Shibram Chakraborty (Bangla: শিবরাম চক্রবর্তী) was a popular Bengali writer, humorist and revolutionary who is best known for his humorous stories. His best known short stories and novels are renowned for their unique use of pun, alliteration, play of words and ironic humor. He was a prolific author who also wrote poems, plays, non-fiction and novels for mature audiences in his long career.He worked as a volunteer in the Swadeshi movement and came under the affection of Chittaranjan Das [চিত্তরঞ্জন দাস]. During this time he became involved with the magazine Bijli [বিজলী] and Forward as a journalist. He later became the publisher of a magazine called Jugantar [যুগান্তর].
His initial foray into literature was as a poet. His first book of poems was called Manush (Man). He worked as a feature writer in daily newspapers and magazines such as Basumati [বসুমতী], Ananda Bazar Patrika [আনন্দবাজার পত্রিকা] and Desh [দেশ]. These were tinged with humor and got him notice in the public eye. Subsequently he started writing stories and novels.
His writing is noted for use of literary puns as a key story vehicle – speculated to be a first in Bengali literature. He is also noted for his self-deprecating humor. An example of this is the convoluted way in which he would spell his name in Bangla in his stories: শিব্রাম চকরবরতি (Shee-bram Cho-ko-ro-bo-ro-ty). He would often put himself into his stories amongst fictional characters. The most famous and recurring characters in his stories are the brothers Harshabardhan [হর্ষবর্ধন] and Gobardhan [গোবর্ধন] and his sister Bini. Advertisements for his books often bill him as the King of Laughter. Aside from funny stories, his other notable writings include the dramatization of Sarat Chandra Chattopadhyay's novel Dena Paona (দেনা পাওনা) under the title Shoroshi [ষোড়শী] (Sixteen Year Old Girl), the political work Moscow bonam Pondicheri [মস্কো বনাম পন্ডিচেরি] (Moscow Versus Pondicheri; ) and the play Jokhon Tara Kotha Bolbe [যখন তারা কথা বলবে] (When They Will Speak). His (so called) autobiography Eeshwar Prithibee Valobasa (ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা) (God Earth Love) is also regarded as one of his best works. During his 60-year career he authored more than 150 books.
রম্যজগতে আমার প্রথম প্রেম শিবরাম। তার থান-ইঁটের মতন সমগ্রটারে আমি যখের ধনের মতন আগলে রাখতাম, জানের বন্ধুকেও কখনো ধরতে দেইনি সেলাই ক্ষয়ে যাওয়ার ভয়ে। এরপরে তার প্রবন্ধের খোঁজ পেলাম, গিললাম। দেখলাম কিভাবে প্রায়-নিরপেক্ষ সাহিত্যের ভেতর দিয়েও একজন এক্টিভিস্ট কাজ করে যেতে পারেন। মুগ্ধতা বেড়েছিল।
সেই শিবরামের আত্মজীবনী: ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা।
বইটা কি খুব ভালো? না। ইউনিক কী আছে? অনেক কিছুই। শিবরাম ঘোষণা দিয়ে শুরু করেন: এই বইটিই তার সমাধি। আর কোনোদিন তিনি লিখবেন না। কত ছোট্ট ছোট্ট গল্প, PUN বইজুড়ে! বাপের সংগ্রহে থাকা পাঁজিপুঁথি কিংবা ভারতচন্দ্রের লেখা পাজি-পুঁথি; কিশোর শিবরাম দুইই সাবাড় করছেন সমান উৎসাহে। বইয়ের কোথাও মায়ের বিশ্বাস, রিনির সাথে প্রেম আর রাজনীতির গল্প বলছেন, তো কোথাও পেছনে লেগে থাকা রিপোর্টারকে ইচ্ছেমতন মিছে কথায় ঘোল খাওয়াচ্ছেন স্বভাবসুলভ গোলগপ্প ফাঁদবার অভ্যাসে। সবকিছুকে হালকা করে দেখছেন, কিন্তু ঠিকই টের পাওয়া যাচ্ছে অন্তঃসলিলা আবেগের অস্তিত্ব।
পড়তে গিয়ে অদ্ভুতভাবে রিলেট করতে শুরু করলাম কখন, বলা কঠিন।
মাঝখানের তাকে মাসিক মদীনার নতুন সংখ্যা, সাইমুম সিরিজের পাতা খুলে খুলে যাওয়া পেপারব্যাক থ্রিলার। বুখারি শরীফের চকচকে, অভিজাত কালো প্রচ্ছদ, দশটা বই। চামড়ার বাইন্ডিং করা নবীজীর জীবনী, প্রচ্ছদে সোনার জলে ক্যালিগ্রাফী করা। এত পবিত্র মনে হতো যে ওযু করে, বালিশের ওপর আলতো করে বসিয়ে তারপর খুলতাম বইটাকে।
নিচের তাকে তাফসীর ইবনে কাসীরের অসংখ্য খন্ড। লাল রঙের সিপারা। রেহালে রাখা কুরআন শরীফ।
শিবরামের পিতার রামায়ণ, মহাভারত, ধর্মসাহিত্য-সমৃদ্ধ লাইব্রেরির কথা পড়তে পড়তে এইভাবে তাবৎ শৈশব মাথাচাড়া দিতে থাকে করোটির ভেতর।
ছোটবেলায় মা’কে প্রচন্ড জ্বালাতাম। মা হয়তো তিলাওয়াত করছেন, আমি তখন কাছে গিয়ে কোলের ভেতরে ঢুকে পড়তাম। কী করো মা? মা উত্তর দেন না, হয়তো ঠোটের কোণ একটু উঁচু হয় তার, বোঝা যায় মনে মনে হাসছেন, তারপর আমাকে পাখার ভেতরে আগলে নিয়ে দুলে দুলে পড়তে থাকেন আবার।
ঝামেলা হয়ে গেল। নিজ ইচ্ছায় ঢুকেছি যেহেতু, বেরুনোও যাচ্ছে না। কী করি? নিরুপায় হয়ে আমি সামনের খোলা পাতায় চোখ বোলাতে শুরু করতাম। একটু পরে দেখা যেত, বিপুল উৎসাহে আরবি লাইনের নিচে সমান্তরালে বয়ে যাওয়া বাংলা লেখাগুলো সশব্দে পড়ছি! আমার থমকানো অপটু বাংলা উচ্চারণ আর মায়ের সুরেলা আবৃত্তি মিলে অপার্থিব এক পরিবেশ তৈরি হত তখন, বাতাস যেন ঘন হয়ে আসতো ক্রমশ। মা বলতেন ফেরেশতারা চারপাশে ঘিরে ধরে আমাদের এই যুগল তেলাওয়াত শুনছেন, তাই এমন হচ্ছে।
একদিন এমন এক সময়ে, মা বলেছেন তখন সূরা বাকারায় ছিলাম আমরা, বাংলা পড়তে পড়তে হঠাৎ কেমন যেন বুকের ভেতর কাঁপুনি উঠতে লাগল আমার। আমি মায়ের বাহু আঁকড়ে ধরে বোঝার চেষ্টা করি কি হচ্ছে, কিছু বলতে পারি না। মনে হতে থাকে বক্ষ বিদীর্ণ করে কেউ বের করে নিয়েছে আমার ছোট্ট হৃৎপিণ্ডটাকে, জমজমের শীতল পানিতে ধুইয়ে, রগড়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছে জায়গাটা; বুকের ভেতর এক তীব্র ঐশ্বরিক বিশুদ্ধির আনন্দ-আভা ছড়াচ্ছে অকৃপণ!
এরকম মেটাফিজিকাল অরগ্যাজম, এরকম আত্মার আনন্দ পরবর্তী জীবনে আর অনুভূত হয়েছে কি? কদাচিৎ। আঙ্গুলের কড়ে গুণে বলে ফেলা যায়।
অনেক বছর পর বন্ধুর সাথে শেয়ার করেছিলাম ব্যক্তিগত কাহিনীটা। সে গম্ভীরমুখে বলেছিল, ‘হ, আমারো এইর’ম ফিল হইছিল একবার। জীবনে প্রত্থম, বেনসন সুইচের ফিল্টারডা ফাটায়া লম্বা একটা টান দিছিলাম যেইদিন... ওফ! মনে হইলো বুকের ভিত্রে ধুয়্যা মুইছা সাফ হয়া গেল সব!’
বন্ধুকে দৌড়ানি দিতে গিয়ে তারপর সে কত কাহিনি! কিন্তু এহ বাহ্য, অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি।
শিবরামের কৃষ্ণপ্রেমী মা’র কথা পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল এসব। তিনিও তো আরেকটু প্রত্যক্ষভাবে একই কাজ করেন। ছেলেকে কপালের এক বিন্দুতে মন নিয়ে আসতে শেখান, ছেলেখেলার ছলে কিংবা কথোপকথনে ঈশ্বরকে অনুভব করতে শেখান। বিশ্বময়ী মায়ের কাছে বর চাইতে শেখান। খুব একটা পার্থক্য আছে কি আমাদের সবার মা-বাবাদের মাঝে?
আমি জানি না এই বইয়ের আলোচনা লিখব কিভাবে। অলৌকিকভাবে অসাধারণ নয়, কিন্তু নস্টালজিয়ার প্রভাবে ছোট ছোট মিলগুলো কেন যেন বেশ ভালো লেগে গেছে। আমি পক্ষপাতদুষ্ট।
তার নির্ভার, বাউণ্ডুলে জীবনের ‘গোশৃঙ্গে সর্ষপ’-ব্যাপী এই আখ্যান টিকে থাকুক বহুদিন, বহুকাল।
রাজপরিবারে জন্ম নিয়েও থেকেছেন পথে-ঘাটে। গৃহী হয়েও করেছেন সন্ন্যাস জীবন-যাপন। জীবন তার কেটেছে বড্ড এলোমেলো ভাবে হয়তো এটাই জীবনের নিয়ম। বাড়ি থেকে পালিয়েছেন,রাস্তায় হকারি করেছেন, ধার করে শোধ দেননি, স্বরাজ করে জেল খেটেছেন, দেশবন্ধু, নেতাজীসহ অনেকের সান্নিধ্য পেয়েছেন, ছিলেন নজরুল সহ আরো অনেকের অতিআপন। এ বই শিখেয়েছে জীবন ব্যাকরণ মানে না, জীবনের উত্থান -পতন কে মেনে নিয়ে চলতে হয়, মানতে হয় আর ঈশ্বর কে ভালোবেসে পৃথিবীকে ঘিরে ই জীবন। চমৎকার ছিলো উপস্থাপন ভঙি, শব্দ চয়নে শিবরাম চক্কত্তি বস লোক তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অনায়েসে ৫ তারকা।
চন্দ্রবিন্দুর গানকে কে যেন কোথায় খেলাচ্ছলের উদযাপন বলেছেন। অমন নিখুঁত বর্ণনা বুঝি আর হয় না! তেমনই শিবরামের এই আত্মকথনকে আলস্যের উদযাপন বলাই যুক্তিযুক্ত। যাবজ্জীবন, বিশুদ্ধ আলস্যের সেই মাছকে ভদ্রলোক কখনো ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি (অতি এবং অন্ধ), কখনো পৃথিবীর মায়াজাল তো কখনো মানুষের ভালোবাসা এসব শাক টেনে টেনে ঢাকার চেষ্টা করেছেন বইজুড়ে।
বাঙালি পাঠক মহলে এই বইটাকে নিয়ে একটা "আহা মরি মরি" গোছের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আমি কিন্তু অতটা অভিভূত হতে পারলাম না। সাহিত্যগুণের বিচারে খেলো একেবারেই নয় লেখাটা। আবার 'মধ্যমানের' কথাটা তো আসলেই অপমানসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই সেটা বলতেও দ্বিধা হচ্ছে। এক বার পড়াই যায় গোছের বই বলতে পারি।
সবচেয়ে বড়ো গেরো হচ্ছে লেখাটার ভালো লাগার মধ্যেই খারাপ লাগাটা লুকিয়ে আছে। লেখকের যে সহজাত ও সুবিখ্যাত 'পান' তা হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন ইত্যাদির ক্ষুদ্র পরিসরে অবশ্যই সুখপাঠ্য। কিন্তু সাড়ে চারশো পাতা জুড়ে প্রায় প্রতিটি শব্দ নিয়ে যদি এই একই জাগলারি চলতে থাকে তবে একটু হাঁপিয়ে উঠে বিরক্তই হবো বই কি।
আর এই জগৎমাতা সবার সব জুগিয়ে দেন, তাই ডোন্ট ওরি - এই এক থিওরি প্রতিষ্ঠা করতে লেখকের সাথে তাঁর মায়ের আধ্যাত্মিক আলোচনা - একই কথা, বইয়ের এতগুলো জায়গায় রিপিট হয়েছে শেষে আমি জগৎমাতার কাছে 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' বলে হত্যে দিয়েছি।
বইটার সবথেকে বড় আকর্ষণ অবশ্যই শিবরামবাবুর জীবনের মজাদার মজাদার অজস্র ঘটনাগুলি। এর অনেককটাই প্রায��ই ফেসবুকে ভাইরাল হয় বা হোয়াটসঅ্যাপ ফরওয়ার্ডে আসে - অবশ্যই জনতার মনের মাধুরী মিশ্রিত হয়ে। তাদের অবিকৃত রূপে একটা জায়গায় পাওয়ার ভালো ঠাঁই এই বইটা।
আর কি বলবো? তেমন গুছিয়ে এ বইয়ের রিভিউ আমি লিখতে পারবো না। রেটিংটাও একটা সমঝোতা রেটিংই দেওয়া গেলো আর কি। আপনারা নিজেরাই পড়ে দেখুন না হয়।
আত্মজীবনী? আমার কিন্তু এটাকে শুধুমাত্র আত্মজীবনী মনে হয়নি। কখনো মনে হয়েছে এ নিছক এক রম্যরচনা। কখনো বা দর্শনের বই বলেও ভেবেছি। আরো কতকি যে ভাবতে হয়েছে! তবে সবচেয়ে অবাক করার মতো বা ভালো লাগার ব্যাপার ছিল এর লেখনীতে। সবকিছুর মিলমিশ ঘটিয়ে এক জগাখিচুরি হলেও এক্ষেত্রে সে খিচুড়ি সবদিক থেকেই উৎকৃষ্ট ও উপভোগ্য করে তুলেছে লেখকের লেখনীতে। শিবরাম চক্রবর্তীকে জানতে বা কিছু অংশে বুঝতে হলে এই বইটা অতুলনীয় মানতেই হবে।
এ লেখা শিবরাম লিখেছেন? প্রথম পাতায় পাতায় তার দু:খ, আমি সাহিত্যিক নই, কলম যেন থেমে যায়, শিশুদের জন্য আমি লিখিনি, আমার লেখা কোন লেখাই নয়, জগাখিচুরি! এসব তার কথা!
চলো বসা যাক এ মীর আফসার আলী যেমন বলেছেন, তার মূল কথা হচ্ছে, " সবাই তৃষ্ণা মেটায় নদীর জলে, কী তৃষ্ণা জাগে সে নদীরও হিয়া-তলে!"
এই বইয়ের কোন ফর্মেশন নাই। কখনো নিজের আত্মজীবনীর ঢং এ লিখেছেন, কখনো সাক্ষাৎকার স্টাইলে। সবখানেই তিনি হেনেছেন সমালোচনার তীব্র আঘাত। নিজের লেখার প্রতি, সাহিত্য জগতের প্রতি, সমাজের প্রতি। কি তীক্ষ্ম দু:খ আর আফসোস তাতে, ভেবে অবাক হতে হয়।
Make no mistake, হাসিও আছে। কিন্তু যার কথা ভাবলেই বাঙালীর হাসি পায়, তার কাছ থেকে এমন তীক্ষ্ম লেখা অপ্রত্যাশিত তো বটেই। তবে, ব্যক্তি শিবরামকে জানতে এই বই অবশ্যপাঠ্য।
নির্মম কৌতুক বোঝেন? শিবরাম তার জীবনীতে তার নিজের সাথেও কৌতুক করেছেন। তাতে হাসির চেয়ে চোখে জলই আসে বেশি।
একথাটা মনে হয় প্রতিটা মানুষ জীবনে অসংখ্যবার উল্লেখ করে থাকেন। তো কথা হচ্ছে এটার মানে কি আসলে? জীবনের I don’t care এর মানে বুঝতে হলে আপনার শিব্রামের জীবনীগ্রন্থটা পড়ে ফেলতে হবে৷ এ ভদ্রলোক কিছুই care করতেন না। রাজবাড়ীর ছেলে ঘর ছেড়ে বের হয়ে রাস্তায় হকারি করতে নামেন। কোনখানে জায়গা না পেয়ে ঘুমান ফুটপাথে। জলতেষ্টা মিটান শহরের পুকুরের জল খেয়ে৷ অদ্ভুত একটা জীবন পার করে গেছেন লেখক। বইটা মূলত আত্নজীবনী। এমন জীবন হলে আসলে আত্নজীবনী লেখাই উচিত। ভদ্রলোকের পরিচিতের আওতা ব্যাপক। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ থেকে শুরু করে করে নজরুলসহ অনেক সাহিত্যিক মহারথীদেরকে কাছে থেকে দেখেছেন৷ লিখে দেশদ্রোহীর দায়ে দেশের জন্য জেল খেটেছেন। লোভনীয় সব চাকরির প্রস্তাব উপেক্ষা করেছেন। টাকার শান্তির চেয়ে মনের শান্তি বড় করে দেখেছেন।
বইটা নিয়ে বলতে গেলে বলব জীবন কাহিনী থেকে জীবন দর্শনই বেশী বলেছেন লেখক। ঈশ্বরকে ভালবেসে জীবনের বাধা নিয়মকে তুড়ি মেরে মনের ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশী। শুরু করেছেন নিজের ছোটবেলা থেকে। মায়ের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা শিব্রামের জীবন কেটেছে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু রাজবাড়ীতে। মায়ের মধ্যে ঈশ্বরের দর্শন খুজে পেয়েছেন। যদিও বাপের ঈশ্বরের দর্শনের ধারে কাছেও যান নাই। রিনির প্রেমে পড়েন ছেলেবেলাতেই। আবার সেই রিনির ভালবাসার মায়াও ত্যাগ করেন অবলীলায়। ঈশ্বরের দর্শনজ্ঞানের পরে ধাম করে এসে পড়েন কঠিন পৃথিবীর মাটিতে। এই কঠোরতাকেও বুড়া আংুল দেখায় চলে গেলেন জেলে। সেই সময়ের প্রখ্যাত সব বিপ্লবীদের সান্নিধ্যে আসেন৷ লোক হিসেবে বেয়াড়া (লেখকের নিজের মতে) কোনখানেই স্থির থাকেন নি।
লেখা খুবই চমৎকার হলেও আমার পড়তে কষ্ট হয়েছে। এর কারণ লেখক নিজের জীবনের গল্পের চেয়ে জীবন দর্শনই কপচিয়েছেন বেশী। একই কথাকেও ঘুরিয়ে বলেছেন অনেকখানেই। আর বাংলার সব বাঘা বাঘা ব্যক্তিকে খুব কাছে থেকে দেখা শিব্রাম উনাদের নিয়ে মূল্যবান অনেক কিছুই পাঠকদের জানিয়ে যেতে পারতেন। সেটা কেন করলেন না কে জানে। হয়ত মনে করেছেন নিজের দর্শনটাই আসলে তার পাঠকের কাছে মূল্যবান হবে৷ কিন্তু বইটা পড়ে আফসোস রয়ে গেল।
সব বইয়ের কি রিভিউ হয়? করেই বা কাজ কি! তারচেয়ে পরের পর্ব পড়তে শুরু করা যায়। বই পড়েই বা কাজ কী? কাজ টাই বা কী ? এসব নানান রকম চিন্তা আসতে পারে। পৃথিবীটা একেকজন একেকরকম দেখে, সে তো হবেই। ভালোবাসাও তাই। ঈশ্বরও আছেন কারো কারো সাথে, বা এভাবে বলা যায় কেউ কেউ ঈশ্বরকেও সাথে রাখেন, শিবরাম রেখেছেন। বাস্তব পৃথিবীতে সেই ভালোবাসা কই? নিঃসঙ্গ ছিলেন শেষমেশ। সেসব মনে না রেখে বইটা পড়া যায় না। শুরু থেকেই সেটা চেপে বসে থাকে, মাঝে মাঝে কেটে যায়, আবার ফিরে আসে, শেষ হয় নি বই টা, তাই শুরু করতে হয়- ভালোবাসা পৃথিবী ঈশ্বর। কোথায় যেন পড়েছিলাম জীবনের প্রত্যেকটা ট্র্যাজেডি কৌতুকময়। আবার ভালোবাসার কথাই যদি ধরি, প্রকৃত অর্থে তা অশ্রুময়, আনন্দ কিংবা বিষাদ উভয় ক্ষেত্রেই।
আত্মজীবনী লেখার সময়ে অন্যান্য লেখকেরা, নিজের জীবনের প্রকৃত সত্য আর যা লিখছেন তার মাঝে এক অদৃশ্য লক্ষ্মণরেখা এঁকে দেন। যার কারণে কিছু কথা অজানা আর গোপনেই থেকে যায়। সেই জায়গাতে অতি আশ্চর্য কাজ করেছেন শিবরাম। চিরাচরিত আত্মজীবনী থেকে তাই একে আলাদা করা যায়। টানা দীর্ঘ সংলাপ, যা কোনো মানুষেরই মনে থাকার কথা নয়, তা দিয়ে এই বইটিকে সুসাহিত্যের স্তরে উন্নীত করেছেন।
শিব্রামের লেখা পড়ব অথচ হাসব না এটা মোটামুটি অসম্ভব একটা ব্যাপার। সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম ভাবে বলা এই আত্মকথনে শব্দের খেলা ছিল পুরো অংশ জুড়ে। আর এর ফাঁকেই এসেছে তাঁর মা,বাবা,রিনি, দেশবন্ধু, আন্দোলন আর সাহিত্যজীবন এর বন্ধু বান্ধবদের কথা। মজার ছলে জীবনের গূঢ় সত্যের দিকে দৃষ্টিপাত করাতে শিবরামের জুড়ি মেলা সত্যিই ছিল ভার। তবুও, যতটা আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম বইটা, তেমন লাগেনি। সম্ভবত অতিরিক্ত শব্দের খেলার ফলেই। তবে তাঁর জীবনের নানান ঘটনাতে রস পেয়েছি, শিক্ষাও।
চমৎকার জীবনযাপন। ঝাড়া হাত পা যাকে বলে আরকি। এতো জানতুম গল্প উপন্যাসেই সম্ভব হয় কিন্তু বাস্তবে এরকম জীবন কাটানো.... সত্যিই ভদ্রলোকের উপর ঈর্ষা হয় বৈকি।
শিবরামের স্বভাবসুলভ কথার জাগলারি ছিল পুরোটা জুড়েই। যদিও আত্মজীবনী তবু লেখার ঢংটা আলাদা। এক সম্পাদক এসেছিলেন শিবরামের কাছে তার সম্পর্কে, তার পরিবার, অতীত জানতে, তার জীবনী প্রকাশের ইচ্ছে ছিল সেই সম্পাদকের। কথার মারপ্যাচে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন সেই সম্পাদককে শিবরাম। আবার একই সাথে করছিলেন স্মৃতিচারণাও। এই দুই মিলে এই বই। বর্তমান আর অতীত, দুটোই একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত যদিও। স্মৃতিচারণায় শিবরাম ছিলেন অকপট, এতো অকপট ভাষণ আর পড়েছি বলেও তো মনে পড়ে না। যদিও অনেক ধোঁয়াশা রয়ে গেছে সেটা লেখার ধোঁয়াশার জন্যই নাকি দ্বিতীয় খন্ডে স্পষ্ট হবে কে জানে। একটি প্রচন্ড বৈচিত্র্যময়, বাউন্ডুলে জীবনের আত্মকথা এটি। আগ্রহীরা অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন। শুরুতে একটু হোঁচট খেতে হতে পারে যদিও, এলোমেলো করে লেখা বলে। একবার মন বসে গেলে ভালো লাগবে বলেই মনে হয়।
বইটা নানান কারণে অবশ্য পাঠ্য| প্রথমত শিবরামের মতো হাসির সাগরের ভিতরের দেশ-টার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে| আর দ্বিতীয়ত, ৩০ আর ৪০-এর দশকের কোলকাতার সাহিত্য মহলের একটা অনন্য দৃষ্টিকোন পাওয়া যাবে|
শিবরাম বড় হয়েছিলেন উত্তর বঙ্গের একটা বনেদি ব্রাহ্মণ পরিবারে| তার বাবা-মা অবশ্য কেউই ব্রাহ্মণ্য দুরাচার বহন করতেন না| তার বাবা নিজের আধ্যাত্ম চর্চায় আর ধ্যানে মগ্ন চ্ছিলেন| শিবরামের মা ছিলেন বিবেকানন্দের অনুসারী, বিবেকানন্দের দেখানো উদার মনষ্কতা আর যুক্তিবাদের জীবন বরণ করেছিলেন| এর ফলে শিবরামের ছোটোবেলা প্রচুর সাহিত্য চর্চা আর আধ্যাত্ম-চর্চার পরিবেশে বড় হয়েছিলেন| পরবর্তিকালে স্বদেশি আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পরেন| তাদের কর্ম পদ্ধতির সাথে খাপ না খাওয়াতে পেরে সে কোলকাতাতে চলে আসে|
এই বইয়ের অনেকটা জুড়ে আছে কোলকাতা, আর শিবরামের কোলকাতার জীবন| শিবরাম লেখক পরিচিতি পাওয়ার আগে নানান পেশায় নিবৃত্ত ছিলেন একে একে| কাগজ বিক্রী থেকে সাধারণ ছাপাখানার কাজ| তার এই ছন্নছাড়া জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, আর তার নানান অনিশ্চয়তার মাঝেও আনন্দময় থাকবার স্পৃহা সম্পর্কে জানতে পারা পাঠকের সৌভাগ্য|
বইটা বেশ অগোছালো ভাবে লেখা| কালানুক্রমিকতা একেবারে ঘেটে গেছে| কোলকাতা পর্বের বৃত্তান্তটাতেই নানান ঘটনা তাদের ধারাবাহিকতা হারিয়েছে| তবে শিবরামের জীবন আর অভিজ্ঞতার সম্বন্ধে পড়তে গেলে এই আলগোছে ভাবটা বেশ মানানসই লাগে|
বইয়ের লেখায় আরেকটা আলগোছা ব্যাপার ছিল কাহীনির স্বর| তার সাধারণ কিশোর সাহিত্যের মতেও এই বইতেও শিবরাম তার স্বভাব সিদ্ধ আত্ম-তুচ্ছ আত আত্ম-অবজ্ঞার একটা মোড়ক রাখবার চেষ্টা করেছেন| কিন্তু বইটা তিনি লিখেছিলেন আত্মজীবনীর উদ্দেশ্যেই| এর ফলে এমন নানান ব্যাপারে উঠে আসে যা শিবরামের হৃদয়ের সাথে জড়ীয়ে ছিল| তাদের জিকির করার সময় শিবরামের অন্তঃস্থলের অকৃত্রিম আর অঢাকা আবেগ আর আকুতিটা বারে বারে বেড়িয়ে আসে| তার মায়ের সাথে তার গভীর বৌদ্ধিক আর আত্মিক টান, তার প্রথম পেম, আর পরবর্তীকালে কোলকাতার নিঃসঙ্গ যপনের সময় অন্য নানান নারীদের কথা|
শিবরাম একজন অতিব আবেগী, অনুভবী, প্রেম-বিলাসী, প্রাণবন্ত, এবং প্রতি মুহূর্তে প্রবল ভাবে জীবন আস্বাদী মানুষ ছিলেন| তার জীবতকালে ঘটে যাওয়া ভারতের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আর বুদ্ধিবৃত্তিক ঘটনার একদম মধ্যিখানে তিনিই ছিলেন| এর কোনো কিছুই তার অমর হাস্য-রস সৃষ্টি থেকে টের পাওয়া যায় না| সেখানে তিনি তার স্বভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত একটা প্রতিমা খাড়া করেছেন -- অলস, কুড়ে, ঘড়কুনো, আর নিজেকে সর্বক্ষণ তুচ্ছ করে চলা একজন একাকী লোক, যে তার অবিবাহিত জীবনেই পরম ত্ররপ্ত|
"বাংলা হরফে লেখা হলেই কি বাংলা হয়? বাঙ্গালী পাঠকের বোধগম্য হওয়া চাইনে? সংস্কৃত যদি আমি বাংলা বর্ণমালায় লিখি তা হলেই কি তা আর সংস্কৃত থাকবে না। ওরঁ লেখা সব সংস্কৃতের সগোত্রই- ক্লাসিক নয় কি?" - শিব্রামের অকপট আলোচনা বিষ্ণু দে আর সুধীন দত্তের কবিতা নিয়ে। একমত না হয়েও হাসা যায় এরকম আরো হাজারো কথার ফুলঝুরিতে ফুলফিল তার আত্মজীবনী, "ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা"।
তার মা'র কালীদর্শন নিয়ে লিখেছেন, "দিব্যদর্শনের গোরুত্ব তখনই আমার মালুম হয়েছিল। সেই দণ্ডেই।"
"সবার জীবনও যা আমারও তাই। কোথাও হয়ত বা একটু ইতরবিশেষ, কোথাও একটু বিশেষভাবে ইতর।" বলে শুরু করলেও টের পাওয়া যায়, মানে হাসির ছলেই টের পাইয়ে দেন তার জীবন সবার মত নয়। বাড়ি পালিয়ে কলকাতায় চলে আসা, কংগ্রেসের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান আর খুব সহজেই সে সংগ্রামের অন্ত:সার শূন্যতা বুঝতে পারা- সাধারনের কাজ না। তার ভাষায়, "গান্ধীজির জয়ধ্বনি হেকেঁ শহরময় টহল দিয়ে বেড়ালে কি দেশ স্বাধীণ হবে? কী করে যে তা হতে পারে আমি তো ভেবে পাই না। খালি খালি পা ব্যথা করা কেবল। এই ছাগল চরানোর জন্যই কি এখানে রাখা হয়েছে আমাদের?"
সাধারন কাজেই ফিরে গেছেন তিনি- কাগজ বিক্রি দিয়ে শুরু করে, লেখা বিক্রি দিয়ে চালিয়ে গেছেন একাকী মেসজীবন। কোন কিছুর জন্যই আক্ষেপ নেই তার। নিজেকে সাহিত্যিক না বলে, মজদুর বললেও, তার প্রথম প্রকাশিত বইদ্বয় - "মানুষ" এবং "চুম্বন" দুটোরই যে প্রথম সংস্করন এক বছরের মধ্যেই নি:শেষিত হয়েছিল তা জানিয়েছেনে বিন্দুমাত্র গর্ব না করেই । "কাঁচা" বয়সের রচনা বইগুলোর আবেগটা ধরে রেখেছেন প্রায় সারাজীবনই। "জানি জানি/সবাই সবে/ ছাড়বে। চলার পথে/কে কার চুমু/কাড়বে?"
ছেলেবেলার প্রথম প্রেম, রিনির, প্রাক-বিবাহ-আশির্বাদে শুধুমাত্র সামন্য আক্ষেপের সুর পাওয়া যায়, "হায়, কাউকে কিছু প্রেজেন্ট দেবার মত বরাত দিয়েও যে পাঠায়নি আমায় বিধা্তা। কোনো রকমে আমাকেই প্রেজেন্ট করে দিয়েছে কেবল। কিন্তু এ প্রেজেন্ট কারো পাতে দেবার নয়। হাতে দেবার নয়।"
পুরোটা শেষ করতে পারিনি, কিন্তু অনেকদিন পর আবার প্রানখোলা হাসি হাসলাম। হাসতে চাইলে, পড়ে ফেলুন বইটা- কথার মানে বুঝতে দ্বিধা থাকলেও, বইটার মাণের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া যায় নির্ধিদ্বায়।
২০২১ সালের শেষ বই ছিলো এটা,বেশ ভালো ছিলো যাপনবৃত্তান্ত কিন্তু ধর্মীয় তত্ত্ব কথাগুলো বুঝতে পারি নাই পাশকাটিয়ে গেছি।যখন বাড়ির কথা শেষ হলো তার পর খুব অপেক্ষা করেছি আবার যেন বাড়ির কথা পরিবারের কথা হয় কিন্তু একটি শব্দও আসে নাই পরে😪আর রিনির কথাও আসে নাই😪সব মিলিয়ে ভালো ছিলো। ৩.৮০ ব্যাক্তিগত রেটিং।
অসাধারণ এক মানুষের অসাধারণ এক জীবনী। শিবরাম চক্রবর্তী একজন প্রকৃত সাধক ছিলেন। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ কোন কিছুতেই তাঁর আসক্তি ছিল না। বাংলা ভাষায় অসাধারণ সংযোজনের এই বইটি।