'পায়ের তলায় সর্যে' নামটি একমাত্র তাঁর ক্ষেত্রেই সর্ব অর্থে মানায়।
শুরু করেছিলেন সেই যৌবনবয়েসে। এখনও এই পঁচাত্তর পেরিয়েও কোথাও যেতে হলেই তিনি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি।
তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
একাধারে বরেণ্য কবি, বিশিষ্ট কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক, আবার ভ্রমণপিপাসু অদম্য পথিক। কিন্তু এ ভ্রমণ কি নিছকই শুধু নতুন দেশ নতুন নিসর্গ দেখার টান?
ভুল হল। তার লেখাগুলি কখনও মানুষের মর্মস্পর্শী গল্প। কখনও কবিতার মতো ঝরনা, কখনও নিটোল উপন্যাসের মতো টানটান। সুনীলের নিজের কথায়, 'খুব ছোটবেলা থেকেই আমার ভ্রমণের নেশা। সবসময় মনে হতো, এই পৃথিবীতে জন্মেছি, যতটা পারি তা দেখে যাবো না?... একসময় জাহাজের নাবিক হবারও স্বপ্ন ছিল আমার। তা অবশ্য হতে পারিনি।... কখনো রাত কাটিয়েছি গাছতলায়, কখনো নদীর বুকে নৌকায়, কখনো পাঁচতারা হোটেলে।... সেইসব লেখা জমে-জমেও প্রায় পাহাড় হয়ে গেছে। প্রায় সব ভ্রমণ কাহিনি নিয়ে (কিছু হারিয়ে গেছে) পত্র ভারতীর ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ করছেন ভ্রমণ সমগ্র। এই দু'খণ্ডের আয়তন দেখে আমি নিজেই বিস্মিত। সব লেখা যদি সংগ্রহ করা যেত, তা হলে আরও কত বড় হতো!...এর মধ্যে ঘুরে আসা অনেক দেশের কথা লেখাও হয়নি। তৃতীয় খণ্ড হবে? হতেও পারে।' মুগ্ধ বিস্ময়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তে-পড়তে মনে হয়,কবে আসছে তৃতীয় খণ্ড?
Sunil Gangopadhyay (Bengali: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) was a famous Indian poet and novelist. Born in Faridpur, Bangladesh, Gangopadhyay obtained his Master's degree in Bengali from the University of Calcutta, In 1953 he started a Bengali poetry magazine Krittibas. Later he wrote for many different publications.
Ganguly created the Bengali fictional character Kakababu and wrote a series of novels on this character which became significant in Indian children's literature. He received Sahitya Academy award in 1985 for his novel Those Days (সেই সময়). Gangopadhyay used the pen names Nil Lohit, Sanatan Pathak, and Nil Upadhyay.
Works: Author of well over 200 books, Sunil was a prolific writer who has excelled in different genres but declares poetry to be his "first love". His Nikhilesh and Neera series of poems (some of which have been translated as For You, Neera and Murmur in the Woods) have been extremely popular.
As in poetry, Sunil was known for his unique style in prose. His first novel was Atmaprakash (আত্মপ্রকাশ) and it was also the first writing from a new comer in literature published in the prestigious magazine- Desh (1965).The novel had inspiration from ' On the road' by Jack Kerouac. His historical fiction Sei Somoy (translated into English by Aruna Chakravorty as Those Days) received the Indian Sahitya Academy award in 1985. Shei Somoy continues to be a best seller more than two decade after its first publication. The same is true for Prothom Alo (প্রথম আলো, also translated recently by Aruna Chakravorty as First Light), another best selling historical fiction and Purbo-Paschim (পূর্ব-পশ্চিম, translated as East-West) a raw depiction of the partition and its aftermath seen through the eyes of three generations of Bengalis in West Bengal, Bangladesh and elsewhere. He is also the winner of the Bankim Puraskar (1982), and the Ananda Puraskar (twice, in 1972 and 1989).
Sunil wrote in many other genres including travelogues, children's fiction, short stories, features, and essays. Though he wrote all types of children's fiction, one character created by him that stands out above the rest, was Kakababu, the crippled adventurer, accompanied by his Teenager nephew Santu, and his friend Jojo. Since 1974, Sunil Gangopadhyay wrote over 35 novels of this wildly popular series.
Death: Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack. He was suffering from prostate cancer for some time and went to Mumbai for treatment. Gangopadhyay's body was cremated on 25 October at Keoratola crematorium, Kolkata.
Awards & Honours: He was honored with Ananda Award (1972, 1979) and Sahitya Academy Award (1984).
পায়ের তলায় সর্ষে ১ ভ্রমণ সমগ্রে "হঠাৎ এক টুকরো" নামে একটা অংশ আছে। কতবার যে পড়েছি হিসাব নাই। ইস! আমার কত্ত ভাল লাগছে। বই থেকে সরাসরি তুলে দিলাম। ...................................
#হঠাৎ এক টুকরো
আমি যখন কলকাতার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, তখন গাড়িওয়ালা লোকদের ওপর আমার খুব রাগ হয়। কলকাতার রাস্তায় এত লোক যে ভালোভবে হাঁটাই যায় না। এই বর্ষার সময় যেখানে সেখানে জলকাদা জমে থাকে, তারই মধ্যে গাড়িগুলো এমন বেপরোয়াভাবে যায় যে সবসময় প্রাণটা হাতে নিয়ে থাকতে হয়। গাড়ির চাকায় ছেটকানো জল কাদা আমাদের গায়ে লাগে, কিন্তু গাড়ির ড্রাইভাররা তা গ্রাহ্যও করে না। অথচ রাস্তাগুলো তো আসলে পদাতিকদের জন্যই!
আবার আমিই যখন গাড়ি চড়ে যাই, তখন মনে হয় কলকাতা শহরের রাস্তায় লোকগুলো অতি অদ্ভুত। এরা কোনওরকম শহুরে নিয়মকানুন মানে না। ফুটপাথ ছেড়ে এরা যখন তখন রাস্তার মাঝখানে চলে আসে, এর মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানো যে কত অসুবিধে তা এরা বুঝবে না। প্রায়ই দু’তিন বন্ধু রাস্তার মাঝখান দিয়ে গল্প করতে করতে যাচ্ছে, পেছনে গাড়ির হর্ন শুনলে একবার ফিরেও তাকায় না! হঠাৎ হঠাৎ এক একজন লোক ট্রাফিক কনস্টেবলের মতন হাত তুলে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে দেয় নিজে রাস্তা পার হওয়ার জন্য! অন্য যে-কোনও দেশ হলে এইসব লোককে অ্যারেস্ট করা হতো! যে-সব লোক রাস্তা দিয়ে ঠিকমতন হাঁটতে পারে না, তাদের শহর থেকে বার করে দেওয়া উচিত!
একবার দুর্গাপুর স্টেশনে এসে দেখি আমার ট্রেনটা সদ্য ছেড়ে দিয়েছে। পরের ট্রেন অনেক পরে, সেইজন্য আমি মরিয়া হয়ে ছুটতে ছুটতে চলন্ত ট্রেনেই উঠে পড়লুম। কামরাটার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, আমি দুম দুম করে ধাক্কা দিয়ে ভেতরের যাত্রীদের বলতে লাগলুম, খুলে দিন! খুলে দিন! ভেতর থেকে এক সঙ্গে তিন চারজন বললেন, জায়গা নেই, জায়গা নেই!
যেহেতু আমি কখনও, চিনেবাদাম বিক্রি করিনি কিংবা গান গেয়ে ভিক্ষে করিনি, সেইজন্য ট্রেনে ঝুলে ঝুলে যাওয়ার অভ্যেস আমার নেই। আমার রীতিমতন ভয় করছিল, যে-কোনও মুহূর্তে ইলেকট্রিক পোস্টে ধাক্কা লেগে মাথাটা ফেটে যাবে এই আশঙ্কা হচ্ছিল। ভেতরের লোকগুলো কী স্বার্থপর! আমি কাতরভাবে অনুরোধ করতে লাগলুম, দাদা, খুলে দিন, দয়া করে খুলে দিন, আমি পড়ে যাচ্ছি!
একটু পরে দরজাটা কেউ একটু ফাঁক করল, আমি কোনওরকমে বাঁদরের মতন শরীরটাকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে ঢুকে পড়লুম ভেতরে। এইভাবে চলন্ত ট্রেনে ওঠার জন্য অনেক লোকই বকুনি ও উপদেশ দিতে লাগল আমাকে। আমি চুপ করে সব মেনে নিলুম। ভেতরে সত্যিই খুব ভিড়, দাঁড়বারও জায়গা নেই। অধিকাংশ ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা যে-রকম হয়।
পরের স্টেশনে কোনও লোককে সেই কামরায় উঠতে দেওয়া হল না। কিন্তু ট্রেন চলতে শুরু করার পরই একাধিক লোক বন্ধ দরজায় দুম দুম করে ধাক্কা দিয়ে অনুরোধ করতে লাগল, দাদা, খুলে দিন, খুলে দিন! ভেতরের লোকেরা ধমকে বলতে লাগলেন, জায়গা নেই, জায়গা নেই!
আমি চুপ করে রইলুম। এই লোকগুলোকে দরজা খুলে দিতে বলার সাহস আমার নেই। তা ছাড়া আমি এখন ভেতরের লোক হয়ে গেছি, আমার মানসিকতাও যেন সঙ্গেসঙ্গে বদলে গেছে। এখন আমার মনে হচ্ছে, এর মধ্যে আবার দু’জন বাইরের লোকের জায়গা কী করে হবে? আমি। চুপ করে থাকি, বাইরের দু’জন লোক অবিরাম দরজায় ধাক্কা দিয়ে চলে!
অফিসে আমার ঘরে প্রায়ই খুব ভিড় হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ লোকই কাজের কথা সংক্ষেপে সেরে নিতে জানে না। আবার অনেক লোক জানেই না, তারা সঠিক কী চায়, সেইজন্য তারা শুধু ভূমিকাই করে চলে, আসল কাজের কথা আর বলেই না, সেইজন্য মাথা ঠান্ডা রাখা এক এক সময় খুব শক্ত হয়। একদিন আমার টেবিলের সামনে এই রকম তিন-চার জন ভিজিটর রয়েছে, এরই মধ্যে নীচ থেকে আমাদের রিসেপশনিস্ট ফোন করে জানালেন, একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে, নাম বলছে না, বলছে, আপনার সঙ্গে চেনা আছে।
আমি বিরক্তভাবে বললুম, অপেক্ষা করতে বলুন! খালি হলে আমি ডাকব!
এরপর দু’ঘণ্টা কেটে গেছে। আমি কাজে ব্যস্ত ছিলুম, সেই লোকটির কথা আর আমার মনেই পড়েনি। হঠাৎ খেয়াল হতেই রিসেপশনিস্টকে ফোন করলুম। সে বলল, সেই ভদ্রলোক তো প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে চলে গেছেন! আপনি ডাকেননি। ভদ্রলোক কিছু না বলেই চলে গেলেন।
সামান্য অনুতপ্ত হলুম। কে ছিল লোকটি? সে বলেছিল আমার চেনা, কিন্তু নাম জানায়নি কেন? সে বোধহয় রাগ করে চলে গেছে। আমার যে ঘর ভরতি লোক ছিল, তা-কি সে বুঝবে? অনেক লোক এসে একসঙ্গে বিরক্ত করলে মাথার ঠিক রাখা যায়? একটু পরেই অবশ্য ভুলে গেলুম লোকটির কথা।
হঠাৎ একদিন আমায় বিশেষ জরুরি কাজে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়। দু’দিন বাদেই আমাকে বিদেশে যেতে হবে, শেষ মুহূর্তে আমি আবিষ্কার করেছি যে আমার পাসপোর্টের বয়েস পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে, সেটা রিনিউ না করালে যেতে পারব না। ব্যাপারটা অতি সামান্য, একটা রাবার স্ট্যাম্পের ছাপ দেওয়া শুধু।
কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি সেখানে বিরাট ভিড়, মস্তবড় লাইন, হুলুজুলু ব্যাপার। এই লাইনে দাঁড়ালে আমার সারাদিন কেটে যাবে, এতটা সময় দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।
ওই অফিসের একজন অফিসারের সঙ্গে আমার কিছুটা চেনাশুনো আছে, দেখা করতে চাইলুম তার সঙ্গে, কিন্তু ভিতরের মহলের দরজায় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, সে আমায় ভেতরে যেতে দেবে না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কোনও অফিসারের সঙ্গে দেখা করা যানো না। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট করব কী করে? আসবার আগে আমি অন্তত পনেরো বার টেলিফোনে সেই অফিসারটিকে ধরবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কলকাতা শহরে সবচেয়ে দরকারের সময়েই তো টেলিফোনগুলো মৃত হয়ে যায়। পাসপোর্ট অফিসের ফোন একবারও বাজেনি! দ্বাররক্ষীটিকে আমার জরুরি দরকারের কথা বোঝাতে গেলুম, সে পুরোটো না শুনেই বলল, পাসপোর্ট জমা দিয়ে যান, সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে না।
তখন আমি একটা শ্লিপ লিখে খুব কড়া গলায় তাকে বললুম, তোমার সাহেবকে এটা দেখাও, তিনি আমায় চিনতে পারবেন।
আমার মুখের ওপরেই সে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ভেতরে চলে গেল। এবং একটু বাদেই ফিরে এসে বলল, সাহেব বলেছেন, আজ দেখা হবে না, পরে আসবেন!
আমি এমনই অপমানিত বোধ করলুম যে আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠল, মনে হল, সেই মুহূর্তে আমি অজ্ঞান হয়ে যাব। এরকম আমার হয়, কেউ অপ্রত্যাশিতভাবে অপমান করলে আমি চোখে অন্ধকার দেখি। দেয়াল ধরে অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিলুম। অফিসারটি আমার নাম দেখেও চিনতে পারল না? তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে, তাও সে একবার ডাকল না আমাকে?
এমনও হতে পারে অবশ্য যে বেয়ারাটি আমার স্লিপটা দেখায়ইনি অফিসারটিকে। এমনিই ফিরে এসেছে। কিন্তু এর সঙ্গে তো ঝগড়া বা মারামারি করে কোনও লাভ নেই? এখন আমি কী করব?
সৌভাগ্যবশত পাসপোর্ট অফিসের একজন মহিলা অফিসার সেদিন আমায় দেখে চিনতে পেরেছিলেন এবং অনেক সাহায্য করেছিলেন।
কাজ সেরে বেরিয়ে আসবার পর আমার মনে পড়ল সেই লোকটির কথা, আমার অফিসে যাকে আমি নীচে বসিয়ে রেখেছিলাম, পরে তাকে ডাকতেই ভুলে গেছি। সে কী ভেবেছিল আমার সম্পর্কে? .................................................................................. . আমরা কী কখনো এভাবে ভেবে দেখেছি? সহানুভূতিশীলতা, সহমর্মিতা নামক মহান গুণগুলি কী আমরা হস্তগত করতে পেরেছি?
যদিও উত্তরে সবাই বলব পেরেছি; তবে গভীরভাবে উপলদ্ধি করলে মনে হবে পারিনি। এজন্য সাধনা করা লাগবে!
দুই খণ্ড নিয়ে গঠিত ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমন সমগ্র।অ্যান্টার্কটিকা বাদে বাকি ৬ মহাদেশেই লেখক তাঁর পদচিহ্ন রেখেছেন,একারনে তাঁকে সহজেই ‘বিশ্ব নাগরিক’ উপাধিতে ভূষিত করা যায়।কলকাতায় তাঁর স্থায়ী বাসা না থাকলে বাংলা অভিধানের ভাষায় তাকে স্বচ্ছন্দে যাযাবর বলা যেত।দানিয়ুব নদী কিংবা আড়িয়াল খাঁ নদ,রকি মাউন্টটেন কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত,সুন্দরবন কিংবা মাসাইমারা জঙ্গল সবখানেই ছিল লেখকের উপস্থিতি;শরীরের উত্তাপ দিয়ে নদীকে আর পায়ের ছাপ দিয়ে পর্বত আর বনকে কৃতার্থ করেছেন!!কবি সম্মেলন,আড্ডা কিংবা নিছক ঘোরাঘুরি এগুলোই ছিল তাঁর ভ্রমনের উদ্দেশ্য আর এসব নিয়েই ১২০০ পৃষ্ঠার এই বিশাল বই। সহজপাঠ্য,বর্ণনামূলক এবং তথ্যসমৃদ্ধ হওয়ায় সুনীলের বই সবসময়ই ভালো লাগে।এই বইটিও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।১২০০ পৃষ্ঠার বিশাল বই কিন্তু কখনো বিরক্তি আসে নি।অবশ্য প্রথম ২৫০ পৃষ্ঠা চিরাচরিত সুনীলকে পায়নি,কাহিনি এবং তথ্যের যে মেলবন্ধন তাঁর লেখায় থাকে সেটা অনুপস্থিত ছিল,তবে এরপর সব ঠিকঠাক।সমগ্রে কিছু ত্রুটি ছিল,যেমন একি গল্প ২-৩ বার,এছাড়া একি ঘটনা এবং উপমার কয়েকবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।তবে সেগুলো খুব একটা সমস্যা করেনি।শেষের অংশটুকু ছিল সবচেয়ে তথ্যবহুল।কাকতালীয় ভাবে আমি বইটা পড়ার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ডকুমেন্টারি “the world at war’ দেখছিলাম যার দরুন কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল,সুনীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে সে মাথাব্যথা অনেকটাই দূর করেছেন।শেষ গল্পটা চমকপ্রদ ছিল;কেন চমকপ্রদ বলছি তা পড়লেই বোধগম্য হবে। শিল্প-সাহিত্যে অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক।নতুন পরিবেশ মানেই নতুন অভিজ্ঞতা যা গল্প কিংবা কবিতার চরিত্র,প্লট,উপমা অথবা শিল্পে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে সাহায্য করে।চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখলে শুধু ‘আমিত্ব’ সম্বন্ধে জানা যায়,সাধারন মানুষের চিন্তা-চেতনা,ধ্যান-ধারনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না।লেখক কিংবা কবি বলে সুনীলের আজ যত সুনাম তাঁর অধিকাংশই ছিল তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ সেটা এই ভ্রমণকাহিনী পড়লেই উপলব্ধি হয়।
One of the best travelogues i have come across. Being a writer and an avid adventurer in heart and by practice, Sunil has traveled around the globe. From the forests of Dooars to the museums of Paris, he depicted his experiences and feelings on this book. Both parts of the series are amazing. Which enthralls me most is his description of the travels in both standards of life, one where he is this young Bengali chap with less cash in pocket and more enthusiasm in exploration and how he finds ways to quench his thirsts of adventure and how he sees life and another where he is one of the most respected Bengali writers and he circles the globe being in the shell of a reputable guest containing that young Bengali kid's heart filled with the hope and curiosity.
অনেক আশা নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু আশা তেমন পূর্ণ হলো না। গল্পগুলোর মধ্যে কোনো সিকুয়েন্স নেই। সম্পাদনা দুর্বল। প্রচুর রিপিটেশন আছে,এই জন্য তেমন ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে ,শুধু লেখকের পুরাতন লেখাগুলি চোখ বন্ধ করে তুলে দেয়া হয়েছে।
“তিনটে চারটে ছদ্মনামে আমার ভ্রমণ মর্ত্যধামে”- এই কথাটি সত্যি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেই খাটে। একাধারে বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক, কথাশিল্পি এবং আরেকদিকে ভ্রমণপিপাষু পথিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচিতি বাংলা সাহিত্যের পাঠকের কাছে আর আলাদা করে দেওয়ার দরকার হয় না। সেই যৌবনকাল থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন অনেক জায়গায়। দেশে বিদেশে, নদী, পাহাড়ে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন, গাছতলায় রাত কাটিয়েছেন এবং পাঁচ তারা হোটেলেও থাকার সৌভাগ্য হয়েছে- এমন বিবিধ বর্ণনা দিয়ে ভরপুর এই গ্রন্থ- পায়ের তলায় সর্ষে। “আমার ভ্রমণ”, “ভ্রাম্যমানের বিন্দু বিন্দু দেখা”, “আচমকা এক টুকরো”, “জেনিভায় দোল” এরকম নাম দিয়ে ৩৭ টি ভাগ করে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের গল্প আছে। পাহাড়ের বর্ণনা, নদীর বর্ণনা, ফরাসি দেশের লোয়ার নদীর কথা, আবার আছে আমাদের বিখ্যাত কবি মধুসুদন দত্তের সেই প্রিয় কপোতাক্ষ নদের কথা, সাথে সাথে কিছু ইতিহাস, সেখানকার মানুষের কথা, মানুষের মুখ থেকে ফুটে ওঠা অনেক অনুভূতি, বেড়াতে গিয়ে মাঝে মাঝে কিছু মজা, আবার কিছু বিড়ম্বনা, সবকিছুই আছে এই টুকরো টুকরো গল্পগুলোতে।
ভ্রমণকাহিনী - সাহিত্যের এই শাখাটা আমাকে কখনো টানেনি, একমাত্র ব্যতিক্রম সৈয়দ মুজতবা আলী। ভ্রমণ করতেই আমার ভালো লাগে, অন্যের চোখে দেখতে নয়। কিভাবে কিভাবে যেন পায়ের তলায় সর্ষে পড়া শুরু আর বিশালাকার বই হওয়ায় পড়াকালীন সময়ে কখনো ভ্রমণে পায়ের তলায় সমুদ্র রেখে, কখনো পায়ে অপারেশন হওয়ায় পায়ের তলায় বালিশ রেখে বইটা শেষ হলো। আর ভ্রমণকাহিনী নিয়ে উন্নাসিকতাটাও গেলো। এটা অবশ্যই লেখকের কৃতিত্ব কারণ তাঁর সাথে আমার ভ্রমণের রুচি পুরোটাই মেলে। খুব অবলীলায় অনেক কিছু বলেছেন যেটা সবার মধ্যে কোন সচরাচর বৈশিষ্ট্য না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কেও কিছুটা জানা হলো। ভালো লেগেছে।
ভ্রমণ কাহিনি খুব একটা বেশি পড়িনি।কিন্তু এটা পড়া হয়ে গেছে।আমার মন খারাপের সময়গুলোতে আমি তিনটা বই পড়ি।এক/থ্রি কমরেডস,দুই/টেনিদা সমগ্র আর তিন/পায়ের তলায় সর্ষে ১,২। মন খারাপ হলো?? ব্যস পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে বসে পড়তাম।সুনীলের সাবলীল বর্ননায় এক নীমিষে চলে যেতাম পৃথিবীর নানা প্রান্তে।কল্পনায় পাখা মেলতাম।কখনো গ্রীসে কখনো মিশরে কিংবা কেনিয়ায়।আর মজার মজার সব অভিজ্ঞতা তো আছেই।সুনীল আবার মাঝে ইতিহাস ঢুকিয়ে দিতেন।যার কারনে আমার ভালো লাগার মাত্রাটা একটু বেশিই।
খুব স্পষ্ট করে যারা মনের ভাব শব্দে প্রকাশ করতে পারে আর যারা পৃথিবীর অর্ধেকটাও একবার দেখেছে তাদের আমি খুব হিংসা করি। প্রসন্ন হিংসা যদিও। উপরের একটিতেও আমার পারদর্শিতা নেই, তবুও পানিতে পড়ে গেলে সাঁতার দেবার চেষ্টার মত মাঝে মাঝে কেন যে বই সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করি নিজেও জানিনা। সে যাক! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লেখালেখি এবং ঘোরাঘোরি এই দুই-ই বেশ জমিয়ে করেছেন। এবং, লেখালেখির জোরেই উনার যত ঘুড়ে বেড়ানোর দুয়ার খুলে গেছে। ভাবা যায়? আমার কাছে এ পুরোদস্তুর রূপকথা কিংবা দিবাস্বপ্ন।
যদিও, ভ্রমণকাহিনী আমার তেমন পড়া হয়নি। তবুও আমি পায়ের তলায় সর্ষে পড়ে বুঝলাম, ঠিক ভ্রমণ বলতে আমি যা বুঝি সুনীলের ভ্রমণ পুরোপুরি তেমন নয়। ভ্রমণের দুঃসাহসিক ঘটনা, রোমাঞ্চকর অভিযান ব্যাপারগুলো পাওয়া যাবে না এই বইতে (মানসের অরণ্যে ভ্রমণ বাদে)। তিনি তো আসলে সে উদ্দেশ���য নিয়েও ভ্রমণে যাননি। এই বিষয়টা মাথায় রেখে পড়তে বসলে খুব ভালো সময় কাটবে। বিশ্বের নানান দেশে কবিতা আর লেখালেখি বিষয়ক কর্মকান্ডে জড়িত হয়েই তিনি বহু দেশ দেখেছিলেন। তার রক্ষাকর্তার মত কেউ না কেউ চেনা লোক আর সাহিত্য প্রতিষ্ঠান তার পাশে থেকেছে, জুটে গেছে যাত্রার খরচ। তবুও, এই দেখে আসাটাও তো অনেক! তিনি ছিলেন দারুন দেশ-কাতুরে মানুষ। যেখানেই গেছেন, দেশের জন্য নাড়ীর টান অনুভব করেছেন। সম্ভবত দেশের প্রতি আকর্ষন দূরদেশে গেলেই বেশি বোঝা যায়। দেশের প্রতি যে আকুলতা তার সব লেখায় প্রকাশ পেয়েছে তার অনেকখানিই আমার কাছে মানব চরিত্রের নিছক এক অভ্যস্ততা বলে মনে হয়েছে। এর চেয়ে খুব বেশি কিছু নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অমন দেশ-কেন্দ্রিকতায় অভ্যস্থ নই বলেই হয়ত। সুনীলের লেখা পড়ার একটা বড় আনন্দ হলো, তা বড় তথ্যবহুল হয়।অনেক অজানা সাহিত্য, ইতিহাস, কাল, ক্ষেত্র, সিনেমা সম্পর্কে জানা যায়। এই ব্যাপারখানা আমি বড্ড উপভোগ করি। এই ভ্রমণকাহিনী তাই আমার বিশেষ ভালো লেগেছে। সুনীলের অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ গভীর আর বিস্তৃত।
যেহুতু এটি ভ্রমণকাহিনী তাই লেখকের নিজের মতামত, যুক্তি, দর্শন, সংস্কার, মনোজগতের আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। সবটার সাথে একমত হতে পারিনি, আবার কিছু জায়গায় দারুন ভালো লাগছিল। একমত হতে পারিনি বলে অপছন্দ করছি এমন নয়, বরং সেসব জায়গায় লেখকের মতামত আমাকে আরও দশ দিক থেকে ভাববার ক্ষেত্র করে দিয়েছে। কিছু কিছু কাহিনী খুব রোমাঞ্চকর আর ফুরফুরে ছিল, যার সংখ্যা বেশ কম। (যেমন - জয়ন্তী নদীর কাছে, জেনিভায় দোল, পাহাড় যেখানে ডাকে, মানস ভ্রমণ) আর বাকি অনেকগুলোই সাধারন দিনলিপি আর জীবন-যাত্রার বর্ণনার মত। পড়তে গিয়ে প্রায়ই সন্দেহ হয়েছিল, লেখক নিশ্চয়ই কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন অনেক জায়গায় কিংবা করেছেন কিছু অহেতুক আড়ম্বর। যেহেতু এটা আগাগোড়া ভ্রমণকাহিনী, কাল্পনিক নয়, তাই বিষয়টা সুবিধার লাগে নি। এরপর তো এক কাহিনীতে লেখক ঠিকঠিক সেই কাজ করেই ফেললেন আর শেষে সেটা স্বীকার করে নিয়ে পাঠকদের নাম দিলেন "সরলমতি"।
লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনে হবে, কেউ আপনাকে আড্ডার আসরে তার বেড়াবার গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে দুচারটা নিজের মতামত, দূর্বলতা, অভিযোগও পেশ করছে।
পড়ে হতাশ হবেন না এই বই। আমার ভ্রমণের খুব শখ, তাই অন্যের গল্প শুনতে খারাপ লাগে না। বইটা শেষ করে এক লম্বা দীর্ঘশ্বাসও বেরিয়ে এসেছে। হায় মানবজীবন! কত ক্ষুদ্র অথচ কত মহার্ঘ। ভ্রমণের অভ্যাস আর শখ না থাকলে শিক্ষার প্রায় অর্ধেকই বাকি থেকে যায়! ভ্রমণের মাধ্যমেই জীবনের বৃহত্তর পরিসর উপলব্ধি করা যায়।