Shankha Ghosh (Bengali: শঙ্খ ঘোষ; b. 1932) is a Bengali Indian poet and critic. Ghosh was born on February 6, 1932 at Chandpur of what is now Bangladesh. Shankha Ghosh is regarded one of the most prolific writers in Bengali. He got his undergraduate degree in Arts in Bengali language from the Presidency College, Kolkata in 1951 and subsequently his Master's degree from the University of Calcutta. He taught at many educational institutes, including Bangabasi College, City College (all affiliated to the University of Calcutta) and at Jadavpur University, all in Kolkata. He retired from Jadavpur University in 1992. He joined the Iowa Writer's Workshop, USA in 1960's. He has also taught Delhi University, the Indian Institute of Advanced Studies at Shimla, and at the Visva-Bharati University. Awards: Narsingh Das Puraskar (1977, for Muurkha baro, saamaajik nay) Sahitya Akademi Award (1977, for Baabarer praarthanaa) Rabindra-Puraskar (1989, for Dhum legechhe hrit kamale) Saraswati Samman for his anthology Gandharba Kabitaguccha[1] Sahitya Akademi Award for translation (1999, for translation of raktakalyaan) Desikottam by Visva-Bharati (1999) Padma Bhushan by the Government of India (2011)
অনেক সময় নিয়ে অল্প অল্প করে 'এখন সব অলীক' পড়ে মনে হচ্ছে শঙ্খ ঘোষের সম্পূর্ণ জীবন-ই তো সাহিত্য। জীবনের সাথে সাহিত্যের সংযোগ আর জীবনের কথা সাহিত্যে রূপ দেয়ার মজার খেলায় শঙ্খ ঘোষ অলরাউন্ডার।
'বইয়ের ঘর' বইতে সাহিত্যের সাথে জীবনের যেমন প্রত্যক্ষ সংযোগ হয়েছিল তেমনি 'এখন সব অলীক' বইতে জীবনের সাথে সাহিত্যের সংযোগ ঘটেছে। যেন সাহিত্য-ই জীবন আর জীবন-ই সাহিত্য।
লেখকের জীবনের শ্রদ্ধেয় মানুষদের নিয়ে লেখা অধ্যায়গুলো পড়ে আমার জীবনের শ্রদ্ধেয় প্রিয় মানুষগুলোর কথা মনে পড়েছে। লেখকের স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ আমাকে নিয়ে গেছে আমার প্রিয় স্কুলের ক্লাসরুমে আর কলেজের হোস্টেলে।
আহা কত্ত দুষ্টু আর বেয়াদব ছিলাম। কত্ত অন্যায় করেছি স্যারদের সাথে, আশেপাশের মানুষদের সাথে। এসব পাপ স্মৃতি ভুলে যেতে চাই। মনে পড়লে কান্না আসে, দীর্ঘশ্বাস আসে। কত্ত জঘন্য ছিলাম ছোটোবেলায়!
'আর এক আরম্ভের জন্য' অধ্যায়টার পড়ে আমি যেন বাংলা সাহিত্যের যাত্রা আর সংগ্রামের গল্পটা জেনে নিলাম।
যারা সাহিত্যকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে আর জীবনের সাথে সাহিত্যের সংযোগ ঘটাতে চায় তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বই।
এখন তো সব অলীকই। সেই স্কুল, সেই মাঠ, সেই টিফিন টাইম, সেই গল্প, সেই শিক্ষকেরা। কত শিক্ষকদের হারিয়ে ফেলেছি ইতোমধ্যে। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের স্নেহাশীষের তুলনা হয় না। বড় জায়গায় গেলে সেইভাবে কাছে যাওয়া হয়ে ওঠে না শিক্ষকদের। তাই স্কুল-কলেজ সবসময়ই আলাদা। রবীন্দ্রনাথের ডকুমেন্টারিতে আকাশ কালো করে তেড়ে বৃষ্টি আসার মুহূর্তে হৃদয়ে মন্দ্রিল ডমরু গুরু গুরু গানটা এত চমৎকার! এই গানটা আর এই বইটা মনে করিয়ে দিচ্ছিল তেমনই একটা দিনে রিকশায় বন্ধুদের সাথে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরার গন্ধটা। শঙ্খ ঘোষের গদ্য আশ্চর্য মায়াময়। তাঁর প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষকদের কথাই বেশি এসেছে এই সংকলনে। এসেছে বন্ধুদের কথা। কত বিখ্যাত সব মানুষ পড়াতেন! সবাই বিদ্বান আবার সাহিত্যিক ও। কত অজস্র অদ্ভুত অভ্যাস ছিল তাঁদের। মেয়েরা ছিল অপ্রতুল। একদিন এক শিক্ষক এসে ছেলেমেয়েদেরকে আলাদা না বসিয়ে এক চেয়ারে ছেলে তার পরের চেয়ারে মেয়ে এভাবে ক্লাস সাজালেন। লেখকসহ সকলেই বিব্রত, আবার সুখের গোপন রিনিঝিনিও যে অন্তরে বাজছে না তা না। পরের শিক্ষক এসে একেই আবার 'রসাতলে গেল সব' বলে দাগিয়ে একটা বেঞ্চের লক্ষণসীমা টেনে দিলেন দুই জাতির মধ্যে! কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ছিলেন লেখকের কাছের বন্ধু। যদিও অলোক ছিলেন শঙ্খ ঘোষের দুই ক্লাস নিচে, স্বভাবেও ভিন্ন। দুই ক্লাস নিচে পড়ায় সম্বোধন করতেন আপনি বলে। একদিন অন্যদের হাসিঠাট্টা আর তাড়নায় ঠিক করলেন অলোক শঙ্খকে বলবেন নাম ধরে আর তুমি করে। জায়গা-সময় সব ঠিক করেও এই কাজে সফল হলেন না অলোক! এতদিনের অভ্যাস কি পালটানো যায়? এই গল্পটা পড়ে আমার একটা ব্যক্তিগত ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমি আর আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী এই দুজন একে অপরকে স্কুলে তুই বলতাম, সচেতনভাবেই বিশেষত্ব বজায় রাখার জন্য আমরা আর কাউকে তুই বলতাম না! পরবর্তীতে মেডিকেলে পড়তে গিয়ে সবাই সবাইকে তুই বলত, আমরা কেবল বলতাম তুমি! শ্রুতিকটু ছিল বিষয়টা। পরে দুজনে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম অন্যদের আমরাও তুই বলব! এই বইটির আশ্চর্য সুন্দর একটা উপাদান হচ্ছে বাড়ি যাওয়ার দিন প্রবন্ধটি-যা আমি আগেই বেড়াতে যাবার সিঁড়ি বইয়ে পড়েছিলাম। এই সংকলনটির শেষ প্রবন্ধটি একটা দামী জহরত বিশেষ। তৎকালীন সাহিত্যের উত্তরণ এবং পরিবর্তন যদি কেউ খুব অল্প আয়াসে জানতে চান তবে এই প্রবন্ধটি হবে অবশ্যপাঠ্য, নাম- আর এক আরম্ভের জন্য। চমৎকার ঋদ্ধ এই প্রবন্ধটিতে রবিঠাকুর থেকে শুরু করে হাল আমল পর্যন্ত সাহিত্যের পথ পরিক্রমার নির্দেশ রয়েছে, রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত সাহিত্যিকদের কথাও। এসেছে রাজনীতি, আদিবাসি আন্দোলন, হাংরি জেনারেশন ইত্যাদি বিষয়ের কথা। কবিদের গদ্য ভীষণ সুন্দর হয় আমার মতে। তাই কবিদের লেখা আত্মজৈবনিক কোন লেখা বা প্রবন্ধ সামনে আসলে লোভ সামলাতে পারি না। এই বইটি পড়েও খুব ভালো লেগেছে তাই।
শঙ্খ ঘোষের গদ্য আমার ভীষণ পছন্দের। তাঁর গদ্যভাষায় ভাষিক ঋজুতা ও চিন্তার গভীরতা একসঙ্গে ধরা দেয়। কবি হিসেবে খ্যাত হলেও তাঁর গদ্য রচনা স্বতন্ত্রতার দাবি রাখে।তাঁর লেখায় রয়েছে দার্শনিকতা, সাহিত্যসমালোচনার সূক্ষ্ম দৃষ্টি এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রজ্ঞার দীপ্ত প্রকাশ। বিশেষ করে সাহিত্য ও আত্মজৈবনিক ধরনের রচনায় তিনি অতুলনীয়। শঙ্খ ঘোষের গদ্য কেমন যেন মিষ্টি মিষ্টি, পড়া শেষে একটা মিহি রেশ থেকে যায় মনে।
' এখন সব অলীক ' বইয়ের লেখাগুলোয় রয়েছে লেখকের শৈশবের টুকরো স্মৃতি, ফেলে আসা অতীতের প্রতি প্রগাঢ় মমতার সাথে আরেকবার তাকানো, সারস্বত জগতের নিজ সতীর্থদের স্মৃতির অর্ঘ্যসহ বাংলা সাহিত্যের নানা দিকপালদের সাহচর্যের মায়াময় বর্ণনা। একজন মানুষ নিজের জীবন এবং সময়কালকে কিভাবে একই সাথে প্রবল অনুভূতি ও ঘটনাপরম্পরার অন্তর্নিহিত যুক্তিবোধ ঠিক রেখে ছবির মতো স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে তা ভেবে বিস্মিত হলাম। হয়তো শঙ্খ ঘোষ কবি বলেই হ্নদয় আর মননের এমন সাযুজ্য করতে পেরেছেন।