কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, অমানুষিক পরিশ্রম, অবর্ণনীয় শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে তৈরি এক কমান্ডো। বাঙালী এক যুবক কখনও নেমেছে উত্তাল সাগরে, কখনও অসীম নীলাকাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিচে, কখনও তুষারাবৃত পর্বত-শৃঙ্গে লড়েছে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা। নিজের চামড়া পোড়ার গন্ধে সে চমকে উঠেছে, কখনও কুলকুচি করেছে বিষ্টাময় দুর্গন্ধময় পানি দিয়ে, ক্ষুধার তাড়নায় খেয়েছে কুকুরের মাংস। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
তদানীন্তন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটেলিয়ানের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন ছিলেন এক দুঃসাহসী চৌকষ অফিসার। 'হেল কমান্ডো' মূলত তাঁর সৈনিক জীবনের কাহিনি নিয়েই রচিত।
অনেক দিন আগে মাসুদ রানার একটা বই পড়ে কড়া একটা সমালোচনা (!) লিখেছিলাম কারণ অন্য বইয়ে কিছুটা মানবিকভাবে তেনাকে দেখালেও অই বইটায় এতো অতিরিক্ত লেভেলে হিরোগিরি দেখায়! যে আমি আর নিতে পারি নাই। আর কড়া সমালোচনা বলতে ফেলুদার বন্ধু জটায়ুর নায়ক প্রখর রুদ্রের সাথে তুলনা দিয়ে ফেলেছিলাম 😛 আর যায় কই.. কিছু এসে গালিগালাজ করলো আর এক সহৃদয়বান ব্যক্তি (!) এসে আমাকে উপদেশ দিলো, আমি যেন ন্যাকা ন্যাকা প্রেমের উপন্যাস পড়া বাদ দিয়ে আলোর পথে আসি।
যাকগা সেই পুরানো কথা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই প্রসঙ্গ আমি কেন টানলাম। হেল কমান্ডো এদ্দিন ধরে পড়া হয়নি। আজ শেষ করে পাপ স্খলন করলাম। ১৯৬৫ সালের ঘটনা। ঘটনাচক্রে বাঙালি যুবক আনোয়ার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। কিছুটা কৌতূহল বশত: কিছুটা ইচ্ছাকৃত আর কিছুটা মনের খেয়ালে। কিন্তু কে জানতো এই যুবকের ভাগ্যে লেখা আছে অন্য রকম কিছু! পুরোটা বইয়ে লেখা হয়েছে সেই জার্নির গল্প। বর্ণনা করার ভাষা নেই সত্যি। একের পর এক ভয়ংকর ট্রেনিং, সহ্যশক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে যাবার পরও আরও কিছু থেকে যাওয়া... মানুষ থেকে বুনো জন্তুর মতো হিংস্র কিন্তু রোবটের মতো কর্মদক্ষ একদম অন্য মানুষে রূপান্তর করে ফেলা... গুপ্তচরদের নিয়ে যখন পড়ি অনেক যায়গায় থাকে ইন্টারোগেশনের নারকীয় বর্ণনা.. শুধু স্পাই গল্পে কেন.. আরও অনেক জায়গাতেই থাকে, আমি বইয়ের ভাষায় লেখা সেই নির্যাতনের গল্পগুলোই সহ্য করতে পারি না, ওরা ক্যামনে পারে? এই জায়গাটায় ভয়ংকর কষ্ট লেগেছে। কতোখানি শ্রম, নিষ্ঠা, কষ্ট, পড়াশোনা আর কতোখানি দেশপ্রেম আর মনোবল থাকলে একজন কমান্ডো হওয়া যায়!
মাসুদ রানার মতোই মেজর আনোয়ার হোসেন একটা ঝলমলে চরিত্র। আমরা কল্পনায় যেমন দেখি, আমাদের মি. কমান্ডো ঠিক সেই রকমের। কিন্তু হয়তো বাস্তবের সাথে বইয়ের গল্পের অনেক ফারাক থাকে বলে চূড়ান্ত সময়ে সক্রিয় না থেকে বন্দী অবস্থায় আহত বাঘের মতো গজড়াতে হয়েছে তাকে। সে দু:খ কি ভোলবার মতো?
এতদিনে (কিছুটা) বুঝলাম কিভাবে পাকি মিলিটারিরা অমানুষিক নির্যাতন চালাতো আমাদের উপর, এরকম অমানুষিক ট্রেনিং এর পর মনুষত্ব বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকার কথা না। এই বই পরে মিলিটারিদের বীরত্বে অনেকে গর্বিত হতেই পারে, কিন্তু আমি শুধু শঙ্কিতই হলাম, মানুষকে এভাবে দানব বানানো কখনোই ভালো কিছু হতে পারে না।
সামরিক বাহিনীতে যোগদানের ইচ্ছা একটা বয়সে আমার ভয়াবহ রকম ছিল। বলেও বেড়াতাম কমান্ডো ট্রেনিং করবো একদম। আমার বেড়েও ওঠা সামরিক পরিবেশেই। মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে আমি নিজেকে কখনও প্রশ্নবিদ্ধ করিনি। এই ক'টা ছাপার অক্ষর পড়ে সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য হলাম। কতটা মানসিক দৃঢ়তা আর দেশপ্রেম থাকলে একজন মানুষ এরকম কল্পনাতীত কষ্ট সহ্য করতে পারে আমার জানা নাই! রাজীব হোসেনের 'কমান্ডো' বইটা যতবার নিতে চেয়েছি, ততবার আগে এসেছে 'হেল কমান্ডো' বইটির কথা। তাই এটাই তুলে নিলাম আগে শেষমেশ।
❝Fit to serve with any army under any condition in the world❞ পড়ছিলাম হেল কমান্ডো। তদানীন্তন পাকিস্তানের ২য় কমান্ডো রেজিমেন্টের বাঙালি কমান্ডো মেজর আনোয়ার হোসেনের ভাষ্যে এবং এ এইচ রঞ্জুর অনুলিখনে সুখপাঠ্য এই বইটি কি আদৌ সুখ পাঠ ছিল? কমান্ডো বলতে যে ধরণের সৈনিকদের বোঝায়, তাঁরা সত্যিকার অর্থেই সুপারসোলজার থেকে কোনো অংশে কম নন, বরং বেশিই। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, বন, পাহাড়, সমুদ্র, বরফের দেশ কিংবা ধূসর মরু। সবখানে বেঁচে থাকার মতো সবভাবে প্রস্তুত করা হয় এই জীবন্ত মারণাস্ত্রদের। মানুষের পক্ষে অসম্ভব বলতে কিছুই নেই, সেই কথার বাস্তবিক প্রমাণ বলা যায় এই কমান্ডোদের। ৭০ পাউন্ডের ওজন নিয়ে ৩৬ মাইল দৌড় থেকে শুরু করে, হাজার ফুট উঁচু প্লেন থেকে প্যারাজাম্প, বরফের দেশে স্কিইং থেকে, সমুদ্রের ১২০ফুট তলদেশে স্কুবা ডাইভিং হেন কিছু বাদ নেই যে একজন কমান্ডোকে শেখানো হয়না। তারচেয়ে বড় যেটা সেখানো হয় সেটা হলো ভয়ানক মানসিক দৃঢ়তা। ট্রেনিং এর সময় দিন নেই রাত নেই, বিশ্রামের প্রশ্নও নেই। কতবার যে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তের গল্প নির্লিপ্তভাবে বর্ণণা হয়েছে বইতে, সেটাও কি আশ্চর্য। বেঁচে থাকার দরকারে কুকুরের মাংস এমনকি মানুষের মাংস ভক্ষণেও তাদের দ্বিধা থাকেনা বিন্দুমাত্র। এমনকি মল মুত্র আবর্জনায় কতবার তাদের কুলকোচাও করতে হয়, খেতে হয় প্রস্রাব, ইয়ত্তা নেই। অমানবিক অত্যাচার চালানো হয় ইন্টারোগেশন ট্রেনিং এ, যাতে শত্রুর সামনে ভেঙে না পড়ে মনোবল। মাসের পর মাস অকল্পনীয় পরিবেশে অমানবিক সব ট্রেনিং একটু একটু করে দিতে দিতে একজন কমান্ডো হয়ে ওঠে একজন জীবিত অস্ত্র। শত্রু নিধনের জন্য তার আর অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। আশেপাশের পরিবেশ থেকে বিষ্ফোরক থেকে শুরু করে অস্ত্র সব তারা তৈরি করে নিতে সক্ষম। শারীরিক, কিংবা মানসিক ভাবে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌছে যাওয়া এই সৈনিকদের কেই কমান্ডো বলা হয়। ভাইকিংসদের যেমন যুদ্ধে মৃত্যুই পরম পাওয়া, এদের কাছেও সেটিই সব। কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব এই ট্রেনিং এর বর্ণণা পড়ে মনে হচ্ছিলো এড়িয়ে যাই, নেয়া যাচ্ছেনা। এহেন শারীরিক মানসিক অত্যাচারের পরও ক্ষান্তি মেলেনি মেজর আনোয়ার হোসেনের। ব্যক্তিজীবনের সুখও কেড়ে নিয়েছিলো এই পৃথিবী। শেষ কয়টি পৃষ্ঠায় সমস্ত শূন্যতা আর ব্যর্থতার গ্লানি যেনো চেপে বসেছিলো বুকের উপর।
দারুণ এই বইটি পড়বার জন্য আমন্ত্রণ রইলো। বইটি আমার মনে হয়েছে সংক্ষিপ্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে কিছুটা। যে কারণে কিছু ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ ঠেকছিলো। কিন্তু সেসব এড়িয়ে যাওয়ার যোগ্য। এতকিছুর পরও শেষকথা বলতেই হয়... যুদ্ধ কারো জন্য, কখনোই কাম্য নয়।
স্কুলে থাকতে যখন বইটা পড়া শেষ করলাম,ঘরের মধ্যে একা একাই লেফট-রাইট করতাম।ঘুমের মাঝেই স্বপ্ন লাফিয়ে উঠতাম,এই বুঝি Hercules কার্গো বিমানের রেম্পডোর খুলে যাচ্ছে,আর আমি লাফিয়ে পড়ছি শূন্য থেকে মাটিতে।কখনও মনে হতো পেছন থেকে ট্রেইন্ড কমান্ডোরা ধাওয়া করছে।কখনও আবার বাসার কাছে ব্রহ্মপুত্র নদকে কাবুল নদী ভাবতাম।মনে হতো নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে,এয়ারবোর্ন প্যারেড করতে করতে তীরে উঠে আসি।হেল কমান্ডো পড়ার পর প্রচুর পাগলামি করেছি।স্কুল জীবন পেছনে ফেলে এসেছি,কিন্তু হেল কমান্ডোর স্মৃতি এখনও পিছু ছাড়েনি! আই হেইট ইউ হেল কমান্ডো........
আপনি কি জানতে চান একটি কমান্ডো ট্রেনিং কতটুকু দুর্বিষহ হতে পারে? কিভাবে একটি মানুষকে ভেঙে নতুন ছাচে গড়ে তোলা হয়? পড়েন ভাই। এ বই আপনাকে কমান্ড ট্রেনিং এর একটি শিক্ষাসফর দেবে। সাথে জাতীয় গর্ব কর্নেল তাহের এবং জেনারেল খালেদ মোশাররফের সাহসিকতার গল্প পাবেন বোনাস।
সেবার হ��তেগোণা কয়েকটা বই পিডিএফ পড়েছি৷ তার মধ্যে এটাও ছিল৷ বাজে কোয়ালিটি স্ক্যান আর পুরানো ফন্ট অবশ্য বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি চমৎকার বইটি উপভোগের মাঝে৷ আজকে নিউমার্কেটে গিয়ে দেখি রিপ্রিন্ট চলে এসেছে৷ সেবা চাইলে পুরানো প্রচ্ছদটা পালটে দারুণ কিছু করতে পারতো৷ বেশ অকওয়ার্ড একটা ভঙ্গির ছবি দুর্দান্ত লেখাকে ফুটিয়ে তুলতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ৷
The late 60's.. A student of Statistics from Dhaka University decides to join the army, and then the Commando Training program. This is the true story of one of the very first Bangladeshi commandos. His training and commando life and his struggle to join the Liberation War of Bangladesh in 1971.
❝Fit to serve with any army under any condition in the world❞ কর্নেল তাহের এর সম্পর্কে করা এই মন্তব্যের কথা পড়ে এক অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করছে। অসম্ভব সুখপাঠ্য একটি বই।
মনে হচ্ছিলো যেন একটা জীবন্ত ইতিহাসের পাতা উল্টাচ্ছি। মেজর আনোয়ার হোসেন (অব.) তাঁর সৈনিক জীবনের অভিজ্ঞতা, দুঃসাহসিক অভিযান আর নিঃশব্দ যুদ্ধের গল্পগুলো এমনভাবে বলেছেন, মনে হচ্ছিলো যেন আমি নিজেই সেই মুহূর্তগুলোতে উপস্থিত ছিলাম। প্রতিটি অধ্যায়ে যেন একেকটা জীবন্ত ছবি, যেখানে একজন সৈনিকের মনোজগৎ, তার চিন্তা-ভাবনা, সিদ্ধান্ত সবকিছু স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মনে হয়েছে, একজন অভিজ্ঞ সৈনিক তাঁর জীবনের গল্পগুলো বন্ধুর মতো করে শেয়ার করছেন।
অবিভক্ত পাকিস্তানে একজন বাঙ্গালি সাহসী তরুনের ধাপে ধাপে কঠিন ট্রেনিং আর যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে একজন সেনা কমান্ডো অফিসার হয়ে উঠার স্মৃতিকথা এই বই। কিভাবে বাংলার এক দুরন্ত তরুন,যার স্বপ্ন ছিলো একটা নির্ঝঞ্জাট জীবন, সে কিভাবে পাকিস্তান আর্মির অফিসার হলো, তা সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। বইটা পড়তে পড়তে যেনো আমিও কখনো চলে যাচ্ছিলাম সেই কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে, কখনো বা খারিয়া ক্যান্টনমেন্ট,চেরাট ক্যান্টনমেন্টের পাহাড়ি আঁকা বাঁকা পথে, কখনো মরুভূমি কখনোবা তুষার ডাকা পাহাড়ের সেই প্রশিক্ষন ক্যাম্প গুলোতে। সামরিক জীবনের কঠিন প্রশিক্ষন,তার উপর কমান্ডোদের মরনপন প্রশিক্ষনের কথা পড়ে কখনো কখনো শিউরে উঠেছি, আবার দলবেঁধে থাকা অফিসার সহকর্মীদের সাথে হাসি-আনন্দ,সিনিয়র অফিসারদের স্নেহ পাওয়া আর শৃঙ্খলাবদ্ধ অথচ উত্তেজনায় ভরপুর উন্নত সামরিক জীবনের জন্য লোভ যে জাগেনি তাও নয়। বর্ননাগুলো আকর্ষনীয় আর সাবলীল্ভাবে ফুটিয়ে তুলতে লেখক তার লেখনীর পান্ডিত্য দেখিয়েছেন। এই বইটা আমার এখন পর্যন্ত পড়া সামরিক জীবনী নিয়ে , পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে বাঙ্গালিদের অবস্থান নিয়ে পড়া আমার সেরা বই।
অনেক দিন ধরেই বইটা পড়ার ইচ্ছা ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে গতবছর জুলাই মাসে উইশলিস্টে যোগ করেছিলাম আর এবছর জুলাই মাসে শুরু করে আগস্টে শেষ করলাম। অসাধারণ সব অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হলাম। ফ্রগম্যান ট্রেনিং, সাগরের নীচের ভয়ঙ্কর মোরে ঈল! তুষারঝড় থেকে শুরু করে রাতের মরুভূমি, আরব সাগরের বিচিত্র তলদেশ! একদম শেষটায় এসে মেজর (অব.) আনোয়ার এর প্রণয়কাহিনীর ব্যাপারটা তুলে ধরা হয়েছে। খুব সংক্ষিপ্তাকারে হলেও মনের পুরোটা যেন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেছে দু’জনের দু’টি চিঠিতে।
কমান্ডো হতে গেলে যে , কি পরিমান কঠিন সব ট্রেনিং এর মধ্যে যেতে হয়, তা এই হেল কমান্ডো পড়লে ভালো অনুধাবন করা যাবে। একজন কমান্ডোকে কি না করতে হয় ,সরভাইবাল ট্রেনিং , লন রেঞ্জার , স্কাই ড্রাইবিং , গভীর সাগর তলে ড্রাইব , খাড়া পাহাড় ক্লাইবিং । আর এই সব ট্রেনং করতে , যে পরিমান মানসিক শক্তি আর শারিরিক পরিক্ষা দিতে হয় , তা এক প্রককার অবিশ্বাস। তাই কমান্ডোদের শারিরিক শক্তি চেয়ে মানসিক শক্তি বেশি প্রয়োজন।
মেজর আনোয়ার হোসেনের কমান্ডো ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বইটিতে সমসাময়িক রাজনীতিসহ তৎকালীন পাকিস্তানের প্রকৃতি, জনজীবন ও সামাজিক অবস্থার বর্ণনাও উঠে এসেছে। একজন সৈনিকের জীবন, তার ত্যাগ ও অর্জন নিয়ে লেখা বইটি নিঃসন্দেহে একটি মাস্টারপিস।
বইটার শুরুতে লেখক একটি কথা লিখেছেন “এই বইয়ের মূল ঘটনা ও চরিত্র বাস্তব। কল্পনার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।” হ্যাঁ বলছি পাকিস্থান সেনাবাহিনীর কমান্ডো মেজর আনোয়ার হোসেনের কথা। গভীর রাতে আকাশে চাঁদের লুকোচুরিতে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা কোন একটি নদীর স্পীডবোটের উপর তন্ময় হয়ে বসে থাকবে, সুখ-প্রাচুর্য আর দৈন্যের জীবনে কোন একজন সঙ্গী থাকবে- আনোয়ারের ঠিক এমন একটা জীবনের স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু হলো না কিছুই! ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস! যে আনোয়ার রাতের অন্ধকারকে ভয় পেতো, তাকেই প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে রাতের আঁধারে।” কারণ কমাণ্ডোদের প্রতি নির্দেশই হলো: রাতের অন্ধকারে বিদ্যুতের মতো চমক লাগিয়ে তোমার কমাণ্ডো নাইফ দিয়ে শত্রুর উপর হামলা করো।” “ছুরি” জিনিসটাকে একসময় আনোয়ার ভয়ানক ভয় পেতো, এখন ছুরিই ওর বিপজ্জনক যাত্রার সঙ্গী। আনোয়ার খুব সহজেই অন্যদের আপন করে নিতে পারতো। তদানীন্তন পাক-বাহিনীতে আদর করে ওনাকে ‘হেল কমাণ্ডো’ ডাকতো। কেউ কেউ ডাকতো ‘লুলুম্বা’ বলে। তবে সবচেয়ে নাম ছিলো ‘কিলু বিলু’।
অথচ জীবনটা এমন ছিলো না। অন্য ছেলেদের মতই কাটছিল তাঁর জীবন। পড়াশুনা করার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু পড়ালেখা আর শেষ হয় নি। এখানেও রয়েছে অনেক নাটকীয়তা। এর মাঝেই যোগ দেন পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে। পাকিস্থান মিলিটারী একাডেমিতে প্রশিক্ষণ, কিভাবে সেখানে ওনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। পরবর্তী জীবনে একজন কমান্ডে হিসেবে তাঁকে যে সব কাজ করতে হয়েছে, যেভাবে নিতে হয়েছে নানান রকমের প্রশিক্ষণ তার বিস্তারিত উঠে এসেছে এই বইয়ে।
বইটি পড়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিষয় ও প্রশিক্ষন জানতে পারলাম। মূলত একজন বাঙ্গালী কমান্ডো স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে পাকিস্তান আর্মিতে কিভাবে ট্রেনিং পেয়েছিলেন তার উপর লেখা বইটি। সাথে একজন কমান্ডোর লাইফের বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। মেজর আনোয়ারের সাথে পরিচয় ছিল মেজর তাহেরের (কর্ণেল তাহের)। ওনার সম্পর্কেও বেশ কিছু কথা-বার্তা উঠে এসেছে বইটিতে। পড়ে বেশ মজা পেলাম বইটা।