Jump to ratings and reviews
Rate this book

জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

Rate this book
১৯৮৫ সালে একদিন লক্ষ্মীবাজারের শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী লেনের বাসিন্দা যুবক আব্দুল মজিদ রায়সাহেব বাজারে যাওয়ার পথে কারকুন বাড়ি লেন থেকে বের হয়ে নবাবপুর রোডে উঠলে তার ডান পায়ের স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতে ফট করে ছিঁড়ে যায়। এভাবে এই কাহিনির শুরু। ৬২ পৃষ্ঠা পরে কাহিনির শেষে দেখা যায়, আব্দুল মজিদ দৈনিক ইত্তেফাকে একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে তার বাড়িটি বিক্রি করে লক্ষ্মীবাজার থেকে বসত উঠিয়ে চলে যায়, ফলে তার অস্তিত্বই যেন মুছে যায়। কিন্তু শহীদুল জহির এইটুকু পরিসরে ফুটিয়ে তুলেছেন একাত্তরের নয় মাসে ঢাকা শহরের একটি মহল্লার সমগ্র জীবন। তখন কী ঘটেছিল, তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার দেড় দশক না পেরোতেই আব্দুল মজিদকে কেন তার বসতবাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে যেতে হলো, এই নিদারুণ প্রশ্নের মধ্যে নিহিত রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির এক নিষ্করুণ বাস্তবতা। সোনায় মোড়ানো হাতের কথাশিল্পী শহীদুল জহিরের এই উপন্যাস বাংলা কথাসাহিত্যে এক অভিনব সংযোজন । বাংলা আখ্যানগদ্যের এমন অপূর্ব রূপ ও ভঙ্গি এর আগে তো ছিলই না, এখনও বিরল।

48 pages, Hardcover

First published February 1, 1988

29 people are currently reading
622 people want to read

About the author

Shahidul Jahir

18 books174 followers
Shahidul Jahir (also spelled Zahir) was a Bangladeshi novelist and short story writer. He was reputed for extraordinary prose style and diciton and considered a genuine founder of post-modern fiction in Bangla literature.

Born in Dhaka, Bangladesh in 1953 as Shahidul Huq, he joined the Bangladesh Civil Service in the Administrative cadre in 1981. In 2008, he was appointed as a Secretary in Charge of Ministry of CHT affairs to the Government of Bangladesh. A confirmed bachelor, he lived a quiet and a very simple life. Hardly he agreed for a formal interview for publication.

Shahidul Jahir was one of the most important contemporary writers in Bangladesh. He became interested in magic realism after reading Marquez's works. He was known to some people as the Márquez of Bangladesh, carrying on the legacy of magic-realism with strokes of his own unique surrealist style, deeply imbibing the politics, history and culture of Bangladesh, his own country home in Sirajganj and his place of birth. However, his style also reminds of Syed Waliullah, a modern Bangla fiction author of Western lineage. But he had his own style of labyrinthine narration that would lead his readers to a maze. He relied more on narration than dialogue between characters. His diction was symbolic and mystified. He resorted to colloquialism in order to infuse reality into the context and story-line. The name of his last published story was, "Miracle of Life". Here is an excerpt (translated from Bangla) from his swan song:

"An adolescent girl, or a young girl, or who is just a gal...whatever, what do we do with her? She can have a name, since she is a human being, and human beings do have names, so her name could be Pari, Banu, or Ayesha... ...If she stands at the edge of the dirty drains, standing inside her home, as broke as the ragged nest of a magpie (babui), her mother runs around...her mother goes around cooking for others, she cooks rice, she cooks curries,she makes chapatis, there are people who swallow them, or maybe they rebuke her, What the hell have you cooked,woman!... ...Perhaps at that moment, Pari or Pari Banu, is standing at the rail ways of Dayaganj or Shamibag, holding the hands of her little sister or brother, and their father runs around, he too goes to places, maybe he does things, pulls someone else's rickshaw, pushes someone else's cart, or maybe he does nothing, he just lies down on his bed and suffers from piles. Then, what do we do with this Pari? The leader, or the official of this republic, the officers, or the civil society - none of them know...We have no idea what to do with her..."


In his writing career spreading over more than two decades, Jahir published only three novels and three collections of short stories. Two collections of his selected novels and short stories were published in 2007.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
405 (65%)
4 stars
167 (27%)
3 stars
33 (5%)
2 stars
7 (1%)
1 star
4 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 130 reviews
Profile Image for Fahima Farabi.
7 reviews27 followers
February 23, 2016
শহীদুল জহির—বাংলা সাহিত্যের এই জাদুকরের নাম আমার কাছে নবতম প্রেমের সমার্থক হয়ে ওঠে যেদিন ই-বই এ, কম্পিউটারের পর্দায় ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’র প্রথম বাক্যটি দৃষ্টিগোচর হয়—‘উনিশ শ পঁচাশি সনে একদিন লক্ষ্মীবাজারের শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী লেনের যুবক আবদুল মজিদের পায়ের স্যাণ্ডেল পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে ফট করে ছিঁড়ে যায়’। এই লাইনটির মধ্যে প্রথমেই যা নজরে পড়ে, বা বলা যায় এক ধাক্কায় যে ভঙ্গিমাটি এটি তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়, তা একটি নির্দিষ্ট গদ্যরীতি, যার সাথে প্রবন্ধের বাক্যগঠনের আমরা একটি সম্পৃক্ততা দেখতে পাই। মনে হয় লেখক যেন এই জগতের, যে জগতটি তিনি বুনে চলেছেন, তার দূরতর কোন দ্রষ্টা, যেন অন্য কোথাও পড়া কিছু গল্পের আখ্যান তিনি লিখে চলেন, যে গল্পগুলো সম্পর্কে তার নিজস্ব বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। কেন আবদুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায় তার সন্ধান করতে উৎসুক পাঠক এগোলে জানতে পায়, ‘আসলে বস্তুর প্রাণতত্ত্ব যদি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে হয়তো বলা যেত যে, তার ডান পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতে বস্তুর ব্যর্থতার জন্য নয়, বরং প্রাণের অন্তর্গত সেই কারণে ছিন্ন হয়, যে কারণে এর একটু পর আবদুল মজিদের অস্তিত্ব পুনর্বার ভেঙে পড়তে চায়’। দ্বিতীয় লাইনে এসে শহীদুলের বিজ্ঞানমনস্কতার সাথে আমরা পরিচিত হই, যেখানে তিনি মানুষের মানসিক বাস্তবতার সাথে বস্তুজগতের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে নিজের আস্থায় আলোকপাত করেন।

‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ শহীদুল জহিরের প্রথম উপন্যাস, দ্বিতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ। এটি লিখবার আগে লেখক প্রথম জাদুবাস্তবতার ঘরানার সাথে পরিচিত হন, তার ভাষ্যমতে তার প্রথম পড়া ম্যাজিক রিয়েলিজম ভিত্তিক উপন্যাস ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’ এর পাঠের মাধ্যমে। শহীদুল জহিরকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের জাদুবাস্তবতার পুরোধার, যদিও তিনি নিজে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লেখায় এর আলামত আগে দেখতে পান বলে ব্যক্ত করেন। প্রথম উপন্যাসেই তিনি এই গল্পশৈলি এমন সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করেন যে আমরা রয়ে যাই হতবিহ্বল। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা করে আসা শহীদুল জহিরের পক্ষে হয়ত এ অতিবাস্তব কিছু মোটেই না।

শহীদুলের প্রথম বই, একটি ছোটগল্পের সংকলন ‘পারাপার’ এর সাথে যদি আমরা পরিচিত থাকি তবে বুঝতে পারা যায় এই ‘লম্ফের’ দূরত্ব। ‘পারাপার’, লেখকের নিজের বয়ানেই একটি নির্দিষ্ট ভাবাদর্শের চেতনা-প্রসূত গ্রন্থ। মার্ক্সবাদী রাজনীতিতে অল্প-বিস্তর হাতেখড়ি হওয়া শহীদুল তখনো বিশ্বাস করতেন মানুষের ও জীবনের জয়ে, গল্পশৈলীতেও তাই তখন রয়ে যায় যথোপযুক্ত বাস্তবতার প্রভাব, চরিত্রগুলো বেশিরভাগ হয় নিম্ন-বিত্ত খেটে-খাওয়া শ্রেণীভুক্ত মানুষেরা। ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’য়, যা কি না ১৯৭১/ ১৯৮৫ সনের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লিখিত, এই পরিচিত চিন্তাধারা থেকে শহীদুল সরে আসেন। ক্ষণজন্মা এই লেখকের হাতে রচিত হয় ‘পরাজয়ের’ এমন এক আখ্যান যার জন্ম একমাত্র বাংলাদেশ নামের এই ভূখন্ডেই সম্ভব হয়।

গল্পটা আবদুল মজিদ ও বদরুদ্দিন মওলানাদের। গল্পটা এক ‘ইন্দুর-বিলাই খেলা’র যার সমাপ্তি ঘটে গল্পের গন্ডিতে করুণ পরিণতির ভেতর। ১৯৮৫ এর লক্ষ্মীবাজারের পটভূমিতে এই কাহিনীর শুরু যখন বদরুদ্দিন মওলানার ছেলে, রাজাকার-পুত্র, আবুল খায়েরের উচ্চকিত কন্ঠ লাউডস্পিকারে ধ্বনিত হলে আবদুল মজিদের স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায়, যা তার হৃদয়ের তন্তু বিচ্ছিন্ন হবারই সমার্থক। পৃষ্ঠা না উল্টাতেই আমরা প্রবিষ্ট হই ১৯৭১ সালের লক্ষ্মীবাজারে, যখন বদরুদ্দিন মওলানারা আনন্দের সহিত কাটা মাংসের টুকরা আকাশে ছিটিয়ে কাকদের সাদরে আমন্ত্রণ জানাত, যে কাকেরা এখন তার পুত্রের আলখাল্লা থেকে দলে দলে বের হয় বলে মজিদের কাছে প্রতিভাত হয়।

বদরুদ্দিন মওলানাদের নৃশংসতার কাহিনী আমরা জানি নানাভাবেই, কিন্তু শহীদুল জহির ভাষা ও শৈলীর অভিনব প্রয়োগে যে বাস্তবতা রচনা করেন তা যে কোন জাদুবাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যায়, নাটকীয় হয়েও এড়িয়ে যায় অতি-নাটকিয়তা অদ্ভুত কৌশলে। অবশ্য ’৭১ এর প্রেক্ষাপটে রচিত কোন গল্পই যথেষ্ট নাটকীয় হতে পারে না। যে পুনর্কথনের মাধ্যমে শহীদুল দুই সময়ের (মোটা দাগে) এবং বিভিন্ন ঘটনাগুলোর মধ্যকার সময়কালের সম্পর্ক ও পারস্পরিক ব্যঞ্জনা দক্ষতার সাথে রক্ষা করেন, তা কথন-শৈলী হিসেবে বোধ করি একান্তই তার নিজস্ব। এই শৈলীতে সাযুজ্য রক্ষা করতে অনিবার্যভাবে কিছু রেফারেন্স পয়েন্টের প্রয়োজন হয়— আবদুল মজিদের জুতা ছেঁড়া, তার বোন মোমেনার পরিণতি, বদু মওলানা ও পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের সম্পর্ক, আজিজ পাঠান— এরকমই কয়েকটি ঘটনা/চরিত্র যেগুলো গল্প বলায় ক্রমে ঘুরে ঘুরে আসে এবং ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়, যার আভাস আমরা উপন্যাসের শুরু থেকেই পেয়ে আসি।

শহীদুল জহিরের লেখনীর যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য তা হল গল্পকথনের এক সম্পূর্ণ নতুন ভঙ্গিমা, যাকে আমরা বর্ণনা করতে পারি এক ‘যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি’ হিসেবে। কথনশৈলীর এই রূপে মহল্লার মানুষ, গ্রামের লোকেরা সমষ্টিগতভাবে হয়ে ওঠে মূল/গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাদের মুখ থেকে খসে পড়া কান-কথা/গুজবকে লেখক সাগ্রহে গ্রহণ করেন, এবং তাদের যুগপৎ বয়ানে সত্য ও মিথ্যার ভেদাভেদগুলো ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আলোচ্য উপন্যাসে মহল্লার লোকেরা শুধু এককভাবে মতামত পোষণ ও ব্যক্তই করে না, তাদের ক্রিয়াকর্মও হয়ে ওঠে অভিন্ন। পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে নিহত ব্যক্তিদের তারা একসাথে দাফন করে, একসাথে গোপনে শোক-পালন করে। তারাই একসাথে যুদ্ধ শেষে কবরস্থান থেকে ছিন্ন মস্তকসমূহ উদ্ধার করে এবং তারাই ত একত্রে প্রিয় স্ত্রী-কন্যাদের মুরগীর মত উর্ধ্বশ্বাস ছোটাছুটি দেখে ‘বলাৎকারের’ অর্থ অনুধাবন করে। তারা একত্রে আজিজ পাঠানের যুদ্ধে গমন, বাড়িতে লুটপাট, ও তার ফিরে আসা অবলোকন করে। তারাই স্বাধীনতার দু’ বছরের মধ্যে বদু মওলানাদের ফিরে আসার সাক্ষী থাকে এবং তাদের কেউ কেউ, আবদুল মজিদ সহ, একদিন কাকদের মানুষের মাংস খিলানো বদু মওলানাকে লাউডস্পিকারে ভাষণরত অবস্থায় দেখার সৌভাগ্যও অর্জন করে!

হ্যাঁ, বদু মওলানারা মরল না। কারণ, শহীদুলের ভাষ্যমতে একাত্তরের পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিভিন্নভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলেও ‘সত্যিকার অর্থে ছত্রভঙ্গ হল না তারা যারা যুদ্ধের বিরোধিতা করল’। কারণ আমাদের দেশের রাজনীতিকদের ধারণা ছিল, এবং এখনো আছে— ‘রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু অথবা চিরদিনের শত্রু বলে কিছু নেই। কাজেই অতীত ভুলে যাওয়া ছাড়া কি-ই বা করার থাকে মানুষের’। এই বইটি যে সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা তখন স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, এর বিভিন্ন প্রবাহের সাথে তখন এসে মিশেছিল তারাও যারা এই দেশটারই অস্তিত্বের বিরোধিতা করেছিল। পুনর্বাসিত এই সব প্রেতদের দেখে ঘৃণায় কুকড়ে উঠেছিল আবদুল মজিদের মত যুদ্ধ-পর্যুদস্ত মানুষেরা, এবং এই ঘৃণাই হয়ে উঠেছিল তাদের কাল।

মুক্তিযুদ্ধ শহীদুল জহিরের লেখায় বারং বার ফিরে আসে। কখনো সশরীরে যুদ্ধে না যাওয়া শহীদুল কি চাপা অপরাধবোধে ভুগতেন? যদিও তিনি সে সম্ভাবনা প্রকাশ্যেই নাকচ করে দেন, আমরা দেখি মুক্তিযুদ্ধ বার-বার আসে জ্বলন্ত ভাবে, আর জিঞ্জিরায় লেখকের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতাও একাধিক বার আমরা তার লেখায় উঠে আসতে দেখি। আজ অকাল-প্রয়াত এই লেখক বেঁচে থাকলে রাজাকারদের ফাঁসি দেখে নিশ্চিত খুশি হতেন একাধারে। প্রশ্ন জাগে, অন্যদিকে অভিজিৎ ��ায়-অনন্ত বিজয় দাশের মতন তরুণ প্রাণদের একই আততায়ীদের হাতে ঝরে যেতে দেখলে তিনি কি বলতেন? হয়ত তখন তার হাত দিয়ে বেরিয়ে আসত আর কোন অজর আখ্যান, যার শেষ আপাতদৃষ্টে গোচর হয় না।

Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
May 24, 2022
মূলত বইপত্র পড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে পুরোপুরি বুঝতে পারা আমার পক্ষে যেমন কোনোদিনই সম্ভব হবে না, ঠিক তেমনি, মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও তিতিক্ষার মহিমাকে বাংলাদেশের জনসাধারণ যদি ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে, কিংবা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গুরুত্ব যদি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে ক্রমশ স্তিমিত হতে থাকে, তাহলে সেই বিস্মৃতি যে আসলে কতটা মর্মান্তিক, সেটাও আমার পক্ষে অনুধাবন করা কোনোদিনই পুরোপুরি সম্ভব হবে না।

ছোট্ট উপন্যাসটা শেষ করে এইসব কথা ভাবছিলাম। আরো ভাবছিলাম যে, শহীদুল জহির নিশ্চয়ই আমার মতো ভিনদেশীদের কথা মাথায় রেখে এই অলৌকিক উপন্যাসটি লেখেননি। ঠিক তারপরেই খুব লজ্জিত হলাম নিজের এই ক্ষুদ্র চিন্তায়। আমরা সবাই আমাদের হতভাগ্য মৃত দিদি মোমেনার নামে নিজের মেয়ের নাম রাখি। এই জন্যে নয় যে মোমেনা নামটা আমরা ভুলে যাচ্ছি। এই জন্যে যে, মোমেনা নামটা কোনোদিন ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের— দুর্ভাগ্য, বীরত্ব ও বিস্মৃতি, তিনটেরই কোনো দেশবিভাজন হয় না।




(হারুন তাগাদা না দিলে এই বই পড়তে আমার আরো দেরি হতো।)
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews66 followers
November 13, 2021
"সেদিন সাতটি লাশ নিয়ে লক্ষ্মীবাজারের জনতা নির্বাক হয়ে বসে ছিল; লক্ষ্মীবাজারের রাস্তা মৃতের মতো নিঃশব্দ ছিল, রাস্তায় একটি কুকুর ছিল না, আকাশে একটি পেঁচা উড়ে আসে নাই বাতাসে ডানার শব্দ করে। তাদের মনে হয়েছিল, তারা সৃষ্টির আদি থেকে কোনো শব্দ শোনে নাই"

এটা কি উপন্যাস ছিল?? নাকি কোনো কাব্যগ্রন্থ??
তবে উপন্যাসের চেয়ে কাব্যগ্রন্থ বেশি মনে হয়েছে আমার।
কারণ লেখার ধরণ ই ছিল এমন!
বইটা পড়া শেষ করে ব্যালকনিতে বসে চা খেতে খেতে, বইটির ভালো লাগা অংশগুলোতে পড়তে পড়তে এসব ভাবছিলাম।।
কি ভ্রম জাগানিয়া এবং চিন্তার সাগরে ফেলে দেওয়ার মতো লেখা ছিল!! লেখক যেন সবকিছু সরাসরি বলে দিচ্ছিলেন না।। তবে পড়তে পড়তে পাঠকের অবচেতন মন ঐসব লুকিয়ে রাখা কথাগুলো বুঝতে সক্ষম হবে।। লম্বা-লম্বা বাক্যগঠনে পাঠককে যেভাবে ধরে রেখেছেন এবং পাঠককে চিন্তাতে ডুবিয়ে দিয়েছেন এটা দিয়েই বুঝা যায় যে লেখক জহির সাহেবের নিজস্বতা 🌻


"বদু মওলানা এই বিষয়টি ভোলে নাই যে, মোমেনাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল এবং সম্ভবত দেশ মুক্ত হওয়ার পর মহল্লায় ফিরে আলাউদ্দিনের মায়ের তাড়া খাওয়ার পর বুঝতে পারে যে, এই জনগোষ্ঠীও কোনো কিছুই ভুলে যায় নাই"

কে এই বদু মাওলানা????
এই বদু মাওলানা হলো মানুষরূপী শকুন, যাদের কিনা আমরা "রাজাকার" নামে চিনি।। যারা কিনা নিজ দেশের মানুষ হয়েও বিপক্ষ দেশকে সঙ্গ দিয়েছে এবং নিজ দেশের মানুষের ওপর চালিয়েছে নৃশংস নির্যাতন।।
আমরা এই আখ্যানে দেখতে পাব যে, রাজাকারেরা কিভাবে একটি মহল্লাতে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নির্যাতন চালাতে থাকে এবং পাকিস্তানিদের সাহায্য করে। এই নির্যাতন থেকে রক্ষা পাইনি আবদুল মজিদের বোন মোমেনা।। মোমেনা যে তাদের স্মৃতিতে বহু যুগ পরেও স্থান দখল করে রেখেছে সেটার প্রমাণ মিলে যখন আবদুল মজিদ তার সদ্যজন্মা মেয়ের নাম রাখে "মোমেনা"....
আমরা আরো দেখতে পাবো যে, তারা রাজাকার হয়েও দেশের রাজনীতিতে নিজদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করছে এবং কেউ কিছু বলছে না।। কিন্তু মানুষ কি তাদের নির্যাতনের কথা ভুলে গিয়েছে?? এতই সহজ ভুলে যাওয়া??


"কিন্তু, ক্রমাগতভাবে অতীত ভুলে যাওয়া লক্ষ্মীবাজারের লোকেরা দেখে যে, তাদের অতীত যেন অনবরত ঘাসের অঙ্কুরের মতো মাটি ভেদ করে উঠে আসে"
Profile Image for ORKO.
196 reviews198 followers
May 8, 2021
ঘোর....
প্রবলতর ঘোর....
তারপর আসে শহীদুল জহিরের লেখা।
এ যেন আমাদের চিরপরিচিত কিংবা গল্পে শোনা পৃথিবীকে নতুন করে দেখতে,ভাবতে বাধ্য করে।।
এই দৃষ্টিভঙ্গি টিভির পর্দায় রোজকার সেই পরিচিত অণুজীবটাকে দেখা নয়,বরং আল্ট্রামাইক্রোস্কোপের নিচে দেখা।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে,যে পরিমাণে জহির সাহেবের লেখা পরিচিতি পাবার দরকার ছিল তার সিকিভাগ পেয়েছে কিনা আমার সন্দেহ। বেশিরভাগ পাঠকই তার লেখা চেনে না আর মানুষ তাকে চেনে বিসিএস পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবার পর থেকে।
শহীদুল জহিরের ছোটগল্প এর আগে পড়া হলেও উপন্যাস এই প্রথম। বাকি উপন্যাসগুলোও খুব দ্রুত পড়বার ইচ্ছা রইলো 😌❤️

#কাহিনী_সংক্ষেপ

উপন্যাসের নায়ক আবদুল মজিদ ছিল স্বাধিকার চেতনায় বিশ্বাসী এক তরুণ।
সাল যখন ১৯৮৫, রাজাকার বদু মওলানার ছেলে আবুল খয়ের হরতাল পালনের জন্য জনসাধারণকে মাইকিং করে ধন্যবাদ জানায়, তখন আবুল মজিদ ফিরে যায় ১৫ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে আবুল খয়েরের পিতা বদু মওলানার পাকিস্তানী মিলিটারিদের সাথে হাত মিলিয়ে তাণ্ডবলীলা চালানোর নগ্ন দৃশ্য। বদু মওলানা ছিল তৎকালীন সময়ের এক ঘৃণ্য রাজাকার। পুরুষ হত্যা অর নারী ধর্ষণে সে ছিল পাকিস্তানি মিলিটারিদের সহযোগী। ধর্মের দোহাই দিয়ে সে এসব অপকর্ম চালাতো। অথচ একাত্তরে লক্ষ্মীবাজারে প্রথম যে লোকটি নিহত হয়েছিল সে ছিল মুসলমান। গ্রামে যত হত্যা, ধর্ষণ সহ নানা রকম অপকর্ম সংঘটিত হয়েছিল সবই হয়েছিল তার আঁতাতে। গ্রামে মানুষের লাশ আর নারীদের ধর্ষণ দেখে তাঁর হৃদয় এতটুকু কেঁপে উঠেনি। কিন্তু তার ছেলে বাশারের কুকুরটি মিলিটারিদের হাতে মরে যাওয়ার কারণে সে তাঁর হিংস্রতা আর পশুত্বে ভরা হৃদয়ে খুব আঘাত পেয়েছিল। কতটা হিংস্র হলে মানুষ এরকম বিবেক বর্জিত হিংস্র পশু হয়ে উঠতে পারে তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে। ধর্মের লেবাসের আড়ালে সে ছিল এক হিংস্র-ঘৃণ্য পশু।

মজিদ তার বোন মোমেনাকে হাজার চেষ্টা করেও পাকপশুদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। একসময় তাকে নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে বদু মওলানা পাকিস্তানে পলায়ন করেছিল। পরবর্তীতে, সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে সেও দেশে পুনর্বাসিত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আজিজ পাঠানের সহায়তায় সে গ্রামে আশ্রয় পায়। অথচ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার বাড়িতে বদু রাজাকার কী তাণ্ডবলীলাই না চালিয়েছিল! এসব লোমহর্ষক স্মৃতির কথা জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দুই মেরুর দুই লোক আবার একত্রে মিশে গিয়েছিল। এসব ঘটনাগুলো সচেতন মজিদের মর্মপীড়ার কারণ। মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে এসব নির্মম কাহিনী কাণ্ড ক্ষুদ্রমতির কিছু লোক ভুলতে বসলেও মজিদসহ আরও গুটিকয়েক বাঙালি নর-নারী ভুলতে পারেনি। মজিদ, যার বসবাসের কথা বাংলার মাটিতে হওয়ার কথা থাকলেও অবশেষে তাঁকেই অন্যত্র পাড়ি জমাতে হয়েছিল। শকুনেরা আবারো বাঙালিয়ানা পোশাকে আবৃত হয়ে সোনার বাংলায় শকুনিয় আস্তানা গড়ে তুলে।

#ব্যবচ্ছেদ_কিংবা_খুচরো_আলাপ

"উনিশ শ পঁচাশি সনে একদিন লক্ষ্মীবাজারের শ্যামপ্রসাদ চৌধুরী লেনের যুবক আবদুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেল পরিস্থিতির সাথ��� সংগতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে ফট্ করে ছিঁড়ে যায়। আসলে বস্তুর প্রাণতত্ত্ব যদি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে হয়তো বলা যেতো যে,তার ডান পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতে বস্তুর ব্যর্থতার জন্য নয়,বরং প্রাণের অন্তর্গত সেই কারণে ছিন্ন হয়,যে কারণে এর একটু পর আবদুল মজিদের অস্তিত্ব পুনর্বার ভেঙে পড়তে চায়। "

মাত্র ৩৬ পৃষ্ঠার উপন্যাসের প্রথম কয়েকটা লাইন... অথচ নানা প্রসঙ্গ থেকে বারবার যখন এই রেফারেন্স পয়েন্টে লেখক আমাদেরকে নিয়ে এসে দাঁড়া করিয়ে দেন, তখন যেন আবদুল মজিদের মতোই হতবিহ্বল হতে হয়। এতোদিনের ভরসার জায়গা,বিশ্বাসের জায়গাটাকে যেন নাড়া দিয়ে যায়। যেন সেটা আবদুল মজিদ নয়, রাজনৈতিক পালাবদলের সময় পুরো দেশ দেখছে এতোদিনের ভরসার জায়গাটাতে ফাটল ধরছে।

অস্তিত্বের সংকট? সামষ্টিক সংকট? বিশ্বাসের ভাইরাস?ধর্মব্যবসা-নৃশংসতা-সরলতা-ভীতি... ক্ষুদ্র পরিসর উপন্যাসের এতো স্পর্শকাতর গভীরতা আমি আগে কখনো অনুভব করি নি। আর তারপর দৃশ্যায়ন..নবাবপুরের উপর উইপোকার হুটোপুটি খেলা, কাক উড়ে যাওয়া,মায়ারানীর ২১ টা চিঠি পুড়িয়ে ফেলে ছাইয়ের উপর তুলসী গাছ লাগানো, মিলিটারির তুলসী পাতা ভক্ষণ-
এগুলো খুব সাধারণ কোনো কিছু দৃশ্য নয়,বরং পুরোটাই সাংকেতিক। কীভাবে?
কারণ, ২১ টা চিঠি মিলে যায় অনেকটা ২১ দফার সাথে 😌 তার অসারতা, পরবর্তীতে তার সারবস্তুর রূপান্তর প্রয়োজন সময়ের সাথে -সেটাও দেখানো একটা দারুণ আবহের মাধ্যমে,বিশেষ রিচুয়ালের মাধ্যমে, সেটা খুব নিপুণতার সাথেই করেছেন শহীদুল জহির।

মুক্তিযুদ্ধ যেমন কোনো রূপকথা না....মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আসলেই মুক্তিযুদ্ধ দ্বারা আবেশিত মানুষজনের রূপবদল কিংবা সুপ্ততা,নিজের দেখা স্বপ্নের দেশে রাজনৈতিক বাস্তবতার নামে প্রহসন
- এসব কিছু এতো Raw আর আনবায়াসডভাবে ফুটিয়ে তুলতে দেখি নি আর কাউকে।

আমার ছোটবেলায় করা একটা পাকামি সমকালীন মূলধারার এক্সপেরিমেন্টাল লেখাগুলোর প্রতি খিদে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেটা শুধু বাংলা সাহিত্যের না,বরং বর্ডার না মানা সামগ্রিক বিশ্ব সাহিত্যের প্রতি। আমি শাহাদুজ্জামানের লেখা পড়ে ফেলেছিলাম নাইন -টেনে থাকতেই। বোধ করি সেটা আমার মানসে একটা বিশাল ধাক্কা দিয়ে গেছিল। তো
শহীদুল জহিরের সাথে আমার পরিচয় শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকারের হাত ধরেই।
"ইলিয়াসের সুন্দরবন ও অন্যান্য" বইয়ে মাসউদুল হকের নেয়া সাক্ষাৎকারে আমি শহীদুল জহিরের সাথে পরিচিত হই। উনার শক্তিশালী ছোটগল্প পড়া হলেও উপন্যাস পড়া এই প্রথম।

শুধু গল্পের বিষয়বস্তু না, বরং গল্প বলার ধরনটাও আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। ভাষাশৈলী,শব্দভাণ্ডার
এতোটা শক্তিশালী যে মনে হয় না এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস..যেন হাজার বছর ধরে লিখছেন।
শব্দ নিয়ে খেলা, টঙ্কার আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে।
সবথেকে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো বইয়ে পাতার পর পাতা সংলাপ নেই ,সবমিলিয়ে সব সংলাপ এক করলে এক পাতাতেই ধরে যাবে।
কিন্তু শেষ করার পর আপনি যে অস্তিত্বের সংকটে ভুগবেন, যে ঘোর আপনাকে চেপে ধরবে সেটা অনন্য।

একনজরে-
বইয়ের নাম: জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
লেখক: শহীদুল জহির
ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫ (২০২১ এর প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেটিং)
গুডরিডস রেটিং : ৪.৬২/৫
Profile Image for Abid.
136 reviews23 followers
December 17, 2025
মাত্র ৪৮ পৃষ্ঠা; অথচ কত কী পুরে দেওয়া হয়েছে এর ভেতর! বইয়ের শুরুতে দেখা যায়, এক সমাবেশের বক্তব্য শুনতে গিয়ে আবদুল মজিদ নামের একজন ব্যক্তির স্যান্ডেল ফট করে ছিঁড়ে যায়- কেনো ছিঁড়ে যায়? এজন্য না যে স্যান্ডেলটিতে কোনো সমস্যা ছিলো বরং 'প্রাণের অন্তর্গত সেই কারণে' যার জন্য তার অস্তিত্ব পুনর্বার ভেঙে পড়ে। হোয়াট আ বিগিনিং! বইয়ের বাকি ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে লেখক জাদুকরি হাতে বর্ণণা করে গিয়েছেন কেনো তার অস্তিত্ব অতীতে একবার ভেঙে পড়েছিলো, কি ঘটেছিলো, কোন প্রেক্ষাপটে এসব হয়েছিলো এবং এতদিন পর কেনো 'পুনর্বার' তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

লেখক এরপরই চলে যান বদরুদ্দিন মওলানার কাছে, যিনি একাত্তরে কাকদের পরম যত্নে মাংস খাওয়াতেন- কিন্তু ক্রমেই মহল্লাবাসীর কাছে একটা নগ্ন সত্য উন্মোচিত হয়ে পড়ে- এ মাংসটা কীসের মাংশ ছিলো? বইয়ের এ পর্যায়ে পাঠকদের কাছে আরেকটা নগ্ন সত্য প্রতীয়মান হয় সেটা হলো এই বদরুদ্দীন মওলানা ছিলেন একজন রাজাকার।

বইয়ে উঠে এসেছে যুদ্ধকালীন আবেগ, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কিন্তু এর সবচে স্তদ্ধ করা অংশজুড়ে ছিলো যুদ্ধের পরে রাজাকারদের পুনর্বাসন এবং ৮০ এর দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজপথে তাদের বীরদর্পে আনাগোনার ব্যাপারটি তুলে ধরা। বোঝা যায়, রাজনীতি কেনো একটা 'নীতিহীন' বিষয় এবং কেনো বারবার করে এই বাংলায় ফিরে আসে শকুনেরা। বইয়ের শেষটা চমৎকার, এরচে চমৎকার এবং স্তদ্ধকরা এন্ডিং বোধহয় আর হতে পারেনা।
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews159 followers
October 13, 2022
অরু,
একজন লেখকের জন্য নিজস্ব ভাষা তৈরি করতে পারা যে কতটা সাফল্যের তা Shahidul Jahir কে দেখলে বুঝতে পারি। সকালে জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বইটার শেষ ৬ পাতাও পড়ে উঠলাম। বাইরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতি ভীষণ শীতল; মন তেমনি শীতল হয়ে উঠছে আমার। বারবার মনে প্রশ্ন জাগছে, যুদ্ধের পর যে অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করা হলো, ওরা কি আসলে বদলেছিল? যাদের অন্তর একবার কলুষিত হয় তারা কি আদৌ কখনো বদলায়? মানিক যেমনি দেখিয়েছিলেন, মানুষের অন্তর্গত প্রাগৈতিহাসিক বোধ কখনো বদলায় না; রক্তের সঙ্গে প্রবাহিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত লেখা যেহেতু তোমার ভালো লাগে, সেহেতু এই লেখাটাও ভালো লাগবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই এখানেও যে, সবার মধ্যে থেকে এই ভাষার জোরেই প্রথমত আলাদা হয়ে উঠবেন লেখক। তাঁর গল্পে এক একটা দৃশ্য আসে এমন যাদুবাস্তব-- যা অন্যত্র গিয়ে প্রখর হয়ে ওঠে। পাঞ্জাবীর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে কাক। কাক, বানর এগুলো হচ্ছে লেখকের সিম্বল। এডগার এলান পো'র লেখায় যেমন কালো বিড়াল, কালো কাক ঘুরে ঘুরে গভীর অর্থ নিয়ে আসে, তেমনি।
এরপর তাঁর প্রতীকের ব্যবহার। কোন দৃশ্যই যে অদরকারি নয় পাতা উল্টে যেতে যেতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে তোমার কাছে। একটা দৃশ্যের সঙ্গে আরেকটা দৃশ্যের ট্রানজিশন এবং সংযোগ এতো স্মুথ! বিস্মিত না-হয়ে উপায় থাকে না। একেবারে ছোট্ট একখানি বই। যতটুকু বলার শুধু ততটুকুই বলে খালাস-- আমার ভালো লেগেছে এই বিষয়টা।

তুমি বইটা পড়। কথা দিচ্ছি, বাংলা সাহিত্যে এমন কিছু তুমি পড়নি আগে।
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
September 27, 2024
আমার শহীদুল জহির পাঠাভিজ্ঞতা বিচিত্র। পারাপার গল্পগ্রন্থ পড়ে ভালো লাগলো। এই সংকলনে কনভেনশনাল বাংলাদেশের সাহিত্যের আদলে লেখা। এরপর ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্পসংকলন পড়লাম। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক লেখকের সাথে পরিচিত হইলাম। সবগুলা গল্প পড়লাম আর বিভ্রান্তিকর ঘোরের মধ্যে পইরা গেলাম। ডলু নদীর হাওয়া সংকলনের গল্পগুলাতে ডুমুরখেকো মানুষের শহীদুল জহিররে স্বাভাবিক ভাবেই পাওয়া যায়। এই গল্পগুলা মোটামুটি ভালো লাগছে। এইখানে ঘোরের চেয়ে বিভ্রান্তি গভীর হইছে। এরপরে লেখকের উপন্যাস পড়ার হাউস হইলো। 'মুখেত দিকে দেখি' উপন্যাসটা সংগ্রহ কইরা উৎসাহের সাথে শুরু কইরা একদম খেই হাড়াইলাম। এরপর বহুদিন সাহস কইরা শহীদুল জহির ধরতে পারি নাই। আজ শেষ করলাম জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। এই বই রাইখা আমি উঠতে পারি নাই। আজ আর বিভ্রান্ত হইতে হয় নাই। পুরাপুরি ঘোরের মধ্যে বইটা শেষ করলাম।
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
March 5, 2016
কাফকা'র গল্প নিয়ে একটা কথা প্রচলিত যে, তার অনেক গল্পের প্রথম লাইন পড়েই মানুষ চমকে উঠতে পারে। আমার মনে হত, এটা বাগাড়ম্বর। প্রথম লাইন দিয়ে কিছু বিচার করা চলে না। জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক উপন্যাস-যার প্রথম লাইনে ভাষা-শৈলীর যে চমক তাতে নড়েচড়ে বসতে হয়, আর সেটা বজায় থাকে শেষতক!
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
October 2, 2020
'উনিশ শ পঁচাশি সনে একদিন লক্ষ্মীবাজারের শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী লেনের যুবক আবদুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে ফট্ করে ছিঁড়ে যায়'- উপন্যাসের এই প্রথম লাইনটিই যেন আমার পাঠকসত্তাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে!
শহীদুল জহির পাঠ করলাম এই প্রথমবার; এবং আমি মুগ্ধ, অভিভূত!
Profile Image for Masud Sojib.
35 reviews43 followers
January 18, 2015
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাসাহিত্যে অনেক উপন্যাস রচিত হয়েছে, একাত্তররের রণাঙ্গনের সাহিসকতা, পাকিস্থানীদের বর্বতা, সাহসী যোদ্ধাদের অপরিসীম ত্যাগ, যুদ্ধের বিভৎসতা, বিপর্যস্ত মানবতা সবকিছুর নিখুঁত ছবি আকঁতে চেয়েছেন লেখকরা, যার অনেকগুলোই বেশ সফল। শহীদুল জহিরের “জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা” সেই বর্ণনাময় মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস নয়। যেখানে সাহসী কোন বীরের গল্প নেই, নয় মাসের রণাঙ্গনের যুদ্ধের বর্ণনা নেই। তবু উপন্যাসটি হয়ে ওঠেছে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় দেখা বর্তমান বিশ্লেষন আর তার মনস্তাত্ত্বিক উপাখ্যান। উপন্যাসের পটভূমি ১৯৮৫র, অর্থাৎ যুদ্ধের প্রায় ১৪ বছর পরে। ১৪ বছর পরে মুক্তিযুদ্ধ কতটুকু মুক্তি দিয়েছে সমাজকে, সমাজের মানুষকে তা তুলে ধরতে চেয়েছেন লেখক নির্মোহ ভাবে। রাজনৈতিক বিবেচায় এমন নির্মোহ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে বিরল। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে শুধু নয় মাসের ফ্রেমে বন্দি করেননি, নয় মাস যুদ্ধ করে হয়তো স্বাধীন হওয়া যায় কিন্তু মুক্তি নয়। স্বাধীনতা আর মুক্তি এ দুটোর মাঝে বিস্তর ব্যবধান। সেই ব্যবধানটুকুই ফুটে উঠেছে তাঁর লেখা উপন্যাসে। যে স্বাধীন দেশে বি-জাতীয় শত্রুর ভয়ে নয়, দেশীয় মানুষের ভয়ে এখনো হাজার হাজার মানুষকে দেশ ছাড়তে হয়। জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় শহীদুল জহির সমকালের বাংলাদেশের কথা বলেছেন, যেখানে তিনি একেঁছেন রাজাকারদের বিভৎসতার এক অতীত, তিনি বলেছেন রাজকারদের পুনর্বাসনের আর ক্ষমতায়নের সেই গল্প, যে গল্প এখনো চলমানান আর সেই ধারায় নীরবে অসংখ্য মানুষ মজিদের মতো দেশান্তরি হয়ছে যার খোঁজ কেউ রাখেনি, এখনো রাখে না...!

মাত্র আটচল্লিশ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাসে কি করে সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র আঁকা সম্ভব তার অনন্য উদাহারন বইটি। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও বৃহৎ এক ব্যাপ্তি আছে উপন্যাসটির প্রতিটি শব্দ আর পৃষ্ঠাতে। বদু মাওলানা একাত্তরের ঢাকায় শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরি লেনের শান্তিবাহিনীর প্রধান, যিনি মিষ্টি হাসির অন্তরালে যুদ্ধকালীন সময়ে তার অপরিসীম ক্ষমতা আর তার নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন। যার নির্দেশে একদিনে সাতজন মানুষ খুুন হয় চৌধুরি লেনে, মজিদের বোন ধর্ষিত হয়, তার লাশ পাওয়া যায় রায়ের বাজারে। যিনি মানুষ হত্যা করে মাংসকে ছিটিয়ে দিতেন আকোশে, আর অসংখ্য কাক সেই মাংস খাওয়ার জন্যে জড়ো হতো চৌধুরি লেনের আকাশে। বদু মাওলানাকে দিয়ে শহীদুল একাত্তরের রাজাকারদের চিত্র এঁকে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের কাছে। যেই বদু মাওলানা চৌধুরি লেনে অসহায় সব হারানো অসহায় মানুষগুলো চোখে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যাক্তিতে পরিণত হন, যুদ্ধের পর যিনি পালিয়ে যান। অবাক বিস্ময়ে সেই অসহায় মানুষগুলো দেখে স্বাধীনতার মাত্র বছর দুয়েক পর সেই বদু মাওলনা সাধারণ ক্ষমায় আবার ফিরে আসে পুরোনো চেহোরায়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকারী দলের স্থানীয় নেতা আবদুল আজিজ যিনি নিজেও শ্যামাপ্রসাদ লেনের বাসিন্দা ছিলেন, যুদ্ধের সময় যার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বদু মাওলানা, সেই আজিজ স্বাধীনতার পর যখন মজিদের কাঁধে হাত রেখে বলে ”রাজনীতি করতে হলে অতীতের অনেক কিছু ভুলে যেত হয়”, মজিদ যখন দেখে আবদুল আজিজ, বদু মাওলনাকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেয় তখনি আসলে মজিদের বিশ্বাস আর আশাার সকল স্তম্ভগুলো ভেঙ্গে পড়ে। ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশ, এই ভেঙ্গে পড়ার মধ্যদিয়েই রাজাকারদের আবার উত্থান শুরু হয়..! বাংলাদেশ আবার বাঙলাস্থান হওয়ার পথে পা বাড়ায়।

আবদুল আজিজ বলেছিলেন অনেক কিছু ভুলে যেতে হয় রাজনীতির খাতিরে কিন্তু আবুদল মজিদের সেই কথাটি কে সত্য মনে হয়না। সে তার বোনকে হারিয়েছে একাত্তরে, সে ভুলেনি, তাই নিজের মেয়ের নাম রেখেছিলো বোনের নামে। আবদুল মজিদ জানে একাত্তর কে ভুলেনি বাংলার সাধারণ ক্ষমতাহীন নিরুপায় মানুষ এমনকি ভুলেনি রাজাকার রাও। তাই যখন মজিদ দেখে রাজকার রা আবার প্রতিষ্ঠিত, তাই সে বুঝে উঠে রাজাকারদের সে ঘৃণা করে এই খবর রাজাকার বদুর জানা, এবং সুযোগ পেলে বদু মাওলানা সেই ঘৃণার প্রতিশোধ নিবে। রাজাকারদের পুনর্বাসন ঠেকানোর ক্ষমতা অন্য দশটা সাধারণ মানুষের মতো আবদুল মজিদের নেই, যেহেতেু রাষ্ট্রক্ষমতার নীরব সমর্থনের মধ্য দিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে তাই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই আবদুল মজিদ তার মহল্লা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মজিদ চায়নি তার মেয়ের পরিণতি বোনের মতো হোক। তাই একসময় ছোটবেলার মহল্লা ছেড়ে যায় মজিদ। মজিদের চৌধুরি লেন ছেড়ে যাওয়া আসলে রুপক অর্থে। বাংলাদেশে যেমন অসংখ্য মানুষ গত কয়েকদশকে দেশ ছেড়েছে সেটিকেই তুলে ধরেছেন লেখক। সবকিছু মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ আর তার পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র নিয়ে লেখা ”জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা” অসামান্য এক উপন্যাস হিসাবে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবে।
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
April 6, 2024
শহীদুল জহিরের গল্পের ভাষা, শৈলী ও জাদুবাস্তবতায় মুগ্ধ হয়েছি। এই ভাষা তো আমার ভীষণ প্রিয়। আমি তো এমন কিছু পড়ার জন্যই পাঠক হয়েছি। তবে কেন এতদিন শহীদুল জহির পড়লাম না!

স্বাধীনতা যুদ্ধের দু'বছর পর রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা কেন ঘোষণা করা হয়েছিল জানি না। তবে এই স্বীদ্ধান্তের স্বপক্ষে থাকার কল্পনাও করতে পারি না। তাহলে কি আমরা বলতে পারি রাজাকাররাই রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন! যদিও পরবর্তীতে কিছু রাজাকারের শাস্তি হয়েছিল। তবে অনেকে রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাজনীতিদও হয়ে গেসে।

জাদুকরী ভাষায় রাজাকারদের বিশদ চিত্র আর মনস্তত্ত্বকে আর কোনোখানে কি আমরা দেখেছি। রাজাকারদের সাথে রাজনীতিবিদদের মুখোশও তো উন্মোচন করা হয়েছে। আর ভুক্তভোগীদের হৃদয়ের গহীন যন্ত্রণার বাস্তব গল্পটাও তো অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করেছি।

রাজনীতিবিদ আজিজ পাঠান যখন বলে—
"রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু অথবা চিরদিনের শত্রু বলে কিছু তো নেই, কাজেই অতীত ভুলে যাওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে মানুষের।"
তখন আজিজ পাঠানও কি বদু মওলানার মতো রাজাকার হয়ে যায়নি। এসব রাজনীতিবিদদের কি আমরা রাজাকার বলতে পারি না!

আবদুল মজিদদের স্মৃতির বিস্মরণ ছাড়া অন্য উপায় আছে কি! আর মোমেনা! খাজা আহমেদ আলী! মায়���রানী! মোহাম্মদ সেলিম!

রাজাকারের প্রকৃত মনস্তত্ত্বকে বুঝতে এর থেকে ভালো উপন্যাস হয়তো আমরা আর পড়তে পারব না। এই উপন্যাসের কাছে আবার ফিরে আসব।
Profile Image for Samiur Rashid Abir.
218 reviews43 followers
December 16, 2025
আব্দুল মজিদ যদিও ভুলে নাই কিন্তু অনেকে ভুলে গেছে, আজিজ পাঠানদের মতন। এই ভুলে যাওয়াটাতেই ভয়!
Profile Image for Aishu Rehman.
1,101 reviews1,079 followers
October 30, 2025
জাদু দিয়ে লেখা এক দমবন্ধ করা উপন্যাস যার সবটুকু বুঝতে আমাকে আরো অসংখ্যবার এই বই ছুঁয়ে দেখতে হবে। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি উপন্যাসও এভাবে লেখা যায়! একের পর এক মস্তিষ্কের নিউরনে যেন ঝড় তুলে গে���ে প্রত্যেকটা লাইন। শহীদুল জহিরের লেখায় আবার অসংখ্যবার আমাকে ফিরে আসতে হবে, এ জাদুর বলয় ছিন্ন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
Profile Image for Zunaed.
54 reviews119 followers
June 28, 2017
"ভোরবেলা ঘন
কুয়াশার তাঁবুতে আচ্ছন্ন চোখ কিছুটা আটকে গেলে তার
মনে হয় যেন উঠেছে জেগে সুদূর বিদেশে
যেখানে এখন কেউ কারো চেনা নয়, কেউ কারো
ভাষা ব্যবহার আদৌ বোঝে না; দেখে সে
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়; মুক্তিযুদ্ধ,
হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায় বৃথা যায়।
—শামসুর রাহমান, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ


বইটা পড়তে পড়তে শামসুর রাহমানের কবিতাটার কথাই মনে হচ্ছিল। "রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু অথবা চিরদিনের শত্রু বলে কিছু নেই। কাজেই অতীত ভুলে যাওয়া ছাড়া কি-ই বা করার থাকে মানুষের..." জাতীয় চিন্তাভাবনা আমাদের রাজনীতিবিদ আর কর্মীদের মাঝে ঢুকে যাওয়ায় "মুক্তিযুদ্ধ,
হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায় বৃথা যায়।"

বাদ দিই এসব কথা, বইয়ের কথা বলি। আচ্ছা, একটা বইয়ের নামেই কি তার পুরো কথা প্রকাশ করে দেয়া যায়? হয়তো যায়, হয়তো যায় না। তবে এই বইয়ের জন্য বলতে হবে, নামটাই স্পয়লার। নামের বাইরে গিয়ে কোথাও কিছু পাবেন না। কিন্তু লেখাটা এতটাই ভালো যে স্পয়লার পেলেও বই ছেড়ে উঠতে পারবেন না। বইটা শেষ করেও সাথে সাথে উঠতে পারবেন না। বসে থাকতে হবে কিছুক্ষণ, ভাবতে হবে।

বইটা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। মূলত সেসময়ের গল্প দিয়েই শুরু উপন্যাসটা। আব্দুল মজিদের স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায় হরতাল পালনের জন্য জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে করা মাইকিংয়ে। কেন?

সেই উত্তরটাই খুঁজতে খুঁজতে চলে যাবেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষ হবে, চলে যাবে আরো ক'টা বছর। আবার ফিরে আসবেন শুরুর সময়ে। সেখানে এসে বুঝতে পারবেন, আসলে ঠিক কী কারণে ছিঁড়ে গিয়েছিল স্যান্ডেলের ফিতা। আর এতসব ঘটবে ৪৮ পৃষ্ঠার মাঝেই। আকারে ছোটো হলেও বইটার গল্পের বিস্তৃতি অনেকটা সময় জুড়ে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশকিছু উপন্যাস পড়ার সুযোগ হয়েছে। এটাকে বাকিগুলো থেকে খানিকটা আলাদা মনে হয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সাথে বর্তমানকে যেভাবে মিশিয়ে দেখানো হয়েছে, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। সেই ১৯৮৮ এর বাস্তবতা থেকে আজ ২০১৬তে এসেও বের হতে না পারার জন্য মাঝে মাঝে হতাশই লাগে।

বইটাকে পাঁচতারাই দিতাম। একটা তারা কেটে রাখার কারণটা বলা যাক। বদি মাওলানার ছেলে আবুল বাশারকে বৃহন্নলা আর আবদুল গণিকে খাটো বলে উপস্থাপন আমার কাছে পছন্দ হয়নি। কেউ বৃহন্নলা বা খাটো হতেই পারে, কিন্তু আমার মনে হয় নেতিবাচক চরিত্রকে আরো নেতিবাচক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে লেখক "হিজড়া", "পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার" শব্দগুলোকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছেন। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবতায় কোনো চরিত্রের মুখ দিয়ে এমন কোনো কথা বের হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না, যেমন অস্বাভাবিক মনে হয়নি আব্দুল মজিদের ভাবনায় মোহাম্মদ সেলিমের কালো মেয়ের প্রেমে পড়ার কারণ খুঁজে না পাওয়া। স্বয়ং লেখকের উক্তিতে এধরনের নেতিবাচক উপস্থাপন আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।

যাই হোক, খারাপ লাগার অংশুটুকু খুব ছোটো, উপন্যাসের প্রায় সবটাই ভালো লেগেছে। লেখার ধরণটাও বেশ ভালো। গ্যারান্টি দিচ্ছি একঘণ্টা, সোয়া-একঘণ্টা সময় দিয়ে পড়লে আর যাই হোক, সামগ্রিকভাবে খারাপ লাগবে না।
Profile Image for বিমুক্তি(Vimukti).
156 reviews88 followers
August 2, 2020
এই প্রথম শহীদুল জহিরের কোনো লেখা পড়লাম এবং সত্যি বলতে আমি দারুণ অবাক হয়ে গেছি। বইটার টপিক খুব জটিল, মুক্তিযুদ্ধকালীন এক রাজাকারের পুনরায় দেশের রাজনীতিতে জাঁকিয়ে বসার গল্প এটি। বুঝতেই পারছেন এই বিষয়ে লেখা মোটেও সহজ নয়। আপনি যদি প্রথাগত কোনো স্টাইলে এই বিষয়ে কোনো উপন্যাস লিখতে চান, তাহলে তা অখাদ্য-কুখাদ্য হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। আর এখানেই আমি অবাক হয়েছি। এতো কঠিন একটা বিষয়কে এরকম সহজ ভাষায় লেখা সম্ভব হলো কি করে? বইটা পড়ার সময় রাজাকারদের অত্যাচারের কাহিনি পড়ে যারপরনাই রাগ উঠবে, কিন্তু স্বদেশে এদের পুনর্বহালে বর্তমান প্রজন্ম রেগে যাওয়া থেকে বিস্মিত হবে অনেক বেশি। এই আবর্জনাদের আমরা আবার নিজেদের দেশের হাল ধরতে দিলাম কীভাবে?

শহিদুল জহির খুব সহজভাবে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তা একদম হৃদয়ে গিয়ে আঘাত হানল। এই উপন্যাসের মাধ্যমে একটা মেসেজই দেওয়া হয়েছে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে হাজারো ঘটনার মধ্য দিয়ে পাঠক সমাজকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয় নি। আর এই সহজবোধ্যতার মধ্যেই এই উপন্যাসের সার্থকতা।
Profile Image for Enamul Reza.
Author 5 books174 followers
December 16, 2025
"...একাত্তর সনে বদু মওলানা নরম করে হাসত আর বিকেলে কাক ওড়াত মহল্লার আকাশে। এক থালা মাংস নিয়ে ছাদে উঠে যেত বদু মওলানা আর তার ছেলেরা। মহল্লায় তখনো যারা ছিল, তারা বলেছিল, বদু মওলানা প্রত্যেকদিন যে মাংসের টুকরোগুলো আকাশের দিকে ছুড়ে দিত, সেগুলো ছিল মানুষের মাংস।"

কিছু বই শেষে বিপন্ন লাগে। শহীদুল জহিরের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা সেরকম একটা বই। বদু মওলানারা আজিজ পাঠানদের আশ্রয়েই আবার পুনরুত্থিত হয়, আর লক্ষীবাজারের আব্দুল মজিদ হয়ে ওঠে জীবন হাতে পলাতক সকল আম জনতার প্রতিনিধি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি এই বাস্তবতা কঠোর হয়েই বাংলাদেশের হৃদয়ে ঘা মারছে আজও। মাত্র ৫৩ পৃষ্ঠার পরিসরে জহির এক মহাকাব্যই লিখতে পেরেছেন। বিষয় ও পরিমিতি বিবেচনায় এর সঙ্গে তুলনীয় বই বিশ্বসাহিত্যে বিরল।

বিশেষ করে, বর্তমান বাস্তবতায় এটি আবারও পড়ে ওঠার সময়, এত প্রাসঙ্গিক, এত জান্তব।
Profile Image for Shapla.
28 reviews4 followers
August 16, 2022
সেই চিরচেনা শহীদুল জহির <3
Profile Image for Adham Alif.
335 reviews80 followers
January 14, 2024
শহীদুল জহিরের প্রথম পাঠ। ছোটখাটো বই কিন্তু এর ব্যাপকতা বিশাল। উৎকৃষ্ট সাহিত্যের আনন্দ পেলাম। লেখকের অন্যান্য লেখা পড়ে দেখার ব্যাপারেও উৎসাহ পেলাম।
Profile Image for Injamamul  Haque  Joy.
100 reviews115 followers
August 25, 2022
মুক্তিযুদ্ধের পরিণতি নিয়া এরচেয়েও বিস্তৃত এবং বাস্তবমুখী লেখা দ্বিতীয়টা আছে কিনা জানা নেই।

ভামোস শহিদুল জহির।
Profile Image for Imran.
66 reviews18 followers
April 2, 2025
... "রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু অথবা চিরদিনের শত্রু বলে কিছু তো নেই, কাজেই অতীত ���ুলে যাওয়া ছাড়া আর কিইবা করার থাকে মানুষের।"

পলিটিশিয়ানদের এই আপ্তবাক্যের পরিবর্তন হয় না কখনোই, যুগ-যুগ ধরে এই অভ্রান্ত নীতি নতুন-নতুন মোড়কে আবির্ভূত হয়। স্বার্থ চরিতার্থ করতে ঘোর বিরোধী রাজনৈতিক দল/ব্যক্তির সাথে আঁতাত করতে একটুও বাঁধে না। বিপাকে পড়ে শুধু আবদুল মজিদের মতন নিপীড়িত সাধারণ মানুষেরা।

যুদ্ধকালীন হত্যাযজ্ঞ, অকথ্য নিপীড়নের দগদগে ক্ষতবিক্ষত স্মৃতি�� বোঝা থেকে মুক্তি পেতে রাজাকার বদু মওলানারা সাধারণ ক্ষমা পেয়ে পুনর্বাসিত হয়। (বদু মওলানার নেতৃত্বে পাক মিলিটারি, রাজাকারের চালানো নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ডের নিদর্শন- শুধু একদিনেই খাজা আহমেদ আলীর উঠানে স্তূপাকার ৭ লাশ, ৩ নারীর শ্লীলতাহানি; খ্রিষ্টানদের কবরস্থান খনন করে পাওয়া ৫৬টা খুলির কথা সবাই বেমালুম ভুলে যেতে চায়।)

যুদ্ধের একযুগ পরে বদু মওলানার ছেলে- আবুল খায়ের হরতাল সফল করার জন্য এলাকাবাসীকে যখন ধন্যবাদ জানায়— আবদুল মজিদ বিপন্নবোধ করে, তার ভাবনায় চিঁড় খায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামঞ্জস্য বিধানে ব্যর্থ হওয়ায় স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতে ফট করে ছিঁড়ে যায়, পুনর্বার তার অস্তিত্ব অবলুপ্ত হয়। ... 'অতীত যেন অনবরত ঘাসের অঙ্কুরের মতো মাটি ভেদ করে উঠে আসে।' মজিদের চোখে ভেসে ওঠে সেই বীভৎসতম দুঃস্বপ্ন— অপহৃত বড়বোন মোমেনার ছেঁড়াখোড়া বিকৃত মরদেহ।

আবুল খায়েরের আলখাল্লা থেকে অসংখ্য কাক বের হয়ে হুটোপুটি করে, পলায়নপর উইয়ের মতো আবদুল মজিদের মাঝে এক ধরনের নীরব সন্ত্রাসের অনুভব ছড়িয়ে পড়ে।

'ছিয়াশি সনের সাতই জানুয়ারির দৈনিক ইত্তেফাকে আবদুল মজিদদের বাড়ি বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়।'
জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার টানাপোড়েনে আবদুল মজিদেরা বাস্তুভিটা ফেলে পালাতে বাধ্য হয়। পলায়নপর ভীতসন্ত্রস্ত উইয়ের পেছনে কাকের হুটোপুটি, ধাওয়া চলতেই থাকে।
Profile Image for Rasel Khan.
170 reviews8 followers
June 24, 2022
একটি ছোট উপন্যাস। যার গল্প গড়ে উঠেছে পুরান ঢাকার মুক্তিযুদ্ধের সময়কে নিয়ে। এক রাজাকারের হিংস্রতা নিয়ে। যুদ্ধ শেষে সেই রাজাকারের প্রত্যাবর্তন নিয়ে।
Profile Image for মোহতাসিম সিফাত.
180 reviews50 followers
March 8, 2024
২০২৪ বইমেলায় প্রথমদিন মেলায় ঢুকে সবার আগে এই বইটা কিনি। এরপর হারুন ভাই আর আবীর মিলে আমাকে খুব বকা দেয়, কেন আমি সমগ্র না কিনে একটা মাত্র কিনলাম। বই পড়া শেষ করে নিজেকে নিজেই বকা দিয়ে দিলাম, কেন সমগ্র কিনি নাই।

লেখার ভঙ্গি যে এতো সুন্দর হয়ে যায় শব্দের তালে, এই বইটা না পড়লে বুঝতাম না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক গল্প উপন্যাস লেখা হয়েছে, তবে এটা সেরা একটা সংযোজন বাংলা সাহিত্যে। প্রথম লাইনে আপনার পুরো মনোযোগ ধরে ফেলবে, শেষ লাইন পর্যন্ত ধরে রাখবে। অনুরোধ করব হাতে সময় নিয়ে এক বসায় পড়েন, মাত্র চৌষট্টি পাতার বই।
1 review1 follower
August 10, 2015
এই মুহুর্তে আমার সবচেয়ে প্রিয় বই বলা চলে। শহীদুল জহীর হচ্ছেন শহীদুল জহীর। তার সাথে আর কারো তুলনা চলে না। তার পথে সে একাই। সে পথে নেই কারো চলার অধিকার অর্জনের ক্ষমতাও।

বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। কেউ যুদ্ধ দেখেছে, কেউ দেখেনি। স্বাধীনতার পর বদলেছে অনেক কিছুই, এবং হয়তো সবকিছুই। আমরা ব্যস্ত হয়েছি, নিজেকে নিয়ে, নিজের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ কে নিয়ে। সরে গেছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ থেকে দুরে, বহু দুরে। কিন্তু আমরা কি সকলেই দুরে? সকলেই???

বইটা এক কথায় অসাধারণ একটা বই কিংবা হতে পারতো খুব সাধারণ। কিন্তু লেখকের অসাধারণ লেখার পথ, প্রকাশভঙ্গি একে অসাধারন করতে বাধ্য করেছে।

বলে রাখি, আমি এর আগে কোন রিভিউ লিখি নাই। আর শুরুই করলাম, এরকম একটা বই দিয়ে। বইটার সবকিছু এতো ভালো লাগলো যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েই পড়েছি, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। আসলে কি লিখবো তাও বুঝতে পারছি না..

সেই আব্দুল মজিদের স্যান্ডেল ছেঁড়া থেকে শুরু করে, বদু মাওলানার কাককে মাংস খাওয়ানো হয়ে, মিলিটারির প্রস্রাবের ধারা দেখে বদু মাওলানার শ্রদ্ধা, আলাউদ্দীন কিংবা মোমেনার মৃত্যু, কিংবা বদু মাওলানার স্ত্রীর অন্ডকোষ খুজে পাওয়ার অপরাধে তালাক অর্জন, এবং আব্দুল মজিদের মহল্লা ছেড়ে চলে যাওয়া- সব ই দুর্দান্ত।

বইয়ের শুরুটা হয় এভাবে-
"উনিশ শ পঁচাশি সনে একদিন লক্ষ্মীবাজারের শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী লেনের যুবক আব্দুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে ফট করে ছিঁড়ে যায়; আসলে বস্তুর প্রাণতত্ত্ব যদি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে বলা যেত যে, তার ডান পায়ের স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতে বস্তুর ব্যর্থতার জন্য নয়, বরং প্রাণের অন্তরগত সেই কারণে ছিন্ন হয়, যে কারনে এর একটু পর আব্দুল মজিদের অস্তিত্ব পুনর্বার ভেঙে পড়তে চায়।"...

আর এই অস্তিত্ব ভেঙে পড়ার চুড়ান্ত রুপ, আব্দুল মজিদের মহল্লা ছাড়া; এবং বইটির সফল পরিসমাপ্তি ঘটে এভাবে-
"...তা সত্বেও আব্দুল মজিদ ঠিক করে যে, মহল্লার সব লোকের কি হবে তা নিয়ে চিন্তা করে তার লাভ হবে না, সে প্রথমে নিজেকে বাঁচাতে চায় এবং সমষ্টিগত কোন প্রচেষ্টার অবর্তমানে সে তা করতে পারে এখনি মহল্লা ত্যাগ করে, আর তার এই চিন্তা এবং সিদ্ধান্তের পরিনতিতে ছিয়াশি সনের সাতই জানুয়ারির দৈনিক ইত্তেফাকে আব্দুল মজিদের বাড়ি বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় এবং ধরে নেয়া যায় যে, তাদের বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়ে থাকলে লক্ষ্ণীবাজারে তাদের নাম অবলুপ্ত হয়েছে। মহল্লার লোকেরা তাদের এই আচরণে প্রথমে বিস্মিত হয়, তবে এক সময় তারাও বুঝতে পারে যে, আব্দুল মজিদের এই সংকটের বিষয়টি মহল্লায় এবং দেশে হয়তো কেউই আর বুঝতে পারে নাই।"

এছাড়া আলাউদ্দিনের নিহত হওয়ার ঘটনা ও কারন শহীদুল জহিরের ভাষায়-
"......আলাউদ্দীন নিহত হওয়ার পর মহল্লার লোকদের সেই কথাটিও মনে পড়েছিল, যা এখনো তাদের মনে আছে, হাফপ্যান্টের একপাশ গুটিয়ে দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে পেশাব করার সময় তার শিশ্নের উপর নজর পড়ায় বদু মাওলানা খেপে গিয়েছিলো একদিন, হারামযাদা, খাঁড়ায়া খাঁড়ায়া মোতছ, খাঁড়ায়া মোতে কুত্তা। তখন আলাউদ্দিন কয়েকদিন পর নির্মমভাবে নিহত হওয়ার শর্ত পুরণ করেছিল। প্রথমত, সে বদু মাওলানার কথা শুনে গালের ভেতর জিব নেড়ে তাকে ভেঙায়, তারপর বলে, কুত্তা তো মুখ দিয়া খায়বি, আপনে অখনথন হোগা দিয়া খায়েন।".......

যাই হোক, বইটার সম্পর্কে কি লিখবো বুঝতে পারছিলাম না, তাই বই থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। হাতের কাছে বইটা নেই, দেওয়ার মত আরো অনেক ভালো কিছু ও ছিলো, কিন্তু লেখক ঠিক যেভাবে লিখেছেন, সেভাবে মনে নেই, তাই দিতে পারলাম না। কয়েকটা ঘটনা যেগুলো হবহু মনে ছিলো, দিলাম... আর শহীদুল জহিরের প্রকাশভঙ্গি কে বাদ দিয়ে, তার লেখা দেওয়ার প্রশ্নেই উঠে না... তাই আর লিখলাম না।

এক কথায়, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে, এত ভালো প্রকাশভঙ্গি সহ এত ভালো লেখা আর হয় না, দুর��দান্ত...

বইটার রেটিং ৫ এ ১০ ও দেওয়া যেত, কিন্তু আমার ক্ষমতা ৫ পর্যন্তই। ৫/৫ দিলাম।
Profile Image for Biswajit Chakraborty.
25 reviews45 followers
May 25, 2016
সময় ও বাস্তবতা অনেক সময় আমাদের অনেক কিছু ভুলে যেতে দেয় কিংবা ভুলে যেতে বাধ্য করে; কিন্তু চাইলেও কি আমরা সবটাই ভুলতে পারি? একাত্তরের মাত্র এক দশক পরেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় যখন আমরা বিপরীত মেরুর দুই রাজনৈতিক দলের এক হয়ে যাওয়া দেখি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে সময়ের সাথে সাথে সত্যও আসলে পরিবর্তিত হয়- “রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু অথবা চিরদিনের শত্রু বলে কিছু তো নেই, কাজেই অতীত ভুলে যাওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে মানুষের।” কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা সবকিছু ভুলে যেতে পারি না, এই জনগোষ্ঠী ভুলে যেতে পারে না- “একমাত্র মুরগির ভয় থাকে বলাৎকারের শিকার হওয়ার আর ছিল গুহাচারী আদিম মানবীর। কিন্তু পাকিস্তানি মিলিটারি এক ঘণ্টায় পঞ্চাশ হাজার বৎসর ধরে মানুষের বুনে তোলা সভ্যতার চাদর ছিঁড়ে ফেলে; মা এবং ছেলে, পিতা এবং যুবতী কন্যা একসঙ্গে বলাৎকারের অর্থ অনুধাবন করে।”

শহীদুল জহিরের লেখার জাদুকরি ক্ষমতার সাথে আগেই পরিচিত ছিলাম ছোট গল্পগুলো পড়ে। কিন্তু ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ উপন্যাসে এসে আবার যেন নতুন করে তাঁর কলমের প্রবল শক্তিমত্তার সাথে পরিচিত হলাম। মাত্র চল্লিশ পাতার একটা বই, ঠিক উপন্যাসও না, নভেলাই বলে মনে হয়, অথচ কি দারুণ তার ক্ষমতা,কি বিশাল তার ব্যাপ্তি, কি প্রবল তার অন্তর্গত বিশ্লেষণ, কি নির্মম সত্য তার প্রতিটা লাইন, কি অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ ক্ষমতা প্রতিটা শব্দের। যুবক আব্দুল মজিদের পায়ের স্যান্ডেল যেমন পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে ছিঁড়ে যায়, আমরাও যেন ঠিক তেমনি জীবন ও বাস্তবতার নিরিখে অনেক কিছু ভুলে যাই বা যেতে বাধ্য হই; এই সত্যই যেন শহীদুল জহির একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখান।
Profile Image for Shuvo.
84 reviews3 followers
April 29, 2024
সুন্দর সবুজ মাঠ। মাঠের একপ্রান্তজুড়ে হলুদ-সাদা ঘাসফুল ফুটে আছে। বিকেলের মৃদু রোদ এসে চিকচিকে সরলতা ছড়িয়ে দিয়েছে সবটা জায়গাজুড়ে। ধরুন এমন সময় কেউ একজন একটা ভাঙা কলম দিয়ে খুঁচিয়ে ঘাসফুলগুলো থেকে ক্রমাগত তাজা রক্ত বের করে যাচ্ছে।  নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়ানো আপনি দেখছেন কিভাবে কলমের খোঁচায় অনিন্দ্যসুন্দর ঘাসফুলেরা রক্তাক্ত হচ্ছে, কিভাবে তাদের জীবন থেকে গলগল করে চুইয়ে পড়ছে রক্ত। ঘাসফুলেদের আর্তচিৎকারের ধ্বনি প্রতিনিয়ত আপনার রন্ধ্র থেকে মস্তিষ্কে সঞ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু আপনি নিশ্চল,নিরব এবং প্রতারিত একজন দর্শকমাত্র। আপনার করার কিছুই নেই। কারণ জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আপনি সেই সময়ের সমান্তরালে অবস্থান করছেন। 


মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠার বই,  ভেবেছিলাম এক চান্সে পড়ে ফেলব। অর্ধেক পড়ে আর সাহস হচ্ছিল না সামনে এগুনোর... মাঝখানে একটা ভালো মুভি দেখা হলো.. তারপর আবার সাহস জুগিয়ে.. সাথে অনেকটা শহীদুল জহিরের লেখার টানেই এক বসাতেই শেষ করে ফেললাম।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো জীবনঘেঁষা, বাস্তবঘেঁষা, বিভৎস সত্যকে সামনে আনা কিছু পড়ি নাই। সবটুকু সময় টানটান হয়ে ছিলাম। ...
কি নির্মম! কি বিভৎস! কি ভয়ানক!
Profile Image for Fahmida Rini.
67 reviews33 followers
June 3, 2024
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এদেশীয় সাহিত্যে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহ থাকায় কমবেশি সেসব লেখার একাংশ আমার পড়াও হয়েছে।
শহীদুল জহির এর লেখনী পড়ে নিঃসন্দেহে চমকাতে হবে কেননা সচরাচর এমন ভাষা কোনো সাহিত্যিকের লেখায় পাইনি।
মুক্তিযুদ্ধের একটি খণ্ডচিত্র দিয়ে মূলত সেসময়ের বিরাট পরিস্থিতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছোট্ট লেখাটিতে।
আয়তনে ছোট হলেও ঘটনার বিস্তৃতি বিশাল।

পুরান ঢাকায় বসবাসরত আবদুল মজিদের স্মৃতিকাতরতায় মুক্তিযুদ্ধের নির্মম, নৃশংস স্মৃতি উঠে আসে বইয়ের প্রতিটি পাতায়।
আবদুল মজিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নিতান্তই বালক, মুক্তিযুদ্ধের অনেক বছর পর যখন সে পূর্ণ যুবক সেসময়ে হঠাৎ একদিন তার পায়ের স্যান্ডেলের ফিতে ছিড়ে যাওয়ার মতোন তুচ্ছ কিন্তু নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে তার স্মৃতিতে বায়োস্কোপের চিত্রের মতো ভেসে উঠতে থাকে একেরপর এক ঘটনা। মুক্তযুদ্ধকালীন সময়ের পাকিস্তানী দোসররা স্বাধীন বাংলার বুকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভোল পালটে প্রাপ্য শাস্তি কিংবা 'কর্মফল' ভোগ করবার বদলে ঠিক কতোটা অনায়াসে হেটে বেড়িয়েছে তা-ও চমৎকারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এ বইয়ে।

এ বইয়ের গল্প কিংবা বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধকালীন নৃশংসতা পাঠককে বিচলিত করার কথা না। তবে অসংখ্যবার অসংখ্যভাবে শোনা এবং জানা সেই মুক্তিযুদ্ধের একটি ক্ষুদ্রাংশ লেখক যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ছাপার অক্ষরে তার বৈচিত্র‍্য মনে দাগ কেটে যেতে বাধ্য।
আপাতদৃষ্টিতে বইটির ঘটনাবলি কিছুটা এলোমেলো মনে হতে পারে তবে শেষপর্যন্ত ঘটনাগুলো যেনো একটি বিন্দুতে এসে মিলে যায়।
বইটি আয়তনে ছোট, লেখনশৈলীও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত তবে একে 'সহজপাঠ্য' বলবো না। এ বইয়ের কিছু লাইন পড়তে যেয়ে আমার থামতে হয়েছে, কথাগুলো বুঝতে এবং আত্মস্থ করতে একই বাক্য বারবার পড়ত্র হয়েছে। এমনকি বইটির প্রথমবাক্যটিও খুব সম্ভবত আমি চার থেকে পাচবার পড়েছি এবং অবাক হয়েছি শব্দবিন্যাসের কারিগরী দেখে।

পুরো বইজুড়ে অনুপস্থিত থেকেও সবচে' বেশি উপস্থিত ছিলো যেই চরিত্র 'মোমেনা' তার সাহসীকতা দেখে মনে হয়েছে বাস্তবে এমনসব মোমেনা-ই বাংলাদেশ জন্মের নেপথ্য নেত্রী।

এই বই নিয়ে লিখবার আগে আমি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, লিখে এখনও দ্বিধাগ্রস্থই আছি কেননা মনে হচ্ছে হয়তো ঠিকঠাক বোঝাতে পারলাম না।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,471 reviews560 followers
November 24, 2016
১৯৮৫ সালের কোনোএক দিনে লক্ষীবাজারের আবদুল মজিদের জুতা ছিড়ে যায়। সেই ছেড়াজুতা হাতে নিয়ে মজিদ দেখতে পায় আবুল খায়ের জনগণকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে ধন্যবাদ বদু মওলানার পুত্র? সে কথা শুনে বোঝে, জনগণ নাকি খায়েরদের দলের হরতাল কর্মসূচি সফল করেছে-এ কথা শুনে আবদুল মজিদের মনে পড়ে যায় খায়েরের পিতা বদু মওলানার কথা,একাত্তরের কথা। একাত্তরে বদু মওলানা গড়ে তোলে ছয় সদস্যের রাজাকারবাহিনী। (না) পাকবাহিনী এলে বদু মওলানার তোড়জোর বেড়ে যায়। নিজ এলাকা লক্ষীবাজারে সে খুন করে কিছু মানুষকে,নির্যাতনের স্বীকার হয় তিনজন নারী। এসব মনে পড়তেই মেজাজ বিষিয়ে যায় আবদুল মজিদের তার মনে পড়ে বোন মোমেনার কথা, চোখের সামনে ভেসে ওঠে দেশ স্বাধীন হবার পর বদুর পালিয়ে যাওয়া, নৌকা প্রতীকধারী আজিজ পাঠানের বীরদর্পে ফিরে আসা আর সেই সাথে গণি রাজাকারের ভাষ্যমতে,গণহত্যার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া। হাটতে হাটতেই মজিদের মনে পড়ে স্বাধীনতার দু'বছর পর বদু মওলানার ফিরে আসা অনেকটা নিভৃতে, সে সাধারণ ক্ষমা পেয়েছে। বদু প্রথমেই যায় প্রতীকধারী পাঠানের কাছে যার বাড়ির অস্থাবরসম্পত্তি দখলে নিয়েছিলো মওলানা (মওলানার অস্থাবর সম্পত্তিও পাঠানের কাছে, সে আপাতত এ নিয়ে ভাবছে না) । আজিজ পাঠান মওলানা কে ক্ষমা করে বলে আমার নেতা ক্ষমা করেছে আমার সমস্যা নাই। কিন্তু বদু বোঝে সবাই তাকে ক্ষমা করে নি,ঠিক যেমনটি করেনি মজিদ; সেসব সে গায়ে মাখে না। কিছুদিন নীরবে এলাকায় থাকে বদু। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সে রাজনৈতিক দলে যুক্ত, রাজাকার বদু আর তার ছেলে খায়ের হয়ে ওঠে জনদরদী, মহৎপ্রাণ। একাত্তরে বদুর ভূমিকা সেভাবে কেউ মনে রাখেনি। সবাই ভুলে গেলেও ভুলতে পারেনা মজিদ।কিন্তু কেন? মজিদ সিদ্ধান্ত নেয় লক্ষীবাজারে ছেড়ে সে সপরিবারে বাড্ডা চলে যাবে। সবাই জানে কেন সে চলে যাচ্ছে তবুও জানতে যায় কেন মজিদের এ চলে যাওয়া?


শহীদুল জহির এক অনবদ্য কথকের নাম। যিনি সাধারণ ঘটনাকে উপস্থাপন করেন ভিন্নধরণের এক শব্দচয়নের মাধ্যমে যা পাঠককে করে রাখে মোহাবিষ্ট।

একেবারে ৫ তারকা।
Profile Image for পীয়্যান নবী.
52 reviews87 followers
March 1, 2017
গল্পটা মুক্তিযুদ্ধ নিয়া, আবার বছর পনের পরের একটা সময় নিয়াও। ১৯৮৫ সনে একদিন যুবক আবদুল মজিদের জুতা ছিঁড়ে গেলে গল্পটা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের এক যুগেরও বেশি সময় পর, যখন দেশে সামরিক শাসন চলে, সেই সময়টায় কোন এক রাজাকারের বাচ্চার চিৎকারে আবদুল মজিদ বিপন্ন বোধ করতে থাকলে আমরা গল্পের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকি। ক্রমাগত আমরা জানতে পারি একাত্তর এবং পচাশির লক্ষ্মীবাজার, নবাবপুর এবং সংলগ্ন এলাকার ইতিহাসের কথা। আমরা জানতে পারি, একাত্তরে মার্চের ২৫ তারিখের পর থেকে কেমন কইরা একটা লোকালয় বদলায় যায়, বদলায় যায় সব মানুষগুলা। ক্যামনে ঐ এলাকার আকাশে উড়তে থাকা সকল কাক আনন্দিত হয়। কেমন কইরা রাজাকারের বিবির তালাক হয়... এরপরে আমরা জানতে পারি মোমেনার কথা। তার শেষ পরিণতির কথা ধীরে ধীরে আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় তৎকালীন কিশোর আবদুল মজিদের মানসিক পরিবর্তন, তার বিপন্নতা, তার সঙ্কট।

এইসকল কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আমরা ক্রমাগত অনুধাবন করতে পারি এবং দেখি যে, জীবনটা কেমন যেন! পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় জীবনটা কেমন যেন হয়ে যায়, হয়ে রয়... আবদুল মজিদ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের পরেও, মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পরেও... কেবলই এক যুগের ব্যবধানে জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক পর্যায়ের রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে একটা নতুনরকম অপ্রত্যাশিত সঙ্কটের সৃষ্টি হয়, যে সঙ্কট কি না সৃষ্টি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দুই বছরের মাথায়। এই সঙ্কট আবদুল মজিদ এবং তার পরিবারের জীবনের একটা রূপরেখা সৃষ্টি করে দেয়, যা থেকে হয়ত এড়ায়া যাবার কোন উপায় ছিল না। এই দেশের সম্ভবত অসংখ্য মানুষ ঐরকম সঙ্কট এড়াইতে পারে নাই...
Displaying 1 - 30 of 130 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.