঠুর শাসক গণ তা দিতে চাইনা তাই তাদের‌ এই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে পুরো উপন্যাসটি জুড়ে , একদিন এই লড়াই সফল হবেই হবে।

♦️ লেখক তাঁর জাদুকরী কলম দিয়ে প্রতিটি পাঠককে আত্মসচেনতায় সজাগ করে তোলার মতো লেখনী বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন। যা উদার অভ্যুদয়ের পথপ্রদর্শন করবে নিঃসন্দেহে। উপন্যাসটি শেষ করার পর এক গভীর বিষাদ মনকে ছেয়ে রেখেছে।
Profile Image for Falguni Roy.
28 reviews5 followers
April 30, 2022
কোজাগর- বুদ্ধদেব গুহ
কিছু আলোচনা।

এই উপন্যাসে উঠে এসেছে হালুম পাহাড় ও ভালুমার বস্তিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আদিবাসী দোহাতি মানুষদের কথা যাদের টাইগার প্রজেক্টের বাঘেদের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় প্রতিমুহূর্তে টিঁকে থাকতে হয়। বৃহত্তম গণতন্ত্রে এদের খোঁজ কেউ রাখেনা, প্রকৃতিও তাদের প্রতি বিমুখ। সেই হতদরিদ্র একবেলা শুখা-মহুয়া, কান্দা-গেঁড়ি খুঁটে খাওয়া মানুষের জীবনের হাহাকার, বর্ষার গভীর বর্ষণের পর নতুন আশা নিয়ে জেগে ওঠা, কয়েকপলকের সাংসারিক সুখ, শ্রেণিসংগ্রাম, শহুরে ভন্ডামি, মাহাতোদের মতো রক্তচোষা মনীব যাঁরা ওদের হারে-মজ্জায় ভয় ঢুকিয়ে মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে দিয়েছে সেই আসল ভারতবর্ষের জটিল সামাজিক ও মানবিক গল্প লেখকের মরমী কলমের ছোঁয়ায় বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। কংক্রিটের জঙ্গলে বসে পড়া বুদ্ধদেব গুহর আসল জঙ্গল প্রকৃতির সুদীর্ঘ জাদুকরী বিবরণ সমস্ত সত্তা জুড়িয়ে দেয়। দীর্ঘদিন প্রকৃতির কোলে লালিত মানুষদের সাথে কাটিয়েছেন বলে লেখক সেই মানুষদের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারেন এবং লেখার সময় তাদেরই একজন হয়ে ওঠেন। উপন্যাসের '
নানকু' চরিত্রের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের 'গোরা'র ছায়া পাই বলে এ আমার একান্ত আপন। এমন শক্তিশালী লেখনী হওয়া সত্ত্বেও 'কোজাগর' গুহর অন্যান্য উপন্যাসের মত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। যদিও আমার এখনও পর্যন্ত পড়া বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাসের মধ্যে এটি শ্রেষ্ঠ। আশা রাখি ভবিষ্যতে এটিও বহুল পঠিত হবে।
যা ভালো লাগেনিঃ " আমাদের দেশের গ্রামীণ নারীদের শালীনতাবোধ, লজ্জাবোধ নিয়ে ঠাট্টা করার অবকাশ নেই কোনো। শহরের বিত্তশালিনী, শিক্ষতারা তাদের অর্ধনগ্নতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন আজকাল।" জাতীয় মন্তব্য আমার নারীবাদী মূল্যবোধে আঘাত দেয়।
Profile Image for Gain Manik.
335 reviews4 followers
July 2, 2025
শুধু বাঁশবাবু নয় বরং প্রায় প্রত্যেকটি চরিত্রকে ভালবেসেছি। বুদ্ধদেব গুহ যে কী জাদু মিশিয়ে লিখলেন বলতে পারব না। রথীর চরিত্র উন্মোচন আমার যথার্থ মনে হয়েছে, এরকম অনেক মানুষই আমি দেখি যারা সতত মানবতার কথা বলেন কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত জীবনে তার ধারকাছ দিয়েও যান না, একটা ছদ্মবেশ নিয়ে চলেন সবসময়, হঠাৎ হঠাৎ আসল রূপ প্রকাশ্যে আসে, তখন দেখা যায় এরা চরম সাম্প্রদায়িক এবং স্বার্থান্বেষী। বিটোভেন মোজার্টের সিম্ফনিও পারে না এদের ছদ্ম আবরণ ভেদ করে এদের অন্তরে প্রবেশ করে। নানকু আদর্শের প্রতীক, হিরু ইগোর প্রতীক। গুহ মহাশয় ওঁরাওদের নিয়ে অতিশয় সুন্দর একটা উপন্যাস লিখেছেন বলতেই হবে শেষ পর্যন্ত।
Profile Image for Maria Alam.
23 reviews88 followers
December 21, 2023
পাহাড়ি অঞ্চল, ওঁরাও উপজাতি, বন জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলের মধ্যে কত কথা, কত কাহিনী কত গল্প থাকে। কাগজের ডিগ্রিধারী মানুষদের কাছে তারা হয়তো অশিক্ষিত, কিন্তু জীবনের আসল শিক্ষার কতটুকু আমরা আমাদের ইংরেজি বইয়ের পাতা গুলোতে পাই। ঠেকে - ঠকে শেখা ক্লোরোফিল রঙা বন জঙ্গলের মানুষদের জীবন ভীষণ বিচিত্রকর। ভয়ংকরভাবে বিচিত্রকর!
1 review
November 25, 2025
সম্মোহন! হ্যাঁ, আমি সম্মোহিত।
লেখকের এই প্রথম কোনো লেখা পড়লাম। মানব মনস্তত্ত্বের এমন সুন্দর, সাবলীল অথচ ক্ষুরধার বিশ্লেষণাত্মক বর্ণনা পাঠককে মোহিত করতে বাধ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন নৈসর্গিক আলেখ্য সত্যিই দুর্লভ। তবে আমাকে মুগ্ধ করেছে মানব মনের অন্ধকার দিকগুলির, বিশেষত চারিত্রিক দ্বিচারিতা নিয়ে লেখকের দর্শনবোধ।
সব শেষে বলি, এই উপন্যাস সাহিত্যরসিক পাঠকের অবশ্য পাঠ্য।
Profile Image for Raufiur Rahim.
5 reviews1 follower
September 12, 2022
One of the masterpiece of the writer.The way he narrated the lifestyle of tribal and marginal people was splendid.
17 reviews
August 24, 2024
This is hands down Guha's best book. If one has to compare Aranyak with any other bengali novels, this is the one. Kojagar is Guha's Aranyak.
Profile Image for Kinshuk Majumder.
205 reviews8 followers
March 14, 2024
"কোজাগর" - বুদ্ধদেব গুহ
দে'জ পাবলিশিং
মুদ্রিত মূল্য ₹১০০ (১৯৯৩)


"সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর না হলে, ক্ষণে ক্ষণে ঝগড়া ও করা যায় না। ভাব ও করা যায় না।"

"সংসারের নিয়ম বোধহয় এইরকমই। যারা কিছুমাত্র বাকি না রেখে অন্যকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে বসে থাকে তারাই এমন করে ঠকে। যাদের বিবেক নেই তারাই চিরদিন বিবেকবানদের ঠকিয়ে এসেছে সৃষ্টির আদি থেকে। এইটেই নিয়ম। অন্যরকম হলে হয়তো বলতে হতো যে নিয়মের ব্যতিক্রমই ঘটেছে।"

"অভাবী লোক টাকার জন্যে করতে পারে না, এমন কাজই নেই। অভাবহীন লোকেরাও আরও ‌টাকার, অনেক টাকার জন্যে করতে পারে না এমন কাজও নেই।"

"মাঝে মাঝে আমারই আয়না আমাকে অন্য এমন এমন লোকের মুখের ছবি দেখায়, যাদের সঙ্গে আমার কোনই মিল নেই, যাদের আমি বুঝতে পারি না, এমন কি চিনি না পর্যন্ত। আমি কি নিজেকেই জানি? কেউ কি নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে জানে?"

"মনের ভালোবাসা ছাপিয়েও কি কোনো আলাদা শরীরের ভালোবাসা থাকে? সে তো এক শরীরের অন্য শরীরকে ভালোবাসা। তাকে কি ভালোবাসা বলে? আমি তো ভাবতে পারি না।যাকে মনের ভালোবাসা বাসতে পারিনি তার শরীরের বাগানে ফুল তুলতে যাব কোন লজ্জায়? যদি যাইও, তবে তার শরীরকে পেয়ে আমি কি ধন্য হবো? যে শারীরিক ভালোবাসা মনের ভালোবাসাকে অনুসরণ করে না, সেই শরীরের আনন্দকে কি এক ধরনের আর্তনাদ বলে ‌না?"

"সকলেই বদলায়। মানুষ হচ্ছে নদীর মতো। চলতে চলতে আমরা অনবরত নিজেদের বদলাচ্ছি। চর পড়ছে একদিকে, পাড় ভাঙছে অন্যদিকে।"

"সত্যিকারের ভালবাসা অত সহজে ফেরানো যায় না, ফেলেও দেওয়া যায় না। সে ভালোবাসা প্রাক্ বিবাহিত জীবনেরই হোক বা বিবাহোত্তর জীবনেরই হোক। ভালোবাসা, সে যারই ভালোবাসা হোক না কেন হৃদয়ের যত গভীর থেকে তা ওঠে, ভালোবাসার জনের হৃদয়ের ঠিক ততখানি গভীরে গিয়েই তা পৌঁছায়। ব্যতিক্রম যে নেই, তা বলব না। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটাতে একপক্ষকে অশেষ জোরের সঙ্গে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়। তাতেও কষ্ট কম নয়। কেউ কাউকে খুবই ভালোবাসে জেনেও, তাকে ভালো-না-বাসা অত্যন্ত নিষ্ঠুরের পক্ষেই সম্ভব। কেউ কেউ খুব নিষ্ঠুর হয়। হতে পারে। সবাই পারে না। হতে পারলেও কষ্ট, না-হতে পারলেও কষ্ট।"

"যারা কিছুমাত্র বাকি না রেখে অন্যকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে বসে থাকে তারাই এমন করে ঠকে। যাদের বিবেক নেই, তারাই চিরদিন বিবেকবানদের ঠকিয়ে এসেছে, এসেছে সৃষ্টির আদি থেকে। এইটেই নিয়ম। অন্যরকম হলে বলতে হত যে, নিয়মের ব্যতিক্রমই ঘটেছে।"

"যে শিক্ষা, মানুষকে ভগবান বা ভূতে পর্যবসিত করে, তেমন শিক্ষার প্রয়োজন আমার অন্তত নেই।"

"মানুষ যদি নিজের মাথা নিজে না উঁচু করে, সম্মানিত না করে নিজেকে, তবে অন্য কেউই তাকে উন্নতমস্তক, সম্মানিত করতে পারে না। যার যার মুক্তি তার তার বুকের মধ্যেই বয়ে বেড়ায় মানুষ।"

"মানুষের জীবনে বোধহয় অনেকই ধরে। অনেক আঁটে। আনন্দ, দুঃখ, উৎসব, শোক, মহত্ব, নীচতা সব, সব। এই সমস্ত কিছু নিয়েই ভরে তুলে, আবারও ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে ই তো আমাদের মতো নগণ্য সাধারণ সব মানুষদের বেঁচে থাকা। আমাদের কাছে এর নাম জীবন। শুধুই প্রশ্বাস নেওয়া, আর নিঃশ্বাস ফেলা। ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং সুখ দুঃখের ওপরে আমরা তো কোনোদিনও উঠতে পারি না। আর পারি না বলেই হতাশ নিশ্চেষ্টতায় এই দুঃখময় রাতেও আমরা ঘুমোই, ঠান্ডা রক্তের সরীসৃপের মতো। পরম আশ্লেষে, কুন্ডলী পাকিয়ে।"
Profile Image for   Shrabani Paul.
395 reviews24 followers
December 28, 2023
📌সৌন্দর্যের বুকের মধ্যেই অসৌন্দর্য থাকে, আর যা অসুন্দর বলে মনে হয় তার মধ্যেও সৌন্দর্য থাকে!

📌প্রেমের মানুষকে জীবনে কখনও পেতে নেই, প্রাপ্তিতে প্রেমকে প্রায়শই পরাস্ত করে। প্রেমের দীপ্তি চিরদিনই অম্লান থাকে তার অপ্রাপ্তিতেই!

📌শেষ হওয়ার পরও এক গভীর বিষাদ মনে ছেয়ে রেখে গেছে। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই অসম্ভব রকমের জীবন্ত, তাদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড, তাদের সুখ দুঃখ, তাদের জীবনসংগ্রামের সঙ্গে পাঠক অতি সহজেই একীভূত হয়ে যায়। এখানেই লেখকের সার্থকতা!

📌অসাধারণ বললেও খুব কমই বলা হয় বইটির সম্পর্কে। পড়ার সময় প্রতি মুহূর্তে বইটি কিছু না কিছু ভাবতে বাধ্য করেছে। হৃদয় দিয়ে অনুভব করার মতো উপন্যাস কোজাগর!

Book Buy Amazon Link 🔗 https://amzn.to/4az3RN4

🪴🎋বইয়ের নাম - কোজাগর🎋🪴
✒️লেখক - বুদ্ধদেব গুহ
🖨️প্রকাশক - দে'জ পাবলিশিং
🗒️পৃষ্ঠা সংখ্যা - 368

#কোজাগর #উপন্যাস #রিভিউ
#লেখক #বুদ্ধদেব_গুহ
দারুন উপন্যাস
Displaying 1 - 30 of 32 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.