A quarter century after the war that was meant to bring liberation to Bangladesh, Mukti, a researcher, comes into Mariam's life, calling up memories that continue to haunt her. She remembers the wetlands, with their mystery and darkness, across which her young brother Montuand she fled to escape the violence. She remembers the day her brother walked away, never to be seen again, lost to the war which claimed many ambitious, idealistic, patriotic young men, swallowing them up before they even knew the meaning of war.
Shaheen Akhtar's mesmerizing and moving novel is set against the backdrop of the Bangladesh war of liberation and in her skilful hands,the war becomes a way to explore the violence done to women,and their courage, their tenderness, their heartbreak and betrayal and their search for love. Akhtar's is one of the younger voices to explore this hitherto hidden dimension of the history of Bangladesh.
Talaash was awarded the Prothom Alo Literary Prize in 2004.
Shaheen Akhtar is the author of six short story collections and four novels. She has also edited the three-volume Soti O Swotontora: Bangla Shahitye Nari, about the portrayal of women in Bengali literature, and Women in Concert: An Anthology of Bengali Muslim Women's Writings 1904-1938.
Akhtar's second novel Talaash won the Best Book of the Year Award for 2004 from Prothom Alo, the largest-circulation daily newspaper in Bangladesh. The English translation of the novel was published by Zubaan Books, Delhi, India in 2011.
Novels:
1. Palabar Path nei (No Escape Route), Mowla Brothers, 2000
2. Talaash (The Search), Mowla Brothers, 2004
3. Shokhi Rongomala, Prothoma, 2010
4. Moyur Shinghashon (The Peacock Throne), Prothoma, 2014
হলে সিনেমা দেখতে যেয়ে আবেগের আতিশয্যে কিশোর জসিম হাত চেপে ধরে কিশোরী মেরির। আলো-আঁধারীর সিনেমা হলে সামান্য হাত চেপে ধরা নিয়ে গ্রামে ঢি ঢি পড়ে যায়। দুর্নামের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাবা মা মেরিকে পাঠিয়ে দেয় ঢাকা শহরে। যেই দুর্নাম থেকে বাঁচার জন্য এতো আয়োজন.. মেরির পলায়ন.. বাদ বাকি জীবনে মেরি কেবল পালিয়ে পালিয়েই থেকেছে। দুর্ভাগ্য আর পিছু ছাড়েনি বেচারির।
মুক্তিযুদ্ধ (এবং তার পরবর্তী) নিয়ে এতো সুন্দর বই আমি খুব কমই পড়েছি। বীরাঙ্গনাদের মতো এতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এতো দারুণভাবে এবং এতো গভীরতা নিয়ে লেখা যায়! ভাবা যায় না। গোটা মুক্তিযুদ্ধে এমন কোন বিষয় নেই যা এই বইয়ে উঠে আসেনি। আবার এমন অনেক ইস্যু এসেছে যা অনেকে ভাবতেও পারেনি। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গেছে বীরাঙ্গনাগণ। বলা হয় তারাও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আসলেই কি তাই? যুদ্ধোত্তর সময়ে ভাই কিংবা পুত্রের রক্ত দেয়াটা ছিল গৌরবের আর নারী অর্থাৎ বোন কিংবা কন্যার সম্ভ্রমহানি ছিল কলঙ্কের নামান্তর। বীরাঙ্গনাদের বারাঙ্গনায় পরিণত করার জন্য সে সময়ের মানুষের দায়ভার কম নয়। মানুষ যদি একটু সহনশীল হত? মানুষ যদি একটু দয়ালু হতো? করুণা নয়, মানুষ যদি একটু মায়ার হাত বাড়িয়ে দিতো তাদের দিকে.. হয়ত এদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবন পেতে পারতো। পুনর্বাসন আর প্রত্যাবর্তনের মাঝে ব্যাপক একটা পার্থক্য আছে। সেই সময়ের মাঝে দিয়ে যেই ভুক্তভোগী নারীরা গেছেন, তাদের সেই ব্যথার কথা একমাত্র তারাই বলতে পারবেন। বইটা পড়তে পড়তে চোখ ভিজে উঠছিল বার বার। এই যে যুদ্ধ হলো, দেশ স্বাধীন হলো.. ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে কতো সুযোগ সন্ধানী নিজের আখের গুছিয়ে নিল, বীরাঙ্গনারা পেল কি? আরেকটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট। যুদ্ধ, সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন.. যেই জাতিগোষ্ঠী কিংবা যে কারণেই ঘটুক না কেন.. একটা যুদ্ধে সর্বাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন বোধহয় হয় নারীরাই।
সত্যি বলছি, বছরটা এতো সুন্দর একটা বইয়ের মাধ্যমে শেষ হবে, ভাবিনি। হাইলি রেকমেন্ডেড।
এবছর যে ক'জন অসাধারণ লেখক/লেখিকা আবিষ্কার করেছি, শাহীন আখতার তাঁদের মধ্যে অন্যতম। 'তালাশ' পড়ে আমি মুগ্ধ, অভিভূত। আপাতত পাঁচ তারা দিয়ে রাখলাম (এর বেশি দেয়া গেলে তা-ই দিতাম); পরে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা রাখি।
"তালাশ" হচ্ছে এমন একটা বই যেটা চোখে গুতা দিয়ে কান্না করায় না, আবার "শোন হে মানুষ ভাই" ধরনের কিছু শেখাতেও চায় না - অথচ এ দুটাই বইটা ভালো ভাবে করতে পারত। "তালাশ" বরং ভয়াবহ নির্মোহভাবে এমন একটা অধ্যায়ের বর্ণনা করে পাঠক হিসাবে যেটার trauma থেকে আমাদের আর বের হয়ে আসা সম্ভব হয় না।
শাহীন আক্তারের "তালাশ" ইতিহাস খুঁড়ে বেদনা-লজ্জা জাগানোর মতো। যে মুক্তির জন্য, স্বাধীকারের জন্য মানুষ অবলীলায় নিজেকে দাঁড় করায় বুলেট -মর্টারের বিপরীতে, সেই কাঙ্খিত মুক্তি বা স্বাধীকারই কেন তুমুল প্রতারক রুপে আবির্ভুত হয় শেষমেশ? অর্জিত গৌরবের ডামাডোলে কেন তবে ফিকে হয়ে আসে যাবতীয় আত্মত্যাগ? উপন্যাসিক শাহীন আক্তার তার এই উপন্যাসে মরিয়ম, অনুরাধা, টুকি, শোভার মতো আরও বহু হারিয়ে যাওয়া মুখের ভেতর দিয়ে তালাশ করেছেন এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর।
এই প্রজন্মের কাছে এই স্বাধীনতা অর্জনের ছকটা একেবারেই সোজা-সাপ্টা: শোষণ-জাগরণ-নেতৃত্ত্ব- যুদ্ধ-স্বাধীনতা। প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়া ইতিহাসে ক্রমেই আত্মত্যাগের তুলনায় প্রমিনেন্ট হয়ে ওঠে বীরত্বের আখ্যান। নেতৃত্বের টানা-হেঁচড়া,বিশ্বাসঘাতক থেকে দেশপ্রেমিক বনে যাওয়া শুয়োরের বাচ্চাদের উচ্চকিত চোঁটপাট সব মিলিয়ে স্বাধীনতার অর্ধশত বছরের জরাজীর্ণ কঙ্কালসার স্বরুপের কাছেও বরাবরের মতো আজো উপেক্ষিত মরিয়মেরা।
রীতিমত চমকে উঠতে হয় যতোটা না একাত্তরে তাদের উপর করা নির্যাতনের বর্ণনা শুনে তার চেয়ে বেশী যুদ্ধোত্তর দেশে তাদের প্রতি পরিবার, সমাজ, সর্বোপরি দেশ যেভাবে আচরণ করেছে সেটা শুনে। পড়তে পড়তে এক একসময় মনে হয়েছে আমরা কখনোই কি সত্যিকার অর্থে মানবিক ছিলাম? দুঃসময় আমাদেরকে যুথবদ্ধ করেছিলো ঠিকই, কিন্তু সহমর্মিতা ব্যাপারটা বরাবরই ছিলো নেহায়েত একটা ভান এবং বানের তোড়ে ভেসে যেতে যেতে জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে আঁকড়ে ধরা খড়কুটোর মতো। জীবনের মোটামুটি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবার পর আমরা তাই ঠিকই ফিরে গিয়েছিলাম সেই একই অকৃতজ্ঞ মানুষ ভরপুর খোঁয়াড়ে।
আত্মত্যাগের পুরষ্কার হিসেবে অগনিত "বীরাঙ্গনা" কে বেশ্যাপল্লিতে পুনর্বাসিত হবার বৃত্তান্ত জেনে কার কেমন বোধ হয় জানি না। আমি লজ্জিত হই, নিজেদের প্রতি ঘৃণায় আত্মধিক্কারে। এত বছর পরেও অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দ্বিধা বোধ করি না।
উপন্যাসিক শাহীন আক্তারকে আমার আগে কখনো পড়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের এই স্পর্শকাতর বিষয়বস্তুকে তিনি উপন্যাসে যেভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডিল করেছেন তা রীতিমত তার প্রতি প্রণতি জাগানিয়া। পাঠক হিসেবে আমি সত্যিই আনন্দিত যে এতো পরে হলেও তার মতো এমন একজন শক্তিশালী উপন্যাসিকের সন্ধ্যান পেয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুখস্থ প্যাটার্নের গদগদ, লিনিয়্যার, ব্ল্যাক অর হোয়াইট, প্রেডিকটেবল ন্যারেটিভ-এর গণ্ডি ছাড়িয়ে, ঊর্ধ্বে উঠে শাহীন আখতার এই বইতে যা লিখে গেছেন, তা নিয়ে কিছু বলবার ধৃষ্টতা বা যোগ্যতা- কোনোটাই আমার নাই।
তালাশ’ কী ধরণের বই? – উপন্যাস? হ্যাঁ, ‘তালাশ’কে উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, ‘তালাশ’ হতে পারে ডকু-ফিকশন বা যুদ্ধদলিল—যে দলিলে আছে কেবল বীরাঙ্গনাকথা…
মুক্তিযুদ্ধে এক বীরাঙ্গনার অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও ‘তালাশ’-এর বিস্তৃতি আরও গভীর—যে গভীরে আমরা সাধারণ মানুষ কখনো প্রবেশ করিনি, কিংবা সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছি, ভুলে গেছি…
এই উপাখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র মরিয়ম ওরফে ‘মেরি’—এক বীরাঙ্গনা। না, শুধুই মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত হওয়া বীরাঙ্গনা নয়; বরং যুদ্ধের আগে এবং পরেও যে নির্যাতিত হয়েছে…
উপন্যাসের ফর্মেটে লেখা হলেও আমরা ইতিহাসের চোখ দিয়ে দেখতে পাই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আরও বীরাঙ্গনাদের জীবনের টুকরো টুকরো খণ্ডচিত্র। দেখতে পাই বীরাঙ্গনাদের স��থান সমাজের কোন স্তরে নেমে গিয়েছিল সেই সময়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বাঙ্কার ও বিভিন্ন টর্চার সেল থেকে যখন নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার করা হচ্ছিল, তখন তারা জানত না যে জীবন আর সমাজের থেকে নির্যাতনের পথচলা সবে মাত্র শুরু হয়েছে…
মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্যাতনের চিত্র নিয়ে লেখালেখি হয়েছে বেশ, কিন্তু তার পরের সময়ের চিত্র আমাদের কাছে অস্পষ্ট। কোথায় গেল সেই বীরাঙ্গনারা? সমাজ কিভাবে গ্রহণ করল তাদের? স্বাভাবিক জীবনে কতটা ফিরতে পেরেছিল তারা? এই সব প্রশ্নের কিছু উত্তর মেলে তালাশ উপন্যাসে।
হয়তো খুবই অল্প কয়েকজন ফিরতে পেরেছিল স্বাভাবিক জীবনে—কিন্তু বাকিরা? এই বাকিদের অনেকেই বুঝেছিল, তারা আর ফিরতে পারবে না সমাজে। যে সমাজের বাপ–ভাই–স্বামী তাদের রক্ষা না করে ফেলে গিয়েছিল দেশ স্বাধীন করবে বলে, সেই সমাজই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের গ্রহণ করেনি। সেই জন্যই একদল বীরাঙ্গনা যুদ্ধবন্দী পাকিস্তানীদের সঙ্গে ভারত হয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল—যদিও জানত শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো রঙিন গলিতেও তাদের স্থান হবে না…
দেশে থেকে যাওয়া অনেকের স্থানও হয়েছিল এমন জায়গায়—কোনো মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো তাকে বেচে দিয়েছিল ঘাটে।
পুনর্বাসন কেন্দ্রে যাদের জায়গা হয়েছিল, তারাও সেখান থেকে সরে পড়েছিল—বাধ্য হয়েই। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে পুনর্বাসন কেন্দ্র উঠে গেল। পতিতালয় উচ্ছেদের মতো করে সব ছুড়ে ফেলে দেওয়া হল; মেয়েদের তাড়িয়ে দেওয়া হল। আবার, বেগম মুজিব যখন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁদের বিয়ে দিয়েছিলেন, তারাও সমাজে ফিরতে পারেনি।
আবার দীর্ঘ সময় পর যখন দুই–একজন বীরাঙ্গনা সামনে আসতে শুরু করল, আমরা দেখলাম—তাঁদের আর কিছুই চাওয়ার নেই; শুধু ভাত খেতে চায় তারা। তবুও সমাজ তাঁদের কিছুটা হলেও মর্যাদা দিল। কিন্তু বাকিরা? তারা দেখেছিল—যে বঙ্গবন্ধু তাঁদের ‘মা’ ডেকেছিলেন, বলেছিলেন বেলিফুলের মালা পরে তাঁদের বিয়ে হবে, সেই বঙ্গবন্ধুই ছেলের বিয়েতে সোনার মুকুট পরিয়ে ঘরে এনেছিলেন পুত্রবধূকে। দেশে তখন ভাতের জন্য হাহাকার…
না, শুধু এখানেই থেমে থাকেনি সব কিছু—আরও অনেক গভীরে ছিল বীরাঙ্গনাদের জীবনকথা। লেখক শাহীন আখতার সেই জীবনকথারই তালাশ করেছেন এই উপন্যাসে—বা ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া কোনো এক বীরাঙ্গনার তালাশ করেছেন… কে জানে…
শাহীন আখতারের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস তালাশ পরলাম । ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ বাঙ্গালী নারীদের উপর মিলিটারী ক্যাম্পগুলোতে পাক হানাদার বাহিনীর যে পৈশাচিক দৈহিক ও মানসিক অত্যাচার চলে তার লোমখাড়া করা বর্ণনা তুলে ধরেছেন লেখিকা । মরিয়ম, টুকি বেগম, মুক্তি, জাভেদ সামির, অনুরাধা চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে লেখিকার আসামান্য লেখনীর গুণে । স্ট্যাটিসটিকস্ বলে আনুমানিক ৪ লক্ষ বাঙ্গালী মহিলা পাক বাহিনীর বিকৃত মনোভাবের শিকার হন এবং প্রায় ২৫০০০ যুদ্ধশিশু জন্ম নেয় । এই শিশুদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দত্তক নেওয়ার জন্য । কোন দুর্বল মনের মানুষ এই বইটা পড়তে পারবেন না । সবথেকে কষ্ট লাগছিলো পড়তে যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে এইসব হতভাগ্য নারীদের অবদান তাদের দেশ ভুলে গেল । সমাজে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার বদলে সমাজ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে এইসব বীরাঙ্গনাদের বেশীরভাগের জায়গা হল নোংরা ঘিঞ্জি পতিতালয়ে । তাও যতদিন বঙ্গবন্ধু জীবিত ছিলেন তাদের সমাজে পুনর্বাসন দেওয়ার একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার । কিন্তু তিনি মারা যাবার পর তাতে পুরোপুরি ভাটা পড়ে যায় । তালাশ নিঃসন্দেহে আমার পড়া অন্যতম সেরা মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক বই ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায় সম্ভবত বীরাঙ্গনাদের ইতিবৃত্তান্ত। নীলিমা ইব্রাহীমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ ছিল আমার পড়া প্রথম বই যাতে বিষয়টি সম্পর্কে জানার সাহস করতে পেরেছিলাম। এরপর যতোবার মুক্তিযুদ্ধে এই ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষদের কথা পড়েছি, প্রতিবার নানারকম দু:স্বপ্ন দেখেছি, পড়তে পড়তে বই খামচে ধরেছি এবং চোখ ভিজে উঠেছে। হ্যা, বই আমাদেরকে কঠিন বাস্তবতা থেকে একটু দূরে সরিয়ে খানিকটা স্বস্তি এনে দেয়। কিন্তু, আর্টের সব ফর্মের মতো সাহিত্যেরও এই দায় নেই। ভাগ্যিস, নেই। কারন, কিছু বিষয় আসলে নিজেকে মোটামুটি কষ্ট দিয়ে হলেও জানা দরকার। তাও, এসব পড়ে অত্যাচারিতর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে উপলব্ধিটুকুই শুধু করা যায় এখন। যা ঘটেছে, সেই অকল্পনীয় নির্যাতনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের বেঁচে থাকাটাকে আমরা স্বাধীন দেশে প্রহসন বানিয়ে ফেলেছিলাম। আর সেই জোকের punch line হল মানুষগুলোর বেশ্যালয়ে শেষ ঠিকানা হওয়া। মরিয়ম সেখানে না গিয়েও সাধারন চাকরি টিকিয়ে রাখতে বসের পুরুষাঙ্গ লেহন করতে বাধ্য হতেন। আরেক অফিসে কাজ করবার সময়ে মানুষজন ‘বীরাঙ্গনা’ নামক চিড়িয়া দেখতে আসতো। .... কি আজব আমরা! এখনো কিন্তু আমরা একচুলও পাল্টাই নি।
‘তালাশ’ পড়া শেষ করেছি গত সপ্তাহে। এখনো পর্যন্ত মরিয়মের জীবন তাড়া করছে মনে মনে। রিভিউ লিখব, লিখব করে হচ্ছে না। পারি না লিখতে। ‘তালাশ’ নিয়ে আরো পারছি না। শুধু সবাইকে বলতে ইচ্ছা করছে যে বইটা এইবেলা পড়ে ফেলেন। কারন, সময়ে সময়ে মাথায় ঘুরপাক খায় যে কেন আমাদের সাথে জগৎসংসার আনফেয়ার আচরণ করছে! তালাশ পড়ার পর মনে হয়, বেঁচে যে আছি আমরা একটা জাতি হিসেবে এবং ইতিহাসের একটা বড় দায় না মিটিয়ে, এর জন্য হয়তো সাম্প্রতিক মহামারীও বিশাল কোন শাস্তি নয়। এর চেয়ে খারাপ কিছু আসলে একাত্তরে এই মানুষগুলোর সাথে হয়ে গেছে। সেই তুলনায়, রোগ-শোকে মৃত্যু আসলে শুধু মৃত্যুই। এর বেশি কিছু না।
মরিয়ম নামক এক বীরাঙ্গনাকে নিয়ে এক গল্প যেখানে উঠে এসেছে মরিয়ম তথা মেরির জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানোর গল্প, দূর্ভাগ্য তার পিছু না ছাড়ার গল্প। আরো উঠে আসে সমাজ থেকে, সরকার থেকে বারবার প্রতারিত, নিপিড়ীত হওয়ার গল্প। পড়তে পড়তে হৃদয়ে একটা প্রশ্ন শুধু প্রতিধ্বনিত হয় "বীরাঙ্গনাদের সম্মান এবং মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার বদলে এসব সম্মানহানি হওয়া, মানুষের কাছে অবহেলিত হওয়া, এসব প্রাপ্য ছিলো? সরকার তো কিছু করেই নি তাদের জন্য, সমাজেও কি মারাত্মকভাবে তাদের নিচুস্তরের করে দেখা হতো"
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে এমন স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে লেখিকা শাহীন আখতারের এই উপন্যাস পড়তে পড়তে হয়তো পাঠকের মনে হবে "লেখিকা এতোটা হৃদয়হীন কেন, এমন কঠোর কেন"। চরিত্রের জন্য যেন কোনো অনুভূতি, হা-হুতাশ বা হাহাকার যেন নেই৷ তবে এটাই উনার লেখার মুনশিয়ানা, উনার লেখা যেন এখানে বাস্তবতার স্তম্ভ হয়ে সগৌরবে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু এমন বাস্তবতা পাঠককে ঘায়েল করবে এবং চরিত্রের জন্য বিষণ্ণতার মেঘ বয়ে যাবে। নির্দয়ভাবে লিখেছেন ঠিকই, কিন্তু পাঠকের মন খারাপ হবে ক্রমাগত।
আমাদে��� সময়ের শক্তিশালী লেখিকা শাহীন আখতার লেখার মান বা শৈল্পিক মানের দিকে কোনোরকম ছাড় দিতে চান না যেন! বাক্যগঠন, লেখার স্টাইল এমন যে, বীরাঙ্গনা বিষয়ে গল্প বলা ছাড়াও উনার আর্টিস্টিক লেখাতে যেন অন্য এক মাত্রা পেয়েছে এই উপন্যাস। লেখাতে আছে আলাদা একটা নান্দনিকতা। লেখার স্টাইল, গল্প বলার ধরণের জন্য পাঠকের মধ্যে আলাদা স্থান করে দিবে এই উপন্যাস, পাঠকের মধ্যে তৈরী হবে ভ্রম, আর বইটা শেষ করার পর যেন এর বিষণ্ণতার রেশ থেকে যাবে, তাছাড়া মনে তৈরী হবে হরেকরকমের প্রশ্ন। তবে, পড়তে পড়তে বইটার লেখা কঠিন বা টাফ-টু-রিড মনে হলেও পড়ার শেষে অসাধারণ এ��� উপন্যাস পড়ার অনুভূতি হবে এবং আবেশ থেকে যাবে অনেকদিন.....
মৃত্যুর অভাবে মানুষ বেঁচে থাকে এবং এভাবে বছরের পর বছর বাঁচা যায়। - শাহীন আখতার
'তালাশ' উপন্যাসে শাহীন আখতার মূলত মরিয়ম নামে এক যুবতীর গল্প বলেছেন। যুদ্ধের আগে যার সম্পর্ক হয় এক তরুণের সঙ্গে। যে রাজনীতি করার স্বপ্নে বিভোর; যে উত্তাল সময়টাতে নিজের গা ভাসিয়ে দিতে ব্যস্ত; যে দেশটাকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে মত্ত। কিন্তু মরিয়মের পেটে অনাগত সন্তানের জনক হবার সময় নেই তার; এমনকি নেই সংসার বাঁধার সময়। তাই অনাহূত সন্তান বিসর্জন দেয় মরিয়ম। আর সেই দুঃখ ভোলার আগেই ঢাকার বুকে রাতের আঁধারে নেমে আসে শত শত বুট।
সেই বুটের আওয়াজ তাড়া করে ফিরে মরিয়মকে। চার দেয়ালে বন্দি হয়ে নয়টা মাস কাটিয়ে দেয় সে। যুদ্ধ শেষ হয়; সবকিছু নতুন করে শুরু হয়। কিন্তু নতুন জীবন ফিরে পায় না কেবল মরিয়ম। চার দেয়ালের বন্দি জীবনের ট্রমা বাস্তবে রূপ নেয়। 'বীরাঙ্গনা' উপাধি মরিয়মকে খুব বেশীদিন সম্মানের আসনে বসিয়ে রাখতে পারে না। বীরাঙ্গনা পুনর্বাসন কেন্দ্র উচ্ছেদ হয়। বীরাঙ্গনা সম্মানে বিবাহিত জীবন ভেঙে যায়। সাধারণ নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকাটাই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায় মরিয়মের জন্য।
২০১১ সালে উপন্যাসটি দিল্লীর জুবান পাবলিকেশন্স থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। ইংরেজিতে নামকরণ করা হয় 'দ্য সার্চ' নামে। বইটির অনুবাদ করেন এলা দত্ত। পরে ২০১৮ সালে বইটি ইংরেজি ভাষা থেকে কোরিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়। অনুবাদ করেন অধ্যাপক সিং হি জন। এরপর ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে শাহীন আখতার তালাশ উপন্যাসের জন্য এশিয়া লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত এশিয়া লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
শাহীন আখতারের লেখনশৈলীতে একধরনের ঘোরলাগা ভাব আছে। অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে লেখা সেই লেখনশৈলীতে পাঠককে যেন এক চক্রযানে আটকে ফেলেন তিনি। সেজন্যই গল্পের গভীরে ডুবে যেতে খুব একটা সমস্যা হয় না পাঠকের। তবে পাঠকভেদে এই চক্রযানে আটকাতে খানিকটা সময় লাগবে, এটাই স্বাভাবিক।
এই চক্রযানের মূল ইন্ধন অর্থাৎ, লেখিকার লেখনশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। সাবলীলতা, প্রাঞ্জলতা, শব্দচয়ন, বাক্যগঠন এবং উপমার ব্যবহার পাঠককে ভাবাতে বাধ্য করে। আবার, এখানেও পাঠকভেদে অনেক বর্ণনাই অনেকের কাছে বাহুল্য বলেও মনে হতে পারে। যদিও গল্প বলার ছলে লেখিকা কেবল তার মনের ভাষাই ব্যক্ত করে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের এক বীরাঙ্গনাকে কেন্দ্র করে গল্প। বইয়ের পাতার কালো অক্ষরকে অনুসরণ করে ৭১ এর দিনগুলি দেখেছি। এই যুদ্ধ প্রকৃত যোদ্ধাকে ঘৃণার পাত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে, আবার বহু রাজাকারকেও বানিয়েছে যোদ্ধা।
বইটা নিয়ে লিখার মতো যথাযথ শব্দ আমার ভান্ডারে নাই। আপনাকে পড়ে এর স্বাদ নিতে হবে।
বিঃদ্রঃ ব্যক্তিগতভাবে বহু জায়গায় আমার অমত আছে। তবুও বইটি সুন্দর।
This is probably one of the most honest books on our Liberation War. Brilliantly crafted storytelling by Shaheen mam. Brutal, gut-wrenching and thought provoking. A mere 5 star rating is not enough for this Masterpiece.
সময়টা ১৯৪২। কোরিয়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে এক ১৬ বছরের কিশোরী স্কুলে পড়তে চেয়েছিল। তাকে প্রতিবেশী লোকটা ভালো শিক্ষকের কাছে নিয়ে যাবে বলে ট্রেনে করে আরো কয়েক‘শ নারীর সাথে পাঠানো হয় Seoul এ। কোরিয়ার রাজধানী তে। সেখান থেকে তারা জাপান সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে চায়নার সাথে জাপানীজ দের যুদ্ধে অংশ নেয়। চায়নায় অবস্থানকালে তারা "কমফোর্ট উইম্যান" হিসাবে কাজ করতো। পরবর্তী ৩ বছর সেই কিশোরীকে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন জাপানীজ সৈনিককে সেক্সুয়ালি খুশি করতে হতো। এটাই তার যুদ্ধ!
১৯৯১ সালে প্রথম কোন যুদ্ধবন্দী নারী তার নির্যাতনের কাহিনী গণসম্মুখে প্রকাশ করে এর জন্য বিচার চায়। এই কোরিয়ান নারী তার এবং তার সাথে থাকা সহস্র ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপিন, কোরিয়ান নারীর জন্য যুদ্ধ চলাকালীন জাপানীজ সম্রাট হিরোহিতোর দিকে আঙ্গুল তুলে টোকিওতে বিচার চায়। হিরোহিতো তখন মৃত! সে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীজ সৈনিকদের উজ্জীবিত রাখতে এই অন্যায় কে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। ঠিক যেমন ইয়াহিয়া কিংবা ভুট্টো পাকবাহিনীকে প্রশ্রয় দিয়েছিল লক্ষাধিক বাঙ্গালী নারীকে ধর্ষন করতে। বীরঙ্গনা সকল দেশেই একরকম। তাদের যুদ্ধে থেঁতলানো দেহ কিংবা কোরাবনীর মাংসের মতো ভাগে ভাগে বিতরণ হওয়া জীবন যুদ্ধের পরও স্বাধীন দেশ কিংবা সমাজ সহজভাবে নেয় নি। সেই কিশোরী যেমন আদালতে বলেছিল - "আমার শরীর নোংরা। আমার যৌবন নেই, আমার কোন সুখ নেই। আমার সংসার হয়নি, বাচ্চার স্বপ্ন দেখতে দেয়া হয়নি।" বাংলাদেশের বীরঙ্গনাদের অবস্থাও অনেকটা এরকম। পাকিস্তানীরা যতটা না অত্যাচার ৯ মাসে করেছে, ৯ মাস পর স্বাধীন দেশে তারচেয়ে বেশি পরিমাণ অত্যাচার বীরঙ্গনাদের উপর করেছে সমাজ, রাষ্ট্র, আত্মীয়, প্রতিবেশী কিংবা পুর্নবাসকেন্দ্র গুলো। বেশ্যাবৃত্তিই ছিল তাদের একমাত্র বেঁচে থাকার ভরসা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত বই পড়েছি, শাহীন আখতারের 'তালাশ' সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। এরকম চোখে আঙ্গুল দিয়ে কখনো বীরঙ্গনাদের ব্যাপারটা মানুষের সামনে উপস্থাপন হয়নি বোধহয়। চমৎকার লেখনি, সাথে গল্প বলার ধরন আপনাকে মুগ্ধ করবে বইটির শেষাংশে কি তালাশ করেছেন লেখিকা তা জানার জন্য।
এ এক এমন আখ্যান আর ইতিহাস, যা পড়তে গিয়ে বারবার চোখ ভিজে উঠতে গিয়েও সেখানে অবিশ্বাস আর ক্রোধ জমা হয়। পাতায় পাতায় দম বন্ধ হয়ে আসে। আরও অসংখ্য অনুভূতির সম্মুখীন হতে হয় যার কোনটাই প্রেম নয়, ভালোবাসা নয়, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস বা দেশপ্রেম নয়। অকৃতজ্ঞ এক জনপদ বা পৃথিবীর এই ইতিহাস সব কিছুর উর্দ্ধে উঠে পাঠককে নিশ্চল, স্তব্ধ, বোবা করে দেয়। সমস্ত আত্মত্যাগ অর্থহীন মনে হয়।
আমি জানি না শাহীন আখতার কি করে পারলেন এত গভীরভাবে একজন বীরাঙ্গনার নির্লিপ্ততা এমন করে নিজের লেখায় উপস্থাপন করতে! কিন্তু আমি এইটুকু উপলব্ধি করতে পারি, যতখানি নির্লিপ্ত লেখনীতে এই উপন্যাস তিনি লিখেছেন তার পেছনে ততোধিক মমতা আর দায়ভার তিনি একা নিজের ভেতরে ধারণ করেছেন।
একটা ডিস্টার্বিং বই। মাথায় বাড়ি মারবে নানা সময়, পাতায় পাতায়। অবশ্য নীলিমা ইব্রাহীম পড়া থাকলে আকতা পূর্ব প্রস্তুতির মতো কাজ করে বিষয়টা। যাই হোক, বলে রাখি 'তালাশ' মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস যেখানে মূল চরিত্র নারী। একজন নারী এবং তার আশেপাশের আরো অনেক নারী। তারা বীরাঙ্গনা। যুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেই নারীদের জীবন নিয়ে এই উপন্যাস। সুতরাং বোঝাই যায় মাথায় বাড়ি কেন লাগবে। এর মধ্যে শাহীন আখতারের ভাষা কঠিন সেটা মাথায় রাখা লাগবে এই বই পড়ার সময়। কেননা তার একটা বাক্য হয়ত বোঝা যায় কিন্তু একটা প্যারা পড়ার পর অনেক সময়ই থামতে হয়। তালাশ মূলত অনাকের জন্য অবশ্যপাঠ্য