দিপু আর তোড়া দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ। দিপু যেমন টেনশনগ্রস্ত আর নড়বড়ে আত্মবিশ্বাসের ছেলে, তোড়া তেমনই ডাকাবুকো। সংঘাত আর প্রতিযোগিতার আবহেই তৈরি হয় নতুন এক সম্ভাবনা। লাজুক দিপু আর সাহসী তোড়া নিজেরমতো করে পাঠ নেয় জীবনের। কোথাও জেগে থাকে এক হাওয়া-বেলুন। বুদ্বুদ। ক্ষণস্থায়ী জীবনের সৌন্দর্য। পুরনো সব মনখারাপ ভুলে নতুন করে বেঁচে থাকার গল্প শোনায় ‘বুদ্বুদ’।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
শিশুতোষ প্রেমের উপন্যাস। শুধু স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখার টানেই পড়লাম।
উপন্যাসের নায়ক ভীরু, মুখচোরা, আত্মবিশ্বাসহীন দীপাংশু। নায়িকা মুখরা বিষ্ণুমায়া প্রচন্ড মুখরা, আত্মবিশ্বাসী, ক্যারিয়ারে অত্যন্ত সফল ও অতিমাত্রায় ফেমিনিস্ট। ন্যাকাবোকা প্রেম কাহিনীর মতো এরা আবার একই ধরনের দুইটা কোম্পানির প্রতিনিধি যাকে বলে বিজনেস রাইভ্যাল। আবার দীপাংশুর পিসতুতো বোনের বান্ধবীও এই বিষ্ণুমায়া। অর্থাৎ সেই সূত্রেও দেখা হচ্ছেই। আর দুজনের দেখা হওয়া মানেই বিষ্ণুমায়ার দীপাংশুর প্রতি বাজে ব্যবহার, মেনিমুখো দীপাংশুর সহ্য করে যাওয়া এবং অবধারিতভাবেই শেষমেশ দুজনের প্রেমে পড়ে যাওয়া এবং কাহিনী খতম।
স্মরণজিৎবাবু বোধহয় পণ করছিলেন যে এই উপন্যাসের মহিলা চরিত্রগুলোকে বড় বেশি ক্যাটক্যাটে, উগ্রমেজাজী বানাবেন। যার জন্য বিষ্ণুমায়া, দীপাংশুর পিসিমা সারা উপন্যাসজুড়ে শুধু ক্যাটক্যাট করেই গেছে তো করেই গেছে। ব্যাপারটা এতটাই বিরক্তিকর ছিল যে বিষ্ণুমায়া যদি রক্তমাংসের কেউ হতো তাহলে তার মুখে স্কচটেপ এঁটে রাখতাম আমি। আর বিপরীতে দীপাংশু মেনিমুখো, তার বাবা, অভি, প্রিয়ম এরা সবাই মেনিমুখো। জানি না এটা কি প্রচলিত সমাজের বাইরের কোন এক্সপেরিমেন্ট কি না, যেখানে মহিলারাই সমাজের কন্ঠস্বর আর পুরুষেরা ভীতুর ডিম.... বিষয়টা পড়তে বা ভাবতে যথেষ্ট দৃষ্টিকটু লাগছিলো। উওম্যান এমপাওয়ারমেন্ট বলতেই যদি বিষ্ণুমায়ার মতো সারাক্ষণ এর সাথে ওর সাথে ঝগড়া করা, তর্ক করা আর ঝাড়ি মেরে মেরে নিজের অধিকার আদায় করা হয় তাহলে সেটা কোন পাওয়ারই না, সেটা বলা যায় হিংস্রতা, ক্ষমতার অপব্যবহার।
যাই হোক, এর চাইতে অনেক ভালো ম্যাচিউরড প্রেমের উপন্যাস পৃথিবীতে আছে। সুতরাং দ্বিতীয়বার এই ট্র্যাশ পড়ার কোন মানেই হয় না।
প্লটটা মোটামুটি বলা যায়। তবে লেখাটি ক্লাস সেভেনের বাচ্চা প্রথম স্কুল ম্যাগাজিনে যেমন লেখা দেয় তেমন। লেখার মাঝে উপমাগুলো ফটফটিয়ে ছুটে যাওয়া তন্দরুস্ত মোটর সাইকেলের চাকা পাংচার করে দেওয়া পেরেকের মতো অপ্রাসঙ্গিক আর বিরক্তিকর। কিন্তু সমস্যা হলো সেই সেভেনের বাচ্চা পরে যদি আরো লেখে ও আর লেখার সঠিক সমালোচক পায় তবে সে উন্নতি করতে পারে। লেখকেরতো আর সে বয়স নেই। আর দারুন দারুন বলার জন্য লোকে বসে আছে। কি জানি কি হয়।
দুটো সম্পন্ন ভিন্ন পরিবেশে বড় হওয়া দুটো ছেলে মেয়ে দিপু আর তোড়া। বাবা ও মামার চূড়ান্ত আদরে মামার বাড়িতে মানুষ ভীতু, টেনশন গ্রস্ত, নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা দিপু। প্রেমে প্রত্যাখ্যানের জন্য যার এক বছর নষ্ট হয়েছে, সেই দুঃস্বপ্নের এক বছর পরে নতুনভাবে শুরু করার জন্য বাবা ও মামা শত বারণ সত্ত্বেও এক কোম্পানি সেলস এক্সিকিউটিভ হিসাবে যোগ দেয় দিপু।
অন্যদিকে বাবা-মার ডিভোর্সের পরে নিজের মাসি ও মেসোর কাছে মানুষ হয় তোড়া। নিজেকে নিয়ে চূড়ান্ত কনফিডেন্স, কেউ একটা কথা বললে তাকে ১০০ কথা শুনিয়ে দেবার মেয়ে সে। এবং এই দিপু ও তোড়া দুটি কোম্পানির সেলস এক্সিকিউটিভ থেকে হঠাৎ করে দুপক্ষ হিসাবে নিজেদের শত্রু হয়ে পড়ে। গল্প চলতে চলতে দেখা যায় এই দুজনেই বিভিন্নভাবে জীবনের থেকে পাঠ নেয় ও জীবনে চলার পথে সে গুলোকে কাজে লাগায়। কাজের জায়গা দেখা, ঝগড়া চূড়ান্ত কম্পিটিশন এরমধ্যে একদিন একটি কাজে টেন্ডার পাওয়ার জন্য দুজনকেই বাইরে যেতে হয়, এবং সেই রাতেই তোড়া হঠাৎ করে দিপুর মধ্যে এক শান্ত, সংবেদনশীল ও পুরুষকে খুঁজে পায়। এই ডাকাবুকো তোড়া আর অন্যদিকে চূড়ান্ত নার্ভাস দিপু এদের মধ্যে কি ঝগড়া ছাড়াও আর কিছু হবে? নাকি এটা ক্ষনিকের বুদ্বুদ , সেটা জানতে হলে উপন্যাসটি পড়তে হবে।
এই গেল উপন্যাসটির কথা, এবার আসা যাক আমার উপন্যাসটি পড়ে কেমন লাগলো, চারিদিকে সব কঠিন কঠিন বইযের মাঝে এটা অনেকটা ঝোরো বাতাসের মতন, মনে ক্ষণিকের শান্তি এনে দেয়।
◼️ ভালো লাগা:- (১) লেখক উপন্যাসের দু-তিনটি জায়গায় বুদ্বুদ-এর প্রসঙ্গ এনেছেন। এর ফলে নামকরণের কারণটিও বোঝা যায়। জীবনের সঙ্গে বুদ্বুদের এই তুলনা বেশ ভালো লেগেছে আমার। (২) "পাতাঝরার মরশুমে" তেও বলেছিলাম যেটা এক্ষেত্রেও বলা যায়, সেটা হলো চরিত্রের বিভিন্নতা। টেনশনগ্রস্ত ভীতু ছেলে, ডাকাবুকো মেয়ে, মায়ের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা মেয়ে, সারাদিন কবিতা আওড়ানো সুযোগসন্ধানী ছেলে, এছাড়াও দিপু ও তোড়ার অভিভাবক - এক একজনের চরিত্র এক একরকম। নানারকম চরিত্রের সমন্বয় উপন্যাসটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। (৩) উপন্যাসটি লেখার গঠন আমার বেশ ভালো লেগেছে। ফার্স্ট পার্সনে লেখা উপন্যাসটি বর্ণিত হয়েছে দিপু ও তোড়ার জবানিতে। একটি অধ্যায় দিপুর, পরবর্তী অধ্যায় তোড়ার - এমনভাবে চলেছে উপন্যাসটি।
◼️ খারাপ লাগা:- (১) কর্পোরেট অফিসের পরিবেশ ও কাজের খুঁটিনাটির দীর্ঘ বর্ণনা ক্লান্তিকর লাগছিল। (২) দিপু ও তোড়ার অফিস ছাড়াও যে বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছিল, সেটা একটু অবাস্তব লেগেছে। (৩) উভয়ের একই লোকজনের সঙ্গে চেনাজানা বা আত্মীয়তার ব্যাপারটা কনফিউজিং লেগেছে।
গত মাসে জন্মদিন উপলক্ষে স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এর লেখা এই বইটি দিদি উপহার দেয়। প্রেম নিয়ে লেখা বই পড়তে চিরকালই বিরক্ত লাগে , তাও অবশেষে আজ পড়ে ফেললাম । এখন তাই ভাবছি কেন পড়তে গেলাম ? 😑😑 বাংলা সিরিয়াল এর plot মনে হচ্ছিল পুরো । আর পুরো গল্পটাই প্রায় predictable । সাধারণ একটা প্রেম কাহিনী বললে ভুল হবে না। কোনো মারাত্বক কিছু পাইনি গল্প জুড়ে । লেখক কে নিয়ে প্রচুর হাইপ শুনেছি কিন্তূ বইটা পড়ে খুবই আশাহত হলাম। 😶