এই আমাদের দেশ। আমার জন্মভূমি- সমগ্র ভারতবাসীর অন্তর থেকে এই অঙ্গীকার সব সময় উচ্চারিত হয়না। কোনও কোনও অঞ্চলের মানুষ ভারতের মুল স্রোত থেকে।, জীবনদর্শন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। এমনই একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল পশ্চিম বাংলার উত্তরে, দার্জিলিং পাহাড়ে।শান্ত, নির্জন, রৌদ্রস্নাত, হিমস্পর্শী সেই পাহাড়ে জ্বলে উঠেছিল অশান্তির আগুন।
Samaresh Majumdar (Bangla: সমরেশ মজুমদার) was a well-known Bengali writer. He spent his childhood years in the tea gardens of Duars, Jalpaiguri, West Bengal, India. He was a student of the Jalpaiguri Zilla School, Jalpaiguri. He completed his bachelors in Bengali from Scottish Church College, Kolkata. His first story appeared in "Desh" in 1967. "Dour" was his first novel, which was published in "Desh" in 1976. Author of novels, short stories and travelogues, Samaresh received the Indian government's coveted Sahitya Akademi award for the second book of the Animesh series, 'Kalbela".
সমরেশ মজুমদার-এর জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ। প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম গল্প ‘দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’, ১৯৭৫-এ ‘দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, উনিশ বিশ, সওয়ার, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আরও অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া ‘দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
সমরেশের বইগুলোতে একসময় বিরক্তি জেগেছিল। স্বাভাবিক অবশ্য, একজনের লেখা সপ্তার পর সপ্তা পড়তে থাকলে একই প্লটের বাঁধন, একই ডুয়ার্সের চা-বাগান, একটা দুটো বিপ্লবী চরিত্রের ঢুঁ মেরে কাহিনিতে জেঁকে বসা -- এসব পানসে লাগলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু অনেকদিন পর আবার পড়তে বসলাম, এবং সমরেশ আমাকে মুগ্ধ করলেন। আঁটোসাঁটো কলকবজাহীন পাহাড়ি জীবন কিংবা কলকাত্তাইয়া পরিবারের নকশা খাঁজ কেটে ঢুকে পড়েছে মাথায়, যার রেশ টের পাচ্ছি পাতা থেকে চোখ নামিয়ে অনেকবার পিটপিট করার পরেও।
গল্পটা রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত সায়নের। চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় দার্জিলিং এর একটা স্বাস্থ্যনিবাসে। পাহাড়ের সহজ সরল মানুষরা সায়নের মধ্যে অন্যরকম একটা শক্তি খুঁজে পায়, তাকে ভালোবাসে। সায়নও তার জীবনটা কাজে লাগায় মানুষের জন্য।
সায়নের পরিবার কলকাতার গোঁড়া, একান্নবর্তী পরিবার, যেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্বেষ আর হিংসা। সায়ন সেখানে গেলে আরো দম আটকে আসে তার। তাই পাহাড়ই তার আপনজন হয়ে দাঁড়ায়। পাহাড়ের সরল মানুষগুলোর জন্য কাজ করছেন বিদেশিনী এক নারীও। কিন্তু রাজনীতি আর স্বার্থপরতার বিষ তাদের ভালো থাকতে দেয় না।
সবমিলিয়ে খুব সুন্দর একটা উপন্যাস। পাহাড়ি জীবন আর তাদের সারল্য এর অদ্ভুত সুর পাবেন। লিউকোমিয়া আক্রান্তদের জীবনের কথা আছে। প্রাচীন কলকাতার গোঁড়া পরিবারের বর্ণনা পড়তেও বেশ লাগে।
" জ্বলন্ত আগুনের সেই রথ ক্রমশ আকাশ অধিকার করতে ওপরে, আরো ওপরে উঠে যাচ্ছিল।"
কলকাতার এক তরুণ সায়ন কে নিয়ে লিখা কাহিনী। যে ছিলো লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত। দার্জিলিং -এ ডাক্তার আঙ্কেলের ছোট্ট সেবাকেন্দ্র ' নিরাময়' -এ সায়ন এসেছে তার দুরারোগ্য অসুখের চিকিৎসা করতে। তার পর থেকেই পাহাড়েই তার বসবাস। ব্রাউন সায়নের মুখের আদলে খুঁজে পেয়েছেন যিশুর মুখের সাদৃশ্য। সেটিকে কেন্দ্র করে সায়নকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত মিথ। ব্রাউন, সিমি, কঙ্কাবতী, ম্যাথুজ, ডাক্তার তামাং, আমেরিকান মহিলা এলিজাবেথ প্রমুখ সহ ধীরে ধীরে সায়ন পাহাড়িদের খুব প্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু লিউকোমিয়া রোগাক্রান্ত সায়নকে একদিন গ্রাস করল পাহাড়েরই হিংস্র অগ্নিব্যাঘ্র।
ব্যাক্তিগত অনুভূতি - উপন্যাসটি শেষ করে বুকের ভেতর কেমন যেন ফাঁকা লাগছে । কি ভালোবাসায় মোড়ানো এই উপন্যাসটি! উপন্যাসের এক একটি চিত্র যেন আমার চোখের সামনে ভাসমান। সমরেশ মজুমদার এতো সুন্দর করে দার্জিলিং এর সৌন্দর্য বর্ননা করেছেন যে খুব ইচ্ছে করছে দার্জিলিং এ গিয়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করি। সায়নদের কলকাতার বাড়িটি ছিলো একান্নবর্তী পরিবার। যেখানের সকল রীতিনীতি আঠারো শতকের মতো। বাড়ির বউরা অন্য কোথায় বেড়াতে যেতে পারবে না, কোনো পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে পারবে না, মেয়েদের পিরিয়ড হলে একটা রুমে বন্ধ থাকতে হবে, কাউকে ছুঁতে পারবে না ইত্যাদি। এসব পড়ে আমার বেশ মেজাজ খারাপ হয়েছিলো। তবে এক কথায় অনবদ্য এবং অসাধারণ লেগেছে আমার উপন্যাসটি।
গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সম্পর্কে জানেন তো! পার্বত্য চট্টগ্রাম বনাম সমতল বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট জানা থাকলে এই আন্দোলনের চরিত্র বোঝা টা কষ্টের কিছু নয়।এই রূপ দ্বন্দ্বের চরিত্র যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়েও বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা ও বঞ্চনার। ব্লাড ক্যান্সার পেশেন্ট , তরুণ সায়ন রায়চৌধুরী চিকিৎসার্থে আসেন পাহাড়ের গহীনে গড়ে তোলা "নিরাময়" নার্সিংহোমে।অসুস্থ সায়নের গল্প বলতে গিয়ে লেখক তৎকালীন পাহাড়ি বনাম বাঙালি সংঘাত কে তুলে ধরেছেন,দেখিয়েছেন যে, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন পরবর্তী সময় কালে স্বাধীনতা কামী সংগঠনের চরিত্র কিভাবে বদলে গিয়েছে।
স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই উপন্যাসে লেখক আরো দেখিয়েছেন,কুসংস্কারাচ্ছন্ন, গরিব মানুষ কিভাবে সায়নের মাঝে যিশু খ্রিষ্টকে দেখছে,দেখছে নিজের ত্রাণকর্তাকে।দেখবেন,সায়ন কেমনি করে পাহাড়ের মানুষের ভগবান হয়ে উঠছে।অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার আশ্বাস দিলে সত্যি হয়ে যায়,সে ভগবান, সায়ন কিনা ব্লাড ক্যান্সার পেশেন্ট!সাধারণ মানুষ তো সর্বদা ত্রাণকর্তা চেয়েছে।
সায়ন রায়চৌধুরীর গল্প বলতে গিয়ে লেখক গিয়েছেন রায় পরিবারের কাছে,যে রায় পরিবার ঐতিহ্য রক্ষার দায়ে পশ্চাৎপদ সমাজের প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কলকাতার রায়বাড়িতে,যেখানে প্রসঙ্গ এসেছে নারীর বন্দি জীবনের।
এই উপন্যাসে বোধহয় বৃহত্তর সমাজ নিয়ে কথা বলতে চেয়েছেন লেখক , গল্পের প্রয়োজনে তুলে এনেছেন নানান প্রসঙ্গ,কিন্তু সেসব প্রসঙ্গ সব পরিপূর্ণ আকার পায় নি তার লেখনীতে।হয়তো বা এই কারণে,অনিমেষ মাধবীলতা ট্রিলোজির মত এই উপন্যাস অতটা জনপ্রিয়তা পায় নি। পড়ে দেখবেন,পড়া শেষ হবে মানুষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ নিয়ে, একরাশ হাহাকার নিয়ে,দেখবেন ভগবান সায়ন রায়চৌধুরী দিনশেষে একদল হায়েনার কাছে হেরে গেছে।
গল্পের এন্ডিং প্রচন্ড বাজে লেগেছে। শেষটা কি জোড়াতালি দিয়ে শেষ করবার জন্যই করা নাকি পাঠককে অপ্রয়োজনে প্রচন্ড নাড়া দেয়া লেখকের উদ্দেশ্য ছিলো তা জানি না। গল্পের ভিত তেমন শক্ত না হলেও, বেশিরভাগ চরিত্র তেমন গভীর না হলেও পড়ে যাচ্ছিলাম আগ্রহ নিয়েই, কিন্তু শেষটা অপ্রয়োজনীয় এবং বাকি গল্পের সাথে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই উপন্যাস মনে যেই তিতে রেশ রেখে গেছে সেটা কাটাতে বইয়ের তাক ঘাটতে বসছি এখনই।
সমরেশের অনিমেষ,গর্ভধারিণী,সাতকাহন এই বইগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা নয়।কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলতে আমি কাউকেই দেখি নি।অনেক ভালো ভালো কাজও যে প্রচন্ডরকমের আন্ডাররেটেড হতে পারে সেটা এই উপন্যাসটা পড়ার পর আমার মনে হলো। সমরেশ পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি।সেই ছোটবেলা থেকেই।মাঝখানে বেশ কিছু লেখা পড়েছিলাম যেগুলো আমাকে তেমন একটা মুগ্ধ করতে পারেনি কিন্তু এই উপন্যাস পড়ে অভিভূত হয়ে গেলাম