Jump to ratings and reviews
Rate this book

অন্নদাতা : বাংলার তেতাল্লিশের মন্বন্তরের কাহিনী

Rate this book
বাংলার তেতাল্লিশের মন্বন্তরের কাহিনি

63 pages, Hardcover

First published January 1, 2012

3 people are currently reading
169 people want to read

About the author

Krishan Chander

149 books80 followers
हिंदी : कृश्न चन्दर
Urdu Profile:کرشن چندر
Krishan Chander was an Urdu and Hindi writer of short stories and novels. He also worked on English.

He was a prolific writer, penning over 20 novels, 30 collections of short stories and scores of radio plays in Urdu, and later, after partition of the country, took to writing in Hindi as well.

He also wrote screen-plays for Bollywood movies to supplement his meagre income as an author of satirical stories. Krishan Chander's novels (including the classic : Ek Gadhe Ki Sarguzasht, trans. Autobiography of a Donkey) have been translated into over 16 Indian languages and some foreign languages, including English.

His short story "Annadata" (trans: The Giver of Grain – an obsequious appellation used by Indian peasants for their feudal land-owners), was made into the film Dharti Ke Lal (1946) by Khwaja Ahmad Abbas – which led to his being offered work regularly as a screenwriter by Bollywood, including such populist hits as Mamta (1966) and Sharafat (1970). He wrote his film scripts in Urdu

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
78 (57%)
4 stars
48 (35%)
3 stars
7 (5%)
2 stars
2 (1%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 39 reviews
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
March 28, 2023
ওএমএসের ট্রাকের পেছনে বিশাল অজগরের মতো দীর্ঘ লাইন। কখন তার পালা আসে হালিমা বুঝে উঠতে পারেন না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমর,পা ব্যথা হয়ে ওঠে। ছোট ছোট হাতে তার আঙুল আঁকড়ে ধরে আছে মেয়ে রহিমা। ট্রাকের নিচে যে চাল পড়ে আছে সেটা ছোট্ট শিশু রহিমার চোখ এড়ায় না। সে কুঁজো হয়ে ঢুকে পড়ে ট্রাকের নিচে। পড়ে যাওয়া চাল কুড়িয়ে পলিথিনে রাখতে থাকে। ২০২২ সালের ১ জুন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেন প্রথম আলোর সাংবাদিক জাহিদুল করিম।

২৩ অক্টোবর, ২০২২ সাল। ডেইলি স্টার বাংলা রিক্সাচালক মোঃ রহমানের একটা ছবি প্রকাশ করে। তার বক্তব্য হুবুহু তুলে দিচ্ছি,
“টানা তিন মাস ধরে মাছ-মাংস খাই নি। মাঝেমধ্যে যেদিন আয় একটু বেশি হয়,সেদিন ডিম খাই,তবে সপ্তাহে দু'একদিনের বেশি না।”
গতবছরই নারী দিবসে তাহমিদ আলী একটা ছবি তুলেন। সেখানে টিসিবির চলন্ত ট্রাকের পেছনে ঝুলন্ত এক নারীকে দেখা যায়। “আমারে এক প্যাকেট দিয়া যাও বাজান,” কান্নামিশ্রিত আর্তনাদ বেরিয়ে আসে তার গলা থেকে।

‘সন্তানকে দিতে পারছি না পিন্ধন,না খাওন’—বলছিলেন অন্ধ জসিম। ১ বছর বয়েস থেকে অন্ধ জসিমের কন্যা শিশুটি ৪ মাস ধরে মুরগী খাওয়ার জন্য কেঁদে যাচ্ছে; ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরী করা জসিমের বেতন বন্ধ ৩ মাস ধরে, কন্যার জন্য মুরগীটা কেনাই হয়ে উঠছে না।

অথচ সৌদি থেকে ৮০-১০০ টাকায় কেনা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০,৫০০,১০০০,১৫০০ টাকায়। দাঁড়িপাল্লার নিচে দড়ি লাগিয়ে বাড়ানো হচ্ছে মুরগির ওজন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকার এক্সট্রা প্রফিট কামিয়ে নিয়েছে বড় বড় পোল্ট্রির খামারগুলো। কী অদ্ভুত জায়গা এই পৃথিবী! এস.এম.সুলতান না বলে আঁকতে পারছি না,পরিপুষ্ট ভাতের ছবি...সিনেমা বানাতে পারছি না,‘ভাত তে হারামজাদা’ নামে। আজকের এই পরিস্থিতি হোক,বা ১০০ বছর পেছনে গেলেও,আমরা এই পরিস্থিতির কোনো রদবদল দেখতে পাই না। শুধু থেকে থেকে এখানে সেখানে বস্তাবন্দী চাল ধরা পড়ে।

কোরা(Quora)বাংলায় কদিন আগে একটা প্রশ্ন দেখেছিলাম। ইতিহাসের পাতায় সবথেকে বর্বর উপনিবেশবাদী কারা ছিল? অবাক করার মতো বিষয়,সেখানে কেউই ব্রিটিশদের কথা বলে নি।
১৯৪৩ এর বাংলার দুর্ভিক্ষ ছিল ইংরেজদের কারণে হওয়া ভারতের সর্বশেষ দুর্ভিক্ষ এবং এই আকাল প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিলো। উইনস্টন চার্চিল কে যখন গুরুতর ভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বাংলার বাইরে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিলো, তিনি বলেন,“ভারতীদের উচিৎ খরগোশের মতো জন্মদানের কারণে নিজেদের মৃত্যুগুলোর কারণ হিসেবে নিজেদের দায়ী করা”... মুখে আর কথা বলতে পারি না।

‘অন্নদাতা’ উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে পঞ্চাশের মন্বন্তর। বাংলা ১৩৫০ সনে (ইংরেজি ১৯৪৩) সংঘটিত মানবসৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষে তিন বছরে ৩৫ থেকে ৩৮ লাখ মানুষ মারা যায়। শাসকদের বিবেকবর্জিত সিদ্ধান্তে অন্নাভাবে এত মানুষের মৃত্যু প্রবলভাবে নাড়া দেয় সাহিত্যিককে, ১৯৪৪ সালেই তিনি লিখে ফেলেন এই উপন্যাসটি। অবশ্য এটাকে ঠিক উপন্যাসও বলা যায় না বোধহয়। দুর্ভিক্ষ নিয়ে রচিত সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে কৃষণ চন্দরের ‘অন্নদাতা’ অন্যতম সাহিত্য হিসাবে গণ্য হয়।

তিন পর্বে বিভক্ত এই সাহিত্যকর্মে প্রথমটি হলো ‘হতভাগ্য লোকটি’। এখানে দেখানো হয় কলকাতায় সাইলোরিকার রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এফ বি পটাখা। এই পটাখা প্রায়ই তার দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠি লিখে ভারতবর্ষ তথা দুর্ভিক্ষের নানা খবর দেন। সেই ছোট ছোট চিঠিগুলোর সংকলনে উঠে আসে ভারতবর্ষের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত পটাখা এবং অন্যান্য দেশের কূটনীতিক ও উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতিনিধিদের ধারণা। তারা দেখেও যেন দেখছে না, বুঝতেও চাইছে না মানুষের কষ্ট। দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতের বিভ্রান্তকর তথ্য ও হাস্যরসাত্মক কথাবার্তা সত্ত্বেও দুর্ভিক্ষের চিত্র ঠিকই বুঝতে পারবে পাঠক। আর প্রচণ্ড ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে চাইবে মানুষের দুর্দিনে তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বিলাসবসনায় ডুবে থাকা মানুষরূপী এইসব দানবদের। তারা শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আর দুর্ভিক্ষকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। দূতাবাসের সিঁড়িতে পড়ে থাকা মৃত হাড্ডিসার সঙ্গীতশিল্পীর একহাতে সেতার আর অন্যহাতে খেলনা ঝুমঝুমি দেখে রাষ্ট্রদূত বুঝতে পারছে না এর মানে। এই পর্বের এক জায়গায় দেখা যায়, পটাখা তার বোন মারিয়ার জন্য পুতুল কিনছেন ছয় টাকা দিয়ে, সেখানে তার চাপরাশিকে এক দেহাতি মেয়েলোক
অনুরোধ করে দেড় টাকার বিনিময়ে তার ছোট মেয়েকে কিনে নিতে। পটাখা অবাক হন,দেড় টাকা দিয়ে তো একটা পুতুলও কেনা যায় না!

দ্বিতীয় পর্বের নাম ‘যে লোকটি মারা গেছে’। এখানে দেখানো হয় অভিজাত সমাজের এক প্রতিনিধিকে। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য তার চিন্তার অন্ত নেই। তিনি অনেক কিছু করতে চান মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য, আর একই সাথে তিনি হতে চান বিখ্যাত। কিন্তু শেষ অবধি ফাঁসিতে ঝোলার ভয়ে তিনি কিছুই করতে পারেন না, বরং সুন্দরী মিস সিনহার কাছেই নিরাপদ বোধ করেন। তবে অবশ্য নাচের অনুষ্ঠান করে দুর্ভিক্ষের ফান্ডে কিছু টাকাও তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। আর এত মানবতাবাদী হয়েও তাদের গাড়ির পাশে ক্ষুর্ধাত দুটি শিশু ভিক্ষা চাইতে এলে মেরে তাড়িয়ে দেন।

তৃতীয় পর্ব ‘লোকটি এখনো মারা যায়নি’। সেই সেতারবাদকের গল্প, যার একহাতে সেতার আর আরেকহাতে ছিল কাঠের ঝুমঝুমি। ভারতের কোনো এক গ্রামে স্ত্রী-শিশু কন্যা নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। দুর্ভিক্ষের তাড়নে অন্নের সন্ধানে গ্রাম থেকে লাখো মানুষের সাথে কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিল তারা। আর তারপর চোখের সামনেই না খেয়ে মরতে দেখেছেন নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে, সবশেষে নিজের কন্যাশিশুটিকে। মৃত্যুর আগে শিশুটি তার একমাত্র সম্বল খেলনা কাঠের ঝুমঝুমিটা তুলে দেয় বাবার হাতে। দূতাবাসের সামনে মৃত সেই সেতারবাদকের একহাতে খেলনা ঝুমঝুমিটার রহস্য বুঝতে পারেনি সাইলোরিকার রাষ্ট্রদূত। কিন্তু সেই মৃত লোকটিই পুরো বিশ্বকে প্রশ্ন করছিল আর নিজেকে জীবিত বলে দাবি করছিল। তার প্রশ্নের জবাব না পাওয়া অবধি সে মরতে পারে না। বরং সে আমাদেরকেই মৃত বলে গেছে। মানুষের অমানবিকতা, দায়িত্বহীনতা আর স্বার্থপরতাকে দায়ী করে চলেছে মৃত লোকটি। আর তার বজ্রকঠিন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হবেন বিবেকবান পাঠকও।

এই ভয়াবহ ডার্ক উপন্যাস,বর্তমান বা অতীত সব সময়েউ প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে। পড়তে গিয়ে বারবার থমকে যাই। চোখের কোণ পানিতে ভিজে উঠে। খেতে গেলে গলায় ভাত আটকে যায়। অথচ কৃষণ চন্দরের বর্ণনাভঙ্গি নিস্পৃহ,ব্যাঙ্গাত্মক। তারপরও পড়তে গিয়ে বারবার মোচড় দিয়ে ওঠে মনটা।

"স্বামী বিক্রি করছে স্ত্রীকে, মা বেঁচে দিচ্ছে মেয়েকে, ভাই বিক্রি করে দিচ্ছে বোনকে। অথচ যখন তাদের অবস্থা ভালো ছিল, তখন এসব পতিতালয়ের দালালরা এ ধরণের কোনো ইঙ্গিত করলে তারা সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলত। কিন্তু আজ তারা ঘরের মেয়েদের শুধু বেঁচেই দিচ্ছে না, বিক্রির জন্য খরিদ্দারকে রীতিমতো তোষামোদ করছে। ধর্ম, আদর্শ, মায়া-মমতা, নীতি, জীবন-মানবতার সব আদর্শ-সবকিছু আজ ধুলোয় লুণ্ঠিত। জীবন তার জৈবিক নগ্নরূপে মূর্ত, ক্ষুধার্ত, নিষ্ঠুর আর ভয়ংকর হিংস্র পশুর মতো দাঁড়িয়ে আছে।"

বিশ শতকের তিরিশের দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সারা ভা��ত উত্তাল। এই আন্দোলনের অভিঘাত কৃষণ চন্দরের জীবনকেও আলোড়িত করে। লাহোরে থাকতেই তিনি সমাজতান্ত্রিক দর্শনসংক্রান্ত বইপত্র পড়ে সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সোশ্যালিস্ট পার্টির সঙ্গে গড়ে তোলেন সম্পর্ক। জড়িয়ে পড়েন ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এবং একবার ঝাড়ুদার সংঘের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সময় তিনি যোগ দেন বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের দলে। সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর অভিযোগে দুমাস জেল খাটেন। বন্দী থাকেন লাহোর দুর্গে। তাঁর মনের গভীরে প্রোথিত তখন কেবল দুটি লক্ষ্য : এক. ইংরেজদের শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করা; দুই. স্বাধীন সমাজতন্ত্রী ভারতীয় সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এই দুটি লক্ষ্য কৃষণ চন্দরের অন্তরে গেঁথে যায়। ফলে তাঁর প্রথম দিককার গল্পে এই আদর্শের ছাপ বেশ লক্ষ করা যায়। অন্নদাতাতেও ঘটেছে তার সার্বিক প্রতিফলন। অন্নদাতা পুরোটাই লেখা হয়েছে এপিসটোলারি মেজাজে,অর্থাৎ চিঠির পর চিঠির মাধ্যমে কাহিনীর বর্ণনা করে। পড়তে গিয়ে মনের কোণে ভেসে ওঠে জয়নুল আবেদীনের ম্যাডোনা-৪৩... উনার বক্তব্যটাই হুবুহু তুলে দিলাম।

❝মেয়েটিকে আর কখনো আমি দেখিনি। জানি না, শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কী ঘটেছিল। কিন্তু প্রায়ান্ধকার সেই ব্যাফল-ওয়ালের আড়ালে সেদিন মূর্তিমতী মাতৃত্বের যে অবমাননা আমি দেখেছিলাম, সভ্যতার যে আর্তনাদে আমার শ্রবণেন্দ্রিয়কে সেদিন উচ্চকিত করেছিল, সেই দৃশ্য, সেই ধ্বনি যেন আমাকে আজও তাড়া করে ফেরে। ১৯৪৩ সালের কলকাতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে এক বিশাল হাহাকারের রাজ্যে। আকাশে শকুনের ঝাঁক, বাতাসে হা অন্ন হা অন্ন শব্দের ঐকতান। গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে ক্ষুধার্ত নর-নারীর মিছিল এসে ঢুকে পড়েছে প্রাসাদ নগরের অঙ্গনে। তারা আসছে, আসছে, আর আসছে। এ আসার যেন শেষ নেই। কিন্তু কিসের আশায় আসা? কে জানে? দুর্ভিক্ষের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে কলকাতারও কি রেহাই ছিল? সংগতিসম্পন্ন নগরবাসী তাদের ডাইনিং রুমের জানালায় ভৌতিক মুখ দেখে শিউরে ওঠে। ফুটপাতের অজস্র অর্ধনগ্ন, কঙ্কালসার মানুষের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে আকুল ক্রন্দন: ফেন দাও, ফেন দাও! ডাস্টবিনের এঁটোকাঁটায় কুকুরের সঙ্গে আদম সন্তানের হাতাহাতির যেন শেষ হবে না কোনো দিন। এই তো তখনকার কলকাতা! আর্ট কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়ে আমি তখন সেখানেই শিক্ষকতা করি। থাকি সার্কাস রো-এর একটি ঘরে—একা। খাই কখনো হোটেলে, কখনোবা নিজে রেঁধে। মাঝেমধ্যে ঠিকে চাকরও রেঁধে দেয় অবশ্য। এ সময় বন্ধুবান্ধব বা চেনাজানা জনা কয়েক লোক একত্র হলেই আরম্ভ হয় দুর্ভিক্ষ-সম্পর্কিত যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা। গা শিউরে ওঠা একেকটি ঘটনা। কেউ জানান, এঁটো কলাপাতা নিয়ে তিনি মানুষে মানুষে, স্বামী-স্ত্রীতে কিংবা কুকুরে-মানুষে কাড়াকাড়ি করতে দেখেছেন। কেউ জানান, নরমাংসভুক হিংস্র শকুনের নাকের ভেতর তিনি স্বচক্ষে দেখে এসেছেন এক বা একাধিক ছিন্নভিন্ন নরদেহ। আবার কেউ কেউ কম্পিত গলায় বর্ণনা করেন দুঃখেকষ্টে কারও ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার করুণ কাহিনি।❞

আবার মাঝে মাঝে মনে হয় সুদানের এক দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকার একটা ছবির কথা। ছবিতে দেখা যায় ক্ষুধার্ত,প্রায় অর্ধমৃত, অস্থি চর্মসার আফ্রিকান কন্যা শিশুকে,আর তার পেছনেই বসে আছে একটা শকুন,বসে আছে তার মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। ছবিটি ছিল গত শতকের সবথেকে বড় আইকনিক ছবিগুলোর একটি। ১৯৯৪ সালে ছবিটি আলোকচিত্রী কেভিন কার্টারকে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার। কিন্তু ক্যামেরার পেছনের মানুষটি ততদিনে দেখে ফেলেছে পৃথিবীর অন্ধকার দিকটি। শান্তি উধাও হয়ে গেছিলো কার্টারের জীবন থেকে। সে বছরই আত্মহত্যা করে তেত্রিশ বছর বয়সী কার্টার। তার সুইসাইড নোটে লেখা ছিল,
❝..I am haunted by the vivid memories of killings and corpses and anger and pain ... of starving or wounded children, of trigger-happy madmen, often police, of killer executioners ...❞


সেই ৪৩ এর বাংলা, ৯৪ সালের সুদান,আজকের ইয়েমেন,বা দ্রব্যমূল্য যেন পাগলাঘোড়ার বাংলাদেশ আলাদা কোনো জায়গা না। আর কতটা সময় গেলে, মানুষ মানুষের জন্য দাঁড়াবে? আর কতটা সময় গেলে, ভাত জুটবে সবার মুখে?

বই: অন্নদাতা
লেখক: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: জাফর আলম
প্রকাশনী: প্রথমা
Profile Image for Md. Rahat  Khan.
96 reviews25 followers
April 19, 2021
চুরমার হয়ে গেলাম। আজ আমার গলা দিয়ে একটা ভাতও নামবে না। প্রতিটা ভাত তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে, আমিও তাকিয়ে থাকব। ভাতগুলো তারপর একেকটা গল্প হয়ে যাবে। তারা যে গল্পগুলো বলবে তা আমি শুনতে পারব না। আমি কান চাপা দেব। আমি পৌঁছে যাব ১৯৪৩ এর বাংলায় কিংবা চলতি সময়ের ইয়েমেনে। মা আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। বলবে, ভাত খাচ্ছিস না কেন। কিন্তু আমি তো মা এখানে নেই। আমি গল্প দেখছি। দুঃস্বপ্নের গল্প। পঁচা মৃতদেহ চিড়ে জন্ম নিচ্ছে একের পর এক ধানের চারা। আমি এইসব দেখতে পাচ্ছি মা। তাই আজ আমার ভাত খাওয়া হবে না।
Profile Image for Wasee.
Author 49 books784 followers
March 26, 2023
বিশ্বব্যাপী মহামারী সংক্রমণের এই দমবন্ধ পরিবেশে এমন কিছু পড়তে চাইনি। কৌতূহলের বশে মাত্র ৬৮ পৃষ্ঠার বইটা হাতে নিয়ে আটকে যেতে বাধ্য হলাম। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের বাস্তব প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে ১৯৪৪ সালে দিল্লি থেকে প্রকাশিত হওয়া উর্দু ভাষার বই "আন্ দাতা" যে রুদ্ধবাক ভৌতিক অভিজ্ঞতার জন্ম দিলো, প্রচণ্ড ডিস্টার্বিং হরর বই পড়ে অথবা গোরি/স্ল্যাশার মুভি দেখেও তা হয় না। শ্রদ্ধেয় জাফর আলম মূল উর্দু থেকে বাংলা ভাষায় চমৎকার অনুবাদ করেছেন। প্রথমা প্রকাশনী থেকে ২০১২ সালে প্রকাশিত এই বইটি বর্তমানে আউট অফ প্রিন্ট, তবে PDF version উন্মুক্ত।

দুর্ভিক্ষের সেই ভয়াবহ দিনগুলোকে কী নিখুঁতভাবে চিত্রায়িত করেছেন কৃষণ চন্দর - "মন্বন্তরে ঝাঁকে ঝাঁকে যেভাবে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, পিপড়ে ও ইঁদুরও এমন বীভৎসভাবে মরে না!"

"দূতাবাসের সামনে পাওয়া লাশের পাশে একটি শিশুকেও পাওয়া গেছে। শিশুটি মৃত মায়ের স্তন্য পানের ব্যর্থ চেষ্টা করছিল। আমি তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।"

"ক্ষুধার্ত মানুষ হোটেলের সামনে মরে পড়ে আছে। একই ডাস্টবিনে কুকুর আর মানুষ খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। উচ্ছিষ্ট অংশ নিয়ে মানুষে-কুকুরে চলছে লড়াই। আর সড়ক ধরে বিপুলাকার মোটরগাড়ি ছুটে যায়। তার ভেতরে যারা, তাদের ঠোঁটে হাসির ফোয়ারা।"

প্রতিটা বাক্য যেন বুকের ভেতর হাতুড়ি হয়ে আঘাত করে, মাথার ভেতরে জন্ম দিয়ে যায় অভূতপূর্ব শূন্যতার অনুভূতি।

কীভাবে মানুষ দলে দলে একমুঠো আহারের জন্য নিজের বোনকে/স্ত্রীকে/কন্যাকে পতিতালয়ের দালালের কাছে অবলীলায় বিক্রি করে দিচ্ছে- তা কোনও রূপকথার অংশ নয়, বরং তৎকালীন সমাজের নির্মম চিত্র।

"আমেরিকানরা কি ভুলই না করেছে। আফ্রিকায় না গিয়ে ভারতে এলে তারা কতো সস্তায় ক্রীতদাস কিনতে পারতো! ভারতে একটি মেয়ের মূল্য মাত্র আধ ডলার, লোকসংখ্যা ৪০ কোটি। তার মানে ২০ কোটি ডলারে সমগ্র ভারতবাসীকে কিনে ফেলা সম্ভব। অথচ সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে এর চেয়েও বেশি খরচ হয়ে যায়!"

হ্যাঁ, বরাবরের মতোই খানিকটা ব্যাঙ্গের আড়ালে অথবা স্পষ্টভাষ্যে লেখক তুলে ধরেছেন অস্থিতিশীল সমাজের দৃশ্যপট, ক্ষমতাশালীদের দৌরাত্ম্য আর নিকৃষ্ট আচরণের কথা।

অনাহার আর অনাচারের পাশাপাশি এক সেতারবাদকের গল্পও উঠে এসেছে অন্নদাতা বইয়ের প��তায়। দুর্ভিক্ষের দিনে নিজের জলপরীর মতো স্ত্রীকে যে চোখের সামনে অস্থিসার হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে দেখে; অবলীলায় মেনে নেয় কাঠের ঝুমঝুমি হাতে আঁকড়ে রাখা নিজের শিশুসন্তানের শেষবারের মতো চোখ বোঁজার দৃশ্য-

"মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে সে ঝুমঝুমিটা আমার হাতে দিয়েছিল। সেটা এখন আমার হাতের মুঠোয় ধরা। সে এমন সরল বিশ্বাসে এই সম্পদ আমাকে দিয়ে গেছে যে আমার বিশ্বাস, আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে ও। পুরস্কার হিসেবে দিয়ে গেছে এই সস্তা কাঠের ঝুমঝুমি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যদি সে ক্লিওপেট্রা হতো, তবে আমাকে দিতো তার সমস্ত প্রেম; যদি সম��রাজ্ঞী মমতাজ হতো, তাহলে আমাকে দান করত তাজমহল; যদি রাণী ভিক্টোরিয়া হতো, তবে দিয়ে যেত তার সমগ্র রাজত্ব। কিন্তু ছোট্ট এক অভাগা গরীব শিশু, তার ছিল একটা মাত্র কাঠের ঝুমঝুমি। তা-ই সে তার সর্বহারা পিতাকে দিয়ে গেছে। এমন কে আছে যে এই কাঠের খেলনার ন্যায্য দাম যাচাই করতে পারে? তোমরা যারা ধনী, মানুষের কাছে তুচ্ছ ত্যাগের ঢাকঢোল পেটাও, তারা নিয়ে যাও এই ঝুমঝুমি। একে প্রতিষ্ঠা করো মানবতার মন্দিরে, যে মন্দির আজ থেকে হাজার বছর পর একদিন তোমাদের সবার জন্য আমার আত্মাকে গড়ে তুলবে।"

জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ছবি দেখে যেভাবে শিউরে উঠতে হয় প্রতিবার, অন্নদাতা বইটা সেই অভিজ্ঞতাকেও ছাড়িয়ে গেলো।
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
March 7, 2021
পড়ে পুরাই stuck হয়ে গেলাম! এতো খারাপ লাগছে আমার! কি খারাপ লাগা এটা বুঝানো যাবে না!!!
প্রচন্ড পরিমাণ রাগ হচ্ছে, মন খারাপ হচ্ছে, হতাশও লাগছে। কিছুদিন কিছু পড়তে পারবো না মনে হচ্ছে


রিভিউ বলে কিছু একটা লিখার চেষ্টা করবো সামনে, পারব কিনা জানি না যদিও
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
April 3, 2020
তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ নিয়ে লেখা যখন দেড় টাকা দামে বাঙালি শিশু কিনতে পাওয়া যেতো। ও টাকা দিয়ে তো একটা চীনা পুতুলও কেনা যায়না! লেখক বলেছেন, আমেরিকানরা দাস বেচাকেনার জন্য আফ্রিকা না গিয়ে যদি ভারতবর্ষে চলে আসতো তাহলে ২০ কোটি ডলারে ৪০ কোটি অংকের সমগ্র ভারতবাসীকে কিনে ফেলতে পারতো!

প্রচন্ড ডিস্টার্বিং আর হিটিং একটা বই।
Profile Image for Musharrat Zahin.
404 reviews490 followers
December 6, 2022
ছোটবেলা থেকেই খাবার নষ্ট করার স্বভাব আমার আর আমার ভাইয়ের ছিল না। কারণ তখন থেকেই আমাদের বলা হয়েছিল যে যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশের বাচ্চারা দিনে এক মুঠো ভাতও খেতে পারে না, সেখানে আমাদের সামনে প্লেটভর্তি ভাত থাকার পরেও আমরা কেন সেটা নষ্ট করবো? অনেক দাওয়াতে গেলে দেখা যায় সবাই প্লেটভর্তি করে খাবার নেয়, চিন্তাও করে না যে এতগুলো তারা খেতে পারবে কিনা, তারপর অল্প একটু খেয়ে বাকি খাবারগুলো ফেলে দেয়। এগুলো খুবই বিরক্তিকর আর অমানবিক কাজকর্ম। খাওয়া শেষ হলে যেখানে খাবারগুলো ফেলা হয় সেখানে একটু যাবেন। গেলে দেখবেন আপনার প্লেটের নষ্ট করা খাবারগুলো যখন ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়, সেখান থেকে একদল মানুষ আর কুকুর একসাথে সেই খাবারগুলো তুলে নিয়ে খায়।
একবার নিজেকে ওই অবস্থায় চিন্তা করে দেখবেন কেমন লাগে। যতটুকু খেতে পারবেন শুধু ততটুকুই নিবেন, দরকার হলে প্রথমে অল্প একটু নিয়ে এরপর দরকার মনে করলে আবার নিবেন। তবে খাবার নষ্ট করবেন না।
.
.
শুরুতেই এতগুলো কথা বলে নেওয়ার কারণ হলো এই বইটা। কৃষণ চন্দর সবসময়ই তাঁর স্যাটায়ারিক লেখার মাধ্যমে সমাজের দুর্গতিগুলো তুলে ধরেন, 'অন্নদাতা'ও এর ব্যতিক্রম নয়।

তেতাল্লিশের মনন্তরের কথা আমরা কমবেশি প্রায় সবাই জানি। কলকাতার আকাশ-বাতাস তখন ক্ষুধা পীড়িত মানুষের তীব্র আর্তনাদে ক্রন্দিত। ক্ষুধায় দলে দলে মরছে মানুষ। শহরের অলি-গলিতে পড়ে রয়েছে মানুষের অস্থিসার মৃতদেহ। একমুঠ ভাতের জন্য গ্রামের মানুষ কলকাতায় ছুটছে, এদিকে কলকাতার মানুষসব মরে পড়ে আছে। ঝাঁকে ঝাঁকে যেভাবে মানুষ মরছে এভাবে পিঁপড়া বা ইঁদুরও মরে না।

"মা মরছে, ছেলেরা ভিক্ষে করছে। স্ত্রী মরছে আর স্বামী ঘ্যানর ঘ্যানর করছে- রিকশায় যাতায়াতকারী সাহেবের কাছে পয়সা ভিক্ষে করছে।যুবতী মেয়েটি উলঙ্গ। কিন্তু তার খেয়ালই নেই যে উলঙ্গ কিংবা যুবতী। এমনকি তার খেয়ালই নেই যে সে একজন নারী।সে শুধু জানে যে সে ক্ষুধার্ত আর এটা কলকাতা শহর।ক্ষুধা সৌন্দর্যকে পর্যন্ত হত্যা করেছে।"

ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য চালের মজুদ, দেশী আড়তদার ও ধনিক শ্রেণীর ব্যবসা আর অনাবৃষ্টির কারনে সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় ভারতবর্ষের লাখো মানুষ। কৃষণ চন্দরের 'অন্নদাতা' এমন একটি সৃষ্টিকর্ম যেখানে তিনি দেখিয়েছেন ক্ষুধার জ্বালায় কাতর মানুষের বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা।

যেখানে দেড় টাকায় একটা চীনা পুতুলও পাওয়া যায় না, সেখানে এই টাকায় বাবা বিক্রি করছে শিশু সন্তানকে, স্বামী বিক্রি করছে স্ত্রী ও মেয়েকে। বইয়ের শেষ অংশে আছে এক সেতারবাদক ও এক জেলেকন্যার ভালোবাসার কথা, যেই ভালোবাসা কেড়ে নেয় সর্বনাশা দুর্ভিক্ষ।

বইটায় লেখক দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন যা তাঁর নিজের চোখেই দেখা। কুকুর আর কাকের সঙ্গে মানুষের একসাথে ডাস্টবিনে খাবার খোঁজা, ক্ষুধা মেটাতে মা-বোন-কন্যাকে দালালদের কাছে বিক্রি, চীনা পুতুলের চেয়ে কম দামে সন্তান বিক্রি, ক্ষুধা মেটাতে শিশুর মৃত মায়ের দুধ পানের চেষ্টা বা মুমূর্ষু মানুষের মাথার উপর দিয়ে শকুনের উড়াউড়ির চিত্র এঁকেছেন লেখক।

তিনি সমান্তরালভাবে পৃথিবীর দুই প্রান্তের ছবি এঁকেছেন, যেখানে এক প্রান্তের ক্ষুধা আছে কিন্তু খাদ্য নেই, কিন্তু অপর প্রান্তে খাদ্যর ছড়াছড়ি থাকলেও সেখানে ক্ষুধা নেই।

এখানে দেখা যায় এত দুর্ভিক্ষের মাঝেও উচ্চবিত্ত ও প্রশাসকদের জীবনধারার কোনো পরিবর্তন হয় না, তারা নিয়মিত পার্টি করে, এর-ওর গায়ে এলিয়ে পড়ে, ভিক্ষুক দেখলে গাড়ির কাঁচটা টেনে দেয়, নেচে-গেয়ে তহবিলের জন্য অর্থ তুলে ওই টাকা দিয়েই মদ্যপান করে। প্রায় ৭৭ বছর আগের পরিস্থিতির সাথে বর্তমান সময়ের মিল আছে না?

এক দানা চালের কাছে একজন মানুষের জীবনও তুচ্ছ। এই পৃথিবী টিকে আছে কেবল ঐ এক দানা চালে। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাবে জয়নুল আবেদীনের আঁকা দূর্ভিক্ষের চিত্রকর্মগুলো।

অনুবাদক হিসেবে জাফর আলম খুব চমৎকার কাজ করেছেন। সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদের কারণে বইটা পড়তে কোনো সমস্যা হয়নি।

ভীষণ মর্মস্পর্শী একটা বই। বইটা পড়ার পর হয়তো সামান্য ভাতটুকুও নষ্ট করতে আপনার কষ্ট হবে।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
June 9, 2020
'আত্মা আর দেহ- দুয়ের মিলনেই জীবন৷ এ দুয়ের মিলনেই আছে আনন্দ, প্রেরণা, প্রাণ- সবকিছু। মাটি আর পানি মিলেমিশেই জন্ম দেয় চালের কণা; নর আর নারীর মিলনে জন্ম নেয় এক হাসিখুশি জীবন্ত শিশু।'
Profile Image for Afifa Habib.
89 reviews273 followers
March 10, 2021
বইটা শেষ করে আলো নিভিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল জয়নুল আবেদিন এর ছবি থেকে সেই বিভীষিকাময় হাড্ডিসার কঙ্কালগুলো এসে হেটে বেড়াচ্ছিল বই এর পাতা জুড়ে। ভাবছিলাম সেই সময়ের কথা যখন ক্ষুধার কাছে মায়ের মমতা বিক্রি হয়ে যেত মাত্র দেড় টাকায়। নিজের স্ত্রী, কন্যা, বোনকে অবলীলায় পতিতালয়ে কিংবা ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে দ্বিধা করত না মানুষ। কারন বিনিময়ে আরোও দুটো দিন খেতে পারবে। শিশুর হাহাকার দেখেও নিষ্ঠুর ধরনী করুণা করে তার মুখে ১ ফোঁটা দুধ তুলে দিত না।

বইয়ের প্রথম অংশে যেমন মার্কিন রাষ্ট্রদূত এর মুখে ঠাট্টার ছলে সেসময়ের বর্ণনা রয়েছে তেমনই শেষাংশ��� সেতারবাদক এর ভাষায় দুর্ভিক্ষের করুন বর্ণনাও রয়েছে। আর মাঝে আছে সময়ের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাশীলদের চালাকি ও ব্যবসায়ের দৃশ্য। সব মিলিয়ে কি সুন্দর করে যে ফুটে উঠেছে সেসময়ের গোটা সমাজের দৃশ্যপট বলে বোঝানো যাবে না। কিছু কিছু লাইন পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। কথাগুলোর ভার সহ্য করতে সময় লেগে যাচ্ছিল।
এটাকে মাস্টারপিস না বললে সত্যিই অন্যায় হবে।

আর নাঈম ভাই কৃতজ্ঞ থাকলাম আপনার কাছে কৃষন চন্দর এর সাথে পরিচয় করানোর জন্য। এভাবেই সাপ্লাই দিতে থাকেন।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
November 18, 2020
পঞ্চাশের মনন্তরের ( ১৩৫০ বঙ্গাব্দ বা ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ) কথা আমরা সবাই জানি। ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য চালের মজুত, দেশী ব্যবসায়ী ও ধনিক শ্রেণীর মজুত আর অনাবৃষ্টির কারনে সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় লাখো মানুষ। এখন পর্যন্ত প্রচুর গল্প, উপন্যাস, নাটক, চিত্রকর্ম সৃষ্টি করা হয়েছে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কৃষণ চন্দরের অন্নদাতাও তেমন একটি সৃষ্টিকর্ম যেখানে তিনি দেখিয়েছেন ক্ষুধার জ্বালায় কাতর মানুষের বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা, পিপড়া বা ইদুরের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষের মৃত্যু এবং এরই মধ্যে জীবনের জয়গান।

বইটা দুর্ভিক্ষের কোনো ‘মডিফাইড’ ভার্সন না বরং একদম ‘র'। দুর্ভিক্ষকে কথার মারপ্যাঁচে হালকা করার কোনো চেষ্টা নেই বরং দুর্ভিক্ষকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে যা করা দরকার লেখক তাই করেছেন। আর এটা করতে লেখককে কোনো বাড়তি কষ্ট করতে হয় নি কেননা সব যে নিজের চোখেই দেখা। ১৯৪৩ এ যা দেখেছেন তাই যে ১৯৪৪ এ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন লেখক। একটু যা ‘মডিফাই’ করেছেন তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ দেখাতে, তাইতো সাইলোরিকাসহ কাল্পনিক সব দেশের সৃষ্টি করেছেন।

লেখক যে যা দেখেছেন তাই প্রকাশ করেছেন তার প্রমাণ মেলে তাঁর বর্ণনার সাথে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের দুর্ভিক্ষ শিরোনামের চিত্রকর্মটার হুবহু মিল দেখে। কুকুর, কাক আর মানুষের ক্ষুধা মেটাতে একত্রে ডাস্টবিনে খাদ্য খোঁজার কথা লেখকও বলেছেন বেশ কয়েক জায়গায়। সাথে ক্ষুধা মেটাতে মা/বোন/কন্যাকে দালালদের কাছে বিক্রি, চীনা পুতুলের চেয়ে কম দামে সন্তান বিক্রি, ক্ষুধা মেটাতে শিশুর মৃত মায়ের দুধ পানের চেষ্টা বা মুমূর্ষু মানুষের মাথার উপর দিয়ে শকুনের উড়াউড়ির চিত্র এঁকেছেন লেখক। আর এরই সাথে এটাও দেখিয়েছেন যে উচ্চবিত্তদের জীবন কিভাবে এই ক্ষুধার জ্বালা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক থাকে, ঐ সময়েও তাদের পার্টি শেষ হয় না, প্রস্তাব পাশ বা বিবৃতি দিযে তারা দায়মুক্তি পেতে চায়, দূর্বল মুহুর্তে গরীবদের জন্য কিছু করার কথা মাথায় আসলেও হোটেলের কথা চিন্তা করে দুর্গত অঞ্চলে যাওয়া হয় না। সাথে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারটা তো আছেই, প্রশাসন অন্যসব ব্যাপার নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে সাইলোরিকার রাষ্ট্রদূত তিন মাসেও দুর্ভিক্ষ সত্যি নাকি যে প্রশ্নের উত্তর পায় না।

লেখক উপন্যাসিকাটিতে সমান্তরালভাবে এঁকেছেন পৃথিবীর দুই প্রান্তের কথা, এক প্রান্তে যেখানে ক্ষুধা আছে কিন্তু খাদ্য নেই কিন্তু অপর প্রান্তে খাদ্য গড়াগড়ি খেলেও সেখানে ক্ষুধা নেই। লেখক সেই সময়ের কথা বলেছেন যখন লজ্জা, ভালোবাসা, আত্মসম্মান, মমতা বা ধর্মের উপরে ক্ষুধার কথা ভাবে মানুষ, এক মুটো ভাতের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতেও প্রস্তুত হয় মানুষ। ভাতের মূল্য মানুষের কাছে এতই বেশি হয়ে দাঁড়ায় যে পরের জন্মে মানুষ না হয়ে চালকণা হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করে মুমূর্ষু ব্যক্তি! বইয়ের শেষ অংশে আছে এক সেতারবাদক ও এক জেলেকন্যার ভালোবাসার কথা, তাদের একত্রে বেঁচে থাকার ইচ্ছার কথা এবং সর্বনাশা দুর্ভিক্ষের তাদের পরিবারের উপর আঘাতের কথা। আর সেতারবাদকের স্বপ্নের কথা তো সব বিবেকবান মানুষেরই স্বপ্ন যেই পৃথিবীতে সবাই সবার দুঃখ বুঝবে, সবাই সবাইকে ভালোবাসবে।

ভীষণ মর্মস্পর্শী একটা বই। বইটা পড়তে গিয়ে মনে হয় যেন সেই সময়টাকে প্রত্যক্ষ করছি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আবেগাপ্লুত হতে হয়, মানুষের দুঃখে বুকটা ফেটে আসে, মানুষের নিষ্ঠুরতা আর উদাসীনতায় ক্রুদ্ধ হতে হয়। কালের দর্পণ হয়ে ওঠে যেসব বই এই বইটা সেই ক্যাটাগরির। জাফর আলমের সাবলীল অনুবাদে বইটা পড়তে কোনো সমস্যা হয় না, সহজেই ধরতে পারা যায় কৃষণ চন্দরের আবেগকে।
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
July 14, 2021
"হতভাগ্য ইঁদুরের দল! কেমন নিঃশব্দে মরে, মুখে সামান্য আহ শব্দ করারও জোর নেই।"


এত অল্প কয়েকপাতা জুড়ে সেই বিভীষিকাময় দিনের কতটা তুলে ধরা সম্ভব আসলে? কিংবা হয়তো উপরের দুটো লাইনেই সবকিছু বলা হয়ে যায়!

শুরু করতে নিয়ে খানিকটা বেশামাল ছিলাম। গল্পের কূল-কিনারা করতে পারছিলাম না। প্রথম অধ্যায়ের চিঠিগুলোকে খুব বেশি প্রাণবন্ত লাগছিল। ছোটো ছোটো কথা, কিন্তু স্পষ্ট, ধারালো। তারপর সাদাকালো অক্ষরের ধার ধীরে ধীরে আরো বাড়তে লাগলো। দ্বিতীয় অধ্যায় যখন শেষ করেছি তখন তথাকথিত সমাজের উচ্চবর্গের মানুষদের জীবন আমার সামনে ফুটে উঠেছে খুব স্পষ্ট হয়ে। কথার পিঠে কথা যেভাবে আসছিল তাতে করে শুধু তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ কেন, বর্তমানের সাথেও সব বেশ মানিয়ে যায়। আজও তো মানুষ ন্যায্য পাওনার দাবিতে গুলি খেয়ে মরে, পরে তাদের পরিবারের জন্য হয়তো লাখ দুয়েক টাকার যোগাড়যন্ত্র করা হয়। দুর্ভিক্ষের সময়ের সেই এক টাকায় মানুষ বিক্রির দর আজও অমনই আছে।

অনুবাদ বেশ ভালো লাগলো। ঝরঝরে, আবেগের খামতি হতে দেয়নি। তৃতীয় অধ্যায়ের বেশ কিছু জায়গা খুব বেশি নির্মম। একটু সময় নিয়ে ভাবতে গেলেই বুকের কোথাও মুচড়ে ওঠে। সবকিছু বাস্তব হয়ে মানসপটে ভেসে ওঠে।
"আজও দূতাবাসের সামনে বেশ কিছু লাশ পড়ে আছে"
কিংবা
"...কারণ সেই পথের ধারে আমার বউ জলপরিকে ফেলে এসেছি, তার সৎকার পর্যন্ত করতে পারিনি। আর এখনো আমার ছোট্ট সেই মেয়ের হাতে ধরা রয়েছে কাঠের সেই ঝুমঝুমিটা।"


আসল রেটিং বলতে গেলে ৪.৭৫. বাকিটুকু কেন কেটেছি তাও আসলে জানি না। হয়তো আরো কিছুটা সময় পড়তে চাইছিলাম। তবে লেখকের অন্য বইগুলো পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেছে অনেকটা। দেখি সামনে কতগুলো পড়তে পারি!
110 reviews
May 6, 2021
কী প্রচণ্ড শক্তিশালী লেখনী!কিসব ছোটো,সরল অথচ ভারি ভারি সব কথা!তেতাল্লিশের মন্বন্তরের কাহিনি।দেড় টাকা দামে মা তার মেয়েকে,স্বামী তার স্ত্রীকে,ভাই তার বোনকে বিক্রি করার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোশামদ করছে!সে এক অতি বিভৎস দৃশ্য মশাই।কল্পনাশক্তিটা একটু কম ব্যবহার করলে হয়তো পার পেয়ে যেতুম।এই বই মানুষকে মানুষ হিসেবে দাম দিতে শিখাবে,মূল্যবোধ শিখাবে।প্রচণ্ড ক্ষুধার জ্বালায় নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে বিকিয়ে দেয়ার পর ও সেই টিকতে না পেরে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক পিতা বলছে,আমি মৃত।তবে তাও আমি ভিক্ষা চাইছি।এককণা চাল পেটে গেলে হয়ে উঠবো জীবন্ত।নিজের মেয়েকে বিক্রি দেড় টাকায় বিক্রি করে মানুষ তখন চলতো ৭-৮ দিন।চালের কেজি যে ৫০ টাকা!

কৃষাণ চন্দের সাথে পরিচয় আগে থেকেই ছিল।"আমি গাধা বলছি" বইটা ছিল ডার্ক হিউমারে ঠাসা।হুট করে পড়লে হাসি পাবে।দু সেকেন্ড ভেবে দেখকে মুখ হয়ে উঠবে গম্ভীর।উর্দু সাহিত্যের এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিকের এই বইটি যেন জয়নুলের 'ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের' ঔপন্যাসিক রূপ।
Profile Image for Ayesha.
117 reviews36 followers
April 6, 2018
এই প্রথম শুধুমাত্র তেতাল্লিশ এর মন্বন্তর নিয়ে কোন লেখা পড়লাম। হাসান আজিজুল হকের "আগুনপাখি"তেও এটা সম্পর্কে লেখা ছিল। কিন্তু দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার স্পষ্ট ছবি দেখলাম এই ব‌ইটার মধ্য দিয়ে। উফ্!! 😢
Profile Image for Humaira Tihi.
79 reviews28 followers
June 29, 2018
এঁকে নিলাম এ দৃশ্য মনের মানসপটে। তাও যদি ভবিষ্যতে মানুষের কদর বুঝি। সত্যি সত্যি বুঝি! মন্বন্তরের ভয়াবহতা সম্পর্কে শুনেছি, কিছুটা জেনেছি, কিন্তু কখনো এভাবে উপলব্ধি করতে পারি নি, করতে পারার কথাও না। এসব বই যারা লিখে গেছেন তাদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা!
Profile Image for Fahad Amin.
149 reviews9 followers
August 19, 2025
বইটা পড়তে পড়তে অবচেতন মনেই যেন চলে গেলাম ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ পীড়িত কলকাতায়।

সেখানে এক রাষ্ট্রদূত তাঁর সিনিয়রকে জানাচ্ছেন দুর্ভিক্ষের খবর। তাঁর দূতাবাসের সামনেই প্রতিদিন না খেয়ে থাকা মানুষের লাশ পড়ে থাকছে। তবুও তিনি দুর্ভিক্ষের কথা লিখতে পারছেন না! কারণ সরকার বাহাদুর এখনও দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেননি।

অপরদিকে আরেক দল ধনকুবের এমন সময়টাতে জাঁকজমকপূর্ণ পার্টির আয়োজন করছেন। সেখানে ছুটছে টার্কিশ সিগারেট ও বিলিতি মদের ধারা!

সত্যি দুর্ভিক্ষের মর্মন্তুদ কাহিনির বাস্তব চিত্রায়ন ঘটেছে কৃষণ চন্দরের লেখায়। পুরো লেখাটা পড়ে নিজের মননে একটা ধাক্কা লাগলো। স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম অনেক্ক্ষণ।
Profile Image for Afifah Mim.
38 reviews52 followers
March 18, 2022
ব্যক্তিগত নোট:-
খুবই খুবই ছোট্ট একটা বই। কিন্তু-
এত সহজে এই বই মাথা থেকে সড়বে না...
হায়রে মানবজীবন!
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Munem Shahriar Borno.
202 reviews12 followers
July 29, 2024
"উত্তর ভারত থেকে এসেছে মানুষ কেনার খদ্দের। তাদের মাঝে আছে অবলা আর অনাথ আশ্রমের ম্যানেজার। অবলা আর অনাথ চাই তাদের। বাপ-মায়েরা নিজের হাতে সন্তানকে ধরে দিচ্ছে অনাথ বলে সেই সব ম্যানেজারের হাতে। অনাথ হল যারা গরীবের শিশু-বাবা-মা বেঁচে আছে কি মরে গেছে তা একান্তই গৌণ। এদের ভেতর সত্যিকারের মানুষের ব্যবসায়ীও রয়েছে-যাদের কোন নীতির বালাই নেই, ধর্মের ধাপ্পাবাজী নেই, যারা কোন সামাজিক অজুহাতের ধার ধারে না। হাটের গরু ভেড়ার মতো মেয়েগুলোকে পছন্দ করে তারা কিনে নিচ্ছে।

'খাসা মাল দেখছি।'

'রংটা একটু ময়লা।'

'বড্ড কাহিল।'

'মুখে আবার বসন্তের দাগ।'

'মাংস কইগো গায়ে, হাড়ই সার।'

'থাকগে ওতেই চালিয়ে নেবে ছুঁড়ি।'

'দশ টাকা দিয়ে দাও।'

স্বামী বিক্রি করলো স্ত্রীকে; মা বেঁচে দিল মেয়েকে, ভাই বিক্রি করলো বোনকে। অথচ আজকের এই দুর্দশার আগে কোনও দিন এইসব দালাল আর পতিতালয়ের মালিকরা এই ধরনের ইঙ্গিত করবার সাহস করলে খুন করেই ফেলতো এরা। কিন্তু আজ তারা ঘরের মেয়েদের শুধু বেঁচেই দিচ্ছে না, নির্লজ্জ দোকানদারের মত যে যার মালের গুণকীর্তন করছে, খরিদ্দারকে তোষামদও করছে। একটি পরসার জন্য পর্যন্ত দর কষা- কষি আর কাড়াকাড়ি করছে। ধর্ম, আদর্শ, নীতি, মাতৃত্ব-নানবতার সমস্ত আদর্শ আজ কি নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। জীবন হয়েছে তার জৈবিক নগ্নতায়-রক্তচোষা, ক্ষুধার্ত, নিষ্ঠুর আর ভয়ংকর বনের পশুর ন্যায়।"

———————————————————————————————————————————————

এগুলি পড়ার পর স্তব্ধ হ'য়ে ছিলাম কিছুক্ষণ।
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews136 followers
July 7, 2019
এক মুঠো চালের মূল্য ঠিক কতখানি?

উত্তরটা হলো ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণ। আজ আমরা এই পিজা, বার্গার কিংবা পাস্তা খাওয়া প্রজন্ম খুব সস্তা এক মুঠো চালের মূল্য বুঝব না। কথায় কথায় ভাল লাগছে না, ভাত খাবো না আমরা জানব না আসলে এক মুঠো চালের সংজ্ঞাটা কতটা গভীর।
আচ্ছা চলুন আপনাদের এই এক মুঠো চালের মূল্যটা আরেকটু বিস্তারিতভাবে বলি। জানি আপনাদের ভাল লাগবে না। তবু আজ রাতের খাবারে চালের কণাগুলোকে হয়তো নতুন করে চিনতে পারবেন।

১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ব্রিটিশ সরকার সৈনিকদের জন্য মজুদ করছে চাল। ভারতের সাধারণ মানুষের জন্য ব্রিটিশ সরকারের অপচয় করার মত চাল নেই। বাজারে শুরুতে চালের দাম বাড়লে হুট করেই চাল একেবারে অদৃশ্য। সমগ্র বাংলার মানুষ যেন ভিড় করতে চায় কলকাতায়। মানুষের বিশ্বাস সমৃদ্ধির শহর, রোশনাই এর শহর কলকাতায় গেলেই খাবার পাওয়া যাবে। কিন্তু দীর্ঘ পথ আর তার থেকে দীর্ঘ ক্ষুধা পাড়ি দিয়ে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ এলো তখন তাদের মাঝে শুরু হলো অদ্ভুত এক বাণিজ্য।

বাংলার রাজধানী কলকাতার ভেতর আরেকস্থানে এই বাণিজ্যের রাজধানী গড়ে উঠেছে। নাম সোনাগাছি। স্বামী বিক্রি করছে স্ত্রীকে, মা বেঁচে দিচ্ছে মেয়েকে, ভাই বিক্রি করে দিচ্ছে বোনকে। অথচ যখন তাদের অবস্থা ভাল ছিল, তখন এসব পতিতালয়ের দালালরা এ ধরনের কোন ইঙ্গিত করলে তাদের তারা সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলত। কিন্তু আজ শুধু তারাঘরের মেয়েদের শুধু বেঁচেই দিচ্ছে না, বিক্রির জন্য খরিদ্দারকে রীতিমত তোষামদ করছে। মাত্র একটি পয়সার জন্য দর-কষাকষি করছে।

আর এই সব আয়োজন এক মুঠো চালের জন্য। রোশনাই আর সমৃদ্ধির রাজধানী কলকাতার পাথরে হৃদয় থেকে এক মুঠো চালের ঠিকানার হদিশ পায়নি কয়েক লক্ষ ক্ষুধার্ত রক্ত মাংসের মানুষ। প্রতিদিন মরেছে মানুষ। পচেছে মানুষ। প্লেগে যেমন ঝাকে ঝাকে ইঁদুর মরে পচে গলে যায়, সেভাবে। বড় বড় হোটলের ডাস্টবিনগুলো মানুষের দখলে তাই কুকুরকে শকুনের সাথে সন্ধি করে দখল নিতে হয়েছে মানুষের লাশের।

এই একমুঠো চালের গল্প কোন কল্পনা থেকে লেখা হয়নি। ভাগ্যিস যদি এই গল্পটা শুধু কল্পনা থেকে লেখা হত। ভাগ্যিস আমাদের জানতে না হত যে সত্যি সত্যি হাজার হাজার শিশু এক ফোঁটা দুধের জন্য কিছুক্ষণ পর হা করেছে আবার মুখ বুজে দমবন্ধ হয়ে আসা শরীরটার সাথে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করেছে। তারপর একসময় আর হা করেনি, আর চোখ খোলেনি।

বিশ্বাস করুন এই লক্ষ মানুষ মৃত্যুর পূর্বে একটা কথা জেনে গেছে। এই পৃথিবীতে ক্ষুধার উপরে কোন ধর্ম নেই। এক মুঠো চালের উপরে কোন ঈশ্বর নেই।


'৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ভয়ঙ্কর রূপের দর্শন প্রথম পেয়েছিলাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অশনি সংকতে বইটিতে। দুর্ভিক্ষ কিভাবে এক মৃত্যু মিছিলের দিকে এগিয়ে চলেছিল সেই প্রতিচ্ছবি বইটিতে ফুটে ওঠেছিল একটি দর্পণের মত। কিন্তু দুর্ভিক্ষের সর্বগ্রাসী নগ্ন রূপ দেখলাম কৃষণ চন্দরের অন্নদাতা বইটিতে। দিয়ে পুরোপুরি আর সাংবাদিক এবং লেখক জাফর আলমের অনুবাদ ছিল প্রচণ্ড সাবলীল।
Profile Image for Klinton Saha.
357 reviews6 followers
August 29, 2025
"পৃথিবীর মানবজীবনের সবচেয়ে গোপন কথাটি একমাত্র মরা মানুষই বলতে পারে।"


বই - অন্নদাতা। 

লেখক - কৃষণ চন্দর।

অনুবাদক - জাফর আলম।


তেতাল্লিশের মন্বন্তরে ক্ষুধায় দলে দলে মরছে মানুষ। শহরের অলি-গলিতে পড়ে রয়েছে মানুষের অস্থিসার মৃতদেহ।একমুঠ ভাতের জন্য গ্রামের মানুষ কলকাতায় ছুটছে,ফেনের জন্য অভুক্ত মা শিশু কোলে চিৎকার করছে কারণ তাদের বিশ্বাস কলকাতায় ভাতের অভাব ঘুচে যাবে।ঝাঁকে ঝাঁকে যেভাবে মানুষ মরছে এভাবে পিঁপড়া বা ইঁদুরও মরে না।দেড় টাকায় বাবা বিক্রি করছে শিশু সন্তানকে,স্বামী বিক্রি করছে স্ত্রীকে,মেয়েকে।

পাশাপাশি আছে একজন সেতারবাদক ও জেলেপল্লীর জলপরীর ন্যায় সুন্দরী রমণীর প্রেম।তাদের সুখের সংসারেও আঘাত হানে দুর্ভিক্ষ।বেঁচে থাকার প্রয়োজনে কলকাতার অভিমুখে যাত্রা করে তারা।যাত্রাপথে বিদায় নেয় স্ত্রী ও ঝুনঝুনি হাতে ক্ষুধার্ত  শিশু।

"মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে সে ঝুমঝুমিটা আমার হাতে দিয়েছিল। সেটা এখন আমার হাতের মুঠোয় ধরা। সে এমন সরল বিশ্বাসে এই সম্পদ আমাকে দিয়ে গেছে যে আমার বিশ্বাস, আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেও। পুরস্কার হিসেবে দিয়ে গেছে এই সস্তা কাঠের ঝুমঝুমি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যদি সে ক্লি��পেট্রা হতো, তবে আমাকে দিতো তার সমস্ত প্রেম; যদি সম্রাজ্ঞী মমতাজ হতো, তাহলে আমাকে দান করত তাজমহল; যদি রাণী ভিক্টোরিয়া হতো, তবে দিয়ে যেত তার সমগ্র রাজত্ব। কিন্তু ছোট্ট এক অভাগা গরীব শিশু, তার ছিল একটা মাত্র কাঠের ঝুমঝুমি। তা-ই সে তার সর্বহারা পিতাকে দিয়ে গেছে। এমন কে আছে যে এই কাঠের খেলনার ন্যায্য দাম যাচাই করতে পারে? তোমরা যারা ধনী, মানুষের কাছে তুচ্ছ ত্যাগের ঢাকঢোল পেটাও, তারা নিয়ে যাও এই ঝুমঝুমি। একে প্রতিষ্ঠা করো মানবতার মন্দিরে, যে মন্দির আজ থেকে হাজার বছর পর একদিন তোমাদের সবার জন্য আমার আত্মাকে গড়ে তুলবে।"


★★ছোট ও চমৎকার এই বইটি পড়ুন আর আপনি তেতাল্লিশের মন্বন্তর চোখের সামনেই দেখতে পাবেন।


🌼যতদিন একজন মানুষও অনাহারে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবী অনাহারে থাকবে, যতদিন একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে, প্রত্যেকেই তত দিন পর্যন্ত দরিদ্র থাকবে।

🌼মা মরছে, ছেলেরা ভিক্ষে করছে। স্ত্রী মরছে আর স্বামী ঘ্যানর ঘ্যানর করছে- রিকশায় যাতায়াতকারী সাহেবের কাছে পয়সা ভিক্ষে করছে।যুবতী মেয়েটি উলঙ্গ। কিন্তু তার খেয়ালই নেই যে উলঙ্গ কিংবা যুবতী। এমনকি তার খেয়ালই নেই যে সে একজন নারী।সে শুধু জানে যে সে ক্ষুধার্ত আর এটা কলকাতা শহর।ক্ষুধা সৌন্দর্যকে পর্যন্ত হত্যা করেছে।
Profile Image for Swajon .
134 reviews76 followers
October 28, 2016
প্রতি পৃষ্ঠায় দুর্ভিক্ষের জীবন্ত ছবি যেন করুণ চোখে চেয়ে আছে । বইয়ের আবেদন বোঝনোর জন্য সরাসরি কিছু লাইন তুলে দেওয়াই বেটার । অনুবাদ চমৎকার , একদম ঝরঝরে ।

" দূতাবাসের সামনে পাওয়া লাশের পাশে একটি শিশুকেও পাওয়া গেছে । শিশুটি মৃত মায়ের স্তন্য পানের ব্যর্থ চেষ্টা করছিল । আমি তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি । " ( পৃস্থা-২২)

" ' সে তার মেয়েটিকে বিক্রি করতে চায় মাত্র দেড় টাকায় ।'
আমি বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম ,'মাত্র দেড় টাকায় ! ও টাকা দিয়ে তো একটা চীনা পুতুলও কেনা যায় না । '
' ইদানিং ওর চেয়ে কম দামে বাঙালি শিশু কিনতে পাওয়া যায় ।' " ( পৃষ্ঠা- ২৬ )

' চার্চিল , স্টালিন আর রুজভেল্ট বৈঠকে মিলিত হয়েছেন , পাল্টে দিচ্ছেন পৃথিবীর মানচিত্র আর এদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছে বাংলাদেশে । মানবতা উপহার পাচ্ছে আটলান্টিক সনদ - আর বাংলায় এককণা চালও নেই । " ( পৃষ্ঠা - ৩৭ )

"আমি রজনীতিক নই । কিন্তু একজন সেতারবাদক হিসেবে এটুকু বুঝি , যে গানে বেদনার সুরের ছোঁয়া আছে , সে গান শ্রোতাকেও ব্যথিত করে তোলে । যে মানুষ ক্রীতদাস , সে অন্যকেও দাস করে তোলে । পৃথিবীর পাঁচজনের একজন মানুষ হচ্ছে ভারতীয় । যে শৃঙ্খলে প্রতিটি ভারতবাসী বাঁধা , পৃথিবীর বাকি চারজন মানুষ তার জন্য ব্যথা পায় না , এ হতে পারে না । যতক্ষণ পর্যন্ত আমার সেতারে একটা বেসুরো তার থাকে , ততক্ষণ পর্যন্ত রাগিণী বেতালে বাজতে থাকবে , তত দিন পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবী অনাহারে থাকবে , যত দিন একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে , প্রত্যেকেই তত দিন পর্যন্ত দরিদ্র থাকবে । যত দিন একটি মানুষও পরাধীন থাকবে ,এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ তত দিন পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে বাধ্য ।
তাই আমার প্রশ্ন , কখনো ভেবো না যে আমি মরে গেছি । যদি মরতে হয় , তাহলে তুমিই মরেছ । আমি বেঁচে আছি । আর সর্বক্ষণ আমার এই মৃত , দৃষ্টিহীন চোখ দিয়ে এই একটি কথাই জিজ্ঞাসা করব , তোমার ঘুমে আমি হানা দেব । তোমার মধুর স্বপ্নকে আমি রাতের বিভীষিকায় পরিণত করব । আমি তোমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলব । তুমি কোনো পথ ধরে চলতে পারবে না । তুমি খেতে পারবে না । তুমি কাজ করতে পারবে না । তোমাকে আমার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে । যত দিন আমার মনের মতো উত্তর না পাব , তত দিন আমার মৃত্যু নেই । আমি মরতে পারি না ।
আমার এই প্রশ্ন পৃথিবীর বুকে বাঁচার জন্য নয় । তোমাকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি ,কারণ পথের ধারে আমার বউ জলপরিকে ফেলে এসেছি , তাকে সৎকার পর্যন্ত করতে পারিনি । আর এখনো আমার ছোট্ট সেই মেয়ের হাতে ধরা রয়েছে কাঠের সেই ঝুমঝুমিটা । " ( পৃষ্ঠা - ৬৩,৬৪)
Profile Image for Rabia.
233 reviews66 followers
August 25, 2021
Exactly how much is a handful of rice?
The answer is the lives of three million people. Today, this generation of pizza, burgers or lasagna eaters will not understand the value of a handful of cheap rice. I don't like words, I don't eat rice, we don't know how deep the definition of a handful of rice is.
In 1943 The British government is stockpiling rice for soldiers for World War II. For the people of India the British government does not have enough rice to waste. If the price of rice goes up in the market at the beginning, the rice disappears in hurry. The people of Bengal want to gather in Calcutta. People believe that food can be found in Calcutta, the city of prosperity and the city of light. But when millions of people came after long journey and a long hunger strike, a strange trade started between them.
The capital of this trade has developed elsewhere inside Calcutta , the capital of Bengal. The name is Sonagachi. Husbands are selling their wives, mothers are selling daughters, brothers are selling sisters. But when their condition was good, if the brokers of these brothels gave any such indication, they would kill them immediately. But today, they are not only saving the girls, they are flattering the buyers for sale. Bargaining for just a penny. When it was written about the famine of forty three, Bengali children could be bought for one and a half rupees. He can not buy a Chinese doll with money! The author says that if the Americans had come to India without going to Africa to sell slaves, they could have bought the whole of India for 400 million dollars for 200 million dollars!
And all this is for a handful of rice. Hundreds of hungry people of blood and flesh could not find the address of a handful of rice from the heart in the rocks of Culcatta, People die every day. Rotten people. In the same way that rats die and rot in the plague. The dustbins of the big hotels are occupied by human beings, so the dog has to take possession of human corpses by making peace with the vultures.
The story of this handful of rice was not written from any imagination. Many children dued due starving and they tried to feed from dead mothers but failed and died later on due to hunger and he died in front
These millions of people get knew something before they died that there is no religion above hunger in this world. There is no God above a handful of rice..
Few stories were these rather then the embassy stories...
1.Ann Data: A man after shortage of rice moved towards culcutta and in the way both mother and daughter died, toy of baby girl was with his dead body.
2.Mobi: A soldier who was in India.
3.Bhagat Ram: story of a goon who were truthful in himself but bad for public.
4.Shama k samny: story of semi nomadics and village's lumberdar's son.
The book reflects how the famine of 1943 led to a death march. But I saw the omnivorous naked form of famine in Krishna Chandra's book Annadata. A book that greatly disturbing.
Profile Image for Habiba♡.
352 reviews23 followers
March 8, 2021
" মন্বন্তরে ঝাঁকে ঝাঁকে যেভাবে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, পিপঁড়ে ও ইঁদুরও এমন বীভৎসভাবে মরে না। "

এর আগে কৃষণ চন্দের লেখা 'ভগবানের সাথে কিছুক্ষন' পড়েছিলাম। পরে নাঈম ভাইয়ার সাজেস্টে এই বইটাও হ��তে নিলুম। জানতাম, মনে নিশ্চয়ই দাগ কাটবে বইটি। কিন্তু এতটা গাঢ় ছাপ ফেলে যাবে তা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবিনি।

বইটিতে ফুটে উঠেছে ১৯৪৩ সালের বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের বিভৎসতা। তখন দেশ বিভাজন হয়নি।
যখন এই দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা যাচ্ছিলো তখন তারা মনে করে এটি কোনো রোগ। বাবু সাহেবদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, কারণ যে দেশ থেকে অন্যদেশে খাদ্য পাঠানো হয় সে দেশে দুর্ভিক্ষ নামে কী করে!
কিন্ত হায় ততদিনে গ্রামের পর গ্রাম পরিণত হয় শশ্মানে।
এখানে তখন জীবনের মূল্য দেড় টাকা মাত্র, যেখানে একটি পুতুলের দাম আট টাকা। নারী নিজের নারীত্ব হারিয়েছে, মা ভুলেছে মাতৃত্ব, প্রেমিকার ঠোঁট তখন শুকিয়ে কাঠ আর বাবার বুকে মেয়ের লাশ।
এই ' ক্ষুধা সৌন্দর্য্যকে পর্যন্ত হত্যা করেছে, ক্ষুধা ধর্মকে পর্যন্ত হত্যা করেছে '।
শুধু একজন ভুখানাঙ্গা, হতদরিদ্র সেতারবাদক পৃথিবীর বুকে কিছু প্রশ্ন রেখে গিয়েছে। প্রশ্নের উত্তর বিনা তার মৃত্যু নেই।
Profile Image for Maruf Hossain.
Author 37 books258 followers
April 29, 2017
দুর্ভিক্ষ, মানুষের ভণ্ডামি, মানুষের দুর্ভোগের এত জীবন্ত বর্ণনা খুব কমই পড়েছি। চোখে আঙুল দিয়ে লেখক সমাজের প্রতিটি অসঙ্গতি, শঠতা দেখিয়ে দিয়েছেন। দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা আর সেই দুর্ভিক্ষকে পুঁজি করে একদল উঁচু তলার মানুষের ব্যবসা - এমন তীব্র, জীবন্ত ভাষায় বর্ণনা করেছেন লেখক যে প্রতিটি দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছিল।
Profile Image for DEHAN.
275 reviews86 followers
April 12, 2020
'' আজ সকালে আমি বোলপুর থেকে ফিরে এসেছি । সেখানে ডক্টর টেগোরের শান্তিনিকেতন দেখেছি ।
ওরা বলে , সেটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয় !
সেখানে ছাত্রদের বসার কোন বেঞ্চ নেই । ''
Profile Image for Shoroli Shilon.
164 reviews71 followers
May 6, 2022
যে বই আপনাকে নম্র করে তোলে, পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে, আপনার কাছে প্রশ্ন করে—"কখনো শুনেছো একটা চিনা পুতুলের দাম আট টাকা আর একটা বাঙালি শিশুর দাম দেড় টাকা?" সে বই শেষে আপনি হতভম্ব হয়ে বসে থাকবেন না এ হতে পারে না!

নারীর সকল সৌন্দর্য, সকল বিস্ময়ের উৎস এককণা চাল থেকে উৎসারিত, যা না হলে তার মৃত্যু অনিবার্য। কোথায় যায় তার গৌরব? যেখানে ক্ষুধা তাকে বাঁচতে দেয় না। ক্ষুধা মাতৃত্বকে পর্যন্ত নাকি হত্যা করে! ক্ষুধার জালায় ভাই তার বোন কে, বাবা নিজের মেয়ে কে আর স্বামী তার স্ত্রী কে পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়।

ক্ষুধা এতটা হিংস্র,
এতটাই ভয়ংকর!

"অন্নদাতা" বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় আমি এক নিশ্বাসে পড়েছি। এই লেখাগুলোতে মেকি কোনো কিছুই নেই, চরিত্রগুলো রৌদের চাইতেও উজ্জ্বল এবং বাস্তব। এখনো পৃথিবী থেকে ক্ষুধা পুরোপুরি গায়েব হয়ে যায়নি। তবে পঞ্চাশের মনান্তরের হাহাকার কি জিনিস ছিলো তা আমরা চোখে দেখিনি। মানুষের সাথে কুকুরের ময়লা থেকে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, একমুঠো ভাতের জন্য যে আহাজারি তা নজরে পড়েনি। এতসব বিভৎস দৃশ্য আমাদের দৃষ্টির বাইরে ছিলো বিধায় এখনো বিলাসবহুল হোটেলে বসে খাবার নষ্ট করি, একদম অযথাই। একটা চালের মূল্য কি করে দিতে হয় সে বিষয়ে আমরা বরাবরই মুখ খুলতে নারাজ।
3 reviews
July 2, 2024
اس کتاب کے تیسرے باب تک پہنچ کہ ہی سمجھ آتا ہے کہ یہ کس بارے میں ہے۔ بلکہ کرشن چندر خود ہی بیان کردیتا ہے کہ یہ کہانی دو کی کہانی ہے۔ جیسے کہ مردہ لاش کی زندہ روح ہمیں بتاتا ہے، دھرتی اور پانی (۲ چیزیں) ملتے ہیں تو چاول کا دانا بنتا ہے۔ چندر انکشاف کرتا ہے کہ دو میں زندگی ہے، دو میں حرکت ہے۔ آخر اس دو کی اتنی اہمیت کیوں؟
حالانکہ چندر نے دو کی علامت مثبت الفاظ سے بیان کئے، میں پوری کتاب کو زیر نظر رکھتے ہوئے ایک منفی پہلو دریافت کرتا ہوں۔ جابر اور مجبور ملتے ہیں تو جبر ہوتا ہے۔ ظالم اور مظلوم ملتے ہیں تو ظلم ہوتا ہے۔ استعمارکار اور استعمارزدہ ملتے ہیں تو استعماریت نتیجہ بنتی ہے۔ غرض یہ کہ کسی بھی ۲ کے بیچ ایک باہمی رشتہ ہے۔ تالی دو ہاتھوں سے بجتی ہے۔ ایک ہٹا دو تو بندہ پوری دنیا کا سرمایہ بیچ کہ کھوج لگالے لیکن تالی نہیں بجا پائے گا۔ رد استعماریت کے لہاذ سے یہ ایک اہم سبق ہے۔
Profile Image for Meghadrita Pal.
8 reviews
March 7, 2021
ক্ষুধা মাতৃত্বকে পর্যন্ত হত্যা করেছে,
ক্ষুধা মনুষ্যত্বকে পর্যন্ত হত্যা করেছে,
ক্ষুধা ভ্রাতৃত্বকে পর্যন্ত হত্যা করেছে,
ক্ষুধা সৌন্দর্যকে পর্যন্ত হত্যা করেছে,
ক্ষুধা ধর্মকে পর্যন্ত হত্যা করেছে।
Profile Image for Ayesha Siddiqua.
87 reviews44 followers
March 10, 2021
তেতাল্লিশে মন্বন্তর,২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে...
এই বাংলায় দুর্ভিক্ষ, কি ভয়াবহ অবস্থা!
মাত্র দেড় টাকা,যে টাকায় একটা চিনা পুতুলও কিনতে পাওয়া যায়না,সেই টাকায় একটা বাঙালী শিশু কিনতে পাওয়া যায়! ক্ষুধার্ত ,, ক্ষুধায় জ্বালায় বাবা মা তার নিজ সন্তানকে বেঁচতেও দ্বিধাবোধ করেনা! রাস্তাঘাটে জীর্ণশীর্ণ লাশের পর লাশ...কুকুর আর মানুষ একসাথে উচ্ছিষ্ট কুঁড়ে খাচ্ছে, চিল শকুনের উড়াউড়ি......আর মানবতার চূড়ান্ত মৃত্যু.. এই বাংলায়,আমাদের বাংলার মাটিতে এই দুঃখ........ তবে সুবিধাবাদী সেই সময়েও ছিলো,এখনো আছে।

সেতারবাদকের অভিব্যক্তিতে সেই লাইন " আমি মরে গেছি সত্যি, কিন্ত এতোটাই ক্ষুধার্ত যে, পেটে এককণা চাল পড়লে আবার জীবন্ত হয়ে উঠবো "

আধুনিক যুগে হয়তো ভাবাও যায়না ভাতের অভাবে মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় না খেয়ে কাতরাতে কাতরাতে মরে যাবে ,কিন্ত এ যে বাস্তব ছিলো,বেশ কয়েক দশক আগেও!
কৃষণ চন্দরের দরদী হাতের লেখা,মন খারাপ করে দেয় বড্ড....
Profile Image for Koushik Ahammed.
150 reviews12 followers
September 17, 2021
প্রার্থনা কিংবা অভিশাপে কোন ফলই হয় না।
Profile Image for Shubro Reads.
13 reviews5 followers
December 25, 2021
তেতাল্লিশের মন্বন্তর ভয়ংকর 😑
Profile Image for Alvi Rahman Shovon.
467 reviews16 followers
April 21, 2022
সরল অথচ কি শক্তিশালী লেখনী। প্রতিটি পাতায় পাতায় মন খারাপ করে দেয়। বইটা শেষ করার পর স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম অনেক্ষণ ধরে।
Displaying 1 - 30 of 39 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.