Jump to ratings and reviews
Rate this book

নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি

Rate this book

178 pages, Hardcover

First published January 1, 1966

4 people are currently reading
149 people want to read

About the author

Sankar

158 books179 followers
Shankar's real name is Mani Shankar Mukherjee. Sankar is a very popular writer in the Bengali language. He grew up in Howrah district of West Bengal, India.
Shankar's father died while Shankar was still a teenager, as a result of which Shankar became a clerk to the last British barrister of the Calcutta High Court, Noel Frederick Barwell. The experience of working under Mr. Barwell provided the material for his first book Koto Ojanare (কত অজানারে), translated as The Great Unknown.
During 1962, Shankar conceived the idea of writing the novel Chowringhee on a rainy day at the waterlogged crossing of Central Avenue and Dalhousie - a busy business district in the heart of Kolkata.
Many of Shankar's works have been made into films. Some notable ones are - Chowringhee, Jana Aranya (জন-অরণ্য, translated as The Middleman) and Seemabaddha (সীমাবদ্ধ, out of which the last two were directed by Satyajit Ray.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
22 (22%)
4 stars
42 (42%)
3 stars
26 (26%)
2 stars
8 (8%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 15 of 15 reviews
Profile Image for Shahriar Rahman.
84 reviews13 followers
October 20, 2022
Brilliant!
Absolutely brilliant!


এই ছিলো “নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি” শেষ করার পর আমার অনুভূতি। হ্যা শেষটা অন্যরকম হতে পারতো, শেষের দিকে কয়েক প্যারায় সুগারকোটিং না থাকলেও পারতো, তবুও এই উপন্যাস আরো অন্তত দুশো পৃষ্ঠা চললেও বোধকরি আমার কোন আপত্তি ছিল না।

যতই শংকরের লেখা পড়ছি দিনে দিনে আমার মুগ্ধতার “হা” বড়ই হয়ে চলছে। এই উপন্যাসের প্রকাশকাল ১৯৬৬, আমি তো আমি, আমার দেশেরও জন্মের আগে! সেই সময়ে, পোকামাকড়বিদ্যার (এন্টোমলোজি) মত এমন অদ্ভুত এক বিষয় সাথে নিয়ে আমাদের দেশ আর সমাজের এমন অদ্ভুত একটা দিককে এভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব, এই ৫৬ বছর পরে এসেও তা ভেবে আমার মাথা ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
ছোট এই ১৭৪ পাতার উপন্যাস বিখ্যাত বিজ্ঞানী জীমূতবাহনকে মাঝে রেখে লেখা। গবেষণা এবং আবিষ্কারই যার জীবনের একমাত্র চাওয়া। শুরুটা হয়েছিল কীটনাশক নিয়ে, খুব দ্রুত কিছু আবিষ্কার করেছিলেন, পেটেন্ট পেয়েছিলেন। এরপরই তিনি অনুধাবন করলেন, কীটনাশক আসলে স্থায়ী সমাধান নয়। প্রকৃতির নিয়মেই সকল জীব অভিযোজিত হচ্ছে, ২০ বছর আগে যে কীটনাশক কাজ করত আজ তা কোন কাজই করছে না অথবা করলেও কয়েকগুণ বেশি প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এখান থেকেই শুরু হল তার গবেষণার নতুন মোড়, কাটা দিয়ে কাটা তোলা, ইন্সেক্ট দিয়ে ইন্সেক্ট নিয়ন্ত্রণ, বায়োলজিক্যাল ওয়েপন নিয়ে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল লেভেলে খেলা!
জীমূতবাহনের শুরু করা সেই খেলারই দুই তুখোর খেলোয়ার হল বিদেশ থেকে সদ্য পিএইচডি করে আসা অমিতাভ আর জীমূতবাহনের বন্ধুর মেয়ে, পিএইচডিরত ইন্দুমতী। দুজনেই বঙ্গদেশ থেকে বহুদূরে, ভারতের কোন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠা নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরির একনিষ্ঠ গবেষক, তাঁদের “মাস্টারমশাই” জে বি সেনের অধীনে করে চলেছেন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি।

কিন্তু এই কাঠখোট্টা টপিক নিয়ে, তা যতই শংকরের ঝরঝরে লেখাই হোক না কেন, মন ছুঁয়ে যাওয়া বড্ড কঠিন। ঠিক এখানেই শংকরের মুনশিয়ানা। এমন একটা চরিত্রকে তিনি ফেলেছেন জীবনের কঠিন এক পরীক্ষায়। যে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কমবেশি আমাদের এই উপমহাদেশের প্রতিটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে এবং বাবা-মাকে যেতে হয়। একে কি দাম্পত্য কলহ বলব? নাহ, কলহে তো দুই পক্ষের সমান কন্ঠ থাকা জরুরী, এতে তো জীমূতবাহন শুধু শুনেই গিয়েছেন, যা বলার বলেছেন ঈশিতা। জীমূতবাহন শুধু দেখেই গিয়েছেন, যা করার করেছেন ঈশিতা। জীমূতবাহন প্রতিবার হেরেই গিয়েছেন, প্রতিবার জিতেছেন ঈশিতা। বিখ্যাত ব্যারিস্টার জগদানন্দ বসুর সাত মেয়ের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠজন, সরাসরি রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য, জীমূতবাহনের স্ত্রী, ঈশিতা!

অনেক আগে, এক মুভি রিভিউতে পড়েছিলাম, টাইটানিক জাহাজের কাহিনী তো সবারই জানা, সবাই জানে সিনেমার শেষে কী হবে, এর আগেও বহুত সিনেমা হয়েছে টাইটানিক নিয়ে, তবুও জেমস ক্যামেরুনের টাইটানিক সর্বকালের সেরা একটা ব্লকবাস্টার কেনো? কারণ ক্যামেরুন এই দুঃখের করুণ সুরের সাথে এক সুতায় গেঁথেছেন এক অমর প্রেম কাহিনীকে, ডুবন্ত টাইটানিকের কাহিনী যতটুকু দেখিয়েছেন, ঠিক ততটুকুই দেখিয়েছেন জ্যাক আর রোজের সেই প্রেম কাহিনী। যদিও অনেকে দাবী করতে পারেন বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, তবুও, আমার কাছে অন্তত এই একটা অ্যাঙ্গেল থেকে নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি আর টাইটানিক একইরকম। একজন পৃথিবীবিখ্যাত আবিষ্কারক, বিজ্ঞানের পূজারী, একান্ত গবেষকের গল্পের সাথে জুড়ে দেয়া সংসারে অশান্তির গল্প!

বিশ্বকে বদলে দেয়া খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খানের এমআইটির ২০১২ সালের সমাবর্তনের ভাষণে বলেছিলেন - “...remember that whom you choose as a life partner is a far more important decision than what career you choose to pursue.” নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি পড়তে নিলে অনেকবার আপনার এই কথা মনে হবে। মাস্টার স্টোরিটেলার শংকর দেখিয়েছেন এই উপমহাদেশীয় সামাজিক দৈন্যতার বেড়াজালে জড়িয়ে কীভাবে একেরপর এক ঝরে পড়ে তুমুল প্রতিভাবান বৈশ্বিক সম্পদগুলো…

এই বই লিখতে শংকরের তুমুল খাটাখাটনি করতে হয়েছে, তা বইয়ে থাকা অসংখ্য কীটপতঙ্গের নাম, তাঁদের বৈজ্ঞানিক নাম, কোন পোকার স্বভাব কী, কোন মাকড়কে কী রাসায়নিক দিয়ে নির্মূল করা যায়, কবে কোন সালে কোন দেশে কোন পোকার আক্রমণে কী ক্ষতি হয়েছিল সে বিবরণ ইত্যাদি দেখলেই বোঝা সম্ভব। কিন্তু ৫৬ বছর পরেও এই বই অমর হয়ে আছে শুধু এই খাটাখাটনির জন্য না, বরং তার লেখনী আর বিষয়বস্তুর গুণে। ছোট্ট কয়টা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি -

...কিন্তু সুপ্রিয় সেলসম্যান হয়েছে। বিজ্ঞানের গবেষণা ছেড়ে দিয়ে প্রিয় ছাত্র সুপ্রিয় চৌধুরী ইনসেক্টিসাইডের ফেরিওয়ালা হয়েছে। একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে হচ্ছে জীমূতবাহনের। ফেরিওয়ালার চাকরিতে যদি সবচেয়ে বেশি মাইনে পাওয়া যায়, তাহলে মাইক্রোস্কোপ পাশে সরিয়ে রেখে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ছেড়ে দেশের সেরা ছাত্ররা কোটপ্যান্ট পরে, এয়ারকন্ডিশন ক্লাসে বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে মাল বিক্রি করে বেড়াবে? প্রাইস ক্যাটালগ, সেলস ট্যাক্স আর একচুয়াল ইউজার্স লাইসেন্সের তলায় চাপা পড়ে বিজ্ঞানের দীপশিখা অক্সিজেনের অভাবে নিভে যাবে?

অথবা,
যাদের স্ত্রীরা মুখরা, তারা যদি স্বল্পবাক হয় তবেই তো ভারসাম্য বজায় থাকবে। পৃথিবীর সব পুরুষই ঝিঝিপোকার মত ভাগ্যবান নয়, এরিসস্টটলেরও দুশো বছর আগে এক ভদ্রলোক লিখে গিয়েছেন -
Happy the Cicada's lives
For they have only voiceless wives!


কিংবা,
...জীমূতবাহন স্বীকার করেছেন এরা তাঁরই মেয়ে। তাঁরই রক্তের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে এদের ধমনীতে। কিন্তু এদের শাড়ির দাম যে অনেক! ব্যারিস্টার জগদানন্দ বোসের মেয়ে ঈশিতা যে তাঁদের সেইভাবে মানুষ করেছেন। ঈশিতা এদের যে জগতে স্থাপন করেছেন সেখানে বাড়ি হলেই হয় না, গাড়িও দরকার হয়। গাড়ি হলেই চলে না - ঘরে রং মেলানো কার্টেন দরকার হয়, দামী ফার্নিচার প্রয়োজন হয়। আয়া, বেয়ারা, ড্রাইভার, কুক, মালী, হেয়ারড্রেসার ইত্যাদি কত কী প্রয়োজন হয় তাদের। অনুগত অজয় বসু, দেবকুমার সরকার, সুপ্রিয় চৌধুরী কেমন স্ট্রীদের হুকুম তামিল করছে, তাদের প্রয়োজন মেটাবার জন্য মন দিয়ে চাকরি করছে। তাদের এই অধঃপতন দেখে নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরির অর্ধপাগল জীমূতবাহন সেন ছাড়া আর কারও মনে দুঃখ হয়নি…

কী? ৫৬ বছর আগে প্রকাশিত লেখার সাথে বর্তমানের কোনকিছুর সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে কি? সত্যিকারের কালোত্তীর্ণ সাহিত্য বুঝি এদেরকেই বলে!
Profile Image for Nirjhar Ruth.
24 reviews14 followers
December 14, 2015
এক লাইনে এই বইটি হল, একজন মানুষের স্বপ্ন পূরণের গল্প। তবে এক লাইন দিয়ে যদি ১৭৪ পৃষ্ঠার উপন্যাসটিকে বিচার করতে চান, ভাবেন “ধুর! একই থিমের উপর আর কতো গপ্পো পড়বো?”, তাহলে বিরাট ভুল করবেন। কারণ শংকর তার অসাধারণ লেখনী দিয়ে এতো ঝরঝরে ভাবে মানুষের মনস্তত্ত্বকে বর্ণনা করেছেন যে, পড়তে বসলে খালি পিছলিয়েই যাবেন। কোনো কঠিন শব্দ নেই, নেই কাঠখোট্টা বর্ণনা। পুরো উপন্যাসটি রচিত হয়েছে একশো ভাগ বাস্তব জীবন নিয়ে। কিছু পড়লে মনে হবে না, ধুর! এমনটা বাস্তবে হয় নাকি? বরং মনে মনে স্বীকার করবেন, আসলেই তো! বাস্তবে তো এমনটাই ঘটে।

আচ্ছা এবার উপন্যাসের কাহিনি নিয়ে কিছু বলি।

জীমূতবাহন সেন একজন বাঙালি বিজ্ঞানী। রাসায়নিক কীটনাশক নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করলেও কালক্রমে তিনি উৎসাহী হয়ে উঠেন প্রাকৃতিক কীটনাশকের প্রতি। মানে এক প্রজাতির কীট দিয়ে আরেক প্রজাতিকে ধ্বংস করা। আর এই নেশায় মেতে উঠে জীমূতবাহন ভুলে গেলেন দিগ্বিদিক। টাকা সরবরাহ করা ছাড়াও সংসারের প্রতি যে তার অন্যান্য দায়িত্ব আছে, সেটা হয়ে গেলেন বিস্মৃত। কিন্তু মানুষের খিদে কি শুধু টাকা দিয়ে মেটে?

পত্নী ঈশিতা চান জীমূতবাহনের সাথে স্বাভাবিক একটা সংসার পাততে। তিনি চান, আর দশটা মানুষের মতোই ডঃ সেন হবেন স্নেহময় পিতা, দায়িত্বশীল হাজব্যান্ড। তিনি সময় কাটাবেন সন্তান আর বৌয়ের সাথে, তাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি খেয়াল রাখবেন, বড় চাকরি করে লাখ লাখ টাকা কামাই করবেন, বাড়ি গাড়ি করবেন। কিন্তু জীমূতবাহনের সেদিকে আকর্ষণ নেই। তিনি ব্যস্ত তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে। ঠাণ্ডা মাথায় তাকে চালিয়ে যেতে হবে গবেষণা, বের করতে হবে প্রাকৃতিক কীটনাশক! এই গবেষণা কবে শেষ হবে, কবে তিনি পাবেন কাঙ্ক্ষিত ফল, সেটা মোটেও নিশ্চিত কিছু নয়। তাই ঈশিতাও মেনে নিতে পারেন না অনিশ্চিত স্বপ্নের পেছনে জীমূতের ছোটাছুটি।

কাকেই বা দোষ দেবেন আপনি? যদি আপনার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নের মূল্য বুঝার মতো মানসিকতা বা বুদ্ধি আপনার সঙ্গীর না থাকে, তাহলে আপনি যতই চান, তাকে বুঝাতে পারবেন না। আবার বিপরীতভাবেও চিন্তা করে দেখুন। তার চাওয়া পাওয়ার বিষয়টিও আপনি বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারছেন না, কেন ও আপনাকে মেনে নিতে পারছে না। একই চিন্তা কিন্তু সেও করছে! এক্ষেত্রে দুজনেই পুড়তে থাকবেন কষ্টের আগুনে!

সন্তান কিংবা পত্নীর সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে পড়ে জীমূতবাহন যেন নিজের সংসারেই অচ্ছুৎ হয়ে গেলেন। তবু সাংসারিক ভাবনাকে প্রশ্রয় দিতে তিনি রাজি নন। তার মাথায় খালি ঘুরে, তার প্রতিষ্ঠিত “নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি”র হাল ধরার জন্য প্রয়োজন তরুণ এক বিজ্ঞানীকে। কিন্তু কে হবে সেই নিঃস্বার্থ মানুষ, যে লাখ টাকার চাকরিকে তুড়ি মেরে পড়ে থাকবে অজ পাড়াগাঁয়ের গবেষণাগারে? কে হবে সেই তরুণ প্রাণ, যে মানুষের বৃহৎ উপকারে আসার জন্য ছেড়ে দিতে পারবে পার্থিব লোভ লালসা? নিজেকে নিবেদন করতে পারবে পতঙ্গের গবেষণায়?

হ্যাঁ, অবশেষে যেন এমন কাউকে পাওয়ার একটা আভাস এলো। কিন্তু বিধি বাম! এখানেও ঈশিতা!

দিলাম কাহিনির কিছু ইঙ্গিত। তবে এগুলোকে উড়ো কথা হিসেবেই ধরে নিন। মূল উপন্যাসে যেভাবে বৈজ্ঞানিক মনের সাথে সাধারণ মানুষের মনের তুলনা, সংঘাত দেখানো হয়েছে, সেটা স্রেফ অসাধারণ। বইটা পড়তে গিয়ে খান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সালমান খানের একটা উক্তি আমার বারবার মনে হয়েছে। “Whom you choose as a life partner is a far more important decision than what career you choose to pursue.” একজন মানুষ যে কতভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পথে, কিংবা যোগ্য সঙ্গী না পেলে যে কীভাবে মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথ কাঁটাময় হয়ে উঠে, তার পারফেক্ট চিত্রায়ন এই উপন্যাসটি। পড়ুন আর অনুভব করুন, কেন যোগ্য জীবন সঙ্গী নির্বাচন করা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ!

পরিশেষে বলতে চাই, বইটা পড়লে খালি মনের সাথে মনের দ্বন্দ্ব সম্পর্কেই ওয়াকিফহাল হবেন না, বরং জানতে পারবেন পোকামাকড়ের ঘরবসতি সম্পর্কে, অনেক জ্ঞান হবে বিভিন্ন ধরনের পোকা সম্পর্কে, তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন সম্পর্কে। কে জানে, যারা পোকা পছন্দ করেন না, তারাও প্রেমে পড়বেন প্রকৃতির অদ্ভুত এই সৃষ্টির! জানতে পারবেন, জীমূতবাহন আদৌ পেরেছিলেন কিনা নিজের স্বপ্নকে বাঁচাতে।

জানি, বইয়ের তুলনায় আমার এই পর্যালোচনাটা একেবারেই কিছু হয়নি। কিন্তু তবু লিখতে ইচ্ছে করলো। আজ থেকে ৪৯ বছর আগেও কীভাবে এতো যুগোপযোগী উপন্যাস লেখা গিয়েছিলো, সেটা বিস্ময়কর। একেই বোধহয় বলে কালোত্তীর্ণ সাহিত্য, যে সাহিত্য একটা নির্দিষ্ট সময়সীমাকে উপস্থাপন করে না, বরং সব যুগেই যার কাহিনিকে রিলেট করা যায়।

নিন, মজার এই ছড়াটা পড়ে লেখাটা শেষ করুন।

A centipede was happy – quite!
Until a toad in fun
Said, "Pray, which leg moves after which?"
This raised her doubts to such a pitch,
She fell exhausted in the ditch
Not knowing how to run.
Profile Image for Musharrat Zahin.
404 reviews489 followers
June 3, 2025
প্যারাসাইট বা পরজীবী এমন এক প্রাণী, যা অন্য জীবের উপরে নির্ভর করে বাঁচে, নিজের শক্তি বা উপকারিতা অন্যের কাছ থেকে শোষণ করে। সমাজে আমাদেরও অনেক সময় অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, নিজেদের স্বার্থের জন্য। কালের পরিক্রমায় অনেক লেখক এই মানবজাতিকে পরজীবি হিসেবে রূপক আকারে দেখিয়েছেন। আমরা কাফকা থেকে শুরু করে ভিক্টর হুগো, অনেকের লেখায় দেখতে পাই কিভাবে এই রূপকটি মানুষের সমাজ এবং মনস্তত্ত্বে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
.
.
.
এবার আসি 'নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি' বইটার কথায়। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র, জীমূতবাহন সেন। পেশায় তিনি একজন খ্যাপাটে বিজ্ঞানী। খ্যাপাটে বললাম কারণ বিশ্বের বড় বড় কনফারেন্সে তিনি গেস্ট স্পিকার হিসেবে যান, তাঁর গবেষণাপত্র বিদেশের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়, যাঁর কাছে ছিল দুই হাত ভরে ডলার উপার্জন করার সুযোগ, তিনি এসব কিছু ছেড়েছুড়ে চলে এলেন নিজের মাতৃভূমিতে।
যদিও তাঁর গবেষণার শুরুটা ছিল রাসায়নিক কীটনাশক নিয়ে। তবে পরবর্তীতে তিনি প্রাকৃতিক কীটনাশকের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ কিভাবে পোকা দিয়েই পোকা নিধন করা যায়। কারণ তাঁর মতে প্রতি বছর বাংলায় এই পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাবের কারণে বহু শস্য নষ্ট হয়ে যায়। তিনি চান বাংলার জনগণের খাদ্যাভাব দূর করতে।
যার কারণ বিদেশের ল্যাভিশ লাইফ ছেড়ে কলকাতা থেকে অনেকদূরে নির্জন স্থান ও অসংখ্য কীটপতঙ্গ নিয়ে গড়ে তোলেন তাঁর স্বপ্নের রিসার্চ সেন্টার 'নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি'।
রণক্ষেত্র তো তৈরি, এবার প্রয়োজন সৈন্য-সামন্তের। ফলে তাঁর সাথে আরো যুক্ত হয় বিদেশ থেকে সদ্য পিএইচডি করে আসা অমিতাভ আর জীমূতবাহনের বন্ধুর মেয়ে, পিএইচডি শিক্ষার্থী ইন্দুমতী। দুজনেই জীমূতবাহনের কাজের বেশ ভক্ত৷ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই গবেষণাগারের জন্য প্রায় বিনা পারিশ্রমিকেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করেন তারা।
.
.
.
তো কলকাতায় এসেই বিজ্ঞানের জন্য নিজেকে এক প্রকার বিলিয়েই দিলেন৷ নিজের গবেষণার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেন, এমনকি নিজের সংসারের সম্পর্কগুলোও অবহেলা করতে শুরু করেন। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী ঈশিতা, বলতে গেলে সোনার চামুচ মুখে নিয়েই বড় হয়েছেন, স্বামীর সংসারে এসেও তিনি চান সেরকমই একটা সুখী জীবন। পত্নী ঈশিতা চান জীমূতবাহনের সাথে স্বাভাবিক একটা সংসার পাততে। তিনি চান ছোটবেলায় যা যা পেয়েছেন, তাঁর তিন মেয়েও যেন সেরকমই জীবন পান। কিন্তু জীমূতবাহনের গবেষণার প্রতি একাগ্রতা তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।
এদিকে ঈশিতা চান অমিতাভকে নিজের মেয়ের জামাই করতে। কিন্তু এমন ভালো সহকারীকে জীমূতবাহন আবার সংসারের যাঁতাকলে সমর্পণ করে দিতে নারাজ। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় দাম্পত্যকলহ, অমিতাভকে পাওয়ার এক শীতল যুদ্ধ।
.
.
.
বইয়ের মাঝামাঝি জায়গায় এসে আমরা দেখতে পাই মানুষের স্বপ্ন এবং তাঁদের প্রতিফলিত সম্পর্কের মধ্যে সংঘাত। জীমূতবাহন তাঁর গবেষণার জন্য অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যান, কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য সফল হলে কী হবে? তিনি কি তাঁর পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা ভুলে যেতে পারবেন?
শংকর তাঁর লেখায় কেবলমাত্র একজন বিজ্ঞানীর জীবনের গল্প বলেননি, বরং সেই সঙ্গে মানবিক সম্পর্কের ভিতরকার নিঃসঙ্গতা, আত্মত্যাগ এবং স্বার্থপরতা তুলে ধরছেন। তিনি দেখিয়েছেন মানুষ কিভাবে নিজের স্বার্থের জন্য পরজীবি হয়ে ওঠে।
.
.
.
বইটার প্রক���শকাল ১৯৬৬ সাল। এত বছর আগেও কোনোপ্রকার ইন্টারনেট ছাড়া অ্যান্টোমলোজি নিয়ে শংকর কিভাবে এই বই লিখলেন, সেটা ভাবতেই অবাক লাগে৷ বইয়ে পোকামাকড় নিয়ে এত খুঁটিনাটি সব তথ্য দেওয়া, পড়লে মনে হবে কোনো বিজ্ঞানীরই লেখা।
অ্যান্টোমলোজি বিষয়টা বেশিরভাগ পাঠকের কাছেই অচেনা। কিন্তু এখানেই শংকর নিজের লেখার মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। শংকরের লেখা বরাবরই চমৎকার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি খুবই সাবলীলভাবে সমাজের নানান বিষয় নিয়ে গল্প বুনতে পারেন। বেশ ছিমছাম প্লট, কিন্তু এই সাদামাটা উপন্যাসই আমাদের মনস্তত্ত্ব এবং মানুষের সম্পর্কের জটিলতা ন���য়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছে। যদিও শেষটা আরেকটু ভালো হলেও পারতো।
1 review
November 26, 2024
খুব সরল উপন্যাস। কাহিনী সরল হলেও সুন্দর। এই তো চাই।
Profile Image for Nishat Monsur.
191 reviews18 followers
May 15, 2021
কোনো একদিনের অলস ইন্সটাগ্রাম স্ক্রলে ছবিটা উঠে আসে, সাদামাটা মায়ায় ভরা পুরোনো আমলের প্রচ্ছদ। না, গুডরিডসের এই প্রচ্ছদ নয় সেটা, ভিন্ন আরেক প্রচ্ছদ, আরেকটু সুন্দর- গল্পের কিছুই বোঝা যায় না তাতে। প্রচ্ছদ দেখে বইকে জাজ করার ভুল না করলেও হাতে তুলে নেয়ার জন্য প্রচ্ছদ আমাকে প্রভাবিত করে অনেকটাই- পাঠক হিসেবে নিজের এই দুর্বলতা স্বীকার করে নিয়ে তবেই পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসি।

না, সেই সুন্দর প্রচ্ছদের বই হাতে নিয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। আর দশটা পিডিএফের মতো ছাড়াছাড়াভাবে তাই পড়ে শেষ করলাম শংকরের বই "নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি"। এই বই এক বৈজ্ঞানিকের স্বপ্নপূরণের (নাকি ভঙ্গের?) গল্প। কাহিনী সংক্ষেপ দেখলাম মোটামুটি কমিউনিটি রিভিউগুলোতে ইঠে এসেছে। তাই ঐদিকে বিস্তারিত যাবো না।

বরেণ্য বৈজ্ঞানিক জীমূতবাহন সেন কাজ করছিলেন কীটনাশক নিয়ে- বেশ ভালোই নামডাক, অর্থ সমাগম অর্জন করেছিলেন তাতে। কিন্তু রাসায়নিক কীটনাশক ছেড়ে বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোলে মন চলে যায় তাঁর, অর্থাৎ কীটপতঙ্গের বায়োলজি কন্ট্রোল করে তাদের বংশবৃদ্ধি তথা ক্ষতিকারক ধর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে চান তিনি। তাই পায়ে এসে পড়া পাশ্চাত্য খ্যাতি আর অর্থের ঢেউকে দূরে ঠেলে নিজ দেশ ভারতবর্ষে এসে গড়ে তোলেন নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি। বলাই বাহুল্য, তাঁর স্ত্রী ঈশিতা, যিনি কিনা আর দশটি গড়পড়তা নারীর মতো সংসার চান- তিনি মেনে নিতে পারেন না এই অবনমন।

পুরো উপন্যাসজুড়েই তাই ঈশিতার সাথে জীমূতবাহনের সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রভাসিত হয়ে থাকে সকালের সূর্যের মতন। বৈজ্ঞানিকেরা (বা অতি প্রতিভাবান ব্যক্তিরা) একটু সিনিক্যাল হন- এই জনপ্রিয় ধারণাকে আরেকটু উসকে দিয়েই সম্ভবত জীমূতবাহন সেন তাঁর কার্যকলাপে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন পরিবার থেকে, ডুবে যেতে থাকেন কাজের মধ্যে। আর তাই যখন তাঁর প্রিয় ছাত্র ও সহকারী অমিতাভ মিত্রকে হারানোর সম্ভাবনা দেখেন, তখন তাঁর মানসিক টানাপোড়েন আর অতিকল্পিত মনে হয় না। শেষমেশ পরিবার ও কাজের মধ্যে কোনটিকে বেছে নেন জীমূতবাহন?

পোকামাকড়ের ঘরবসতি সম্পর্কে জানতে জানতে এই প্রশ্নেরও জবাব পাওয়া যাবে নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি বইতে। প্রকৃতির বিভিন্ন খেয়াল সম্পর্কে তো বটেই- আরো জানা যাবে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ সম্পর্কে। ভিন্ন চিন্তাধারার দু'টি মানুষকে একসাথে জুড়ে দিলে কীরকম সংকটের দিকে এগিয়ে যায় জীবনধারা, সে সম্পর্কেও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। একেবারে ভিন্ন সময়কালের লেখক হয়েও শংকর যেভাবে এই চিরন্তন সাইকোলজিক্যাল ক্ল্যাশ তুলে ধরেছেন, তাতে লেখক হিসেবে তাঁর মুনশীয়ানাই প্রকাশ পায়।

কোনো এক অদ্ভুত অজানা কারণে পাঁচ তারা দিতে সায় দিচ্ছে না মন। তাই এক তারা কেটে রাখা। কখনো কারণ জানতে পেলে এডিট করে জুড়ে দেবো। ততক্ষণে আরেকটু ভাবতে থাকি প্রায় একশো সত্তর পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বইটি নিয়ে।
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
August 16, 2023
ক্লাসিক কিনা জানিনা তবে আমার কাছে ক্লাসিক লেভেলের বইই মনে হয়েছে।

এত সুন্দর বর্ণনা এবং এত সুন্দর লেখা বইটা আমাকে এক বসায় শেষ করতে বাধ্য করেছে। শুধু শেষটা কেমন যেন সুগারকোটেড লেগেছে। ধন্যবাদ রাতুলকে এত সুন্দর বইটা রেকমেন্ড করার জন্য।
Profile Image for Munna Bhaiya.
48 reviews1 follower
September 16, 2020
বই : নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি
লেখক : শংকর
প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স ( কলকাতা )
ধরণ : ফিকশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২৭
প্রচ্ছদ : সুব্রত চৌধুরী
প্রথম সংস্করণ : ডিসেম্বর ১৯৬৫ ( পৌষ ১৩৭২ )
সংস্করণ : মার্চ ২০১৮ ( নবপর্যায়-পন্ঞ্চম মুদ্রণ )
মুদ্রিত মূল্য : ২০০ রুপি ( ভারতীয় )
ISBN : 978-81-7756-149-4



লেখক পরিচিতি :

শংকর এর জন্ম ৭ ডিসেম্বর ১৯৩৩ এ পথের পাঁচালির দেশ বনগ্রামে ৷ প্রথম বই 'কত অজানারে' ১৯৫৪ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ৷ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি ৷ তার একাধিক উপন্যাস অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় এবং রুশ ও ফরাসি ভাষায় ৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরৎচন্দ্র পদক ও জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, 'দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নরসিংহদাস পুরষ্কার পেয়েছেন ৷ 'ঘরের মধ্যে ঘর' উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত 'বঙ্কিম পুরষ্কার' ৷



ফ্ল্যাপের কথা :

যতবারই একটি করে প্রিয় ছাত্রকে সহকারী করে নিজের সাধনায় নিয়োজিত করতে চেয়েছেন বিশ্রুত বাঙালি বিজ্ঞানী জীমূতবাহন, ততবারই স্ত্রী ঈশিতা তাঁর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন সেই ছাত্রদের ৷ মেয়ে জামাই করে তাদের সরিয়ে নিয়েছেন ৷ মেয়েদের কথা ভেবেও কিন্ত সূখী হতে পারেন নি জীমূতবাহন ৷ সায় দিতে পারেন নি ঈশিতার আচরণে ৷ অবশেষে এল এক চরম পরীক্ষার দিন ৷ নতুন সদ্য বিলেত ফেরত সহকারী অমিতাভকে সরিয়ে নিতে চাইলেন ঈশিতা, ছোট মেয়ে মদালসার সঙ্গে বিয়ে দেবেন বলে ৷ মদালসাই জীমূতবাহনের সবচেয়ে প্রিয় কন্যা ৷ কী করবেন জীমূতবাহন, তিনি কি বারংবার হেরে যাবেন ঈশিতার কাছে ? একদিকে পিতৃস্নেহ, অন্যদিকে জীবনব্যাপী সাধনার প্রতিবন্ধকতা, কোন পথ বেছে নেবেন এই বিষয়বিমুখ বিজ্ঞানী ? এক অসামান্য উপন্যাসের আশ্চর্য কাহিনী ৷


ব্যক্তিগত মন্তব্য :

বইটির শুরু হয় জুলিয়ান হাক্সলির বিখ্যাত উক্তি, " All the great advances in human history are due to the thought or action of a few exceptional individuals. " দিয়ে ৷

শংকরের বই পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয় সেটা আমি জানতাম না ৷ বাংলা বই পড়বো বলে কয়েকটা কলকাতা ভিত্তিক অনলাইন শপে বই খুঁজছি, তখন পেয়ে যাই নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি বইটি ৷ যেহেতু শংকরের বই পড়ি নি কখনো, তাই শংকরের বই পড়ার এক্সপেরিমেন্টও বলা যায় এটিকে ৷
কিন্ত আমার বেশ ভালোই লেগেছে বিষয়টা ৷ উপন্যাসটা পড়লে পরিচিত অনেক কীটপতঙ্গ জীবনচক্র , ক্ষতির দিক, ফসল রক্ষার উপায় ইত্যাদি জানতে পারবো ৷

বইটিকে কীটপতঙ্গের বৈজ্ঞানিক জীমূতবাহনের স্বপ্ন আর ভাগ্যের লিখন বলা যায় ৷ ঈশিতা , জীমূতবাহনের বউ , যে কি না আমাদের গতানুগতিক নারীদের মতোই ৷ মেয়েদের সৎপাত্র, নিজের একটু ঠাঁট বজায় রেখে চলার অভ্যাস ৷ কিন্ত জীমূতবাহন পুরোটাই উল্টো ৷ গরীব কৃষকদের পোকা আর কীটনাশকের খরচ থেকে বাঁচাতে তার ল্যাবরেটরি ৷ ঘটনাচক্রে, অমিতাভের সাথে জীমূতবাহনের দেখা হয় বিলেতে আর জীমূতবাহন অমিতাভকে নিজের সহকারী নিযুক্ত করতে চায় ৷ দেশমাতৃকার টানে আর অমিতাভের কাজের ইচ্ছে টেনে নিয়ে যায় নিবেদিতা ল্যাবরেটরিতে ৷ কিন্ত অমিতাভ কি পেরেছিল সেখানের সুযোগ-বন্ঞ্চিত পরিবেশে নিজেকে মানাতে ?
ইন্দুমতীও জীমূতবাহনের পিএইচডি শিক্ষানবিশ ৷ ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়ে সে চায় তার গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিতে ৷ কিন্ত জীমূ��বাহন কি নিয়েছিল সে গুরুদক্ষিণা জানতে হলে অবশ্য পাঠ্য উপন্যাসটি ৷

হঠাৎ একদিন জীমূতবাহনের সামনে আসে একঘোর বিপদ ৷ নিজের স্বপ্ন আর স্বীয় কন্যা মদালসার ভবিষ্যত দু-তীরের ডগায় ৷ জীমূতবাহন কি স্বপ্নকে লক্ষ্যভেদ করবে নাকি নিজের কন্যার তরে নিজের স্বপ্ন বলিদান করবে !

যেহেতু বইয়ের বিষয়টা ভিন্ন, সেহেতু আমার মতে সবার পড়া উচিত ৷ বাইন্ডিং সুন্দর দাম অনুযায়ী, তবে পেজ গুলো আরও মোটা হলে অক্ষর বুঝতে সুবিধা হতো ৷ কিন্ত আনন্দ পাবলিশার্সের প্রত্যেক বইয়ের পেজ এমনই থাকে ৷
আর হ্যাঁ, সত্যিই কীটপতঙ্গ কেন্দ্রিক যে উপন্যাস হতে পারে সেটা জানা ছিল না ৷
38 reviews12 followers
April 1, 2018
সমরেশ মজুমদারেরর "কইতে কথা বাধে' বইয়ে উনি বিভিন্ন সাহিত্যিকদের কথা বলতে বলতে তাঁদের কিছু বইয়ের নামও বলেছেন। যার কিছু আমি পড়েছি আর কিছু পড়িনি। শংকরের " নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি " আমার না পড়া একটি বই। বইয়ের হাটে সার্চ দিয়েই পেয়ে গেলাম। আর আজ পড়েও ফেললাম। উপন্যাস, কিন্তু জীবজগতের --- কীট পতঙ্গ নিয়ে এক অপার রহস্যের জগতে যেন বিচরণ করলাম।জীমুতবাহন এক দেশ প্রেমিক বৈজ্ঞানিকের নাম। বৈজ্ঞানিক বাবার সাথে সামাজিক দায়বদ্ধ মায়ের দ্বন্ধের বিশ্লেষণটাও চমৎকার ফুটিয়েছেন।পড়তে পড়তে আপ্লুত হয়েছি। নিজের ছেলের পি এইচ ডি করে দেশে ফিরে আসার মধ্যে ইতিবাচক উপাদান পেতেও এ উপন্যাস আমাকে সহযোগিতা করেছে।
ভাবছি ২০১৭ সালে পড়া বই বইয়ের হাটে শেয়ার করব। যতটা না অন্যকে উদ্ধুদ্ধ করতে এরচেয়েও বেশি নিজেকে উদ্ধুদ্ধ রাখতে। আমি পড়ছি এবং পড়তেই থাকব --- এমন একটি গতি নিজের ভেতরে জাগ্রত রাখতেই এ শেয়ার।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,833 reviews361 followers
August 20, 2025
শংকরের নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল, এ নিছক কোনো উপন্যাস নয়, বরং এক দীর্ঘ আত্মকথন—আমাদের ভেতরের স্বপ্নবাজ আর বাস্তববাদীর সত্তার লড়াইয়ের গল্প।

সবচেয়ে বেশি মনে লেগে আছে জীমূতবাহন। তাঁর মধ্যে আমি যেন বারবার নিজের ছায়া দেখেছি। রাসায়নিক নয়, প্রকৃতির ভেতর থেকেই কীটনাশনের উপায় খুঁজে বের করার নেশায় তিনি বুঁদ হয়ে থাকেন। তাঁর কাছে গবেষণাগারই মন্দির। আমি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম—এ কি কেবল জীমূতের গল্প, নাকি আমাদের সবারই, যারা স্বপ্নের জন্য কখনো না কখনো বাস্তবের সঙ্গে লড়ে গিয়েছি?

স্পেকট্রামের অন্যদিকে আছে ঈশিতা, জীমূতের স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে আমার টানাপোড়েন লেগেই ছিল। কখনো মনে হয়েছে, তিনি স্বার্থপর, শুধু সংসারের দাবি বোঝেন। আবার কখনো ভেবেছি—হয়তো আমিই অন্যায় করছি তাঁকে বিচার করতে গিয়ে। কারণ, মানুষ তো নিছক স্বপ্ন খেয়ে বাঁচতে পারে না, সংসারের নিত্য দাবিও সত্য। ঈশিতার ভেতরে আমি চিনেছি আমার চারপাশের অনেক পরিচিত মুখকে, এমনকি নিজের ভেতরের বাস্তববাদীকেও।

শংকর এমনভাবে গল্পটা সাজিয়েছেন যে, কীটতত্ত্বের মতো বিষণ্ণ ও জটিল বিষয়ও আমার কাছে একেবারেই ক্লান্তিকর লাগেনি। বরং মনে হয়েছে, গবেষণা, বিজ্ঞান, আর মানুষের সম্পর্ক—সব একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। একবার মনে হচ্ছিল আমি যেন জীমূতের ল্যাবরেটরির ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি, আবার পরমুহূর্তেই সংসারের অন্দরমহলে ঈশিতার চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছি।

যা আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে, তা হলো সমাজের দিকটা। শংকর দেখিয়েছেন, বিদেশে মস্ত সুযোগ ছেড়ে দেশে কাজ করতে আসা প্রতিভাবান যুবকেরা কীভাবে অবহেলায় দমবন্ধ হয়ে শেষ হয়ে যায়।

পড়তে পড়তে থমকে গিয়েছিলাম—এ চিত্র তো আজও বদলায়নি। আমাদের দেশের অনেক মেধাবী ছেলেমেয়েই হয়তো জীমূতের মতো ভেঙে যাচ্ছে, তাদের স্বপ্নগুলো নষ্ট হচ্ছে অবহেলায়।

শেষটায় মনে হয়েছে শংকর হয়তো একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন। সমাধানটা অতটা গভীর নয়, বরং খানিকটা সহজভাবে গড়ে উঠেছে। তবে আমি দোষ দিইনি, কারণ পুরো উপন্যাসের টান আমাকে সেই পর্যন্ত বেঁধে রেখেছিল।

শেষ করার পরও বইটা আমার মাথা থেকে নামেনি। জীমূতের খ্যাপাটে স্বপ্ন, ঈশিতার দাবিদাওয়া, আর সমাজের অবহেলা—সব মিলিয়ে নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। মনে হয়েছে, আমি যেন নিজের ভেতরের লড়াইকে আরেকবার স্পষ্ট করে পড়ে ফেললাম।

না পড়ে থাকলে সংগ্রহ করে পড়ুন এই বই।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for রায়হান রিফাত.
255 reviews8 followers
July 24, 2025
ক্লাসিক নাকি ক্লাসিক না এই তর্কে যাব না। একজন পাঠক হিসেবে কোনো বই কে ক্লাসিক বলতে যতটা বই মিনিমাম পড়া লাগে তার সিকিভাগ ও আমার পড়া হয়নি।
তাই ক্লাসিক বলার দিকে যাচ্ছিনা।

আমার সাধারণত এমন টাইপ গল্প বা উপন্যাস পড়তে একদম ই ভাল লাগেনা। কেন যেন মনে হয় ভাল হবেনা।

এই বই এর শুরুতে খুব ক্ষীন সময়ের জন্য বিরক্তি ধরেছিলো তবে তা খুব ই কম সময়ের জন্য।

অসাধারণ একটা বই, এন্ডিং টা আরেকটু বড় করে হেপি এন্ডিং দিলে বোধয় আর ও ভাল লাগতো।

বাট একেবারে ১০/১০ একটা বই।
Profile Image for Anwesha Chakraborty.
49 reviews
January 14, 2023
বইটিকে চারটি তারকা দেবার কারণ কাহিনীর গতির inconsistency. বইটির প্রথমার্ধের চলন আর দ্বিতীয়ার্ধের লয় একেবারেই খাপ খায় নি। তবে বইটির বিষয়বস্তু অনবদ্য। পতঙ্গদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। সাথে বিজ্ঞান সাধনা ও বস্তুবাদী সমাজের লোভের হাতছানির দ্বন্দ্বটিও নিপুণ হাতে অঙ্কিত হয়েছে এই উপন্যাসটিতে। বিজ্ঞানী জিমুৎবাহন আমার স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবেন।
Profile Image for Taslima  Tonni.
15 reviews6 followers
April 26, 2021
সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত ও প্রানীদের প্রতি কাতর সফল বাঙালি বিজ্ঞানী জীমূতবাহন সেন বা জে. বি সেন।
প্রথমদিকে রাসায়নিক কীটনাশক নিয়ে
গবেষণা শুরু করলেও,পরবর্তীতে তিনি উৎসাহী হয়ে উঠেন প্রাকৃতিক কীটনাশক এর প্রতি।অর্থাৎ, এক জাতের উপকারী কীট দিয়ে আরেক জাতের ক্ষতিকর কীট ধ্বংস। এই উৎসাহের কারণ- তিনি চান বাংলার জনগণের খাদ্যাভাব দূর করতে।
এরই ফলশ্রুতিতে, কলকাতা থেকে অনেকদূর নির্জন বিশাল স্থান ও অসংখ্য কীটপতঙ্গ নিয়ে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের রিসার্চ সেন্টার -
"নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি"।।

এই রিসার্চ সেন্টার এ মাঝেমধ্যে সাহায্য করেন তার বন্ধুর মেয়ে ইন্দুমতী।
কিন্তু, জীমূতবাহন চান এমন একজন ব্যক্তি যে কিনা তার অবর্তমানে এ রিসার্চ সেন্টার এর দায়িত্ব নিবে।এবং তার গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যাবে।কিন্তু, কই পাবেন এমন নিষ্ঠাবান শিষ্য?
ঘটনাক্রমে, জীমূতবাহন এর সাথে দেখা হয় অমিতাভ মিত্র নামের এক মেধাবী ডক্টরেট এর ।অমিতাভ, জীমূতবাহন এর ডাকে সাড়া দিয়ে রিসার্চ সেন্টার এ যোগদান করেন।
কিন্তু, বাঘড়া দেয় জীমূতবাহন এর স্ত্রী, ইশীতা।নিজের মেয়ের জন্য তিনি অমিতাভ কে পছন্দ করে ফেলেন।ব্যাপার টা মোটেও পছন্দ হয়নি জীমূতবাহন এর।তিনি চান না অমিতাভ কে হাতছাড়া করতে।
কারণ তার মেয়েরা ও স্ত্রী ঈশিতা শুধু চায় অর্থ ও বিলাসী জীবন।বাকি সবার মতো একটি গোছানো ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর জীবন হবে।যা কিনা ভুল কিছু নয়! জীমূতবাহনের সেদিকে আগ্রহ নেই।তিনি আছেন তার স্বপ্ন পূরণ এর নেশায় মশগুল। সংসার ও মেয়েদের নিয়ে কোনো ভাবনা তার নেই।
মাথায় তার এক্টাই ভাবনা বের করতে হবে প্রাকৃতিক কীটনাশক! কিন্তু, এর ফল কবে পাবেন তিনি?এ নিয়ে শংকায় ঈশিতা।যা কিনা মোটেও নিশ্চিত নয়।
ঈশিতার মন্তব্য কেনোইবা তাহলে এ অনিশ্চিত স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলা!

তাহলে,শেষ পরিনতি কি হবে নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি এর? জীমূতবাহন কি অমিতাভ কে হাতছাড়া করে দিবে?
তিনি কি পারবেন তার স্বপ্নপূরণ করতে? পাবেন কি মানুষের খাদ্যাভাব দূর করার
উপায় খুজতে?

এই বইটির ভাষা ও বর্ননা খুবই গোছানো । এতো তথ্যবহুল একটি বই, যা মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পাতায় পাতায়।একজন প্রানিবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এতোটাই ডুবে গিয়েছি বইটায় তা লিখে বোঝাতে পারবো না।প্রতিটি তথ্য, উপাত্ত আমায় ভাবিয়েছে!এই বই এর বিষয়বস্তু শুধু একজন বিজ্ঞানীর গবেষণা না।বরং এতে রয়েছে সেই গবেষণার পিছনের আত্নত্যাগ।পরিবার পরিজন ও সমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে গবেষণায় আত্নত্যাগ করা কতোটা কঠিন!তা এ বই পাঠে পাঠক জানতে পারবে।
ছবি কার্টেসিঃRamisa Bushra
https://instagram.com/ramisa.reads?ig... আইডি)
Displaying 1 - 15 of 15 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.