Collection of short Supernatural Tales. The narrator of these tales is Taranath Tantrik, a mystic figure and practitioner of occult. He is an astrologer by profession and had many encounters with the weird in his extensive travels. He shares these experiences with a few friends in his Mott lane house over cups of tea and cigarettes.
Taradas Bandyopadhyay's father, the legendary literati Bibhutibhushan Bandyopadhyay created the character 'Taranath Tantrik', but he wrote only a couple of short stories featuring him. Those two tales are however not part of this collection.
Son of late legendary writer Bibhutibhusan Bandyopadhyay of 'Pather Panchali' fame, Taradas Bandyopadhyay had his schooling at the Ramakrishna Mission School, Rahara. Graduating from Maulana Azad College with Honours in English, he went on to do his post - graduation from the Calcutta University.He joined service with the West Bengal government and rose to the position of director in the Information and Cultural Affairs department, from where he took voluntary retirement. Despite his failing health, Bandyopadhyay found time to associate with cultural and social organisations and remained the honorary vice-president of the Indian Forum of Art and Culture. Taradas leaves behind a large number of short stories and two famous novels - তারানাথ তান্ত্রিক and কাজল. 'কাজল' was a sequel to 'Aparajito' written by his father. Taradas is survived by his wife and two sons.
There are more things in heaven and earth, Horatio.
তারানাথ তান্ত্রিকের স্রষ্টা বিভূতিভূষণ। তবে এক্ষেত্রে স্রষ্টা তার চরিত্রকে নিয়ে মাত্র দু'টো গল্প শেষ করে গিয়েছেন। সুপুত্র তারাদাস বন্দোপধ্যায় বাবার সৃষ্ট চরিত্রের প্রতি শুধু সুবিচারই করেননি, নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। আমার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে, কাঁধে এক্সপেক্টেশনের বোঝা নিয়ে কিছু করা। জানা কথা, অনেক জহুরী চোখ প্রকাশিত হবার পরেই ঝাঁপিয়ে পড়বে বিশ্লেষণের জন্যে। স্বাভাবিকভাবেই তুলনা আসবে, তাও কিংবদন্তিতূল্য পিতার সাথে! এক্ষেত্রে আমি বলবো তারাদাস সাহেব লেটার পেয়ে পাশ করে গিয়েছেন। অন্ধভাবে নকল করতে যাননি বর্ণনাভঙ্গি, বরং নিজস্ব স্বকীয়তায় আটপৌরে শব্দের ব্যবহারে ভৌতিক এবং অপার্থিব সব পরিস্থিতির অবতারণা করেছেন।
তবে শুধু রোমাঞ্চ বা গায়ে কাটা দেয়ার মত গল্পই নয়, গ্রামীণ সহজ সরল জীবনের এক নিপুণ চরিত্রও অঙ্কন করেছেন লেখক। এতে সাবলীলতা বেড়ে গেছে বহুগুণে। পিরিয়ড ফিকশন লেখা কখনোই সহজ নয়। এক যুগে থেকে আরেক যুগের বর্ণনা, অন্তত আমার কাছে কঠিন মনে হয়। সে কাজটিও দারুণ দক্ষতায় করেছেন তারাদাস বন্দোপধ্যায়।
ছোটগল্পের সংকলনে একই ধরণে গল্প হলে, একঘেয়ে লাগে কিছুক্ষণ পড়েই। বৈচিত্র্য আবশ্যক। সেটারও দেখা মিলবে। শব সাধনা, হোম, তন্ত্র, প্রেত, প্রতিশোধ কিংবা খুন- সবকিছুই পেয়েছি। ভয়ের গল্প স্বার্থক হয়, যদি স্থান-কাল-পাত্র নির্বেশেষে পাঠকের গায়ে একটু হলেও কাঁপুনি ধরাতে পারে। একটা ব্যাপার দৃষ্টিকটু লেগেছে, শেষের চারটা বাদে কোন গল্পেরই আলাদা করে নাম লেখা নেই। বরং অদ্ভুত কিছু ছবি দিয়ে আলাদা করা। কাউকে পৃথক কোন গল্পের উল্লেখ করতে হলে বেশ বিপদে পড়তে হবে।
যাইহোক, হাতে সময় থাকলে এবং অতিপ্রাকৃতের জগত থেকে ঘুরে আসতে চাইলে কিশোরী সেন, গল্পকথকের সাথে বসে যেতে পারেন তারানাথের মজলিসী আড্ডায়।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে এইসব জিনিস ভিষন অপছন্দ করি। ঠিক তখনই হাতে পেলাম তারানাথ তান্ত্রিক।অবশ্য এর আগে দুইটা ভুতের বই পড়েছি মাত্র। একটা হুমায়ুন আহমেদের ছায়াসঙ্গি এবং আরেকটা রাসকিন বন্ডের হুইস্পার ইন দ্য ডার্ক। যাইহোক অলস সময় কাটানোর জন্য হাতে তুলে নিলাম বইটি। তারপর তলিয়ে গেলাম তারানাথের সাথে গহীন রহস্যের আড়ালে।
তারানাথ তান্ত্রিক আমাদের উপমহাদেশেরই মানুষ। এই বাংলার মানুষ তিনি। তার জীবন কেটেছে গ্রামে। তাই তার অভিজ্ঞতা সবই আমাদের আশপাশের ঘটনা। তার কথায় কোথাও অত্যুক্তি নেই, নেই বিশ্বাস করানো, কিংবা জোর করে ভয় দেখানোর অপচেষ্টা। তিনি তার মত করে শুধু বলে গেছেন অভিজ্ঞতা গুলি। আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনে গেছি। বই শেষ করার পর শুধু মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি হানা দিয়েছে। মনে হয়েছে, ওই যে ঘরের বাইরে আলোকিত সকাল, নিস্তব্ধ দুপুর, তার মধ্যেই কি কোথাও লুকিয়ে আছে অতীন্দ্রিয় কিছু, যা আমাদের ইন্দ্রিয়ে ধরা পড়ে না?
দারুণ লেখা! আরো সুন্দর কোনো বিশেষণ ব্যবহার করা উচিত ছিল, কিন্তু মাথায় আসছে না। বিভূতিভূষণের চেয়েও তারাদাসের লেখা অসাধারণ একথা বলতেই হচ্ছে; আমার ধারণা ভুল হলে হোক।
এক প্রজন্মের গড়ে যাওয়া একটি চরিত্রকে আরেকটি প্রজন্মের সেই মোতাবেক ধরে রেখে লেখা সৃষ্টি করা; এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ বোধহয় আর নেই। তারাদাস সুপুত্র–আলংকারিকভাবে সেই কাজটা সম্পন্ন করেছেন। তাঁর ডিটেইল আরো নিখুঁত, একেকটি গল্প শুরুর প্রারম্ভাগ নাটকীয় এবং কিশোরী সেনের খুনসুটি আনন্দ দেয়।
এত বিস্তারিতভাবে তন্ত্র-মন্ত্রের কোনো বই আগে পড়িনি। কৈশোরে রেডিওতে 'কুয়াশা' শুনতাম, শুধু এটুকুই। এই বয়সেও বইটার আবেদন দেখছি আমার কাছে একটুও কম না। অনেক উপভোগ করেছি।
ভূতের গল্প, অতিপ্রাকৃত গল্প বা অশরীরীদের গল্প যাই বলা হোক না কেন ভেতো বাঙ্গালীর এইদিকটা খুব বেশি দখল ছিল বলে কখনো মনে হয়নি আমার। হাতে গোনা দুই তিন জন বাদে একেবারে গা কাটা দেওয়া মৌলিক ভয়ের গল্প বাঙালি লেখকদের কলম থেকে কেন জানি বের হয়নি। তারানাথ তান্ত্রিক বইটা পড়ে আমার এই ভুল ভেঙে যেতে বাধ্য। একেবারে খাঁটি দেশি ভুত তাড়ানোর তন্ত্র মন্ত্র, হোম, অতীত বলে দেবার ক্ষমতা, বাদলা দিনে ঘর অন্ধকার করে বসে তেল জবজবে মাখানো মুড়ির সাথে গরম চা আর মজলিশি তারানাথের মুখে আটপৌরে শব্দে অশরীরীদের কাণ্ডকীর্তি শোনাটা নির্ভেজাল ভয়ের সাথে সাথে যে আনন্দটুকু দেয় তা কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পাওয়া যাবেনা।লেখক এবং তার প্রতিবেশি কিশোরী সেন সামান্য এক প্যাকেট পাসিং শো নামের সিগারেট উপহার দিয়ে তারানাথের ঝুলি থেকে যে অনবদ্য ভয়ের গল্প বের করে এনেছেন তার জন্য বইটা পড়া শেষ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে।তারানাথ তান্ত্রিক কে নিয়ে প্রথম গল্প লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।কিন্তু দুটি গল্প লেখার পরই তিনি দেহত্যাগ করায় তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ দায়িত্তে তারানাথ কে নিয়ে লেখা শুরু করেন। প্রথম দুটি গল্প এই বইয়ে নেই বিধায় বিভুতিবাবুর লেখার সাথে তারাদাশ বাবু আদৌ সঠিক বিচার করেছেন কিনা বলতে পারছিনা কিন্তু রাত ৩ টায় বা সন্ধার মুখে গল্প গুলো পড়ে একটি ভূতের গল্পের বই পরবার পর যেমন অনুভূতি হওয়ার কথা তার থেকে বরং আরও বেশি কিছু পেয়েছি।তারানাথ তান্ত্রিক এর গল্পের ঝুলিটা আরেকটু বড় হল না , এই যা আফসোস।
বাবার লিগেসি ছেলে শেষ করলেন। গল্পচ্ছলে তারানাথের পুরো জীবনের ছবিই উঠে এসেছে। শেষের দিকে অবশ্য ভালই জমে উঠেছিল। বইটা শেষ করে খারাপ লাগার একটা অনুভূতি ছিল। তারানাথের জবানিতে আর গল্প শোনা হবে না। এক ব্যর্থ তান্ত্রিক যেকিনা সাধনমর্গের অতি উচ্চস্তরে যাবার ক্ষমতাকে নষ্ট করে অতি অসাধারণ গল্প বলিয়ে হিসেবেই মনে রয়ে গেলেন। শেষ গল্পের শেষ লাইন পড়ে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। ”তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল—আজকের গল্প এইখানেই শেষ। কিন্তু ভয় পেয়ো না, বলবার মত গল্প আমার ঝুলিতে আরো অনেক রয়েছে সময়মত বলা যাবে। আজ থামি তাহলে, কেমন ?“ এখানেই গল্প শেষ। আর শোনা হবে না তারানাথ তান্ত্রিকের গা শিউরে উঠানো গল্প।
বিভূতিভূষণ তাঁর অনুপম কলমে যে ক'টি অসামান্য চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, তাদেরই একজন: তারানাথ তান্ত্রিক| দুঃখের বিষয়, তিনি এই চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে মাত্র দু'টি গল্প লিখেছিলেন| অলৌকিক গল্পের অনুরাগীদের পক্ষে সুসংবাদ, বিভূতিভূষণ-এর পুত্র শ্রী তারাদাস বন্দোপাধ্যায় এই চরিত্রটিকে ফিরিয়ে এনেছেন, এবং উপহার দিয়েছেন আরও দশটি গল্প, যেগুলো সংকলিত হয়েছে এই শীর্ণকায় বইয়ে|
বিভূতিভূষণের তারানাথের তুলনায় তারাদাসের তারানাথ আরও সংবেদনশীল, মরমী, আর সোজাপথের পথিক| এই গল্পগুলোও শুধু তন্ত্র বা মন্ত্র নিয়ে নয়, বরং গ্রামের সরল জীবন, সহজ ও সরল মানুষের আচরণ, এবং ব্যাখ্যাতীত ঘটনার ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছে, যাদের সংঘটনে বা পরিণতিতে তারানাথের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না|
এর মধ্যে এমন বেশ কয়েকটি গল্প আছে যারা ভয় পাওয়ায়, শীতের রাতে কম্বল দিয়ে নাক অবধি ঢেকে নিতে বাধ্য করে| কিন্তু এই বইয়ের সেরা গল্প বোধহয় সেগুলোই, যেখানে ভাগ্যের হাতে অসহায় মানুষ গ্রাম বাংলার সবুজ অঙ্গনে তার ধুলোখেলা হঠাৎই শেষ করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে অনেক দূরে, যেখানে কারও সহানুভূতি বা ক্রোধ তাদের নাগাল পাবে না|
তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র থেকে পড়ছিলাম। প্রথমে বিভূতিভূষণের দুটি গল্প এরপর তারাদাস বন্দোপধ্যায়ের লেখা শুরু। সমগ্র তে আলাদা করে যদি ভাগ না থাকত তাহলে এই চেঞ্জটা ধরা মুশকিল হয়ে যেত। সত্যি বলতে ভৌতিক বা অলৌকিক গল্প হিসেবে আমি ভয় পায়নি। তবে গল্পগুলো খাসা। শেষ দুটি গল্প একটু মিইয়ে গেল নাহলে ৫ তারাই দিয়ে দিতাম।
Goodreads এর সংস্করণে দেখি ১২০ পৃষ্টাতেই বই শেষ। অনলাইন থেকে একটি ফাইল ডাউনলোড করেছিলাম সেখানেও ১২০ পৃষ্টার সংস্করণটিই পেয়েছি। কিন্তু রকমারি.কম থেকে প্রাপ্ত মূল বইটি মোট ১৬৫ পৃষ্টার। এমনিতে গল্পগুলির কোন শিরোনাম নেই কিন্তু ১২০ পৃষ্টার পরে সংযোজিত ৪টি গল্প দেখলাম শিরোনাম সহ। নীচের গল্পগুলি শিরোনাম সহ বাড়তি সংকলিত হয়েছে।
১. পন্চমুন্ডির আসন ২. আবার তারানাথ ৩. তিনটে কাকের গল্প ৪. তারানাথ তান্ত্রিক ও ব্রক্ষ্মপিশাচ
গল্পগুলো দারুণ উপভোগ্য। কিছু কিছু জায়গায় আমার গায়ে কাঁটা দেবার মতো হয়েছিলো। বিশেষ করে রাতে পড়ার কারণে। তবে লেখক ভূমিকাতে বলেছেন যে এগুলো সত্যি ঘটনা। এটাই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু শেক্সপিয়ার হ্যামলেটের ভাষ্যে বলেছিলেন,
There are more things in heaven and earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy. - Hamlet (1.5.167-8), Hamlet to Horatio
কাজেই আমিও বিশ্বাস করে নিলাম যে অতিপ্রাকৃত নানা কিছু ঘটতে পারে এই পৃথিবীতে। যার ব্যাখ্যা মানুষ তার পন্চন্দ্রিয় দ্বারা করতে সক্ষম নয়।
তারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের গল্প বলার ঢং খুব সুন্দর। পাঠককে আটকে রাখতে পারেন। মনে হচ্ছিলো হুমায়ূন আহমেদের কোন বই পড়ছি। একটা গল্পের পর আরেকটি গল্প পড়ে চলেছি, কিন্তু একবারের জন্য একঘেয়েমি চেপে বসেনি। এরকম বইয়ের জন্য এ ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই ধারার গল্পের লেখককে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হয় পাঠককে যেন একঘেয়েমি পেয়ে না বসে। আর তারাদাস বন্দোপাধ্যায় এদিক দিয়ে পুরোপুরি সফল। প্রতিটা গল্পই অতিপ্রাকৃতের কোন না কোন দিক ইন্গিত করেছে। যদিও তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে আমার খুব পড়াশুনা নেই, তবুও অতিপ্রাকৃত গল্প হিসেবে তারানাথ তান্ত্রিকের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা জানতে পারাটা খুব উপভোগ্য ছিলো। তাই একটানে শেষ করে ফেললাম।
আসর বসিয়ে গল্প বলা চরিত্রগুলো আমার সবসময়ই পছন্দ। তারিনিখুড়ো, টেনিদা, তারনাথ। বিভূতির তারনাথ পড়েছিলাম। তারাদাসেরটা এবার পড়া হল। বাবার লিগ্যাসি ঠিকভাবেই ধরে রেখেছেন তারাদাস। একইরকম ভাবেই প্রকাশ করেছেন তারানাথকে। মনেই হয়নি অন্য লেখকের লেখা। গল্পগুলোতে হাড় হিম করা ভয় নেই, তবে শিহরণ রয়েছে। মনের মধ্যে দাগ কেটে যাওয়া টাইপ গল্প, একবার পড়েই ভুলে যাওয়ার মত নয় আরকি।
তারানাথ তান্ত্রিক শুরু করেছেন বিভূতিভূষণ কিন্তু তিনি শেষ করতে পারেননি। উনার দুটি গল্পই ছিলো শ্রেষ্ঠ আর এই শ্রেষ্ঠ জিনিসকে শ্রেষ্ঠত্বে নিয়ে গেছেন তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভূতের গল্প, অতিপ্রাকৃত গল্পের প্রতি আমার ঝোক নাই বললেই চলে কিন্তু তারানাথ সিরিজ পড়ে প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করলো এবং আমি এখন নির্ধিদ্বায় বলতে পারি এই জিনিস কালজয়ী মাস্টারপিস। যাই হোক প্রিয় লেখকের সুযোগ্য পুত্রের বর্ণনা ভঙ্গী আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে।
তারানাথ তান্ত্রিক এর এই তিনটে বই যতোটা না ভৌতিক তারও চেয়ে অনেক বেশি আবেগিক ও মানবিক। আর "গৃহত্যাগী জীবন" জিনিসটাই আমার কাছে অধরা আরাধ্য অনন্যসাধারণ কিছু মনে হয়। সাথে আছে বাংলার গ্রাম ও প্রকৃতি- এবং এসবের বিস্তারিত লেখবার বর্ণনা দেবার যে বাস্তব জীবন্ত লেখনী- সবমিলে পুরো জমে ক্ষীর...
"তারানাথ তান্ত্রিক" পুরো সিরিজটা - এ যেন কোনো বই না, এটা একটা (পরাবাস্তব) জার্নি - যেই জার্নিটা করার প্রতিটা মূহুর্ত বেশ উপভোগ্য এবং সেই জার্নিটা শেষ হবার পরেও বেশ কিছুদিন ফিরেফিরেই মনে হয়, "আহ্! জার্নিটা আরো খানিকটা বড়ো হলে কিইবা এমন ক্ষতি হতো! ইশ্!"...
তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প-উপন্যাস এর কথা অনেক বছর আগে থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু আমি হরর গল্প পড়তে খুব ভয় পাই আসলে! তাই এতদিন পড়া হয়নি। শেষমেশ ভাবলাম, এত পাঠকপ্রিয় একটা বই আমার না পড়ে থাকা উচিত হবে না। সেই ভেবেই কেনা। কিনে যে কতটা ঠিক করেছি তা পড়ামাত্রই বুঝতে পেরেছি। গল্পগুলো তন্ত্রসাধনাকে উপজীব্য করে নানান আধিভৌতিক অভিজ্ঞতার সমষ্টি হলেও বিকেল বা দুপুরবেলা পড়েছি বলেই হয়তো ভয় আমার একটুও লাগেনি৷ বরং পাতার পর পাতা পড়ে যাওয়ার অদম্য আগ্রহ প্রায় প্রতিটা গল্পেই জিইয়ে ছিল। বইটি পড়তে শুরু করেছিলাম এমন এক সময়ে যখন আমার দুর্দমনীয় মানসিক চাপ ছিল, তাই খুব অল্প অল্প করেই আমাকে পড়তে হয়েছে। তবুও দিনের সেই ১৫-২০ মিনিট সময়ের জন্যই আমি মুখিয়ে থেকেছি। তন্ত্র সাধনার উপর ভিত্তি করে আগেও কিছু বই আমার পড়া হয়েছে। কিন্তু এই বইটার ক্ষেত্রে ভালো লাগার আরো কয়েকটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, মজলিশি গল্পের একটা আলাদা সুখ আছে। কয়েকজন মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে, আর তারই মধ্যে একজন দুঁদে গল্প বলিয়ে তার অদ্ভুত অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে দিয়েছে বৃষ্টিমুখর কোন দিনে, সাথে গরম চা আর তেলেভাজা, এমন দৃশ্যকল্প কল্পনা করতে কার না ভালো লাগে! তারানাথ তান্ত্রিকের অনেক গল্পেই দৃশ্যপটগুলো ঠিক তেমনই। এক��ম কল্পনাতে ভাসিয়ে ওই আড্ডায় নিয়ে পৌঁছে দেয়৷ দ্বিতীয়ত, তারানাথ তান্ত্রিক এর আকর্ষণীয় ভবঘুরে জীবন আর তারই সাথে মিলেমিশে গিয়েছে সব দুর্দান্ত অলৌকিক-লৌকিক অভিজ্ঞতা। গল্পের ফাঁকে কোলরিজের কবিতার কথা লেখক নিজেই বলেছেন। মানে তারানাথ এর গল্প বলার ধরন এমনই, যে অবিশ্বাস্য ব্যাপার ও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। তৃতীয়ত, সম্পূর্ণ গল্পে ঢুকে থাকার বিষয়টা। মধুসুন্দরী দেবীর আশীর্বাদ এ তারানাথের সাংসারিক টানাটানি তেমন থাকে না। চারি মানে তারানাথের মেয়েরও ভালো বিয়ে হয়। কিশোরী কিংবা গল্পকথক নিজেরাও ঝাড়া হাত পা। কাজেই অন্য কোন টেনশন গল্প উপভোগের মুডটুকুকে নষ্ট করতে পারে নি। কেবলই গল্পের মধ্যে ডুবে যাওয়া ছিল। চতুর্থত, অসম্ভব সুখপাঠ্য লেখনশৈলীর জোরে অত্যাশ্চর্য সব কাহিনী ফাঁদার সাথে সাথে একটুখানি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়ার প্রচেষ্টাও ছিল লেখকের। আবার ছিল মা��ে মাঝে কিছু কথায় চিরন্তন কিছু সত্যকে তুলে ধরার প্রবণতা। সব মিলিয়ে বইটি অনায়াসে পেয়েছে বাংলা সাহিত্যে ক্লাসিকের মর্যাদা।
গল্পের কাহিনী নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না। ও রস তাড়িয়ে তাড়িয়ে পাঠক আপনিই অনুভব করবেন। আর আমার ধারণা সিংহভাগ পাঠকেরই বইটি ইতোমধ্যে পড়া হয়ে গিয়েছে। হয়তো গুটিকয়েক বাকি, তবে এই বইটি দ্বিতীয়বার পড়তেও আপত্তি নেই। এছাড়াও পাহাড়সম মানসিক চাপের ( বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা) সময়গুলোতে যেভাবে এই গল্পগুলো আমাকে একটু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিয়েছে, তাতে সবসময় এর জন্যই গল্পগুলো আমার একান্ত আপনের খাতায় যুক্ত হয়ে গেল।
অতিপ্রাকৃতিক কিংবা অশরীরীদের গল্প আমার ঠিক আরামের জায়গা নয়। জুতসই শিহরণ জাগানিয়া গল্প তেমন পড়া হয়নি বলেই বোধহয়। তবে তারানাথ তান্ত্রিক সেদিক দিয়ে একদম মন ভরিয়ে দিয়েছে! বাংলা সাহিত্য নিয়ে আড্ডা দিতে বসলে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা না পারাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তাঁকে নিয়ে এখন আলাদা করে কিছু বলা বাতুলতা। এই বিভূতিভূষণ বাবুর সৃষ্ট চরিত্র তারানাথ তান্ত্রিক। এক লেখকের সৃষ্টিকে নিয়ে অন্য কেউ লিখতে গেলে আমার খুঁতখুতে মন কিছুতেই স্বস্তি পায়না। তাই কিংবদন্তীতুল্য পিতার দেহত্যাগের পর সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এই গল্প লিখে চললেন শুরুতে কিছুটা নাক খটকা ভাব যে ছিলনা সেটা বলবো না। তবু স্বীকার না করে পারছি না, তারাদাস বাবুর অনবদ্য লেখনীর গুণে তারানাথ তান্ত্রিক বরং অন্য এক মাত্রা পেয়েছে! ঝড়ের সন্ধ্যায় কিংবা ঘুটঘুটে অন্ধকারে বসে তারানাথের মুখে শব সাধনা, হোম, তন্ত্র, প্রেত আর অশরীরীদের কাণ্ডকীর্তি শোনাটা নির্ভেজাল ভয়ের সাথে সাথে যে আনন্দ দেয় সেটার কোনো তুলনা নেই! তার উপর বোনাস পয়েন্ট যোগ হবে যদি শোনা যায় মিরছি বাংলার সানডে সাস্পেন্সে স্পেশাল সাউন্ড ইফেক্ট দিয়ে বলা গল্পগুলো!
কিছু করার খুঁজে পাচ্ছিলাম না, একটানা থ্রিলার পড়তে পড়তে বিরক্তও হয়ে গেছিলাম কিছুটা, তাই নিতান্তই অবহেলা ভরে হাতে তুলে নিয়েছিলাম তারানাথ তান্ত্রিক। আর তারপরের ঘটনা অতি সাধারণ - মানে অসাধারণ - পরের দিন সূর্যোদয়ের আগেই অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুতে হবে জেনেও গভীর রাত পর্যন্ত একটানা পড়ে শেষ করে ফেললাম বইটা। আর তারপরে, লাইট নিভিয়ে বিছানায় যাবার সময়ে গা যে একটু ছমছম করছিল না, বুকে হাত দিয়ে একথা বলতে পারব না।
এক্কেবারে "দিশী" ভাষায় খাঁটি দেশী ভৌতিক গল্পের সমাহার। তারানাথ তান্ত্রিকের সাথে কিছুটা তারিণীখুড়োর মিল রয়েছে। দুজনেই গল্প বলেন জমিয়ে, আর সেগুলো গল্প তো নয়, নিজের জীবনেরই ঘটনা। পার্থক্য হলো তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো গা শিউরানো ভয়ের। একেকটা গল্পের একেক রকম স্বাদ। কাপালিক, শব-সাধনা, মারণ-উচাটন, বেতাল, এমনকি জাতিস্মর আর খুনের গল্পও আছে। প্রত্যেকটি গল্পই আপনাকে শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে ছাড়বে, এমপ্নই টান আর লেখনীর গুন। হরর প্রিয় সব পাঠকের অবশ্য পাঠ্য।
আমি হরর ধাঁচের বই পড়ি না একেবারেই। সেই ছোট বেলায় অশুভ সংকেত আর ড্রাকুলা পড়েছিলাম, ব্যস! তবে এই বইটা নিয়ে বেশ আলোচনা দেখে পিডিএফ যোগাড় করেছিলাম। বাদলা দিন আর ছুটি, একেবারে সোনায় সোহাগা। পড়ে ফেললাম। এতো সাবলীল ভাষায় অতি প্রাকৃত কিছু পড়বো ভাবতে পারিনি। সব যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। প্রিয় লেখকের সুযোগ্য পুত্রের বর্ণনা ভঙ্গী আমাকে মুগ্ধ করেছে।
তারানাথ তান্ত্রিক। মধ্য কলকাতার মট লেনের বাসিন্দা এই ভদ্রলোক জ্যোতিষ চর্চা করে দিন গুজরান করেন। আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু তারানাথের কাছে সেই অর্থাভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। সে বুঁদ হয়ে থাকে তার দীর্ঘ তন্ত্রসাধনালব্ধ অভিজ্ঞতায়। সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে তার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসে গল্পের কথক আর কিশোরী নামের এক তরুণ। তারানাথ তাদের সামনে খুলে দেয় তার গল্পের ঝুলি। নিঃসৃত হতে থাকে একের পরে এক গল্প।তারানাথের জন্ম হয় একান্নবর্তী ব্রাহ্মণ পরিবারে। যৌবনে পা- দিতেই সাধু ও সন্ন্যাসী জীবনেরে প্রতি অগ্রহ বোধ করেন। তাই সাধারন জীবন- যাপন ত্যাগ করে বেরিয়ে পরে সন্ন্যাসী জীবনের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য। আর একের পর এক সাক্ষী হন অপ্রাকৃতিক ঘটনার।
যদিও পরর্বতী জীবনে সংসারী হন, কিন্তু অর্থের প্রতি মোহ না থাকায় বেশি অর্থ লাভ করতে পারে নি।কলকাতার মট লেন হাত দেখে এবং কড়ি বিক্রি করে কোন রকম দিন পার করে দেয়। আর অবসর সময়ে তার যৌবনের রোমাঞ্চকর অপ্রাকৃতিক ঘটনা বলে দুই শ্রোতা কথক আর কিশোর এর সাথে। যদি ও কিশোর সব ঘটনা সত্য বলে মেনে নিতে পারেনা। এতে তারানাথ কিঞ্চিত মনঃক্ষুণ্ণ হলেও গল্পের আড্ডা চালিয়ে যায়।
আমি বিশ্বাস করি মানুষকে হাসানোর চেয়েও কঠিন হল ভয় পাওয়ানো।ভৌতিক গল্প-ছায়াছবি আমার খুব বেশি পছন্দের বলেই হয়ত ব্যাপারে আমি ভীষণ "চুজি"। কিভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে, আদৌ ভয় দেখাতে পারছে কিনা সেটা আমার কাছে জরুরি। একটা গল্প পড়েও মনে হয়নি সে চেষ্টার ছিটে-ফোটাও পেলাম। ভাল লাগেনি।
বছরের শেষ বই সম্ভবত । এই বছর টার্গেট করেছিলা ২৫ টা বই পড়ব । সমস্ত হিসেব নিকেশ উলটে , গুডস রিডস এর কল্যানে , তার হিসেব ও হিসেবের বাইরে ৫৩ টি বই পড়েছি । গত বছর ১৬ টা পড়েছিলাম । সে দিক থেকে বলা যায় ব্যপক উন্নতি । এই উন্নতির পেছনের কারন আমার এক্সিডেন্ট । অন্য মানুষকে বিরক্ত করার থেকে বইয়ে মুখ গুজে থাকায় উত্তম । কাজ ছাড়া আমার পক্ষে এক মিনিট থাকা সম্ভব না । বই পড়াকে আমি ঠিক সেই পর্যায়ে নিয়ে গেছি , মাঝখানে একটু গ্যাপ গেলেও এখন বই না পড়লে ঘুম আসতে চাই না । ২০১৬ সালে আমার জীবনের সব চেয়ে বাজে বছর এবং সেই সাথে স্মরনীয় বটে ।আগামী বছর ও একি ভাবে বই পড়তে চাই । মানুষের সাথে বেশি কথা বলে ক্যালরি নষ্ট না করে বই পড়াই উত্তম বলে মনে করি।
যাই হোক বই নিয়ে দু কথা না বললেই নয় "আলতাচক্র" পড়ার পর বুঝলাম এই বইটাও পড়তে হবে । তারানাথ কে আরো জানতে । ফ্যাসিনেশান বড় অদ্ভুত জিনিস , আমাকে কেও ফ্যাসিনেট করেছে বলেছে মনে পড়ে না । আমি লজিক্যাল মানুষ তারপর লেখকের লেখনীর এক অদ্ভুত মায়াজাল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ���মি তারানাথের সাথে খাওয়া দাওয়া করছি । আগের কার দিনের মানুষ চোয়া ডেকুর না তুলে কিভাবে একটি আস্ত পাঠার মাংস খায় তা ভাবার বিষয় । দেড়সের দুধ জ্বালিয়ে আধসের করে প্রত্যাহ সকালের জলখাবার খাওয়া , ভরপেট খাওয়ার পর কুড়িটা ল্যাংড়া আম খাওয়া এসব শুনলেই শুধু অবাক ই হতে হয় না রীতিমর মুখ হা হয়ে যায় । আজকের যুগে সেসব আশা করা সত্যি বৃথা । তাছাড়া মাঝরাতে আপনি কোন রমনীকে পাবেন না যিনি ভালবসে আপনার জন্যে সেগুলা রান্না করবে । বইটি যদি কেও কখন পড়েন তবে একা একা , শান্ত পরিবেশে মনযোগ দিয়ে পড়বেন।
ভৌতিক বা প্যারানরমাল গল্প শোনার বা পড়ার বিষয়ে আগ্রহ ছোট বেলা থেকেই। ভয় ভয় করবে, গায়ের মাঝে ঠাণ্ডা শিহরন জাগবে তাহলেই না গল্পের সার্থকতা। সে হিসেবে এই বইটা মোটামুটি সার্থক। তবে বইটার সার্থকতা আমার কাছে অন্য জায়গায় লেগেছে, বর্ণনাশৈলীতে। ভৌতিক গল্পের লেখকরা সাধারনত দেখেছি ভূতেই বেশি গুরুত্ব দেয়, কিন্তু বিভুতিবাবুর ছেলে শুধু ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে না, চরিত্র নির্মাণ, গ্রামীন প্রকৃতি, আচার সবকিছুকেই সমান গুরুত্ব প্রদান করেছেন। একদমই চেপে ধরে ভয় দেখানোর চেষ্টা নেই বইজুরে।
একটা দুটো গল্প একটু দুর্বল লেগেছে, বাকিগুলো অসাধারন।
একটা ভূতের গল্পের স্বার্থকতা কোথায়? শহুরে পরিবেশে আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে কি ভয় জাগ্রত হওয়ার কথা? হোক না সেটা বর্ষণমুখর রাত। যদি কেউ অমবস্যার রাতে নির্জন বট গাছের তলায় শুধুমাত্র নাইট ভিশন গগলস পরে ভূতের গল্প পড়ে তাহলে কি তার মধ্যে ভয় জাগ্রত হবে? যদি তাই হয়, তাহলে কৃতিত্বটা কার? পুরোপুরি নিশ্চয় লেখকের নয়। ভয় পাওয়াটা আবার বয়স নির্ভরও। একটা বাচ্চা যত সহজে ভয় পেয়ে যাবে তত সহজে কিন্তু একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ভয় পাবে না। আসলে ভয়টা আসে কোথা হতে?
এই গল্প সংকলনটা কিন্তু বেশ ভালো। পুরোপুরি গ্রাম্য সেইসব রীতিনীতি, পরিবেশ, বিশ্বাসের বর্ণনায় চমৎকার কিছু গল্প লিখেছেন লেখক। ভয় পায়নি কেন, এটাই আমার দুঃখ।
এই বইয়ের কোন খুঁত ধরা যায় কি না? হু, গল্পের কোন টাইটেল নেই। তার বদলে আছে ছবি টাইপের কিছুমিছু। এই যেমন গাছ, শিং, ঘন্টা, কঙ্কাল ইত্যাদি। কাউকে বলতে হলে বলতে হবে ঐ যে ঐরকম একটা সাইন দিয়ে যে গল্পটা আছে না, ওইটা!
ভূতের গল্পগুলো ভয় পাওয়ার বাসনা পূরণ করায় যতটা ভালো লাগে তার থেকে বেশি ভাল লাগে গল্পগুলোর রহস্যময়তার জন্য যে রহস্যময়তার জন্ম বাস্তবে নয়; কল্পনায়।
পিতা বা মাতা বিখ্যাত হলে সন্তানের জীবনে যে অবধারিত বিড়ম্বনাটি জোটে তা হচ্ছে সন্তান পিতা/মাতার চর্চিত ঐ বিশেষ ক্ষেত্রটিতে নিজ স্বাক্ষর রাখতে পারলেন কিনা সেটা নিয়ে পাবলিকের কৌতুহল। সেই স্বাক্ষর যদি পিতা/মাতার মাপের না হয় তাহলে তার ললাটে কিছু বাড়তি গঞ্জনা বরাদ্দ থাকে। সবচে’ অপমানের বিষয় হচ্ছে, তিনি যদি স্বমহিমায় পিতা/মাতাকে অতিক্রম করে যেতে না পারেন তাহলে নিজে যতটুকু, যা-ই হন না কেন তার পরিচয় শুরু হবে ‘অমুকের পুত্র/কন্যা তমুক’ বলে। এই বক্তব্যটির একটা করুণ উদাহরণ হচ্ছেন তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় — যার পরিচয় শুরু হয় ‘প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়’ বলে। এই বিষয়টি আমাকে বিরক্ত করেছিল ততদিন পর্যন্ত যতদিন না আমি তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়েছি। কিন্তু তার কিছু লেখা যখন পড়ার এবং অন্যগুলো সম্পর্কে জানার সুযোগ হয় তখন থেকে আমার প্রতিবেদকদের এমন ক্লিশে বর্ণনার ওপর থেকে বিরক্তি চলে যায়। লেখক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তার লেখালেখির বড় অংশজুড়ে কেবল তার পিতার নির্মিত জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটা করে সেগুলোর আদ্যশ্রাদ্ধ করে ছেড়েছেন।
তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ওভাররেটেড বই হচ্ছে ‘তারানাথ তান্ত্রিক’। যারা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প’ আর ‘মধুসুন্দরী দেবীর আবির্ভাব’ গল্পদুটো পড়েছেন তারা তারানাথ তান্ত্রিককে যেমন চেনেন তেমন অতিপ্রাকৃত গল্প লেখায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। যারা ঐ গল্পদুটো পড়েননি তারাও বাংলা গদ্য সাহিত্যকে পালটে দেয়া তিন বাঁড়ুজ্জ্যে’র একজন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতিপ্রাকৃত গল্প লেখার সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। (বাকী দুই বাঁড়ুজ্জ্যে হচ্ছেন — মানিক আর তারাশঙ্কর)। সুতরাং বিভূতিভূষণের সৃষ্ট চরিত্র নিয়ে খেলতে যাওয়া এক বিশাল ঝুঁকির বিষয়। তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঝুঁকিটি বার বার নিয়েছেন এবং ক্রমাগত ধরা খেয়েছেন।
শিরোনামবিহীন ১০টি গল্পের এই সংকলনের গল্পগুলোকে কোন ক্যাটেগরিতে ফেলা যাবে সেটা নিয়ে পাঠক দ্বিধায় পড়ে যাবেন। কারণ, এই গল্পগুলোতে কিছু অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারস্যাপার আছে বটে কিন্তু সেগুলোকে অতিপ্রাকৃতিক বা ভূতের গল্প বলার উপায় নেই। ‘হরর’ নামক সাহিত্যের বিশাল বৃক্ষের অসংখ্য ডালপালার কোনটাতে এগুলো ঝুলানো একটু কঠিন বৈকি। এই গল্পগুলোর উদ্দেশ্য কী? পাঠককে ভয়ে শিহরিত করা? সেই বিচারে এগুলো ব্যর্থ। পাঠককে রোমাঞ্চিত করা? সেই বিচারেও এগুলো হালে পানি পায় না। যে মধুসুন্দরী দেবীর দোহাই এই গল্পগুলোর পদে পদে দেয়া হয়েছে সে মধুসুন্দরী দেবীর মূল আখ্যানের ছিটেফোঁটা রসও এই গল্পগুলোতে মেলে না। গল্পগুলোতে কোথাও কোথাও ‘ক্যান্টারবেরি টেলস’-এর মতো ওয়াজ নসিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে; কোথাও ‘আম আঁটির ভেঁপু’র মতো বাংলার গ্রামীণ সমাজচিত্র ফোটানোর চেষ্টা করা হয়েছে; আবার কোথাও ‘আরণ্যক’-এর মতো নিসর্গের বর্ণনা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলাফল হয়েছে একটা থার্মোফ্লাস্কে একইসাথে আইসক্রীম আর গরম কফি রাখার কৌতুকটার মতো।
শ্মশান, পোড়োবাড়ি, মড়া, কঙ্কাল, কাপালিক, তান্ত্রিক, সাধু, খুন ইত্যাদি বহুলচর্চ্চিত উপাদানগুলো ছাড়াও অতিপ্রাকৃত, ভৌতিক ঘরাণাগুলোর গল্প হতে পারে। বাংলা সাহিত্যেই তার যথেষ্ট উদাহরণ আছে। এর জন্য তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরণাপন্ন হবার দরকার নেই।
দশটা অশরীরী গল্প। পড়ে একেবারে গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে তা না, তবে ভিন্নস্বাদ পেয়েছি। তারানাথ চরিত্রটি তন্ত্রসাধনার পথে অনেকদিন কাটিয়ে ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি না নিয়ে ব্যর্থ হওয়া এক তান্ত্রিক। তবে তন্ত্রসাধনায় সাফল্য না আসলেও গল্প বলায় (বা ফাঁদায়) সে ওস্তাদ। আর পথে পথে ঘুরে ঝুলিতে গপ্পোও জমেছে ঢের। জীবনের অনেক অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা সে লেখক আর কিশোরীর সাথে আড্ডায় ��লে। সেই অভিজ্ঞতারই একটা সংগ্রহ তারানাথ তান্ত্রিক বইটা।
বলা বাহুল্য, এই তারানাথ তান্ত্রিক হবার কারণে তার মোটামুটি সব গল্পই তন্ত্রসাধনা নিয়েই। ফলে পটভূমিতে আমাদের নিখুঁত গ্রামবাংলার চিত্রটা ফুটে উঠেছে। ট্যাবলেটে এই বইএর পিডিএফ পড়ে ভয়টা জমানো কঠিন। তবে তারপরেও ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠতে হয়েছে। বিশেষ করে খাঁটি বাংলাদেশের ভুতের গল্পে ওয়েরউলফ টা তো ছিল বড়সড় চমক।
বলতে শুরু করলে অনেক কথাই বলা হয়ে যাবে। বরং থামি। স্পয়লার দেওয়ার পাপে দুষ্ট হওয়ার কোন বাসনা আমার নেই!
ছোট ছোট কাহিনীগুলো খুব সাদাসিদে আবার একই সাথে খুব চিত্তাকর্ষক। সরল ভাষায় লিখা চমৎকার শব্দ চয়ন। বর্ণনা যেন চোখের সামনে ভাসে। আর ঝড়জলের রাতে পড়তে গিয়ে খানিকটা ভৌতিক শিহরণও পেয়ে গেলাম।
There are more things in heaven and earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy. - Hamlet
রিভিউ : তারানাথ তান্ত্রিক লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় / তারাদাস বন্দোপাধ্যায় জনরা :হরর /অকাল্ট থ্রিলার ___________________________________________________________________ তারানাথ তান্ত্রিক এর আবির্ভাব বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর "তারানাথ তান্ত্রিক এর গল্প" তে। তারপর তিনি এই চরিত্র কে নিয়ে আরো একটি গল্প লিখে যান। এরপরে তার পুত্র তারাদাস এই চরিত্রকে নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প প্রকাশ করেন। প্রায় গল্পের শুরুতে দেখা যায়,গল্পের কথক আর তার বন্ধু কিশোরী সেন বিভিন্ন সময়েই কিছু উপহারের বিনিময়ে তান্ত্রিকের জীবনের বিভিন্ন বিচিত্র অভিজ্ঞতা শুনতে যান।আর তারপরেই তারানাথ শুরু করেন তার বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা ,যা পাঠককে নিয়ে যায় এক অন্যভুবনে ! ___________________________________________________________________ রেটিং :৯.৫ /১০(গ্রাম বাংলার পটভূমিতে লিখা এক অসামান্য ভৌতিক রচনা। এই গল্প পড়ার আদর্শ সময় বৃষ্টি মুখর রাত...যা সত্যি সত্যি পাঠকের মনকে এক অন্যজগতে নিয়ে যায় !)
বইটা অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম পড়বো, কিন্তু কোন কারনে পড়া হচ্ছিলো না। অক্টোবরেই তাই বেছে নিলাম, কিন্তু তাই বলে যে পুরো মাস ধরে পড়বো তাও ভাবিনি! এর কারন কিন্তু এই গল্পগুলো না, আমার সময়ের অভাব। এটা তারানাথ তান্ত্রিককে নিয়ে কতোগুলো গল্পের সমগ্র। বিভূতিভূষণের তারানাথকে আরো ভালোভাবে চেনা যাবে এই বইয়ে। অবশ্য লেখনীর দিক দিয়ে তারাদাসও কোন দিক দিয়ে কম যান না। এক একটা গল্প অসাধারণ। অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে আসে এই গল্পগুলো, পড়ার পর মনে হয় চারপাশে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে কোন অশরীরী, ঘাড় ঘুরালেই হয়তো দেখতে পাবো। আমার হরর থিওরি মতে এই বই রাতে পড়া উচিত, যখন সবাই অঘোরে ঘুমুচ্ছে। আসল মজাটা আসে তখনই। আচ্ছা এই বইএর উপর ভিত্তি করে টিভি সিরিজ বানালে মন্দ হয়না! যারা তারানাথ তান্ত্রিককে এখনো চিনেন না, তাদেরকে অবশ্যই বিভূতিভূষনের তারানাথ তান্ত্রিক পড়ার জন্য অনুরোধ করবো, তার পরে অবশ্যই তারাদাসের এই তারানাথ তান্ত্রিক।
বিভূতিভূষণ এর তারানাথ থেকে তারাদাসের তারানাথকে বেশী ভালো লেগেছে । তারাদাসের গল্পগুলোও বিভূতিভূষণ থেকে বেশী ভালো হইছে । একবারে গ্রামীণ পরিবেশে এই রকম হরর গল্প পড়ে বেশ মজা পেয়েছি । যদিও হরর আমার ফেভারিট জনরা না কিন্তু এই বইটি বেশী রকম ভালো লেগেছে । A must read horror for all .
ছোট ছোট গল্প। অসাধারণ লেখার ধরণে মনে হয় যেন স্বয়ং আমি নিজে উপস্থিত হয়ে সব দেখছি। ভূতের গল্পের বই আমার বরাবরই প্রিয়। এইজন্য ভালো লেগেছে তা বলব না বরং ভালো না লাগলেও এই বইটা নির্ঘাত ভালো লাগত।
শেষ করে ফেললাম তারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের লিখা বই "তারানাথ তান্ত্রিক"। তারানাথ তান্ত্রিক সৃষ্টি করেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু মাত্র দুইটা গল্প শেষ করেছিলেন তিনি। সেই দুইটা গল্প ছিলো অসাধারণ। কি লেভেলের অসাধারণ সেটা যারা পড়েছেন তারাই জানেন। যাইহোক, বাবা বিভূতিভূষণ যেখানে শেষ করেছিলেন সুপুত্র তারাদাস সেখান থেকেই শুরু করেছেন। আর বলতেই হয় বাবার লেগেসি একদম যথার্থ এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি।
বইয়ের জগতে এই "তারানাথ তান্ত্রিক" নামটা এমন এক নাম যে কেউ না কেউ কখনো না কখনো শুনেছেই। তারানাথ তান্ত্রিক হচ্ছেন এমন এক ব্যর্থ তান্ত্রিক যার তান্ত্রিক জগতে অতি উচ্চস্তরে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে তিনি তা হতে পারেননি। এখন তিনি হাত দেখে কিছু পয়সা কামান। আর চমৎকার গল্প বলতে পারেন। তারই জবানীতে বেশ কিছু গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে এই বইটা। গল্পগুলা দারুণ উপভোগ্য। ভয়ের কথা যদি বলেন, তবে আমি বলবো খুব ভীতু শ্রেণীর না হলে অনেক বেশি ভয় পাবার চান্স কম। তবে ভালো লাগবে এইটা শিওর। অতিপ্রাকৃত কিছু আছে কি না সেটা নিয়ে আমি তর্ক করতে যাবো না। এই বইটা পুরোটাই অতিপ্রাকৃত জিনিসে ভরপুর। তবে, আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো এই দুনিয়াতে এমন অনেক কিছুই আছে যা যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করা কঠিন। অতিপ্রাকৃত অনেক কিছুই ঘটতে পারে এই দুনিয়ায়।
সবমিলিয়ে বলবো, যদি আমাকে বাবা এবং ছেলের মধ্যে তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলার তুলনা করতে বলেন তবে সেক্ষেত্রে নি:সন্দেহে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এগিয়ে থাকবেন। তার দুইটা গল্প অন্য লেভেলের একদম। তবে, তার ছেলেও কিন্তু কম যায়নি। সুন্দর প্লটের সাথে সহজ ভাষায় গল্প লিখেছেন একদম। খাপছাড়া লাগার কোনো অবকাশ নাই। পাঠককে রীতিমতো আটকে রাখতে পেরেছেন। একবার এই বই ধরলে শেষ না করে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য। মনের মধ্যে দাগ কাটার মতো গল্পগুলা। বলতেই হয়, বেশ উপভোগ করেছি। পড়া না থাকলে পড়ে ফেলুন। সময় নষ্ট হবার কোনো চান্স নাই।
বিভূতি যেখানে শেষ করেছিলেন তার পুত্র তারাদাস সেখান থেকেই শুরু করেছেন। গল্প বলা ও গল্প শোনা উভয়েই আকর্ষণীয়। যথারীতি গল্পগুলো এসেছে তারানাথের মুখ থেকে। তার অদ্ভুত জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় বিভিন্ন আঙ্গিকে উঠে এসেছে। সবগুলো গল্পই অবাস্তব তবু পড়তে ভালো লাগল।