Jasimuddin (Bangla: জসীম উদদীন; full name: Jasimuddin Mollah) was a Bengali poet, songwriter, prose writer, folklore collector and radio personality. He is commonly known in Bangladesh as Polli Kobi (The Rural Poet), for his faithful rendition of Bengali folklore in his works.
He obtained his BA degree in Bengali from the University of Calcutta in 1929 and his MA in 1931. From 1931 to 1937, Jasimuddin worked with Dinesh Chandra Sen as a collector of folk literature. Jasimuddin is one of the compilers of Purbo-Bongo Gitika (Ballads of East Bengal). He collected more than 10,000 folk songs, some of which has been included in his song compilations Jari Gaan and Murshida Gaan. He also wrote voluminously on the interpretation and philosophy of Bengali folklore.
Jasimuddin started writing poems at an early age. As a college student, he wrote the celebrated poem Kabar (The Grave), a very simple tone to obtain family-religion and tragedy. The poem was placed in the entrance Bengali textbook while he was still a student of Calcutta University.
Jasimuddin is noted for his depiction of rural life and nature from the viewpoint of rural people. This had earned him fame as Polli Kobi (the rural poet). The structure and content of his poetry bears a strong flavor of Bengal folklore. His Nokshi Kanthar Maath (Field of the Embroidered Quilt) is considered a masterpiece and has been translated into many different languages.
Jasimuddin also composed numerous songs in the tradition of rural Bengal. His collaboration[4] with Abbas Uddin, the most popular folk singer of Bengal, produced some of the gems of Bengali folk music, especially of Bhatiali genre. Jasimuddin also wrote some modern songs for the radio. He was influenced by his neighbor, poet Golam Mostofa, to write Islamic songs too. Later, during the liberation war of Bangladesh, he wrote some patriotic songs.
Jasimuddin died on 13 March 1976 and was buried near his ancestral home at Gobindapur, Faridpur. A fortnightly festival known as Jasim Mela is observed at Gobindapur each year in January commemorating the birthday of Jasimuddin. A residential hall of the University of Dhaka bears his name.
He was honored with President's Award for Pride of Performance, Pakistan (1958), DLitt. by Rabindra Bharati University, India (1969) Ekushey Padak, Bangladesh (1976), Independence Day Award (1978).
এই বই সম্পর্কে কিছু বলার নেই। শুধু এ টুকু বলতে পারি, আমাদের গ্রাম দেশে এর মুখে অর মুখে তার মুখে ছড়ানো ছিটানো মুখরোচক গল্প সমগ্র নিজ কানে শুনে প্রায় দশ বারো বছর তপস্যা করে কবি জসীম উদ্দীন "বাঙ্গালীর হাসির গল্প" এই গ্রন্থখানী ২ পর্বে সংকলন করেছেন।বস্তুত বইগুলো শিশু কিশোরদের মনোরঞ্জনের জন্য লিখিত কিন্তু বইগুলোর সুধাপান থেকে প্রবীনরাও বাদ যাবে না।নানা-দাদার কাছে শিশুশ্রেনীদের গল্প শুনার আবদার থাকে। শ্বাশত বাংলার অমুল্য সম্পদ "বাঙ্গালীর হাসির গল্প" সঙ্কলনটি তাদের জন্য বর হয়ে থাকবে নিশ্চিত।
১. গোপ্যার বউ : চাপাবাজিতে গোপ্যা ঘনাদাকেও হার মানায়। এই সাপের ফণায় চড়ে শাপলা ফুল তুলে আনে, ওই মৌকেক চড়ে আকাশে ঘুরেফিরে আসে। আবার, কচুগাছের ডালে ওঠে, ডাল ভেঙে শালার বাড়িতে ভোজ দিয়ে আসে। এক ছালা চাপাবাজির গল্প ফেলে আসতে গিয়ে আরো এক ছালা গল্প মাথায় নিয়ে ফেরত আসে।
২. আয়না : রবীন্দ্রনাথের ‘আয়না’ গল্পটা ক্লাস সিক্সের আনন্দপাঠ বইয়ে প্রথম পড়েছিলাম। আবারো পড়ে বউটার ছাগলামি মার্কা কথাবার্তায় মজাই লাগল।
৩. নাপিত-ব্রাহ্মণ : এক নাপিতের নাপিত গিরি ছেড়েছুড়ে অন্য অঞ্চলে গিয়ে ব্রাহ্মণ পন্ডিতি করার গল্প।
৪. নাপিত ডাক্তার : বাবা প্রায় সময়ই ‘অল্পবিদ্যা ভয়ংকরি’ – ব্যাপারটা বোঝাতে এই গল্পটা বলেন। এটা পড়ে মনে হয়েছে, ‘ওরে, এটা তো আব্বুর সেই গল্পটা! ‘শিক্ষামূলক দিকটা ধরতে পারলে ভালোই লাগবে।
৫. জিদ: বাপরে বাপ! মাছ খাওয়া নিয়ে এত জেদ করে কবরে ঢোকানোর পরে কিনা জেদ পড়লো! হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবার জোগাড়।
৬. কে বড় : এ গল্পটাও এর আগে আপুর কাছে শুনেছিলাম। তখনও আগা-মাথা-মুন্ডু কিচ্ছু বুঝিনি, এবারো না….
৭. পরের ধনে পোদ্দারি : গোবেচারা তালেম-এলেম ধরে নিয়ে গেলে যা হয়। আমও গেল, ছালাও গেল। হাইস্যকর।
৮. টুনটুনি আর টুনটুনা
৯. টুনটুনির বুদ্ধি : টুনটুনার পিঠে খাওয়ার শখ জেগেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে উপকরণ সংগ্রহ করায় সিংহের কাছে ধরা পড়ায় তাকে খাওয়ায় গোবরের পিঠে। আর টুনটুনার হ্যাঁচ্চোর সাথে ভূতের ভয়ে লেজ গুটাইয়া সিংহ মশায় দে চম্পাট।
১০. জামায়ের শ্বশুরবাড়ি যাত্রা : ছায়া’কে কেউ পিছু ছাড়তে পারে! তা করতে গিয়ে কিনা বউয়ের জন্য কেনা শাড়ি গয়না সব ছায়াকে দিয়ে রাস্তায় ফেলে এসেছে। অবশ্য মায়ের অতি বুদ্ধিহীন বাধ্য ছেলে কিনা!
১১. চুক্তি: আমি এখঅন পর্যন্ত কৃপণ মানুষের মধ্যে আমার ছোটমামাকেই দেখেছি। কিন্তু এ জগতে যে ইহার চেয়েও বৃহৎ কিপ্টেরও স্থান আছে তাহা জানিতাম না।
১২. গুরু ঠাকুরের ভাগবত পাঠ : ” এমন মধুর নাম আর কোথাও খুঁজিয়া পাইবে না। এই নামের মোহে ভুলিয়া রামছাগল ঘাস খাইতে খাইতে ঘন ঘন দাড়ি নাড়ে। বোলতার চাক মাথায় পরিয়া শেয়াল মামা সারারাত ভরিয়া হুক্কা-হুয়া করিয়া এই নাম উচ্চারণ করে – ভীমরুলের বাসায় বসিয়া বসিয়া দিনরাত রামভালুক এই নাম কান পাতিয়া শোনে। বল, বল ভক্তগণ, কিয়, ক্ষিয়, ঘিয়। ” – এমন জিনিস যদি হয় গুরুঠাকুরের ভাগবত পাঠ, তবে আমরা কেন পাঁচ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। হ্যাঁ, তবে – কারো যদি একান্তই লোভ হয় তবে গুরু ঠাকুরের মতোই ভক্তদের সগ্যপুণ্যির উপকরণ দাড়ি কাড়াকাড়ি চলতে পারে। আহা, বেচারা গুরুঠাকুর!
১৩. সত্যকার আলসে : “কত রবি জ্বলে!” “কেবা আঁখি মেলে।” আগুন লাগার পরও এসব কথা যারা বলতে পারে, তবে ভাই তোরাই সত্যকার আলসে।
২৩. মাঝি ও পন্ডিত: এই গল্পটা আর সুকুমার রায়ের ‘জীবনের হিসাব’ কবিতাটা সম্পুর্নরুপে একই। শুধুমাত্র – এটা গল্প আর ওটা কবিতা।
২৪. আমের স্বাদ
২৫. অনুমতিপত্র কে দেখাইবে?
২৬. শ্বশুর জামাই
২৭. অচ্ছুৎ : সমাজেও এমনি বড়লোকেরা বড়াই করে চলে। আর যারা না থাকলে তাদের এই অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না, তাদেরকেই অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। এটা সম্ভবত বইয়ের সবচেয়ে শিক্ষামূলক গল্প।
[আমার নিতান্তই ধৈর্য কম। কিছু গল্পের ব্যাপারে আরো কিছু বলার দম কুলোচ্ছে না।] রেটিং তিন দিলে জসীম উদ্দীনের বারো তেরো বছরের পরিশ্রমকে অবমাননা করা হতো। তাঁর এই কাজটা আসলেই Folk tales of Bangladesh.
বইয়ের নাম: বাঙ্গালীর হাসির গল্প ১ লেখক: জসীম উদদীন ধরণ: রম্য সাহিত্য প্রকাশন: পলাশ প্রকাশনী প্রথম প্রকাশ: ১৯৯০ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৫০ মুদ্রিত মূল্য: ২২০
বেশ ভালো লাগলো বইটা, সাথে একটু নস্টালজিকও হয়ে গেলাম।
যখন ছোট ছিলাম তখন প্রায়ই আমি আমার দাদির সাথে ঘুমাতাম। তখন দাদির কাছে আবদার করতাম গল্প শোনার জন্য। দাদিও শুরু করে দিতো এমনই কত সব অদ্ভুত সুন্দর গল্প।শুধু তন্ময় হয়ে শুনতাম...
সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ পড়ার পর হঠাৎ করে এটার কথা মাথায় আসল। অনেক বছর আগে এটা শুরু করলেও শেষ করা হয়ে ওঠেনি। প্রথমদিকের গল্পগুলোতে তেমন মজা পাইনি; আর গল্পগুলো বিভিন্ন কার্টুনে বারবার ব্যবহার হতে দেখেছি নাহলে কারও না কারও মুখে শোনা। তবে বাকিগুলো পড়ার পর বেশ ভালো লাগল। সাধুভাষায় লেখা হলেও গ্রামের আবহে মানিয়েছে অদ্ভুতভাবে। দারুণ একটা কাজ করে গেছেন আমাদের পল্লিকবি। গল্পগুলোতেও পল্লিবাসী বাঙালির চরিত্রের ভালোমন্দ দিকগুলোও চমৎকার ফুটে উঠেছে। বেশ কয়েকটা গল্পে হাসির রসদ রয়েছে প্রচুর। বাঙালির হিউমার খুব উন্নত না হলেও ফন্দি-ফিকির খাটানোতে বেশ পটু।
পল্লীকবি জসীম উদদীনকে আমরা মূলত কবি হিসেবে জানি। কিন্তু কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রবন্ধ ও গল্প সংকলন। তাঁর রচিত 'বাঙ্গালীর হাসির গল্প' প্রথম খণ্ড পড়া শেষ করলাম। ২৭টি গল্প আছে সংকলনটিতে৷ বাংলা লোকসাহিত্যের অমূল্য রত্ন এই গল্পগুলো। লেখক নানা জায়গা ঘুরে গল্পগুলো সংকল করেছেন। কিছু গল্প শিক্ষণীয়, আবার কিছু গল্প নিছক বিনোদনের। গল্পগুলো বাচ্চাদের জন্য রচিত হলেও বড়রাও সমান উপভোগ করতে পারবেন।
একটা মরে আসা দুপুর। ভরপেট খাওয়ার পর মায়ের বিখ্যাত পিটুনির ভয়ে লক্ষ্মী ছেলের মতো বালিশে মাথা রেখেছি। কিন্তু ঘুম তো কিছুতেই আসছেনা। মন তখন খেলার মাঠে,আম জামের ডালে,গোল্লাছুট কিংবা এটাসেটা খেলার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। শত হাতছানির ডাকে সাড়া দিতে না পারায়, ছোট্ট ছেলেটার গলা অভিমানে বুজে আসে। মা'টা কিচ্ছু বুঝেনা। দুপুর পেরুলেই ঘুম পাড়ানোর পায়তারা করে।
মা বোধহয় সেই অভিমান টের পান৷ বুকের কাছটায় আরেকটু চেপে ধরে বলেন,'কিচ্ছা' শুনবি? বা কখনো ছেলেই 'কিচ্ছা' শোনার বায়না করে। শুরু হয় গল্প। আলো আঁধারির ঘরে,মায়ের গন্ধ মাখতে মাখতে, মায়ের গলায় ভর করে ছেলেটা নানান দেশে ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়েই হয়তো ছেলেটার চোখে ঘুম নামে। তারপর সময়ের নিয়মে ছেলেটা বড় হয়। তখনও নিয়ম করে দুপুর নামে,কিন্তু মায়ের কাছ থেকে আর গল্প শোনা হয়না তার। ছেলেটা মায়ের ঘ্রাণ,মায়ের গল্প থেকে ক্রমশই দূরে সরতে থাকে।
তারপর তার হাতে আসে জসীম উদ্দীনের 'বাঙ্গালীর হাসির গল্প'। ছেলেটা অবাক হয়ে খেয়াল করে,এগুলো আসলে মায়ের বলা সেসব গল্পের সংকলন। জসীম উদ্দীনের অক্ষরে,শব্দে বহুদিন পর ছেলেটা আবার মায়ের ঘ্রাণ পেতে থাকে। সেইসব গল্প,কমলা রঙের রোদের সেইসব দুপুর,মায়ের স্পর্শ, মায়ের ঘ্রাণ আর মায়ের গল্পে ছেলেটা ডুবতে থাকে।
আরেহ! এগুলো তো দেখি আমার বার্ষিক পরীক্ষার পর ডিসেম্বরের ছুটিতে নানুবাড়িতে যেয়ে উঠানের কোনায় মাটির চুলায় নানুর ভাপা পিঠা বানানোর সময় সব ভাইবোন একসাথে কাঠের ছোট পিড়িতে বসে লোডশেডিং এ হারিকেন জ্বালিয়ে কিংবা বছরের মাঝামাঝি তে গ্রীষ্মের ছুটির সময় উঠানে এক আকাশ তারার নিচে খালি গায়ে শীতলপাটি তে গড়াগড়ি খেতে খেতে বড় খালা, নানা, মামা দের মুখে শুনে হিহিহি করে হাসির রোল তোলা গল্পগুলা। কি সুন্দর...
"আমি টুনটুনা টুন-টুনাইলাম রাজা মশাইর নাক কাটাইলাম।"
কি খুব পরিচিত মনে হচ্ছে না? আমরা মানে নাইনটিজ কিড যারা তারা ছোটবেলায় টোনাটুনির গল্প একবার হলেও শোনেনি বা পড়েনি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটবেলায় অতি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতাম কবে গরমের ছুটি বা ঈদের ছুটিতে নানা-দাদা বাড়ি যাবো। যতটানা সবার সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ ছিলো তারচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকতো কিচ্ছা শুনতে পাবো তাই। কেউ না কেউ তো থাকতোই যার গল্পের ঝুলিতে থাকতো রাজ্যের সব কিচ্ছা। সে শুনেছে তার দাদী-নানীর কাছে আর দাদী-নানী শুনেছেন তার দাদী-নানীর কাছে। এভাবে হাজার বছর ধরে লোকমুখে চলে এসেছে দারুণ দারুণ সব কিচ্ছা।
সেই তখন তো আর এখনের মতো বিনোদনের ব্যবস্থা ছিলো না। তাই গল্প বুড়োরা তাদের কিচ্ছার ঝাঁপি নিয়ে বসতেন। নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে বা শুধু গলার স্বরের উঠানামা করে মজার মজার সব গল্প সবাইকে শুনাতেন। শুধু যে ছোটরাই শুনতো এমন না। বড়রাও আসরে বসতেন। শুনতে শুনতে সবাই হেসে কুটিকুটি হতো। আর এজন্যই পল্লীকবি এই বইয়ের নাম দিয়েছেন "বাঙ্গালীর হাসির গল্প"। মোট ২৭ টা লোককথা আছে। লোকমুখে প্রচলিত এই গল্পগুলো সংগ্রহ করে কবি লিখিত রূপ দিয়েছেন। মূলত ছোটদের জন্য লেখা এই গল্পগুলো বড়দেরও পড়তে ভালো লাগবে। আজকে যখন পড়ছিলাম তখন যেনো গল্পগুলোকে একটু ভিন্নভাবে চোখে পড়ছিলো। গল্পের ছলে ছলে বুদ্ধিমত্তা, নীতিকথা, অতি লোভের ফল কেমন সহজে মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া যায় এই গল্পগুলো যেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বেশিরভাগ গল্প আগেই শোনা এবং পড়া ছিলো। তাও আবার পড়তে আমার ভালো লেগেছে। হয়তো হেসে কুটিকুটি হইনি কিন্তু ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি লেগেই ছিলো। নস্টালজিক একটা সন্ধ্যা কেটে গেলো।
ছোটবেলা থেকে বুড়োদের মুখে শুনে আসা গল্পগুলোই মূলত মলাটবদ্ধ হয়েছে এখানে। এই বয়সে পড়ার জন্য উপযুক্ত বই না অবশ্যই; তবে বয়সের ব্যাপারটা আমলে না নিয়ে স্রেফ নির্মল আনন্দের জন্য পড়লে ভালো লাগবে। বড়রা যারা আছেন, পরবর্তী প্রজন্মকে বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী করতে চান তাদের জন্য এই বইটা রেকমেন্ডেড। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত এই গল্পগুলো যে-কোনো শিশুর শৈশব রাঙাতে যথেষ্ট।
পড়তে গিয়ে টের পেলাম বেশির ভাগ গল্পই ছোটবেলায় বিভিন্ন সময়ে পড়ে বা শুনে ছিলাম। তাই জসীমউদ্দিনের ছন্দময় লেখনিতে পুরনো প্রিয় গল্পগুলিতে চোখ বুলিয়ে বেশ সুখকর সময় পাড় হলো। কিন্তু অতি প্রিয় একটা গল্পে এসেই খানিকটা খটকাও লাগল। (ব্যাপারটাকে বড় হওয়ার ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বলেই ধরে নিচ্ছি আপাতত) 'তিন মুসাফির' শীর্ষক গল্পের কাহিনীতে যতদূর মনে পড়ে তিন পথিকের ধর্মীয় পরিচয়ের ব্যাপার-স্যাপারের উল্লেখ ছিল না। কাহিনী বিচারেও সে রকম পরিচয় নিতান্ত অবান্তরই বলা যায়। এই সংকলনে তিন জনের ধর্মীয় পরিচয় জুড়ে দেওয়া। ব্যাপারটা কী সম্পাদনা সংক্রান্ত!?
কবি বলেছেন, এই বই ছোট বড় সবার সমান ভাবে ভালো লাগবে। অন্যদের কথা জানি না,কবির কথাটা ; আমার ক্ষেত্রে সত্য। প্রতিটা গল্প এত ভালো। তবে সবগুলো হাসির নয়,কিছু গল্প অনুভবের ও বটে। কয়েকটা গল্প ছিল নিছক হাসির, সেগুলো পড়ে হেসেছি প্রচুর।
এই বইয়ের দুইটা পার্ট পাওয়া যায়,দুটাই পড়েছি। তবে সময় মত পড়তে পারি নি,যথা সময়ে বইগুলো পড়লে ভালো হতো।
ছোট ছোট কয়েক পাতার গল্পগুলো পড়ে আমার হাসির চেয়ে কান্নাই যেন বেশি আসলো। হাস্যরসের মৃদু ধারাটার পেছনে লুকিয়ে আছে কী নির্মম দারিদ্রতা, অন্নাভাব আর সামাজিক নিপীড়নের এক চিত্র! মানুষ যা দেখে, যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়, বাস্তবতা তার কল্পনাকে যতদূর যেতে দেয়, তার উপর নির্ভর করেই তো মানুষ ভাবতে শেখে, মুখে মুখে গল্প তৈরি করে। আমাদের পূর্বপুরুষের গল্পে তাই আমরা দেখতে পাই বহু পরিশ্রম করে বহুদিন পরে কিনতে পারা তিনটা মাছের মধ্যে কে দুইটা খাবে আর কে একটা খাবে তা নিয়ে স্বামী - স্ত্রী তুমুল ঝগড়া কর�� কবর পর্যন্ত যেতে রাজি, ধার করা পরণের পোষাক নিয়ে অপমান-অপদস্থের শিকার হন গ্রামের মৌলবি, ডাক্তার ডাকার পয়সা নেই বলে এলাকার নাপিতই সবার ডাক্তার, সামান্য বৈষয়িকতা নিয়ে ভাই ভাইকে অবলীলায় ঠকায়, অভাবের তাড়নায় সংসার বিতাড়িত মানুষ দ্বারস্থ হয় জলপরীর....
সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলার গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের বয়ান কি তবে কেবলই মিথ?
এই বইয়ের অধিকাংশ গল্পই ছোট বেলায় নানা বইতে পড়েছি, নানা মুখে শুনেছি । তারপর ও এখন আবার নতুন করে পড়তে একটুও বিরক্ত লাগে নি। বরং কিছু গল্প তো প্রাণ খোলা হাসি এনে দিয়েছে। ছোটদের গল্প শুনানোর জন্য সুন্দর একটা বই।
ছেলেপিলেদের ঘুম পাড়ানোর দরকার হয় না কোন দেশে! সব অঞ্চলের মা-বাপদেরই একটা না একটা সময় ছোট বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে গলদঘর্ম হতে হয়। কত কত গল্প শুনাতে হয়, ছড়া কাটতে হয়। গল্পের ভান্ডারে টান পড়লে নতুন গল্প বানাতে হয়।
এ তো গেলো ছেলেদের কথা। গুমোট কোনো দুপুরে গেরস্থালী কাজের ফাঁকে আড্ডায় টুকিটাকি চুটকি, রম্যগল্প ভাঁজতে বুড়োরাও পিছিয়ে থাকে না। কিংবা মফস্বল-শহুরে লোডশেডিংয়ের রাতগুলোয় হাতপাখার ঘূর্ণনের সাথে সাথে দাদী-নানীদের বলে যাওয়া অতিপ্রাকৃত গল্পের আবেদন ছেলে-বুড়োর কাছে সমানই বোধকরি।
সোজা দৃষ্টিতে রসহীন, মামুলি কত গল্প গল্পকথকের উপস্থাপনা, অভিনয়ে সরস আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এইসব গল্পই হলো রূপকথা, লোককথা, উপকথা আর চুটকি। লোকে মুখে ফিরতে ফিরতে রূপ বদলায়, ডালপালা গজায়, পুনর্জন্ম নেয় ভিন্ন আঙ্গিকে। হয়তো ভিন্ন কোনো ভাষায়।
আমরা বাঙ্গালীরা বরাবরই রসিক। কোনোকিছু নিয়ে ব্যঙ্গ, হাস্যতামাশা করতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। দিনে দিনে এ স্বভাবটি আরো প্রকট হচ্ছে।
বাঙলার লোকে মুখে প্রচলিত কিছু রম্যগল্প নিয়ে পল্লীকবি জসীম উদদীন দুই খন্ডে বের করেছিলেন 'বাঙ্গালীর হাসির গল্প'। প্রথম খন্ডে ২৭ এবং দ্বিতীয় খন্ডে ২৪, মোট ৫১টি রম্যগল্প নিয়ে এই সংকলন। প্রথম খন্ডটি বের হয়েছিলো ১৯৬০ সালে, দ্বিতীয়টি '৬৪ সালে।
এ গল্পগুলোর অনেকগুলোই আমাদের চেনা। দাদী,নানী বা বাড়ির গল্প ফাঁদতে পারে এমন কোনো বুড়োর কাছে শোনা। কিছুটা ভিন্ন বা পরিবর্তিত, কিন্তু বেশ কয়েকটি গল্প পড়ে মনে হবে-- আঃ! এ তো আগেই পড়া, কিংবা দাদুর কাছে শোনা। কাবুলিওয়ালার শখ করে কাঁঠাল খাওয়ার সে গল্প কে না শুনেছে! কিংবা গ্রাম্য চাষীর প্রথম আয়নাদর্শনের গল্প।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর 'টুনটুনির বই' এর অনেকগুলো গল্পই এই সংকলনে আছে, একটু পরিবর্তিত ভার্সনে।
গল্পগুলোর অনেকগুলোই স্রেফ হাসি-তামাশার, আবার অনেকগুলোই মানুষের জীবনযাত্রার,আচরণের খুঁতকে কেন্দ্র করে সূক্ষ্ম বা স্থূলভাবে ব্যঙ্গ করা।
আমাদের আশেপাশেই আমাদের সব কথায় সায় দেয়া, আর বিপদে পড়লে ভোল পালটানো ভন্ডের দল আছে। এদের নিয়ে গল্প 'রহিমুদ্দীর ভাইর বেটা', আরও আছে মাজারপূজা নিয়ে 'শেয়ালসা পীরের দরগা'। পড়লে বোঝা যায় এখন পর্যন্ত আমাদের জাতির বড় একটা অংশ গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসালেও, সেকালে মানুষের বিচারবুদ্ধি একদম খেলো ছিলো না।
লোকগীতি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া হয়েছে কবির, আড্ডা হয়েছে নানা রকমের মানুষের সাথে, ভারী হয়েছে গল্পের ঝুলি। 'বাঙ্গালীর হাসির গল্প' তারই ফসল। কবি দাবী করেছেন, এই গল্পগুলোরই কয়েকটা ইওরোপ,আমেরিকা নানা দেশ ঘুরে এসেছে। চেকশ্লোভাকিয়া, গুজরাট, রাশিয়ায় অন্যরকমে, অন্য আঙ্গিকে প্রচলিত আছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজ্যশাসন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এদেশে আসা ভিনদেশীরা নিজেদের কিছু যেমন আমদানী করেছে, এখানকার কিছু নিয়েও গেছে। ঠিক কোনগুলো আমদানী, আর কোনগুলো রপ্তানির ফসল সেগুলো নির্ণয়ের দায়িত্ব বিশেষজ্ঞদের কাঁধে ছেড়ে দিলে আমাদের হাতে থাকে শুধুই দুই খন্ড 'বাঙ্গালীর হাসির গল্প'। শয়ে শয়ে বছর ধরে মুখে মুখে, ঘরে ঘরে, ফসল তুলবার না তুলবার মওসুমে, ক্লান্তির শান্তির সময়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাওয়া এ গল্পগুলো আপনার মুখেও হাসি ফোটাতে ব্যর্থ হবে না। কিছু গল্প নেহাতই খেলো মনে হলেও অনেক গল্পকথকই অভিনয় আর উপস্থাপনার জোরে সেগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন নানা সময়ে।
ছোটবেলায় মামা, দাদুদের মুখে যেই গল্পগুলো শুনে বড় হয়েছি, দুই মলাটের মাঝে সেগুলোকে আবার দেখে অন্যরকম মুগ্ধতায় মন ছেয়ে গেলো। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে দাদা-দাদুদের মুখে মুখে এমন ছড়িয়ে রয়েছে কত হাজারও গল্প। জানিনা জসিমউদ্দিনের এই সংগ্রহ ই শেষ কিনা।
প্রথম যখন বইটার কথা শুনি, তখন বুঝতে পারিনি এটা মূলত শিশুদের জন্য লেখা। আমার বরাবরই শিশু সাহিত্য পছন্দ, তাই এক প্রকার খুশিই হলাম বইটা খুলে।
'কে বড়' গল্পটি আমার জানা মতে রাশিয়ান রূপকথা কিন্তু এটিও জায়গা করে নিয়েছে এই বই এ।
এর মধ্যে থাকা বেশিরভাগ গল্পই বেশ মজার, যেগুলো ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। তবে কিছু কিছু গল্পে স্বামী স্ত্রীর গায়ে কিংবা স্ত্রী স্বামীর গায়ে হাত তোলার বিষয়টা এমন ডাল ভাতের মতো উপস্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো শিশু উপযোগী হওয়া তো দূরের কথা, আজকের দিনের সুশীল সমাজে গ্রহণযোগ্যই নয়।
তবে বই এ থাকা অন্যান্য গল্পগুলো শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও আনন্দ দিতে সক্ষম।
This book is what Arabian nights for Arab, Tales from Grim Brothers for Europeans and Aesop tales for greek. Yeah, this book is all-time favorite bedtime stories for Bengalis. The best part of it is along with the moral it can literally make your stomach ache for laughing for so long. I have reread it for uncountable times and this book never fails to amaze me.
অনেকটাই আবেগ থেকে ৪ তারকা দেয়া। বইটিতে আছে সেসব গল্প, যেগুলো ছোটবেলা থেকে অসংখ্যবার পড়া/শোনা হয়েছে। টুনটুনির পিঠা খাওয়ার গল্প, চাষীর ক্ষেতে আয়না খুঁজে পাওয়ার গল্প, ভণ্ড নাপিতের গল্প– এসব গল্প জানে না, এমন মানুষ বর্তমান জেনারেশনে অনেক পাওয়া গেলেও 90's kid দের মধ্যে কমই থাকার কথা। গল্পগুলো ভুলে গিয়েছিলাম। নতুন করে পড়ে নস্টালজিয়া কাজ করেছে ভীষণ। গল্পের উপস্থাপন বেশ সুন্দর। একেবারে গল্প বলার মত করেই লেখা। গল্পগুলো পড়ে মনে হয়েছে, রূপকথাকে এভাবে গল্প বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ও কি বুঝবে? বোধহয় না। আর হ্যাঁ, যেহেতু পল্লীকবির লেখা, বেশ কয়েকটা গল্পে বউকে পেটানোর কথা উল্লেখ রয়েছে, গ্রাম-বাংলায় যেটা মোটামুটি একটা চিরন্তন সত্য (😂)। আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছি, কিন্তু মনের মধ্যে বেঁধে নি যে, তা না। যাই হোক, গল্পগুলো অমর হোক, আর সমাজব্যবস্থার উন্নতি হোক। আবেগের বশে অনেক কথা লিখে ফেললাম। কেউ না পড়লেই হয় 😅
বইটির বেশ কয়েকটি গল্পই আমার ছোটবেলায় মা'র কাছে শোনা। কয়েকটি একটু বড় হয়ে পড়েছি বিভিন্ন গল্পসংকলনের বইতে। বহুদিন পর প্রায় অচেনা হয়ে যাওয়া গল্পগুলো যখন আবিষ্কার করলাম তখন আমায় আর পায় কে! এক নিমিষেই বই কাবার। এখনো যেন কানে বাজছে ছেলেবেলায় মা'র মিষ্টি গলার ছড়া কাটা - "মাঠ ভাই! মাঠ ভাই! দে তো ঘাস, খাবে মোষ খুঁড়বে মাটি, গড়বে ঘটি, ভরব জল, ধুব ঠোঁট, তবে নেব চড়ুইর জোট।"
তবে হ্যাঁ, বইখানা নতুন গল্পের স্বাদ দিতেও কার্পণ্য করে নি। এই মাঝবয়সের শুরুতেও দিব্যি উপভোগ্য বামুন, চাষী, তাঁতি, নাপিত, কাক, চড়ুই দের নিয়ে লিখা এসব লোকজ গল্প। আর সিরিয়াস পাঠকের উপরি পাওনা- বইয়ের শেষে জুড়ে দেয়া বাংলার লোকজ গল্পের সমৃদ্ধ ভান্ডারের গুরুত্ব ও ইতিহাস নিয়ে জসীমউদ্দিন এর নিজের সাড়ে তিন পাতার এক জাদুকরী লেখনী।
এটি আমার জন্য দুই মলাটে বন্দি এক টুকরো ছেলেবেলা। পাঁচ তারার কম কি আর দেয়া যায়!
ছোটবেলা যে কতোশতোবার ভাত খেতে খেতে বইটা পড়ছি তার ইয়াত্তা নাই!! প্রতিটা গল্প সুন্দর,প্রতিটা গল্প সুন্দর!! কোন বইয়ের দুই বা তিন খণ্ড থাকে,বইয়ের সিকুয়াল হয় তখন জানতাম না।থাকতাম একদম গ্রামে,ব্র্যাকে আম্মুর চাকরির সুবাদে ওখানের লাইব্রেরিতে যা বই আসতো সেগুলোই আমি জানতাম তখন।সেই কারণেই একই বই বারবার পড়া।উপায় ছিল না বলেই।দ্বিতীয় খণ্ড আছে,এবং সেটা হাতে পেয়ে আমি যে কি খুশিটা হয়েছিলাম!! লিখতে লিখতে সেটা মনে পড়ে গিয়ে মন ভরপুর রোদেলা হয়ে গেল।আহা...এই পুরো বইটা আমার শৈশবের যে কি সুন্দর একটা সময় জুড়ে ছড়িয়ে আছে সেটা যদি ঠিকঠাক বলতে পারতাম!
ছোট বেলায় যে এত মানুষের কাছ থেকে এত গল্প শুনছি তা মনেই পড়তো না এটা না পড়লে। বইয়ের সব গল্পই বাংলাদেশের সব মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত গল্প। বাংলাদেশের ফোকটেলস সংগ্রহের খোঁজ চাইলে এর চেয়ে ভালো কিছু আপাতত আছে কিনা জানা নাই।
গল্পগুলা পড়তে গিয়ে একটা ব্যাপার খুব চোখে লাগলো। অধিকাংশ গল্পেই দেখা যায় একজন আরেকজনকে ঠকাচ্ছে, অথবা একজন অপরজনের কোন ক্ষতি করে মজা নিচ্ছে। বাংলাদেশের লোকগল্প গুলা সব এমন কেন? নাকি সব দেশেই এমন? আরেক জনের বিপদ না দেখলে কী আমাদের হাসি পায় না? জানিনা।