‘গল্পে-জল্পে জেনেটিক্স’ বইটির সম্পর্কে লেখার আগে বইয়ের পটভূমিটাও একটু জানানো দরকার। বইটি লিখবার ক্ষেত্রে বিদেশী ভাষার লেখা ‘এ কার্টুন গাইড টু জেনেটিক্স’ বইটি থেকে সমুদয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। কাটুন গাইড টু জেনেটিভ এর মূল বইটি আমার হাতে আসে যখন, তখন আমি মেডিকেলের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। সুব্রত ভাই প্রথম বইটির কথা আমাকে বলেছিলেন। আর চমকের (ইনিই হলেন আমাদের লেখক সাহেব) কাছ থেকে বইটির সফট কপি পাই। সুব্রত ভাই আর চমক দুজনই ইঞ্জিনিয়ার মানুষ আর আমি হলাম গোবেচারা ডাক্তার। গণিত অলিম্পিয়াড নামক অসামান্য চমৎকার ব্যাপারটি বাংলাদেশে না ঘটলে আমরা হয়তো কেউ কাউকে কখনোই চিনতাম না। সে যাই হোক, বইটি হাতে পেয়ে এবং সেই সাথে তাঁদের কাছে বইটির উচ্চকিত প্রশংসা শুনে, পড়ার আগে আমি ধারণা করেছিলাম, না, বইটি বোধহয় একেবারে মন্দ নয়। আমাদের দেশের শিক্ষা্ব্যবস্থার কারণেই হোক কিংবা যে কারণেই হোক, অনেক ডাক্তারই ভাবেন যে ডাক্তারবিদ্যা এবং তৎসংশিষ্ট জ্ঞান (তার মধ্যে জেনেটিক্সও পড়ে) হজম করা ইঞ্জিনিয়ারদের কম্মো নয়। অনেক ইঞ্জিনিয়ারও ডাক্তারদের সম্পর্কে অনুরূপ ধারণা পোষণ করেন। তো, আমিও প্রথমটায় ভেবেছিলাম, সত্যটা বলেই ফেলি, এই বইটিতে জেনেটিভের নিছক প্রাথমিক কিছু ধারণা অত্যন্ত সরল ভাষায় বাচ্চাদের (এবং ইঞ্জিনিয়ারদের) বোঝার মতো করে তুলে দরা হয়েছে। বইটি পড়ে আমি নতুন কিছু শিখব তা আশা করে বইটি পড়া শুরু করিনি, বরং, যারা জেনেটিভের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যারয়ে পড়েনি, তাদেরকে কী ভাষায় বললে সহজে জেনেটিভ বোঝানো যাবে সেটা জানতেই বইটা পড়া শুরু করি। কেননা, ডাক্তার হিসেবে প্রায়ই অসুখ-বিসুখ নিয়ে রোগী বা রোগীর স্বজনকে বুঝিয়ে বলা লাগে এবং তখন জেনেটিক্স সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু বইটা পড়া যতোই এগোতে থাকে ততোই আমি বিস্মিত হতে থাকি। একী! এতো দেখছি মেডিকেল প্রথম বর্ষের বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়টির অন্তর্ভুক্ত জেনেটিক্স কার্ডটির (মেডিকেল কলেজে কোনো বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত কোর্সকে ‘কার্ড’ বলে) পুরোটাই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে আরো অনেক কিছু পেলাম যা ঐ কার্ডে ছিলনা কিন্তু থাকলে ভালো হতো। ইতিহাস থেকে শুরু করে বায়োটেকনোলজি আর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আবার, জৈববিবর্তনের আলোকে জেনেটিক্সের বিশ্লেষণ, মলিকুলার বায়োলোজি কী নেই! কিন্তু তাই বলে বইটি কিন্তু একগাদা তথ্যের স্তুপ নয়। যেকোনো মজার কমিঙের মতো এক নিঃশ্বাসে আগাগোড়া পড়ে ফেলা যায়। পড়ার সময় আমার মনে হচ্ছিল, ইশ, প্রথম বর্ষে থাকতে যদি বইটি পেতাম তাহলে জেনেটিক্স কার্ডটাকে ঐরকম বিভীষিকা মনে হতো না। জটিল সব বিষয়ের কী আশ্চর্য সরল উপস্থাপনা, অথচ সরল করতে গিয়ে ‘অতি-সরল’ ছেলেভুলানো গল্প হয়ে যায়নি। বইটি বোঝার জন্য স্কুল পর্যায়ের রসায়ন জ্ঞানই যথেষ্ট, অথচ বইটির বিষয়বস্তু স্নাতক পর্যায়ের।
এতো অসাধারণ সক দিকের সমন্বয় ঘটেছে যে বইতে, তার উপর বইটি হাতে লেখা ও আঁকা। এমন বইয়ের বৈজ্ঞানিক তথ্য, রসবোধ, শিল্পগুণ, নান্দনিকতা সবকিছু অবিকৃত রেখে পুরোপুরি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপযোগী করে লেখা চাট্টিখানি কথা নয়। চমক যখন প্রথম কুড়ি পৃষ্ঠা লিখে আমাকে দেখতে দিলো তখন তো আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। চমক একজন ইঞ্জিনিয়ার; ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্কে আমার আগে যে ধারণাই থাকুক তা সম্পূর্ণ পাল্পে গেলো। আমার মনে হলো, চমকের রূপান্তরটি হয়তোবা মূল বইকেও অতিক্রম করে গেছে। তারপর অন্তর্জালে তার সাথে যখনই ভাব বিনিময় হতো তখনই বইটির কাজ কদ্দুর হলো তা বারবার জানতে চেয়ে তাকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছি। সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। প্রবাসে থেকে পড়াশোনার চাপ ও এতো ব্যস্ততার মাঝেও এতো চমৎকার একটা কাজ হতো অল্প সময়ে সম্পন্ন করা বোধহয় চমকের ক্ষেত্রেই সম্ভব। বাংলাদেশের বইয়ের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এরকম ভিন্নধারার একটি বই প্রকাশ করার সময়োপযোগী সামাজিক দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করায় প্রকাশক অন্যরকম প্রকাশনীর যত বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য তা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। শুধু ধন্যবাদ এজন্য যথেষ্টও নয়।
বইটি পড়ে জেনেটিক্স সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা তো পাওয়া যাবেই, তার চেয়ে বড় কথা হলো, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দেবে এ বইটি। খুব কম বইয়েরই এমন ক্ষমতা থাকে। তাও যদি সেটা জেনেটিক্সের মতো কাটখোট্টা বিষয় হয় তবে তো কথাই নেই। যাঁরা এই বইয়ের আগে জেনেটিভের আর কোনো বই পড়েননি তাঁরা নিশ্চয়ই আমাকে গাল পাড়বেন জেনেটিক্সকে ‘কাঠখোট্টা’ বলার জন্য। তা আমি হাসিমুখে মেনে নেবো।
জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৮ জুলাই কুষ্টিয়াতে। এইচ এস সি পর্যন্ত লেখাপড়া ওখানেই। এরপর বুয়েট থেকে তড়িৎ কৌশলে (EEE) স্নাতক শেষ করে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনাতে পিএইচডি'র জন্যে পড়ালেখা করছেন। তিনি নানামুখী সামাজিক ও শিক্ষা বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।
১. চমক হাসান গণিতের শিক্ষক হিশেবে তাঁর ছাত্রদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। বুয়েট পাশ এই তড়িৎ-প্রকৌশলী যদি বিজ্ঞানের কোনো বই লিখতেন স্বাভাবিকভাবেই সেটি গণিত, পদার্থবিজ্ঞান কিংবা তাঁর লেখাপড়ার বিষয় নিয়েই হতে পারত। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, তাঁর প্রথম প্রকাশিত বইটি জীববিজ্ঞানের! আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে, বইটি একটি বিদেশী বইয়ের বাংলা রূপান্তর। এটুকু তথ্যই বইটির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ‘গল্পে-জল্পে জেনেটিক্স’ চমক হাসানের অনুবাদকৃত ও রূপান্তরিত একটি জীববিজ্ঞানের বই, যেখানে মূলত জেনেটিক্সের মূল বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। বইয়ের আগ্রহোদ্দীপক মুখবন্ধ লিখেছেন ডাক্তার সৌমিত্র চক্রবর্তী।
‘গল্পে-জল্পে জেনেটিক্স’ বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ল্যারি গনিকের “The Cartoon Guide to Genetics” বইয়ের বাংলা রূপান্তর, যা প্রথম বের হয়েছিল ১৯৮৩ সালে; পরিবর্ধিত সংস্করণ বের ১৯৯১ সালে। ল্যারি গনিক বেশ বিখ্যাত কার্টুনিস্ট। তিনি এই বইটি লিখেছেন মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক মার্ক হুইলিসের সঙ্গে। ল্যারি গনিক ‘The Cartoon History of the Universe’ এর জন্যই বেশি বিখ্যাত। তাঁর Cartoon Guide সিরিজের আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় বই বেরিয়েছে। যেমন- The Cartoon Guide to Physics, The Cartoon Guide to Chemistry, The Cartoon Guide to Statistics।
২. আপনি ভাবতে পারেন, “গল্পে-জল্পে জেনেটিক্স” একটি কমিক্সের বই; খুব বেশি কিছু জানা যাবে না, অল্প একটু তথ্যের সাথে অনেকগুলো মজাদার কার্টুন পাওয়া যাবে। এমনটা ভাবলে বই কিনে আপনি অবাক হবেন। কেননা এটি কমিক্সের মতো করে লেখা হলেও, খুবই সিরিয়াস একটি বই। জেনেটিক্সের সত্যিকারের বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের জেনেটিক্স-১০১ কোর্সের সমপর্যায়ের বিষয়বস্তু এতে আছে। তাই হেলাফেলা করার মতো বই এটি নয়।
বইয়ে জেনেটিক্সের মূল বিষয়গুলোতে প্রবেশের আগে জীববিজ্ঞানের ইতিহাস এবং বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও থিওরি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তকে শুধুমাত্র রসহীন বিজ্ঞানটুকুই ভরে দেয়া হয়, এর পেছনের ইতিহাস ও বিজ্ঞানীদের নির্ঘুম প্রচেষ্টার কথা একেবারেই নিয়ে আসা হয় না। এই ইতিহাসগুলো পড়ে পাঠক জীববিজ্ঞানের গবেষণার নানা পর্যায় এবং তা থেকে উত্তরণে বিজ্ঞানীদের ভূমিকা ভালোভাবে জানতে পারবেন। তাছাড়া ‘গল্পে জল্পে জেনেটিক্স’ বইয়ের সবচেয়ে বড়ো যে বৈশিষ্ট্য তা হলো- এতে যে প্রসঙ্গ ও তথ্যটি পরবর্তী বিষয়টি বুঝতে কাজে লাগবে না তা শুধু শুধুই তুলে দেয়া হয় নি, বরং কোনটার পর কোনটা জানলে পাঠকের পুরো বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধে হবে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে। আমাদের স্কুলে-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে কোষের ভেতরের অঙ্গাণুগুলোর বর্ণনা, ডিএনএ'র গঠন ইত্যাদি একেবারে শুরুতেই শেখানো হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জানানো হয় না কেন সে এই বিষয়টি শিখছে। এই বইয়ে মেন্ডেলের জিনতত্ত্বে আলোকপাত করা হয়েছে, কারণ এগুলো জানতে কোষ কিংবা ডিএনএর গঠন না জানলেও চলে। এরপর বিষয়বস্তু ধীরে ধীরে আরো জটিল হয়েছে, কিন্তু কোথাও ধারাবাহিকতা হারায় নি। এটিই আলোচ্য বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক।
এই বইয়ের আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো- এর ড্রয়িং। ল্যারি গনিকের ড্রয়িং অসাধারণ। ফিজিক্যাল লেভেল থেকে জিন লেভেল পর্যন্ত ল্যারি গনিকের ড্রয়িং এর পরিচ্ছন্নতা সবাইকে মুগ্ধ করবে। মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের পর্যায়গুলো যেভাবে এই বইয়ের চিত্রের সাহায্যে দেখানো হয়েছে- তা আমি আর কোনো বইতে পাই নি। একইভাবে ডিএনএ-আরএনএ এর গঠন, প্রোটিনের স্ট্রাকচার, বিভিন্ন কোডন, এমিনো এসিডের গঠন ইত্যাদি যে কুশলতা সাথে দেখানো হয়েছে তার কোনো জবাব নেই। শুধুমাত্র এই চিত্রগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এই বইটি কিনলেও পাঠকের পয়সা উসুল হবে।
তবে এই বইয়ের যে যে দুর্বল দিক আছে সেটি হলো- এতে জেনেটিক্সের মতো জটিল বিষয়ের ততোধিক জটিল অংশ-গুলোয় প্রবেশের জন্য খুবই সহজ-সরল ভাষা বেছে নেয়া হয়েছে। এ কারণে পাঠক খুবই দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে পরের পৃষ্ঠায়। কিন্তু জেনেটিক্সের টেকনিক্যাল বিষয় পাঠকের আরো বেশি মনোযোগ দাবি করে। পাঠক দ্রুতগতিতে পরের অংশে চলে গেলে পূর্বের অংশগুলো আত্মস্থ করার সময়টুকু পাবে না। আর জেনেটিক্স আত্মস্থ করতে গেলে শুধু বই পড়াই যথেষ্ট নয়, শিক্ষার্থীর জন্য ব্যক্তিগত অনুশীলনের ব্যবস্থাও জরুরী। যদিও এই বইয়ে কিছুদূর পর পর থেকে গিয়ে পূর্বের তত্ত্বগুলো মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে, যা প্রশংসার যোগ্য।
৩. চমক হাসানের অনুবাদ দারুণ। বিশেষ করে বিজ্ঞানের বইয়ের ক্ষেত্রে সহজ-সরল শব্দ ব্যবহার করে পাঠককে জটিল বিষয়ের ভেতরে প্রবেশ করানোর চেষ্টা তিনি করেছেন তা সফল হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ল্যারি গনিকের চেয়েও চমক হাসানের ভাষ্য মনোরম মনে হয়েছে। ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তরের সময় চমক হাসান চেষ্টা করেছেন যাতে বাংলা ভাষার টোনটাই প্রধান হয়ে উঠে। কিছু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। ‘The Cartoon Guide to Genetics’ বইয়ের প্রথম পাতায় লেখা- ‘Our ancestors had a first-hand knowledge of nature. In those days, everyone was a biologist and The World was a classroom!!’ চমক হাসান অনুবাদ করেছেন- ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রকৃতি সম্বন্ধে সামান্যই জ্ঞান রাখত। তখন প্রত্যেকেই ছিল একেকজন জীববিজ্ঞানী আর গোটা পৃথিবীটাই ছিল তাদের পাঠশালা’। চমক হাসান একেবারে আক্ষরিক অনুবাদের পথ বেছে নেন নি, যা তাঁর রূপান্তরকে করে তুলেছে প্রাঞ্জল।
চমক হাসানের সেন্স অব হিউমারের দেখা আমরা পাই, যখন দেখতে পাই আসল বইয়ের কৌতুকের তুলনায় তাঁর হিউমারগুলো বেশি উন্নত। প্রথম পৃষ্ঠায় যেখানে ল্যারি গনিক লিখেছেন- “ I’m in a scientific mood…”, সেখানে চমক হাসানের রূপান্তরিত টেক্সট হলো- ‘হুম...আমি একটু ‘ভাবে’ আছি...কেমন জানি বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী ভাব!” ২৭ পৃষ্ঠায় উপরে দু’জন নারী-পুরুষের কথোপকথনে মহিলার স্কার্ট উঁচিয়ে ধরে পুরুষটি বলে-“Signora! Lemme see your organs! I’ll be scientific…”, চমক হাসানের রূপান্তরে যা দাঁড়ায়- “ম্যাডাম, একটু দেখতে দিন...কথা দিচ্ছি, সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মতভাবে দেখব...”। এসব উদাহরণ থেকে চমক হাসানের হিউমারের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে শুধু হিউমারই নয়, সহজভাবে বুঝাতে পারাও চমক হাসানের বড় গুণ। চলে যাই ১২৫ তম পৃষ্ঠায়। এখানে ল্যারি গনিক রেপ্লিকেশন অংশের সূচনা করেছেন এভাবে- “Gene copying, or DNA REPLICATION, a Watson and Crick saw, is simple in principle. Each strand of the double helix contains the information necessary to make its complementary strand.” এই লাইনটি হুট করে বুঝতে পাঠকের একটু সমস্যা হতে পারে। এজন্য চমক হাসান বাংলায় রূপান্তরের সময় আরো কিছু বিষয় যুক্ত করে দিয়েছেন- “ডিএনএ রেপ্লিকেশনের মূলনীতিটা যথেষ্টই সোজা, যেনটা ভেবেছিলেন ওয়াটসন এবং ক্রিক। ডাবল হেলিক্সের দুইটা সূতার যেকোনো একটা পাশ জানলেই অন্যপাশে কী আছে সেটা বোঝা সম্ভব। একপাশে A থাকলে আরেকপাশে থাকবে T, একপাশে G থাকলে অন্যপাশে C- এভাবে পূরক ক্ষারের ধারণা থেকে- যেকোনো একতা সুতা থাকলেই অন্য সুতা বানিয়ে ফেলা যায়”। এই উদাহরণে চমক হাসানের রূপান্তরের বিশিষ্টতা স্পষ্ট না হলে, আমি পাঠককে পরামর্শ দিব মূল বই এবং চমক হাসানের বাংলা রূপান্তর পাশাপাশি রেখে পড়ার।
৪. মূল বইয়ের শেষাংশে একটি ইনডেক্স জুড়ে দেয়া ছিল, যা চমক হাসানের বাংলা রূপান্তরে অনুপস্থিত। এই ইনডেক্সটি বই থেকে যেকোনো নির্দিষ্ট টপিক কিংবা রাসায়নিক পদার্থের নাম খুঁজে বের করতে বেশ সাহায্য করবে। আমি আশা করছি, বইটির পরবর্তী সংস্করণে মূল বইয়ে থাকা ইনডেক্সটি অনুবাদ করে ‘গল্পে-জল্পে জেনেটিক্স’ এ যুক্ত করা হবে।
‘The Cartoon Guide to Genetics’ এর সংশোধিত সংস্করণ বেরুনোর পর প্রায় দু’দশক কেটে গেছে। স্বাভাবিকভাবে গত দুই দশকের জেনেটিক্সের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা এই বইয়ে উঠে আসে নি। তা পাঠকের এই বইয়ে জেনেটিক্সের সর্বশেষ জ্ঞান ও তথ্য-প্রাপ্তির আশা না করাই উচিত। তবে জেনেটিক্সের একেবারে মূল বিষয়গুলো এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। একারণে বইটি স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ���িক্ষার্থীর কাজে আসবে। এমন একটি বই বাংলায় রূপান্তর করে পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য চমক হাসান সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের দুই দিন আগে এই বই খুলে পড়া শুরু করেছিলাম। বিশ্বাস করেন, নিজের পাঠ্যবই পড়ে যে জিনিসগুলো বুঝতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছিল সেগুলো এই বইটা পড়ার পর পানির মত সহজ হয়ে গিয়েছিল। যে বিষয়গুলো নিয়ে কার্টুন এঁকে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো মোটেও হেলাফেলা করার মতো নয়। আমার এইচএসসি সিলেবাসের জেনেটিক্স চ্যাপ্টারের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রায় সবই চমৎকারভাবে উঠে এসেছে 'গল্পে-জল্পে জেনেটিক্স'-এ। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, খুব মজার সব কার্টুন দিয়ে সহজ ভাষায় জেনেটিক্সের জটিল ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নাইন-টেনের জ্ঞান থাকাই যথেষ্ট এর সবটুকু বোঝার জন্য। বাংলায় এমন অসাধারণ বিজ্ঞানের বই আরও অনেক দরকার। বিশেষ করে জীববিজ্ঞান নিয়ে একপ্রকার ভীতি কাজ করে আমাদের মধ্যে। আমাদের পাঠ্যবইগুলোতে বড্ড বেশি পানসে করে একে উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টার নাম শুনলেই মনে হয় উফ, এইটা তো খালি মুখস্থ করতে হয়। তবে জীববিজ্ঞানও যে কত চমকপ্রদ হতে পারে সেটা এরকম বই পড়েই অনুভব করা যায়। লেখক চমক হাসানকে অনেক ধন্যবাদ। দ্বিতীয় খণ্ডটা পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি।
বইটা রুয়েটের জব ফেয়ারের রকমারির স্টল থেকে কেনা। বইটার সম্পর্কে ভালো বললে কম বলা হবে। ভেতরের ইলাস্ট্রশন চোখজুড়ানো। জেনেটিক্সের জটিল বিষয়গুলো কৌতুকের ছলে তুলে ধরা হয়েছে। একইসাথে তথ্যের কোন ঘাটতি নেই। সেই প্রাচীনকালের ধারণা থেকে আধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইতিহাসটাও একবার চোখবুলানো হয়ে যাবে। বইটা শেষ করার পর আমার মত কম্পিউটার কৌশলীরও এখন মনে হচ্ছে, ডাক্তারবিদ্যাটা হয়তো খুব বোরিং না, বরং অনেকাংশে মজার হবার কথা!!
২০২০ সাল শুরু করলাম চমক হাসানের চমক লাগানো চমৎকার বইটি দিয়ে। শিক্ষাজীবনে জীববিজ্ঞান বরাবরই আমার প্রিয় বিষয়। জেনেটিক্সও যে মাথার ওপর দিয়ে চলে যেত এমন না। একটু কঠিন হলেও পড়তে ভালই লাগতো। সেই জেনেটিক্স নিয়ে অসাধারন লিখেছেন চমক হাসান। গণিতের প্রতি তীব্র ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তাঁর প্রথম বইটি যখন জীববিজ্ঞান নিয়ে তখন বলতেই হয় তিনি জীববিজ্ঞান বিষয়কেও চমৎকার দক্ষতায় তুলে এনেছেন বইটিতে। প্রতিটি বিষয় কার্টুনের মাধ্যমে এঁকে বোঝানো। যেন একটি মজার কমিক বুক! কঠিন বিষয়কে সহজ করে বোঝানোর ক্ষেত্রে লেখকের দক্ষতা বিদগ্ধ পাঠক মাত্রই জানেন। বইটি পড়তে একটু দেরি হয়ে গেলেও ভাল লাগছে এই ভেবে অন্তত পড়েছি। জেনেটিক্স বিষয়ে আরো ভালভাবে জানা হল। সবচেয়ে ভাল লেগেছে বইটি হাতে লেখা। প্রিন্টেড ফন্ট নয়। কমিকগুলোও হাতে আঁকা তাই পড়তে গেলে বইটি আরো বেশি ভালো লাগে।
বায়োলজি মানেই আগে মনে হতো জটিল ডায়াগ্রাম, মুখস্থ করার মতো কনসেপ্ট আর ভারী টপিক। কিন্তু এ বইয়ে লেখক যেভাবে কমিক্স আর মজার ভঙ্গিতে বোঝিয়েছেন—একেবারে গল্পের বই পড়ার মতো লেগেছে! আমার এসএসসি সিলেবাসের জেনেটিক্স চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও খুবই সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জীববিজ্ঞানের নানা তথ্য এত সুন্দরভাবে সাজানো আর ইলাস্ট্রেশনগুলো পড়ার আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিলো!
লেখকের সরল ভাষার প্রশংসা করতেই হয়! কী আনন্দের সাথে পড়লাম! ....বায়োলজি প্রিয় সাবজেক্ট হতে পারে! মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা আগেই ছিল, আর এই বইটা সেই আগ্রহকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিল!!
সেড:! অনেক দেরি করে পড়লাম। ২য় খন্ড খুব তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলবো :)
বংশগতির মৌলিক এবং সাধারন বিষয়গুলো মুলত আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে।এগুলো অনেকের কাছেই একটু জটিল মনে হয় এবং যথেষ্ট চিত্র দিয়েই এই বিষয়টি সুন্দরভাবে ব্যখ্যা করা সম্ভব বলে মনে হয়। যা এই বইয়ে সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
গল্পটা শুরু করা হয়েছে একদম শুরু থেকে যখন মানুষ জানতই না যে মিলন আর বাচ্চা জন্ম হওয়ার মাঝে একটা যোগসূত্র আছে।এমনকি তারা ভাবতো পাথরেরও প্রাণ আছে এবং তারাও বংশবৃদ্ধি করে!এর ফলে অবশ্যই তাদের মাঝে অনেক প্রশ্ন ও দ্বিধা জন্মালো।কিন্তু কৌতুহল মানুষরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে থাকল। তারা ব্যাখ্যা খুজতে লাগলো কিভাবে সন্তানদের বৈশিষ্ট্য তাদের বাবা-মায়ের মত হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মনীষী ও ধর্মগুরুরা বংশগতি নিয়ে কাল্পনিক ও উদ্ভট কারণ বানাতে থাকলো।
কিন্তু একসময় এক গির্জার যাজক তার শখের বাগান ও একটু যুক্তির প্রয়োগে কিভাবে এর রহস্য অনেকাংশেই উদঘাটন করল তার ইতিহাস এবং ব্যাখ্যা চিত্রের মাধ্যমে ও মজার ছলে বর্ননা করা হয়েছে এই বইয়ে। এছাড়াও আধুনিক জেনেটিক্সে ও জিন ম্যাপিং এর শুরু কিভাবে হয়েছিল তারও গল্প এখানে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু জেনেটিক্স এর প্রধান উপাদান জিন এর গঠন এবং এর আরো বিস্তারিত কার্যকলাপ এই খন্ডে নেই,পরের খন্ডে আলোচনা করা হবে।
জেনেটিক্স নিয়ে অনেক বই আছে যেখানে জেনেটিক্সকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু এই বইয়ের জনপ্রিয়তা পাওয়ার প্রধান কারন এর লেখার সরলতা ও রসপূর্নতা। চিত্রের মাধ্যমে এর উপস্থাপন বিষয়টিকে আরো আনন্দময় করে তুলেছে।
যারা জেনেটিক্স শুরু করতে চায় তাদের জন্য এটা পড়া ভালো হবে।খুব সহজ করে কার্টুন এর মাধ্যমে জেনেটিক্স কে স্থাপন করা হয়েছে।এটা না পড়লে বুঝা যাবে না জেনেটিক্স কত মজাধার🙂🙂🙂
ক্লাস এবং এর পড়া জিনিসটা কখনোই ভালো লাগে নাই । যখন নিজের জন্য, ভালোলাগার জন্য পড়তে গেছি তখন ভালো লাগা ছাড়াও বোনাস হিসেবে কিছু জেনেছি । বইটা ঠিক এরকম । খুব যত্ন করে লেখা একটা কমিক ! বইটা নিয়ে বলতে গেলে প্রথম কথা এইটাই আসে, চমক হাসান যদি বায়োলজির একটা বই লিখতেন তাইলে আমাদের মতো গোবেচারাদের জন্য সুবিধা হইত । কেন বলেছি বইটা থেকেই নাহয় জেনে ফেলুন ! আর হ্যাঁ একটা প্রশ্ন "ভেড়া , ইঁদুর , গিনিপিগের বেলায় ক্রস ঘটে মানুষের বেলায় বিয়ে হয় ক্যান ! "
বায়োলজি যেখানে পড়তামই না,ভালোই লাগতো না,তখন এক বন্ধু বইটা দিয়েছিলো পড়ার জন্য।মজার মজার এক্সপ্রেশনের কার্টুনে আঁকা যা যেমনে হাসিয়েছে তেমনি আগ্রহ তৈরি করেছে।অনুবাদটাকেও সার্থকতা দিয়েছে অনুবাদক অর্থাৎ চমক হাসান।বায়োজলিতে অনিহা বা ইন্টারেস্ট নাই?এটা পড়ে দেখতে পারেন।অসাধারণ বই,অসাধারণ উপস্থাপনা
অনেক সুন্দর একটা বই। অনুবাদও অসাধারণ। নবম- দশম বা তার ওপরের ক্লাসের যে কেউ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে পারবে। বিশেষ করে, এটা পড়ার পর বায়োলজি ১ম পত্রের জেনেটিক্স অংশ আর কাঠখোট্টা মনে হবে না।😊