Jump to ratings and reviews
Rate this book

ফিরে এসো চাকা

Rate this book
‘যা—ই লিপিবদ্ধ করি... তা—ই আক্ষরিক অর্থে সুনির্দিষ্ট কর্তব্যেও ভারপ্রাপ্ত দেবী অথবা দেবতা হয়ে তৎক্ষণাৎ জন্মলাভ করে...’ একদা লিখেছিলেন তিনি, বিনয় মজুমদার, সেই কবে, মধ্য ষাটে, তাঁর অধিকন্তু’—র পাতায়। তার আগে—পরে বাংলা কবিতা এই কবির হাতে ফিরে ফিরে নবজন্ম পেয়েছে, ‘নক্ষত্রের আলোয়’, ‘গায়ত্রীকে’ থেকে শুরু করে ‘ফিরে এসো, চাকা’, ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’ হয়ে একের পর এক কাব্যগ্রন্থে। ছন্দের নিজস্ব বর্ণমালায় নিস্পৃহভাবে সুরযোজনা করতে করতে বিনয় ডুবে গেছেন দৃশ্যের অতীত সেই অদৃশ্যেরও অতল গহ্বরে, যেখানে পা—রাখার অভিজ্ঞতা থেকেই একমাত্র টের পাওয়া যায় স্বরলিপির চকিত উদ্ভাসে স্বর ও সুরের একাকার হয়ে যাওয়া। সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা যে এই কবির উপলব্ধিতে তার যৎযাবতীয় মৃদুতার হাত ছাড়িয়ে নীলাভতম নীলে বিলীন মহাপক্ষীর ছায়ার মতো বিশাল এবং একই সঙ্গে মহান হয়ে উঠতে পেরেছে, একথা আজ আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দোসরহীনরকম কঠোর আর নির্মমতম কোমল এই সমস্তকবিতার মুকুরে এই কবি কেবল নিজেরই অচেনা মুখ দেখেননি, দেখেছেন ঈশ্বরীর অধরা সেই অবয়বওÑযার কোনো বর্ণ নেই, আকার নেই, শুধু রয়ে—যাওয়া আছে। বাংলা কবিতার পাঠক এই কাব্যগ্রন্থে চোখ রেখে নিশ্চিতভাবেই শিহরিত হবেন; তাঁর মনে পড়ে যাবেই সেইসব কমলা রঙের রৌদ্রস্মৃতি আর কাকাতুয়া—পায়রার ওড়াওড়ির ছায়াময় অভিজ্ঞতা যা আজও মূল্যবান, মহামূল্যবান।

56 pages, Hardcover

First published January 1, 1962

24 people are currently reading
290 people want to read

About the author

Binoy Majumdar

17 books31 followers
Late Binoy Majumdar was born in Myanmar (erstwhile Burma) on the 17th of September 1934. His family later moved to what is now West Bengal in India. Binoy loved mathematics from his early youth. He completed 'Intermediate' (pre-University) from the Presidency College of the University of Calcutta. Although he graduated with a degree in mechanical engineering graduate from Bengal Engineering College, Calcutta, in 1957, Binoy turned to poetry later in life. He translated a number of science texts from the Russian to Bengali. When Binoy took to writing, the scientific training of systematic observation and enquiry of objects found a place, quite naturally, in his poetry. His first book of verse was Nakshatrer Aloy (in the light of the stars). However, Binoy Majumdar's most famous piece of work to date is Phire Esho, Chaka (Come back, O Wheel, 1960), which was written in the format of a diary. The book is dedicated to Gayatri Chakravorty Spivak, a fellow-Calcuttan and contemporary of Majumdar.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
81 (49%)
4 stars
53 (32%)
3 stars
22 (13%)
2 stars
5 (3%)
1 star
2 (1%)
Displaying 1 - 30 of 37 reviews
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
July 3, 2022
"ফিরে এসো, চাকা" আমার পাঠকজীবনের একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বই। প্রতিটি মানুষের চিন্তাভাবনায় কিছু স্ববিরোধ (contradiction) থাকে। পাঠক হিসেবে আমার স্ববিরোধটি হলো, গদ্যের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা কিংবা উদ্দেশ্যহীন অবাস্তবতা আমার সহ্য হয়না ; অথচ আমি কবিতা পড়তে ভালোবাসি! গল্প-উপন্যাস পাঠের ক্ষেত্রে সুসঙ্গত প্লট এবং বক্তব্যের বোধগম্যতা আমার কাছে খুব জরুরি দুটো শর্ত। ফ্রাঞ্জ কাফকার "দ্য মেটামরফোসিস" ভালো লেগেছিলো কারণ, গল্পটির আপাত-absurdity সত্ত্বেও ওই দুটো শর্ত পূরণ হয়েছিলো। হুয়ান রুলফোর "পেড্রো পারামো" ভালো লাগেনি কারণ শর্তদুটো পূরণ হয়নি।

২৮ শে এপ্রিল ১৯৬২ সালে লিখিত নিচের এই লাইনগুলো, আজকে ভোরবেলা আমি যখন পুনরায় পাঠ করলাম, তখন আমি আরো একবার, আবারও একবার, এক রহস্যময় কিন্তু সুস্পষ্ট আচ্ছন্নতার প্রতি নিজেকে সমর্পণ করলাম।

কবে যেন একবার বিদ্ধ হ'য়ে বালুকাবেলায়
সাগরের সাহচর্য পেয়েছিলো অলৌকিক পাখি।
উদ্যত সংগীতে কবে ভরেছিলো হর্ম্যতল, তবু
পেরেক বিফল হ'লো গহ্বরের উদ্ধার পেলো না।


যেমনটা শোনা যায়, হতে পারে এই বইটি একজন কবির ব্যর্থ প্রেমের এবং স্পর্শবঞ্চিত আকাঙ্ক্ষার, সুদীর্ঘ এপিটাফ। কিন্তু যখনই এই কবিতাগুলো পড়ি, কবির মানসিক ইতিবৃত্তান্তের কথা আমার খেয়ালে থাকে না। আমি দেখতে পাই একটা অচেতন টানেলের শেষপ্রান্তে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে একটা হলদে আলোর শিখা। শিখাটার নাম "বোধ"।

আগে এই শিখাটার নাম ছিলো "বিপন্নতা"। ২০০৯ সাল নাগাদ প্রথমবার এই কবিতাগুলো পড়ার আগে, কবিতাকে আমি জানতুম একধরণের অস্পষ্ট আবেশ হিসেবে। কবিতা পড়তে আমার ভালো লাগতো, কিন্তু তারা আমাকে বিপন্ন করতো। যা-কিছুর অর্থ আমার কাছে সম্পূর্ণ ধরা দিতো না, তা-ই আমাকে বিপন্ন করতো।

এমন বিপন্ন আমি, ব্যক্তিগত পবিত্রতাহীন।
যেখানে-সেখানে মুগ্ধ মলত্যাগে অথবা অসীমে
প্রস্রাব করার কালে শিশুর গোপন কিছু নেই।
ফলে পিপীলিকাশ্রেণী, কুসুমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।


বিনয় মজুমদারের সান্নিধ্যে এসে আমি বুঝেছি, বিপন্নতা থেকে বোধে উত্তরণের নামই কবিতা। কবিতা মানে কেবল বিমূর্ত আবেশ নয়। সুন্দর সুন্দর শব্দ পাশাপাশি সাজিয়ে যাওয়া নয়। কিংবা, পাহাড়ি বালকের বাঁশির মতো সরল আত্মউন্মোচন নয়। ক্রোধজর্জর শ্লোগান তো নয়ই। কবি অবশ্যই নিশ্চিতভাবে কিছু একটা প্রকাশ করতে চাইছেন। হয়তো শুধু আমাকেই বলতে চাইছেন। কবি আর আমি মুখোমুখি। কিন্তু, যেহেতু কবিতার চেয়ে ব্যক্তিগত বিষয় খুব কম আছে পৃথিবীতে, নিজেকে প্রকাশ করার আগে আমার সামর্থ্য যাচাই করে নিচ্ছেন তিনি। টুকরো করে কাছি, আমি কি ডুবতে রাজি আছি?

এসো ক্লান্তি, এসো এসো, বহু পরীক্ষায় ব্যর্থ, হাঁস
পুনরায় বলে, তার ওড়ার ক্ষমতাবলি নেই,
নির্মিত নীড়ের কথা মনে আনে, বিস্মিত স্মৃতিতে।
অজীর্ণ, তোমাকে নিয়ে আর কতো গান গেয়ে যাবো?


বোধের এই যে স্পষ্টতা, অথচ প্রকাশের ভাষাটি যেন এই জগতের নয়। তিনি জানতেন, আমিও ধীরে ধীরে জেনেছি, আমরা দুজনেই আসলে ভিনগ্রহী। অপার্থিব মহাজাগতিক ভিনগ্রহী নয়, আমার মাথার ভেতরেই অনেকগুলো বিকল্প গ্রহ আছে। যদিও কবির সঙ্গে আমার বাক্যবিনিময় পৃথিবীর পরিচিত ভাষায় হয়না, তবু বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, নিবিড় নিশ্চিত বোধগম্যতার সিঁড়িতে দৃঢ়পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে কবিতা। কবিতা যে ভাসমান বায়বীয় কুয়াশাচ্ছন্ন কোনও হিলস্টেশন নয়, রহস্যময় মানেই যে দুরূহ অস্পষ্টতা নয়, এই জরুরি দর্পণগুলো আমাকে সরবরাহ করেছিলেন কবি বিনয় মজুমদার। কবিতা ছলনা নয়, কবিতারও আছে সুসংগত প্লট, সনির্বন্ধ বোধগম্যতা। ব্যক্তিমানুষ হিসেবে জীবনানন্দ দাশ যা-খুশি হতে পারেন— একজন কমলালেবু কিংবা ভোরের শঙ্খচিল। কিন্তু তাঁর কবিতা মোটেও "বিপন্ন বিস্ময়" নয়। কোনো কবিতা যদি প্রকৃতই কবিতা হয়ে থাকে, তাহলে তা ভীষণভাবে দৃশ্যমান! অবচেতনে নয়, আমার জ্যান্ত চেতনায়! এই উপলব্ধি, "ফিরে এসো, চাকা" পড়ার আগে আমার ছিলো না।

যখন কিছু না থাকে, কিছুই নিমেষলভ্য নয়,
তখনো কেবলমাত্র বিরহ সহজে পেতে পারি।
তাকেই সম্বল ক'রে বুঝি এই মহাশূন্য শুধু
স্বতঃস্ফূর্ত জ্যোৎস্নায় পরিপূর্ণ, মুগ্ধ হতে পারে।







ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
April 9, 2025
'এইখানে পৃথিবীর এই ক্লান্ত এ অশান্ত কিনারার দেশে/ এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে ' - এই বলে যেন পৃথিবীকে নির্দেশ করে দেখিয়েছেন জীবনানন্দ দাশ; যেন বিনয় মজুমদার বা তাঁর মত একজন রক্তিম ফল যে নির্মোহে হেঁটে গেছেন নির্জনতায় জীবনের গভীর সংশয়কে জয় করবার জন্য: কাল্পনিক প্রেমের ভেতর দীর্ঘ তৃষ্ণা ভুলে থেকে আবিষ্কার করেন যিনি ভাষা ।

গ্রন্হের ভিতর দীর্ঘকাল গবেষক হয়ে দেখেছেন মানুষের জীবন কীটের মত । যেন অনেকগুলো জীবনের পক্ষে দরজা ধরে দাঁড়িয়েছেন একজন নিঃসঙ্গ দর্শক । মৌমাছির পা গুনে, সাপের চলার উপায় দেখে, উদ্ভিদের দেহের অনুজীবনের ভাষা আবিষ্কার করে মানুষের বিশেষত্বকে ধাবিত করেন নিজের দিকে । কবিতার দৃষ্টি এক অদ্ভুত লেন্স ধারণ করে যা বস্তু জগতে দেখার পরও মনোজগতে দেখার নির্দেশনা দেয় । ভাষা মানুষের দৈনন্দিনতায় মিশে জারিত হয়, বিবর্তিত হয়, ব্যবহৃত হওয়ার মধ্যে এর চুড়ান্ত সার্থকতা ।

বিনয় মজুমদার, ব্যক্তিগত বৃক্ষ নিয়ে চলা সর্বদা সৃষ্টির খোঁজে নিরন্তর, বিভিন্নভাবে দেখার ম্যাগনেফাইং গ্লাস । শিল্পের নিগূঢ় আনন্দ ও প্রবল নীল বেদনাকে গনিতের যুক্তি দিয়ে দেখে, আনুবিক্ষনীক রেটিনার তলে ফেলে জীবনের গভীর মগ্নতাকে ভেঙেছেন যেন ।

যুক্তি ও যুক্তকথাঃ কবিতার কি রিভিউ হয়? বা কবিতার বই এর? হতে পারে কথাগুলো গদ্যের যুক্তিতে সাজালে, যা ছিল তার যদি ভাবনা ও প্রকাশ থাকে, হতে পারে কি? কবিতা তো যা বলছে ঠিক সে কথাটাই ।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
June 9, 2020
" হৃদয়, নিঃশব্দে বাজো ; তারকা, কুসুম, অঙ্গুরীয়
এদের কখনো আর সরব সংগীত শোনাবো না।
বধির স্বস্থানে আছে ; অথবা নিজের রূপ ভুলে
প্রেমিকের তৃষ্ণা দ্যাখে, পৃথিবীর বিপণিতে থেকে " - বিনয় মজুমদার

প্রাজ্ঞজনের জন্য কবিতা ব্যবচ্ছেদের জন্য তোলা রইল। আমি পড়বো চিত্তের খোরাক হিসেবে। বিনয় মজুমদার "ফিরে এসো, চাকা" ছোট্ট একটি কবিতার বই। ভীষণ ছোট, মাত্র ৫১ পাতার। অথচ নামবিহীন স্রেফ সন-তারিখ দেওয়া পঙক্তিগুলো যেন কথা কইছিল। হয়তো গুরুগম্ভীর দর্শন পঙক্তিময় ছড়ানো, তা আমায় স্পর্শ করেনি। উদ্বেলিত করেছে বিনয় মজুমদারের চাকাকে নানা আঙিকে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান। সেই চাকা কী বা কে তার উত্তর বিনয় মজুমদারের ভাবনার পলেস্তারায় আছে। প্রিয়জনকে ফিরে আসবার জন্য এই আকুতির বহিঃপ্রকাশ,

"বেশ কিছুকাল হলো চ'লে গেছো, প্লাবনের মতো
একবার এসো ফের ; চতুর্দিকে সরস পাতার
মাঝে থাকা শিরীষের বিশুষ্ক ফলের মতো আমি
জীবনযাপন করি "

" ফিরে এসো, চাকা " অসম্ভব সুন্দর একটি কবিতার বই। বিনয় মজুমদার, আপনি এই অভাজনের প্রিয়তে যোগ হলেন!
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
September 21, 2022
এই কবির লেখা অসাধারণ। এত ঘোর লাগা, ত্রস্ত লেখা! আমি প্রতিটা কবিতাকে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে পড়েছি। প্রাঞ্জল সব কবিতা। শব্দ চয়নও অসাধারণ। কী সুন্দর! সময় নিয়ে নিয়ে এই কবিতাগুলো পড়েছি। আর বারবার মনে হয়েছে লেখক মনে হয় নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। লেখককের আভিজাত্যপূর্ণ শব্দ চয়নের কথা বারবার বলতে ইচ্ছে করে। মনে হয় সাধারণ কে অসাধারণ করবেন মনে করে উনি কাব্য রচনা করছেন।
Profile Image for Mahrin Ferdous.
Author 8 books208 followers
June 28, 2021
কোন এক গায়ত্রীসন্ধ্যায় ফিরে এসো চাকা। কারণ, একমাত্র তোমার পাতা উলটেই আমি ভুলে যাই,

' এ যুগের চাঁদ হলো কাস্তে...'
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
June 29, 2023
বাতাস আমার কাছে আবেগের মথিত প্রতীক,
জোৎস্না মানে হৃদয়ের দ্যুতি, প্রেম; মেঘ-শরীরের কামনার বাষ্পপুঞ্জ; মুকুর, আকাশ, সরোবর,
সাগর, কুসুম, তারা, অঙ্গুরীয় — এ-সকল তুমি।
তোমাকে সর্বত্র দেখি; প্রাকৃতিক সকল কিছুই
টীকা ও টিপ্পন্নী মাত্র, পরিচিত গভীর গ্রন্থের।
অথচ তুমি কি, নারী, বেজে ওঠো কোন অবকাশে?
এতটা বয়সে ক্ষত — ক্ষত হয়নি কি কোনোকালে?

তৃপ্ত অবস্থা নেই, সমুদ্রের আবশ্যক জল
যতো পান করা যায়, তৃষ্ণা ততো বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বৃষ্টির পরেও ফের বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রেম, রাত্রি পরিপূর্ণ অতৃপ্তির ক্ষণিক ক্ষান্তিতে।
সেহেতু তুমি তো, নারী, বেজে ওঠো শ্বেত অবকাশে;
এতটা বয়সে ক্ষত — ক্ষত হয়নি কি কোনোকালে?
.

এই কাব্যগ্রন্থে ৭৭টা কবিতা আছে। প্রতিটা কবিতা সমানভাবে মুগ্ধ করে আর ভাবায়, কবিতা ভালোবাসতে আর কবিতাকে সাথে নিয়ে বাঁচতে শেখায়।

২৯ জুন, ২০২৩
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
542 reviews
May 2, 2025
আমার কবিতা পড়া হয়নি বেশি। কবিতার বই আরও কম। অনেক বিখ্যাত কবির শ্রেষ্ঠ কবিতাটিও আমার অজানা। বিনয় মজুমদারের নাম জানতাম। পড়িনি কখনো। আজ, ফিরে এসো চাকা পড়ে, আফসোস হচ্ছে আবার আনন্দবোধও হচ্ছে। আফসোস এই কারণে যে, কেন আগে পড়িনি। আর আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে যে, হয়তো কখনো এইসব রাশি রাশি মুগ্ধতার থেকে বহু দূরে থেকে মারা যেতাম; দেরিতে হলেও পড়া তো হলো।

এই কাব্যগ্রন্থের লেখাগুলো আমার উপর কেমন প্রভাব বিস্তার করেছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে গেলেও পারবো না। এমন না যে ভাল কবিতা পড়িনি কখনো এর আগে। কিন্তু, তারপরেও, দৃঢ় সব শব্দে, কবি যখন বলে যান কিছু কথা সরাসরি আর কিছু কথা গোপনে, তখন স্তব্ধ হওয়া ছাড়া আর করার কিছু থাকে না।
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
December 11, 2018
"একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে
দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলে
পুনরায় ডুবে গেলো — এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে
বেদনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল।"


এই অদ্ভুত রহস্যময় পঙক্তিগুলোর মধ্য দিয়েই বিনয় মজুমদারকে আমি প্রথম চিনেছি। বহুদিন "বেদনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হলো ফল" লাইনটি অপূর্ব গানের মতো মাথায় গেঁথে ছিল। পুনর্বার নেড়েচেড়ে দেখেছি "প্রকৃত পস্তাবে" শব্দদয়।
আমার মাঝেমাঝে মনে হতো, ও' হেনরির গল্পে যেমন একেবারে শেষে এসে আচমকা একটা টুইস্ট পাওয়া যায়। বিনয় মজুমদারও তেমনি শেষের চরণে বহুকিছু বলে যান। একটা অব্যর্থ পাঞ্চলাইন থাকে। যেমনঃ

"তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে-দূরে
চিরকাল থেকে ভাবে মিলনের শ্বাসরোধী কথা।"


"তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু,
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়!


কবিতার নিজস্ব সুর আছে। বিনয় মজুমদারের কবিতা সুর করে পড়ি...

"অব্যর্থ পাখির কাছে যতোই কালাতিপাত করি
আমাকে চেনে না তবু, পরিচয় সূচিত হলো না।
কোনদিন পাবো না তো, সেতুর উপর দিয়ে দ্রুত
ট্রেনের ধ্বনির মতো সুগম্ভীর জীবন পাবো না।"
Profile Image for Zillur  Rahman Shohag.
46 reviews3 followers
June 9, 2022
“মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায় “

বিনয় মজুমদারের কবিতা পড়তে হয় ঠিক যেমন করে মুখের ভেতর চকলেট রেখে খেতে হয় ধীরে ধীরে চুষে চুষে। যত গভীরে প্রবেশ করা যায় ততই যেনো উন্মোচিত মধুর ভাড়ার।
তার কবিতায় দার্শনিক উপলক্ষণ গুলোও আসে দৃশ্যে ভর করে যেসব দৃশ্যের সাথে আত্মার যোগাযোগ প্রকট একারণে উপলব্ধিগুলোও হয়ে ওঠে একান্ত ব্যক্তিগত।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews79 followers
December 13, 2023
কবিতা তো পড়ি কিন্তু তার কতোটুকুই বা বুঝি? শুধু শব্দের মায়াজালে সম্মোহিত হয়ে একটার পর একটা লাইন আউড়ে যাই। ভালো লাগে বলেই পড়ি, বুঝা না বুঝার তোয়াক্কা না করেই।

“গ্রন্থের ভিতরে আমি বহুকাল গবেষক হ’য়ে

লিপ্ত আছি, আমাদের অভিজ্ঞতা কীটের মতন”

জীবননান্দের কবিতা পড়তে গেলেও প্রায় একই অনুভূতি গ্রাস করত আমায়। কিন্তু প্রত্যেক কবিতায় নিজের মতো অর্থ খুঁজে পাবার লোভে পড়ে যেতাম। সেই জীবননান্দ, যাকে গুরুর চোখে দেখতেন বিনয় মজুমদার তাকে নিয়ে যখন লিখলেন,

“তোমার কবিতা, কাব্য, সংশয়ে-সন্দেহে দুলে-দুলে

তুমি নিজে ঝ’রে গেছ, হরীতকী ফলের মতন।”

তখন মনে হয় জীবনানন্দের যোগ্য উত্তরসূরি বোধহয় তিনিই। জীবনানন্দের মতো তার কবিতার লাইনও সময়ের সীমাকে ছাড়িয়ে কালজয়ীর তকমা পেয়ে বসে আছে।

“মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়!”

কিংবা

“ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?”

এসব লাইন তো বই-পত্র ছাড়িয়ে মানুষের মুখে মুখে। এছাড়াও ধুসর জীবনানন্দের মতোই তিনিও বিষণ্ণতার খেলাঘর তিনি একেছেন নান্দ্যনিকরূপে।

“কবে যেন একবার বিদ্ধ হয়ে বালুকাবেলায়

সাগরের সহচর্য পেয়েছিলো অলৌকিক পাখি।”

এমন অসংখ্য লাইন দিয়ে সাজানো “ফিরে এসো চাকা” এক অনন্য কাব্যগ্রন্থ। যাতে ক্রমাগত বিষণ্ণ শব্দের বিষ্ফোরণে আলোড়িত করে গিয়েছেন। সেই আলোড়নে আমরা কেবল তন্দ্রাচ্ছনের মতো মোহিত হয়েছি।
Profile Image for Rehan Farhad.
242 reviews12 followers
September 19, 2024
ধূসর জীবনানন্দ, তোমার প্রথম বিস্ফোরণে 
কতিপয় চিল শুধু বলেছিলো, 'এই জন্মদিন'। 
এবং গণনাতীত পারাবত মেঘের স্বরূপ 
দর্শনে বিফল ব'লে, ভেবেছিলো, অক্ষমের গান। 
সংশয়ে-সন্দেহে দুলে একই রূপ বিভিন্ন আলোকে 
দেখে দেখে জিজ্ঞাসায় জীর্ণ হ'য়ে তুমি অবশেষে 
একদিন সচেতন হরীতকী ফলের মতন 
ঝ'রে গেলে অকস্মাৎ, রক্তাপ্লুত ট্রাম থেমে গেলো।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,862 followers
June 30, 2023
বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ক'টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হল এই বইটি। কিন্তু, রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘূর্ণিকালের মধ্যে জন্ম নিয়েও, কোনোরকম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বা উগ্র রাজনীতির আনুকূল্য না পেয়েও কীভাবে সে অর্জন করল এই প্রতিষ্ঠা?
এ-প্রশ্নের উত্তরটি লুকিয়ে আছে এই বইয়ের কবিতাসমূহেই।
বিনয় নিজে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কবিতার মধ্যে তিনি গণিতের সৌন্দর্য খুঁজতেন বলে দাবি করেছেন মলয় রায়চৌধুরী। হয়তো। কিন্তু এই কবিতাগুলো পড়লে যে অনুভূতিটি চোখের ভিতর দিয়া একেবারে মরমে পশে, তা হল স্পষ্টতা~
"কাগজকলম নিয়ে চুপচাপ বসে থাকা প্রয়োজন আজ;
প্রতিটি ব্যর্থতা, ক্লান্তি কী অস্পষ্ট আত্মচিন্তা সঙ্গে নিয়ে আসে।
সতত বিশ্বাস হয়, প্রায় সব আয়োজনই হয়ে গেছে, তবু
কেবল নির্ভুলভাবে সম্পর্কস্থাপন করা যায় না এখনও।"
তাঁর সমকালীন অন্য কবিরা এই স্পষ্টতাকে ব্যবহার করেছেন সমাজের দেহের প্রতিটি ক্ষতকে চিহ্নিত করায়। বিনয় কিন্তু ফুটিয়ে তুলেছেন এক অন্য, নিজস্ব সারল্য~
"কোনো যোগাযোগ নেই, সেতু নেই, পরিচয় নেই;
তবুও গোপন ঘর নীলবর্ণে রঞ্জিত হয়েছে—
এই ভেবে যদি খুঁজি, তবে বলো, এ-কল্পনা কালো।
আঁধারে সকলই সখা, কালো বলে প্রতিভাত হয়।"
এরই পাশাপাশি আমরা দেখি এক অদ্ভুত বিশ্লেষণী মনোভাব, যা মোহের নির্মোকটিকে সরিয়ে দিতে চায়~
"রক্তে-রক্তে মিশে আছে কৌতূহল, লিপ্ত কৌতূহল;
বীজের ভিতরে আছে গুহার লালসাময় রস।
...
কবেকার নিমজ্জিত জাহাজের প্রেমে ভুলে থাকি,
ভুলে থাকি বর্তমান রসোত্তীর্ণ মালা ও মদিরা।"
অবধারিতভাবেই যাঁর কথা মনে পড়িয়ে দেয় এই লেখারা, তাঁর উদ্দেশেও আক্ষরিক অর্থে কালজয়ী ক'টি লাইন লিখে গেছেন বিনয়~
"ধূসর জীবনানন্দ, তোমার প্রথম বিস্ফোরণে
কতিপয় চিল শুধু বলেছিল, 'এই জন্মদিন।'
এবং গণনাতীত পারাবত মেঘের স্বরূপ
দর্শনে বিফল বলে ভেবেছিল, অক্ষমের গান।"
বলুন তো, নির্জনতম কবি ও তাঁর কবিতার প্রতিক্রিয়া নিয়ে এর চেয়ে ভালোভাবে, এর চেয়ে নিখুঁতভাবে কিছু কি বলা সম্ভব?
আর উদ্ধৃতি দিতে থাকলে বইটাই তুলে দিতে হবে; তাই সে-চেষ্টায় বিরত হলাম।
যদি কবিতা ভালোবাসেন, তাহলে এই বইটিকে কোনোমতেই উপেক্ষা করবেন না।
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
April 27, 2024
এমনকি নিজে-নিজে খুলে যাও ঝিনুকের মতো,
ব্যর্থ হও, তবু বালি, ভিতরে প্রবৃষ্ট বালিটুকু
ক্রমে-ক্রমে মুক্তা হয়ে গতির স্বার্থক কীর্তি হবে।
শয়নভঙ্গির মতো স্বাভাবিক, সহজ জীবন
পেতে হলে ঘ্রাণ নাও, হৃদয়ের অন্তর্গত ঘ্রাণ।
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
May 10, 2025
অথচ পায়রা ছাড়া অন্য কোনো ওড়ার ক্ষমতাবতী পাখি
বর্তমান যুগে আর মানুষের নিকটে আসে না।

বরাবরই ভাল্লাগে বিনয় মজুমদারের কবিতা।
Profile Image for Tasnim Rifat.
15 reviews15 followers
November 1, 2020
কবিতার ক্ষেত্রে এলিয়ট বলছিলেন ট্রাডিশনের কথা। মানে কোন কবির প্রতিভারে তো কেউ আলাদাভাবে বুঝতে পারবে না৷ তারে আগের কবিদের সাথে তুলনা-প্রতিতুলনা কইরাই মাপা লাগবে৷ সেখান থেকে বুঝা যাবে আগের কবিতার কারিশমারে সে কতটুকু ধরতে পারছে, আর তারপরে কি কি এড করতে পারছে নিজে। এখানে আমি বিনয়ের এমনকিছু কাজের হদিস দেওয়ারই চেষ্টা করবো। 


জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতার এক বিরাট ফেনোমেনা।  বিনয় লেখছেন জীবনানন্দের পরে। নিশ্চয়ই তারসময়ে জীবনানন্দের প্রভাবরে সেলিব্রেট করতে হইছে উনারে। তবে অনেকজায়গায়ই সেই কাব্যভাষা থেকে সইরা আসছিলেন উনি, আলাদা কিছু করছিলেন। 

যেমন জীবনান্দের কবিতায় একটা বড় বিষয় হইলো উপমা। জীবনানন্দের কবিতাতে উপমাগুলায় 'মতো' শব্দটা খুব কমন। যেমন ধরেন, 'পাখির নীড়ের মতো চোখ' 'উটের গ্রীবার মতো অন্ধকার',  'রাবারের বলের মতো ছোট বুক' - এইধরনের উপমা জীবনানন্দের কবিতায় বহু আছে, এর অনেকগুলাই আবার সেন্সরি।  উপমা জীবনানন্দের কবিতার অন্যতম শক্তি। 


কিন্তু বিনয় মজুমদার কী করছেন? উনি কবিতা থেকে মতো শব্দটারে প্রায় বিদায় করছিলেন। ফিরে এসো চাকা'তে দেইখেন এই টাইপের উপমা খুবই কম৷ উনি বরং উনার ভাষার  শক্তিটা কাজে লাগাইছেন ইমেজের দিকে আর রেটরিকের দিকে। বিনয় ইমেজ নিয়া দিকদারি করার জন্য বাক্যের স্ট্রাকচার নিয়াই নতুন কিছু কাজ করছিলেন। 

যেমন ধরেন, বাংলা ব্যাকরণে বিশেষ্য হইলো কোনোকিছুর নাম৷ আর বিশেষণ হইলো যে বিশেষ্যরে বিশেষায়িত করে। এবার বিনয়ের একটা বাক্যে আসি আমরা। 


 '...দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে স্বচ্ছ জলে পুনরায় ডুবে গেল' 


এই বাক্যে জল হইলো বিশেষ্য। আর বিশেষন? - এখানেই মজাটা৷ বিশেষন হইলো 'দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে স্বচ্ছ'; অর্থাৎ বিশেষণ নিজেই একটা বড় বাক্যাংশ এবং বিশেষণ নিজেই ইমেজরে ভাংগতেছে। কারণ জল দেখতে সুনীল কিন্তু আসলে স্বচ্ছ। এমনে কইরা জলের আইডেন্টিটিকে ভ্যাগ কইরা দিতেছেন উনি, বা কইতেছেন জল দেখতে একরকম লাগলেও, আসলে তা অন্যরকম৷ (আপনে পড়ার সময় সুনীল ভাইবা আবার খেয়াল করবেন আসলে তো স্বচ্ছ!) এই পুরাটাই উনি করতেছেন বিশেষণ দিয়া! এমনে বাংলা কবিতায় বিশেষণের শক্তি অনেক বাড়ায়ে দিছেন বিনয়৷ আমার ধারণা এর আগে অন্য কোন কবিই এই শক্তিরে সেভাবে কাজে লাগান নাই। 


ইমেজ নিয়া আরো খেলছেন উনি। ওই একই কবিতায় আবারঃ 


'একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে

দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলে

পুনরায় ডুবে গেলো — এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে

বেগনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল |' 


এখানে দেখেন। এই ভাগে দুইটা ইমেজ। একটা হইলো একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উইড়া আবার জলে পুনরায় ডুইবা গেল, আবার এই "দৃশ্য" দেখে  বেদনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল |' এইখানে প্রথম ইমেজরে বিনয় ইমেজ হিসেবে বইলাই দিতেছে রিডাররে, এবং জানাইতেছে এই ইমেজ দেইখা আরেকটা ইমেজ ঘটতেছে। (ফল বেদনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হইতেছে) 


এমনেই দৃশ্যের মধ্যেই দৃশ্য বসায়ে কবিতারে বিস্তৃতি দেন উনি৷ এইখানে আরেকটা ব্যাপার আছে। বিনয়ের কবিতার আরেকটা শক্তি হইলো সাবজেক্টিক আর অবজেক্টিক এক্সপেরিয়েন্সের যুগল ব্যবহার। এটার কথা বিনয় নিজেও বলছিল সম্ভবত, ওর কবিতার সূত্র নিয়া বলতে গিয়া। 


প্রথম ইমেজটা খেয়াল কইরেন। একটা কাছ একবার উইড়া আবার ডুইবা গেল জলে৷ মাছ তো উড়তে পারে, উড়ুক্কু মাছ। কিন্তু এই মাছ উড়ুক্কু না,  এই মাছ উজ্জ্বল। উজ্জ্বল বাদ দিলে এই পুরা বাক্যটারে একটা নর্মাল অবজার্ভেবল উক্তি লাগে৷ কিন্তু আসল কাহিনী পরের লাইনে। বেদনার গাঢ় রসে ফলের রক্তিম হওয়া, এইটা তো  ফিজিক্যাল্লি অবজার্ভেবল না। আমরা বুঝতে পারি, এই বেদনার রসে রক্তিম হওয়া দিয়া আসলে একটা সাবজেক্টিক ফিলিং প্রকাশ পাইতেছে৷ কোন একটা সাবজেক্ট একটা দৃশ্য দেইখা বেদনায় ভুগতেছে৷ তখনোই আমরা বুঝতে পারি, আগের উজ্জ্বল মাছ উড়ার দৃশ্যটাও স্রেফ অবজার্ভেবল কিছু না, এরও একটা সাবজেক্টিক ইন্টারপ্রিটেশন আছে। হয়তো এটাই রূপক আকারে কোন একটা সাবজেক্টের বেদনায় রক্তিম হওয়ার কারণ।  খালি উজ্জ্বল মাছের উড়া দিয়া আমরা সেটা বুঝতাম না, পরের লাইন এটারে সাপোর্ট দিতেছে৷ এমনে একটা মিনিং এর কানেক্টেড সেন্সও খাড়া হইতেছে। 

এই সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ চিন্তা / অনুভূতির খেলা বিনয়ের অনেকজায়গায় আছে। 'ফিরে এসো চাকা'র ৭ নম্বর কবিতায়ঃ 


"বিনিদ্র রাত্রির পরে মাথায় জড়তা আসে, চোখ জ্ব’লে যায়,

হাতবোমা ভ’রে থাকে কী ভীষণ অতিক্রান্ত চাপে।

এ-রকম্ম অবস্থায় হৃদয়ে কিসের আশা নিয়ে

কবিতার বই, খাতা চারিপাশে খুলে ব’সে আছি?

সকল সমুদ্র আর উদ্ভিদজগত আর মরুভূমি দিয়ে

প্রবাহিত হওয়া ভিন্ন বাতাসের অন্য কোন গতিবিধি নেই।

ফলে বহুকাল ধ’রে অভিজ্ঞ হবার পরে পাখিরা জেনেছে

নীড় নির্মাণের জন্য উপযুক্ত উপাদান ঘাস আ�� খড়।"


কবিতার বই আর খাতা খুইলা বইসা থাকার লাইনটা পর্যন্ত সাবজেক্টিক এক্সপেরিয়েন্স, এরপরেই ন্যাচারাল ল' এর কাহিনী। সকল সমুদ্র থেকে পাখিদের  নীড় নির্মানের প্রক্রিয়া শেখার বিষয়, যেটা একটা অবজেক্টিক এক্সপেরিয়েন্স। এরকম অবজার্ভেবল সত্য বা ন্যাচারাল ল' গুলারে কবিতায় ভাষায় নিয়া আইসা উপমাও বানাইছেন বিনয়।  যেমনঃ 


'কোনো যুগে কোনো আতাতায়ী

শত্রু ছিলো ব’লে আজো ��াঁটায় পরিবেষ্টিত হ’য়ে

গোলাপ যেমন থাকে, তেমনি রয়েছো তুমি;'


এইখানে আততাতী শত্রুরে খেদানোর জন্য অভিযোজনের মাধ্যমে গোলাপের ডালে  যে কাঁটা তৈরি হইছে, সেটারে ইউজ কইরা 'তেমনি রয়েছো তুমি' মানে উপমায় নিয়া আসা হইছে। এইসব জেনারেল ল অফ নেচারের জিনিসপাতিগুলা বিনয়ের কবিতারে একটা অবজেক্টিক জায়গায় নিয়া যায় কখনো। এমন বোধ আসে যে, বিনয়ের ফ্লেভার থেকে বাইর হইয়াও বিনয়রে সেলিব্রেট করা সম্ভব। 


বিনয়ের কবিতায় কমা,দাড়ি,সেমিকোলন বেশ ইম্পর্টেন্ট। এর অন্যতম একটা কারণ কমা দিয়া লাইন ব্রেক কইরা রেটরিক মজবুত করেন উনি। 


যেমনঃ 

'এমন সময়ে তুমি, হে সমুদ্রবৎস,তুমি...তুমি…'

বা 

'কী ছড়ায়, কে ছড়ায়; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো-'

বা 

'হে ধিক্কার, আত্মঘৃণা, দ্যাখো, কী মলিনবর্ণ ফল।'


ধরেন লাস্টের লাইনটারে কইতেন 'হে ধিক্কার ও আত্মঘৃণা দেখো কী মলিনবর্ণ ফল। ' দুইটা বাক্য কাছাকাছি হইলেও পাঠকের মনে রিফ্লেকশন তৈরিতে বিনয়ের বাক্যটা খুবই কার্যকরী। বা দ্বিতীয় বাক্যতে কমা দিয়া কে ছড়ায়, কী ছড়ায় দিয়া দুইটা প্রশ্ন কইরা আবার বলছে শোনো, এরপরে কী অস্ফুট স্বর (যেটা একটা ভাবের বিস্তৃতি, সেন্সরি বিশেষণ -'অস্ফুট'), আবার শোনো (রিপিটেশন)। দেখেন, একটা বাক্যেই রেটরিকের কতটুক সীমানা কাজে লাগাইছেন উনি৷ 



কবিতার মধ্যা দিয়া পাঠকরে কোথায় কি ফিল করাবেন- সেটারে অনেকটাই ভাষার অধীনেই নিয়া আসতে পারছিলেন বিনয় মজুমদার। এটা ভালো কবিতার খুব অনিবার্য গুণ, ভালো সাহিত্যেরও। 
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews121 followers
August 13, 2020
"বেশ, তবে চ’লে যাও, তবে যদি কোনোদিন কোনো
লৌকিক সাহায্যে লাগি, ডেকে নিও; যাকে ভালোবাসে
সেই পুষ্পকুঞ্জটিকে যত্নভ’রে তৃপ্ত সুখে রাখা
মানুষের প্রিয় কীর্তি ; কিসের ব্যাঘাতে মুঠো ক’রে
চন্দ্রালোক ধ’রে নিতে বারংবার ব্যর্থ হতে হয় ;
সেই কোন ভোরবেলা ইটের মতোন চূর্ণ হ’য়ে
প’ড়ে আছি নানা স্থানে ; কদাচিৎ যথেষ্ট ক্ষমতা,
তুমি এসে ছিন্ন-ছিন্ন চিঠির মতোন তুলে নিয়ে
কৌতূহলে এক ক’রে একবার প’ড়ে চ’লে যাও,
যেন কোনো নিরুদ্দেশে, ইটের মতোন ফেলে রেখে।"
Profile Image for Zihad Saem.
123 reviews7 followers
September 28, 2025
"আমি মুগ্ধ; উড়ে গেছ; ফিরে এসো, ফিরে
এসো , চাকা,
রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন
সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথীবীর সব আকাশে।"

'ফিরে এসো চাকা' এর কবিতা গুলোতে আমি বরাবর মুগ্ধ। বিনয় মজুমদারের কবিতার আসল স্বাদ 'ফিরে এসো চাকা'য় আশ্চর্য ভাবে ধরা দিয়েছে। জীবনে এতো কবির কবিতা পড়েছি, কিন্তু বিনয় মজুমদারের ফিরে এসো চাকা পড়ার অভিজ্ঞতা বিরলতম। এই বইয়ের কবিতা গুলো যতবার পড়ি ততবার ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। ভিন্ন ভাবে আবিষ্কার করি।
33 reviews3 followers
January 16, 2022
"বেশ কিছুদিন হলো চ'লে গেছো, প্লাবনের মত একবার এসো ফের।
তোমাকে বেসেছি ভালো, তুমি পুনরায় চ'লে গেছো"
Profile Image for Shuvo.
84 reviews3 followers
February 27, 2023
"ভয় হয়, একদিন পালকের মতো ঝ'রে যাব।"

কবিতাগুলো বারবার বারবার বারবার পড়ার মতো!
শব্দচয়নও এতো সুন্দর হয়!

অ সা ধা র ণ!!
Profile Image for Jahangir.
Author 2 books34 followers
September 9, 2018
মোটে ৫৬ পৃষ্ঠার একটা বই। তাতে কবিতার সংখ্যা ৭৭ না যেন ৭৯টা (আমার গোনাগুনতিতে ভুল হতে পারে তবে সংখ্যাটা ৮০'র চেয়ে কম)। এই বইটা পড়েছি দুই মাসের বেশি সময় ধরে। দিনে ২টার বেশি কবিতা নয়। আসলে দিনে একটা করে কবিতা পড়ে প্রায় আড়াই মাসে বইটা শেষ করা উচিত ছিল। তাতে আরও ভালো হতো। তাতে একটা কবিতা নিয়ে একটা গোটা দিন ভাবা যেতো।

কাব্য সমালোচনা বলে একটা বিষয় বহু কাল ধরে চলে আসছে। ঐ বস্তুটা হয়তো সাহিত্যের শিক্ষার্থী বা গবেষকদের কাজে লাগতে পারে। কিন্তু আমার মতো যারা পাঠকমাত্র, তাদের কাছে কাব্য সমালোচনা অদরকারী জিনিস। কবিতা হচ্ছে পড়বার জিনিস - রস চেখে চেখে, সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে অনুভব করে, তার মর্মে ডুব দিয়ে এক একটা রত্ম উদ্ধার করে করে। তাকে সমালোচনা বা রিভিউ'র নামে ছুরি দিয়ে কেটে কুটে ফর্দাফাই করার কী দরকার!

যারা এই বইয়ের রিভিউ পড়তে এখানে এসেছেন তারা এইসব নিরর্থক জিনিস না পড়ে কাব্যগ্রন্থটা পড়া শুরু করে দিন। এমন একটা কাব্যগ্রন্থ রচনা করতে পারলে জীবনে আর একটা লাইন না লিখলেও চলে।
Profile Image for Tuhin Chakma.
10 reviews
September 19, 2025
নিজেকে ঠিক তুখোড় কবিতা পাঠক বলে দাবি করি না। তবে কবিতা পড়ে কিছুই বুঝতে পারিনা এমন হয়েছে খুব কম। জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রহমান, শামসুল হক, রুদ্র, নির্মলেন্দু গুণ, সুনীল, আল মাহমুদ, মহাদেব সাহা কিংবা সমসাময়িক তরুণ কবি ঠোকন ঠাকুর, মারজুক রাসেল ইত্যাদি ইত্যাদি কবির প্রচুর কবিতা পড়েছি এবং উপভোগ করেছি। নবীন পাঠকদের (বর্তমান) সাহিত্যচর্চা শুরু হয় মূলত হুমায়ন আহমেদ দিয়ে কিন্তু আমি সাহিত্য পাঠের প্রথমদিকেই শরৎচন্দ্র, হুমায়ুন আজাদ পড়ে ফেলেছিলাম; তাই হয়তো তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি।

কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতাটা খুবই ব্যতিক্রম। এবার ফিরে এসো চাকা পড়ে শেষ করলাম ‍কিন্তু কবিতাগুলো এতটাই দুর্বোধ্য যে দু-একটা কবিতা ও পক্তি ছাড়া তেমন কিছুই বুঝিনি! এজন্যই বোধহয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির গ্রন্থ হিসেবে ধরা হয় এই বইটিকে।

যাই হোক এত কঠিন বই পড়ে ফেল্লাম, কিছু কবিতার পক্তি উল্লেখ না করে থাকতে পারছি না!

❝কাগজকলম নিয়ে চুপচাপ ব’সে থাকা প্রয়োজন আজ;
প্রতিটি ব্যর্থতা, ক্লান্তি কী অস্পষ্ট আত্মচিন্তা সঙ্গে নিয়ে আসে।❞

❝ভয় হয়, একদিন পালকের মতো ঝ’রে যাবো ।❞

❝নেই কোনো দৃশ্য নেই, আকাশের সুদূরতা ছাড়া ।
সুমহান আকর্ষণে যেভাবে বৃষ্টির জল জ’মে
বিন্দু হয়, সেইভাবে আমিও একাগ্র হ’য়ে আছি।
তবু কোনো দৃশ্য নেই আকাশের সুদূরতা ছাড়া।❞

❝গণন কুসুমের দেশে
নীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের অভাবের মতো
তোমার অভাব বুঝি ; কে জানে হয়তো অবশেষে
বিগলিত হ’তে পারো ; আশ্চর্য দর্শন বহু আছে-❞

❝আমরা যে জ্যোৎস্নাকে এত ভালোবাসি-এই গাঢ়ই রূপকথা
চাঁদ নিজে জানে না তো ; না জানুক শুভ্র ক্লেশ, তবু অসময়ে
তোমার নিকটে আসি, সমাদর নেই তবু আসি।❞

❝আমি যেই কেঁদে উঠি অনির্বাণ আঘাতে আহত
তখনি সকলে ভাবে, শিশুদের মতোই আমার
ক্ষুধার উদ্রেক হ’লো, বেদনার কথা বোঝে না তো।❞

❝কোনো যোগাযোগ নেই, সেতু নেই, পরিচয় নেই ;
তবুও গোপন ঘর নীলব��্ণে রঞ্জিত হয়েছে
এই ভেবে যদি খুঁজি, তবে বলো, এ-কল্পনা কালো।
আঁধারে সকলই, সখা, কালো ব’লে প্রতিভাত হয়।❞

❝ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম ?❞

❝প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চলে যাবে ; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রনায় স্তব্ধ হব আমি।❞

❝আমি মুগ্ধ ; উড়ে গেছো ; ফিরে এসো, ফিরে এসো, চাকা,
রথ হ’য়ে, জয় হ’য়ে, চিরন্তন কাব্য হ’য়ে এসো।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন
সুর হ’য়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে।❞

❝তোমার দেহের কথা ভাবি –
নির্বিকার কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে অন্ধকার, সুখ
এমন আশ্চর্যভাবে মিশে আছে ; পৃথিবীতে বহু
গান গাওয়া শেষ হল, সুর শুনে, ব্যথা পেয়ে আজ
রন্ধনকালীন শব্দ ভালোবেসে, কানে কানে মৃদু
অর্ধস্ফুট কথা চেয়ে, এসেছি তোমার দ্বারে, চাকা।❞


❝বেশ কিছুকাল হলো চ’লে গেছো, প্লাবনের মতো
একবার এসো ফের; চতুর্দিকে সরস পাতার
মাঝে থাকা শিরীষের বিশুষ্ক ফলের মতো আমি
জীবন যাপন করি; কদাচিৎ কখনো পুরানো
দেওয়ালে তাকালে বহু বিশৃঙ্খল রেখা থেকে কোনো
মানসির আকৃতির মতো তুমি দেখা দিয়েছিলে।
পালিত পায়রাদের হাঁটা, ওড়া, কুজনের মতো
তোমাকে বেসেছি ভালো; তুমি পুনরায় চ’লে গেছো।❞
Profile Image for Saiqat .
60 reviews1 follower
March 19, 2023
ঘোর লাগা শান্তি!
Profile Image for Nuhash.
221 reviews8 followers
March 3, 2022
"ফিরে এসো চাকা" এসো অমৃত প্লাবনে এক কালজয়ী অমোঘ শ্লোক হয়ে। বিনয় মজুমদারের বই "ফিরে এসো চাকা" যেন ভালবাসা আর সংঘাতের আদিম ধ্রুবতারা। ভালবাসা যে মানুষকে ভেঙে চূঁড়ে গড়ে তার বই উৎকৃষ্ট প্রমাণ। যতক্ষণ পড়েছি যেন একটি ঘোরের মাঝে ছিলাম। এক যান্ত্রিক ভালবাসার যান তার রস ফোঁটায় ফোঁটায় ফেলে দিচ্ছে মনে। আর মনে এতে উদ্দীপিত হয়ে তাহার সন্ধানে ঘুরছে যাকে সে ভুলে গিয়েছিল অভাবনার আদিকালে।

আশ্চর্য সুন্দর তার লেখনি! পুরো বইটি বিরক্ত হওয়ার মত উপাদান নেয়! শুধু খুঁজে পাওয়ার যাবে ভালবাসার সুখ আর বিষাদের নীল সুঁতো!

প্রিয় দুটি লাইন যা মনের মাঝে গুন গুন করে বাজে! বারবার পড়তে মন চায়, আদিকালে ভুলে যাওয়ার প্রেমের স্লোগান রুপে!

বেশ কিছুকাল হল চলে গেছো, প্লাবনের মত
একবার এসো ফের; চতুর্দিকে সরস পাতার
মাঝে থাকা শিরীষে বিশুষ্ক ফলের মতো আমি
জীবনযাপন করি; কদাচিৎ কখনো পুরনো
দেয়ালে তাকালে বহু বিশৃঙ্খল রেখা থেকে কোনো
মানুষীর আকৃতির মত তুমি দেখা দিয়েছিলে।
পালিত পায়রাদের হাঁটা, ওড়া, কূজনের মতো
তোমাকে বেসেছি ভালো; তুমি পুনরায় চলে গেছো।

"অবয়বে অমেয় আকাঙ্খা তুলে নিয়ে ঘুরেছি অনেক কাল পর্বতের আশ্রয়ের সন্ধানে; পাইন অরণ্যে, শ্বেত তুষারে তুষারে লীলায়িত হতে চেয়ে দেখি কারো হৃদয়ে জীবন নেই।"



যাক, তবে জ্বলে যাক, জলস্তম্ভ ছেঁড়া যা হৃদয়
সব শান্তি দূরে থাক, সব তৃপ্তি, সব ভুলে যাই
শুধু তার যন্ত্রনায় ভরে থাক হৃদয় শরীর

একজন গণিতপ্রেমীর লেখা কবিতা। কবিতায় খুঁজে পাই বিচিত্র রহস্যময় দিশাহীনতার ইঙ্গিত :

কিছুই জানো না তুমি; তরু দীর্ঘ আলোড়ন আছে
অনাদি বেদনা আছে, অক্ষত চর্মের অন্তরালে
আহত মাংসের মতো গোপন বা গোপনীয় হয়ে

অবদমিত অচৈতন্য ইচ্ছেরা :

তোমাদের কাছে আছে সংগোপন, আশ্চর্য ব-দ্বীপ
কৃষ্ণবর্ণ অরণ্যের অন্তরালে ঘ্রাণময় হ্রদে
আমার হৃদয় স্বপ্নে মুগ্ধ হয়, একা স্নান করে

অনুভব :

যখন কিছু না থাকে, কিছুই নিমেষলভ্য নয়
তখনো কেবলমাত্র বিরহ সহজে পেতে পারি
Profile Image for Israt Jahan.
9 reviews5 followers
Read
January 8, 2021
বিনয় মজুমদার বা মংটু- মিয়ানমারের টেডো শহরে যার জন্ম।তিনি হয়ে উঠলেন পরবর্তীতে বাংলার লেখক, প্রেমিক।
তাঁর লেখার স্বকীয়তা এবং বিজ্ঞানে, বিশেষত গণিতে প্রগাঢ় আগ্রহ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রথা ভেঙ্গে এগোচ্ছিলেন তিনি। ফলে সমকালীন কাব্যজগত হতে পৃথক জায়গায় ছিলেন।যদিও তাকে অনেকেই পরবর্তী জীবনানন্দের সাথে তুলনা করেন।বিরহ-প্রেম, আক্ষেপের জায়গা, চিন্তা করার সাবজেক্টিভ কগনিটিভ বিপর্যয়ের সময়ে নতুনত্ব নিয়ে লেখার প্রক্রিয়া যেকোনো ভালো পাঠককে পরিমিত তৃপ্তি দিবে।তিনি কি ক্লান্ত হতেন কখনো কবিতা লিখে!কখনো চেয়েছিলেন কেউ সমাপ্তি টানুক তার উদ্বেলিত আকুতির। ফিরো এসো চাকায় বললেন,

"কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি? সার্থক চক্রের আশায় শেষের পক্তি ভেবে ভেবে নিদ্রা চলে গেছে।"


বিনয় মজুমদার তার একক জগতে কবিতা নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন হয়তো। তার প্রকাশিতব্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে উৎসর্গ করে লেখা " ফিরে এসো চাকা " তাকে পাঠক জনপ্রিয়তার সর্বোচ্ছ আসীনে নিয়ে গেছে।

"উৎপাটিত, রুগ্ন বৃক্ষ আর কোন গান গায় না যে। শিকড়ের থেকে তবু নতুন অঙ্কুর অভ্যুদিত-
চেয়ে দ্যাখে, মুখগুলি নিরুৎসাহ, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কাল থেকে রয়েছে এমনিভাবে, যেন কাঠখােদাইয়ের শিল্প; রক্তাপত শতাব্দীগুলির উচ্ছাস বিষাদরাশি নীরস আবহে পরিণত।"

গুরুগম্ভীর গাম্ভীর্যে লেখা পঙক্তিগুলো তার নিজস্ব দর্শনে সাজিয়ে নিতেন,লৈখিক শ্রেণীসংগ্রামের সংঘাত সুস্পষ্ট তার কবিতায়।
ব্যর্থ প্রেমকে এমন ভাবে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অব্যর্থ অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে তুলে ধরলেন " ফিরে এসো চাকায় "।
মাত্র ৫১ পাতার ছোট্ট বইটিতে কোনো বিশেষ নাম না দেওয়া কবিতাগুলোকে কি চমৎকারভাবে পর্যায়ক্রমে কবিতার বিন্যাস করলেন,যে কেউ শুধু দিন- তারিখ উল্লেখ করা লেখাগুলি পড়ে প্রতি উপমা,স্থান - কাল,মানবজীবনের ঘনিষ্ঠ হতাশাগ্রস্ত মুহূর্ত, প্রিয় মানুষের প্রত্যাখান বুঝে নিতে পারবে।
Profile Image for Dipak Karmoker.
68 reviews2 followers
December 29, 2024
ভালোলাগা লাইনগুলো-

>একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে
দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে স্বচ্ছ জলে
পুনরায় ডুবে গেলো– এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে
বেদনার গাঢ় রসে অপক্ক রক্তিম হ’লো ফল

>মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়!

>শিশুকালে শুনেছি যে কতিপয় পতঙ্গশিকারী ফুল আছে।
অথচ তাদের আমি এত অনুসন্ধানেও এখনো দেখিনি।তাঁবুর ভিতরে শুয়ে অন্ধকার আকাশের বিস্তার দেখেছি,
জেনেছি নিকটবর্তী এবং উজ্জ্বলতম তারাগুলি প্রকৃত প্রস্তাবে
সব গ্রহ, তারা নয়, তাপহীন আলোহীন গ্রহ।

>অথচ পায়রা ছাড়া অন্য কোনো ওড়ার ক্ষমতাবতী পাখি
বর্তমান যুগে আর মানুষের নিকটে আসে না।

>আকাশআশ্রয়ী জল বিস্তৃত মুক্তির স্বাদ পায়, পেয়েছিলো।
এখন তা মৃত্তিকায়, ঘাসের জীবনে, আহা, কেমন নীরব।

>ঘন অরণ্যের মধ্যে সুর্যের আলোর তীব্র অনটন বুঝে
তরুণ সেগুন গাছ ঋজু আর শাখাহীন, অতি দীর্ঘ হয়;
এত দীর্ঘ যাতে তার উচ্চ শীর্ষে উপবিষ্ট নিরাপদ কোনো
বিকল পাখির চিন্তা, অনু��্চ গান���র সুর মাটিতে আসে না।

>সময়ের সঙ্গে এক বাজি ধ’রে পরাস্ত হয়েছি।

>অভিজ্ঞতা থেকে ক্রমে আকাশের বর্ণহীনতার
সংবাদের মতো আমি জেনেছি তোমাকে 

>তবু দীর্ঘ আলোড়ন আছে,
অনাদি বেদনা আছে, অক্ষত চর্মের অন্তরালে
আহত মাংসের মতো গোপন বা গোপনীয় হ’য়ে।

>তবু অসময়ে
তোমার নিকটে আসি, সমাদর নেই তবু আসি।

>জলের মতন
পাত্রের আকার পাওয়া এ-বয়সে সম্ভব হবে কি?

>আমি যেই কেঁদে উঠি অনির্বাণ আঘাতে আহত
তখনি সকলে ভাবে, শিশুদের মতোই আমার
ক্ষুধার উদ্রেক হ’লো, বেদনার কথা বোঝে না তো।

>জলে ডুব দেবার আগেই
ডুবুরির মতো কিছু সুগভীর শ্বাস টেনে নিই।

>এত নিরুপায় আমি ; বিষন্ন বাতাস দিয়ে ঢাকি
অন্যের অপ্রেম, ক্ষুধা, দস্যুবৃত্তি, পরিচিত কাঁটা।

>কোকিল গান গায়
নিজের নিষ্কৃতি পেয়ে, পৃথিবীর কথা সে ভাবে না।

>ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম ?
Profile Image for Mohammad Mamun.
1 review1 follower
August 7, 2020
'সকল ফুলের কাছে এতো মোহময় মনে যাবার পরেও
মানুষেরা কিন্তু মাংসরন্ধনকালীন ঘ্রান সবচেয়ে ভালবাসে।'
বিনয় মজুমদারের 'ফিরে এসো, চাকা' এর ১৪ অক্টোবর, ১৯৬০ এর অংশ। এই চমকে দেয়া লাইনগুলোর কিছু পরেই আবার অবিষ্মরনীয় শব্দমালাঃ
'এই যে অমেয় জল-মেঘে মেঘে তনুভূত জল-
এর কতোটুকু আর ফসলের দেহে আসে বলো?
ফসলের ঋতুতেও অধিকাংশ শুষে নেয় মাটি।'
কবিতাটির মর্মাথ তার আগেই অবশ্য ফুটে উঠে এই লাইনেঃ
'হে আলেখ্য, অপচয় চিরকাল পৃথিবীতে আছে'।
এইজন্যই হয়ত 'আলেখ্যশ্রেণী' দূর হতেই শুধু 'মনোলোভা হয়ে ফুটে উঠে' এবং আশ্চর্যজনকভাবে 'উপবিষ্ট' মশার উড়ে যাওয়াও যেন 'ঈষৎ সংগীতময়'! আর এসবের পেছেন থাকে কবির ক্লান্তি, ব্যর্থতা আর নির্ভুলভাবে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে না পারার ক্লেশ!
Profile Image for Ayan Ahmed.
5 reviews
August 13, 2025
ফিরে এসো, চাকা!

বিনয় মজুমদারের কবিতার ভাষা যেন বিজ্ঞানের সূত্রে লেখা প্রেমপত্র।
তিনি বলেন
"আমি নিউটনের গতি সূত্র জানি এবং সেই অনুযায়ী তোমাকে ভালোবাসি।"

এই বইয়ের প্রতিটি কবিতা যেন এক টুকরো একাকিত্ব,
যেখানে প্রেমিকা আসে, গায়েব হয়, আবার কখনো আসে না
তবুও কবি অপেক্ষা করে চাকার ঘূর্ণনের মতো।

এই বই পড়ে মনে হয়,
প্রেম হয়তো এক জ্যামিতিক বৃত্ত যার কোন কেন্দ্র নেই, শুধু পরিধি ঘুরছে।

বিনয়ের কবিতা বুঝতে গেলে সাহস লাগে।
অর্থ নয়, অনুভব দিয়ে পড়তে হয়।

এই বই সেইসব প্রেমিকদের জন্য,
যারা ভালোবাসে নিঃশব্দে, অপেক্ষা করে অগোছালোভাবে,
আর কবিতায় আত্মজীবন খোঁজে।

"ফিরে এসো, চাকা" পড়ো।
কারণ কোনো কোনো কবিতা ‘বুঝে’ নয়,
শুধু ‘ভেবে’ ভালোবাসতে হয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for রিয়া (ঋ_আ) মন্ডল.
23 reviews1 follower
December 19, 2022
কবিতার ছলে নিজের সঙ্গে কথা বলা যায় আবার পাঠকের উদ্দেশ্যে এক আশ্চর্য বার্তাও পৌঁছে দেওয়া যায়। এর সবটুকুই কবির নির্বাচিত। কবি বিনয় মজুমদার বাস্তব থেকে পরাবাস্তবে আবার পরাবাস্তব থেকে বাস্তবে নিয়মিত যাতায়াতটুকু স্পষ্টরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন। শব্দের ব্যবহারযোগ্যতা ছন্দোময় গতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্রকাশিত যা নিজের ইচ্ছেমত ভেঙে গড়ে নেওয়া যায়। কবিতার সহজবোধ্যতা এখানেই। এই লৌকিক-অলৌকিকের মিশ্রণে তৈরী কাব্যকথন সত্যই অন্যতম।
Displaying 1 - 30 of 37 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.