Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
ছোট বই, কিছু সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু রেশ রয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক প্লট সব সময়ই মনটা ভারী করে দিয়ে যায়; গোলাগুলি, মিলিটারি, অত্যাচার, হত্যা এগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে । প্রিয় মানুষরা আদৌ বেচে আছে কিনা, ভালো আছে কিনা,তাদের নিয়ে অজানা ভয়-সংশয়, এক সাগর অনিশ্চয়তায় জীবন হয়ে যায় তিক্ত। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের নাম আর কাহিনীর সাথে মিল পাওয়া অন্যরকম বিষয়। আক্ষরিক ভাবে নামটা না গেলেও প্লটের সাথে এই সৌরভ নামটি একদম পারফেক্ট মনে হয়েছে। কোনো কিছুর ভালো গন্ধ যখন নাকে আসে তখন যেমন তার রেশ অনেক সময় ধরে থেকে যায়, এই কাহিনীটাও তেমন অনেকক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাবে যুদ্ধকালীন সময়ে কিছু মানুষের ভাগ্যের অনিশ্চয়তার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কোনো বই পড়লে নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না। এতো দুর্বিষহ দিন যে মানুষ কিভাবে পার করছে। নিজের চোখে দেখি নাই দেখে সেটা মনে হয় কল্পনার অতীত। তখনকার মানুষের কষ্ট চিন্তা করলে আর তারপর স্বাধীনতার কথা চিন্তা করলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।
মুক্তিযদ্ধভিত্তিক বেশিরভাগ গল্পই হয় মুক্তিযোদ্ধাকেন্দ্রিক। সেসময়ের সাধারণ মানুষের জীবযাত্রার খণ্ডিত অংশ তাতে স্থান পেলেও বিস্তার খুবই কম। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই বেশি। এই বইয়ের প্রধান চরিত্র কোন দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা না, একেবারে ভেতো বাঙালি বলতে যা বোঝায়, সেটাই। সে চায় দেশে আবার শান্তি ফেরত আসুক, সে যেভাবেই হোক না কেন। অধিকন্তু রাজাকারদের সাথে চেনাজানাও ছিল। রাজাকার- আলবদর আমার আরেক আগ্রহের জিনিস। সেসময় যে অনেকে নিরাপত্তা এবং জীবন ধারণের তাগিদেও অনেকে রাজাকার হয়েছে তার খানিকটা ইঙ্গিত আছে। তাছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকার কিছু খণ্ডিত চিত্রও উঠেছে এখানে। বরাবরের মতই সহজ সরল ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের দারুন একটা খণ্ডচিত্র 'সৌরভ’।
"একদিন এই দু:স্বপ্ন অবশই কাটবে। এই অপূর্ব রূপবতী মেয়েটি গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পরে হয়তো সত্যি সত্যি বেড়াতে আসবে এ বাড়িতে। বিলু নীলুরা ফিরে আসবে একতলায়। অকারণেই বিলু দোতলায় উঠে এসে চোখ ঘুরিয়ে বলবে, আচ্ছা বলুন দেখি, দুই এবং তিন যোগ করলে কখন সাত হয়? কাদের মিয়া বিরক্ত ভঙ্গিতে বলবে ….. কী অলক্ষণ! যা যা ভাগ। গভীর রাতে মূষলধারে বর্ষণ হবে। বৃষ্টির ছাটে আমার তোষক ভিজে যাবে, তবু আমি আলস্য করে উঠবো না। পরাধীন দেশে বসবাসরত মানুষের সে কি করুণ আর্তি…. একটা পর্যায় আসে স্বাধীনতা আমাদের প্রয়োজন হয়ে পরে।"
শফিকের ডান পাটি বাঁকা। সে ডান দিকে ঝুঁকে বিচিত্র ভঙ্গিতে হাঁটে। লাঠি দিয়ে শরীরের ভার অনেকটা সামলাতে হয়। মিলিটারিদের তাই শফিকের মতো প্রতিবন্ধী মানুষের দিকে কোনো আগ্রহ নেই। শারীরিক অক্ষমতা যে এমন একটি সুখকর ব্যাপার হতে পারে, তা শফিকের জানা ছিল না।
নিচতলার তিন নম্বর ঘর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যেতে লাগল। আজ এক মাস ধরে এই বাড়ির মেয়েটি কাঁদছে। এপ্রিল মাসের তিন তারিখ জলিল সাহেব বাড়ি ফেরেন নি। তাঁর স্ত্রী হয়তো রোজ আশা করে থাকে আজ ফিরবে। রাত এগারোটা থেকে কারফিউ। এগারোটা বেজে গেলে আর ফেরবার আশা থাকে না। মেয়েটি তখন কাঁদতে শুরু করে। মানুষের শোকের প্রকাশ এত শব্দময় কেন? যে-মেয়েটির কোনো কথা কোনো দিন শোনেনি কেউ, গভীর রাতে তাঁর কান্না শুনতে এমন অদ্ভুত লাগে!
ঘন্টাখানেক বসে থেকেও রফিকের বাসায় খোঁজ পাওয়া গেল না রফিকের। শফিকের ওকে দরকার। শফিক সরভাসা চা খেলো পরপর দু কাপ। রফিকের মা-ও যথারীতি এক ফাঁকে এসে আহাজারি করে গেলেন।
রফিকটার পড়াশোনা হয় নাই কুসঙ্গে থাকার জন্য। যত ছোটলোকের সাথে তাঁর খাতির। তুমি আবার কিছু মনে করো না বাবা। তোমাকে কিছু বলছি না। রফিককে অবশেষে বেরিয়ে পাওয়া গেল বাজার হাতে ফিরছে।
শফিকরা গেল জনাব ইজাবুদ্দিন সাহেবের বাড়ি। ইজাবুদ্দিন সাহেব শান্তি কমিটির এক জন মেম্বার। হলুদ রঙের একটা দোতলা বাড়িতে থাকেন। বাড়ির নাম ভাই ভাই কুটির। নেমপ্লেটে লেখা এম. এ. (গোল্ড মেডালিষ্ট) এল-এল. বি.। বন্ধু রফিক বলল, লোকটার সবচেয়ে বড়ো গুণ হল–বিরক্ত হয় না। সব সময় হাসিমুখ।
কথা খুবই ঠিক। ইজাবুদ্দিন সাহেব মন দিয়ে শফিকদের কথা শুনলেন। খাতা বের করে নাম-ধাম লিখে রাখলেন এবং বললেন, মিলিটারি জেলে জলিল সাহেব আছে কিনা সে খবর তিনি দু দিনের মধ্যে এনে দেবেন। যখন বেরিয়ে আসছিল শফিক, তখন ইজাবুদ্দিন সাহেব হাসিমুখে বললেন, আপনার বাবার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। বিশিষ্ট ভদ্রলোক ছিলেন তিনি। তাঁর বড়ো মেয়ের বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম। খাওয়াদাওয়া নিয়ে দারুন ঝামেলা হয়েছিল। শফিক বলল সে এসে জলিল সাহেবকে পাওয়া গেল কী না খোঁজ নিয়ে যাবে।
ইজাবুদ্দিন বললেন না না, আপনার আসতে হবে না, আমি খবর দেব। বাড়ি আমি চিনি, কত বার গিয়েছি। শরিফ আদমী ছিলেন আপনার বাবা।
সকালবেলা নিচে নামতেই আজিজ সাহেবের সঙ্গে দেখা। আজিজ সাহেব বিলু নীলুর বাবা। যে-লোক চোখে দেখে না এবং সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে, সে এত সব লক্ষ করে কী করে, সে এক রহস্য। বাড়ির প্রসঙ্গ শেষ হওয়ামাত্র তিনি রাজনীতি নিয়ে আসেন। তাঁর রাজনীতিরও কোনো আগামাথা নেই। একেক দিন একেক কথা বলেন। রাজনীতির পরে আসে স্বাস্থ্যবিধি। পৃথিবীর যাবতীয় ব্যাধির কোনো-না–কোনো টোটকা তাঁর জানা আছে।সকালবেলা তাঁকে ধরাধরি করে বারান্দার ইজিচেয়ারে শুইয়ে দেওয়া হয়। দুপুর পর্যন্ত অনবরত ভ্যাজর ভ্যাজার করতে থাকেন।
কাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিলিটারিরা। পরে আবার ছেড়ে দেয়। তখন বাড়ির আরেকজন ভাড়াটিয়া মতিনউদ্দিন সাহেব খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তুমি রাজাকারে ভর্তি হয়ে যাও কাদের মিয়া। তাহলে মিলিটারি তোমাকে কিছু করবে না। ভয়ডর থাকবে না, আরাম করে ঘুমাতে পারবে। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারবে। নব্বুই টাকা বেতন পাবে, তার সঙ্গে খোরাকি। ভালো ব্যবস্থা। ভর্তি হয়ে যাও। কালকেই যাও।
দিন দিন ঢাকার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। মানুষজন ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হতে থাকে। শফিকের দুলাভাই তার স্ত্রী এবং মেয়ে শীলাকে গ্রামে পাঠাতে চায়। কিন্তু শফিকের বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সে পরীক্ষার রুটিন বেরিয়েছে দেখিয়ে বোঝাতে ঢাকার অবস্থা স্বাভাবিক। এরমধ্যে ঘটলো আরেকটা ঘটনা। যেখানে পঙ্গু প্রায় শফিক বড় অসহায় বোধ করতে শুরু করে নিজেকে। কবে শেষ হবে এই যুদ্ধ?
🎩পাঠ প্রতিক্রিয়া 🎩
১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে জন্ম নেয়া ছেলেটির ছিল বহুমুখী প্রতিভা। হ্যাঁ কথা বলছি হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট��যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক।
"সৌরভ” হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি এবং সেই সময়ের জীবনাবস্থা নিয়ে রচিত হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস সৌরভ। মিলিটারি বাহিনীর আতঙ্ক, কার্ফিউ, গোলাগুলি, প্রাণ রক্ষায় গ্রামের দিকে পালিয়ে যাওয়া, মানুষের মুক্তিবাহিনীতে যোগদান, দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাঙ্খা সবই উঠে এসেছে এই উপন্যাসটিতে। সময়টাকে যেন হুমায়ূন আহমেদ নিজের চোখে এঁকেছেন নিজের মতো করে বাস্তবতা দিয়ে।
সৌরভ উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অস্থিরতা সবচেয়ে ফুটে উঠেছে যেন অসহায় শফিকের মধ্যে দিয়ে। একটা পঙ্গু মানুষ যে নিজেই অন্যের উপর নির্ভরশীল। প্রতিটি রাত কাটে আতঙ্কে। শফিকের মতো তখন নয় মাস প্রাণনাশের অস্থিরতা নিয়ে কাটিয়েছেন প্রতিটি বাঙালী! যদি পাকিস্তানি হানাদাররা ধরে ফেলে, যদি চলে আসে? ধরে ফেললে কি মেরে ফেলবে না ছেড়ে দিবে কখন জানি প্রাণ পাখিটা উড়ে যায়। ভয়ে ভয়ে কাটে দিন।
🎩 নামকরণের সার্থকতা 🎩
এই বইয়ের নাম "সৌরভ" কেন জানেন। এই বইয়ের প্রতিটি চরিত্র চায় স্বাধীনতার সৌরভ। যে সৌরভকে দেখে পালিয়ে যাবে মৃত্যু। সবাই স্বাধীন দেশে প্রান খুলে বাঁচতে পারবে একসাথে।
🎩বইয়ের নাম: "সৌরভ" 🎩 লেখক: হুমায়ূন আহমেদ 🎩 প্রকাশনা: অন্য প্রকাশ 🎩 প্রথম প্রকাশকাল: ১৯৮৪
বইটির বিষয়বস্তু মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঢাকায় বসবাসকারী এক ব্যাচেলর বাড়িওয়ালা, কেয়ারটেকার আর ভাড়াটিয়াদের নিয়ে এই গল্প। এই গল্পে কোনো যুদ্ধের বর্ণনা নেই, যুদ্ধের সময়ের কোনো ঘটনা নেই, আছে ওই সময়ে মানুষের ব্যাক্তি জীবনের উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তা। খুব ভিন্ন ধারার মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে চাইলে বইটা পরে দেখা যায়।
জোসনা ও জননীর গল্প, শ্যামল ছায়া উপন্যাস দুইটি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস হিসাবে যতটা হৃদয়গ্রাহী, আর পাঠক সমাদৃত এই বইটা এমন না। চরিত্রগুলো খুব ফাঁকা ফাঁকা, গল্পের কোনো নির্দিষ্ট কাহিনীও নাই, প্রতিদিনের বর্ণনা ছাড়া। সব মিলায়ে আমার কাছে হুমায়ুন আহমেদের এভারেজ বইগুলোর চেয়ে দুর্বল লেগেছে। তবে এক বসায় পরে ফেলার জন্য অভারল খারাপ না।
একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা, সচরাচর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যা লেখা থাকে সবই মুক্তিবাহিনী পন্থী লেখা, শান্তিকমিটি কিংবা পাকিস্তানি মিলিটারিদের সাথে খাতির হওয়া মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে সেটা খুব সম্ভবত বেশি লেখা হয় নাই।
খুবই সাধারণ ভাষায়, সহজাত ধারায় গল্পের কাহিনী এগিয়েছে, হুমায়ূনের এই সহজভাবে জটিল জিনিস অতি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা অভিনব, ভদ্রলোক হয়ত চাইলে সাহিত্যের পাথর সদৃশ্য কিছুতেও ফুল ফোটাতে পারতেন।
বছরটা শুরু হয়েছে প্রথম পেশাগত পরীক্ষার মতো ভয়াবহ বিষয় দিয়ে। 'প্রফ' মেডিকেল স্টুডেন্টদের কাছে এমন একটা মারাত্মক চাপের বিষয় যে প্রফের সময় বেশিরভাগ মেডিকোর ওজন ৬/৭ কেজি কমে যায়।গতকাল সারারাত প্রফের স্ট্রেসে ঘুমাতে পারছিলাম না।তখন এই বইটা পড়া।আমার কখনো স্ট্রেস ফিল হলে আমি হুমায়ূন স্যারের বই পড়ি,রিলাক্স লাগে তখন। এই বইটা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা।শফিক,কাদের,মতিন সাহেব,নিলু,বিলু,লুনাদের গল্প।মতিন সাহেবের আচরণে যেমন বিরক্ত হয়েছি আবার লুনার জ্বরের ঘোরে বকা প্রলাপে তেমনি কষ্ট পেয়েছি।এটাই তো বইয়ের স্বার্থকতা,গল্পের স্বার্থকতা,লেখকের স্বার্থকতা।
লুনা চরিত্রকে বিরক্ত লেগেছে, এটুক বাদে সুন্দর বই। বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধের বইতেই চরিত্ররা প্রত্যক্ষ বা খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে যুদ্ধের সাথে যুক্ত থাকে। কিন্ত এই বইয়ের কাহিনী যাকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে সে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না, সে চায় শান্তি ফিরে আসুক সেটা স্বাধীনতার মাধ্যমে বা অন্য ভাবেই হোক, খুব সাধারণ, সাদামাটা মন মানুসিকতার মানুষ সে। বাস্তবে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের ভাবনা তো তখন সে রকমই ছিল।
হুমায়ূন আহমদের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠা ভয় আশা স্বপ্ন খুব চমৎকার করে পরিবেশন করেছেন। ভাবতে অবাক লাগে যে এটা সম্ভবত ওনার চতুর্থ উপন্যাস। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত। এই উপন্যাস থেকেই তার হুইমজিকাল চরিত্রগুলো প্রকাশ পাওয়া শুরু করেছে। এর আগে শঙ্খনীল কারাগার বা নন্দিত নরকে উপন্যাসের চরিত্ররা কম হুইমজিকল ছিল।
মূল চরিত্রটি বাড়াবাড়ি ভাবে দেশপ্রেমিক না, কিন্তু ধীরে ধীরে দেখতে পাই যে নির্লিপ্ত মানুষটি কিভাবে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। এই উপন্যাস থেকেই শুরু হয় বোকা মহিলা চরিত্র (বোন); যার ছায়া ভবিষ্যতে পাওয়া যায় হিমু চরিত্রের ফুপুর চরিত্রে। সব পড়তে ভালো লেগেছে শুধু মূল চরিত্র ও লুনার ডায়নামিক ছাড়া। লুনা চরিত্রটির বয়স তেরো, সে তার চাচার বয়সী একটা লোকের সাথে প্রেম প্রেম ইঙ্গিত করছে, সেটা খুব খারাপ লেগেছে। অ��েক বয়সের ব্যবধানের নায়কের ওপর কিশোরী রূপবতী মেয়ের মুগ্ধতা/অধিকার দেখানোর ব্যাপারটা এই বই থেকেই শুরু। এখানে তাও দেখিয়েছে যে নায়কের কোনো আগ্রহ নেই। এইটা কেন যেন মনে হয় লেখকের ফ্যান্টাসি ছিল, যে কিশোরী মেয়েরা তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে, কোনো কারণ ছাড়াই। ধীরে ধীরে আবার সব হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ব ভাবছি। যতদূর মনে পড়ে এই প্যাটার্নটা প্রায় ৯০% বইয়ে আছে। রিভিউ লিখব আশা করি।
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের অস্থিতিশীল অবস্থা আর প্রাণ ভয়ের সংশয় নিয়েই বইটি। পঙ্গু বাড়ি ওয়ালা শফিক সাহেব তার ভাড়াটিয়ারা আর লুনা নামের অসম্ভব রূপবতী মেয়েই হচ্ছে এই বইয়ের উল্লেখযোগ্য চরিত্র তবে শফিকের বড় আপা, দুলাভাই আর কাদের নামের কাজের ছেলেটির কথা না বললে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের রিভিউ লেখা খুবই কঠিন কাজ, মনে হয় লিখতে গেলে কখন ভুলবশত কি স্পয়লার দিয়ে দিই৷ সৌরভ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের অস্থিরতাই সবচেয়ে বেশী ফুটে উঠেছে, রাগী স্যারদের পঞ্চাশ এক ঘন্টার ক্লাসেই অস্থিরতা নিয়ে থাকা যায়না আর ন'মাস প্রাণনাশের অস্থিরতা নিয়ে কাটিয়েছেন প্রতিটি বাঙ্গালী! যদি পাকিস্তানি হানাদাররা ধরে ফেলে, যদি চলে আসে? ধরে ফেললে কি মেরে ফেলবে না ছেড়ে দিবে এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন আর ভয়ের জীবন ছিলো বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার মনে,প্রশ্নবোধক জীবন বললে খুব একটা ভুল হবেনা।
সৌরভ উপন্যাসটার মাধ্যমে ৭১ এর ঢাকার পরিবেশের একটা ধারণা পাবা। সে সময়ের উৎকণ্ঠার একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে। শফিক ভাড়াটিয়ে, তার বাড়িতে থাকে বিভিন্ন চরিত্র। তাদের ঢাকার এই জীবনে ৭১ এর ভূমিকা দেখা যায়। কারো স্বামীকে মিলিটারি ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কোন রুপবতি কিশোরী মেয়ে ভয়ে আছে কখন তাকে নিয়ে যাবে, কোন এক দেশপ্রেমিক যুদ্ধে যাচ্ছে, অনেকেই গ্রামে পলায়ন করছে, শহরে হাটতে চলতে মানুষের মনে আতঙ্কের ছায়া। এমন কিছু বিষয় উপন্যাসে পাওয়া যায়। শেষে এসে মেয়েটার ঘটনা মন ছুয়েছে। এছাড়া আর তেমন কিছুই আবেগের যায়গা ধরতে পারে নি। চরিত্রগুলো কেমন যেনো ফাকা ফাকা লেগেছে। আপন লাগেনি। এর আগে হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়া বা নির্বাসন পড়ে যতটা ভাল লেগেছিলো। সৈরভ পড়ে তেমনটা লাগে নি আসলে। তাও ৭১-এর ঢাকার একটি চিত্র পেয়েছে। এটাই প্রাপ্তি।
গল্পের প্লট বিন্যাস খুব মায়াময়। ভয়ংকর বিপর্যয়ের সময়ে মানুষের চিন্তাভাবনা কর্মকাণ্ডের খসড়া হল সৌরভ। অনিশ্চিত জীবনে মানুষের আশ্রয় সাহস। খুব প্রিয়জন হারানোর ভয়ে সেসব ভয়ে পর্যবসিত হয়। গল্প বলার ঢং মানুষের মনের মধ্যখান দেখার জন্য থ্রিডি গ্লাসের মত লেগেছে। ভয়াবহ মুক্তিযুদ্ধ। মিলিটারিদের লাম্পট্য। নারী লোভ। এসব এমন সাবলীল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভয়ে গা হাত পা হিম হয়ে যায়। বাইরে বের হলেই মৃত্যুভয়। একটা পলকের ভরসা নেই তবু মানুষ বাঁচতে চায়। দেশ বাঁচাতে রফিক, কুদ্দুসের মত সাধারণ মানুষেরাও দেশপ্রেমিক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। এমন একটা মানবিক উপাখ্যান সৌরভ। হুমায়ুন আহমেদের অসাধারণ সৃষ্টি।
গল্পের পটভূমি আমাদের চিরচেনা ১৯৭১ এর যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। গল্পের যে প্রধান চরিত্র তার একটি পায়ে সমস্যা। তো চারিদিকে যুদ্ধের হাঙ্গামা, জীবন যখন অনিশ্চিত তখন একটি বাড়ির মানুষকেই মূলত অনুসরণ করে কাহিনি চলতে থাকে, বিশেষ করে নিলু-বিলু নামের দুই বোন। তো, অনান্য যুদ্ধের উপরে রচিত গল্পের মতো এটাতে তেমন যুদ্ধেন বর্ণনা পাওয়া যায়নি, কিন্তু যুদ্ধের জন্য জনজীবনে কেমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেটা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষের মনে কতোটা ভয় কাজ করছিলো সেটা। তো, যেহেতু হুমায়ূন আহমেদের বই তাই অবসরে বইটি পড়ে নিতে পারেন।
সময়টা ১৯৭১। ঢাকা শহরের একটি বাড়ির মালিক শফীক। এই বাড়িতে আছেন ভূতের ভয়ে থাকা নেজাম, অন্ধ আজিজ সাহেব তার দুই মেয়ে বিলু এবং নিলু। শফীকের সঙ্গী কাদের। যে তাকে ডাকে ছোড ভাই (ডাকটা বড় মধুর) বলে। এই সময়টা তাদের কিভাবে যাচ্ছে? গল্পে আরো যোগ হতে থাকে আধ পাগলা মতিন, সুন্দরী লুনা, বাদশা মিয়া, শান্তি কমিটির ইজাজুদ্দিন। আরো অনেকে৷ তরতর করে গল্প আগায়। কিন্তু এই দুঃসময়ের শেষ কোথায়?
মুক্তিযুদ্ধ সময়কার চমৎকার বর্ণনা। এই জনরার গল্প আমার বরাবরই ভালো লাগে। তখনকার সময়ের নগরের জীবন সম্পর্কে অপূর্ব বিবরণ। শুধু মুক্তিবাহিনীই নয়, পরিস্থিতির কবলে তখন অনেককেই রাজাকার/আলবদর এ যোগ দিয়ে হয়েছে তাও উপস্থিত হয়েছে।
সুন্দর একটি গল্প। অন্তত আগা-মাথা না রেখেই শেষ হয়ে যায়নি😬 You know what I mean!!
Basically the story is based on our liberation war. I have read other books on this topic and those were mindblowing , but can't give this book more than 3 stars...
এই বইটি আমি বহুবার পড়েছি। কেন জানি না এক অদ্ভুত ভালো লাগা আছে এই উপন্যাসটায়। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র শফিক। তার এক পা পোলিওর জন্য সামান্য বেঁকে গেছে। একা মানুষ, যদিও তার বাড়িতে সে একা নয়। তার চাকর কাদের আছে তার সাথে সেই সঙ্গে আছে কিছু ভাড়াটে। ভাড়াটেরা এক এক জন এক এক রকমের, বেশীর ভাগই বিরক্তিকর। কেউ বলে শফিকের বাড়িতে ভূত আছে, কেউ আবার বাড়ির নানারকম ব্যপার নিয়ে অভিযোগ করে। এক ভাড়াটের দুই মেয়ে নীলু এবং বিলু , তারা দুজনেই শফিককে মনে মনে পছন্দ করে, এদের মধ্যে একজন চুপচাপ আরেকজন দুষ্ট। শফিক সবাইকেই সহ্য করে । যতটা পারে মানুষকে সাহায্য করে। নানা রকম মানুষের সাথে সে দেখা সাক্ষাত করে, করার প্রয়োজন নেই, তাও করে। ভীতু তাও প্রয়োজনে সাহস দেখায়। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা এই উপন্যাস একজন বাইরে থেকে "অক্ষ্ম" মানুষের আর পাঁচজন সক্ষম মানুষের চেয়েও বেশী সংযম এবং সাহস দেখার গল্পই হল " সৌরভ" ।