Syed Mujtaba Ali (Bengali: সৈয়দ মুজতবা আলী) was a Bengali author, academician, scholar and linguist.
Syed Mujtaba Ali was born in Karimganj district (in present-day Assam, India). In 1919, he was inspired by Rabindranath Tagore and started writing to the poet. In 1921, Mujtaba joined the Indian freedom struggle and left his school in Sylhet. He went to Visva-Bharati University in Santiniketan and graduated in 1926. He was among the first graduates of the university. Later, he moved to Kabul to work in the education department (1927–1929). From 1929 to 1932 he studied at the universities in Berlin, London, Paris and Bonn. He earned Ph.D. degree from University of Bonn with a dissertation on comparative religious studies in Khojas in 1932. In 1934-1935 he studied at the Al-Azhar University in Cairo. Subsequently, he taught at colleges in Baroda (1936–1944) and Bogra (1949). After a brief stint at Calcutta University (1950), Mujtaba Ali became Secretary of the Indian Council for Cultural Relations and editor of its Arabic journal Thaqafatul Hind. From 1952 to 1956 he worked for All India Radio at New Delhi, Cuttack and Patna. He then joined the faculty of Visva-Bharati University (1956–1964).
অবশেষে জলে ডাঙায় পড়া হলো। যদিও কথা রাখতে পারি নি, দেরি হয়ে গেছে। ব্যাপার নাহ। পড়তে পেরেই ভাল লাগতেছে।
নিজস্ব স্টাইলে চমৎকারভাবে সমুদ্র পথে মাদ্রাজ থেকে জিবুটি বন্দর (জলে) এবং সেখান থেকে মিশর (ডাঙায়) ভ্রমণের কাহিনী তুলে ধরেছেন আলী সাহেব। জাহাজে থাকাকালীন সময়ে উনার পরিচয় হয় পল ও পার্সি নামে দুই যুবকের সাথে যাদের দেখা মেলে পুরো বই জুড়ে। লেখকের সাথে আরও একজন ইন্টারেস্টিং ভারতীয় লোকের দেখা মেলে যার নাম আবুল আসফিয়া নুর উদ্দীন মুহম্মদ আব্দুল করীম সিদ্দীকী (আলী সাহেব: বাপস😂) পরে লেখক তাকে সংক্ষেপে আবুল আসফিয়া নামে ডাকেন। আলী সাহেব বইটি লিখেছেন নিজের ছেলের জন্য, কিশোরসুলভ ভাষায়। প্রবল হাস্যরসের সাথে বর্ণনা করেছেন জলে ডাঙার ভ্রমণের বিবরণ; তৎকালীন সময়ের ইতিহাসও বর্ণনা করেছেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়।
আলী সাহেবের লেখার একটা অদ্ভুত দিক আছে- কোনো বাচ্চার হাতে থাকা রঙিন বেলুন পিন দিয়ে ঠাস করে ফুটিয়ে দেয়ার মতো ব্যাপার! হাসাহাসি করতে করতে এমন একটা দুঃখের ব্যাপার লিখে ফেলেন যে, হুট করে চুপসে যেতে হয়। বইয়ের লেখা পড়ে হাসাহাসি চলছে এমন সময় কেমন ছোট্ট ভাইটার কথা লিখে ফেললেন! আলী সাহেব জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন মাকে রেখে অনেক দূরে, ভিন দেশে। তাই বুঝি কোনো অদ্ভুত বিষণ্ণ সুর শুনলে মা'কেই মনে করতেন বেশি!
বইটা বড্ড ছোট, মাত্র ১০৪ পৃষ্ঠা। মনে হচ্ছে পল আর পার্সির দোহাই দিয়ে আলী সাহেব পাঠকদের ফাঁকি দিয়েছেন¬_¬" প্যালেস্টাইন ভ্রমণের কাহিনী লিখলে কি-ই বা হতো!! আপনি কেন ৫০/৬০ পাতা লিখবেন!? আপনি লিখবেন ৫০০/৬০০ পাতা, যেন ফুরিয়ে না যায়! যাক গে... প্রবল হাস্যরসের সাথে ঘরে বসে বসে তড়িঘড়ি করে কায়রোর কাফে আর পিরামিড দর্শন করতে চান!? জলে ডাঙায় হামলে পড়ুন।
ওস্তাদ সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রথম যে ভ্রমণ গল্প আমাদের পাঠ্য ছিল তা ষষ্ঠ শ্রেণীতে ‘রসগোল্লা’। যদিও সেটি ভ্রমণ কাহিনী নয়, নিজের জীবনের তো নয়ই কিন্তু সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ঝান্ডুদা নিয়মিত দেশ-বিদেশ ঘুরঘুর করতেন।
কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলীর সত্যিকারের ভ্রমণ কাহিনীর মুগ্ধ পাঠকে পরিণত হলাম পরের ক্লাসে, সপ্তম শ্রেণীতে, যেখানে পিরামিড আর স্ফিংসের দেশ, নীল নদের দান মিশর দিয়ে লেখক ছোট এক রসালো ভ্রমণ কাহিনী ছিলো। সেই পুঁচকে ভ্রমণকাহিনীতে মিশরের ইতিহাস, ফারাওদের জীবনাচরণ, মিশরীয় খাবার দাবার, প্রাচীন রহস্য, এখনের লোকজন, ভ্রমণের হিউমার সবই মেশানো ছিল উত্তম পরিমাণে, কমও নয়, বেশীও নয়, ফলে সেটি ছিল এক চোস্ত প্রানহরণ করা লেখা, আর সেটাই ঘুরে ফিরে পড়ে মনে মনে উটের কাফেলায় চেপে নীল নদের তীর ঘেঁষে চলতে চলতে পিরামিডের পাদদেশে উপস্থিত হতাম নিয়মিত, মানসপটে।
পরে জানলাম ওস্তাদের মিশর ভ্রমণ অতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়, কিশোর উপযোগী এক ভ্রমণবই তিনি লিখেছিলেন ‘জলে-ডাঙ্গায়’ নামে, সেটারই কয়েক পাতা আমরা স্কুল বইতে পাঠ্য রূপে পড়েছিলাম। অতএব, যত দ্রুত সম্ভব সেই বইটি জোগাড় করা হল, পড়া হল, এবং এখনো পড়া হয় , মাঝেমাঝেই।
সে যে কী রসের এক বই! বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার যে সর্বময় ছুটোছুটি হট্টগোল যে সারা বিশ্বের সকল বন্দরেই এক সেটা দিয়ে কাহিনীর শুরু। তারপর সারা বিশ্বের লোক রীতি, ইতিহাস, ইংরেজদের তাল রেখে গালাগালি করে জিবুতি বন্দরে খানিকের জন্য নেমে ফের পোর্ট সৈয়দ দিকে যাত্রার ফাঁকে ফাঁকে মিশরীয়ের যাবতীয় ইতিহাস এবং মিশরীয়দের নাড়ী নক্ষত্রের সন্ধান সবই মিলে গেল।
আর সেই মিশরীয় রেস্তরাঁর খানার বর্ণনায় “আমার প্রাণ তখন কাঁদছিল চারটি আতপ চাল, উচ্ছে ভাজা, সোনামুগের ডাল, পটল ভাজা আর মাছের ঝোলের জন্য- অত শত বলি কেন, শুধু ঝোল্ভাতের জন্য –“ এই লাইন পরবর্তীতে পরিণত হয়েছে ক্লাসিকে।
গত বছর মিশর ভ্রমণের আগে আগেই আরেকবার পড়েছিলাম এই অসাধারণ বইখানা, যদি এখানে উল্লেখিত মিশরীয় শিমবীচির বহুল প্রশংসা শুনে একাধিকবার খেয়ে খুব তৃপ্তি লাভ করি নাই, এবং তাঁর লিখিত যে লাউয়ের মধ্যে ভরে দেওয়া পোলাও-মাংসের রান্নার করা কোন মিশরীয়ই বলতে পারে নাই, তবুও বইটি সাহায্য করেছে বটে প্রায় শত বছর পরেও।
আর আপনার যতই সৈয়দ মুজতবা আলী সমগ্র থাক, এর সাথে তার সাড়ে ৩ খানা ভ্রমণ বই ( দেশে-বিদেশে, জলেডাঙ্গায়, মুসাফির, ভবঘুরে) এবং শবনম আলাদা আলাদা সংগ্রহে থাকা অতি বাঞ্ছনীয়।
বাসায় যদি কোন কিশোর-কিশোরী থাকে, তাদের জন্য জীবনের অন্যতম সেরা উপহার হতে পারে এই বইটি।
সমুদ্র ভালবাসি না ভয় পাই সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হয়। তবে জাহাজে চেপে ভ্রমণের একপ্রকার অদম্য ইচ্ছা আছে। প্রায়শই মনে হয় উঠে পড়ি দূর দূরান্তের কোনও জাহাজে। মাসের পর মাস বিচিত্র এবং বিভিন্ন সব বিশ্ব নাগরিকদের সঙ্গী হয়ে ভেসে চলি অসীমতম অ-ভূখণ্ড পৃথিবীসীমায়। কিন্তু, আমার মতো ঘরকুনো ব্যক্তির পক্ষে কি তা আদেও সম্ভব? বোধহয় না। তাই ভ্রমণ গ্রন্থে খুঁজে নিই অভিজ্ঞতার আবেশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়-
"বিশাল বিশ্বের আয়োজন; মন মোর জুড়ে থাকে অতিক্ষুদ্র তারি এক কোণ। সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে অক্ষয় উৎসাহে।"
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'জলে ডাঙায়' উপন্যাসখানি এই প্রকার অক্ষয় উৎসাহ নিয়েই পড়তে বসেছিলাম। ইতিপূর্বে লেখককে ভালবেসেছি তার সামান্য কিছু ছোটগল্প পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে। সম্পূর্ণ কোনও উপন্যাস পড়া হয়নি। যদিও এক অর্থে এই উপন্যাসকেও সম্পূর্ণ বলা চলে না, তবে যথেষ্ট অবশ্যই।
অনবদ্য এই ভ্রমণ কাহিনীর শুরু সাগরে, শেষ নগরে। আরব সাগরের বুকে ভেসে বেড়ানো সৈয়দ মুজতবা আলী-কে দেখা যায় স্বমহিমায়, সঙ্গে আরও দুই-তিনজন নিয়মিত সঙ্গী। যাদের মধ্যে অন্যতম দু'জন পার্সি ও পল। লেখকের এই দুই বিদেশী সঙ্গী যতক্ষণ আছে, বইয়ের ব্যপ্তি ঠিক ততটাই। তারপর যবনিকা পতন। বইয়ের আরও এক বিশেষ চরিত্র আবুল আসফিয়া নূর উদ্দীন মুহম্মদ আব্দুল করিম সিদ্দীকী। ভদ্রলোকের নাম যতটা বড় ভূমিকাও তেমন, না পড়লে ব্যাপারটা কত গুরুতর তা বোঝানো যাবে না। অতএব পড়তে হবে। বইটি লেখক বলেছেন ছোটদের উপযুক্ত, কিন্তু বড়দের জন্য এ এক ভিন্ন আঙ্গিকের বিনোদন। যার যার বয়সে সে সে আনন্দ খুঁজে পাবে এই উপন্যাস।
সমুদ্র ভ্রমণ কেবল আনন্দেরই নয়, বিষাদময়ও হতে পারে। এই যাত্রায় রয়েছে বিবিধ অসুবিধে। সেসব লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। রয়েছে পল এবং পার্সির সঙ্গে নানান কথোপকথনের দৃশ্য, জ্ঞান দান এবং গ্রহণের মাধ্যমে নানান ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা, ও ঘটনা সম্পর্কে ধারণা প্রদান। রয়েছে দেশ, বিদেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং বিবিধ বিষয়ে আলোকপাত। মুজতবা আলী যে কতো প্রাজ্ঞ এবং তার জানা-শোনার পরিধি যে কতো ব্যপ্ত, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় প্রতিটি পাতায়। এবং একই সঙ্গে তিনি বিনয়ী। সাহিত্যগগনের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলোয় তিনি আলোকিত; তাই প্রায়শই গুরুর উক্তি, বাক্য, পংতি চলে আসে তার স্মরণে। সত্যিকার জ্ঞানীরা যে নিজের জীবনে অন্যের ভূমিকা কখনও অস্বীকার করেন না, তা আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে।
এরপর ঘটনাচক্রে তারা নেমে এলেন ডাঙায়। উদ্দেশ্য মিশর ভ্রমণ, পিরামিড দর্শন। তারপর? সে আরেক ইতিহাস। ক্রমাগত দুর্ভাগ্য, এবং তারই মধ্যে অনবদ্য হাস্যরস। প্রকৃতি এবং পরিস্থিতির অম্ল-মধুর সমালোচনা, আত্মকথন এবং আরও ঘটনাক্রম। কখন যে শুরু থেকে বইয়ের শেষে চলে এসেছি টেরই পাইনি।
আরও একটি বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিভিন্ন ভাষার কবিতার চমৎকার সব রূপান্তর। তা কেবল লেখকের একারই নয়, বরং বেশ কিছু রূপান্তর লেখকের বন্ধু কিংবা অন্য গুণী সাহিত্যিকদের করা। এদের অনুবাদ ক্ষমতা কোন পর্যায়ের কিংবদন্তী না পড়লে বিশ্বাস করা অসম্ভব!
বিদেশের মাটিতে দেশি লোককে দেখতে পাবার আনন্দ, অপরিচিত নদীর অপরূপ রূপ, অজানা খাদ্যের সুস্বাদ/বিস্বাদ, অচেনা মানুষের আন্তরিকতা কিংবা ছলনা, প্রতিটিই যেন নিমন্ত্রণ করে টেনে নিয়ে গেছে, এবং বসিয়ে করেছে সাদর আপ্যায়ন।
সবাই গল্প কথক হতে পারে না, সবার গল্প বলার ক্ষমতাও সমান হয় না, তাতে বাহুল্য থাকে, বর্জন থাকে, রসের সমূহ অভাব দেখা যায়। কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলী পরিপূর্ণ এক গল্পকার। তার অভিজ্ঞতা, এবং বিবরণ মনমুগ্ধকর। কোনও অচেনা বৈঠকখানায় বসে সম্পূর্ণ অজানা মানুষের মাঝেও গল্পের আসর জমিয়ে ফেলার স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষমতা রয়েছে তার। ইচ্ছা আছে লেখকের সব লেখা পড়ার, সব গল্প শোনার, জানার। এই ইচ্ছা কবে পূর্ণ হবে জানি না, তবে চেষ্টা থাকবে অবশ্যই।
আলীসাহেবের ভ্রমণকাহিনি— আহা! সে যেন জগৎশ্রেষ্ঠ বিরিয়ানি। যেমন তার গন্ধ, তেমনই তার স্বাদ। খাওয়ার, থুড়ি পড়ার পর মন বলে, "এ কোন জিনিসের স্বাদ পেলাম! এমন কি আর কেউ লেখে?" লেখে না। জিনিয়াসের জিনিস কি আপনি সব জায়গায় পাবেন? অবিলম্বে পড়ে ফেলুন। পড়া হয়ে থাকলে আজ, তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে, আরও একবার পড়ুন।
এ যেন কোনো মাস্টারশেফের বানানো অতুলনীয় কাচ্চি বিরিয়ানি। সুগন্ধে,স্বাদে যার তুলনা নেই। যার প্রতি পরতে পরতে স্বাদ লুকিয়ে আছে। মুখে দিলে আবেশে,আনন্দে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। মুজতবা আলীর ভ্রমণকাহিনী নিঁখুত কাচ্চিবিরিয়ানির মতই শব্দে,বর্ণনায়,রসে,স্বাদে অতুলনীয়।
আমি স্বভাবে অতি ঘরকুনো। পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বের হই না। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমি কাশ্মির, দার্জিলিং, মিশর, ফ্রান্স প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণের কথা ভাবি! এ এক অদ্ভূত বৈপরীত্য! এই বাস্তবতা আর কল্পনার মাঝের সুবিশাল ফারাকটা আমি তাই মাঝে মাঝেই ভ্রমণকাহিনী পড়ে মেটাতে চাই! যদিও দুধের সাধ ঘোলে মেটে না কিন্তু দুধ মনে করে ঘোল খেতে পারলে দুধের স্বাদ কিছুটা হলেও পাওয়া যায়! অগোচরের পৃথিবীটা ভ্রমণকাহিনী পাঠে দেখার চেষ্টায় আমি তো আর একা নই। কেননা কবি বলেছেন,
বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি। দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী- মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল বিশ্বের আয়োজন; মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ। সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে অক্ষয় উৎসাহে-
বহুভাষাবিদ ও রম্যরসের অসাধারণ কারিগর মুজতবা আলী যে অসাধারণ ভ্রমণকাহিনীও লেখেন তা যারা তাঁর ‘ দেশে বিদেশে ‘ পড়েছেন তাদের সবাই স্বীকার করবেন। বৈঠকি চালে, সহজ সাবলীল ভাষায়, বহু কাব্য-কৌতুক ব্যবহার করে এমনভাবে তিনি ভ্রমণের কথা বর্ণনা করেন যে তা আর তাঁর নিজের ভ্রমণ থাকে না, যেন সবার ভ্রমণের বর্ণনা হয়ে দাঁড়ায়! হিউমারকে তিনি এত সুচারুভাবে ব্যবহার করেন যে তা সামান্যতম বিরক্তির উৎপাদন তো করেই না উপরন্তু বইকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়। সাথে অসাধারণ পর্যবেক্ষণশক্তি, বিপুল অভিজ্ঞতা আর প্রচুর পাঠের কারণে আলোচ্য অঞ্চলের মানুষ, প্রকৃতি আর ইতিহাসও জানা হয়ে যায় সহজেই।
এই আখ্যানটা লেখকের ভারতবর্ষ থেকে ইউরোপগামী এক জাহাজে অবস্থানকালীন ঘটনাবলী ( জল) এবং যাত্রাপথে মিশরে যাত্রাবিরতির সময়কার ঘটনাবলীর ( ডাঙ্গা) বহিঃপ্রকাশ। লেখক নিজে, তার দুই ছাত্র পল ও পার্সি এবং যাত্রাপথের এক বন্ধু আবুল আসফিয়া – এই চারজনের একত্রে সমুদ্রযাত্রা এবং স্থলভ্রমণের বৃত্তান্ত এই বইটা।
বইটার সবচেয়ে ভালো লাগার দিক এর বৈঠকি ধরণ অর্থাৎ একটু পর পর পাঠককে সম্মোধন করে কিছু বলা যেন লেখক উপস্থিত শ্রোতাদেরকে তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত শোনাচ্ছেন এবং দ্বিতীয় বিষয়টা হলো প্রাসঙ্গিক অসাধারণ কিছু তথ্য, কাব্য, ইতিহাস, হাস্যরস ইত্যাদির সমন্বয়। মালদ্বীপ, সুয়েজ খাল, বাংলায় পর্তুগিজ আক্রমণ, চীনে জিরাফ পাঠানো, মিশরের পিরামিড রহস্য ইত্যাদি অনেক ইতিহাস এনেছেন প্রাসঙ্গিকভাবে। সাথে তাঁর সরাসরি শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যে তো পুরো বই ভরপুর, একটু পরপরই গুরুদেবের কাব্যে ব্যখ্যা হয়ে উঠেছে জীবন্ত। এছাড়া শেক্সপিয়ার, ওমর খৈয়াম, গ্যেটে প্রভৃতির বহু পঙক্তি উঠে এসেছে পাতায় পাতায়। আর কি বর্ণনা! একদিকে যেমন রয়েছে জিবুতি বন্দরের সেই মদের বোতলে পানি গছিয়ে দেওয়া বা কায়রোর রেস্তোরাঁয় শশার ভেতর থেকে পোলাও বের হওয়ার বর্ণনা অন্যদিকে তেমনি রয়েছে মরুভূমিতে সূর্যাস্ত বা জ্যোৎস্নায় পিরামিডের সৌন্দর্যের বর্ণনা। আর ছাত্রদের নিয়ে, সহযাত্রীদের নিয়ে এমনকি মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়ে করা রসিকতাগুলোর তো তুলনায় হয় না! বইযের প্রতিটা পাতায় পাতায় যেন ছড়িয়ে রয়েছে লেখকের পান্ডিত্যের কথা, রসবোধের কথা, অনন্য এক গল্পকারের কথা। ভ্রমণকাহিনীতে চোখ বুলিয়ে যারা সত্যিকারের ভ্রমণের স্বাদ পেতে চান তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য!
স্মার্ট আইডি কার্ড নেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে শেষ করলাম। সৈয়দ সাহেবের লেখা যে কতটা চুম্বকশক্তি ধরে, আমার এই স্বীকারোক্তিই বোধহয় তার প্রমাণ। মানুষের ঠেলাঠেলি, ধুলোবালি আর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গেছি।
"এই যে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাটিয়ালি গীত! সৃষ্টিকর্তা যদি তাঁর পুব-বাংলার লীলাঙ্গনে শত শত নদীর আলপনা না আঁকতেন তবে কি কখনও ভাটিয়ালি গানের সৃষ্টি হত? আর একথাও ভাবি, তিনি রয়েছেন মোহনিয়া প্রবাহিনী আর আমরা তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রচেছি ভাটিয়ালি । অবশ্য তাঁরই কাছ থেকে ধার করে। আমরা যখন ও-ও-ও বলে ভাটিয়ালির লম্বা সুর ধরি, মাঝে মাঝে কাঁপন জাগাই তখন কি স্পষ্ট শুনতে পাও না, দেখতে পাও না ‘ও’-র লম্বা টানে যেন নদী শান্ত হয়ে এগিয়ে চলেছে, যখন কাঁপন লাগাই তখন মনে হয় না, নদী যেন হঠাৎ থমকে গিয়ে দ-এর সৃষ্টি করেছে?
প্যারিস-ভিয়েনার রসিকজনের সম্মুখে আমি আমার হাজারোটা নদী কাঁধে বয়ে নিয়ে হাজির করতে পারব না, কিন্���ু ভাটিয়ালির একখানা উত্তম রেকর্ড শুনিয়ে দিতে পারি" ।
- মূল ভ্রমণকথা কায়রো নিয়ে । কিন্তু তাতে কী? আলী সাহেবের মুজতবীয় (?) বর্ণনা কোথা থেকে কোথায় নিতে পারে তা মুজতবা আলী না পড়লে কে বোঝাবে !!
সৈয়দ সাহেবের লেখা নিয়ে কিছু লিখার জন্য আমার আঙ্গুল কম পরে যাবে। আর তারকা কমাতে লাগবে আরো তিন চারটা কলিজা। বাংলায় ভ্রমণকাহিনীর আসল মেজাজের অধিকারী এবং সত্যিকারের বৈঠকী ঘরানার স্রষ্টা একজনই। আলী সাহেব।
এই বইটি ছোট্ট, অজস্র মুজতবা রসে টইটম্বুর। ছেলে ফিরোজের জন্য লিখেছেন বলে বর্ণনাভঙ্গি ও বিষয়বস্তু অনেকটাই কিশোরসুলভ। শসা ফেটে পোলাউ-মাংস, মশার পায়ের ফ্রেকচার, উদ্ভট বেশভূষা দেখে সারবেধে এক পল্টন সেনার মতো প্রশ্ন ভিড় করা, হাত ঘুরিয়ে যথেচ্ছা ইঙ্গিতের মাধ্যমে অন্যের অসহায় অবস্থার মজা নেয়ার কুপ্রবৃত্তি - এমন আজিব কিসিমের বর্ণনার যোগ তাঁর কলম থেকেই বেরোয়। আর ঘটনার ঘনঘটায় একবার খাবারের ফিকির, তো একবার জ্ঞানপ্রদানের হিড়িক, কখনো বা রোগমুক্তির সনদ যোগাড়, আবার কখনো রেল ধরার জন্য স্টেশনে ঝঞ্ঝাট। রেঞ্জ!
মাদ্রাজ থেকে জাহাজে করে জিবুটি বন্দরে যাত্রাবিরতি করে সুয়েজে নেমে তড়িঘড়ি করে কায়রো দর্শন আর তারপর সেখান থেকে সৈয়দ বন্দরে। এই হচ্ছে গল্পের কলেবর। কিন্তু এরি মাঝে উদ্ভাসিত হয়েছে খৈয়াম থেকে ঠাকুরের দর্শনতত্ত্ব, বোম্বেটেদের 'বোম্বেটে' হবার তত্ত্ব, সোকত্রা দ্বীপে ভারতীয় গরু চারণের ইতিহাস, জেলে ও জলজীবিদের জীবনতত্ত্ব, খালাসিদের মুখের আড় নিয়ে পুঙ্খনাপুংখ পর্যবেক্ষন, বন্দরের প্রাণীদের নিয়ে আলোচনা, মসজিদ ও পিরামিডের তুলনামূলক শৈল্পিক ব্যাখ্যা আর সর্বোপরি যাবতীয় সবকিছুকে বাংলার সাথে তুলনা করে পেশ করা।
এই ব্যাপারটাতেই মুজতবা সাহবে সবাইকে টেক্কা দেন তুড়ি বাজিয়ে। যেখানেই যান, যত অদ্ভুত অভিজ্ঞতাই দেখেন বা উপভোগ করেন সব তিনি বাঙালির চোখে দেখেন। বাঙাল চোখ, কান আর জিহবাকে সম্বল করে তিনি দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন কাল ও রসোত্তীর্ন কিছু অমোঘ রচনা। যার রস ফুরোতে চায় না আমার মতো গুণমুগ্ধ পাঠকের কাছে।
সৈয়দ সাহেবের লেখা নিয়ে কিছু বলার সাহস বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। আমি শুধু তাঁর মন্ত্রমুগ্ধ ভক্ত পাঠিকা। তবে ডাঙার অংশ অর্থাৎ মিশর ভ্রমণ অংশটুকু নিয়ে 'জিবুটি বন্দর' বলে একটা গল্প পড়েছিলাম সেই ছোট্টবেলায়। তার প্রায় সবই মনে আছে। সেই জিবুটি বন্দরের চুল কাটা আর কায়রো শহরের শশার ভেতরে পোলাও!! সব মনে আছে। আমি কেমন যেন উদাস হয়ে যাই।
(গাধা হলে যা হয়। ভাবছিলাম জিবুতি, লিখে দিলাম সুয়েজ!!)
যখন পড়সি তখন আমি নিজেও ভ্রমণ করতেসি, তবে ঠিক জলে ডাঙায় নয়, বরফে মাটিতে। বইটায় পাঠকের সাথে কথা বলা হয়েছে, তাই আমার ভ্রমণের সময় তেমন একা লাগেনি, মুজতবা আলীর কথা শুনেই সময় চলে গিয়েছি। দুবার তিনি ভ্রমণসূচী চেঞ্জ করেছেন পিরামিড ও জেরুজালেম দেখার জন্য। নতুন কিছু দেখার জন্য এমন ক্ষুধা ভাল লাগে। ভ্রমণে অবশ্য পাঠ্য
ইদের ছুটিতে চাচার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হুট করেই তুলে নিয়েছিলাম বইটা।হ্যা সেই অসম্ভব সুন্দর উৎসর্গপত্রটা দেখেই।হুটহাট ডিসিশনের রেজাল্ট সবসময় বোধহয় এমন সুন্দর ই হয়! ছুটির বই হিসাবে 'জলে-ডাঙায়' পাবে ৫/৫, কারণ বাড়িতে বসেই আরব সাগর,জিবুতি বন্দর,'ফুল'স রেস্টুরেন্ট',পিরামিড,নীল ভিজুয়ালাইজ করে ফেললাম আর মুজতবা আলীর লেখনীর জন্য 'জলে-ডাঙায়' পাবে ৫ এ ১০।
This entire review has been hidden because of spoilers.
"ভ্রমন কাহিনী লেখায় বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ মুজতবা আলী কে টেক্কা দেয়ার মতো কেউ এখনো জন্মেছে কিনা সন্দেহ আছে" উক্তিটি করেছিল কিছুদিন আগে এক পরিচিতজন আমি ভ্রমন কাহিনী পছন্দ করি শুনে। মুজতবা সাহেবের ছোট গল্প পড়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস পড়া হয়ে ওঠেনি কোন এক অজ্ঞাত কারনে। আর যেহেতু তার ভ্রমন কাহিনী ট্রেড মার্ক টাইপের তাই "জলে ডাঙায়" দিয়ে শুরু করলাম আমার মুজতবা আলী জার্নি।
জাহাজ আরব সাগর ধরে ছুটে চলেছে, লেখক তার দুই হাটুর বয়সী বিলেতি সঙ্গী পল ও পার্সি সাথে আমি নিজেও ভাসছি। ভ্রমন কাহিনী পড়ে যদি নিজেকে লেখকের ভ্রমন সঙ্গী নাই বানানো গেলো তবে সে কেমন ভ্রমন কাহিনী। সৈয়দ সাহেব সার্থক সেদিক থেকে নির্দ্বিধায়। সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয় ভাষা জানা সৈয়দ সাহেবের প্রতিভা পল ও পার্সি খুব ভাল ভাবেই টের পেয়েছিল সমুদ্রের ঢেউ এ ভাসতে ভাসতে, তাইতো অসম বয়সী হলেও তাদের রসায়ন দারুন হয়ে উঠেছিল। পল ও পার্সির জন্য যেন এই ভ্রমন হয়ে উঠেছিল শিক্ষা সফর।
জাহাজেই তাদের পরিচয় আবুল আসফিয়া নূর উদ্দীন মুহম্মদ আব্দুল করিম সিদ্দীকী নামক এক রহস্য পুরুষের সাথে। এই ভদ্রলোক ছিল বলে ভ্রমনটা আরো দারুন উপভোগ্য ও উত্তেজনা পূর্ণ হয়েছে সেটা পড়লেই বুঝতে পারবেন। উপন্যাসের কাহিনী জলে ও ডাঙায় উভয় যায়গাতেই ব্যাপৃত তাই নামকরন পুরোপুরি সার্থক।
জিবুতি বন্দরের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর। ক্যাফেতে মাছির অত্যাচারের বর্ণনা পড়ে গা গুলিয়ে উঠছিল। আর মিশর ভ্রমন ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা। কিসের? পড়লেই বুঝবেন। বললে তো বলাই হয়ে গেল। লেখকের বর্ণনা পড়ে আমার খুব মরুভূমিতে সূর্যাস্ত দেখার লোভ হচ্ছে। তবে শেষে এসে পল ও পার্সির জন্য খুব মন খারাপ হচ্ছে।
সৈয়দ সাহেবের আরেকটা ট্রেডমার্ক বিষয় হল হিউমার। দারুন দারুন সব হিউমারে পূর্ণ উপন্যাসটি। এ বইটি মূলত কিশোরদের জন্য লেখা হলেও সব বয়সীরা সমান ভাবে উপভোগ করবে বলেই আমার মনে হয়।
ভ্রমণ কাহিনী পড়তে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। আর তা যদি হয় প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা তাহলে ত কথাই নেই। ছোট বেলায় স্কুলের বাংলা বইয়ে “নীল নদ অার পিরামিডের দেশে” নাম একটা গল্প পড়ি। গল্পটা মূলত এ বইয়েরই অংশবিশেষ। মুজতবা আলীর লেখা পড়ার সবচেয়ে বড় মজা হল এই যে, মজা পাওয়ার সাথে সাথে যেই বিষয় নিয়ে পড়ছি, তা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন ও হয়। এটি একটি কিশোর উপন্যাস হলেও যে কোন বয়সের পাঠকের এটি ভালো লাগবে। নীল-নদ, মিশর, পিরামিড, সুয়েজ খাল ও বন্দর, ভূমধ্যসাগরে পোর্টসাঈদ বন্দর, জিবুটি বন্দর, জিরাফ কাহিনী সহ অনেক কিছুর বর্ণনা দেওয়া আছে। সব মিলিয়ে মধু মধু।
বই এর ফ্ল্যাপের লেখা অনুযায়ী 'জলে ডাংায়' ছোট দের জন্য লেখা। কিন্তু এই বই পড়ার জন্য বয়স কোন বাধা নয়। দেশ ভ্রমণের বর্ণনার সাথে সাথে ইতিহাস আর বিভিন্ন মানব সমাজের বিবরণ হাস্যরসাত্মক উপমায় পূর্ণ। এক বসাতে উৎস্বর্গ থেকে পরিশিষ্ট পর্যন্ত এসে মনে হল আবুল-আসফিয়া- কী কী যেন-সিদ্দিক সাহেব, পল আর পার্সিকে সাথে নিয়ে ভূমধ্যসাগর অথবা প্যালেস্টাইন ভ্রমনটা একবারে সেরে নিতে পারলে আরো ভালো হত।
রাতে শুয়েছিলাম ঘুমাবো বলে, পাশে রাখা বইটা ভাবলাম একটু চোখ বুলিয়ে নেই। কিন্তু মুজতবা আলীর কায়রো ভ্রমণের বর্ণনায় ঘুম কোন জল ডাঙা পেরিয়ে গেল তার কোন হদিশ পেলাম না। আফসোস হলো লেখকের প্যালেস্টাইন ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে না পেরে, কিন্তু মিশরের মোহময় বর্ণনা তা ঘুচিয়ে দিল। এর পাশাপাশি বাংলার ইতিহাসেরও কিছু তথ্য আরো পড়ার আগ্রহ বাড়ালো। এমন ভ্রমণকাহিনী নিঃসন্দেহে অতুলনীয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
অসাধারণ।দেশে বিদেশের মতো ই উপাদেয়। একটা বই এত দারুন হয় কিভাবে! উনার লিখা এত বিমুগ্ধকর যে বলার ভাষা এই অধমের নিকট অনুপস্থিত।তাই রিভিও লিখার মতো এহেন কঠিন কর্ম থেকে নিজেকে ইস্তেফা দিলাম।
This entire review has been hidden because of spoilers.
দেশে-বিদেশে পড়ার পর শুরু করেছিলাম মুসাফির। কঠিনতম বাক্যজালে এতই আটকা পড়েছিলাম যে মুসাফির শেষ করতে পারিনি এখনো। তাই ধরলাম জলে-ডাঙায়। ভ্রমণ কাহিনী আর সাহিত্য রসের সন্ধানে আরেকটা অতুলনীয় বই। মিশরীয় ভূমি চর্মচক্ষে দেখা হয়নি, তবে কল্পনার পটে অর্ধেক দেখে ফেলেছি। আর জাহাজ ভ্রমণ নিয়ে মনস্থির করে ফেলেছি। পরবর্তী বিদেশ ভ্রমণ অতি অবশ্যই জাহাজ মারফত হতে হবে। শুধু দরকার দুটো পল আর পার্সি।
আহা! কী অসাধারণ রসবোধ! কী সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা! ভারতবর্ষ থেকে জাহাজে করে ইউরোপ যাওয়ার পথে কায়রোর পথে প্রান্তরে ছুটে বেড়ানো - প্রতিটি মুহূর্তই চোখের সামনে বিমূর্ত হয়ে থাকল। এত চমৎকার করে ভ্রমণ কাহিনী বাংলা ভাষায় মনে হয় না আর কেউ লিখতে পারবেন। এহেন ঘরানার লেখনীতে সৈয়দ মুজতবা আলীর কোন তুলনাই নেই - জলে ডাঙায় তার একটি সামান্য উদাহরণ মাত্র। অবশ্য পাঠ্য!
ভ্রমন-ট্রমন এগুলার প্রতি আপনার কোন উৎসাহ নাই? ঝক্কি-ঝামেলা ভাল্লাগে না? জলে ডাঙ্গায় পড়েন, এখনি বাইর হইতে মন চাইবো। বাইর হইতে পারতেছেন না? তাইলে কি আর করবেন, বইটা পড়ে দুধের স্বাধ মাঠায় মিটান। তাও ভাল। ভ্রমণ না, ভ্রমণের বর্ণনাও যে কতখানি মজার হইতে পারে, তার বিশ্বস্ত উদাহরন এই বই।
“সমস্ত ব্যাপারটা কেমন ভূতুড়ে বলে মনে হয়।…………মাঝে মাঝে আবার হঠাৎ মোটরের দু মাথা উঁচুতে ফুটে ওঠে, জ্বলজ্বল দুটি সবুজ আলো; ওগুলো কি? শুনেছি ভূতের চোখই সবুজ রঙের হয়।……………” এক বড় বোনের বইতে পড়া শুরু করেছিলাম ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশে’। ভেবেছিলাম আমিও এই মজার গল্প পড়ে একদিন পরীক্ষায় বসবো।আহা! কি সুন্দর মিশর, রাতের কায়রো শহর, চন্দ্রালোকিত মরুভূমির গল্প! বিধি বাম! আমার বছর পাঠ্যবইয়ের আমূল পরিবর্তনের কারণে সৈয়দ মুজতবা আলীর সাথে ভালো করে পরিচয় হলো স্কুলের বিদায় বেলায়। সৈয়দ মুজতবা আলীকে আমার ভালো লাগে মূলত তার বহু ভাষাজ্ঞানের কারণে। তবে লেখক কিংবা গল্প বলিয়ে হিসেবেও তিনি কম যান না। রসিয়ে রসিয়ে বলেছেন জিবুটি বন্দর (জল) থেকে মিশরের (ডাঙা) গল্প । সে কি রসবোধ! কোলাহলপূর্ণ জিবুটি বন্দরের সাথে তামাম বন্ধরের তুলনা দিতে দিতে শুরু করেন গল্প বলা। তারপর ধীরে ধীরে মেলে ধরেন তার জ্ঞানের ভাণ্ডার, সেই সাথে ভ্রমণ বর্ণনা ত রয়েছেই। বইয়ে আমার ডাঙার বর্ণনাটুকু বেশি ভাল লেগেছে। মিশরীয় ইতিহাস, তাদের খাদ্যাভ্যাস, আচার ইত্যাদি বেশ সুন্দর করে বলেছেন। “আমার প্রাণ অবশ্য তখন কাঁদছিল চারটি আতপ চাল, উচ্ছে ভাজা, সোনামুগের ডাল,পটল ভাজা আর মাছের ঝোলের জন্য”- এটুক পড়ার পর আমার প্রাণও যেন কাঁদা শুরু করেছিল এই খাওয়ার জন্য। একই সাথে গল্প বলার সাথে সাথে যুতসই কবিতা-ছন্দ তুলে দিয়েছেন। নিজের অনুবাদ ছাড়াও বিখ্যাত অনেকের অনুবাদের কথাও বলেছেন। এ যেন দইয়ের সাথে মিষ্টি! বইটা শেষ করার পর “শেষ হয়েও হইল না শেষ” এর মত একটা অতৃপ্তি রয়ে গেল। আরেকটু লিখলে কি এমন ক্ষতি হতো? পুরো যাত্রাটা লিখলে না হয় একটু কলেবর বেশিই হতো, কিন্তু তৃপ্ততা তো আসতো। লেখকের সহযাত্রী পল ও পার্সিকে ফাঁকি দেয়ার নাম করে পাঠকেই ফাঁকি দিয়ে দিলেন। সে যাই হোক, একখানা দারুন বই পড়তে পেরে মেলাদিন পর মনটা ফুরফুরে লাগছে। যারা ঘুরতে ভালবাসেন তাদের নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে। যারা ঘুরে বেড়ানো ভালোবাসেন না, তাদেরও খারাপ লাগবে না লেখকের অসাধারণ গল্প বলার ঢঙের কারণে।
বোম্বে বন্ধর থেকে কলম্বো হয়ে ইউরোপ যাত্রাকালে পিরামিডের দেশ মিশরে ঘন্টা চব্বিশেকের জন্য ঢু মারা নিয়েই লেখকের জলে-ডাঙায়। সাথে দুই তরুণ বন্ধু; ভাবুক পল আর চঞ্চল পার্সি। ছেলে ফিরোজকে উৎসর্গ করে লেখা আলী সাহেবের এই ভ্রমণ কাহিনী ছেলে-ছোকরাদের পল-পার্সি আর লেখকের সঙ্গে জাহাজের ডকে বসিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ভারত সাগর হয়ে আদন বন্ধরে। সেখান থেকে কায়রো ঘুরিয়ে পোর্ট সইদতক। মিশরী খানাখাদ্য, রাজ-রাজরার গল্প আর প্রাচীন বাংলার এক রাজার জিরাফ আমদানীর গল্প শোনার ফাঁকে টুক করে কেঁটে যাবে ঘন্টাকয়েক সময়!
May be a book kids would enjoy. It’s a tiny log about a journey on a ship from India to Europe. The characters de-board at the Suez to explore Cairo & the pyramids. There are few funny events on the way, that’s about it.
I picked it up from Oxford Park street during a visit to Kolkata, only to realise that I already have a copy of Mujtaba’s popular travelogue to Afghanistan - which I’m unable to locate currently.
দেশেবিদেশে প্রথম পড়েছি আজ বছর নয়েক হলো। তারপর বহুবার পড়লেও ঐ বইয়ের মায়া কাটাতে পারলাম না। এই বইটাতেও একই বাচনভঙ্গি, কবিতাশৈলী, সেজন্য আর আগের মতো মনকাড়া কিছু লাগে নাই। কিন্তু অতি অল্প সময়ের জন্য স্থলচর, অর্থাৎ মিশর ভ্রমণ, আর দীর্ঘসময়ের জন্য জলচর বা জাহাজে থাকার অভিজ্ঞতার অল্পবিস্তর বর্ণনা, বরাবরেরই মতোই সেই মুজতবা।
Syed Mujtaba is probably my favourite among bengali writers. He has such an easy way of narrating events, and always with a hint of humour. I wish he kept going - I was hoping to read some accounts of his visit to Palestine. Sadly the book ends before he actually lands in Palestine- I don't know if he has actually written about this or where. Happy reading!